এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • বিবর্তনের কাঠামোয় সমকামিতা 

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১১১০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সমকামিতা একটা সময় কার্যত নিষিদ্ধ ছিল। জেল-জরিমানা হত। ঠিক সত্তর বছর আগে, ১৯৫২ সালে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী অ্যালান টুরিং বিলেতের আদালতে সমকামিতার অপরাধে 'অপরাধী' প্রমাণিত হন। তাঁকে কারাবাস এবং হরমোন-'চিকিৎসা'র মধ্যে, যেটা খুশি বেছে নিতে বলা হয়।  টুরিং হরমোন চিকিৎসা বেছে নেন। এবং তারপর এই অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে বছর দুয়েকের মধ্যে টুক করে আত্মহত্যা সেরে নেন।

    এর পরে অবস্থা বদলায়, জেল-জরিমানা না হলেও, সমকামিতা অসুস্থতা হিসেবে চিহ্নিত থাকে বহুদিন। মানসিক অসুস্থতা বা ডিজঅর্ডারের তালিকায় দীর্ঘদিন ঢুকেছিল সমকামিতা। এই বছর পঞ্চাশেক আগে পর্যন্ত। তার জন্য চালু ছিল নানারকম 'চিকিৎসা'। একেবারেই হাল আমলে, ১৯৭৩ সালে, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন ডিজ-অর্ডারের তালিকা থেকে সরায় সমকামিতাকে।

    তারও পরে, বেশ কয়েকদশক ধরে সমকামিতা থেকে যায় ট্যাবু।  জেল-জরিমানা, চিকিৎসা এসবের খুব চাপ না থাকলেও গুজগুজ-ফুসফুস, নিন্দে তো আর আইন করে বন্ধ করা যায়না। সমলিঙ্গের লোকজন যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হচ্ছেন, বা হতে পারেন শুনলেই চারদিকে ঢিঢি পড়ে যেত। ফলে, সমকামীদের দীর্ঘদিন, লুকিয়ে থাকতে হত। এখনও হয়না তা নয়। এর নাম এক কথায় ছিল আলমারিতে সেঁধিয়ে থাকা। সেটাই ছিল স্বাভাবিক। সমকামী হয়েছ হও, খামোখা সেটা বুক-বাজিয়ে বলার দরকার কী। পাড়াপ্রতিবেশীদের থেকে লুকিয়ে রাখ। লোকলজ্জার একটা ব্যাপার আছে না?

    অবস্থাটা বদলাতে শুরু করে, পাশ্চাত্যে কয়েক দশক আগে। ভারতে বা বাংলায় তারও পরে। বদলানো বলতে, ট্যাবু চলে গেছে এমন না, কিন্তু সমকামিতা নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তাটা অন্তত শুরু হয়। গুরুচণ্ডা৯ সেইসময় থেকেই, এই বিষয়টাতে দৃষ্টিনিবদ্ধ করেছিল। 'আমার যৌনতা' সহ একাধিক পত্রিকা এবং বই প্রকাশ করা হয়। মূলধারার প্রকাশনার মধ্যে, এই ব্যাপারে, আমরাই প্রথম ছিলাম। তখন, মনে আছে, কোনো এক লিটল ম্যাগ জমায়েতে, আমাদের প্রচেষ্টাগুলিকে 'সাহসী' আখ্যা দেওয়া হয়। যদিও, সাহসের তেমন কিছু ছিল বলে মনে হয়না, ওটা এমনিই করা উচিত ছিল। সেই প্রচেষ্টার ফলও খানিক ফলেছে, অনেকেই, বিষয়টা নিয়ে প্রকাশ্যে বলছেন এখন। 

    আমরা অবশ্য ওই প্রথম যুগেই থেমে থাকিনি। পরপর নানা প্রকাশনা হয়েছে। এই কোভিডের ঝকমারির মধ্যেই বেরোলো 'বঁধূ'। আর এই বইমেলায় বেরোচ্ছে এই বইটি। নামেই বোঝা যাচ্ছে, বিষয়বস্তুটা কী। তবে একটা কথা বলে দেওয়া ভালো, 'বিজ্ঞান সব জানে, আসুন আপনাকে বুঝিয়ে দিই' এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে বইটা লেখা হয়নি। অন্য সমস্ত কিছুর মতোই সমকামিতা প্রসঙ্গেও নানা ব্যাখ্যা আছে। তার কিছু অংশ পরস্পরবিরোধী। ব্যাখ্যা হয়নি, এমন জিনিসও আছে। সবই এসেছে এই বইয়ে। কারণ, ব্যাপারটা একেবারেই এই নয়, যে, 'সমকামিতা বিজ্ঞানসম্মত, তাই একে মেনে নিন'। বরং উল্টো, 'সমকামিতা ঘোরতর বাস্তব, তাই একে স্বীকার করুন, বিজ্ঞানকে দিন ব্যাখ্যা করতে'। মহাবিশ্বের অর্ধেক জিনিসের ব্যাখ্যা আমাদের জানা নেই, তাতে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব নিয়ে কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেনা। 'আগে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস বিজ্ঞান সম্মত কিনা জেনে নিই, তারপর প্রশ্বাস নেব' এরকম কেউ আজ অবধি কেউ বলেনি। সমকামিতাকেও সেই ভাবেই দেখতে হবে। এই হল সময়ের দাবী। 

    তার মানে এই নয়, যে, সমকামিতার ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। বা বিজ্ঞানের আলোকে দেখার দরকার নেই। ব্যাপারটা এখানেও উল্টো। সমকামিতা আছে বলেই, বিজ্ঞানের প্রয়োজন অনুসন্ধানের। এই বইটি সেই অনুসন্ধানেরই অংশ।   

    যাঁরা এই প্রকল্পের অংশ হয়ে দত্তক নিতে চান, অবশ্যই যোগাযোগ করুন। 

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৫৮504174
  • আজ অভিজিৎ রায়, অভি দা বেঁচে থাকলে কতোই না খুশীই  হতেন!
     
    তার চেতনার মৃত্যু নাই! 
     
    গুরু টিমকে অভিনন্দন! ❤️
  • P pial | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:১৫504181
  • বইটি রচনা ও প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলের জন্য শুভকামনা। 
     
    জ্ঞান মুক্ত হোক। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন