এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বাকিসব  মোচ্ছব

  • হৈমন্তী দিদিমণি বড় বিপাকে পড়েছেনঃ ছোটগল্প

    রঞ্জন
    বাকিসব | মোচ্ছব | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ | ৯৪৮ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • হৈমন্তী দিদিমণি বড় বিপাকে পড়েছেন

    “গুরু কাঙাল জানিয়া পার কর”

    হৈমন্তী দিদিমণি বড় বিপাকে পড়েছেন| কতবার করে বলেছেন যে উনি অমন বেয়াড়া ছাত্রকে পড়াবেন না| কিন্তু ভবি ভোলে না যে!
    গত শনিবারেই উনি আবদুলকে বলে দিয়েছেন-- লেখাপড়ায় মন নেই| আওয়ারাগর্দি করে ঘুরে বেড়াস| কেন বাড়ির লোকজনকে জ্বালাচ্ছিস? যা‚ পোর্টার খোলি কি তিতলি চৌকের কাছে একটা পান ঠেলা খুলে রোজগারপাতি কর|
    ছেলেটা কিছু বলে না| দরজার কাছে মাথা নীচু করে দুহাত কোলের কাছে জড়ো করে দাঁড়িয়ে থাকে|
    হৈমন্তীর পিত্তি জ্বলে যায়|
    -- না:‚ তোকে দিয়ে পান দোকানও হবে না| বন্ধুবান্ধবরা ওখানেই আড্ডা দিতে আসবে| ধারে বিড়ি ফুঁকবে‚ দুটো মাস যাবে না‚ দোকান লাটে উঠবে|
    আবদুল একবার চোখ তুলে তাকায়| গরুর মত অলস ড্যাবডেবে চাউনি|তারপর মাথা নীচু করে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে বাঁ-পায়ের নখ ঘষতে থাকে|
    --তুই নিজেও কম নোস| এই বয়সেই বিড়িপাত্তি আর গুটকার নেশা ধরেছিস| কালে কালে আরও হবে| বইয়ের পাতা খোলা তো দূরস্থান‚ আদ্দেক বইয়ের তো কোন হদিস নেই| যা‚ দূর হয়ে যা‚ তোর মত ধেড়ে ছেলে আমার অন্য ছাত্রদের খারাপ করে দেবে|
    আবদুল এর কোন হেলদোল নেই|
    হৈমন্তী এবার থতমত খেয়ে ভাবতে লাগলেন--অত: কিম? মেজেতে মাদুর পেতে ট্যুইশন পড়তে বসা জনা-পনের বাচ্চা মুচকি মুচকি হাসছে|
    --- যাচ্ছিস না কেন?
    -- দিদি বলেছে আপনার পায়ে ধরে মাপ চাইতে‚ আপনি তাড়িয়ে দিলে আর ঘরে ঢুকতে দেবে না|
    হৈমন্তী ফাঁপরে পড়লেন|

    বিলাসপুর ছত্তিশগড়ের দ্বিতীয় বড় শহর| একসময় দক্ষিণ পূর্ব রেলের ডিভিশনাল কোয়ার্টার হিসেবে ভারতের ম্যাপে বিশেষ জায়গা দখল করেছিল| ইংরেজ জমানা থেকে এখানে গড়ে উঠেছিল এক ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল| মূলত: রেলের কর্মচারিদের ছেলেপুলেদের জন্যে| এখন মূল শহর থেকে অন্য ছাত্ররাও ভর্তি হয়| রেলওয়ে কলোনির কর্মচারিদের ভেতরে স্পষ্ট শ্রেণীবিভাগ| সেই হিসেবে গড়ে দেওয়া হয়েছে বড়‚ মেজো‚ সেজ ‚ ছোট --নানান মাপের কোয়ার্টার| লাল ইঁটের রং আর তারের জাল দিয়ে ঘেরা বারান্দা| স্কুলের বয়েস একশ ছাড়িয়ে গেছে| প্রতিযোগিতায় নামা নতুন নতুন মিশনারী স্কুল একে পেছনে ফেলে দিয়েছে| তবু এ টিঁকে আছে| টিঁকে আছে দুটো কারণে| প্রথমটি যদি হয় স্কুলের নামী শিক্ষকের ব্যাচ‚ দ্বিতীয়টি এর হকি টিমের ঐতিহ্য|

    হকি যে জাতীয় খেলা তা বিলাসপুরের রেল এলাকায় এলে বোঝা যায়| মূল শহরে হকি কবেই উঠে গেছে‚ ওখানে রমরমিয়ে চলে ক্রিকেট‚ স্টেডিয়ামে হয় রণজির ম্যাচ| পৃষ্ঠপোষকতায় মারাঠি সমাজ| এরা বর্গি আক্রমণের সময় ভাস্কর পন্ডিতদের মত বহু দু:সাহসী যোদ্ধাদের রিসালাদারদের বংশাবতংস|
    এদিকে তারবাহার এলাকার রেলওয়ে গেট থেকে শুরু রেলের এলাকা‚ এখানে পুলিস ও আলাদা| এখানকার ছোট স্টেডিয়ামে হয় সুব্রত কাপ ও ইন্টাররেলওয়ে ফুটবল ও হকি| পৃষ্ঠপোষকতায় বাঙালী ও তেলুগু সমাজ| এখান থেকে বেশ কয়েকজন জাতীয় স্তরে হকি খেলেছেন|

    শহরের দুই এলাকার মধ্যে একটা চাপা রেশারেশি রয়েছে| চাটাপাড়ার আর এস এস এর স্বয়ংসেবক তামসকর এর থিসিস ছিল যে মূল শহরে বিজেপি- কংগ্রেস ফিফটি-ফিফটি| কিন্তু রেলে এলাকার বহিরাগত বাঙালীর দল করে বামপন্থী ইউনিয়ন, আর ভোট দেয় কংগ্রেসকে | এরাই হয়ে যায় ডিসাইডিং ফ্যাক্টর‚ বুঝলেন না?

    (দুই)
    বাবলু ওরফে লাল মুহম্মদ বন্ধুদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়| লম্বা একহারা পেটানো চেহারা| অখিল ভারতীয় রেলওয়ে স্পোর্ট্স এ জুনিয়র বিভাগে ভালো নাম | মূলত: স্প্রিন্টার‚ তবে হকিতে বিলাসপুরের সেরা গোলকিপার| শর্ট কর্নার আটকাতে দক্ষ; সেবার রাজনন্দগাঁও দলের নামকরা হিটার গণেশ তির্কির পেনাল্টি হিট আটকে দিয়ে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল|
    কিন্তু ওর জনপ্রিয়তার আসল কারণ হল ও বন্ধুদের জন্যে সব করতে পারে| পঙ্গা নিতে পারে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের সঙ্গে|

    সেবার ক্লাস নাইনের রাজেশ হিরওয়ানি পম্পাকে চিঠি দিয়ে ধরা পড়ে যায়| পম্পা বার খেয়ে ওর সহেলি সুনীতাকে দেখিয়ে ছিল| কসম খাইয়েছিল কাউকে না বলতে| কিন্তু সুনীতার বইয়ের ভাঁজ থেকে চিরকুট ওর দিদি ও মায়ের কাছে পৌঁছে যায়| মাতাশ্রী পড়োশি পরিবারের এবং নিজের মেয়ের সামাজিক ও নৈতিক হিতসাধনে কৃতসংকল্প হয়ে সেটি পৌঁছে দিলেন পম্পার বাবা-মার হাতে|
    আর যায় কোথা? তারবাহার চৌকের মিষ্টির দোকানের মালিক পম্পার বাবা হিটুমল ঘিটুমল অগ্নিশর্মা হয়ে রাজেশের বাড়িতে চড়াও হলেন| রাজেশের বাবা হাওড়া-মুম্বাই মেল ট্রেনের ড্রাইভার| ডিউটি থেকে ফিরবেন তিনদিন পরে|
    হিটুমলজী পাড়ার কিছু বয়স্ক লোকজন ও ছেলেছোকরা জড়ো করে রাজেশের মায়ের অনুনয় -মিনতি অগ্রাহ্য করে দোষী ছেলেটিকে মারতে মারতে নিজের কোয়ার্টারে আটকে রাখলেন|

    ওর চোটপাটের সামনে মেয়ে পম্পা কাঁদতে কাঁদতে বলল-- ও কিছুই জানে না| রাজেশ ভাইয়া সেদিন স্কুল যাওয়ার পথে জোর করে চিরকুট গুঁজে দিয়েছিল| না না; শুধু হাত ধরেছিল‚ ঐ কাগজটা দেওয়ার সময়| আর কিছু না|
    শেষে হিটুমলজি মেয়েকে দিয়ে একটি বয়ান লিখিয়ে তারবাহার থানায় কম্প্লেইন করে রাজেশকে লক আপে রাত্রিবাসের ব্যবস্থা করালেন| হেড কনস্টেবলের হাতে একটি পাত্তি ধরিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলেন যেন গুন্ডা মাওয়ালী ছোকরাটিকে 'কুছ লাথ-মুক্কা" সহযোগে মেরামত করা হয়|

    কিন্তু‚ বিধি বাম| এসব খবর এলাকায় দ্রুত ছড়ায়|

    ঘন্টা দুই পরে লাল মুহম্মদ ওরফে বাবলু‚ আনসারি উকিল ও প্রায় শ'খানেক ছেলেপুলে নিয়ে থানা ঘেরাও করে| উকিল জানতে চান কোন আইনের বলে একটি নাবালক ছেলেকে ওর বাড়িতে ঢুকে ওর বাবার অবর্তমানে তুলে আনা হয়েছে? উনি পাল্টা এফ আই আর দায়ের করাতে চান হিটুমল ঘিটুমল এর বিরুদ্ধে| অভিযোগ-- পুরুষ সদস্যের অবর্তমানে জোর করে বাড়িতে ঢোকা‚ মহিলার সংগে দুর্ব্যবহার করা‚ মারপিট এবং বেআইনি ভাবে নাবালককে বলপূর্বক নিজের বাড়িতে বন্দী করে রাখা‚ মিথ্যা অভিযোগ করা --ইত্যাদি|
    ঘটনার জল বাঁধা পথেই গড়াল| আর রেলওয়ে এলাকার উঠতি মেয়েদের মধ্যে বাবলুর হাইট আরও উঁচু হল|
    সেসব পুরনো কথা|

    আজকের আড্ডায় স্ট্যানলি একটা চুট্কুলা শোনাচ্ছিল|
    --বুঝলি‚ একবার বজরঙ্গবলী ও আল্লার মধ্যে ফ্রেন্ডলি কম্পিটিশন হল-- কে কত বেশি শক্তিধর?
    তাতে রেফারি হলেন যিশু| ঠিক হল দু'জন একে অপরকে একটা করে ঘুষি মারার চান্স পাবে| যিশু টস করলেন| জিতলেন আল্লা| প্রথম ঘুষি উনিই মারবেন| সে ঘুষি খেয়ে বজরঙ্গবলী হাওয়ায় উড়ে গেলেন| উড়ে যেতে যেতে কোথায় গিয়ে পড়লেন কেউ জানে না| শেষে সেখান থেকে ফিরে এলেন প্রায় একবছর পরে| সবাই বলল--দুয়ো! দুয়ো!

    এবার বজরঙ্গবলীর হিট|
    উনি 'জয় শ্রীরাম্' বলে এমন একটা আপার কাট লাগালেন যে আল্লা কোথায় গিয়ে পড়লেন কেউ জানে না| আজও সকাল সন্ধ্যায় সবাই তাঁর ফিরে আসার জন্যে হাঁটু গেড়ে ডাকতে থাকে|
    সবাই হেসে উঠল|

    এবার বাবলু ওরফে লাল মুহম্মদের পালা|
    ও মাথা টাথা চুলকে বলল-- এই যে আমার বন্ধু তিওয়ারি‚ ও সেদিন একটা কবিতা‚ সরি সরি তুকবন্দী‚ শোনাচ্ছিল | ব্যাটা আমাকে বলল-- শুন বে পাঠান‚
    তেরে দিল পে গঠান|
    ( শোন রে পাঠান ঢিট‚
    তোর মনের মধ্যে গিঁট |)
    তো আমি পাল্টা দিলাম-- শুন বে পন্ডিত‚
    তেরে গাঁড় পে খাটিয়া|
    ( শোন রে ব্যাটা বামুন‚ তোর পোঁদে খাটিয়া|)
    তিওয়ারি বলল-- এটায় তো ছন্দ মিলল না| পন্ডিতের  সঙ্গে খাটিয়া?
    --আরে ছন্দ মিলুক না মিলুক‚ আমি তো তোর পেছনে খাটিয়া বিছিয়ে দিলাম|
    কয়েকজন সিটি বাজিয়ে দিল|

    স্ট্যানলি বলল--মর তোরা দুটো হিন্দু-মুসলমান করে| আরে কাজের কথা বল- বাঙালী বহিনজির কাছে যে টিউশন পড়তে গিয়েছিলি তার কি হল?
    --- ভাগিয়ে দিয়েছেন‚ আমাকে পড়াবেন না|
    -- আরে তোকে বলেছিলাম না যে গিয়ে তোর দিদি কামারুন্নিসা আপার নাম কর; পায়ে ধর| তো?
    --পারলাম না রে| গতবারের সেই ঘটনাটার পর থেকে আর সাহস হল না|
    আড্ডায় নতুন এসেছে পিন্টু| সে জানতে চাইল কী সেই ঘটনা? আবার হাসির কোরাস|

    (তিন)
    বাবলু কিছু বলে না| লজ্জা লজ্জা মুখ করে মিটিমিটি হাসে|
    -- কী রে? সবাই গুঙ্গা-বহেরা (বোবা-কালা) হয়ে গেলি যে!
    শেষে তিওয়ারি বলে-- এটা স্ট্যানলি আর বাবলুর কিসসা | ওরাই বলুক|
    -- গতবছর ফাইনাল পরীক্ষার সময় বহোত বড়া লফরা | একজন বাংগালী ম্যাম ভিন স্টেট সে ট্রান্সফার হয়ে এসেছেন| সে ভারি তোপ| জমিন পর চলনেওয়ালি নহীঁ‚ আসমাঁ মেঁ উড়নেওয়ালি|
    -- আচ্ছা? দেখনে পে?
    -- একদম ফটাকা‚ লাল মির্চি| একবার দেখ লো তো দিল গার্ডেন-গার্ডেন হো জায়ে|
    -- আসল কথায় আয়‚ তোদের সঙ্গে কোন পঙ্গা?
    --দেখ না ইয়ার! এইসা গার্ড দেনে লগে কি‚ ক্যা বাতাউঁ? রোজ চিট পকড়নে কে বহানে মেঁ হমলোগোঁ কো বেইজ্জত করনে লগে| গর্দন ঘুমানে তক নহীঁ দেতী থী|

    ওসব ঠিক ছিল| কিন্তু সেদিন স্ট্যানলির পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটা মানিক্চন্দের প্যাকেট আর কিছু চিট বের করল; ওর খাতা কেড়ে নিল| ও যত বলে যে ম্যাম‚ এগুলো হিন্দি পরীক্ষার চিট‚ আজ তো অংক‚ তো উনি শুনবেন না| চিট ইজ চিট! আসলে খড়গপুর থেকে আসা ম্যাম হিন্দি অক্ষর পড়তে পারতেন না| ভেবেছিলেন ওসব হিন্দিতে লেখা অংকের চিট|
    সেদিন রাত্তিরে আমাদের ঠেকে সবাই বলল--ইসকী জাত কী বৈলা মারুঁ! সবক শিখাকে ছোড়েঙ্গে|
    হ্যাঁ, এই নয়ী-নবেলী বাঙ্গালী বহেনজিকে শিক্ষা দিতে হবে; এখানকার, মানে রেলওয়ে কলোনির আদবকায়দার সঙ্গে পরিচয় করাতে হবে।
    কিন্তু কী করে? কেউ বলতে পারল না| ম্যামের কোন বয়ফ্রেন্ড নেই যে আওয়াজ দেব| থাকেন বাবা-মার সন্গে| টিউশন করেন না যে কম্প্লেইন করব| তখন আমাদের ক্যাপ্টেন বাবলু ফিল্ডে নামল‚ বলল-- অব মেরে উপর ছোড় দে|
    -- আরে এখনও তিন তিনটে পেপার বাকি| তোর ভরসায় থাকলে তো এবছর ক্লাস টেনেই থাকতে হবে|
    --রুক না ইয়ার! পরের পেপারের দিন মজা দেখবি| সির্ফ এক ব্লেড কী কমাল |
    -- মানে? তোর মতলবটা কী? ওঁর গালে ব্লেড চালাবি? এসবে আমি নেই|
    -- নহীঁ ইয়ার| ইতনা বেদর্দী নহীঁ হুঁ| এখন কিছু বলব না|

    পরের দিন সোশ্যাল সায়েন্স| কোশ্চেন পাস করার মত | আমরা লিখছি কম‚ আড়চোখে বাবলুকে দেখছি| ও খুব মন খারাপ করে বসে আছে‚ পাতা ওল্টাচ্ছে‚ লিখছে না| নতুন ম্যামের সন্দেহ হল| উনি যেই গিয়ে ওর পাশে দাঁড়ান ‚ ও হড়বড়িয়ে লেখা বন্ধ করে দেয়| উনি একটু এগিয়ে গেলে প্যান্টের ডান পকেটে হাত ঢোকায়‚ আর উনি তাকালে হাত বের করে নেয়| এই চুহা-বিল্লি খেল কিছুক্ষণ চলল| তারপর উনি এসে বাবলুর পাশে দাঁড়ালেন| কড়া সুরে বললেন-- পকেটে যা আছে বের করে দাও‚ তারপর লিখতে দেব|
    হমারা ইয়ার পুরা ডিনাইয়াল মোড মেঁ|
    শেষে উনি খপাৎ করে ওর ডান পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে চমকে উঠলেন| মুখের রং পাল্টে গেল| চোখে আগুন ঝরিয়ে বললেন-- বদতমিজ‚ ডার্টি‚ ইতর কোথাকার! তারপর বাথরুমে হাত ধুতে গেলেন|
    হয়েচে কি‚ বাবলু ব্লেড দিয়ে ওর পকেটের ভেতরের কাপড়টা কেটে রেখেছিল| ব্যস|


    বাবলুর প্রিন্সিপালের কেবিনে এত্তেলা হল| ও সাফাই দিল-- গরীবের ঘর‚ পুরনো প্যান্টের পকেট ছেঁড়া‚ ও কী করবে? ম্যাম কেন ওর কথা বিশ্বাস করেন নি?
    নতুন ম্যাম গার্ড দেওয়ার ডিউটি ছেড়ে দিলেন| আমরা বাবলুকে দোসা ও কফি খাওয়ালাম|
    কিন্তু সন্ধ্যে বেলা হৈমন্তীম্যামের বাড়ি পড়তে গেলে উনি ওকে টেনে এক থাপ্পড় কষিয়ে দূর করে দিলেন|

    (চার)
    সাতসকালে কে এলো আবার! হৈমন্তী একটু বিরক্ত ভাবে দরজার দিকে এগোলেন| দু'বার চা খাওয়া হয়ে গেছে| এখন ওঁর দৈনিক পত্রিকার পাতায় চোখ বোলানোর সময়| আর রেডিও সিলোনে বাজবে 'সংগীত সরিতা' বা ক্ল্যাসিক্যাল রাগের পরিচয় নিয়ে একটি ছোট্ট মিষ্টি প্রোগ্রাম| এরপরে আসবে কাজের মাসি সামাখ্যা| ততক্ষণে উনি স্নান করে দশ মিনিটের জন্যে পূজোয় বসবেন| এ'সময় কেউ ওঁর দরজায় কড়া নাড়ে না|
    তারপরে আসে এক ব্যাচ ছাত্র-ছাত্রী|
    উনি পয়সা নিতেন না| পরে দেখলেন পকেট থেকে কিছু না খসালে টিচার‚ ডাক্তার বা ভগবানের উপর মানুষজনের ঠিক বিশ্বাস হয় না | বাপ-মার কোন হেলদোল দেখা যায় না| তাই ইদানীং উনি মাসে একশ টাকা করে চার্জ করেন| এরপর আছে রেলওয়ে স্কুলে যাওয়া| সেখানে উনি ডে-সেকশনের ইংরেজির সিনিয়র টিচার; রাশভারি| কলেজে পড়ার সময় একটি রেল দুর্ঘটনায় বাবাকে হারিয়েছিলেন| তারপর মা ও ছোট দুই ভাইবোনের দায়িত্ব সামলাতে রেলের স্কুলে জয়েন করলেন| চাকরি করতে করতেই ইংরেজিতে এম এ ও পরে বি এড | উঁচু ক্লাসে ইংরেজির দায়িত্ব পেলেন| জুটলো একটু ভাল টু-বেডরুম কোয়ার্টার|
    ভাইবোনেরাও দিদির পরিশ্রম এবং ভালোবাসার মর্যাদা দিয়ে ভালো ভাবে পাশ করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেল| দুজনেই সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে অন্য জেলায় বদলি হয়ে গেল|
    এইসবের মধ্যে যখন মা ও দূর সম্পর্কের মামা-মাসিরা ওঁকে বিয়ের জন্যে পেড়াপিড়ি করতে লাগলেন‚ তখন হৈমন্তী এড়িয়ে গেলেন| মা জানতে চাইলেন মেয়ের আলাদা করে পছন্দের কেউ আছে কী না! কোন সহকর্মী বা অন্য কোন চেনাজানা কেউ? হৈমন্তী নিরুত্তর|

    আসলে উনি পরিচিত অভ্যস্ত জীবনযাত্রায় কোন বদল আনতে উৎসাহ বোধ করছিলেন না| ভেতরে ভেতরে এই সঞ্চিত অনীহার মুখোমুখি হয়ে নিজেই বেশ অবাক হলেন| তারপর উনি সব ওজর আপত্তি খারিজ করে ভাইবোনের বিয়ে দিলেন| মা তার আগেই গত হয়েছেন| সময়ের নিয়মে ভাইবোনদের প্রত্যন্ত জেলার শহর থেকে নিজেদের ঘর সামলে দিদিকে দেখতে আসা কমতে কমতে ভাইফোঁটা আর দোলপঞ্চমীতে থমকে গেল|

    এখন হৈমন্তীর সিঁথিতে ও কানের পাশে ক'গাছি পাকা চুল আর ব্যাংকের পাসবুকে কিছু টাকা| তবে বছরেব দু-একবার রেলের পাসে দু' একজন সহকর্মীর সম্গে পুরী বা মহাবালেশ্বর বেড়াতে যান|
    শক্তপোক্ত কড়া ধাতের মহিলা| কাউকে বেচাল দেখলে মুখের উপর দু'কথা শুনিয়ে দিতে কোন দ্বিধা নেই| প্রিন্সিপাল থেকে রেলের ডি আর এম অফিস-- সবাই তাঁকে সমঝে চলে|

    মাঝে মাঝে উত্তুরে হাওয়ায় একটু শীত শীত করে| পাশের বাড়ি থেকে ছোট বাচ্চার কান্না বা একটু বড় ছেলেমেয়েদের হৈ চৈ কানে আসে| হটাৎ টের পান-- ওঁর প্রত্যেকটি দিন ঠিক আগের দিনের মতন| বা আগামী কাল নতুন কিছু ঘটবে না; কোন ম্যাজিক হবে না|

    এই সময় তো কারও আসার কথা নয়! তবে কে বারবার কড়া নাড়ছে? বিরক্ত মুখে দরজা খুলে উনি অবাক| নার্সের পোশাকে এক অপরিচিত বছর পঁয়তিরিশের মহিলা|
    ওঁর কোঁচকানো ভ্রূ দেখে মেয়েটি থতমত হয়ে বলল-- এমন সময় না এসে উপায় ছিল না| আমি রায়গড়ের রেলওয়ে হাসপাতালে ডিউটি করি‚ এখানে থাকি না| কাল রাত্তিরে মাকে মাসের খরচার টাকা দিতে এসেছিলাম| এখন পনের মিনিটের মধ্যে আমাকে ট্রেন ধরতে হবে|
    --আপনি কে? আর আমার সঙ্গে কী দরকার?
    -- আমি আপনার ছাত্র লাল মুহম্মদ ‚ মানে বাবলুর দিদি| ওকে তাড়িয়ে দেবেন না প্লীজ!
    --খামোকা সময় নষ্ট করছ; অমন অসভ্য ছেলেকে আমি পড়াই না| যাও‚ গিয়ে রায়গড়ের ট্রেন ধর|
    -- দিদি‚ একটু শুনুন| আমি জানি ও বখে গেছে| কিন্তু এটাও ঠিক যে ও আমার বাবার মত-- খেলা পাগল| হকিতে রেলওয়ের জুনিয়র টিমের হয়ে ন্যাশনালে খেলেছে| আপনার স্কুলের হয়েও তো কত ট্রফি এনেছে|
    -- তো? তাই বলে ওকে মাথায় তুলে নাচতে হবে? যা খুশি তাই করে পার পেয়ে যাবে? ও খেলুড়ে না হয়ে একটু সভ্য ভব্য হলে ভাল ছিল|
    -- দিদি‚ ও কথা বলবেন না| আমার বাবা রেলের হয়ে ফুটবল খেলতে বিহারের জামালপুরে গেছলেন| মাঠেই অজ্ঞান হয়ে যান| রেলের ডাক্তার ধরতে পারে নি| এপেন্ডিসাইট ফেটে গেছল| আমি কলেজের পড়া ছেড়ে নার্সের চাকরি নিলাম| মা আর ছোট ভাই বাবলু| এখন আমার বিয়ে হয়ে গেছে |একবছর হল| আগামী বছরে বিলাসপুরের কোয়ার্টার ছেড়ে দিতে হবে|
    -- বুঝলাম না|
    --- রায়গড়ে আপনার দামাদের কোয়ার্টারে আছি| তাই এটা খালি করে দিতে হবে| এখন একমাত্র ভরসা ভাই বাবলু|
    -- কিসের ভরসা? ওর পড়ায় মন নেই| টেনে টুনে টেন ক্লাস হয়েছে| টুয়েলভ বোর্ড পেরোতে গেলে ওকে দু'চারবার অরপা নদীতে ডুব দিয়ে আসতে হবে| খালি খেলে বেড়ালে হবে?
    -- জানি দিদি| এবার যদি ক্লাস টেনের বেড়া পার করতে পারে তো স্পোর্টস কোটায় রেলের চাকরিতে ঢুকে যাবে| ওপরে কথা হয়েছে|
    -- রেলের চাকরি? একটা লাইন শুদ্ধ ইংরেজি লিখতে পারে না ও গার্ড সাহেব হবে? সিগন্যালার? নাকি টিকিট চেকার? ওসব ছাড়‚ ও টিকিট কাউন্টারের ক্লার্কও হতে পারবে না| খালি স্বপ্ন দেখাই সার| কপালে আছে কুলিগিরি|
    মেয়েটি দম নেয়| আচমকা হৈমন্তীর হাত জড়িয়ে ধরে|
    -- ঠিক বলেছেন‚ দিদি| ও তাই হবে| রেলের গ্যাংম্যান ও খালাসির জন্যে ৫০ জন নেবে| ও ঢুকে গেলে আমি নিশ্চিন্ত হই| কাঁধের জোয়াল নামে|
    -- এর জন্যে ক্লাস টেন? কবে থেকে?
    -- দিদি‚ ঐ পঞ্চাশটা পদের জন্যে কুড়িহাজার লোক ফর্ম ভরেছে| আমাকে ওপর থেকে বলা হয়েছে যে টেন পাস করলে ম্যাট্রিকের সমান ধরা হবে‚ বোর্ড নেই| আপনি একটু দেখলে আমাদের পরিবার বেঁচে যায়| আর স্পোর্ট্স কোটা তো আছেই| আমি আর কতদিন মা-ভাইয়ের সংসার টানবো? আমার আদমি আজকাল খিঁচ খিঁচ করছে|

    হৈমন্তী অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন|
    একটা অদ্ভূত সমাপতন| তিরিশটা বছর|

    একটি তরুণ রেলওয়ে ইনস্টিট্যুট এর স্টেজে কোন ফাংশানে আবৃত্তি করেছিল| একটা অন্য রকম পংক্তি‚ অজানা শব্দ| মানে বোঝেন নি| তাই মনে আছে একটু একটু।

    --" জানি জানি এই অলাতচক্রে চংক্রমণ‚
    সোৎ্প্রাশ প্রাশে বলি নাকো তাই কোন কথা‚
    -------------------------------
    জিজীবিষু প্রজাপতির বিভ্রমণ|"

    কোলকাতা থেকে চাকরি করতে আসা সেই ছেলেটিকে একান্তে এর মানে জিজ্ঞেস করেছিলেন| দুষ্টু হেসে বলেছিল-- তুমিই হচ্ছ সেই 'জিজীবিষু প্রজাপতি"|

    মেয়েটি ঘড়ি দেখে| বলে--আমি যাই দিদি| তাহলে ওকে পাঠিয়ে দিই?
    -- ঠিক আছে|

    (পাঁচ)
    নিতান্ত অনিচ্ছায় কেমন অন্যমনস্ক ভাবে বাবলুর দিদিকে বলেছিলেন ভাইকে পাঠিয়ে দিতে| কিন্তু কোন ফল হল না| ও আসে সময়মত‚ বসে থাকে‚ কেমন নিস্পৃহ চোখে তাকিয়ে শুনতে থাকে প্রিপোজিশনের প্রয়োগ‚ মোডাল‚ আর্টিকল‚ জিরান্ড ও ইনফিনিটিভ| যখন যত্ন করে সবাইকে প্যাসিভ ভয়েস বোঝান‚ টের পান যে স্টুডেন্টদের মধ্যে শুধু বাবলুই প্যাসিভ|
    টাস্কগুলো করে নিতান্ত অনিচ্ছায়|
    একদিন রবীন্দ্রনাথের 'হোম কামিং ' গল্পটি পড়ে আসতে বলেছিলেন| কোশ্চেন আন্সারের সময় বাবলু মুখ খুলল-- ম্যাম‚ ফটিক লড়কে কা তো কৈ মামু থে;কলকাত্তা লে গয়ে থে| মেরা ও ভী নহীঁ। ফটিক ছোঁড়াটার তবু একজন মামাবাবু ছিলেন, কোলকাতায় নিয়ে গেছলেন। আমার তো তাও নেই।
    সবাই হেসে উঠল| তারপর পিনড্রপ সাইলেন্স| এবার নিশ্চয়ই ম্যাম বাবলু ভাইয়াকে হেবভি ঝাড় দেবেন|
    কিন্তু তেমন কিছুই হল না|
    হৈমন্তী ক্লান্ত গলায় বললেন-- পরীক্ষার মাত্র দুটো হপ্তা বাকি| এবার সবাই ঘরে বসে তৈরি কর| কোথাও আটকে গেলে এসে জিজ্ঞেস করে নিও‚ ব্যস|
    সবাই চলে গেলে উনি দরজা বন্ধ করতে গিয়ে দেখেন বাইরে বাবলু দাঁড়িয়ে আছে; আবার এক পায়ে ভর দিয়ে অন্য পা দিয়ে বুড়ো আঙুলের নখ খুঁটছে|
    উনি প্রশ্নের চোখে তাকাতেই ও বলল-- আমি কী করব ম্যাম? আমাকে যে এবার ইংরেজিতে পাস মার্কস পেতেই হবে‚ নইলে সিওর শট চাকরিটা ফসকে যাবে!
    না; ওঁর ভাইবোনেরা কখনও এমন বেয়াড়া ছিল না; ওদের জন্যে দিদিকে অপদস্থ হতে হয় নি| আর পরীক্ষার আগে ওদের গোটা বই দশবার রিভিশন হয়ে যেত| এমন অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকত না|
    --সন্ধ্যেবেলা তোর টেক্স্ট আর গ্রামার বইটা দিয় যাস| আমি পঞ্চাশটা কোশ্চেন দিয়ে দেব| কাল সকালে এসে নিয়ে যাবি| এই ক'দিন আড্ডার ঠেকে যাওয়া ছেড়ে যদি ঘরে বসে মুখস্থ করে ফেলতে পারিস তো মোটামুটি পাস মার্কস পেয়ে যাবি|

    রাত্তির ন'টা| হৈমন্তীর খাওয়ার পাট শেষ| এবার জি টিভিতে বাচ্চাদের সারেগামা দেখতে দেখতে আলগাভাবে বাবলুর বই দুটোর পাতা উল্টোতে লাগলেন| চোখ টিভির দিকে| আধঘন্টা কাটল| প্রোগ্রাম শেষ| টিভি বন্ধ করে কিছু ফুলস্ক্যাপ কাগজ আর কলম টেনে নিলেন|
    চোখে পড়ল একটা চারভাঁজ করা কাগজ‚-- কারও পুরনো হলদেটে চিঠি‚ হয়ত পেজ মার্ক করা ছিল|
    মোটে বই খোলে না‚ তার আবার পেজ মার্ক! হৈমন্তী নিজের মনে হাসলেন|
    চিঠিটা গুঁজে রাখতে গিয়ে দেখতে পেলেন পেন্সিলে লেখা মেয়েলি হাতের‚ কোন মার্জিন বা প্যারাগ্রাফ নেই| কৌতুহল বেড়ে গেল| নির্ঘাৎ কোন স্কুলের মেয়ের দেওয়া চিঠি উঠতি হিরোকে|
    কখনও অন্যের চিঠি খুলে পড়েন নি| এখন নিজের অজান্তেই কখন পড়তে শুরু করে দিয়েছেন|

    প্রথম লাইনেই হোঁচট!
    বাবলুভাই!
    ঠিক আছে‚ মুসলমান সমাজে অমন সবাইকেই ভাই প্রেফিক্স দিয়ে সম্বোধন করা হয়| বাঙালীদের যেমন 'অমুকদা-তমুকদা'| তাতে কি প্রেম হওয়া আটকায়!
    হৈমন্তী পড়তে লাগলেন|
    'বাবলুভাই‚
    তোমাকে বাধ্য হইয়া এই পত্র লিখিতেছি| রাগ করিও না| সকল কথা সামনাসামনি বলা সম্ভব হইয়া উঠে না| তুমি এখন আর ছোটটি নও‚ আর 'দাউ' বা 'নানহে' ( ছত্তিশগড়িতে 'খোকা' বা 'পুঁচকু') বলিয়া ডাকিতে পারি না| কিন্তু তুমি আমার কাছে সেই ছোট্ট আদরের নান্হীই আছ‚ নিশ্চিত জানিবে|
    বাবলুভাই‚ আমরা গরীব‚ আমাদের কোন নিজস্ব বাড়ি নাই‚ কোন দোকান নাই| আমাদের চাকুরিই সম্বল| সাহেবদের অনুকম্পা সত্ত্বেও থোড়া লিখো গে ‚ পড়ো গে- তব তো কুছ বাত বনেগী|
    আমি তোমার খেলকুদ লইয়া কিছু বলি নাই| আব্বার চাকুরিও খেলার জন্যই হইয়াছিল| তোমারও হইবে|
    তুমি তো শুনিয়াছ যে আব্বার মৌত কে বাদ আমাদের তাউজি দিলবার হোসেন সাহাব আমাদের আম্মি সহ সবাইকে ঘর হইতে একপ্রকার খেদাইয়া দিয়াছিলেন| ওয়ালিদসাহেবের পিএফ গ্র্যচুইটির টাকাও নানান অছিলায় আম্মিকে কিছু কাগজে দস্তখত করাইয়া হড়প করিয়াছেন| বেওয়ার পেনশন ও দুই বৎ্সর পর আমার নার্সের চাকুরি এই মাত্র সম্বল করিয়া এই সংসার দরিয়া পার করিতেছিলাম|
    তোমার খেলায় চশকা ও লিখাপড়ায় দিল না লাগা দেখিয়া তাউজির ছেলেমেয়েরা --আল্লাতালাহ উহাদের খেরিয়তে রাখুন-- ঠেঙ্গা ( বুড়ো আঙুল) দেখাইয়া ছড়া কাটিত:
    লিখো গে‚ পড়ো গে বনো গে নবাব‚
    খেলো গে‚ কুদো গে‚ বনো গে খরাব|
    তুমি কান্দিয়া ঘরে আসিলে আমি তোমার মাথায় হাত বুলাইয়া বলিয়াছিলাম--রোনা নহীঁ‚ রোনা নহীঁ| দুশমন হসেঙ্গে|
    তাহার পর তোমার মাথায় হাত রাখিয়া বলিয়াছিলাম--আমাকে ‚ তোমার বড়ী আপাকে ছুঁইয়া কসম খাও যে একদিন তুমি লিখাপড়া শিখিয়া ইহার জবাব দিবে| মনে পড়ে?
    আজ উহারা কেহ কলেজে দাখিলা লইয়াছে‚ কেহ কালো কোট পরিয়া টিকিট বাবু হইয়াছে| আমাদের রাস্তাঘাটে দেখিলেও চিনে না| বাবলুভাই‚ তুমি কি চাও যে দুশমন আমাদের উপর জিন্দগীভর হাসিবে?
    তোমার এমন মতি কেন হইল বাবলুভাই?
    আমার মনে হয় তোমার উপর কেহ কালা জাদু করিয়ছে বা ইবলিশের নজর পড়িয়াছে| আগামী সপ্তাহে আমি তোমাকে তারবাহারের মৌলবীর নিকট লইয়া যাইব| তিনি দোয়া-দুরুস্ত পড়িলে ও তোমার মাথায় পাক পানি ছিটাইয়া দিলে কুনজর কাটিয়া যাইবে|
    আর একটি কথা| আম্মিকে বলিও ন| আমার শৌহর তোমার জীজাজি ইদানীং গুসসা করিতেছেন| বলিতেছেন বাবলু কবে মরদ হইবে?

    চিঠির বাকি অংশটি ছেঁড়া|

    সকালবেলায় বাবলু এল| উনি ওকে বই ফেরত দিয়ে কোথায় কোথায় দাগ দিয়েছেন দেখিয়ে দিলেন আর বললেন মন দিয়ে মুখস্থ কর| পাশ করে যাবি|
    বাবলু চলে গেল| ও পাশ তো করবেই| যে পঞ্চাশটি সাজেশন দিয়েছেন তার মধ্যে অন্তত: তিরিশটা তো আসবেই|
    এবার ক্লাস টেনে তো বোর্ড নেই| হোম এগজাম| আর কোশ্চেন পেপার হৈমন্তীই সেট করেছেন‚ ছাত্ররা কেউ না জানুক|
    মনটা অস্থির অস্থির লাগছে|
    হৈমন্তী স্নান করে ঠাকুরের আসনের সামনে বসলেন|

    (শেষ)

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রঞ্জন | 122.162.177.53 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৭:১৪732624
  • ্ধ্যেৎ , শেষ পার্টে আমার দোষে সব হেডলাইনের মত বড় হয়ে গেছে। সবগুলো কিস্তিতেই। এটা অনভিপ্রেত। হিন্দিতে বললে রায়তা ছড়ানো।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন