এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  কাঁটাতার

  • ‘সূর্য দীঘল বাড়ী’- শুধু একটি সময়ের মানবিক দলিলই নয়, আরও অনেক কিছু

    রঞ্জন রায়
    পড়াবই | কাঁটাতার | ২২ আগস্ট ২০২১ | ৩০০৪ বার পঠিত
  • ১৯৪৭ উত্তর ভারতবর্ষ জন্ম দিয়েছিল নতুন কিছু শব্দবন্ধের। এই প্রবীণরা কখনও স্বাধীনতা বলেননি, বলেছেন পার্টিশন, তৃতীয় বিশ্বের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে শব্দ ভারতের অবদান। পার্টিশনের হাত ধরে এসেছে উদ্বাস্তু। রিফিউজি কলোনি। তারও পরে এসেছে অনুপ্রবেশ। বসেছে কাঁটাতার। এসেছে এনআরসি, নতুন নাগরিকত্ব আইন। শুরু হয়েছে "বৈধ-অবৈধ" বিচার। শোনা যাচ্ছে, নতুন শব্দবন্ধ, "অবৈধ অনুপ্রবেশ"। যাঁরা বিচার করছেন, তাঁদের বিচার কে করে। এসব শব্দের, আখ্যানের জন্ম হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দেশভাগের এই আদি পাপ, মুছে দেবার আপ্রাণ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, এভাবেই থেকে গেছে বেদনায়, ভাষায়, আখ্যানে। থেকে গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে। সেই আখ্যানসমূহের সামান্য কিছু অংশ, থাকল পড়াবই এর 'কাঁটাতার্' বিভাগের দ্বিতীয় সংখ্যায়।



    “মন্বন্তরে মরিনি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি”।

    না, আবু ইসহাকের লেখা ১৯৫৫ সালে প্রথম প্রকাশিত এই উপন্যাসটিকে অমন করে একটি জনপ্রিয় কবিতার ট্যাগ-লাইনে দেগে শেষ করা যায় না – যদিও দেশভাগ, মন্বন্তর এবং মহামারীর পটভূমিতে এই কাহিনীটির নির্মাণ। কারণ অনেকগুলো; কিন্তু মুখ্য কারণ এক নারী। তার নাম জয়গুন। গোটা উপন্যাসের বয়ানে সে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তাদের সূর্য-দীঘল বাড়ির পাশের তালগাছের মত। তার পাশে লিলিপুট হয়ে গেছে ধর্ম-ব্যবসায়ী ফকির ও মৌলবি, তার প্রবল পরাক্রান্ত স্বামী ও সমাজের মাথায় বসে থাকা মানুষগুলো।

    আমরা জানি, সমস্ত বিপর্যয়ে-মন্বন্তরে, বন্যায়, মহামারী ও রাষ্ট্রবিপ্লবে সবচেয়ে বেশি আঘাত আসে মেয়েদের উপর। আর সে মেয়ে যদি প্রান্তিক সমাজের হয়, তো কথাই নেই। এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন সাধারণ আটপৌরে নারী, গ্রামীণ মুসলমান সমাজের একেবারে দিন-আনি-দিন-খাই অংশ থেকে উঠে আসা মেয়ে। দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, পৌরুষের বলদৃপ্ত হুংকার ও ক্ষমতার প্রসারিত লোভের হাত, ধর্মগুরুর অনুশাসনের রক্তচক্ষু – সব কিছুর সামনে সে দাঁড়ায় – প্রথমে ভয়ে কাঁপতে থাকা দুরু দুরু বুকে, তারপর একটু একটু আপোশে। কিন্তু সবার কাছে প্রতারিত হতে হতে তার জীবনবোধ তাকে শেখায়, লেখকের বকলমে, ‘জীবন রক্ষা করাই ধর্মের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মূলমন্ত্র। জীবন রক্ষা করতে ধর্মের যে কোন অপ-আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে সে প্রস্তুত। উদরের আগুন নিবাতে দোজখের আগুনে ঝাঁপ দিতেও তার ভয় নেই’ (পৃঃ ১২৯)। সে দাঁড়ায় শিরদাঁড়া সোজা করে। কাহিনীর শেষে সূর্য দীঘল বাড়ীর দুই ঝোপড়ি ছেড়ে সে তার সন্তানদের নিয়ে  বেরিয়ে পড়ে। নতুন করে বিশ্বাস জন্মেছে – খোদার বিশাল দুনিয়ায় মাথা গুঁজবার একটু ঠাঁই তারা পাবেই। এইভাবে মানুষ উদ্বাস্তু হয় শুধু দেশভাগের ফলশ্রুতিতেই নয়, নিজের দেশে এবং নিজের ধর্মীয় সমাজের মধ্যে থেকেও।

    আর একটা কথা বলার ছিল।
    আমরা যতই ঢেকে রাখার চেষ্টা করিনা কেন, এটা নির্মম সত্যি, যে মূলধারার বাংলা সাহিত্যে মুসলমান সমাজ, জীবন্ত মুসলমান চরিত্র অনুপস্থিত। মুসলিম নারী চরিত্রের তো কথাই ওঠেনা। একজন সৈয়দ আলাওল, একজন বেগম সুফিয়া কামাল বা একজন জসিমুদ্দিনের লেখার কথা বলে এটা অস্বীকার করা যাবে না, যে আমরা গোপাল, রাখাল, ভুবনের গল্প জানি, কিন্তু শফি বা সোলেমানের ব্যাপারে কিছুই জানি না। ব্যতিক্রম শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পের হত-দরিদ্র কিন্তু তেজী গফুর। সে ফুটে উঠেছে তার সমাজের সংস্কৃতি, সংস্কার সব নিয়ে। কিন্তু তার মধ্যেও  গফুর এক অনন্য চরিত্র।

    আর মুসলিম নারী?
    আমাদের পরিচয় হয়েছে বিনোদিনী, লাবণ্য, কেটি মিটার, সোহিনী, নীলা, বাঁশরী সরকার –এদের সঙ্গে। দেখেছি রাজলক্ষ্মী, কিরণময়ী, সাবিত্রী, রমাদের; পেয়েছি কুসুম ও কপিলাকেও। কিন্তু পাইনি মায়মুন, জয়গুনদের।

    বর্ণপরিচয় হোক বা সহজ পাঠ – এদের কথা কোথায়? এরা আমাদের চারপাশে থেকেও ‘নেই’ হয়ে রয়েছে। আমরা জানিনা ওদের ধর্মবিশ্বাসের কথা – ওদের নিজস্ব লৌকিক পুরাণ-কথা, আচার-ব্যবহার আমাদের ফোকাসে নেই। এই অভাব অনেকটাই পূর্ণ হয় সূর্য দীঘল বাড়ির আঙিনায় পা রাখলে।

    সূর্য দীঘল বাড়ি। যে আয়তাকার বাড়ির দুই সমান্তরাল দীর্ঘ বাহু পূব থেকে পশ্চিমে টানা। এই ধরণের বাড়িতে থাকে স্থায়ী অমঙ্গলের ছায়া। এখানে কেউ বেশিদিন টিকতে পারে না, নইলে নির্বংশ হয়।

    এইখানটায় এসে আমি থমকে যাই। জীবনে একটাই বাড়ি বানিয়েছিলাম – আরে সেটাও তো ছিল এক সূর্য দীঘল বাড়ি! সে বাড়িতে কতদিন ছিলাম? মাত্র দশ বছর। আমার পেছনের আরেক সূর্য দীঘল বাড়িতে দুই ছেলে মারা যাওয়ায় বাড়ি বিক্রি হয়ে যায়। কেনে আমার পরিচিত এক উদীয়মান কবি। একবছরের মধ্যে মারা যায় রক্তবমি হয়ে। তবে কী - !

    হঠাৎ খেয়াল হয়, ওই পাড়ায় সবকটি বাড়িই তো সূর্য দীঘল। সেই কুড়িটি বাড়ির মধ্যে অশুভ ঘটনা ঘটেছিল মাত্র একটিতে। বাকি সবাই তিন দশক পেরিয়েও বহাল তবিয়তে আছেন।

    এই প্রশ্নই কি জেগেছিল স্বামীর মার খেয়ে, ঘাড়ধাক্কা খেয়ে, শিশু-মেয়ে ও বালক-ছেলের হাত ধরে, পরিত্যক্ত ভূতে পাওয়া সূর্য দীঘল বাড়ির ভিটায় আশ্রয় নেয়া জয়গুনের মনে? মানে, যখন ইংরেজি তেতাল্লিশ বা বাংলা পঞ্চাশের মন্বন্তরে না-খেতে-পাওয়া মানুষজন প্রথমে গ্রাম ছেড়ে শহর-মুখো হয়ে ফ্যানের আশায় দোরে দোরে ঘুরে হতাশ হয়ে আবার সেই গ্রামে ফিরে এল? ঝাড়ের বাঁশ কেটে জয়গুন আর তার বিধবা ননদ চারটে করে খুঁটি পুঁতে তার মাথায় খড় ছেয়ে দু’টো মাথা গোঁজার ঠাঁই করল? আর মাঝে মধ্যে ছাতে এসে ভূতের ঢেলা পড়তে থাকল?

    কিন্তু এই সর্বস্বান্ত প্রান্তিক মানুষেরা কেমন করে বাঁচে? কেমন করে খায়? লেখক বা গদ্যশিল্পী আবু ইসহাকের কলমে ফোটে তার গ্রাফিক ছবি। একচোখ-কানা ননদ আর তার ছেলে ভিক্ষে করে। জয়গুণ আর তার বালক ছেলে রোজ বিন-টিকিটে রেলগাড়ি চড়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে সন্ধ্যেয় ফিরে আসে। ছেলে বোঝা বয় রেল স্টেশনে আর জাহাজঘাটায়; লাইসেন্স-ওলা কুলির দলকে ফাঁকি দিয়ে কম পয়সায় বাবুদের মোট বয়। আর মা অন্য মেয়েদের সঙ্গে দল বেঁধে ওখান থেকে চাল কিনে, পুলিশের চোখ বাঁচিয়ে, নিজেদের গাঁয়ে এনে, নিজেদের বাজারে সামান্য মার্জিনে বিক্রি করে। কারণ যুদ্ধের বাজারে এক জেলার চাল অন্য জেলায় নিয়ে আসা অপরাধ, রেশন কার্ডে চাল চিনি সবাই পায় না।

    হঠাৎ মনে পড়ে – এদের আমি চিনি, সত্তরের দশকে চালের আকাল আর রেশনের দিনে দেখেছি বারুইপুর, সোনারপুর, জয়নগর থেকে দলে দলে চালের ব্যাগ নিয়ে উঠে যাত্রীদের সিটের তলায় লুকিয়ে রাখতে এবং ধরা পড়লে রেল-পুলিশের হাতে শেয়ালদায় হেনস্থা হতে। কিন্তু এরা খায় কী – তা তো খেয়াল করে দেখিনি!

    খায় ফ্যান-ভাত, নুন দিয়ে, ঝোপ ঝাড়ের শাকপাতা দিয়ে। মাছের মুখ দেখা যায় না। অসুস্থ ছোট ভাইয়ের বায়না মেটাতে বোন যায় মায়ের নির্দেশে ছাঁচতলায়, ঝিঁঝিঁ ধরে আনতে খাবারের জন্যে। দু’টো নারকোলের আঁইচা (শুকনো মালা)-দু’টো নিয়ে ঠুকে ঠুকে ঠরর্‌ ঠরর্‌ শব্দ তোলে। তাতে আকৃষ্ট ঝিঁঝিঁ পোকা কাছে এসে ওড়ে। পেটের জ্বালা ভুলে ভাই-বোন ধরে ঝিঁঝিঁ ধরার গান:
    ঝিঁঝিঁ লো, মাছি লো, বাঁশতলা তোর বাড়ি।
    সোনার টুপি মাথায় দিয়া রূপার ঝুমুর পায়ে দিয়া
    আয় লো তাড়াতাড়ি।


    দু’টো হাঁস ডিম পেড়েছে। বাচ্চাদের আনন্দ ধরে না। ডিম খাবে নাকি ফুটিয়ে বাচ্চা করবে? জয়গুন ছেলেকে নির্দেশ দেয় প্রথমবারের ডিম মসজিদে গিয়ে দিয়ে আসতে। কিন্তু সূর্য দীঘল বাড়ির হাঁসের ডিমে যে শয়তানের ছায়া। কারণ সে বাড়ির মেয়ে জয়গুন ঘরের বাইরে বেরোয়, বেগানা পুরুষদের সঙ্গে ঠেসাঠেসি করে ট্রেনে চড়ে কোথায় যেন যায়। তার দেয়া নিবেদন নাপাক, আল্লা বা ধর্মগুরু গ্রহণ করবেন না।

    আমার মনে বাজতে থাকে একটি লোকগীতির দুটি লাইন:
    তোমার দুয়ারের পথ ঢাইক্যাছে ওই মন্দিরে আর মসজিদে।
    তোমার ডাক শুনি সাঁই, পৌঁছতে না পাই,
    পথ রুখে দাঁড়ায় গুরু-মুরশেদে


    এদিকে দেশভাগ হল। সবাই খুশি – পাকিস্তান হলে জিন্না রাজা হবে। সবাই খুশি, নতুন দেশে আর খাজনা দিতে হবেনা, জিনিসপত্রের দাম সস্তা হবে। প্রান্তিক মানুষজনও খুশি – দু’বেলা পেট-পুরে অন্তত শাক-ভাত, ফ্যান-ভাত, নুন-ভাত খেতে পাবে। আচ্ছে-দিনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে জয়গুনের ছেলে হাসু ও তার বালিকা বোন মায়মুন, মায়ের পুরনো ওড়না কেটে, সবুজ পতাকা বানিয়ে, তাতে সাদা কাপড়ের ফালির চাঁদ-তারা সেলাই করে, পাকিস্তান বা স্বাধীনতাকে বরণ করে।

    ধর্মবিশ্বাস কঠিন সময়ে অসহায় মানুষকে সান্ত্বনা দেয়, প্রতিকুল অবস্থার মোকাবিলার সাহস দেয়। কিন্তু ধর্ম-ব্যবসায়ীরা এদের আরও দুর্বল করে তোলে। বাঁধে অদৃশ্য শেকলে, নারীকে তওবা করতে বলে, আর যেন সে ঘরের বাইরে একা একা না বেরোয়! নইলে? নইলে ইহকালে সামাজিক বহিষ্কার, মেয়ের বিয়ে আটকে দেওয়া; এন্তেকালে দোজখের আগুনে জ্বলতে থাকা।

    ফকির জোবেদ আলী সূর্য দীঘল বাড়ির চার কোণে চারটে তাবিজ পুঁতে বলে, ব্যস, কোন ভূত কিছু করতে পারবে না। কিন্তু তার লোভের হাত অল্পে সন্তুষ্ট নয়; সে চায় ঝাড়ের বাঁশ, পেতলের কলসি, সে চায় তিরিশ-ছোঁয়া যুবতী জয়গুনকে। জয়গুন তাকে রাস্তা দেখিয়ে দেয়, তার ভূতের ভয় কেটে যায়।

    একইভাবে তার অত্যাচারী স্বামী করিম বকশ, যে আরেকটি নিকে করে ওকে মেরে বের করে দিয়েছে, কিন্তু নিজের কাছে রেখে দিয়েছে ছোট ছেলেকে, সে ফাঁদে পড়ে আরেক ফকিরের কেরামতির। ফল হয় ভীষণ, তার প্রচণ্ড জ্বরে ভোগা ছোট ছেলে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়।

    ধীরে ধীরে লোকজন টের পায়, স্বাধীন হয়েও কোন তফাত হল না। সেই খাজনা দিতে হচ্ছে, চড়া দামে জিনিস কিনতে হচ্ছে। চালের দর চল্লিশের নীচে নামে না। আচ্ছে-দিনের সুখ-স্বপ্ন মৃগ-মরীচিকা হয়ে যায়। শুধু গদু প্রধানের মত মজুতদারদের পোয়া-বারো। এইখানে ১৯৪৮ সালের তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের গ্রাম-জীবন আর আমাদের আজকের পরিযায়ী শ্রমিকদের জীবন কোথায় যেন এক সমকেন্দ্রিক বৃত্তে ঘুরে চলে।

    গল্প এগিয়ে চলে। ছেলের জান বাঁচাতে অসহায় হতাশ করিম বকশ সেবা-শুশ্রূষার জন্য নিয়ে আসে জয়গুনকে। আর সন্তানকে বাঁচানোর অদম্য ইচ্ছায় জয়গুন ফকিরের তাবিজ জলপড়া ছেড়ে নিয়ে আসে অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারকে। সন্তান ফিরে পায় জীবনরূপী হারানো মাকে।

    এই পরিস্থিতিতে করিম বক্স নতুন ভাবে দেখে তার একসময় তাড়িয়ে দেওয়া বৌ জয়গুনকে। জেগে ওঠে কাম, কিন্তু সেটা হার মানে দৃঢ় পোড় খাওয়া ওই সাধারণ নারীর কাছে। এই প্রত্যাখ্যান তাকে অবাক করে, পাগল করে। সে এবার বশীকরণেও পেছপা নয়। ওই নারীকে তার চাই, ক্রমশ এভাবেই বুঝি জেগে ওঠে প্রেম। এই কামনায় তাকে প্রাণ হারাতে হয় লোভী গদু প্রধানের হাতে।

    এবার করিম বকশের জন্যে বেদনায় জয়গুনের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। “আহা বেচারা! জীবনে কাউকে ভালোবাসেনি। কারো ভালোবাসা পায়ও নি সে।” এইসময় মেয়েকেও শ্বশুর বাড়ি থেকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এবার যে গোটা পরিবারের না খেয়ে মরার দশা।

    কিন্তু ঘরে বসে থাকলে খাওয়াবে কে?
    লালুর মা বলে ফতুল্লার ধানকলে খাটতে যেতে। কিন্তু বাচ্চা মেয়েকে অনিচ্ছার সঙ্গে বয়স্ক দোজবরে পাত্রের সঙ্গে শাদির আগে মৌলবি সাহেব যে ওকে দিয়ে তওবা করিয়েছেন – বাকি জীবন ঘরের বাইরে বেরোতে পারবে না।

    ধীরে ধীরে সে উপলব্ধি করে, তাকে সন্তানদের বাঁচানোর উপায় বের করতে হবে। মাথায় ঘোরে লালুর মার কথা,
     - না খাইয়া জানেরে কষ্ট দিলে খোদা ব্যাজার অয়। মরলে পরে খোদা জিগাইব, তোর আত-পাও দিছিলাম কিয়ের লেইগ্যা? আত দিছিলাম খাটবার লেইগ্যা, পাও দিছিলাম বিদ্যাশে টাকাও রুজি করনের লেইগ্যা।

    এই উপন্যাস আমাদের কোন তাত্ত্বিক সমাধান দেয় না। কোন কাল্পনিক আশার আলো দেখায় না। কিন্তু এক নিরাসক্ত বয়ানে তুলে ধরে ক্রান্তিকালে খেটে খাওয়া নারীর অনন্ত জিজীবিষা, যার গভীরে রয়েছে ভালোবাসা। আর আমরা চিনতে পারি আবু ইসহাক নামের এক ইতিহাস-সচেতন কথককে।


    সূর্য দীঘল বাড়ী
    আবু ইসহাক
    প্রকাশকঃ নওরোজ সাহিত্য সম্ভার


    প্রাপ্তিস্থান :
    অনলাইনে — কলেজস্ট্রীট ডট নেট
    বাড়িতে বসে বইটি পেতে হোয়াটসঅ্যাপে বা ফোনে অর্ডার করুন +919330308043 নম্বরে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ২২ আগস্ট ২০২১ | ৩০০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | ২২ আগস্ট ২০২১ ১১:১১496996
  • অনেক দিন পর এই গুরুতাপূর্ন বইটি নিয়ে কোনো সমৃদ্ধ আলোচনা পড়লাম। সত্যিই লেখকের দেখার চোখ আছে বটে। "সূর্য দীঘল বাড়ী" সাদাকালো ছবিটিও একটি অসামান্য নির্মাণ। ইউটিউবে পুরো ছবি আছে। 
    এইখানে একটি ছোট সিনেমা রিভিউ 
  • সিএস | 49.37.32.92 | ২২ আগস্ট ২০২১ ১৫:১৫497002
  • এই উপন্যাসটা ভাল লেখা, বেশ খাঁটি লেখা, আবু ইসহাক তখন বেশ কম বয়স যদিও।

    সিনেমাটিও ভাল শুনেছি, দেখা হয়নি।
     
     
  • অদিতি কবির | 45.127.247.3 | ২৩ আগস্ট ২০২১ ১১:২০497027
  • দুনিয়ার যত আমল, যত হিসাব-কেতাব মাইয়্যা মাইনষের লাইগ্যা। 
  • পারমিতা | 1.23.161.158 | ২৩ আগস্ট ২০২১ ১৮:৩২497030
  • ছবিটা দেখেছিলাম।
  • বিপ্লব রহমান | ২৫ আগস্ট ২০২১ ০৮:২৬497082
  • পুনশ্চ : 
    একুশে পদক প্রাপ্ত লেখক আবু ইসহাকের একটি ছোটগল্প "জোঁক" সাতের দশকে স্কুলের বইয়ে পরেছিলাম। গ্রামীণ শ্রেণী শোষণ হচ্ছে এই গল্পের উপজীব্য। 
     
    ভাবতে অবাক লাগে, মাত্র ২০ বছর বয়সে কিভাবে একজন "সূর্য দীঘল বাড়ী" লিখতে পারেন! 
  • Ranjan Roy | ২৫ আগস্ট ২০২১ ২০:২১497102
  • অদিতি ম্যাম,
     মাইয়া মাইনষের লাইগ্যা ট্রয়  ধ্বংস অইল, লঙ্কা পুইড়া ছারখার অইল, দ্রৌপদীরে অপমান কইরা কৌরবেরা নির্বংশ অইল!
  • &/ | 151.141.85.8 | ২৬ আগস্ট ২০২১ ০২:১১497104
  • এইগুলিন সবই পুরুষ মাইনসের ভং। নিজেরাই পেখম ধরা পাঁঠার লাহান লইড়া মইরা সাবাড়। ট্রয়, লঙ্কা, কুরুক্ষেত্র কইরা খেল খতম। সামনে অজুহাত খাড়া করে হেলেন সীতা দ্রৌপদীরে। হাড়বজ্জাত পাজির পাঝাড়া কী আর সাধে কয়?
  • Debasis Bhattacharya | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ২৩:৫৮498670
  • রঞ্জনবাবু,
     
    উপন্যাসটি পড়ার সুযোগ হয়েছিল আজ থেকে বহুদিন আগে এখানে তার দুষ্প্রাপ্যতা সত্ত্বেও। সত্যিই অসাধারণ! খালি ভাবতাম কেউ এ  নিয়ে কোনও আলোচনা করেনা কেন। আপনি করলেন,অনেক ধন্যবাদ! 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন