এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পরাণ বাগ্দী - ৭

    Anjan Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ জুন ২০২২ | ৬৬৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • কলতান একটু দ্বিধান্বিত হয়ে বলল ‌,
     ' বলছিলাম যে.... বাড়ি না গিয়ে অন্য কোথাও কথা বলা যায় না ? '
    ওরা তিন জন হাঁটছিল । একপাশে একটা ছোট শিবমন্দির পড়ল । পাশে দুটো লম্বা নারকোল গাছ ।   পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে । মন্দির এখন ফাঁকা । কলতান বলল, ' এইখানটায় একটু বসলে হয় না ? '
    ----- ' তা হয় .... কিন্তু ..... এটা ....' বলে চোখের ইশারায় গুল্টুর দিকে দেখাল ..... ' 
    ----- ' ওকে বাড়িতে রেখে আসলে হয় না ? আমি এখানে দাঁড়াচ্ছি ..... ' কলতান নীচু গলায় বলে।
    ----- ' তা হয় .... কিন্তু ... এখানে বসলে কেউ দেখলে আবার ..... গ্রামের লোক .... বুঝতেই তো পারছেন ..... ফাঁকা জায়গা ..... ' 
    ------ ' সেটা অবশ্য ঠিক .... ' কলতান সায় দেয়।
    ----- ' তার চেয়ে বাড়িতেই চলুন .... অসুবিধে হবে না ... ঘরে কেউ থাকবে না .... কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে সত্যি কথাই বলে দেব ..... '
    মৌসুমীর অতি সক্রিয়তা দেখে বেশ অবাক লাগল কলতানের ।
    বলল, ' চল তা'লে ..... '

      এটা নিশ্চয়ই মৌসুমীর পড়ার ঘর । বাড়ি ঢোকার পর গুল্টু কোথায় ছিটকে বেরিয়ে গেল। মৌসুমীর মা দেখলেন  এক ভদ্রলোককে নিয়ে বাড়ি ঢুকল মেয়ে । তিনি ভাবলেন কোন সাবজেক্টের মাস্টার টাস্টার হবে । কারণ, মৌসুমী এরকম প্রায়ই করে । বাড়ির আর কাউকে দেখা গেল না । বোধহয় কাজে  বেরিয়েছে । কলতান আন্দাজ করল বাড়িতে মৌসুমীর যথেষ্ট দাপট এবং স্বাধীনতা আছে । 
    দরজা খোলাই রইল । ঘরে দুটো চেয়ার ছিল । একটায় কলতান বসল। আর একটায় মৌসুমী। 
    ------ ' আপনার অনেকটা সময় নষ্ট করলাম । আসলে, আপনি আমাদের গ্রামে এসেছেন .... একজনের বাড়ি যাচ্ছিলেন বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে .... তাই .... ' , বলে একটু চুপ করে রইল মৌসুমী । তারপর বলল , ' বলতে চাইছি যে .... এখানে আপনার ভাইঝির সম্বন্ধ করবেন না ..... ওরা ভাল নয় ..... ' 
    ----- ' আঁ ..... সেকি ! কিরকম .... কিরকম ? '
    ----- ' হ্যা .... যেটা বলছি সেটাই ..... অনেকের অনেক ক্ষতি করেছে .....আপনাদের পাত্রের বাবা নিজের দাদাকেও ছাড়েনি ..... '
    ----- ' ও বাবা ..... কি বলছ কি ! '
    ---- ' বলতে খারাপ লাগছে একজন বাইরের লোকের কাছে ..... কিন্তু না বলেও পারছি না .... '
    কলতান উপলব্ধি করল মৌসুমীর হৃদয়ে অনেক গ্লানির বাষ্প জমে আছে । নিঃসরনের পথ না পেয়ে তার মনের অন্দরে এক কষ্টকর চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে ।  
    ---- ' কি... কি ? খুব খারাপ কিছু নাকি ? '
    মৌসুমী আবার চুপ করে রইল একটু । কলতান বুঝতে পারল ও ভীষণ দোলাচলে দুলছে কোন জ্বালাময় ভাবনার কিনারায় দাঁড়িয়ে । সে তার অভিজ্ঞতা থেকে জানে সাধারণতঃ আই উইটনেসদের ক্ষেত্রে এরকম হয় । তারা তাদের বয়ে বেড়ানো স্নায়ুচাপ থেকে মুক্ত হতে চায় । মৌসুমী কি তাহলে দেখেছে কিছু ? মনে হয় না, কলতান ভাবল ‌। তাহলে তো মৌসুমীর মতো দৃঢ়চেতা মেয়ে তো আগেই সাক্ষী দিয়ে দিত ।
    ক্যারাম বোর্ডে পকেটের ঠিক ধারে বসে থাকা ঘুঁটিতে যেমন আলতো টোকা মারে স্ট্রাইকার পকেটে ফেলবার জন্য , কলতান তেমনি আলতো কিন্তু নিখুঁত একটা টোকা মারল এবার .....
    ----- ' মানে ..... খুন খারাপি কিছু নয় তো ? '
    সময়োচিত টোকায় মৌসুমী টাল খেয়ে গেল।
    মৌসুমীর মনের অবদমিত কথা অর্গলমুক্ত হয়ে বেরিয়ে গেল ।
    ----- ' হ্যা ..... সেইরকমই .... ' বলে খোলা দরজা দিয়ে চোখ মেলে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল । 
    কলতান চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করল ,
     ' বল কি গো .....নিজের বাড়ির  লোককেই ! ...... ধরা পড়েনি ।'
    মৌসুমী এতক্ষণে সম্পূর্ণ বেআব্রু হয়ে গেছে । কলতানকে কেন তার এত বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না । বোধহয় পাত্রীর ভোলাভালা কাকার ভূমিকায় কলতানের নিখুঁত অভিনয়ই এর কারণ ।
    সে উত্তর দিল , ' হ্যা .... ধরা তো পড়েছে । কিন্তু অন্য লোক ..... অন্য একজন নির্দোষ নীরিহ  লোক আসল খুনির জায়গায় জেল খাটছে .... '
    কলতান আবার চোখ কপালে তুলে বলল ---
    ----- ' অন্য লোক ..... মানে ফাঁসানো হয়েছে ? '
    ----- ' হ্যা ... ' মৌসুমী দৃঢ়স্বরে বলল ।
    ----- ' হায় ভগবান ..... কি সাঙ্ঘাতিক ! তুমি আমার অনেক উপকার করলে গো ..... বিরাট বিপদ থেকে আমাদের বাঁচালে ..... ' , বলার পর   কলতান তার দ্বিতীয় টোকাটা মারল .... ' কিন্তু এ তো .... বিরাট অন্যায়, ভয়ঙ্কর অবিচার  ... মেনে নেওয়া যায় না .... '   
    কলতান উদভ্রান্ত চোখে ঘুলঘুল করে মৌসুমীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল । 
    ----- ' কিন্তু উপায় কি বলুন ..... জেনেশুনে সবই 
    মেনে নিতে হচ্ছে  .... ' 
    কলতান গভীরভাবে ব্যথিতকন্ঠে জিজ্ঞাসা করে , ' কোন উপায় কি নেই ..... এর কোন সুরাহা নেই  ?  একটা নীরিহ লোক এভাবে ..... ছি ছি ..... '
    ------ ' হ্যা ..... উপায় একটা আছে .... '
    ----- ' কলতান গুপ্তর নাম শুনেছেন ? '
    ------ 'না .... আমি ওসব ঠিক .... খবর রাখি না.....  তিনি কি করেন ? '
    ------ ' প্রাইভেট ডিটেকটিভ ... ' মৌসুমী জানায়।
    ----- ' ও বাবা ..... তার দ্বারা এসব জটিল কাজ হবে ? ' 
    ----- ' আপনি জানেন না ..... আপনাকে একটা ম্যাগাজিন দেব ..... পড়ে নেবেন .... '
    কলতান প্রমাদ গনল এবার । ম্যাগাজিন বার করলেই তো হয়েছে । ওতে নিশ্চয়ই তার ছবি থাকবে । 
    সে তাড়াতাড়ি বলে উঠল , ' আরে না না .... ওসব দেখে আমি কি করব ? তুমি বরং ওই কলতান না কি নাম বললে .... তার ঠিকানাটা দাও না ..... খুঁজে দেখি পাওয়া যায় কিনা .... '
    ----- '  ঠিকানা তো বলতে পারব না কাকু ..... শুনেছিলাম কলেজ স্ট্রীটে ওই মোহিনীমোহন কাঞ্জিলালের দোকানের উল্টোদিকে বাড়ি .... '
    ------ ' অ .... আচ্ছা .... দেখি খুঁজে পাই কিনা  .... '
    ----- ' খুঁজে পেলে .... আমার মোবাইল নম্বরটা দিয়ে দিচ্ছি ..... একটা ফোন করে দেবেন .... '
    ----- ' না না .... ফোন নম্বরের কোন দরকার নেই ..... খুঁজে পেলে আমি যে করে হোক এখানে ধরে নিয়ে আসব .... আচ্ছা ফোন নম্বরটা দাও .... যদি দরকার হয় .... '
    মৌসুমী নিজের ফোন নম্বরটা লিখে দিল কলতানকে কি জানি কোন পরম বিশ্বাসে ।
    কলতান তার সামনের ভাঙা দাঁতটা প্রকট করে এক গাল হেসে বলল , ' এখন তাহলে আসি .... '
    এই সময় মৌসুমীর মা এসে বললেন , ' ওমা .... আপনি চলে যাচ্ছেন ? এক কাপ চা অন্তত খেয়ে যান ..... ' 
    ----- ' আজ আর চা খাব না দিদিভাই .... অনেক বেলা হয়ে গেছে .... যদি আবার কখনও আসি তখন হবে ওসব ..... '
    কমলিকাদেবী কলতানকে শিক্ষক ঠাউরে একগাল হেসে তাকে জিজ্ঞেস করলেন , ' তা ছাত্রীটিকে কেমন বুঝলেন ? সম্ভাবনা আছে ?'
    ------ ' নিশ্চিতভাবে দারুণ সম্ভাবনাময় । নিশ্চিন্ত থাকুন .... তবে পরিশ্রমের তো কোন বিকল্প নেই .... আসি ..... '
    মৌসুমী বলল , ' আসুন কাকু .... ' 
    ওদের ধোঁকা দেবার জন্য বাধ্য হয়ে দেবমাল্যর বাড়ির দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে স্টেশনের রাস্তা ধরতে হল কলতানকে । 

         বিকেলে দেবমাল্য কলতানকে বলল , ' বেরিয়েছিলেন নাকি ? '
    ----- ' হ্যা ..... একটু ঘুরে ঘুরে দেখলাম তোমাদের গ্রামটা .... খুব সুন্দর এখানকার লোকজন ..... '
    ----- ' তাই নাকি ..... সবাই ?
    ----- ' না ... তা না ... রোগ এলিমেন্ট তো সব জায়গাতেই থাকে ... '
    ----- ' তাই তো .... '
    ------ ' যাক ওসব কথা ..... আমাকে একদিনের জন্য কলকাতায় যেতে হবে ... '   
    ------ ' কেন কলতানদা ?  
    ----- '  গোয়েন্দা কলতান গুপ্তকে খুঁজতে .... '
    ----- ' হোয়াট ? ' 
    ------ ' থুড়ি  থুড়ি ..... একটা ভাল মোবাইল সেট আনতে .... '
                 
                     ********************

    একদিন নয় , দুদিন পর কলকাতায় থেকে ক্ষীরকাঠি গ্রামে দেবমাল্যর বাড়িতে ফিরে এল কলতান । দেবমাল্যকে জিজ্ঞাসা করল , ' হিয়ারিং-এর ডেট পাওয়া গেছে ? ' 
    ----- ' না এখনও পাইনি । তবে খবর পেয়েছি এক সপ্তাহের মধ্যে হিয়ারিং হবে ... '
    ----- ' তার মানে হাতে বেশি সময় নেই ..... তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিতে হবে .... ' কলতান বলল ।
    ----- ' কিন্তু কলতানদা .... বুঝতে পারছি না নতুন ডকুমেন্ট কি প্লেস করব । ফ্রেশ এভিডেন্স 
    কি সাবমিট করব ..... '
    ----- ' সেটাই আসল চিন্তার বিষয় । সলিড এবং আনফেলিং এভিডেন্স প্লেস করতে না পারলে কেসটা আবার মুখ থুবড়ে পড়বে । সেটা কোনভাবেই হতে দেওয়া যাবে না ...... '
    ----- ' সেটাই তো ..... খুব চিন্তায় আছি .... এত লড়েও .... '
    ----- ' না না অত ওরিড হয়ো না ..... রাস্তা একটা বেরোবেই ..... এখনও তো কিছুদিন সময় আছে হাতে । '
    ------ ' হুঁ ..... কলতানদা আমি কিন্তু আপনার ওপরই পুরোপুরি নির্ভর করে আছি ..... কোর্টে গিয়ে আমিই কাউন্টার করব ..... কিন্তু অকাট্য কিছু পাওয়া না গেলে তো ..... '
    ----- ' ঠিক ঠিক ..... অকাট্য চাই ..... তুমি তো আজ কোর্টে যাবে .... না কি ? ' 
    ----- ' হ্যা .... বারাসাত কোর্টে একটা কেস আছে আজকে .... '
    ----- ' ঠিক আছে ..... তুমি যাও .... আমি দেখি এদিকে কি করতে পারি ... ' 
         বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ দেবমাল্য বেরিয়ে গেল । বেলা বারোটার সময় কলতান মৌসুমীকে ফোন করল । ফোন বেজে যেতে লাগল । বেজে বেজে থেমে গেল । সুললিত মহিলা কন্ঠ শোনা গেল ----- আপনি যে ব্যক্তিকে ফোন করছেন তিনি উত্তর দিচ্ছেন না ..... আপনি অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পরে পুনরায় চেষ্টা করুন ..... ইত্যাদি ..... 
    পুনরায় চেষ্টা তো করতেই হবে । হাতে সময় কোথায় ?   দশ মিনিট পরে কলতান আবার নম্বর ডায়াল করল । কোভিড সংক্রান্ত সূচনা দেবার পর দুবার রিং হয়ে লাইন কেটে গেল । 
    কলতান আবার রিং করল । ফোন বাজতে লাগল .... কেউ ধরে না .... । কলতান ভাবল, এ তো মহা মুশ্কিল হল ! প্রায় দশবার রিং হবার পর ওদিক থেকে মহিলা কন্ঠে মৃদু সতর্ক আওয়াজ আসল ----- ' হ্যা..লো ..' 
    স্বাভাবিক ব্যাপার । অজানা নম্বর । ধন্দ তো থাকেই । 
    ----- ' কে মৌসুমী ? '
    আবার মৃদু কন্ঠে উত্তর এল, ' হুঁ .... কে ? '
    ----- ' আমি কাকু বলছি .... ওই সেদিন কলকাতা থেকে গিয়েছিলাম বিয়ের সম্বন্ধের ব্যাপারে  ...... ' 
    মৌসুমীর কন্ঠ এবার সতেজ হল -----
     ------ ' ও .....হ্যা হ্যা .... কাকু বলুন বলুন .... আমি ভাবছিলাম কে না কে ..... ফোন তুলিনি ....সরি । আপনার নাম্বারটা সেভ করে রাখা উচিত ছিল সেদিন ..... যাক , বলুন .... '
    ------ ' হ্যা .. শোন কাজ হয়েছে ..... '
    ----- ' কিরকম ? '
    ------ ' কলতান গুপ্তর দেখা পেয়েছি .... '
    ----- ' আরিব্বাস ...তাই নাকি ! কি করে হল ? ' 
    ----- ' সে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ।  পরে বলব'খন ...... বলছি যে, শুধু দেখাই করিনি ..... একেবারে ধরে নিয়ে এসেছি এখানে ..... '
    ----- ' কি বলছেন আপনি !  কলতান গুপ্তকে ধরে নিয়ে এসেছেন ..... সত্যি বলছেন , না জোক করছেন আমাকে গ্রামের মেয়ে পেয়ে ?'
    ------ ' ওই দেখ ..... তুমি আমার থেকে কত ছোট .... তোমার সঙ্গে জোক করতে পারি ? সত্যিই নিয়ে এসেছি .....'
    ----- ' তা ওনাকে রেখেছেন কোথায় ? '
    ----- ' এখানে একজন উকিলের বাড়ি । দেবমাল্য সরকার .... চেন কি ? '
    ------ ' দেবমাল্য সরকার ..... হ্যা হ্যা ..... বুঝতে পেরেছি .....গার্লস স্কুলের রাস্তায় বাড়ি তো ? '
    ----- '  হ্যা, ঠিক বলেছ। ওখানেই আছে এখন । এখন কি দেখা করবে ? '
    ---- ' হ্যা ....তা করতে পারি .....'
    ----- ' তুমি কি দেবমাল্যর বাড়িতে আসতে পারবে ?  কারণ তোমার বাড়ি গেলে কথাবার্তা বলার অসুবিধে হতে পারে হয়ত .... '
    ----- ' ঠিক আছে , আমি এক ঘন্টার মধ্যে আসছি ..... বাড়িটা চিনি আমি .....'

        প্রায় এক ঘন্টা পরে মৌসুমী দেবমাল্যর বাড়িতে এল । বাইরের ঘরের দরজা খুলে দিল কলতান । মৌসুমী এক গাল হাসল ।
    ----- ' এস এস  .... বস '  কলতান সস্নেহে বলে ।
    মৌসুমী ঘরের ভিতরে এসে বসল । 
    ----- ' ওনাকে দেখছি না তো .... '
    ----- ' কাকে .... কলতানকে ? '
    ----- ' হ্যা ...'
    ----- ' এই তো তোমার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে ...'
    -----  ' মানে ? '
    ------ 'যদি কিছু মনে না কর ...আমিই কলতান'
     ----- ' সেকি ! জোক করছেন আবার ..... '
    কলতান সেই একই কথা বলল ----
    ----- ' আরে ..... তুমি আমার থেকে কত ছোট .... তোমার সঙ্গে জোক করতে পারি ! বিশ্বাস করা না করা তোমার ইচ্ছে , আদতে আমিই কলতান গুপ্ত ..... ' , বলে কলতান হাসতে লাগল তার সামনের একটা ভাঙা দাঁত বিকশিত করে ।
     অগাধ বিস্ময়ে মৌসুমীর বাক্যস্ফূর্তি হল না । সে হাঁ করে তাকিয়ে ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা করতে লাগল এবং ভাঙা দাঁত দেখে কি যেন মনে পড়ি পড়ি করেও করল না । 
    ------ ' আরে  ..... কি দেখছ হাঁ করে .... যা বলছি সব সত্যি । আফতাব হোসেন বলে যে লোকটা তোমাদের বাড়ি গামছা বিক্রি করতে গিয়েছিল সেটাও এই আমি ..... '  
    ভাঙা দাঁতের ব্যাপারে মৌসুমীর আবছা স্মৃতি আচমকা ঘোর পরিষ্কার হয়ে উঠল । 
    সে উচ্ছ্বল গলায় বলে উঠল , ' ও হরি  ...... তাই বল ...... কিছুতেই মনে পড়ছিল না ..... এবার মনে পড়েছে .....ও:  আপনি সত্যি অসাধারণ .... '
    কলতান হালকা মেজাজে বলল , ' মনে যখন পড়ে গেছে তখন আর সমস্যা নেই নিশ্চয়ই ....'
    মৌসুমী ঠিক কি বলবে ভেবে না পেয়ে চুপ করে রইল । একবার বলল , ' সমস্যা ..... মানে ... সমস্যা তো আছেই ..... পরাণ বাগ্দীর ব্যাপারটা .... '
    ----- ' হ্যা .... পরাণ বাগ্দীর কথাই তো বলছি ।এই মুহূর্তে আমাদের একমাত্র মিশন তো ওটাই....' 
    কথাটা শুনে চাঁচাছোলা মৌসুমী স্ব-ভাবে ফিরে এল । উত্তেজিত হয়ে বলল , ' হ্যা সেটাই তো .... সেটাই তো ..... শয়তানের বাচ্চা .... ফাঁসিতে লটকানো উচিত .... '
    কলতান শান্তস্বরে বলল, ' সেটাই তো হল কথা ।এ ব্যাপারে তোমার আর আমার লক্ষ্য একই । হ্যা .... আমি পরাণ বাগ্দী মামলা সমাধানের উদ্দেশ্যে  দেবমাল্য সরকারের ডাকে এখানে এসেছি উইদাউট রেমুনারেশান ..... আমার অনেক কাজ ফেলে রেখে । তার একটাই উদ্দেশ্য .... একটা নিরপরাধ মানুষ যেন শাস্তি না পায় । তোমার সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি তোমার ঐকান্তিক ইচ্ছাও তাই । এখন প্রশ্ন হল আমার এই তদন্তের কাজে আমি তোমাকে জড়ালাম কেন । তার কারণ , আমি আমার তদন্তে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, তুমি এই মামলা সমাধানে একটা ভাইটাল অ্যন্ড ইন্স্ট্রুমেন্টাল রোল প্লে করতে পার । '
    ----- কিন্তু ..... আমি......  কিভাবে .... মানে .... '
    ----- ' বুঝিয়ে বলছি । আমি বলছি না যে তুমি কোন ডায়রেক্ট রোল প্লে করতে পার , মানে আই উইটনেস বা ওই ধরণের কিছু ..... কিন্তু ইনডায়রেক্ট রোল ডেফিনিটলি প্লে করতে পার.....'
    ------ ' কিরকম ? '
    ----- ' দেখ পরাণের স্বপক্ষে খুব পজিটিভ অ্যলিবাই বা নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার মতো অকাট্য যুক্তি তেমন কিছু নেই বা যাও বা ছিল নষ্ট করে ফেলা হয়েছে .... ' 
    কলতান একটু চুপ করে গেল । তারপর আবার বলল , ' ক্লিয়ার এভিডেন্সও হয়ত কিছু আছে .... যেটা কেউ জানলেও জানতে পারে , তার সঙ্গে কথা বলা হয়নি  ..... বলব নিশ্চয়ই 
    ঠিক সময়ে ..... সেখানেও তোমার হেল্প লাগবে ..... যাক সে কথা ..… যেটা বলছিলাম .... পরাণকে দোষমুক্ত করার জন্য পজিটিভ এভিডেন্স , বলা ভাল মোক্ষম একটা বয়ান লাগবে । এই বয়ানরূপী ব্রহ্মাস্ত্রটি যোগাড় করে দেবার ভার নিতে হবে তোমাকে।'
    মৌসুমী শুনে আকাশ থেকে পড়ল ।
    ----- ' আ...মি ! কিভাবে ? '
    ---- ' হ্যা ... বলছি .... এই যে মোক্ষম বয়ানের কথা বলছি, এটা কার বয়ান হতে হবে জান ?
    ----- ' কার ? '
    ------ ' বসন্ত মন্ডলের । ' 
    ঘরের মধ্যে যেন বিপুল এক বিষ্ফোরণ হল ।
    ----- ' কার বললেন .... বসন্তের ? কি বয়ান ?'
    ----- ' বয়ানটা হবে তার বা তার বাবার অনন্ত মন্ডলকে খুনের স্বীকারোক্তি ... '
    ----- ' কি বলছেন ! এ আবার হয় নাকি ?'
    ----- ' এই দুনিয়ায় ভাই সবই হয় ..... তাবড় সব উর্ধ্বরেতা মুনি ঋষিরা ঘোল খেয়ে গিয়েছিল মেনকা রম্ভার কাছে ..... ' 
    ----- ' কি রেতা বললেন ?
    ----- ' আঁ ... কি ? ও...... না,  ও কিছু না .... যেটা বলছিলাম ....আর এ তো সামান্য বসন্ত মন্ডল .... আর বয়ানটা তো আর কোন থানায় বা আদালতে দিচ্ছে না ..... দেবে তো তোর কাছে .... না দেবার কি আছে ?'
    ----- ' কিন্তু আমার কাছে বসন্ত স্বীকারোক্তি দেবে কেন ? '
    ----- ' তুই এত ছোট তোকে বুঝিয়ে বলতেও আমার ভীষণ সংকোচ হচ্ছে । তোর ওপর বসন্তর যে দুর্বলতা সেটা কাজে লাগাতে হবে তোকে .... '
    মৌসুমী অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে কলতান একবার চোখ বুজে হাসিমুখে বলল, ' আমি সব জানি ..... গোয়েন্দাদের অনেক কিছু জানতে হয় ..... যা হয়ত জানা উচিত নয় ... কিন্তু কি করা যাবে ... আমাদের পেশাই এমনি ...'
    ' ...... তোকে প্রেমের অভিনয় করে ..... দরকার হলে ছলাকলা করে ওকে দিয়ে বলিয়ে নিতে হবে যে খুনটা ওরাই করেছে । পরাণ করেনি । এই স্ট্র্যাটেজিটা অবশ্য শিওর শট কিছু না । তবে তোর ওপর বসন্ত যেরকম মায়াচ্ছন্ন তাতে শটটা লেগে যাওয়ার খুব চান্স আছে । 
    সব শুনে টুনে বেশ দোটানায় পড়ে গেল মৌসুমী । এমন অদ্ভুত একটা কাজে যে তাকে অংশ নিতে হতে পারে সে কোনদিন কল্পনাও করেনি । কিন্তু পরাণকে বাঁচাবার  দৃঢ়সংকল্প মনোভাব তাকে কলতানের প্রস্তাব খারিজ করতে দিল না। 
    সে চিন্তিত মুখে কলতানের দিকে তাকিয়ে বলল, ' কিন্তু স্যার .... আমার কাছে বললেই বা কি ..... পরে তো অস্বীকার করতে পারে । বলেছে যে তার কোন প্রমাণ তো নেই ।'
    ----- ' অস্বীকার করতে পারবে না । প্রমাণ 
    অবশ্যই থাকবে .... ' 
    কলতান পিছন দিকে গিয়ে তার অ্যটাচিটা খুলল । খুলে লজেন্সের মতো ছোট্ট একটা  ডিভাইস বার করল ।
    ----- ' এই যে ..... এটা থাকবে তোর জামার নীচে । বসন্তর বয়ান আগাগোড়া ধরা থাকবে এতে । সুতরাং ..... কোন ভয় পাসনি ..... ও কিচ্ছু করতে পারবে না তোকে । সারাক্ষণ আমাদের নজরে থাকবি তুই ..... কিন্তু আসল কাজটা হাসিল করতে হবে তোকেই .... '
    মৌসুমী হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠে বলল , ' আচ্ছা .... তাই করব । '
       ( ক্রমশঃ )
    ************************************************************************************

     

     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Mousumi Banerjee | ১৭ জুন ২০২২ ১২:০৬509091
  • বেশ এগোচ্ছে
  • যোষিতা | ১৭ জুন ২০২২ ১২:১৪509092
  • হ্যাঁ রুদ্ধশ্বাসে পড়ছি।
    তবে তিনটের বেশি ডট দিচ্ছেন এখনও। নিরীহ হবে বানানটা।
  • যোষিতা | ১৭ জুন ২০২২ ১২:১৭509093
  • How many dots are in an ellipsis? The answer is three. But, if the ellipsis comes immediately after a grammatically complete sentence, that sentence still needs its own period. So you would end up with a period, plus an ellipsis, which looks like four periods in a row.
  • kk | 174.53.251.123 | ১৭ জুন ২০২২ ২০:০০509104
  • যাঃ, ভালোই তো এগোচ্ছিলো। কিন্তু একজন প্রতিষ্ঠিত গোয়েন্দা হয়ে একটি ক্লাস টুয়েল্ভে পড়া মেয়েকে প্রেমের অভিনয় করে খুনের স্বীকারোক্তি আদায় করার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়াটা খুবই ইরেস্পন্সিবল ও আনপ্রোফেশন্যাল কাজ হয়ে গেলো না?
  • Anjan Banerjee | ১৯ জুন ২০২২ ০৮:৩০509156
  • কলতান বুঝতে পেরেছিল মৌসুমী এ কাজটা পারবে । তাছাড়া মৌসুমীর নিজেরও গরজ ছিল ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন