এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • গুপ্তধনের শহর তোলেদো

    Sudeep Chatterjee লেখকের গ্রাহক হোন
    ১১ জুন ২০২১ | ১২৯২ বার পঠিত
  • তোলেদো। তাগুস নদীর কিনারায় অবস্থিত প্রাচীন পার্বত্য নগরী। শহর না বলে গ্রাম বলাই ঠিক। তবে একরত্তি একলা গ্রাম নয়, বেশ জমাটি 'ভিলেজ টাউন'। স্পেনের এই এক চিলতে জায়গায় কী জাদু কে জানে, হাজার বছর ধরে অনুপ্রবেশকারীরা তোলেদো দখল করবে বলে হাপিত্যেশ করে বসে থেকেছে। রোমান, মুর, ভিসিগথ-- নতুন প্রজন্মের সঙ্গে নতুন নতুন ইতিহাসের পাতা যোগ হয়েছে তোলেদোতে কিন্তু পুরোনো পাতাগুলো মুছে যায়নি কোনোদিনই, বরং সময়ের সাথে সাথে তাদের অস্তিত্ব আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। 


    সেই শহরে গিয়ে পৌঁছেছি সেইবার। রূপকথার রাজ্য, কিন্তু সে রাজ্য পাথর দিয়ে গড়া। লোরকার ভাষায় স্পেন হল জ্যান্ত ভূতের দেশ, বর্তমান এখানে গৌণ। ভুল বলেননি। এখানকার ভুগোল, ইতিহাস, শিল্প, কিংবদন্তি সবই অতীতের পরিচয় বহন করে, পাথরের গির্জা, প্লাজা, স্কোয়ারে ভূত ঘোরাঘুরি করে জ্যান্ত মানুষের পাশাপাশি, ম্যাকডিতে গিয়ে বার্গারও খায় সম্ভবত। 


    গুগল ম্যাপকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এরকম জায়গায় এসে গলির গোলকধাঁধায় পথ হারিয়ে না গেলে ঠিক জমে না। ইহুদি-মুর-ক্রিশ্চান সভ্যতার নিদর্শন, স্যুভেনিরের দোকান, ক্যাফে,রেস্তরাঁ,জামাকাপড়,গয়নার দোকান। অনেক জায়গায় ট্রেজার হান্টিং ম্যাপ আর যন্ত্রপাতিও পাওয়া যায়। কিং সলোমনের হারিয়ে যাওয়া সোনার টেবিল আর চাবি খুঁজতে এক সময় সারা দুনিয়া থেকে ইন্ডিয়ানা জোন্সের জ্ঞাতিগুষ্টি এসে হাজির হয়েছিল, তাদের অর্ধেককে ভূতে ঘাড় মটকেছে, বাকিরা হতাশ হয়ে বা ভয় পেয়ে পিটটান দিয়েছে। (মস্করা নয়, ভূতের কথা পুলিশও স্বীকার করে, 'আনসলভড মার্ডার' এর ফাইলে সে কথা লেখাও নাকি আছে!)


    খোঁজ অবশ্য এখনও চলছে, তোলেদো গুপ্তধনের ডিপো কিনা! সলোমনের গুপ্তধন ছাড়াও একটা গুজব ছিল গির্জা তৈরী করার সময় কয়েকশ টন সোনা নাকি আর্চবিশপরা লুকিয়ে রেখেছে কোনো গুপ্তস্থানে।


    সে সব আমার ভাগ্যে নেই। গুপ্তধন দূর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এ ব্যালেন্স দেখলে হিক্কা উঠতে থাকে। বন্ধুবান্ধবরা ফ্ল্যাট-বাড়ি-গাড়ি কিনে খুশ! মস্তিতে চাকরি করে করে টাকা জমাচ্ছে, আমি জমাচ্ছি স্মৃতি। নতুন জায়গায় এলে স্মৃতির খাতায় সূর্যাস্তগুলোও ঢুকে যায়। এক একটা সূর্যাস্ত এক একটা ইনভেস্টমেন্ট! সে নিয়ে গাফিলতি করি না।


    সুতরাং সবচেয়ে জনপ্রিয় সানসেট পয়েন্টের খোঁজে হাঁটা শুরু হল, সাত কিলোমিটার হেঁটে যাওয়ার পর পড়ল মিরাদোর দেল ভাইয়ে।


    আকাশের গায়ে তখন ঘন কমলার ছাপ পড়তে শুরু করেছে। দূরে তোলেদো শহরের ওল্ড টাউন সূর্যাস্তের অপেক্ষায় সাজতে শুরু করেছে এক একটা করে আলোর টিপ পরে। তাগুস নদী এখানে বাঁ দিকে বেঁকেছে। অনেক নীচে নদীর পাড় দিয়ে কয়েকজন জলের ধারে গিয়ে মাছ ধরছে। রাস্তার ধরে উঁচু পাঁচিলের ওপর বসে সম্মোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলাম সামনের কালস্থায়ী,আবহমান জীবনদৃশ্যের দিকে। সূর্যাস্ত হচ্ছে। আলোহিত আকাশের ওপর দিয়ে উড়ে বাসায় ফিরে চলেছে পাখির দল। নদীর গর্ভে হয়ত মাছেরাও ঘুমোনোর তোড়জোড় শুরু করবে এইবার। দূরে তোলেদো শহর অনন্তকাল ধরে এই সায়াহ্নের সাক্ষী। আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ইতিহাস, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ এক ফ্রেমে। নিজের অজান্তেই এই মুহূর্ত আমাদেরও ইতিহাসের পাতায় বন্দী করে রাখলো, চিরকালের জন্যে। 


    আরো কিছু মুহুর্ত ফ্রেমবন্দি করলাম, অভিজ্ঞতার ফিক্সড ডিপোজিটে ফেলে তালাবন্ধ করলাম। ম্যাচয়োর হলে এই মুহুর্তগুলো ভাঙিয়েই জীবন চলবে। 


    সেই মুহুর্তের একটা ছবি। 



    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 97.91.195.43 | ১১ জুন ২০২১ ২০:৫১494849
  • টাকা জমানোর থেকে স্মৃতি জমানোই ভালো। এটা আমিও বিশ্বাস করি। তোলেদো শহরটা নিয়ে আরেকটু লিখলে ভালো লাগতো।

  • Sudeep Chatterjee | ১১ জুন ২০২১ ২১:৩২494851
  • অনেক ধন্যবাদ। এই বইটা পড়তে পারেন। সম্ভবত লং টার্ম ব্যাকপ্যাকিং নিয়ে লেখা প্রথম বই। তেরোটা দেশের বেশ কিছু শহরের অভিজ্ঞতা আছে। ইতিহাস, মিথ, স্থানীয় কবি, লেখক,  শিল্পীদের নিয়ে গল্প, অনেক কিছু পাবেন। তোলেদোর কথাও বিস্তারিত লিখেছি।


  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন