এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  কুমুদির জন্য (খ)  kumudi

  • বান্ধবী

    সুবর্ণরেখা দেবনাথ
    গপ্পো | কুমুদির জন্য (খ) | ২৮ নভেম্বর ২০২১ | ২৬৭০ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • অষ্টম শ্রেণী
    ধর্মনগর, উত্তর ত্রিপুরা

    সিলিং-এর দিকে গত এক ঘন্টা ধরে তাকিয়ে আছি, অ্যালার্মটা বেজে যাচ্ছে। এই নিস্তব্ধ সকালে অ্যালার্মের শব্দটাই একমাত্র সঙ্গী। কেউ কোনোদিন মনে হয় ভেবেও দেখেনি, ক্লাস এর সবচেয়ে বাচাল মেয়েটা ১২ বছর পর এক ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে পড়ে থাকবে, কথা বলা ভুলে যাবে।
    শেষে উঠলাম, ঘড়িতে ৫টা বাজে, স্নান করতে করতে সময়ের কথা ভুলে গেলাম, বেরিয়ে দেখি ৬টা বাজে, অস্বাভাবিক কিছু না, আমার প্রায় প্রতিদিনই এত সময় লাগে। গত কালের ডিনার লাঞ্চ বক্সে নিয়ে, বেরিয়ে পড়লাম, চাকরি করতে মোটেও ভালো লাগে না। মানুষ দেখতেও আজকাল ইচ্ছে করে না, করোনার জন্য এখন সবাই দুটো মুখোশ পরে, আগে একটা পরত। শীত কালে এখানে বেশি বরফ সাধারণত পড়ে না, কিন্তু এবার সব কটা স্ট্রিট ধবধবে সাদা, সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে। এদেশের লোকজনকে আমার ভালো লাগে না, রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে ফিরেও দেখেনা, কথা বলে না, জাস্ট মাইন্ডিং দেয়ার ওউন বিজনেস।
    পাড়ার বাসস্টপ পেরিয়ে একটু গিয়েই মেট্রো স্টেশনটা, প্ল্যাটফর্ম এর পাশের দোকান থেকে প্রতিদিন এক কাপ চা না খেলে দিন শুরু হয় না, ট্রেনে চেপে বসলাম, আমার পাশে একটা মেয়ে বসলো দুই স্টপ পর, প্রতি দিন ৩ ঘন্টা ট্রেনে বসতে ভালো লাগে না, লোক জন কথাও বলে না।মেয়েটার চুল ছোট করে ছাঁটা, মেটে লাল রঙের। মুখ দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তারপর হঠাৎ ,আমার দিকে তাকিয়ে বললো, "কিছু জিজ্ঞেস করবেন? এতক্ষণ ধরে কারো চোখে কারোর তাকিয়ে থাকা একটু ইমপোলাইট, তাই না?"
    কী বলব বুঝে পেলাম না, চোখদুটো তার মিষ্টি মধু রঙের, অথচ এত ঠান্ডা দৃষ্টি। "না, না এমনিতেই, বসে বসে এদিক ওদিক দেখছিলাম আরো দুটো স্টপ বাকি, ভালো লাগছিলো না।" বেশ থতমত খেয়ে বললাম।
    মেয়েটা আর উত্তর দিলো না, ৫ মিনিট পরে জিজ্ঞেস করল, "আপনার নাম টা একটু বলবেন? এমনিতেই তেমন কিছু না"।
    আমার নাম 'মেঘ' বেশি কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না। আর কিচ্ছু বললো না মেয়েটি, পরের স্টেশন এ নেমে গেলো।
    আমিও নেমে গেলাম একটু পরে, দিনটা যেমন তেমন চলে গেলো, গত ৩ বছর যেভাবে প্রতি দিন কেটেছে ঠিক তেমনি।
    সবাই কে দেখলে মনে হয় কোনো চিন্তা নেই কারোর, হাসছে ঠাট্টা করছে, কী ভালো মিথ্যে বলতে পারে ওদের চোখগুলো। ওই মেয়েটার চোখ কিন্তু মিথ্যে কথা বলেনি, ওকে দেখে মনে হয় কলেজে পড়ে, আবার কোনোদিন দেখা হলে নাম জিজ্ঞেস করতে হবে, মনে মনে ভাবলাম।
    ফেরার পথে খাবার কিনে, বাড়ির ট্রেন ধরলাম, তখন রাত ৮টা। 'জীবনের ওপর হতাশ হওয়া' আজকাল নাকি ইন্টারনেট ট্রেন্ড। মনে মনে হাসলাম, ভাবছি নার্সিসিস্টিক হওয়ার একটা সীমা থাকে, সভ্যতা সেটাকে কবে পেরিয়ে গেছে।
    বাড়ির রাস্তাগুলো আমার আর ভালো লাগে না, অ্যাপার্টমেন্টে এর দরজা খুলে, মনটা কেমন খারাপ হয়ে যায়। প্রতিদিন এক গল্প, কিন্তু তবুও কাঁদার ইচ্ছে করে, একটা মানুষ যদি থাকতো যে বলতো "হাত পা ধুয়ে এসে খেতে বস রে, এত দেরি কেনো? কাজ এর চাপটা একটু কমাতে বল, অসুস্থ হয়ে যাবি তো!" ভাবলেই কী আর সব হয়। লাইটটা জ্বালিয়ে খাবারটার দিকে তাকিয়ে রইলাম, আজ থেকে ৫ বছর আগে হলে, না খেয়ে ঘুমোতাম। কিন্তু এখন আর অত বোকা রইনি, ইটিং ডিসঅর্ডার এর মত ভয়াবহ জিনিস আর দেখিনি! বাসন আর ভরালাম না, ধুয়ে রাখার আলস্য। কাপড় না ছেড়েই ঘুমিয়ে পড়লাম, ২ টার সময় ঠেলে উঠলাম,গত ৬ দিন ধরে টানা দুঃস্বপ্ন দেখছি কিন্তু কিচ্ছু করার নেই।
    মা বাবা বেঁচে আছে চিন্তা নেই, সুস্থও আছে, ব্যস কথা বেশি বলে না এটুকুই। ৩ বোন ২ ভাই আমরা, কেউ এখন পাত্তা রাখে না, মনে হয় একলা এই পৃথিবীতে। আবারো চোখ বুজে শুয়ে রইলাম।

    ট্রেনে এখন, হঠাৎ কেউ হাত ধরে টান দিল, চেয়ে দেখি গত দিনের মেয়েটা, অবাক হয়ে রইলাম। ট্রেন থামার মুহূর্তে, আমাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল, "এটা আমার স্টপ না তো।" বললাম আমি। স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটা গাছের নিচে গিয়ে থামলো, বললো "জানি, এটা যে আপনার স্টপ না, কিন্তু একটু ভরসা করুন। আপনার আজকের দিনটা খুব ভালো যাবে" ।
    "তুমি, আপনি না, তুমি বলে ডাকবে" অনেকদিন পর কিচ্ছু না বুঝে হাসলাম, ভেবেছিলাম ছোট বেলার হাসিটা হারিয়ে গেছে কিন্তু সেটা যায়নি দেখে অবাক হলাম ।
    মেয়েটা মাটির দিকে থেকে মুখ তুলে কিচ্ছু বললো না, প্যারালাল হাসি দিল একটা, 'মেঘ, চলো ' বলে আমার হাত ধরে হাটতে শুরু করল, মেয়েটার চোখ দুটো তবুও বিষণ্ণ, খালি খালি লাগে কিন্তু ও বাকিদের মত মিথ্যে বলল না, অবাক লাগল। একটা ছোট দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে, আমার দিকে তাকাল একবার, ভেতরে গিয়ে দেখি একটা আইসক্রিমের দোকান। আমার হাতে একটা চকোলেট আইসক্রিম ধরিয়ে দিয়ে বলল 'খাও', দেখি তোর স্ট্রবেরিটা একবার বলে, একটু খেলাম, ওর মুখটা দেখার মত ছিল। "এটা কিন্তু ঠিক না, আমাকেও একটু দাও তাহলে!"
    তারপর আমরা কত জায়গায় গেলাম, লেকের ধারে হাঁসকে পাউরুটি দিলাম, কত কিছু খেয়ে দেখলাম, এই করতে করতে কখন বিকেল হয়ে গেলো লক্ষ্য করিনি। পার্কে একটা বড় নাগরদোলাতে শেষ দুজনে উঠলাম, সারা দিনে ওর হাতের দাগগুলোকে পাত্তা দেইনি, দেখলে কষ্ট হয়। হাওয়াই মিঠাইটার দিক থেকে চোখ না সরিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো "মেঘ, কেমন ছিল দিনটা?" প্রথমবার, মেয়েটার চোখ দেখে জীবন্ত লাগলো, ছলছল করছিল, যেন এক্ষুণি কেঁদে দেবে।
    "কেনো করলে এসব, তুমি তো আমাকে চিনো পর্যন্ত না, যারা আমার কিচ্ছু হয় তারা আজ অব্দি কিছু করলো না?"
    আমি থতমত খেয়ে জিজ্ঞেস করলাম কেনো?
    কিছু আর বলে না, একটু পরে মুচকি হেসে বলল "জানি না, অনেক দিন পর কিচ্ছু করার ইচ্ছা হলো। মেঘ, তুই এত মন খারাপ করে থাকিস না তো, জানিস হাসলে তোকে খুব ভালো লাগে।" তুমি কখন তুই হয়ে গেলো আমরা লক্ষ্য করলাম না।
    রেন্ডম একটা দিন, আমার কাছে এতো চমৎকার একটা স্মৃতি হয়ে উঠবে, ভেবেও দেখিনি।
    "তোর নাম টা?"
    মেয়েটা কিছু বলে না।
    "ফোন নম্বরটা একটু দিলে ভালো হয়?"
    সেটা একবারেই বলে দিলো, আমি আর সেটা নিয়ে বেশি ভাবলাম না।
    বাড়ি গিয়ে আজকে কাঁদার ইচ্ছে হলো না।
    দুঃস্বপ্নও দেখলাম না।
    প্রথম বার এতো বছর পর মনটা ভালো ছিল।
    হঠাৎ ভোর ৫টার সময় ফোনটা বেজে উঠলো, প্রথম বার কেউ আমাকে অনেক দিন অমন ফোন করেনি, তুলে দেখলাম নম্বর এর নাম নেই, "হ্যালো মেঘ?", আর ভাবা লাগলো না কে।
    মনটা কেমন খুশি হয়ে গেছিলো, আজকে অফিসে গিয়ে সারাদিন মনে হলো ওই দিন তার কথা। দেখতে দেখতে একটা বন্ধু বানালাম, মেয়েটার নাম এখনও জানি না, ফোনে ' বান্ধবী' দিয়ে সেভ করা। ট্রেন এ প্রতিদিন আমার পাশে বসে, বেশি কথা না বললেও, আমার কথা মন দিয়ে শোনে। ওর চোখগুলো এখন একটু নরম হয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না, 'কেনো ' তার মুখটা দিনে দিনে সাদা হচ্ছে বা 'কেনো ' সে দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে।
    ভাবলেও অবাক লাগে, কিছু দিন আগের আমার ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট জীবনটা কীভাবে পাল্টে গেলো টেরই পেলাম না।
    আজকে মন শক্ত করলাম, ট্রেন এ চেপে ওকে ডেকে বললাম, "একটা কথা জিজ্ঞেস করলে খারাপ পাবি নাকি?"
    বন্ধু বললো "নাহ্ অমন কি আর জিজ্ঞেস করবি।"
    দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, বললাম "তুই ঠিক আছিস? মানে, মন ভালো আছে? অসুস্থ নাকি? "
    একটা কথাও বলল না ট্রেন এর সিলিং -এর দিকে ১৫ মিনিট তাকিয়ে রইল, আমিও আর কিচ্ছু বললাম না কিন্তু এই স্তব্ধতা মোটেও অস্বস্তিকর ছিল না। আমার স্টপ আসলো আমি নেমে গেলাম, বন্ধু আর ওঠে না। তারপর কি হলো ঠিক জানি না, সেই চিন্তা নিয়েই দিন কাটালাম।
    আগামী কাল ট্রেন এ উঠলো না, কলও করেনি, একটু চিন্তা হলো ঠিকই এই নাকি হারিয়ে ফেললাম সেই একমাত্র বন্ধু। একটু চিন্তিত বলাটা রীতিমত ভুল, আমার রাতের ঘুম উড়ে গেছিলো, তবুও কোথাও একটা, মনে মনে জানতাম বন্ধু আমাকে ছেড়ে যাবে না, ততটুকু ভরসা ছিল।

    আগামী দিন সে এলো, এসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "জিজ্ঞেস করার জন্য, থ্যাঙ্ক ইউ, মেঘ, আমিও জানিনা। কী করছি? কী করবো? কিন্তু জানিস আমি যেমন আছি ভালো আছি, আর তোকে দেখে সেদিন মনে হয়েছিল তুই ভালো নেই; এর বেশি কিছু না, মানুষকে খুশি রাখলে পৃথিবীটা ভালো লাগে। "
    "কথাটার উত্তর দিলি না, তুই কি ভালো আছিস? স্পষ্ট বল" বেশ শক্ত হয়ে বললাম।
    আস্তে করে বলল, রীতিমত ফিসফিস করে,
    "না রে, যেমন আছি ব্যাস আছি, ভালো মন্দ জানি না; অর্থসংকট, কিন্তু এই কত দিন আর দুঃস্বপ্ন দেখিনি, বলতে গেলে সত্যিতে ভালো আছি মনে হয়।"
    "তাই বুঝি, ব্যস আমাকে ছেড়ে চলে যাস না।"
    "আমি যদি কোনো দিন চলে যাই, তাহলে আগের মত হাসা ভুলে যাস না, পারলে আর এক জনকে হাসা শেখাস।"
    ও বললো।
    "ওরকম কথা বলিস না, চিন্তা করিস না ভুলবো না!" একটু হেসে বললাম "তোর নাম টা?"
    ও শেষে বলল "তোর ফোনে কি নামে এতদিন সেভ করেছিস?"
    'বান্ধবী' বললাম।
    "সেটাই আমার নাম ধরে নে, নাম জেনে আর কী করবি"
    সেটাই আমার বান্ধবীর সাথে শেষ দেখা। আর সে ট্রেনে উঠেনি, ফোনও ধরেনি।
    দু দিন পর রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে, টিভির দোকানে খবরে যা দেখলাম তা কোনোদিনও ভুলবো না,

    *ব্রেকিং নিউজ: এঞ্জেল মারাক, ১৯ বছরের এক যুবতীর, ২ বছর আগে নিখোঁজ, ট্রাক দুর্ঘটনায় হঠাৎ মৃত্যু!*

    মনটা তখন কেমন ভেঙে গেলো, কিন্তু অবাক লাগলো, এমন উচ্ছৃঙ্খল এক ব্যক্তি আমাকে হাসা শিখিয়ে গেলো।
    জীবন ভালোই যাচ্ছে, ভালো মানে আগের মত একঘেঁয়ে আর নিঃশব্দ, মনে হচ্ছিল এঞ্জেল বলে কেউ কী আদৌ ছিল, না ওটাও ছিল স্বপ্ন ? সবটাই এক রাতের ছল। ট্রেন এ চেপে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকি এখন, চাই না আর কোনো সঙ্গী, একটা মেয়ে আমার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে আছে দেখলাম, বললাম, "কিছু জিজ্ঞেস করবেন? এতক্ষণ ধরে কারো চোখে কারোর তাকিয়ে থাকা একটু ইমপোলাইট, তাই না?"

    "না, না এমনিতেই, বসে বসে এদিক ওদিক দেখছিলাম আরো দুটো স্টপ বাকি, ভালো লাগছিলো না।" বেশ থতমত খেয়ে বলল।

    কী করে জানি আমি জানতাম, ওই মেয়ে টা আমি ছিলাম, আর আমি ছিলাম এঞ্জেল, ঠিক এভাবেই কেটে যায় সময়। মানুষ যায়, মানুষ আসে। সবাই পায় না সেই বান্ধবীকে, কিন্তু যারা পায় তারা আরেকজনের জন্য এঞ্জেল হয়ে উঠে। হঠাৎ মনে হলো, এঞ্জেল বলে কেউ থাকলেও আমি তাকে চিনি না, আমি কোনোদিন কোথাও বলিনি, আমি যাকে চিনি, সে তো আমার একমাত্র বান্ধবী।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • গপ্পো | ২৮ নভেম্বর ২০২১ | ২৬৭০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৫:২২501535
  • খুব ভালো লেখা। খুব ম্যাচিওর্ড লেখা। সুবর্ণরেখা নামটাও খুব সুন্দর।

    আরো একটা কথা, আজকাল তোমরা হয়তো "খারাপ পাবি নাকি" বলো, কিন্তু "তোর খারাপ লাগবে" শুনতে আমার আরো ভালো লাগে।
  • kk | 68.184.245.97 | ৩০ নভেম্বর ২০২১ ২২:২৬501554
  • আমার খুব ভালো লাগলো এই লেখাটা। খুব ম্যাচিওরড লেখা। ডিপ্রেশনের এক্সপ্রেশন অত্যন্ত সুন্দর হয়েছে। আর গল্পের ফিলোজফিটাও খুব ভালো। কিছুকিছু জায়গায় আমার মনে হয়েছে সামান্য একটু আড়ষ্ট ভাষা, যেন ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে বলা -- যেমন, "কেমন ছিলো দিনটা"? আমার পার্সোনালি মনে হয় "আজকের দিনটা কেমন কাটলো?" লিখলে শুনতে বেশি ভালো লাগতো। তবে সম্ভব্ত এখনকার ছেলেমেয়েরা এভাবেই কথা বলে।

    অভ্যু, 'খারাপ পাবি' কথাটা সম্ভবত পূর্ববঙ্গের কোনো এক বিশেষ জায়গার ডায়লেক্ট। আমার পিএইচডি সুপারভাইজার এই কথাটা খুব বলতেন।
  • Ranjan Roy | ০১ ডিসেম্বর ২০২১ ০০:৫৭501562
  • একদম অন্যরকম লেখা, বেশ পাকা হাতের।
  • ,চিরশ্রী দেবনাথ | 2409:4066:4:d8c4::58b:18a4 | ০২ ডিসেম্বর ২০২১ ১৩:৪৯501616
  • সুবর্ণরেখা দেবনাথ আমার মেয়ে। ওকে যখন এই গল্প প্রতিযোগিতার লিংকটি পাঠাই, খুব উৎসাহিত হয়ে ওঠে, আমরা ত্রিপুরায় থাকি এবং পূর্ববঙ্গীয়, ও এর আগে কখনোই গল্প লিখেনি, ক্লাস এইটে পড়ে, হোলিক্রস কনভেন্টে, গল্পটি লিখে ও আমাকে একটু দেখে দিতে বলেছিল, তখন আমি সামান্য কিছু বানান একটু ঠিক করে দিই, আর যা লিখেছে তাই পাঠিয়ে দিতে বলি মেইলে। তাই এসব ভুলগুলো রয়ে গেছে, আপনাদের সকলের মূল্যবান মতামত ওকে খুব উৎসাহিত করবে, ওর জীবনের প্রথম গল্প, আমিও খুব খুশি হলাম এইসব পাঠ প্রতিক্রিয়া জেনে। শুভেচ্ছা রইল সকলকে আমার। 
  • গবু | 223.223.143.236 | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০২:২৩501719
  • বাপরে, ক্লাস এইটে প্রচন্ড পরিণত চিন্তা! অবসাদটাও ভালো ফুটেছে...
  • aranya | 2601:84:4600:5410:992b:6ff:3270:dbdd | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:২০501727
  • দারুণ লেখা। খুব পরিণত চিন্তা ভাবনা 
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩১501735
  • খুব ভালো লেখা। কিন্তু কিছু যদি মনে না করেন, এটা কি প্রথমে ইংরেজীতে লেখা হয়েছিল? পরে বাংলায় রূপান্তরিত করা হয়েছে? কিছু কিছু জায়্গা দেখে যেমন "চোখ দুটো তার মিষ্টি মধু রঙের" -এরকম মনে হচ্ছে। বাংলাতে তো ঠিক এভাবে বর্ণনা করা হয় না।
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৩৬501736
  • তা যদি লেখেও, বাংলাটাও তো বাচ্চা মেয়েটিই করেছে। কনভেন্টে পড়ে, প্রথম ড্রাফটটা ইংরেজিতে লিখতেই পারে। খুবই পরিণত চিন্তা ভাবনা, লেখার ধরণ। আশা করব অভিভাবকেরা আরো লিখতে উৎসাহিত করবেন। যদি ভবিষ্যতে সাহিত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে চায়, সেই স্বাধীনতা দেবেন।
  • সায়ন্তন চৌধুরী | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:১৮501744
  • এই লেখাটা আমার পছন্দ হয়েছে; ভাষাকে অন্যরকমভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে বলেই ভালো লেগেছে। "যারা আমার কিচ্ছু হয় তারা আজ অব্দি কিছু করলো না", "একটা কথা জিজ্ঞেস করলে খারাপ পাবি নাকি?" এরকম বাক্যবন্ধ খুবই চমৎকার এবং আশা করি বাংলা কথ্যভাষার পরিবর্তনগুলো ধীরে ধীরে এভাবে লেখায় আসবে, যারা ভাষার বিশুদ্ধতা নিয়ে চিন্তিত তাদের হাস্যকর আপত্তিকে পাত্তা না দিয়ে।
     
    তবে যদি এটা ইংরেজিতে লিখে তারপর অনুবাদ করা হয়, তাহলে জানতে চাইব সেটা কেন। মানে হতেই পারে লেখক নিজেই সেটা চেয়েছেন, যেমন বেকেট করতেন; সেক্ষেত্রে কোনো বক্তব্য নেই। কিন্তু যদি অন্য কেউ লেখককে বাংলায় লিখতে বলে থাকেন, তাহলে খুবই আপত্তি জানাব। একজন লেখকের ভাবনার স্বতঃস্ফূর্ততা যদি ইংরেজিতে হয়, সেই ভাষাতেই স্বছন্দভাবে তাঁর লেখা উচিত। ইংরেজি তো অত্যন্ত সুগঠিত এবং সমৃদ্ধ ভাষা; বাংলায় লেখার কোনো কারণ দেখিনা।
     
    নিজের কথা বলতে পারি: আমি বাংলায় লিখি কারণ এটাই আমার ভাবপ্রকাশের মাধ্যম। আবার আমিই বাংলা সমসাময়িক গদ্যসাহিত্য বিশেষ পড়িনা (কিছু লেখক বাদ দিয়ে) কারণ সেন্টিমেন্টাল রাবিশ লাগে। ভাষাকে ভালোবেসে লেখাপড়া করিনা। তাতে যদি বাংলা ভাষা উঠে যায় যাবে; আমার কিছু যায় আসে না।
  • Abhyu | 47.39.151.164 | ০৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৯:২৫501745
  • সায়ন্তন যেমন আছেন সেরকম অনেক লোক এখনো আছেন যাঁরা বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে অনেক কিছুই করেন। সব রকম লোকই থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন