এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  উৎসব  শরৎ ২০২০

  • একজন

    অলোক গোস্বামী
    ইস্পেশাল | উৎসব | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৯৩ বার পঠিত | রেটিং ৪ (৩ জন)
  • লোকটা থাকত অনেক অনেক দূরে। সেই দূরত্ব মাপার মতো কোনো একক প্রচলিত ভাষায় চালু নেই। তবু সেই দূরত্ব সংক্রান্ত ধারণা দিতে গেলে বলতে হবে, প্রধান সড়কটা শহরের দক্ষিণ কাঁধ দিয়ে ভেতরে ঢুকে উত্তর কাঁধ দিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে, যেন কারুর ফাঁদে পড়ে, কিংবা ক্রমাগত পেট্রলের গন্ধে বিরক্ত হতে হতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছিল এবং সেই দ্বিধাজাত পথটা যেন বসতির আকর্ষণে ঢুকে পড়েছিল শহরের বুকের গভীরে। কিন্তু বহিরাগতের পক্ষে যেহেতু কারুর বুকে চিরতরে ঠাঁই পাতাটা সহজ কথা নয় তাই শিগগিরই মোহভঙ্গ ঘটেছিল। এরপর সেই শাখাপথ ভ্রম সংশোধনের তাগিদে এলোমেলো ছুটে পুরোনো সঙ্গীকে খুঁজতে গিয়ে এবং না পেয়ে আরও বিভ্রান্ত হয়ে চলে গিয়েছিল পুব প্রান্তে। সেখানে পৌঁছে যখন বুঝতে পেরেছিল জন্মদাতার কাছে ফেরার পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে তখন তীব্র অভিমানে নিজেকে ধ্বংস করার তাগিদে শরীর থেকে খসিয়ে ফেলেছিল বিটুমিনের পোশাক। চেয়েছিল পথ পরিচয়টুকুই যাতে মুছে যায়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর যেন যথেষ্ট প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে এমত বিবেচনায় নিছক ঘাস হয়ে মিশে যেতে চেয়েছিল ঘাসের গভীরে। কিন্তু শেকড়যুক্ত কেউ যেহেতু শেকড়হীনকে বিশ্বাস করে না তাই ঘাস সরে যেতে দ্বিধা দেখায়নি। এরপর দিশাহারা পথটা লজ্জায় দীর্ণ হতে হতে বিনুনির চেও কৃশতর হয়ে দিগ্‌বিদিক চলে যেতে চেয়েছিল।  সেই বিনুনি সদৃশ পথ ধরে আরও এক পা, দুই পা, এক মাইল, দো মাইল কিংবা তার চেও দূরে থাকত লোকটা। 


    কিন্তু সেখানে তো গাছপালা থাকার কথা! ভূগোল বইয়ের আশ্বাস মোতাবেক সেখান থেকে শুরু হওয়ার কথা গভীর বনাঞ্চলের! অথচ, কী আশ্চর্য, জঙ্গল কিনা ততদিনে সেখান থেকেও আরও অনেকটা সরে গিয়েছিল উত্তরে! তবে ভূগোলের বর্ণনাও যে মিথ্যে নয় সেটা প্রমাণ করতে খানিকটা জঙ্গলের আভাস এখনও রয়েছে সেখানে। সেটাও যে খুব ঘন তেমন কিছু নয়। অনেকটা আধুনিকার ভ্রু’র মতো। অর্থাৎ কয়েকটা শাল, শিমুল, খয়ের, জলপাই দাঁড়িয়ে আছে বটে তবে সেগুলোর ভূমিকা শুধুই ভুট্টা কিংবা ধান কিংবা আলুখেত কিংবা গুটিকয়েক ছোটো ছোটো কুটিরগুলোর ওপর ছাতা সেজে দাঁড়িয়ে থাকা। যেহেতু এখনও কোপ খায়নি তাই প্রশ্রয়ের আহ্লাদে শরীরে‌ ‘এসো পড়াই’ এর চুন মাখা সিম্বল সহ ঠিক যেন গৃহপালিত পোষ্য। অতটা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ সত্ত্বেও হাবেভাবে ঠিক যেন ভিটের বামন তুলসী অবতার। কিংবা যেন এই অঞ্চলের সংকেত স্তম্ভসমূহ।


    হ্যাঁ, এই সেই অঞ্চল যাকে ‘কাঠচোর বস্তি’ বলা হয়ে থাকে। যদিও ওরকম কোনো সাইনবোর্ড কোথাও লটকানো নেই। সরকারি কোনো খতিয়ানেও তেমন কোনো উল্লেখ নেই। তা বলে যা সরকারি খাতায় নেই তার অস্তিত্বও নেই, সমাজ বিজ্ঞানে তো তেমনটা সাক্ষ্য দেয় না সুতরাং কাঠচোর বস্তি বহাল তবিয়তেই আছে। মানুষ কাউকে স্থানটার বিবরণ দিতে ওই নামই উল্লেখ করে। এমনকি এতদঞ্চলের বাসিন্দারাও নিজস্ব বাসস্থানের ঠিকানা হিসেবে ওই নামটিই ব্যবহার করে। এবং খুব গর্বের সঙ্গেই। তাই এই অঞ্চলটি অবশ্যই কাঠচোর বস্তি। 


    নামটা শুনলে কারুর মনে হতেই পারে এ বস্তি বুঝি কাঠ খায়, কাঠ হাগে, কাঠই পয়দা করে! যেন, এখানে শুধুমাত্র কাঠদেরই প্রগাঢ় জীবনযাপন! যেহেতু সেটা অসম্ভব এবং এহেন বিশেষ কিছু নামের সঙ্গে যেহেতু আবশ্যিক ভাবেই জড়িয়ে থাকে বিশেষ কিছু গল্প, তাই নাম রহস্য সমাধানে কেউ কেউ উৎসাহী হতেই পারেন। শুধুমাত্র তাদের স্বার্থে আপাতত কয়েকটি সূত্র পেশ করা যাক, যদিও সেসবই যতটা বিশ্বাস সাপেক্ষ ততটা যুক্তিনিষ্ঠ নয়। 


    যেমন, বহু বছর আগেও নাকি প্রতিবেশী শহরের মানুষদের নিত্য যাতায়াত ছিল এই অঞ্চলে। পিকনিক প্রীতি, সবুজ সঙ্গ পিয়াসা, নির্জনতার লোভ নাকি কিছু মানুষকে টেনে আনত এখানে। তখন সবে এদিকে কিছু উৎখাত মানুষের টুকটাক ছাউনি বসছে, যারা তখনও গাছের বিনিময়ে বেঁচে থাকতে শেখেনি। কখনো-সখনো শহরে গিয়ে সামান্য চুরি-ছ্যাঁচড়ামো কিংবা এদিকে পানে স্ফূর্তি করতে আসা বাবু-বিবিদের ফাইফরমাশ খাটা এবং ফেলে যাওয়া উচ্ছিষ্ট কাড়াকাড়ি করে মহাভোজ সারা, এসবই ছিল তাদের পেশা। অর্থাৎ শান্তি-কল্যাণের রমরমা আবাদ ছিল এতদঞ্চলে।  


    আচমকাই কীভাবে যেন বদলে গেল গোটা পরিবেশ! প্রথমে নির্জনতার খোঁজে আসা একজোড়া প্রেমিক-প্রেমিকা সর্বস্ব খোয়ালো। ব্যস, নিমেষে শহরে পৌঁছে গেল জঙ্গলের ভেতর সার সার কিছু ছাউনির রূঢ় বাস্তবতার খবর। এরপর তদন্তে আসা এক আদর্শবাদী রেঞ্জারের আলাদা হল ধড়মুণ্ডু। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসা এক মাঝারি মাপের নেতা বাধ্য হল শুধু অন্তর্বাস সম্বল দশায় ফিরে যেতে। তারপর থেকেই রাজনীতি, প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী ভিন্ন শান্তিপ্রিয় মানুষদের জন্য এই অঞ্চল নিষিদ্ধ ঘোষিত হল। এবং তখনই এই নামকরণ—কাঠচোর বস্তি। 


    তা বলে সভ্যতা কিন্তু এদের পরিত্যাগ করেনি। এদের উন্নতি কল্পে বাড়িয়ে দিয়েছে নিঃস্বার্থ হাত। মানবিকতার নিয়ম মোতাবেক পাঠিয়েছে পোস্টার, বক্তৃতামালা, ব্যালট মেশিন বগলে প্রিসাইডিং, জুয়ারি, শুঁড়ি, পুরোহিত এবং তেত্রিশ কোটি।


    বচ্ছর ভর খালি থলি আসে এখানে, ফিরে যায় ভরতি হয়ে। এই যাতায়াত সত্ত্বেও এ যেন এক অন্ধকার অঞ্চল যার শরীরে পারদ উলকি—কাঠচোর বস্তি।


    যদিও সব কাঠই চালান যায় এক শহর থেকে অন্য শহরে, যদিও সব করাতই সরবরাহ করে শহর, যদিও শহুরে মুনাফা কোনোদিনই সংগত করে না এখানকার সস্তা শ্রমের, তা বলে কোনো শহরকে তো কাঠচোর শহর বলা যায় না! কেন-না শহর মানেই সভ্যতা। সভ্যতা মানেই বিপ্লব। বিপ্লব মানেই অগ্রগতি। অগ্রগতি মানেই মানুষের ক্রমমুক্তি। তাকে তো আর যা-ই হোক কাঠচোর উপাধি দেয়া যায় না। দিলে নিজের মুখেই থুতু পড়ে, উত্তর পুরুষের বাড়া ভাতে ছাই পড়ে, পূর্ব পুরুষের কথাসাগর নিমিষে বাষ্পীভূত হয়ে যায়। ফলে, শিক্ষা, সংস্কার, মূল্যবোধ, সংস্কার, স্বাস্থ্যসূচি, গণতান্ত্রিক বাতাবরণ, মেহনতি ঐক্য, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, সূর্য অভিযান, ইত্যাদি প্রভৃতি যাবতীয় শব্দ হয়ে পড়ে মূল্যহীন।


    সুতরাং এভাবে বলা যায় যে, সমস্ত সভ্যতার শেষে দাঁড়িয়েছিল কাঠচোর বস্তি আর সেই সীমা থেকেও অনেকানেক দূরে, যেখানে তিস্তা প্রবল আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে শূন্য থেকে অথচ জটার বদলে সেখানে শুধু পাথর আর পাথর, সেই পাথুরে পাকদণ্ডি বেয়ে বেয়ে শাল, সেগুন, খয়ের, জলপাই, হরিতকি গাছগুলোর প্রায় কোমরের কাছে পৌঁছে, যেখানে একবারে গিলতে না পারা হরিণসহ কেতরে পড়ে থাকা পাইথন, আর সেই পাইথনকে অবহেলায় ডিঙিয়ে আরও অজস্র হিংস্র জানোয়ারের নির্ভিক পদ সঞ্চার, সেখানে থাকত লোকটা। সেখানে যাওয়া অথবা আসার কোনো সুযোগ্য উপায় ছিল না। ফলত কেউ তার ঠিকানাও জানত না। শুধু কিছু পোকামাকড়, পাখপাখালি, বানর গোষ্ঠী, বুনো শুয়োর, হায়না, চিতা, হরিণ ছাড়া। যেহেতু এতদঞ্চল শুরু থেকেই জনপদচ্ছাপবিহীন সুতরাং লোকটি এখানে আদম বংশীয় হিসেবে ছিল না। ছিল পরিবেশেরই অংশ হিসেবে। 


     


    লোকটি থাকত কীভাবে?


     


    দীর্ঘদিন বনেবাদাড়ে, বৃক্ষশাখায়, পাথরের খাঁজে, সুড়ঙ্গে থাকার চেষ্টা করেছিল কিন্তু অনবরত ঝড়, ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস বারবার সেই সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দিচ্ছিল। শেষবার, যখন প্রবল ঝড় উঠেছিল, দুলে উঠেছিল পাহাড়, পাথরের চাঙর খসে খসে পড়ে তিস্তাকে বাঁধতে চেয়ে ক্রুদ্ধ করে তুলেছিল লোকটা সেবার আস্তানা ছেড়ে নেমে এসেছিল নদীর কিনারায়। তীব্র ক্রোধে তিস্তা ধেয়ে এসে চেষ্টা করেছিল আলিঙ্গনের ছলে পাথরে আছাড় মারার। কিন্তু লোকটা একতিলও না হঠে শুধু অস্ফুটে বলেছিল, “এখানেও!”


    নিমেষে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিল তিস্তা। ফুলে ওঠা তরঙ্গমালা নিমেষে সংকুচিত হয়ে উপায় খুঁজেছিল কেটে পড়ার। কিন্তু মরিয়া লোকটা অত সহজে দান ছেড়ে দিতে চায়নি, এক পা এক পা এগিয়ে চেপে ধরেছিল তিস্তার টুঁটি। সমস্ত প্রবাহ যখন রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম তখন শেষ চেষ্টা হিসেবে নদী বাধ্য হয়েছিল উন্মুক্ত হতে। স্রোতধারা ভাগ হয়ে মাঝখানের শূন্যতায় জেগে উঠেছিল এক আলোকিত গুহা, যা ছিল আদর্শ বাসস্থানের উপযুক্ত। কেউ যেন কারও অপেক্ষায় বছরের পর বছর ধরে তিলে তিলে সাজিয়ে রেখেছে সেই গুহা। 


    এরপর নদীকে রেহাই দিয়ে লোকটা গিয়ে ঢুকে পড়েছিল সেই গুহায়। নদীও একাকার হতে পারার পরম স্বস্তিতে আঁচল দিয়ে আড়াল করেছিল সেই বাসস্থান। শুধু যখন যখন প্রয়োজন হত লোকটা সংকেত পাঠানো মাত্র নদী মেলে ধরত গোপন দরজা। বেরিয়ে আসত লোকটা।    


    লোকটা খেত কী?


     


    যা খুশি। যেমন তেমন কিছু একটা জুটে গেলেই যথেষ্ট। যেমন, সেই তালিকায় ছিল চকচকে নুড়ি পাথর, পলির নীচে চাপা পড়ে থাকা কালো মাটি, পাথুরে শ্যাওলা, অভ্রময় বালু, চুনোপুঁটির সাঁতার, জলের ঘূর্ণিপাক। কখনও সে সবে অরুচি বোধ হলে কিংবা প্রাণীজ প্রোটিনের প্রয়োজন দেখা দিলে স্রোতে ভেসে আসা হরিণের কিমা, হাতির গোস্ত, খরগোশের কান। যখন সে সবেও অরুচি জাগত তখন অপেক্ষা করত বজ্রপাতের। আকাশ থেকে সরাসরি নেমে এসে তিস্তার বুকে আছড়ে পড়ার পর জল এবং বিদ্যুতের যে রসায়ন তৈরি হত সেটাই ছিল লোকটার প্রিয়তম খাদ্য।


     


    লোকটা কীভাবে এসেছিল এখানে?


     


    যেহেতু দ্বিতীয় কোনো এখানে অনুপস্থিত এবং সাক্ষ্যদানের প্রক্রিয়া এখানে অবাঞ্ছিত তাই অনেক কটি সন্দেহই শুধু এক্ষেত্রে প্রযোজ্য।


    সন্দেহ নং ১—ব্যক্তিটির পিতাশ্রী ছিলেন সূর্য বংশীয় রাজন্যবর্গের মধ্যে অন্যতম। তৎকালীন প্রথাস্বরূপ তিনি কতিপয় দার পরিগ্রহ করিয়া ছিলেন এবং প্রতি পক্ষে উৎপাদন করিয়াছিলেন একাধিক সন্তান। জীবন সায়াহ্নে পঁহুছিবার পর, রাজধর্মানুসারে জেষ্ঠ্যপুত্রকে সিংহাসন প্রদান করিবেন নাকি অন্য প্রিয়তমার সন্তানকে, সিদ্ধান্ত নিতে না পারিয়া যখন সাতিশয় যন্ত্রণা ভোগ করিতে ছিলেন তখন এই ব্যক্তি যোগবলে পিতাশ্রীর এই দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথা জানিতে পারে। যেহেতু পুত্রধর্মের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য পিতাকে শান্তি প্রদান করা সুতরাং এই ব্যক্তি গোপনে গৃহত্যাগ করিবার সংকল্প গ্রহণ করে। মধ্যযামের গোপন হন্টন কালে যেহেতু তাহার চিত্ত সিংহাসন, কাম, বিমাতা, বৈমাত্রেয় ভ্রাতা, ষড়যন্ত্র, পিতৃঋণ ইত্যাদি বিষয়ে আচ্ছন্ন ছিল সুতরাং ফিরিবার চিন্তা তাহার মানসে একবারের জন্যও উদিত হয় নাই। ফলত ফিরিয়া যাইবার পথ চিনিয়া রাখিবার চেষ্টাও করা হয় নাই। অতএব কদাপি ফিরিয়া যাইবার বাসনা উদগত হইলেও সম্ভব হয় নাই। বাধ্যত এইস্থলেই ইহকাল রহিয়া যাইতে বাধ্য হইয়াছে।


     


    সন্দেহ নং ২—ব্যক্তিটি ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠীপুত্র। জন্মগ্রহণ কালে পিতার মুখ দর্শনের সৌভাগ্য হয় নাই কারণ তদ সময়ে সপ্তডিঙা লইয়া শ্রেষ্ঠী গিয়াছিলেন মালয় সাগর পারে, বাণিজ্য কল্পে। উক্ত বাণিজ্য যাত্রার পূর্ব নিশিতে, সন্তোষঃ পরমং সুখম, এই শাস্ত্রবিধিকে মান্যতা দিতে শ্রেষ্ঠী স্বীয় পত্নীর সহিত রতি আনন্দ উপভোগ করেন। যেহেতু মালয় সাগরের দূরত্ব কম নহে সুতরাং শ্রেষ্ঠীর ফিরিতে বিলম্ব হয়। ইতোমধ্যে শ্রেষ্ঠী পত্নীর শরীরে গর্ভ লক্ষণ ফুটিয়া ওঠে। যথা সময়ে একটি পুত্র সন্তানও ভূমিষ্ঠ হয়। এহেন সুখ মুহূর্তে শ্রেষ্ঠী পত্নী ব্যাকুল হইয়া মাতা বিশালাক্ষীর নিকটে কাতর মিনতি করেন স্বামীকে দ্রুত প্রত্যার্পণ করিবার। এবং যতদিন না স্বামীর মুখ দর্শন করিবেন ততদিন নির্জলা উপবাসের সংকল্প গ্রহণ করেন। মাতা বিশালাক্ষী ঘটনাসমূহ গোপন রাখিবার শর্তে শ্রেষ্ঠীর ফিরিবার বন্দোবস্ত কল্পে ছয়টি ডিঙা সমুদ্রে নিমজ্জিত করেন। ভগ্ন হৃদয়ে গৃহে ফিরিয়া শ্রেষ্ঠী যখন সবে সন্তানের মুখ চুম্বন করিবেন সেই ক্ষণে পত্নী মাতা বিষহরির সঙ্গে গোপন চুক্তির কথাটি ফাঁস করিয়া দেন। যাবতীয় ক্ষয়ক্ষতির কারণ যে স্বীয় পত্নী সেই তথ্য জানিয়া ক্ষোভে দুঃখে উন্মাদ হইয়া ওঠেন শ্রেষ্ঠী। সন্তানটি তাহার স্ববীর্যের নহে এমত সন্দেহ করিয়া পত্নীকে ‘খানকি মাগি’ সম্বোধন করতঃ গৃহ হইতে বিতাড়িত করেন। পর দিবসে বিশালক্ষীর জলে ভাসিয়া ওঠে শ্রেষ্ঠীপত্নীর দেহ এবং সেই দেহ ডাঙায় তুলিবা মাত্র স্বয়ং মাতা বিশালাক্ষী আসিয়া সেই দেহ আপন ক্রোড়ে ধারণ করেন। এহেন অলৌকিক দৃশ্যে শ্রেষ্ঠী হতজ্ঞান হইয়া পড়েন। জ্ঞান ফিরিবার পর সন্তানের শির চুম্বন করতঃ দেবীমাতার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ঘটনা এইখানেই সমাপ্ত হয় নাই। শ্রেষ্ঠীপুত্র যৌবন প্রাপ্ত হইবার পর শুভানুধ্যায়ী প্রতিবেশীবৃন্দের নিকট হইতে সমূহ তথ্য জ্ঞাত হয় এবং সত্যাসত্য যাচাই কল্পে এক মধ্যযামে পিতার শয়নকক্ষে প্রবেশ করে। শ্রেষ্ঠী তৎকালে তিনজন দাসীর সহিত রতিকর্মে লিপ্ত ছিলেন। উক্ত দৃশ্যে লজ্জিত হইবার পরিবর্তে পুত্র মুগ্ধ দৃষ্টিতে পিতার রতি পারঙ্গমতা অবলোকন করায় মাতা বিষহরির অভিশাপে শ্রেষ্ঠীপুত্র কুষ্ঠরোগ গ্রস্ত হয়। যেহেতু অভিশাপের সহিত অভিশাপ মুক্তিরও একটি উপায় বাতলাইয়া দিতে আমাদের দেবদেবীগণ সিদ্ধহস্ত সুতরাং তাহাদিগের নির্দেশ মোতাবেক শ্রেষ্ঠীপুত্র উপস্থিত হয় এই স্থানে। হাজার বৎসরের হঠয়োগ তাহাকে কুষ্ঠরোগ হইতে মুক্তি দিলেও পূর্বজন্মের সব স্মৃতিও বিলুপ্ত করিয়া দিয়াছিল। সুতরাং এইস্থান হইতে তাহার আর ফেরা হয় নাই।


     


    সন্দেহ নং ৩—কিস্যু ছিল না লোকটার। না রাজত্ব, না বেওসা। একেবারে পাতি নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলে। বাপ ছিল লটারির টিকিট বিক্রেতা, ব্যাটা সিনেমা হলের টর্চম্যান। এটা সেই তখনকার গপ্পো যখন চাকরিটার কেতাই ছিল আলাদা। কলার তুলে, বচ্চন স্টাইলে চুল কেটে ঘুরে বেরানো যেত। ফ্রিতে সিনেমা দেখার লোভে মেয়ের দল পেছন পেছন ছোঁকছোঁক করত সব সময়। ব্যাস, মালপত্র জরিপ করে দাও সুযোগ। তবে অন্য শো-তে নয়, ওনলি নাইট শো। সেটাও দু-এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাবার পর। সুযোগ বুঝে নিয়ে গিয়ে বসাও ব্যালকনির একদম লাস্ট রো-তে। ফিল্ম শুরু হওয়ার পর গিয়ে বস পাশে। প্রথমে কনুই ঝুলিয়ে দাও চেয়ারের বর্ডার পেরিয়ে। যদি আপত্তি না ওঠে তাহলে কদম কদম বঢ়ায়ে যা। তেমন বুঝলে ওপাশের হাতটাও টেনে নাও নিজের কোলে। যদিও এটুকুতে ব্যাটার মন পুরোপুরি ভরত না কিন্তু রুটিরুজির জায়গায় এর বেশি বাড়াবাড়ি করার সাহস হত না। তবে পার্টি যদি লাইনের জিনিস হত তাহলে বিছানা অবধি পৌঁছানোটা কোনো ব্যাপারই ছিল না। যদি ততটা না এগোনো যেত তাতেই বা মজাটা কম কী হত! কিন্তু এভাবে যে কখনও সত্যিকারের প্রেম জমে উঠতে পারে, ওই ধরনের মেয়েছেলের সঙ্গে যে সংসার পাতা যেতে পারে, ভাবতেই পারেনি লোকটা। কিন্তু জীবন যে কত মাজাকিই জানে! ব্যাস, এরপর এক কামরার ঘর, রাতভর মস্তি, বছর না পেরুতেই ছেলে, অন্নপ্রাশনে পুরো ধুমধাম। তবে অতটা বাড়াবাড়ি বোধহয় না দেখালেই ভালো হত! নজর লেগে গেল শনির। আচমকা শুরু হয়ে গেল সিনেমাহলের লাটে ওঠা। ঘরে বসেই যদি অত সিনেমা দেখা যায় তবে কে আর হলে এসে ছারপোকার কামড় খাবে! মালিক তো সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল, দিল লক আউট ঘটিয়ে। দিনের পর দিন ইনকিলাব-জিন্দাবাদ করে কিচ্ছু লাভ হল না। কাঁহাতক ভুখা পেটে লড়া যায়? বাধ্য হয়ে লোকটা ফুটপাথে হরেক মাল সাজিয়ে বসেছিল। টুকটাক বিক্রিও হচ্ছিল কিন্তু শনির দশা কি অত সহজে কাটে? একদিন মাল সহ তুলে নিয়ে গেল পুলিশ। বাধা দিতে গিয়ে খুনের কেস। মাস ছয়েকের মাথায় জামিনে ছাড়া পেয়েছিল বটে লোকটা। ইচ্ছে ছিল সৎপথে ফের কোনো ধান্দা শুরু করার কিন্তু মানুষ তো ধান্দা করে পরিবারের জন্য। পরিবারই যদি বাচ্চা সহ উধাও হয়ে যায় তাহলে অত খেটে লাভ কি? যাবি কোথায় শালি? খুঁজে বের করবই। তারপর নিজের হাতে তোর গলার নলি কেটে দু টুকরো করব। ব্যাস, তারপর খুঁজতে খুঁজতে এতদূর! যদি প্রতিজ্ঞা পূরণ না হয় তবে কোন্‌ মুখে ফিরতে পারে মানুষ? ফিরবেই বা কোথায়!


     


    সন্দেহ নং ৪—লোকটা ছিল তুখোর ছাত্র। গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল উচ্চশিক্ষার সন্ধানে। পরিবর্তে সন্ধান পেয়েছিল ক্ষুধা-শোষণ-অত্যাচারের হাত থেকে মুক্তি পাবার উপায়। সুতরাং এরপর বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে উচ্চশিক্ষার অর্থ হল উচ্চ শ্রেণির মূর্খ হওয়া। নিজেকে বুদ্ধিমান প্রমাণ করতে তাই মহাবিদ্যালয়ে আগুন ধরিয়ে বিপ্লবী কমরেডদের সঙ্গে চলে গিয়েছিল গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। চেয়েছিল সংগঠনকে মজবুত করে বুর্জোয়া সদর দপ্তরে কামান দাগতে। সদর দপ্তর যদি বা না পাওয়া যায় তবে পঞ্চায়েত অফিস কিংবা রেশান দোকান হলেই বা মন্দ কী? কত রকম বিকল্পই তো চারপাশে! যেমন কিনা কামানের পরিবর্তে পেটো এবং পাইপগান! কিন্তু এটুকু পরিকল্পনা বানচাল করতেও যদি সদর দপ্তর থেকে মিলিটারি পাঠানো হয় এবং তাদের হাতে থাকে সত্যিকারের মেশিনগান, তাহলে? পার্টি হাইকমান্ড নির্দেশ পাঠিয়েছিল, মাছেদের মধ্যে জল হয়ে থাকতে। কিন্তু মাছ যদি এরপর জলের পরোয়া না করে সরাসরি ডাঙায় উঠে পড়ে, তাহলে? অতএব খোঁজ খোঁজ খোঁজ। কিন্তু কোনো ইস্তেহারে, রেড বুকে, ইতিহাস বইতে যদি সমাধান না খুঁজে পাওয়া যায়, তবে! সহযোদ্ধাদের ক্রমাগত গ্রেফতার এবং নিহত হওয়ার সংবাদে বিপর্যস্ত লোকটা ফের শহরে ফিরে আসে। বিশ্ব বিপ্লবের কর্ণধারবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা মারফত বুঝে নিতে চায় মূল গলদটি কোথায়। কিন্তু চাইলেই কি বোঝা যায়? তা ছাড়া কচি খোকা নাকি যে সব কিছু বুঝিয়ে দিতে হবে! ফোট শালা। একদিকে বেয়নটের খোঁচা অন্যদিকে রেনিগেড উপাধি, কোথায় যায় বেচারি! এরপর খোলা থাকে শুধু মাত্র এই স্থান যেখানে পৌঁছে যেতে পারলে জীবনে কোনো প্রশ্ন থাকে না, উত্তরের প্রয়োজন পড়ে না, বন্ধনহীন মুক্তি ছড়িয়ে থাকে আকাশে আকাশে। আলোয় আলোয়। ঘাসে ঘাসে।


    বলাবাহুল্য এই স্থান যদি জঙ্গলাকীর্ণ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ সমৃদ্ধ না হত, যদি হত জনপদ লাঞ্ছিত কোনো অঞ্চল, যদি দোহার দুঁহু থাকত, যদি বাতাসে ভাসত জনম আর মরণের গীত, যদি দেয়াল থাকত আর থাকত দেয়াল জুড়ে ভগ্ন মেরুদণ্ডের জলছাপ তাহলে নিশ্চয়ই সত্য, জ্ঞান, দর্শনের ক্ষুধা থাকত। তখন ওপরের সন্দেহগুলোর ভেতর থেকে যে- কোনো একটির প্রতিষ্ঠিত না হয়ে রেহাই ছিল না। কেন-না, ‘কোথা হইতে আসিতেছ’ কিংবা ‘কেন আসিয়াছ,’ এই দুটো প্রশ্নের ওপর ভর দিয়েই তো সভ্যতা এগোয়। প্রশ্ন দুটোর উত্তর সবাইকেই দিয়ে যেতে হয়। না দিয়ে রেহাই মেলে না।


    কিন্তু এখানে যেহেতু কখনও কোনো মিথ্যে বসত গড়তে সাহস পায়নি তাই সত্য এখানে অবাঞ্ছিত। যেহেতু সভ্যতা পেরিয়ে এই স্থান তাই এখানে আশা এবং হতাশা নামক শব্দ দুটো অকল্পনীয়। এখানে যেহেতু উপভোগ বলে কিছু নেই তাই পূর্বস্মৃতি এখানে ফেরার। এখানে সবাই একদিন পাখির ঠোঁটে, জানোয়ারের মলমূত্রে, নদীর স্রোতে, বাতাসের ডানায় ভর করে এসেছিল। তারপর থেকে রয়ে গিয়েছে। ব্যাস, এটুকুই। সুতরাং এরপর ওপরের সন্দেহগুলোর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কোনো দায় থাকে না। যেভাবে এখানে গাছপালা, কীটপতঙ্গ, জীবজন্তু, পাখিপাখলা, পরগাছা, নদী, বাতাস, মাটি, পাথর, বৃষ্টি, রোদ, ঝড় এখানে থাকে, লোকটাও সেরকমই। এখানে বরাবরই ছিল এবং থাকবে।


     


    কিন্তু ভবিষ্যতের ঘোষণা অত সহজ নাকি! মানুষ তো আসলে মানুষই। করোটির গঠন ভিন্ন। ভিন্ন তার কোশ, কলা, ক্রোমোজম আর জিন বৈশিষ্ট্য। সেসব এড়ানো অত সহজ নাকি!


    যখন কোনো সন্ধ্যায় বাতাসের বিপুল আকর্ষণে উদ্‌বেল হয়ে গাছগুলো শুরু করে দিত পরস্পরকে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা, যখন কোনো ঝিম দুপুরে মাছরাঙার ধ্যানী ঠোঁটের সামনে স্বেচ্ছায় নিজেকে তুলে দিত কোনো চপল মতির মাছ, যখন দীর্ঘদিন ঘাত সহ্য করে চলা মাটি মৃদু তরঙ্গের সামান্য আহ্বানে নেমে এসে নিজেকে মিশিয়ে দিত জলের সঙ্গে, যখন মাঝরাতের জ্যোৎস্নাকে চিতার শরীরে লুটোপুটি খেতে দেখে স্থবির হয়ে যেত কোনো ময়ূরী এবং তারপর নিঃশব্দে শিকার হয়ে যেত, সেই সব বিচিত্র সময়ে লোকটা শরীরময় অনুভব করত এক অবিরাম টানাপোড়েন। শুনতে পেত শিরা-উপশিরায় রক্তের হাততালি। মাথার ভেতর জেগে ওঠা এক শীতল অনুভূতি ক্রমশ উষ্ণ হতে হতে নামতে থাকত নীচে, আরও নীচে, তারপর গোড়ালি ছুঁয়ে সেই অনুভূতি ফিরতে শুরু করত মাথার দিকে। লোকটা যদিও চাইত এসব প্রশ্রয়কে অস্বীকার করতে কিন্তু সেইসব সময়ে কখনো-কখনো নদী খুলে দিত তার গোপন দরজা। নিরুপায় লোকটা তখন বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হত তার নিভৃত আশ্রয় ছেড়ে। হাঁটতে শুরু করত ভুলে যাওয়া গন্তব্যের দিকে। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যেতে চাইত সেখানে যেখানকার আকাশ অজানা কারণে রাঙা। বাতাস যেখানে পূতি গন্ধময়। কিন্তু পৌঁছানো হত না কোথাও কেন-না ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন উড়ে আসত এক নাম না জানা পাখি, যার ছিল অতিলৌকিক স্বর, যার প্রাজ্ঞতা ছিল পৃথিবীর চেয়েও সুপ্রাচীন, যার রুপোলি ডানায় ঢেকে যেত চরাচর।


    সেই মহাবিহঙ্গ লোকটার মাথার ওপর দিয়ে উড়তে উড়তে শুনিয়ে যেত কিছু বিচ্ছিন্ন শব্দমালা। লোকটা কান পেতে শুনত সেসব। বুঝতে চাইত, ওসব শব্দ কখনও কি শুনেছে কারুর কাছে! বুঝতে পারত না। শব্দগুলো মনে হত সংকেতের মতো কিন্তু পাখি তো রোজ একই কথা বলে না, তাহলে সংকেতগুলো বোধগম্য হবে কীভাবে!


    পাখি বলে—“কাল রাতে প্রবল নীল অত্যাচার আমাকে ছিঁড়ে ফেলেছে যেন


                    আকাশের বিরামহীন বিস্তীর্ণ ডানার ভিতর


                    পৃথিবী কীটের মতো মুছে গিয়েছে কাল।”   


            


       ‍ বলে—“এলোমেলো কয়েকটি বন্দুক-হিম নিঃস্পন্দ নিরাপরাধ ঘুম।”


     


         বলে—“মানুষকে স্থির-স্থিরতর হতে দেবে না সময়


                  সে কিছু চেয়েছে বলে এত রক্তনদী।”


     


         বলে—“যেখানে আকাশে খুব নীরবতা, শান্তি খুব আছে


                  হৃদয়ে প্রেমের গল্প শেষ হলে ক্রমে ক্রমে


                  যেখানে মানুষ


                  আশ্বাস খুঁজেছে এসে সময়ের দায়ভাগী নক্ষত্রের কাছে


                  সেই ব্যাপ্ত প্রান্তরে আমার দুজন।”


     


    লাগাতার এহেন অর্থহীন শব্দমালার অনবরত আঘাতে লোকটা বাধ্য হত প্রশ্ন করতে, “কে তুমি?”


    উত্তরে কখনও নিছকই হাসত সেই পাখি, উত্তর দিত না। কখনও পাঠাত সংকেত—


     


     “আমি সেই পুরোহিত—সেই পুরোহিত যে নক্ষত্র মরে যায়, তাহার বুকের শীত লাগিতেছে আমার শরীরে।”


     


    লোকটা জিজ্ঞেস করত, “কীসের টানে বারবার আস?”


    পাখি উত্তর দিত, “তোমার পাখনায় আমার পালক, আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন।”


    লোকটা এরপর ক্রুদ্ধ হত।


    —আমাকে যেতে দে বলছি।


    সেই ক্রোধকে বিন্দুমাত্র পরোয়া না করে পাখি নেমে আসত আরও নীচে, যেনবা লোকটার কাঁধে রাখতে চাইত হাত, বলত এরকম—


            “কেন চলে যেতে চাও মিছে


              কোথাও পাবে না কিছু


             মৃত্যুই অনন্ত শান্তি হয়ে


             অন্তহীন অন্ধকারে আছে


             লীন সব অরণ্যের কাছে।”


     


    এরপর লোকটার শরীর থরথরিয়ে কেঁপে উঠত। বহুদিন পর বুঝতে পারত, কাকে বলে ভয়। নিজেকে সাহসী প্রমাণ করতে হাতে তুলে নিত শুকনো ডাল, পাথর কিংবা কিছু একটা। অন্ধ আক্রোশে আঘাত করতে চাইত পাখিটাকে। কী আশ্চর্য, যে ছুটন্ত পশু কিংবা উড়ন্ত পাখিকে অনায়াসে ঘায়েল করতে সক্ষম ছিল সে কিনা ব্যর্থ “ত! পাখিটা হাসতে হাসতে উড়ে যেত। যেতে যেতে বলে যেত—       ‘


            “উৎসবের কথা আমি কহি নাকো


             পড়ি নাকো ব্যর্থতার গান


             শুনি শুধু সৃষ্টির আহ্বান


             তাই আসি।”


     


    এরপর পাখিটা ফিরে গেলেও লোকটার আর কোথাও যাওয়া হত না। আছড়ে পড়ত পাথুরে জমিতে। মাথা কুটে কুটে নিজেকে ততক্ষণ রক্তাক্ত করে যেত যতক্ষণ না হয়ে পড়ে সংজ্ঞাহীন। এভাবেই পড়ে থাকত দিন, সপ্তাহ, মাস, বছর। তারপর অঝোর বৃষ্টি এসে জ্ঞান ফিরিয়ে দিলে মাথা নীচু করে ফিরে যেত নিজের গুহায়।


    এই হল আখ্যানের মুখবন্ধ। মুখবন্ধ, কারণ যদি এতেই সবকিছু বলা হয়ে যেত তবে তো দায়িত্ব খালাস। বজায় রাখা যেত রহস্য গল্পের ধারাবাহিকতা। হাতের মুঠোয় থাকত জাদুবাস্তবতার চাবিকাঠি। কিন্তু মানুষ তো আসলে মানুষই। ভুল তো তার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ। নিজেকে ধ্বংস করার ভেতরই রয়ে যায় তার নির্মাণ সেৌন্দর্য। সুতরাং এরপর আখ্যানের মূলে প্রবেশ করাটা বাধ্যতামূলক।


    এক চাঁদনি রাতে লোকটার ঘুম ভেঙেছিল বাঁশীর সুরে। যদিও সে ততদিনে ভুলে গিয়েছিল কাকে বলে সুর, তবু অজানা এক আকর্ষণ ঘুম থেকে টেনে তুলেছিল তাকে। সেই প্রথমবার নদী মেলে ধরেনি তার গোপন দরজা। ক্ষিপ্ত হয়ে লোকটা লাথি মেরে দরজা খুলে বেরিয়ে পড়েছিল। এবার হাঁটা নয়, লোকটা দৌড়েছিল ঊর্ধ্বশ্বাসে। ছুটতে ছুটতে চলে এসেছিল সেইখানে যেখানে বিদ্ধস্ত চরাচর। দাউদাউ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে সবকিছু। বাতাস ভারী হয়ে আছে মাংস পোড়া গন্ধে। লোকটা তবু এগিয়ে চলেছিল কারণ আগুনের ওপার থেকে ভেসে আসা বাঁশির সুর ক্রমাগত তাকে আকর্ষণ করে চলেছিল।


    আগুনময় অঞ্চল পেরিয়ে যেতেই লোকটার চোখে পড়েছিল এক মোহময় সড়ক। যদিও লোকটা ততদিনে ভুলে গিয়েছে কাকে বলে মোহ, কাকে সড়ক তবু সুরের অমোঘ আকর্ষণে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছিল। যেতে যেতে পৌঁছে গিয়েছিল এক চৌমাথায়। এরপর কোন্‌দিকে? ঠিক তখনই চোখে পড়েছিল সেই মহাবিহঙ্গের ছিন্নভিন্ন শরীর। ডানা দুটো কাটা। চারপাশে অজস্র পালক, যেসব থেকে ঠিকরে বেরুচ্ছে সাত রঙা আভা।


    লোকটা পায়ে পায়ে গিয়ে দাঁড়ায় মহাবিহঙ্গের পাশে। লোকটাকে দেখে হেসে ওঠে মহাবিহঙ্গ। বলে—


                “আমরা যদি রাতের কপাট খুলে ফেলে এই পৃথিবীর নীল সাগরের ক্ষারে


                প্রেমের শরীর চিনে নিতাম চারিদিকের রোদের হাহাকারে


                হাওয়ায় তুমি ভেসে যেতে দখিন দিকে—


                যেই খানেতে যমের দুয়ার আছে


                অভিচারী বাতাসে বুক লবণ লুণ্ঠিত হলে আবার আমার কাছে


                উৎরে এসে জানিয়ে দিতে পাখিদেরও—সাদা পাখিদেরও স্খলন আছে।


     


    লোকটা যথারীতি এই সংকেতেরও রহস্য উদ্ধার করতে পারে না, তবু বুকের কাছে জড়ো হয়ে আসে দুই হাত। লাগামহীন অশ্রু ঝরে পড়ে দু-চোখ বেয়ে। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে উদ্ভট শোকপ্রস্তাবের মতো।


    আচমকা প্রবল বাতাস এসে কোথায় যেন উড়িয়ে নিয়ে যায় সেই মহাবিহঙ্গের শরীর। লোকটার শরীর ফের সাড়া দেয় এতক্ষণ ভুলে থাকা অজানা আকর্ষণে। লোকটা পা বাড়ায়। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় পা। লোকটা হাত বাড়ায়। গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায় হাত। লোকটা এরপর হাঁটুর ভরসায়, বুকের ভরসায়, কোমরের ভরসায় এগোতে চায় কিন্তু সমস্ত অবয়ব গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। ফের ধেয়ে আসে বাতাস। বাতাস সেই সেব রেণু ছড়িয়ে দেয় ঘাসে ঘাসে।  


    এরপর লোকটার অস্তিত্বের আর কোনো সজীব প্রমাণ থাকে না। থাকে শুধু রেণু বুকে ধরে থাকা ঘাসের অপেক্ষা।


    কতদিন?


    যতদিন না আবার বাতাস উষ্ণ হয়, সঙ্গে করে না আনে ঝড়-বৃষ্টি, যতক্ষণ না শুরু হয় মহাপ্রলয়, যতক্ষণ না উলটে-পালটে নিজেকে ভিজিয়ে শীতল না হয় পৃথিবীর উত্তপ্ত শরীর, যতক্ষণ না ফিরে আসে নতুন প্রাণের আবহ, যতদিন না জন্ম নেয় নতুন নদী, মহাসমুদ্র, বীজ, চারা, উদ্ভিদ, বৃক্ষ, অ্যামিবা, মানুষ—ততদিন। 


    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক

    পড়তে থাকুন, শারদ গুরুচণ্ডা৯ র অন্য লেখাগুলি >>
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ২৬ অক্টোবর ২০২০ | ৩২৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব ব্যানার্জি | 2401:4900:3a18:9ec9:c34a:827b:25bb:df97 | ২৬ অক্টোবর ২০২০ ১২:২৫99069
  • কি যে বলি... 


    'আমি চলিলাম যেথা নেই নাম


    যেখানে পেয়েছে লয় সকল বিশেষ পরিচয়।


    নাই আর আছে, একাকার হয়ে গেছে।'


    খুব ভালো লাগলো।

  • নীলিম গঙ্গোপাধ্যায় | 2401:4900:382d:775e:ac8e:eeeb:cf7a:1f64 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১১:৪৪99150
  • অলোক গোস্বামীর 'একজন' একটি উচ্চমার্গীয় লেখা। তিনি যেভাবে লোককথা, মিথ ,বনাঞ্চল , জঙ্গলের জীবজন্তু , পশুপাখী নিয়ে বিন্যাস করেছেন ,এবং কবিতার ব্যবহার করেছেন ,  এবং জল বাতাস বিদ্যুতের সমাহার এনেছেন,তা এক অভাবনীয় উচ্চতায় নিয়ে গেছে লেখাটিকে।     

  • অমর মিত্র | 45.250.245.130 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৬:৩৪99180
  • অপূর্ব।  এই গল্পটি  সৃষ্টিছাড়া।  আমার মনে হয়েছে  এক ঘোরের ভিতরে লেখা। জীবন দর্শনে পূর্ণ।     

  • মলয় মজুমদার | 103.10.116.128 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০০99190
  • অলোক গোস্বামীর আরো একটি অনবদ্য সৃস্টি .।অসাধারণ কবিতার ব্যবহার । দারুণ । 

  • রেখা রায় | 2409:4060:3:ed8d:1a51:bd98:d6c9:c069 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৩৭99195
  • বর্তমান পর্রজন্মের কথাকারদের মধ‍্যে অলোক গোস্বামী একটি ব‍্যতিক্রমী নাম। নিজস্ব শৈলীতে তিনি কথার জাল বুনে চলেন। আলোচ‍্য "একজন"গল্পটিও তার ব‍্যতিক্রম নয়। রূপকথার স্টাইলে শুরু করে গল্পেের ভিতরে গল্প রচনা করেছেন। অনবদ‍্য 

  • শর্বরী চৌধুরী | 2402:3a80:a1e:eb84:0:64:784a:8901 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৯:০০99198
  • অলোক গোস্বামীর গদ্যটি অসাধারণলাগল। অদ্ভুত এক বিপন্নতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় লেখাটি। অস্তিত্বসংকটে পড়ে যাই। লেখককে কুর্নিশ। 

  • শর্বরী চৌধুরী | 2402:3a80:a1e:eb84:0:64:784a:8901 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৯:০০99199
  • অলোক গোস্বামীর গদ্যটি অসাধারণলাগল। অদ্ভুত এক বিপন্নতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় লেখাটি। অস্তিত্বসংকটে পড়ে যাই। লেখককে কুর্নিশ। 

  • | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৯:১৬99202
  • অদ্ভুত গল্প এটা। তিনবার পড়েও কেমন একটা অতৃপ্তি রয়ে যাচ্ছে যেন আরেকবার পড়লেই আরো কিছু পাব। 

  • তীর্থঙ্কর নন্দী | 103.211.20.214 | ২৭ অক্টোবর ২০২০ ২১:১০99212
  • বেশশশ অন‍্যরকম গল্প পড়লাম অলোকের।‌।।।।।।।।।।।।।।।।।

  • শিখর রায় | 47.15.21.64 | ২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩০99259
  • এরকম গল্প কত কত দিন, দশক, শতাব্দীতে একটাই জন্মায় । হ্যাঁ, জন্মায় ই বললাম । কারণ এদের লেখা যায় না । সৃষ্টি হয় । অলোকের আর সব গল্পের থেকেও নিজগুণে নিজেই স্বতন্ত্র হয়ে গিয়েছে এ গল্প । আমি অলককে এ গল্পের জন্যে নোবেল দিয়ে দিলাম ।

  • সুমিতা ঘোষ চক্রবর্তী | 2402:3a80:a44:d5f9:0:58:281a:7401 | ২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৬:৪০99269
  • আমার পাখনায় তোমার রক্তের স্পন্দন......শিকড় ছেঁড়া মাটির টান,পুরাণ আর বাস্তব ......অনবদ্য।


    লেখক আরো লেখা উপহার দাও।

  • Avi Samaddar | ২৮ অক্টোবর ২০২০ ১৭:৫৯99276
  • অকল্পনীয়। পড়া শেষে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়।  

  • একলহমা | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ০৬:৪৮99307
  • খানিকক্ষণ আগে পড়ে এসেছি,  ভিস্যুয়াল কোটেশন নিয়ে তার লেখায় দেবরাজ দেখিয়েছেন কিভাবে পূর্বসুরীর সৃষ্টকর্ম থেকে নেওয়া উদ্ধৃতি বর্তমান স্রষ্টার কাজটিকে বা কাজের অংশটিকে একটি যথাযথ, প্রার্থিত মাত্রা কি মঞ্চ পাইয়ে দেয়। এনে দেয় প্রয়োজনীয় প্রেক্ষিতটি। এই লেখায় অলোক সেইরকমভাবেই কবিতার টুকরোগুলিকে ব্যবহার করেছেন - সার্থকতার সাথে। অনেকগুলো ক্যানভাসকে একসাথে জুড়েছে ঐ উদ্ধৃতিগুলি। ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়া রশ্মিগুলি কবিতার লেন্সের ভিতর দিয়ে গুছিয়ে এসে কেন্দ্রীভূত হয়। আমরা বুঝে যাই, মুক্তি নেই, লোকটার মুক্তি নেই, পাঠকের মুক্তি নেই। বিষণ্ণতায় ডুবে যাই আমরা। গভীর গভীরতর বিষণ্ণতায়। 

  • দীপঙ্কর মিত্র। | 45.123.219.95 | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১০:২৩99314
  • অলোক গোস্বামীর অলোকিত লেখায় ফের মুগ্ধ হলাম।এটি যেন এক বিষন্ন খন্ডচিত্রাবলী।স্তব্ধতায় ভরা। এমন আরও গল্প পাঠের জন্য মুখিয়ে রইলাম।

  • পৌলোমী | 117.247.116.48 | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১০:৫৯99316
  • একদম অন্যরকম। শুরু এবং শেষ ইউনিক। এককথায় অসাধারণ। কতখানি সাধনা করলে এমন লেখা সৃষ্টি করা যায়, জানি না।

  • গৌতম দে | 202.142.107.89 | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১২:৩১99319
  • তিন তিনবার পড়লাম গল্পটি।  মুগ্ধ হলাম।সাধারণত অলোক গোস্বামীর অন্যান্য গল্পের মতো এই গল্পের নির্মাণ নয়। বিপন্ন সময়ের প্রেক্ষিতকে অত্যন্ত মুন্সীয়ানার সঙ্গে ফ্যান্টাসির হাত ধরে গল্পের কাঠামোতে মাটি রঙের সুচারু আঁচড় কেটেছেন। শেষপর্যন্ত লোকটির গল্প লোকটির বৃত্তে ধরা দেয়নি। এক কালজয়ী বিবৃতে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিল্প কবিতার মতো হয়ে উঠেছে।  এই গল্পটি লেখকের একটি অন্যতম গল্প। ধন্যবাদ লেখককে।

  • অনিন্দিতা গোস্বামী | 223.191.1.242 | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৪২99326
  • খুব সুন্দর লাগলো । এ গল্পের কাঠামোই ভিন্ন,গদ্য মায়াময়।  

  • Trishna Basak | 2409:4060:2e8e:6ac4::56ca:7f0d | ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১৮:০৯99336
  • মহাজাতকের গল্প। অসাধারণ।

  • Anushree pal | 2402:3a80:a18:3705:f8f8:9173:7551:f203 | ৩০ অক্টোবর ২০২০ ১৯:৩৬99434
  • ভীষণ রখম আলাদা একটা গল্পো , খুব ভালো ।

  • অরুণাভ ভৌমিক। | 139.5.229.45 | ৩১ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৪99459
  • পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল এ জীবন যেন এক কার্নিভাল। মনে হচ্ছিল এ পৃথিবীও যেন জীবনের মত গোল যার দুপাশ কমলা লেবুর মত চাপা। যেন এ জীবনে কোন সরলরেখা ছিল না। কিংবা ছিল কিন্তু এখন উধাও। এ জীবন শুধুই কঠিন জ্যামিতির জটিল অংকের ছন্দবদ্ধ ছিল না। এ লেখা যেন ভ্যাবাচ্যাকা সংস্কৃতির প্যাঁচামুখ। অভ্রান্ত সত্য মন্ত্রের মত উচ্চারিত। অলক এখানে ভাষাতেও নিরীক্ষা প্রবণ। মেদহীন প্রত্যয়ী ভঙ্গি দৃঢ় ও ঋজু। বাক্যবন্ধ উজ্জ্বল। এবং গতিশীল। উপল ব্যথিত গতি নয়। তির্যক ব্যঙ্গে কৃত্রিমতা নেই। এ লেখা বলে জীবনের হাতে তুলি কিন্তু প্যালেটে আজ আর তেমন রঙ কই!

  • Arpita Goswami Choudhury | 2402:3a80:1f6c:ac2f:fe63:1c38:215f:7927 | ৩১ অক্টোবর ২০২০ ২১:৫৮99469
  • অসম্ভব ভালো  গল্প। কোথায় থেকে লেখক কোথায় নিয়ে যান তা আঁকাবাঁকা পথ হারানোরই আখ্যান যেন। এক হয়ে যায় মানুষ প্রকৃতি মানুষের তথাকথিত সভ্যতা।  পাঠক হারায় যাদুর জগতে আর বাস্তবে কি ফেরার পথ থাকে ?  সে কথা না হয় বললামই না।  সে তো শুধুই অনুভবের বিষয়। অনুভবেই থাকুক।         

  • i | 220.245.64.27 | ০৮ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৩৫99743
  • আমি একজন কবিকে দেখলাম- মাথার মধ্যে রক্তের মধ্যে জীবনানন্দ -

  • সুজয় চক্রবর্তী | 223.233.30.100 | ০৮ নভেম্বর ২০২০ ২১:৫১99775
  • পড়লাম দাদা। এ লেখা লিখতে 'এলেম' লাগে। এ 'অলোকীয়' স্টাইল। পড়ছি আর ভাবছি এ লেখার রসদ পেতে আপনাকে কতটা বাস্তব অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে! আপনার কলম বাংলা সাহিত্যের অহংকার।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন