এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ছবি

  • ঢ্যামনা

    Anamitra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ছবি | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩১৯৩ বার পঠিত
  • শ্যামলা কামার, তথা শ্যামল কর্মকার, তথা শ্যামলদা একটি হাইলি সাসপিশাস লোক। সে যে কখন কোথায় কি করে বেড়াচ্ছে কিছুই বোঝা যায় না! এই শুনবে সে এসআরএফটিআই-তে এডিটিং ডিপার্টমেন্টের হেড, তো এই শুনবে 'ওয়ে লাকি, লাকি ওয়ে' নাকি তারই এডিট করা। এই শুনবে সে নন্দীগ্রামে ছবি বানাচ্ছে, আবার এই দেখবে সে বসে আছে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড-এর জুরি হয়ে! কোথায় 'কাভি হাঁ কাভি না'-র শট ডিভিশন আর 'পরিন্দা'-র এডিটিং, আর কোথায় 'সেতু' অথবা 'আসমানী জহরত'-এর ট্রেলারে "শুয়োরের বাচ্চারা দেখ"! মোট কথা সে যে কখন কোথায় আছে বলে উঠতে পারা খুবই মুশকিল। তার জন্য মাটিতে দাগ কেটে রীতিমতো অঙ্ক-টঙ্ক করতে হতে পারে। তবে এটুকু আপাতত বলাই যায় যে আগামী ২৯ তারিখ বিকেল ৫টা থেকে তাকে পাওয়া যাবে যোধপুর পার্কের আরটোগ্রাফস নামক স্টুডিওটিতে, কারণ সেখানে তার বানানো সিনেমা 'মেনি স্টোরিজ অফ লাভ অ্যান্ড হেট্' পুনরায় দেখা হবে এবং আমি স্বয়ং ভদ্রলোককে কোনও প্রতিবাদের সুযোগ না দিয়ে বগলদাবা করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি।

    ঘটনার শুরুয়াত কিছুদিন আগে, সুফির মুখেভাতের সময়ের আশপাশ দিয়ে। শ্যামল দা ছবি বানায় না তাও বছর ছয়-সাত তো হবেই। এর মাঝে সাকুল্যে তিন-চারবার দেখা বা কথা হয়েছে ফোনে। একবার আমি গিয়েছিলাম 'আজাদ বিশ্বাস অন্তর্ধান রহস্য'-তে একটা চরিত্র করার প্রস্তাব নিয়ে। শ্যামল দা সেটা করবেও বলেছিলো, যথারীতি আমিই শ্যুট শুরু করেও আর ছবিটা করে উঠতে পারিনি নানা কারণে। তারপর গতবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফোন করেছিল ভোপাল থেকে, 'জিঙ্গেল বেল আইটি সেল' দুর্দান্ত হয়েছে বলার জন্য। এইভাবে একটা ষড়যন্ত্রমূলক যোগাযোগ রয়ে গিয়েছিলো নিতান্তই মহাকালের ইচ্ছায়। আমার ইচ্ছা থাকলেও উপায়ের বড়ই অভাব, কারণ সত্যি বলতে ২০১৪ থেকে এখনও অবধি আমি সেই চলচ্চিত্তচঞ্চরীর ঈশানবাবুর মতোই মহাশূন্যে গোঁত্তা খাচ্ছি। এইবার খবর এলো যে শ্যামল দা ছবি করেছে, এবং সেই ছবির জন্য হয়তো একটা ছোট্ট কাজ আমায় করে দিতে হতে পারে। নির্দিষ্ট দিনে যথারীতি মিনিট কুড়ি দেরিতে পাশের পাড়ায় পৌঁছলাম। তারপর যেটা হলো সেটা লেখার জন্য আলাদা প্যারাগ্রাফ দরকার।

    এইধরণের সিনেমায় দেরিতে ঢুকলে যা হয়, কি হচ্ছে না হচ্ছে ঠাওর করতে একটু সময় লাগে। আমি অন্ধকারে হাতড়াচ্ছিলাম, তারপর একটা কাট হলো। সেই কাটটাতে আমি বুঝতে পারলাম যে এতক্ষন অন্ধকারে আমি একটা খাদের ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম, এবং এইবার সেই খাদটাতে পড়তে শুরু করেছি। এই পতন চললো একটানা প্রায় ৭০ মিনিট। তারপর ছবিটি শেষ হলো এবং আমি ছাড়া আরেকজন যিনি দর্শক ছিলেন বেরিয়ে গেলেন। এরপর আমি আবার শুরু থেকে দেখতে শুরু করলাম। শোলোক বলা কাজলা দিদি, রাবেয়া কি রুকসানা, ইউরোপের ডকুমেন্টারি ফান্ড, নির্মীয়মান উড়ালপুলের হাহাকার, নগরোন্নয়নের কঙ্কাল এবং রোহিঙ্গা ও রাখাইন আর্মি পেরিয়ে ঠিক যে সময় ছবিটির ওয়ার্কিং টাইটেল ভেসে উঠলো পর্দায় ওইরকম সময় আমার মতো আঁতেল লোকের জিও জিও বলে সিটি দিয়ে উঠতে ইচ্ছা হয়। আমাদের তো আর হিরো হয় না, আর বলিউডের রাজা-বাদশাদের আমরা ওভারপেড জোকারের থেকে বেশি কিছু কখনও ভেবেছি বলে কেউ বলতে পারবে না। না, জোকার ভালো, মাস এন্টারটেনমেন্ট হয়; সেটারও দরকার আছে বৈ কি! তবে আমাদের হিরো কিন্তু ঋত্বিক ঘটক, যে কিনা 'ইন্ডিপেন্ডেন্স ফুহ" বলে একটা আধপোড়া বিড়ি ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারে ভারতবর্ষে এমার্জেন্সি লাগু হওয়ার বছরখানেক আগে। ওই ধক মুখে রঙ মাখা সঙেদের কোনোদিন হবে না, আর হলে বুঝতে হবে ভারতবর্ষ বদলে গেছে সত্যি সত্যিই।

    কাজ এখনও চলছে, কাজ শেষ নয়। এক্কেবারে শেষ পর্যায়ে এসে কাজটার সঙ্গে আমিও জড়িয়ে পড়লাম। শ্যামল কর্মকার ইন অ্যান্ড অ্যাজ "ঢ্যামনা" --- এটা অবশ্য ওয়ার্কিং টাইটেল; বদলে যেতেই পারে পরে, আবার নাও বদলাতে পারে। চাইলে গল্পটা বলে দেওয়াই যেত। আবার না বলে গান গাইলেও চলে। যেমন --- "হইয়ো তোর সাধের বাঁশি বনপলাশী দেখন হাসি ডেমোক্রেসি যাবে ভেসে" অথবা "হইয়ো তোর কাজলা দিদি শোলোক বলার ওপর তলার পেট্রোডলার নেবে কিনে"!

    আপাতত এটুকুই থাক! বাকিটা ছবি শেষ হলে যে যার নিজের মতো দেখে নেওয়াই ভালো। অথবা না দেখলেই বা কি! কত ছবিই তো আমরা দেখি না, আবার কত ছবি দেখে রিভিউও লিখি যেন সেইসব সিনেমা আসলে সত্যিসত্যিই সিনেমা কারণ সেগুলো অনেক টাকা খরচ করে বানানো। মোদ্দা কথা হলো ২০১৪ থেকে আমার জীবনে খুবই অদ্ভুত একটা সময় চলছে, কোনওকিছুই আর শেষ করে উঠতে পারছি না। ফিচার ফিল্ম অসম্পূর্ণ, শর্ট ফিল্ম অসম্পূর্ণ; মায় একটা উপন্যাস লিখতে গেসলাম (মতান্তরে অপন্যাস) সেটাও শালা অসম্পূর্ণ! আমি ধান্ধায় আছি শ্যামলদার ঘাড়ে চেপে কোনোমতে যদি ফাঁড়াটা কাটাতে পারি। যদি ঘাড়ে না চাপতে দেয় "বলো কি তোমার ক্ষতি, জীবনের অথৈ নদী" বলে গান জুড়বো। তাতেও নেবে না? এতটা নির্দয় কি আর হবে শ্যামলা কামার? ছবিতে তো এত আবেগ! অবশ্য কিছুই বলা যায় না কারণ ছবিটার নাম শেষ অবধি 'ঢ্যামনা'।

    'মেনি স্টোরিজ অফ লাভ অ্যান্ড হেট্' দেখার দিন আসতে চাইলে ইভেন্টের লিঙ্ক প্রথম কমেন্টে। আসনসংখ্যা তিরিশ, সুতরাং তাড়াতাড়ি জানানোই ভালো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ছবি | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৩১৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • tester | 162.158.255.21 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৪91003
  • একক | 162.158.158.116 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৫:৩৯91004
  • দেখেছিলুম, পরিচালক সম্বন্ধে কিছু না জেনেই। এক্টু এগোনোর পর বেশ গ্রিপিঙ্গ। ফাস্ট ফোরোয়র্ড কত্তে হয়নি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন