এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  সমাজ  শনিবারবেলা

  • পেরিয়েছ দেশ কাল মাটি (৬)

    সুকন্যা কর ভৌমিক
    ধারাবাহিক | সমাজ | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৩৩০ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • মাছধরা ও পুলিশ
    কোন এক রবিবার বেলা ৩টে

    - দিদি, আমারে তো পুলিশ ধরসে।
    - My God - কী করেছ?
    - কিসুই তো না! ছাওয়ালগুলিরে লইয়া মাস (মাছ) ধরতে আইসলাম।
    - মাছ ধরতে এসেছ, আর শুধু শুধু পুলিশ ধরল?
    - হয়। কথাও বুঝিনা। কিতা জানি কয়।
    লাইসেন্স নাই বলে।
    - সর্বনাশ! তোমার ড্রাইভার লাইসেন্স নেই? এক্সপায়ার্ড?
    - না না । গাড়ির আসে। কিতা কয় মাসের বলে নাই। কথা কইবা নি পুলিশের লগে।

    বললাম - “এখন থাক। টিকিট তো দেবেই। নিয়ে নাও। পরে দেখছি।”
    পরে শুনলাম ৬ সিটের গাড়িতে ৯ জন বসেছে । আর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে মাছ ধরার লাইসেন্স নেই! বছরে ১৫ থেকে ২৫ ডলার লাগে মাছ ধরার জন্য - “Your purchase supports the conservation of Georgia's aquatic resources”.
    ঐ বেচারাও জানত না - কিন্তু ও আরো অনেক অপরাধ করেছে। বেশি সংখ্যায় গাড়িতে লোক, তার মাঝে গাড়ির সামনের সিটে বিয়ার। ৬ মাসের জন্য লাইসেন্স সাসপেন্ড। সাহায্য চাইতে এসেছিল। কিন্তু এতে আমাদের কিছুই করার নেই, আইন না জানা আইন ভাঙার যুক্তি হতে পারে না। এখানে লিগ্যাল সাপোর্ট দেওয়ার পরিকাঠামো বা পলিসি কোনটাই আমাদের নেই। কিন্তু আমি তো জানি, আইন জানার জন্যে যে প্রাথমিক জ্ঞান প্রয়োজন, তা ওর নেই, আশাও করা যায় না - কিন্তু আমার হাত বাঁধা।

    হাসপাতাল ও ভিডিও কল

    - আপু, আমার আনএমপ্লয়মেন্ট ফাইল করতে লাগব।
    যখন তখন ভিডিও কল। দিন নেই রাত নেই। ইংরেজি লিখতে পড়তে পারেনা তো। না আছে নিজেদের স্ক্রিপ্ট। নিরক্ষর। তাই সম্বল অডিও মেসেজ/ কল। সেফ হল ভিডিও। তা একটু তো ভাবতে পারে? নাকে নল, হাসপাতালের বিছানা, সকাল ৭টা।
    ঘাবড়ে গেলাম।
    - কী হল?
    - অপারেশন হইসে। গুলি লাগসে পায়ে। পুলিশ আইন্যা ভর্তি করসে।
    মাগো মা - একেকটা এমন situation- ভয়ে গা গুলিয়ে ওঠে।
    প্রশ্ন করতেও বুক কাঁপে।

    অনেক পুরুষ ক্লায়েন্টের কাছেও আমার ফোন নম্বর। নানা সমস্যা। আমার ফোনে বিশদ বর্ণনা দিয়ে ভিডিও, অডিও নানা ছবি হুড়মুড় করে ঢোকে সারাদিন। চামড়ার রোগ, আ্যালার্জি, অপারেশন, ফাটা মাথা স্টেপলর এর পিন দিয়ে লাগানো, শরীরের নানা জায়গার ছবি, ফোঁড়া, কাটা -
    কী বলব? সেটাও জানিনা। আপু, দিদি, সিস্টার - এই মায়াভরা ডাকগুলিকে অসম্মানও তো করতে পারিনা।

    শিয়াল যতই নীল বর্ণ ধারণ করুক না কেন হুক্কাহুয়া তো এড়াতে পারেনা। আমার ক্ষেত্রে এটা ১০০ ভাগ প্রযোজ্য ।

    পুলিশ ও আমি

    পুলিশের সাথে আমার এক অন্য দুনিয়ার সম্পর্ক। কি দেশে আর কি বিদেশে । আগরতলা, কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, নাগপুর - সবজায়গায় নানাকারণে পুলিশের সাথে সংলাপ, ঝামেলা এবং সখ্যতা - সে কত গল্প মনে পড়ে।

    - ২০১১ সাল। ভোটের রেজাল্টের পর মিনুর বরকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। এরমধ্যে মিনু কাঁদতে কাঁদতে ফোন। “বৌদি আমার বরকে বাঁচাও! কাউকে বস্তিতে না পেয়ে মিথ্যে কেস্ দিয়ে বরকে তুলে নিয়ে গেছে।” ভাঙা পা নিয়ে ওয়াকারে ভর দিয়ে কয়েকমাস বয়েসের সোহাগকে মা বাবার কাছে রেখে বেরিয়ে পড়লাম। থানায় ঢুকলাম। সবাই ব্যস্ত।
    অনেক কষ্টে মিনুর বরের খোঁজ পেলাম। মিনু থানার মাটিতে লুটাচ্ছে - আমি ওয়াকারে দাঁড়ানো। হঠাৎ দেখলাম মিনুর বর। কোমরে দড়ি। তিনজন পুলিশ ধরে বড়বাবুর ঘরে নিয়ে যাচ্ছে।
    আপনাদের বলে বোঝাতে পারব না - কী অসহায় , ক্ষোভ, লজ্জা ওর বরের চোখে। হাঁটতে পারছে না ওর বর। মিনু কাঁদছে আর বলছে “ বৌদি গো, চার ঘন্টা ধরে তো মেরেছে। আর মারলে তো মরে যাবে। এখনো আমার চোখের সামনে বর বৌ এর সেই দৃষ্টিবিনিময় জ্বলজ্বল করে। থানায় এবার আমিও প্রায় চিৎকার করছি ।
    ওসিকে জিগ্যেস করলাম “ কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে! “
    ওসি - “বড়বাবুর ঘরে। কিচ্ছু হবে না। কয়েকটা প্রশ্ন করবে। ছেড়ে দেবে।”
    এর মধ্যেই আ উ করে ভীষণ যন্ত্রণা আর গোঙানির আওয়াজ বড় বাবুর ঘর থেকে।
    আমি তো হতবাক। কী হল? পাশে ড্রাইভার বলল “ বৌদি, আবার মারছে। “ মিনু অজ্ঞান হয়ে পাশে পড়ে গেল।
    আমি একে তো অনেক ব্যাপারেই ভোঁতা। না জেনে বুঝে ঝাঁপ দিয়ে ফেলি। এরপর এসব ঘটনার সামনাসামনি হলে কি করা উচিৎ তা ও জানিনা।
    ওসি সহ যত পুলিশ ছিল সবাইকে ডাকছি আর জানতে চাইছি যে কী হচ্ছে এসব! ওসি একটু অপ্রস্তুত । হঠাৎ করে মাথায় এল কোথায় যেন শুনেছি যে পুলিশ স্টেশনে/লক-আপে গায়ে হাত তোলা নিষেধ। সেই জ্ঞানের বক্তৃতা শুরু করলাম। পাশে ড্রাইভার বলল “ ও বোঝা যায় না। জয়েন্টে জয়েন্টে কাপড়ের ব্যান্ড বাঁধা থাকে। দাগ হয় না। প্রমাণ থাকে না” -

    এসব অনেক কথা। আমার এখনকার গল্প তো অন্য। কিন্তু - না, সব কোথায় একটা এক সুতোয় বাঁধা।
    এখানের ক্লায়েন্ট পুলিশের গুলি খেয়ে হাসপাতাল থেকে ভিডিও কল আর ঐদিনের যাদবপুর থানা - মিলেমিশে একাকার।

    মিনুর বরের জন্য বসে আছি। একটা সময় পর সেদিন থানায় এক ধোপদুরস্ত নেতাকে দেখলাম । সে কী উত্তেজনা। বিজয়ী দলের নেতা। স্বাধীন আর কালিমাহীন সরকার গঠনের জ্বালাময়ী বক্তৃতা। এই লোক এল মিনুর বরের মত এক পোকার সম্পর্কে অভিযোগ লিখতে? মিনুর বর নাকি বিরোধী পক্ষের অসামাজিক দলের লোক। কোথায় রানি রাসমনি আর কোথায় …।

    পুরো ব্যাপারটা দেখে যা বুঝলাম যে কাউকে না পেয়ে মিনুর বর হল “বলি কা বকরা” - চরম কিছু প্ল্যান সাজানো হয়েছে। মিডিয়া আসবে।

    এদিকে মিনুর বরকে প্রথমে যখন খুঁজতে গেছি বস্তিতে - নানা দিক থেকে নানা কথা শুনে যে প্লট দাঁড়ালো সেটা হল -

    মিনু আর ওর পরিবার ভাত খাচ্ছিল। হঠাৎ একজন ওর বরকে ডেকে বাইরে নিয়ে গেল। এবার পুলিশের জিপ থেকে এক বালতি ভর্তি বোমা এনে মিনুর ঘরের পাশে পুকুর পাড়ে ডোবানো হল। এরপর মিনুর বরকে বলা হল ঐ ডোবানো বালতিকে তুলতে। যেই হাত দিয়ে ঐ বালতি জল থেকে তুললো ওর বর - সাথে সাথে খচাখচ ছবি আর প্রমাণ তৈরি হল যে পরাজয়ী দল কি কি প্রাণঘাতী প্ল্যান করে রেখেছে আর বিজয়ী দল মুহূর্তের মধ্যে সব ধরে ফেলছে।
    এত পুলিশের মাঝে এক পুলিশের চোখে দেখলাম কষ্ট। আমি ততক্ষণে বুঝে গেছি মিনুর বরের রক্ষা নেই। ঐ পুলিশ কিন্তু ইশারায় অনেক সাহায্য করছে। কখনো কখনো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় টোটকা দিয়ে যাচ্ছে।
    হঠাৎ কী মাথায় এল আমার - বলে উঠলাম “এবারের মত ছেড়ে দিন। আমি বিকেলের মধ্যে ওদের অনেক দুরে ওদের গ্রামে পাঠিয়ে দেব।” এখন ভাবি - কেন বললাম ঐ কথা? কে জানে! নেতাকে
    একটু নরম মনে হল।
    এর মধ্যে মিনু বলে উঠল “আমার বর কোন দোষ করেনি। অন্য দল টাকা দিয়ে বস্তির লোকদের কিনে নিয়েছে । আমার বরকে বলেছিল ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে বিজয়ী দলে নাম লেখাতে। আমার বরের টাকাও নেই আর ও নিজের দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না। তাই এখন ধরিয়ে দিচ্ছে। আমরা কেন গ্রামে যাব? অনেক কষ্ট করে এখানে রোজগার করি। গ্রামে তো ঘরে ছাউনিও নেই”
    ব্যস! নেতা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “হলো তো! শুনলেন তো! এরপরও কিছু করার কথা বলবেন?”
    গটগট করে বেরিয়ে গেল পুরো দল। খালি ঘরে বোকা আমি দাঁড়িয়ে আর মিনু স্থির হয়ে মাটিতে বসে।
    আমি হায়হায় করছি - মিনুকে বকছি - কেন এমন বলতে গেলে মিনু?
    ঠান্ডা গলায় মিনু উত্তর দিল “আমাদের কেন যেতে হবে? আমার বর কোন দোষ করেনি।”
    মিনুর বর গারদে ঢুকল। আমাকে বলা হল আজ রাতটাই নাকি রাখবে। এতটা সময় থানায় থেকে সত্যি মিথ্যে ধরতে খুব সুবিধে হচ্ছিল। বুঝে গেলাম এই মিথ্যেকেও। অসহায় আমি বাড়ি চলে এলাম। ফোন নম্বর রেখে এলাম থানায়। বেশ রাতে একটি ফোন এল।সেই পুলিশ - যিনি নানাভাব সাহায্য করার চেষ্টা করছিলেন। - “থানা থেকে বলছি। আপনার মিনু আর ওর বর সব সত্যি কথা বলছে। একটা মিথ্যে কেস সাজানো হয়েছে । আমাদের ওপর প্রচুর টার্গেট। এত অসামাজিক কাজ আসলে হচ্ছেই না । জোর করে লোক খুঁজে খুঁজে ঘটনা বানানো হচ্ছে। আপনাকে দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছে । আপনি ওদের বিশ্বাস করেছেন এবং আপনার বিশ্বাসই ঠিক । যদি ওদের বাঁচাতে চান তাহলে একজন উকিল ধরিয়ে দিন! আমায় ক্ষমা করবেন। আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না।”
    ক্ষমতার লড়াই আর মিনুর আত্মসম্মান - এই আত্মসম্মানকে মর্যাদা দিতে গিয়ে ৫ বছর মিনুর বরের কেস চালিয়েছি আমি আর সায়ন।
    বিনা কারণে দুবছর জেলে ছিল মিনুর বর। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে মিনু দিন কাটায়। ওর সংসারের সিংহভাগ খরচ চালাই আমরা। পাঁচ বছর পর বেলে ছাড়া পায় ওর বর।

    কী দোষ ছিল ওদের? গরিব! অশিক্ষিত? পরিযায়ী? উদ্বাস্তু ????
    আমার কী দোষ ছিল? আমি তো কাড়িকাড়ি টাকার উপর গড়াগড়ি খাই না? কিন্তু ঐ পরিবারকে মাঝপথে ছাড়তেও তো পারলাম না! মধ্যবিত্তর জ্বালা!

    এদেশে এসেও পার পেলাম না । ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে।

    হাতকড়া পরে ভিডিও কল। কী কাণ্ড - আমাকেই কেন? পুলিশের গুলি খেয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আমাকেই ফোন করতে হল??? কী করেছে তা তো জানিই না - উল্টে এবার না পুলিশ ভাবে আমি ওর দলের সদস্য!

    আবার খবরের খোঁজ। যা জানলাম সেই মিনুর বরের ঘটনার সাথে কত মিল। এক সাদা আমেরিকান ঐ ছেলেকে প্রায়ই রিফিউজি বলে গালি দেয় ওর দোকানে গেলে। একদিন ওকে বানিয়ে বানিয়ে চোর বানায়।
    ঝামেলা হয়। পুলিশ আসে। সাদা আমেরিকানকেও ধরে। কিন্তু আমার ক্লায়েন্টের কথা হল - আমি দোষ করিনি। আমাকে ধরবে কেন? ব্যস - পায়ে গুলি।

    মিনুর গল্প অপ্রাসঙ্গিক মনে হচ্ছে! আমার কাছে সব একাকার। অস্তিত্বের লড়াই- বেঁচে থাকার সংগ্রাম। রিফিউজি নিয়ে লেখা শুরু - আমি তো এখন দেখি সমাজের সব স্তর এই শব্দের সাথে নানাভাবে জড়িত।
    কে কিভাবে রিফিউজি হল - কে বা কারা বানালো? রিফিউজি শব্দের সৃষ্টি কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছিল? এই শব্দ আর একে ঘিরে নানারকম কর্মসংস্থান বানিয়ে কত লোকের রোজগার হচ্ছে? কত লোক অন্যায় সুযোগ নিচ্ছে! আইনের ফাঁকফোকর বুঝে নকল রিফিউজি হয়ে যাচ্ছে -
    আমার চোখের সামনে যত লোক দেখি - আমার তো মনে হয় সবাই কম বেশি উদ্বাস্তু! টাকা, পড়াশোনা আর স্বচ্ছল পরিবারের ছায়া থাকলে হয়ে যাই প্রবাসী! হাঃ!
    টাকা না থাকলে অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে বাস্তুহারা হলে - রিফিউজি —- অসাধারণ ক্লাসিফিকেশন।

    বিদেশে এসে যুদ্ধ করে টিকে গেলে NRI - আর যে অতি কষ্ট করছে টিকে যাওয়ার জন্য - তার দিকে নাক সিঁটকে সমালোচনা- বিদেশে থাকার এত লোভ!” - নিজে সহজে রাস্তা করতে পেরেছে বলে অন্যদের সংগ্রাম/ ইচ্ছে / স্বপ্ন ছোট করার অধিকার অর্জন করে নেয়।

    স্টিমুলাস চেক - কী সব কথা! বাড়ি বসে বসে গরিব লোককে খোলামকুচির মত টাকা দিয়ে ওদের কাজ করার মানসিকতা সরকার নষ্ট করে দিয়েছে! আমার চেনা বেশ কিছু অতি স্বচ্ছল পরিবার সেই নিয়মের ফাঁকে দিয়ে স্টিমুলাস চেকগুলো পেল! এক গুজরাটি পরিবার যার বেশ কিছু বাড়ি আর ব্যবসা - দশ হাজারের ডলারের বেশি স্টিমুলাস চেক পেয়ে নানা জায়গা ঘুরে এল। আর আমার সাথে কথা হলেই শুধু বলবে যে কাজ করার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার আনএম্প্লয়মেন্ট বেনিফিট আর স্টিমুলাস দিয়ে শ্রমিকদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। অনেক বাঙালি তো লজ্জায় বলতেও পারে না যে স্টিমুলাস পেয়েছে। যে মুখে সমাজ সংস্কার আর দাতব্যের এত গল্প - সোসাইটিতে নাক উঁচু স্টেটাস - ওদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় দয়ার দান যারা নেয় তারা খুবই নিম্নমানের মানুষ । কিন্তু নিজের ভাগ কেউ ছাড়েনা।
    হ্যাঁ - নিজের ভাগ ছাড়ার তো কথা ও না। কিন্তু অন্য কেউ ভাগ নিচ্ছে সেটা যদি হজম না হয় - তবে তো সমস্যা ।

    নির্লিপ্ত থাকা - এর চাইতে কৃত্রিম আর কিছু হয় না। যে যেখানে যে কাজই করুক - ভালবেসে করুক আর জোর করে করুক - নির্লিপ্ত কি করে থাকা যায় - আর কেন? অন্যায় দেখলে অনেকেই পাশ কাটিয়ে চলে যাই - আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় নির্লিপ্ত - আসলে কি তাই? নির্লিপ্ত থেকে কি কোন কাজ করা যায়? আর প্রতিটি পদক্ষেপের সাথে তার পূর্ব পদক্ষেপ জড়িত।
    আমি রিফিউজি কমিউনিটির সাথে কাজের কথা লিখতে গিয়ে অনেক নিজের কথা নিজের অনুভুতির কথা লিখি। আমার অনুভূতি, আমার জীবনের নানা ঘটনা, স্মৃতি - কোথাও না কোথাও এখনকার এই কাজের সাথে জুড়ে যায়। তখন তো বোধও কম ছিল, অভিজ্ঞতা নেই, চারপাশে মানুষ যা করে তার অনেক প্রভাব পড়ে।

    আমি যেখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি - আমার বোন বা আমার চেনাজানা গণ্ডীতে অনেকেই জিজ্ঞেস করে “ তুই এগুলি দেখলি কীভাবে? এত বাংলার ডায়লেক্ট কি করে বুঝিস? একই বাড়ি বা একই জায়গায় তো আমরাও বড় হয়েছি। কই, এমন কিছু তো দেখিনি?”

    সত্যিই তো আমি কি করে বুঝি এত ডায়লেক্ট - আমি প্রতি মুহূর্ত দগ্ধ হই যখন এমন কিছু ঘটনা মনে পরে যেখানে ক্ষমতা বা প্রতিপত্তি খাটিয়েছি। আমাদের রাজ্যে উপজাতি আছেন প্রচুর। আমার ছোট বেলায় রিক্সা চালক, দিনমজুর , বাজারে সব্জি বিক্রি - এসব কাজেই তাঁদের বেশি দেখতাম। এখন ভাবি - কত সংগ্রাম করেছে - নিজের মত করে জঙ্গলে পাহাড়ে শান্তিতে ছিল। চালাক, আধুনিক পরিযায়ীরা এসে পড়াশুনো, টাকা, ক্ষমতায়, নিজের যোগ্যতায় এগিয়ে গিয়ে রাজ্যের সিংহভাগ নিয়ে থাকতে শুরু করল ঠিকই - পাশাপাশি নিজের পাশে ওদেরও জায়গা তৈরি করতে, এগিয়ে নিয়ে যেতে আরো সাহায্য করতে পারত।
    উপজাতি রিক্সাচালক দেখে রিক্সা নেওয়া – কারণ, ওরা “বোকা” -বাংলা ভাষাটা ঠিক বোঝেনা, দরদাম করতে জানেনা - বাঙালি রিক্সা ৫ টাকা নিলে উপজাতি রিক্সাওয়ালা ৩ টাকাতেও রাজি হয়ে যেত। ঐ ২ টাকায় স্বপন কুমারের বই, লটকন্, হজমি, আচার, বড়ই - সব করেছি।
    আমাকে এখন এই স্মৃতিগুলি কষ্ট দেয়। ২০১৫ তে গিয়ে আমি পাগলের মত কিছু মুখকে খুঁজেছি । একটু ক্ষমা চাওয়া- একটু যদি নিজেকে কাজে লাগাতে পারি।
    কলকাতায় যে মহিলা মাছ কেটে দিতেন - দুই হাত জলে জলে সাদা- সবাই দরদাম করত - আমিও করতাম - এখন মনে হয় - কেন??? কেন করলাম আমি? হ্যাঁ, আমিও ধনী ছিলাম না - এখনও নই - হয়তো ঐ মাছ কাটার মহিলা অনেক স্বচ্ছল ছিলেন - উনি সুবিধে মত ঐ জীবিকাকেই বেছে নিয়েছেন। শ্রমের মর্যাদা হিসেবে ওটা উনার প্রাপ্য । কেন আমরা এত স্টিরিওটাইপড?

    এখন হয়তো অনেক পাল্টে গেছে - অনেক বছর যেতে পারিনা - সেই আমার মত করে আমার বিলাসী লড়াই করছি -

    এখানে আমি যখন দেখি- কোন দরদাম নেই, যে যা করছে - মিনিমাম ওয়েজ এর স্কেল মেপে ঠিক সেই ন্যায্য পাওনাটা পাচ্ছে, সারাক্ষণই “এই বুঝি ঠেক গেলাম” এই অস্থির ধুকপুকানি নেই - নিজের ছোটবেলার দেখা কিছু ঘটনার জন্য খুব মন কেমন করে।

    আমরা যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, মালিক দিদা একদিন আমার বাবাকে বসেছিল যে বাজার থেকে কামলা নিয়ে আসতে । আমি বুঝেছিলাম “কামলা” মানে কোন “তরকারি” ।

    আমার পরীক্ষা শেষ। আমিও বাবার সঙ্গে বাজারে গেলাম, বাবা বাজার করল। এরপর কাদের সঙ্গে কথা বলল। রিক্সা করে বাড়ি চলে এলাম । খুব কৌতূহল । বাড়ি গিয়ে “কামলা” তরকারি দেখব।
    কিন্তু দিদার হাতে বাবা কিছু দিলই না - উল্টে বলল “কামলা আইতাসে।”
    যাই হোক্ - সেই কামলা তো এল! আমি তো স্তব্ধ - তরকারির বদলে মানুষ??
    বাবা ডেকে বলল “মাসিমা, কামলা আইসে।” - আমরা বাড়ি আসার প্রায় ১ ঘন্টা পর এসেছিল। এখন বুঝি, ওকে হেঁটে আস্তে হয়েছিল। আমাদের ঐ মালিক দিদা কামলা দেখে মোটেই খুশি হয়নি - বাবাকে ডেকে বললেন
    “কিতা আনলা - গায়ে তো জোরই নাই। এই বুড়া কামলারে দিয়া কি হইব। আমার টাকাডি জলে যাইব।”
    আমি কত্ত ছোট - ক্লাস ওয়ান কি টু হবে - এখনও আমার গাল গরম হয়ে যায় মনে পড়লে। আমি, আমার বোন, পাশের বাড়ির কুট্টু, ভুতু, টিনা - সবাই উত্তেজিত ছিলাম কামলা দেখব বলে। আমাদের সামনে নিজের ঐরকম evaluation কেমন লেগেছিল কামলার? জানিনা।
    মালিক দিদা অর্ধেক টাকায় রফা করেছিল। বাবু টাকা আলাদা করে দিয়েছিল। কামলার কাজ ছিল সারা বাড়ি, পুকুরের চারপাশের আগাছা পরিষ্কার করা। আমি আর আমার চার সঙ্গী - যারা সবাই আমার চাইতে ছোট - আমরাও আমাদের ছোট ছোট হাতে কামলার সঙ্গে কাজ করেছিলাম কিছুক্ষণ।

    অনেক কথা ভুলে যাই। কিছু কিছু কথা সপাং সপাং করে আঘাত দেয়।

    একদিক দিয়ে ভাবতে গেলে - ঐ মালিক দিদা তো ঠিক। টাকা দিয়ে কাজ করাবেন - বুঝে শুনেই তো নেবেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত দুর্বল মানুষের কি কোন জায়গা নেই? নিজের কাছেও গুলিয়ে যায়। কী এর সমাধান? জেনেশুনে যাচাই করে, বিচার করেই যে কোন সার্ভিস কেনা বেচা করা হয় এবং উচিৎ। একই জিনিস নানা ব্র্যান্ড মার্কেটিং-এর দৌড়ে টিকে থাকছে যার যার জায়গায়। কিন্তু মানুষের মার্কেটিং ….সেটাও জরুরী। কিন্তু এভাবে?

    এখানের যত রিফিউজি পরিবার আমি জানি - আমায় যদি বলা হয় একটা গরিব পরিবারকে আলাদা করে দেখাতে - আমি পারব না। আমাদের দেশের হিসেবে এরা কেউ গরিবই না। এত সিকিউরিটি কোত্থাও পাবে কি না জানিনা।
    SSN আছে, কাজ করার পার্মিশন আছে, গ্রিনকার্ড পেয়ে যায় ১/২ বছরের মধ্যে - সরকারি সুযোগ - স্বাস্থ্য, খাবার - বিনে পয়সায় স্কুল -
    নানারকম ভাতা - কী চাই আর আপাতদৃষ্টিতে?
    গরিব শব্দটা আপেক্ষিক । তেমন ধনী , ভাল, খারাপ - সবগুলোই - নির্ভর করছে অন্য একটি মাপের উপর।
    বেঁচে থাকার জন্য যা যা মিনিমাম দরকার - সেসব সব তৈরি থাকলে সংগ্রাম তো অনেক সহজ হওয়া উচিত।
    শীততাপনিয়ন্ত্রিত বাড়ি, আসবাবপত্র, পরিবার চালানোর জন্য রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া, কাজ শেখানো, নানা রকম ট্রেনিং - কত ব্যবস্থা । এরপরও ক্লার্কস্টন শহর খুসি না ।

    এই অখুসির প্রধান কারণ হল অশিক্ষা। শর্টকাট পদ্ধতিতে টাকা রোজগার, আইনের ফাঁক খুঁজে অসদ্ব্যবহার।

    এই যে এত এত টাকা পেল স্টিমুলাস চেক - কিচ্ছু পাওয়া যাবে না। পরের মাসে আবার বাড়ি ভাড়া চেয়ে আবেদন। ইউটিলিটি বিলের জন্য আবেদন। আমি এক মহিলার কুড়িহাজার ডলার পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ার আ্যাপ্লিকেশন মঞ্জুর করতে হয়েছে। রিফিউজি হিসেবে এ দেশে এসেছিল। এখন সিটিজেন। চোদ্দহাজার ডলার স্টিমুলাস পেয়েছে! এরপরও কুড়িহাজার???
    আমার কুর্দিশ কলিগের নেটওয়ার্ক তাকে এই টাকা পাইয়ে দিয়েছে!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | ২৩৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Ramit Chatterjee | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৬497968
  • আসলে কিছু লোক যেখানেই যাক তার অতীত তাকে ছাড়ে না, আগেও দুনম্বরী করতো, ফাঁক খুজত দেশে থাকতে, এখানেও তাই করছে। এই মানুষ গুলোর জন্যই সমস্যার সূত্রপাত। এরা আমেরিকার নাগরিক হয়েও মনে মনে তার দেশেরই নাগরিক এখনো, মনটা উন্নত করতে পারে নি।
  • Ranjan Roy | ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:৩৩497974
  • তোমার যন্ত্রণার খানিকটা ছুঁতে পারছি, সবটা নয়।
    খুব ভালো তোমার দেখার চোখ। 
  • Amit | 203.0.3.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০১:৪৮497981
  • এটা একটা অদ্ভুত ডিলেমা। শরণার্থী বা অভিবাসী যারাই অন্য দেশে আশ্রয় নেন স্বেচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়ে , ইন দা লং রান তাদের কি সেই ফেলে আসা দেশের কালচার , অভ্যাস আঁকড়ে থাকা উচিত নাকি সব ভুলে গিয়ে নতুন দেশের কালচারের সাথে পুরোপুরি এসিমিলেট করে যাওয়া উচিত ? এর কোনো উত্তর হয়না  বোধহয় । 
  • Ramit Chatterjee | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৩০497988
  • @অমিত, আমি বলবো নিজের হেরিটেজ, সংস্কৃতি ভোলা উচিত নয় কিন্তু সভ্য নাগরিক হিসেবে অ্যাসিমিলেট করে যাওয়া উচিত। নাগরিক নিয়ম গুলো, সভ্য অভ্যাস গুলো মেনে চলা উচিত।
  • Ramit Chatterjee | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৩২497989
  • আমি মানছি, সবাই শুরুতেই এটা পারবে না, ভুলভ্রান্তি হবেই। কিন্তু মানিয়ে নেওয়া ও শেখার চেষ্টা করতে হবে। হোয়েন ইন রোম, একট লাইক রোমানস।
  • Amit | 203.0.3.2 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:০১497992
  • আমি এগ্রি করি সেটাই হওয়া উচিত- এভেনচুয়ালি ওই শুড এসিমিলেট। কিন্তু স্বেচ্ছায় যারা অন্য দেশে কোয়ালিফাইড স্কিলড মিগ্রান্ট হিসেবে মুভ করেছেন  তাদের ক্ষেত্রে এটা যতটা সোজা বা সাধ্যের মধ্যে , যারা প্রাণের দায়ে পালতে বাধ্য হয়েছেন কোনো রেফিউজি ক্যাম্পে , সেখান থেকে  হয়তো নিজের চয়েস ছাড়াই কোনো ইউরোপের দেশে বা আম্রিগায় দেশে চলে আসতে হয়েছে - তাদের ক্ষেত্রে এতটা সোজা নয়। 
  • Ramit Chatterjee | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:২২497996
  • সে কারণেই আমার মনে হয় নিজের কালচারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন দেশেই যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত রিফিউজি দের। তাহলে এই কালচার শক ব্যপারটা অতটা হবে না। এটা সম্পূর্ণ আমার অভিমত, আমি ভুলও হতে পারি। সবাই নিজের পছন্দ মতো দেশে যেতে পারবে, সেটাও সবসময় সম্ভব নয়, লটারি তে দেশ এর জন্য সিলেকশন হয় অনেক সময়। নিজের কাছাকাছি সংস্কৃতির দেশে গেলে এই দুম করে এই অথৈ জলে পড়তে হয়না।
  • | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৩২497997
  • রমিত, আপনার এই ধারণা খুব একটা ঠিক মনে হয় না। দেশভাগ এর পারে দুইদিকেই যে লোক চলাচল হয়েছে তা নিজের দেশের সংস্কৃতির একেবারে কাছাকাছিই হয়েছে। কোন কোন সময় তো জাস্ট বাড়িটাই দুই আধখানা হয়েছে  দেশের সীমানায়। মানে হয়ত গোয়ালঘর আর উঠোনের আর্ধেক অন্য দেশে। কিন্তু তাতেও কালচারাল শক বেশ ভালমত হয়েছে। বিভিন্ন মেমোয়ার্সগুলো পড়লে দেখা যায়।   পাকিস্তানের ইন্তিজার হুসেনের লেখাগুলোয় দেখি  পাকিস্তানে গিয়ে সবকিছুই অচেনা অন্যরকম লাগছে এর মধ্যে কোকিলের ডাক শুনে হঠাৎ মনে হচ্ছে আরে এ ত আমার চেনা পাখি! তাহলে এখানেও কোকিল ডাকে! কি আশ্চর্য্য! বাড়িতেও শুনেছি প্রথম এসে মা  দিদাদের সবই খুব অচেনা অন্যরকম লাগত। 
    তো এরকমই আর কি। 
     
    সুকন্যাকে পরে লিখছি। 
  • Ramit Chatterjee | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:১৯498002
  • সেটা তো বারাসাত থেকে বালিতে নতুন বাড়ি কিনে গেলেও লোকের নতুন নতুন লাগে। চারপাশ টা অন্যরকম লাগে। এই যে সম্পূর্ণ নতুন দেশ, সম্পূর্ণ নতুন ভাষা, সম্পূর্ণ নতুন চাল চলন, নতুন আইন কানুন, নতুন খাওয়া দাওয়া , এই হ্যাপা টা কি পোহাতে হয় ভারত থেকে বাংলাদেশে গেলে বা পাকিস্তান থেকে ভারতে গেলে। কিন্তু আমি আজ যদি হঠাৎ জাপান বা চিনে যাই কিছুটা কালচার শক তো হবেই। ভাষা কিছুই জানিনা, সাইন ও পড়তে পারবো না রাস্তার। সবই গুগলের হেল্প নিয়ে করতে হবে।
  • dc | 122.174.77.6 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১২:১৫498003
  • আমার মনে হয়, নিজের দেশের কালচারের মধ্যেই আটকে থাকবো না নতুন দেশের কালচারে নিজেকে অ্যাসিমিলেট করে নেবো এই ডাইলেমাটা বোধায় প্রথম জেনারেশান ইমিগ্রান্ট বা রিফিউজিদেরই থাকে। সেকেন্ড বা থার্ড জেনারেশান সাধারনত নতুন দেশের কালচারেই মিশে যায় (অবশ্যই কিছু এক্সেপশান থাকে)। 
     
    তাছাড়া যে অন্য দেশে এলো সে যেমন নতুন নিয়ম কানুনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবে এটা এক্সপেক্টেড, তেমনি নতুন দেশের মানুষ তার সাথে কেমন ব্যবহার করে সেটাও বোধায় একটা ফ্যাক্টর। যেমন ধরুন ভারতীয়দের মতো রেসিস্ট আর জেনোফোবিক লোকজন অন্য অনেক দেশেই নেই, কাজেই ভারতে এসে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া বোধায় একটু কঠিন। খুব সোজা উদাহরনঃ কতো মাড়োয়ারি কলকাতায় অনেক জেনারেশান ধরে আছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে দিব্যি বাংলাও বলতে পারেন, কিন্তু কোন বাঙালি যেইমাত্র জানতে পারেন যে অপরজন মাড়োয়ারি, অমনি ওনাকে নীচু চোখে দেখতে শুরু করেন। কাজেই দুদিক থেকেই কিছুটা চেষ্টা থাকা উচিত মনে হয়। 
  • শক্তি | 2405:201:8005:9078:e173:7483:bc0b:5372 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০২498004
  • এত কাছে যেতেও পারিনি,রিফিউজী জীবনের সব জ্বালা বুঝতে ও পারিনি।সহমর্মিতাপূর্ণ লেখাটি পড়ে শিউরে উঠলাম শুধু।
  • তন্বী হালদার | 122.163.30.232 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৩:০৩498005
  • খুব মন দিয়ে পড়ি। নিজের গায়েও ছপাৎ ছপাৎ চাবুক মারে কেউ
  • Ramit Chatterjee | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৩২498012
  • DC জনাব, জাপানের লোকেরা ভারতীয়দের থেকে অনেক বেশি জেনোফোবিক, নিজেদের দেশে। 
  • | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৫:৫৭498014
  • সে দেশের মধ্যেই দক্ষিণ দিকে গেলেই ভাষা থেকে আচার ব্যবহার কিছুই চেনা লাগে না।  বেশ অনেক আগে ১৮০০-১৯০০ র মধ্যে যাঁরা এদিক ওদিক যেতেন তাঁদের লেখা মেমোয়ার্স  পড়লেই দেখা যায়। শুধু দক্ষিণই বা কেন জলধর সেনের ভ্রমণ কাহিনী পড়লেও অস্বস্তি অসুবিধে বোঝা যায়। 
     
    যাই হোক এখানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। একমত হলাম না এইটুকুই থাক।
  • hu | 2603:6011:6506:4600:4110:1ccf:6aae:b1b5 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২১:৫১498028
  • দ-দিকে লিখছি -

    এই জায়গাটা -
    "পাকিস্তানের ইন্তিজার হুসেনের লেখাগুলোয় দেখি  পাকিস্তানে গিয়ে সবকিছুই অচেনা অন্যরকম লাগছে এর মধ্যে কোকিলের ডাক শুনে হঠাৎ মনে হচ্ছে আরে এ ত আমার চেনা পাখি! তাহলে এখানেও কোকিল ডাকে! কি আশ্চর্য্য! বাড়িতেও শুনেছি প্রথম এসে মা  দিদাদের সবই খুব অচেনা অন্যরকম লাগত।"

    এই যে কোকিলের ডাক শুনে মনে হল আরে এ দেশে তো আমার দেশের পাখিই ডাকে বা কোনো খাবার দেখে মনে হল আরে এ তো আমার দেশেরই রান্না - এগুলোর জন্যই ভৌগোলিক বা সাংস্কৃতিক ভাবে কাছাকাছি দেশে মাইগ্রেট করলে প্রবাস সহনীয় হয়। আমার একজন পূর্ব ইউরোপের বন্ধু আছেন। তিনি আমেরিকার নাগরিক। নিজের দেশে যেতে পারেন না, কিন্তু সে দেশের কাছাকাছি পূর্ব ইউরোপ বা মধ্য এশিয়ার কোনো দেশে গরমের ছুটির মাসখানেক কাটিয়ে আসেন। সেসব দেশ খাতায় কলমে বিদেশ হলেও তাদের ভাষা, তাদের খাবার-্দাবার, তাদের উৎসব, গাছপালা তাঁর ফেলে আসা দেশের মত। খুব সম্প্রতি আমি নিজেও ব্যাপারটা অনুভব করলাম। কোভিডের চক্করে আমেরিকা থেকে বেরোতে না পেরে পোর্তোরিকো ঘুরে এলাম। সেই দ্বীপ ভরে আছে কৃষ্ণচূড়া আর রাধাচূড়া গাছে। সে দেখে এমন আনন্দ হল যে ভারতে না যেতে পারার কষ্ট কিছুটা ভুললাম। ভারত যেহেতু বহুভাষী দেশ, তাই ভারতের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটা পূর্ব ইউরোপ বা মধ্য এশিয়ার মত সরল নয়। ভাষা আলাদা, খাদ্যাভ্যাসও আলাদা। কিন্তু গাছপালা, ফুল-্ফল, আকাশের একই জায়গায় একই নক্ষত্র দেখতে পাওয়া এসবই খুব আপন মনে হয় প্রবাসে এসে। যাঁরা অনিচ্ছায় গৃহচ্যুত হয়েছেন তাঁদের পূনর্বাসনের ব্যবস্থা যদি কাছাকাছি দেশে করা যায় তার একটা ভালো দিক আছে বইকি। তবে এটা ঠিক যে অনেকের কাছেই কোনো চয়েস থাকে না, আবার অনেকে নিজের ইচ্ছেতেই প্রথম বিশ্বের দেশে চলে আসা পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে যে দেশে আসছেন সে দেশের সংস্কৃতি, আইনকানুনের সাথে মানিয়ে নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। (এই বিষয়ে দ-দি কোনো মন্তব্য করেনি। এটা আমি কথা প্রসঙ্গে লিখলাম।)
  • ছাগলছানা | 2600:1700:12ce:e80:64bd:75b:3357:ec9f | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:১৭498029
  • "এটা একটা অদ্ভুত ডিলেমা। শরণার্থী বা অভিবাসী যারাই অন্য দেশে আশ্রয় নেন স্বেচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়ে , ইন দা লং রান তাদের কি সেই ফেলে আসা দেশের কালচার , অভ্যাস আঁকড়ে থাকা উচিত নাকি সব ভুলে গিয়ে নতুন দেশের কালচারের সাথে পুরোপুরি এসিমিলেট করে যাওয়া উচিত ? এর কোনো উত্তর হয়না  বোধহয় । "

    এর আসলে খুবই সহজ উত্তর
    হয়। যে দেশে যখন থাকবে তখন সেই দেশের কালচার কে সম্মান করে তাকেও নিজের জীবনে এসিমিলেট করা দরকার। নিজের কালচার কেউ ছাড়তে বলেনা ​​​​​​​কিন্তু তা বলে নতুন দেশে এসে তাদের কালচার কে ত্যাজ্য করে নিজের কালচার চাপিয়ে দিলে তাদের থেকে বন্ধুত্ব এবং সখ্যতা আশা করা শুধু ভুল না ​​​​​​​অন্যায় 
  • Tim | 2603:6010:a920:3c00:9531:98a3:186a:4ef7 | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৪৮498032
  • সুকন্যাদির এই পর্বের লেখাটায় বেশ কিছু গোলমাল আছে, বিশেষ করে যেখানে একটা রিলেটিভ স্কেলে প্রিভিলেজের তুলনা করা হচ্ছে। এবং আমি অতীতের অনেকের লেখাতেই  লক্ষ্য করেছি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এন আর আই রা যে আসলেই কত আলাদাভাবে যে যার জায়গায় আছেন সেই বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব রয়েছে, যা এই লেখাতেও স্পষ্ট। 
     
    প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যারা একদিন এনারাই হবেন তাদের পারিবারিক অবস্থান, আর্থিক সঙ্গতি, এবং কিভাবে তারা কেরিয়ার তৈরী করেছেন সেগুলো আলাদা। এই দেশে আসার একাধিক সময় ও পথ আছে। সুকন্যাদি যাঁদের স্বচ্ছল বলেছে তারা অনেকে এদেশে হাইস্কুল বা আন্ডারগ্র‌্যাডের সময় চলে আসে । সেই সময় চলে আসলে পরবর্তীকালে রেসিডেন্সি নিয়ে সুবিধা হয়, ফলে কর্মসংস্থান এবং ভিসা সংক্রান্ত সমস্যা হয়না। অবশ্যই ডলারে পেমেন্ট করার মত টাকা বা আর্থিক সংস্থান থাকা একটা বিশাল প্রিভিলেজ, কিন্তু আমি এমন লোককেও জানি যিনি সন্তানকে দুধেভাতে রাখার জন্য বাড়িঘর বেচে, পিএফের টাকা তুলে এই "প্রিভিলেজ " দিতে চেয়েছেন। কাজেই কে প্রিভিলেজড আর কে নয় সেটা এভাবে বলা যাবেনা। ভদ্রলোক কেন্দ্র সরকারে চাকরি করেন, ঐ একই আপিসে আমার এক সম্পর্কিত দাদাও চাকরি করায় উনি কিছু ব্যাপারে আমার পরামর্শ চান, এবং আমি এসব জানতে পারি। 
     
    কিন্তু উপরোক্ত পপুলেশন, ভারতীয়দের মধ্যে এখনও তত বেশি না। চীন থেকে এই ধরণের ছাত্রছাত্রী বরং অনেক বেশি। এই পপুলেশনের বাইরে, অসংখ্য এন আর আই এই দেশে আসে মাস্টার্স বা পি এইচ ডি করার সময়। এই পড়াশুনো করার জন্য টাকা লাগেনা, উল্টে স্কলারশিপ পাওয়া যায়। এই স্কলারশিপ, সাধারণত, এমনভাবে ডিজাইন করা যাতে একজন ছাত্র ভালোভাবে থেকেও মাসে মাসে অল্প কিছু টাকা জমাতে পারে। আমি এদেশে আসি ২০০৫ সালে, তখন মাসে ৭৫০ ডলার করে আমাদের দেওয়া হত। আমার বাড়িতে সেই সময় কোন সঞ্চয় ছিলোনা, একজন আত্মীয় প্লেন ভাড়ার টাকা ধার দেওয়ায় আমি এখানে আসতে পারি। এবং এইসবই পরীক্ষা দিয়ে, স্কলারশিপ জোগাড় হয়ে যাওয়ার পরে। পরীক্ষা দিতে গিয়ে আর ইউনিভার্সিটির অ্যাপ্লিকেশন ফি দিতে গিয়ে আমার জমানো টাকা শেষ হয়ে গেছিলো। আমার সাথে এদেশে যারা পড়তে আসে সেইসময় তাদের অনেকের প্রচুর ধার ছিলো, কারণ তারা পরীক্ষায় যথেষ্ট ভালো করতে না পারায় পুরো স্কলারশিপ পায়নি। এখন, তাদের বিপুল ধারের বোঝার কথা ভেবে আমার মনে হত আমি তো প্রিভিলেজড, কারণ আমার প্লেন ভাড়ার ধার এক দুমাসেই শোধ হয়ে গেছিলো। দুমাস পরের আমার সাথে কথা বললে কেউ নিশ্চয়ই এরকমই ভাববে। কিন্তু সত্যিটা আসলে কি? 
     
    জটিলতার এখানেই শেষ নেই। উপরে লিখলাম যে ৭৫০ ডলার স্কলারশিপ। তার থেকে আমি মাসে ১৫০ টাকা বাড়িভাড়া দিতাম, তিনজনে থাকতাম টু বেডরুম বাড়িতে। কারো কারো কাছে এটা খুবই ভালোভাবে থাকার অবস্থা (যেমন আমি ), আবার করো কারো কাছে ঐ একই বাড়ি বাসের অযোগ্য। আমি এমন ছাত্রদের দেখেছি যাদের প্রচুর ধার থাকত। মানুষের সখ আহ্লাদ আলাদা হয়, লাইফস্টাইলও। এদেশে আপনি চাইলে খুবই কম খরচে থাকতে পারবেন। আবার চাইলে অনেক টাকা ওড়াতেও পারেন। ভালোভাবে থাকার সংজ্ঞা সবার কাছে সমান না। আসুস এর ল্যাপটপ না ম্যাক কিনবেন? গাড়ি কিনলে কত পুরনো কিনবেন? ভালো খাওয়া বলতে আপনি কী বোঝেন ? বাড়িতে রান্না করবেন না বাইরে খাবেন? থিয়েটারে সিনেমা? বন্ধু বান্ধব নিয়ে পার্টি? ভালো জামাকাপড় জুতো বলতে আপনি কী বোঝেন? সর্বোপরি, আপনি কি অন্যের জীবনের নিক্তিতে নিজেকে যাচাই করতে অভ্যস্ত?  এই সব এবং এর বাইরেও আরো যা যা আপনাকে গড়েছে সেসবের প্রতিফলন ঘটবে এই আপাত নিরীহ "ভালোভাবে" থাকার সংজ্ঞায়। এবং ঐ ৭৫০ ডলার তখন বেশি বা কম মনে হতে পারে। 
     
    প্রতিটি সেন্ট উপার্জন করে তবে খরচ করব এই উপলব্ধি সবার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমাদের মত অনেকের কোন ফিরে যাবার জায়গা ছিলোনা, দেশের সেফটি নেট ছিলোনা, উল্টে সেখানে টাকা পাঠাতে না পারলে মুশকিল ছিলো । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদার এডুকেশন সিস্টেমেও মাস্টার্স বা পি এইচ ডি তে খারাপ করলে বা ফাঁকি দিলে তাদের জন্য তেমন কোন সহানুভূতি বরাদ্দ নেই, তারা বিতাড়িত হয় নির্মমভাবে। এবং বিশেষ করে ভারতীয়দের ইমিগ্রেশন ম্যালপ্র‌্যাক্টিসের কল্যাণে ইউ এস গভর্নমেন্ট গ্র‌্যাজুয়েট লেভেলের ছাত্রদের এদেশের রেসিডেন্সি পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব করে রেখেছে। তাদের এদেশে এসে থিতু হওয়ার জন্য কোন বাজেট নেই, কোন প্রোগ্রাম অফিসার এসে তাকে ইলেক্ট্রিক বিল দিতে হবে বা ফোন বিল দিতে হবে এসব শেখায় না, ডিফল্টার হলে টাকা দেয়না। তাদের মাসের খাবারটুকু কেনার জন্য গঞ্জনা মুখভার ইত্যাদি অপমান সহ্য করে লোকের থেকে রাইড চাইতে হয়, যতদিন না টাকা জমিয়ে একটা লজঝরে গাড়ি কেনা যাচ্ছে। তাকে গাড়ি চালানো শেখানোর কেউ নেই। আপনি কত কিছুর জন্য অন্যের ফেবার নেবেন? 
     
    আমার চেনা দুজন সময়মত ইলেকট্রিক বিল ফোন বিল না দেওয়ায় তাদের কানেকশন কেটে দেওয়া হয়েছে দেখেছি। আমাদের বাড়ির সব কটা ম্যাট্রেস জঞ্জালের ভ্যাটের পাশ থেকে কুড়িয়ে আনা ছিলো (অন্যদেরও সবার তাই ছিলো)। আমার রুম্মেটের পিঠ প্রতিদিন সকালে বেড বাগসের কামড়ে চিত্রিত থাকত। এইসব একেবারেই দুঃখের কথা নয়। নদীর কোন পাড় থেকে দেখছেন তার ওপর নির্ভর করে এগুলো প্রিভিলেজও মনে হতে পারে।
     
    আইন বা নিয়ম মেনে কাজ করা কি প্রিভিলেজ? বিশেষ যে নিয়ম সে নিজে বানায় নি? এই মুহূর্তে আমার এক বাল্যবন্ধু তার ইমিগ্রেশন পিরিয়ডের শেষ ছমাসে দাঁড়িয়ে। খুবই উচ্চমানের গবেষক (নেচার ইত্যাদিতে পেপার আছে ) কিন্তু সামনে কোন চাকরি নেই, জমানো টাকাও খুব একটা নেই কেননা সে নিয়ম মেনে একটা যুদ্ধ করছে গত পনেরো বছর। সে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস। তার বয়স চুয়াল্লিশ, বিয়ে থা করেনি, সেই যে ছাত্রাবস্থায় রুম্মেট নিয়ে কম খরচে থাকতে শুরু করেছিলো, আজও তার পরিবর্তন হয়নি।  সে কি প্রিভিলেজড? তাকে কি ইউ এস সরকার একটা গ্রিন কার্ড লটারি অফার করলে সে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবে? আমি জানিনা। এইসব যুদ্ধ জেতার জন্য এই এসে আপনাকে নিয়ে প্রবন্ধ লিখবেনা, বরং এন আর আই মানেই গজদন্তমিনারে আসীন কোন অলীক মানবসন্তান এইরকম একটা ধারনার সাথে আপনাকে যুদ্ধ করে যেতে হবে আমরণ। 
     
    আমার দুই এন আর আই (রেসিডেন্ট) প্রাক্তন রুম্মেট, বাবা মা পরপর মারা যাওয়ায় দেশে যেতে পারলোনা। তারা এদেশের ডক্টরেট, টেনিওর্ড প্রফেসর। এদের  কি আন্ডারপ্রিভিলেজড বলবো? 
     
    আর মানবাধিকার। ইজিপ্ট ইরান রোমানিয়া ইউক্রেন বসনিয়া সার্বিয়া থেকে আসা, কলম্বিয়া থেকে আসা ছাত্রদের সাথে কথা বললে জানা যায় পরিবার পরিজন সংস্কৃতি এইসব নিয়ে আমাদের অশ্রুজল খুব একটা ইউনিক কিছু  নয়। ভারতীয়রা তাও চাইলে বাড়ি যেতে পারে। নানাবিধ ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্বার্থে যায়না । অন্যদেশের লোকেরা জাস্ট দেশে ফিরলে অ্যারেস্ট হবে বা তাদের ঘটিবাটি বিক্রি করে দেওয়ার মত পেনাল্টি হবে সরকারী তরফে তাই যেতে পারেনা। একজন ইউক্রেনিয়ান বন্ধু গত কয়েক বছর সেন্ট্রাল এশিয়ায় গিয়ে একমাস করে থেকে আসে, দেশের ভাষায় কথা বলতে পারবে কদিন, শুধু এইজন্যে। ইজিপ্টের বন্ধু বলে তার বাচ্চাকে তার বাবা মা দেখতে পেলোনা ইজিপ্ট সরকারের জন্য। এরা বেশি দূর্ভাগা না রোহিঙ্গা রিফিউজি? এর কোন উত্তর হয়? এবং উপরে বর্ণিত প্রতিটি মানুষ অন্যদের সম্পর্কে খুবই সহানুভূতিশীল, অন্যদের লড়াইকে ছোট করা তো দূরস্থান এদের চিরকাল উপযাচক হয়ে নানা প্রোগ্রামের অংশীদার হতে দেখেছি। 
     
    কাজেই রোহিঙ্গা রিফিউজির দুঃখ বা প্রিভিলেজ লেভেলের সঙ্গে অন্য এন আর আইদের প্রিভিলেজ লেভেল বা দূর্দশার তুলনা খুবই গোলমেলে হবে। বাকি এই লেখায় প্রোগ্রামের যা বাস্তব অবস্থা ফুটে উঠছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। কালচারাল শক বা অ্যাসিমিলেশন নিয়ে কিছু লিখছি না, সে আরেক মহাভারত। 
  • r2h | 2405:201:8005:9947:28d2:acfd:5660:721b | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২২:৫৭498034
  • অ্যাসিমিলেশন জটিল ব্যাপার। এই যে নস্টালজিয়া নিয়ে এত কাব্য সাহিত্য, নতুন পরিস্থিতিতে অ্যাসিমিলেট না করতে পারা নিয়েই না।

    কী যেন একটা বিখ্যাত কবিতা আছে, ছোটবেলায় পড়েছিলাম, একটি গরীব মেয়ে গ্রামের থেকে লন্ডনে এসেছে কাজ করতে, একটা এঁদো গলির মধ্যে দিয়ে হেঁটে যায়, সেখানে একটা থ্রাশ ডাকে, সেই তার গ্রামের আত্মীয়।
    সেসব যাগ্গে।

    "রিলেটিভ স্কেলে প্রিভিলেজের তুলনা" - এইটা আমারও অস্বস্তি ও আপত্তি ইত্যাদির জায়গা। এই তুলনাটা জাস্ট হয় না। দূর দূরান্তেও হয় না।
  • | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:০০498035
  • পৃথিবীটা আসলে বড্ডই আনফেয়ার জায়গা। তাই কে প্রিভিলেজড আর কে নয় সেইটা বলা খুব মুশকিল। 
  • Ramit Chatterjee | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:৫৫498052
  • পরে আবার আলোচনা হবে খন এই বিষয়ে, আপাতত মুলতুবি থাক, পৃথিবীতো আনফেয়ার বটেই, তবে মানুষই বেশি আনফেয়ার।
  • বিপ্লব রহমান | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:০১498054
  • সুকন্যার এই ধারাবাহিকের জন্য অপেক্ষায় থাকি। কিভাবে দেশ কাল পাত্র, অতীত ও বর্তমান এক হয়ে যায়, কেন্দ্রে থাকে মানবিক মূল্যবোধের ছাইচাপা আগুন। 
    খুব সাবলীল রিপোর্টাজ ধাঁচের লেখা। আগেও বলেছিলাম বোধহয়, এই ধারাবাহিক পূর্ণাঙ্গ বই হওয়ার দাবি রাখে। শুভ
  • kaktarua | 134.238.147.14 | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২০:২২498078
  • টিম এর সাথে একদম সহমত। ধন্যবাদ বিশদে লেখার জন্য। সুকন্যার এই পর্ব টা পরে মনে হচ্ছিলো কোথায় একটা তাল কাটছে। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন