এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  লিঙ্গরাজনীতি

  • হাতে রইল শুধুই লক্ষ্মীর আরাধনা

    স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    লিঙ্গরাজনীতি | ০৯ অক্টোবর ২০২২ | ১৮৪৪ বার পঠিত
  • “মনসার সঙ্গে বাদ চান্দ বেণ্যা কৈল।
    ছয় পুত্র লয়ে চান্দ বাণিজ্যে চলিল।।“

    কেমন সে বাণিজ্য?
     
    “সিংঘলের মুখে সাধু চলে শীঘ্রগতি।
    বাহ বাহ বলে নৌকা কিবা দিবারাতি।।
    ছয় পুত্র লয়ে চান্দ শ্রীঘ্রগতি চলে।
    উপনীত হৈল গিয়ে পাটন সিংঘলে।।
    নৌকা লাগাইল সাধু সমুদ্রকিনারে।
    মনের কৌতুকে সাধু নাম্বিলা সত্ত্বরে।।
    রাজভেট লয়ে সাধু বিদায় হইল।
    উত্তম স্থানেতে যাজনে বাসা যে করিল।।
    বাণিজ্যের আরম্ভ করিল সদাগর।
    বিকিকিনি করে সাধু নাহি অবসর।।“ 

    ( বসন্তরঞ্জন রায় সম্পাদিত ক্ষেমানন্দের মনসামঙ্গল, আনুমানিক সপ্তদশ শতকের লেখা)

     
    মনসামঙ্গল পড়তে গেলেই খুব জানতে ইচ্ছে হত, সপ্তডিঙ্গা সাজিয়ে চাঁদ সওদাগরেরা যখন বাণিজ্যে যেতেন, সনকারা কি করতেন তখন? স্বামী-পুত্রের দেশে ফেলে রেখে যাওয়া বাণিজ্যপাট দেখাশোনা করতেন? নাকি তাঁর জন্য বরাদ্দ শুধুই সংসারকর্ম? প্রশ্নই সার, সনকারা আসলে কাব্যে উপেক্ষিতা। তাঁদের ডাক পড়ে শুধু যখন চাঁদ সওদাগরেরা ঘরে ফেরেন- 

    “দেশে আইল সদাগর বার্ত্তা গেল ঘরে।
    সনকা বেণ্যানী আস্যে নৌকা নিবার তরে।।
    দুর্ব্বা ধান্য নিল আর সুগন্ধি চন্দন।
    ধুপ দীপ নিল আর যে লাগে যখন।।”


    মঙ্গলময়ী নারীর মঙ্গলাচরণ বা ধর্মাচরণের পথে যতটা স্বচ্ছন্দ বিচরণ, বাণিজ্যের অর্থকরী জগতে সে প্রায় ব্রাত্য। অথচ সনকার এই প্রায় নিষ্ক্রিয় অবস্থানের বিপক্ষে আমরা দেখি দরিদ্র ফুল্লরার সাংসারিক স্বাচ্ছ্যন্দবিধানের জন্য মাংস বেচতে যাওয়া।
     
    নিদয়া বসিয়া খাটে, মাংস লয়ে গোলা হাটে
    অনুদিন বেচয়ে ফুল্লরা।
    শাশুড়ী যেমত ভণে, সেইমত বেচে কিনে,
    শিরে কাঁখে মাংসের পসরা।।
    মাংস বেচি লয় কড়ি, চাল লয় দাল বড়ি,
    তৈল লোণ কিনয়ে বেসাতি।
    শাক বেগুণ কচু মূলা, এঁটে থোড় কাঁচকলা,
    নানা সজ্জা ভ’রে আনে পাঁতি।।


    ফুল্লরা অবশ্য ব্যাধপত্নী, কালকেতুর বৌ। সমাজের প্রান্তিক স্তরে তাদের বসবাস। সুকুমার সেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যেমনটি বলেছেন যে বঙ্গজাতির উৎপত্তি আর্য আর অনার্য দুই ভাবধারার মিশ্রণে। আর্যেরা ছিল মনোধর্মী অর্থাৎ চিন্তাশীল, আদর্শবাদী, তত্ত্বানুসন্ধিৎসু, সংযমনিষ্ঠ ও অধ্যাত্মপরায়ণ। আর অনার্যের ছিল প্রাণধর্মী অর্থাৎ ক্রিয়াশীল, বাস্তববাদী, অজিজ্ঞাসু, ভোগলিপ্সু ও দৈবনিষ্ঠ। তিনি এও বলেছেন যে সংস্কৃতিবিশুদ্ধ আর্যেরা ছিল ব্রাহ্মণ্যধর্মপ্রবণ। কাজেই ধরেই নিতে পারি যে মনুস্মৃতির “ন স্ত্রী স্বাতন্ত্র্যমর্হতি” র বাণীটি সনকাদের মজ্জায় মজ্জায় বহমান। অন্যদিকে পেশায় ব্যাধ, কালকেতু-ফুল্লরার সামাজিক অবস্থান বোধহয় ওই  আর্যেতর মানুষদেরই কাছাকাছি। ফলে একদিকে মেয়েদের নিয়ে তাদের যেমন সংস্কৃতিগত দায় কম, তেমনই কঠোর দারিদ্র্য তাদের মেয়েদের  ঘরবন্দী হতে দেয় নি।  

    শুধু চাঁদ সদাগরের গল্প নয়, ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় খ্রীষ্টপুর্ব প্রথম শতকেই বাঙ্গালীর তৈরি কাপড় সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে, কদরও পাচ্ছে। রাজ্যের বণিক শ্রেণীর হাতে প্রচুর অর্থ, সেই অর্থের জোরে তাঁরা সহজেই রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ হয়ে উঠছেন। কৃষিজ জিনিষ, শিল্পজাত দ্রব্যের দেশের মধ্যে স্থলপথে কেনাবেচার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছিল নৌ বাণিজ্য – নদীপথে দেশের মধ্যে ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে বনিকেরা জাহাজ নিয়ে পাড়ি জমাতেন বহির্দেশে। আরব ব্যবসায়ীদের দাপটে বহির্বাণিজ্যের সমৃদ্ধির জগতে ভাঁটার টান ধরল অষ্টম শতকে। বাণিজ্য-প্রধান বাঙ্গালিই ধীরে ধীরে হয়ে গেল কৃষি-নির্ভর।  আর এই পর্বেই পৌরাণিক, নারায়ণের অর্ধাঙ্গিনী লক্ষ্মীর জায়গায় এসে বসলেন শস্য-প্রাচুর্যের আর সমৃদ্ধির দেবী মা লক্ষ্মী। নীহাররঞ্জন রায় ‘বাঙ্গালির ইতিহাস ( আদি পর্বে )’ জানিয়েছেন যে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত শারদীয়া কোজাগর উৎসবের সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর পূজার কোনও সম্পর্কই ছিল না। হারানো সাম্রাজ্য কিছুটা হলেও ফিরে পাওয়া গেল আবার চতুর্দশ শতকে। তবে এই পুরো সময় জুড়েই ছোটখাট অর্থনৈতিক আদানপ্রদানের কাজে মেয়েদের দেখা মেলে। শুধু সপ্তদশ শতকের ফুল্লরাই নয়, চর্যাপদের যুগেও মেয়েদের খেয়ানৌকার পাটনী হিসেবে পাচ্ছি।

    গঙ্গা জউনা মাঝেরে বহই নাই।
    তাহঁ বুড়িলী মাতঙ্গী পোইআ লীলা পার করেই।।


    কিন্তু ওই ছোট স্তরে মেয়েদের দেখা মিললেও, একটু বড় মাপের সংগঠিত বাণিজ্যের জগতে মেয়েদের দেখা মেলা ভার।  অবশ্য একটা কথা মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের প্রাচীন আমলের যে সব ঐতিহাসিক উপাদান অর্থাৎ বিভিন্ন সাহিত্যকীর্তি, ভ্রমণকাহিনী, তাম্রলিপি, প্রস্তরলিপি ইত্যাদি মেলে তার কোনটাই সরাসরি বাণিজ্যসংবাদ দেওয়ার উদ্দেশ্যে লেখা নয়। কাজেই বাণিজ্যের সম্বন্ধে যা খবর মেলে সবই পরোক্ষ। সেই সব পরোক্ষ সূত্র থেকে শ্রেষ্ঠী ( আজকের ভাষায় ব্যাঙ্কার ) এবং সার্থবাহদের ( স্থলবাণিজ্যের ক্যারাভান-লিডার) প্রতিপত্তির কথা উদ্ধার করা যায়। এও বোঝা যায় যে স্থানীয় স্তরে হাট-বাজার তো ছিল-ই, স্থলপথে আর নদীপথে দেশের মধ্যে দূরে দূরে বাণিজ্যও ছিল – আর ছিল বহির্বাণিজ্য।  বিভিন্ন সূত্রে বিজয়সিংহের লঙ্কাজয় কাহিনী ( মহাবংশ, বিজয়সিংহ খ্রীস্টপুর্ব ষষ্ঠ শতকের মানুষ ) থেকে মহীপালের রাজত্বে বণিক বুদ্ধমিত্র, লোকদত্ত থেকে ধনপতি দত্ত ( ষোড়শ শতকের মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল) অবধি যা কিছু জানা যায় তাতে অবশ্য শুধু পুরুষদেরই জয় জয়কার। এমনিতেই মেয়েদের ইতিহাস নীরবতার ইতিহাস। তবু বিদ্যাচর্চা বা সাহিত্যচর্চা বা আধ্যাত্মিকতার জগতে কয়েকজন মনস্বিনীর নাম মেলে। কলহনের রাজতরঙ্গিনীতে কমলা নামের এক অষ্টম শতাব্দীর নর্তকীর সন্ধান মেলে – তিনি নিজগুণে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক হয়েছিলেন। তবু জীবন ও জীবিকার অন্যান্য ক্ষেত্রে তাদের ছায়া চেনা ইতিহাসের সীমানায় দেখা যায় না। কাজেই প্রাচীন তথা মধ্যযুগের বাংলায় যদি বা কোন নারী শ্রেষ্ঠী বা বণিক থেকেও থাকেন, ইতিহাস হয় তাদের খবর রাখে নি, বা তাঁরা সত্যিই অনুপস্থিত ছিলেন।

    অবশ্য আর্য আর অনার্যেরা মিলে মিশে যে বাঙালি জাতি তৈরি করেছিল, তা ছিল এক শ্রেণী আর জাতিতে-বিভক্ত সমাজ।  অনার্যেরা ছিল নিচু জাতি। উচ্চতর যে সমাজ তা আদতে ব্রাহ্মণ্যবাদের দ্বারা প্রবল প্রভাবিত, মনুস্মৃতি তার উত্তরাধিকার। সে সমাজে মেয়েদের জায়গা ছেলেদের নীচে। শুধু হিন্দুধর্ম না, এই উপমহাদেশের বেশির ভাগ ধর্মমতই সেই পথের অনুসারী। পাতিব্রাত্য আর মাতৃত্ব ছিল মেয়েদের সমাজ-নির্ধারিত আদর্শ। সমাজের একদম উচ্চস্তরে  মেয়েদের মধ্যে কিছুটা প্রাথমিক পড়াশোনার চল ছিল, কিন্তু ওই অবধিই। মেয়েদের অর্থনৈতিক অধিকার বলতে মুলতঃ ছিল স্ত্রীধন। এমনকি তাতেও মেয়েদের কতটা সত্যিকারের অধিকার ছিল তা নিয়ে বিবিধ মতামত আছে। সুকুমারি ভট্টাচার্যের মতে আর্যরা যখন ক্রমশঃ আরও আরও জায়গা দখল করল, তখন সেই সঙ্গে তারা অনেক সস্তা দাস-দাসীরও মালিক হল, ফলে আগে যে সব বাইরের অর্থনৈতিক কাজকর্মে বাড়ীর মেয়েদের সাহায্য প্রয়োজন ছিল, সেই প্রয়োজন আর থাকল না। আর ততদিনে অতিরিক্ত উৎপাদন আর বাণিজ্য দুই-ই শুধু সমাজের বিশেষ বিশেষ দলের কুক্ষিগত হয়ে গেছে। তার ফলস্বরূপ সম্পদের মালিকানাও চলে গেছে তাদেরই হাতে। সেই সম্পদ সঠিক উত্তরাধিকারীর হাতে পড়াটা সুনিশ্চিত করতে মেয়েদের, বিশেষতঃ উচ্চশ্রেণীর মেয়েদের উপর এসেছিল হরেকরকম বিধিনিষেধ। অর্থনৈতিক সম্পদের অভাব, সমাজ-নির্ধারিত শ্রেণী-বিভাগের নিষ্পেষণ, নিজের স্বোপার্জিত অর্থে নিজের অধিকার না থাকা, ভাগ্যমুখিনতা ইত্যাদি বিবিধ কারণ  নিচুশ্রেণীর মেয়েদের হাট-বাজারের গন্ডির বাইরে বেরোতে দেয় নি বলে অনুমান করা যেতে পারে। আর উঁচুশ্রেণীর মেয়েদের কমোডিফিকেশন, শ্রমের লিঙ্গ-বিভাজন, বহির্জগতে বিচরণের সামাজিক বাধা ইত্যাদি বিবিধ কারণে তাঁরা শুধু শ্রেষ্ঠী কন্যা বা বণিকজায়া বা সার্থবাহ-মাতা হয়েই কাটিয়ে গেছেন।        

    চাঁদ সদাগরের “সাজিয়ে নিয়ে জাহাজখানি, বসিয়ে হাজার দাঁড়ি” সাগর পাড়ি দিয়ে বাণিজ্য যাত্রার সুবর্ণদিন শেষ হয়ে গেছে প্রায় অষ্টম শতকেই। মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যে আমরা শুধু তার স্মৃতিটুকুর ছায়া পাই। তবে মোটামুটি ভাবে চতুর্দশ শতকের গোড়া থেকে আবার বাণিজ্যের অবস্থা কিছুটা হলেও ফেরে। শুধু অন্তর্দেশীয় বাণিজ্য না, বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগের কথাও এই সময়ের বিভিন্ন পর্যটকের লেখায় পাওয়া যায়।  বাণিজ্যনগরী হিসেবে সোনারগাঁ, সপ্তগ্রাম, চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধি ছড়িয়ে পড়ে। ষোড়শ শতকের পর থেকে তো সরাসরি ইউরোপীয় জাতিদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায় বাংলার বন্দরে- শহরে। বাংলার বিখ্যাত বস্ত্রশিল্প তো বটেই, চিনি, নুন, অস্ত্র-শস্ত্র, গহনা সবই বেচাকেনার দ্রব্য। তবে গবেষকরা যদিও জানিয়েছেন যে আমির খসরুর লেখায় এক সুগার-প্ল্যান্টেশনের ( অর্থাৎ আখের খেত কি?) মালিক ছিলেন শকরা খাতুন নামের এক মহিলা, তবু মোটের উপর এই পর্বেও ব্যবসায়ে নারীর দেখা মেলা ভার।  এই সময়ে কিন্তু বিদ্যাচর্চার বা সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে আমরা পঞ্চদশ শতকের ইন্দ্রভূতি,   ষোড়শ শতকের প্রিয়ম্বদা দেবী ( শ্যামারহস্যের রচয়িতা ), বংশীদাশ কন্যা চন্দ্রাবতী, সপ্তদশ শতকের আনন্দলতিকা খ্যাত জয়ন্তী দেবী প্রমুখের দেখা পাই। ভুরশুটের বীরকন্যা ভবশঙ্করী নিজের কৃতিত্বে আকবরের থেকে রায়বাঘিনী উপাধি পান।  আবার রাজ্যশাসনের কাজে তথা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও রানী ভবানী, মণি বেগমদের  দেখা মেলে। এ কথা অনস্বীকার্য যে এঁরা সকলেই সেই সময়ের পক্ষে নেহাতই ব্যতিক্রমী চরিত্রে। বরং অশিক্ষা, বাল্যবিবাহ, পর্দা বা অবরোধপ্রথা মেয়েদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য খুব সহজ ছিল না। তবু এই সময়ের বাংলাতেই যেখানে জগৎশেঠদের প্রবল আর্থিক রমরমা, সেখানে সেই জগতে মেয়েদের সামগ্রিক অনুপস্থিতি সমাজের পিতৃতন্ত্রের উপস্থিতি এবং তাঁদের সবরকমের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে মুঠোর বাইরে না যেতে চাওয়ার প্রবণতাকেই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখায়। তবু এতকিছুর পরেও প্রশ্ন জাগে মেয়েদের নিজস্ব চাওয়া-পাওয়ার হিসেব নিয়ে – যে মেয়েরা মৃত স্বামীর প্রাণ ফেরান’র জন্য একাকী অজানা পথে পাড়ি দেন, পুরুষবেশে টোলে অধ্যাপনার ও আর্তজনের চিকিৎসার কৃতিত্ব যে নারীদের ঝুলিতে, স্বামী-নাবালক পুত্রের নামে রাজ্যশাসনে যাঁরা কুন্ঠিত নন, শুধু সংগঠিত অর্থনীতির ক্ষেত্রেই তাঁদের এই বিরাগ কেন?

    সময় সামনের দিকে এগোলেও মেয়েদের অবস্থার বদল হয় নি বিশেষ। ক্ষেমানন্দের মনসামঙ্গলের কালের প্রায় দুশো বছর পরের ১৮৬২ সালের কলকাতার বর্ণনায়ও  মেছুনীর কথা এসেছে -  ‘শোভাবাজারের রাজাদের ভাঙ্গা বাজারে মেছুনীরা প্রদীপ হাতে করে ওঁচা পচা মাচ ও লোনা ইলিশ নিয়ে ক্রেতাদের- “ও গামচাকাঁধে, ভাল মাচ নিবি?” “ও খেংরা-গুঁপো মিন্সে, চার আনা দিবি” বলে আদর কচ্ছে- মধ্যে মধ্যে দুই একজন রসিকতা জানবার জন্য মেছুনী ঘেঁটিয়ে বাপান্ত খাচ্ছেন।‘  তাঁতিনীদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ঘুরে হাল ফ্যাসনের শাড়ীর অন্তঃপুরে জোগান দেওয়ার গল্প তো এই কিছু বছর আগেও শহর কলকাতার চেনা ছবি ছিল।  তবু যে সময় দ্বারকানাথ ঠাকুর নব্য ভারতের দিকপাল ব্যবসায়ী বলে দেশে-বিদেশে খ্যাত হচ্ছেন, শুধু দাদনী ব্যবসা করে বা ইউরোপীয়দের এজেন্সী নিয়ে নিমাই চরণ মল্লিক, মতিলাল সীল, রামদুলাল দে প্রমুখ বানিয়ারা বিশাল বড়লোক হয়ে উঠছেন, এদেশে  সেই ইংরেজ আমলেও, মেয়েদের বরং আমরা বিপ্লবে-বিদ্রোহে সামিল হতে দেখছি। কিন্তু দ্বারকানাথ, রামদুলালের পাশে দাঁড়ানোর মত কোন মেয়ে পাচ্ছি না। অবশ্য ইংরেজ আমলের গোড়ার দিকে বাণিজ্য আর রাজনীতি হাতে হাত ধরে চলেছে, সে দুনিয়াটা সে আমলের মেয়েদের বোধ-বুদ্ধির সীমার বাইরেই ছিল বোধহয়।

    এই সময়ে অবশ্য আর একটা ঘটনা ঘটল।  “কোন সমাজের মূল্যায়ণ হয় তারা তাদের মেয়েদের প্রতি কেমন ব্যবহার করে” এই ধারণাটা ইউরোপীয় প্রভাবে আমাদের দেশেও এসে জাঁকিয়ে বসল – অতএব সবাই উঠে পড়ে লাগলেন মেয়েদের উন্নতি করতে।  সতীদাহপ্রথা ও বাল্যবিবাহ রদ,  বিধবাবিবাহ প্রচলন এবং সবার উপরে মেয়েদের মধ্যে শিক্ষাবিস্তার একটা বড়রকমের বদল ঘটাল। দেখা গেল নতুন যুগের দাবী মেনে সমাজ একটু মুঠো আলগা করছে। ঘর আর বাইরের মাঝে যে অনতিক্রম্য প্রাচীর ছিল, বিশেষতঃ সমাজের উচ্চস্তরের মেয়েদের যে পাঁচিলের বাইরে পা দেওয়া একরকম মানা-ই ছিল, সেখানে সরলা দেবী চৌধুরানী, কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের  মত প্রগতিশীলা মেয়েদের চেষ্টায় একটি দুটি জানালা খুলতে শুরু করল। ঘরের বাইরে বেরিয়ে উপার্জন যদি করতেই হয়, তাহলে মেয়েদের জন্য ধার্য করা হল শিক্ষিকা বা সেবিকার ভূমিকা। শিক্ষাবিস্তারে মেয়েরাও এগিয়ে এলেন। তাই উনবিংশ শতকের শেষে বা বিংশ শতকের প্রথমে বেগম রোকেয়ার মত অনেকেই এগিয়ে আসেন মেয়েস্কুল খুলতে। তবে যেহেতু উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাবিস্তার, তাই একে হয়তো বাণিজ্যিক উদ্যোগ ঠিক বলা যাবে না। বরং আজ একবিংশ শতকে দাঁডিয়ে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা দুই-ই যখন বাণিজ্যিক বিনিয়োগের ক্ষেত্র বলে চিহ্নিত তখন বরং ডঃ মৌসুমি ঘোষের মত মানুষদের (যিনি ফিউচার ইন্সটিটিউট অফ ইঞ্জিনীয়ারিং এন্ড ম্যানেজমেন্টের একজন প্রতিষ্ঠাতা )‌ উদ্যোগপতির তকমা দেওয়া যায়।

    বিংশ শতাব্দীতে প্রফুল্লচন্দ্র রায় বাঙ্গালিদের ডাক দিলেন চাকরীর মোহ ছেড়ে ব্যবসা করতে। তৈরি হল বেঙ্গল কেমিক্যালস, বেঙ্গল ওয়াটারপ্রুফস লিমিটেড ইত্যাদি।  রাজেন মুখার্জী, বীরেন মুখার্জীর বাণিজ্য-সামাজ্যের শুরু ১৮৯০ সালে, স্বাধীনতার সময়েও তা দপদপিয়ে চলছে। কিন্তু সে বাণিজ্যসাধনার ডাকও গিয়ে পৌঁছায় নি বাঙ্গালী মেয়েদের কানে। কিংবা হয়ত পরিস্থিতি তখনো অনুকূল নয়। পঞ্চাশের দশকে দেশভাগের পরে, বিশেষত উদ্বাস্তু মেয়েদের কাছে অর্থসাধনা জরুরী হল। হুড়মুড়িয়ে মেয়েরা ঢুকে পড়লেন সব রকমের চাকরীতেই। মেয়েরা দোকান-পাট চালাচ্ছেন এ দৃশ্যও খুব সুলভ না হলেও ধীরে ধীরে চোখ-সওয়া হয়ে গেল। কিন্তু লক্ষ্মণের গন্ডী ওইখানেই টেনে দেওয়া। 

    আজ স্বাধীনতার বছর সত্তর পরে, বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বেশ টলটলায়মান। যেটুকুও বা টিকে আছে, তার বেশিটাই আর বাঙ্গালীর হাতে নেই। তবু বাঙ্গালী প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাসংস্থা বলতে প্রথম যেসব পৃথিবী-বিখ্যাত বা ভারত-বিখ্যাত নামগুলি মনে আসে, সেগুলি সবই ছেলেদের তৈরী। মেয়েরা সেখানে অদৃশ্য। ভারত সরকারের দেওয়া ২০১৭-১৮ সালের তথ্যানুযায়ী আমাদের দেশের মাইক্রোব্যবসার ২০.৪৪% মালিকানা ( পূর্ণ বা আংশিক) মেয়েদের হাতে থাকলেও ছোট ও মাঝারি ব্যবসার মালিকানার ক্ষেত্রে সংখ্যাটা যথাক্রমে ৫.২৬% ও ২.৬৭% । পশ্চিমবঙ্গের জন্য আলাদা তথ্য না মিললেও ধরে নেওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের ছবিটাও মোটামুটি এরই কাছাকাছি। তবে বছর বছর ট্রেন্ডটা উর্ধমুখী এটাই যা আশার কথা।

    তবে বঙ্গভূমির অধিবাসী অর্থে যদি বৃহত্তর অর্থে বাঙ্গালী শব্দটি ধরা হয়, তাহলে প্রভা খৈতানের মত একগুচ্ছ মহিলা এগিয়ে আসবেন। প্রভা কলকাতা চেম্বার অফ কমার্সের ১৯৯৩-৯৪ সালের প্রেসিডেন্ট এবং সেখানকার এতাবতকালের একমাত্র মহিলা প্রেসিডেন্ট। না, সমৃদ্ধির বিচারে এঁদের তৈরি সংস্থাগুলিও দেশের প্রথম হাজারটা সংস্থার মধ্যে আসে না। তবে একটাই কারণে এঁদের কথা বলা – মেয়ে বলে প্রতিবন্ধকতা এঁদেরও কম নয়, রক্ষণশীলতা হয়তো বাঙ্গালীবাড়ির তুলনায় বেশি বই কম নয় – তবু এঁরা পারলে বাঙ্গালী মেয়েরা পারে না কেন? তবে কি ওই সব রাজনৈতিক-সামাজিক কারণ আসলে কিছু নয়, ঝুঁকি নেওয়ার প্রতি অনীহা আর বিগত কয়েক শতকের কলোনিয়ান কেরানী তৈরির শিক্ষার প্রভাবে ব্যবসার প্রতি নাক সিঁটকান মনোভাব-ই আসল কালপ্রিট? কিংবা এর আসল কারণ লুকিয়ে আছে বাঙ্গালীর পুজো-আর্চার মধ্যেই ? আমরা সমৃদ্ধির দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করি ঘরে ঘরে। প্রতি বৃহস্পতিবার বাঙ্গালীর কন্যারা মা- ঠাকুমা- দিদিমাদের অনুসরণ করে ধুপ ধুনো দিয়ে, সাধ্যমত মিষ্টি-ফল থালায় সাজিয়ে, শঙ্খ বাজিয়ে মা লক্ষ্মীর আরাধনা করেন আর পাঁচালী পাঠ করেন –
     
    গুরুবারে সন্ধ্যাকালে মিলি এঁয়োগন ।
    ব্রতের সকল কিছু করিবে আয়োজন ।।
    আসন পাতি তাহে লক্ষ্মী মূর্তি বসাইবে ।
    আম্র পল্লব, গোটা ফলে ঘট সাজিবে ।।
    বিবিধ পুস্প, বিল্বপত্র নৈবদ্য সকল ।
    দিবে কলা, শর্করা আতপ তণ্ডুল ।।
    একটি করে মুদ্রা রাখিবে লক্ষ্মী ঘটে ।
    একমুষ্টি তণ্ডুল জমাইবে লক্ষ্মী ভাঁড়ে ।।
    আম্র পল্লবে করিবে সিঁদুর তৈলে গোলা।
    চাল বাটি লক্ষ্মী সম্মুখে দিবে আলিপনা ।।
    ধূপ দীপ জালি সম্মুখে রাখিবে ।
    আসন পাতি লক্ষ্মী পূজায় বসিবে ।।
    একমনে পূজা দিবে লক্ষ্মী নারায়ন ।
    পূজাশেষে ব্রত কথা করিবে পাঠন ।।

     
    “একটি করে মুদ্রা” আর “একমুষ্টি তণ্ডুল” এর গন্ডীর মধ্যে কি আর বড় স্বপ্ন আঁটে, না কি লক্ষ্মীর পাঁচালির বেঁধে দেওয়া কোড অফ কন্ডাক্টের মধ্যে প্রোডাকসন কস্ট, সার্ভিস কোয়ালিটি, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ইত্যাদির কচকচি মানায়?

    তথ্য সহায়তাঃ
    রায়, নীহাররঞ্জন “বাঙ্গালীর ইতিহাস আদি পর্ব”
    ক্ষেমানন্দ, মনসামঙ্গল বসন্তরঞ্জন রায় সম্পাদিত
    চক্রবর্তী, মুকুন্দরাম সচিত্র কবিকঙ্কণ চন্ডী
    সংসদ বাংলা চরিতাভিধান
    Islam, Kamrunnesa  “Economic History of Bengal (c. 400 – 1200 AD)”
    Sarkar , Suvobrata  “Bengali entrepreneurs and western technology in the nineteenth century: a social perspective”
    Bhattacharji, Sukumari. "Economic Rights of Ancient Indian Women." Economic and Political Weekly 26, no. 9/10 (1991): 507-12
    Chatterjee, Ratnabali. "Sectional President's Address: Veiled And Unveiled: Women In Medieval Bengal." Proceedings of the Indian History Congress 62 (2001): 160-79.
    Alam, Md. Khurshid  “Urbanization under the Sultans of Bengal during 1203_1538 A D”
    https://newsroom.mastercard.com/wp-content/uploads/2018/03/MIWE_2018_Final_Report.pdf
    http://allpachali.blogspot.com/2016/10/blog-post.html
     
    ( শারদীয়া ১৪২৬ সপ্তধা পত্রিকায় প্রকাশিত) 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • লিঙ্গরাজনীতি | ০৯ অক্টোবর ২০২২ | ১৮৪৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৩৬512664
  • এই বিজয়া লক্ষ্মীপুজোর সময়টায় সেই পেইড লেবার আর আনপেইড লেবারের কথাটা ওঠে প্রতিবারই। কিছু লোক একেবারে মা ঠাকুমা দিদিমাদের তৈরী সুস্বাদু খাবার দাবারের বর্ণনায় উলুত্প্লুত হয়ে ওঠেন আর তোমার আমার মত কিছু স্পয়েলস্পোর্ট সেই হাড়ভাঙা খাটুনি আর পিঠ বেঁকে যাওয়া ব্যথার কথা মনে করায় 
    তো দেখো  সেইসব সুখাদ্য নিয়েও এত বছরেও সেইভাবে কোনও ব্র‌্য্যান্ড গড়ে উঠল না মহিলা উদ্যোক্তার দ্বারা। কোথাও সেই অদৃশ্য গ্লাস সিলিং বাধা দেয়ই মনে হয়। কর্পোরেটেও সিএক্সও লেভেলে আর কজনই বা মহিলা গোটা দুনিয়াতেই। 
     
    অথচ প্রচুর অজস্র মহিলা নানারকম ক্ষুদ্র উদ্যোগ শুরু করেন চালিয়েও যান। বরং এই যে প্রতিবার কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার গ্যাপ বেড়েই চলেছে তার একটা অংশ আমার ধারণ অসংগঠিত ক্ষুদ্র উদ্যোগের সাথে জড়িত। তারপর সেটাকে টেনে নিয়ে খেলার মাঠটাকে বড় আরো বড় করা - সেখানেই কোথাও আটকে যাচ্ছে। 
  • অনুরাধা কুন্ডা | 2409:4061:4e07:e579:a5c7:7e8d:4822:9937 | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৪৭512665
  • জরুরি লেখা। আরো লেখো এই বিষয়ে। সমৃদ্ধ হলাম।
  • ঐশিকা চ্ক্রবর্তী | 27.131.210.15 | ০৯ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৭512668
  • সাহিত্য ইতিহাস, সমাজ, অর্থনীতি এবং নারীবাদ সব এক সুতোয় গাঁথা। চমৎকার রচনা।
  • Emanul Haque | ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৭512673
  • তথ্যবহুল লেখা।
    কয়েকটা  কথা বলছি, ভাবার জন্য।
    এক, আরব বণিকদের জন্যই কি বাঙালির বাণিজ্য রপ্তানিতে সমস্যা নাকি তাম্রলিপ্ত বন্দর, সপ্তগ্রামের সমস্যাও কারণ?
    দুই, সেন রাজাদের আমলে সমুদ্র বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়। কালাপানি পাড় হওয়া অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। প্রায়শ্চিত্তের বিধান দেন ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বাংলার বণিকদের জব্দ করতে। তাঁদের ডোম বলে পতিত করে দেযন বল্লভসেন। এক কোটি টাকা আবার ধার পান নি বলে। বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য কুখ্যাত ছিলেন বল্লভসেন।
     
    সেই সময়ে গুজরাটি ও মাড়োয়ারি বণিকদের জায়গা করে দেন বল্লভসেন।
    অবশ্যই আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে।
    সতীন্দ্রকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় পড়তে পারা যায়।
     
    তিন, বাঙালি মেয়েরা স্বাধীন ছিলেন। স্বাধীনভাবে প্রেম করতে পারতেন। চর্যাপদ তার প্রমাণ। শাশুড়ি নিজ গেলে বউ বেরিয়ে পড়েছেন।
    চার, রাধা এবং তাঁর সঙ্গিনীর দল নৌকা করে জনি বেচতে চলেছেন।
  • Emanul Haque | ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৬:২৮512674
  • অনেক ভাবার মুখ খুলে দিলেন 
  • স্বাতী রায় | 117.194.38.168 | ১০ অক্টোবর ২০২২ ১১:৫১512676
  • @Emanul Haque সতীন্দ্রকৃষ্ণ বাবুর বই এর নাম বলবেন? জোগাড় করতে চেষ্টা করব। 
     
    ৩ আর ৪ বিষয়ে আমার মনে হওয়া টুকু  বলি, মেয়েরা স্বাধীন ছিলেন কি ছিলেন না এটা একটা বড় আলোচনার বিষয়। আমার পড়াশোনা সামান্য। যা মনে হয়েছে, স্বাধীনতা কথাটা বাইনারি নয়। মানে থাকলে পুরো থাকল, না হলে একটুও নয় - এমন তো হয় না। আর মেয়ে কথাটাও ইউনিভার্সাল নয়, তার ও অজস্র ভাগ, অজস্র আইডেন্টিটি। তাই স্বাধীনতার রূপনির্ণয় ও বহুমুখী, কমপ্লেক্স। এখনো তার কনা মাত্র ধরতে পারিনি। 
  • Ranjan Roy | ১০ অক্টোবর ২০২২ ১৬:৫৮512685
  • অত্যন্ত জরুরি লেখা। আরো লিখুন,  এর ফলো আপ চাই। 
  • swati ray | 117.194.39.25 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:২৯512723
  • দ অনুরাধা রঞ্জন ও আরো যারা  পড়লেন , সবাই কে ধন্যবাদ।  @দ  কর্মক্ষেত্রে জেন্ডার গ্যাপ নিয়ে যে কত কত আলোচনার থাকে। আর  আর্থ-সামাজিক স্তর এবং  চাকরির  স্তরভেদে যে সমস্যা গুলো কত বদলে বদলে যায় !
  • সম্বিৎ | ১১ অক্টোবর ২০২২ ১৯:৫৪512725
  • অসম্ভব জরুরি আর ভাল লেখা। এ নিয়ে ভাল কাজ করা যায় বলে মনে হয়।
     
    বাই দা ওয়ে, এই ব্যাপারে ফ্যামিলি প্ল্যানিং (বা বলা ভাল, তার অভাব) নিয়ে কাজ হয়েছে? যদি পঞ্চাশ বছরের লাইফ এক্সপেক্টেন্সি ধরি, তার মধ্যে তিরিশ বছর কাজের ব্যাপারে প্রোডাক্টিভ (পনেরো থেকে পঁয়তাল্লিশ),  আর তার মধ্যে বছর দশেক উপর্যুপরি প্রেগনেন্সি, সেই সূত্রে সঠিক মেডিক্যাল কেয়ারের অভাব ও অপুষ্টি, সেই সঙ্গে সন্তানদের সময় দেওয়া - এই ভিশাস সাইকেল তো বিংশ শতকের প্রথমার্ধ অব্দি চলেছে।
  • সিএস | 49.37.32.48 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২২:৪৭512737
  • প্রসঙ্গতঃ মনে হল, বঙ্গে ব্যবসা - বাণিজ্য, তার সাথে যুক্ত নগরায়ন, সমাজব্যবস্থা ইত্যাদি সম্বন্ধে ধারণা করার জন্য, স্বাতীদেবী কয়েকটা বই পড়ে দেখতে পারেনঃ

    ১। মধ্যযুগে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতি - সম্পাদনা অনিরুদ্ধ রায়, রত্নাবলী চট্টোপাধ্যায় (প্রকাশক কে পি বাগচী)

    ২। এই বইটা, মুমতাজুর রহমান তরফদারের লেখা হুসেন শাহী বাংলা নিয়ে।  

    ৩। মুমতাজুর রহমানেরই এই বইটার 'বাংলার সামুদ্রিক বাণিজ্য ও যুগ বিভাগ সমস্যা' নামে প্রবন্ধটি। 
     
    ব্যবসা বাণিজ্যে ​​​​​​​মেয়েরা ​​​​​​​কেন ​​​​​​​গুরুত্ব ​​​​​​​পেল ​​​​​​​না তার কারণ এই লেখাগুলোতে স্পষ্টভাবে নেই কিন্তু হুসেন শাহী বাংলা নিয়ে বইয়ের ৪ নং চ্যাপ্টারের শেষের দিকে এরকম উল্লেখ আছে যে যারা কাপড় বুনছে এবং সেই কাজের ফলে আর্থিকভাবে ভালো অবস্থায়, সেরকম পরিবারে মেয়েদের কিন্তু কাজের সাথে যুক্ত করা হত না। 
     
    আর আর একটা কথা, যেটা এনামূলবাবু বলেছেন, এটা মোটামুটি মেনে নেওয়া হয় যে বাংলা প্রাক-মুসলমান পর্বের আগেই কিন্তু বাণিজ্য তার গুরুত্ব হরিয়ে সমাজ কৃষিভিত্তিক হয়ে যাচ্ছিল। সেন রাজাদের আমলে কোন রকম ধাতুমুদ্রার প্রমাণ না পাওয়া, কড়ি ব্যবহারের আধিক্য (যা বহির্বাণিজ্যে কোন কাজে লাগে না ) বাণিজ্যের অধগতির প্রমাণ করে। সুবর্ণবণিকদের বল্লালসেন কর্তৃক পতিত করে দেওয়া, মুমতাজুর রহমানের প্রবন্ধে তার উল্লেখ আছে, যদিও সেই ঘটনাটি কিংবদন্তী সাহিত্যে পাওয়া যায় বলে উনি লিখেছেন, কিন্তু ব্যাপারটি ঘটেছিল ধরে নিয়ে সেই সময়ে বণিকদের পরিস্থিতি অনুমান করেছেন। 
  • সিএস  | 49.37.32.48 | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২২:৫৩512738
  • মুমতাজুর মমতাজুর রহমান তরফদার 
  • অমিতাভ চক্রবর্ত্তী | ১১ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৩৭512741
  • ভালো লেখা, চমৎকার গোছানো আর খুব দরকারি।
    মন্তব্যে দ-দি, ইমানুলের ১ আর ২, স্বাতীর নিজের কথা এবং শেষে সম্বিৎ-এর কথা লেখাটির পরের বা পরের কয়েকটি অধ্যায়ের ভিত হিসেবে কাজ করার ভূমিকা নেওয়ার মত। 
  • এলেবেলে | ১২ অক্টোবর ২০২২ ০০:১০512743
  • লেখাটা খুব গোছানো আর রেফারেন্সে ভরপুর। কিন্তু এখানে উপনিবেশ কীভাবে বাংলার মেয়েদের অন্তঃপুরবাসিনী করে তুলল, সে প্রসঙ্গটা আসেনি। 
     
    চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রচলনের আগে বাংলার যে তিনজন জমিদার কোম্পানিকে বছরে এক লক্ষ পাউন্ডেরও বেশি রাজস্ব দিতেন, ঘটনাচক্রে তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন বিধবা - বর্ধমানের রানি বিষ্ণুকুমারী, রাজশাহীর রানি ভবানী এবং দিনাজপুরের রানি। প্রায় একই সময়ে আমরা কর্ণগড়ের রানি শিরোমণি, তমলুকের রানি কৃষ্ণপ্রিয়া এবং সন্তোষপ্রিয়া কিংবা মহিষাদলের রানি জানকীর উল্লেখ পাই। এর অর্থ, এই মহিলারা রীতিমতো এস্টেট ম্যানেজার ছিলেন। এমন একটা সময়ে তাঁরা জমিদারি সামলাচ্ছিলেন যখন ইংল্যান্ডে সম্পত্তিতে মহিলাদের উত্তরাধিকারের প্রসঙ্গটি অকল্পনীয় ছিল।
     
    ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল জন শোর এই কারণেই সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে মহিলাদের অযোগ্য মনে করে তাঁদের ‘passive instruments’ রূপে সংজ্ঞায়িত করেন। তাঁর মতে, সম্পত্তির স্বত্বাধিকারী হিসেবে মহিলারা ‘settlement and collection of revenue’ পরিচালনা করতে অক্ষম। একই সঙ্গে তিনি সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে নারীদের ‘disqualified landholders’ বলে ঘোষণা করেন।
     
    শোরের এই মন্তব্যের পরে যখন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হয়, সেই আইনের অষ্টম রেগুলেশনের ২০ সংখ্যক ধারায় যে জমিদারদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, তাদের প্রথমটিই হল --- সরকার সেসব নারীকে জমিদারি পরিচালনায় অপারগ বলে গণ্য করে। ফলে ১৮০০ সাল নাগাদ কেবল বিষ্ণুকুমারী ছাড়া আর কোনও মহিলা জমিদার উল্লেখ পাওয়া যায় না।
     
    এটা কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছিল না। এ ছাড়াও বাংলার প্রাচীন লবণ শিল্প, বস্ত্রশিল্প, রেশম শিল্প এবং নীলশিল্প - প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই নারীর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। বিপণনের ক্ষেত্রে পুরুষরা থাকলেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে মহিলাদের অত্যন্ত বড় ভূমিকা ছিল। এ প্রসঙ্গে সুতো কাটুনিদের উল্লেখ করা অত্যন্ত জরুরি। ভুললে চলবে না যে, বিদ্যাসাগরের ঠাকুমা এই সুতো কেটেই তাঁর পরিবারের ভরণপোষণ করতেন।
     
    কিন্তু একের পর এক শিল্পকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা এবং জমিদারি থেকে মহিলাদের উচ্ছেদ ক্রমশ তাঁদের ঘরবন্দি করে দেয়। কাজেই দ্বারকানাথের সঙ্গে কোনও মহিলার তুলনা টানা বোধহয় ঠিক নয়।
  • সিএস | 49.37.32.48 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ০০:১১512744
  • ছিঃ ছিঃ, এনামূলবাবু লিখেছি।
     
      
  • স্বাতী রায় | 117.194.39.39 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৩:১২512754
  • @এলেবেলে উপনিবেশ মেয়েদের অন্তপুর নিবাসী করেছে এই  তত্ত্বের সমর্থনে আমি যথেষ্ট তথ্য পাইনি এখনো। আর এছাড়াও আমার ধারণা ( যেটা আমি এর আগেও বাংলার সুত কাটুনি মেয়েদের নিয়ে একটি লেখায় বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম ) যে মেয়ে দের cheap labour ছাড়া আর কোন ভাবে দেখা হয় নি বলেই আমার ধারণা। এবং বিদ্যাসাগরের ঠাকুমার সুতো কেটে ভরণ পোষণের গল্পটি, পিতৃ দত্ত ব্রহ্মত্র জমি, বসতবাড়ির ( এবং নিশ্চয় সেই সঙ্গে সেই সময়ের প্রথা অনুসারে বাড়ির দাওয়ায় এটা সেটার থেকে শাক সবজি পাওয়াও ছিল সঙ্গে) সাপোর্ট ছাড়া আমার মতে ধোপে টেকে না। টিকে অনেকেই অনেক ভাবে থাকত। অনেকটা পরের সময়ে হরিহরের টাকা না এলে সর্বজয়া ও থাকত, সুতো না কেটেই। 
     
    জমিদারি থেকে মেয়েদের উচ্ছেদ মেয়েদের ঘরবন্দী করে দেয় এই তত্ত্ব টিও আমার মতে নেহাতই অদ্ভুত কারণ বাংলা দেশের কত শতাংশ মেয়ের জমিদারি ছিল এইটা আমি এখনো জানতে পারিনি। উপনিবেশ আমলে শিল্পের ধ্বসের কারণে অবশ্যই দেশের অর্থনীতিতে ছাপ ফেলেছিল, কিন্তু সেই অর্থ নীতি মূলত পুরুষের অর্থ নীতি। মেয়েরা তার নিয়ন্ত্রণ করত না বলেই মনে হয়।  এক আধ জন ব্যতিক্রম সব সময়ই থাকেন। আজকেও একজন কিরণ মজুমদার শ কে দিয়ে ভারতের সব মেয়েদের জেনারালাইজ করা যায় কি ? 
  • স্বাতী রায় | 117.194.39.39 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৩:১৬512756
  • @সি এস, অনেক অনেক ধন্যবাদ রেফারেন্সের জন্য। বই গুলো জোগাড় করার চেষ্টা করব। আমার নিজের যেহেতু ইতিহাসের জ্ঞান শূন্য, অথচ জানার ইচ্ছে ষোল আনা,  তাই এই রেফারেন্স গুলো খুব কাজে লাগবে। আরও পেলে আরো দেবেন প্লিজ। 
  • স্বাতী রায় | 117.194.39.39 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ১৩:২৮512757
  • @ঐশিকা, @সম্বিৎ @অমিতাভ বাবু ধন্যবাদ। সত্যিই এই রকম মতামত আরও পড়তে/ লিখতে উৎসাহ দেয়। 
     
    সম্বিত, এইটা যেটা বললি, সত্যিই খুব ভাল কাজের জায়গা। কেন ফ্যামিলি প্ল্যানিং এর অভাব ছিল, কিভাবে আধিপত্য বিস্তারের ইচ্ছা ধর্মের প্রভাবে পুত্রার্থে ক্রিয়তে ভার্যার মত  mandatory reproduction  মন্ত্রে বদলে গেল , এবং আরও পরে কিভাবে পুত্র শব্দের ই অর্থ সংকোচন হল - আমার তো খুব ইন্টারেস্টিং লাগে ব্যাপারটা। কিন্তু সংস্কৃত জ্ঞানের অভাবে বার বার পিছিয়ে আসছি। 
  • | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২১:৫৯512774
  • এলেবেলেকে উত্তর দিতে এসে দেখছি স্বাতী আগেই লিখে ফেলেছে। হ্যাঁ ১৩.১২র পোস্টে অক্ষরে অক্ষরে একমত। বল্লালসেন ইত্যাদিদের আমলে কি মেয়েদের নিজস্ব রোজগার ছিল? বা তার পরে? এলেবেলে শক্তপোক্ত রেফারেন্স দেবেন প্লীজ। পড়ে দেখব।
  • এলেবেলে | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২২:৫২512777
  • স্বাতীদির উত্তরের প্রেক্ষিতে আমার তিনটে কথা বলার আছে।
     
    ১. বাংলায় দায়ভাগ প্রথা বহাল থাকার কারণে নারীদের আর্থিক অবস্থা ভারতবর্ষের বাকি অঞ্চলের নারীদের থেকে বেশি পোক্ত ছিল। সেই কারণেই দেখতে পাচ্ছি, ১৭৯০ সালে দশসালা বন্দোবস্তের সময় বাংলার সরকারি রাজস্ব জমার মোট পরিমাণের ১৭.১৫% বা ৩২,৬৬,০০০ টাকা রাজস্ব দিচ্ছেন বর্ধমানের রানি; রানি ভবানী দিচ্ছেন মোট রাজস্বের ১১.৮১% এবং দিনাজপুরের রানি দিচ্ছেন ৭.৭৯%। মানে এই তিনজন নারী বাংলার মোট রাজস্বের ৩৬% দিচ্ছেন। অথচ ১৮০০ সালে বর্ধমানের রানি ছাড়া আর কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না। এই না পাওয়ার কারণ ঔপনিবেশিক হিন্দু আইনের দৌলতে বাংলায় দায়ভাগ প্রথার বিলুপ্তি।
     
    তাতে বাংলায় কতজন নারী জমিদার ছিলেন সেটা বড় কথা নয় (সে হিসেবে বাংলায় দ্বারকানাথই বা কতজন ছিলেন?) কিন্তু তাঁরা ৩২ লক্ষ টাকা খাজনা দেওয়ার মতো বিশাল জমিদারি পরিচালনা করতেন। এবং তাঁরা কোনও অবস্থাতেই ‘disqualified landholders’ ছিলেন না। উপনিবেশ সে তকমাটা চাপিয়ে দেয়।
     
    ২. লবণ শিল্প, বস্ত্রশিল্প, রেশম শিল্প এবং নীলশিল্প - এই প্রত্যেকটা শিল্পেই কারিগর ও শ্রমিকদের গোটা পরিবারই নিযুক্ত থাকত। বিশেষত বস্ত্রশিল্প প্রসঙ্গে রবার্ট ওরম (Robert Orme) লিখেছেন, বাংলায় এমন একটি গ্রামও দেখা যায় না যেখানে পরিবারের প্রত্যেকটি পুরুষ, নারী ও শিশু কাপড় তৈরির কাজে নিযুক্ত নয়। কাজেই এখানে চিপ লেবারের কনসেপ্টটা প্রযোজ্য নয়। এমনকি আজও গ্রামবাংলায় বিশেষত পাট চাষের ক্ষেত্রে গোটা কৃষক পরিবার নিযুক্ত থাকেন। এই শিল্পগুলো ধ্বংস হওয়ার ফলে নারীরা কাজ হারাতে বাধ্য হন।
     
    ৩. সুতো কাটুনিদের প্রসঙ্গে বলি, ১৭৩৬ সালে ঢাকার ইংরেজ কুঠির একটি চিঠি থেকে দেখা যাচ্ছে একজন সুতো কাটুনি মাসে আয় করেন এক টাকা সাড়ে তিন আনা (চালের দাম টাকায় দু'মন) এবং জন টেলর জানাচ্ছেন একজন সুতো কাটুনি এবং একজন সাধারণ তাঁতি বা তাঁতির সহকারীর উপার্জনও তাই ছিল। প্রসঙ্গত ১৮২৮ সালের ৫ জানুয়ারি এক চরকা কাটনির দরখাস্ত সংবাদপত্রে সেকালের কথা-য় আছে। সেটা পড়া যেতে পারে।
  • স্বাতী রায় | 117.194.41.35 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫০512781
  • @এলেবেলে, উপনিবেশিক আইনে বাংলায় দায়ভাগ তুলে দেওয়া হয়েছিল এমন কিন্তু পাচ্ছি না। আপনার আগে দেওয়া রেফারেন্স বই পড়েও এমন বুঝিনি। উল্টো দিকে ব্রিটিশ আমলে মেয়েরা সম্পত্তি নিয়ে মামলা করেছেন জানি। মেয়েদের সম্পত্তিতে অধিকার আইন বিরুদ্ধ হলে সেটা কিভাবে সম্ভব হয়? আর আমি আইনজ্ঞ নই, তাই জোর দিয়ে বলতে পারব না, তবে আমি যতদূর জানি আজ অবধি বাংলার উত্তরাধিকার এর বিষয়টি দায়ভাগ প্রথা মেনেই হয়, উত্তর ভারতের মত মিতক্ষরা পদ্ধতি মেনে হয় না। কাজেই উপনিবেশ দায়ভাগ প্রথা লোপ করেছিল এমনটা হয়ত সত্যি নয়। কোন আইনজ্ঞ যদি ব্যাপারটা ক্লারিফাই করেন তো ভাল হয়। 
     
    মেয়েদের disqualified landlord বলাটা আমি মোটেই সাপোর্ট করি না। কিন্তু প্রতিটি সমস্যায় যদি মহিলা জমিদার অবরোধ বাসিনী হন এবং কোন পুরুষ তার বকলমে কাজ চালান, এবং বোঝার কোন জায়গা থাকে না যে প্রতিটি mismanagement এর দায় আসলে মালকিনের নাকি তার অনুগত সেবকের, এবং বিচার সভাতেও মালকিন পর্দানশীন হওয়ায় হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য নিজের মুখে বলতে না পারেন, তার হয়ে তার নায়েব দেওয়ান হাজিরা দেন, তাহলে বিদেশি শাসক কেন এই তকমা দেন সেটা অল্প অল্প বোঝা যায়। মেয়েরা অবরোধবাসিনী স্বেচ্ছায়, কোন ব্রেন ওয়াশিং এবং সামাজিক চাপ ছাড়াই হয়েছিলেন এতটা ঠিক মনে করতে পারছি না। 
     
    আর তিনজন মিলে যত টাকার ই খাজনা দিন তাতে সামগ্রিক কোন ছবি ফুটে ওঠে না। 
     
    আর হ্যা আজও গ্রামে চাষের কাজে বাড়ির মেয়েরা যে unpaid লেবার দেন সেটা সম্পূর্ন তাদের মাথায় পিতৃতান্ত্রিক হাত বুলিয়ে আদায় করা হয়। সেটা তাদের কাজের burden কে শুধু ডবল ট্রিপল করে। অথচ তাদের হাতে পয়সা আসে না, কোন সম্পদ তৈরি হয় না, জমির মালিকানা র নথিতেও তাদের নাম ওঠান খুব শক্ত ( সরকারি পাটটা বিলোনোর সময় কিছু কিছু জমি মেয়েদের নামে করার চেষ্টা করা হলেও কার্যত তা নগন্য। )। আজও পেইড labour এর কাজে ছেলেরা আগে সুযোগ পান বেশির ভাগ জায়গায়। পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে তবে বাড়ির বউ মেয়ের ডাক পড়ে।  অবশ্য তারপর সেই বউ কে ত্যাগ করা বা তালাক দিলে সেই জমির ভাগ সে মোটেই পেত না বছর কুড়ি আগেও। ঠিক আজকের কথা জানি না। 
     
    এবং ৩ নম্বর প্রশ্নএর উত্তর আমি ইতিপূর্বে গুরুর ই পাতায় থাকা একটি প্রবন্ধে বিশদে আলোচনা করেছি। ওই সব চিঠি পড়েও কেন আমার ধারণা বদলায়নি  সেটা সেখানে বিশদে আলোচনা করা আছে। এ ছাড়া আর নতুন করে বলার কিছু নেই। 
     
     
  • স্বাতী রায় | 117.194.41.35 | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫৪512782
  • আর হ্যাঁ আমার মনে হয় যে হিন্দু মেয়েদের অন্তপুর এ ঠেলে পাঠিয়েছে আমাদের হিন্দুসমাজই । সেই   ঘোর বীরত্বের কাজটি করতে কোন উপনিবেশের শাসন লাগেনি। 
  • এলেবেলে | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০০:০৫512783
  • সুশীল চৌধুরী জানাচ্ছেন যে বস্ত্রশিল্পে অবক্ষয়ের ফলে অন্ততপক্ষে ২৫ লাখ মহিলা সুতো কাটুনি সম্পূর্ণ বেকার হয়ে যান। এঁরা কি অন্তঃপুরবাসিনী ছিলেন? বিশেষত ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের পরে যেখানে এক কোটি মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যান, সেখানে কেবল বস্ত্রশিল্পে ২৫ লাখ মহিলার উপস্থিতি কি খুবই নগণ্য? 
     
    রানি ভবানী কিংবা রানি বিষ্ণুকুমারী অবরোধবাসিনী ছিলেন? 
     
    না। ঔপনিবেশিক হিন্দু আইনে দায়ভাগ এবং মিতাক্ষরার মধ্যে কোনও পার্থক্য রাখা হয়নি।
  • এলেবেলে | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০০:০৯512784
  • চিঠিটার উল্লেখ ছাড়াও আমি নির্দিষ্টভাবে সুতো কাটুনি মহিলাদের মাসিক রোজগারের কথা বলেছি। সুশীল চৌধুরীর বই থেকেই নেওয়া। তাই দিয়ে সে আমলে একজন মহিলা মাসে প্রায় ৯০ কেজি চাল কিনতে সক্ষম। সেটা বোধহয় খুব নগণ্য রোজগার নয়।
  • স্বাতী রায় | 117.194.41.35 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০০:৪১512786
  • সুশীল চৌধুরীর বই আমি আগাপাসতলা বেশ কয়েক বার পড়েছি। আর তা ছাড়াও আরও অনেক বই বিশেষত ইকোনমিক হিস্ট্রির বই এবং বিভিন্ন গবেষণা পত্র, সরকারি দলিল ইত্যাদি রেফার করেই আমি গোটা বাংলা জুড়ে সুতো কাটুনিদের গড় আয় মোটেই সুবিধাজনক ছিল না  এই সিদ্ধান্তে এসেছি। আর ওই প্রবন্ধে সেসব রেফারেন্স ও দেওয়া আছে। এই নিয়ে এই থ্রেডে আর কথা বলব না। 
     
    ওই যে মেয়েরা কর্ম চ্যুত হয়েছিল, তার মধ্যে বিভিন্ন শ্রেণীর বিভিন্ন স্তরের , বিভিন্ন ধরনের ( বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত, বিবাহিত, বাপের বাড়িতে বাস, শ্বশুর ঘরের বাসিন্দা ইত্যাদি ) মেয়েরা  ছিল। তাদের সবার ক্ষেত্রে অবরোধ বাসিনী কথাটার অর্থ এবং মাত্রা একরকম নয়। নিম্নবিত্ত মেয়েদের অবরোধ বাসিনী হওয়ার জো কখনই ছিল না। কিন্তু সেই বিত্ত সঞ্চয় উর্ধমুখী হত, অমনি sanskritisation এর চাপে মেয়েরা ঘরবন্দী হত বলেই জানি। দু চার জন ব্যতিক্রম সব সময়েই থাকে। 
     
    আর মেয়েদের জমিদারির ক্ষেত্রে যে পর্দা প্রথা প্রচণ্ড সমস্যার তৈরি করেছিল, একথা অনেক বইতেই আছে। আপনার রেফারেন্স দেওয়া বইতেই আছে। 
     
    আপনি বলেছেন, উপনিবেশিক আইনে দায়ভাগ আর মিতক্ষরার কোন পার্থক্য ছিল না - প্রমাণ দেবেন। পড়ব। এবং এখন আইনে তাহলে দায়ভাগ এল কোথা থেকে সেটাও ট্রেস করবেন। নাকি এখন আইনে দায়ভাগ নেই? রেফারেন্স সহ জানাবেন।  অবশ্যই পড়ব। 
  • r2h | 192.139.20.199 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০০:৫০512788
    • স্বাতী রায় | ১২ অক্টোবর ২০২২ ২৩:৫০
    • ... বিচার সভাতেও মালকিন পর্দানশীন হওয়ায় হাজির হয়ে নিজের বক্তব্য নিজের মুখে বলতে না পারেন, তার হয়ে তার নায়েব দেওয়ান হাজিরা দেন, তাহলে বিদেশি শাসক কেন এই তকমা দেন...
    এটা খুবই যৌক্তিক মনে হয়, কিন্তু একটা ক্যাচ আছে।

    প্রচলিত সামাজিক সিস্টেমে হায়ারার্কি আদব কায়দা ইত্যাদি থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোন্পানীর হাতে রাজদন্ড গেল, সেটা একটা বড় ধাক্কা। এটা একটু সাবজেক্টিভ বোধহয়। বিচারকর্তার সামনে মহিলা জমিদার মুখ খুলতে পারছেন না - এর মধ্যে অনেকগুলি পার্সেপ্টিভ জটিলতা ঢুকে গেল।

    সত্যজিত রায়ের যখন ছোট ছিলাম- এর এই জায়গাটা মনে পড়লো; খুব একটা প্রাসঙ্গিক বলা যাবে না হয়তো।
    "ছোকরা রেকর্ডিস্ট এসে চোঙা-টাকে নেড়েচেড়ে মাসিকে ঠিক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল। তারপর মাসির সামনেই প্যাকেট থেকে সিগারেট বার করে সেটাকে শূণ্যে ছুঁড়ে দিয়ে ঠোঁট দিয়ে লুফে নিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে। বুলাকাকা পরে বলেছিলেন কোনো মহিলা গাইয়ে এলেই নাকি রেকর্ডিস্ট তাঁদের দেখিয়ে দেখিয়ে এইসব চালিয়াতি করেন। আমার বিশ্বাস সাহেবের সিগারেট জাগলিং দেখে মাসির গলা আরো শুকিয়ে গিয়েছিল।"

    ভারতীয় সমাজে সহবত একটা বড় ব্যাপার ছিল। বৃটিশদেরও নিজেদের আছে, তবে নেটিভদের জন্যে সেসব বরাদ্দ না থাকায় সামাজিক অপমান ইন্টিমিডেশন ইত্যাদি ঠিক সেরকম ভাবে মাপা না গেলেও ইম্প্যাক্ট বড়।
  • Amit | 121.200.237.26 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৩২512789
  • হুতো বাবুর  ০০:৫০ পোস্ট কিছুই বুঝলাম না। তবে কত ​​​​​​​টুকুই ​​​​​​​আর বুঝি ​​​​​​​এ ​​​​​​​জ্যাবনে :) 
     
    তবে আগের পোস্ট গুলোর ভিত্তিতে দু একখান মন্তব্য। 
     
    ১। ওয়ার্কফোর্সে ২৫ লাখ মহিলা সুতো কাটুনি র উপস্থিতি মেয়েদের সামাজিক অবস্থান কিভাবে ডিফাইন করতে পারে ? জাস্ট ম্যানুয়াল লেবার হিসেবে কাজ করা আর পরিবার বা সামাজিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতায়ন দুটো নিশ্চয় এক জিনিস নয়। তাহলে আজকের যারা গৃহশ্রমিক তাদের অনেককে রেগুলার মাতাল বরের হাতে ঠেঙানি খেতে হয়না। ঠেঙানি খেয়েও সেই বরকে তারা অনেকেই  ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বিদেয় করতে পারেন না কারণ একা মেয়েদের সেফ থাকার মতো সমাজব্যবস্থা জাস্ট নেই। 
     
    ২। কয়েকজন রানি ভবানী কিংবা রানি বিষ্ণুকুমারী দিয়ে সেখানকার সময়ের সমাজে এভারেজ মেয়েদের অবস্থান ডিফাইন করা যায়কি ? প্লাস এনারা কেউ কি নিজের অধিকারে বা উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারি পেয়েছিলেন ? বিধবা হবার পর এনারা দায়িত্ব সামলেছিলেন , নাহলে নিজের আত্মীয়স্বজন রাই সব লুটেপুটে নিত  বা এনাদের নাবালক পুত্র দের বিষ খাইয়ে মারতো। এরকম দুএকজন বীরাঙ্গনা বা ব্যাক্তিত্যশালিনি সব দেশেই কয়েকজন পাওয়া যায়। তাই দিয়ে জেনেরালাইসেশন করা যায় কি ? 
     
    সেদিক দিয়ে আজকে দেখলে গত ৫০ বছরে ইন্ডিয়া পাকিস্তান বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কা প্রত্যেক টা দেশে মহিলা প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট হয়েছে। আম্রিগাতে এখনো অবধি মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি। তাই দিয়ে কি প্রমান হয়ে গেলো এভারেজ মহিলাদের সামাজিক অবস্থান এই দেশগুলোতে আজকে আম্রিগার চাইতে ভালো ? 
  • এলেবেলে | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১২:০৫512799
  • স্বাতীদি, আপনি লিখেছেন --- আপনি বলেছেন, উপনিবেশিক আইনে দায়ভাগ আর মিতক্ষরার কোন পার্থক্য ছিল না - প্রমাণ দেবেন। পড়ব। এবং এখন আইনে তাহলে দায়ভাগ এল কোথা থেকে সেটাও ট্রেস করবেন। নাকি এখন আইনে দায়ভাগ নেই? রেফারেন্স সহ জানাবেন।  অবশ্যই পড়ব। 
     
    এর প্রেক্ষিতে বলি, ব্রিটিশরা সারা দেশে একমাত্রিক আইন প্রণয়ন করেছিল। মিতাক্ষরাও সারা দেশে এক রকমের ছিল না। এর মূল চারটি ধারা ছিল বেনারস, মিথিলা, মহারাষ্ট্র ও দ্রাবিড় ধারা। একেকটি অঞ্চলে এক বা একাধিক গ্রন্থকে মান্য করা হত। যেমন বেনারস অঞ্চলে চলত বীরমিত্রোদয়, মিথিলায় বিবাদরত্নাকর, বিবাদচন্দ্রবিবাদচিন্তামণি  কিংবা মহারাষ্ট্রে ব্যবহারমুখ্য, বীরমিত্রোদয়নির্ণয়সিন্ধু ইত্যাদি। কিন্তু ঔপনিবেশিক আইনে এই বৈচিত্রকে ছেঁটে ফেলে একটা ইউনিফর্ম কোড চালু করা হয়।
     
    সম্পত্তির অধিকার নিয়ে নারীরা মামলা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তার অধিকাংশ মামলাতেই তাঁরা সেই অধিকার ফিরে পাননি। বিশেষত বিধবা মহিলার উত্তরাধিকার প্রসঙ্গে Chastity বা সতীত্বের অছিলাটি জুড়ে দেওয়ার কারণে ১৮৭৩ সালে কেরি কলিতানিকে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে হয়।
     
    স্বাধীন ভারতে মেয়েরা সম্পত্তির উত্তরাধিকার ফিরে পান দায়ভাগের কারণে নয়, হিন্দু কোড বিলের সৌজন্যে। পরাধীন ভারতবর্ষে তাঁদের থেকে এই অধিকারটি কেড়ে নেওয়ার কারণেই হিন্দু কোড বিল চালু করতে হয়। এই বিল চালু করতে গিয়ে কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভার নেতাদের কী পরিমাণ বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল, তার বিবরণ মণিকুন্তলা সেনের বইতে পাওয়া যায়। এখানেও মনে রাখতে হবে, হিন্দু কোড বিলও একটি ইউনিফর্ম কোড। 
     
     
    অমিতকে বলার এই যে প্রাক্‌-ব্রিটিশ ভারতীয় সমাজ পিতৃতান্ত্রিক ছিল না, তেমন দাবি কোত্থাও করা হয়নি। কিন্তু কেবল বস্ত্রশিল্পে প্রায় ২৫ লাখ সুতো কাটুনির উপস্থিতি অন্তত এটুকু প্রমাণ করে যে তাঁরা অন্তঃপুরবাসিনী ছিলেন না।
     
    //এনারা কেউ কি নিজের অধিকারে বা উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারি পেয়েছিলেন ?//
     
    আজ্ঞে না। মহিলারা নিজের অধিকারে বা উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারি পেতেন না। কিন্তু বাংলায় বিদ্যমান দায়ভাগ প্রথার কারণে স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁরা সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হতেন। বাকি ভারতে সেই সুযোগটুকুও ছিল না। অ্যাভারেজ অবস্থান ডিফাইন করার চেষ্টাই করা হয়নি। কেবল এটুকু বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে তৎকালীন বাংলায় যেমন গণ্ডা গণ্ডা দ্বারকানাথ ছিলেন না, তেমনই গণ্ডা গণ্ডা ৩২ লাখ টাকা খাজনা দেওয়া মহিলা জমিদারও ছিলেন না।
  • স্বাতী রায় | 117.194.41.35 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫১512804
  • @r2h  ওরফে হুতো ঠিকই । প্রত্যেক সমাজের নিজস্ব চলন থাকে। সেটা বিদেশি শাসকের বোঝার দায় থাকে না। কিন্তু সমস্যা এই যে যে সহবত শিক্ষা একজন শাসক কে তার নিজের পক্ষ explain করতে বাধা দেয়, তাকে শাসক হিসেবে একজন প্রজাই বা কতদূর ট্রাস্ট করবেন? শাসক যদি নিজের প্রজাপালক ভূমিকার থেকে নিজের পর্দানশীন গৃহ বধূর ভূমিকা কে বেশি মান্যতা দেন বা দিতে বাধ্য হন, তাহলে সামাজিক সহবতের তথা তাঁর ভাল মেয়ে হয়ে থাকা আটকায় না, হয়ত ছাই ওড়ার আগেই তিনি নিজের গুণ কীর্তন শুনতে পারেন, কিন্তু প্রজা পালনের খুব উপকার নাও হতে পারে। আর পর্যবেক্ষকের পক্ষে বোঝা ও মুশকিল হয় যে আসলে তিনিই রাজ্য চালাচ্ছেন নাকি অন্য কেউ। এবং এও আমরা জানি যে বহু জায়গাতেই আত্মীয় বা কর্মচারীর হাতেই আসলে শাসন দণ্ড থাকত। 
     
    সত্যজিতের কথাতে একটা ব্যক্তিগত স্মৃতি মনে পড়ল। প্রথম যখন গাড়ি চালানো শিখতে যাই, আমার শিক্ষক আমাকে বলেছিলেন যে রাস্তা ঘাটে মেয়েদের গাড়ি চালানো দেখলে অনেকে অনেক বিচিত্র ব্যবহার করে, প্রচুর উদাহরণ দিয়েছিলেন, বলেছিলেন একদম ওসব পাত্তা না দিতে। একবার না বারবার বলেছিলেন। উনি চেয়েছিলেন এইসব কিছুতে যেন ঘাবড়ে না চাই, স্কিল টা যেন আয়ত্ত্বে আসে। একজন প্রফেশনাল হিসেবে আমার সাকসেস টা ওঁর কাছে গুরুত্বপূর্ন ছিল। কনক দাশের সাকসেস নিয়ে মনে হয় পরিবারের লোকের তত মাথাব্যথা ছিল না, না হলে বুলা কাকা এই জ্ঞান টি আগেই সরবরাহ করে মাসীর গান গাওয়ার রাস্তা টা সুগম করতেন। আর কনক দাশের রেকর্ডিং এর সময় যে নার্ভাসনেসের পরিচয় ওই লেখায় ফুটে উঠেছে, সেটাও কি কিয়দংশে পিতৃতন্ত্রের অবদান নয়? 
  • স্বাতী রায় | 117.194.41.35 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫৬512805
  • @এলেবেলে মিতক্ষরা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। আমার মাথা ব্যথা দায়ভাগ নিয়ে।  সতীত্ব এর ধারণা জুডিশিয়ারি তে আটকে যাওয়া ও ইংরেজ এবং আমাদের সমাজের  দ্বিপাক্ষিক পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের কারণেই এই নিয়েও কোন দ্বিমত নেই। তবে আপনার ওই কথাটি যে ব্রিটিশ "ইউনিফর্ম কোড বিল" হওয়ার কারণে মেয়েদের উত্তরাধিকার চলে গেল ( বিশেষত যেখানে তারপরেও মেয়েরা উত্তরাধিকার নিয়ে মামলা ঢুকছেন, সে যতই সতীত্বের দাবিতে সেটা নাকচ হোক না কেন মামলা যে ঠুকতে পেরেছেন এটাই প্রমাণ করে যে মেয়েদের উত্তরাধিকার সামাজিক ভাবে অজানা ছিল না এবং মিতকশরা মেয়েদের উত্তরাধিকার মানে না, সেটা দায়ভাগ ই মানে ) আর আবার হিন্দু কোড বিল পাস হলে ফিরে এল , এইটা আরও মজবুত সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া মানতে পারছি না।   নিজেও আরও বিশদে পড়ব। আইনের ধারা উপধারা ধরে ট্রেস করতে চেষ্টা করব সত্যিই কতটা আগের কানুন ব্রিটিশ আইনে আইনগত ভাবে খারিজ করা হয়েছিল আর আবার কিভাবে ফিরিয়ে আনা হল - তবে কাজটা দুরূহ এবং সময় সাপেক্ষ। আপনার জানা থাকলে এই বিষয়ে ধারা উপধারা সহ একটি নিবন্ধ আশা করব। 
  • r2h | 192.139.20.199 | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১৭:৪৮512813
    • স্বাতী রায় | ১৩ অক্টোবর ২০২২ ১২:৫১
    • ...ছাই ওড়ার আগেই তিনি নিজের গুণ কীর্তন শুনতে পারেন, কিন্তু প্রজা পালনের খুব উপকার নাও হতে পারে।
      ...কিয়দংশে পিতৃতন্ত্রের অবদান নয়? 
    তা মানি। এমনিতেও পুরনো কায়দায় নারীর সম্মান ব্যাপারটা প্রায় সবসময়ই আসলে শিভালরির উদযাপন।
     
    তবে, এই যে পর্যবেক্ষকের কাছে নিজের কথা বলা, সামাজিকভাবে প্রশাসনের এইসব মাথাকে গ্রহণ করাই একটা চাপের ব্যাপার, পর্যবেক্ষক কোন গুণে পর্যবেক্ষক হলো, সে তো নিতান্ত একটা বাণিজ্যিক সংস্থার কর্মচারী, রাজা কিংবা ঈশ্বরের সঙ্গে কোন সম্পর্কই নেই।
    একই সঙ্গে এটাও ঠিক, এই পরিস্থিতির শিকার মেয়েদেরই হতে হয়েছে প্রাথমিকভাবে, আর সেটা নিজেদের সমাজেরই দায়।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে মতামত দিন