এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বই

  • মানুষই তখন গান, মানুষই তখন ত্রুবাদুর

    প্রতিভা সরকার
    আলোচনা | বই | ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৩৮৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (১০ জন)
  • শ্রেষ্ঠতম কবিদের একজন কেন, নামডাক আছে এমন কারো দেহান্ত হলেই ফেসবুকে হুল্লোড় মচিয়ে যায়। কেউ প্রথমেই মিচকে হেসে রাজনৈতিক দলগুলোকে গাল পাড়তে বসে যায়, মনে রাখে না, এদের বিরূপতা কবির কৃতি আর মূল্যায়নে কোনো ছায়া ফেলতেই অক্ষম। শেষ অব্দি ওই বিরূপতার আদর্শ জায়গা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। তবু পূজার ছলে ভোলার বা ভুলিয়ে দেবার জোরদার প্র্যাকটিস চলে। আসলে রাজনৈতিক মিচকেমির আদর্শ সময় এটি, একে নির্বাচন, তায় করোনা। রাজনীতি বিষবৎ পরিত্যাজ্য, একথা যার পোস্ট পড়ে মনে হবে, আসলে সে হয়তো এই অছিলায় তার গভীর গোপন রাজনৈতিক এজেন্ডাটিকে মান্যতা দিতে চাইছে। তার ওপর আছে পারিবারিক নৈকট্য রোমন্থন, পণ্ডিতদের সমুদ্র-বিশ্লেষণ আর কারণ অকারণে নিন্দেমন্দও।

    এইসবের ভিড়ে হারিয়ে যায় সেই বোকা বোকা কন্ঠস্বর যে আমতা আমতা করে বলতে চায়, ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে, কিন্তু কেন তা গুছিয়ে বলতে পারব না। অর্থাৎ পড়ে থাকে সাধারণ পাঠক আর তার তড়বড়িয়ে দিতে না চাওয়া অথবা প্রতিক্রিয়াশূন্য ভালো লাগা। খুব জোরাজুরি করলে সে হয়তো বলবে, এই দ্যাখো, অস্তমিত সূর্যের মুখের ওপর দিয়ে পাখির ঝাঁক উড়ে গেল, মন বিষণ্ণ হয়ে এলো, বা ছাদে ঊর্ধ্বমুখ শুয়ে আকাশের বিস্তার দেখে নিজেকে মনে হল তুচ্ছাতিতুচ্ছ, এদের ব্যাখ্যা চাইলেই কি দেওয়া যায় ! কিন্তু তা বললে তো চলে না। অবোধ পাঠককেও কখনো বলতে হয়, কুঁজোর চিত হয়ে শোবার মতো। তাই হয়তো কোনো বিনিদ্র অন্ধকারে চিন্তার গভীর কুয়োয় দড়ি বালতি নামালে পথভ্রষ্ট বন্দী শুশুকের মতো তাকেও আবছা পিঠ দেখাবে অস্পষ্ট কোনো কারণ। তারপর তাকে নেড়েঘেঁটে নিজেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করা, এইজন্যই কি ভালো লাগা?

    অথচ কবিতা তো বহু সময়েই এইরকম। অব্যাখ্যাত। কোনো ফর্মুলায় বাঁধা মুশকিল। বলা কঠিন, কেন গহন তন্ত্রী কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই এমন তীব্রতায় বেজে ওঠে , এমন তার ঝংকার যেন অশ্রুত অনাহত স্বর গ্রহান্তর থেকে এখুনি নেমে এলো মাথার ভেতরে। আবার সে পালকের মতো নরম ঘুম নামিয়ে আনতে পারে পরিশ্রান্ত রক্তচক্ষুতে। নিবিড় শান্তি এনে দিতে পারে, একবারেই জানাতে পারে কাকে বলে প্রেম, আবার মুহূর্তে ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনায় জ্বালিয়ে দিতে পারে অশান্তির আগুন। কবিতা পড়ে কখনো মনে হতে পারে এ তো আমার কথা। এখানেই খুঁজে পেলাম নিজেকে। ভাষা খুঁজে মরার, অপ্রকাশের নিরুদ্ধ বেদনার চির সমাপ্তি হলো। আবার কখনো উল্টোটাও। আমার কথা নয়, একথা অন্যের হতে পারে, এইরকমও মনে হতে পারে। কিন্তু সেটা আগে জানলে আপন হতে বাহির হয়ে অপরকে জানার কতো সুবিধে হতো। অহম আর অপরের, আমরা ওরার ভেদ ঘুচে যেত। যাইই মনে হোক, তা যতই দ্বন্দ্ব মুখর হোক, তবু এখানেই আশ্রয়, এখানেই অবলম্বন। তাই চিরকাল কবিকে ঈশ্বর বলে জেনে এসেছি, আর এক লাইন কবিতা লিখতে না পারলেও পাঠের কমতি পুষিয়ে নেবার চেষ্টা করেছি।

    এইসকল বৈপরীত্যকে কতো অনায়াসে ধারণ করা সম্ভব, শঙ্খ ঘোষের কবিতায় সে চিহ্ন স্পষ্ট। জগন্নাথের নব কলেবর উপলক্ষে বিশ্বাসীর চোখে অলৌকিক নিমগাছটির গুঁড়িতে শঙখ চক্র গদা পদ্ম ছাপ ফুটে ওঠার মতোই তা অমোঘ। তফাত এই যে তাঁর হাতে নব কলেবর প্রাপ্তি কোনো বিগ্রহের নয়। সে প্রাপ্তি নুয়ে পড়া মানুষের একচেটিয়া। সমস্ত দ্বন্দ্ব কোলাহলের মধ্য থেকে স্পষ্ট ভেসে আসে তারই জয়গান। স্বসৃষ্ট ভাষার ঘেরাটোপে, অনন্ত প্রতীকের ভিড়েও তিনি অনায়াসে হাত ধরে নিয়ে যান আমার মতো স্বল্প মেধার পাঠককে, তাকে উপহার দেন যাবতীয় বিপরীতের অন্তরে বসে থাকা একীভবনের মূল সূত্রটিকে যে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। সে মানুষ আহত মানুষ। নতচক্ষু, গোত্র পরিচয়হীন। মারখাওয়া সাধারণ মানুষ। ভোট ছিনতাই হওয়া, ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়া আজকের মানুষ।চিরকাল অবদমনের শিকার। কিন্তু

    ''এমনিভাবে থাকতে গেলে শেষ নেই শঙ্কার

    মারের জবাব মার

    বাপের চোখে ঘুম ছিল না ঘুম ছিল না মা-র

    মারের জবাব মার।''

    কিন্তু কবি মারের রকম ফের সম্বন্ধে পুরো ওয়াকিবহাল। কবিতা হোক সেই আশ্চর্য অস্ত্র যা ধারে কাটে, বুঝি বা ভারেও। তাই পরের পংক্তিগুলি দাঁড়াল এইরকম,

    "কিন্তু তারও ভিতরে দাও ছন্দের ঝংকার

    মারের জবাব মার

    কথা কেবল মার খায় না কথার বড় ধার

    মারের মধ্যে ছলকে ওঠে শব্দের সংসার।"

    সমস্ত অক্ষরকর্মী শিখে নিক সেই ছলাতছল শব্দের সংসার রচনা যার শাণিত ঝলক আধিপত্যকামীর ঘুম ওড়াবে।
    এইখানে মনে পড়ে গেল দুটি তথ্য। শঙ্খ ঘোষ জরুরি অবস্থাকে রেয়াত করেননি। দেশ পত্রিকাও তখন তাঁর লেখা ছাপবার সাহস দেখায়নি। অন্যখান থেকে ছাপার প্রস্তাব এলে কবির প্রথম শর্ত ছিল, তার লেখার একটি শব্দও এদিক ওদিক করা যাবে না। রাণীর ভয়ে কুঁকড়ে গেলে চলবে না,

    "তা ছাড়া এই অবিমৃষ্য ঝড়ে

    স্পষ্ট স্বরে বলতে চাই তোকে

    সত্য থেকে সঙ্ঘ হতে পারে

    সঙ্ঘ তবু পাবে না সত্যকে।"

    সঙ্ঘের চেয়ে সত্য বড়। আর সেই সত্যের খাতিরে রেয়াত করা চলে না কারোকেই।
    দ্বিতীয় তথ্যটিও এই সত্যভাবনা সম্পর্কিত। একেবারে শুরু থেকেই সে নিষ্ঠা প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়েছে। শান্তিনিকেতনের সাহিত্যমেলায় উচ্ছ্বসিত সুভাষ মুখোপাধ্যায় পড়ে ফেললেন তরুণ শঙ্খের একটি কবিতা। কবি তখন পদ্মাপারের শৈশব স্মৃতি ও ছন্নছাড়া বড় হয়ে ওঠা পেরিয়ে প্রেসিডেন্সির ছাত্র। বুদ্ধদেব বসু উপস্থিত ছিলেন সে সভায়। মুখচোরা লাজুক শঙখ যাবেন না ভেবেও কী করতে যেন সেখানে উপস্থিত। সুভাষের বক্তব্যের পর বুদ্ধদেব মহা উত্তেজিত হয়ে অনাহুত ভাবেই মাইক তুলে নিলেন৷ কবিতা লেখা এতো সোজা নয়। স্লোগান বা প্রচার তার উপজীব্য হতে পারে না কখনো। কবিতা এক গাঢ়তর বোধের জগত,ভাত ভাত বলে সরল চিৎকার করলেই সেটা কবিতা হয় না। এইরকমই কিছু নাকি সেদিন বলেছিলেন তিনি।

    দর্শকাসনের তরুণটি নিশ্চুপে সব শুনে গেল।
    পাল্টালো কি তার চিন্তাভাবনা? ভুবনখ্যাত অগ্রজের অনুপ্রেরণায় বিশুদ্ধ কবিতার আনন্দরসে বুঁদ হয়ে থাকবার শুরু হল কি সেই মুহূর্ত থেকে? না তা হলো না। কেনই বা তা হবে যখন কবিতা আর সমসময়কে মেলানোর আশ্চর্য রসায়ন তার হস্তধৃত আমলক ? তাঁর কবিতা থেকে কবিতা নিয়ে নিলে পড়ে যে থাকে শুধু কবিতাই। পাত্রটি যদি তৈরি জীবনের কাদামাটিতে, ভেতরের অমৃত তো কবিতাই। তাই একেবারে মধ্যগগনে যখন তিনি, তখন আমরা পেয়ে যাই এইসব আশ্চর্য পংক্তি,

    ''একদিন এই দেশে- সুজলা সুফলা এই দেশে

    পাথরে পাথর গেঁথে উঁচু করে বানাব মিনার

    সেখানে দাঁড়িয়ে যারা ছিন্নভিন্ন পক্ষাঘাত থেকে

    চন্দ্রগরিমার দিকে বাড়াবে অশোক হাতগুলি

    তারা কেউ এরা নয়- হিন্দুও না,মুসলমানও নয়,

    জৈনবৌদ্ধ খ্রিস্টানও না,জরথ্রুস্টি নয়,কিন্তু সবই

    একাকার কোনো দীন ইলাহির গোলাপবাগানে

    উৎসের আতর ছুঁয়ে প্রাচীর প্রান্তর ভরে দেবে।

    আর এই ফতেপুর- ফতেপুর সিক্রি যার নাম

    তারই মর্মমূল থেকে এ জাহান পেয়ে যাবে নুর-

    তখন কোথায় আমি, কোথায় বা ক্ষত্রবংশী তুমি

    মানুষই তখন গান, মানুষই তখন ত্রুবাদুর।"

    চিরকাল তাঁর কবিতার অভিমুখ জীবনের দিকে। যেন জানালার পাশে কাচের গ্লাসে রাখা মানি প্ল্যান্টের শাখা, যতই ঘুরিয়ে দাও অথবা বেঁধে রাখো, তবু তার একরোখা চলন ঐ আলোকিত চৌখুপিটির দিকেই।
    কিন্তু মৃত্যু পেরিয়ে আলোর দিকে কবির যাত্রা মানি প্ল্যান্টের মতো সরল হয়নি কোনকালেই, যদিও তার মতোই একরোখা তিনিও। দীর্ঘ যাত্রাপথে রক্তে ছলছল করা জলে দাঁড়ের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে

    "নৌকোর গলুই ভেঙে উঠে আসে কৃষ্ণা প্রতিপদ

    জলজ গুল্মের ভারে ভরে আছে সমস্ত শরীর

    আমারঅতীত নেই,ভবিষ্যৎও নেই কোনোখানে।

    অথবা ধানখেতে ঝড়ে ভাঙা সেই লাইটপোস্টের পাশে দাঁড়িয়ে 'যেদিকে তাকাও রাত্রি প্রকান্ড নিকষ সরোবর।'
    পাঁজরে দাঁড়ের শব্দের ছোট কবিতাগুলো বেশিরভাগই এই টানাপোড়েনের ক্ষত বুকে নিয়ে টিঁকে আছে। অতীত ও ভবিষ্যতহীন শেকড় ছেঁড়া সত্তা আজ কেবলই নিরালম্ব বায়ুভূত, 'তোমার শরীর নেই, তোমার আত্মাও আজ ঢেকে গেছে ঘাসে'। এই দুর্বিষহ অবস্থার ভ্রান্তি সন্দেহ অবিশ্বাস কাটিয়ে তবে তো সেই প্রত্যয়ের কূলে পৌঁছনো যেখানে ভালোবাসার জন্য ডাক পাঠানো যায় ঃ

    "এসো ভালবাসো, এসো সন্দেহ কোরো না ভালবাসো

    মাটি ছুঁয়ে কথা বলো,হাতে হাত রাখো,চুপ করো

    পলির প্রসাদে নাও মুছে নাও পাড়ের পাথর

    দেখো তার কাছে এসে নুয়ে আছে আহত মানুষ"

    এইভাবেই সমাপ্ত হলো নিবিড় অনুসন্ধান ! এতোদিন মনে হচ্ছিল শুধুই পড়ে থাকা 'হীনতম অপব্যয়ে'। আজ আহত মানুষের কাছে এসে নিজের অভীষ্টকে বুঝলেন জানলেন তিনি। পাঠককেও জানালেন। নিজেকে এবং শুশ্রূষাপ্রার্থীদেরও দেখলেন মৃত্যু চেয়ে বড় বলে। সার্বিক বিলুপ্তি বা লয় নয়, পুনরুত্থানই মৃত্যুর ভবিতব্য। এমনকি চিতা জ্বলার সময়ও আলোর কথা বলা চলে -

    "চিতা যখন জ্বলছে, আমার হৃৎকমলে

    ধুম লেগেছে, ঘুম লেগেছেচরাচরে,পাপড়িজ্বলে

    এই তো আমার

    এই তো আমার জন্মভূমির আলোর কথা।"

    এই আহত মনুষ্যত্বের শুশ্রূষাই যেভাবে হোক কাম্য। প্রতিবাদ, সংগ্রাম শব্দগুলো ক্লিশে হলেও তারা কবির হাতিয়ার। মনুষ্যত্বের কাছে দায়বদ্ধতা। তাই ভাষা সাংকেতিক ও নিজস্ব হলেও তা কখনো অস্পষ্ট নয়। বহুজনগ্রাহ্য ও সংবেদী। একটি উদাহরণ। যে মানুষ অপমানে নিচু হয়ে থাকে, মাটিতে নিবদ্ধ রাখে দৃষ্টি, ঘাত প্রতিঘাতে যার দিনগুলি ঝরে যায় প্রহরে উজানে,

    "তারই কাছে এসে ঐ পাঁজরে পালক রেখেছিলে
    তোমার আঙুলে আমি ঈশ্বর দেখেছি কাল রাতে "

    এ আঙুল সহমর্মিতার, ভালবাসার পালক, তাই স্পর্শ ঐশ্বরিক। অমৃত কুম্ভের সন্ধান যখন পাওয়াই গেছে, কবির সোচ্চার হতে আপত্তি কী!

    বিপরীত টান ওঁর স্বভাবগত, সেখান থেকেই কি চারিয়ে যাওয়া সৃষ্টিতে ? পরের দিকে রবিবারের আড্ডাও অবারিত ছিল না। ফোন করে অনুমতি নিয়ে বই দিতে যাওয়া হলো। কী সুভদ্র, সাদা ধুতি পাঞ্জাবি আর মুখে কী আলতো হাসি। ওঁকে প্রণাম করে বই দিচ্ছি, আশা ছিল সঙ্গের ছেলেটিকে যেমন শিখিয়ে পড়িয়ে এসেছি, তেমন একটি ছবি উঠবে। অকিঞ্চনের ধন হয়ে সে ছবি থেকে যাবে, কবির কবি আর তাঁকে প্রণামরত তুচ্ছ পাঠকের, কিন্তু সে ছবি আর উঠল না। খুব ভালো সন্দেশ খেয়ে সে দুঃখ ভুললেও আবার খুব শিগগিরই আসছি এইরকম প্রত্যয় ছিল। কে জানতো করোনা সব ওলটপালোট করে দেবে।

    এতো কোমল কণ্ঠস্বর, এতো উদাসীন চাহনি, শ্রবণ উন্মুখ, কিন্তু চুপ করে থাকা, আছেন সবার মধ্যে অথচ সত্যি আছেন কিনা কে জানে ! হয়তো এটাই কবির অবলোকনের ধরন। পাছে উন্নাসিকতা বা ঔদ্ধত্যের দায়ে দায়ী হন, তাই কি লুকিয়ে রাখা ভেতরের পোক্ত কাঠের কাঠামো। যাতে কদাচিত ঘুণ ধরে। গঙ্গার জলে ভাসিয়ে দাও, আবার তুলে আনো, বছরের পর বছর তা দিয়ে ঠাকুর গড়া চলবে। এঁরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মশাল জ্বালতে পারেন এক টুসকিতে। সে জালিয়ানওয়ালাবাগ হোক, কী কলকাতার রাজপথ। শুধু তো নন্দীগ্রাম পরবর্তী মিছিলে নয়, কবি হেঁটেছিলেন ২০১৩ সালের কামদুনি প্রতিবাদ মিছিলেও।সেখানে ছিলাম বলে দেখেছিলাম কোনো রাজনৈতিক দলের পতাকা ছাড়া লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা ঘরে ঢুকে গেলেন কবির আপত্তির কথা জেনে আর মিছিলের সর্বাগ্রে চললেন তিনি, যেন হ্যামেলিনের বাঁশিওয়ালা।

    সব তো দূর থেকেই দেখা। উত্তর পাড়ায় অরণির অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি সস্ত্রীক শঙ্খ ঘোষ পাশে উপবিষ্ট। সারাক্ষণ অখণ্ড মনোযোগে গান শুনলেন। অমিতেশ সরকার পরিচয় করিয়ে দিলে সেই স্মিত হাসি।
    কিন্তু কবিতা পড়ি যখন তখন কবি একান্তচারী নন আর। স্ব ও অপরের সঙ্গে একটি আশ্চর্য সাঁকো গড়ে ওঠে সদ্য সদ্য, তা পার হতে পারলেই দেখা যায় মানুষের সমাজ প্রকৃতি আর বিপুলা এই সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর অচ্ছেদ্য বন্ধন। অক্ষরের বাঁকে, পৃষ্ঠার ভাঁজে তাঁর সরব অস্তিত্ব, কে বলে গো এই প্রভাতে নেই আমি। মৃদুস্বর পরিহার করে ভয়ানক বজ্রকন্ঠ তিনি তখন,

    ..".আমার ধর্মও নেই আমার অধর্ম নেই কোনো
    আমার মৃত্যুর কথা যদি কেউ দূর থেকে শোনো

    জেনো এ আমার মাটি এ কাল আমার দেশকাল
    জালিয়ানওয়ালাবাগ এবার হয়েছে আরওয়াল...

    আমারদেওয়ালে পিঠ আমাকেবাঁচতেই হবে তাই
    আমার চোখের রক্তে সবার চোখের গান গাই-

    দেখো রে মানুষ দেখো,একুশ শতকে চলে দেশ
    আমার মৃত্যুরও নেই আমার জন্মেরও নেই শেষ।"

    মেঘের মতো ওই এক মানুষকে পেয়েছিলাম আমরা, যাঁর কাছে গিয়ে বসলে ছায়া নেমে আসবে মনে হয়, 'ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে আমিও হয়তো কোনদিন হতে পারি মেঘ।'
    সে আশা আশার অধিক, তবে মেঘের মতো কোমল জলভারানত অস্পষ্টতা তো তাঁর ধর্ম নয়। তাই হাতে উঠে আসে হেতালের লাঠি, উদ্যত দংশনের সামনে প্রেমের প্রহরে তিনি অতন্দ্র প্রহরী,

    আমি শুধু এইখানে প্রহরীর মতো জেগে দেখি

    যেন না ওদের গায়ে কোনো নাগিনীর শ্বাস লাগে

    যেন কোনো ঘুম, কোনো কালঘুম মায়াঘুম এসে

    শিয়র ছুঁতে না পারে আজ এই নিশীথনগরে

    হেতালের লাঠি যেন এ-কালপ্রহর মনে রাখে

    চম্পকনগরে আজ কানীর চক্রান্ত চারদিকে।

    এই আমাদের কবি, শঙ্খ ঘোষ, আমাদের চিরকালের ত্রুবাদুর। যতদিন কবিতা থাকবে, ততোদিন তিনি অবিনশ্বর।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৫ এপ্রিল ২০২১ | ৩৮৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • অনিরুদ্ধ কীর্তনীয়া | 103.42.175.171 | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৩৩105161
  • অসামান্য

  • বোধিসত্ত্ব দাশগুপ্ত | 202.142.93.69 | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৮:০৫105164
  • খুব ভালো লেগেছে, এতো একেবারে ফিস্ট। থাম্ব্স আপ প্রতিভাদি। 

  • সৌম্যেন কুনডা | 103.240.97.148 | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১৯105169
  • খুব ভালো লাগলো

  • কোয়েল Maria | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪২105172
  • কী ভীষণ মায়া জড়ানো 

  • Susmita De | 2409:4060:218e:911d:b4be:d2af:d9f3:a14f | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪৭105175
  • অসাধারণ লেখা।  এত ভালো লাগলো লিখে বোঝানো যাবেনা।  

  • শেখর সেনগুপ্ত | 103.220.210.82 | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২১:৩১105177
  • অবিনশ্বর কবির সৃষ্টির কাঁটাছেড়ার মধ্য দিয়ে অনবদ্য শ্রদ্ধাঞ্জলি।  ধন্যবাদ প্রতিভা, আপনার এই অনন্য নিবেদনের জন্য। 

  • বিষাণ বসু | 2409:4060:1e:249c:94e5:e7b5:ba86:6229 | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২২:২৭105179
  • বড্ডো ভালো লিখেছ, প্রতিভাদি।

  • Rukhsana Kajol | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২২:৪৪105181
  • ভালো লেগেছে। অনেকে কেবল কবি থেকে যায়। মানুষ হতে পারে না। উনি পেরেছেন।

  • শিবাংশু | ২৫ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩৮105182
  • তাঁর গুরুর পর জীবৎকালেই  একটা 'ধারণা' হয়ে ওঠার  এমন  সিদ্ধি বাংলায়  সম্ভবত আর কেউ অর্জন করেননি। দায়িত্ব নিয়েই বলি। অনেক কবি প্রফেট হতে স্বস্তি বোধ করেন। সেই হতে চাওয়ার তৃষ্ণা তাঁদের মানুষের থেকে দূরে নিয়ে যায়। । তাঁরা সংখ্যার দিক দিয়ে বেশ গুরুভার। আমাদের কালে দেখেছি 'প্রফেট' শব্দটি শঙ্খ ঘোষের কাছ থেকে স্বীকৃতি চাইছে। কিন্তু তিনি অভিজাত প্রত্যাখ্যানে শব্দটির আকাঙ্খা খর্ব করে চলেছেন। তাঁর সঙ্গে, বলা ভালো তাঁর রচনার সঙ্গে, ব্যক্তি আমার পরিচয় অন্তত পাঁচ দশক।  একটা প্রতীক হয়ে উঠেছেন তিনি গত তিন-চার দশক ধরে। এতো মসৃণ, সুরম্য সেই আরোহণ। দেখি আর ভাবি,  আমাদের কালে সবই শূন্য নয়। 


    অতিরিক্ত মেধা কবিতাপাঠককে রিক্ত করে। এই লেখাটি সেই বালাই এড়িয়ে পাঠকের স্বতস্ফূর্ত মুগ্ধতাকে মোহন উপলব্ধির স্তরে নিয়ে গেছে।  এটাই তো কাম্য। শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে অযুত কথা বলা হয়েছে। আরও নিযুত কথা বলা হবে। এই মুহূর্তে পাঠকের ঠিক যা বলার, সেই  অবিমিশ্র নিগূঢ় কথন ছড়িয়ে আছে এই লেখায়। রচনাটি লেখকের পাঠ নয়, পাঠকের লেখ। তাই তার গভীরগামী স্পর্শ অনুভব করি, অবিরল।  

  • aranya | 2601:84:4600:5410:196:fa21:5b42:4664 | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৫105185
  • অসাধারণ। খুব ভাল লাগল 

  • সুজাতা গাঙ্গুলী | 2401:4900:36b1:291c:ec:75f5:13bb:f6fd | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ০৬:৫৮105186
  • খুব ভালো লিখেছো। 

  • Alak Basuchoudhury | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১০:৫৭105197
  • তাঁর হাতে নব কলেবর প্রাপ্তি কোনো বিগ্রহের নয়। সে প্রাপ্তি নুয়ে পড়া মানুষের একচেটিয়া। সমস্ত দ্বন্দ্ব কোলাহলের মধ্য থেকে স্পষ্ট ভেসে আসে তারই জয়গান। স্বসৃষ্ট ভাষার ঘেরাটোপে, অনন্ত প্রতীকের ভিড়েও তিনি অনায়াসে হাত ধরে নিয়ে যান আমার মতো স্বল্প মেধার পাঠককে, তাকে উপহার দেন যাবতীয় বিপরীতের অন্তরে বসে থাকা একীভবনের মূল সূত্রটিকে যে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। সে মানুষ আহত মানুষ। নতচক্ষু, গোত্র পরিচয়হীন। মারখাওয়া সাধারণ মানুষ। ভোট ছিনতাই হওয়া, ডিটেনশন ক্যাম্পে যাওয়া আজকের মানুষ।চিরকাল অবদমনের শিকার। কিন্তু


    ''এমনিভাবে থাকতে গেলে শেষ নেই শঙ্কার


    মারের জবাব মার


    বাপের চোখে ঘুম ছিল না ঘুম ছিল না মা-র


    মারের জবাব মার।''


    ভালো লেগেছে এটুকু বলেই ক্ষান্ত হলাম। ভালো লাগার মোদ্দা কারণ হয়তো এটাই যে, এর অনেক বীক্ষণ ও মূল্যায়ন আমার সঙ্গে মিলে যায়। এর বাইরে যেসব কারণ আছে, তা নিয়ে আর এই চমৎকার লেখাটির কাটাছেঁড়া করতে আর ইচ্ছে করছেনা এই পীড়িত প্রহরে।

  • Alak Basuchoudhury | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১১:০৭105198
  • কীভাবে জানি না, ওপরে আমার মন্তব্যের সঙ্গে মূল লেখাটির কিছুটা অংশও কপি হয়ে গেছে। এডিট অপশন না পেয়ে অগত্যা আবার লিখছি যে, শুধু এটুকুই আমার বলার ছিল:-


    ভালো লেগেছে এটুকু বলেই ক্ষান্ত হলাম। ভালো লাগার মোদ্দা কারণ হয়তো এটাই যে, এর অনেক বীক্ষণ ও মূল্যায়ন আমার সঙ্গে মিলে যায়। এর বাইরে যেসব কারণ আছে, তা নিয়ে আর এই চমৎকার লেখাটির কাটাছেঁড়া করতে আর ইচ্ছে করছেনা এই পীড়িত প্রহরে।

  • শৌভিক | 223.191.1.184 | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৩৫105200
  • খুবই সুন্দর হয়েছে

  • ব্রততী চৌধুরী | 2402:3a80:a39:44fd:54fb:17c5:9e0c:aab3 | ২৬ এপ্রিল ২০২১ ১৫:১৬105203
  • শঙ্খ ঘোষ আমার প্রিয় কবি আর প্রতিভা সরকার দিদি অসামান্য গদ্যকার। খুব ভালো লাগলো এই শ্রদ্ধা নিবেদন। 

  • সুমন | 2405:201:8003:991f:4c27:1c03:7af0:2b8d | ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৮:৩২105213
  • আপনি ই পারেন এমন লেখা লিখতে।প্রণাম।

  • বিপ্লব রহমান | ২৭ এপ্রিল ২০২১ ০৯:০৯105215
  • খুব ভাল লেখা।  কবির মৃত্যু নাই 

  • জয়ন্ত সেনগুপ্ত | 2401:4900:314b:939f:0:2d:7bd:ee01 | ২৭ এপ্রিল ২০২১ ১৭:১৫105225
  • অমূল্য শব্দ চয়নে অমর কবিকে অসাধারণভাবে মেলে ধরেছেন আমাদের সামনে৷ অতুলনীয় শ্রদ্ধান্জলি৷ কবিকে জানাই প্রণাম, দিদিকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য

  • পাপিয়া ভট্টাচার্য | 202.142.67.74 | ২৮ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৪৭105239
  • অসাধারণ লাগল ।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে প্রতিক্রিয়া দিন