এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • "আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ"

    Mani Sankar Biswas লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৫৬৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কয়েকদিন আগেই একটা লেখায় লিখেছিলাম, এই বিশ্বজগতের যতটুকু অনুভূত হয় আমাদের শরীর আর মন দ্বারা, তার বেশিরভাগটুকুই কল্পনা। এটা পড়ে কবি কৌশিক বাজারী বলেছিলেন আরও লিখতে। আজ এখানে বৃষ্টি হচ্ছে, লিখতে ইচ্ছে করছে না কিছুই, কিন্তু হঠাৎই এই ছবিটার দিকে চোখ চলে গেল, একজন মহাকাশচারী নীল রঙের গ্রহটির উপর ভাসছেন! এই 'নীল' প্রসঙ্গেই দু'একটি কথা প্রথমে বলে নিই। আমরা অনেকেই জানি, নীল রঙ আক্ষরিক অর্থেই আধুনিক একটা রঙ। বা সহজ সাদাসিধে ভাষায়, নীল রঙটা একটা 'কাল্পনিক' রঙ। কেননা কয়েক হাজার বছর আগেও নীল রং বলে কোনো রংয়ের অস্তিত্ব ছিল না। মানে নীল যে একটা রঙ, এটা মানুষ জানত না। তাই বলে কী নীল রঙকে তখনকার মানুষ দ্যাখেও-নি? আকাশ বা সমুদ্র তো তখনও নীল ছিল! তাহলে?

    সামান্য একটু ডিটেইলসে যাই। ওডিসি-তে হোমার সমুদ্রকে বলছেন, “wine-dark sea”, কিন্তু কেন? কেন ডিপ-ব্লু বা সবুজ নয়? ১৮৫৮ সাল নাগাদ, উইলিয়াম গ্ল্যাডস্টোন নামের একজন স্কলার, পরবর্তীকালে যিনি গ্রেট-ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, লক্ষ্য করলেন, এটাই একমাত্র অদ্ভুত কালার রেফারেন্স নয়। যদিও কবি পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ধরে চরিত্রদের পোশাক, মুখ ও শারীরিক গড়ন, অস্ত্রশস্ত্র, পশুপাখি, স্থান-কাল-পাত্রের বর্ণনা করেছেন, কিন্তু রঙের বর্ণনার ক্ষেত্রে তার লেখা অদ্ভুত আড়ষ্ট। লোহার বস্তুসামগ্রী আর জাহাজ বেগুনী (violet), মধু সবুজ। অদ্ভুত নয়? গ্ল্যাডস্টোন আরও নিবিড় অধ্যয়ন করে বের করলেন, যেখানে কালো রঙ ২০০ বার, শাদা রঙ প্রায় ১০০ বার, নীল রঙ একবারও নেই ওডিসি-তে। এমনকি 'নীল' বলে কোনো শব্দই নেই এই মহাকবির অভিধানে। মনে পড়ে গেল, এক আধুনিক বাঙ্গালী মহাকবি তাঁর 'বনলতা সেন' নামক কৃশকায় কাব্যগ্রন্থে, কতবার যে 'নীল' শব্দটি ব্যাবহার করেছেন, তার কোনো ইয়ত্তা নেই! স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তবে গ্রীকরা কি এক ধূসর ঘোলাটে জগতে বাস করতেন? কিন্তু লাজারেস গাইগার (Lazarus Geiger) নামে একজন ভাষাবিদ, গ্ল্যাডস্টোনের পথেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাহিত্য ও সংস্কৃতি নিরীক্ষণ করে দেখালেন, সারা পৃথিবীর সব জায়গাতেই এই একই অবস্থা! কোনো নীল নেই। ভাইকিং বা আইসল্যান্ডিক সাগা, কোরান ও অ্যারাবিক উপকথা, চৈনিক প্রাচীন সাহিত্য, বাইবেলের হিব্রু ভার্শান, ঋগ্বেদের শ্লোকগুলি...কোত্থাও নীল পাওয়া গেল না। ঋগ্বেদ প্রসঙ্গে লাজারেস লিখলেন, "দশ হাজারেরও বেশি এই স্তোত্রগুলি স্বর্গের বর্ণনায় পরিপূর্ণ। কোনো কোনো বিষয় আবার একটু বেশি ঘন ঘন উচ্চারিত হয়। সূর্য এবং ভোরের আকাশে লালচে রঙের খেলা, দিনরাত, মেঘ ও বিদ্যুৎ, বায়ু এবং আকাশ, এই সব আমাদের সামনে বার বার উন্মোচিত হয় ... কিন্তু নীল কোত্থাও নেই।" লক্ষণীয়, তুলনামূলক ভাবে নতুন রেফারেন্স, "নব দূর্বাদল শ্যাম"-এও শ্যাম, নীল নন, ঘাসের মতো সবুজ। গাইগার এর পর আরও দেখতে চাইলেন, সারা পৃথিবী জুড়ে প্রধান ভাষা ও সংস্কৃতিগুলিতে, কখন "নীল" রঙ এলো এবং সারা বিশ্বেই তিনি একটি অদ্ভুত প্যাটার্ন খুঁজে পেলেন।

    খুব বোধ্য কারণেই প্রতিটি ভাষায় প্রথম যে রঙ দুটি এসেছিল তা হল কালো এবং সাদা (অন্ধকার এবং আলো)। এর পর প্রতিটি ভাষায় যে রঙটি এলো তা হল লাল, রক্তের রঙ। লালের পরে, ঐতিহাসিকভাবে হলুদ এবং তারপরে সবুজ (যদিও কয়েকটি ভাষায় সবুজ হলুদের আগে এসেছে)। প্রতিটি ভাষায় নিশ্চিত করেই শেষ রঙটি হল নীল। এখনো অনেক উপজাতীয় সংস্কৃতি আছে, বিশেষত যারা মোটামুটি আনটাচ্ড, যেমন নামিবিয়ার হিম্বা (Himba), তাঁদের কাছে নীল বলে আলাদা কোনো রঙ নেই! হিম্বা ভাষায় সবুজের বিভিন্ন শেডের জন্য আলাদা আলাদা শব্দ আছে এবং নীলকে সবুজেরই একটা শেড ধরা হয়। এখন অনেকেরই মনে হতে পারে, নীলকে হিম্বারা সবুজেরই একটা শেড হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করতে পারেন, তা কিন্তু নয়। পাশাপাশি অনেকগুলো একই শেডের সবুজ রঙের কয়েকটি ব্লক রেখে তার সঙ্গে শুধু একটি নীল রঙের ব্লক রেখে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা, হিম্বারা দীর্ঘক্ষণ কোনো পার্থক্যও করতে পারেননি, যে অনেকগুলি ব্লকের ভিতর কোনটি আলাদা। এর একটা কারণ কী এই, যে প্রকৃতিতে নীল রঙের পশু প্রায় দেখাই যায় না বা নীল রঙের ফুলও খুব একটা সুলভ নয়? ("নীল বা নীলাভবর্ণ গোলাপের অভাবের মতো তোমার অভাব বুঝি")। কিন্তু আকাশ বা সমুদ্র তো নীল? (যদিও হিম্বারা সমুদ্র উপকুলের উপজাতি নন) আমার নিজের ব্যাখ্যা হল, আকাশ যে মূলত শূন্যস্থান, তা এঁরা প্রথম থেকেই জানতেন। ওঁরা এও দেখেছেন, যে আকাশে নানা প্রকারের রঙ ধরে। সুতরাং আকাশী নীলকে হিম্বারা বা অন্যান্য সংস্কৃতিগুলিও, রঙ-হীনতা বা রঙের অনুপস্থিতি বলেই ধরে নিয়েছিলেন। এবং ঠিক এই কারণেই যতদিন না নীল রঙের পিগমেন্ট আবিষ্কার করছে কোনো জাতি, ততদিন তাঁরা নীল রঙকে, রঙ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। অবশ্য এখানে বলে রাখা ভালো, সমস্ত প্রাচীন সভ্যতার মধ্যে একমাত্র ইজিপশিয়ানরাই নীল রঙকে একটা আলাদা রঙ হিসেবে চিনতেন এবং বলাই বাহুল্য নীল রঙের পিগমেন্টও ইজিপশিয়ানরা আবিষ্কার করেছিলেন।
    আরেকটা ব্যাপার এখানে বলতে ইচ্ছে করল, কম্পিউটারের সাদা রঙের স্ক্রিনও আমরা জানি অসংখ্য নীল রঙের আলো দিয়ে তৈরি। সুতরাং নীলকে যে একধরণের রঙহীনতা বা রঙের অভাব হিসেবে প্রাচীন সভ্যতাগুলি দেখেছিল, তা কিন্তু একেবারেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। এবারে আর একটু ক্রিটিক্যাল জায়গায়। আগের লেখাটিতেই লিখেছিলাম "রঙ তো রঙই"! সেখানে একটা ছবি ছিল, যে একটা পাখি আর একজন মানুষ, একই দৃশ্যে কীরকম আলাদা আলাদা রঙ দেখতে পাচ্ছে। তাহলে বিষয়টা দাঁড়াল এই, যে আমরা চারপাশে সর্বত্র যে রঙগুলি দেখছি, সেই রঙগুলিও কিন্তু মৌলিক নয়। আবার কনচেট্টা আন্টিকো (Concetta Antico) বলে একজন শিল্পী আছেন যিনি সাধারণ মানুষের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি রঙ দেখেন। অর্থাৎ তাঁর পৃথিবী ১০০ গুণ বেশি রঙিন। কনচেট্টা আন্টিকো একজন টেট্রাক্রোম্যাট। সাধারণ মানুষের তিনটি রিসেপ্টর থাকে রেটিনায় কিন্তু কনচেট্টার আছে ৪ টি। কনচেট্টা এক জায়গায় বলেছেন, যে গাছের পাতা আপনি শুধুই সবুজ দেখেন, আমি তার ধারগুলিতে লাল, বেগুনি বা কমলা দেখি। আপনি যাকে গাঢ় সবুজ দেখেন, আমি সেখানে বেগুনী নীল বা টারকোয়াইজ রঙও দেখি। তবে যে কথাটা বলতে গিয়েও হয়তো সাহস করে বলতে পারছি না, তা হল আপনি হলুদকে ঠিক যেভাবে দেখেন, একজন টেট্রাক্রোম্যাট না হয়েও আমি কী অবিকল সেভাবেই দেখি? নিশ্চিত করে বলা যায় না। হয়তো খুব কাছাকাছি কিন্তু অবিকল একই নাও হতে পারে। কেননা আমাদের অনেক অভিজ্ঞতাই আমাদের ভাষার উপর নির্ভরশীল। একটু আগেই যখন হিম্বাদের 'নীল' রঙ সম্পর্কে ধারণার কথা হচ্ছিল, সেখানে আমরা দেখেছি যেহেতু নীল, সবুজ থেকে আলাদা কোনো রঙ নয় হিম্বাদের ভোকাবুলারিতে, তাই হিম্বা-রা নীল রঙকে বিভিন্ন সাইকোলজিক্যাল টেস্টে সবুজ থেকে আলাদা করতে পারছে না। কিন্তু আমরা যদি একই জনগোষ্ঠীরও হই, আমাদের অন্তর্গত ভাষা তো একে অপরের থেকে আলাদা। অন্যপ্রকারের শারীরিক অভিজ্ঞতার নিরিখে এবার দেখা যাক আমি কী বলতে চাইছি। ধরুন একই ঝাল-লঙ্কা আপনাকে আর আমাকে দেওয়া হল, দেখা গেল আমাদের একজনের ঝাল লাগছে, অন্যজনের লাগছে না। আবার পাখিকে দেওয়া হল, তার ছোট্ট জিহ্বায় সে কোনো ঝালই অনুভব করতে পারল না। যদিও পাখিটি বলতে পারল না, কিন্তু আমরা দেখলাম প্রচণ্ড ঝাল-লঙ্কা, ওইটুকু পাখি একটার পর একটা খেয়েই চলেছে। আবার একই রকম গরমে কেউ ঘেমে নেয়ে একসা হয়, অন্য কেউ সেই একই গরমে বেশ ফুরফুরে বোধ করছেন। এই উদাহরণগুলি এতই সহজ, যে আমরা হয়তো ক্রিটিক্যাল থিংকিং-এর সেই জায়গায় পৌঁছতেই পারব না, যেখানে নীল রঙ স্রেফ একটা কল্পনা।



    অবশ্য এতসব কথা আজ আমার লিখবার কথাও ছিল না। এই ছবিটা যেখানে মহাকাশচারী ব্রুস ম্যাক্‌ক্যান্ডলেস্‌ নীল রঙের আমাদের গ্রহটির উপর ভাসছেন, সেটি দেখতে দেখতেই দু একটি লাইনে ছবিটি সম্পর্কে লিখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু নীল রঙে আটকে গিয়ে, সেই দু একটি লাইন, এখনো লেখা হল না। যাক এবারে বলি, যদিও ছবিটা খুব সুন্দর এবং মায়াবী কিন্তু এর একটা ডার্কসাইডও আছে। যারা অনেকদিন ধরে মহাকাশে থাকেন, তাঁদের সলিপসিজমে সিন্ড্রোমে (solipsism syndrome) আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। সলিপসিজম কী? সলিপসিজমে মনে করা হয় এই জগত, আমাদের চারপাশ, এই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড, এ সবই 'মায়া'। আমাদের সব অভিজ্ঞতা আসলে ব্রেইন সিমুলেশন। এটা যখন খুব খারাপ জায়গায় পৌঁছায়, মানে এর চূড়ান্ত অবস্থায়, রুগী মনে করেন এইসব সিমুলেশন কোনো এক ল্যাব থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ভাবা যায়, কী যাচ্ছেতাই অবস্থা! যাইহোক, আজ অনেক লিখেছি, এর জন্য অবশ্য কৌশিক অনেকটাই দায়ী, আবার অন্য কোনোদিন...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৫৬৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Kausik Ghosh | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:০৬498622
  • আরেকটা মাস্টারপিস, মণি শংকরবাবু।
    আমি কাবুল বাবুল পোস্তর দাম আর ঘাটালে জলস্ফীতির বাইরে বড়ো জোর নারীস্বাধীনতা নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করি। তাও চার নম্বরটি গিন্নি সামনে থাকলে মুখে আনি না, পাছে বুমেরাং হয়ে যায়।
    ইদানিং কাবুল মেনস্ট্রিম, ওর মধ‍্যেই মেয়েদের অধিকার টধিকার সব ইনক্লুডেড বলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। গিন্নিকেও আর ততোটা ভয় পাচ্ছি না।
    এর বাইরেও যে বড়ো একটা জগৎ রয়ে গেলো ভাবনায় ঠাঁই পাবার জন‍্য, আপনার এই ভাবনা সংক্রান্ত লেখা তা নিয়ে ভাবিয়ে দিলো। 
    রাতে ছেলেমেয়েকে পড়ে শোনাতে হচ্ছে।
  • Kausik Ghosh | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:১০498623
  • একটু ভুল হয়েছে গুণতিতে, যেটা বোঝাতে চেয়ে চার নম্বর বলেছি, সেটা পাঁচ নম্বর হবে। ঐ নারী স্বাধীনতা আর কি।  
  • Kallol Dasgupta | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৩৮498624
  • এটা তো সাড়ে সাংঘাতিক। কিন্তু সবুজ তো নীল আর হলুদের মিশ্রণ। তবে ? খুব ধন্ধে থেকে গেলাম, মণিশংকরবাবু। 
  • Kausik Ghosh | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:২৩498632
  • একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। বিষয়টা প্রথম খেয়াল করেছিলাম আমার বাবার ক্ষেত্রে। ছোটবেলায় দেখতাম বেশ কিছু জামাকাপড়, ছবি ইত‍্যাদির ক্ষেত্রে নীলকে বাবা সবুজ বলতেন। এটা নিয়ে আমরা দুই ভাইবোন কখনো কখনো আলোচনাও করেছি। সব নীলকে বাবা সবুজ বলতেন না, বিশেষ করে কালচে নীলকে কখনোই না। কিন্তু তুলনায় হাল্কা এমন নীলের বিভিন্ন শেড প্রায়ই বাবার চোখে সবুজ বলে ধরা পড়তো। আমি বা বোন ভুল ধরিয়ে দিলে বলতেন, "ওই হলো, যা এখন।"
    সাধারণভাবে জীবনের অজস্র দিক নিয়ে বাবার বরাবর এক অদ্ভুত ক‍্যাজুয়‍্যাল দৃষ্টিভঙ্গি আছে।  তলিয়ে ভাবা, খুঁটিয়ে দ‍্যাখা বা ডিটেলে যাওয়াকে প্রায়ই এড়িয়ে যান। ফলে আমরা এই রঙবিভ্রাটকে খুঁটিয়ে না দ‍্যাখার ফল ভাবতাম।
    এর বহু পরে কলেজে বিশ্ববিদ‍্যালয়ে পড়ার সময় যখন বাইরের লোকের সঙ্গে বেশি বেশি যোগাযোগ হতে লাগলো, তখন আবিষ্কার করলাম যে আমার চারপাশে বেশ কিছু মানুষ নীলকে সবুজ বলেন। ভুল ধরিয়ে দিলে তাঁরা মেনে নিতে আপত্তি করেন না বটে, পরে অন‍্য আরেকটা জিনিসের বেলায় ফের নীল সবুজ হয়ে যায়।
    আর্টসের ছাত্র হওয়ায় বায়োলজি দিয়ে এর ব‍্যাখ‍্যা করতে পারিনি, কিন্তু একটা সাধারণ ব‍্যাখ‍্যা আন্দাজ করেছিলাম সেই সময়।
    নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো লাল বা নীল বা হলুদের অনুভূতি জাগায় আলো রেটিনায় পড়ার পরে। ঐ রেটিনায় পড়া পর্যন্ত সবারই এক, তারপরে অপটিক নার্ভের সেই উদ্দীপনাকে মস্তিষ্ক পর্যন্ত বয়ে নিয়ে যাওয়াও সবারই এক। খেলাটা সম্ভবত তার পরে। মানে মস্তিষ্ক ঐ উদ্দীপনাকে কিভাবে অনুবাদ করছে, সেইটা মনে হয়েছিলো কিছু লোকের আলাদা। কিংবা হয়তো অনুবাদও এক, তারপরে অনুভূতি ও ব‍্যাখ‍্যার কেন্দ্র একেক জনের বেলায় একেক রকম অনুভূতি ও ব‍্যাখ‍্যা জাগায়। অর্থাৎ ঐ অনুভূতি ও ব‍্যাখ‍্যার কেন্দ্র কারো কারো বেলায় একটু অন‍্য রকম।
    মানছি যে আমি মোটেও জানি না মস্তিষ্কে ঐ অনুভূতি ও ব‍্যাখ‍্যার কেন্দ্র এবং নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোকে লাল বা হলুদ বলে অনুবাদের কেন্দ্র এক নাকি আলাদা।
    এছাড়াও আরো একটা বিষয় মাথায় ছিলো সে সময়, কিন্তু সে উল্লেখ করতে গেলে মন্তব্যের দৈর্ঘ্য আর গু.চ.-এর সহ‍্যক্ষমতার তরঙ্গদৈর্ঘ‍্য ম‍্যাচ করবে না মনে হয়। অতএব এখানেই টা টা। আপাতত।
  • Kausik Ghosh | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৩৭498633
  • আরেকবার কষ্ট দিই।
    'অনুভূতি ও ব‍্যাখ‍্যার কেন্দ্র' না বলে 'অনুভূতি প্রকাশের কেন্দ্র' বললে মনে হয় আরো ভালো ভাবে আমার বক্তব্যকে দাঁড় করাতে পারি।
  • Mani Sankar Biswas | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০৩498649
  • খুব ঠিক,কৌশিকবাবু। 
  • Mani Sankar Biswas | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০৬498650
  • কল্লোলবাবু নীল আর হলুদের মিশ্রণ যে সবুজ এটা আপনি জানেন (শিখেছেন)। এখন একে যদি আপনি আনলার্ন করতে পারেন তবেই কিন্তু আমার ধারণা আপনার ধন্ধটা থাকবে না। 
  • Kallol Dasgupta | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:০৯498664
  • কিন্তু নিজে হাতে করেও তো দেখেছি। লাল আর হলুদ মিশালে কমলা, নীল আর হলুদ মিশালে সবুজ। এটাকে আনলার্ন করতে গেলে নিজের অভিজ্ঞতাকে সরিয়ে রাখতে হয়। সেটা বেশ কঠিন। কিন্তু আমার পরে মনে হলো, আপনার প্রতিপাদ্যের সাথে আমার কথার কোন যোগ নেই। নীল ছিলো। কিন্তু তার নাম ছিলো না। তাকে সবুজের একটা ধরন বা কালোর একটা ধরন বলে মানা হত। নবদুর্বাদল শ্যাম বা শ্যামা কি শ্যামল। শ্যামল তো সবুজেরই প্রতিশব্দ।  নীল কবে এলো ? আরও কিস্তি আসবে কি ? 
  • kk | 68.184.245.97 | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৯:৫২498666
  • এই লেখাটা খুবই ভালো লাগলো। এই রকম একটা কনসেপ্ট অনেকদিন থেকে জানতে ইচ্ছে করছিলো। এত সাবলীল ভাষায়, সহজ করে বুঝিয়েছেন বলে লেখককে ধন্যবাদ। এ নিয়ে আরো লিখবেন? তাহলে খুব ভালো লাগবে।
  • সত্যেন্দু সান্যাল | 27.57.100.202 | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০১498678
  • শ্রদ্ধেয় লেখকের জন্য দুটি বই এর উল্লেখ করছি ~
     

    Blue: In Search of Nature's Rarest Color

    Kai Kupferschmidt

    A globe-trotting quest to find blue in the natural world—and to understand our collective obsession with this captivating color

     

    Search human history and you’ll quickly conclude that we’ve been enamored of blue at least since the pharaohs. So, it’s startling to turn to the realms of nature and discover that “true” blue is truly rare. From the rain forest’s morpho butterfly to the blue jay flitting past your window, few living things are blue—and most that appear so are performing sleight of hand with physics or chemistry. Cornflowers use the pigment found in red roses to achieve their blue hue. Even the blue sky above us is a trick of the light.

     

    Science journalist Kai Kupferschmidt has been fascinated by blue since childhood. In Blue, his quest to understand the science and nature of his favorite color takes him from a biotech laboratory in Japan and a volcanic lake in Oregon to Brandenburg, Germany— home of the last surviving blue-feathered Spix’s macaws. Whether it’s deep underground where blue crystals grow or miles overhead where astronauts gaze down at our “blue marble” planet, wherever we do find Earth’s rarest color, it always has a story to tell.

     

     

    The Rarest Blue : the remarkable story of an ancient color lost to history and rediscovered

    Baruch & Judy Taubes Sterman

     

    For centuries, blue and purple dyed fabrics ranked among the ancient world most desirable objects, commanding many times their weight in gold. Few people knew their secrets, carefully guarding the valuable knowledge, and strict laws regulated their production and use. The Rarest Blue tells the incredible story of tekhelet, the elusive sky-blue color mentioned throughout the Bible. Minoans discovered it; Phoenicians stole it; Roman emperors revered it; and Jews - obeying a commandment to affix a thread of it to their garments - risked their lives for it. But as the Roman Empire dissolved, the color vanished. Then, in the nineteenth century, a marine biologist marveled as yellow snail guts smeared on a fisherman shirt turned blue. But what had caused this incredible transformation? Meanwhile, a Hasidic master obsessed with the ancient technique posited that the source of the dye was no snail but a squid. Bitter controversy divided European Jews until a brilliant rabbi proved one side wrong. But had an unscrupulous chemist deceived them? In this richly illustrated book, Baruch Sterman brilliantly recounts the amazing story of this sacred dye that changed the color of history.

    এবং দুইশো বছর পরে এক নতুন নীল রং এর আবিষ্কর্ত্তা শ্রী সুব্রহ্মন্যর কথন ~

    OSU chemist who accidentally discovered first new blue in 200 years! Hear the story that shocked the world including Mas himself.

     

  • Kausik Ghosh | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০৬498684
  • @সত‍্যেন্দু স‍্যান‍্যাল আমার মতো সাধারণ পাঠকেরও ধন‍্যবাদার্হ হলেন
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:০৯498707
  • নীল রঙের এত কিছু? সত্যিই সমৃদ্ধ হলাম।
     
    আর এই সেদিন ব্রিটিশরা নীল চাষ নিয়ে বাংলায় অত্যাচারের নতুন ইতিহাস লিখেছিল 
  • বিপ্লব রহমান | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:১২498708
  • পুনশ্চ :  লেখকের গ্রাহক হলাম। 
     
    মণি শংকরবাবু, 
     
    ইচ্ছে করলে লগইন এর ঘরে গিয়ে "ব্যবহারকারীর খুঁটিনাটি" খোপে নিজের নাম সম্পাদনা করে বাংলায় লিখে নিতে পারেন। 
     
    আরও লিখুন 
  • Mousumi Banerjee | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৫০498751
  • সমৃদ্ধ হলাম। অনেককিছু ভাবতে শিখে দেখছি নীল সবুজের ব্যাপারটা কিন্তু সত্যিই এমনই বটে। ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য। 
    আরোও চাই পড়তে।
  • Sobuj Chatterjee | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:০৫498768
  • 'একি অপূর্ব নীল দিলে বিধাতা আমায়...'
    এক অনন্য সাধারণ লেখা পড়ে অন্দরে  নীল চাষ শুরু হয়েছে! লেখককে অজস্র ধন্যবাদ। আরো কিছু কিস্তি পেলে মাৎ হই!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত প্রতিক্রিয়া দিন