এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • দীপ | 2402:3a80:1968:e2b2:5f4d:6b35:a54a:83a1 | ২৮ অক্টোবর ২০২১ ২২:১৯500361
  • বঙ্কিমের লেখাকে নির্দ্বিধায় মেনে নেবার কথা কখনোই ‌বলা হয়নি। উনিশ শতকের কোনো লেখকের লেখা‌ আজ যদি আমরা বিনা প্রশ্নে মেনে নিই, তবে তা আমাদের নিজস্ব চিন্তার অভাবকেই প্রতিপন্ন করে। কিন্তু বঙ্কিমকে নিয়ে যে ধরনের উক্তি করা হয়েছে, তা লেখক ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের মানসিক সংকীর্ণতাকেই প্রকাশ‌ করেছে।‌ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এঁরা কেউই বঙ্কিমের ইতিহাস সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি পড়েননি! না পড়েই পাণ্ডিত্য প্রদর্শনে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন।
    বঙ্কিমের অসামান্য গবেষণা গ্রন্থ "কৃষ্ণচরিত্র"।  মহাভারত, হরিবংশ, বিষ্ণুপুরাণ প্রভৃতি গ্রন্থে কৃষ্ণকে নিয়ে যে অসংখ্য অতিরঞ্জিত, অতিপ্রাকৃত, অলৌকিক ঘটনা বর্ণিত হয়েছে; সেখান‌ থেকে তিনি ঐতিহাসিক কৃষ্ণকে খুঁজে বের করতে চেয়েছেন। পরবর্তী গবেষকরা বঙ্কিমকে কখনোই বিনা প্রশ্নে মেনে নেননি, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর মতকে খণ্ডন করেছেন। কিন্তু তাঁরা কেউই বঙ্কিমকে নিয়ে স্পর্ধিত উক্তি করেননি, বরং মেনে নিয়েছেন পৌরাণিক কাহিনীর মধ্য থেকে ঐতিহাসিক সত্য উদঘাটনের সূচনা বঙ্কিমের হাত দিয়েই হয়েছে। বাস্তবে শিক্ষা মানুষকে বিনয়ী করে, অশিক্ষিত ঔদ্ধত্য‌ প্রদর্শন করে। কারণ সে ভালোভাবেই জানে সে নিজে কত অজ্ঞ! তাই ঔদ্ধত্য দেখিয়ে নিজের অজ্ঞতাকে লুকাতে চায়! 
     
    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, একাধিক পাশ্চাত্য গবেষক কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের সময়সীমা খ্রিপূ ১২০০-১৫০০ নির্ধারিত করেছেন। তবে তাঁরা বললে বেদবাক্য আর বঙ্কিম বললে চাড্ডি! অসামান্য প্রতিভা !
     
     
  • এলেবেলে | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০০:২৯500370
  • বেশ, তাহলে আগে lazy analysis নিয়ে দু'কথা বলে নিই। প্রথমত দুর্গাপুজোকে কোথাও এক ও একমাত্র ঔপনিবেশিকতার সঙ্গে জড়িত বলা হয়নি। বলা হয়েছে এর প্রথম বাড়বাড়ন্ত এবং দেদার হুল্লোড় ও মোচ্ছবের সূচনা পলাশিতে জয়লাভের পরে। নবকেষ্টর পুজো পরিচিতই ছিল 'কোম্পানির পুজো' হিসেবে এবং ১৮৪০ সালে দশ নম্বরি আইন জারি করে এতে শেষ পর্যন্ত রাশ টানার আগে পর্যন্ত, প্রায় একশো বছর ধরে সেই রেওয়াজ অবিকৃত থাকে। কাজেই ঔপনিবেশিকতার সাইড এফেক্টকে এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
     
    ১৯৯০-৯১ নাগাদ আমি প্রথম কলকাতায় দুর্গাপুজো দেখি। পিসির বাড়ি ছিল খাস উত্তর কলকাতার গিরিশ পার্কে। পিসতুতো ভাইয়ের সঙ্গে ওই বাগবাজার, শোভাবাজার, সিমলা ব্যায়াম সমিতি, কলেজ স্কোয়ার হয়ে সম্ভবত বৌবাজারে আমাদের অভিযান শেষ হয়। দক্ষিণের কথা বললে ভাইটি এমন প্রবল নাক সিঁটকেছিল যে আর সেমুখো হইনি। তো সেই ৯১ সালেও থিম পুজো, আর্টের ঠাকুর, আরও হরেক কিসিমের 'এই এক নতুন' চোখে পড়েনি।
     
    বহুদিন আগে পুজোর একমাত্র চাহিদাপূরণের ক্ষেত্র বাটার নতুন জুতো ছিল বটে, কিন্তু কোনও কালেই সেটা নিখাদ কর্পোরেট্গন্ধী ছিল না। পুজোসংখ্যা অবশ্যই ছিল (শরৎকালেই কেন যে বাঙালি লেখকদের এত লেখা 'পেত' তা ততটা বুঝতাম না, কিন্তু সেই বদৌলত কিছু ভালো সাহিত্য পড়ার সুযোগ হয়) কিন্তু পুজোর খাওয়া, পুজোর বেড়ানো, পুজোর... এক্কেবারে নো নো ছিল।
     
    এখান থেকে দুর্গাপুজো পুরোদস্তুর কর্পোরেটপোষ্য হয়ে ওঠে এশিয়ান পেন্টস-এর হাত ধরে। এবং সেটা নিয়ে পুরনো কংগ্রেসি বা নব্য তৃণমূলীদের কোনও ল্যালাপনা ছিল না। শিয়ালদার কাছাকাছি হওয়ার সুবাদে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার-মহম্মদ আলি পার্ক আর একডালিয়া চিরকালই ভিড় টানত, এখনও টানে। আগেও বনগা লোকাল আর ক্যানিং লোকালের যাত্রীরাই ছিলেন কলকাতার দুর্গাপুজোতে ভিড় বাড়ানোর প্রধানতম সম্বল (সম্ভবত এখনও তাই)।
     
    কিন্তু এশিয়ান পেন্টস-এর যে ক্যাচলাইন 'শুদ্ধ শুচি সুস্থ রুচি' তার প্রথম তিনটে শব্দে কেউ যদি ভিক্টোরিয়ান মরালিটির তীব্র আঁশটে গন্ধ পান, তাহলে সেটাকে কি ঔপনিবেশিকতার তত্ত্বের মোড়কে হাজির করা বলা হবে? ঠিক জানি না। কিন্তু ভাবটা স্পষ্ট ছিল - বেহুদা বেলেল্লাপনা নয়, সেসব করো-টরো কিন্তু সামান্য গা বাঁচিয়ে বাপু। মানে একটু সিল্পো-সিল্পো ছোঁয়া আনো বাওয়াসকল। মাইকে সানাই বাজাও, পরিবেশটাকে শুদ্ধতর করো। বেশ যেন একটা শুচিশুভ্র ভাব থাকে তাতে। ভাবটাই আসল রাজা, আমি রাজা নই।
     
    এর পরে পরেই টিভির হরেকরকম্বা চ্যানেল যেখানে দিনরাত্তির চোখ ও কানের মাথা খেয়ে দুর্গাপুজোর ভিড়ের লাইভ টেলিকাস্ট; শপিং মলে কেনাকাটা, না পোষালে অ্যামাজন বা ফ্লিপকার্ট কিংবা আরও যা যা আছে-টাছে; শ্রেষ্ঠ ইদুঁর-সেরা প্যাঁচা হওয়ার জন্য হরেক কোম্পানির হরেক কিসিমের পুরস্কারের মাল; অতঃপর খুঁটিপুজো এবং সবশেষে সবার চাইতে ভালো মহালয়ায় উদ্বোধন ও কার্নিভালে বিসর্জন। এই টাইম ফ্রেমে তিনো ঠিকঠাক ১০ বছর। বাকি বছরগুলোর হিসেব কীভাবে মিলিবে? হিসাব মিলাইতে গেলে কী করিতে হইবে? কোথা হইতে কী হইয়া গেল-র দস্যু মোহন ছাড়া এই অসাধ্যসাধন কে করিবে?
     
    আহা, উতলা হবেন না। মেলাবেন, তিনি মেলাবেন।
     
     
  • lcm | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০১:২৭500371
  • আগে থিম পূজো তেমন হত না, কিন্তু, যেমন ধরুন দক্ষিণ কলকাতায় বকুলবাগান এর পুজোর কথা :
    - ১৯৭৫ এ নীরদ মজুমদার
    - ১৯৭৬ এ রথীন মৈত্র
    - ১৯৭৭ এ পরিতোষ সেন
    - ১৯৭৮ এ রামানন্দ বন্দোপাধ্যায়
    - ১৯৮২ তে অনন্ত মালাকার
    - ১৯৯০ এ মীরা মুখার্জি
    - ১৯৯১ তে বিকাশ ভট্টাচার্য
    - ১৯৯২ তে ঈশা মহম্মদ
    - ২০১৪ তে পরেশ মাইতি
    এনারা বকুলবাগানের পুজোর প্রতিমা করেছেন (ঐ পুজোর ফেসবুক পাতা থেকে আরও তথ্য পাওয়া যাবে)। আরও দু একটা পুজোতে নামী শিল্পীরা কাজ করতেন। সেগুলোতে কতটা জাকজমক হল (খুব জাঁকজমকপূর্ণ হতও না) বা কত খরচা হল তার থেকেও মানুষের আগ্রহ ছিল নামী শিল্পীদের কাজ পুজোর ছুতোয় চাক্ষুষ দেখতে পাওয়া।

    আমার ধারণা এই সর্বব্যাপী থিম পুজোর ব্যাপারটায় রমরমা আসে নব্বুইএর দশকের মাঝামাঝি বা শেষের দিক থেকে, যখন প্রচুর টাকা আসে, প্রচুর বলতে অনেক, অনেক টাকা।

    যখন থেকে, ধীরে ধীরে, সাউথ পয়েন্ট বা সেন্ট জেভিয়ার্স বা হিন্দু স্কুল নয়, দিল্লি পাবলিক স্কুল হয়ে উঠতে থাকে কলকাতার এলিট স্কুল।

    যখন থেকে দু চাকার বাজাজ স্কুটার নয়, চার চাকার গাড়ি হয়ে উঠতে থাকে মধ্যবিত্তের অ্যাফোর্ডেবেল বাহন।

    শহুরে মধ্যবিত্তের উইকেন্ডের এন্টারটেইনমেন্ট হয়ে ওঠে - হলের ছোট কাঠের চেয়ারে বসে সিনেমা দেখে বেরিয়ে পাশের দোকান থেকে চপ-কাটলেট খেয়ে বাড়ি ফেরা নয়, মাল্টিপ্লেক্সে আরামদায়ক চেয়ারে বসে ভুট্টাভাজা আর কোকাকোলা খেতে খেতে সিনেমা দেখে বেরিয়ে ম্যাকডি বা কেএফসি থেকে খেয়ে বাড়ি ফেরা।

    এই সব বদলের সঙ্গে সঙ্গে আসতে থাকে শহরে বারোয়াড়ি পুজোর আকাশছোঁয়া বাজেট এবং থিমপুজোর প্রভাব প্রতিপত্তি।

    কিন্তু এটা হবেই, সব কিছু বদলাবে আর পুজো আটকে থাকবে সেটা হবে না।

    দেখবেন এই বদল কিন্তু বারোয়াড়ি পুজোতেই বেশি, বাড়ির পুজোতে থিম কনসেপ্ট তেমন নেই, কারণ তাদের বাজেট ইনফ্লেশনের অনুপাতে বেড়েছে তার বেশি নয়।

    তাই ঠিক ঔপনিবেশিকতার প্রভাব বলব না, বলব নব্বুই এর দশকের পর থেকে খোলা অর্থনীতির প্রভাব, যাকে বিশ্বায়ন বলা হচ্চে, বা আরও যেসব টার্ম আছে।
     
  • দীপ | 2402:3a80:1968:e2b2:5f4d:6b35:a54a:83a1 | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০১:৪১500372
  • আর যোগেশচন্দ্র অত্যন্ত তথ্যনিষ্ঠ ও বিস্তারিত ভাবে দুর্গাপূজার উৎস ও বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা যোগেশচন্দ্রকে টিয়াপাখি নিয়ে বসা জ্যোতিষীরূপে দেখাতে ইচ্ছুক- তাঁরা নিজেরা কি এ বিষয়ে কোনো গবেষণা করেছেন? দেখাতে পারবেন? 
    গবেষণায় যুক্তি দিয়ে অপরের মত খণ্ডন করতে হয়, ব্যক্তিগত গালাগালি চলেনা! আশা করব যোগেশচন্দ্রের মত যুক্তি দিয়ে খণ্ডন করবেন!  নাহলে নিজেদেরকেই রাস্তার মোড়ের জ্যোতিষীরূপে প্রতিপন্ন করবেন!
  • দীপ | 2402:3a80:1968:e2b2:5f4d:6b35:a54a:83a1 | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ০১:৫০500373
  • রমেশ শাস্ত্রী কংসনারায়ণকে কলির অশ্বমেধযজ্ঞরূপে দুর্গাপূজা করতে বলেছিলেন। তখন কোথায় ব্রিটিশ শাসন? কোথায় ঔপনিবেশিকতা? সব জায়গায় এক‌ই গরুর রচনা লিখলে চলবে?
  • Sara Man | ২৯ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৫৭500399
  • আমাদের ছোটোবেলায় বাড়িতে বাড়িতে নারকেল কোরা আর চিনির গুঁড়ো পাক দিয়ে, ছাঁচে ফেলে একরকম সন্দেশ বানানো হতো। নাম ছিল নারকেল ছাপা, বা ছাপা সন্দেশ। তাতে কোনো দুধ বা ছানা থাকতোনা। সেই মিষ্টান্নকেই বোধ করি নারকেল ছাবা বলা হয়েছে। 
  • হেহে হেহে | 172.96.162.98 | ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০১:০৭500405
  • দীপ ছাগল আর এলবো মিলে হেব্বি খোরাক!
  • :) | 2405:8100:8000:5ca1::57:a863 | ৩০ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৪৯500413
  • দীপ, আপনি যতই রেফারেন্স দিন, জ্ঞানচর্চায় সাহেবদের স্ট্যাম্প না পড়লে অনেকেই পাত্তা দেবে না। আমাদের আপব্রিঙিঙেই এই সমস্যা আছে। রবীন্দ্রনাথ তাই বেঁচে গেছেন, কিন্তু অন্যদের তো নোবেল নেই, অতএব টিয়াপাখি।
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 49.37.39.194 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০০:২৪500474
  • এলেবেলে | ২৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৫১ 
    আমার যেটা ​​​কয়টা কথা ​​​​সেদিন বলা হয় নি, সেটা কয়েকটা কথাঃ 
     
    ১ - আপনি সাহিত্যের ছাত্র, রিসেপশন স্টাডিজ যে লিটেরারি ক্রিটিসিজম এর একটা পার্ট সেটা আপনি জানেন। মানব বাবু রা যখন অনুবাদ আর তুলনামূলক সাহিত্যের প্র‌্যাকটিকালি সিলেবাস লিখছিলেন, তখন ওনারা ইংরেজি সাহিত্য আর বাংলা সাহিত্যের যে পেডাগোজিকাল টেন্ডেন্সি সেটার থেকে সরে আসতে চেয়েছিলেন। এটা ওনাদের আগের প্রজন্মে স্বয়ং বুদ্ধদেব বসু,  সুধীন দত্ত মহাশয় রা করছিলেন ইংরেজি সাহিত্যের যে আইরিশ, ব্রিটিশ লেখক দের, তাদের এনগেজমেন্ট গুলো জানা সেখান থেকে সরে এসে কনটিনেটাল সাহিত্য আর আমেরিকান সাহিত্য পড়া আর ছেলেমেয়েদের শেখানো।
    ওয়েস্টাল ইনটেলেকচুয়াল ক্যানোন বলে যেটা হ্যারল্ড ব্লুম রা বলতেন, সেটার উপরে এঁরা পরাধীন দেশে জন্মানো লোক এঁদের খুব বেশি শ্রদ্ধাও ছিল না, আবার অস্বীকার করার উপায় ও ছিল না, মডার্নিটির নান নিরীক্ষার aকারণে।
     
    ওঁদের ছাত্র হিসেবে মানব বাবু, ছোটোদের জুল ভের্ন দিয়েই বোধ হয় শুরু করেছিলেন, তার পরে একদিকে যুদ্ধ পরবর্তী পূর্ব ইউরোপ অন্য দিকে লাতিন আমেরিকা ধরেন ইত্যাদি। একটা নন আলাইন্ড মুভমেন্ট এর ক্লাইমেট , বাংলাদেশের মুক্তির ক্লাইমেট ও ছিল, পাবলিশার পেতেন। আমি ইলিয়াসের ইনটারভিউ এ পড়েছি ওনারা ছাত্রাবস্থায়, ইজিলি মিড সিকসিটিজ , বোরহেস এর লেখা পড়েছেন ঢাকায় বসে। বাংলা অনুবাদ পড়েছেন কিন জানি না। 
     
    মানব বাবুর কাছ থেকে উপহার পাওয়া বা তখন কেনা যে বই গুলো ওনার ছাত্র ছাত্রী বন্ধু বান্ধব পরিবারের কাছে দেখেছি  (কেনার পয়সা তখন ছিল না) তার ভূমিকা গুলোয় যে কথা বার্তা আছে, সেটা আপনি যা বলেছেন তার সঙ্গে মেলে। আপনাদের লেখাপড়াটাও আমার মতই সেই কনটেন্ট টা ধরে। সুতরাং ৮ বা ৯ এর দশকে যদি দাঁড়িয়ে থাকতাম,  আমি হয়তো আপনার কোন বক্তব্যে কোন আপত্তি করতাম না। এঁদের  হাত ধরেই আমরা অন্য লেখা পড়ি। এবং মানববাবু রা যেট ভূমিকায় লিখতেন না, কিন্তু পড়তে দিতেন, এবং পড়তে বলতেন, সেগুলোর প্রতি আমার নজর যায়। তাতে যেটা আমার মত শান্তিনিকেতনী বেম্মোর যেটা প্রথম শকিং লাগে সেটা হল, নানা গোত্রের ফ্রিভোলিটি আর সেকসুয়াল ইনুয়েন্ডো র মজার ব্যবহার। এবং বোরহেস , কোর্তাজার এর ইউরোপীয় অর্থে আর্বানিটি, আর জোর্জে আমাদু ম্যানুয়েল পুইগ এবং স্বয়ং বোরহেস এর একটা শহরের মধ্যে পাড়া বা কমিউনিটি ধরে বর্ণনা। যেটার সঙ্গে বড় লিটেরারি আদর্শের খুব অবভিয়াস সম্পর্কে কিসু নাই। এর মধ্যে পুইগ ই একটু জেন্ডার ফ্লেকসিবল, বাকিরা প্রায়শ প্রবল মেল ন্যারেটিভ। 
     
    কারণটা আর কিছুই না, লাতিন আমেরিকা তো আমাদের মত সাধু সন্ত দরবেশে ভরা জীবন, প্লাস আফ্রিকান, প্লাস ওখানকার আদিকাসী দেবদেবী সবাই কঠিন জাগ্রত। সেই মার্কেজের কথা আছে, কনজারভেটিভ আর লিবেরাল দের মধ্যে পার্থক্য হল, একদল দিনে আরেকদল রাতে চার্চে যায় :-)))))))))))))))))) হাহাহাহাহা :-)))))))))))))))
    তো সেখানকার মরালিটির চাপ সামলাতে ওনাদের নানা কথা বলতে হয়েছে, এবং ওঁরা এত খচ্চর টাইপের ছিলেন, অসম্ভব সিরিয়াস ন্যাশনালিস্ট ট্র‌্যাডিশনের স্টাইল নকল করে অসম্ভব সেন্টিমেন্টাল কিছু হয়তো লিখলেন, তার মধ্যে এমন একট প্যান্ট খোলা কমেন্ট করলেন, যে আপনি হাসবেন না কাঁদবেন ভেবে পাবেন না। মানে ধরুন ফরাসী ইমরলালিটি তে যেমন একটা বেদনাহত প্যাসন ব্যাপার আছে, সেসবের বালাই ও নাই। সেটাই পরে আফ্রিকা, নর্থ আফ্রিকান মুসলমান রাইটার রাও অনেকে অ্যাডোপ্ট করেন অথবা কনজারভেটিজম থেকে ফাঁক ফোকর খোঁজার জন্য ব্যবহার করেন ইত্যাদি। 
    কিন্তু ওদের এই বীট বা হাংরি দের মত এগজিবিশনিজম তেমন ছিল না, বীট দের না হয় তবু একটা নিজের দেশ আবিষ্কার, যুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপ আবিষ্কার এর ব্যাপার ছিল, হাংরি দের সেসবের বালাই ছিল না, তবে অল্প বয়সে যা হয়, সব ই নতুন লাগতো। মানে আমরা যখন পড়তে শিখেছি, ওঁরা নিজেরা বুড়ো, তাও। 
     
    আমার ধারণা মানব বাবু শেষ জীবনাটায় অসুস্থ না হলে, স্প্যানিশ ভাষা ও পোর্তুগীজ র রাজনৈতিক ক্ষমতার ভরকেন্দ্র 
    নতুন করে ইউরোপে ফিরে এসেছে ,আর লাতিন আমেরিকার নিজের লেখা যে গ্লোবালাইজেশন পরবর্তী সময়ে একাধারে ক্ষমতা আর এক্সপেরিমেন্ট দুটোর জায়গাই হয়ে উঠেছে শহর , তার অবজেকটিভ কার্যকারণ নিয়ে লিখতেন। 
     
    আমেরিকার কৃষঞাংগ দের রচনা আলাদা করে মন দিয়ে পড়তে গিয়ে, আমার যেটা রিভিলেশন, সেটা হল, ওদের একটা পর্যায় গেছে আফ্রিকান রুটে ফেরার আকুতি, তারপরে গেছে, আমেরিকান কালার্ড হেরিটেজ টাই নতুন করে ক্লেইম করার চেষ্টা করা , আর  ক্রিশ্চিয়ানিটি বা ইসলামের নানা শিক্ষা কি ভাবে ইনার সিটি লাইফ কে প্রভাবিত করে সেটা দেখার একটা বিষয়। তবে আমেরিকায় বেশি ইমিগ্রেশন হয়েছে বলে, ব্ল্যাক এক্সপেরিয়েন্স টা শুধু স্লেভারি বা প্রি ইন্টিগ্রেশন সাউথ এর এক্সপেরিয়েন্স না, তাতে হিস্পানিক এক্সপেরিয়েন্স ও এসে মিশেছে। মজাটা হল আমেরিকান আর্বানিটির এই চেহারা একাধারে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এর আধার, অন্যদিকে নিজেদের দেশের থেকে পালানোর মত একমাত্র জায়গা হয়ে উঠেছে, সেইটেই আমেরিকান নিরীক্ষামূলক সাহিত্যে আপাতত মূল কনফ্লিক্ট। আমি পাশাপাশি রেখে রাল্ফ এলিসন, জেমস বালডউইন, আর সিস্টার সোলজা পড়েছিলাম, পুনরায় ভাষাবন্ধনের জন্য। নবারুণ তদ্দিনে চলে গেছেন। তো আমার খুব অবাক লেগেছিল, ১৯৫০স er রাল্ফ এলিসন যেমন একটা উত্তরণ এর কথ , যাত্রার কথা লিখছেন, বাল্ডউইন (সময়টা ৫০-৭০ র দশক) কখনো প্রবল চার্চের বিশ্বাসী, কখনো সম্পূর্ণ একা, সমকামী একটা সেন্সিটিভ মানুষ , কখনো আমেরিকান সাহিত্যের ইতিহাসের প্রধান বেত্তা , সব দিক থেকে দীর্ণ একট মানুষ, কবিতার মত লেখা, অন্যদিকে সিস্টার সোলজা (১৯৯০স ক্যালিফোর্নিয়া) , শুধু ই ক্রোধ এবং রাতের রাস্তায় আফ্রিকান যুবরাজ সুপারম্যানের অপেক্ষা ইত্যাদি। এবং এঁদের লেখায় বরঞ্চ মজা , নানা গোত্রের ট্রান্সগ্রেসন, মজা ইয়ার্কি একটু ঠারে ঠোরে আসছে, যেটা কিন্তু সুরে বা গানে , বা ব্ল্যাক কমেডিয়ান দের কমেডিতে মাঝে মাঝে চলেই আসছে। মানে গদ্যের থেকে ও গুলো বেশি ডিনামিক ফর্ম ওখানে। ওখানে আর্বানিটি, একটু দেরিতে হলেও ফ্রিব্ভোলিটি কে ইনুয়েন্ডো কে ভাষা হিসেবে ব্যবহার করছে, কিন্তু আর কেউ যেটা করেনি, সেটাও করছে, সেটা হল বিচিত্র মেটেরিয়াল অ্যাসপিরেশন বা ব্লিং, সেটা আমেরিকা এতদিন যে বড়াই করে এসেছে, যে ভাই আমার এখানে আর্থিক সাফল্য সবাই পেতে পারে, এবং সেটাই সব, একমাত্র মাপকাঠি, যেটাকে জিউইশ বা ফোক ইন্টেলেকচুয়াল রা একরকম ভাবে রিজেক্ট করেছ্লেন, ব্ল্যাক কালচারাল প্রোডাকশন এর এক ধরণের ইনডাস্ট্রিয়ালাইজেশন হবার পরে ঐ মেটেরিয়াল আসপিরেশন টাই একটা ল্যাঙ্গোয়েজ হয়ে যাচ্ছে, ইত্যাদি। পরে সেটা আবার নানা ফর্মে সাদা ওয়ার্কিং ক্লাস কালচারের অ্যাসপিরেশনাল মডেল হয়ে যাচ্ছে। কালচার কে মাস কনজাম্পশনের বস্তু করার কথা ফ্র‌্যাংক ফুর্ট স্কুল রা বা সি এল আর জেম্স রা বলেছিলেন, ফোনোগ্রাফ বা লং প্লেয়িং বা সিনেমা আর জার্মানি বা অন্যত্র প্রোপাগান্ডা ফিল্ম তৈরী হবার পরে। সেটা ১৯৭০ er দশকে রাস্তাফারিয়ান      বব মার্লে দের সময় একরকম ভাবে হয়েছিল, কিন্তু তাতে একটা বাউল ভাব ছিল, সেটা আর ৯০ দশক পররবর্তী তে নেই, এবং সেটার মধ্যে শোষিত মানুষের সংস্কৃতির অংশ হওয়া সত্তএও প্রায়শ অসম্ভব রিগ্রেসিভ বিষয় কিছু আছে, যেটা আবার ভেতর থেকেই একটু একটু করে ইম্প্লোড করছে। ইত্যাদি। 
     
    শেষ দিকটা এই জন্যেই বললাম, আপনার এই প্যারাটার জন্য, 
     
    "
    বাকি রইল আর্বানিটি-কার্নিভাল-সর্বজনীন ইত্যাদি প্রভৃতি। দেখুন কোনও তত্ত্বের মোড়কে ঢেকেঢুকে না রেখে মফস্‌সলের বাসিন্দা হিসেবে একটা সোজা কথা বলতে চাই। আমি যেমন বিজেপির হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান অ্যাজেন্ডার ঘোর বিরোধী, ঠিক তেমনই বাঙালি = কলকাতা = হিন্দু = দুর্গাপুজো = শ্রেষ্ঠ উৎসব সমীকরণের যে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, তারও চূড়ান্ত বিরোধী। এখানে আর্বানিটি বনাম গ্রামীণ নেই, চরম এককেন্দ্রিকতা আছে বলে আমি নিজে মনে করি। একটি মহানগরকে প্রায় পুরো অকেজো করে দিয়ে যে স্টেট স্পনসর্ড বেলেল্লাপনা চলে, সেটার সঙ্গে আর যাই হোক আর্বানিটির কোনও সম্পক্কো নেই।
    "
     
    আপনাকে মফস্সল er ইনটেলেকচুয়াল হিসেবেই, মধ্যবিত্ত অ্যাসপিরেশন কে বুঝতে গেলে, আর্বান হিস্টোরির নানা কাজ কর্ম দেখতে হবে। ইতিহাস বা সংস্কৃতিচর্চা দুদিক দিয়েই। কনটেম্পোরারি কে থিয়োরাইজ করা এবং মফস্স্বল , বর্ধিষ্ঞ্য গ্রাম অর্থে কসবা, বনফুল অর্থে টৌন সব কিছুকেই ব্যাখ্যা করতে হবে, কিসে কি হয়। থিয়োরীর চর্চার একটা নাভেল ওয়াচিং এর বিষয় আছে, নিজের কালচারাল পজিশন কে ব্যাখ্যা আপনি শুধু দূরাঅগত ইতিহাস চর্চা দিয়ে ম্যানেজ করতে পারবেন না, মানে আর্বান হিস্টরি , ত্রয়োদশ থেকে অশ্টাদশ শতাব্দী অব্দি বাংলা, আসাম আর আশে পাশে, ইত্যাদি একদিন না একদিন আপনাকে অ্যাড্রেস করতে হবে। দেখুন নীহার রঞ্জন কিন্তু করেছিলেন। সমস্যাটা হল, স্বাধীনতার পরের মারক্সবাদী বা প্রগতিশীল ইন্স্টিটিউশনাল ইতিহাস চর্চা কে গাল দিতে গিয়ে সাব অল্টার্ন আর পোস্ট কলোনিয়াল রা শুধু ই কলোনিয়াল পিরিয়ডে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেন, এইটা থেকে আপনাদের বেরোতে হবে। আপনাদের মানে সাবজেক্ট টাকে সিরিয়াস এনগেজমেন্ট এ আনতে হবে। ভেবে দেখবেন, এবং সেটা শুধু লিটল ম্যাগের আউটসাইডার হিসেবে নয়, ইন্স্টিটিউশনাল চর্চা টা কে রেখে। আর এস এস যেমন শুধুই প্রতিষ্ঠান দখলে আগ্রহী, সেটা করলে আলাদা কথা। তার তো শুধুই নেশন থ্যাওরি, যে কারণে তার কাছে সমস্ত ডিবেট ই শিক্ষিত হিন্দুর নেশন থিয়োরী র আভ্যন্তরীন বিতর্ক, এতে দলিত রা কো অপটেড মাত্র। ইত্যাদি , তো কৌতুহল , ছোটো শহরের এখনকার চেহারা বা মন টা এখানে কি করে এলো, সেটা তো দেখতে হবে। 
    আমি একটা বড় কাজে হাত দিয়েছিলাম, এসব কল্পনা করে, হোয়াট হ্যাপেন্ড আফটার তারাশংকর ইন বীরভূম। কারণ সেখানেও অন্তর্মুখী এসেনশিয়ালিজম, স্থান প্রতিনিধিত্ত্বের চক্করে আর শাসন যন্ত্রের সঙ্গে রেজিম অনুযাঅয়ী সম্পর্ক স্থাপনে, স্থান মাহাত্ম্যের বারোটা বেজেছে। কিন্তু হ্যাকমে কুলোয় নি বলে শেষ করতে পারিনি।   
     
    সি এল আর জেমস এর কথাটা একটু বেশি আউট অফ কনটেক্সট শোনালেও বলেছিলাম এই কারণে, আপনার কাজে লাগতে পারে বলে। মার্কসিস্ট এস্থেটিক্স, গ্রামশি, ফ্র‌্যাংকফুর্ট স্কুল, সুর রিয়ালিজম, সোশালিস্ট রিয়ালিজম, পোস্ট স্ট্রাকচারালিজম ইত্যাদি যে তত্ত্বায়নের ঐতিহ্যের লাইন , তাতে সি এল আর জেম্স একটি কান্ড করছেন। খেলা কে  বলছেন কালচারাল প্রোডাকশন। টেস্ট ক্রিকেট ইত্যাদি নিয়ে লিখছেন, আমি একটা লাইন ভুলতে পারি না, প্রথমবার ত্রিনিদাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকতে থাকতেই ইংল্যান্ডে আসার সময়্কার অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছেন, 
    দ্য ব্রিটিশ ইনটেলেকচুয়াল ওয়াজ কামিং টু ব্রিটেন ফর দ্যা ফার্স্ট টাইম। এবং নানা ভাবে কলোনাইজ্ড কালো বা ইন্ডিয়ান লোকেদের মধ্যেই বিচিত্র প্রেসবিটেরিয়ান রক্ষনশীলতার কথা বলছেন। যেটা পড়লে মনে হবে , আপনি ব্রাহ্মো দের ইতিহাস পড়ছেন ঃ-)))))))))))))হাহাহাহাহা  আধুনিক স্পোর্ট্স স্টাডিজ বিষয়টা বিটল্স এর গান না হলে, আর সি এল আর জেম্স না লিখলে শুধু কার্ডাস দিয়ে গড়ে উঠতো ই না। অন্তত ইউরোপে। 
     
     আরেকটা কান্ড করছেন, হাইতির বিপ্লব ইত্যাদির কথা , ব্ল্যাক জ্যাবিন দের লিখে একটা লিনিয়ারিটি কে চ্যালেঞ্জ করছেন, সেটা হল ফরাসী বিপ্লব -- ১৮৪৮ এর জার্মানির বিপ্লব প্রচেষ্টা - পারী কমিউন -- এবং ১৯১৭ রাশিয়া --সেখান থেকেই ১৯৪৯ চীন ইত্যাদির লিনিয়ারিটি। উনি ফরাসী বিপ্লবের পরবর্তী সেখানকার রিপাবলিকান পলিটিক্স এর নানা মানুষ বিরোধী প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা হিসেবেই লিখেছিলেন কিনা জানা নেই, কিন্তু এইটি একেবারে মাস্টার পিস আপনার মার্ক্সিস্ট পোস্ট কলোনিয়াল থিয়োরী তে। 
     
    আমাদের দেশের বামপন্থী আন্দোলন কে এসব পড়তে বলার কোন মানে হয় না। কিন্তু আপনি তো মহায় ছাপোষা সেল্ফ টট ঐতিহাসিক, তাই আপনাকে বলা হল। 
     
    সৈকত (দ্বিতীয়)  - আমি একমত কনটেম্পোরারি কে নিজেরাই অ্যাড্রেস করতে হবে, থিয়োরাইজ ও করতে হবে। বড় করেই করতে হবে। আমার তো মনে হয় এই যে নিউটাউনে সেভেন ওয়ান্ডার্স বা বিগ বেন ইত্যাদি বসেছে, বুর্জ খলিফাও হল, এইটা একট বিচিত্র বাঙালি ব্লিং, এর থিয়োরাইজেশন জরুরী। তুমি যদি ল্যাখো , আমি সাহায্য করতে রাজি আছি। 
     
     
  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 49.37.39.194 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০০:৩৩500475
  • * ব্ল্যাক জ্যাকোবিন  
    লাতিন আমেরিকায় ফরাসী বিপ্লবের অভিঘাত নিয়ে ফুয়েন্তেস এর একটা উপন্যাস অবশ্য আছে, দ্য ক্যাম্পেইন বলে, সেটা বুয়েনাস এয়ারেস এর গল্প, তাতে কালো লোক বিশেষ কেউ নাই, পাগলাটে জেসুইট রা আছে আর সেটা সি এল আর জেম্স এর অনেক পরে, তার প্রতিপাদ্য খানিকটা এক ধরণের হলেও।  
  • পানমশালা | 2405:8100:8000:5ca1::91:59cb | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০১:০১500477
  • দুগ্গাপুজোর মধ্যে খানিক লাতিন সাহিত্য গুঁজে দিল। এনাকে নিয়ে হয়েছে মুশকিল, সব পদেই সেই এক পানমশালা চালিয়ে যাচ্ছে।
  • সিএস | 49.37.32.64 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০২:২৭500478
  • এলেবেলে এসিয়ান পেন্ট্স শারদ সম্মানের কথা তুলেছিলেন; তো উইকি থেকে সেই পুরস্কার সম্বন্ধে যা জানলাম, সে থেকে সিদ্ধান্তে এলাম যে আমার আগের পোস্টে কলকাতার পুজো ছড়িয়ে যাওয়ার যে প্রসঙ্গ এনেছিলাম তার সাথে ঐ পুরস্কার প্রাপকদের একটা মিল আছে।

    পুরস্কারটি চালু হয় ১৯৮৫ তে, তখন সেরা পুজো বলে তিনটি পুজোর পুরস্কার দেওয়া হত, তাদের মধ্যে কে প্রথম বা দ্বিতীয় সেসব না করে। আলাদা করে প্যান্ডেল বা আলো বা প্রতিমা ইত্যাদিকে পুরস্কার না দিয়ে এই সব মিলিয়ে পুজোগুলোকে পুরস্কারের জন্য বেছে নেওয়া হত। ১৯৯৪ তে একটা বদল হয়, যখন বছরের সেরা আবিষ্কার বা অনামী পুজোকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ২০০০ নাগাদ আরো বদল আসে যখন প্রতিমাশিল্পী বা মন্ডপ ইত্যাদি নিয়ে আলাদা পুরস্কার চালু হয়, থীমপুজোর চালু হওয়া প্রধাণতঃ এই সময় থেকেই, সনাতন দিন্দার একাধিকবার পুরস্কার পাওয়া ২০০০ এর পরেই।

    তো দেখা যায় ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৪ অবধি যারা পুরস্কার পাচ্ছে সেগুলো মোটামুটি কলকাতার পুরোন বড় ও জনপ্রিয় পুজো, যেমন বাগবাজার বা ম্যাডক্স স্কোয়ার, অথবা আদি বালিগঞ্জ ও মুদিয়ালি। কিন্তু '৯৪ র পর থেকে এইসব পুজো আর বিশেষ পুরস্কার পায়না, তার বদলে নতুন নাম আসে, যাদের মধ্যে অনেকগুলিই পুরোন পুজো কিন্তু ততখানি 'নামী' ছিল না, ধরুন হাতিবাগানের পুজো বা আহিরিটোলার। একই সাথে বেহালা - বড়িশা- বোসপুকুর বা তেলেঙ্গাবাগান - করবাগানের পুজো পুরস্কার পেতে থাকে। তো '৯০ র মাঝখান থেকে কিছু নতুন পুজো যে পুরস্কৃত হতে থাকে তার দুটি কারণ থাকতে পারে; এক, এশিয়ান পেন্টস একই পুজোকে পুরস্কার দিয়ে নিজেদের পুরস্কারের 'নাম' খাটো না করে নতুন নাম খুঁজছিল, আর দ্বিতীয়ত, নব্বয়ের মাঝামাঝি থেকে নতুন অর্থনীতির সুবাদে টাকা ঢুকছিলো, স্পনসর ঢুকছিল যা অন্য পুজোগুলোকে খুঁজে নিতে থাকে। হয়ত দুটো কারণই একসাথে ঘটতে থাকে, অন্য পুজোগুলোতে টাকা ঢোকার ফলে সেগুলো বড় হতে থাকে, নিজস্ব চরিত্র পায় আর কোম্পানিটিও তাদের পুরস্কৃত করতে পারে।

    কিন্তু নতুন স্পনসর বা টাকা পুরোন বড় পুজোতে না গিয়ে, সেইসব পুজোকে আরো বড় না করে কেন অন্য পুজোগুলোর দিকে গেল সেটা বিশদে জানা নেই। হতে পারে, পুরোন পুজোগুলোর যেহেতু স্পনসর ছিলই, যেখানে নতুন স্পনসররা আর ঢুকতে পারেনি। এও হতে পারে - যে কারণে আমি তৃনমূলের জনপ্রিয়তার সাথে নব্বইয়ের শেষ থেকে ২০০০ হয়ে পুজোর বাড়বৃদ্ধিকে যুক্ত করেছিলাম - যে পুরোন পুজোগুলো পুরোন নেতাদের সাথে যুক্ত হয়েই ছিলই কলকাতার বিশেষ কিছু অঞ্চলে এবং সেইসব পুজোয় নতুন নেতারা ঢুকতে পারেনি কিন্তু অন্য পুজোগুলোতে, নতুন অথবা পুরোন কিন্তু খুব বিশেষ নয়, সেই সব পুজোয় ২০০০ পরবর্তী সময় জুড়ে বিশেষ করে নতুন নেতাদের যারা তৃণমূলের প্রভাব বাড়তে থাকে এবং পুজোতে স্পনসরের যোগান তারা টানতে থাকে। তথ্য না পেলে, বিশেষ করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে তৃণমূলের কোন নেতারা উঠে আসতে থাকে সেসব না জানলে তত্ত্বটি দাঁড় করানো সমস্যার কিন্তু নাকতলা বা বেহালা অঞ্চলের সাথে তো তৃণমূলের কিছু নেতাদের যোগ ছিলই যা এখনো আছে। তদুপরি এও মেনে নেওয়া হচ্ছে যে বড় পুজোগুলোর সাথে সিপিএমের নেতারা সরাসরি যুক্ত ছিল না বা তাদের ক্ষমতাবৃদ্ধির জন্য পুজোকে যুক্ত করেনি, ফলে নব্বই পরবর্তী সময় জুড়ে কলকাতার পুজোর জাঁকের সাথে বামপন্থী নেতাদের সংস্রব ছিল না।

    (প্রসঙ্গত, শেয়ালদা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো ছিল কংগ্রেসী প্রদীপ ঘোষের, এখনো আছে কিন্তু তিনি এখন বিজেপিতে। কিছুদিন আগে প্রদীপ ঘোষের ছেলেকে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে কোন এক কেসের অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার করে এবং তারপর হাইকোর্ট থেকে জামিনও পায়। তো সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোয় তৃণমূল ঢুকতে পারেনি এবং পুরোন কংগ্রেসী ছোট একটি জায়গায় তার ক্ষমতা ধরে রেখেছে কিন্তু বিজেপি হয়ে গেলে সেটা তৃণমূলের সাথে সংঘাতে পৌঁছয়। )
     
    ২০১১ পরবর্তী পুজো , সবাই জানেন , বাঙালী সাব - ন্যাশনালিজমের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে, কতদিন , কীভাবে থাকে সেটাই দেখার। 
     
     
  • সিএস | 49.37.32.64 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০২:৪০500479
  • এও বলে রাখা ভালো যে আমার পোস্টগুলো পড়ে কারোর যদি মনে হয় যে আমি বলতে চাইছি তৃনমূলের নেতারা প্ল্যান করে কলকাতার পুজোকে ব্যবহার করেছে, সেটা ঠিক মনে করা হবে না। মনে করি না যে তাদের দিক থেকে কন্স্পিরেসির মত কিছু ঘটানো হয়েছিল; হয়ত দুদিক থেকেই ব্যাপারটি ঘটছিল, তারা পুজোকে ব্যবহার করে তাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে চাইছিল এবং অন্যদিকে নানাবিধ কারণে দলটির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকলে ছোট - বড় নেতাদের সুবিধে হয়েছিল পুজোগুলোর সাথে জড়িয়ে পড়তে।
     
     
  • | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৩:২০500489
  • সত্তর আর আশির দশকের মাঝামাঝি একটা ট্রেন্ড এসেছিল বিভিন্ন আনকনভেনশানাল  জিনিসপাতি দিয়ে মূর্তি বানানোর। যেমন মাটির ভাঁড়ের প্রতিমা,  আইসক্রিমের চামচের প্রতিমা,  দেশলাই কাঠির প্রতিমা সন্দেশের প্রতিমা ইত্যাদি। এই সন্দেশের প্রতিমায় আবার মারাত্মক পিঁপড়ে ধরে গরমে গলে শেপ চেঞ্জ হয়ে গেছিল বলে শুনেছিলাম। তো এইগুলোতে সনাতনপন্থীরা বিরক্ত হচ্ছিলেন।  এইজন্য এশিয়ান পেন্টসের ওই শুদ্ধশুচি ক্যাচলাইনটা তাঁদের ব্যপক টেনেছিল। সেইসময় আমার আত্মীয় ও পরিচিতমহলে এশিয়ান পেন্টস একটা কাজের কাজ করেছে বলে প্রশংসা শুনেছি। আমার এক মামাদাদুর ভাষ্যমতে 'পুজার নামে ফাইজলামি' বন্ধ করে এশিয়ান পেন্টস ট্র‍্যাডিশানাল ভক্তিমূলক পুজো আবার ফিরিয়ে এনেছে।  বোধয় কাগজেও পড়েছি এই আলোচনাটা - ঠিক মনে পড়ছে না। আর মুক্তদল সঙ্ঘশ্রী সঙ্ঘমিত্র'র পুজোয় নানারকম থিম বানাত ৭২-৭৩ এও। সেগুলোকে 'থিম' নামেই ডাকত কিনা মনে নেই কিন্তু আলো শব্দ আর নানারকম মূর্তি দিয়ে ছোটখাট ঘটনা দেখাত। মস্ত লাইনে দাঁড়িয়ে দেখতে হত। 
    ৭২-৭৩ এও পুজোর বাজার ব্যপারটা দিব্বি চালু ছিল।সপ্তমীর তারিখ ধরে তার আগের একমাস সমস্ত দোকান সপ্তাহের ৭ দিনই খোলা থাকত। গড়িয়াহাটের ঢাকেশ্বরী বস্ত্রালয়, অমৃত বস্ত্রালয়, ঠনঠনের কাছের ডালিয়া আশা স্টোর্,,  শ্যামবাজারের কি যেন একটা মস্ত দোকান পুজোর নতুন ডিজাইনের বিজ্ঞাপন অল্পস্বল্প দামে ছাড় দিত টিত। সিঙ্গুর দিয়ারা নালিকুল ভদ্রেশ্বর থেকে লোকে শ্রীরামপুরে আসত পুজোর বাজার করতে। কোন্নগর উত্তরপাড়া থেকেও অনেকে যেত শ্রীরামপুরে পুজোর বাজারে। খুব অল্প কিছু পরিবার গড়িয়াহাটে হাতিবাগানে যেত। এই মফস্বলের লোকেরা সাধারণত বিশ্বকর্মা পুজো বা মহালয়া কথা ম্বা রবিবার দেখে শহরে যেত পুজোর বাজারের জন্য। মোটামুটি মাস পয়লা আর বোনাস ইত্যাদির সাথে এই দিনগুলোর সিঙ্ক্রোনাজেশানেই বাজার টবিকঠাক হত। 
    এগুলো ৭২-৭৩-৭৪ এর কথা বললাম। তার আগের স্মৃতি আমার নেই। 
  • এলেবেলে | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৪:০৭500490
  • যাক, তাহলে এশিয়ান পেন্টস অন্তত আলোচনায় আসল! আগে সোমেন মিত্তির আর ফাটা কেষ্ট ব্যস্ত থাকত কালী নিয়ে আর প্রদীপ ঘোষ-সুব্রত মুখুজ্যে থাকত দুগ্গা নিয়ে। কিন্তু ববি হাকিম, অরূপ বিশ্বাস, পার্থ চাটুজ্যে, সুজিত বোস (আদিতে পরেশ পাল) তখন কোথায়? এদের চিনতই বা কে আর পাত্তাই বা দিত কে? ফলে তাদের আইডেন্টিটিকে জনমানসে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই নতুন নতুন দুগ্গার প্রচলন। বেহালা বা নাকতলায় ৯০ এমনকি ৯৫ সালেও কেউ ঠাকুর দেখতে যেত বা ওসব জায়গায় পুজো হয় বলে মনে করত - এমন মানুষজন হাত তুলবেন একটু? আর তিনো না করলে পুজোর কী হাল হয় সেটা এবারে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বুঝেছে।
     
    মুক্ত অর্থনীতির সঙ্গে কর্পোরেটের অচ্ছেদ্য বন্ধন সেটা যদি এলসিএমকে আন্ডারলাইন করে বোঝাতে হয় তাহলে দুঃখের শেষ থাকবে না। ক্যাম্পা কোলা, ফ্যান্টা, সেভেন আপকে গিলে নিল হয় কোক নয় পেপসি। সাবানের একচেটিয়া বাজার হল হয় লিভার নয় পি অ্যানড জির। সেভাবেই হাতিবাগান-শ্যামবাজার-গড়িয়াহাটকে গিলে নেয় হয় অ্যামাজন-ফ্লিপকার্ট নয় সাউথ সিটি-কোয়েস্ট। আর ফুটপাথের বিকিকিনির জায়গায় বিগ বাজার। এদের ব্যবসাটা তুঙ্গে রাখতে গেলে দুগ্গাপুজো বস্তুটাকে শাঁসেজলে রাখা দরকার। স্রেফ দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে-র ফর্মুলা। সেটা অনেক আগে থেকেই বলে যাচ্ছি।
     
    আদতে পুজোটা এদের হুপু তোলার ফল। সেটা এখন ১০০ দিন আগে রথ থেকে শুরু হয়েছে। হয়তো কিছুকাল পরে সেটা চত্তির থেকেই শুরু হবে।
     
    ওরে বাবা রে, আমি মফস্‌সলের ইন্টেলেকচুয়াল নই। পোস্ট-কলোনিয়াল নই। সাব-অল্টার্ন নই। মার্ক্সিস্ট নই। জেন্ডার স্টাডিজও নই। বরং প্রত্যেকটার নিজস্ব সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকিবহাল। তাই আমি কেবল সেখান থেকে ছাঁকনি দিয়ে আসলটা তুলে নিই। এ কথা খ-কে কে বোঝাবে? শুধু শান্তিনিকেতনে থাকলেই মফস্‌সলি হওয়া যায় না। যাঁর পরিবারে অধ্যাপক বাবা-শ্বশুরমশাই-স্ত্রী থাকেন, যিনি বিদেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ান, নবারুণকে যিনি দাদা বলেন, মানব বাঁড়ুজ্জে যাঁর সঙ্গে পাঠ্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন ---- তিনি শত চেষ্টাতেও মফস্‌সলি হতে পারবেন না। তাই বলে মফস্‌সলি হওয়ার মধ্যে আলাদা কোনও গৌরবও নেই, হীনম্মন্যতাও নেই। উদা. কৃষ্ণনাগরিক সুধীর চক্কোত্তি কিংবা তারও আগে কুচবিহারের অমিয়ভূষণ। 
  • একক | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৪:১৮500491
  • তিনো নেতারা হাত গুটিয়ে বসে আচেন এমন্না। আর্টের ঠাকুর বিক্কিরি হয়,  সংগের মূরতি ফাইভ স্টারে শোভা বাড়ায়।  সরবদা সরাসরি বিক্রি না হলেও শিল্পি একটা বাজার পান, নতুন ইন্সটলেশন আরট এর খদ্দের মেলে। এই মারকেট টা তিনো নেতারা মনোপলি চালান।
     
    তাতেও প্রব্লেম ছিল না, যেটা হচ্চে, ওই দম দি যা লিক্লেন তার চরম,  ক্রিয়েটিভ ওয়ারক খুব কম, শুদ্ধাচারী শহুরে মধ্যবিত্তের রুচি মেনে,  আরট হচ্চে।
     
    দম দি,  হ্যামারড অন দ্য নেইল। এসিয়ান পেইন্টস হল বাংগালী পুজো কালচারের আনন্দ পুরস্কার।  গোটা ভেড়ার পাল তার পেছনে চলেচে। আগে কথা হত এসব নিয়ে। এখন সব ই মন্দের ভালো। 
  • π | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৪:২৯500493
  • আমি তো আবার ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক রীতিমত ভাল দেখতে পাই। ভাল মানে কিছুকিছু খুবই ভাল। এগুলো সংরক্ষণ করা যায়না বলে দুঃখ হয়।
  • এলেবেলে | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৩৩500494
  • আচ্ছা এশিয়ান পেন্টস-এর উল্লেখ আমি আগে করলেও একক সেটাকে অ্যাকনলেজ করেছেন এবং হাতুড়ি-পেরেকের কৃতিত্ব দ-দিকে দিয়েছেন। বেশ করেছেন। যোগ্য লোককেই দিয়েছেন। কিন্তু এশিয়ান পেন্টস যে মূল ভেড়া এবং তার পেছনে যে গড্ডল প্রবাহের ঢল নেমেছে - সেটাকে সজোরে বলার জন্য একককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
     
    আপনারা পুজোর সঙ্গে কতটা সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন জানি না। কিন্তু এই অধম তার উত্তাল যৌবনে নবদ্বীপের রাসের সঙ্গে প্রবলভাবেই জড়িত ছিল। এটার শুরু হত লক্ষ্মীপুজোয় পাটা (ঠাকুরের মূল কাঠামো) পুজোতে বাজি ফাটানো দিয়ে। তারপর বাঁশবাগানে বাঁশ কাটা ও সেই দৌলতে বেগুনপোড়া সহযোগে তাড়ি খেয়ে গঙ্গাস্নান, বাড়িতে বাড়িতে চাঁদা কাটা, পালমশাইকে সামান্য রশেবসে রাখা এমনকি পুজোর সেক্রেটারি কিংবা ক্যাশিয়ার হওয়া - সবই করেছি। পুজো ও তার পরের দিন বিসর্জনে (স্থানীয় বুলিতে আড়ং) শোভাযাত্রার গাড়িতে চাকা মারা - বেহুদা বেলেল্লাপনার কিছুই বাকি রাখিনি। কিন্তু সেটা ঠিক দু'দিনের উদ্দাম আনন্দে সীমাবদ্ধ ছিল। বিজয়া দশমীর পরে শহরটা সহসা জেগে উঠত এবং বিসর্জনের পরের দিন থেকেই ফের ঝিমিয়ে পড়ত।
     
    এখন সেসব অতীত। সবকিছুর আউটসোর্সিং হয়ে গেছে। গোটাদুয়েক শাঁসালো প্রোমোটার আর গোটা বিশেক ফ্লেক্স ঝুলিয়েই খরচ উঠে যায়। গাড়িতেও বল-বেয়ারিং এসে গেছে কবেই। ইদানীং রাস হয়ে গেছে সাত দিনের। তারও আবার উদ্বোধন হয়! স্থানীয় কাউন্সিলর প্রভাবশালী হলে স্বয়ং এমএলএ সেখানে পদধূলি দেন, মাইকে বাংলা গান নতুবা গোবিন্দোসঙ্গীত বাজে, রাত দশটা বাজলে বিসর্জনে মাইক বন্ধ হয়ে যায় (ভাবা যায়?) এবং ওই একই শুদ্ধ শুচি সুস্থ রুচির উৎকট নকলনবিশি কিংবা মফস্‌সলীয় অনুবর্তন হয়। ভাবটাই আসল রাজা, আমি রাজা নই।
  • | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৪২500495
  • না না আমি কস্মিনকালে দুগগাপুজোর কোনকিছুর সাথে জড়িত ছিলাম না। আমি একে কাঠ নাস্তিক সেই কেলাস নাইন থেকে তায় ভীড়ে বেজায় অ্যালার্জি।  ফাঁকা জায়গা দেখে পালিয়ে যাই। 
    কিন্তু এলেবেলে আপনিই বলছিলেন না আগে পুজোর বাজার বলে কিছু হত না শুধু  বাটার জুতো ছাড়া। তাই বললাম যে না হত দিব্বি হত। 
    আর ইসে নিমুড়িনিছুড়ি মানে কী গা? বলার ভঙ্গী থেকে মনে হচ্ছে খুব তাচ্ছিল্য আর ঘেন্নার কিছু। 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:30ae:2a07:a7c8:4b4d | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৫:৫৫500496
  • আমাদের ছোটবেলায় দেখতাম পুজোর সময় উৎকট চাঁদার উৎপাত। এখন বাণিজ্যিক স্পনসর হয়ে সে আপদ গেছে। পুজোর সময় লোকজন চাঁদাবাজেদের উপদ্রবে লোকজন তটস্থ হয়ে থাকতো। সুকন্যাদের বাড়িতে একবার ঘরের ভেতর বোম ছুঁড়েছিল।
    অবশ্য আগরতলায় চাঁদার জুলুম এখনো আছে। সে অন্য লেভেলের ব্যাপার, অনেক পাড়ায় ক্লাবে গিয়ে চাঁদা দিয়ে আসতে হয়, চাঁদাবাজেরা বাড়ি আসার পরিশ্রম করেন না। সেই তুলনায় কলকাতায় নব্বইয়ের শেষ থেকে কোন খারাপ অভিজ্ঞতা হয়নি।

    আর্টের ঠাকুর। থিম পুজোও এইগুলো আমার চমৎকার লাগে। শুদ্ধ বা সফল আর্ট আর কোত্থেকে হবে, শিল্পের পরিসরেই সফল শিল্প কালে একটা হয়, এ তো মোচ্ছব; মোচ্ছব তো মোচ্ছবের মতই হবে। আর্ট কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের পুজোর সঙ্গে জড়িত হয়ে রোজগার, এই জিনিসটাও আমার খুব ভালো লাগে।
  • r2h | 2405:201:8005:9947:30ae:2a07:a7c8:4b4d | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৬:০০500497
  • তবে আগরতলার তুলনায় কলকাতার পুজো আমার অনেক বেশি ইনক্লুসিভ লাগে। আগরতলায় পুজোর সময় পাড়ার লোক এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া, মেয়েদের চেখে পড়ার মত সক্রিয় অংশগ্রহণ - এসব মোটে দেখিনি। বিপুল সংখ্যক বেকার হতাশ এবং উন্মার্গগামী যুবকদের তাণ্ডব, ভিড়ের মধ্যে হুড়যুদ্ধ, ইভ টিজিং - এসব আশি নব্বইয়ে সাধারন ব্যাপার ছিল। পুরনো লোকেরা একাত্তরের পর পূর্ববঙ্গ থেকে আসা জনতার প্রতি আঙুল তুলতেন, সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের কারন হিসেবে। সত্যি মিথ্যে জানি না।

    তবে আশির দশকে গল্প উপন্যাস পড়ে কলকাতার পুজো নিয়েও মোটের ওপর এরকম ধারনাই হতো।
  • একক | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৮:১৭500498
  • হ্যাঁ এলেবেলে বলেচেন আগে, ফিরে ফিরে এসে পড়ি ত,  সরবদা খেয়াল থাকে না। 
     
    একে আপনারা কলোনিয়াল বলবেন না পুঁজিকেন্দ্রিকতা তা নিয়ে প্রচুর তক্ক হয়,  করুন, ফলাফলটা মারাত্মক সেটা খেয়াল রাখুন এই আর কী।  
     
    আইকন স্কাল্পচার, ইন্সটলেশন আর্ট এসবে রাজনৈতিক ক্ষমতার তত্বাবধানে শুদ্ধাচারী মধ্যমেধার চাষ হচ্চে,  করপোরেট গোছাচ্চে,  এই সুচারুভাবে বদ্ধ মারকেটে যত ডিস্রাপশন আসে ততই মঙ্গল। 
  • সিএস | 49.37.32.64 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৯:২৭500499
  • হুতোর লেখা দুটো পোস্ট পড়ে কিছু কথা মনে হল -

    ত্রিপুরার ক্ষেত্রে যা হুতো লিখেছে সেরকম ব্যাপার কিন্তু পবঃ - তেও ছিল। 'অবক্ষয়িত যুবসমাজ' এই শব্দদুটি অন্তত ষাট দশকের শেষ থেকে এবং সত্তরের দশক হয়ে ১৯৮০ - র দশক অবধি প্রচলিত ছিল। এই সেই যুবসমাজ যারা কাজ করে না, রকে বসে থাকে, আড্ডা মারে, আরো খারাপ হলে ছিনতাই - ওয়াগন ব্রেকিং ইত্যাদির সাথে জড়িয়ে পড়ে; বাংলা গল্প উপন্যাসে অনেক লেখাতেই এই ব্যাপার ধরা আছে। কিন্তু দেখার হল, এইসব ঘটছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই, নকশাল আন্দোলনের পটভূমিও তৈরী করেছে ঐ পরিস্থিতি, even লুম্পেনরা সেই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে। নকশাল আন্দোলনকে ঠান্ডা করে দিলেও সামাজিক পরিশ্থিতির বদল হতে, ছেলেপুলেদের কাজকর্মের সুবিধে হতে হতে ১৯৮০ - র বেশ অনেকটাই হয়ত কেটে গেছিল। ফলে ঐ 'অবক্ষয়িত যুবসমাজ' যখন পুজোয় জড়িয়ে পড়ে তখন পুজোর সাথে অনেক কিছুই যুক্ত হয়, চাঁদার জুলুম (কাজ না থাকলে, হাতে টাকা না থাকলে, চাঁদা তুলে সেই টাকার ব্যবস্থা হতে পারে), ঝামেলা ইত্যাদি। এশিয়ান পেন্ট্স যখন সুস্থ রুচির পুজোর শ্লোগান দেয় তখন পরিস্থিতিটা কিন্তু এইরকম ছিল, হ্যাঁ তারা নিশ্চয় সামাজিক পরিস্থিতির বিশ্লেষণের মধ্যে যায়নি কিন্তু চোখে যা দেখা যাচ্ছে (যার কারণ অনেকই জটিল), এশিয়ান পেন্টসের পুরস্কারের উদ্দেশ্য সেইসবের প্রশমন ঘটাতে যেন ব্যবহৃত হয়। লোকজনের তো সমর্থনও ছিল নিশ্চয়, সেটা শুধুই মধ্যবিত্ত নীতিবাগীশতা নয় বা পুজোর শুদ্ধতা রক্ষার জন্যই নয়, সামাজিক পরিস্থিতির প্রভাব পুজোর ওপরে যেভাবে পড়ছে সেসবকে অপছন্দ করেই হয়ত। ছোট করে এও বলার যে আমাদের অনেকেরই অভিজ্ঞতায় আছে, মধ্যবিত্ত বাড়িতে হিন্দী গানের প্রতি কিঞ্চিত বীতরাগ, ঐ ১৯৮০ - র দশকেই, এবং ঐ সময়তে পুজোপ্যাণ্ডেলে হিন্দী গানের রমরমা ছিল যে গানগুলি, পার্টিকুলারলি ১৯৮০ -র দশকের হিন্দী সিনেমার গানের কোয়ালিটিজনিত কারণেই (১৯৮০ - র দশক ইন জেনারেল হিন্দী সিনেমার সবচেয়ে খারাপ দশক হয়ত, সিনেমা ও গান মিলিয়ে)। সব মিলিয়ে আমার ধারণা এশিয়ান পেন্টসের পুরস্কার চালু হওয়া মধ্যবিত্ত সমাজের অনেকগুলো anxiety-র নিরসন ঘটিয়েছিল, ফলতঃ কোম্পানিটি পুরস্কার চালু করে পুজোর 'উন্নতি' ঘটিয়েছে, সেরকম একটা মত ছড়িয়েছিল।

    এরকমও তো গল্প আছে যে পুরস্কারের বিচারকেরা পুজো দেখতে এলে (এশিয়ান পেন্ট্স হোক বা আরো অন্য পুরস্কার চালু হয়ে গেলে) মাইকের হিন্দী গান বন্ধ করে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালানো হত, পুজোর পরিবেশ সম্বন্ধে বিচারকদের ইম্প্রেস করার জন্য। এই হিন্দী গান - রবীন্দ্রগীতির দ্বন্দ, সেটা মনে হয় কিছুটা কাটে ১৯৯০ - তে সুমনের গান, জীবনমুখী গান আর কিছু পরে পুরোন বংলা গানের রিমেক ভার্শান চালু হলে; কারণ হিন্দী গান বাজানোর দরকার নেই, কম বয়সীদেরও রবীন্দ্রগীতির সাথেই জোর করে রিলেট করতে হচ্ছে না, তারা সেই সময়ে প্রচলিত গানগুলির সাথেই রিলেট করতে পারছে, পুজোর পরিবেশ সংক্রান্ত যে দ্বন্দ সেসবের হয়ত সমাধান হচ্ছে, সামাজিক - অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বদলের ফলে পুজোকে ঘিরেই যে anxiety বা crisis যা ১৯৮০ -র দশক অবধি চলছিল (যা সামাজিক ক্রাইসিস থেকেই তৈরী হওয়া) সেসবেরও সমাধান হচ্ছে, এবং সেই জন্যই হয়ত পুজোর পুরস্কারগুলি ক্রমশঃ পুজোকরিয়েদের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে।
     
     
  • r2h | 2405:201:8005:9947:e5b9:8721:392d:4ff3 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ২১:১৭500504
  • হ্যাঁ, সে তো একশোবার, ত্রিপুরাতেও যেমন, বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক মানুষ, এক ধাক্কায় জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়া, চাকরি নেই, সবার বাড়িতে বেকার ছেলে মেয়ে, নিঃসম্বল আত্মীয়, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আবার ঐ আর্থিক অনটনের থেকে সহজ মুক্তি মুক্তিযুদ্ধের পর সহজলভ্য অস্ত্র, চোরাচালানের রমরমা...
     
    • সিএস | 49.37.32.64 | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ১৯:২৭500499
    • ...এইসব ঘটছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই...
  • এলেবেলে | ৩১ অক্টোবর ২০২১ ২২:২১500505
  • না, পুজোর বাজার সম্পর্কে বলেছিলাম যে পুজোর এক ও একমাত্র চাহিদা হিসেবে বাটার জুতোকে তুলে ধরা হয়েছিল বটে কিন্তু সেটা কর্পোরেটগন্ধী ছিল না। পুজোর বাজার তো ছিলই। কিন্তু সেই বাজারে কর্পোরেট ছিল না। বাটা একটা চেষ্টা করলেও সেটা ঠিক কর্পোরেটসুলভ ছিল না।
     
    'নিমুড়িনিছুড়ি' অভিধানে পাবেন কি না জানি না। এর অর্থ হল যার জাতপাতকুলমান কিছুরই ঠিকই নেই। অবৈধ সন্তানও হতে পারে।
     
    ফুস। ইদানীং মেয়ের পাল্লায় পড়ে অষ্টমী থেকে দশমী কলকাতায় কাটাতে হয়। সে ঠাকুর-ফাকুর দেখে, আমি ওই গণশক্তি-আইসার স্টলে ঢুঁ মারি নিয়মমাফিক। আমার আবাসনের উল্টোদিকের আবাসনে দুগ্গাপুজো হয়। চারতলা আবাসনের সবকটাই থ্রি বিএইচকে। কোথায় রবীন্দ্রসঙ্গীত-সুমন? একেকদিন সকাল থেকে রাত্তির পর্যন্ত একজনের চিপ গুঁজে দিচ্ছে আর কানের কাছে ধাক্কা মারছে কিনে দে রেশমি চুড়ি, আমার পূজার ফুল...। নবমীর দিন এক বন্ধু কাম দাদার বাঁশদ্রোণীর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তো সেখানে যা দেখলাম তার সঙ্গে ওই আশির কলকাতার মারাত্মক মিল দেখলাম। কাজেই কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই।
  • সম্বিৎ | ০১ নভেম্বর ২০২১ ০১:০৭500513
  • আশির মাঝ থেকে নব্বইয়ের প্রথম বছর দুত্তিন পাড়ার পুজোর কাজে ভালই থাকতাম। সল্ট লেকের ব্লকের পুজো। মোটামুটি আড়ম্বরহীন বারোয়ারী পুজো। বাজেট হত বোধহয় পঞ্চাশ-ষাটের। ব্লকে ধরুন দুশো-আড়াইশো পরিবার। চাঁদা ধার্য ছিল একশো/একশো-পঁচিশ। চাঁদা নিতে আসতেন পাড়ার মাসিমারা। বাজেটের আদ্ধেক আসত চাঁদা থেকে। বাকি আদ্ধেক সুভেনিরারের বিজ্ঞাপন থেকে। সে বিজ্ঞাপন চেয়েচিন্তে পাড়ার বাবা-কাকাদের আপিস থেকে বা মক্কেলদের থেকে জোগাড় হলেও কর্পোরেট আবার কর্পোরেট নয়ও। আইটিসির ব্যাকপেজে "শারদ শুভেচ্ছা" র পাশে থাকত পাড়ার হার্ডওয়্যার দোকানের কোয়ার্টার পেজ, "উইথ কমপ্লিমেন্টস"। এফডি ব্লক জাতে ওঠার আগে সল্ট লেকের ব্লকে ব্লকে একই গল্প। এফডি জাতে ওঠায় সুভাষ চক্কোত্তি মশাইয়ের হাত ছিল বলে শোনা যায়।
     
    আশির শেষ থেকেই কর্পো জামাকাপড়ে ভালই বিজ্ঞাপন দিয়ে পুজোর বাজারে খসাত। ওনলি বিমল শোনাত গান, পাওয়ার দেখাত স্নিকার। কাজেই এশিয়ান পেন্টসকে শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই। তবে এই সবেতে পুরস্কারের চক্করে তাদের কালো হাতের ছায়া ডেফিনিটলি আছে।
  • দীপ | 42.110.147.136 | ২৫ আগস্ট ২০২২ ২৩:৩৫511355
  • জনৈক তথ্যনিষ্ঠ গবেষক (!!!) দাবি করেছেন মুসলিম আক্রমণের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়েছে! 
    তথ্যনিষ্ঠ গবেষকের জানা নেই চণ্ডীতেই শারদীয়া মহাপূজার উল্লেখ রয়েছে। চণ্ডী মার্কণ্ডেয় পুরাণের অংশ, এই পুরাণ খ্রিস্টিয় তৃতীয়-ষষ্ঠ শতকের মধ্যেই হয়েছে। 
    এর নাম তথ্যনিষ্ঠ গবেষণা!
     
  • দীপ | 42.110.147.136 | ২৬ আগস্ট ২০২২ ০০:০৪511356
  • লক্ষ্য করবেন, শুধু পূজা বলা হয়নি, বলা হয়েছে মহাপূজা। অর্থাৎ অন্য আর সব পূজার চেয়ে এই পূজা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ! সেজন্য‌ই একে মহাপূজা বলা হয়েছে! তথ্ন
    তথ্যনিষ্ঠ গবেষক এগুলো কিছুই দেখেননি!
  • দীপ | 42.110.147.136 | ২৬ আগস্ট ২০২২ ০০:০৯511358
  • পাল যুগের দুর্গামূর্তি!  
    কোনো কোনো গবেষক আবার ১৭৫৭র আগে দুর্গাপূজার উল্লেখ পাননা!
  • এলেবেলে | ২৬ আগস্ট ২০২২ ০০:২৬511361
  • "কোন সুদূর অতীতে কী ভাবে এই শারদোৎসবের ঘটা শুরু হয়েছিল, তা আজও ইতিহাসবিদদের গবেষণার বিষয়। অনেকে মনে করেন, দুর্গা মূলত শস্যের সাথে জড়িত দেবী। আবার পুরাণ মতে, রাজা সুরথই বাংলায় প্রথম দুর্গাপুজো করেন। তবে তিনি দুর্গাপুজো করেছিলেন চৈত্র মাসে, এখন যা বাসন্তী পুজো নামে খ্যাত। অন্য দিকে, যোগেশচন্দ্র রায়বিদ্যানিধি ও অমূল্যচরণ বিদ্যাভূষণের মতে, শারদীয় দুর্গোৎসব বৈদিক শরৎকালীন যজ্ঞেরই রূপান্তর। অনেকে তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণকেই বাংলায় দুর্গাপুজো শুরু করার হোতা মনে করেন। ষোড়শ শতকে তিনি ধূমধাম করে দুর্গাপুজো করেন। অবশ্য এই ধারণার সমর্থনে নানাবিধ পারিপার্শ্বিক প্রমাণও বিদ্যমান। কংসনারায়ণ ছিলেন মনুসংহিতা-র প্রসিদ্ধ টীকাকার কুল্লুক ভট্টের সন্তান। তাঁর গুরু রমেশ শাস্ত্রী যে দুর্গাপূজা পদ্ধতি প্রণয়ণ করেন, আজও কম-বেশি সেটাই অনুসরণ করা হয়।

    জীমূতবাহনের (আনুমানিক ১০৮০-১১৫০) দুর্গোৎসবনির্ণয়, বিদ্যাপতির (১৩৭৪-১৪৬০) দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী, শূলপানির (১৩৭৫-১৪৬০) দুর্গোৎসববিবেক, কৃত্তিবাস ওঝার (আনুমানিক ১৩৮১-১৪৬১) রামায়ণ, বাচষ্পতি মিশ্রের (১৪২৫-১৪৮০) ক্রিয়াচিন্তামণি, স্মার্ত রঘুনন্দনের (১৫-১৬শ শতক) তিথিতত্ত্ব ইত্যাদি গ্রন্থে দুর্গাপুজোর বিস্তৃত বিবরণ থাকায় অনুমান করা যায়, দশম বা একাদশ শতকেই বাংলায় দুর্গা পুজো প্রচলিত ছিল। এ ছাড়া রাজা গণেশ পঞ্চদশ শতকে মূর্তি গড়ে দুর্গা পুজো শুরু করেন। সুতরাং, ঐতিহাসিক বিচারে এ কথা নিঃসন্দেহে বলা চলে যে, কংসনারায়ণের অনেক আগে থেকেই বাংলায় দুর্গা পুজোর চল ছিল।"
     
    গত পুজোয় আনন্দবাজারে প্রকাশিত এই অধমের লেখা প্রবন্ধের কিয়দংশ। ১৭৫৭-র রেফারেন্সটা যে কারণে এসেছে, সেটা যে সবার মাথায় ঢুকবেই - এমনটা আশা করাই বাতুলতা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন