এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  ইতিহাস

  • ধর্মাধর্ম - চতুর্থ পর্ব - প্রথম ভাগ 

    Kishore Ghosal লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০৬ জুলাই ২০২২ | ১৬৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৩ জন)
  • চতুর্থ পর্ব - ০ থেকে ১৩০০ সি.ই. - প্রথম ভাগ

    ৪.১.১ পূবের প্রজ্ঞা পশ্চিমে ও খ্রিষ্টধর্মের সূচনা
    সেই সিন্ধু সভ্যতার কাল থেকেই পশ্চিম এশিয়ার আরব কিংবা মেসোপটেমিয়ার সঙ্গে ভারতের যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল, সে কথা আমরা আগেই দেখেছি। পরবর্তীকালে সাংস্কৃতিক এবং দার্শনিক চিন্তাধারার আদান-প্রদানও লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রাক-বৌদ্ধ যুগেও ভারতীয় দর্শনের সঙ্গে গ্রীসের ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল। হয়তো ভারতীয় দার্শনিকরা এথেন্স, স্পার্টা বা করিন্থ গিয়েছিলেন, গ্রীক দার্শনিকদের উপনিষদের দর্শন শুনিয়েছিলেন। দিগ্বিজয়ী আলেজাণ্ডারের সমসাময়িক গ্রীক ঐতিহাসিক অ্যরিস্টোজেনাসের লেখা থেকে জানা যায়, বিখ্যাত গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস (৪৬৯-৩৯৯ বি.সি.ই)-এর সঙ্গে এথেন্সে কোন এক ভারতীয় পণ্ডিতের সাক্ষাৎ হয়েছিল। অনুমান করা হয়, ভারতীয় প্রজ্ঞার প্রভাবেই, পিথাগোরাস (৫৭০-৪৯৫ বি.সি.ই), প্লেটো (৪২৭-৩৪৭ বি.সি.ই) এবং পরবর্তী কালে এথেন্সের স্টোয়িসিজ্‌ম্‌ (Stoicism) দর্শনে - বি.সি.ই তৃতীয় শতাব্দীর শুরুর দিকে যার সূচনা - পুনর্জন্ম এবং আত্মার দেহান্তরের বিষয় এসেছিল।
     
    এর পরে, যিশুর জন্মের প্রায় দু’শ বছর আগে থেকে আলেকজান্দ্রিয়া এবং প্যালেস্টাইনের ইহুদিদের একাংশের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য এবং রহস্যময় কিছু ধর্মীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মিশরের এই রহস্যময় ধার্মিকদের বলা হত থেরাপিউট (Therapeutae) এবং প্যালেস্টাইনে তাঁদের আধ্যাত্মিক ভাইয়েরা নিজেদের এসেনেস (Essenes) বা নাজারিনস (Nazarenes) বলতেন। সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বকালে পাঁচটি গ্রীক রাজার দরবারে বৌদ্ধ প্রচারকদের পাঠিয়েছিলেন এবং তাদের মধ্যে আলেকজান্দ্রিয়া ছিল অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু সে কথা আগেই বলেছি। 

    “থেরাপিউট” এই ল্যাটিন শব্দের অর্থ, “যিনি ঈশ্বরের সেবক”, “যিনি মানুষকে সেবা করেন” এবং “পীড়িত মানুষকে আরোগ্য করেন”। এই সেবা শুধুমাত্র অসুস্থ মানুষকে সেবা করে আরোগ্য করা নয়। বরং দুঃখশোকে বিষণ্ণ অজ্ঞান অসুস্থকে, জ্ঞানের আলোকেও আরোগ্য করে তোলা। যে কথাটি গৌতমবুদ্ধ এবং তাঁর ধর্মের সারকথা। এই “থেরাপিউট” শব্দটি একটি ল্যাটিন শব্দ হলেও, এর “থেরা” শব্দটি বৌদ্ধদের প্রাচীনপন্থী “থেরবাদ” থেকেই হয়তো গ্রহণ করা হয়েছে। বৌদ্ধ অহর্ৎদের সঙ্ঘ-বাসের সময়, তাঁদের ভেষজ চিকিৎসারও যে চর্চা করতে হত, সে কথা আগেই বলেছি। যার ফলে পরবর্তীকালে “থেরাপিউটিক” (Theraputic) শব্দটি ডাক্তারি শাস্ত্রে চিকিৎসা এবং ওষুধকেও বোঝায়। থেরাপি (Therapy) শব্দটিও আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যার নানান প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত – যেমন Physiotherapy, Psychotherapy ইত্যাদি।

    আলেকজান্দ্রিয়া শহরের আশেপাশে এই থেরাপিউট গোষ্ঠীর মানুষেরা যে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। থেরাপিউটরা বৌদ্ধ অর্হৎ বা ভিক্ষুদের মতোই শহরের বাইরে বাস করতেন। তাঁরা কুশের আসনে বসে ধ্যান করতেন। তাঁরা মদ্য ও মাংস খেতেন না এবং ব্রহ্মচর্য পালন করতেন। তাঁরা সকলেই ছিলেন স্বেচ্ছা-ভিক্ষু বা সন্ন্যাসী এবং কোন কোন বিশেষ দিনে উপবাস করতেন। তাঁরা সাদা বস্ত্র পরতেন, এবং সকলে মিলে একসঙ্গে ধর্মকথা পাঠ কিংবা সুর করে শ্লোক উচ্চারণ করতেন। এমন অদ্ভূত আচরণের ধর্ম-সম্প্রদায়ের কথা, এর আগে মিশরে কেউ কোনোদিন দেখেনি এবং শোনেওনি।   

    এসেনেস সম্প্রদায় বাস করতেন, ডেড সী (Dead Sea)-র পাড়ে পাহাড় কেটে বানানো কিছু গুহায়, প্রাচীন জেরিকো শহরের উল্টোদিকে। এই গুহাগুলি যে সময়ের, তার কিছুদিন আগেই ভারতের পশ্চিম উপকূলে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা গুহা-বিহারে থাকতে শুরু করেছিলেন এবং সেখানে চৈত্য বা স্তূপ নির্মাণ করে, নির্জনে ধ্যান করতে পছন্দ করতেন। বৌদ্ধদের মতো এসেনেস এবং থেরাপিউটরাও ছিলেন ব্রহ্মচর্য ব্রতধারী সন্ন্যাসী সম্প্রদায়। শুধু প্যালেস্টাইন কেন, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের কোন দেশে এবং কোন সংস্কৃতিতেই এমন অদ্ভূত সন্ন্যাসী সম্প্রদায়কে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। যাঁরা অত্যন্ত কম পরিমাণে নিরামিষ আহার করেন, মদ্যপান করেন না, যৌনজীবন ত্যাগ করেছেন, এবং ঈশ্বর-জ্ঞানের সন্ধানে, দিনের অধিকাংশ সময় নিবিষ্ট চিন্তা (meditation) করেন।
     
    আলেকজান্দ্রিয়া শহরের এক প্রাজ্ঞ মানুষ ছিলেন ফিলো (Philo)। মার্কোটিস সাগরের তীরে কোন এক থেরাপিউট সঙ্ঘে তিনি কিছুদিন ছিলেন, তাঁর লেখা থেকে এই সকল তথ্য পাওয়া যায়। তিনি আরও লিখেছেন, জেরুজালেমের মন্দিরে-মন্দিরে তখন নিয়মিত পশুবলির প্রথা প্রচলিত ছিল, এসেনেস সম্প্রদায় এই প্রথার তীব্র বিরোধিতা করতেন। তাঁরা ইহুদিদের মূর্তিপূজা সহ কোন ধর্মীয় গোঁড়ামিই মানতেন না এবং মোজেসিয় ধর্মের কঠোর নিয়মগুলিকেও অস্বীকার করতেন। যার ফলে সমসাময়িক প্রচলিত ধর্ম-বিশ্বাসী সম্প্রদায়গুলি, এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষক রাজন্যবর্গ, এসেনেসদের বিষ চোখে দেখতেন।

    ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল বহুদিন ধরেই বহু জাতি, সংস্কৃতি ও ধর্মের সাক্ষী থেকেছে। এক সময়ের মিশর, ব্যাবিলন, মেসোপটেমিয়া সভ্যতা এবং পরবর্তী কালে পারস্য, গ্রীক এবং রোমান সভ্যতা। প্রত্যেকটি সভ্যতারই নিজস্ব ধর্ম দেব-দেবী, সংস্কার, উপাসনা, বিধিনিষেধ ছিল। তবে বিজয়ী রাজারা সাধারণতঃ বিজিত প্রজাদের ধর্মে হস্তক্ষেপ করতেন না। অতএব রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তীর্ণ সীমার মধ্যে যেমন নানান জাতির বসবাস ছিল, তেমনই ছিল নানান ধর্মে বিশ্বাসীদের বিচিত্র আচরণ। এই ধর্মগুলির সবকটিতেই, বহু দেব-দেবীর মূর্তি (Polytheism) উপাসনার প্রচলন ছিল। এই উপাসনায় পুরোহিতদের প্রভাব ছিল অপরিসীম, কোন কোন সভ্যতায় রাজপুরোহিতের ক্ষমতা এবং প্রভাব রাজা বা সম্রাটের থেকে খুব কম ছিল না। ভারতের ব্রাহ্মণ্য পুরোহিতদের মতোই তাঁরাও যজমান এবং সাধারণ ভক্ত জনগণের থেকে প্রচুর ধনসম্পদ উপহার পেতেন (বলা ভাল, আদায় করতেন) এবং এই ধরনের উপাসনায় পশুবলি আবশ্যিক ছিল। সম্রাট অশোক পশুহিংসা নিষিদ্ধ করে, ব্রাহ্মণদের যেমন বিদ্বিষ্ট করে তুলেছিলেন, এসেনেসরাও তেমনি এই পুরোহিত সম্প্রদায় এবং শাসকগোষ্ঠীরও চক্ষুশূল হয়ে উঠেছিলেন।

    খ্রিষ্টিয় চতুর্থ শতকে, অখ্রিষ্টিয় (Non-Christian) এই সমস্ত ধর্মমতকে একত্রে খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা “পেগান ধর্ম” (Paganism) বলতে শুরু করেছিলেন। ল্যাটিন ভাষায় “পেগানাস” শব্দের অর্থ – গ্রামের মানুষ, দেহাতি। অর্থাৎ খ্রিষ্টানদের কাছে অখ্রিষ্টিয় ধর্মের মানুষরা – যাঁরা নেহাতই গ্রাম্য চাষাভুষো, তাঁরা অনেক দেবদেবীর মূর্তি পুজো করেন। পেগানিজমের প্রায় সমার্থক শব্দ “হিদেন” (heathen) – সাকারবাদী, ধর্মবোধহীন এবং বর্বর। যদিচ ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে বহু মানুষ আবার পেগান ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে উঠছেন, তবে তাঁদের ধর্মবিশ্বাস এবং সংস্কার প্রাচীন পেগান ধর্ম থেকে অনেকটাই আলাদা এবং পরিবর্তিত। নতুন এই ধর্মের নাম – নব্য-পেগানধর্ম (Neo-Paganism)। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে নব্য-পেগান ধর্ম একান্তই অপ্রাসঙ্গিক, অতএব এসেনেস প্রসঙ্গেই আবার ফিরে যাওয়া যাক।
     
    এসেনেস সম্প্রদায় বৌদ্ধসঙ্ঘের মতোই দুইভাগে বিভক্ত ছিল। একদিকে ছিলেন ব্রতধারী সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীরা। যাঁরা জেরিকোর আশেপাশে দুর্গম এবং বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের গুহায় ধর্মচর্চা করতেন, আর এক দিকে ছিলেন গ্রাম ও শহরের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ –গৃহীশিষ্যরা। গৃহীশিষ্যরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতোই সংসার ধর্ম এবং কাজ কর্ম করতেন, তার সঙ্গে ধার্মিক, পবিত্র এবং আধ্যাত্মিক জীবনেরও চর্চা করতেন। শোনা যায় যিশুর দীক্ষাগুরু জন (Baptist John) এসেনেস সম্প্রদায়ের নির্জনবাসী সন্ন্যাসী ছিলেন। এসেনেস সম্প্রদায়ে যোগ দেওয়ার সময় নবীন সন্ন্যাসীদের দীক্ষিত (baptized) করা হত। এই দীক্ষা দানের প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে, নবীন বৌদ্ধভিক্ষুদের সঙ্ঘে (৩.৩.২ অধ্যায়) অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়াগুলির সঙ্গে বেশ মিল পাওয়া যায়।

    সালামিসের (কন্সট্যানসিয়া)-র সেন্ট এপিফেনিয়াস[1]-এর লেখা থেকে জানা যায়, এসেনেসদের নাজারিন, অথবা নাজারিনোও বলা হত। প্রাচীন ইজরায়েলে কিছু প্রাজ্ঞ মানুষকে নাজারাইটও বলা হত। এই নাজারাইটরা মন্দিরের উপাসনার সময় রক্তাক্ত বলি বা উৎসর্গের প্রথাকে তীব্র ধিক্কার এবং প্রতিবাদ করতেন। ফলতঃ মন্দিরের প্রাচীনপন্থী গোঁড়া পুরোহিতরা নাজারাইটদের রীতিমত ঘৃণা করতেন। তাঁরা তাঁদের ধর্মে বিশ্বাসী সকল মানুষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, দিনে অন্ততঃ তিনবার যেন ভগবানের কাছে সকলে প্রার্থনা করে, “হে ঈশ্বর, নাজারাইটদের ওপর আপনার চরম অভিশাপ বর্ষণ করুন”। অতএব নাজারিন এবং নাজারাইট সংঘগুলির প্রতি, সনাতনপন্থী পুরোহিতসম্প্রদায় এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষক শাসকগোষ্ঠী তীব্র বিদ্বেষী হয়ে উঠছিলেন।

    এরকম পরিস্থিতিতে, বি.সি.ই প্রথম শতাব্দীর শেষদিকে, এসেনেস এবং নাজারিন পণ্ডিতেরা ভবিষ্যৎ গণনা করে দেখেছিলেন, কিছুদিনের মধ্যেই তাঁদের মধ্যে আসছেন এক মহামানব। সেই মহামানবের নাম হবে যিশুখ্রিষ্ট - “খ্রিষ্ট” শব্দের অর্থ অভিষিক্ত; ইহুদিদের ভাষায় “মেশায়া” (Messiah) । তাঁদের সকলের এই বিশ্বাস ছিল, এসেনেস ও নাজারিনতো বটেই, সমগ্র ইহুদি জাতিরই তিনিই হবেন পরিত্রাতা এবং (ধর্মীয়) রাজা। তাঁদের এই গোপন ও গভীর আনন্দের সংবাদ, দেশের রাজা, পুরোহিত সম্প্রদায় এবং প্রশাসনের কানেও পৌঁছে গিয়েছিল। সে কথা আসবে পরবর্তী অধ্যায়ে।
     
    বাইবেলের সুসমাচারে জন বলেছেন, ক্রুসবিদ্ধ করার সময়, প্রধান বিচারক পিলেট[2] ভগবান যিশুর ক্রসে স্বাক্ষর করে লিখেছিলেন, “জেসাস, এক নাজারিন, ইহুদিদের এক রাজা (Jesus the Nazarene, the King of the Jews)”। যদিও অনেকে ইংরিজিতে এর অনুবাদ করেছেন, “জেসাস অব নাজারেথ”, অর্থাৎ নাজারেথ শহরের বাসিন্দা। কিন্তু গবেষণা করে দেখা গেছে, সে সময় নাজারেথ জায়গাটি একেবারেই গুরুত্বহীন জনপদ ছিল। ভগবান যিশুকে “নাজারেথ-শহরবাসী” এমন পরিচয় দেওয়ার কোন অর্থই হয় না। বরং অন্যান্য অধিকাংশ ভাষার অনুবাদে যে, “জেসাস দা নাজারিন” বলা হয়েছে, সেটাই অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ ধর্মান্ধ প্রাচীনপন্থী রোমান ও ইহুদিদের উচ্চ সংসদের পক্ষে, ভগবান যিশুকে ঘৃণিত নাজারিনদের নেতা হিসেবেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি ছিল। হয়তো শাসকগোষ্ঠীর ধারণা হয়েছিল, দলনেতাকে দৃষ্টান্তমূলক চরম শাস্তি দিলেই, নাজারিনদের বাকি সবাই ভয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।   

    ৪.১.২ ভগবান যিশুর শৈশবকাল

    বাইবেলের নূতন নিয়ম (the New Testament)-এর মথি (Matthew) লিখিত সুসমাচার (Gospel)-এর দ্বিতীয় অধ্যায় থেকেঃ-
    ২:১         রাজা হেরোদের সময়ে, যিহূদিয়ার বৈৎলেহমে যীশুর জন্ম হইলে পর, পূর্ব্বদেশ হইতে পণ্ডিতেরা যিরূশালেমে আসিয়া বলিলেন, যিহূদিদের নবজাত রাজা কোথায়?
    ২:২         কারণ আমরা তাঁহার তারাটি উদয়কালে দেখিয়া তাঁহাকে প্রণিপাত করিতে আসিয়াছি।
    ২:৩         ইহা শুনিয়া রাজা হেরোদ ও তাঁহার সহিত যিরূশালেমের সকল লোক, উদ্বিগ্ন হইল।
    ২:৪         তিনি প্রধান পুরোহিত ও লোকদের ধর্ম্মগুরু সকলকে একত্র করিয়া সেই খ্রিষ্ট কোথায় জন্মিবেন, তাঁহাদের কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন।
    ২:৫         তাঁহারা তাঁহাকে বলিলেন, যিহূদিয়ার অন্তর্গত বৈৎলেহমে, কারণ ভাববাদী দ্বারা এই রূপ লেখা আছে,-
    ২:৬         ‘বৈৎলেহম, যিহূদা-ভূমি, তুমি যিহূদার শাসনকর্ত্তাদের মধ্যে কোন অংশে ক্ষুদ্রতম নও, কারণ তোমার মধ্য হইতে এমন একজন নেতা আসিবেন যিনি আমার জাতি ইস্রায়েলকে পরিচালনা করিবেন’।
    ২:৭         তখন হেরোদ পণ্ডিতদের গোপনে ডাকিয়া, তারাটি কোন্‌ সময়ে দেখা গিয়াছিল তাহা তাঁহাদের নিকট হইতে বিশেষ করিয়া জানিয়া লইলেন;
    ২:৮         তোমরা গিয়া শিশুটির বিষয়ে সবিশেষ অনুসন্ধান কর এবং উদ্দেশ পাইলে আমাকে সংবাদ দিও, আমিও গিয়া যেন তাঁহাকে প্রণিপাত করিতে পারি, এই কথা বলিয়া তিনি বৈৎলেহমে তাঁহাদের পাঠাইয়া দিলেন।
    ২:৯         রাজার কথা শুনিয়া তাঁহারা চলিয়া গেলেন। আর যে তারাটি তাঁহারা উদয়কালে দেখিয়াছিলেন, তাহা তাঁহাদের অগ্রে অগ্রে, শিশুটি যেখানে ছিলেন সেই স্থানের উপরে আসিয়া স্থির হইয়া রহিল।
    ২:১০-১১    তারাটি দেখিয়া তাঁহারা অতিশয় আনন্দিত হইলেন এবং ঘরে প্রবেশ করিয়া শিশুটিকে তাঁহার মাতা মরিয়মের সঙ্গে দেখিতে পাইয়া, ভূমিষ্ঠ হইয়া প্রণিপাত করিলেন এবং আপনাদের পেটিকা খুলিয়া ‘স্বর্ণ, কুন্দুরু ও গন্ধরস’ তাঁহাকে উপহার দান করিলেন।
    ২:১২        পরে যেন হেরোদের নিকটে ফিরিয়া না যান, স্বপ্নে এই প্রত্যাদেশ পাইয়া তাঁহারা অন্য পথ দিয়া স্বদেশে চলিয়া গেলেন।
    ২:১৩       তাঁহারা চলিয়া গেলে পর, দেখ, প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোষেফকে দর্শন দিয়া বলিলেন, উঠ, শিশুটি ও তাঁহার মাতাকে লইয়া মিসরে পলায়ন কর; যত দিন আমি তোমাকে না বলিব, ততদিন সেইখানে থাক।
    ২:১৪        কারণ হেরোদ শিশুকে নাশ করিবার জন্য তাঁহার অন্বেষণে উদ্যত। তিনি উঠিয়া শিশু ও তাঁহার মাতাকে লইয়া রাত্রিযোগে মিসরে চলিয়া গেলেন।
    ২:১৫       এবং হেরোদের মৃত্যু পর্য্যন্ত সেখানে থাকিলেন; তাহাতে ভাববাদী দ্বারা প্রভু যে কথা বলিয়াছিলেন তাহা পূর্ণ হইল, - ‘আমি মিসর হইতে আমার পুত্রকে ডাকিয়া আনিলাম’।
    ২:১৬      পণ্ডিতেরা তাঁহাকে তুচ্ছ করিয়াছেন দেখিয়া হেরোদ অত্যন্ত উত্তেজিত হইলেন এবং তাঁহাদের নিকট যে সময়ের কথা বিশেষ করিয়া জানিয়া লইয়াছিলেন, সেই অনুসারে দুই বৎসর ও তাহার কম বয়সের যত বালক বৈৎলেহম ও তাহার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছিল, তিনি লোক পাঠাইয়া তাহাদের সকলকে হত্যা করাইলেন।
    ২:১৭       তখন যে কথা ভাববাদী যিরমেয়ের দ্বারা কথিত হইয়াছিল তাহা পূর্ণ হইল, -
    ২:১৮       ‘রামা পল্লিতে ধ্বনিত এক রব শোনা গেল, ক্রন্দন ও তীব্র বিলাপ। রাহেল আপন সন্তানদের জন্য রোদন করিতেছেন, সান্ত্বনা প্রাপ্ত হইতে চান না, কারণ তাহারা আর নাই’।
    ২:১৯       হেরোদের মৃত্যু হইলে পর প্রভুর দূত মিসরে যোষেফকে স্বপ্নে দর্শন দিয়া বলিলেন,
    ২:২০      উঠ, শিশুটি ও তাঁহার মাতাকে লইয়া ইস্রায়েলের দেশে চল, কারণ যাহারা শিশুর প্রাণনাশের চেষ্টা করিতেছিল, তাহাদের মৃত্যু হইয়াছে।
    ২:২১       তিনি উঠিয়া শিশু ও তাঁহার মাতাকে লইয়া ইস্রায়েলের দেশে আসিলেন।
    ২:২২       কিন্তু আর্খিলায় আপন পিতা হেরোদের স্থলে যিহূদিয়াতে রাজত্ব করিতেছেন শুনিয়া সেখানে যাইতে ভয় করিলেন। স্বপ্নে প্রত্যাদেশ পাইয়া তিনি গালীল প্রদেশে চলিয়া গেলেন,
    ২:২৩      আর নাসরৎ নামক নগরে গিয়া বাস করিলেন; যেন ভাববাদীদের কথা পূর্ণ হয়, তিনি নাসরীয় বলিয়া আখ্যাত হইবেন।
    (ধর্মপুস্তক–নূতন নিয়মের (The Holy Bible – Bengali – The Bible Society of India, Bangalore) প্রথম অধ্যায় থেকে উদ্ধৃত।(বানান অপরিবর্তিত)।

    খ্রিষ্টিয় ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের অধ্যায়গুলিকে গসপেল (gospel) বলে, শব্দটির সাধারণ অর্থ “সুসমাচার” অর্থাৎ শুভ সংবাদ। বাইবেলের “নূতন নিয়ম” (New Testament)-এ যে চার জন সন্ন্যাসীর (Saints) সুসমাচার পাওয়া যায়, তাঁরা হলেন সেন্ট ম্যাথিউ (Matthew) (ম্যাথিউ বাংলা অনুবাদে মথি হয়েছেন!), সেন্ট মার্ক (Mark), সেন্ট লিউক (Luke) এবং সেন্ট জন (John)। উপরে যে অংশটি উদ্ধৃত হয়েছে, সেটি সেন্ট ম্যাথিউ-এর সুসমাচারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের প্রথমাংশ।

    সেন্ট ম্যাথিউ-এর প্রথম অধ্যায় থেকে যিশুর জন্ম এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে যিশুর শৈশবের বিশেষ কিছু ঘটনা জানতে পারা যায়। যেমন, জুডিয়া (যিহূদিয়া; Judea)-র বেথলেহেমে যিশুর যখন জন্ম হল, তখন সেখানকার রাজা ছিলেন হেরড। সে সময়ে তিনজন পূর্বদেশের প্রাজ্ঞমানুষ জেরুজালেম শহরে উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “ইহুদিদের রাজার কোথায় জন্ম হয়েছে? আমরা তাঁর তারা (star) পূর্বদিকে দেখেছি। আমরা দেখা করে, তাঁর পূজা করতে চাই”। এ কথা শুনে রাজা হেরড এবং জেরুজালেমের নাগরিকরা খুবই উদ্বিগ্ন হলেন। রাজা হেরড তাঁর প্রধান পুরোহিত এবং ধর্মগুরুদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই খ্রিষ্ট কোথায় জন্মাবে”? তাঁরা রাজাকে বললেন, “জুডিয়ার বেথলেহেমে। কারণ ভবিষ্যদ্বক্তারা (ভাববাদী – Prophet, যাঁদের মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর ইচ্ছার কথা ও নির্দেশ ব্যক্ত করেন) লিখে গেছেন, ‘হে জুডিয়া ভূমির বেথলেহেম, আপনি কোন রাজকুমারের থেকে কম নন, কারণ আপনার ভূমিতে এমন একজন নেতা আবির্ভূত হবেন, যিনি আমার ইজরায়েলের মানুষদের শাসন করবেন’”।  রাজা হেরড কী করে জানলেন, “খ্রিষ্ট” বলে কেউ জন্মগ্রহণ করবেন? আগেই বলেছি, এসেনেস বা নাজারিন সম্প্রদায়ের প্রাজ্ঞলোকেরা যিশুর আবির্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করে রেখেছিলেন, সেটি রাজা এবং পুরোহিত সম্প্রদায়ের অগোচর ছিল না।
     
    যাই হোক, পুরোহিতদের কথা শুনে হেরড পূর্বদেশের তিন পণ্ডিতকে ডেকে খুঁটিয়ে জেনে নিলেন, তাঁরা ওই শিশুর তারাটি কতদিন আগে, কোথায় দেখেছেন। তারপর তাঁদের বললেন বেথলেহেমে গিয়ে খোঁজ করতে এবং শিশুর দেখা পেলে তাঁকে জানিয়ে যেতে, যাতে তিনিও গিয়ে শিশুকে প্রণাম জানাতে পারেন। রাজার কথা শুনে তিন পণ্ডিত বেথলেহেমে গেলেন এবং সেই শুভ তারা তাঁদের পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল শিশু যিশুর বাড়িতে, সেখানেই সেই তারা স্থির হয়ে রইল! মাতা মেরির কোলে যিশুকে দেখে তিন পূর্বদেশীয় পণ্ডিত ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করলেন, তারপর তিনজনেই শিশুকে তিনটি উপহার দিলেন। তারপর দেবতার নির্দেশে তাঁরা রাজা হেরডের সঙ্গে দেখা না করে, অন্য পথে ফিরে গেলেন।

    যে তারাটির ভরসায় তিনজন প্রাচ্যের পণ্ডিত সুদূর পথ পার হয়ে শিশু যিশুকে দেখতে গিয়েছিলেন, সেটি কী বাস্তব, নাকি কোন পৌরাণিক গল্পকথা? পুরোটাই গল্পকথা নয়, জ্যোতির্বিজ্ঞানের গভীর গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ওই সময়ে একটি দুর্লভ গ্রহ-সংযোগের সন্ধান পেয়েছেন। ৭ বি.সি.ই-তে বৃহষ্পতি এবং শনি গ্রহদুটি একই সঙ্গে মীনরাশিতে অবস্থান করছিল এবং ওই বছরের ২৯শে মে, শনি ও বৃহষ্পতি প্রায় সমরেখায় (মাত্র ১ কৌণিক দূরত্ব) চলে এসেছিল। এমন ঘটনা ওই বছরে আরও দুবার ঘটেছিল, ৩রা অক্টোবর আর ৫ই ডিসেম্বর। ওই তিনটি দিনে গ্রহ দুটি অস্বভাবিক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল এবং সূর্যাস্তের পর যুগ্ম-তারা হয়ে পূর্বদিকে উদয় হত, সূর্যোদয়ের আগেই পশ্চিমে অস্ত যেত। পণ্ডিতেরা বলেন, এই দুই গ্রহ ও মীনরাশির সংযোগ ৭৯৪ বছর অন্তর ঘটে থাকে।

    যদিও তারাটি পণ্ডিতদের আগে আগে গিয়ে যিশুর গৃহের সন্ধান নির্দেশ এবং তাঁর ঘরের ওপর “স্থির হয়ে” থাকা ব্যাপারটা, অবশ্যই কাল্পনিক। বিশেষ সেই তারাটি যখন তাঁদের পথ দেখিয়ে নিয়েই যাচ্ছিল, তাহলে পূর্বের পণ্ডিতরা খামোখা রাজা হেরডকে জিজ্ঞাসা করতে গেলেন কেন? বেথলেহেমের অন্যান্য সমবয়সী শিশুদের অনর্থক বিপদে ফেলতে?  

    রোম সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ, জুডিয়ার রাজা হেরডের রাজত্বকাল ৩৭ বি.সি.ই-তে শুরু হয়েছিলে এবং তাঁর মৃত্যু হয় ৪ বি.সি.ই-তে। জুডাইজ্‌ম্‌ ধর্মে বিশ্বাসী রাজা হেরড বিপথগামী ইহুদি অর্থাৎ এসেনেস বা নাজারিনদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষী ছিলেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, সঠিক সন্ধান পেলে, ইহুদিদের ভবিষ্যৎ-রাজা শিশু যিশুখ্রিষ্টকে তিনি হত্যা করবেন। কিন্তু প্রাচ্যের পণ্ডিতেরা শিশু যীশুর সঙ্গে দেখা করার পর, তাঁর সঙ্গে দেখা না করাতে, হেরড ভয়ংকর রেগে উঠলেন। তিনি প্রাচ্য পণ্ডিতদের থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বেথলেহেম এবং তার আশপাশ অঞ্চলের সমস্ত দু’বছর বা তার কমবয়সী ইহুদি শিশুদের হত্যার আদেশ দিলেন। এই বিপদের আঁচ করে, আগে থেকেই দেবতারা (নাকি নাজারিন প্রাজ্ঞ মানুষরা?) যিশু ও তাঁর মাতা-পিতাকে মিশরে গিয়ে আত্মগোপন করতে বলেছিলেন।
     
    কিছুদিনের মধ্যেই হেরডের মৃত্যুর পর তাঁরা ইজরায়েলে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু জুডিয়ার সিংহাসনে হেরডের পুত্র আর্কিলিয়স রাজা হওয়াতে তাঁরা সেখানেও নিজেদের নিরাপদ মনে করলেন না। তাঁরা গালীল প্রদেশে চলে গেলেন। সেখানে “নাসরৎ” - নাজারেথ শহরে বাস করতে লাগলেন এবং সেখানকার প্রাজ্ঞ মানুষরা তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে “নাজারিন” বলেই সম্বোধন করতেন।
     
    বাইবেলের উল্লেখ এবং রাজা হেরড ও তাঁর পুত্র আর্কিলিয়সের রাজত্বকালের হিসেব কষে, বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভগবান যিশুর জন্ম হয়েছিল ৭ বি.সি.ই-র কাছাকাছি। তাঁর প্রাণ সংশয়ের ভয়ে, আর্কিলিয়সের রাজত্ব কাল ৬ সি.ই. পর্যন্ত নাজারিনরা বালক যিশুকে তাঁদের কোন সঙ্ঘে বা মঠে গোপনে রেখে দিয়েছিলেন - অর্থাৎ ভগবান যিশুর তের বছর বয়স পর্যন্ত। এর পরে ভগবান যিশুর আর কোন সংবাদ পাওয়া যায় না। তাঁকে ইজরায়েলে আবার দেখা গিয়েছিল, যখন তাঁর বয়স ঊনত্রিশ বা তিরিশ বছর। এই ষোলো-সতের বছর তিনি কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন? প্রায় এক হাজার নশো বছর ধরে, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। সে উত্তর অকস্মাৎ অবিশ্বাস্যভাবে পাওয়া গেল ইজরায়েল থেকে বহুদূরের এক গ্রন্থাগারের তথ্যভাণ্ডার থেকে!

    ৪.১.৩ অজানা সেই ষোলোটি বছর
    ১৮৯০ সালে এক রাশিয়ান পর্যটক ও সাংবাদিক মিঃ নিকোলাস নোটোভিচ ফরাসী ভাষায় একটি বিতর্কিত গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন, সেই বইটি ইংরিজিতে অনূদিত হয়েছিল, নাম “দি আননোন লাইফ অফ জেসাস ক্রাইস্ট”। সেই বইতে মিঃ নোটোভিচ বর্ণনা করেছেন, উত্তরপশ্চিম ভারত ভ্রমণের সময়, তিনি লাদাখের লে শহরের অদূরে হিমিগুম্ফায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। গুম্ফা থেকে ফেরার পথে এক দুর্ঘটনায় – ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়ে - তাঁর পা ভেঙে যাওয়ার কারণে তাঁকে প্রায় দেড় মাস ওই গুম্ফাতেই ফিরে গিয়ে, চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছিল। সেই সময়ে গুম্ফার প্রধান লামাজীর সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রধান লামাজীর সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্ম বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনায় তিনি জানতে পারেন, ওই গুম্ফায় এমন কিছু স্ক্রোল[3] আছে, যাতে “ইশা”-র (বৌদ্ধ গ্রন্থে যিশুকে “ইশা” বলা হয়) জীবনের অনেক তথ্য পাওয়া যায়। হিমিগুম্ফার স্ক্রোলগুলি তিব্বতী ভাষায় অনুবাদ এবং মূল স্ক্রোলগুলি পালি ভাষায় রচিত। বহু বছর আগে মূল স্ক্রোলগুলি ভারত থেকে নেপালে এসেছিল, সেখান থেকে এসেছিল তিব্বতের লাসায়, এখনও সেখানেই আছে।

    হিমিগুম্ফার প্রধান লামাজীর উক্তি উল্লেখ করে নোটোভিচ লিখেছেন, “বৌদ্ধদের কাছে ঈশা একটি অত্যন্ত সম্মানীয় নাম। যদিও তাঁর কথা শুধু প্রধান লামারাই জানেন, যাঁরা ঈশার সম্পর্কে ওই স্ক্রোলগুলি পড়েছেন। যুগে যুগে ঈশার মতো অসংখ্য বুদ্ধ পৃথিবীতে এসেছেন, তাঁদের সকলের কথাই লেখা আছে ৮৪,০০০ স্ক্রোলে! আমাদের গুম্ফাতেও সেই সব স্ক্রোলের অনুবাদ বেশ কিছু রয়েছে, যেগুলি আমি অবসর সময়ে পড়ে থাকি। সেখানে ঈশা-বুদ্ধের কথাও আছে, যিনি ভারতে এবং ইজারেয়েলে তাঁর বাণী প্রচার করেছিলেন”।

    নোটোভিচের অনুরোধে হিমিগুম্ফার প্রধান লামাজী, ঈশা-বুদ্ধের স্ক্রোল থেকে কিছু অংশ পড়ে শুনিয়েছিলেন এবং নোটোভিচ তাঁর তিব্বতী দোভাষীর মাধ্যমে সেগুলি নিজের মতো লিখে নিয়েছিলেন। নোটোভিচ তাঁর উল্লিখিত বইখানিতে তাঁর ভারতভ্রমণের বিস্তারিত বর্ণনা এবং হিমিগুম্ফার প্রধান লামাজীর পাঠ করা ওই স্ক্রোলের অংশগুলি প্রকাশ করেছিলেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই গ্রন্থ প্রকাশে পশ্চিমের খ্রিষ্টিয় মহলে তুমুল বিতর্ক ও আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। নোটোভিচের তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে, ইওরোপের বেশ কিছু পণ্ডিত ব্যক্তি এর পরে হিমিগুম্ফায় গিয়েছিলেন। তাঁরা ফিরে এসে, বিবৃতি দিয়েছিলেন, মিঃ নোটোভিচ হিমিগুম্ফাতে নাকি কোনদিনই যাননি, এবং প্রধান লামাজী নোটোভিচ নামের কোন লোককে নাকি চেনেনই না। অতএব তাঁরা প্রমাণ করে দিয়েছিলেন নোটোভিচ একজন মিথ্যাবাদী এবং তাঁর তথ্যগুলি সবই বানিয়ে তোলা (fabricated)!

    বেলুড় মঠের সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্বামী অভেদানন্দ ১৯২২ সালে কাশ্মীর ও তিব্বত ভ্রমণে যান এবং ভ্রমণের সময় তিনি হিমিগুম্ফাতেও গিয়েছিলেন। হিমিগুম্ফা সম্পর্কে তাঁর বিশেষ কৌতূহলের কারণ, তার আগে আমেরিকায় থাকাকালীন তিনি নোটোভিচের গ্রন্থটি পড়েছিলেন এবং এই গ্রন্থ নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক ও সমালোচনা সম্পর্কেও তিনি অবহিত ছিলেন। স্বামীজী হিমিগুম্ফার লামাজীদের সঙ্গে মিঃ নোটোভিচ এবং তাঁর লেখা সম্পর্কে আলোচনা করে জেনেছিলেন, মিঃ নোটোভিচের ঘটনা এবং তথ্যসমূহ সম্পূর্ণ সত্য। তিনি গুম্ফার লামাজীদের কাছে স্ক্রোলগুলি দেখতে চাইলে, তাঁকেও দেখানো হয়েছিল। লামাজীরা তাঁকেও বলেছিলেন, হিমিগুম্ফার স্ক্রোলগুলি মূল স্ক্রোলের তিব্বতী নকল, মূল পালিভাষার স্ক্রোলগুলি আছে লাসার কাছে মারবুর অঞ্চলের এক গুম্ফায়। যিশু সম্পর্কিত মূল স্ক্রোলগুলিতে চোদ্দটি পরিচ্ছেদ আছে এবং তাতে মোট ২২৪টি শ্লোক আছে। স্বামিজী তাঁর দোভাষীর সাহায্যে এই শ্লোকগুলির কিছু অংশ অনুবাদ করে এনেছিলেন, তার নির্বাচিত কয়েকটিঃ-

    পরিচ্ছেদ ৪
    ১০. “ক্রমে ঈশা ত্রয়োদশ বৎসরে পদার্পণ করিলেন। এই বয়েসে ইজরায়েলের জাতীয় প্রথানুযায়ী বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাঁহার পিতামাতা সামান্য গৃহস্থের ন্যায় দিন যাপন করিতেন”।
    ১২. “ঈশা বিবাহ করিতে নারাজ ছিলেন। তিনি ইতঃপূর্বেই বিধাতৃ-পুরুষের স্বরূপ ব্যাখ্যায় খ্যাতি লাভ করিয়াছিলেন। বিবাহের কথায় তিনি গোপনে পিতৃগৃহ পরিত্যাগ করিতে সংকল্প করিলেন”।
    ১৪. “তিনি জেরুজালেম পরিত্যাগ করিয়া একদল সওদাগরের সঙ্গে সিন্ধুদেশ অভিমুখে রওনা হইলেন। উহারা সেখান হইতে মাল লইয়া যাইয়া দেশ-বিদেশে রপ্তানী করিত”।
    পরিচ্ছেদ ৫
    ১. “তিনি চৌদ্দ বৎসর বয়সে উত্তর সিন্ধুদেশ অতিক্রম করতঃ পবিত্র আর্যভূমিতে আগমন করিলেন”।
    ৪. “তিনি ক্রমে ব্যাস-কৃষ্ণের লীলাভূমি জগন্নাথধামে উপনীত হইলেন এবং ব্রাহ্মণগণের শিষ্যত্ব লাভ করিলেন। তিনি সকলের প্রিয় হইলেন এবং সেখানে বেদ পাঠ করিতে, বুঝিতে ও ব্যাখ্যা করিতে শিক্ষা করিতে লাগিলেন।
    (অভেদানন্দ স্বামীজীর “কাশ্মীর ও তিব্বতে” গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত।)

    শ্রদ্ধেয় স্বামীজীকে লামাজী আরও বলেছিলেন, যিশুখ্রিষ্ট পুনরুত্থানের (Resurrection) পর গোপনে কাশ্মীর চলে এসেছিলেন এবং সঙ্ঘ নির্মাণ করে, বহু শিষ্য সহ আমৃত্যু (অবশ্যই স্বাভাবিক মৃত্যু) সেখানেই ছিলেন। যিশুর মৃত্যুর তিন-চার বছর পর পালি ভাষায় এই স্ক্রোলগুলি লেখা হয়েছিল।

    এবার নোটোভিচের লেখা থেকে ভগবান যিশুর ভারতবাসের কিছু ঘটনা দেখে নেওয়া যাক, -
     
    পরিচ্ছেদ ৫
    ৫. তিনি জগন্নাথ, রাজগৃহ, বেনারস এবং অন্যান্য তীর্থে ছ’ বছর কাটিয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ ঈশাকে ভালোবাসত, কারণ তিনি বৈশ্য এবং শূদ্রদের সঙ্গে শান্তিতে বাস করতেন, তাদের পবিত্র শাস্ত্র শেখাতেন।
    ৬. কিন্তু ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা তাঁকে বলেছিলেন, তারা নিষিদ্ধ, কারণ তাদের সৃষ্টি হয়েছে পর-ব্রহ্মের উদর এবং পদতল থেকে।
    ৭. বৈশ্যরা বেদমন্ত্র শুধু শুনতে পারে, তাও বিশেষ কোন পর্বের দিনে এবং
    ৮. শূদ্রদের বেদপাঠের স্থানে উপস্থিত থাকা, এমনকি দেখাও নিষিদ্ধ, কারণ তারা আজীবন দাসত্বে পতিত, তারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, এমনকি বৈশ্যদেরও ক্রীতদাস।
    ৯. “একমাত্র মৃত্যুই তাদের এই দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে”, পর-ব্রহ্ম বললেন, “অতএব ওদের ত্যাগ করো, এবং আমাদের সঙ্গে দেবতাদের উপাসনা কর, তাঁকে অমান্য করে নিজের প্রতি তাঁদের ক্রুদ্ধ করে তুলো না”।
    ১০. কিন্তু ঈশা, তাঁদের কথা অমান্য করেই শূদ্রদের সঙ্গে রইলেন, ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে প্রচার করতে লাগলেন।
    ১১. সাথী-মানুষদের মানবিক ও আধ্যাত্মিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, কিছু মানুষের এই উদ্ধত কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে উঠলেন। “নিশ্চিতভাবেই (verily)”, তিনি বললেন, “ঈশ্বর তাঁর সন্তানদের মধ্যে কোন বিভেদ রাখেননি, তাঁর কাছে সকলেই সমান প্রিয়”।
    ১৩. “ঈশ্বর তোমার প্রভু, তাঁকে ভয় করো, তাঁর সামনে নতজানু হও এবং তোমার উপার্জনের উপহার তাঁকে সমর্পণ করো”।
    ১৪. ঈশা ত্রিমূর্তি এবং পর-ব্রহ্মের অবতার - বিষ্ণু, শিব এবং অন্যান্য দেবতাদের অস্বীকার করলেন, “কারণ”, তিনি বললেন,
    ১৫. “শাশ্বত বিচারক, শাশ্বত আত্মার মধ্যেই এই জগতের অনন্য এবং অভিন্ন আত্মা বিরাজ করছেন, এবং একমাত্র সেই আত্মাই সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই সকলের মধ্যে নিহিত থেকে প্রাণ সঞ্চার করেন”।

    পরিচ্ছেদ ছয়
    ১. শ্বেতবসন পুরোহিত এবং যোদ্ধারা[4] যখন শূদ্রদের প্রতি ঈশার এই উপদেশের কথা জানল, তারা তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল এবং তরুণ এই শিক্ষককে খুঁজে বের করে হত্যা করতে পাঠালো তাদের অনুচরদের।
    ২. কিন্তু শূদ্ররা তাঁকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে দেওয়ায়, ঈশা রাত্রেই জগন্নাথ ভূমি ছেড়ে পাহাড়ের দিকে রওনা হলেন এবং “গৌতমাইড” (Gautamides)[5] -এর দেশে অবস্থান করতে লাগলেন, যেখানে মহান বুদ্ধ শাক্য-মুনির আবির্ভাব হয়েছিল এবং (যে দেশের) মানুষরা একমাত্র মহিমময় ব্রহ্মের উপাসনা করেন, তাঁদের মধ্যে।
    ৩. ঈশা যখন পালি ভাষা শিখে ফেললেন, তিনি পবিত্র সূত্রগুলির স্ক্রোল পাঠে মনোনিবেশ করলেন।
    ৪. ছ’বছর গভীর চর্চার পর, ঈশা, যাঁকে বুদ্ধ তাঁর পবিত্র বাণী প্রচারের জন্য নির্বাচিত করেছেন, পবিত্র স্ক্রোলগুলির নিখুঁতব্যাখ্যা করতে পারতেন।
    ৫. এরপর তিনি নেপাল এবং হিমালয় ছেড়ে রাজপুতানার উপত্যকায় নেমে গেলেন এবং পশ্চিমে যাত্রা শুরু করলেন।
    (“The Unknown Life of Jesus Christ” – গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত, বাংলা অনুবাদ – লেখক)

    অতএব দেখা যাচ্ছে, ভগবান যিশুর ভারত বাস যথেষ্ট ঘটনাবহুল। ইজরায়েলের আগেই, তিনি ধর্মপ্রচারের সূচনা করেছিলেন এই ভারতেই, অন্ততঃ বৈশ্য এবং শূদ্র বর্ণের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষদের মধ্যে। যদিও তার ফল হয়েছিল মারাত্মক। ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের বিরুদ্ধে যাওয়াতে তাঁর এদেশেও প্রাণনাশের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁর নিজের দেশেই হোক অথবা ভারতে, সব দেশেই পুরোহিত সম্প্রদায় এবং রাজন্যবর্গদের চরিত্র যে একই, ধার্মিক ভারতে এসে অন্ততঃ এটুকু স্পষ্ট উপলব্ধি তাঁর হয়েছিল।
     
    ভগবান যিশুর ভারতে ধর্মপ্রচারের আরেকটি প্রচলিত ধারণার উল্লেখ করেছেন শ্রদ্ধেয় অভেদানন্দ স্বামীজি, তাঁর “কাশ্মীর ও তিব্বতে” গ্রন্থে। বাংলার রাজনৈতিক নেতা শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল “প্রবাসী” পত্রিকায় তাঁর লেখা কোন এক প্রবন্ধে মহাত্মা বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর কাছে শোনা যে কাহিনীটি বর্ণনা করেছেন, সেটি এরকম, -
    “পূজ্যপাদ বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী মহাশয়ের মুখে একদিন শুনিয়াছিলাম যে, তিনি একবার একদল যোগী-সন্ন্যাসীদের সঙ্গে আরাবল্লী পর্বতে গিয়াছিলেন। এই সম্প্রদায়ের যোগীদের “নাথ” উপাধি ছিল। ইঁহারা “নাথযোগী” বলিয়া নিজেদের পরিচয় দিতেন। ইঁহাদের সম্প্রদায়-প্রবর্তকদিগের মধ্যে “ইশাই নাথ” নামে এক মহাপুরুষ ছিলেন। তাঁহার জীবনী এই নাথযোগীদের ধর্মপুস্তকে লেখা আছে। গোস্বামী মহাশয়কে একজন নাথযোগী তাঁহাদের ধর্মগ্রন্থ হইতে ঈশাই নাথের জীবনচরিত পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন। খৃষ্টানদের বাইবেলে যীশুখৃষ্টের জীবনচরিত যে ভাবে পাওয়া যায়, ঈশাই নাথের জীবনচরিত মোটের উপর তাহাই”।
    ইহার উপরে বিপিনবাবু এইরূপ মন্তব্য করেনঃ “বাইবেলে যীশুর যে জীবন-ইতিহাস পাওয়া যায়, তাহাতে দ্বাদশ হইতে ত্রিংশৎ বর্ষ পর্যন্ত এই আঠারো বৎসরের যীশুর জীবনের কোন খোঁজ-খবর মিলে না। কেহ কেহ অনুমান করেন যে, এই সময়ের মধ্যে যীশু ভারতবর্ষে আসিয়াছিলেন এবং তিনিই নাথ যোগী সম্প্রদায়ের এই ঈশাই নাথ”। (“কাশ্মীর ও তিব্বতে” গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত - বানান অপরিবর্তিত।)

    ভগবান যিশুর ক্রুশবিদ্ধ (Crucifixion) হয়ে (আপাত) মৃত্যু হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৩ সি.ই.-র মধ্যে। অতএব বাইবেলের নূতন-নিয়ম লেখার সময় রোম সম্রাট বা রাজার থেকে তাঁর প্রাণসংশয়ের কোন আশঙ্কা থাকতে পারে না। কিন্তু বাইবেলের নূতন-নিয়ম যখন লেখা হয় (৫০ থেকে ১০০ সি.ই.-র কোন সময়ে) ইহুদিদের রাজা এবং পরিত্রাতা যিশুর তের থেকে ঊনত্রিশ – ষোলো বছরের ইতিহাস হয়তো ইচ্ছাকৃত ভাবেই গোপন করা হয়েছিল। কেন, তার স্পষ্ট কোন উত্তর পাওয়া যায় না। হয়তো নূতন-নিয়ম লেখার সময় সন্ন্যাসী ম্যাথিউ, লিউক, মার্ক এবং জন জানতেন ভগবান যিশু তখনও সুস্থ অবস্থাতেই জীবিত এবং রয়েছেন ভারতবর্ষের কাশ্মীরে। সেক্ষেত্রে সত্য ঘটনা প্রকাশ করে, তাঁরা ভগবান যিশুর বিপদ বাড়াতে চাননি।

    খ্রিষ্টধর্মে বৌদ্ধ দর্শনের প্রভাব কতটা কিংবা আদৌ ছিল কি না, এই বিতর্কিত বিষয়ের আলোচনা এই গ্রন্থের উদ্দেশ্য নয়। এই প্রসঙ্গ উত্থাপনের কারণ, বৌদ্ধধর্ম এবং দর্শনের আন্তর্জাতিকতা। সম্রাট অশোকের সময়েই সিংহল, বার্মা, শ্যাম, কম্বোজ, সুমাত্রা, জাভা প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধধর্মের ব্যাপক প্রচার শুরু হয়েছিল সে কথা আগেই বলেছি। উপরের আলোচনা থেকে জানা গেল, যিশুখ্রীষ্টের জন্মের প্রায় দুশ বছর আগে থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলেও “পেগান” ধর্ম বিরোধী, তিনটি ধর্মগোষ্ঠীর - থেরাপিউট, এসেনেস এবং নাজারিন- সৃষ্টি হয়েছিল, স্পষ্টতঃ বৌদ্ধধর্মের প্রভাবে। এরপর পরবর্তী কয়েকশ বছরে এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বৌদ্ধধর্ম ছড়িয়ে পড়েছিল। যেমন, খ্রীষ্টাব্দ প্রথম শতকে চীন, খ্রীষ্টাব্দ চতুর্থ শতকে কোরিয়া, খ্রিষ্টিয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতকে ফরমোসা ও মঙ্গোলিয়া, খ্রিষ্টিয় ষষ্ঠ শতকে জাপান এবং তিব্বত। বৌদ্ধধর্মের এই আন্তর্জাতিকতা ভারতীয় সংস্কৃতি, স্থাপত্য, শিল্প এবং বিজ্ঞানকে কতটা প্রভাবিত করেছিল সে কথা আলোচনা করা যাবে পরবর্তী পর্যায়ে।

    চলবে…
    চতুর্থ পর্বের দ্বিতীয় ভাগ আসবে ১১.০৭.২২ তারিখে।
     
    গ্রন্থ ঋণ-
    ১. ধর্মপুস্তক – পুরাতন ও নূতন নিয়ম - The Holy Bible – Bengali – The Bible Society of India, Bangalore.
    ২. The Unknown Life of Jesus Christ – Nicolas Notovitch – translated in English by - J. H. Connelly and L. Landsberg.
    ৩. কাশ্মীর ও তিব্বতে – স্বামী অভেদানন্দ– শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলকাতা।
    ৪. Jesus Lived in India (His unknown life before and after the Crucifixion) – Holger Kersten.

    [1] সালামিস (বা কন্সট্যানসিয়া)-এর এপিফেনিয়াস (Epiphanius of Salamis or Constantia) সি.ই. চতুর্থ শতাব্দীতে সাইপ্রাসের সালামি শহরের বিশপ ছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সেন্ট হন এবং সমস্ত অর্থডক্স ও রোমান ক্যাথলিক চার্চের পিতা বলে গণ্য হতেন।

    [2] বাইবেল অনুযায়ী জুডিয়ার রোমান প্রশাসন-প্রধান(Governor) পন্টিয়াস পিলেট (Pontius Pilate) (২৬-৩৭ সি.ই.) ছিলেন ভগবান যিশুর বিচারসভার প্রধান বিচারক। 

    [3] স্ক্রোল (scroll) – এক ধরনের কাগজের ওপর লেখা পুঁথি, যেগুলি পাকিয়ে গোল করে রাখা হয়। আজকাল জ্যোতিষীরা কুষ্ঠীর কম্পিউটার প্রিন্ট-আউট দেন A4 কাগজে, কিন্তু কিছুদিন আগেও জাতকের কুষ্ঠি বা ঠিকুজি লেখা হত হলুদ রঙের বিশেষ কাগজের স্ক্রোলে। এগুলি খুব সহজেই বহুদিন সুরক্ষিত রাখা যেত।    

    [4] ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা।

    [5] গৌতমাইড্‌স্‌ (Gautamides) – হয়তো গৌতমবুদ্ধের অনুগামী ভিক্ষু ও ভক্তদের কথা বলা হয়েছে। যে দেশের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী – নেপালের কপিলাবস্তু অঞ্চল।

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ০৬ জুলাই ২০২২ | ১৬৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০৬ জুলাই ২০২২ ১৪:৩০509674
  • কিশোর

    আপনার ক্যানভাস বিশাল। কয়েকটি বিক্ষিপ্ত মন্তব্য করছি -এ নিয়ে হয়ত পরে লিখবেন তবু আগ্রহ পরকাশ করে রাখি।

    এক আলেকজান্ডারের পরে প্যালেস্টাইন হেলেনিক শাসনে চলে আসে ইহুদি ধর্মের সঙ্গে গ্রিকদের সরাসরি মোলাকাত হবার ফল অসামান্য একদিকে বৌদ্ধ অন্যদিকে ইহুদি- এই ভদ্রলোক তেত্রিশ বছরের মধ্যে কি কাণ্ড করে গেলে।  গ্রিকরা আলফাবেট দিলেন কিন্তু থেরা ( এই সম্প্রতি সানতোরিনি গেছিলাম- তার নাম থেরা!) শব্দের অনেক অর্থ পাচ্ছি ।

    দুই এসেনেস ও সাদুসি ছিলেন কঠোর ধর্মনিষ্ঠ ইহুদি । জেরিকোর কাছে তাদের গুহা দেখা যায় । জন্মালেই ইহুদি হয় না, তার ট্রেনিং নিতে হয় -এঁরা নিজেরা চাষ বাস করে খেতেন অন্যান্য ইহুদিদের সঙ্গে বিরোধ লেগে থাকতো।  গ্রিক সাহচর্যে এসে তাঁরা যে বৌদ্ধ দর্শনের পরিচয় পেয়েছেন তা অনুমান করা যায় ।

    তিন এসেনেস সম্প্রদায়  “ মূর্তি পূজা সহ কোন ধর্মীয় গোঁড়ামি মানতেন না” এ কথাটা কি ঠিক? এঁরা ইহুদি – মোজেস তো সেই কবে সিনাই পাহাড়ে বলে দিয়েছিলেন ঈশ্বর এক,তার কোন মূর্তি নেই !

    চার নিউ টেসটামেনট ( নতুন চুক্তি ) এবং নানান গসপেলকে ঐতিহাসিক বলে মানতে আমার অসুবিধে আছে ! যিশুর মৃত্যুর তিনশ বছর বাদে আপন মৃত্যু শয্যায় শুয়ে এক সম্রাট বললেন আমি খ্রিস্টান হব ! নিসিয়াতে বসল সম্পাদক সমাবেশ ! তাঁরা লিখলেন তিনশ বছর আগের এক মানুষের জীবনের চিত্রনাট্য সেটা আবার গ্রিক ভাষায় কারণ হেলেনিক প্রভাবে হিব্রু ও আরামাইক পাত্তা পাচ্ছে না। INRI বা Jesus Nazarenus Rex Iudaeorum গ্রিকে লেখা ।  সেই নাজারেথ শব্দ থেকে Nazarenus এসেছে । মনে রাখা ভাল তাঁর নাম ইয়েসুস। সে আমলে পদবি ছিল না , গ্রামের নাম জুড়ে দেওয়া হতো তাই ইয়েসুস অফ নাজারেথ সেটা যথেষ্ট প্রাচীন বলেই আমার মনে হয়েছে ! খ্রিস্ট কোন পদবি নয় সম্মান সূচক- অভিষিক্ত মানুষ ।

    পাঁচ যথার্থ বলেছেন - যিশু বাল্যকাল কাটালেন মিশরে , যুবাকাল ভারতে । নিউ টেসটামেনটের ঘনঘটা মাত্র  তিন বছরের।

    খুব লম্বা হয়ে যাচ্ছে তবে আলোচনা হোক !
     
  • &/ | 151.141.85.8 | ১২ জুলাই ২০২২ ০৩:১৪509807
  • যীশুর কাশ্মীরবাস নিয়ে কৌতূহল রইল। স্বামী অভেদানন্দ ছাড়া অন্য আর কেউ( বা কারা) ওই গুম্ফায় গিয়ে দেখে শুনে অনুসন্ধান করেছেন কি? সেই সময়ের মতন দুর্গম তো আর নেই, এখন তো যাওয়া অনেক সহজ হয়েছে।
  • Amit | 121.200.237.26 | ১২ জুলাই ২০২২ ০৩:৩৩509808
  • যিশু হোক বা মোজেস বা বুদ্ধ - বাস্তবে তাদের এই মোক্ষলাভের সময়টা অজ্ঞাতবাসের গল্পগুলো কতটা সত্যি আর কতটা কল্পনা সেগুলো কন্ফার্ম করা খুব ডিফিকাল্ট। অনেক কিছুই ভক্তির প্লাবনে ঢেকে গেছে। রামকৃষ্ণের শ্রীশের লেখা যে কথামৃত তাতে কতটা ইতিহাস আর কতটা ভক্তি ? সেগুলোকে কিছুর প্রামাণ্য সূত্র হিসেবে ধরা মুশকিল। 
     
    যেমন সিমিলারলি চৈতন্যের ​​​​​​​জগন্নাথ মন্দিরে মূর্তির ​​​​​​​সঙ্গে ​​​​​​​বিলীন হয়ে ​​​​​​​যাওয়া- নির্ঘাত ​​​​​​​মন্দিরে ​​​​​​​খুন ​​​​​​​করে ​​​​​​​বডি ​​​​​​​লোপাট ​​​​​​​করা ​​​​​​​হয়েছিল। তাপ্পর ওসব বিলীন হওয়ার গুলগপ্পো বাজারে ছাড়া হলো। ​​​​​​​সেই ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​রিসার্চ ​​​​​​​করতে ​​​​​​​গিয়ে ​​​​​​​তো একজন ​​​​​​​খুনই ​​​​​​​হয়ে ​​​​​​​গ্যালেন। 
     
    এই যে স্ক্রোল গুলোর কথা বলা হয় সেগুলো জনসমক্ষে আসেনা কেন যাতে সাইন্টিফিক ভাবে সেগুলোর বয়স বা অরিজিনালিটি এস্টাব্লিশড করা যায় ? এগুলো বেশির ভাগ সময়েই মিথ- সেই শ্রুইড অফ তুরিনের মতো। মাঝে মাঝেই কিছূ ভক্ত তাতে রক্তের ছাপ দেখতে পায় কিন্তু সেগুলোর প্রপার ডিএনএ স্যাম্পলিং করাতেই যত আপত্তি। দুয়েকটা যাও বা টেস্টিং এর চেষ্টা হয় সেগুলো কতটা অথেন্টিক ভাবে করা হয় সন্দেহ আছে। 
     
     
  • Kishore Ghosal | ১২ জুলাই ২০২২ ১১:০২509813
  • &/ বাবু, 
    অভেদানন্দজী হিমি গুম্ফায় গিয়েছিলেন, যীশুর কাশ্মীরবাস নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।  যীশুর কাশ্মীরবাস নিয়ে দু খানা ইংরিজি বই পড়েছি, তার মধ্যে একটি বইয়ের উল্লেখ করেছি আ্মার লেখায় - এ ছাড়াও অন্ততঃ গোটা ছয়েক বই দেখেছি এই বিষয়ের ওপর। 
     
    অমিতবাবু, 
    অত্যন্ত বাস্তব কথা বলেছেন। এই কাহিনীগুলির কতটা মিথ কতটা ইতিহাস কোনদিনই প্রমাণ করা যাবে না, যায় না। এর পিছনে অনেক স্বার্থ, অনেক উদ্দেশ্য থাকে। 
    যিশুর কাশ্মীরবাস নিয়ে যে দুটি বই পড়েছি,  সে দুটি আমার তেমন মনঃপূত হয়নি। তাই ওই বিষয়টি উল্লেখ করেছি মাত্র বিশদে যাইনি। 
    কিন্তু এসেনেস ও থেরাপিউটসদের ব্রহ্মচারী আচরণের পিছনে বৌদ্ধ অর্হৎ বা ভিক্ষুদের প্রভাব থাকাটা, আমার মনে হয়েছে, খুবই সম্ভব।     
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৩ জুলাই ২০২২ ০৪:০৯509823
  • আমার মনে হয় বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে তাহলে। এখানে আপনি বললেন, অভেদানন্দজী যীশুর কাশ্মীরবাস নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন নি। কিন্তু মূল লেখায় আপনি লিখেছেন,
    "বেলুড় মঠের সর্বজন শ্রদ্ধেয় স্বামী অভেদানন্দ ১৯২২ সালে কাশ্মীর ও তিব্বত ভ্রমণে যান এবং ভ্রমণের সময় তিনি হিমিগুম্ফাতেও গিয়েছিলেন। হিমিগুম্ফা সম্পর্কে তাঁর বিশেষ কৌতূহলের কারণ, তার আগে আমেরিকায় থাকাকালীন তিনি নোটোভিচের গ্রন্থটি পড়েছিলেন এবং এই গ্রন্থ নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক ও সমালোচনা সম্পর্কেও তিনি অবহিত ছিলেন। স্বামীজী হিমিগুম্ফার লামাজীদের সঙ্গে মিঃ নোটোভিচ এবং তাঁর লেখা সম্পর্কে আলোচনা করে জেনেছিলেন, মিঃ নোটোভিচের ঘটনা এবং তথ্যসমূহ সম্পূর্ণ সত্য। তিনি গুম্ফার লামাজীদের কাছে স্ক্রোলগুলি দেখতে চাইলে, তাঁকেও দেখানো হয়েছিল। লামাজীরা তাঁকেও বলেছিলেন, হিমিগুম্ফার স্ক্রোলগুলি মূল স্ক্রোলের তিব্বতী নকল, মূল পালিভাষার স্ক্রোলগুলি আছে লাসার কাছে মারবুর অঞ্চলের এক গুম্ফায়। যিশু সম্পর্কিত মূল স্ক্রোলগুলিতে চোদ্দটি পরিচ্ছেদ আছে এবং তাতে মোট ২২৪টি শ্লোক আছে। স্বামিজী তাঁর দোভাষীর সাহায্যে এই শ্লোকগুলির কিছু অংশ অনুবাদ করে এনেছিলেন, তার নির্বাচিত কয়েকটিঃ-.....
    তারপরে স্ক্রোলগুলোকে কী সেই নিয়ে বিস্তারিত।

    তাহলে? স্বামী অভেদানন্দ তো এই ব্যাপারেই ঐ গুম্ফায় গেছিলেন?

    নাকি আমার কোথাও বুঝতে ভুল হচ্ছে?
  • Kishore Ghosal | ১৩ জুলাই ২০২২ ১১:৪০509826
  • &/ বাবু, 
     
    "মিঃ নোটোভিচ বর্ণনা করেছেন, উত্তরপশ্চিম ভারত ভ্রমণের সময়, তিনি লাদাখের লে শহরের অদূরে হিমিগুম্ফায় বেড়াতে গিয়েছিলেন"। 
     হিমিগুম্ফা (Hemis Gompa)-র অবস্থান লাদাখে, লে শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিমি দূরে। 
     
    ওখানে যিশু ছিলেন না, যিশু হয়তো ছিলেন কাশ্মীরের শ্রীনগর শহরে, Google search করলেই  এ বিষয়ে অনেক কাহিনী জানা যাবে। 
     
    অভেদানন্দজীকে হিমি গুম্ফার লামাজী বলেছিলেন, (পুনরুত্থানের পর) ঈশাবুদ্ধ অর্থাৎ যিশু কাশ্মীরে আমৃত্যু ছিলেন।  কিন্তু  এই  বিষয়ে অভেদানন্দজী কোন মন্তব্য করেননি, আমিও করিনি।   
  • Kishore Ghosal | ১৩ জুলাই ২০২২ ১২:০২509828
  • আরেকটু খুলে বলি, চোদ্দ বছর বয়সের কিশোর যিশু ভারতে এসেছিলেন এবং প্রায় পনের-ষোল বছর ভারতের নানান জায়গায় থেকে বৌদ্ধ এবং নানান ধর্মশাস্ত্রের পাঠ নিয়ে ইজরায়েলে ফিরে গিয়েছিলেন।  এই  সময়ের কথাই আমি আলোচনা করেছি, কারণ এই বিষয়ে বোধ হয় মারাত্মক কোন বিতর্ক নেই। 
     
    পরবর্তী কালে অর্থাৎ পুনরুত্থান বা  Resurrection-এর পর, শোনা যায়,  তিনি আবার ভারতে ফিরে এসেছিলেন এবং কাশ্মীরের শ্রীনগর শহর থেকে সামান্য দূরে নাকি আমৃত্যু ছিলেন।  তবে এই বিষয়ে যা লেখালেখি পড়েছি, তাতে আমি খুব একটা convinced হইনি, অতএব এ বিষয়ে বিশদ আলোচনায় যাইনি।   
  • &/ | 151.141.85.8 | ১৩ জুলাই ২০২২ ২৩:৫৫509832
  • কিশোরবাবু, আপনি লিখলেন,
    "আরেকটু খুলে বলি, চোদ্দ বছর বয়সের কিশোর যিশু ভারতে এসেছিলেন এবং প্রায় পনের-ষোল বছর ভারতের নানান জায়গায় থেকে বৌদ্ধ এবং নানান ধর্মশাস্ত্রের পাঠ নিয়ে ইজরায়েলে ফিরে গিয়েছিলেন। এই সময়ের কথাই আমি আলোচনা করেছি, কারণ এই বিষয়ে বোধ হয় মারাত্মক কোন বিতর্ক নেই। "

    বলেন কী মশায়? বিতর্ক নেই? সত্যি সত্যি যীশু চোদ্দ বছর বয়সে ভারতে এসে বৌদ্ধ এবং নানান ধর্মশাস্ত্রের পাঠ নিয়ে ইজরায়েলে ফিরে গিয়েছিলেন?????
  • Prabhas Sen | ১৪ জুলাই ২০২২ ১৮:২৩509852
  • যিশুর জন্ম সময়ের কাহিনীর তিন জ্ঞানীর শিশু যিশুকে দর্শন করা কিন্তু বৌদ্ধ ট্রাডিশন মনে করায়। দলাই লামাদের নির্বাচন করার সময় প্রবীণ ভিক্ষুরা ঘুরে ঘুরে প্রকৃত সুলক্ষণ যুক্ত শিশুর সন্ধানে যেতেন।
  • Kishore Ghosal | ১৪ জুলাই ২০২২ ২১:০৯509856
  • & / বাবু ar বাবুর পোস্ট থেকে নিশ্চয়ই কিছুটা ভরসা পাচ্ছেন। 
     
     ar বাবু, অনেক ধন্যবাদ ট্রেলারের পোস্টটি শেয়ার করার জন্যে। সিনেমাটি ২০০৮-এর, কলকাতা কিংবা ভারতে আসেনি? ওই সময় অবশ্য আমি গুজরাট ও পাঞ্জাবের প্রত্যন্ত এলাকায় পেটের দায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম। শহুরে সভ্যতা থেকে বহুদূরে। 
     
    প্রভাস বাবু, একদম ঠিক বলেছেন।  দালাই লামা নির্বাচনের  মতোই শিশু যিশুর লক্ষণ বিচার করতে গিয়েছিলেন তিনজন প্রবীণ বৌদ্ধ পণ্ডিত। কে জানে সেই সময়েই হয়তো  নাজারিন পণ্ডিতদের সঙ্গে স্থির হয়ে গিয়েছিল, বালক যিশুকে  শিক্ষার জন্যে ভারতে পাঠানো হবে।  
    এর পেছনে আরও একটা কারণ, ভগবান মোজেস লেখাপড়া ও শিক্ষার সুযোগ পেয়েছিলেন মিশর রাজপ্রাসাদে। সেটা তাঁর অলৌকিক ভাগ্য। কিন্তু যিশুর পক্ষে সেই শিক্ষা মিশর থেকে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা ছিল না। এদিকে আলেকজান্দ্রিয়া তখন রোম সাম্রাজ্যের অধীন, সেখানে পড়তে গেলেও জীবন সংশয়। অতএব  ভারতীয় বণিক সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সঙ্গে বিশাল ক্যারাভ্যানে মিশে বালক যিশুর ভারতে চলে আসাই ছিল সব থেকে নিরাপদ ও শ্রেষ্ঠ উপায়। আমরা আগেই দেখেছি, ভারতীয় বণিক দলের সঙ্গেই বৌদ্ধ অর্হৎ ও ভিক্ষুরা সর্বত্র যাতায়াত করতেন। আর সেই সময়ে  বৌদ্ধ বিহারগুলির জন্যে ভারতে শিক্ষার সুযোগ, ইওরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোন দেশের তুলনায় অনেক সহজলভ্য ছিল, এবং শিক্ষার মানও সমকালীন বিশ্বের সমকক্ষই ছিল। অতএব অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন এই বালকের ভারতে আসা নিয়ে আমার খুব একটা সন্দেহ নেই। 
     
    তবে রেসারেক্সনের পর তিনি ভারতে এসে কাশ্মীরে বাস করেছিলেন কিনা, সেই বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।         
  • &/ | 151.141.84.146 | ১৪ জুলাই ২০২২ ২২:২১509857
  • সিনেমা বা ডকুমেন্টারি দেখে ভরসা পাই না, এমনকি ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটির পর্যন্ত প্রচুর ডকুমেন্টারি চারিদিকে।
  • &/ | 151.141.84.146 | ১৪ জুলাই ২০২২ ২২:২৯509859
  • এই দেখুন, এখানে আরও কত কিছু ক্লেইম করছে। কেউ বলছে ব্রিটেনে ছিলেন, কেউ বলছে জাপানে। আর নোটোভিচের কেসটা তো হোক্স বলছে!
    https://en.wikipedia.org/wiki/Unknown_years_of_Jesus
  • &/ | 151.141.84.146 | ১৪ জুলাই ২০২২ ২২:৩৩509860
  • ওই পেজ থেকেই একটা পার্ট তুলে দিলাম।
    Rejection by modern mainstream New Testament scholarship
    Modern mainstream Christian scholarship has generally rejected any travels by Jesus to India, Tibet or surrounding areas as without historical basis:

    Robert Van Voorst states that modern scholarship has "almost unanimously agreed" that claims of the travels of Jesus to Tibet, Kashmir or rest of India contain "nothing of value".[9]
    Marcus Borg states that the suggestions that an adult Jesus traveled to Egypt or India and came into contact with Buddhism are "without historical foundation".[10]
    John Dominic Crossan states that none of the theories presented about the travels of Jesus to fill the gap between his early life and the start of his ministry have been supported by modern scholarship.[8]
    Leslie Houlden states that although modern parallels between the teachings of Jesus and Buddha have been drawn, these comparisons emerged after missionary contacts in the 19th century and there is no historically reliable evidence of contacts between Buddhism and Jesus.[44]
    Paula Fredriksen states that no serious scholarly work places Jesus outside the backdrop of 1st century Palestinian Judaism.[45]
  • হীরেন সিংহরায় | ১৫ জুলাই ২০২২ ০১:৩০509866
  • কিশোর 
     
    মোজেস ভগবান নন, তাঁর দূত । তিনি জ্ঞান প্রাপ্ত হলেন সিনাই পাহাড়ে সরাসরি ঈশ্বরের কাছে - মিশরের রাজানুকুল্যে নয় । এর আগে অবশ্যই হোলেব পাহাড়ের জ্বলন্ত ঝাড়ের মধ্যে তাঁর ইঙ্গিত পেয়েছেন।  
  • Prabhas Sen | ১৬ জুলাই ২০২২ ০৮:৫৪509921
  • নাথ সম্প্রদায়ের একজন বিশিষ্ট গুরুর উল্লেখ আছে: ঈশাই নাথ। যিশুকেও ঈশা মসীহ্ বলে উল্লেখ করা হয়।  সাদৃশ্য  তাৎপর্যপূর্ণ। 
  • ar | 173.48.167.228 | ১৬ জুলাই ২০২২ ২০:০৮509944
  • কিশোরবাবু, ধন্যবাদ! অনেকদিন আগে নেটফ্লিক্সে দেখেছিলাম। এখনো পাওয়া যায় কিনা জানিনা। ড্কুতে মুসলিম আর ইহুদী পরম্পরা অনুযায়ী (ট্র্যাডিশন??!!) কবর-সমাধির অবস্থান/দিক নিয়েও আলোচনা আছে। দেখা গেছে যে, অন্য সব সমাধির মাঝে, রোজা-বাল, বা তথাকথিত "যীশুর সমাধি বা স্মৃতি-সৌধ" ইহুদী পরম্পরা মেনে পূর্ব-্পশ্চিমে অবস্থান করে। মনে হয়, ইস্রাইলের হারিয়ে যাওয়া উপজাতি (লস্ট ট্রাইবস) নিয়েও কিছু কথা ছিল। কাশ্মীরিদের একাংশ এই লস্ট ট্রাইবের বংশধর, এই রকম কিছু। সঙ্গীসাথীরা দলপতির সাথে কাশ্মীরে এসে আর ফিরে যেতে পারেননি।

     
  • Kishore Ghosal | ১৬ জুলাই ২০২২ ২০:৫৭509946
  • @ হীরেন স্যার, একটি কাহিনীতে পড়েছি, শিশু মোজেস জন্মের পর পরিত্যক্ত হয়েছিলেন, নাইলের জলে। দৈবক্রমে ফারাও রামসেসের কন্যা তাঁকে নদী থেকে উদ্ধার করেন, এবং পুত্রবৎ লালন পালন করেন। মোজেসের লেখাপড়া ও বেড়ে ওঠা ফারাওয়ের প্রাসাদে। অনেক বড়ো বয়সে তিনি জানতে পারেন, যে তিনি মিশরীয় নন, ইহুদি। তার পর থেকেই তিনি মিশরে দাস বা ক্রীতদাস হয়ে থাকা হিব্রুদের (ইহুদিদের তৎকালীন ভাষা ও নাম?) পরিত্রাতার ভূমিকা নেন এবং একসময় ইহুদিদের নিয়ে, তাঁদের পিতৃভূমি ইজরায়েলের দিকে রওনা হন। এই যাত্রাকে ইতিহাসে এক্সোডাস বলা হয়। এই যাত্রাপথে সিনাই পাহাড়ে তিনি দশটি দৈবাদেশ (Ten Commandments) পান এবং ঈশ্বরের স্পষ্ট নির্দেশ পান। তখন থেকেই তিনি ইহুদিদের Prophet - Messiah - পয়গম্বর হয়ে ওঠেন।  ছোটবেলায় দেখা   The Ten Commandments movie- তেও যতদূর মনে পড়ছে এই কাহিনীই ছিল।  এই প্রচলিত কাহিনীটুকুই আমার সম্বল। 
     
    @ প্রভাসবাবু, নাথ সম্প্রদায়ের গুরু ঈশাই নাথের কথা আমি, স্বামী অভেদানন্দজীর "কাশ্মীর ও তিব্বতে" বই থেকে উল্লেখ করেছি। ভারতীয় ঐতিহ্যে সর্বত্রই ভগবান যিশু ঈশা নামেই পরিচিত।    
          
  • Kishore Ghosal | ১৬ জুলাই ২০২২ ২১:১৪509951
  • ar বাবু, একদমই ঠিক বলেছেন, এরকম পরোক্ষ প্রমাণের কথাই পড়া যায়। যেমন আরও শোনা যায়, মুরি ( Muree), অধুনা পাকিস্তানে, মাতা মেরিকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল। জায়গাটির মূল নাম - "মাই মেরি দা আস্থান" (The resting place of Mother Mary), পরে লোক মুখে "মুরি" হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেন, পুনরুত্থানের পর ভারতে আসার সময় ভগবান যিশুর সঙ্গে মাতা মেরিও ছিলেন, দীর্ঘ পথ চলার পরিশ্রমে ক্লান্ত বৃদ্ধা মুরি-তে দেহরক্ষা করেন। কিন্তু  এ সবই জনশ্রুতি, নিশ্চিত সত্য জানার কোন উপায় নেই।   
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন