এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • খেরোর খাতা

  • পায়ে পায়ে সুগস্পিৎজে (দ্বিতীয় পর্ব)

    Ajay Mitra লেখকের গ্রাহক হোন
    ১০ জুন ২০২১ | ১৬৭১ বার পঠিত


  • লেচ নদীর জল এতটাই পরিষ্কার যে ওপর থেকে জলের নিচের নুড়ি, পাথর সমস্ত একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনিতে জলের গভীরতা বেশি নয় কিন্তু ভীষণ রকমের খরস্রোতা, যেন বয়ে চলেছে আপন আনন্দে, নাচতে নাচতে। মন্ত্রমুগ্ধের মতো লেচের দিকে তাকিয়ে বসেছিলাম, হটাৎ গায়ে দু এক ফোঁটা জল পড়তে সম্বিৎ ফিরলো। পাহাড়ি পরিবেশে আবহাওয়ার পূর্বাভাস সবসময় হুবহু মিলবে সেটা ভাবা ভুল, আজ পূর্বাভাস ছিল সারাদিন শুকনো থাকবে, ছিলও তাই কিন্তু আলো কমে আসার আগেই বৃষ্টি শুরু হলো, তাই দেরি না করে কম্বল গুটিয়ে হোটেলের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। যাবার পথেই একটা আপওথেকে দেখতে পেয়ে ঢুকতে হলো, জার্মানি তে ওষুধের দোকান কে আপওথেকে বলে। কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার খুব দরকার ছিল। প্রয়োজনীয় ওষুধ সমেত ওষুধের ব্যাগ টা বাড়িতে রেডি করাই ছিল কিন্তু তাড়াহুড়োতে ওটা গাড়িতে তোলা হয় নি। প্যারাসিটামল (জ্বর, অল্প ব্যথা), আস্পিরিন (মাথার যন্ত্রনা), ইবুফেল্ম (বেশি ব্যথা, যন্ত্রনা ), পারেন্টেরোল (স্টমাক আপসেট), মিক্রোপরে (পানীয় জল বিশুদ্ধ করার জন্য লাগে) কিছু প্লাস্টার, ব্যাণ্ডেজ আর ম্যাগনেসিয়াম ট্যাবলেট (পা, হাঁটুর ব্যথা) কিনলাম। এই ওষুধগুলো খুব প্রয়োজনীয়, যে কোনো ট্রেকিং এ বা বেড়াতে যাওয়ার প্রোগ্রামে এই ওষুধগুলো সঙ্গে রাখা দরকার।

    খাবার আগেই অর্ডার করা ছিল, ওষুধ কেনার পর সোজা রেস্তুরেন্ট থেকে খাবার নিয়ে হোটেলের কমন ডাইনিং এ গিয়ে বসলাম। কোভিড-১৯ এর জন্য রেস্তুরেন্ট এ বসে খাওয়া বন্ধ। হোটেলের মধ্যেও অনেক নিয়ম-কানন। ডাইনিং এ শুধু দুটো ফ্যামিলি বসতে পারে মোট আটজন। চারটে টেবিল, প্রতিটাতে দুটো করে চেয়ার। দুটো চেয়ার এর মধ্যে ১.৫ মিটার দূরত্ব, দুটো টেবিল এর মধ্যে তিন থেকে চার মিটার দুরুত্ব। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে সাড়ে সাত টা নাগাদ আমরা রুম এ গেলাম।

    শেষবারের মতো যে যার রুকসাক চেক করে চারটে রুকসাক একজায়গায় রাখলাম, বাকি লাগেজ সব হোটেলেই থাকবে। কিছুটা সময় ছিল তাই একসাথে জমিয়ে বসে গল্প শুরু হলো, পুরোনো গল্প। বাইরে কিন্তু তখনও বৃষ্টি পড়ে চলেছে। মুন্নি আর অগ্নি দুজনেই পুরোনো দিনের গল্প শুনতে ভালোবাসে, তাই আমরা একসাথে বসলে ওদের ছোট বেলার গল্পই বেশি হয়। ঘন্টা খানেক পরে রাত্রি নয়টার সময় মুন্নি বললো যে এবার আমাদের শুয়ে পড়তে হবে কারণ আগামীকাল সকাল ৫ টায় উঠতে হবে, সাড়ে ৫ টা থেকে ৬ টায় আমাদের জার্নি শুরু। ইচ্ছা না থাকলেও যে যার বেড এ চলে গেলাম।

    একটা বড়ো রুম এ দুটো বাংক বেড। এক একটা বাংক বেড এ ওপর নিচ করে দুজনের শোবার জায়গা। তিনটে রুম এর ডিমান্ড থাকলেও পাওয়া যায় নি, যা পাওয়া গেছে সেটাই নিতে হয়েছে। সমস্যা টা আমার আর আমার স্ত্রীর না, সমস্যা আমাদের ছেলে মেয়ের, ওরা খুব চিন্তিত এবং প্রায় নিশ্চিত যে আগামী তিন রাত্রি ওদের ঘুম হবে না। পাঠকগণ, কিছু গেস করতে পারলেন? হ্যাঁ, ঠিক ই ভেবেছেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রী র নাক নাকি বেশ জীবন্ত, ঘুমের মধ্যে নাকি মাঝে-মাঝে শব্দ ও করে। এ নিয়ে বিশদ আলোচনা অবশ্য পরে করতেই হবে তাই এখন বাদ দিয়ে গেলাম। আমি আর সান্ত্বনা একটা বাংক বেডে শুয়েছি, আমি ওপরে, সান্ত্বনা নিচে। সব নিঃস্তব্দ, হঠাৎ নিচের থেকে একটা ভয়ের কণ্ঠস্বর ভেসে এলো, "আচ্ছা আমি পারবো তো? এতদিন তো বেশ আনন্দ হচ্ছিল কিন্তু এখন বেশ ভয় করছে। আমি যদি হুটে পর্যন্ত পৌঁছতে না পারি তাহলে কি হবে“? এতো ভয়ের কি আছে, না পারলে কাঁধে করে আমি আর অগ্নি নিয়ে যাবো। চিন্তা না করে এখন ঘুমিয়ে পড়ো। এই বলে আমি ঘুমোবার চেষ্টা করতে লাগলাম। আমার এই কথাটা পরে প্রায় সত্যি হয়ে যাবে সেটা কিন্তু তখন ভাবিনি।

    একটা অদ্ভত শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। প্রথমে বেশ খানিকটা সময় বুজতেই পারছিলাম না কোথায় আছি, কিসের শব্দ। একটু পরে বুজলাম শব্দগুলো মোবাইল রিংটোনের। চারটে মোবাইলেই এক ই সময়ে অ্যালার্ম দেওয়া হয়েছে আর তাদের চার রকমের রিংটোন, আর তার থেকেই এই অদ্ভত শব্দ। শব্দ টা বুজতে বুজতেই বাকি টা পরিষ্কার হয়ে গেলো, আমরা হোটেলের রুমে খুব আরাম করে লেপের মধ্যে শুয়ে আছি এবং আর আধঘন্টার মধ্যে আমাদের রেডি হয়ে বেরোতে হবে সুগস্পিৎজের পথে। ব্যাপারটা ভাবতেই একদম ভালো লাগছিলো না, ভাবলাম আর একটু ঘুমিয়ে নি। লেপের ভেতর মাথাটা আবার ঢোকাতে যাচ্ছি এমন সময় মুন্নির কথা শুনতে পেলাম, বাবা ওঠো, আমাদের এখনি বেরোতে হবে।

    হোটেলের ঘরের জানলা খুলে, বৃষ্টিটা হচ্ছে না দেখে মনটা একটু হলেও ভাল হলো। কিন্তু আকাশে তখনও বেশ মেঘ আছে, ঠান্ডাটা আজ তুলনামূলভাবে একটু বেশিই ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসে আদ্রতা ৪০%, বাতাসের তীব্রতা মাঝামাঝি, অভিমুখ দক্ষিণ। আমরা এখন যেখানে আছি সেটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০৮ মিটার ওপরে। এই সমস্ত ইনফরমেশন স্মার্টওয়াচ থেকে পেলাম। বাইরের আবহাওয়া অনুযায়ী সবাই পোশাক, জুতো পরে নিলাম, বাকি প্রয়োজনীয় জিনিস রুকসাক এ রইলো।
    রেডি হয়ে বেরোতে বেরোতে পাক্কা একটি ঘন্টা লেগে গেলো।
    হোটেলে আগে এ থেকেই বলা ছিল যে আমরা আজকের রাত্রিতে ফিরবো না, নিচে রিসেপশনে রুম এর Key সোয়াপিং কার্ড জমা করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম।

    সকাল ৬ টা, ১০ ই সেপ্টেম্বর ২০২০, ফুজেন, জার্মানি :
    -------------------------------------------------------
    ঠিক সকাল ৬ টায় আমরা গাড়িতে উঠলাম। আমাদের গন্তব্য গার্মিশ-পার্টেনকির্চেন শহরের অলিম্পিয়া-স্কি স্টেডিয়াম, প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রাস্তা। এখানে গাড়ি পার্ক করে, এখান থেকেই শুরু হবে আমাদের ট্রেকিং রুট, পায়ে হেঁটে পথ চলা। যারা গণপরিবহন ব্যবহার করবেন, তাঁরা ট্রেনে গার্মিশ-পার্টেনকির্চেন পর্যন্ত এসে লোকাল বাস লাইন নম্বর ১ অথবা ২ এ করে অলিম্পিয়া-স্কি স্টেডিয়াম আসতে পারেন। যারা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করতে চান তাঁরা গার্মিশ থেকে অলিম্পিয়া-স্কি স্টেডিয়াম পায়ে হেটেও আসতে পারেন। প্রায় ২৫ মিনিট লাগবে। এই রাস্তাতেই পড়বে অসাধারণ সুন্দর আইব সী হ্রদ।
    ঠিক ৭ টার সময় এসে পৌঁছলাম অলিম্পিয়া-স্কি স্টেডিয়াম। পর্যাপ্ত পরিমানে পার্কিং প্লেস থাকলেও অত সকালেও প্রায় ৮০% পার্কিং স্লট ভর্তি হয়ে গেছিলো। না, এরা সবাই ট্রেকিং রুটে যাবেন না। যারা ট্রেনে + রোপওয়ে করে সুগস্পিৎজে যাবেন (ধরা যায় প্রায় ৯০%) তাদেরও এখানেই পার্কিং করতে হবে, তাই পার্কিং এ চাপটা একটু বেশি। পার্কিং এর রেট বেশ কম সারাদিন এর জন্য মাত্র ২.৫ ইউরো। দুদিনের পার্কিং টিকিট কিনে গাড়িতে লাগিয়ে, যে যার রুকসাক আর ট্রেকিং স্টিক গাড়ি থেকে নিয়ে নিলাম। পোশাক আর জুতো তো হোটেল থেকেই পরে এসেছিলাম আর বাকি সব দরকারি জিনিস আগে থেকেই রুকসাক এ গোছানো ছিল। গাড়ি লক করে আমরা সবাই একটা সেলফি নিলাম, শুরু হলো বহু আকাঙ্খিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা রাইনটালের পথে আমাদের পথ চলা।

    সকাল ৭টা ৩০ মিনিট, ১০ ই সেপ্টেম্বর ২০২০,
    গার্মিশ-পার্টেনকির্চেন > পার্টনাচ > ব্লকহুটে > রাইনটাল-আঙ্গারহুটে
    ----------------------------------------------------------------------
    অলিম্পিয়া-স্কি স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে অল্পক্ষণের মধ্যে কিছুটা চড়াই, উৎরাই পেরিয়ে আমরা পার্টনাচ গুহা তে পৌঁছলাম। পার্টনাচ গুহা কে রাইনটাল এর মধ্যে দিয়ে সুগস্পিৎজ যাবার গেট বলা যায়। এই রাস্তা জুন থেকে সেপ্টেম্বর সকাল ৮ টা থেকে রাত্রি ৮ টা আর অক্টোবর থেকে মে মাস সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৬ টা অব্দি খোলা থাকে, এই গেট দিয়ে এন্ট্রির জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ৬ ইউরো আর বাচ্ছাদের ৩ ইউরো টিকিট লাগবে। প্রয়োজনীয় টিকিট কেটে আমরা পার্টনাচ গুহার গেট পেরোলাম।
    পার্টনাচ প্রায় ১৮ কিলোমিটার লম্বা এক পাহাড়ি খরস্রোতা নদী, দারুন গর্জন করে গুহার মধ্যে দিয়ে বয়ে চলেছে। আকাশ একদম মেঘে ঢাকা ছিল তাই দিনের বেলায়ও গুহার ভেতরটা একদম অন্ধকার, সামনে ৫ মিটার দূরে কি আছে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। বেশ খানিকটা দূরে-দূরে একটা ল্যাম্প থাকলেও তার আলোতে সামনের ২-৪ মিটার এর বেশি কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তার মধ্যে গুহার কিছু কিছু জায়গায় ওপর থেকে পাহাড়ি ঝর্ণার জল খুব জোরে বৃষ্টির মতো পড়ছে, ঠিক মতো খেয়াল না করলে একদম ভিজে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
    একবার তো বেশ জোরেই গুহার দেওয়ালে আমার মাথা ঠুকে গেলো। কপাল টা বেশ ফুলে গেলেও, কপালের জোরেই বড়ো দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেলাম। আর রিস্ক না নিয়ে আমরা সবাই মোবাইল এর টর্চ অন করে গুহার বাকি পথ পেরোতে লাগলাম। ৭০২ মিটার লম্বা গুহা, মাঝে মাঝে বেশ খানিকটা চড়াই, পাথর কেটে কেটে উঁচু-নিচু রাস্তা, পেরোতে প্রায় দুই ঘন্টা লেগে গেলো। বেশিরভাগ দর্শনার্থী এখানে গুহা দর্শন করতেই আসেন, আমাদের সঙ্গে সামান্য কয়েকজন দর্শনার্থী ছিলেন, ওনারা গুহার শেষে একটা সমান্তরাল জায়গায় চলে গেলেন। ওখানে পার্টনাচ নদী আর ওই পরিবেশ কে পুরোপুরি উপভোগ করার জন্য একটা রেস্টপ্লেস ও একবাউয়ার নামের একটি রেস্টুরেন্ট আছে। পরে ওনারা এখান থেকে আবার একই পথে গুহার মধ্যে দিয়ে অথবা একবাউয়ার ট্রেনে করে নিচে গার্মিশ ফিরে আসবেন।
    আমাদের গন্তব্য অনেক দূর, আমরা গুহা থেকে বেরিয়ে একটা চওড়া পাহাড়ি রাস্তা ধরলাম, দু ধারে চিরহরিৎ গাছের জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এই রাস্তাটা চলে যাচ্ছে আর রাস্তার পাশে সমান্তরাল ভাবে বয়ে চলেছে পার্টনাচ নদী। এতো সুন্দর একটা পরিবেশে, আমরা যে আস্তে আস্তে বেশ খানিকটা চড়াই ভেঙে ওপরে উঠছি সেই কষ্টটা প্রায় ভুলেই গেছিলাম। আমরা ছাড়া এই পথে আর কোনো ট্রেকার চোখে পড়লো না। এই রাস্তায় অনেকগুলো ট্রেকিং রুট আছে তাই রাস্তার পাশে রুট নির্দেশক সাইনবোর্ড আর সঙ্গে থাকা ম্যাপ সবসময় ঠিক মতো অনুসরণ করতে হবে। এই সাইনবোর্ড দেখে আমরা আমাদের পরের গন্তব্যস্থল বকহুটের দিকে এগিয়ে চললাম।

    খানিকটা হাঁটার পর আস্তে আস্তে বৃষ্টি শুরু হলো, সবাই সোয়েট-শার্ট এর ওপর রেইন জ্যাকেট চাপিয়ে নিলাম। বৃষ্টির জন্য হাঁটার গতি একটু শ্লথ হয়ে গেছিলো, কিন্তু থামলাম না। আমরা একটা চেন করে হাঁটছিলাম, আমি আর মুন্নি আগে ছিলাম, পিছনে অগ্নি আর সান্ত্বনা। আসলে সান্ত্বনা বেশ আস্তে হাঁটছিলো, প্রয়োজন মতো অগ্নি কে সাপোর্ট দিতে হচ্ছিলো। একসময় দেখলাম আমরা অনেকটা এগিয়ে এসেছি তাই বাকিদের জন্য অপেখ্যা করতে হলো। বেশ খানিকটা পর অগ্নি আর সান্ত্বনা কে দেখতে পেলাম, সান্ত্বনার রুকসাক দেখলাম অগ্নির পিঠে। এইভাবে দুটো রুকসাক নিয়ে বাকিটা পথ অগ্নির পক্ষ্যে হাঁটা বেশ কষ্টের তাই সান্ত্বনার রুকসাকের সমস্ত জিনিস বার করে তিনটে ভাগ করে আমাদের তিন জনের রুকসাকে নিয়ে নিলাম।

    এইভাবে সাড়ে নয় কিলোমিটার হেঁটে প্রায় দুপুর দুটোর সময় আমরা ১০৫২ মিটার উচ্চতায় বকহুটে পর্যন্ত পৌঁছলাম। এমনিতে বকহুটেতে আমাদের দাঁড়াবার কথা ছিল না কিন্তু সবার অবস্থাই বেশ কাহিল হয়ে পড়েছিল তাই হুটে তে কিছুক্ষন রেস্ট নেবার সিদ্ধান্ত নিলাম।
    আগেই লিখেছি যে হুটেগুলো পাহাড়ি এলাকার ছোটোখাটো হোটেলের মতো। এখানে রাত্রিবাস করা যায় ডর্মিটরিতে, খাওয়ার জন্য ছোট ডাইনিং হল আছে যেখানে একসঙ্গে ২০ থেকে ২৫ জন বসে খেতে পারে, রেস্টুরেন্টে পিজা, পাস্তা, গ্রীলড ভেজিটেবল, গ্রীলড পর্ক, সসেজ থেকে শুরু করে ওমলেট, বিভিন্ন রকমের সুপ্, বিভিন্ন কেক, ঠান্ডা ও গরম পানিও পাওয়া যায়। এছাড়া সমস্ত যাত্রীদের জন্য টয়লেট ও স্নান করার মতো প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আছে। একটা কথা এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া খুব দরকার যে হুটে গুলোতে কিন্তু কার্ডে পেমেন্ট করা যাবে না শুধু ক্যাশ পেমেন্ট করতে হবে তাই এই সব রাস্তায় ট্রেকিং এ আস্তে গেলে সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমান ক্যাশ টাকা থাকার খুব প্রয়োজন।

    আমরা হুটের বাইরের দিকের বাগানে সাজানো টেবিলের একটায় বসলাম। আমাদের পাশেই খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা পাথরের পাহাড়। বৃষ্টিটা একটু আগেই বন্ধ হয়েছে, তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস, আকাশটা একদম পরিষ্কার, মেঘের কোনো চিহ্নমাত্র নেই। বিকালের রোদটা আমাদের গায়ে এসে পড়েছে। দারুন একটা আরামদায়ক, মনোরম পরিবেশ। প্রায় চোখ বুজে আসছিলো এমন সময় সান্ত্বনা বললো ভালো করে তো লাঞ্চ হলো না কিন্তু কফি টাইম এসে গেলো। মুন্নি গরম কফি আর চিজ কেক নিয়ে এলো, এখানে সেলফ সার্ভিস। লাঞ্চ ডিস্ বানাতে মিনিমাম আধ ঘন্টা সময় লাগবে তাই মুন্নি কোনো রিস্ক না নিয়ে যেটা রেডি ছিল সেটাই নিয়ে এসেছে। একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। রাত্রিতে ডিনার এর সাথে লাঞ্চ ও দেওয়া হবে এই প্রতিশ্রুতি পেয়ে সান্ত্বনা কফি টাইম এ রাজি হয়ে গেলো।

    কেক আর কফির রসাস্বদন করতে করতে কখন যে আধ ঘন্টা কেটে গেলো বুজতেই পারলাম না। বকহুটে তে খুব বেশি লোকজন ছিল না কিন্তু যারা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অনেককেই, হুটে ছেড়ে, আমরা যে রাস্তায় এসেছিলাম সেই দিকে চলে যেতে দেখলাম। মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন বার বার আসছিলো তাহলে কি আমরা রাস্তা ভুল করলাম? বাকি যারা বসেছিলেন তাদের মধ্যে একমধ্যবয়সী ভদ্রলোককে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেললাম। আমরা সুগস্পিৎজ যাবো শুনে ভদ্রলোক বেশ অবাকভাবে আমাদের দেখলেন। তারপর উনি বললেন আপনারা ঠিক পথেই এসেছেন আর যাদের চলে যেতে দেখলেন তাঁরা এই হুটে অব্দি এসে আবার নিচে ফেরত গেলেন, আমরা ৬ জনের গ্ৰুপ আজ এখানে রাত্রিবাস করে কাল আবার নিচে ফেরত যাবো।

    শুনে আমার তো বেশ ভয় ভয় পেলো, তার মানে শুধুমাত্র আমাদের এখনো সাড়ে ৫ কিলোমিটার হেঁটে পরের হুটে পর্যন্ত যেতে হবে। আমরা একবার বসে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে নিলাম এই হুটেতেই রাত্রিতে থেকে যাবো না এখনই তল্পি-তল্পা গুটিয়ে পরের হুটের দিকে হাঁটা শুরু করবো। মুন্নি আর অগ্নি বললো যে আমাদের পরের হুটেতেই পৌঁছতে হবে রাত্রিতে থাকার জন্য নাহলে আগামীকাল আমরা বিকাল চারটের মধ্যে সুগস্পিৎজ কিছুতেই পৌঁছতে পারবো না। কথাটা একদম সত্যি, এমনিতেই কালকের চড়াই আজকের থেকে অনেক বেশি, তার ওপর এক্সট্রা ৬ কিলোমিটার হাঁটার লোড তো নেবার কোনো প্রশ্নই উঠছে না। সান্ত্বনার দিকে তাকাতে ও বললো, চলো এখনই আমরা বাকি পথে হাঁটা শুরু করি। একটু রেস্ট নেওয়ার জন্যই হোক বা মনের মধ্যে একটা ভয় থাকার জন্যই হোক সান্ত্বনা কিন্তু বাকি সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা প্রায় একই গতিতে আমাদের সাথে হেঁটেছিলো। পথের মধ্যে শুধু এক জায়গায় পাটনাচ নদীর ধারে আমরা ৫ মিনিটের একটা ব্রেক নিয়েছিলাম।

    বাকি প্রায় ৬ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আমরা যখন ১৩৭০ মিটার ওপরে রাইনটাল-আঙ্গারহুটে পৌঁছলাম তখন বিকাল ৬ টা বেজে ৪০ মিনিট। দিনের আলো তখনও আছে। এই হুটে টা আগেরটার থেকে একটু বড়ো, সামনে একটা বেশ বড়ো খোলা মাঠের মতো জায়গাকে ঘিরে সাজিয়ে বাগান মতন করা আছে, তার ই অনতিদূরে নদীর ছোট ধারাটা বয়ে চলেছে। হুটের চারিদিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা। বাগানের মধ্যে দু-তিন মিটার ছাড়া-ছাড়া চেয়ার টেবিল পাতা আছে।
    হুটের মধ্যে না ঢুকে আমরা সোজা বাগানে ঢুকে একটা টেবিল নিয়ে বসে গেলাম। এখন আমরা একদম নিশ্চিন্ত কারণ আজ রাতটা আমরা এখানেই থাকবো। বিকালের শেষ রোদটা একদম আমাদের গায়ে এসে পড়েছে। সবাই চেয়ারে গা এলিয়ে দিলাম। এর মধ্যেই অগ্নি সবার জন্য ক্যাপুচিনো নিয়ে এলো। এইভাবে প্রায় এক ঘণ্টা আলপীয়ান সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা সাড়ে সাত টার সময় হুটে তে চেকইন করলাম। যে ঘরেতে আমাদের ডর্মিটরি ছিল সেখানে অনেকগুলো বাংক বেড ছিল। এক একটা বাংক বেডে পাশাপাশি চার জন শোয়ার ব্যবস্থা ছিল। কোভিড-১৯ ডিসট্যান্সিং এর জন্য আমাদের পাশের বাংক বেডটা খালি ছিল কিন্তু ওপরে কয়েকজনের শোয়ার ব্যবস্থা ছিল।

    কিছুক্ষনের মধ্যে আমি স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে নিচে ডাইনিং এ চলে এলাম। ডাইনিং হল টা বেশ বড়ো আর খুব সুন্দর। একটা বিরাট বড়ো ফায়ার প্লেস পুরো ঘরটাকে গরম করে রেখেছে। ডাইনিং এর একদিকে পুরোটা গ্লাস দিয়ে ঘেরা, সেখান দিয়ে বাইরের পাহাড়, বয়ে চলা নদী সব কিছু এতো স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে যে মনে হচ্ছে আমরা ওই নদীর পাশে পাহাড়ের তলায় বসে আছি। এমনই গ্লাস ওয়াল এর পাশে আমি চারটে চেয়ার এর একটি টেবিল বুক করে বাকিদের জন্য অপেখ্যা করছিলাম। এমন সময় আমার পাশের টেবিলে এক মাঝবয়েসী ভদ্রলোক এসে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে হ্যালো বললেন আর একটু হাসলেন। আমিও প্রতুত্তরে হ্যালো বললাম। এর পর উনি আমায় বললেন আমি যদি কিছু না মনে করি তাহলে উনি জানতে চান আমি কোন দেশে থেকে এসেছি। কিছুদিন আগেই জার্মানিতে একটা রুল পাস্ করে হটাৎ করে কোনো মানুষকে তার আইডেন্টিটি নিয়ে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তাই হয়তো উনি এমন বিনীত ভাবে আমায় এই প্রশ্নটি করলেন। আমি এসব নিয়ে খুব একটা সিরিয়াস নই, তাই বললাম ইন্ডিয়া থেকে। ইন্ডিয়া শুনে উনি এবার ওনার ইন্ডিয়া ভ্রমণের গল্প শুরু করলেন, আস্তে আস্তে আমাদের পুরো টীম টেবিল এ চলে এলো।
    আমরা পুরো ফ্যামিলি সুগস্পিৎজ অব্দি ট্রেকিং করবো শুনে উনিও বেশ অবাক হয়ে গেলেন। আমাদের একটুও নিরুৎসাহ না করে উনি আমাদের অনেক সাহস আর কিছু সাজেশন দিলেন। আগামীকাল খুব সকাল-সকাল আমাদের ট্রেকিং শুরু করতে বললেন, দরকার হলে রেস্টুরেন্টে বলে সকালের ব্রেকফাস্ট প্যাকিং করে নিয়ে নিতে বললেন। বেশি দেরি না করে আমরা ডিনার অর্ডার করলাম। স্টার্টারে থাকলো মাশরুম স্যুপ, সাথে গার্লিক ব্রেড। মেন্ ডিশ মুন্নি আর অগ্নি নিলো প্রন পাস্তা, আমি আর সান্ত্বনা গ্রিলড চিকেন সাথে বেকড পটেটো।

    ডিনার খেতে খেতে মনটা আবার চলে গেলো ২২ বছর আগের এরকম ই এক গোধূলি বেলায়, সেদিন বসেছিলাম কেদারনাথ যাওয়ার পথে রুদ্রপ্রয়াগে, চাঁদের আলোয় আলোকিত খোলা আকাশের নিচে।
    পাশ দিয়ে বয়ে চলেছিল মন্দাকিনী। সেই দিন একটা সামান্য চটিতে বসে মাইজির হাতে তৈরি গরম গরম রুটি আর আলুর চোকার স্বাদ কোনো অংশেই প্রন পাস্তা আর গ্রীলড চিকেনের থেকে কম ছিল না। ডিনার শেষ করে রাত্রি প্রায় ১১ টায় আমরা ওপরে ডর্মিটরিতে ফিরে প্রত্যেকে একটা করে ম্যাগনেসিয়াম ট্যাবলেট খেয়ে যে যার স্লিপিং ব্যাগ এর ভেতর ঢুকে গেলাম। শরীরে অসম্ভব ক্লান্তি, পায়েও বেশ ব্যথা। ওপরে যারা শুয়ে ছিলেন তাঁদের মধ্যে দু জন মহিলা তখনও খুব আস্তে আস্তে নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ করে চলেছেন, হটাৎ চোখ দুটো একদম বুজে এলো ...

    চলবে .....
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শঙ্খ | ১১ জুন ২০২১ ০১:৩৫494826
  • বাহ বেশ ভালো লাগছে। পড়ছি। 

  • হীরেন সিংহরায় | ১১ জুন ২০২১ ১০:৩৩494837
  • অসাধারন লিখছেন। চোখের সামনে জেগে উঠছে এককালে দেখা ছবি। যদি অনুমতি করেন বলি যে জার্মান ভাষায় ch এর উচচারন সর্বদা "খ" হবে। যেমন নদীটির নাম লেখ। তেমনি পার্টনাখ । 

  • | ০৫ জুলাই ২০২১ ২১:২৩495629
  • বেশ লেখা। চলুক। 


    দুই একটা বানান ভুল আছে। একটু দেখে নেবেন। যেমন 'অদ্ভুত' শব্দটা দুইবার অদ্ভত লেখা আছে। টাইপো হলে দুবারই হত না আর কি। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন