এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  স্মৃতিকথা  শনিবারবেলা

  • পেন্সিলে লেখা জীবন (১৮)

    অমর মিত্র
    ধারাবাহিক | স্মৃতিকথা | ০৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩৮৪৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • সাহিত্যিক অমর মিত্র লিখছেন তাঁর জীবনকথা, পেন্সিলে লেখা জীবন। প্রকাশিত হচ্ছে পাক্ষিকভাবে।
    আঠারো

    আমার এক সহকর্মী বন্ধু ছিলেন বর্ধমানের সুনীল কোনার। দীর্ঘকায়। ছ-ফুটের উপর হবেনই। অল্প বয়সে লিখতেন। পরে তা ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে মেদিনীপুরে কাটিয়েছি। পরে দেখা হয়েছিল শালতোড়ার আগে গঙ্গাজল ঘাটিতে। তিনি ছিলেন ওই ব্লকের বিডিও। এক রাতে তাঁর অতিথি হয়েছিলাম আমি। সুনীল আমাকে একটি কথা বলেছিল, প্রকৃতি তোমাকে লিখিয়ে নেবে, প্রকৃতি চাপ দেয় মাথায়। তার কথা সত্য হয়েছিল। এই এত বয়সেও তা বুঝতে পারি। সুনীল বেঁচে নেই। তা আমাকে বলেছিল বর্ধমানের স্বপ্নকমল সরকার। সুনীলের কথা খুব মনে পড়ে। দুরারোগ্য অসুখ তাকে শেষ করে দিয়েছিল কম বয়সেই। কে বাঁচে আর কে বাঁচায় কেউ জানে না। বেলিয়াতোড়ের অদূরে ছান্দার গ্রামে উৎপল চক্রবর্তী করেছিলেন একটি শিল্পগ্রাম। সেখানে গ্রামীণ শিল্পীদের নিয়ে করেছিলেন শিল্পকলা শিক্ষাকেন্দ্র। আমি রাত কাটিয়েছি সেখানে। দেখা হয়েছিল ভাষাতত্ত্ববিদ মানিকলাল সিংহর সঙ্গে। মনে পড়ে কত রাত অবধি জেগে তাঁর কাছে শুনেছিলাম শব্দের জন্মরহস্য, ভাষার জন্মরহস্য। গাছের পাতার ঝরে পড়া, ঝরনার ছলচ্ছল থেকে বর্ণমালা, শব্দ কীভাবে জন্মেছিল। উৎপল চক্রবর্তী কয়েক বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর শিল্পকলা আশ্রমটি অধিগ্রহণ করেছে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিল্পকলা আশ্রম করেছিলেন, তাঁকে স্মরণীয় করে রেখেছে। মনে প্রাণে তিনি বাঁকুড়ার মানুষ হয়ে গিয়েছিলেন।

    ১৯৮৯ সালে কলকাতা দূরদর্শনে এক শূন্য শূন্য নামের এক টিভি ধারাবাহিক আমি লিখেছিলাম কলকাতা পুলিশের কিছু কেস স্টাডি সংগ্রহ করে। আসলে বুক রিভিউ, কভার স্টোরি লেখা, রেডিয়ো নাটক লেখা থেকে টিভি স্ক্রিপ্ট সবই করেছি। কেন করেছি, টাকা আসত। মাসমাইনে ভালো ছিল না। আর পারিবারিক ভাবে কোনো অর্থের উত্তরাধিকার আমার ছিল না। নিজস্ব ফ্ল্যাট বা বাড়ি ছিল না। ভাড়া বাড়িতে থাকি সকলে মিলে। স্থান অকুলান। কত লোক সেই ফ্ল্যাটে। সেই সময় সোনেক্স কোম্পানির হয়ে ইন্দ্র মিত্রর একটি গল্প ‘পরিণাম রমনীয়’ চিত্রনাট্য লিখি। তারপর রমাপদ চৌধুরীর একটি গল্প চিত্রনাট্য লিখি। দূরদর্শনে তখন বাংলা ছোটোগল্প নিয়ে নানা টিভি নাটক হত। মৃণাল সেনও করেছিলেন। গৌতম ঘোষও করেছিলেন। এক শূন্য শূন্য ১৩ এপিসোডের গল্প আমি লিখি লর্ড সিনহা রোডের গোয়েন্দা দপ্তর থেকে সূত্র পেয়ে। পরিচালক আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন সেখানে। অসীম চট্টোপাধ্যায় আইপিএস আমাকে অনেক গল্প দিয়েছিলেন। সেই সূত্র পেয়ে আটটি চিত্রনাট্য লিখলাম। বাকি পাঁচটিও লিখব। পরিচালক ছিলেন মুম্বাইয়ের ছেলে পঙ্কজ রায়। পঙ্কজ আমাকে নিয়ে আসার জন্য বেলিয়াতোড় চলে গিয়েছিল। তা ছাড়া খবর দেবে কীভাবে? পঙ্কজ সিনেমা বুঝত খুব ভালো। তার পরামর্শদাতা ছিলেন সৈকত মুখোপাধ্যায়, চিত্র পরিচালক। চিত্রনাট্য করলাম আমি, গল্প লিখলাম আমি কিন্তু ছবি যখন দেখানো হল টেলিভিশনে একজনের নাম জুড়ে দেওয়া হল। তিনি গল্প লিখতেন। ব্যাংকে চাকরি করতেন। আর টেলিভিশনের চিত্রনাট্য লিখতেন। আমি বললাম, এই কাজে ওঁর কোনো স্পর্শ নেই, আমার নামের সঙ্গে ওঁর নাম কেন জোড়া হল? হয়তো তিনি দূরদর্শনের অনুমোদনে সাহায্য করেছিলেন। রহস্য উদ্ধার করতে পারিনি, কিন্তু ক্রুদ্ধ হয়ে আমি ত্যাগ করলাম পঙ্কজকে। বললাম আর করব না। বাকি পাঁচটির গল্প যেভাবে লিখে দিয়েছিলাম, সেই চিত্রনাট্য লেখককে দিয়ে বাকি কাজ করিয়ে নিয়েছিলেন পঙ্কজ। আমার বকেয়া টাকাও দিলেন না কার পরামর্শে জানি না। আমি স্পনসর কোলগেট কোম্পানিকে চিঠি লিখেছিলাম। চিত্র পরিচালককে ফোনে বলেছিলাম, তিনি ফোন রেখে দিয়েছিলেন। খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা। এক শূন্য শূন্য খুব নাম করেছিল সেই আমলে। যাই হোক বছর আড়াই বাদে ফোন এল পঙ্কজের। তখন ল্যান্ড লাইনই ভরসা। পঙ্কজ বলল, তার বিয়ে অমুক তারিখে, আমাকে আসতেই হবে। আমি শান্ত গলায় বললাম, বিয়ের খবর সুসংবাদ। শুভ হোক। কিন্তু আমি প্রতারিত হয়েছি। যেতে পারব না। পঙ্কজ বিয়ের কার্ড এবং বকেয়া টাকা নিয়ে বাড়ি এসেছিল। মার্জনা চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত আমি ওর বিয়েতে গিয়েছিলাম। সে প্রতিভাবান যুবক ছিল। সিনেমা বুঝত। বহুদিন আর যোগাযোগ নেই। ওই সময়, ১৯৮৮-থেকে ১৯৯৩ এই সময়টায় আমি টিভির চিত্রনাট্য লেখায় নাম করেছিলাম। নানা বরাত আসতে লাগল। বিখ্যাত এক লেখকের লেখা ধারাবাহিকের দুই এপিসোড আমি লিখেছিলাম। আমার কথা উল্লেখিত হয়নি। টাকাও পাইনি। তখন মনে হতে লাগল ওই জগতে এমন মানুষ বেশি। তবে ভালো মানুষও আছেন। অগ্রিম দিয়ে পরে আর আসেননি এমনও হয়েছে। এই সময় এক ভোরে মনে হয়েছিল, আমি টিভির চিত্রনাট্য লিখতে এসেছি না, সাহিত্য করতে এসেছি? তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক টাকা বেতনের মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তা শুনেছিলাম অগ্রজদের মুখে। ‘আমার সাহিত্যজীবন’ বইটি সংগ্রহ করে তখন পড়ি। কী অসামান্য ছিল তাঁর সংগ্রাম। একাগ্রতা। জীবনে ছাড়তে হয় লোভ। সাহিত্য সাধনার জায়গা। দশরকমে মাথা দিলে সাহিত্য সরস্বতী লেখককে ত্যাগ করে চলে যাবেন। বরং আমিই ত্যাগ করি অবাঞ্ছিত কাজ। সেই যে ত্যাগ করলাম টেলিভিশনের ডাক, আর ওপথে যাইনি। হ্যাঁ, নিজের গল্পের রেডিও নাটক লিখেছি। নিজের উপন্যাসের চিত্রনাট্য লিখে দিয়েছিলাম পরিচালক রাজা সেনকে। সে ছবি এখনও হয়নি। সব কিছু ত্যাগ করে আমি ধ্রুবপুত্র লিখতে আরম্ভ করলাম।

    পিছিয়ে যাই। ১৯৯০ সালে কলকাতা ফিরলাম। ফিরেছি অনাবৃষ্টি, অনাহার, আর উদাসী প্রকৃতির অভিজ্ঞতা নিয়ে। লিখব কোথায়? তেমন জায়গা নেই। রমাপদ চৌধুরী ভালোবাসেন আমার গল্প, কিন্তু উপন্যাস লিখতে হবে তো। বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ প্রান্তর, শূন্য প্রকৃতি আমাকে উপন্যাস লিখতে প্রলুব্ধ করেছে। ওই প্রান্তর, ওই মাটি, পাহাড়শ্রেণি, অনাবৃষ্টি আমাকে বড়ো কিছু লিখতে বলছিল। কিন্তু বড়ো কিছু লিখব কোথায়? এক সন্ধ্যায় একাডেমি অফ ফাইন আর্টস মঞ্চে নাটক দেখতে গেছি বিভাস চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘শোয়াইক গেল যুদ্ধে’। একাডেমির সামনে পিঠে একটি হাত। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি দেবেশ রায়। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি কলকাতায় ফিরেছ? শুনে বললেন, একটা উপন্যাস লিখতে পারবে? দু-মাস সময়। পুজোর প্রতিক্ষণে ছাপব। সেই উপন্যাস ‘হাঁসপাহাড়ি’। পাহাড় ভাঙছে ঠিকেদার, আন্ত্রিক রোগ ছড়াচ্ছে সেই পাহাড়ি এলাকায়। মন দিয়ে লিখেছিলাম খরা আর অনাবৃষ্টির কথা। সেই বছর পুজোর পর আমি নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে যাই আমন্ত্রিত হয়ে। আমাকে একটি সম্মাননা দিয়েছিলেন ওঁরা। সেবার সঙ্গে ছিলেন সস্ত্রীক নারায়ণ সান্যাল, সস্ত্রীক মুকুল গুহ, দীপক চন্দ্র ছিলেন। গিয়েছিলাম সেই গোয়ালিয়র। সকন্যা মিতালি তখন ছিল উজ্জয়িনী। আমি গোয়ালিয়র থেকে উজ্জয়িনী যাব রাতের বাসে, এমনিই কথা ছিল। গোয়ালিয়র থেকে একদিন একটি গাড়ি নিয়ে ঝাঁসি, ওরছা, দঁতিয়া ইত্যাদি দেখে এলাম। নারায়ণ সান্যাল ছিলেন প্রযুক্তিবিদ। ইতিহাস অনুসন্ধিৎসু। আমাদের যাত্রাপথ তাঁর সাহচর্যে সুন্দর হয়েছিল। কত ভাস্কর্যের বিজ্ঞান আমাদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ওরছায় দেখেছিলাম বেত্রবতী নদীর নীল জল। সত্যিই আকাশের ছায়া পড়েছিল সেই কাচের মতো স্বচ্ছ জলে। একা একা দেখেছিলাম গোয়ালিয়র রাজপ্রাসাদ। রাজবাড়ির ঐশ্বর্যের সেই বিপুলতা দেখে আমি ভয়ই পেয়েছিলাম। তখন শুনতাম মাধব রাও সিন্ধিয়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। গোয়ালিয়রবাসী সেই আকাঙ্ক্ষা করেন। মাতা-পুত্রের মিল ছিল না শুনেছি। আমার তাতে আগ্রহ ছিল না। গোয়ালিয়র দুর্গ, আলো ও শব্দে তার ইতিহাস বর্ণনা সবই ভালো, কিন্তু ভারতের সামন্ত প্রভুদের ক্ষমতা আর ঐশ্বর্য একাকী আমাকে ভয়ার্ত করেছিল। সারারাত বাসে করে ভোরে উজ্জয়িনী পৌঁছেছিলাম। এই যাত্রাই আমাকে ভাবিয়েছিল অনেক। সেবার উজ্জয়িনীর দেওয়াস রোডে সেই বাড়িতে, মিতালির মামার বাড়িতে থেকে নগরটাকে আমি খুঁজে বের করতে লাগলাম। বড়ো মামা সমরেন্দ্র দে বৃদ্ধ। আমার কৌতূহল দেখে স্কুটারের পিছনে চাপিয়ে নগর পরিক্রমা করতে লাগলেন। শিপ্রা (আসলে তা হবে ক্ষিপ্রা নদী, ইংরেজিতে লেখা হয় kshipra, ক্ষিপ্র গতি সম্পন্না নদী) নদীর ধারের সমস্ত মন্দির, রাজা ভর্তৃহরি গুম্ফা, পাঠান আমলের কেল্লা ইত্যাদি, জলকেলি করার ফোয়ারা, তার সঙ্গে জড়িত কিংবদন্তী---সব আমাকে দেখাতে লাগলেন। বোঝাতে লাগলেন। এক অপরাহ্ন বেলায় শিপ্রার তীরে বসে আছি। মঙ্গল গ্রহের মন্দির অদূরেই। মঙ্গল গ্রহ দেবতা মানে একটি নুড়ি পাথর, তাতেই অগাধ বিশ্বাস মানুষের। স্থানীয়দের বিশ্বাস মঙ্গল গ্রহ আবিষ্কার করেছিলেন উজ্জয়িনীর জ্যোতির্বিদরা। আমি আগে উজ্জয়িনীতে এসেছিলাম কয়েক বছর আগে জুলাইয়ের শেষে। ঘোর বর্ষার সময়। কিন্তু নগরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সারা বছরে ১৪ ইঞ্চি হবে। মহাকাল মন্দিরের মাথায় মেঘ কোথায়? সেই গোধূলিবেলায় শিপ্রা তীরে বসে মনে হয়েছিল মেঘদূতমের বিপরীতে আমি একটি উপন্যাস লিখতে পারি। মেঘদূতমে যে অপরূপ বর্ষার কথা আছে, আমি লিখব ভয়ানক অনাবৃষ্টির কথা, অনাবৃষ্টি, মহামারি হবে আমার উপন্যাসের বিষয়। শিপ্রা নদী, সন্ধ্যা হয়ে আসা, মঙ্গল গ্রহ মন্দিরে মৃদু প্রদীপের আলো আমাকে উপন্যাস দিল। এইটুকু নিয়ে ফিরে এলাম। কিন্তু লিখতে তা সময় নিল। আবার গেছি উজ্জয়িনী। ১৯৯৩ সালে। তখন আমি উপন্যাস আরম্ভ করেছি। বাঁকুড়ার অনাবৃষ্টি উজ্জয়িনীতে স্থানান্তরিত হচ্ছে একটু একটু করে। সাত বছর নিয়েছিলাম লিখতে। কে ছাপবে জানি না। কিন্তু মনে হয়েছিল লিখি। ১৯৯১ সালে আমি সমরেশ বসু পুরস্কার পাই। নবকুমার বসু নিজেই দিতেন। বিচার করতেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং অগ্রজ কেউ কেউ। সেই ছবি আছে। অমূল্য ছবি। রাধানাথ মণ্ডল, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কানাই কুণ্ডু, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, নবকুমার, নবর স্ত্রী রাখি... কত পুরোনও বন্ধু। বন্ধুরা নেই অনেকে। সুচিত্রা, রাধানাথ, সুব্রত নেই। মন খারাপ হয়।

    প্রতিক্ষণ পত্রিকার কথায় ফিরি। এই পত্রিকা আমাদের লেখার জায়গা করে দিয়েছিল। প্রতিক্ষণের আড্ডা হত মঙ্গল বৃহস্পতিবার। দেবেশদা থাকতেন। স্বপ্না দেব, প্রিয়ব্রত দেব, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, দিব্যেন্দু পালিত, কোনো কোনো দিন শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় আসতেন। নলিনী বেরা, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আফসার আমেদ, অশোককুমার সেনগুপ্ত, কিন্নর রায়, রামকুমার মুখোপাধ্যায় নিয়মিত ছিলেন। স্বপ্নময়, ভগীরথ মিশ্ররা আসতেন কখনো-কখনো। অভিজিৎ সেন আসতেন বালুরঘাট থেকে কলকাতায় এলে। প্রতিক্ষণের আড্ডায় বাংলাদেশ থেকে এখলাস উদ্দিন আমেদ, আবু বক্কর সিদ্দিকি, শামসুর রাহমান এসেছেন। এসেছেন তরুণ লেখক প্রশান্ত মৃধা। উপন্যাসের নির্মাণ নিয়ে কথা হত। গল্প নিয়ে কথা হত। সাহিত্যের অমন অনুপম আড্ডা আর কোথাও দিইনি। মাসে মাসে বেরত তখন প্রতিক্ষণ। শারদীয় প্রতিক্ষণে ‘হাঁসপাহাড়ি’ উপন্যাসের ছবি এঁকেছিলেন যোগেন চৌধুরী। আমি ১৯৯০ সালে যখন প্রতিক্ষণে নিয়মিত হই, তখন পূর্ণেন্দু পত্রী বোধহয় অনিয়মিত। তাঁর শরীর ভালো ছিল না। প্রতিক্ষণ ছিল বাংলা ভাষার সেরা মেধাবী সাময়িকপত্র। যে গোলটেবিল এখন ছাপা হয় নানা পত্রিকায়, তার সূচনাও প্রতিক্ষণেই হয়। নানা রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা নিয়ে গোল টেবিলগুলি হত। প্রতিক্ষণ কেন সেরা ছিল, বলছি। কবিতার অলংকরণ প্রতিক্ষণেই শুরু। পূর্ণেন্দু পত্রীর পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা অন্য পত্রিকাও অচিরে গ্রহণ করে। কভারে যে আধুনিকতা এনেছিলেন পূর্ণেন্দু পত্রী, তাও অন্য পত্রিকা নিয়েছিল। গুণী শিল্পী ছিলেন তো। স্বাধীন ভাবে কাজ করেছিলেন প্রতিক্ষণে। এই পত্রিকা ১৯৮৪ নাগাদ প্রকাশিত হয়। একদিন কলেজ স্ট্রিটের শ্যামাচরণ দে স্ট্রিটে আমাকে এক মধ্যবয়সিনী দাঁড় করিয়ে বললেন, তুমিই অমর, এই চিঠি তোমার। চিনি না তাঁকে। পরে জেনেছি দাদাদের বন্ধু, গন্ধর্ব নাট্যদলে অভিনয় করতেন স্বপ্না দেব। তখন প্রতিক্ষণ প্রকাশিত হয়নি। আমন্ত্রিত হয়ে দ্বিতীয় সংখ্যায় গল্প লিখলাম। এরপর লিখি ‘হস্তান্তর’ গল্পটি ১৯৮৫ সালে। সেই গল্প বড়ো পত্রিকা ফেরত দিয়েছিল জমা দেওয়ার সাত দিনের মাথায়। প্রতিক্ষণে প্রকাশিত হলে কত জনের ভালো মন্তব্য যে শুনেছিলাম। দীপেন্দু চক্রবর্তীর অনুবাদে সাহিত্য অকাদেমির ইন্ডিয়ান লিটারেচার পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল। ১৯৮৬-তে বাঁকুড়া। আবার নব্বইয়ে যোগাযোগ হল প্রতিক্ষণের সঙ্গে। ১৯৮৫ নাগাদ এক ভয়ানক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলাম। এক সুখ্যাত চিত্রপরিচালকের হিন্দি ছবিতে আমার আলোকবর্ষ (অমৃত পত্রিকায় ভয় নামে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮০ নাগাদ) উপন্যাসের ছায়া ঢুকে পড়েছিল অনেক। গর্ভ নষ্ট, ভ্রূণ নদীর চরে পুতে দেওয়ার একটি দৃশ্য হুবহু এসেছিল। আসলে যে কাহিনি ওই ছবির সূত্র সেই কাহিনি বহির্ভূত অংশ যা সবই আমার সেই উপন্যাসের অংশ। মেনে নেওয়ার মানুষ আমি নই। নানা পত্রিকায় ছুটলাম। কেউ আমার চিঠি ছাপল না। শুধু যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক অমিতাভ চৌধুরী আমাকে বললেন, আমি নতুন লিখতে এসেছি, এই বিতর্কে জড়ালে পরিচালক আমার ক্ষতি করে দিতে পারেন অনেকভাবে। অমিতাভ চৌধুরী আমার সেই উপন্যাস পড়েছিলেন। আমার অভিযোগ সংগত তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করেননি। শেষে বললেন, সংক্ষিপ্ত করে দাও চিঠি। চার লাইন লিখলাম। ছবির সঙ্গে আমার উপন্যাসের হুবহু মিল। তিন মাস বাদে এক দীর্ঘ প্রত্যুত্তর এল। আমি চার লাইন লিখেছিলাম, তিনি চল্লিশ লাইন লিখেছিলেন। আরম্ভ করেছিলেন এই ভাবে, “জানলাম তিনি একজন লেখক…” সমস্ত চিঠিতে আমাকে অপমান। কিন্তু আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। অমিতাভ চৌধুরী বললেন, তুমি এর উত্তর দিও না, এই চিঠিতেই ও বুঝিয়ে দিয়েছে তোমার প্রশ্নের কোনো জবাব ওর কাছে নেই।” আসলে অমৃত পত্রিকার যে সংখ্যায় আমার উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল, সেই সংখ্যায় তাঁর লেখাও ছিল। তিনি যে আমার নাম শোনেননি তা অসত্য। আমার সঙ্গে তাঁর আলাপও হয়েছিল এক জায়গায়। অতি বিশিষ্টজন সেই আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। যাইহোক, তাঁর সেই চিঠিতে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন লেখক অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, কবি মৃদুল দাশগুপ্ত এবং চিত্র সমালোচক লেখক সতীনাথ চট্টোপাধ্যায়। সতীনাথ হলেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের পিতা। অকালে প্রয়াত হয়েছেন। এঁরা সকলেই যুগান্তরে চাকরি করতেন তখন। তিনজনে সাক্ষর করে একটি প্রতিবাদসূচক চিঠি দিয়েছিলেন যুগান্তরে। তা ছাপাও হয়েছিল। এবং পরিচালক পার্থপ্রতিম চৌধুরী দেশ পত্রিকার একটি লেখায় এই আত্মস্যাতের বিপক্ষে লিখেছিলেন। আমার পক্ষেই কলম ধরেছিলেন। তারপর এই বিষয় এগোয়নি। আমার স্বভাবই এমন। অতি নম্র, অতি সুভদ্র নই। তাই আমাকে অনেকেই পছন্দ করেন না। বশ্যতা স্বীকার না করার কারণে সারাজীবন সুযোগ পেয়েও পাইনি। কিংবদন্তি-প্রায় সম্পাদক উপন্যাস চেয়ে নিয়ে চারদিনের ভিতর ফেরত দিয়েছেন না পড়ে। আসলে কেউ যখন একটি বাণিজ্যিক পত্রিকাকে অবলম্বন করে সম্পাদকের ইচ্ছে মতো অতি অনুগত হয়ে অন্য কোথাও লিখতেন না, আমি তখন অনীক, অনুষ্টুপ থেকে রাজ্য সরকারের যুবমানস, কাজ হারানো বন্ধ পত্রিকার কর্মীদের কোওপারেটিভ করে চালানো শারদসংখ্যা সত্যযুগ-এ লিখি। ‘কবে তুমি আমাকে ডাকবে, আমি বসে থাকব,’ বসে থাকিনি কখনও।

    এগিয়ে যাই। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের কথা বলি। আমি সপরিবারে ৪ ডিসেম্বর সারারাত লালগোলা প্যাসেঞ্জার ট্রেনে করে ৫ তারিখ ভোরে লালগোলা নেমে টাঙায় চেপে ভগবানগোলা ব্লকের ধূলাউড়ি গ্রামে পৌঁছেছিলাম। ৫ এবং ৬ তারিখ সাহিত্যসভা এবং সেমিনার। ৫ তারিখ সাহিত্যসভা হল। ৬ তারিখ দুপুরে বহরমপুর থেকে এলেন অনীক পত্রিকার সম্পাদক, অধ্যাপক দীপঙ্কর চক্রবর্তী, লালগোলা থেকে গল্পকার অলোক সান্যাল যিনি ‘নিস্তারিনীর ভাতের থালা’ নামে এক অসামান্য গল্প লিখেছিলেন। খুবই ভালো গল্প লিখতেন অলোক সান্যাল। নীহারুল ইসলাম, এবাদুল হক এমনি অনেকেই ছিলেন সেই সভায়। আরও অনেকে এসেছিলেন। আমি ছিলাম স্থানীয় হেড মাস্টারমশায়ের বাড়ি। ধূলাউড়ি গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান। হেড স্যারও ছিলেন তাই। ভালোই ছিলাম দু-দিন। আমার শিশুকন্যা গ্রাম দেখছিল। হেড মাস্টারমশায়ের স্ত্রীর কোলে কোলে ঘুরছিল। তাঁরা পিঠে বানিয়েছিলেন। সকালে টাটকা খেজুর রস। ৬ তারিখ সেমিনার হয়ে সকলে ফিরে গেল। ঠিক আছে সাত তারিখ আমি বহরমপুর যাব। তারপর যাব মুর্শিদাবাদ দেখতে। ঘুরে টুরে ফিরব। ৬ তারিখ কী হয়েছে ভারতবর্ষে তা আমরা জানি না। দূরদর্শন এবং রেডিয়ো ভরসা। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে মঞ্চে। তখন হেড মাস্টারমশায় আমাকে ডাকলেন। দাদা, দেখুন কী হয়েছে। কী! দূরদর্শন দেখাচ্ছে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙার সংবাদ। গ্রামের মানুষ জানে না। কিন্তু যাদের ঘরে টেলিভিশন আছে, জানছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কারা যেন বন্ধ করে দিল। কী করব এখন? দেশজুড়ে দাঙ্গা বেঁধেছে। যারা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের একজন মামুন হোসেন নির্ঝর। তরুণ সাংস্কৃতিক কর্মী। আমার লেখার অনুরাগীও। নির্ঝরকে ডাকলেন হেড স্যার। আমাকে বললেন, কলকাতা ফিরে যেতে। এবং সেই রাতেই। গ্রামে ভালো মন্দ দু-রকম মানুষ আছে। আমি যে সপরিবারে হেড মাস্টারমশায়ের বাড়িতে আছি তা অনেকেই জানে। যদি কিছু ঘটে যায়, তিনি সমস্ত জীবন অপরাধী হয়ে থাকবেন। হেড স্যারের স্ত্রীর চোখে জল। আমার কন্যা গুড়িয়াকে বুকে চেপে ধরে রেখেছিলেন। খেয়ে নিলাম। অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে গ্রাম নিঝুম হতে রাত সাড়ে দশটা নাগাদ টাঙায় চেপে চললাম ভগবানগোলা স্টেশনের দিকে। যদি ট্রেন না চলে ধূলাউড়িতেই ফিরে যেতে হবে। ট্রেন এসেছিল। অন্ধকার সব কামরা। নির্ঝর আমাদের ট্রেনে তুলে দিয়ে ট্রেন ছাড়া অবধি অপেক্ষা করল। সমস্ত কামরার ভিতর আর মানুষ ছিল না মনে হয়। সাড়া পাচ্ছিলাম না কারও। জমকা শীতে গুটিয়ে ছিলাম আমরা। সারারাত ঘুমতে পারিনি। ভোর হল কল্যাণী স্টেশন আসতে। সকাল হতে বুকে বল পেয়েছিলাম। সাতটা নাগাদ দমদম স্টেশনে নেমে রিকশা করে বাড়ি ফিরলাম। সেদিন কলকাতায় কারফিউ। তারপরের ঘটনা তো সকলের জানা।

    ১৯৯০ কিংবা তার আগে পরে আমি সাহিত্য অকাদেমির ইন্দো আমেরিকান রাইটার্স ওয়ার্কশপে গিয়েছিলাম দিল্লি। সেই ওয়ার্কশপে ক্যালিফোর্নিয়া রাইটিং স্কুলের টিচার কিথ রিড নামের এক পঞ্চাশোর্ধ্ব লেখিকা এসেছিলেন। তিনি অনুবাদে আমার ‘গাওবুড়ো’ গল্পটি পড়ে উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন। আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন চাকরিতে সময় নষ্ট না করে ফুল টাইম লেখক হতে। ২০১৮ সালে আমেরিকা গিয়ে কিট রিডের একটি বই পেয়েছিলাম। বই দেখে প্রকাশককে মেইল করি। উত্তর আসেনি। ইন্টারনেট ঘেঁটে দেখি কিট ছ-মাস আগে মারা গেছেন লস এঞ্জেলেস শহরে। সেই প্রবীণ লেখিকার মুখখানি আজও মনে পড়ে।

    ১৯৯৩-এর আগস্টে পুত্র রাজসিকের জন্ম। ১৯৯৩-এর ৩০ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের লাতুর জেলার কিল্লারি এবং তৎসংলগ্ন গ্রামগুলি প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৯৯৪-এর জানুয়ারিতে সাহিত্য অকাদেমি আমাকে ২০০০ টাকার একটি ভ্রমণভাতা দেয়। ভারতের যে-কোনো জায়গায় ঘুরে আসতে পারি আমি। ঠিক করলাম কিল্লারি গ্রামে যাব। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম দেখেছি। পশ্চিমবঙ্গের বাইরের গ্রাম দেখিনি। বন্যা দেখেছি ১৯৭৮ সালে। খরা দেখেছি দীর্ঘকাল। কিন্তু ভূমিকম্পের রূপ আমার অচেনা। সুতরাং যেতে হয়। শৈবাল মিত্র আজকাল পত্রিকার হয়ে লাতুর গিয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রতিবেদন লিখেছিলেন। আমি শৈবালদার কাছে গিয়ে লাতুর যাওয়ার রুট জেনে নিলাম। পাঁচ মাস বাদে মার্চ মাসে গেলাম আমার খুড়তুতো ভাই গৌতমকে সঙ্গে করে। গৌতম হিন্দুস্থান টাইমসের পত্রিকা ইকোনমিক টাইমসের কর্মী ছিল। দক্ষিণ ভারত তার চেনা। এতটা পথ একা যাব? গৌতম আমার সঙ্গে থাকায় সুবিধে হয়েছিল খুব। তখন আমি ভূমিকম্প চর্চা করছি নানাভাবে। খবরের কাগজে দেখছি ছ-মাস ধরে মাটি কেঁপেই যাচ্ছে। মাঝে মাঝেই ওই অঞ্চলে মৃদু কম্পন টের পাওয়া যাচ্ছিল। হায়দরাবাদ এক্সপ্রেস বা ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস ধরে হায়দরাবাদ গেলাম। দু-দিন হায়দরাবাদ দেখলাম। সালার জং মিউজিয়ম, গোলকোন্ডা দুর্গ, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ইত্যাদি। তারপর এক রাতে চললাম লাতুর। সারারাত বাসযাত্রা। লাতুর পৌঁছলাম শেষ রাতে। জেলা সদর লাতুর শহর। এক হোটেলে উঠলাম। ঘুম আর আসে না। মনে হচ্ছিল কাঁপছে মাটি। সামান্য ঘুমিয়ে সকালে স্নান করে ব্রেকফাস্ট সেরে চললাম কিল্লারি গ্রামে। বাস নিয়ে গেল সেই ভূমিকম্প বিধ্বস্ত অঞ্চলে। লাতুর শহর থেকে ঘণ্টা খানেকের পথ। সূর্যমুখী খেত হলুদ হয়ে আছে পথের দু-পাশে। আর টিনের বাড়ি। দুর্গতদের সাময়িক আশ্রয়। দেশি বিদেশি বিশেষত জাপানি সংস্থা ভূমিকম্প নিরোধক বাড়ি তৈরি তৈরি করছিল। স্থানীয় এক যুবক আমাদের সঙ্গী হলেন। তাঁর কত অভিযোগ। কিল্লারি গ্রাম এক দর্শনীয় জায়গা হয়ে উঠেছিল তখন। দেশ-বিদেশ থেকে সাংবাদ সংস্থা এসেই যাচ্ছে সেখানে। তখনও, সেই দিনও কম মানুষ আসেনি। কিল্লারি গ্রামে ঘণ্টা পাঁচ ছিলাম। তারপর হায়দরাবাদ হয়ে ব্যাঙ্গালুরু, সেই শহরে দুই কন্নড় লেখকের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। ইউ আর অনন্তমূর্তি, এবং পি লঙ্কেশ। ব্যবস্থা করেছিলেন তৎকালীন দক্ষিণাঞ্চলের সাহিত্য অকাদেমি সচিব কৃষ্ণমূর্তি। পি লঙ্কেশ খুব তেজি মানুষ। তাঁর সঙ্গে অনেক কথা হয়েছিল। তাঁরই কন্যা সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ, যিনি হত হয়েছেন তাঁর প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য। অনন্তমূর্তি সংস্কারা উপন্যাসের লেখক। ওই উপন্যাস নিয়ে ছবি হয়েছিল। সংস্কারা খুবই ভালো লেখা, ব্রাহ্মণ্যতন্ত্রকে প্রবল আঘাত করা হয়েছিল ওই লেখায়। ব্যাঙ্গালুরু থেকে চেন্নাই। চেন্নাইয়ে ডি দিলীপকুমারের সঙ্গে দেখা করলাম। ক-বছর আগে তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছিল ভোপালের ভারত ভবনে এক সাহিত্য সম্মেলন অন্তরভারতী-তে। তারপরে দিল্লিতে ভারত আমেরিকা সাহিত্য কর্মশালায়। পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন হল। সেবার মহীশূর, উটি সব ঘুরে এসেছিলাম। কলকাতা ফিরে প্রতিক্ষণ। স্বপ্না দেব বললেন, একটি রিপোর্ট লিখে দিতে। কেমন দেখে এলাম ভূমিকম্প বিধ্বস্ত এলাকা। দেবেশদা বসেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী লিখবে ও?

    স্বপ্নাদি বললেন, লাতুর-কিল্লারির রিপোর্ট।

    দেবেশদা বললেন, ও একজন ক্রিয়েটিভ লেখক, ও রিপোর্ট লিখবে কেন, এই তুমি উপন্যাস লিখতে পারবে?

    ছ-ঘণ্টা ছিলাম মাত্র, উপন্যাস লেখা হবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।

    পারলে হবে, না পারলে ছ-বছরেও হবে না, উপন্যাস লেখো, ভালো হলে শারদীয় প্রতিক্ষণে ছাপা হবে।

    এই হল ‘নিসর্গের শোকগাথা’ উপন্যাস লেখার ইতিহাস। ক-দিন উদ্ভ্রান্তের মতো কাটিয়েছিলাম। প্রথম তিরিশ পাতা ফেলে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম লেখাটি হবেই না। ছ-ঘণ্টায় কী দেখলাম আমি? কী শুনেছি সেই যুবকের মুখে? কিন্তু ভাবতে ভাবতে সূত্র পেয়ে গেলাম। শারদীয় প্রতিক্ষণে ছাপা হয়েছিল ‘নিসর্গের শোকগাথা’। মানুষের অভিজ্ঞতা মননসঞ্জাত। ধনপতির চর বৃহৎ উপন্যাস। আমার দক্ষিণবঙ্গের অভিজ্ঞতা খুব বেশি নয়। একনাগাড়ে থাকিনি যেমন থেকেছি বাঁকুড়া, মেদিনীপুর। ‘ধনপতির চর’ উপন্যাসের পটভূমি নিজের তৈরি। যে মিথ ব্যবহার করেছি তার অনেকটাই আমার নিজের তৈরি। আসলে সমস্ত জীবন জমি মাটি মানুষের সঙ্গে যাপন করেছি বলে এই কাজটি সহজ হয়ে গেছে। জীবনের অভিজ্ঞতা কত কী লিখিয়ে নেয়। মৃত্যুর আগে দেবেশ রায় বলেছিলেন, তুমি নেত্রকোনা, সুসঙ্গ দুর্গাপুর না গেলেও লিখতে পারতে মোমেনশাহি উপাখ্যান। কিন্তু সেও তো আমার ঘণ্টা পাঁচের যাওয়া আসা। না গেলে উদ্‌বুদ্ধ হতে পারতাম না। কল্পনার বিস্তার সহজ হত না। সুনীল কোনারের কথাই সত্য। প্রকৃতি লিখিয়ে নেয়। প্রকৃতিই সত্য। সত্য। কিল্লারি আর গারো পাহাড়ের কোলের সুসঙ্গ দুর্গাপুর তা বুঝিয়ে দিয়েছে।


    (ক্রমশঃ)

    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০৩ এপ্রিল ২০২১ | ৩৮৪৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১২:১৯104441
  • মানুষের অভিজ্ঞতা মননসঞ্জাত - এই বাক্যটি খুব ভরসা দিল। 


    ছান্দারে থাকবার সৌভাগ্য হয়েছিল। উৎপলদাকে মনে পড়ে গেল। কী বিশাল কর্মযজ্ঞ দেখেছিলাম! 


     বহু মানুষ, ঘটনা, বিশ্লেষণ নিয়ে এ লেখা পথনির্দেশের লেখা ! 

  • দেবীপ্রসাদ ঘোষ | 103.77.45.193 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৩৯104442
  • প্রকৃতিই লিখিয়ে নেয়...নাড়া দেওয়া বাক্য।

  • চিরঞ্জয় চক্রবর্তী | 2409:4060:89:fdce:91bd:28b6:9c58:300a | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:২৫104447
  • নমস্কার নেবেন।

  • দেবাশিস ঘোষ | 2409:4061:202:704d:8ae:74a0:ee51:7d08 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৯:১১104451
  • অমর মিত্রর লেখা আমি পড়ি। ভালো লাগে। এখানে উনি নিজের লেখালিখি ও সম্পর্কিত জীবনের কথা লিখেছেন। কিভাবে পাঁচ ঘন্টার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা উপন্যাস লেখা হয় তা সত্যিই আশ্চর্যের। সৃজন প্রক্রিয়াই আশ্চর্যজনক। 

  • PRABIR CHATTAPADHYAY | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০১:১২104461
  • অমর মিত্রের লেখা প্রসঙ্গে ---


    একেবারেই এটা  আমার অন্তরের উপলব্ধি।


               আমার মনেহয় যে কোনও সৃষ্টি নির্মানের আগে  সে তার স্রষ্টাকে প্রসব যন্ত্রণায় বিদ্ধ করে এবং যতক্ষণ না সে ভূমিষ্ঠ  হবে ততক্ষণ অবধি স্রষ্টা সেই কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারবে না। তার সেই সদ্যজাত সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে স্রষ্টা যে তৃপ্তি পায় তার সাথে বুঝি একমাত্র তুলনা চলে মা যখন নিজের কোলে সদ্য ভূমিষ্ঠ তার শিশু সন্তানের দিকে চেয়ে থাকে।


  • রবীন বসু | 2409:4060:2e06:5672:78e7:440f:c3a9:5132 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ০৯:৩৬104466
  •   অপূর্ব সাবলীল আর বুদ্ধিদীপ্ত লেখা। কতকিছু জানলাম লেখক অমর মিত্রের জীবন ও উপন্যাস-সৃষ্টির পশ্চা্তপট। আপনার লেখায় এক মায়াজাদুর স্পর্শ পাই। শ্রদ্ধা জানাই।

  • প্রবীর দত্ত | 117.226.216.147 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১১:৪৫104473
  • প্রতিবাদী অমরদা, লেখক অমরদাকে আরো ভালোভাবে জানছি, খুঁজে পাচ্ছি। এত সাবলীল লেখনী, পড়িয়ে নেয় একটানা।

  • দীপক দাস | 42.110.200.242 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ২১:২৪104485
  • সত্যি কথা। প্রকৃতির কাছ থেকে বহু প্রভাব মেলে।


    ছান্দারের অংশটি পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। উৎপল চক্রবর্তী অনেক বড় মনের মানুষ। এক সন্ধ্যায় দেখা হয়েছিল। আমাদের মতো কম বয়সি এলেবেলেদেরও অনেকক্ষণ সময় দিয়েছিলেন। ওঁর প্রতিষ্ঠিত শিল্পকলা কেন্দ্র 'অভিব্যক্তি' সংগ্রহগুলো ভাল লেগেছিল। 

  • নিরঞ্জন মিত্র | 103.87.142.136 | ০৬ এপ্রিল ২০২১ ১০:৪৯104505
  • অসাধারণ !

  • সন্দীপ গোস্বামী | 2402:3a80:117a:d12d::6efd:e8c4 | ০৮ এপ্রিল ২০২১ ১৪:১৬104538
    • একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিকের জীবনে কী বিচিত্র বর্ণময় ঘটনাপ্রবাহ, যার অতলতল থেকে উঠে আসে কালজয়ী সৃষ্টি। যে সৃষ্টি নবীন লেখকদের পথ দেখায়, যে পথ সহজ নয়, নয় অসম্ভব!  পেন্সিলে লেখা জীবন কি শুধু গ্রাফাইটে আঁকা চিত্র, নাকি রক্ত, ঘাম, অশ্রু, প্রতিজ্ঞা, ভালোবাসায় সমৃদ্ধ একজন প্রান্তিক মানুষের কেন্দ্রে উঠে আসার ইতিহাস! যে ইতিহাস মানুষকে তার জীবনের সর্বপ্রকার সংঘর্ষে প্রেরণা হয়ে ওঠে। অন্য  বিচরের, অন্য শৈলীর, অন্য আঙ্গিকে এই জীবন চরিত আমায় পুুুনরায় মুগ্ধ করল। ♥️
  • হীরেন সিংহরায় | ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০২:০০104550
  • তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় কি মুম্বই চলচ্চিত্র জগতের ডাক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ? অন্য মতে দুজন প্রতিযোগীর মধ্যে বোম্বে টকিজ অধ্যক্ষ বেছে নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের  আরেক মহান পুরোধাকে . তিনি শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায় .

  • অমর মিত্র | 202.78.232.167 | ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:০৭104551
  • ধীরেন সিংহরায়ঃ আমার সাহিত্যজীবন পড়ুন। নানা মত শুনে লাভ নেই। দীনেশচন্দ্র সেন তারাশঙ্করের সিদ্ধান্ত শুনে তাঁকে নিজের ফিটন গাড়িতে নিয়ে বিশিষ্ট মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছিলেন, আলাপ করিয়ে লেখক হতে আসা এক নির্লোভ  মানুষের সঙ্গে।  শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়েছিলেন  তিনি না যাওয়ায়। এটি  কোনো কাহিনি নয়, সত্য ঘটনা।  অনুপুঙ্খ লেখা আছে তাঁর আত্মজীবনী।  হিমাংশু রায় দীনেশচন্দ্র সেনের কাছে তারাশঙ্করকেই চেয়েছিলে।  মাস মাইনে ৬৫০ টাকা দেবেন বলেও বলেছিলেন। গজেন্দ্রকুমার মিত্রও অনুরোধ নিয়ে এসেছিলেন।               

  • অৃমর মিত্র | 117.227.28.96 | ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৭:৫৬104553
  • ধীরেন সিংহঃ তারাশঙ্কর ক্লাসিক৷ লেখক।৷ শরদিন্দু তাঁর সঙ্গে তুলনীয় নন।  তারাশঙ্করের  স্তর  আলাদা। 

  • সিংহ রায় | 2a00:23c5:dc8c:d401:713d:d7dd:df54:b780 | ১০ এপ্রিল ২০২১ ২০:৪২104609
  • প্রাপ্ত তথ্য সম্বন্ধে নিজেই সন্দিহান ছিলাম বলে ' অন্য মতে ' শব্দ ব্যবহার করি! ভ্রান্তি অপনোদনের জন্য অশেষ ধন্যবাদ ।

  • কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় | 2405:201:a001:c860:9d67:2ccf:7add:ae3d | ২৯ মে ২০২১ ১৫:৪৫106575
  • খুব দামী কথা লিখেছেন - প্রকৃতি লিখিয়ে নেয়। ১৯৮৭ সালের বসন্তে সস্ত্রীক গেছিলাম বিষ্ণুপুর। গবেষক মানিক লাল সিংহের সঙ্গে পরিচয়ের সৌভাগ্য হয়েছিল। তিনি সঙ্গী হয়ে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ , বিষ্ণুপুর শাখার সংগ্রহ শালা টিও দেখিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি এক সম্পদ হয়ে রইল।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন