এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পুজো বিষয়কঃ ব্যক্তিগত 

    রৌহিন লেখকের গ্রাহক হোন
    ১৭ অক্টোবর ২০২১ | ৮১১ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • দুর্গাপুজো নিয়ে কিছু লিখিনি। ইপ্সিতা যথারীতি অনুরোধ পাঠিয়েছিল, তবুও লিখিনি। সময় পাইনি বা অন্য অজুহাত দেবার কথা ওঠে না - লিখতে স্রেফ ইচ্ছেটাই হয়নি। দুর্গাপুজোর ক'টা দিন নিজেকে নিরন্তর বিচ্ছিন্ন মনে হতে থাকে। লিখিনি, কারণ এখন আর পুজো বিষয়ে আমার কোনো অবস্থান নেই - পক্ষে বা বিপক্ষে। দুর্গাপুজো আমার পুজো নয়, আমার উৎসবও নয়। বাঙালির "শ্রেষ্ঠ" উৎসবও নয়, সে নিয়ে আর তর্কে যাবার অর্থ দেখি না - তবে এটা একটা কার্নিভালের মত। তার বিরোধিতা করাটাও এখন সময় নষ্ট মনে হয় - যখন আমার পিতার লাশের বুকের ওপর উঠে রাষ্ট্র নৃত্য করছে, আমার ভাইয়ের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনের কনভয়, আমার রাজ্যের অধিকাংশ শহর চলে যাচ্ছে মিলিটারি শাসনের ভয়াবহতায়, মাথার ওপর শকুনের মত উড়ে বেড়াচ্ছে এন আর সি, সি এ এ, এন পি আর এর আশঙ্কা, তখন দুর্গাপুজো ভাল না খারাপ ভাবার মত সময় নষ্টের বিলাসিতা করি না।
     
    আগে লিখতাম। তখনো কি এইসব ছিল না? খুবই ছিল। তবুও লিখেছি - সিঁদুর খেলা নিয়ে, বাজীপুজো নিয়ে, পুজোর অর্থনীতি নিয়ে, দূষণ নিয়ে। সেসবও পয়েন্টলেস ছিল - তা যে একেবারে বুঝতাম না, তেমনও নয় - তবুও লিখেছি। তাহলে আজ আর লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না কেন? 
     
    একটা প্রধান কারণ সম্ভবতঃ দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।  বিষয়টা আমার অজান্তেই ছিল, "আমাদের" উৎসবে "ওদের" প্রতি অবিচার। এই "ওদের" বলতে যেমন ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিশেষ করে মুসলিমরা ছিলেন, তেমনি সামাজিক "পশ্চাৎপদ" - বিশেষ করে দলিতেরা, অচ্ছুতেরা ছিলেন। উল্টোদিকে "আমরা" অর্থাৎ হিন্দু উচ্চবর্ণ ভদ্রলোকেরা। এই বাইনারি ধারণা থেকেই পুজোর পক্ষে বা বিপক্ষে যাওয়া। পক্ষে মানে "আমাদের" পক্ষে, বিপক্ষে মানে "আমাদের" বিপক্ষে। অথচ কাগজে-কলমে, সরকারিভাবে আমি হিন্দুত্ব ত্যাগ করেছি অনেকদিন আগেই। আমার পাসপোর্টে রাষ্ট্র লিখে দিয়েছে "অ্যাথেইস্ট" (যদিও আমি সেটাও কি না, সন্দেহ আছে), আমার বিভিন্ন ডকুমেন্টে, এমন কি আমার পুত্রের স্কুল রেজিস্ট্রারেও "নো রিলিজিয়ন" লেখা - সমাজমাধ্যমে বা অন্যত্র আমি নিজেকে ধর্মহীন বলেই দাবী করে থাকি - তবু যেন হঠাৎই প্রত্যয় হল যে লেখার সময়ে আমি সেই "আমাদের" ই প্রতিনিধিত্ব করি - "আমাদের" বিপক্ষে লিখি। অথচ এই "আমাদের" কোনো অস্তিত্ব আমি রাখতে চাইনি বহুদিন। কিন্তু রেফারেন্স ফ্রেমের মায়া ত্যাগ করাও অত সহজ নয়।
     
    কিন্তু এখন, যখন লিখতে বসেও আমার অবস্থান আর ভদ্রলোকীয় নেই, হিন্দু তো নেইই, তখন আর এইসব হিন্দু কার্নিভালের ভালোমন্দ নিয়ে আমি কেনই বা লিখব, ভেবে উঠতে পারিনা। আমি একজন অহিন্দু হয়ে হিন্দুদের ভালোমন্দ নিয়ে ভাবিত হলে সেটা আমার কানেই সাম্প্রদায়িক শোনাবে। শোনাচ্ছে। তোমাদের ভালোমন্দ জ্ঞান দেবার আমি কে হে! থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নম্বর হিসাবে তোমাদের উৎসবের শুভেচ্ছা রইল।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নন্দিতা চৌধুরী | 45.113.90.78 | ১৭ অক্টোবর ২০২১ ২৩:৪৭499723
  • খুব ভালো লিখেছো। এত সুন্দর সহজ সরল ভাষায় লেখা। 
  • Satarupa Mukherjee | ১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৩:২৭499752
  • লেখাটা একটু বেশীই ব্যক্তিগত। ধর্মে বিশ্বাস না রাখলেও উৎসবে বিশ্বাস রাখা যায় হয়তো যদি সে উৎসব শুধুই প্রাণের আনন্দের ধারক হয় , তা সে দুর্গাপুজোই হোক বা যীশুপুজো । কিন্তু উৎসবের নামে কোটি টাকার শ্রাদ্ধ শান্তি করে , এই কোভিড কালে বুর্জ খলিফা থেকে লেসার আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে শয়ে শয়ে সুপার স্প্রেডার তৈরি করা , এ সত্যি ধিক্কারযোগ্য।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন