এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  আলোচনা   বই

  • আপনার প্রিয় কল্পবিজ্ঞান/ ফেবারিট সায়েন্স ফিকশন 

    জয়
    আলোচনা | বই | ২২ ডিসেম্বর ২০২১ | ৬১২০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • বই উপন্যাস নভেল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:58cd:52ad:cce8:28af | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৭735226
  • স্তানিস্লাভ ল্যেম এর লেখাই বটে। স্ত্যানিস্ল নয়। সরি টু সে, উচ্চারণের পেছন মারতে মারতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে চেনা নামও বুঝে উঠতে পারি না।
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:১৬735227
  • তথ্য যা পাওয়া যায় বেশিরভাগই ইরেজীতে (মানে অন্য ভাষায় পাওয়া গেলেও পড়তে পারি ক'জন? অনেকেরই ইংরেজী আর মাতৃভাষাই শুধু সম্বল)। ইংরেজীতে যেভাবে লেখে, সেভাবেই উচ্চারণ করেন তো বেশিরভাগ লোক।
    সেই তারাপদ রায় কথিত কোচাকোলা, কোচাচোলা, কোকাচোলা ইত্যাদি কেস। ঃ-)
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:58cd:52ad:cce8:28af | ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০২735229
  • সেটাই। খুবই স্যাড সিচুয়েশন।
  • জয় | 82.1.126.236 | ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৩২735235
  • তানিস্লা(লেমের নভেলা (১৯৬১আর তার (ইংরেজী অনুবাদওতারকোভস্কির মুভি (১৯৭২রাশিয়ানইংরেজীসাবটাইটেলএবং জর্জ ক্লুনি যেটায় ক্রিস কেলভিন হয়েছিল (ডিরেক্টর কে মনে নেই২০০২/সবই সতন্ত্র। জোয়ানকিলমার্টনস্টিভ কক্সের ইংরেজী অনুবাদ এবং প্রথম মুভিটি (হ্যাঁতারকোভস্কির সুবিখ্যাত ওয়ান্স ইন  জেনেরেশন মুভিসোলারিসওলেমের বহুৎ বিরক্তির উদ্রেক করেছিল। লেম এমনিতেই মনে হয় এক খিঁটখিঁটে বুড়ো যাকে সহজে খুশী করা যায়না।

    আমি যেটা পড়েছি সেটা প্রফেসর বিল জনসনের পোলিশ থেকে ইংরেজী অনুবাদ (২০১৭) ততদিনে লেম মারা গেছেন (২০০৬) ; প্রসঙ্গত এই বছর ২০২১ পোলান্ডে ‘স্তানিস্লা(লেম বছর’ হিসেবে উদযাপিত হচ্ছেতাঁর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে। এইঅনুবাদ তাঁর স্ত্রী-পুত্রের আশির্বাদ পেয়েছে। তা লেম ছিলেন নাস্তিক এবং কখনও অ্যাগনস্টিক। তিনি এই দুশ পাতারও কম নভেলাটিবোধহয় একটা ফার্স্টকনট্যাক্ট সাই ফাই হিসেবে লিখেছেন। গল্পটা স্পয়েল করতে চাইনা (@অরন্যআপনার জন্য)মানুষবেসিক্যালি এলিয়েনদের তুলনায় কত ছেলেমানুষ কিন্তু অর্বাচীনঅহঙ্কারী গান্*ু। কেলভিন আর হারির প্রেম অফসুট। 

    অন্যদিকে তারকোভস্কি তো তারকোভস্কিই। তিনি বানাবেন ক্লাসিক। সাই ফাইএর মত ‘সুপারফিসিয়াল’ জিনিসে তিনি কেনসন্তুষ্ট হবেনমনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনকেলভিন আর হারির অমর প্রেমপ্রেমের/ প্রকৃতির পথে কিভাবে মনুষ্যত্বের জয় সম্ভব (তারকোভস্কিঅর্থোডক্স খ্রীষ্টানএইগুলো দেখিআর তাই বুঝি @সের সন্দ হয় এটা আদৌ সাই ফাই কিনাএমনকি লেম নিজেই কোন একজায়গায় বলেছেনতারকোভস্কি সোলারিস বানাননিবানিয়েছেন  ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট

  • জয় | 82.1.126.236 | ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ১৯:৩৬735236
  • বিল জনসন নয় জনস্টন। মার্জনা করবেন।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:b08f:3cad:2d90:8ab0 | ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:২৫735237
  • তারকোভস্কির সোলিয়ারিস আমি দেখেছি ১৯৯৬ সালে কোলতারার নন্দন ১ এ। অত বড়ো হলে তিন চারজন দর্শক ছিল। মূল গল্প আমার পড়া নেই। ছবিটা ক্লাসিক। সায়েন্স ফিকশন বলে একবারও মনে হয় নি। সাবটাইটেল পড়ি নি, যেহেতু মূল ভাষাটা বুঝি। সাবটাইটেল অনেক সময় ছবির মূল ভাব প্রকাশ করতে সক্ষম হয় না।
    আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ছবিগুলোর একটা এই সোলিয়ারিস। মাঝে মাঝে যেমন ভয় মিশ্রিত চমক আছে, তেমনি গোটা ছবি জুড়ে রয়েছে জটিল মনস্তত্ত্ব ও মানবিক সম্পর্কের সংঘাত। 
    ঠিকই। সাইফাই যেমন ভাবে এনজয় করা যায়, অথবা সাইফাইয়ের দর্শকদের যে ছকে বাঁধা এক্সপেক্টেশন থাকে সোলিয়ারিসে তার বিন্দুমাত্রও নেই। ফলতঃ সিনেমাহলের ভিড় পাতলা হতে থাকে। শুধু সংলাপ এবং ঐ বদ্ধ স্পেস স্টেশনের গন্ডির মধ্যে যে নাটকটা চলতে থাকে তাতে অধিকাংশ দর্শক বোর হয়ে প্রেক্ষাগৃহ ছেড়ে বের হয়ে যায়। তার ওপর ক্রমাগত সাবটাইটেল পড়বার একটা চাপও এই মনোযোগ বিচ্যুতির কারন হতে পারে।
    হয়ত কেউ কেউ দেখতে এসেছিলো এলিয়েনদের কারসাজি, উদ্ভট আচরণ, সাসপেন্স, ফাইট। কিন্তু তার বদলে চলছে "ঘ্যান ঘ্যান"। প্রোটাগনিস্টকে বীরত্ব দেখানোর সুযোগটুকু পর্যন্ত দেওয়া হয় নি। 
     
    ( একটু অপ্রাসঙ্গিক হলেও এখানেই লিখছি "ব্লো আপ" নামক ছবিটি যেমন সাসপেন্স মুভি নয়, থ্রিলার তো নয়ই, সেই ছবিতে যেমন "আততায়ী"কে খুঁজতে যাওয়া অর্থহীন, ঠিক তেমনই এই সোলিয়ারিস ছবিটিকে সাই ফাই গোত্রে ফেলে দেয়া ছবিটির প্রতি ঘোর অবিচার)
     
    গল্প/উপন্যাস যখন সিনেমা হয়ে যায় তখন তা মূল কাঠামো থেকে অনেকটাই সরে যায়। বিভূতিভূষণ ও সত্যজিতের পথের পাঁচালি যেমন এক নয়। সুনীল ও সত্যজিতের অরণ্যের দিনরাত্রি আলাদা। সোলিয়ারিসের ক্ষেত্রেও যে এমন ঘটে থাকবে তা আর আশ্চর্য কী?
  • dc | 2401:4900:2329:ab46:bc85:5341:1b4d:8e57 | ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৪৩735238
  • আমি প্রথমে তারকোভস্কির সিনেমাটা দেখেছিলাম। সেটা দেখে এতো ভালো লেগেছিল যে স্ট্যানিসল লেম এর বইটা যোগাড় করে পড়ে ফেলেছিলাম। আমার দেখা আর পড়ার মধ্যে অন্যতম সেরা সিনেমা আর গল্প। পরে ক্লুনি আর ম্যাকেলহোনের সোলারিসও দেখেছি। ওটাও খুব খারাপ লাগেনি, যদিও বেশীরভাগেরই ওটা ভাল্লাগেনি। যাই হোক, সোলারিস এর ফিলজফিকাল প্রিমাইস অসাধারন। 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:905b:ceb3:1ae2:4551 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৩735243
  • পড়ব সোলারিস।  ধন্যবাদ জয়, ডিসি 
  • aranya | 2601:84:4600:5410:905b:ceb3:1ae2:4551 | ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১৪735244
  • জয়, আপনার দেওয়া https://www.ebanglalibrary.com/ - এই সাইটটাও বেশ
  • জয় | 82.1.126.236 | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০১:১১735266
  • @&/
    অনেক ধন্যবাদ। রবার্ট হাইনলাইনের "- অল ইউ জোম্বিস-" গল্পটা উল্লেখ করার জন্য। পড়া ছিল না- পড়লাম, দারুন লাগল।ক্লাসিক টাইম ট্রাভেল স্টোরি! বারে গানটার মতই "I'm my own grandpa" কিংবা বারটেন্ডারের আঙুলে পরা আউরোবোরস আংটির মতই...
  • dc | 2401:4900:3609:7353:d2:8b68:34b4:ac2d | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩০735267
  • অল ইউ জোম্বিস ভাল্লাগলে অবিলম্বে এই সিনেমাটা দেখে ফেলুন, আর তারপর টাইম লুপ সল্ভ করতে লেগে যানঃ 
     
  • dc | 2401:4900:3609:7353:d2:8b68:34b4:ac2d | ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:২৬735268
  • কনট্যাক্ট বইটার "পাঠপ্রতিক্রিয়া" লিখবো ভেবেছিলাম। এই পাঠপ্রতিক্রিয়া ব্যাপারটা আমি গুরুতে প্রথম দেখি, আর এটাই আমার প্রথম পাঠপ্রতিক্রিয়া, কাজেই বুঝতেই পারছেন কি হতে চলেছে :-)
     
    তবে বইএর পাঠপ্রতিক্রিয়া লেখার আগে একটুখানি লেখকপ্রতিক্রিয়া দেওয়া দরকার। কার্ল সাগানের নাম প্রথম শুনেছিলাম যখন ওনার কসমস সিরিজ টিভিতে দেখতে শুরু করি, এখনও ওটা আমার দেখা সেরা টিভি সিরিজের মধ্যে পড়ে। তাছাড়াও কোথাও পড়েছিলাম যে ভয়েজার স্পেসক্রাফট এ সাগানের ডিজাইন করা একটা ডিস্ক আছে, যা কিনা মেসেজ টু দ্য স্টার্স ফ্রম ম্যানকাইন্ড। কাজেই কনট্যাক্ট উপন্যাসটা পুরনো বইএর দোকানে দেখামাত্র কিনে ফেলেছিলাম। 
     
    এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র এলিনর অ্যারোওয়ে আর পামার জস। এলিনর ছোটবেলায় আমার সবচেয়ে প্রিয় দুটো চরিত্রর মধ্যে ছিলো (অন্যজন জ্যাসন বোর্ন)। এলিনর এর মতো আমিও ভাবতাম বড়ো হয়ে অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট হবো আর কোন একটা রেডিও টেলিস্কোপ ফেসিলিটিতে গিয়ে রিসার্চ করবো, আরেসিবো বা জডরেল ব্যাংকে। হায়, সে আর হতে পারিনি। তবে এলিনর এর থেকে বা কার্ল সাগান নানান ইন্টারভিউ বা অন্যান্য বই পড়ে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম, তা হলো প্রশ্ন করা, কোন কিছুকেই "গিভেন" বলে মেনে না নেওয়া। আমি যে এথেইস্ট, তার পেছনে অনেকটা অবদান কনট্যাক্ট এর। আরেকটা মজার ব্যপার হলো, আমি ছোটবেলায় ভাবতাম বড়ো হয়ে এলিনর এর মতো অ্যাস্ট্রোনমার হবো, বড়ো হয়ে চাইতাম আমার যেন এলিনর এর মতো একটা মেয়ে হয়, আর এখন ভাবি আমি যেন এলিনর এর বাবার মতো বাবা হতে পারি, আমার মেয়ে যেদিকেই যেতে চাক না কেন, আমি যেন ওরকমই পাশে থাকতে পারি। 
     
    আর কনট্যাক্ট এর থেকে আরেকটা জিনিস শিখেছিলাম - নুমিনাস। 
     
    শেষ করি দুটো কোট দিয়েঃ 
     
    Surrounding the blue-white star in its equatorial plane was a vast ring of orbiting debris - rocks and ice, metals and organics--reddish at the periphery and bluish closer to the star. The world-sized polyhedron plummeted through a gap in the rings and emerged out the other side. In the ring plane, it had been intermittently shadowed by icy boulders and tumbling mountains. But now, carried along its trajectory toward a point above the opposite pole of the star, the sunlight gleamed off its millions of bowl-shaped appendages. If you looked very carefully you might have seen one of them make a slight pointing adjustment. You would not have seen the burst of radio waves washing out from it into the depths of space.
     
    The pulses had been journeying for years through the great dark between the stars. Occasionally, they would intercept an irregular cloud of gas and dust, and a little of the energy would be absorbed or scattered. The remainder continued in the original direction. Ahead of them was a faint yellow glow, slowly increasing in brightness among the other unvarying lights. Now, although to human eyes it would still be a point, it was by far the brightest object in the black sky. The pulses were encountering a horde of giant snowballs.
  • জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০০735269
  • @dc
    ধন্যবাদ। চমৎকার হয়েছে আপনার প্রথম পাঠপ্রতিক্রিয়া।লেখকপ্রতিক্রিয়াও। 
    কার্ল সেগান (কোন উচ্চারণটা কাছের, সাগান না সেগান?)এর হাত ধরে আমাদের জেনেরেশনের কতজনের যে বিজ্ঞানে উৎসাহিত হয়েছে! কনট্যাক্ট সেগানের একমাত্র সাইফাই। হার্ড সাই ফাই হলেও সম্পর্কের টানা পোড়েন, মনস্তত্ত্ব এমনকি ধর্ম/থিওলজিও এসেছে। আমার ভালো লেগেছিল - গিলগামেশ। মৃত্যুর আগে শরীরটাকে ফ্রিজ করে ভ্যান অ্যালেন অরবিটেরও বাইরে কোথাও রেখে দাও- কারণ তুমি শুধু তোমার কোষ আর DNA নও, তুমি তোমার পরিবার- ভালোলাগা গান- পছন্দের আফটার সেভ- কোল্ড ড্রিঙ্কস সব নিয়ে। আর বেস ১১- এখনও তল পাইনি!
    সেগানের অন্য বইগুলোর কথা এই টইতে বলব না। পপুলার সায়েন্সের বইএর একটা টই খুলুন না dc? ওটাও একটা দামী টই হবে।
    আপনার মেয়ে কত বড় হল? নিশ্চই ও এলির মতই প্রশ্ন করবে সব কিছুকেই ("Why?" Ellie's favourite question), নিজের স্বপ্নকে একবগ্গা হয়ে তাড়া করবে, সফলও হবে।
  • &/এর হয়ে জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০২735270
  • &/এর হয়ে জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০৫735271
  • &/এর হয়ে জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০৭735272
  • &/এর হয়ে জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:০৮735273
  • &/এর হয়ে জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৫:১০735274
  • জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:২৭735275
  • গ্রহণের রাত পড়লাম। বেশ ভালো লাগল, @&/, ধন্যবাদ।
     
     "সেই অদ্ভুত জ্যোৎস্নায় ঘোরলাগা অবস্থায় চুপ করে বসে রইল দু'জন মানুষ, একজন নীল চাঁদের দিকে চেয়ে, অন্যজন সেই নীলচাঁদের দিকে চেয়ে থাকা মানুষটির মুখটির দিকে চেয়ে।" 
     
    আমার অনুভূতির স্থূলতার কারণে বেশী ভালো লাগল তৃতীয় চ্যাপ্টারটি।
     
    সাহীন আর আমারও বহুদিনের ইচ্ছে আমরা বুডোবুডি মিলে রিহানা-সিমিয়ার দোকানের মত একটা ইন্ডি কফি শপ- পুরোনো বইয়ের দোকান- ফ্লোরিস্ট/ মোমবাতির দোকান দেব!
     
     
    গল্পপাঠ ওয়েবজিনটির জন্য ধন্যবাদ; &/; জানতাম না আগে- সোনার খনি (সাই ফাই এক্সক্লুসিভ নয়)।
     
    লে গুইনের "দ্য ওয়ান্স হু..."ও পড়লাম (কাজকর্ম ছুটি নিয়েছে, তাই!); ঠিকই বলেছেন- সাই ফাইএর অনেক বেশী !
  • &/ | 151.141.85.8 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৭:৫৭735276
  • @জয়, কিশোরপাঠ্য একটি কল্পবিজ্ঞান উপন্যাস সদ্য বের হল জয়ঢাক ওয়েবজিনে। ভাবলাম হয়তো আপনার মেয়ের ভালো লাগতে পারে। যদি চান লিংক দিতে পারি।
  • জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:০৮735277
  • ইয়েস, প্লীজ!
     
    মেয়ে (১৩) ফিজিক্স নিয়ে এখন তুমুল উৎসাহী। আপনাকে গাইড করতে অনুরোধ করতে পারি কি? কখনও?আমরা অ্যাকাডেমিক নই...
     
  • &/ | 151.141.85.8 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ১৯:১৭735278
  • এই যে নিচে লিংক দিলাম।
    https://joydhakweb.in/uponyas79/?fbclid=IwAR0KCZmrn7iXiJpHi-MyGLegH1mHWNJI4YgyAAQEh4lWv8zOtRQCmFg4sSQ

    আপনার মেয়ে ফিজিক্সে উৎসাহী? বাহ, খুব ভালো লাগল শুনে। উন্নত দেশে লেখাপড়ার ব্যাপারটার সবচেয়ে ভালো দিক হল যার যার নিজস্ব ইচ্ছে ও ঝোঁক অনুসারে বিষয় বেছে নিতে পারা। সেই বিষয় নিয়ে এগোনো। এমনকি তারপরেও পরিবর্তন করার স্বাধীনতা থাকে। আমাদের উপমহাদেশের ছেলেমেয়েরা তো বাবামায়ের ( শিক্ষক-শিক্ষিকা, আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশী ইত্যাদি সমাজের অন্যদেরও ) প্রত্যাশার চাপেই অনেকে নিজের মনের ইচ্ছে প্রকাশই করতে পারে না।
  • জয় | 82.1.126.236 | ০১ জানুয়ারি ২০২২ ২৩:৩০735279
  • @&/
    খুবই লজ্জা এবং ক্ষেদের কথা, যদিও জারা বাংলা বলায় সড়গড, আমাদের প্যারেন্টিংএর দোষে (বাংলাশেমিং শুরু হল বলে, কিন্তু আমাদের তা প্রাপ্য) বাংলা পড়াটা ঐ লেভেলে এখনও নয়! চেপে যাব ভেবেছিলাম প্রথমে...তবে হাল ছাড়ি নি!
     
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:১১735288
  • জয়,
    বিদেশে থাকে, পড়াশোনা খেলাধূলা সবই সেখানকার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে-সেখানে বাংলা পড়তে না পারাই স্বাভাবিক। অনুমান করছি বাড়িতে আপনাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাংলায়, তাই বলা আর শোনায় অসুবিধা হয় না।
    ও যদি আগ্রহী হয় শুনতে, তাহলে কাহিনিটা আপনি পড়ে শোনাতে পারেন। ঃ-)
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:১৯735289
  • ভাষা নিয়ে এই টানাপড়েন প্রবাসীদের থাকবেই। কারণ ভাষা জিনিসটা আলাদা কিছু না, এটা সংস্কৃতি, বিশ্বাস, উপক্থা, লোককথা, রীতিনীতি, উৎসব, স্বপ্ন, ভালোবাসা, অনুভব- সবকিছুর একটা অঙ্গাঙ্গী জড়িত কিছু একটা। ঠিক করে বলতে পারছি না, বলার মতন শক্তি নেই কৌশল জানা নেই, কিন্তু ব্যাপারটা অনেকটা ওরকমই।
    সেইজন্যেই অনুবাদ বলে আসলে কিছু হয় না, ভালো অনুবাদ মানে নতুন রূপে পুনঃসৃজন।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:c72:40f8:1f40:54a3 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:১৩735290
  • গল্পদুটো তো অ্যান্ডরের লেখা!
    নিজের লেখা গল্প দেওয়া যাবে এখানে?
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:c72:40f8:1f40:54a3 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:২০735292
  • এইটে শুধু জয়ের কন্যার জন্য। বাকিরা ইগনোর করবেন প্লিজ।
  • সে | 2001:1711:fa42:f421:c72:40f8:1f40:54a3 | ০৩ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:৩১735293
  • প্রোফেসর শঙ্কু ও মোংরু

     

    গিরিডি

    সাতাশে মেবিকেল চারটে।

     

    বোলিভিয়া থেকে ফিরে আসার পরে কয়েকদিন গবেষণার কাজ থেকে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। আমি কখনই বিজ্ঞানের কোনও নির্দিষ্ট শাখায় আমার গবেষণাকে আবদ্ধ রাখি না।

    আজ সকাল থেকেই বিভিন্ন প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা নিয়ে একটা তুলনামূলক পেপার বানাবার চিন্তা মাথায় ঘুরছে। কাজটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় রসদ সবই মজুদ আছে। যেহেতু আমি খুব বেশি জটিলতায় বিশ্বাসী নইতাই আমার কাজও হবে সহজ এবং সরল।

    গিরিডির পথে ঘাটে যে সব  জন্তু দেখা যায়তারাই হবে আমার গবেষণার মূল উপাদান। পাখিদের নিয়ে আগে কাজ করেছি। তাই এবারের গবেষণায় পাখীদের বাদ রাখছি।  পাড়ায় একটি কুকুর আছেনাম কালু। ভাবছি কালুকে দিয়েই কাজ শুরু করব।

    এ বাড়ির সর্বক্ষণের দেখাশোনার লোক প্রহ্লাদ ছুটি থেকে ফিরে এসেছে। কালু এ বাড়ির  দিকে এলে ওকে খেতে দেবার জন্য প্রহ্লাদকে বলে রেখেছি।

    এ মুহূর্তে যেটা সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো কালুকে স্টাডি করা।

    অবিনাশবাবু অবিশ্যি কুকুর খুব একটা পছন্দ করেন নাতাই কালু এদিকে থাকলে ভদ্রলোকের এখানে আড্ডা দিতে আসা যে কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে তা বুঝতে পারছি।

    দেখা যাক কী হয়।

     

    গিরিডি

    ঊনত্রিশে মেভোর চারটে।

     

    গত দুরাত ধরে এক নাগাড়ে কাজ করে "ব্রেনোগ্রাফ" যন্ত্র তৈর করে ফেললাম। কালুর চিন্তা ভাবনাকে একটা মনিটরে প্রতিফলিত করাই এই যন্ত্রের কাজ।

    টেকনোলজির সরলতা বজায় রাখতে এই যন্ত্রকে আমি তিনটি ভাগে ভাগ করেছি। একটি অংশ থাকবে কালুর মস্তিষ্কের সঙ্গে যুক্ত। অবিশ্যি এর জন্য কালুর তেমন কিছু অসুবিধা হওয়া উচিৎ নয়কারণ কালুর গলায় একটা চামড়ার বাকল- এর সঙ্গে যন্ত্রের এই অংশটি - যার থেকে থেকে দুটো অ্যান্টেনার মতো তার বেরিয়ে আসবে। এই তারদুটোর  একটা ছুঁয়ে থাকবে ওর মাথার পেছন দিকটাঅন্য তারটা ছুঁয়ে থাকবে ওর শিরদাঁড়ার যে কোনও অংশ।

    দ্বিতীয় অংশটা একটা মনিটর যেটা আমি আমার আদ্যিকালের পুরোন টিভিটাকে সারিয়ে সুরিয়ে কাজ চালানোর মতো করে নিয়েছি। সবশেষে তিন নম্বর অংশটা থাকবে আমার হাতেএটিও দেখতে হবে রিমোট কন্ট্রোলের মতো। এটা দিয়ে আমি কালুর বুদ্ধিমত্তার ফ্রিকোয়েন্সি মাপতে পারব।

    সবচেয়ে সুবিধের ব্যাপার হলো যে এই যন্ত্রের তিনটে অংশই পরষ্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন। কাজেই কালু এই যন্ত্র পরে থাকলে তার চলাফেরায় কোনও বাধা থাকছে না।

    ভোর হয়ে গেছে। এবার একটু বিশ্রাম নিতে হবে।

    গিরিডি

    ঊনত্রিশে মেসন্ধে সাতটা।

     

    এইমাত্র অবিনাশবাবু চলে গেলেন। গত কয়েক দিন এদিকে আসেন নিঘাটশিলায় ভাগ্নের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। আজ গিরিডি ফিরেই বিকেলে  চা খেতে এসেছিলেন এখানে।

    আগামী গবেষণার প্রসঙ্গ উঠতেই ভদ্রলোক বেশ উৎসাহিত হয়ে উঠলেনযদিও কুকুর নিয়ে কাজ করব শোনামাত্র ওঁর উৎসাহে ভাটা পড়ে গেল।

    ভদ্রলোককে বললাম যে আজ দুপুরে কালুকে নিয়ে আমার প্রথম পরীক্ষা সফল হয়েছে।

    প্রহ্লাদকে আগেই বলা ছিলতাই খাবারের লোভে কালু রোজই দুপুরের  দিকে এদিকে আসে। প্রহ্লাদকে সে এখন ভয় পায় নাআমার সঙ্গেও তার বেশ পরিচয় হয়ে গেছে। আজ কালু আসতেই প্রহ্লাদের বদলে আমি তাকে খেতে দিলাম। খাবার বলতে ঢ্যাঁড়শ ভাজাডালভাত আর ঝিঙে চচ্চড়ি। কালু খেতে শুরু করবার পর তার পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে  গলায় বাকলটা পরিয়ে অ্যান্টেনাদুটো মোটামুটি ফিক্স করে দিলাম। কালু কোনও আপত্তি করে নি। এবার তাকে আমি ওখানে ছেড়ে দিয়ে ল্যাবরেটরিতে গিয়ে মনিটর চালিয়ে দিলাম।

    রিমোট কন্ট্রোলটা আমার হাতেই ছিল। সামান্য নাড়াচাড়া করে সঠিক ফ্রিকোয়েন্সিতে পৌঁছতেই কালুর মনের ভাব মনিটরে ধরা পড়ল। আমি আমার বহু পুরোনো প্রায় অব্যবহৃত ট্রান্সলেটোমিটার জুড়ে দিলাম মনিটরের সঙ্গে। আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে কালুর মনের কথা অনুবাদ হয়ে গেল মানুষের ভাষায়যাকে বাংলা করলে দাঁড়ায়, "এরা কি রোজই ডাল ভাত খায়?"

    কুকুর যে অনেকটা মানুষের মতোই চিন্তাভাবনা করতে পারে তা আগেই জানতামতবে পরীক্ষার এই অভাবনীয় সাফল্যের পরে সেই ধারণা আরও বদ্ধমূল হলো।

    ভাবছি কালকে মাংস রাঁধতে বলব প্রহ্লাদকে।

    অবিনাশবাবু অবিশ্যি এখন আর এদিকে আসবেন বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু এই মুহূর্তে এই গবেষণা এত ইন্টারেস্টিং হয়ে উঠেছেযে আমি লৌকিকতার দিকটা আপাতত দূরে সরিয়ে রাখছি।

    এক্সপেরিমেন্টের প্রতিটি রেজাল্ট আমাকে টুকে রাখতে হবে।

    কালু আজ আর আসবে না। তবে কালকের এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্রস্তুতির দরকার। রাতে উশ্রীর দিকটায় পায়চারি করতে যাবো। সঙ্গে নেবো নিউটনকে।

     

     

    গিরিডি

    একত্রিশে মেবিকেল চারটে

     

    গতকাল কাজের চাপে ডায়েরি লেখা হয় নিকারণ কালুকে স্টাডি করে সমস্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি। আমার ব্রেনোগ্রাফ যন্ত্র সাধারণত সব সময়েই "অন" করা থাকে। তবে কালু আমার বাড়ি থেকে পঞ্চাশ গজের বেশি দূরে চলে গেলে সিগনালগুলো ক্রমশঃ অস্পষ্ট হয়ে যায়।

    তাতে অবিশ্যি কাজের কোনও অসুবিধে হচ্ছে না। আমি পশুপাখিদের অবাধ বিচরণে বিশ্বাসীতাই কালু যতক্ষণ বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে থাকে ওর মনের সমস্ত চিন্তা ভাবনা রেকর্ড হয়ে যায় এই যন্ত্রে।

    এ কদিনের স্টাডিতে একটা জিনিস পর্যবেক্ষণ করলাম যেকুকুর অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে কালু কিন্তু সর্বক্ষণই খাবারের চিন্তা করে না। খিদে পেলে যদিও এই চিন্তাগুলো তার মনে আসেকিন্তু অন্যান্য সময় তাকে সম্পূর্ণ অন্য জিনিস নিয়ে ভাবতে দেখা গেল।

    যেমন কাল বিকেলেই পাড়ার ছেলেরা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলোখুব সম্ভবত সুতো কেটে গিয়ে ঘুড়িটা আমার বাগানের উত্তর-পশ্চিম কোণের আমগাছের মগডালে আটকেছে। ছেলেরা খুব হৈ হৈ করছেকালুও নীচে ঘুরে বেড়াচ্ছেএমন সময়ে ব্রেনোগ্রাফের মনিটরে কালুর মনের কথা ভেসে উঠল, "পারবে নাপারবে নাঅনেক উঁচু পারবে না"।

    এই যে দূরত্ব আন্দাজ করতে পারাকালুর এই মানবসুলভ  পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আমাকে আশ্চর্য করে দিলো। বুঝতে পারলামএকটা রাস্তার কুকুর হওয়া সত্ত্বেও কালুর মাথায় যেটা আছেসেটা হচ্ছে "হিউম্যান ইন্টেলিজেন্স"।

    আরও একটা উল্লেখ করবার মতো ঘটনা হচ্ছে যে কালু নিউটনকে কখনও বিরক্ত করে না। নিউটনও বুঝে ফেলেছে যে গবেষণার কাজের জন্য কালুকে আমার কতটা প্রয়োজনতাই সে কালুকে মেনে নিয়েছে।

    অবিনাশবাবুও এ কদিন এদিকে আসেন নি। তবে আজ দুপুরে খেয়ে দেয়ে উঠেই এক অদ্ভূত ব্যাপার হলো। আমি ল্যাবরেটরীতে টেবিলটা গুছোচ্ছিহঠাৎ শুনি অবিনাশবাবু বাইরে থেকে চেঁচাচ্ছেন, "ও মশাই ঘোড়া পুষবেন নাকি"?

    এমনিতে উনি সরাসরি আমার ল্যাবরেটরী বা বৈঠকখানায় উঠে আসেনবুঝলাম বাড়িতে কুকুর আছে ভেবে সেই ভয়ে উনি ভেতরে ঢুকছেন না। জানলা দিয়ে বাইরে ঝুঁকে দেখলামুনি রোদ্দুরে ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। জানালাম যে উনি স্বচ্ছন্দে ওপরে আসতে পারেনকুকুর এখন বাড়িতে নেই।

    তাতে যে অবিনাশবাবু একটু আশ্বস্ত হলে সেটা ওঁর ছাতা বন্ধ করা দেখেই বোঝা গেল। তবুও উনি আর একবার  ওখান থেকেই বললেন, "ঘোড়া পুষবেন নাকিটাট্টু?"

    টাট্টু! কার ঘোড়া?

    আমি অবাক হয়েছি বুঝে উনি আমগাছের পেছনে আঙুল তুলে দেখিয়ে বললেন, "কার ঘোড়া তাতো জানি না মশাইসেই কখন থেকে পিছু ধরেছেআমি আপনার এখানে এলামতা ঐ টাট্টুও এসে থামল। পুষবেন নাকি?"

    টেবিল থেকে চশমাটা তুলে এনে দেখলাম সত্যিই একটা ছোটো মাপের ঘোড়া আমগাছের নীচে ঝোপ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকটায় এখন ছায়াতবে এই দোতলার জানলা থেকে দেখে মনে হলো ঘোড়াটার গায়ের রং খুব গাঢ়।

    এর মধ্যে অবিনাশবাবু ওপরে এসে গিয়েছেন। ওঁকে বসতে দিয়েজানলার বাইরে তাকিয়ে এবারে যা দেখলাম তা বিশআস করা প্রায় অসম্ভব।

    ঘোড়াটা ছায়া থেকে সরে এসে এখন আমার জানলার ঠিক নীচে দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে বড়ো বড়ো চোখে ওপরে এই জানলার দিকেই চেয়ে আছে। আর আশ্চর্যের ব্যাপার হলো তার গায়ের রং। এমন ঘোড়া আমি আগে কখনও দেখি নি। এ ঘোড়ার গায়ের রং সবুজ।

    অবিনাশবাবুকে ব্যাপারটা বলতে উনি অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে। তারপর নিজেই চেয়ার ছেড়ে উঠে জানলা দিয়ে মাথা বের করে ঝুঁকে অনেকক্ষণ ধরে দেখে বললেন, "সবুজ কোথায় মশাইলালচে বলুনআহা অনেকটা কমলা কমলা মতোঠিক না"?

    এবার প্রহ্লাদকে ডাকা হলো। সে এক ঝলক দেখে নিয়েই বলল যে ঘোড়াটা সবুজ এবং সবুজ ঘোড়া সে ও আগে কখনও দেখে নি।

     

    এদিকে কাছেই সহিস হীরালালের একটা আস্তাবল আছে। প্রহ্লাদের ধারণা ঘোড়াটা সেখান থেকেই বেরিয়ে এসেছে। কাজেই সে হীরালালকে খবর দিতে গেল।

    আমি অবিনাশবাবুকে বসিয়ে রেখে বিভিন্ন রঙের বিন্দু দেওয়া প্যাটার্ন দেখাতে দেখাতে বুঝতে পারলাম ভদ্রলোক বর্ণান্ধ। তবে এটা জানতে পেরে উনি যে খুব একটা বিচলিত হয়েছেনতা নয়।

     

    ভদ্রলোক চলে যাবার পরেও দেখলাম ঘোড়াটা নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রহ্লাদ এখনও ফেরে নি। ডায়েরি লেখা শেষ করে এবার আমার ইমেইলগুলো দেখব।

     

     

    গিরিডি

    পয়লা জুনসকাল দশটা।

     

    এর মধ্যে কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে যেগুলো লিখে রাখা দরকার।

    কালুকে নিয়ে আমার প্রথম স্তরের পরীক্ষা নিরীক্ষা আপাততঃ শেষ। আজ ভোরে আমি ওর গলা থেকে ব্রেনোগ্রাফ খুলে নিলাম। ও এখন নিজের মতো থাকুকতবে বাড়িতে ওর ঢুকবার কোনও বাধা নেই।

    গতকাল হীরালালের আস্তাবল থেকে ফিরে প্রহ্লাদ জানালো যে সেখান থেকে কোনও ঘোড়া খোওয়া যায় নি। অর্থাৎ এই সবুজ ঘোড়াটি অন্য কোনও জায়গা থেকে এসেছে। কোথা থেকে এলো সে নিয়ে খোঁজ  খবর করা দরকার এবং সেই কাজের ভার আমি প্রহ্লাদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি।

     

    অবিনাশবাবু গতকাল সন্ধেবেলা আবার এসেছিলেন। ভদ্রলোকের সঙ্গে ঘোড়াটির রং সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বুঝলাম তিনি এ ব্যাপারে আদৌ আশ্চর্য হন নি। বললেন, "রাণা প্রতাপের ঘোড়া ঐতকের গায়ের রং তো নীল ছিল বলে শুনিচিতা সবুজ হলে ক্ষতি কীকত কিছুই তো আমরা নিজের চোখে দেখিনিনিজের কানে শুনিনিতাই বলে কি সেসব জিনিস নেই?"

    ঘোড়াটা আপাতত আমার বাগানেই আছে। পশুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণার কাজে ওকে লাগাতে পারলে ভালই হয়তবে তার আগে ওকে দূর থেকে স্টাডি করা বেশি দরকার।  ওর একটা নামও দেওয়া হয়েছে কালকে । খুব ছোটোবেলা এই গিরিডিতেই আমার চেনা বুড়ো সহিস বনোয়ারীলালের একটা টাট্টু ছিল। তার নাম ছিল মোংরু। আজ বনোয়ারীলাল বা তার সেই ঘোড়া কেউই বেঁচে নেই। তবু সেই পুরোনো নামআর ঘোড়াটা মঙ্গলবার এসেছেএই দুটো মিলিয়ে আমি এর নামও মোংরু রাখলাম।

    রাত্রে ওকে খেতে দেওয়া হয়েছিল ঘাসবিচালিখড়। কিন্তু মোংরু কিছুই খায় নিতবে জল খেয়েছে। আজ ভোরে পায়চারি করতে বেরোবার সময়ে ওকে দেখলাম কিছুটা দূর থেকে।  উচ্চতায় ও সাড়ে তিন ফুটের  বেশি নয়সারা গায়ের ওপর ঘন সবুজ রোঁয়াদুটো চোখের নীচেই সামান্য সাদা দাগআর ঘাড় ঘুরিয়ে সে এদিক ওদিক দেখেই চলেছে।

     

    গতকাল উলানবাতর থেকে আমার বিজ্ঞানী বন্ধু গুয়ুক ইমেইল পাঠিয়েছে। মঙ্গোলিয়ায় এবছর যে বিজ্ঞানী সম্মেলন হচ্ছে সেখান থেকে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে সে। সম্মেলন সামনের সপ্তাহে। যেতে হলে এখনই প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা করতে হবে। সম্মেলনে গেলে যাতায়াত মিলিয়ে সব শুদ্ধ দশদিনের ধাক্কা। এই কটা দিন মোংরুকে নিয়ে আমার এই সম্ভাবনাময় গবেষণার কাজে সত্যিই বাধা পড়বে।

    এখনও কিছু মনস্থির  করি নি। ভাল করে ভেবে আজ বিকেলে গুয়ুককে আমার উত্তর জানিয়ে দেবো।

     

    নিউটন দুধরুটি খেতে চাইছেএখন উঠি।

     

     

    গিরিডি

    পয়লা জুন, সন্ধে আটটা।

     

    বিকেলে ইমেইলে দেখলাম গুয়ুক আমার মঙ্গোলিয়া সফরের জন্য রীতিমতো প্রস্তুত। গুয়ুককে কী উত্তর দেবো ভাবছিএমন সময়ে প্রহ্লাদ এসে জানালো যে মোংরুর আগের ঠিকানা সম্বন্ধে কোনও খবরই পাওয়া যায় নি। তাই আপাতত ওকে এখানে রাখাই ঠিক হলো।

    মঙ্গোলিয়া থেকে ফিরে এসে মোংরুকে নিয়ে কিছু কাজ করব বলে ভেবে রেখেছি।

    নীচে নেমে দেখলাম মোংরু বাগানে হেঁটে বেড়াচ্ছে। আমি তার কাছে গেলেও সে কোনও আপত্তি করল না। আমরা পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করলাম। মোংরুর ঘাড়ের ও লেজের লম্বা চুলগুলো খুব উজ্জ্বলসূর্যের আলোয় তা চিকচিক করে ওঠে। আরও একটা লক্ষ্য করবার মত জিনিস মোংরুর চোখদুটো। সে সব সময় ঘুরে ফিরে সব কিছু দেখেঘাড় ঘুরিয়ে সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকায়। সেই দৃষ্টির মধ্যে বুদ্ধির ছাপ দেখতে পাই আমি।

    অনেকটা নিজের মনেই বলে ফেলেছিলাম, "মোংরুতোমাকে তো রেখে যাচ্ছিমঙ্গোলিয়া যেতে হবেতবে দিন দশেকের ভেতরেই ফিরে আসবসাবধানে থেকো।"

    কথাত বলেই তার দিকে ফিরে দেখি সে মাথাটা একটু নাড়লসম্মতি জানানোর জন্য মানুষ যেভাবে মাথা নাড়েহুবহু সেরকম। আর এও লক্ষ্য করলাম যে তার মুখে খেলে গেল হালকা হাসির রেখা।

    ঠিক শব্দ করে হাসি নয়তবে মুখ টিপে  হাসলে যেরকম দেখায় অনেকটা সেরকম।

    মানুষ ছাড়া অন্য কোনও প্রাণী যে হাসতে পারে তা আমার জানা নেইঅবশ্য কিছু পাখি নিয়ে গবেষণা কবার সময় কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। সেসব পাখিদেরকে "বিশেষভাবে বুদ্ধিমান" বলা গেলেও যেতে পারে। কিন্তু মোংরুর অভিব্যক্তি আমাকে আরও একবার আশ্চর্য করল। বুঝলাম চিন্তা নেইসম্মেলন থেকে ঘুরে এসে ওকে নিয়ে গবেষণা করা যাবে।

    গুয়ুককে আমার যাবার দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছি। কালুও ওপরে যে পেপারটা বানিয়েছি সেটা সঙ্গে নিয়ে যাবো ভাবছি। সেই সঙ্গে ডেমন্সট্রেশনের জন্য কালুকে সঙ্গে নিলে আরও ভাল হতো। কিন্তু কুকুর নিয়ে অতটা পথ যাতায়াতের অনেত অসুবিধাকালুরও কষ্ট হবেএসব মাথায় রেখেই কালুকে সঙ্গে নিচ্ছি না।

    আমার ব্যক্তিগত জিনিস আর কাগজপত্র একটা ব্যাগেই ভরে যাবে।

    বছরের এই সময়টায় মঙ্গোলিয়ার আবহাওয়া মনোরমগরম পোশাকের তেমন দরকার পড়ে নাযদিও রাতের দিকে তাপমাত্রা বেশ নীচে নেমে যায়। কিন্তু আমার কাছে নিজস্ব আবিষ্কারের কিছু হালকা পোশাক আছে যা পরলে অতিরিক্ত গরম পোশাকের প্রয়োজন হয় না।

    হাতে আছে মাত্র কয়েকটা দিন। এর মধ্যে কাগজগুলো গুছিয়ে নিতে হবে।

     

    গিরিডি

    দোসরা জুনদুপুর আড়াইটে।

     

    মোংরুর সঙ্গে এখন বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

    গতকাল রাতে ঊশ্রীর ধারে বেড়াতে যাবার সময় সে আমার সঙ্গ নেয়। আমি একটু বেশি হাঁটব বলে অভ্রখনির দিক বরাবর চলতে শুরু করি। ওদিকটায় পথে ছড়িয়ে আছে অজস্র অভ্রের কুচিযা চাঁদের আলোয় চিকচিক করে উঠছে। একটা বড়োসড়ো অভ্রের পুরু পাত নজরে পড়ল যাতে রয়েছে অসংখ্য পাতলা পাতলা স্বচ্ছ অভ্রের পাত। নীচু হয়ে টুকরোটা কুড়িয়ে নিতেই মোংরু সেই পাতটাকে খুব মন দিয়ে দেখতে লাগল। ওর আগ্রহ দেখে ওটা ওর সামনে নামিয়ে রাখলাম। মোংরু তার সামনের ডান পা দিয়ে ওটাকে বেশ অনেকক্ষণ নেড়েচেড়ে উল্টেপাল্টে দেখে পথের একপাশে সরিয়ে রাখল।

    পরশু রওনা হচ্ছি উলানবাতর। পুরোনো বন্ধু গ্রেনফেলও আসছে এই সম্মেলনে। এবার ঠিক করে রেখেছি দর্শকের ভূমিকাই নেবকারণ গ্রেনফেল ও আমি ছাড়া বাকি বিজ্ঞানীরা অ্যাস্ট্রনমির ওপর কথা বলবে। এ মুহূর্তে অ্যাস্ট্রনমির  ওপর আমার কোনও পেপার তৈরি নেইযা ছিল সবই আগে কোথাও না কোথাও পড়া হয়েছে বা পাবলিশ হয়ে গেছে।

    গ্রেনফেলের ইচ্ছা সম্মেলনের শেষে গোবি মরুভূমিতে বেড়াতে যাবার। গুয়ুকের এব্যাপারে আপত্তি নেই। সাহারাকালাহারি বা আমাদের থর মরুভূমির মতো গোবি কিন্তু প্রচণ্ড গরম নয়। বরং ঠিক উল্টো।

    গোবিতে আছে উঁচু উঁচু বরফের পাহাড়ঝর্ণাঝোপজঙ্গলবালিস্তেপ-তৃণভূমি এবং সেই সঙ্গে অজস্র পশুপাখি।

    গুয়ুক গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেকিন্তু গ্রেনফেলের ইচ্ছে দুইকুঁজবিশিষ্ট উটের পিঠে চেপে গোবি ভ্রমন।

    কাগজপত্র গোছনোর কাজ শেষ। মোংরুকে রেখে যাচ্ছি তাই চিন্তা হচ্ছেঅবিশ্যি প্রহ্লাদ ওর দেখশোনা করবে।

     

    ইর্কুৎস্ক

    চৌঠা জুনসকাল আটটা।

     

    পূর্ব-সাইবেরিয়ার ইর্কুৎস্ক এয়ারপোর্টে বসে ডায়েরি লিখছি

    ঘন্টাখানেক মধ্যেই ফ্লাইট ছাড়বে মঙ্গোলিয়ার রাজধানীউলানবাতরের উদ্দশ্যে। এখানে আকাশ পরিস্কারঝকঝকে একটুআগে গ্রেনফেলের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল সে ও একই প্লেনে যাচ্ছে। গ্রেনফেল পরিচয় করিয়ে দিলো এক রাশিয়ান মহাকাশচারীর সঙ্গে। প্রায় সাত ফুট লম্বা সেই ভদ্রলোকটির নাম ঋবাকভযদিও গ্রেনফেলতাকে ক্রমাগত "রোবোকপবলে ডেকে চলেছে। তাতে অবিশ্যিঋবাকভ কোনও আপত্তি করছে নাবরং বেশ ঠাট্টার মেজাজেই আছেদেখছি দুজনে। 

    শান্ত প্রকৃতির ঋবাকভ ইংরিজি জানে বেশ ভালইতাই আমরাইংরিজিতেই কথা বলছি। সে জানালোযে মহাকাশ ঘুরে এসেছেদুবার। মূলতঃ এই সম্মেলনে যাবার একটাই উদ্দেশ্য তারআর সেটাহচ্ছে আমাদের গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের  অন্য কোনও গ্রহে প্রাণ আছেকি না সেই নিয়ে বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের সঙ্গে আলোচনা করা

    আজ দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাব উলানবাতর। গ্রেনফেল আর ঋবাকভডাকছে চা খেতে। হাতলহীন বাটির মতো পেয়ালায় হাল্কা লিকারেরগ্রীন টি

     

     

     

    উলানবাতর

    চৌঠা জুনবিকেল পাঁচটা

     

    "হোটেল উলানবাতরএর ঊননব্বই ও একশো তিন নম্বর ঘরে রয়েছিগ্রেনফেল ও আমি। ঋবাকভ থাকছে তার এক মোঙ্গল বন্ধুর বাড়িতে। দুপুরে পৌঁছনোর পরে এয়ারপোর্টে এসেছিল গুয়ুক। আমাদেরতিনজনের সঙ্গেই তার পরিচয় আছে

    হোটেলে চেক-ইন করে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমরা বেরিয়ে পড়লামগুয়ুকের সঙ্গে, তার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজের নিমন্ত্রণে। খাবার বলতেছিলো ভাপানো মোমো এবং চা। ঘরের কোণে প্রকাণ্ড সামোভারেসর্বক্ষণ গরম হচ্ছে চা। এই সামোভার জিনিসটা আসলে বিশালএকটা কেটলিযেটার বাইরে অপূর্ব সব নকশা-কারুকাজ করা থাকে। এ জিনিস আগে রুশ দেশেও দেখেছিমঙ্গোলিয়াতেও যে সামোভারেরপ্রচলন আছে তা খুবই স্বাভাবিক

    ঋবাকভ একটা ঘটনা শোনালো। তার দ্বিতীয় মহাকাশসফরের সময়েতাকে থাকতে হয়েছিল একটা স্পেস স্টেশনে টানা চার মাস। সেইসময়ে তার কিছু অদ্ভূত অভিজ্ঞতা হয়এবং সেই অভিজ্ঞতারভিত্তিতেই তার ধারণা তৈরি হয়েছে যে এই গ্যালাক্সির অন্য কোনওগ্রহে বা উপগ্রহে শুধু প্রাণই নয়বুদ্ধিমান প্রাণীর সন্ধান মেলাওআশ্চর্য নয় যদিও পৃথিবীতে ফিরে আসবার পরে তার সেই সবঅভিজ্ঞতার বর্ণনা কেউ শুনতে রাজি হয় নিবরং দীর্ঘ মহাকাশবাসেরএকঘেয়েমি কাটানোর জন্য সে নিজেই ঐ সব গল্প বানিয়েছে বলেইসন্দেহ করেছে অন্য বিজ্ঞানীরা। তবুও ঋবাকভ আশাবাদী

    আগামীকাল বিকেলে শুরু হচ্ছে সম্মেলন। আবহাওয়ার পূর্বাভাসবলছে কাল সারাদিন আকাশ থাকবে রৌদ্রোজ্জ্বল

     

     

    উলানবাতর

    পাঁচুই জুনরাত এগারোটা

     

    সম্মেলন থেকে এইমাত্র হোটেলে ফিরলাম। গতকাল বিকেল থেকেএতগুলো ঘটনা ঘটে গেছে যেগুলো গুছিয়ে লিখে ফেলা দরকার

     

    কাল নৈশভোজের পরে গ্রনফেল ও আমি হোটেলের সামনে পায়চারিকরতে বেরিয়েছিগ্রেনফেলের মাথায় ঘুরছে শুধু গোবিতে বেড়াতেযাবার প্ল্যানসে অনর্গল বলে চলেছে তার দেশ বিদেশের মরুভূমিদেখার গল্প। এই সময়ে রাস্তা পুরোপুরি ফাঁকা। শুধু এই সময় কেনরাস্তাঘাট অধিকাংশ সময়েই জনবিরল। মঙ্গোলিয়া বিরাট আয়তনেরদেশ হলেও তার জনসংখ্যা মোটামুটি দুই মিলিয়নের মতো

    গ্রেনফেল নিজের গল্পে নিজেই মেতে ছিলহঠাৎ আমার মনে হলোপেছনে পায়ের শব্দকেউ আসছে। আমি পেছন ফিরে দেখলাম কিন্তুকাউকে দেখতে পেলাম না।  আমরা চলেছি ফুটপাথের ধার ঘেঁষে। একপাশে রাস্তাঅন্যপাশে ঝোপফুল গাছ। আশেপাশে বেশি বাড়িনেই। বেশ কিছুটা চলার পরে ফের সেই পায়ের শব্দঠিক পেছনে নয়এবার যেন আমাদের বাঁ-পাশের ঝোপের ভেতর দিয়ে কেউ চলেছে। গ্রেনফেলকে বলতে সে গল্প থামিয়ে শুনবার চেষ্টা করলকিন্তু ততক্ষণেশব্দটা মিলিয়ে গেছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেইউল্টোমুখো হয়ে হোটেলে ফিরে এলাম

     

    দ্বিতীয় ঘটনাটা ঘটল হোটেলে ফিরে। রাত তখন প্রায় সাড়েএগারোটা। সবে শুতে যাবোফোন এলো রিসেপশন থেকে। একভদ্রলোক নাকি ফোনে অনেকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন যখনআমরা হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। তিনি এখন আবার ফোন করেছেনযদিও এখন খুবই দেরি হয়ে গেছেতবুও উনি দুমিনিটের বেশি সময়নেবেন না। ভদ্রলোকের নাম ঋবাকভ

    অগত্যা লাইনটা কানেক্ট করতে বললাম। ঋবাকভ খুব উত্তেজিতসেআমার সঙ্গে সামনাসামনি দেখা করে কিছু একটা বলতে চায় এবংসেটা সম্মেলনে যাবার আগেই। 

    সম্মেলন যেহেতু বিকেলে শুরু হবার কথাতাই ঠিক করলাম সকালেসে হোটেলে আসবেএকসঙ্গে ব্রেকফাস্ট  করতে করতে কথা বলাযাবে

     

    আজ সকাল আটটা নাগাদ আমার রুম থেকে বেরিয়ে সবে নীচেনেমেছিহোটেলের লাউঞ্জে দেখি ঋবাকভ ঢুকছে। আমাকে দেখেইবললো, "চলো চলো বাইরে গিয়ে কথা হবে"। বাইরে বেরোতেই দেখিতার ট্যাক্সি তখনও দাঁড়িয়ে। তার সঙ্গে ট্যাক্সিতে করে বেশ কয়েককিলোমিটার দূরে "চিঙ্গিজ খান হোটেলসংলগ্ন রেস্টুরেন্টে ঢুকলামআমরা

    ঋবাকভ সরাসরি তার বক্তব্যে চলে এলো স্পেস স্টেশনের চারমাসেরঅভিজ্ঞতায় সে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে পৃথীবি ছাড়াও অন্যত্রপ্রাণের স্পন্দন আছে

    কী মুশকিলশুধু এইটুকু বলবার জন্য আমাকে অসময়ে ফোন করাএবং সাত সকালে হোটেল থেকে তুলে আনার কী প্রয়োজন?

    "শুধু এইটুকু নয়"! ঋবাকভ বলে চলল, "গতকাল সন্ধ্যায় আমিএমন কিছু প্রমাণ পেয়েছি যাতে আমার সন্দেহ আরও ঘণীভূতহয়েছে।"

    আমি কিছু বলছি না দেখে ঋবাকভ মুষড়ে পড়ল। বলল, "যে কারণেতোমাকে ডেকে আনাআজ সম্মেলনে অনেক বিজ্ঞানী আসবে যারাবহির্বিশ্বে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে চায়কিন্তু তাদেরমাঝখানে দাঁড়িয়েই আজ আমার অভিজ্ঞতার কথা বলবঅনেকেইআমার কথা শুনে হেসে উঠতে পারেকিন্তু আমি শুধু তোমার সমর্থনচাই"।

    হঠাৎ আমাকে কেন?

    ঋবাকভ বলল, "তুমি সিরিয়াস প্রকৃতির লোকসারা দুনিয়ায় তোমারনানারকম গবেষণার কথাতোমার সাফল্যের কথা সুবিদিত। তোমারসমর্থন পেলে হয়ত ওরা আমার কথা মন দিয়ে শুনবে।"

    তাকে এই বলে আশ্বস্ত করলামযত অবাস্তবই শুনতে হোক না কেনযুক্তিগ্রাহ্য যদি হয় তবে তার অভিজ্ঞতাকে উড়িয়ে দেবার কোনও প্রশইওঠে না

    আজ বিকেলে সম্মেলনের গোড়ার দিকে নানান বিজ্ঞানী বলে গেলেনতাঁদের গবেষণার সাফল্যের কথা। গ্রেনফেল দেখলাম প্রায় ঘুমিয়েপড়েছে। আজ সারাটা দিন সে ঘুরে বেড়িয়েছে নানান জায়গায়তিরন্দাজি এবং ঘোড়দৌড়ের কীসব প্রতিযোগিতা আছে সামনেরসপ্তাহেসেগুলো দেখবার লোভ সে সামলাতে পারছে না। ইতোমধ্যেএক স্বনামধন্য "জকি"র সঙ্গে নাকি আলাপও সেরে এসেছে। এসবখবর সে আমায় সম্মেলনে আসবার পথে বলতে বলতে এলো

    রাত সাড়ে নটা নাগাদ ঋবাকভ সুযোগ পেলো মঞ্চে উঠবার। অভ্যাগতদের অনেকেই দেখলাম ঋবাকভের মহাকাশ সফরের গল্পজানে। তাই যেই সে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দেওয়া সবে শুরু করেছেঅডিটোরিয়ামে শুরু হলো শোরগোলঅনেকেই ওকে থামিয়ে দিতেচায়কেউ কেউ তো রীতিমতো হেসে উঠছে জোরে

     

    এবার আমি বাধ্য হয়েই মঞ্চে উঠে সকলকে অনুরোধ করলামযে সেযা বলছে সেটা তাকে অন্ততঃ বলতে দেওয়া হোকতার বক্তব্য শুনবারপরে আমরা বিবেচনা করে দেখব সেটা কতটা যুক্তিগ্রাহ্য

    হয়ত আমার গাম্ভীর্য লক্ষ্য করেইশ্রোতার আসনে বিজ্ঞানীরা চুপ হয়েবসলেন

    ঋবাকভ বলে চলল, "আজ আমি যে অভিজ্ঞতার কথা বলতে এসেছিসেটা মহাকাশের ঘটনা নয়যদিও তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেটা ঘটেছেগতকাল সন্ধ্যায়। গতকাল সন্ধ্যায় আমি এই শহরের শেষপ্রান্তেযেখানে জনবসতি প্রায় নেই বললেই চলেসেখানে একটা অদ্ভূত প্রাণীদেখিযার সঙ্গে একটা ঘোড়ার খুবই সাদৃশ্য…" ঋবাকভের কথা শেষহলো নাগোটা অডিটোরিয়াম ফেটে পড়ল অট্টহাসিতে

    তৎক্ষণাৎ আমার মনে পড়ল মোংরুর কথা। আমি জানি ঋবাকভেরকথা কাউকে শোনাতে যাওয়া বৃথা। রুমানিয়ার বিজ্ঞানী দান নিদেলকুতো হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার মতো অবস্থায় কোনও মতেউঠে দাঁড়িয়ে বলল, "তা সেই ঘোড়াটিকে দেখবার সময় তোমার পেটেক পাত্র মদ ছিল জানতে পারি কি"?

    আমি ঋবাকভকে সরিয়ে নিয়ে গেলাম সেখান থেকে। সে যে বানানোগল্প বলছে নাসেটা এখন আমার কাছে স্পষ্টকিন্তু এখানে সময় নষ্টকরে কোনও লাভ নেই

    হোটেলে ফেরার আগেই ওর সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছেকাল সকালেএই নিয়ে আমরা আলোচনায় বসব। কাল আমি সম্মেলনে যাচ্ছি নামোংরু এখন গিরিডিতে কী করছে কে জানে!

     

    উলানবাতর

    ছঁউই জুনদুপুর একটা

     

    অসংখ্য বিচিত্র ঘটনা ঘটে গেছে আমার বিজ্ঞানী জীবনেতবেসেগুলোর কোনওটার সঙ্গেই আজকের এই ঘটনাকে মেলাতে পারছিনা

    ঋবাকভের পুরো নামগ্রেগোরি ঋবাকভ। এই সম্মেলনে আরওএকজন আছে যার নামও গ্রেগোরিসেইজন্য ওকে আমরা পদবি ধরেইডাকছি

    ঋবাকভ উঠেছে ওর বন্ধুর বাড়িতেশহরের শেষপ্রান্তে সেখানে যতদূরদেখা যায় শুধু ঝোপ এবং ফাঁকা জমি। সেখানেই সে দেখেছিল সেইঘোড়ার মতো প্রাণীটিকে। কালকেই সে আমাকে জানিয়েছিলযে তারদেখা ঘোড়াটিও উচ্চতায় এক মিটারের কাছাকাছি। এক মিটার অর্থাৎ তিনফুটের সামান্য বেশি। এই ঘোড়াটির রং সবুজ

    গতকালের প্ল্যান অনুসারে আজ আমি সম্মেলনে যাই নি। কথামতোসকাল দশটায় হোটেল থেকে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা ঋবাকভের সঙ্গেদেখা করলাম তার বন্ধুর বাড়িতেই

    আজ বেশ গরম পড়েছেতাপমাত্রা প্রায় তিরিশ ডিগ্রি। ঋবাকভতৈরিই ছিল। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম সেই রাস্তা ধরেযেখানে সেঐ ঘোড়াটিকে দেখেছিল। প্রায় আধঘন্টা ধরে সিধে রাস্তা বরাবরহেঁটেও আশে পাশে কোথাও কোনও জনপ্রাণীরই দেখা মিলল নাএদিকে রোদের তেজও বাড়ছেরাস্তাও ক্রমশঃ খারাপ হচ্ছে। আমরাফিরতি পথ ধরলাম। সঙ্গত কারণেই ঋবাকভ বিষন্নকিন্তু আমি যেতাকে বিশ্বাস করছি সেটুকু জেনে সে তখনও আশা হারায় নি

    প্রায় ফিরেই এসেছিএকটা শুকনো নালার ধারে দেখলাম ঘোড়াটাদাঁড়িয়ে। অবিকল মোংরু

    আমরা দুজনেই বাকরুদ্ধ। আমরা দুজনেই অপলক চোখে দেখছিঘোড়াটাকে। সেও আমাদের দুজনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখেইচলেছেসূর্যের কিরণে তার সর্বাঙ্গ চিকচিক করছে এবং স্পষ্ট দেখা যায়দুচোখের নীচে দুটো সাদা দাগ। অবিকল মোংরুর মতো

    বোধহয় নিজের অজান্তেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো "মোংরু"।

    আর কী আশ্চর্যকয়েক পা এগিয়ে আমাদের ঠিক সামনে এসে সেমাথা নাড়লসম্মতি জানানোর জন্য যেভাবে মাথা নাড়ে মানুষ

    আমর দুজনেই তাকে হাত দিয়ে ছুঁলামসে কোনও আপত্তি করল না

    এবারে কথা বলল ঋবাকভ

    তুমি বিশ্বাস করবে কি না জানি নাস্পেস স্টেশন "সোলিয়ারিস" এ থাকাকালীন ঠিক এইরকম একটা জিনিসকে আমি মহাকাশে চলেযেতে দেখি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও মহাকাশযান। কিন্তু খুব কাছদিয়ে যখন সে চলে যাচ্ছিলতখন আমার শক্তিশালী টেলিস্কোপেদেখেছিলাম একটা চারপেয়ে জন্তু

    আমরা ঠিক করলাম এই ঘোড়াটাকে আপাততঃ ঋবাকভের বন্ধুরবাড়িতেই নিয়ে যাওয়া হোকআর আমরা আমাদের উপযুক্তযুক্তিগুলো সাজিয়ে সম্মেলনের শেষদিন এই স্পেসিমেন সহ লাইভডেমনস্ট্রেশন দেবো

    মাঝখানে আছে তিনটে দিন। এই তিন দিনে এই দ্বিতীয় মোংরু সম্বন্ধেযত বেশি তথ্য সংগ্রহ করা যাবেআমাদের যুক্তি ঠিক ততটাইজোরালো হয়ে উঠবে

    নতুন মোংরু আমাদের সঙ্গে আসতে কোনও আপত্তি করে নি। ভালইহয়েছে যে ঋবাকভ হোটেলে ওঠেনিতাহলে ঘোড়াটাকে কাছে রাখারব্যবস্থা করা যেত না

    এই মুহূর্তে যে জিনিসটার অভাব অনুভব করছিসেটা হচ্ছে আমারব্রেনোগ্রাফ যন্ত্রটা। ওটা থাকলে আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়েযেত

    তবু হাল ছাড়ছি না

    আজ বিকেলে আবার যাব ঋবাকভের ওখানেকারণ আমাদের হাতেএখন সময় খুবই কম এবং প্রচুর কাজ এখনও বাকি

     

     

    উলানবাতর

    ছঁউই জুনবিকেল চারটে

     

    একটু পরে বেরোব ঋবাকভের সঙ্গে দেখা করতে

    আজ হোটেলের রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের সময় দেখা হয়ে গেল গ্রেনফেল ও গুয়ুকের সঙ্গে। সঙ্গে ছিল আরও এক জন সেই নাম করা মোঙ্গলঘোড়সওয়ার যার নাম অম্রা

    ছোটো খাটো ছিপছিপে এই ঘোড়সওয়ারটির সঙ্গে গ্রেনফেলের বেশভালই আলাপ হয়েছে দেখলাম। অম্রা ইংরিজিতে তেমন সড়গড় নয়ওর দোভাষীর দায়িত্ব নিয়েছে গুয়ুক

    ঋবাকভের "ঘোড়া দেখা"র গল্পটা ইতোমধ্যেই অম্রাকে বলে ফেলেছেএরা। তিনজনেই খুব হাসছেযদিও অম্রা ঘোড়াটিকে চাক্ষুষ দেখতেউৎসাহী সকালের ঘটনা এদের কাছে বলি নিকারণ এখনও কাজপ্রায় কিছুই এগোয় নি আমাদের

    অম্রা শুধু ভাল "জকি" ই নয়সে তির চালাতেও ওস্তাদ। সামনেরসপ্তাহে যে প্রতিযোগিতা হতে চলেছেসেখানে সে আমাকেও আমন্ত্রণজানালো আমি এখনও কোনও কথা দিই নি। গিরিডিতে ফিরে গিয়েমোংরুকে নিয়ে গবেষণার কাজ ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছে

    তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে ওদের অনুমতি নিয়ে নিজের ঘরে ফিরেএলাম। ওরা এখনও আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছে

     

     

    উলানবাতর

    সাতুই জুনবিকেল চারটে

     

    দ্বিতীয় মোংরুর সঙ্গে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ঋবাকভ ও আমিকয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে এসেছি

    প্রথমতএই মোংরুকে ঘোড়ার মতো দেখতে হলেও সাধারণ ঘোড়ারসঙ্গে এর ব্যবহার ও বুদ্ধির কোনও তুলনাই চলে না। এ ছাড়া প্রথমমোংরুর সঙ্গে এর চেহারার কোনও পার্থক্য এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাইনি

    দ্বিতীয়তঋবাকভের বদ্ধমূল ধারণা এই মোংরু পৃথিবীর বাইরে থেকেএসেছে

    শুধু তাইই নয়গতকাল বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যেসে তার সারা গায়ের সবুজ লোম ও চুল ব্যবহার করে উদ্ভিদের মতো। অর্থাৎ ফোটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। পৃথিবীতে আজ অবধি ফোটোসিন্থেসিস করতে পারা প্রাণীর সন্ধান মেলে নি। এ জিনিস জীবন বিজ্ঞানের জগতে যুগান্তকারী ঘটনা!

    ঋবাকভকে জানালাম যে এই মোংরুকে আমি গিরিডিতে নিয়ে যেতেচাই সেখানে আরেকটি মোংরু আছে এবং দুটিকে পরীক্ষা করলেব্রেনোগ্রাফের সাহায্যে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতেপারে

    সমস্ত আলোচনাই দ্বিতীয় মোংরুর সামনে হচ্ছিলোসে এমনভাবেআমাদের কথা শোনে যেন সব বুঝতে পারছে

    গতকাল রাত্রে ঋবাকভ আমাকে হোটেলের সামনে ট্যাক্সি থেকেনামিয়ে দিয়ে চলে যাবার পরে লাউঞ্জে ঢুকছিহঠাৎ শুনি কেউ আমারনাম ধরে ডাকছে

    ফিরে দেখলাম ভিজিটরদের সোফায় বসে আছে তিরন্দাজ-ঘোড়সওয়ার অম্রা। আজ তার সঙ্গে গুয়ুক নেই। আমি মোঙ্গলীয়ভাষা জানিনাঅম্রার ইংরিজিও ভাঙা ভাঙা। সে হাতের ইশারায়আমাকে তার সামনে বসতে বলল। হঠাৎ কোথা থেকে গ্রেনফেল এসেউপস্থিত

    গ্রেনফেল যা বলল তাতে বুঝলাম আমার অনুপস্থিতিতে ঋবাকভেরদেখা "ঘোড়ানিয়ে এদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে এবং অম্রা এইঘোড়াটিকে দেখতে চায়। অম্রার স্থির ধারণা যে আমি ঋবাকভকেবুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করালে সে অম্রাকে ঘোড়াটি দেখাবে। শুধু তাইইনয়সে না দেখেই ঘোড়াটি কিনতে চায়

    আমি এতক্ষণ কোনও কথা বলিনি

    ওদেরকে জানিয়ে দিলাম যে ঘোড়াটিকে যদিও আমরা দেখেছিকিন্তুতাকে বেচে দেবার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। আমরা আমাদের গবেষণারজন্য আপাততঃ ঘোড়াটিকে স্টাডি করছি

    অম্রা প্রায় লাফিয়ে উঠল। সে গড়গড় করে অনেক কথা বলে গেলতার নিজের ভাষায়। কথাগুলো বুঝতে না পারলেওসে যখন পকেটথেকে টাকা বের করছেতখন আমি গ্রেনফেলকে বলতে বাধ্য হলামযে, ঘোড়াটিকে এই মুহূর্তে অম্রার হাতে তুলে দিতে আমি অক্ষমএবংসেই কথাটা সে যেন অম্রাকে বুঝিয়ে বলে

    এর মধ্যে গুয়ুকও এসে পড়ল আমাদের আলোচনা ক্রমশঃ তর্কেরদিকে মোড় নিচ্ছে দেখে আমি সরাসরি অম্রাকে জানালামযে আজযথেষ্ট রাত হয়েছেআমি ক্লান্তঅতএব আমার বিশ্রামের প্রয়োজন

    বিদায় নিয়ে চলে যাচ্ছিগুয়ুক ছুটে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, "অম্রাএই তল্লাটের বেশ ক্ষমতাবান লোকওকে চটিও না!"

    আরও একবার শুভরাত্রি জানিয়ে এগিয়ে গেলাম লিফটের দিকেতখনও গুয়ুক বলে চলেছে, "এর ফল ভয়ঙ্কর হতে পারেতুমি বিপদেপড়তে পারো"।

     

    বিপদের ভয়ে বিজ্ঞানের গবেষণা থেকে দূরে সরে যাবো এমনপরিস্থিতিতে কখনও পড়ি নি। ঠিক করলাম আগামীকাল ঋবাকভকেসমস্ত ঘটনা জানাতে হবে সেইমতো আজ সকালে ব্রেকফাস্টের পরঝড়ের বেগে ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছলাম ঋবাকভের ডেরায়। ট্যাক্সির ভাড়ামেটাচ্ছিদেখি ঋবাকভ বেরিয়ে আসছে বাড়ির ভেতর থেকেতারচোখে মুখে উদ্বেগের ছাপ স্পষ্ট। আমি কিছু জিজ্ঞাসা করবার আগেইসে বলল - "মোংরু উধাও"!

    উধাও!  কখন থেকে?

    ঋবাকভ জানালো যে আমার সঙ্গে ফোনে কথা হবার পরেই সে বাড়িরপেছনের বাগানে মোংরুকে দেখতে যায়কিন্তু মোংরু সেখানে ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও সে তাকে দেখতে পায় নি

    মোংরু ঐ বাগানে ছাড়া অবস্থাতেই থাকত। কাজেই সে নিজে নিজেইকোথাও চলে যেতে পারেকিন্তু টেলিফোনে আমার সঙ্গে কথা হবারপর থেকেই ঋবাকভের সন্দেহ হয়েছে যে অম্রা ও তার দলবল হয়তমোংরুকে কিডন্যাপ করেছে

    যেহেতু মোংরুকে ছাড়া আমাদের গবেষণার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়াসম্ভব নয়তাই ঠিক করলাম আমরা আজ সম্মেলনে যাব। গিয়ে দেখিগ্রেনফেল ও গুয়ুক দুজনেই অনুপস্থিত। 

    অস্ট্রিয়ার এক ছোকরা বিজ্ঞানী এরিক মাহরের আমাদের দিকে এগিয়েএসে বলল, "সেকী তোমরা এখানেআমি তো ভেবেছি তোমরাওগুয়ুক গ্রেনফেলের সঙ্গে আজ গোবি তে বেড়াতে গেছ।"

    এ খবরটা নতুন। ওরা কেউই আমাকে জানায় নি। যাই হোক সারাদিনসম্মেলনে কাটিয়ে একটু আগে হোটেলে ফিরেছি সন্ধেবেলা ঋবাকভআসছে এখানে। গ্রেনফেল কখন ফিরবে সে খবর কেউ দিতে পারলনা। এমন কি রিসেপশনেও সে কোনও চিঠি রেখে যায় নি আমারজন্য। আগামীকাল সম্মেলনের শেষ দিন

    কালকের মধ্যে মোংরুকে খুঁজে না পেলে আমরা কিছু বলতে পারব নাসম্মেলনে এসময়ে সবচেয়ে বেশি দরকার মাথা ঠাণ্ডা রাখা

     

     

    গিরিডি

    দশই জুনসকাল দশটা

     

    কিছুক্ষণ হলো গিরিডিতে ফিরে এসেছি। এর মধ্যে এত কিছু ঘটে গেছেযেগুলো যথাসম্ভব গুছিয়ে লিখে রাখার চেষ্টা করছি। তরশু সন্ধেবেলাহোটেলের বিল মিটিয়ে চেক-আউট করে আমার ব্যাগ নিয়ে ঋবাকভেরজন্য লাউঞ্জে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম

    আগে থেকেই ঠিক ছিলকয়েকটা দিন ওর বাড়িতেই একসঙ্গে গবেষণাকরা যাবেএতে সময় বাঁচবে। কিন্তু ঘন্টাখানেক পেরিয়ে যাবার পরওঋবাকভ আসছে না দেখে শেষটায় তার বন্ধুর বাড়িতে ফোন করে দেখিফোন বেজেই যাচ্ছে। আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ঠিক করলাম ওরবাড়ি যাব। হোটেলের বাইরে একটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিল। ট্যাক্সিতেউঠতেই ড্রাইভার প্রচণ্ড গতিতে ঋবাকভের বাড়ির ঠিক উল্টো দিকেনিয়ে চলল আমায়। ড্রাইভার আমার কোনও কথা শুনছে না এবংট্যাক্সি এত জোরে চালাচ্ছেযে রাস্তায় বেশি গাড়ি থাকলেঅ্যাকসিডেন্ট হতে বাধ্য প্রায় বিশ মিনিট এভাবে চালাবার পরেট্যাক্সি এসে থামল একটা ফাঁকা জায়গায়

    এর মধ্যে আমরা উলানবাতর শহরের বাইরে চলে এসেছি। জায়গাটায়কোনও বাড়ি নেইযতদূর দেখা যায় শুধু ফাঁকা জমি আর মাঝে মাঝেকয়েকটা গাছ। সূর্য অস্ত গেছে কিছুক্ষণতবুও যেটুকু আলোর রেশআছে তাতে দেখতে পেলাম কাছেই আরেকটা গাড়ি দাঁড়িয়েসেটাট্যাক্সি নয়। এবার সেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো দুজন লোক। এদেরএকজনকে আমি বিলক্ষণ চিনিসে হচ্ছে অম্রাআর অন্যজন খুবসম্ভবত গাড়ির চালক। 

    সেই অন্যজন উচ্চতায় অন্ততঃ সাড়ে ছ ফুট এবং যথেষ্ট বলশালীচেহারা। গাড়ির পেছনের দরজা খুলে সে হুকুমের সুরে চেঁচিয়ে বল, "গেট ইন্টু দ্য কার"!

    ব্যাগটুকু সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। এখানে প্রতিবাদ করাঅর্থহীন। আমার পাশেই হাত পা বাঁধা অবস্থায় বসে থাকতে দেখলামঋবাকভকে। সে যে স্বেচ্ছায় আসে নি সেটা তার ঠোঁটের কোণে রক্তদেখেই বোঝা যাচ্ছে

    আমাকে গাড়ির ভেতর ঠেলে দিয়ে পাশে এসে বসল অম্রা। গাড়িচলতে শুরু করল সম্পূর্ণ ধু ধু প্রান্তরে। এরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেআমাদের আমি জানি না চারিদিকে অন্ধকারশুধু হেডলাইটেরআলোয় রাস্তা দেখে গাড়ি চালাচ্ছে চালক

    কয়েক ঘন্টা চলবার পরে গাড়ির গতি দেখে বুঝলাম যে আমরাবাঁধানো রাস্তা ছেড়ে নরম জমির ওপর চলতে শুরু করেছি

    নিজের ভাষায় ড্রাইভারের সঙ্গে দু একটা কথা বলা ছাড়া অম্রাএতক্ষণ কোনও কথা বলেনি আমাদের সঙ্গে। ঋবাকভ জেগে আছেকিন্তু নিশ্চুপ

    আরও বেশ কিছুক্ষণ গাড়ি চলবার পরে আস্তে আস্তে বাইরেরঅন্ধকার কিছুটা কেটে গেল। আকাশে চাঁদ উঠেছেআর তার আলোয়দেখা যাচ্ছে আমাদের চারিদিকে যতদূর দেখা যায় শুধু বালি আরকাঁটাঝোপ

     

    একটা ঢিবির কাছে এসে গাড়ি থামল। অম্রা দরজা খুলে বাইরেদাঁড়িয়ে আমাদেরও বেরিয়ে আসতে ইঙ্গিত করল। 

    আমরা বাইরে এসে দাঁড়াবার পরে অম্রার নির্দেশে চালক জানালোওরা আমাদের রেখে যাচ্ছে এখানে। সেই "আশ্চর্য ঘোড়াকে যদিঅম্রার হাতে তুলে না দিইতবে এই মরুভূমিতেই আমাদের মৃত্যুঅবধারিত

    আগামিকাল ওরা আসবে আমাদের উত্তর জানতে

    আমি বললামযে ঐ ঘোড়া কোথায় তা আমরাও জানি না। কিন্তুআমার কথার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে ওরা গাড়িতে উঠে বসলইঞ্জিনেস্টার্ট দেবার পরে ড্রাইভার বলে উঠল, "আশেপাশে একশোকিলোমিটারের ব্যাসার্ধে কোনও মানুষ নেইবাঁচতে হলে ঐ ঘোড়ারখবর কালকে দিও। আর কালকে খবর না দিলেআর আমরা আসবনা।"

    বালির ঝড় তুলে ইঞ্জিনের গোঁ গোঁ শব্দের সঙ্গে অম্রার বিশাল গাড়িমিলিয়ে গেল গোবি মরুভূমির মধ্যে

     

    এখন চারিদিক নিঃস্তব্ধ। চাঁদের আলোয় দূরে দেখা যাচ্ছে কয়েকটাপাহাড়। হাতপা বাঁধা অবস্থায় বালির ওপরে বসে পড়েছে ঋবাকভ। তাপমাত্রা ক্রমশঃ নীচের দিকে নামছে। মরুভূমির এই ই নিয়মদিন ও রাতের তাপমাত্রার মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকে। ঋবাকভের বাঁধন খুলেদিয়ে ভাবছি ঠাণ্ডার থেকেও বেশি চিন্তার কারণ এই মরুভূমি থেকেআমরা বের হবো কেমন করে

    বালির ওপর থেকে গাড়ির চাকার দাগ এর মধ্যেই মিলিয়ে গিয়েছেকারণ বাতাসের ঝাপটায় প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে বালির ওপরেরপ্যাটার্ন। 

    ঋবাকভ এবার কথা বলল

    আমরা নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে। এই মরুভূমির মধ্যে তিলেতিলে মরতে হবে আমাদের

    আমার পকেটে আছে দিকনির্ণয়ক যন্ত্র। তাতে বলছে আমরাউলানবাতর থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে। সঙ্গে জল বাখাবার কোনওটাই নেই। বহুদূরে পশ্চিম দিকে অস্পষ্ট কিছু ঝোপ বাঘাসযাকে বলে স্তেপ। কিন্তু পায়ে হেঁটে এই মরুভূমি পার হওয়াঅসম্ভব

    ঋবাকভ এবার কিছু খবর জানালো আমাকে। অম্রা নাকি তারঘোড়দৌড়ের জন্যে ঐ আশ্চর্য ঘোড়াটিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। আপাত দৃষ্টিতে তেমন শক্তিশালী না দেখালেও সে নিশ্চিত যে ঐ ঘোড়া সবচেয়ে বেশি স্পীড তুলতে পারবে। ঘোড়দৌড়ের বাজিতে টাকাখাটানো তার পেশা এবং এসব কাজের জন্য অন্যায়ের আশ্রয় নিতেযে সে পেছপা হয় নাতা এতক্ষণে আমাদের আর অজানা নয়। ঘোড়দৌড় ছাড়াও তিরন্দাজিতে সে পটুসেখানেও সে প্রচুর বাজিফেলে ঐ খেলা খেলে

    আমি বললামকিন্তু মোংরুর খবর তো আমরা জানি না

    ঋবাকভ বললসেটা অম্রাকে বিশ্বাস করানোর কোনও উপায় নেই। কিন্তু আমাদের বাঁচবার কোনও পথ তো দেখতে পাচ্ছি না

    আমরা বালির ওপরে কতক্ষণ বসে ছিলাম জানি নাআকাশে চাঁদেরআলোয় চারিদিক বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেএমন সময়ে একটা খশখশ শব্দ শুনে পেছন ফিরে দেখি মোংরু দাঁড়িয়ে। সে কীভাবে তখনওখানে এলোসেসব প্রশ্ন মাথায় এলেও ঋবাকভ ও আমি একসঙ্গেইএকটা সিদ্ধান্ত নিলাম। মোংরুই আমাদের এই মরুভূমি থেকেলোকালয়ে নিয়ে যেতে পারবে

    ঘোড়ায় ওঠো শঙ্কুএছাড়া আর উপায় নেই। আমাদের পালাতেহবে

    ঋবাকভের কথা শেষ হতে না হতেই দেখি মোংরু আমার পাশে এসেদাঁড়িয়েছেআর সেই চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তার মুখেমুচকি হাসি আমি তার পিঠে চাপলে সে কোনও আপত্তি করল না। আমার পেছনে বসল ঋবাকভ

    তারপর শুধু দেখে গেলাম আমরা মোংরুর ক্ষমতা। আমাদেরদুজনকে পিঠে করেঝড়ের বেগে ছুটে চলল সে বালির ওপরেঋবাকভ আমাকে ধরে রেখেছেআর আমি একহাতে সামলাচ্ছিআমার চশমা আর অন্য হাতে আঁকড়ে ধরে আছি মোংরুক দীর্ঘ পথবালির ওপর দিয়ে দৌড়নোর পরেআমরা ঢুকে পড়েছি দেড় মানুষ উঁচুঘাসের জঙ্গলে

    -স্তেপ!

    চেঁচিয়ে উঠল ঋবাকভ। বন্য জন্তুর বাসস্থানস্বাপদ সঙ্কুলএমনকিবাঘ থাকলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই

    হয়তো আমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পেরেই মোংরু বাড়িয়ে দিলোতার স্পীড। এত ঝাঁকুনি যে যেকোনও মুহূর্তে আমরা ছিটকে পড়তেপারি তার পিঠ থেকে

    এরপর মোংরু যা করলতার কোনও জবাব নেই। প্রচণ্ড ঝাঁকুনিতেযখন প্রায় পড়ে যাচ্ছি আমরাহঠাৎ দেখলাম আর কোনও ঝাঁকুনিনেইপাশের ঘন ঝোপের লম্বা লম্বা ঘাস আর গায়ে ঘষা লাগছে নাআমরা সেই জমি থেকে আস্তে আস্তে উঠে গেছি বেশ উঁচুতে। শূন্যেউড়ে চলেছে মোংরু আর তার পিঠে চড়ে আমরা দেখছি লাল হয়েআসছে পূরের আকাশ। নীচে ছোটো হয়ে যাচ্ছে মরুভূমিস্তেপসরুনদী আর উলানবাতর

    পেগাসাস!

    আবারও উল্লাসে চেঁচিয়ে উঠলো ঋবাকভ। এতদিন শুধু গল্পের বইয়েইপড়েছি পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প

    আমিও পক্ষীরাজ ঘোড়ার গল্প ঠাকুরমার ঝুলিতে পড়েছি সেকথাজানালাম ঋবাকভকে

    বিস্তীর্ণ সেই পথ আকাশে পার হয়ে মোংরু এবার নীচে নামতে শুরুকরল। নীচে প্রকাণ্ড একটা লেক। তার পাশেই নেমে এলাম মোংরুরপিঠে আমরা

    গত কয়েক ঘন্টায় যা ঘটেছে তা বিশ্বাস করা অসম্ভব হতো যদিনাপাশে তখনও দাঁড়িয়ে থাকত জ্বলজ্যান্ত মোংরু। পকেট থেকেদিকনির্ণয়ক যন্ত্র বের করে দেখলামআমরা বেশ কিছুক্ষণ আগেইমঙ্গোলিয়া ছাড়িয়ে এসেছি পেছনে। আর আমাদের সামনের লেকটিরনাম বৈকাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো মিষ্টি জলের লেকগভীরতমওবটে। তার স্বচ্ছ জলের ওপরে পড়েছে আমাদের প্রতিবিম্ব এবং তলায়দেখা যাচ্ছে অজস্র নুড়ি চারিদিকে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।ঋবাকভমোংরু ও আমি তিনজনেই খেলাম বৈকালের জল। আরচিন্তা নেই। আপাততঃ আমরা বিপদ থেকে মুক্ত। ঠিক করলামমোংরুকে এখানেই বিদায় দেওয়া হোক। যে অপরিসীম সাহায্য ও বন্ধুত্বের পরিচয় পেয়েছি তার কাছ থেকেএর কোনও তুলনাই হয় না

    মোংরুকে বিদায় জানিয়ে আমরা চললাম লোকালয়ের সন্ধানেইর্কুৎস্কগামী ট্রেন ধরতে। ইর্কুৎস্ক থেকে বাকি পথটা ফিরে এলামনিরুপদ্রবে

    গিরিডির বাড়িতে ফিরেও প্রথম-মোংরুর দেখা পেলাম না। প্রহ্লাদবললআমি মঙ্গোলিয়া রওনা দেবার দিন সন্ধে থেকেই মোংরু উধাওহয়েছে

    আফশোস একটাইব্রেনোগ্রাফের সাহায্যে মোংরুর মনের কথালিপিবদ্ধ করা গেল না। 

    এবার একটু বিশ্রাম নিয়ে এ কদিনের জমে থাকা কাজগুলো একে একেসেরে ফেলব

     

     

     

    গিরিডি

    এগারোই জুনসকাল সাতটা

     

    ব্রেনোগ্রাফ নিয়ে আমার গবেষণা এখানেই আপাতত শেষ করবারসিদ্ধান্ত নিলাম। প্রথমে কালু ও পরে মোংরুকে নিয়ে কাজ করাকালীনএত অজানা তথ্য বেরিয়ে এসেছেযেসবের স্বীকৃতি দেবার জন্যআজকের বিজ্ঞানীসমাজ প্রস্তুত নয় বলেই আমার বিশ্বাস

    গতকাল ইমেইল চেক করে দেখলাম ঋবাকভ নির্বিঘ্নে পৌঁছে গেছেমস্কোয়

    অন্যদিকে গ্রেনফেল ও গুয়ুক তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কথা স্বীকারকরেক্ষমা চেয়েছে। গোবিভ্রমনের শেষে হোটেলে ফিরে গ্রেনফেল নাকিজানতে পারে যে আমি ফিরে গেছিআমার সঙ্গে বিদায় নেওয়া হলোনা বলে সে দুঃখ প্রকাশ করেছে অম্রার হিংস্র আচরণ আশা করিতার কাছে এখনও অজানা

    আমি তাকে কুশল সংবাদ দিয়ে উত্তর দিয়ে দিলামআমাদেরমরুভূমির অভিজ্ঞতার বিন্দু বিসর্গও ওকে লিখি নি। গুয়ুককেওধন্যবাদ জানিয়ে একটা ছোটো চিঠি লিখে সবে উঠেছিদেখিঅবিনাশবাবু এসে হাজির

    "আপনার টাট্টু তো উধাও হয়েছিল মশাই!"

    এ খবর যে আমার অজানা নয় তা জানালাম অবিনাশবাবুকে

    "কিন্তু সে তো আবার ফিরে এসেছেনীচে দেখলাম যেন আমগাছেরনীচে!"

     

    মোংরু ফিরে এসেছে?

    আর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করেব্রেনোগ্রাফ হাতে প্রায় দৌড়ে নেমেগেলাম সিঁড়ি দিয়ে এখন আর আমার কোনও দ্বিধা সন্দেহ নেই যেমঙ্গোলিয়ার সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে এই মোংরুই আমাদের রক্ষাকরেছে। আমগাছের নীচ থেকে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছেঠোঁটের কোণায় সেই হাসি

    ব্রেনোগ্রাফ পরিয়ে দিলাম মোংরুর গলায়। তাকে ওখানে রেখে ফিরেএলাম ল্যাবরেটরিতে। ফ্রিকোয়েন্সি অল্প মডুলেট করতেই মনিটরেভেসে উঠল মোংরুর কথা

    কী অভাবনীয় এই অভিজ্ঞতা

    সে বলে চলেছেআমাদেরই গ্যালাক্সির থেকে মাত্র অর্ধেকআলোকবর্ষ দূরে একটি গ্রহের তিনটি উপগ্রহ। তারই এক উপগ্রহেরবাসিন্দা এই অদ্ভূত বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী। প্রাণী হলেও এরা উদ্ভিদের মতোনিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। 

    মোংরু বলে চলল তাদের উপগ্রহের কথাআমাদের পৃথিবীকে খুঁজেপাবার গল্পমহাকাশে স্পেস স্টেশনে ঋবাকভের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়াও অবশেষে গিরিডিতে উশ্রীর ধারে তার ল্যান্ডিং

    আমাদের গ্রহকে খুব কাছ থেকে দেখবার জন্য সে চেয়েছিল একজনমানুষের সাহায্য। আমি মঙ্গোলিয়া যাচ্ছি জেনে সে আমার পিছু পিছুরওনা দেয়। আর সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হচ্ছেপ্রয়োজনে সে নিজেইনিজেকে বানিয়ে ফেলে মহাকাশযান

    মোংরু নিজেও একজন বৈজ্ঞানিক তার নিজের উপগ্রহে। পৃথিবীর সবঅভিজ্ঞতা ও আমাদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের খবর নিয়ে সে ফিরে যাবেনিজের উপগ্রহে

    আমি নীচে নেমে এসে ব্রেনোগ্রাফ খুলে নিলাম। এই সব তথ্য আমিপাঠিয়ে দেবো ঋবাকভকে

    রাত্রে মোংরুর সঙ্গে ঊশ্রীর ধার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেছলামঅভ্রখনি অঞ্চলে। মোংরু নেড়েচেড়ে দেখল কয়েকটা অভ্রের টুকরো

    রাত্রে আরেকবার ব্রেনোগ্রাফের মারফৎ সে জানিয়েছেফিরে যাবেরাত্রেই কোনও এক সময়ে। তাকে গুডনাইট জানিয়ে ঘুমোতে গেছি প্রায়মধ্য রাত্রে

    আজ ভোরে উঠে বুঝলাম মোংরু চলে গেছে। বাগানে আমগাছেরনীচটা খালি পড়ে আছে এখন

     

    চশমাটা খুঁজতে গিয়ে ল্যাবরেটরিতে ঢুকে দেখি টেবিলের ওপরে একটাচকচকে জিনিস। প্রায় দশ ইঞ্চি লম্বা ও ইঞ্চি ছয়েক উঁচু একটা ঘোড়ারমূর্তি। মূর্তিটা অবিকল মোংরুর মতোতার ঠোঁটের কোণেও সেই হাসিদক্ষিণের জানলা দিয়ে অশ্বত্থ গাছের পাতার রং প্রতিফলিত হচ্ছে সেইঅভ্রের মূর্তির ওপর। তাই এই মোংরুও সবুজঅবিশ্যি অবিনাশবাবুদেখলে কোন রং বলে বসবেনজানি না

     

     

     

     

     

     

    শেষ

     

    রচনা  - যোষিতা

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন