এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • প্রেমে রবির গান ফিটিং নিয়ে এক থালা লেকচার।

    ভূত
    অন্যান্য | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ | ৯৪৩ বার পঠিত
  • প্রেমদিবসের প্রাক্কালে রবি ঠাকুরকে নিয়ে এমন বুকনির কারণে পাঠকের বদহজম হলে লেখকের কোনও দায় নেই। তাই আগে থাকতে অ্যান্ট্যাসিডের শরণাপন্ন হতে পারেন।

    কথাটা অনেকদিন ধরেই মনের এদিক ওদিক ভেসে বেড়াচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ পড়ছি বা তাঁকে তার লেখার মধ্যে দিয়ে আবিষ্কার করছি, এ খুব বেশিদিনের কথা নয়। কুড়ি বছরের এক প্রাপ্তবয়স্কের কাছে রবীন্দ্রনাথ অনেকভাবেই ধরা দিতে পারেন। এখনের সময় হয়ত সেই মাত্রার বাড়বাড়ন্তও থাকতে পারে ( পাতিভাষ্যে ‘বহুমাত্রিক’ বোঝাতে চাইছি)। গানের ডিপার্টমেন্টটা দিয়েই ওঁর লেখা পড়তে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দে ভক্তি আসায় ওঁর পূজো পর্যায়ের গানগুলোও একটু নাড়াচাড়া করতে থাকি। খুব পরিচিত কিছু গান যা মর্ডান প্রেমিক প্রেমিকারা প্রয়ই একে অপরকে ডেডিকেট করে গেয়ে থাকে, সেগুলোই আরেকবার পড়লাম। গানগুলো পড়তে পড়তে চোখের সামনে অন্যরকম একটা ছবি আসতে থাকল যা প্রেমিক প্রেমিকা কনসেপ্টের হাজার মাইলের মধ্যেও আসে না‌ (*অ্যান্টাসিড খেতে ভুললে আমাকে দুষবেন না।*) । ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘মেঘ বলেছে যাব যাব’ এগুলো তেমনই কিছু গান। এই দুটো নিয়েই আপাতত কচলাব।
    রবীন্দ্রনাথ যখন পূজা পর্যায়ের গান লিখেছেন তখন তো আর ভাবেননি , এই লেখাটি রাম পড়বে, বা ওই লেখাটা শ্যাম। তিনি যা লিখেছেন, তা মনের তাড়নায়, মনেরই দাবিতে। কারোর মতো করে তা লেখা নয়, বরং আমরাই খাপে খাপে তা বসিয়ে নিই। এই খাপের প্রকৃতি ও খাপে খাপ লাগানোর কিছু উদ্ভট চেষ্টা নিয়েই দুটো লেকচার। এটুকু আমরা অল্পবিস্তর অনেকেই জানি রবীন্দ্রনাথ ব্যক্তিজীবনে বহু কষ্ট সহ্য করেছেন। চোখের সামনে একের পর এক আত্মীয় মারা গিয়েছেন, এছাড়াও জামাইয়ের অদ্ভুত তান্ডব তো ছিলই। বিশাল বড় পরিবার হলে যা যা উৎপীড়ন সহ্য করতে হয়, তার সবকটাই নীরবে মেনেছেন, সয়েছেন। এসব সয়ে সয়েই রবীন্দ্রনাথের ভিতরের রবীন্দ্র-কাঠিন্য । কিন্তু ওই লোকটাও কি কখনো দুর্বল হয়নি? মানুষ তো দুর্বল হয়। মানুষই তো দুর্বল হয়। তিনিও হয়েছেন। পূজা পর্যায়ের কিছু গানে সেই আকুলতাই যেন ফুটে ওঠে। উপরে উল্লেখ করা প্রথম গানটি অনেক প্রেমিককে (প্রেমিকাকেও) বিরহে গাইতে শোনা যায়। আসলে এটা বিরহেরই গান। তবে রবীন্দ্রনাথের আঙ্গিকে যখন পড়ছিলাম, বারবার তার মঙ্গলময়ের কথাই মনে আসছিল। মঙ্গলময়, আনন্দময়ের উল্লেখ তার লেখায় ভুরিভুরি। যেন মনের মেঘের মাঝখানে রবীন্দ্রনাথ তাকেই খুঁজছেন। তাই লিখছেন ‘হারাই হারাই সদা হয় ভয়’। এই গান গায়নরত প্রেমিকরাও হয়ত প্রেমিকার সম্পর্কে এমনটিই ভাবেন (উল্টোটাও হতে পারে, মনে মনে ধরে নিন)। হাতছানির তো আর অভাব নেই। তবে মানুষ কি আর চকিতে হারায়? প্রেমিক/প্রেমিকা একটু সময় তো নেবে হারাতে!! এই গানের আর দুএকটা লাইন বলি। একজায়গায় কবি বলছেন, মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না। এই মোহ যে প্রেমিকদের মনে কি অর্থে ধরা দেয় কে জানে। তারা যদি জানত কোন মেঘকে তারা চোখ টাটিয়ে গেয়ে দিল লাইনটা! প্রেম আছে মোহ নেই, এমন নিরামিষ রসায়ন বাংলার বাইরে হলে তাও বিশ্বাস করা যায়। যা হোক, গাইতে গাইতে যখন শেষের দিকে আসা যায়, তখন এমন একটা লাইন আসে ‘তুমি যদি বল, এখনি করিব বিষয় বাসনা বিসর্জন, দিব শ্রীচরণে বিষয়’। এ শুনে প্রেমিকা গদগদচিত্ত হলেও প্রেমিকের এমন ভন্ডামোর কারণটা ঠিক আন্দাজ করা যায় না। যা কখনই পারবি না, তা শুধু শুধু বলা কেন বাপ! এরপর যখন বলা হয় ‘ দিব তোমার লাগি বিষয় বাসনা বিসর্জন’ তখন ব্যাপারটা আরও গন্ডগোলে হয়ে দাঁড়ায়। এক্ষেত্রে প্রেমিকা কিঞ্চিৎ বিরক্তও হতে পারেন।
    এরপরের গানটা নিয়ে বিশেষ কিছু বলার নেই। চারপাশের হাতছানি, অসাধু পরিবেশের কারণে প্রেমিকরা ‘মেঘ বলেছে...’ গেয়ে নিজেদের নিবিড় আনুগত্য দেখাতে মাঝে মধ্যেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। গানটার আগাপাশতলা একটা লাইনের অর্থও তেমন বোঝা যায় না। বোঝার দরকারও নেই। প্রেম বলে যে 'যুগে যুগে তোমার লাগি আছি জেগে', এই একটা লাইনই প্রেম এগজিভিশনের জন্য যথেষ্ট।
    এই দুটো গান নিয়ে এত বকবকানোর কারণ কী। এবারে একটু সার্বিকভাবে বলা যাক। প্রেমের জন্য গান তো প্রচুর পয়দা হচ্ছে। তাও রবীন্দ্রনাথের গান বাঙালির কাছে একটা আলাদা ধুকপুক। এতদূর ঠিক আছে, খারাপ লাগে তখনই যখন রবীন্দ্রনাথের যে কোনও গানই প্রেমের লাইনে ফিট করাতে গেয়ে দেওয়া হয়। সুরটা ভালো বা কথাগুলো দুরন্ত বলেই তা প্রেমের গানে লাগিয়ে দিলাম, এমন প্রবণতাই অধিকক্ষেত্রে কাজ করে। তবে সবসময় তা কি আর খাটে? বাংলা গানে লিরিক্সের প্রাধান্য চিরকালই ছিল। রবীন্দ্রনাথের গানে তো ছিলই। তাই তাকে অস্বীকার করলে বা শুধু একটা দুটো লাইনের ভিত্তিতে মুড়ো থেকে ল্যাজা টোটাল গানকে বেমানান ভাব-এ বাঁধলে একটা কিম্ভুতকিমাকার ব্যাপার দাঁড়ায়। চার বছরের ছেলের গায়ে এক্সএল সাইজের জামা গলানোর মতো পরিস্থিতিটাও যায় ঝুলে।
    মন বড় বিড়ম্বনার বস্তু। মানুষকে কখন কেমন রাখে, তা বোঝা যায় না। রবিবাবুর এই গানদুটো পড়ে মনে হয় যেন মনের সেই দুর্বল মুহূর্তে দাঁড়িয়েই লেখা। যখন মনকে অন্য এক স্থিতিশীল অস্তিত্বের পায়ে কিছুক্ষণ রাখার প্রয়োজন পড়ে‌। মনকে নিজের আয়ত্তে এনে তাকে দিয়ে শুভ কাজ করাতেই তো পৃথিবীজুড়ে এত তোলপাড়। এত ধর্ম, এত গান, এসবই তো মনকে অবিচলিত করে কল্যণের কাজে লাগানোর জন্য। এসব কথাই যেন কবির গানে খুব কম কথায় বুঝে নেওয়া যায়। উপলব্ধি করা যায়। তাই এই গান যখন গীটার বাজিয়ে কলেজ ক্যান্টিন/ রকের আড্ডায় প্রেম নিবেদনে খাটানো হয়, তখন অবাক লাগে। যেন একটু শিক্ষার প্রকাশও হল, প্রেমের প্রদর্শনও হল। বোঝো দশা!
    রবীন্দ্রনাথ থাকলে এই ব্যাপারটা অ্যাপ্রুভ করতো কিনা জানা নেই, তা বলে আমিও বিশ্বভারতী নেই। ‘মোরাল পুলিশি’ বা পাহারাদার কোনওটাতেই আগ্ৰহ নেই। তবে এটুকু বলাই যায়, বাঙালিই যখন, গানগুলোর ভিতরের সুরটা একটু বুঝে দেখতে কি ক্ষতি? সবসময় জীবনে প্রেম বা প্রেমিকা থাকবে তা তো নয়। সবসময় সুখে শান্তিতে দিন কাটবে এমনও নয়, সে সময়ের জন্য রবীন্দ্রনাথের এই গান অসীম মনঃশক্তি নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়। এটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনেকের মুখে শুনেছি তাদেরও তেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাই আসরে মন কাড়তে এই গানগুলো না গাইলেই নয়? এমনিতেও রবীন্দ্রনাথের এই গানগুলো একটু মন দিয়ে শুনলে বোঝা যায়, এগুলো ওয়ান টু ওয়ান কনভারসেশনের মতো করে লেখা। তাই সবসময় আসর মাঝে তীর ঠিক জায়গায় লাগাতে এগুলো ক্লিক নাও করতে পারে। বরং দুর্বল সময়ের জন্য তুলে রাখলে গানের আসল রূপ ধরা দিলেও দিতে পারে।
    *অ্যান্টাসিড*
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন