এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • কোরা ডট কম এ একজনের প্রশ্ন ছিলো

    Alam Rahman লেখকের গ্রাহক হোন
    ২৮ অক্টোবর ২০২১ | ৭১৬ বার পঠিত
  • কোরা ডট কম এ একজনের প্রশ্ন ছিল -

    একজন দক্ষিণ ভারতীয় আর একজন উত্তর ভারতীয় মানুষের মধ্যে পার্থক্য কী?

    সেই প্রেক্ষিতে আমার অল্প অভিজ্ঞতা নিয়ে এই লেখা

    ঘটনা ২০১৬ নভেম্বর
    স্থান: থামেল, কাঠমান্ডু, নেপাল

    আমি মাঝে মাঝে নেপাল যাই এবং কাঠমান্ডুতে একটা হোটেলে থাকি। একদিন বিকেলে হোটেলের ছাদে রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম, নেপালী-ইউরোপিয়ান-ইন্ডিয়ান অনেক মানুষ ছিল, তো দিল্লি থেকে যাওয়া একটা ছেলে (উত্তর প্রদেশের লোক সম্ভবত) আমার সাথে আলাপ করার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রথমেই জানতে চাইলো আমি ইন্ডিয়ার কোন অঞ্চল থেকে এসেছি? (হিন্দিতে)

    আমার নাম আলম, আমি বাংলাদেশী, শোনার পর তার প্রতিক্রিয়া ভালো খারাপের মাঝামাঝি ছিল, আমি ওর নাম জানতে চাইলাম সে বলল তার নাম কিছু একটা সিনহা, নামটা আমি মনে করতে পারছি না (মি: সিনহা), একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি করে, ৩০-৩২ এর মতো বয়স হবে।

    তারপর জানতে চাইলো আমি মুসলিম কিনা! হালকা হাসিমুখে বললাম - হ্যাঁ, কিন্তু আমি মানুষ, তুমিও নিশ্চই মানুষ!

    ওর কাছে সহজ লেগেছে বলে মনে হয় নি! হাসি মুখ টিকিয়ে রাখলো, তারপর অনেক আলাপ হাসাহাসি হলো, আমি বললাম আমি ইন্ডিয়াকে ভালোভাবেই চিনি কারণ আমি অনেকবার ইন্ডিয়াতে গিয়েছি, ঘুরেছি, ইন্ডিয়ানদের সাথে কাজ করেছি, এখনও করি।

    মিস্টার সিনহা বলল যে ও কোনোদিন বাংলাদেশ যায় নি কিন্তু ওর এক ভাই বাংলাদেশে গার্মেন্টসে চাকরি করে। আমি বললাম - হ্যাঁ অনেক ইন্ডিয়ান বাংলাদেশে গার্মেন্টসে চাকরি করে, আমিও গার্মেন্টস রপ্তানি করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। এভাবে আড্ডা চলল বেশ রাত পর্যন্ত, তারপর আড্ডা শেষে আমি যে ৬টা বিয়ারের দাম পরিশোধ করেছিলাম তার দুইটা পান করেছিল মিস্টার সিনহা, এরপর সিনহা চলে গেলে আমি হোটেলের লোকদের সাথে আড্ডা গানে ব্যস্ত হই।

    পরের দিন বিকেলে ছাদের রেস্টুরেন্টে বসে আছি, অনেকেই আসছে হাই-হেলো বলে যার যার মতো টেবিলে বসে চা কফি ড্রিঙ্কস স্ন্যাক্স এর অর্ডার দিচ্ছে, কেউ মাউন্টেন ট্রেক করে এসেছে, আবার কেউ কেউ ট্রেকিং-এ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তো ওখানে বসে অনেক অভিজ্ঞতা হয়ে যায়, একেকজন একেক লোকেশনের প্ল্যান করছে, বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরে এসেছে, শুধু খেয়াল করে কথাগুলো শুনতে হবে, যারা গিয়েছিল তারা ভালো পরামর্শ দিচ্ছে, যারা যাওয়ার জন্যে তৈরি তারাও উপকৃত হচ্ছে, আর আমিও তথ্যে সমৃদ্ধ হচ্ছি।

    হঠাৎ একটা ছেলে ২৬-২৭ বছরের হবে, আমার টেবিলে এসে বসলো, হাই-হেলো বলার পর আমাকে জিজ্ঞেস করল - তুমি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছো? আমি কেরালা থেকে এসেছি, আমার নাম অভিলাষ অশোকান।

    আমি বললাম - আমার নাম আলম, বাংলাদেশ থেকে এসেছি , আমি এই হোটেলের পুরোনো গেস্ট। অভিলাষ বলল - আমি তিনদিন ধরে এখানে আছি, ভুবন ভাই তোমার কথা বলেছে, তোমরা নাকি গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত গানবাজনা করেছো?

    ভুবন ভাই হোটেলের লোক, মাটির মানুষ, যার কারণে হোটেলটা বাড়ির মতোই মনে হয় (আমি, ভুবন আর নবীন গতকাল অনেকরাত পর্যন্ত ছাদে ছিলাম, ভুবন খুব ভালো গিটার বাজায়, ইংলিশ নেপালি হিন্দি সব গান গাইতে পারে, মার্শাল আর্ট জানে, পর্বতের চূড়ায় উঠে অভ্যস্ত, ভূমিকম্পে ভুবনের তিনতলা বাড়ি ধ্বসে পড়েছে, বাড়ি করার জন্যে ব্যাংক লোন পাচ্ছে না, কিন্তু সব সময় হাসিমুখে তাকে দেখতে পাওয়া যায়)।

    অভিলাষ আমার সাথে পরিচয়ের পর খুবই খুশি, আমিও বেশ আনন্দিত, অভিলাষ হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে পড়েছে কয়েকদিন, আগে মালদ্বীপ থেকে একটা ফাইভ ষ্টার হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছে কারণ ওখানে উইড পাওয়া যায় না, আর ও উইড খুব ভালোবাসে, কেরালায় ওরা বেশ স্বচ্ছল পরিবার। এরপর এ কথা সে কথা অনেক ভাব হয়ে গেলো ওর সাথে, প্রায় ঘন্টা দুয়েক আলাপের পর।

    ওয়াশরুম থেকে আসছি বলে উঠে ফিরে এলো দুই হাতে চারটা বিয়ার নিয়ে এবং আমার পাশে দুইটা রাখলো, সাথে ফ্রাইড মোমো, গ্রিলড পটেটো, সালাদ ইত্যাদি নিয়ে। আমি তো অবাক, আমি অভিলাষকে বললাম - তুমি এটা কি করলে? আমি তো এর জন্যে রেডি না।
    ও বলল - আরে ভাই তোমার সাথে দেখা হবে পরিচয় হবে এর জন্যে আমিও রেডি ছিলাম না, লেটস এনজয় এন্ড মেক উইড এন্ড পাফ, হা হা হা চিয়ার্স।
    এভাবে ঘন্টা দুয়েক যাওয়ার পর আমি অভিলাষকে বললাম যে তুমি এখন আমাকে বাধা দিবা না প্লিজ, এখন আমার অর্ডার দেবার পালা। আমিও বেশ কিছু খাবার আর পানিও অর্ডার দিলাম তারপর আশেপাশের সব মানুষ মিলে একটা আন্তর্জাতিক আড্ডা শুরু হলো, মার্কিন ইউরোপিয়ান চাইনিজ ইন্ডিয়ান অনেক জাতের মানুষ, সহজে জীবনে মিলে না এমন আড্ডা।

    রাত যখন প্রায় সাড়ে নয়টা বেজে গেলো আমরা মোটামুটি খাদ্যে পানীয়ে ভরপুর, তখন ওই দিল্লিবাসী মিস্টার সিনহা এসে হাজির এবং আমাদের টেবিলেই বসল, অভিলাষকে বললাম মিস্টার সিনহা ফ্রম দিল্লি, ওদের মধ্যে হাই হেলো হ্যান্ডশেক হবার পর আমি সিনহাকে ড্রিংক অফার করলাম। সিনহা বললো যে সে একটা পাব থেকে বিয়ার মেরে এসেছে বড়োজোর একটা বিয়ার মারতে পারবে, আমি ওর জন্যে আরেকটা সালাদের অর্ডার দিলাম, অভিলাষ তখন কম কথা বলছিলো এবং মোবাইলের দিকে বেশি সময় কাটালো।

    সব শেষ করে উইড শেষ করে রুমে ঘুমাতে যাওয়ার সময় হয়ে যায়। আমি আর অভিলাষ যার যার বিলে সাক্ষর করে বিদায় নেই, এবং রুমে যাওয়ার আগে ফেসবুকে দুজন যোগ হলাম, ফোন নাম্বার আদান প্রদান করলাম।

    তার পরের দিন ব্রেকফাস্ট করতে ছাদে গিয়ে দেখি আমার আগেই অভিলাষ পাউরুটিতে মাখন মাখাচ্ছে, আমিও গিয়ে ওই টেবিলে বসলাম, কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট আমিও নিলাম, আর জানতে চাইলাম - আজকে ওর সারাদিনের প্ল্যান কি কি?

    অভিলাষ বললো বিশেষ কোনো প্ল্যান নাই - তবে চলো আমরা দুজন মিলে কোনো একদিকে বেরিয়ে পড়বো। আমরা ঠিক করলাম বের হয়ে যাবো যে দিক ভালো লাগে।

    চা শেষ করার সময় মিস্টার দিল্লি মানে সিনহা এসে হাজির, এসেই গুড মর্নিং গাইজ হেলো বলে আমাদের টেবিলে বসলো ওর খাবারের অর্ডার দিলো এবং জানতে চাইলো আমাদের কাছে উইড আছে কিনা, আমরা বললাম - হ্যাঁ একটা উইড শেষ করে আমরা ঘুরতে বের হবো। তারপর আমাদের সাথে মিস্টার সিনহা উইড করলো এবং আমি আর অভিলাষ রুমে চলে এলাম যে দশ মিনিটের মধ্যে আমরা লবিতে আসবো এবং হোটেল স্টাফদের সাথে আলোচনা করে একটা ট্যাক্সি নিয়ে বের হব।

    আমরা সেদিন বিকেল পর্যন্ত কাঠমান্ডুর এখানে সেখানে ঘুরলাম, খরচের সময় দুইজন কম্পিটিশন দিচ্ছিলাম, কারণ আমি খাওয়া শেষ করে হাত ধুয়ে এসে দেখি অভিলাষ বিল পরিশোধ করে দিয়েছে, আমিও ট্যাক্সি থেকে নেমে আগেই দর্শনীয় স্থানের টিকেট কেটে ফেলতাম এবং হোটেলে ফেরার আগেই ট্যাক্সিওয়ালাকে ভাড়ার টাকা ওর পকেটে গুঁজে দিয়েছি যেন অভিলাষ দিতে না পারে। পরের দিন অভিলাষ পোখারা চলে যাবে, তাই আজ রাতেই ওর সাথে শেষ আড্ডা হবে, ও পোখারা থেকে কাঠমান্ডু ফেরার আগেই আমি ঢাকায় চলে আসবো।

    তার মানে মাত্র দুইদিনের পরিচয়ে ওর আর আমার এত বন্ধুত্ব হয়ে গেল এটা এখন আমার কাছে মনে হচ্ছে যে অভিলাষ আমার অনেক পুরোনো বন্ধু।

    সন্ধ্যার দিকে আমরা ছাদে উঠলাম আগের মতোই আড্ডা শুরু হল, উইড চলছে, কফি চা হাবিজাবি, এখানে দুজনের মধ্যে একটা ভালো মিল ছিলো যে আমি আর অভিলাষ কেউ আসলে ডিস্কো, ক্যাসিনো, পাব এ যাওয়ার জন্যে কোনো ভাবেই ইচ্ছুক না। রাত যখন নয়টা বাজে তখন আমি অভিলাষকে বললাম তুমি রুমে চলে যাও, ফ্রেশ ঘুম দাও কারণ ভোর ৬ টায় তোমার পোখারা যাওয়ার বাস টাইম। সাড়ে নয়টার দিকে অভিলাষ বিদায় নিলো, মনটা বেশ খারাপ লাগছিলো, ছেলেটা খুবই খাটি মনের মানুষ। কাল থেকে বাকি তিনদিন আমি যে কাঠমান্ডু থাকবো ওর সাথে আর দেখা হবে না।

    অভিলাষ বিদায় নেবার পর মিস্টার দিল্লি আসলো। হাই হেলো বলে আমার টেবিলে বসেই বললো যে ও বাইরে থেকে ডিনার করে এসেছে কারণ এই রেস্টুরেন্টে দাম বেশি আর টেস্ট ওর ভালো লাগে না তাই বাইরে থেকে খায়, যথারীতি আমার জ্বালানো উইড এর দিকে হাত বাড়ালো, কিছুক্ষন পর আরেকটা বানানোর অনুরোধ করলো এবং বানিয়ে দিয়ে মিনিট দশেকের মধ্যে বিলে সাক্ষর করে রুমে চলে গেলাম এবং ঘুম দিলাম।

    পরদিন সকালে দশটার দিকে মনটা কিছুটা খারাপ। অভিলাষটা বেশ ভালো ছিল, কিন্তু আজ নাই সে, পোখারা চলে গ্যাছে, ৫ তলায় রেস্টুরেন্টে গেলাম কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট করতে, ছাদে উঠে দেখি আমার সেই টেবিলে অভিলাষ বসে আছে, আমিতো ভিমরি খেলাম - আরে অভি তুমি পোখারা যাওনি? কি সমস্যা?

    অভিলাষ বললো - নো ব্রো, আই হ্যাড লুজ মোশন, ফুড পয়জনিং, ফিলিং সো ব্যাড।

    ওহ! দাঁড়াও আমি এখনই আসছি। আমি আমার রুমে এসে ব্যাগ থেকে দুইটা ওরস্যালাইন নিয়ে উপরে গেলাম এবং ওকে পানিতে মিশিয়ে খেতে দিলাম - ও প্রথমে দ্বিধা করছিলো তারপর বোঝানোর পর দুইটাই খেয়েছে, আমি ওকে গুগল করে টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ দেখলাম, আমাদের হোম মেড স্যালাইন যে একটা বিশেষ আবিষ্কার যেটা বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে বিশেষ ভাবে প্রকাশ পেয়েছিলো। ওকে বললাম আজ আর আবোল তাবোল কোনো খাওয়া দাওয়া কোরো না, কাল সকালে তুমি ঠিকই সুস্থভাবে পোখারা যেতে পারবে। আজ অভিলাষ রাত নয়টার দিকে রুমে চলে যায়। আমি দশটা পর্যন্ত টেবিলে বসে, রেস্টুরেন্টের বিভিন্ন দেশের লোকের আসা যাওয়া প্রায় শেষ, এক দুইজন মাত্র আছে, রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গ্যাছে, আমিও নামবো নামবো অবস্থায়, এমন সময় মিস্টার দিল্লি, মানে মিস্টার সিনহা আসলো এবং হাই হেলো বলে বসলো এবং ও আজ কি কি করেছে তার কিছু কিছু বললো এবং উইড আছে কিনা জানতে চাইলো।

    উইড করার পর সিনহা বললো যে ও খুব ক্ষুধার্ত কিন্তু এই রেস্টুরেন্ট অলরেডি বন্ধ, আমি বললাম যে আমার রুমে আপেল আর কেক বিস্কুট আছে তোমাকে দিতে পারি। রাতে যদি ক্ষুধা লাগে তাই আমি এগুলো রুমে রাখি, ও বললো যে ওতে ওর হবে না, হোটেল থেকে বের হয়ে দশ মিনিট হাটলে একটা জমজমাট ফাস্ট ফুডের দোকান খোলা পাওয়া যাবে, কিন্তু এতো রাতে ওর একা যেতে ভয় লাগছে, আমি বললাম চলো আমি যাবো তোমার সাথে।

    তারপর হোটেল থেকে বের হলাম এবং হাঁটতে থাকলাম আমি আর সিনহা, রাত প্রায় এগারোটা বাজে। থামেল এলাকার কোনো কোনো দালান চুপচাপ আবার কোনো কোনো দালানে খুব উত্তেজনা। গান ড্যান্স ডিজে পার্টি ইত্যাদির আওয়াজ। রাস্তায় অনেক খারাপ লোকের আনাগোনা বোঝা যাচ্ছে, একেকজন একেক জিনিসের অফার করছে। আমাদের কি লাগবে জানতে চাইছে, আমরা কোনো কথা না বলে সেই ফাস্টফুডের দোকানে চলে এলাম, অনেক লোক ভর্তি একটা খাবারের দোকান, মেইনলি বার্গার, হটডগ, পিজা, স্যান্ডুইচ ইত্যাদি খুব বিক্রি হচ্ছে,
    তো সিনহা বললো যে দোকানে বসবো না, খাবার কিনে খেতে খেতে হাঁটবো, আমি বললাম ওকে। সিনহা একটা বার্গার আর একটা কোক নিয়ে বের হলো দোকান থেকে এবং আমরা হোটেলের দিকে হাঁটলাম, হোটেলে পৌঁছে সিনহা একটা উইড খাবে দাবি করলো। আমিও রাজি হলাম আবার ছাদে গিয়ে উইড করলাম, কাল দুপুরে ওর ফ্লাইট, ও চলে যাবে, আমরা সেলফি তুললাম, ফেসবুকে যোগ হলাম তারপর রুমে চলে গেলাম এবং ঘুম।
    *ঘুমানোর আগে আমি ভাবছিলাম মিস্টার দিল্লি আমাকে একবার জিজ্ঞেসও করে নি আমি কিছু খাবো কিনা, অন্তত একটা কোক! ও নিজে বার্গার আর কোক খেতে খেতে আমাকে নিয়ে হোটেলে ফিরলো।

    সকালে ঘুম থেকে উঠে রিসিপশনে গিয়ে খবর নিলাম অভিলাষ কি পোখারা চলে গেছে কিনা জানার জন্যে , হোটেলের লোক জানালো - হ্যাঁ, ভোর ৬টায় উনি হোটেল থেকে বের হয়ে গ্যাছেন, ভাবলাম যাক ছেলেটার শরীর নিশ্চয়ই আজকে ভালো তাই খুব ভোরে উঠে যেতে পেরেছে।

    ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে গিয়ে ফেসবুক খুলে দেখি অভিলাষ ইনবক্স করেছে। হাই ব্রো, মি টুডে ফিলিং গুড এন্ড আই এম অন মাই ওয়ে টু পোখারা, ইট ওয়াজ নাইস টু মিট টু ইউ, টেক কেয়ার এন্ড সি ইউ এগেইন।

    মেসেজটা পরে ভালো খারাপ দুই অনুভুতিই হলো আমার, আমিও আর মাত্র দুইদিন পর ঢাকা চলে আসবো।

    ব্রেকফাস্ট করে চা কফি খাচ্ছি এগারোটার মতো বাজে, খুব ফিটফাট অবস্থায় মিস্টার দিল্লি এসে হাজির, সেই একই ভঙ্গিমায় হাই হেলো বলে একটা চায়ের অর্ডার দিলো আর আমার উইড এর দিকে হাত বাড়ালো আমিও দিলাম, সিনহা বললো যে চেক আউট করে ফেলেছে কিছুক্ষনের মধ্যে বের হয়ে যাবে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে, এবং আমাকে রিকুয়েস্ট করলো ওকে একটা উইড দিতে সে এয়ারপোর্ট ঢোকার আগে পশুপতিনাথ মন্দির দর্শন করবে এবং ওখানে একটা উইড খাবে।
    আমি মোটেও অবাক হই নি, কারণ তিন চারদিন মিস্টার দিল্লির আচরণ এই রকমই ছিলো, আমিও একটা উইড দিলাম।
    যাওয়ার সময় আবার সেলফি তুললাম, আমাদের যোগাযোগ থাকবে, আমি দিল্লি গেলে যেন অবশ্যই ওর সাথে দেখা করি ইত্যাদি, সিনহা বিদায় হলো আমিও শেষ দুইদিন কি কি করবো ভাবছি, এরপর কিছু গিফট কিনবো বলে থামেল এলাকা চষে বেড়ালাম। বিকালে অভিলাষের মেসেজ পেলাম, পোখারা লেকের ছবি সহ। ও লিখেছে - ব্রো দিস ইজ পোখারা এন্ড লাইক এ হ্যাভেন, আই লাইকড দিস। আমারও মেসেজ পেয়ে খুব ভালো লাগলো।

    দুইদিন পর আমিও এয়ারপোর্টে আসলাম বাড়ী ফেরার জন্যে, প্লেনে উঠে গত এক সপ্তাহের সব মনে করলাম, খুব ভালো স্মৃতি নিয়ে যাচ্ছি, কত দেশের কত মানুষের সাথে দেখা হল কথা হল, আমি প্লেনে বসেই অভিলাষকে মেসেজ করলাম - ব্রো আই এম লিভিং নেপাল এন্ড নাও ইন প্লেন, আই হোপ উই উইল মিট এগেইন, কিপ ইন টাচ, বাই।

    ঢাকায় ফেরার দুইদিন পর অভিলাষ এর মেসেজ পেলাম কেরালা থেকে, আমিও রিপ্লাই দিলাম ঢাকা থেকে এবং ফেসবুক চেক করে দেখলাম মিস্টার দিল্লি মানে সিনহা আমাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ডিলিট করে দিয়েছে এমন কি ব্লক করে দিয়েছে আমি সার্চ দিয়ে আর পেলাম না, আজও বুঝি নাই কি কারণে ওটা করতে পারে! আমি অবাক হই নি, কারণ আমি জানি দক্ষিণ ভারতের (বিশেষ করে কেরালার) মানুষ আর উত্তরাঞ্চলের ভারতের মানুষ, মানুষ হিসেবে সমান না।

    অভিলাষের সাথে আজও আমার যোগাযোগ আছে, ফোনে কথা হয়, হোয়াটসআপ, মেসেঞ্জার ভাইবার সব মাধ্যমে আমরা কানেক্টেড, কয়দিন আগে কেরালায় যখন খুব বন্যা হলো আমাদের দেশেও তখন খুব বন্যা, এখন আমাদের এখানে ডেঙ্গুর বিপদ যাচ্ছে কেরালাও ডেঙ্গুর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে, এইসব দৈনন্দিন আলাপ আমাদের মধ্যে রেগুলার হয়, আমার অভিনয় নাকি ওর ভালো লাগে।

    ও এখন একটা বিজ্ঞাপন, ডকুফিল্ম বানানোর কোম্পানি দিয়েছে, ভালো ভালো কাজও পাচ্ছে, কয়দিন আগে বিয়ে করেছে এবং খুব ভালো আছে।

    আমিও কেরালা যাওয়ার প্ল্যান করি, ব্যস্ত জীবনের সিডিউলে কোনোদিন ছুটি পাবো এবং কেরালা যাবো, আমি আর অভিলাষ কেরালা ঘুরে বেড়াবো, কয়দিন আগে কলকাতা গিয়েছিলাম, ও আমার পোস্ট দেখে কেরালার কথা বললে আমি বললাম এবার হবে না ভাই, কেরালা আসলে অনেক দূর, হাতে দশ দিন সময় না থাকলে কেরালায় হবে না, এটা একটা স্বপ্ন আমার, পূরণ হয়ে যাবে আশা রাখি।

    সময় নষ্ট করে পড়ার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।

    আলম, ঢাকা
    সেপ্টেম্বর ০৪ ২০১৯

    ** ভুল বানানের জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • rhishin sinha | ২৮ অক্টোবর ২০২১ ২২:২৮500362
  • ইনিয়ে বিনিয়ে কি বোঝাতে চাইছেন ? উত্তর ভারতের মানুষেরা খারাপ ?
  • manimoy sengupta | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ১১:০৯500379
  • প্রচুর ধান ভানলেন। 
  • dc | 122.174.97.196 | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ১২:২৯500382
  • গল্পটা একটু বোরিং লাগলো তাও পুরোটা পড়ে ফেললাম। কারন লেখকের সাথে একমত, নর্থ ইন্ডিয়ার লোকজন ইন জেনারাল অতিমাত্রায় বিরক্তিকর আর অসহ্যরকম গন্ডীবদ্ধ হয়। তারওপর জাতপাত কুসংস্কার ইত্যাদি তো আছেই। আর সাউথ ইন্ডিয়ার লোকেরা ইন জেনারাল ভীষন ভদ্র, ওয়েল বিহেভড আর কনসিডারেট হয়। ফলে নর্থ ইন্ডিয়ার লোকদের দেখলেই আমার বিরক্তি লাগে আর সাউথ ইন্ডিয়ার লোকদের দেখলেই ভালো লাগে।  
  • প্রত্যয় ভুক্ত | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ১৩:৫৫500384
  • একদম‌ই ঠিক,এরকম অভিজ্ঞতা আমারো আছে,এবং এটা যথেষ্ট বিরক্তিকর প্রবণতার একটা অংশ,আপনি ত সার্কামস্ট্যান্সিয়াল এভিডেন্সের ভিত্তিতে লেখাটা লিখলেন,কিন্তু সাধারণভাবেও বলা যায়,উত্তর ভারতের মানুষদের মতো বোকা,গোঁয়ার,মূর্খ আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সাধারণত ভারতের অন্য অংশে দেখা যায়না,ওদের একটা অদ্ভুত মিথ্যা গর্ববোধ মতো আছে যে ওরা তথাকথিত "আর্য" ভাষাভাষী ইন্দো-আর্য যাযাবর জনগোষ্ঠীর বংশধর,যদিও দাবিটার ভিত্তি যথেষ্ট সন্দেহজনক।কিন্তু দক্ষিণ ভারতে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মানুষদের নিজস্ব জাত্যাভিমান,বা দোষত্রুটি থাকলেও ভদ্রতাবোধ ও আন্তরিকতা সহজাত গুণ।ভালো থাকবেন।
  • Sara Man | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ২২:৪৮500397
  • উত্তর ভারতের সব মানুষ লোভী আর স্বার্থপর নয়। পাহাড়ি মানুষেরা খুবই ভালো। আমার পঞ্জাবী বন্ধুরাও খুবই ভালো। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে প্রতিক্রিয়া দিন