এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  রাজনীতি  সিরিয়াস৯

  • ১৪ বছর পর নন্দীগ্রাম গণহত্যা ফিরে দেখা

    সুকুমার মিত্র
    আলোচনা | রাজনীতি | ১৪ মার্চ ২০২১ | ১৫৯৬১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • চোদ্দ বছর কেন, কোনও কোনও সময়ে ১৪ ঘন্টাও যথেষ্ট হতে পারে, বিস্মরণের জন্য। আবার কোনও কোনও ঘটনার অভিঘাত এত প্রবল হতে পারে, যে ১৪০ বছর পরেও তা স্মরণে রাখতে হতে পারে। বা স্মরণে থেকে যেতে পারে, যৌথস্মৃতিতে। এমন তো নয়, নন্দীগ্রামেই প্রথম গুলি চালিয়ে আন্দোলনরত মানুষ মেরেছিল বাম সরকারের পুলিশ। তা সত্ত্বেও নন্দীগ্রাম আলাদা হয়ে থাকবে, প্রতিরোধের জন্য যেমন, তেমনই তদানীন্তন বাম সরকারের প্রতি অন্তিম অবিশ্বাসের জন্য। বাম সরকার, যারা চাষির কাছ থেকে জোর করে জমি নিয়ে কর্পোরেটদের দিতে চেয়েছিল। ফলে সিরিয়াস৯-র নন্দীগ্রাম সংখ্যা। সেদিনের স্মৃতি উঠে এসেছে ১৪ মার্চের গুলিচালনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক সুকুমার মিত্রর কলমে, বিশ্বজিৎ হাজরা ১৪ বছর পেরিয়ে সে সময়কালের ঘটনাপ্রবাহের খণ্ডচিত্র তুলে এনেছেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মাওবাদীদের ভূমিকা সম্পর্কে লিখেছেন সুলেখা (অনিবার্য কারণে নাম পরিবর্তিত) এবং বিষাণ বসু গুরুচণ্ডা৯-কে কাঠগড়ায় তুলেছেন ১৪ বছর আগে একটি লেখা প্রকাশের জন্য।

    ১২ মার্চ, ২০০৭ মহাকরণের অলিন্দে দাঁড়িয়ে তৎকালীন রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব প্রসাদ রঞ্জন রায় জানিয়েছিলেন, নন্দীগ্রামে পুলিশ-প্রশাসন ঢুকবে। তবে তা গণহত্যা চালানোর জন্য হবে এমনটা তিনি বলেননি। বরং বলেছিলেন, পুলিশি অভিযানের আগে একবার সর্বদলীয় সভায় বসা হবে। স্বরাষ্ট্রসচিবের সেদিনের ওই ঘোষণার ওপর আস্থা ছিল মানুষের। তাঁদের মনে হয়েছিল, আর যাই হোক, পুলিশ ঢোকার আগে সর্বদলীয় সভায় আলোচনার একটা সুযোগ থাকছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর ছিল, ১৯ থেকে ২১ মার্চ পুলিশ অভিযান হবে। নন্দীগ্রাম অপারেশনের জন্য কোলাঘাটে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে প্রায় চার হাজার পুলিশ মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া পুলিশ ক্যাম্প করার জন্য চণ্ডীপুর হাইস্কুল, নন্দীগ্রামের স্কুল, কলেজ প্রশাসন তাদের হাতে নিয়ে নেয়। স্বরাষ্ট্র সচিবের মুখের ওই ঘোষণা মুখের কথা হয়েই থেকে গেল।

    ১২ মার্চ, ২০০৭ নন্দীগ্রামের তেখালিতে সিপিএম পার্টি অফিসে পুলিশের সঙ্গে সিপিএমের একটি গোপন বৈঠক হয়েছিল বলে জানা যায়। ১৩ মার্চ রাতে চণ্ডীপুর থানার ফুলনি মোড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মহিলা নেত্রীদের মারধোর করে সিপিএমের লোকজন। চণ্ডীপুরে ও হাঁসচড়ায় তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাম্প ভেঙ্গে দেয় সিপিএম ক্যাডারবাহিনী। ওই দিন খেজুরি বটতলা, সাতখণ্ড মোড়, বটতলা ফরেস্ট বাংলো, বিদ্যামন্দির, ভাঙাবেড়া, শিবানী ইটভাটায় পুলিশ ক্যাম্প করে। তেখালি ও নন্দীগ্রামে পুলিশের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। ১৩ মার্চ, ২০০৭ দুপুর পর্যন্ত আমার থাকার ঠিকানা ছিল গড়চক্রবেড়িয়ায়। ওই দিন নানা এলাকা ঘুরে বিকেলে চলে যাই সোনাচূড়ায়। সেই দিন সোনাচূড়ার পাশের গ্রামে গাংড়ায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কত সঠিক ও ভয়াবহ ঝুঁকির ছিল, সত্যি কথা বলতে কী তা কল্পনাও করতে পারিনি। পত্রিকার সম্পাদক ও চিফ রিপোর্টার নন্দীগ্রাম-খেজুরি সীমান্তে আমার থাকা বা যাতায়াতের ঝুঁকি নিতে নিষেধ করেছিলেন। সাংবাদিকতার দীর্ঘ জীবনে এই একবারই সিনিয়রদের নির্দেশ উপেক্ষা করে কাজ করেছিলাম।

    ১৩ মার্চ, ২০০৭ রাত দুটোর সময় শুরু হয় জোর শঙ্খধ্বনি। গাংড়ায় যে বাড়িতে সেই রাতে ছিলাম সেখান থেকে রওনা দিলাম। গৃহকর্তাকে জানালাম রাতেই ভাঙাবেড়া যেতে চাই। কারণ পাকা খবর ছিল, পুলিশ সকালে খেজুরি থেকে মুভ করবে। শীতের রেশ তখনও কাটেনি। গৃহকর্তা আপত্তি করলেন। আশ্বস্ত করে বললেন, এমন শঙ্খধ্বনি তো রোজ রাতেই হয়। মন সায় দেয় না। কারণ পুলিশি অভিযানের খবরটা ইতিমধ্যে একটা সূত্র মারফৎ চলে এসেছিল। গাংড়ার লালু সামন্তকে সঙ্গী করে আমি ও কলকাতা টিভির ক্যামেরাম্যান কাজল মাইতি চলে আসি ভাঙাবেড়ায়। রাত তখন আড়াইটে। গৌরাঙ্গপুজোর তোড়জোর শুরু করেছেন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আন্দোলনকারী পুরুষ ও মহিলা কর্মীরা। দূরে রাতপাহারা দেওয়া কর্মীদের বিশ্রামের তাঁবু। এরপর কীভাবে রাত কটে ভোর হয়েছে তা বলতে পারব না। মনে হয় নিমেষে কেটে গেল কয়েকটা ঘন্টা।

    ভোর হতেই হাজার হাজার আন্দোলনকারী জড়ো হয়ে কীর্তন চালু করেছেন। অদূরেই মুসলিমরা ভূমি রক্ষ‌া করতে আল্লাহর সাধনা করছেন। ভাঙাবেড়া ব্রিজের মুখে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির কর্মীদের কেটে দেওয়া গর্তের মধ্যেই চলছে গৌরাঙ্গ পুজো। এরকম পুজো সেই ভোরে চলছিল গোকুলনগর অধিকারীপাড়া সহ গোটা নন্দীগ্রামের বিভিন্ন গ্রামে। মুসলিমরা রাস্তায় নামাজ পড়ছিলেন। মাতৃভূমি রক্ষ‌ার জন্য অসহায় নিরস্ত্র গ্রামবাসীরা সেদিন আর কীইবা করবেন? এদিকে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘অপারেশন নন্দীগ্রাম’ কার্যকর করতে বন্দুকের নল উঁচিয়ে ১৩ মার্চ, ২০০৭ সন্ধের পর থেকে তালপাটি খালের দক্ষিণ প্রান্তে বারাতলায় খেজুরি কলেজে ও নন্দীগ্রাম থানায় পুলিশ জড়ো হতে শুরু করেছিল। গোটা রাজ্য থেকে কয়েক হাজার পুলিশ রাতারাতি রওনা দিল খেজুরি হয়ে নন্দীগ্রামের উদ্দেশে। অপারেশন নন্দীগ্রাম যে শেষ পর্যন্ত আরেকটা শাসক দলের সশস্ত্র ক্যাডারকুল(হার্মাদবাহিনী) ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ভয়াবহ গণহত্যা ডেকে নিয়ে আসছে তা কে জানতে? তেভাগা আন্দোলন ও আগস্ট আন্দোলনের ঐতিহ্যবাহী নন্দীগ্রামের কৃষক বিশ্বাস করতে পারেননি, যে বামফ্রন্ট সরকারকে তাঁরা বুকের রক্তে ক্ষ‌মতায় এনে বসিয়েছেন, তারাই তাঁদের বুক ঝাঁঝরা করতে হাজার হাজার পুলিশ ও সশস্ত্র হার্মাদবাহিনী দিয়ে এলাকা দখল নেবে। সর্বদলীয় সভা হবে এমনটাই সকলের বিশ্বাস ছিল।

    এদিকে ১৪ মার্চ ভোরে গৌরাঙ্গপুজোর ছবি ক্যাসেটবন্দি করে কলকাতা টিভির ক্যামেরাম্যান কাজল মাইতি ভাঙাবেড়া থেকে ১৯ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেল। নন্দীগ্রামে তালপাটি খালের ধারে ভাঙাবেড়া ব্রিজের পাশে সাংবাদিক বলতে আমি একা। এই পথেই পুলিশি আর সশস্ত্র হার্মাদবাহিনী ঢুকেছিল। আর ৬ কিলোমিটার দূরে তেখালির অদূরে গোকুলনগরে ছিল সাংবাদিক ভোলানাথ বিজলি ও বিটন চক্রবর্তী। পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ঢুকছে এই খবর নিশ্চিত হতেই প্রাণ হাতে নিয়ে ওরাও চলে যায় নন্দীগ্রামে।

    সকাল ৯টার পর থেকে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। বাতাসের গন্ধে অশুভ সংকেত যেন ভেসে আসছিল। সকাল ৯ টা থেকেই তালপাটি খালের দক্ষ‌িণে খেজুরি প্রান্তে একে একে পুলিশের সাঁজোয়া গাড়ি ঢুকতে থাকে। বেলা সাড়ে নটার মধ্যে সারি সারি পুলিশের গাড়ির কনভয় খেজুরির বারাতলা কলেজ থেকে ভাঙাবেড়ায় ও তেখালি ব্রিজের ওপারে শেরখাঁচকে এসে হাজির হয়। ভাঙাবেড়ায় হাজার হাজার পুলিশের মাঝে সাদা পোশাকের গুটিকয়েক লোকের মধ্যে এপারের আন্দোলনকারীরা গোকুলনগরের সিপিএম নেতা শ্রীপতী জানাকে চিনিয়ে দিলেন। এছাড়া বাকিদের অচেনা ও বহিরাগত বলেই আন্দোলনকারীদের ধারণা হয়েছিল। পিছনে দূরে খেজুরি ও নন্দীগ্রামের সিপিএম নেতা ও কর্মীরা ছিলেন সে খবর পরে জানা গেল। তালপাটি খালের ধারে ঝোপের মাঝে বন্দুক উঁচিয়ে কিছু লোকের উপস্থিতি পরে পুলিশের ভিডিও ক্যামেরাতেও ধরা পড়েছে। বেলা ১০টার মধ্যে দুটি বড় ট্রাক নন্দীগ্রামের দিকে পিছন করে বালিমাটি ভর্তি বস্তা নিয়ে এসে খেজুরি প্রান্তে ভাঙাবেড়া ব্রিজের মুখে দাঁড়িয়ে। সোনাচূড়া জালপাইয়ে যে গর্ত কাটা হয়েছিল তা ভরাট করে লরিটি খেজুরি দিয়ে বেরিয়ে যাবে এমনটাই ছিল পরিকল্পনা। এসবই ভাঙাবেড়ায় নন্দীগ্রাম প্রান্তে তালপাটি খাল পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ‌ করেছি। এসব প্রস্তুতি যখন চলছে, সে সময়ে খেজুরির এদিকে মাইকে বক্তব্য রেখে চলে গেলেন নিশিকান্ত মণ্ডল, সুনীল মাইতি। স্কুলের কাজ আছে এই বলে সাত সকালে নন্দীগ্রামে চলে গিয়েছিলেন সবুজ প্রধান। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতা বলতে শ্রীকান্ত পাইককে সব সময়ে দেখেছি ভাঙাবেড়ায় দাঁড়িয়ে আন্দোলন পরিচালনা করতে।

    এরপর প্রায় দশটা কুড়ি নাগাদ এগিয়ে এলো মাথায় মাইক বাঁধা একটা ট্রেকার। ট্রেকারে পুলিশের স্টিকার লাগানো ছিল। কিছুক্ষ‌ণের মধ্যে খেজুরি থানার ওসির ঘোষণা শুরু। পরপর দুবার বললেন, নন্দীগ্রামে রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু হবে, পুলিশ প্রশাসনকে সাহায্য করুন, কোনও বাধা দেবেন না। ঘোষণা শুনেই এপার থেকে লাঠি উচিয়ে আন্দোলনকারীরা চেঁচাতে শুরু করেন- ‘জমি আমরা দিচ্ছি না দেব না’। এই দলে কিশোর, কিশোরী, শিশু ও নারীদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। পুরুষরাও ছিলেন তবে নারীরাই ছিলেন প্রথম সারিতে। কা কস্য পরিবেদনা।

    কোথায় সর্বদলীয় বৈঠক? একতরফাভাবে নিরীহ আন্দোলনকারীদের এপর শুরু হল শাসক দলের মদতে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। গৌরাঙ্গপুজো আর নামাজ আদায়কারী মানুষদের উদ্দেশে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেটের সঙ্গে গুলি ছোঁড়া শুরু হয়। সেই মুহূর্তের কথা মনে নেই। নিজের মধ্যে নিজেই হারিয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ওই বিশাল পুলিশ বাহিনী এপারের শান্তিপ্রিয় আন্দোলনকারীদের ব্যারিকেড ভেঙে শেষ পর্যন্ত ঢুকবে, তাও আবার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে। হঠাৎ সম্বিৎ ফিরতে তাকিয়ে দেখি তালপাটি খালের পুবদিকে, যেদিকে আমি গাংড়ার বাসিন্দা লালু সামন্তকে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, সেদিকটাতেই দু’জন মানুষ গুলির আঘাতে লুটিয়ে পড়লেন। তাঁরা কে তা জানার মত পরিস্থিতি ছিল না। ওই দৃশ্য দেখার পর বুঝলাম টিয়ার গ্যাস বা রাবার বুলেট নয় এখন নির্বিচারে গুলি ছোড়া হচ্ছে। একে একে লুটিয়ে পড়ছেন নিরীহ আন্দোলনকারীরা। কখন খালের পাড়কে বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলাম তা আজ বলা সম্ভব না।

    বেলা ১১টা নাগাদ ভাঙাবেড়ার প্রতিরোধ কমিটির নেতা শ্রীকান্ত পাইক এসে বললেন, ‘দাদা আপনি পালিয়ে যান। এলোপাথারি পুলিশের গুলিতে আপনার প্রাণ যাবে। আমরা মারা গেলে খুব ক্ষ‌তি হবে না। কিন্তু আপনি যা দেখেছেন, তাই লিখলে দেশের লোক বিশ্বের লোক এই গণহত্যার বিবরণ জানতে পারবেন। ওপারে পুলিশের বাইনোকুলারে আপনিও ধরা পড়ছেন। একবার তাক করে কেউ গুলি চালালে মৃত্যু অনিবার্য।’ শ্রীকান্ত পাইকের কথা শোনার পর আর কোনও ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবিনি। চোখে যা দেখেছি, কানে যা শুনেছি তা সম্বল করে প্রাণ নিয়ে পালানো। দেড়ঘন্টার পথ ছয় ঘন্টায় ফিরলাম গড়চক্রবেড়িয়ায়। জেলিংহামের জঙ্গল পেরিয়ে হলদি নদীর পার ধরে এগোনো। ফোনে চিফ রিপোর্টারকে ও এডিটরকে গুলির শব্দ শুনিয়েছি। শুনিয়েছি মহাশ্বেতা দেবীকে আর আমার জীবনের সহযোদ্ধা তহমীনা খাতুনকে। ফোনে ওঁরা গুলির শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়েছেন। এরপর আর পাঁচ ঘন্টা ফোনে যোগাযোগ নেই। জ্যামার লাগানো হয়েছিল। যাতে ভিতরের খবর দ্রুত না বেরোতে পারে। নন্দীগ্রামে ওইদিনও গণহত্যা চালানোর সময় এলাকার চারধারে ছিল সিপিএম ও পুলিশের কঠোর নাকাবন্দী। কাউকে এলাকায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এমনকী সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদেরও না। সিপিএম কর্মীদের বাধায় তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চণ্ডীপুর থেকে তমলুকে ফিরে যেতে হয়েছে। শ্রীকান্ত পাইকের নির্দেশ মেনে এবার স্বাধীন ভারতের জালিয়ানওয়ালাবাগ, ভাঙাবেড়ার বধ্যভূমি ছেড়ে ছেলেবেলা থেকে লালিত বিশ্বাসকে মাড়িয়ে প্রাণ নিয়ে পালানোর স্মৃতি কোনও দিন ভুলতে পারব না।

    ঘন্টা পাঁচেক হেটে গড়চক্রবেড়িয়ায় বড়বাঁধের ওপর উঠি আমি আর গাংড়ার লালু। সেখান থেকে মুজিবর রহমানের বাড়ি। তখন বড় বাঁধ ধরে হাজার হাজার মানুষের গ্রাম ছেড়ে ত্রাণ শিবিরের উদ্দেশে যাওয়ার করুণ দৃশ্য। যার সঙ্গে দেশভাগের সময়কার ছবির তুলনা করা যায়। সদ্যোজাত শিশুকে নিয়ে মা চলে যাচ্ছেন গ্রাম ছেড়ে। সঙ্গে হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু, কুকুর, বেড়ালছানা কোলে, পাখির খাঁচা হাতে ঝুলিয়ে চলেছেন কৃষক পরিবার। নিজেরা তো নয়ই বাড়ির পশু, পাখিরাও যেন হার্মাদ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ না করে। এরই মধ্যে কেউ কেউ ভরসা জোগাতে গ্রামে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁরা হেঁটে চলা মানুষদের তৃষ্ণার জল দিচ্ছেন। ওইসব জলসত্রে আমিও বেশ কয়েকবার জল পান করেছি। বিস্মিত হয়েছি মানুষগুলোর ভিতরের মানুষকে দেখে।

    আগের দিন রাতের পর পেটে কিছুই পড়েনি। সেদিন খিদের অনুভূতিও ছিল না। কিন্তু গড়চক্রবেড়িয়ায় মুজিবর রহমানের বাড়িতে পৌঁছে গরম ভাত, ডাল, সবজি ও ডিমের তরকারি সামনে ধরতেই খিদে মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো যেন। গোগ্রাসে গিলে ফেললাম। খাবার শেষ হতেই মুজিবর রহমান ছলছল চোখে বললেন, ‘সুকুমারদা, আমরাও গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আপনাকে এখন থাকতে দিতে পারব না। এলাকা কিছুক্ষ‌ণের মধ্যে হার্মাদরা দখল নেবে। আপনিও পালিয়ে যান।’ এবার লালু আমার সঙ্গ ছাড়ল। ওর বাড়ির লোকেরা কেমন আছে বেচারা তাই নিয়ে চিন্তায়। আমি পথ হারিয়ে বিপদে পড়তে পারি তাই রাত থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত ও আমার সঙ্গ ছাড়েনি। লালুকে ছেড়ে ঘরছাড়া মানুষের দলে ভিড়ে নন্দীগ্রাম হাসপাতালের দিকে পা বাড়ালাম। আবার হাঁটা। পা চলতে চাইছিল না। কিন্তু হাসপাতালে না গেলে মৃত, আহত, ধর্ষিতাদের হদিশ কোথায় পাব? খবর লিখে পাঠাতে হবে যে। সরস্বতীবাজার থেকে কে যেন মোটর সাইকেলের পিছনে তুলে নিল।

    সোজা নন্দীগ্রাম হাসপাতাল। ঘরছাড়া মানুষের নিঃশব্দ মিছিল, হাসপাতালে আহত ও মৃত মানুষের সারি। নন্দীগ্রাম ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, মহেশপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম আহতদের পাঠানো হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড় থাকলেও নন্দীগ্রাম হাসপাতালে ছিল নিঃস্তব্ধ। হাসপাতালে জড়ো হওয়া মানুষের চোখে ক্রোধের আগুন জ্বলছে, চোখের কোণে প্রিয়জন হারানোয় জল দাঁড়িয়ে পাথর। ১৪ জন শহিদ, ১৬৮ জন বুলেটবিদ্ধ, ১৬ জন ধর্ষিতা। আহতদের নিয়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সও রেয়াপাড়ায় আটাকানো হয়েছিল। এই পরিসংখ্যানের বাইরে, পরবর্তীকালে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যাদের কাছে প্রায় ৫৫০ জন মহিলা শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের অভিযোগ গোপনে জানিয়েছিলেন। সেদিনের আন্দোলনের কৃতিত্ব নন্দীগ্রামের মানুষেরই। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষ‌া কমিটির হয়ে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআই তদন্ত চেয়ে ১৪ মার্চ, ২০০৭ কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করে। পরের দিন ১৫ মার্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পেয়ে ১৬ মার্চ সিবিআই-এর দল এলাকায় ঢুকতেই দখলদার ভাড়াটে হার্মাদবাহিনী কর্পুরের মত উবে গিয়েছিল।

    তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুর আন্দোলন পরিচালনার পাশাপাশি নন্দীগ্রামে বারবার ছুটে গিয়েছেন। বাধাপ্রাপ্তও হয়েছেন। তাঁর কনভয় লক্ষ‌্য করে তেখালিতে গুলি ছোড়া হয়েছে। আমার সামনেই নন্দীগ্রাম হাসপাতালের ভিতরে তিনি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন কাঁদানে গ্যাস ও হার্মাদবাহিনীর গুলির শব্দে। সেদিনের আন্দোলনে অবশ্যই ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শেখ সুফিয়ান, নিশিকান্ত মণ্ডল সহ বাকি অনেকের সঙ্গে তৎকালীন দক্ষ‌িণ কাঁথির তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে নন্দীগ্রাম গণহত্যার ১৪ বছর পর সেদিনের স্মৃতিচারণায় নন্দীগ্রাম আন্দোলনের নেপথ্যে না-বলা জরুরি কিছু কথা থেকেই গেল। কোনও এক সময়ে লেখার চেষ্টা করব।



    গুরুচণ্ডা৯-র গ্রাহক হোন


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১৪ মার্চ ২০২১ | ১৫৯৬১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:48b0:6be:754f:fa89 | ১৪ মার্চ ২০২১ ০৪:৩৭103610
  • শুনলাম নন্দীগ্রামে গুলি চালানোর কাজ যে পুলিশ অফিসারের, সেই সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন? 


    https://thewire.in/politics/west-bengal-tmc-nandigram-satyajit-bandyopadhyay

  • বিপ্লব রহমান | ১৪ মার্চ ২০২১ ০৭:৫১103613
  • লাল সেলাম নন্দীগ্রাম,  যেন ১৯৭১ এর পাকিপনা! 

  • PT | 203.110.242.23 | ১৪ মার্চ ২০২১ ০৯:৪৭103617
  • এ সেই নন্দীগ্রাম। যেখানে জমি নেওয়াই হয়নি কিন্তু জমি রক্ষার জন্য আন্দোলন হয়েছিল। ভোটের আগে আবার ভেসে উঠেছে "গণহত্যা" ও হলদী নদিতে কুমীরে লোপাট করা "লাশের" গপ্প।

    এই লেখাগুলো পড়লেই বোঝা যায় যে লেখকের সত্য কথা লেখার দায়, সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই নেই। গুজব ও অসত্য জীইয়ে রাখাটাই লেখার প্রধান উদ্দেশ্য।
     
    আর সেই সময়ে তিনোদের বন্ধু কেদ্রীয় সরকারের অধিনস্থ সিবিআই এর চার্জশীটে নিয়ে কোন মন্তব্য নেই লেখায়। সেই অতি প্রাচীন গুজব ফ্যক্টরি আবার চালু হয়েছে। বিপ্লব- বিশ্বাসীরা চার্জশীটটা পড়ে নেবেন একবার।
    https://timesofindia.indiatimes.com/india/nandigram-firing-full-text-of-cbis-nandigram-chargesheet/articleshow/29665581.cms

  • PM | 120.50.17.99 | ১৪ মার্চ ২০২১ ০৯:৫৬103620
  • প্যাটার্ন  টা একই -


    - যে লালু আলম লাঠি মারবে সে  পরে তিনো দলে যোগ দেবে 


    - যে পুলিশ নন্দীগ্রমে গুলি চালাবে  মারবে সে  পরে তিনো দলে যোগ দেবে 


    - যে সরাষ্ট্র সচিবের আমলে জুলাই মাসের গুলি চলবে তিনিও তিনো দলে যোগ দিয়ে মন্ত্রী হবেন  আর জুলাই মাসে বক্তৃতাও দেবেন 


    -  ওপোরের ক্ষেত্র গুলিতে সরকারে আসার পরেও কোনো তদন্ত হবে না । সিবিআই তদন্ত রিপোর্ট দিলেও তাতে কোনো অ্যাকসন হবে না , ঠান্ডা ঘরে পাঠানো হবে 

  • দেবাশীষ, নন্দীগ্রাম খেজুরী থেকে । | 106.211.155.59 | ১৪ মার্চ ২০২১ ০৯:৫৭103621
  • একদম ঘটনার হুবহু তুলে ধরেছেন । খ

  • সব মিথ্যে | 2a0b:f4c1:2::254 | ১৪ মার্চ ২০২১ ১০:০০103622
  • নন্দীগ্রামে কিছু হয় নি, নদীতে লাশও ভাসে নি, পুলিশের গুলি খেয়েও কেউ মারা যায় নি, অনেকে বলে ১৪ জন নাকি মারা গেছিল - সব ঢপ, সব মিথ্যে

  • PT | 203.110.242.23 | ১৪ মার্চ ২০২১ ১০:০৬103624
  • গুল্প বাদ দিয়ে যা হয়েছিল সেটাই লেখা হোক না।

  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:4db5:a11f:e855:d605 | ১৪ মার্চ ২০২১ ১০:৫৫103626
  • পুরোটা লেখা হোক। কে কে লাভবান হয়েছিল কার কার ক্ষতি হয়েছিল। কে তদন্ত আটকে দিয়েছিল। কে কোর্ট কেস চালানোর অনুমতি দে নি। সবই লেখা হোক। 

  • PT | 203.110.242.23 | ১৪ মার্চ ২০২১ ১১:০৮103628
  • ফিরে দেখার জন্য একদা বিপ্লবীরা দুই দলে ভাগ হয়ে আজকে নন্দীগ্রামে হাজির হয়েছে। এখন দুটো দল বিপ্লবের হিস্যা নিয়ে ঘেও কুকুরের (মুছে দিয়েও আবার লিখলাম) মত  প্রকাশ্যে কামড়া কামড়ি করছে।

  • PT | 203.110.242.23 | ১৪ মার্চ ২০২১ ১৩:২৬103637
  • ল্যাও ঠ্যালা, ন্যাকামো দেখ। এদ্দিন যেন জানত না!!
    মমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে তিনি (শুভেন্দু) বলেন, ‘‘গোকুলনগরে গুলি চালিয়েছিলেন যে সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁকে তৃণমূলে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে পুলিশ অফিসার অরুণ গুপ্ত এবং তন্ম রায়চৌধুরী নন্দীগ্রামে গুলি চালিয়েছিলেন, তৃণমূল সরকারের আমলে তাঁদের পদোন্নতি হয়েছে। ক্ষমা করবেন না। আমি শহিদ পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ। দলমত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে নন্দীগ্রামের মানুষ আমার আত্মীয় স্বজন। আমি সকলের পাশে রয়েছি এবং থাকব।’’

  • সপ্রতিভ | 2409:4060:e97:8b7e::7988:f50a | ১৪ মার্চ ২০২১ ১৩:৩২103638
  • হিরণ পৌঁছে গেছে? লাইভ হোক

  • আতঙ্ক | 2405:8100:8000:5ca1::643:d5ba | ১৪ মার্চ ২০২১ ১৭:৪৯103648
  • তাহলে দেখলেন তো প্রমাণ হয়ে গেল, নন্দীগ্রামে কিছু হয় নি, ১৪ জন কেন একজনও পুলিশের গুলিতে মারা যায় নি। মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেন নি। 

  • Ranjan Roy | ১৪ মার্চ ২০২১ ১৮:১৭103652
  • এই লেখা পড়ে মনে হল  জনৈক সাংবাদিক সুকুমার ডিউটি করতে গিয়ে সেই ঐতিহাসিক দিনগুলোর রোজনামচা লিখেছেন।  তাতে যদি কোন তথ্যগত ভুল বা বিকৃতি থাকে সেগুলো ধরিয়ে দেওয়া হোক।


    1 নদীতে ভেসে আসা লাশ কুমির এসব কিছুই উনি লেখেননি। যা লেখেননি তার দায় উনি কেন বইবেন?


    2 আবার বলছি, একটা রোজনামচা, কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বা আজকের নন্দীগ্রাম নিয়ে কোন বক্তব্য নেই। তাহলে আজ কে কোথায় , কে কুকুর এসব না বলে সুকুমারের তথ্যের ভুল দেখান না!


    3 সেই সময়ের সরকারের পক্ষের অসি ও মসিযোদ্ধারা---- যেমন লক্ষণ শেঠ, গুড়িয়া সাহু , সুবোধ ও অরিন্দম-- তাঁরাই কি আগের অবস্থানে আছেন?

  • PT | 203.110.242.16 | ১৪ মার্চ ২০২১ ২০:১২103654
  • অন্যের অবস্থান খোঁজার আগে RR আপনার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করুন।

  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b143:3000:48b0:6be:754f:fa89 | ১৪ মার্চ ২০২১ ২১:০১103658
  • লক্ষণ শেঠ, সুবোধ সরকার এরাও কে কোথায় সেটা নিয়ে কথা হলে ভালোই হয়।

  • Ranjan Roy | ১৫ মার্চ ২০২১ ০৪:০৩103674
  • পিটি


    কেন বলুন তো? লক্ষণ শেঠ বা গুড়িয়ার  মত রাজনৈতিক কর্মী অথবা অরিন্দম  সুবোধ সরকারের মত  সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আমার কিসের সাাদৃশ্য? কারও অবস্থান খুঁজছি না। 


    এখানে একটি নির্দিষ্ট সাংবাদিক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তার তথ্যগত ভুল ঠিক নিয়ে কথা হচ্ছে।

  • PT | 203.110.242.23 | ১৫ মার্চ ২০২১ ০৯:৪১103683
  • "তাহলে আজ কে কোথায় , কে কুকুর এসব না বলে সুকুমারের তথ্যের ভুল দেখান না!"

    ভুল দেখাব কি করে? তথ্যসূত্র কি? শুধু দুটো বাক্য দেখুনঃ
    " ১৪ জন শহিদ, ১৬৮ জন বুলেটবিদ্ধ, ১৬ জন ধর্ষিতা। ....পরবর্তীকালে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যাদের কাছে প্রায় ৫৫০ জন মহিলা শ্লীলতাহানি বা ধর্ষণের অভিযোগ গোপনে জানিয়েছিলেন।"
    ১৪ জনের মৃত্যু ছাড়া বাকিটা কোন সরকারি নথিতে লিপিবদ্ধ হয়েছে? আমার মোটা বুদ্ধিতে বুঝি যে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের ভিত্তিতে বলা যেতে পারে যে পুলিশের গুলিতে ঠিক কতজন মারা গিয়েছিল। সেসব আছে কোথাও?

    "১৫ মার্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ পেয়ে ১৬ মার্চ সিবিআই-এর দল এলাকায় ঢুকতেই দখলদার ভাড়াটে হার্মাদবাহিনী কর্পুরের মত উবে গিয়েছিল।"
    সিপিআইএর চার্জশীটটা লেখক (আপনিও RR) পড়েছেন? সেখানে কাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে?

    এতদিনেও এইসব তথ্য প্রমাণ/অপ্রমাণ করা খুব কঠিন? সেইজন্যেই বোধহয় "কৃষি বিপ্লবের" জমি দখলের জন্য "ধর্মযুদ্ধ" শুরু করতে হয়েছে।

    নন্দীগ্রাম যাতে ধ্র্মের আফিং এর মত কাজ করে সেইজন্যেই কি সিবিআইকে তদন্ত করতে দেওয়া হয়্নি?

  • Ranjan Roy | ১৫ মার্চ ২০২১ ১০:৩৭103695
  • আচ্ছা আপনার সূত্র কী বলে? 14টা লাশ নয় তো ক'টা লাশ? একটাও না? বা কোন কিছুই ঘটেনি? অপারেশন সূর্যোদয়? তাও না? 


    আজ যা বলবেন তাই মেনে নেব।

  • সুসময় | 176.10.99.200 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১০:৪৮103696
  • সিপিএমের আমলে কোন খুনখারাপি হয় নি। একটি কোম্পানিও পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায় নি এবং অসংখ্য নতুন কারখানা হয়েছিল, একজনও বেকার ছিল না, কলেজ থেকে বেরোলেই সবাই চাকরি পেয়ে যেত - খুব ভাল সময় ছিল। 

  • ঘেও কুকুর | 65.49.2.69 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১১:৩৪103700
  • ঘেউ ঘেউ! আপ্নেরা মাস্টারদাকে এতো প্রশ্ন করেন কেন? বিমানদাকে করতে পারেন না? মাস্টারদা আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কিমতি সময় বরবাদ করবে নাকি? ঘেউ ঘেউ!   

  • PT | 203.110.242.16 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৩:৩৪103709
  • "আজ যা বলবেন তাই মেনে নেব।"
    তা বলিনি তো! এত সমস্যা কেন? পরিষ্কার তো লিখেই দিয়েছি কোন উত্তর পাওয়াটা জরুরী। আপনি হঠাৎ ঘেঁটে ঘ করছেন কেন?
    আপনার জানতে ইচ্ছে করেনা প্রকৃত সত্য?

  • Ranjan Roy | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৪:৫৯103712
  • পিটি 


    এবার বাচ্চাদের মত কথা বলছেন/। প্রকৃত সত্য সবাই জানতে চায়, অন্ততঃ এই পাতায়। কারণ, এখানে বিভিন্ন দলের সমর্থক আছেন, নির্দলীয় আছেন, কিন্তু কোন ভেস্টেড ইবটারেস্ত নেই বলেই আমার ধারণা।


    সুকুমার বাবুর রিপোর্তাজের তথ্য আপনার যদি সত্যি না মনে হয় তার দুটো কারণ হতে পারে।


    এক, প্রকৃত সত্যটি কি তা আপনি জানেন ; তাহলে আমাদের সবাইকে জানিয়ে দিন।


    দুই,, হয়ত আপনি প্রকৃত সত্য জানেন না, কিন্তু সুকুমারবাবুর রিপোর্টে এমন কিছু বিরোধাভাস বা বিসংগতি রয়েছে যার জন্যে এই রিপোর্টকে প্রকৃত সত্য বলে মানতে আপনার সমস্যা হচ্ছে। তাহলে তাই স্পষ্ট করে বলুন না !

  • PT | 203.110.242.23 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৫:৩৯103715
  • "সুকুমার বাবুর রিপোর্তাজের তথ্য আপনার যদি সত্যি না মনে হয় তার দুটো কারণ হতে পারে।"
    কোন কারণই নেই। যে পার্সেপশনগুলো ২০০৬ থেকে নানাবিধ পদ্ধতিতে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে সেগুলো-ই পুনরায় সাজিয়ে-গুছিয়ে লেখা হয়েছে। সুতরাং প্রমাণ করার দায় লেখকের।
    খুব সামান্য একটা তথ্য দিলেই হবে আপাততঃ "১৪ জন শহিদ, ১৬৮ জন বুলেটবিদ্ধ"ঃ  
    কাদের ছোঁড়া গুলিতে এতজন বুলেটবিদ্ধ?
    আপনার কাছেও তো কোন তথ্য-্প্রমাণ নেই? আপনিই বা মেনে নিচ্ছেন কিসের ভিত্তিতে? নাকি আপনার "মনে" হয় যে এমনটাই হয়েছিল?

  • Ranjan Roy | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৮:০২103718
  • না, আমি সাংবাদিক নই। একজন পাঠক মাত্র। একজন রিপোর্টার যখন চাকরির সুবাদে কোন স্পটে গিয়ে রিপোর্ট লেখেন তখন প্রাথমিক ভাবে অন্য কোন বিপরীত এবং মজবুত তথ্য না পেলে সেটা মেনে নেই। আবার  বএর চেয়ে মজবুত তথ্য পেলে আগের মানা তথ্যকে খারিজ করি। রিপোর্ট থেকে " বোঝা যাচ্ছে না?  তাহলে এই প্রশ্ন থাক।


    বাকিগুলো? ক'জন মরেছিলো আপনার মতে? নাকি কেউ মরেনি? কোন গুলিটুলি চলেনি? অপারেশন সূর্যোদয় বলে কিছু হয়নি? মুখ্যমন্ত্রী 'পেইড ইন দেয়ার ওউন কয়েন' বলেননি?  


    -মেনে নিলাম সব মিথ্যে, এসব অপপ্রচার। বিশ্বের খাঁটি কমিউনিস্ট সরকারকে এত বছর গদিতে থাকতে দেখে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের গাত্রদাহ হয়েছিল। তাদের টাকায় এসব অপপ্রচার । নমস্কার।

  • দীপ | 2402:3a80:abc:decc:b5af:5a77:161e:d43f | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৮:১৭103720
  • ভারতে কোনোদিন কিছু হয়নি। শিখদাঙ্গা হয়নি, বোফর্স হয়নি, বাবরি হয়নি, গুজরাট দাঙ্গা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গে মরিচঝাঁপি হয়নি, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম হয়নি। অম্বিকেশ-শিলাদিত্য হয়নি, কামদুনি হয়নি! সব বিরোধীদের চক্রান্ত, আর সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত! 


    হরি হে তুমিই সত্য!

  • PT | 203.110.242.16 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৯:১৭103725
  • RR
    আপনি যখন লেখার তথ্যগুলোকে জীবন দিয়ে ডিফেন্ড করছে তখন আপনার কাছে কিছু ডকুমেন্ট অবশ্যই আছে। নাহলে আপনার কথাবার্তা ধর্মবিশ্বাসীর মত শোনাচ্ছে।

    এই যেমন একটা রিপোর্ট পেলাম। বাচ্চারাও চাইলে খুঁজে বের করতে পারে। সব উত্তর নেই এতে কিন্তু উত্তর খোঁজার একটা ইচ্ছে আছে। এ বঙ্গে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর খোঁজে না কেন কোন সাংবাদিক? এর উত্তর পেলে কি কারো অস্বস্তি বাড়্তে পারে?

    " Bullet questions
    West Bengal police say they fired only 37 rounds at Nandigram but India's federal police say at least 38 people were injured by bullets. Their officials have also recovered many more used cartridges.
    If the police fired only 37 rounds, who fired the other bullets?
    The government says 10 people were arrested with illegal firearms and a huge cache of ammunition as well as several red flags. None was from the Nandigram area.
    The suspicion is that armed supporters of the ruling Marxists were also involved in the firing alongside the policemen. The federal police say they have recovered many bullets of a type not used by police but in widespread use in the underworld.
    Even the West Bengal government affidavit admits that this type of .315 bullets were recovered from the site of the শুটিং। "


    http://news.bbc.co.uk/2/hi/south_asia/6497213.stm


    <@দীপ >


    এই সব অংবং মন্তব্য না করে কিছু তথ্য দিন না প্লিজ। 

  • দীপ | 2402:3a80:a9f:163e:b69e:f8b6:93c4:7c32 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৯:৪২103728
  • একজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করেছেন। তারপরও নাকি কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছেনা! 


    আর পুলিশ তো সাক্ষাৎ সত্যবাদী যুধিষ্ঠির! 

  • দীপ | 2402:3a80:a9f:163e:b69e:f8b6:93c4:7c32 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৯:৪৬103729
  • ভারতে সর্বদা সত্যযুগ বিরাজিত। দিগন্তবিস্তৃত উন্মুক্ত প্রান্তর! শান্তিপ্রিয় ছাগল সেখানে নেচে বেড়ায়!

  • PT | 203.110.242.16 | ১৫ মার্চ ২০২১ ১৯:৫৫103730
  • "১৪ জন শহিদ, ১৬৮ জন বুলেটবিদ্ধ, ১৬ জন ধর্ষিতা।"


    খ্যাল করুন যে কোন তথ্যসূত্র নাই। তাহলে কি ধরে নেব যে সাংবাদিক রাম দুই করে গুনে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন? 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:

Nandigram, Nandigram Police Firing, Nandigram Dibas, Nandigram Divas, Nandigram Naxal, Nandigram Trinamool, Nandigram Maoist, Nandigram Maoist Squad, Nandigram 14 years, 14th March Nandigram Day, Nandigram CPM-Police, Nandigram Bhumi Ucched Protirodh Committee, Nandigram BUPC, Nandigram Salim, Nandigram Land Movement, Nandigram Buddhadeb Bhattacharya, Nandigram Checmical Hub, Nandigram Fake News, Nandigram Peoples War, Nandigram police firing Journalist Version, Nandigram Guruchandali
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন