এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • "কী করে বাঁচবে লোকে কেউ যদি বলে দিতো ..." 

    Partha Banerjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৫৯৫ বার পঠিত
  • সুমনের গান দিয়ে লেখা শুরু করলাম। একসময়ে ভদ্রলোক অনেক ভালো ভালো গান লিখে গেছেন। অনেক ছেলেমেয়েকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তারপর ... যাক সে কথা।
     
    কিন্তু, আসল ব্যাপার হলো জীবনীশক্তির কথা। কীভাবে এই সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ সঙ্কটের মধ্যে স্যানিটি বজায় রাখা যায়, আর দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। কী করে এই ভীষণ যুদ্ধ করা যায় -- নিজের মনের বিস্ফোরণ না ঘটিয়ে। অথবা, ঘৃণা, হিংসার রাস্তায় না গিয়ে। আত্মহত্যার রাস্তায় না গিয়ে।
     
    জীবনীশক্তি আসে জীবনের প্রতি বিশ্বাস থেকে। জীবনকে যত প্রয়োজনীয় মনে করা যায়, বেঁচে থাকার আগ্রহ যত থাকে, ততই দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা যায়। অবশ্য কোনো দুরারোগ্য রোগ হলে অন্য কথা। আমার মায়ের খুবই বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু ক্যান্সার মাকে অল্পবয়সে নিয়ে গেলো। কিন্তু আমার বাবা মায়ের মৃত্যুর পরেও চল্লিশ বছর বেঁচে ছিলেন। এবং আমি দেশ ছেড়ে চলে আসার পরেও বেঁচে থাকার আগ্রহ তাঁর একশো ভাগ ছিল। সবার সুখে তিনি সুখী হতেন, আর সবার দুঃখে দুঃখী।
     
    কিন্তু তাঁর একটা অদ্ভুত ডিট্যাচমেন্ট ছিল। রামকৃষ্ণদেবের ভাষায়, হাঁস সর্বক্ষণ জলের নীচে কাদা ঘাঁটে, কিন্তু জলের ওপরে উঠলেই গা থেকে আশ্চর্য কৌশলে কাদা ঝেড়ে ফেলে। এই কৌশল কীভাবে আয়ত্ত করা যায় -- এই শাহ মোদী আম্বানি আদানি গেটস অর্ণব ক্রিকেট জুয়া আর কালো টাকার জালিয়াতির যুগে? বলিউড বালখিল্যতা, প্রাগৈতিহাসিক ধ্যানধারণা, কুসংস্কার, ভয় দেখানো তন্ত্রমন্ত্র, আর মধ্যযুগীয় টিভি সিরিয়ালের যুগে? কীভাবে এসবের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখা যায়, কিন্তু এই পাঁক যেন আমার মনকে ক্লেদাক্ত করে ফেলতে না পারে?
     
    আমার পিতৃদেব শ্রী জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও সারাজীবন আরএসএস করেছেন, এবং অটলবিহারী, আদভানি, রাজেন্দ্র সিং, দেওরাস আর দেশমুখের কাছের মানুষ ছিলেন, কিন্তু শেষ জীবনে তাঁকেও তাঁর একসময়ের যুদ্ধং দেহি মনোভাব ঝেড়ে ফেলে শান্ত সমাহিত এক আদর্শ বাঙালি বৃদ্ধের স্বভাবোচিত নির্লিপ্ততায় কাটাতে দেখেছি। শেষ জীবনে তিনি রবীন্দ্রভক্ত। এমন কী, সত্যজিৎও তাঁর কাছে আর হিন্দুত্ববিরোধী কমিউনিস্ট নন। তপন সিংহ তখন তাঁর বড়ই প্রিয়।
     
    মোহ বা মাৎসর্য-জাতীয় রিপু তাঁর কোনোকালেই ছিলোনা। শেষ জীবনে তিনি ক্রোধ থেকেও সম্পূর্ণ দূরে। একসময়ের জঙ্গী হিন্দুত্ববাদী সঙ্ঘ প্রচারক জিতেন্দ্রনাথ বাংলার মাটি বাংলার জলে একেবারেই অন্যধরণের এক মানুষ। 
     
    তিনি জানতেন, কোনো কিছুই তাঁর কন্ট্রোলে নেই। যা হবার, তা হবে। কাজ করে যেতে হবে নিজের আদর্শে অটল থেকে। "আপন কাজে অচল হলে চলবে না।" তারপর, "মা ফলেষু কদাচন।" ফলের আশা কোরোনা।
     
    যাদের মধ্যে এই নির্লিপ্ততা আছে, এবং আত্মসংযম আছে খুব বেশি, তারা বহুদিন বাঁচে। এটাই আমার অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণ।
     
    তিনি অল্পেই সন্তুষ্ট। ধর্মবোধ আমি দেখেছি জিতেন্দ্রনাথের মধ্যে। আজকের লোভী, ক্রোধী, মিথ্যাচারী, হিংস্র ও দুর্নীতিগ্রস্ত হিন্দুত্ববাহিনীর একেবারেই বিপরীত মেরুর মানুষ ছিলেন তিনি। খুব কাছ থেকে আমি তাঁকে দেখেছি। এবং একসময়ে বহুকাল বিশালভাবে আরএসএস-বিজেপি-এবিভিপি করার সূত্রে অটলবিহারী, দেশমুখ, দেওরাসকেও সেভাবেই দেখেছি। 
     
    এখনো দেখি সেরকম কিছু মানুষকে খুব কাছ থেকে। মার্গসঙ্গীতগুরু অমিয়রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো আমাদের মধ্যে আছেন। নির্লিপ্ত, নির্লোভ মানুষ তাঁর নব্বই বছর হেসেখেলে পার হলেন। এখনো নিয়মিত গান করেন, অসংখ্য শিষ্য ও শিষ্যকে গান শেখান তাঁর সল্ট লেকের বাড়িতে। দেখেছি একসময়ের প্রবাদপ্রতিম ফুটবলার সুকুমার সমাজপতিকে। আশির ওপরে বয়েস, কিন্তু দেখে মনে হয় পঞ্চাশ কি পঞ্চান্ন। দেখেছি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়কে। নির্মলা মিশ্র। এই সেদিন চলে যাওয়া দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ।
     
    জীবনকে ভালোবাসতেন এঁরা সবাই। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, গুরু আলী আকবর। আর গুরুর গুরু বাবা আলাউদ্দিন বেঁচেছিলেন কত যেন -- একশো বারো বোধহয়। একশো পার হয়ে যাবার পরেও নিজের হাতে থলি ঝুলিয়ে বাজার করতেন। আর বাঙাল ভাষায় গল্প করতেন চেনা পরিচিতদের সঙ্গে রাস্তাঘাটে।
     
    ভীষ্মের স্বেচ্ছামৃত্যুর গল্প আমি অনেকবার ভেবেছি। আমার মনে হয়েছে, আজকের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তা আসলে অসম্ভব নয়। অবশ্য আমি মহাভারতের গল্পকে গল্প বলেই মনে করি। কোনো ধর্মের কোনো গল্পই আসলে সত্যি নয়। কিন্তু শিক্ষাগুলো সত্যি।
     
    জীবনীশক্তি সত্যিই অনেক বেড়ে যায় মনের মতো জীবন পেলে। সে জীবনে আনন্দ ও পূর্ণতা আসে। জীবনকে অর্থবহ মনে হয়।
     
    ###

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ১৫৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মৌমিতা ব্যানার্জী | 223.233.92.203 | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:১৪498594
  • জীবন খুব কম সময়ই মনের মতো হয়, তাকে মনের মতো করে নিতে হয়, যেমন আমি নিজেকে নিয়ে খুশী থাকতে শিখেছি আমার মেয়ের হাত ধরে,  আমার মতে প্রত্যেক মানুষের অন্তত একটা hobby থাকা দরকার, যা কিনা বাঁচার রসদ যোগায়। আর যেটা খুব দরকার সেটা হলো নিজের জন্য কিছুটা সময়, যেখানে শুধু নিজের ভালো থাকার কথা ভাববো।। 
  • বিপ্লব রহমান | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:০১498600
  • "দিন হতে দিন, আসিতেছে কঠিন, 
    দীনহীন করিম বলে, কোন পথে যাইতাম?
    আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম!"... 
  • santosh banerjee | ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৪৫498625
  • আমরা এমন একটা সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি (হ্যা,, দাঁড়িয়ে আছি, চলছি না ) যখন একটা অতিমারী , একটা সর্ব রোগ হর মুঠোফোন আর আন্তর্জালীয় বলয়ে গড়ে ওঠা জীবন যাত্রা , যেখানে কিছু সঙখ্যা দিয়ে মানুষের পরিচয় নির্নয় হয়, সেখানে মানুষের পরিচয় তার ধর্ম দিয়ে , মনুষ্যত্ব দিয়ে নয়, সেই অন্ধ যুগে ""কে বাঁচিতে চায় হে ""!! এরি মধ্যে আমরা বাঁচি ...""বেঁচে থাকি আস্তিকের দৈন্য নিয়ে""। ঐ ধরুন, বয়স্ক বুড়ো বুড়ি...ছেলে বৌ পেয়ে ..শশুর শাশুড়ি শালা পেয়ে নিজের বাবা মা কে ভুলে গেছে, মরে গেলেও জানবে না কখন কিভাবে মরলাম। এই অবস্থায় ঐ ভালো মন্দ রান্না করি, বাড়ীর আশেপাশের বেড়াল কুকুর দের দুবেলা খাওয়ানো, একটু স্বর্ন যুগের গান শুনি, অতীতের দিন গুলো কে স্মরণ করি। আমরা ""সামর্থ্য অনুযায়ী দিই আর প্রয়োজন অনুযায়ী নিই""। I envy nobody , nobody envies me ...এই সত্য টাকে মেনে চলি। চাওয়া পাওয়াও নেই, হিংসা ইর্ষা কূটকচালি করিনা। বেশ আছি দাদা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। বুদ্ধি করে মতামত দিন