এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • পহ্‌চান কৌন: আইডেন্টিটির সংকট

    রঞ্জন রায়
    আলোচনা | বিবিধ | ০৯ নভেম্বর ২০০৮ | ৬৫৩ বার পঠিত
  • টূয়েন্টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের প্রথম বিশ্বকাপ। পন্ডিতদের জল্পনা-কল্পনার মুখে ঝামা ঘসে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে , কোন সাদা চামড়ার দেশ নয় , ভারত-পাকিস্তান। শেষ ওভার। ধোনী হরভজনের মত অভিজ্ঞ বোলারকে বল না দিয়ে দিলেন শর্মাকে। মিসবা উল-হক্‌ ছেলেখেলা করার মত করে মারতে লাগলেন। শেষ বল। লোপ্পা। ব্যাটে টাচ্‌ হলেই পাকিস্তান জিতবে। সবুজ পতাকা নিয়ে পাকিস্তানি সমর্থকেরা দৌড়নোর জন্যে তৈরি। উত্তেজনা তুঙ্গে। এমন সময় ছন্দপতন। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী মিসবা বলটাকে চামচের মত করে উইকেট কিপারের মাথার ওপর দিয়ে তুলে দিলেন। ঠিক জায়গায় কন্ট্যাকট্‌ হয় নি। বল সোজা উপরে উঠে গেল।খনিকটা দৌড়ে সহজ ক্যাচ্‌। সারা মাঠ জুড়ে ভাবটা যেন-- ইয়ে ক্যা হুয়া? ক্যায়সা হুয়া? কিঁউ হুয়া? পুরস্কার বিতরণী সেরিমনিতে প্রথমে বিজিত দলের ক্যাপ্টেনকে ডাকার রেয়াজ। এবারও ব্যতিক্রম হল না। রোল কল শুনে ফেল হওয়া ছাত্রের মার্কশীট নিতে আসার ভঙ্গিতে মঞ্চে এলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক প্রমিসিং অল রাউন্ডার শোয়েব মালিক। একহারা চেহারা, সুন্দর মুখশ্রী। কিন্তু ঐ মুখে ফুটে উঠেছে যন্ত্রণার রেখা। প্রায় জিতে যাওয়া ম্যাচ শেষ মুহুর্তে হাত থেকে ফসকে যাওয়া? তাও ভারতের বিরুদ্ধে? প্রথম বিশ ওভারের বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়কের বদলে হেরো ক্যাপ্টেন?
    মাইক হাতে পেয়ে মালিক সর্বপ্রথম বিশ্বের সমস্ত মুসলমান সমাজের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করলেন।

    আমি হতভম্ব। বুঝতে পারছি ওঁর অসহায় আতংকের কারণ। ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের ক্রিকেট-উন্মাদ জনতা যে ব্যর্থতা স্বীকার করতে রাজি নয়। ফলে প্লেয়ারদের বাড়ি আক্রমণ, পুলিশ-পাহারা এসবের আজ বাড়-বাড়ন্ত। ক্রিকেট আর শুধু খেলা নয়, তাই প্ল্যাকার্ডে দেখি-'' ক্রিকেট ইজ্‌ আওয়ার রিলিজিয়ন ,শচীন ইজ্‌ আওয়ার গড্‌।'' আর ফৌজি শাসনের অধীন পাকিস্তানে? যেখানে ক্রিকেট বোর্ডেরও হর্তাকর্তা কোন ব্রিগেডিয়র বা কর্ণেল? কিন্তু পাকিস্তান দেশ, রাষ্ট্র বা সরকার নয়, শোয়েব আশ্রয় নিলেন বিশ্বের ''সমস্ত মুসলমানের'' দরবারে? কার থেকে ভয়? কার হাত থেকে বাঁচতে আশ্রয়? পাকিস্তান সরকারের সম্ভাব্য রোষের? কে বাঁচাবে? বিশ্বের সমস্ত মুসলমান সমাজ? এমন কোন সংগঠন আছে নাকি? কোন প্যান ইসলামিক সংগঠন? আমার তো জানা নেই।

    শুধু জর্জ বুশের কথিত ইস্লামিক আতংকবাদী জেহাদের বিরুদ্ধে পাল্টা জেহাদ বা আডবাণী-মোদী-বাল ঠাকরের হুংকার শুনলে মনে হয় হয়তো আছে। চোখে পড়ে না। মানলাম-- ৯/১১ ঘটনার মাস্টারমাইন্ড্‌ ওসামা বিন-লাদেন বা, লাদেনপুত্র ওসামা ইসলামবিরোধী শয়তানের রাজত্বকে ধ্বংস করবে বলে কোমরকষে লেগেছে। কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়ার অধিকাংশ মুসলমান এক ঐক্যবদ্ধ বিশ্বমুসলিম রাষ্ট গঠন করবে এমন কোন সংকেত তো চোখে পড়ে নি। যদিও ইউরোপ ও ভারতের বড় শহরে নিরীহ মানুষের ভীড়ে বোমা ফেটে রক্ত ঝরে আতংক ছড়ালে কোন না কোন ইস্লামিক জঙ্গী সংগঠন বুক ফুলিয়ে এর দায়িত্ব স্বীকার করে, তবু এইসব গুপ্ত আতংকবাদী টুকরো টুকরো সংগঠনের কার্যকলাপ আমার চোখে আদৌ কোন বিশ্বজোড়া মুসলিম জাগরণের ছবি আঁকে না। বরং যা চোখে পড়ে তা'হল-- ইরাকে শিয়া-সুন্নী লড়ছে। আগে দুই মুসলিম দেশ ইরাক-ইরাণ লড়তো। জর্ডন-কুয়েত-আরব এমিরেট আবার প্যালেস্তাইন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী নয়। আবার পাকিস্তানে ক্রিশ্চান-হিন্দুদের মত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংখ্যা নামমাত্র, কোটিকে- গোটিক। তবু পাকিস্তানে বিভিন্ন বৃহৎ মুসলিম সম্প্রদায়ের কোঁদল প্রায়ই জানলেবা-হামলার স্তরে নেমে আসে। আর আতংকবাদী হামলাও পাকিস্তানের শহরে, রাজনৈতিক ভাবে মহত্বপূর্ণ জায়গায় ঘনঘন চলছে। কোথাও কোথাও ব্যাপক আকার নিচ্ছে। কেন? ভারতে শিয়া-সুন্নী সংঘর্ষ নতুন নয়। সেদিন আমার কর্মক্ষেত্র ছত্তিশগড়ের ভাটাপাড়া
    রেলস্টেশনের কাছে দেখলাম এক মসজিদের গায়ে লেখা-- সুন্নী-হানিফি-বরেলভী মসজিদ। কোন দেওবন্দী- ওয়াহাবী-বোহরা সম্প্রদায়ের ব্যক্তির এই মসজিদে ঢোকা'' সখৎ মনা হ্যায়''। এ যে আমাদের পুরীর মন্দিরকেও ছাড়িয়ে গেল! ওরা তো শুধু অ-হিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রেখেছে। এরা তো মুসলমান সমাজের মধ্যেই প্রায় দশনামী সম্প্রদায়গোছের বানিয়ে একে অন্যের ছোঁয়া-খাবে-না গোছের করে রেখেছে। তাহলে কিসের ভরসায় শোয়েব এক অধরা-অদৃশ্য বিশ্বজনীন মুসলিম সমাজের কাছে অভয়দান চাইলেন? আরও একটা কথা। ওই ম্যাচে পাকিস্তান টীমকে হারানোর কৃতিত্বের অনেকটাই যাবে দুই পাঠান ভাইয়ের ঝুলিতে,--ইরফান ও ইউসুফ ওরা কি মুসলমান নয়? তাহলে ?

    আচ্ছা, উনি পাকিস্তান রাষ্ট কে ধন্যবাদ দিলেন না কেন? ঐ যন্ত্রণার মুহুর্তে দেশের চাইতে ধর্মের আশ্রয় বেশি নিরাপদ মনে হল?

    মনে ছবি আসে, টুকরো টুকরো ছবি। একবার নিজেকে দেখি। কোলকাতায় ইস্টবেঙ্গল- মোহনবাগান ম্যাচে আমি বাঙাল, ছত্তিশগড়ে বাঙালী। কিন্তু কোলকাতার থেকে দ্বিগুণ সময় কাটালাম ছত্তিশগড়ে। হোটেলে খাবার সময় আমার কোন নাম নেই, জাত নেই, গোত্র নেই। বিয়ে এবং শ্রাদ্ধবাসরে আমি ভরদ্বাজগোত্রিয় কায়স্থ! খাবার টেবিলে নন-ভেজ। আমি তাহলে কি? এতগুলো চেহারার মধ্যে কোনগুলো আমার মুখোশ? আর কোনটা মুখ? নাকি আমার কোন মুখ নেই, আছে শুধু কিছু মুখোশ, দশহরার দিনের রাবণের মত, শুধু জ্বালানোর জন্যে! সিনেমার লাইনে এক মহিলা আমার মেয়েদের বল্লেন-- সিনেমা বটে " বর্ডার''। একা সান্নি দেওল একটা লোহার হ্যান্ডল্‌ নিয়ে শ' দুয়েক মুসলমানের মোকাবেলা করলো।
    ---"" আন্টি, আমার সঙ্গের বন্ধুটি রুহিনা আলি কিন্তু মুসলমান''। ছোটমেয়ে বল্লো। উনি থতমত হয়ে বল্লেন,---- "" না বেটা! সব মুসলমাম কি আর খারাপ? কেউ কেউ খারাপ। অল্প কয়েকজনের জন্যে গোটা জাতটা বদনাম হচ্ছে।'' মেয়ে বিরক্ত হয়ে সরে গেল।তার কয়েকমাস পরে মেয়ে এসে আমাকে বল্লো
    -- ""বাবা, ভালো লাগছে না। ''
    -- কি হয়েছে?
    -- রুহিনার ভাই দানিশ ওর কলেজে মহারাণা বলে একটি ওড়িয়া মেয়ের প্রেমে পড়েছে। তাতে তোমার বন্ধু সিপিএম এর সক্রিয় সমর্থক শাকির আংকলের মেয়ে রুহিনা বল্লো-- শেষে হিন্দু মেয়ে? দানিশ প্রেমে পড়তে আর কাউকে পেল না?
    --- ঠিক আছে। তাতে তোর কি?
    --- বাবা, কেমন মনে হচ্ছে যে আনেওয়ালা কাল মে কিছু হলে তোমার-আমার মতন হিন্দু লিব্যারালরা আগে মরবে।
    --- অ্যাই, আমি হিন্দু না, লিব্যারাল বা কন্‌জার্‌ভেটিভ--- কিচ্ছু না।
    ---- না বল্লেই হবে। সারা সমাজ জানে তুম হিন্দু হো।
    -----কি করে জানে?
    ---- বা:! তোমার নাম? তোমার মা, তোমার মেয়ের মন্দিরে পূজো দিতে যাওয়া?
    ---- তাতে আমি হিন্দু মায়ের ছেলে এবং হিন্দুমেয়ের বাবা হই, ব্যস। আমি কি মুখোশ পরবো ওটা কে ঠিক করবে? পাড়া-পড়শী? সমাজ?
    ---- হ্যাঁ, ওভাবেই হবে। এঁড়ে তর্ক ছাড়। স্কুল-কলেজ-চাকরির একগাদা ফর্মে লেখনি কি- রিলিজিয়ন, হিন্দু?
    ---- সেতো বাই কম্পালসন, নট বাই চয়েস্‌, ঝামেলা এড়াতে।
    ----- এগ্‌জ্যাক্ট্‌লি! আমিও ফর্মে বাবার নামের কলামে তোমার নাম লিখি
    ---- বাই কম্পালসন, নট বাই চয়েস; ঝামেলা এড়াতে। আর তুমিও হিন্দুইজম লিখে বেশ কম্‌ফর্টেবল ফিল কর। মেজরিটি কমিউনিটির সদস্য হওয়া কি সোজা কথা? কোন চাপ নেই, কত প্রিভিলেজ! যেমন ছেলে হয়ে জন্মানো। মাছের মুড়ো, দুধের বাটি, দেরি করে ফেরা। আরও আছে, মাসে মাসে নিয়মিত যন্ত্রণার বালাই নেই। আবার রেপ করলেও ধরা পরার ভয় ন্বেই, গোয়ার মন্ত্রীর ছেলের মত বুক ফুলিয়ে অস্বীকার করলেই হলো।
    ---- ফের শুরু করলি?
    ---- বাবা , বুকে হাত দিয়ে বলতো মনের মধ্যে আমাদের বেদ-উপনিষদ-পুরাণের এবং এক সুপ্রাচীন সভ্যতার উত্তরাধিকারের অহংকার লুকিয়ে নেই? অন্য ধর্মগুলো অর্বাচীন বলে এক তাচ্ছিলের ভাব নেই?
    আমি চুপ, যুৎসই জবাব খুঁজছি।
    --- ওতো ঠিকই বলেছে।( এইরে , গিন্নি ময়দানে নেমেছেন।) তোমার দোষ নয়, তোমার বন্ধু শাকির আলি, নোয়েল জোন্স-- সবাই নিজের মত করে নিজেদের বেশি সভ্যভব্য ভাবে। আদিবাসী-অচ্ছুৎকন্যারা যীশুনাম নিয়ে মেজরিটি হিন্দুবালাদের গেঁয়ো ভাবে। সেবার তোমাদের বিনোদ গার্ডিয়ার শ্বশুরবাড়ি চাঁপার মিশন হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারে রাত কাটালাম। শ্বাশুড়ি ড: আর্থারের স্ত্রী আমাকে দেখে খুব খুশি। কেন? না আমি শীতকালে হাঁটু অব্দি মোজা পরেছি, মাথায় সিঁদুর দিইনি আর খাবার টেবিলে হাত না লাগিয়ে স্পূন ব্যবহার করেছি। উনি পাড়ার সব মহিলাদের মাঝখানে আমাকে দেখিয়ে বলতে লাগলেন-- দেখো, বিলকুল হম মসীহী য্যায়সা হ্যায়।
    আমি বল্লুম,-- আন্টি, আপনি যাকে ক্রীশ্চানদের মত বলছেন ওটা আসলে ইউরোপীয় সমাজ থেকে নেয়া শহুরে ব্যবহার।
    ---- জান, ওরা আসলে গড়রিয়া, অর্থাৎ ভেড়-বকরিচরানেওয়ালে। যীশু নাম জপে গার্ডিয়া লিখছে। আর আমাদের সহকর্মী তখৎপুরের নাথু সৎনামীর মেয়ে কেরেস্তান হয়ে নাথানিয়েল লিকচে। ( আমি একটু ফিচেল হাসি। গিন্নি টেরচা চোখে তাকান। সুভাষিনী নাথানিয়েলের প্রতি আমার প্রাক্‌বিবাহ দুর্বলতা ওনার অজানা নয়।)
    গিন্নি বল্লেন,- আরে, এ নিয়ে তো শরদ জোশীর রম্যরচনা এদেশে মাধ্যমিকের পাঠ্য। যাতে দুই ঘুঁটেকুড়ুনি মেয়ে সকালে মাঠে গোবর আনতে যাচ্ছে, নিজেদের ডাকছে--"" ওলো ভিক্টোরিয়া''! জবাব আসছে"" কিলো এলিজাবেথ''?
    মেয়ে হাততালি দিয়ে ওঠে।-- বা:, বা:! এই না হলে আমার প্রগ্রেসিভ বাবা-মা! ইয়ার্কির ভাঁজে ভাঁজে হিন্দু হয়ে জন্মানোর সুপ্ত গর্ব একেবারে কুটকুট করছে। তোমাদের বাঙালী হওয়া নিয়ে কম নখরা নেই। আমাদের রবীন্দ্রনাথ, আমাদের শরৎচন্দ্র-- পারলে আমাদের অরুন্ধতী রায় বলে ফ্যালো। ওদিকে হিন্দি-তামিল-তেলেগু-মারাঠী সাহিত্যের মহারথীদের নাম জানার কোন আগ্রহ নেই। বাবা আরেক কাঠি। সেদিন হাঁকছিলো--- কংগ্রেস, কমুনিস্ট, জনসংঘ সব দলের স্থাপয়িতা বাঙালী; ব্যানার্জি-রায়-মুখার্জি।
    আমি আমতা-আমতা করি।--- কিন্তু কথাগুলো তো সত্যি।
    ---- নিশ্চয়ই সত্যি, কিন্তু সত্যি কি খালি একটা? তোমাদের দোষ নেই। আমরা অন্যদের ঠিকমত জানিনা, জানতেও চাইনা। সেদিন মা বল্লো -- হিন্দুধর্মে কেউ মারা গেলে তেরদিনের শোকপালন নিয়মটা বেশ ভেবে করা হয়েছে। তাতে শোকের ধাক্কাটা সয়ে আসে, লোকে স্বাভাবিক হয়ে আবার কাজকম্মে জুটতে পারে। ভালকথা, কিন্তু মা কি জানে মুসলিম-মসীহী বা ইহুদী সমাজে শোকপালনের রীতিরেয়াজ কি রকম?
    --- কিন্তু আমরা মূলপ্রসঙ্গ থেকে অনেকক্ষণ সরে এসেছি। আমার প্রশ্ন ছিল আমি এই সমাজে কি পরিচয়ে বাঁচবো তা আমাকে ঠিক করতে দেয়া হবে না কেন? কেন বাইরে থেকে কেউ চাপিয়ে দেবে , আর আমি সেই মুখোশ পরে থাকতে না চাইলে , হাঁসফাঁস করলে আমাকে একঘরে করবে? এই দেখনা, ১৯৬৬ সালে নাকতলায় নেতাজিনগর থেকে মুসলিম হামলা হবে ধরে নিয়ে আতংক ছড়ানো হল। পাড়ার গুন্ডারা হিন্দুদের বাঁচাতে হবে, একজোট হতে হবে বলে বোমবাঁধার চাঁদা তুলতে লাগলো। রাতজেগে পাহারা দেবে বলে হিন্দুবাড়িদের বলা হল ওদের জন্যে খিচুড়ি-ডিমভাজা রাঁধতে। আর এখন তো কথাবলাই দায়। হান্টিংটন সায়েব কিতাব লিখেছেন, সভ্যতার চালিকাশক্তি এখন আর শ্রেণীদ্বন্দ্ব নয়, বরং সভ্যতার সংঘর্ষ। তাও ধর্মভিত্তিক সভ্যতার, যেন বাঙালী মুসলমান বাঙালী হিন্দুর চেয়ে মরক্কোর মুসলমানের বেশি কাছাকাছি।
    ----- সে না হয় হল। তুমি এখন ব্লাড প্রেশার না বাড়িয়ে চানে যাও। আর একটু পড়াশুনো কর। তোমাদের অমর্ত্য সেন হান্টিংটন সায়েবকে তুলোধোনা করে একখানি কিতাব লিকেচেন--""" আইডেন্টিটি অ্যান্ড ভায়োলেন্স: দ্য ইল্যুশন অব ডেস্টিনি''। এর মোদ্দাকথাটা হচ্ছে মানুষের ভাষা-জাতি--ধর্ম-পেশা- লিঙ্গ-রাজনীতি এইসব বহুমাত্রিক পরিচয়্‌কে অগ্রাহ্য করে একটাই পরিচয়ে থাকতে বাধ্য করা যেন তাকে খাঁচায় পুরে ফেলা। ডেমোক্র্যাসিতে ব্যক্তির নিজের পরিচয় নিজে বেছে নেয়ার স্বাধীনতা চাই। কোন একটা পরিচয় বা তোমার কথায় মুখোশকে আঁকড়ে ধরার অনেকসময় সদর্থক ফলও হয়, উনি অস্বীকার করছেন না। কিন্তু সেই আঁকড়ে ধরাটা নিজের ইচ্ছেয় হতে হবে। নইলে দাঁড়াবে বাবা-মায়ের চাপে অপছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার মত। আর পেছনে রয়েছে "" তুমি মায়ের জন্যে বলি প্রদত্ত'' গোছের এক কাল্পনিক ডেস্টিনির স্বপ্ন, যা গোষ্টীপতিরা ভাবেন, এবং কম্যুনিটির ওপর চাপিয়ে দেন। এটাই এই শতাব্দীর ব্যাপক হিংসার পটভূমি।

    আমি আর গিন্নি মুখ চাওয়াচাউয়ি করি। ঘরের আবহাওয়াটা পাল্টে যায়। আমি গম্ভীর হই। বলি-- বইটা পড়েছি। উনি আরও একটা কথা বলেছেন। ব্যক্তির আইডেন্টিটির চয়েসটি রিজনড্‌ বা যুক্তিসংগত হতে হবে। সেটা পড়তে বা শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনচর্য্যায় এর প্রয়োগ কি করে সম্ভব আমার জানা নেই।

    নভেম্বর ৯, ২০০৮
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ০৯ নভেম্বর ২০০৮ | ৬৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন