এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পর্যালোচনা (রিভিউ)  সিনেমা

  • পরজীবীর শৃঙ্খল – দক্ষিণ কোরিয়ার চলচ্চিত্র

    শুভদীপ ঘোষ
    পর্যালোচনা (রিভিউ) | সিনেমা | ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ২৫৬৬ বার পঠিত | রেটিং ৫ (৪ জন)

  • “Banjiha is a space with a peculiar connotation. It’s undeniably underground, and yet you want to believe it’s above ground, there’s also the fear that if you sink any lower, you may go completely underground.”
    Memories of murder (২০০৩) খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক বং জো-হো ২০১৯ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে তাঁর সাম্প্রতিকতম ছবি ‘Parasite’ (২০১৯) দেখানোর সময় এই মন্তব্যটি করেছিলেন। Parasite ছবিতে Kim-পরিবারের বসবাস দক্ষিণ কোরিয়ার এই বিশেষ ধরণের গৃহ ব্যবস্থা Banjiha-তে। চারজনের পরিবার, গৃহকর্তা Ki-taek, স্ত্রী Chung-sook, মেয়ে Ki-jung এবং ছেলে Ki-woo। এই সেমি-বেসমেন্ট বাড়ি গুলির অবস্থান রাস্তার সঙ্গে এমনই যাতে কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি মূত্র ত্যাগের জন্য তাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটিকে বেছে নেয় তাহলে সেটা প্রায় তাদের জানালায় গিয়ে পড়ে। অত্যন্ত টানাপড়েনের সংসারে একমাত্র রোজগেরে গৃহকর্তা Ki-taek পরিবার প্রতিপালনের চেষ্টা করেন পিৎজার বাক্স বানিয়ে। ছেলে Ki-woo বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। Ki-woo-এর বন্ধু Min-hyukও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। Min-hyuk ইংরেজি পড়িয়ে হাত খরচা চালায়। সে প্রচণ্ড ধনী Park-পরিবারের মেয়েকে ইংরেজি পড়ায়। Min-hyuk নিজের অবর্তমানে Ki-woo বলে পড়ানোর জন্য।

    মালভূমি অঞ্চলের মত উপরে উঠে যাওয়া রাস্তার ধারের উঁচু জমিতে এই Park-পরিবারের বসবাস। সদস্য মূলত পাঁচ জন। গৃহকর্তা Mr. Park, গৃহকর্ত্রী Mrs. Park, এ ছাড়াও তাদের মেয়ে Da-hye, ছেলে Da-song এবং তাদের পরিবারের সদস্যের মতন পরিচারিকা Moon-gwang। Ki-woo নিজের নাম পালটে Kevin নাম নিয়ে, সার্টিফিকেট জাল করে Park-পরিবারে গিয়ে উপস্থিত হয়। এরপর বিভিন্ন প্রকার চাতুরী ও মিথ্যে দোষারোপের মাধ্যমে নাম ও পরিচয় ভাঙ্গিয়ে প্রথমে এসে ঢোকে বোন Ki-jung। সে ছেলে Da-song– এর art therapist হিসেবে কাজ নেয়। তারপর ঐ একই উপায়ে Ki-taek নিজে গৃহকর্তা Mr. Park–এর গাড়ির চালক হিসেবে কাজ নেয় তাদের পুরানো ড্রাইভারকে ফাঁসিয়ে। পরিশেষে Chung-sook পরিচারিকা Moon-gwang-এর পরিবর্তে কাজ পায় আরেক প্রকার জালি-বাজির মাধ্যমে। ঘটনাক্রম এগোতে থাকে।

    ছবির মোটামুটি যখন মাঝ বয়স সেই সময় আমরা নাটকীয় ভাবে আবিষ্কার করি Park-পরিবারের গোপন ষষ্ঠ সদস্যটিকে, বাড়ির পাতালে অবস্থিত বাঙ্কারটির মধ্যে! এই বাঙ্কারটি বাড়ির আগের যিনি মালিক ছিলেন তিনি বানিয়েছিলেন। দেনার দায়ে জর্জরিত Moon-gwang-এর স্বামী Geun-sae এখানে, এই প্রায়ান্ধকার পাতালে লুকিয়ে আছেন গত চার বছর ধরে। এই আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কারটির স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ, অস্পষ্ট আলো, টানেলের মত রাস্তা পরজীবী প্রাণীর থাকার অস্বস্তিকর অথচ বাস্তব পরিবেশ রচনা করে।

    এখানে এসে সুধী দর্শক বুঝতে পারেন পরিচালক কি অবলীলায় পরজীবী প্রাণীর একটি বেড়ি বা শৃঙ্খল রচনা করে ফেলেছেন ইতি মধ্যেই। Kim-পরিবার তাদের অবধারিত পরিণতি আসলে যে চোখের সামনে Geun-sae-দের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিল তা ছবির একেবারে শেষে গিয়ে আমরা বুঝতে পারি। নিম্নতম জীবন( Moon-gwang, Geun-sae) ও ক্রম-নিম্নগামী জীবন (Kim-পরিবার) ঐ বাঙ্কারের পাতালে একে অপরের মুখোমুখি হয়, তাদের মাথার উপর দাড়িয়ে থাকে বুর্জোয়া আধিপত্য নিয়ে প্রাসাদোপম বাড়িটি। লক্ষণীয় বিষয় হল Bong Joon-ho এই তিনটি শ্রেণীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্দিষ্ট করতে গিয়ে প্রায় সবার অলক্ষ্যে অনায়াস দক্ষতায় Seol শহরের ভূগোলকে, অর্থাৎ জমির উঁচুনিচু চরিত্রকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সমান্তরালে রূপকের মত ব্যবহার করেছেন। Organisation for Economic Co-operation and Development বা OCDE-র Development Assistance Committee-র, G20-র এবং অভিজাত Paris-ক্লাবের সদস্য দক্ষিণ কোরিয়া। কিন্তু এই দেশটির একটি অন্য দিক এ ছবি তুলে ধরে। আজকের তথাকথিত উত্তর-আধুনিক পৃথিবীতে, সে উন্নতই হোক আর উন্নয়নশীলই হোক আর গরিব দেশই হোক, মূলত বিদ্যমান নয়া-ক্লাসিকাল অর্থনীতি বা বাজার-অর্থনীতি যে আসলে শ্রেণী-বৈষম্যকেই বিদ্যমান রেখেছে এই ছবি দেশ-কাল নির্বিশেষে তা আরেকবার মনে করিয়ে দেয়। বস্তুত Kim-পরিবার পিৎজার বাক্স বানাতে গিয়ে যে বাজারে তাঁর শ্রম বিক্রি করে, কিংবা Park-দের পরিবারে Moon-gwang, বা অনুমেয় যে কারণে Geun-sae দেনা গ্রস্থ এবং এমনকি Mr. Park তাঁর শ্রেণীগত অবস্থান থেকে যে বাজারে শ্রম বিক্রি করেন, সেই বাজার যদি আদর্শ বাজার হয় তাহলে প্রতিযোগিতার যাবতীয় বাধা সে শ্রেণী-স্বার্থগতই হোক বা রাজনৈতিকই হোক, তা কার্যকরী না হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তা হয় না। Parasite আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, তার কারণ বাজার অর্থনীতি দাড়িয়ে আছে বারমেসে অসাম্যকে বিদ্যমান রাখার উপর। তাই Kim-পরিবারের ভবিতব্য পাতাল-মুখিই হতে বাধ্য, যতই তারা ছলচাতুরী করুক। সম্পত্তি বণ্টনে যে অসাম্য থাকে তা দূর করে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার যে ভাবনা এই ছবি দেখতে দেখতে চিন্তাশীল ও সংবেদনশীল মনে জেগে ওঠে, বাজার অর্থনীতিতে আসলে তার কোনো স্থানই নেই। উপরন্তু, বাজারি ভারসাম্যের আলোচনায় বাঞ্ছিত পরিস্থিতি হিসেবে এমন এক পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়, যেখানে পুনর্বন্টন কোনো মতেই একজনের ক্ষতি করে অন্যের লাভের ব্যবস্থা করবে না। পুনর্বন্টনের নামে বুর্জোয়ার সম্পত্তিতে হাত দেওয়াও তা-র ক্ষতি করা, তাই এই নীতি অনুযায়ী তাও অনুচিত। এই নীতির জন্মদাতা ইতালির প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ভেলফ্রেড প্যারেতো (১৮৪৮-১৯২৩)। পরিচালক এই ছবিতে প্রত্যেকটি শ্রেণীর প্রতি এক ধারণের অবজেক্টিভ নির্লিপ্ততা রেখেছেন, অর্থাৎ কারুর প্রতি তাঁর আলাদা সহমর্মিতা বা আলাদা তাচ্ছিল্য প্রকাশ পায় নি। তাই এ ছবি দেখতে দেখতে আনুষঙ্গিক অনেক ভাবনা আমাদের মনে চলে আসতে থাকে। ক্রমবর্ধমান অসাম্য ও আর্থ-সামাজিক পরিবেশই কি আসলে অসহায় মানুষকে বাধ্য করে চাতুরী, মিথ্যে ছলনার আশ্রয় নিতে? নাকি কু-প্রবৃত্তি, অলসতা, তঞ্চকতা মানুষের অন্তর্গত? এবং তা সময় পেলেই তার স্বরূপ ধরে! নাকি বিদ্যমান শ্রেণী-বৈষম্যেই এর পিছনের অনিবার্য কারণ? আসলে বোধ হয় এই সবগুলি মিলে-মিশে থেকেই অদ্ভুত মানবচরিত্র নির্মাণ করে। অলীক সুখের স্বাদ পাওয়া Kim-পরিবার তাই Moon-gwang, Geun-sae-দের প্রতিও কোনো প্রকার সহমর্মিতা দেখায় না এবং বিপরীত ক্রমে Moon-gwang পাতালে Kim-পরিবারের সদস্যদের দেখতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ব-মূর্তি ধারণ করে। উভয়েরই মধ্যেই কাজ করছে ধরা পরে যাওয়ার ভয়। তার সঙ্গে কাজ করছে অবমানবের জীবনের থেকে আরেকটু ভালো করে থাকার অদম্য স্পৃহা। এদের দৈনন্দিন বাস্তবতা এবং এদের চাতুরীকে শ্রেণীর নিগড়ে পরিচালক এমন ভাবে বেঁধেছেন যে আমাদের মনে এদের প্রতি নির্দিষ্ট করে সহানুভূতি বা দ্বেষ কোনটাই জন্মায় না। যেন পুরোটাই matter of fact, এই ভঙ্গিতে ছবিটি বিধৃত হতে থাকে। এর অভিঘাত এমনই হয়ে দাড়ায় যে কাহিনীর বাস্তবতা-অবাস্তবতার প্রশ্নটিও অবান্তর হয়ে যায়।

    নান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রে মন্তাজ নামক নির্মাণ শৈলীর অনায়াস ব্যবহার দেখি এই ছবিতে। রাশিয়ার প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক সের্গেই আইজেনস্টাইন (১৮৯৮-১৯৪৮) কৃত পাঁচ রকম মন্তাজের (মেট্রিক মন্তাজ, রিদেমিক মন্তাজ, ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজ, টোনাল মন্তাজ এবং ওভারটোনাল মন্তাজ) অনেকগুলি ধারাকে এখানে প্রবাহিত হতে দেখি উত্তম দক্ষতায়। মন্তাজ গুলির কিঞ্চিৎ রূপরেখা দেওয়া যেতে পারে এ প্রসঙ্গে। বলা-বাহুল্য সম্পাদনা বা editing এখানে মূল ভূমিকা পালন করে। মেট্রিক মন্তাজে প্রত্যেকটি cut-কে হতে হয় মোটামুটি একই দৈর্ঘ্যের অর্থাৎ cut-এর ফলে তৈরি হওয়া দৃশ্যগুলিকে হতে হয় মোটামুটি একই দৈর্ঘ্যের। রিদেমিক মন্তাজে cut-এর সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বারে বা কমে অর্থাৎ cut-এর ফলে তৈরি হওয়া দৃশ্যগুলির দৈর্ঘ্য বারে বা কমে। ইন্টেলেকচুয়াল মন্তাজে cut-এর ফলে তৈরি হওয়া দৃশ্যগুলির বিষয়বস্তুর মধ্যে সবসময় সম্পর্ক থাকে না, কিন্তু সব মিলিয়ে একটা অর্থ বহন করে। টোনাল মন্তাজে cut-এর ফলে তৈরি হওয়া দৃশ্যগুলি নির্ভরশীল থাকে দৈর্ঘ্যের চাইতেও মূলত আবেগের উপর এবং ওভারটোনাল মন্তাজ মূলত উক্ত একাধিক মন্তাজের যোগসাজশে তৈরি হওয়া আরও জটিল একটা প্রভাব। বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতার ধারায় আইজেনস্টাইন cut-এর ভেতর দিয়ে তৈরি হওয়া দৃশ্যগুলির (A, B, C….) মধ্যে একধরনের সংঘাত (AXBXC…) দেখতে পেয়েছিলেন, সংযোগ (A+B+C…) নয় এবং এর ফলে যা (AXBXC… = Z’) তৈরি হয় তা (Z’) অস্তিত্বে, অর্থে ও তাৎপর্যে A, B, C… অতিরিক্ত এক সত্তা। অবশ্যই এই মিথস্ক্রিয়া ঘটে দর্শকের মস্তিষ্কে বা মননে।

    প্রসঙ্গে পুনরায় ফিরে গিয়ে বলা যায়, যে সকল দৃশ্যাবলীর ভেতর দিয়ে আমরা চাতুরীর শিকার হওয়া পরিচারিকা Moon-gwang-এর যায়গায় Chung-sook-কে স্থলাভিষিক্ত হতে দেখি উপরিউক্ত ওভারটোনাল মন্তাজের ব্যবহারে তা সমৃদ্ধ হয়ে আছে। টুকরো টুকরো দৃশ্যে intercut-এর ভেতর দিয়ে সমান্তরালে আমরা দেখতে থাকি Moon-gwang-কে কিভাবে টিউবারকিউলোসিস আক্রান্ত প্রতিপন্ন করা হল এবং সেই চক্রান্তের পটভূমি রচিত হল Kim-পরিবারের সমবেত উদ্যোগে। Kim-পরিবার তাদের ক্রমান্বয়ে চলতে থাকা চাতুরীর ভেতর দিয়ে শেষ যে চাতুরীটিতে এসে আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা পেতে চাইছে, ঐ দৃশ্যগুলিতে ব্যাকগ্রাউন্ডে ব্যবহৃত পাশ্চাত্য ধ্রুপদী সংগীতের মনোরম মূর্ছনা আমাদের অর্থাৎ দর্শকদের মধ্যেও ঐ মিথ্যে নিরাপত্তার অনুভূতিটিকে এনে দেয়। মন্তাজ ব্যবহারের সঙ্গে ক্যামেরার রৈখিক চলার গতি ও সংগীতের ব্যবহার - একই সঙ্গে গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায়, মিথ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি এনে দেয় এবং কি ধারার ছবি এটা হতে চলেছে সে ব্যাপারে একটা আগাম ধারণা তৈরি করে দেয়। এই পর্বের পরিসমাপ্তি ঘটে উত্তেজনা উদ্রেককারী ডোর বেলের শব্দে।

    প্রবল বৃষ্টির কারণে Park-পরিবার তাদের বেড়াতে যাওয়া অসমাপ্ত রেখে বাড়ি ফিরে আসে। এখানেও মেট্রিক ও রিদেমিক মন্তাজের প্রয়োগ কৌশলে Park-পরিবারের বাড়ি ফিরে আসা থেকে Kim-পরিবারের ঘরের মধ্যে অন্তর্ধানের দৃশ্যটি ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। বাচ্চা ছেলেটি (Da-song) প্রবল বৃষ্টির মধ্যে সামনের লনে তাঁবু খাটিয়ে খেলা করে। এ এমন এক শ্রেণীর আলেখ্য যেখানে শিশুর কাছেও বৃষ্টি-প্লাবন আসলে মনোরঞ্জনের নামান্তর। প্রতিদিনের অঢেল সুখ ও বৈভবের যে একঘেয়েমি তার থেকে মুক্তির আদিখ্যেতা। অথচ এই সন্দর্ভ রচনা করতে পরিচালককে কোনো কষ্ট কল্পনার আশ্রয় নিতে হয় নি। Bong Joon-ho, Sight & Sound-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর মননিত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দশটি ছবির তালিকায় Alfred Hitchcock (1899-1980)-এর Psycho-কে স্থান দিয়েছেন। উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কের বস্তুকে বয়ানের (চলচ্চিত্রকে একটি দৃশ্য-শ্রাব্য পাঠ বা বয়ান হিসেবে বিবেচনা করে) প্রাণকেন্দ্রে স্থাপন করার যে Hitchcock-য় পদ্ধতি, তা ব্যবহৃত হতে দেখি এই ছবিতেও। সেই দৃশ্যটির কথা ভাবুন যেখানে Mr. Park ও Mrs. Park ঘরে না গিয়ে তাদের সন্তানকে পাহারা দেওয়ার জন্য ড্রয়িং রুমের সোফাটিকেই তাদের অভিসারের সজ্জা হিসেবে বেছে নেন। তাদের সামনেই টেবিলের নিচে লুকিয়ে আছে নতুন পরিচারিকা Chung-sook ছাড়া, Kim-পরিবারের বাকি সদস্যরা। Alfred Hitchcock-এর Rope (1948) ছবিটির কথা এই মর্মে মনে পরে যায়। দুজন শিল্প বোদ্ধা যাদের এককালে aesthetes বলা হত, তাঁরা গলায় ফাঁস দিয়ে তাদেরই একজন পুরানো বন্ধুকে হত্যা করে শুধুমাত্র এটা প্রমাণ করার জন্য যে এই নির্ভুল হত্যা-কর্মটি আসলে একটি শিল্পকর্ম । এই শিল্পকর্ম মানুষ হিসেবে তাদের শ্রেষ্ঠতর প্রতিপন্ন করবে! পেটি-বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধি এই দুটি মানুষ । মৃত দেহটিকে এরপর একটি বড় টেবিল সদৃশ ড্রয়ায়ের নিচে লুকিয়ে রাখা হয় এবং তার উপরই নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। বিষয়বস্তুর দিক থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এই ছবিতেও আমরা একই ভাবে উদ্বেগ ও আতঙ্কের বস্তুকে বয়ানের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত হতে দেখি। Rope-এ পেটি-বুর্জোয়া মূল চরিত্র দুটির সঙ্গে আতঙ্ক ভাগ করে নেয় ছবির দর্শকও, আর Parasite-এ আতঙ্ক ভাগ করে নেয় টেবিলের তলার মানুষগুলি (যাদের অবস্থাও মৃতদেহবত) ও তাদের সঙ্গে ছবির দর্শক! Kim-পরিবারের গৃহকর্তা Ki-taek তাঁর ছেলে মেয়ের সামনে চরম অপদস্থ হয়। শৃঙ্গার-রত Mr. ও Mrs. Park তা জানতেও পারেন না।

    এরপর ঘটনা প্রবাহের উত্তেজক ও অদ্ভুত পরিবেশনায় পরজীবী প্রাণীর পলায়ন পর্বটি পরিচালক মেরুদণ্ডহীনই করে রাখেন। বর্ষণসিক্ত Ki-taek অতঃপর তার ছেলের প্রশ্নের উত্তরে জানায় সে বাঙ্কারে Moon-gwang, Geun-sae-দের বেঁধে রেখে এসেছে এবং পরিকল্পনাও করে ফেলেছে এরপর কি করতে হবে। কিন্তু তার আগে বাড়ি গিয়ে স্নান করে একটু স্থিতধী হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু হায়, পৃথিবী জুড়ে বৃষ্টি হয়, প্লাবন আসে, তা কারো জীবনে যেমন বিলাস-বৃষ্টি-বাসর (Park-পরিবার) আবার সমাজের এক বৃহৎ অংশের জীবন (Kim-পরিবার) হয়ে যায় দেশ-কাল নির্বিশেষে এক লহমায় ভেসে যাওয়া মানুষের নিদারুণ জলছবি।

    পরিচালক ছবির এই গোটা পর্ব জুড়ে শ্রেণী-বিভক্ত সমাজের চিরকালীন বৈপরীত্য গুলিকে অসামান্য মুনশিয়ানার সঙ্গে খোদাই করে গেছেন। Ki-taek-রা জানতই না পৃথিবী জোড়া বানভাসি মানুষের দলে সমবেত হয়ে তাদেরও গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে একটি ত্রাণ শিবিরে। অন্যদিকে Mrs. Park ছেলের জন্মদিনের তোড়জোড় করতে থাকেন। বিলাসবহুল অঢেল উৎবৃত্ত পোশাক আশাকের পাশে ত্রাণ শিবিরের ছবি। Park-পরিবাররে পারিবারিক বন্ধন, তাদের প্রত্যেকের সামাজিক মর্যাদার পাশে Kim-পরিবারের ক্রম-অধোগতি (Moon-gwang, Geun-sae-দের দিকে) বড় বেদনার মত বাজতে থাকে আমাদের মনে। Ki-taek তাঁর জীবন দর্শনের এক ক্রান্তিকালে উপনীত হয়ে বলে, “সবথেকে ভাল হল জীবনে কোনো পরিকল্পনা না করা”, বিশেষত তাদের মত মানুষদের। কারণ মানুষ ভাবে এক আর হয় আরেক, ব্যক্তি জীবনে অকস্মাৎ বিপর্যয় নেমে আসে, রাষ্ট্র বিশ্বাসঘাতকতা করে। প্রথাসিধ্য অবস্থান থেকে কখনই বুর্জোয়া বা পেটি বুর্জোয়া প্রতিনিধি হিসেবে Mr. Park ও তাঁর পরিবারকে কখনই খুব অথরেটেরিয়ান হিসেবে এ ছবিতে দেখানো হয় না। যদিও Mr. Park-এর উচ্চ শ্রেণী-চেতনার ইঙ্গিত আমরা মাঝে মাঝে পেয়েছি তাঁর শরীরী ভাষায় কিংবা স্ত্রীর সস্তা অন্তর্বাস পরিধানের প্রতি কটাক্ষে। তথাপি Park-পরিবার সব কিছুকে সরল বিশ্বাসেই যেন মেনে নিয়েছে বলে মনে হয়, তাদের মধ্যে কোনো কিছু নিয়েই সন্দেহের উদ্রেক হয় না। তলায় তলায় কি দক্ষযজ্ঞ হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত তা তাদের কাছে অজানাই থেকে যায়। গরীব নিম্নবিত্ত মানুষের অন্তর্ঘাত ঘটানোর নিষ্ফল প্রচেষ্টার প্রতি নিবেদিত এ ছবির গল্প। ফলত ছবিটি কোনো শ্রেণীর পক্ষেরই প্রোপাগান্ডা চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে না। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ ই. এফ. শুমেকার (১৯১১-১৯৭৭) শিল্পায়ন/পুঁজি-রাষ্ট্রের যে চারটি মূল বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছিলেন তার মধ্যে একটি হল ‘এর সংগঠন অত্যধিক বৃহৎ হওয়ায় এর চরিত্রের মধ্যে স্বৈরাচারী প্রবৃত্তি নিহিত থাকে’। শ্রেণী, শ্রেণীর সংঘাত, বাজার পুঁজির চলন, বলবৎ ও ক্রমবর্ধমান অসমতা সব মিলিয়ে এ এমন এক বৃহৎ স্বৈরাচারী ব্যবস্থা তৈরি করে যেখানে Park-দের আর আলাদা করে শোষকের প্রতিনিধিত্ব করতে হয় না। কিন্তু Kim-দের অসহায়তা, ইচ্ছে-অনিচ্ছার ঘেরাটোপের মধ্যেকার সামাজিক অবস্থান, শোষিতের রূপটি নতুন ভাবে আমাদের চোখের সামনে প্রস্ফুটিত হয়। কিঞ্চিৎ প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বলতে চাই, ৪৮ খৃষ্টাব্দে নথিভুক্ত Samguk Yusa নামক প্রাচীন গ্রন্থ থেকে জানা যায় Heo Hwang-ok নামে এক রানী Geumgwan Gaya অঞ্চলের Suro নামের এক রাজাকে বিবাহ করেন ‘অয়ুদা’ থেকে কোরিয়া যাওয়ার সময়। তাঁরা যে ১০ সন্তানের জন্ম দেয় সেই থেকেই এই Kim-বংশের সূত্রপাত। এই ‘অয়ুদা’ সম্ভবত ভারতবর্ষের আজকের অযোধ্যা। উত্তর কোরিয়ার প্রতাপশালী শাসক নেতা Kim Jong-un-ও এই বংশের উত্তরাধিকার বহন করছেন। ২০১৫ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার প্রায় ২১.৫% মানুষ এই বিখ্যাত Kim-বংশের।

    ছবিটিতে এক জায়গায় উত্তর কোরিয়ার দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা Kim Jong-un-এর উদ্দেশ্যে পরমাণু বোমার ব্যবহার নিয়ে Moon-gwang-এর ব্যঙ্গাত্মক অভিনয় আছে। পরিচালকের আয়রনি এখানেই যে তিনি সুকৌশলে আমেরিকা ও তার সহযোগী পাশ্চাত্যের দেশগুলি-কর্তৃক দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নির্মিতিকে যেন এখানে ব্যাঙ্গ করেন। যন্ত্রণা দীর্ণ অত্যাচারিত দুঃস্থ মানুষের বাস হিসেবে লাল-দৈত্য উত্তর কোরিয়ার যে নির্মিতি, Moon-gwang, Geun-sae-রা যেন তারই দক্ষিণ কোরীয় সংস্করণ। সাম্যবাদী টোটালেটেরিয়ান রাষ্ট্র থেকে আধুনিক পুঁজিবাদী কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, গরীব মানুষের চেহারার কোনো পরিবর্তন হয় না, তাদের চেহারা সর্বত্রই একই। Ki-woo-এর বন্ধু Min-hyuk ছবির শুরুতে তার দাদুর সংগ্রহের পাথরের একটি স্মারক Ki-woo-কে দিয়ে যায় । তার বিশ্বাস এটা তার বন্ধুর পরিবারে আর্থিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে । Ki-woo এই পাথরটিকেই বেছে নেয় বাঙ্কারে Moon-gwang, Geun-sae-দের পরিণতি নিয়ে তার নিজস্ব পরিকল্পনার রুপায়ণে। এই অংশে একটি দৃশ্যে আমরা দেখতে পাই Mr. Park এবং Ki-taek দু’জনেই রেড ইন্ডিয়ান সেজে বসে আছেন Mr. Park-এর ছেলের জন্মদিনের পার্টিতে অনুষ্ঠিত নাটকে অংশগ্রহণ করার জন্য। আমরা জানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ হিসেবে তথাকথিত প্রথম বিশ্বের দেশগুলির তালিকায় দক্ষিণ কোরিয়াও একটি। খোদ মার্কিন ভূখণ্ডে রেড ইন্ডিয়ানদের এথনিক ক্লিনসিংএর যে পৈশাচিক ইতিহাস আছে, জাতি রাষ্ট্র হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার মার্কিন-দেশের সাথে কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সখ্যতা, পরনির্ভরতার প্রতি এটা কি পরিচালকের কটাক্ষ? নাকি আরও বড় কোনো পুঁজির চলন ও তার নিয়ন্ত্রণের স্মারক এটি? এ প্রশ্ন মনে জাগে কারণ এই ছবিটিই সম্ভবত পুঁজি রাষ্ট্রের সাঙ্ঘাতিক ‘উদার ভাবমূর্তি’র দাবি নিয়ে প্রথম অ-ইংরেজি ছবি হিসেবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের আকাদেমি এ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়!

    Ki-woo যে বিপত্তির সূত্রপাত করে নিজে সাঙ্ঘাতিক-ভাবে আহত হয়, সেই বীভৎসতা চরম আকার ধারণ করে। সাময়িক রক্তপাত ও খুনোখুনির ভেতর দিয়ে ছবিটি অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়। লেনিন বলেছিলেন একজন মানুষের মৃত্যু ট্রাজেডি হয়, কিন্তু অনেক মানুষের মৃত্যু কখনও ট্রাজেডি হয় না। যদিও ছবির শেষে Ki-taek–কে মাটির তলার বাঙ্কারে স্থলাভিষিক্ত হতে দেখি Geun-sae-এর ইহ-লীলা সাঙ্গ হলে, তথাপি আমরা এই ছবির পরিণতিকে ট্রাজেডির ব্যক্তিগত পরিসরে নিয়ে গিয়ে ভাবি না। বরং হত্যা লীলার মধ্যে যে এক ধরনের উন্মাদনা আছে তাই অবশ্যম্ভাবী ছিল বলে মনে হয়। গল্পের মনোরঞ্জনের দিকটির বাইরে গিয়েও এ ছবি অর্থনৈতিক অসাম্যকে, তাকে বলবত রাখা কায়েমি স্বার্থকে ও তদুপরি বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েনের জটিল দিকটিকে অদ্ভুত মুনশিয়ানায় তুলে ধরে আমাদের হৃদয়ের মর্মমূল ধরে গভীর ভাবে নাড়া দিয়ে যায়। আপাত ধনী দেশ, আপাত কল্যাণমূলক সমাজের গভীরে লুকিয়ে থাকা ক্ষতস্থানগুলিকে চিনিয়ে দিতে দিতে এ ছবি সারা পৃথিবীর মানুষের ছবি হয়ে ওঠে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পর্যালোচনা (রিভিউ) | ১৯ নভেম্বর ২০২১ | ২৫৬৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • rhishin sinha | ১৯ নভেম্বর ২০২১ ১১:৫৯501305
  • না কমিউনিস্টরা এখনো শূন্য হয়ে যায়নি , নিশ্চিন্হ  হয়ে যায় নি !ওদেরকে এখনো গুচুতে পাওয়া যায় যেখানে ওরা এখনো সাম্যবাদী অর্থনীতির জয়ঢাক পেটায় যা কিনা খোদ সাম্যবাদী দেশগুলোই ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে কবেই !
  • Subhadeep Ghosh | ২০ নভেম্বর ২০২১ ১৬:২২501338
  • @rhishin sinha 
     
    অনেক ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য। আপনার মতামত প্রণিধানযোগ্য এবং অবশ্যই এব্যাপারে এযাবৎ অমীমাংসিত তর্কবিতর্ক আছে।
  • Rusha Dutta | ২০ নভেম্বর ২০২১ ১৯:২৪501342
  • অসম্ভব ভালো আলোচনা। memories of murder ব্যক্তিগতভাবে বেশি প্রিয় ছবি parasite এর চেয়ে। তথাপি যে ভাবনা নিয়ে ও যে দৃষ্টিকোণ থেকে parasite কে এই আলোচনায় পাঠ করা হয়েছে তা এককথায় অতুলনীয়।
  • Subhadeep Ghosh | ২৬ নভেম্বর ২০২১ ০৩:২২501441
  • @Rusha 
    অনেক ধন্যবাদ তোমার মতামতের জন্য। হ্যাঁ, memories of murder-ই বং জো কে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয় । ছবিটিও অসামান্য।
     
  • সংবরণ সরকার | 2409:4060:21d:2a1c::1b6f:58ac | ২৯ নভেম্বর ২০২১ ০০:০৫501515
  • যথারীতি শুভ ভিন্ন ভিন্ন দরজা দিয়ে একটি কমন হলঘরে উপস্থিত হয়েছে। এক্ষেত্রে হলঘরটির নাম 'প্যারাসাইট'। একটি স্টুপেন্ডাস ছবি। ধন্যবাদ, শুভ।
  • Ratna Ghosh | ২৯ নভেম্বর ২০২১ ২৩:৩৫501531
  • সিরিয়াস ও মনগ্রাহী আলোচনা। ছবিটি দেখার আগ্রহ তৈরি হল। তবে মন্তাজ নিয়ে স্বতন্ত্র ও আরো ডিটেলে আলোচনা হলে ভালো লাগবে। অনেক ধন্যবাদ।
  • Subhadeep Ghosh | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:১১501879
  • @সংবরণ 
    অনেক ধন্যবাদ মতামত দেওয়ার জন্য। আসলে যে কোনো উঁচু মানের শিল্পকর্মের আলোচনায় বিভিন্ন দিক থেকে কৃষ্টিটিকে দেখার চেষ্টা করাটাই আমার মতে একজন প্ৰবন্ধ লেখকের কর্তব্য হওয়া উচিৎ। এই অধমেরও সেই টুকুই চেষ্টা।
  • Subhadeep Ghosh | ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ২৩:১৪501880
  • @Ratna Ghosh
    অনেক ধন্যবাদ মতামত দেওয়ার জন্য। অবশ্যই চেষ্টা করব মন্তাজ নিয়ে একটা সতন্ত্র প্রবন্ধ লেখার।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন