এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • নারীপক্ষ

    অনুরাধা কুন্ডা
    ইস্পেশাল | উৎসব | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৭৩ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৪ জন)
  • হলটা মস্ত লম্বা। কোনোমতেই ঘর বলা চলে না। লম্বা টানা টেবল। সারি সারি চেয়ার। দেয়াল জোড়া বইয়ের আলমারি। কিছু ওপেন অ্যাকসেসের জন্য তাক। দুপুরবেলা দুটো থেকে কাজ ছিল। তখন বেশ ভিড়। কম্পিউটারে প্রচুর ছেলেমেয়ে। অন্তত জনা বিশেক নেটে পড়ছে। জেস্টরের অ্যাক্সেস দেওয়া হয়েছে ওদের। লাইব্রেরিয়ানের নিজস্ব পাসওয়ার্ড। আইডি। খুব সুবিধে হয়েছে ওদের। পুরোদমে কাজ করে। একটা আইডিয়াল অ্যাটমস্ফিয়ার। কাজ করতে করতে, লিখতে লিখতে কখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে বুঝিনি। হঠাৎই ঘড়িতে ঢং ঢং করে ছ-টা বাজল। তাকিয়ে দেখি আশেপাশে কেউ নেই। ফাঁকা ঘর। পাশে লাইব্রেরিয়ান শ্রীমতীর চেম্বার। উঠে গিয়ে দেখি সেখানেও কেউ নেই। বোধহয় চা খেতে গেছে। কাজ করছি দেখে আর ডাকেনি। ফিরে গিয়ে চেয়ারে বসি। ঘাড় ব্যথা করছে। এতক্ষণ হেঁট হয়ে কাজ! ঘাড়ের দোষ কী! এককাপ চা হলে বেশ হত। আবার উঠে বাইরে যাই। চারতলাতে লাইব্রেরি। সামনে মস্ত করিডোর। সিঁড়ির মুখে কোল্যাপসিবল গেট। সেদিকে যাই। যদি রামদীন থাকে। গেটের কাছে গিয়ে দেখি একী! গেটে তালা! কেন! কে দিল ! লাইব্রেরিয়ান শ্রীমতী তো জানে আমি কাজ করছি। ইন ফ্যাক্ট, রোজই আমি সন্ধের পরেও এখানে পড়াশোনা করি। কিছু না বলেই তালা দিয়ে চলে গেল চা খেতে! খুব আশ্চর্য হয়ে ফোন করতে থাকি। একবার। দু-বার। তিনবার। অদ্ভুত একটা ঝিনঝিন শব্দ ফোনে। চেক করে দেখি নেট নেই। না থাক। ফোন তো হবে। একী! টাওয়ারও নেই। সামনে তাকাতে আধো অন্ধকার মস্ত করিডর। একটা মাত্র আলো জ্বলছে। আচ্ছা শ্রীমতীর কী আক্কেল। এইভাবে তালা দিয়ে কেউ যায়! বাইরে বেশ অন্ধকার। করিডোরের দিকে তাকিয়ে কেমন গা ছমছম করে উঠল। ডিপার্টমেন্টগুলো সব বন্ধ। শুনশান। দৌড়ে গিয়ে বাকি সুইচগুলো দিলাম। অদ্ভুত! একটাও আলো জ্বলল না। উপরন্তু যে দুটো আলো জ্বলছিল তাও নিভে গেল! পা কাঁপছে। কেমন করছে শরীর। লাইব্রেরি হলের মধ্যে দৌড়ে ঢুকে গেলাম। ওই তো ল্যান্ডফোন। দৌড়। ফোন করতে হবে। যে ভাবেই হোক। একী। এটা তো ডেড! অথচ দুপুরে ঠিক ছিল। আমিই তো ফোন করেছি। খুব অস্থির লাগছে। না। ভয় পেলে চলবে না। ভয়ের কিছু নেই। এত চেনা জায়গা। চেনা সবকিছু! সবই কাকতলীয়। গিয়ে চেয়ারে বসি। সাড়ে ছ-টা। শ্রীমতী এতক্ষণ ধরে চা খাচ্ছে! বই হাতে নিই। অস্থির। উঠে পড়ি। শ্রীমতীর চেম্বারে যাই। ওর ব্যাগ কোথায়? না। ব্যাগ নেই। ও তো ব্যাগ নিয়ে চা খেতে যায় না! তাহলে! আমার পা কাঁপছে। শ্রীমতী কি বাড়ি চলে গেল! তাহলে! ফোন কোথায়! আবার ফোন। তিনবার। চারবার। পিঁপ পিঁপ শব্দ। রিং হল না। টাওয়ার নেই। মনে হল চেঁচাই। কিন্তু কোনো লাভ নেই। জায়গাটা শহরের একপ্রান্তে। কাছাকাছি কোনো বাড়ি নেই। সামনে বাগান। কেবল মনে হচ্ছে করিডরের একরাশ অন্ধকার এইমাত্র হলে এসে ঢুকবে। গলা শুকনো। এপাশে একটা ছোটো চেম্বার। তাতে অ্যাকোয়া গার্ড আছে। হেঁটে গিয়ে জল খাই। পাশে অনেকগুলো কিনলির বোতল। জল ভরা আছে। রামদীন সকালে এসে ভরে রাখে। কী স্বচ্ছ জল। ফিরে আসি। হঠাৎই একটা হুড়মুড় শব্দ। আবার দৌড়ে গিয়ে দেখি সবকটা জলের বোতল পড়ে গেছে। কী করে পড়ল! এখানে কি ইঁদুর আছে! ইঁদুর সবকটা বোতল ফেলতে পারল! ইঁদুরের গায়ে অত জোর থাকে না মোটেই। কীরকম যেন লাগছে। লাইব্রেরির ওই প্রান্তে একটা খসখস। আবার কী! দমবন্ধ প্রায়। পা চলছে না। একী! কী হচ্ছে এইসব? ফটোকপি মেশিন চলছে! কে চালাল! কাগজ বেরিয়ে আসছে। সাদা কাগজ। অফুরন্ত। বিলকুল সাদা। জানালার ওপাশে সাদা কুয়াশার মতো। খুব বিশ্রী রকমের ঠান্ডা। কাগজগুলো হিসহিস শব্দ করে বেরিয়ে চলেছ। সব ঝাপসা। (যদি সময় বা ইচ্ছে হয় তবে কাল) কোনোদিন খেয়াল করিনি। এই হলের দেয়াল, আলমারিসমূহের মাথার ওপর দিয়ে যা দৃশ্যমান, খুব বিশ্রীরকম সাদা। প্রায় ফ্যাকাশে। কেমন একটা কুয়াশার আস্তরণ যেন লেপটে আছে। খুব জোর করে শান্ত থাকার চেষ্টা করি। যুক্তি গোছাই। শ্রীমতী নিশ্চয়ই কোনো কাজে গেছে। আটকে পড়েছে। ফোনের নেটওয়ার্ক কি যখন তখন খারাপ হতে পারে না? আর ল্যান্ডফোন? সেটার কী হল? আচ্ছা ধরা যাক কাকতালীয় সমাপতন। ফটোকপি মেশিনের ব্যাপারটা? নিশ্চয়ই বিভাস চালিয়ে রেখেছিল। কানেকশন লুজ ছিল। কোনো কারণে ঠিক হয়ে চলতে শুরু করেছে। এখনও কাগজ বেরোচ্ছে হিসহিস শব্দ করে। সাপের মতো। সাদা সর্পিল গতি। কেবল সাপের কথা কেন যে মনে আসছে কে জানে বাবা! রাজপুর শহরের নামজাদা কলেজ এটা। কলেজবাড়ি আগে রাজবাড়ি ছিল। শুনেছি এই অংশ ছিল অন্দরমহল। বাগান এখনও খুব সুন্দর। প্রাচীন গাছগুলি এখনও আছে। তবে একটু বেশি গাছপালা। প্রিন্সিপাল পুরোনো গাছ কাটা একদম পছন্দ করেন না। একটু জঙ্গলের মতো হয়ে আছে। উদ্যান নয় ঠিক। একটা বৃহৎ চন্দ্রবোড়া কিছুদিন আগে দেখা গেছে বাগানে। বুড়ো। একটু সাদাটে চামড়া। সবুজটা পিচ্ছিল। খুব ধীর চলন। যেন কোনো তাড়া নেই। মনে হল আলমারিগুলির মাথা দিয়ে চন্দ্রবোড়া সাপটা চলে ফিরে বেড়াচ্ছে ফটোকপি মেশিন থেকে বেরিয়ে। সর্পিল। সফেদ। সাদাটে বিষ ছড়াচ্ছে। মনে হল চিৎকার করি। কিন্তু গলা শুকনো। যেন কেউ চেপে ধরে আছে। উঠতে চেষ্টা করলাম। পারলাম না। সাপটি ময়ালের মতো পা জড়িয়ে নিচ্ছে কেন! আমি তো জানি এখানে, এই নিরাপদ লাইব্রেরি কক্ষে কোনো সাপ নেই! একটা নেশাচ্ছন্নতা গ্রাস করছে। প্রাণপণ চেষ্টা করছি চোখ খোলা রাখতে। সামনে টাঙানো সার সার ছবি। রবীন্দ্রনাথ। গান্ধিজি। বঙ্কিমচন্দ্র। সরোজিনী নাইডু। সব লাইব্রেরিতে যেমন থাকে। সি ভি রামন। জগদীশ বসু। আমার চোখ ঘুরতে থাকে। পা নড়ছে না। অদৃশ্য সরীসৃপ আমাকে চেয়ারে বসিয়ে রেখেছে জোর করে। আমি ওই মহাজ্ঞানীদের চোখের দিকে তাকিয়ে শক্তি সঞ্চার করতে চাই। পারি না। হাঁটু পর্যন্ত অবশ।

    আমার ঠিক সামনে দুটি চোখ। টানা টানা। ঠাকুরবাড়ির মেয়েদের মতো। এ কার চোখ? শুনেছি। এই সামনের পোর্টেটটি রাজকুমারী রুক্মিণীদেবীর। যাঁর নামে এই কলেজ। ভদ্রমহিলা বেশ সুন্দরী ছিলেন। চোখ দুটি জীবন্ত। কখনও এত স্পষ্ট করে দেখিনি। সোজাসাপটা শাড়ি। কাঁধে ব্রোচ। বছর কুড়ি বয়স মনে হয় ছবিতে। চোখ দুটি কী উজ্জ্বল। যেন টানছে। সামনে ওই চোখ। পায়ের নীচে সর্পিল বাঁধন। আমি ক্রমশ তলিয়ে যেতে থাকি। হাহাকারের মতো কুয়াশা যেন ঢুকে পড়ে ঘরের মধ্যে কোনো ফাঁক দিয়ে। যত উঠে দাঁড়াতে চাই সর্পিল অদৃশ্য ফাঁস তত আঁটো হয়। রুক্মিণীদেবীর চোখ । কী মায়াময়। যেন চুম্বক। টানছে। আর তাকাতে পারি না। টেবিলে মাথা রাখলাম। চোখ বুজে আসছে। হেল্প। প্লিজ হেল্প। জ্ঞান হারাইনি। টেবিলে মুখ রেখে পড়ে থাকি। পা ধরে কে টানে? আমি সামনে যা আছে খিমচে ধরি। লেদার বাউন্ড। সোনার জলে লেখা। একটি বই। আঁকড়ে ধরেছি। পাতা খুলে যাচ্ছে হাতের টানে। লেখক জেমস মরিসন। ছাপা হয়েছে লন্ডন থেকে। দ্য ডায়েরি অব্ রুক্মিণীদেবী। আ মাইন্ড আন্ডার মর্টার। সম্মোহিত মতো বইয়ের পাতা খুলে বসি। কেউ যেন আমাকে দিয়ে পড়িয়ে নিচ্ছে। সাদা কুয়াশা গড়িয়ে যাচ্ছে লম্বা টেবিলের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। একটা অদ্ভুত গন্ধ আছে কুয়াশার। এই বদ্ধ ঘরে কী করে এল সেটা! সাপের হিসহিস বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশই। কুয়াশার ওপারে ওই দুখানি চোখ কেবল। ছবি থেকে শুধু চোখ দুখানি নেমে আসছে। প্রসাধনহীন। স্পষ্ট। অথচ কুহকময়। চোখ দুটি আমার মুখের সামনে। টেবিলের অন্যপ্রান্তে। চোখ দুটি যেন কথা বলছে। কিছু করতে পারছি না। দোলাচল। আমি মন্ত্রমুগ্ধ। ভয়? ঠিক বুঝতে পারছি না। জেমস মরিসন। বইয়ের পাতা উলটে যাচ্ছে আপনি। সাদা আলো। কালো অক্ষর। উনিশশো চল্লিশ সালে ছাপা হয়েছে। মুখবন্ধ লিখেছেন মরিসন। কে এই জেমস মরিসন? আমি সম্মোহিতের মতো পড়ে যেতে থাকি। মরিসন ভারতবর্ষে এসেছিলেন আঠেরোশো আশি সালে। রাজপুরে আসলেন ওভারসিয়রের কাজ নিয়ে। আঠেরোশো পঁচানব্বই। রাজপুরের রাজা বীরেশ্বর সিংহের অতিথিশালাতে ঠাঁই পেয়েছেন। ভারতবর্ষে বড়ো গরম। মশা। সাপের উপদ্রব। তথাপি রাজপুর তাহার ভালো লাগিতেছে। ওভারসিয়রের কাজ ছাড়া আর-একটি দায়িত্ব পেলেন মরিসন। বীরেশ্বরের বিশেষ বন্ধু তিনি। রাজার কনিষ্ঠা কন্যা রুক্মিণীর ইংরেজি শিক্ষার ভার পেলেন মরিসন। আট বছরের রুক্মিণী। রাজকুমারী। শিক্ষায় বিশেষ অনুরাগ তার। চাপ চাপ ঠান্ডা। আমি ওই ঠান্ডা খেতে থাকি। মরিসন মুখবন্ধে রুক্মিণী সম্পর্কে যা বলছেন তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, “বালিকাটি বড়োই বুদ্ধিমতী। সে তাহার মাতৃভাষা ভালো শিখিয়াছিল। ইংরেজি দ্রুত আয়ত্ত করিত। উপরন্তু সে বেশ ভাবিতে পারিত। সর্ব বিষয়ে তাহার আগ্রহ। সে তখনই নিজের মতো করিয়া ভাবিবার চেষ্টা করিত।” আমি টানা পড়ে যেতে থাকি। কুয়াশার সঙ্গে এবার হালকা ফুলের গন্ধ। যেন কেউ অনবধানে ফেলে রেখে গেছে। ওই প্রান্তে চোখদুটি অপলক চেয়ে। আমার পায়ে ব্যথা। ওই বেষ্টনী যেন হাড় ভেঙে ফেলছে। কিন্তু আমার পড়ে যেতে কষ্ট হয় না। মরিসন লিখছেন “রাজকুমারী এখন ইংরেজি লিখিতে পারেন। গতকাল তিনি বেথুন স্কুল বিষয়ে প্রশ্ন করিলেন। বালিকাটি বড়ো তেজস্বিনী। তাহার বিশেষ ইচ্ছা বেথুন স্কুলে ভরতি হওয়া। তাহার পিতা এই ইচ্ছার কথা জানিতেন না। তিনি চাহিয়াছিলেন কন্যাকে মোটামুটি শিক্ষিত করিয়া সৎপাত্রে বিবাহ দিবেন। আমার নিকট সেইরূপ ইচ্ছা ব্যক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু রাজকুমারীর ধীশক্তি প্রবল। পাঁচ বৎসর সে আমার নিকট শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছিল। তাহার ন্যায় বুদ্ধিমতী আমি দেখি নাই। তাহাকে দেখিলে আমার নটিংহামে রাখিয়া আসা আমার কন্যা মিরান্ডার কথা মনে পড়িত।” বাবা,এ তো সাহেব কাবুলিওয়ালা। কিন্তু মিনিটি রাজনন্দিনী। তাই সে শ্বশুরবাড়ি গেল মহাধূমধাম করে। পনেরো বছর বয়সে। মরিসন রাজপুর থেকে চলে গেলেন হোমে। তাঁর মিরান্ডার কাছে। রুক্মিণীর আর বেথুন স্কুলে ভরতি হওয়া হল না। মরিসন ডায়েরির মুখবন্ধে লিখছেন “বালিকাটির রাজপরিবারে বিবাহ হইল। তাহার আর পড়াশোনা হইবে কি? আমি জানিতাম না। তাহার বিদ্যানুরাগ প্রবল। রুচিবোধ শালীন। আমি তাহার কল্যাণ কামনা করিয়া রাজপুর হইতে বিদায় নিলাম।” ফুলের গন্ধ খুব মাদকতাময়। এ গন্ধে কি সাপ আসে? দূর ! ও তো মিথ! পায়ে এত ব্যথা কেন? অবশ। অথচ মস্তিষ্ক সজাগ। রাজকুমারীর জন্ম আঠেরোশো সাতানব্বই। মরিসনের কাছে তিনি এসেছিলেন আট বছরেরটি। তাঁর জন্মের ঠিক পরের বছর বিবাহ হচ্ছে বেগম রোকেয়ার। রোকেয়ার স্বামী তাঁর সামনে খুলে দিচ্ছেন নতুন দিগন্ত। উনিশশো এগারো। কলকাতাতে শাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল। বীরেশ্বর ইচ্ছা করলে মেয়েকে সেখানে পড়াতে পারতেন। যদি সেখানে না পড়াতেন তো নিবেদিতার স্কুল ছিল। মহাকালী পাঠশালা ছিল। কন্যার সাধ ছিল বেথুন স্কুল। তাও তো রাজার পক্ষে সহজ ছিল। অথবা হয়তো ছিল না। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং মাধুরীলতার পনেরো বছর বয়সে বিবাহ দিয়েছিলেন। বীরেশ্বর তো সাধারণ রাজা মাত্র। পঞ্চদশী মেয়ে পতিগৃহে গেল। বেথুন স্কুল স্বপ্নে থাকল। আর থাকল তার রোজনামচা লেখার অভ্যাস। ইংরেজ শিক্ষকের কাছে সে এই অভ্যাসটি পেয়েছিল। সামনে চোখদুটি সজল। একটি দীর্ঘশ্বাস ওপার থেকে ভেসে আসে। আমি কেঁপে যাই। রাজকুমারীর দিনলিপি। আমি অবশ হাতে পাতা ওলটাই। সাপটি বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলে যায়। ক্লান্তিহীন। রাজকুমারীর চোখদুটি তীব্র। কথা বলে। কিন্তু বলে না। চক্ষুদ্বয় আমাকে ধরে রাখল। নিথর। একটি প্রশস্ত বারান্দা। এক কোণে ছাতে যাবার সিঁড়ি। বারান্দা লম্বা। তাই এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে হাঁটাহাঁটি করে বেশ সময় কাটে। প্রথামত এখানে একটি পিঞ্জর ও তাতে একটি কথা বলা পাখি। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি পঞ্চদশী কিশোরী বারান্দা তে হেঁটে বেড়াচ্ছে। নববধূর আভূষণ নয়। একটি সাধারণ তাঁতের শাড়ি। কিছু স্বর্ণালংকার। আর সেই অসামান্য চোখ। আশ্চর্য! ভয় করছে না! মেয়ে যেন কথা বলছে কলমে। আমি একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে থাকি। পড়ে যাই। “এ বাড়িতে কন্যাসন্তানের আদর নাই। অনাদরও নাই। আমার ননদিনীগুলি নিজেরদের মতো করিয়া থাকে। সকালে উঠিয়া সাজগোজ করে

    একপ্রস্থ। দ্বিপ্রহরে আর-এক সাজ। সন্ধ্যাকালে আবার আর-এক রকম সজ্জা। জিজ্ঞাসা করিলে বলে, রাজকুমারীদিগের সাজিতে হয়। দশ-বারোজন দাসী আছে শুধু সাজাইবার জন্য। বড়ো অশ্লীল রসিকতা করা অভ্যাস উহাদের। আমার ভালোলাগে না। স্বামীর সহিত আমার সম্পর্ক লইয়া কত কৌতূহল! নির্লজ্জভাবে প্রশ্ন করিলে আমি সরিয়া যাই। উহারা আমাকে অহংকারী ভাবে। ভাবুক। আমি উহাদের সঙ্গে তাল মিলাইতে পারিব না। উহারা কেবল দেহচর্চা করে। মনের চর্চা নাই। কেহ তাহাদের বিদ্যাভ্যাসের কথা বলে না। উহারা নিজেরাও ভাবে না। আমি উহাদের পড়াইলে কেমন হয়? কেহ কিছু বলিবে কি? এ বাড়িতে গ্রন্থ নাই। কেহ বই পড়ে না। আমার দম আটকাইয়া আসে। ইহারা বই না পড়িয়া কেমনে থাকে?” অবাক! বিয়ে হয়েছে সদ্য। নূতন জীবনের কথা কিছু তেমন লেখা নেই। স্বামী সহবাস, বাসর, ফুলশয্যা, বউভাত এ বিষয়ে কিছু পেলাম না। কিছুমাত্র উল্লেখ নেই। যেন সেসব কিছু ঘটেইনি জীবনে। এই মেয়ে কী চেয়েছিলেন? এই যে। নববধূ লিখছেন “আমার স্বামী দেবতূল্য নন। আবার অসুরোচিতও নন। তিনি বলিয়াছেন আমি পড়াশোনা করিতে পারি। তবে বাড়িতে বসিয়া। আমি কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা পড়িয়াছি। চন্দ্রমুখী বসুর কথা পড়িয়াছি। আমি কি কখনও তাঁহাদের মতো বাহিরে যাইতে পারিব না?” যে ময়ালটি নিথর হয়ে পড়েছিল, সে এক বিচিত্র চন্দনগন্ধ ছড়িয়ে চলাচল শুরু করে। খস খস খস। কে যেন মন্ত্র পড়ে! কীসের মন্ত্র? চোখদুটি মন্ত্র পড়ে । বিবাহের মন্ত্র। অক্ষর ছিটিয়ে দিচ্ছে আগুনে। মেয়ে লিখছেন “আমার স্বামীর আরও দুই পক্ষ আছে। তিনি আমাকে যখন গ্রহণ করিলেন, মনে হইল কোনো বিশাল সরীসৃপ আমাকে গ্রাস করিতেছে। আমি চেতনা হারাইলাম।” চন্দনগন্ধ এত তিক্ত, এত কষায় কেন? আমার মাথা তোলপাড় হতে থাকে। যে মেয়েকে ইংরেজ গৃহশিক্ষক রেখে পড়িয়েছেন, তাকে সাত তাড়াতাড়ি পনেরো বছর বয়সে তিরিশ বছর বয়সী শিবেন্দ্রসুন্দরের সঙ্গে বিবাহ দিলেন রাজা? কিন্তু এই তো হত তখন। এতে তো নতুন কিছু নেই। হয়তো রাজত্ব চলে যাবে ইত্যাদি ভাবনা ছিল! বড়ো দুই মেয়েকে বারো বছর বয়সের আগে বিবাহ দিয়েছেন। রুক্মিণীর দিনলিপি বলছে “মেজদিদিরও দূরে বিবাহ হইয়াছে। আমার মতো। তাহার বিবাহকালে মাতামহী আমাকে বলিয়াছিলেন, ও লো নাতিনী, তোর জন্য কেষ্টঠাকুর আনিতে দিব। আমি তাঁহাকে খুব গাল পাড়িলাম। বলিলাম কেষ্টঠাকুর আমি চাহি না। সতীন লইয়া ঘর করিব না আমি। সত্যভামা, শ্রীরাধিকা, ওই দিকে আবার গোপিনীসকল, ষোলোশো বধূ, অমন পতিতে কাজ নাই। সকলে খুব হাসিয়াছিল। আমার ভাগ্যও হাসিয়াছিল কি?” আমি একটা ধাক্কা খাই। মরিসন সাহেব যথার্থ বলেছেন। এ মেয়ে যে সে আমলে নিজের মতো করে ভাবত! আর কী লিখছে চোখ?” রামচন্দ্রের মতো একপত্নীনিষ্ঠ পতিই কি মেয়েমানুষ চায়? তিনিও তো সীতার মন বুঝেন নাই!” কী সর্বনাশ।এ যে মনের কথা বলে? আমি কুয়াশা ঠেলে সরাতে চাইলে ধোঁয়াটে ঠান্ডা আরও চেপে বসে। চোখ হাসছে। “আমি কী চাহিয়াছিলাম। কী পাইলাম। সকলে কহে, মেয়েমানুষের ভাগ্য। আমি মানি না। আমি ছোটো মেয়েগুলিকে পড়াইব।” বেশকিছু দিন পাতা খালি। কিছু লেখেননি। মাঝে মাঝে ইংরেজিতেও লিখেছেন। বোঝা যাচ্ছে বাঁধা গতের মানুষ ছিলেন না। এই যে। আবার লেখা। ইংরেজি। বাংলা করলে দাঁড়াচ্ছে “আমার প্রথম সন্তানটি ভূমিষ্ঠ হইল। আমার বড়ো বেদনার সন্তান। কী নাম রাখিব? এ সংসারে প্রথম কন্যাসন্তান লক্ষ্মী আনে বলিয়া সকলে খুশি। কিন্তু আঁতুড়েই ধাত্রী বলিয়াছেন, দ্বিতীয় সন্তান পুত্র না হইলে বড়ো অনর্থ ঘটিবে। যেন সকলই আমার দায়!” মাস তিনেক পরে লিখছেন “সন্তানটির নাম রাখিলাম সূর্যমুখী। সে জন্মাইল। আমি পরীক্ষা দিতে পারিলাম না। পরের বৎসর পারিব কি? মরিসনবাবু থাকিলে মনে বল পাইতাম।” পনেরো থেকে ছাব্বিশের বিবাহিত জীবন। এগারো বছরে পাঁচটি সন্তান জন্ম। মমতাজমহলের কথা মনে পড়ছে। লিখছেন “ইহারা আমার বেদনার সন্তান। ইহাদের জন্মের পিছনে কোনো আনন্দ নাই। তবু ইহাদের দিকে তাকাইলে আমার স্নেহ উথলিয়া উঠে। আবার ক্রোধ হয়। কেন এতগুলি জন্মাইল? কেন বছরভর নির্ভার হইয়া চলিতে পারি না। প্রথম তিনটি কন্যা বলিয়া শাশুড়ি ক্রোধ করিতেন। কেন? তাঁহার নিজের চারখানি কন্যা নাই? আমার স্বামী কিছুই বলেন না। খুব রাগিলে মাগি সম্ভাষণ করেন। বড়ো ঘৃণা হয়। পিত্রালয়ে এমন শব্দ আমি শুনি নাই। সকলে সসম্ভ্রমে কথা বলিত। আমার স্বামী রাগিলে অশ্লীল খিস্তিখেউড় করিতে থাকেন। তখন তাঁহার জ্ঞান থাকে না। মনস্তত্ত্ব বলে রাগিলে মানুষের স্বরূপ বাহির হইয়া আসে। কাজেই উপরে তিনি যতই রাজবেশ পরুন, আমি জানি অন্তরে তিনি তামসিক। এই পিশাচকে লইয়া আমার সংসার। আমার সহবত খারাপ হইয়া যাইতেছে। পড়াশোনা করিতে বসিলে শিশু কান্দে। সকলে কহে আর পড়িয়া কাজ নাই। কেন এমন হইল? শিশু তো কাঁদিবেই। তা বলিয়া আমি পড়িব না?” বাইশ বছরের তরুণী মা চারটি শিশু নিয়ে নাজেহাল। হোক না রানি। রানি বলে কি মাটিতে পা পড়বে না? এর মধ্যে চলছে ডায়েরিলিখন। “বড়ো ননদিনী আমার দিনলিপি খুলিয়া দেখিয়াছেন। আমি ইংরেজি লিখি বলিয়া খুব বকিলেন। বলিলেন, দাদা জানিতে পারিলে তুই বাঁচিবি না। কেন? তিনি যাহা ইচ্ছা করেন তাহাই করেন। সপ্তাহান্তে জঙ্গলমহলে যান। বড়দি,মেজদিদিকে কুকথা বলেন আবার শয়নকক্ষে টানিয়া লন, আমি কিছু বলি কি?” অবিশ্রান্ত জলধারা।কত সহস্র বছরের অশ্রু ঝরে পড়ে। অজস্র বিষধর ঘুরে বেড়ায়। জলের রং বিষনীল। “আর সকল কথা থাক। আমার স্বামীর বড়ো সন্দেহবাতিক। শিক্ষক রাখিবেন না। কেমন করিয়া পড়িব! মরিসনবাবুর কথা শুনিয়া কেমন ভাব করিয়া উঠিয়া গেলেন। চোখ কেমন স্থির করিয়া রাখিলেন। ভয় লাগিল। আমি তো অধিক কিছু চাহি নাই। মাঝে মাঝে মনে হইত কোনো জ্যোৎস্নালোকিত রাতে, আমি যখন ছাতে মল্লিকা ফুলগাছের টবের পাশে দাঁড়াইয়া দু-কলি গাই, তিনি একবার আসিয়া পাশে দাঁড়ান। কখনও আসেন নাই। আমি গান গাহিলাম কি গাহিলাম না, ফুলটি যে খোঁপায়

    উহা মল্লিকা না ঘেঁটু, ইহা লইয়া তাঁহার কোনো মাথাব্যথা নাই। আমার শরীর বড়ো ক্লান্ত লাগে। পিত্রালয়ে যাইবার রীতি নাই। ইচ্ছাও নাই। এ বাড়ির ছোটো মেয়েগুলাকে দেখিয়া বড়ো কষ্ট হয়। উহারা কি আমারই মতো কেবল বেদনার সন্তান প্রসব করিবে? নারীজন্ম কি শুধুই গা গুলাইবার আর প্রসববেদনার নিমিত্ত?” আমি আশ্চর্যতরতে যাই। উনিশশো আঠেরোর বাঙালি মেয়ে। আনন্দের সন্তান আনতে চেয়েছিলেন। পারেননি। ছত্রে ছত্রে সেই ক্ষোভ। এসব লেখাই ইংরেজিতে। মাঝে বাংলাও আছে। মনে হয় এইভাবে ভাষাচর্চা রাখতে চেয়েছিলেন। কুণ্ডলীকৃত কুয়াশার সঙ্গী হয়ে থাকা বড়ো টনটনে ব্যথার জন্ম দেয়। চোখ তেমনি আমার মুখে নিবদ্ধ। আরও কিছু বলবেন? যেন আমি নই। আমার ভিতর থেকে কেউ ফিসফিস করে বলে। বলুন। বলুন। হালকা প্রতিধ্বনি। “আমার স্বামী জগৎসিংহ নহেন। বিবাহের রাত হইতে তাহা জানি। কিন্তু তিনি যে রাজকার্য চালাইবার কালে নরপিশাচ, তাহা জানিতাম না। কাল জানিলাম। বড়দি বলিলেন। প্রজা বেয়াদবি করিলে প্রভু শাস্তি দেন। আমার স্বামীও দেন। ইংরাজ দেয়। প্রজা নিরুদ্দেশ হইয়া যায়। কোথায় যায়, কেহ জানে না। ইহাদের কি গুমঘর আছে? আমি মরিসনবাবুকে জানাইব। দেশে এত বড়ো কাজ হইতেছে। ইহাদের কোনো মাথাব্যথা নাই!” মেজ মেয়ের নাম দিয়েছিলেন সুপ্রীতি। তারপর সুমালিকা। নগেন্দ্র। বরেন্দ্র। ছাব্বিশ বছর বয়সের পর আর খোঁজ নেই। ডায়েরি বলছে, “যে কয়টি বই পড়িলাম এই ক্ষুদ্র জীবনে, সবেতেই তো পুরুষের ভাষা। পুরুষের রীতি। পুরুষের দৃষ্টি। তিলোত্তমা হউন বা আয়েশা, সবই তো পুরুষের কল্পনা। নারী কি কল্পনা করে না? নারীর কি ভাষা নাই? কে লিখিবে সে কথা? আমি পারিতাম। কিন্তু কী জানি। ভয় করিতেছে। কাল যখন লিখিতেছিলাম, পিছন হইতে ঠান্ডা নিশ্বাস পড়িল। চাহিয়া দেখি, স্বামী। খাতা টানিয়া লইয়া দেখিলেন। বড়ো নিষ্ঠুর হাসিলেন। ইংরাজকে ভুলিতে পার নাই? চিঠিও লিখ বুঝি? কী লিখ? ঘৃণাতে বমি আসিল। মাথা ঘুরিয়া উঠিল। তিনি নিষ্ঠুরতর হাসিয়া বলিলেন “আবার পেট করেছিস, মাগি? তোর পেটে কার সন্তান? কোন্‌ নাগরের?” আমি হু হু করিয়া কাঁদিলাম। অবরোধের মধ্যে আমরা থাকি। এখানে কোন্‌ পুরুষ আসিবে? স্বামী জানেন আমার কোনো প্রেমিক নাই। তাঁর সন্তানই গর্ভে। তথাপি কুকথা বলিয়া আমাকে হেয় করিতে তাঁহার পৈশাচিক আনন্দ।” সাপটাকে চিনতে পারছি। খুব বুড়ো। প্রাচীন। ক্ষমতাবান। দাঁত পড়ে গেছে। চোখে দেখে না তেমন। তবে নির্বিষ নয়। জিভ চেরা। সাদাটে চামড়াতে পোড়া ঘিয়ের গন্ধ। চোখ পাতা ফেলে না। ধীরে চলে। জড়িয়ে নেয় পাকে পাকে। ছাড়া খোলশগুলো স্তূপীকৃত। বড়ো জঞ্জাল। ওই বিষে আর ঔষধি হবে না কোনো। ও খুব জানে সেটা। তাই পাকে পাকে জড়িয়ে নেয়। বাঁধনে মারে। শিবেন্দ্র সিংহ ময়াল পুষতেন। শখ। গুমঘরে উপোসী ময়ালের সাক্ষাৎ হত বিদ্রোহী প্রজার সঙ্গে। অথবা যে আদিবাসী নারীকে ভোগ করে ফেলে দেবার দরকার হত, তার সঙ্গে। হাড় মড়মড়। বাতাস হিম। উত্তরে দক্ষিণে সব নীল। বিষে নয়। ঠান্ডা ত্রাসে। শিবেন্দ্র সিংহ যার উপর অসন্তুষ্ট হন তার খোঁজ মেলে না। রুক্মিণী গুমঘরের কথা ইংরেজ সরকারকে জানাতে চেয়েছিলেন। রুক্মিণী কীভাবে মারা যান কেউ জানে না। দিনলিপি শেষ। হয়তো অসুখ করেছিল। বা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। অথবা ছাব্বিশ পাকে জড়িয়েছিল শরীর। হাড় মড়মড়। বেদনার সন্তানরা হাহাকার করেছিল। বাতাস হিম। জ্যোৎস্নায় মিশে যাওয়া কুয়াশা নেচে যায় ছাতের আলসেতে। আর ভাবি না। ভাবতে পারি না। ফোন বাজছে। ল্যান্ডফোন। আমি উঠতে চাই। ময়াল সরে গেছে বুঝি? স্বস্থানে? কুয়াশা নেই আর। ছবির চোখ স্থির। কাজলের দাগে জল কেন? দূরে গেট খোলার শব্দ। আমি দ্রুত যাই। কে যেন সঙ্গে যায়! জ্যোৎস্নালোকিত রাতের মতো চলন। জরিপাড় শাড়ির হালকা হাওয়া আমার পিঠে হাত দিয়ে করিডোর পার করে দিল। কী স্নিগ্ধ! শ্রীমতী আসছে কলকল করে। কোথায় গেছিলে শ্রীমতী? কোনোমতে বলি। “আর বোলো না! বড়দি ডেকে পাঠালেন যে! লন্ডন থেকে পিটার মরিসন নামে এক পাবলিশার মেইল করেছে। তার দাদু জেমস মরিসন রুক্মিণীদেবীর টিউটর ছিলেন। রুক্মিণীদেবীর ডায়েরি তারা পাবলিশ করেছে। ভদ্রমহিলার লেখা অনুবাদ করেছে। এখানে পাঠাবে। এইসব জরুরি তলব। তাই না বলে চলে গেছি। এই যে বইয়ের নাম। আ মাইন্ড আন্ডার দ্য মর্টার। ক্যাচি। না? কনটেন্ট ভীষণ ভালো, দ্যাখো। সেই সময় উনি মেয়েদের নিজস্ব ভাষা তৈরির স্বপ্ন দেখেছেন! আমি চুপ করে থাকি। ফটোকপি মেশিনে সাদা কাগজের ঢেউ। শরীর ঝিমঝিম করছে। কোনোমতে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাই। মেয়েদের সেলের কাজ শুরু করতে হবে। সিঁড়ির মুখে রামদীন। সঙ্গে বছর আষ্টেকের একটি উজ্জ্বল হাসিমুখ। নাতনি। রামদীন বলে। নাচের স্কুল থেকে নিয়ে এলাম দিদি। চোখ দুটো খুব টানা। কথা বলে। জিজ্ঞেস করলাম, “নাম কী? একঝলক হাসি। হালকা হাওয়া বয়ে গেল। সেই গন্ধ। কে গেল? উজ্জ্বল দুটি চোখ বলল, “রুক্মিণী।” ঝলমলে আলো দেখতে পেলাম। চারদিকে যেন সুগন্ধ। বাগান থেকে আসছে বোধহয়!

    —স্কুলে পড়িস? কোন্‌ ক্লাস? —ক্লাস থ্রি। উজ্জ্বল চোখদুটো হাসে। তোমার মতো পড়াব! ব্যাগটা দেবে? আমি বইপত্র হাতে নামিয়ে নিই। ব্যাগ অষ্টমবর্ষীয়ার হাতে দিয়ে চলে যাই। মন বড়ো বিস্মিত হয়ে আছে আজ। তবে শান্ত।


    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক

    পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ৩১ অক্টোবর ২০২০ | ২৯৭৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Prativa Sarker | ০১ নভেম্বর ২০২০ ১৫:১৮99513
  • অলৌকিকের ছ্দ্মাবরণে লৌকিক। ভাল লাগল। 

  • Sujata Ganguly | ০১ নভেম্বর ২০২০ ১৯:০৯99525
  • বাঃ ! একটানা পড়লাম। খুব ভালো লাগলো। 

  • সুদেষ্ণা মৈত্র | 42.110.141.102 | ০১ নভেম্বর ২০২০ ১৯:১৪99527
  • বেশ  লাগল 

  • স্বাতী রায় | ০১ নভেম্বর ২০২০ ২০:৪৯99532
  • আগের রুক্মিণী হারিয়ে গেল। এই রুক্মিণী কি পারবে কপাল লিখন পাল্টাতে? 

  • একলহমা | ০২ নভেম্বর ২০২০ ০৯:১৩99554
  • আশা করি এই রুক্মিণী তার লক্ষ্যে পৌঁছবে। লড়াইটা অবশ্য আজও তার জন্য সহজ নয়। 

  • শত | 2a0b:f4c0:16c:15::1 | ০৩ নভেম্বর ২০২০ ২৩:৩৩99603
  • আ:জয়ী হোক।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন