এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • নারীদিবসঃ ২। ‘ঘরকন্যা’দের বেতনক্রম

    তির্যক লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ৭৫৮৪ বার পঠিত
  • হ্যাঁ, নারীকে নিয়েই কথা আসে সারাবছর, অজস্র কথা। জীবন এফোঁড়-ওফোঁড় করে চলে যায় নানারঙের কথা। সেইসব কথার পিঠে চড়ে আসে ভাবনারা। প্রশ্নেরা। ঘুরে বেড়ায় আলগোছে। নারীদিবসের আশেপাশে এইসব ভাবনাগুলো জমাট বাঁধে, মাথায় চড়ে বসে।  আমাদের তাগাদা দেয় পুরোনো পড়া ঝালিয়ে নিতে। আর সেই পুরোনো পড়া পুরোনো ভাবনা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই কোথাও কোথাও নতুন কথাও জুড়ে যায় জায়গামত। এবারের পুরোনো পড়া ঝালানোর সময়েই পড়লাম স্বাতী ভট্টাচার্যের ‘ঘরোয়া’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ৮ই মার্চ)। খোদ নারীদিবসে দাঁড়িয়ে একজন নারীই যখন মেয়েদের ‘গুছিয়ে সংসার করার মোহে’র দিকে আঙুল তোলেন, তখন একটু ধাক্কা খেতে হয় বইকি, মানে এইটা ঠিক পুরোনো পড়ার সিলেবাসের মধ্যে ছিল না তো বরং (এই সাংবাদিকের লেখা) যেসব পুরোনো পড়া মনে পড়ে যায়, সেখানে উনিই সওয়াল করে এসেছেন মেয়েদের ঘরোয়া কাজের মূল্যায়নের পক্ষে; সারামাসের রান্নার লোকের মাইনের সঙ্গে বা বারো ঘন্টার আয়ার মাইনের সঙ্গে ড্রাইভার বা মিস্ত্রীর মাইনের একেবারে সোজাসুজি তুলনা করেছেন। তাহলে কি দুটোই সত্যি ! এইখান থেকে শুরু হয়ে যায় আমাদের লেখাপড়াশোনা যার সরল অর্থ হল আজকের পড়ার মধ্যে নতুন ও পুরোনো সবরকমের কথাই থাকবে, নারী ও আনাড়ি সকলের কথাই নামে ও বেনামে থাকবে।


     


    মেয়েলী ও ঘরোয়া


    তবে মেয়েদের যাবতীয় ‘মেয়েলী’ কাজকারবারের মূল্যায়নের কথা উঠলে প্রথমে একতরফা চাট্টি কথা শুনতেই হবে। কারণ সোজা কথাটা হল, যুগ যুগ ধরে যেসব কাজ মেয়েরাই পেরে এসেছে আর করে এসেছে সংসারে সেগুলোকে যথেষ্ট মূল্যবান বলে কেউ ভাবেন নি আর তার কোনও স্বীকৃতিও সেভাবে দেননি। বাড়ির পুরুষটি বাইরে কাজ করেন, তাঁর কাজটা গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর বিশ্রাম এমনকি তাঁর বিনোদনটিও গুরুত্বপুর্ণ। কিন্তু বাড়ির মহিলাটিকে ‘হাউসওয়াইফ’ থেকে ‘হোমমেকার’ যে নামই দিন না কেন তাঁর কাজটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন, আর কতটুকু স্বীকৃতি দিয়েছেন, সে প্রশ্নটা এবার নিজেকেই করুন। সেটা কাপড়ে সূক্ষ্ম ফোঁড় তুলে নকশা তোলাই হোক কি রোজকার থোড়-বড়ি-খাড়ার মধ্যে থেকেই বিচিত্র পদের রান্না হোক, বা বড়ি-আচার-উলবোনা-আলপনা থেকে ঘরদোর পরিপাটি সাজিয়ে রাখা্র নিপুণ ঘরকন্না হোক। ভেবে দেখেননি এই কাজগুলোও নেহাৎই প্রয়োজনভিত্তিক নয়, এদেরও কিছু নান্দনিক মূল্য আছে, এদের পেছনেও কিছু চিন্তা-ভাবনা-সৃজনীশক্তি খরচা হয়, যা সকলের ক্ষেত্রে ঠিক একইরকম নয়। অর্থাৎ ওই যে সর্ষেবাটা-মোচাকাটা থেকে শুরু করে সুগোল ধপধপে লুচি সমেত যা যা আপনি ‘আহা মায়ের হাতে কি চমৎকার হত !’ ভেবে এখন আপ্লুত হয়ে পড়েন, আর ভাবেন ঠিক মায়ের মত কেউ পারে না, ভেবে দেখবেন যখন নিয়মিত সেগুলো পেয়েছেন, তখন সেগু্লো কতটা দামী ভেবেছিলেন, আর তার জন্য  মাকেই বা তখন কতটুকু ধন্যবাদ দিয়েছিলেন ? আর আপনার ঘরে যে মহিলা ‘মায়ের মত’ পারেন না, তিনি যা যা পারেন সেটাই বা এখন কতটুকু মনো্যোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন ? তিনি সারাদিন বাইরে না গিয়ে ঠিক কি কি করেন, বিশ্রাম পেলেন কিনা বা ইচ্ছে থাকলেও কি কি করে উঠতে পারলেন না, সে খবরই বা কতটা রেখেছেন ? খেয়াল করলে দেখবেন দুদিনের জায়গায় তিনদিন একঘেয়ে রান্না খেতে হলে বা ঘরদোর অপরিস্কার বা অগোছালো থাকলে আপনারও ভালো লাগছে না, লাগার কথাও নয়। তখন আপনিই বলে উঠছেন (উচ্চগ্রামে কিম্বা মনে মনে) ‘সারাদিন কি যে করে’। কিন্তু যখন সব কিছু ঠিক ঠিক চলে তখনও মনে করেন ‘সারাদিন তো ঘরেই থাকে...’ অর্থাৎ ঘরের কাজটা ঠিক যেন কোনও কাজই নয়। আপত্তিটা এখানেই। 


    না, এই আলোচনায় কর্মরতা মেয়েদের কথা এখনই আনছি না। আর মনে রাখতে বলছি যে এই লেখা একটা বিস্তৃত মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে লেখা যেখানে মেয়েরা মূলতঃ ঘরের কাজ করেন এবং সব ঘরের সব কাজই করেন। তাই যে সব উচ্চশিক্ষিত নেটিজেন এই লেখা পড়ছেন আশা করব তাঁরা নিজের পরিবারের সঙ্গে মিল না পেলেই এই সব কিছুকে যেন কষ্টকল্পনা ভেবে বসবেন না। 


    যে কথা বলছিলাম, এই আলোচনা মেয়েদের ওপর সংসারের চাপ নিয়ে নয়, চাপ পুরুষের ওপরও কিছু কম নয়। শ্রম বন্টনের নিয়ম মেয়েরা (বা যিনি ঘরে থাকেন) তিনি ঘরের কাজ করবেন, এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু সেই কাজকে এবং সেই সম্পর্কিত দক্ষতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব না দেওয়াটা যে এক রকমের অজ্ঞতা, সেটাই এখানে বলবার কথা। মেয়েরা যে স্রেফ ‘হৃদয়তাপের ভাপে ভরা ফানুস’ তাদের হি-হি হাসি কিম্বা চোখের জল, সকলই নেহাৎ অকারণ, তাতে বিশেষ মনোযোগ না দিলেও চলে, এই ধারণা বংশানুক্রমে চারিয়ে গেছে সমাজে। মেয়েদের শাড়ি-গয়নার আলোচনাই হোক বা রান্নাবান্না বা শাশুড়ি-ননদের নিন্দে, সবই শুধুমাত্র ‘মেয়েলী’ বলেই যেন তা ছেলেদের গাড়ির ‘মডেল’(উভয় অর্থেই) বা বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে আলোচনা কি অফিসের বসের / সহকর্মীদের নিন্দেমন্দ থেকে ইতরগোত্রীয়। অথচ যে যে জগতে থাকে সে তো সেই জগতের কথাই আলোচনা করবে, কোন জগতটাই তো মিথ্যে নয়, অর্থহীনও নয়, এর মধ্যে উচ্চ-নীচ ভেদাভেদ আসছে কোথা থেকে ? সেসব কেউ ভেবে দেখে না। এমনকি মেয়েরাও না।


     


    বাইরে আসা


    হ্যাঁ, ভেবেচিন্তেই বললাম। মেয়েলী গুণপনাকে এই যে পাইকারী হারে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা, এই অবহেলা পেতে পেতেই একটা সময়ে মেয়েরাও নিজেদের ‘মেয়েলী গুণ’গুলোকে (এবং মেয়েলী কাজগুলোকে) মূল্যহীন ভাবতে শুরু করেছে। ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’র কথা ভাবতে শুরু করেছে যার একমাত্র অর্থ হল বাইরে বেরিয়ে ‘পুরুষের মত’ উপার্জন করা। আজ যে মেয়েরা চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ-পঞ্চাশের কোটায়, তারা যে একদিন সংসারের প্রয়োজনে নয়, নিজের প্রয়োজনেই দলে দলে বেরিয়ে এসেছিল, তার একটা কারণ কিন্তু এই যে তাদের শিশুকালে অনেকেরই মায়েরা ভেবেছেন তাঁর মেয়ে যেন তাঁর জীবন না পায়। অর্থাৎ শুধুমাত্র সংসারের ‘থ্যাঙ্কলেস জব’-এই মেয়েরা আটকে থাকুক সেটা মেয়েরাই (মানে মায়েরাই) চাননি, চেয়েছেন যে কাজ অর্থমূল্যে বিচার হয় সেইরকম কিছু করতে। যার ফল হল আজকের কর্মরতা মহিলা প্রজন্ম, যাঁরা সংসার ও চাকরী মোটামুটি নিপুণভাবেই সামলে নেন কিন্তু হয়তো ওই তথাকথিত ‘মেয়েলী’ কাজগুলোর জন্য খুববেশী সময় দিতে পারেন না। একটা সময় অবধি যেটা অলিখিত নিয়ম ছিল, অর্থাৎ মেয়েরা শুধু ঘরের কাজ করবে, সন্তানের দেখাশোনা করবে, সেটা নিঃসন্দেহে খুব খারাপ ছিল। সেই নিয়ম চুলোয় গেছে, মেয়েরা স্বাধীনভাবে কাজকর্ম করছে, নিজের বিদ্যেবুদ্ধির সদব্যবহার করছে, এর কোনও বিকল্প হয় না। কিন্তু এইখানে এসে একটা প্রশ্ন খুব তীব্র হয়ে ওঠে, স্বাধীন হতে গেলে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে গেলে বাইরে এসেই কাজ করতে হবে কেন ? বাইরে কাজ করেন না যে মহিলা, তিনি কি নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নেই ? যাঁর নিরন্তর সেবা বা পরিষেবাটুকু বাদ দিয়ে তাঁর সংসার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না, তিনি বাইরে না বেরোনো অবধি নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন এমনটা ভাবতে পারেন না কেন ! তার মানে শুধু বাইরে বেরিয়ে উপার্জন না করা অবধি একজন নারী যথার্থ স্বাধীন হচ্ছেন না, তাঁর গুণাবলীর এমনকি মতামতেরও কোনও মূল্য থাকছে না, যদিচ তিনি গৃহকর্ম দ্বারা সংসারকে একরকম ধারণ করেই আছেন। এতদ্বারা গৃহকর্মের মূল্যের যে অবনমন হচ্ছে ব্যাপারটা কি সত্যিই ততটাই অর্থহীন ? দারুণ রান্না বা সেলাই করতে পারা, ঘর সাজাতে পারা, গান গাইতে পারা, এইসবের কি সত্যিই কোনও মূল্য নেই ! 


    হ্যাঁ, ততটাই অর্থহীন না হলেও ততটাই মূল্যহীন, যতক্ষণ না সেটা অর্থমূল্যে বিচার হচ্ছে। না হলে এত বছরে এত কিছু বদলে গেল কিন্তু কেউ শুধু সংসারের কাজ করাকে একটা পেশা হিসেবে দেখতে শিখল না কেন ? আর যিনি নিজে সংসারের উনকোটি কাজ করে চলেছেন, তিনিই বা কেন ‘আমি কিছু করি না’ জাতীয় হীনমন্যতায় ভোগেন ? কেনই কোন মহিলার স্বামী ঘরের কাজ করলে তিনি সেটা স্বীকার করতে লজ্জা পান ? আমি বেশ কয়েকজন মধ্যবিত্ত বাড়ির মহিলার কথা জানি, যাঁরা শুধু ‘নিজের হাতে রোজগার’ করার তাগিদে কেউ দিনের শেষে ব্লাউজে বোতাম পরাচ্ছেন, কেউ কোন কোম্পানীর প্রসাধন সামগ্রীর এজেন্সী নিয়েছেন, কেউ কোন ব্যাঙ্কের জনসংযোগ বাড়াবার জন্য ফোন করছেন। এই কোন কাজই তাঁদের বিশেষ পারদর্শীতার চর্চার জন্য নয়, ভালবেসে করা কাজ নয়, এই কাজ করে যা হাতে আসে তা সংসার খরচে বিশেষ সুবিধে ঘটাবার মত নয়, কিন্তু সেটা তার ‘নিজের রোজগার’। সেইটুকু রোজগারের সময় বার করার জন্য তাঁরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, স্বামী-ছেলেমেয়েদের কাছে হয়তো নানারকম কথাও শোনেন, কিন্তু তাঁরা জানেন এইটা ছেড়ে দিলে তাঁর নিজের উপার্জন কিছু থাকবে না। স্বামীরা হরদম বলবেন ‘তুমি কাজটা ছেড়ে দাও, ওইটুকু টাকা আমিই তোমায় দেব’, কিন্তু আসলে তা দেবেন না। কারণ গৃহশ্রম অ-মূল্য নয়, মূল্যহীন। সেইটুকু উপার্জন না করতে হলে সেই মহিলা হয়তো সেই সময়ে নিজের শখেই কিছু সেলাই করতেন, নতুন কিছু রান্না করতেন, ঘর সাজাতেন, বা গান নিয়ে বসতেন, কিন্তু সেই ‘মেয়েলী’ কাজের কোনও অর্থমূল্য নেই, তা তাঁকে স্বাভাবিক মুক্তি দিতে পারেনি, তাই তাকে বিসর্জন দিতে হল স্রেফ উপার্জনের চাপে। অথচ সেই মেয়েদের হাতের তৈরী বড়ি-আচার-নাড়ু-পিঠে বা হাতে সেলাই করা আসন-কাঁথা-সুজনিই আপনি কিনে আনছেন মেলা থেকে, কিঞ্চিৎ গর্বিত হয়েই দেখাচ্ছেন সবাইকে, তখন তা অবশ্যই ‘মূল্যবান’।


     


    আসল কথাটিঃ বেতনক্রম


    যাঁরা ভাবছেন এইবার ঝোলা থেকে বেড়াল বেরোল বলে, তাঁদের সবিনয়ে জানাই, এক্কেবারে ঠিক কথা ভেবেছেন, এই বেড়ালটিকে যথাস্থানে বের করার জন্যই অর্থাৎ গৃহশ্রমকে সবৈতনিক করে তোলার দাবীকে যুক্তিযুক্ত ও যাথাযথভাবে পেশ করার জন্যই এত গৌ্রচন্দ্রিকা। একান্ত বাসনাটি হল যে এই ব্যাপারটি নিয়ে একটু ‘সলিড’ চিন্তাভাবনা হোক। কারণ এই বিষয়টা নিয়ে মূলতঃ কথা ছোঁড়াছুঁড়িই শুনতে পাই, কিন্তু গঠনমূলক বাস্তবসম্মত কিছু প্রস্তাব অন্ততঃ আমার চোখে পড়েনি। বরং এই প্রশ্ন উঠলেই সবাই গেল গেল রব তোলেন যেন এই বিষয়টির পণ্যায়ন হলেই সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়বে, গৃহকর্ম যে ভালোবাসার বিনিময়মূল্যে দেওয়া-নেওয়া হয় তা নষ্ট হবে। কিন্তু ভেবে দেখুন গায়ক, লেখক, বিজ্ঞানী, শিল্পী সবাই যদি পারিশ্রমিকের বিনিময়েই ভালোবাসার কাজ করে থাকেন তবে ঘরের কাজের ক্ষেত্রে আলাদা হবে কেন ? উপরন্তু গৃহকর্ম সবৈতনিক হলে মেয়েদের এই ‘নিজের পায়ে দাঁড়ানো’র জন্য বাইরে বেরোনোর দরকার কমবে আর সংসারের কাজে সময় দেওয়া বা ভালবাসাও বাড়বে বই কমবে না। তবে হ্যাঁ, কারণে অকারণে ‘রোজগার তো করতে হয় না, তাহলে বুঝতে!’ বলার কু-অভ্যেসটা আপনাকে ছাড়তে হবে। সত্যি বলতে কি ৫২ গুন ৭ দিন সংসারের ‘ভালবাসার দাবী’ যাঁরা মেটাচ্ছেন দিনের শেষে তাঁদের মুখে ‘ভূতের বেগার খাটার’ হতাশা তো কখনো না কখনো বেরিয়েই আসে, তাই মনকে চোখ না ঠেরে তাঁর প্রাপ্যটা স্বীকার করেই নিন না ! 


    তবে বেতনের পরিস্কার একটা কাঠামো থাকা দরকার। এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার যে এটা তার বেতন, উপহার বা হাতখরচা নয় আর স্বামী এখানে দাতা নয়। যে ভাবে স্বামীর অবর্তমানে তার পেনশন স্ত্রীর কাছে আসে, ডিভোর্সী স্ত্রীর কাছে খোরপোষের টাকা আসে, তেমনিই যেকোন বিবাহিত পুরুষের বেতনের একটা অংশ তার স্ত্রীর কাছে আসবে যেটা ঘরের কাজ করার জন্য তাঁর বেতন, তাঁর নিজস্ব উপার্জন। তিনি যদি ঘরের কাজের জন্য পরিচারিকা রাখতে চান তো সেই বেতন থেকেই পরিচারিকার মাইনে হবে। (ফলে পুরুষটিও কিছুটা শান্তি পাবেন এই ভেবে যে তাঁর অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে)। কিন্তু এছাড়া সেই টাকা মহিলাটি কিভাবে খরচ করবেন, কি কিনবেন, কাকে দেবেন সেটা তাঁর ব্যাপার। মহিলাটি চাকরী করলে এই বেতন বন্ধ হয়ে যাবে, সে ক্ষেত্রে ঘরের কাজ তাঁরা দুজনে ভাগ করে করবেন না ‘আউটসোর্স’ করবেন, সেটা নিজেরা ঠিক করবেন। তবে হিসেব মত ‘আউটসোর্সিং’-এর খরচ দুজানেরই দেওয়া উচিৎ। এই পদ্ধতি মেনে চললে যে মহিলা নিজের হাতে সব করেন এবং যিনি সব কাজের জন্যই কাজের লোকের ওপর নির্ভর করেন তাঁদের মধ্যে নিজস্ব উপার্জনের ভিত্তিতে একটা তফাৎ থাকবে, সেটাও যুক্তিযুক্ত। আর যদি কোন সংসারে মহিলাটি বাইরে কাজ করেন, এবং স্বামীটি ঘরে থাকেন, তবে একইভাবে তাঁর বেতনের একটা অংশ তাঁর স্বামীর কাছে বেতন হিসেবে আসবে, সেটাও কোনোভাবেই ‘বৌ-এর পয়সায় খাওয়া’ হিসেবে বিবেচ্য হবে না। 


    এই লেখায় ভুল বোঝার বহু সুযোগ আছে, সে সব মাথায় রেখেই লিখছি। এই লেখা থেকে কেউ যদি মেয়েদের চাকরী করার বিরোধি বা মেয়েদের গৃহকর্ম অভিমুখী হবার দরকারী জাতীয় কোন বার্তা পান তো সেটা নেহাৎই লেখকের বোঝানোর ত্রুটী। এমনকি এই লেখা সরাসরি নারী-পুরুষ মেরুকরণের কোনো ধারণাকেও প্রশ্রয় দিচ্ছে না। সাধারণভাবে মহিলারাই গৃহকর্ম করেন বলে এখানে বার বার মহিলাদের কথাই আসছে কিন্তু এর মূল উপজীব্য হল গৃহকর্ম। গৃহশ্রমকে একেবারেই গুরুত্বহীন ভাবার যে সামাজিক নির্মাণ সেটা এবং তার প্রভাব (মূলতঃ মেয়েদের ওপর) নিয়ে এই লেখায় একটু চিন্তাভাবনা করার চেষ্টা হয়েছে। যে মেয়েরা বাইরে কাজ করতে চান, নিজেকে প্রমাণ করতে চান করুন, কিন্তু যারা জমিয়ে সংসার করতে ভালবাসেন তাঁরাও যেন নিজের পায়ে না দাঁড়াবার হীনমন্যতা থেকে বেরোতে পারেন। আর সে জন্য তাঁদের নিজস্ব মেয়েলী গুণপনাগুলোকে বিসর্জন দিতে না হয়। 


     


    বিপদসঙ্কেত


    এই পদ্ধতি একেবারে ত্রুটিহীন এমন দাবী করা যায় না এবং সমস্ত পদ্ধতির মতই এখানেও কিছু ধোঁয়াশাপূর্ণ জায়াগা থাকবে, সেগুলোও একটু ভেবে রাখা ভালো। যেমন কোন কোন কাজ ঠিক গৃহশ্রমের মধ্যে পড়বে, সেটা ঠিক করাই সবচেয়ে কঠিন। যাঁরা ব্যাবসা করেন তাঁদের স্ত্রীরা বেতন কিভাবে পাবেন বা গৃহবধুটি যদি কাজের ক্ষেত্রে বাড়ির অন্যন্য সদস্যের (শাশুড়ি, ননদ)সাহায্য নেন তবে বেতন ভাগাভাগি কি ভাবে হবে সেটা নিয়েও পরিস্কার করে কিছু ঠিক করা মুস্কিল । তাছাড়া গৃহ-পরিষেবা ক্রয়যোগ্য হলে পুরুষটির দাবী হয়তো বেড়ে চলবে, উল্টোদিকে মেয়েদের ‘পারব না’ বলার সুযোগ কমে যাবে। এতে মেয়েদের ওপর চাপ কার্যতঃ বেড়ে যেতেও পারে। তবে আমার ধারণা একটা মানুষ কতটা ‘ডিম্যান্ডিং’ হবেন সেটা কিছুটা তাঁর চরিত্রগত। যিনি এমনিতে নিজের টুকিটাকি কাজ করে নেন, শুধুমাত্র স্ত্রী মাইনে পাচ্ছে বলেই নিজে জলটুকুও ঢেলে খাবেন না, এমনটা হবার কথা নয়। আর তেমন হলে সেই প্রতিবাদ মহিলাটিই করবেন, তিনি তো স্বাবলম্বী। 


    তবে ওই যে কথা বলা আছে ওই ‘ঘরোয়া’ প্রবন্ধে, যে মেয়েদের চুটিয়ে সংসার করার এক তীব্র আকর্ষণ, সেটা কিন্তু সমস্যার আর একটা দিক। ওই ‘ঘরোয়া’ বিষয়ে কথা বলেছিলাম অনেকের সঙ্গে, দেখা গেল পুরুষেরা অনেকেই রে-রে করে উঠলেও লেখাটার সঙ্গে মেয়েরা (ব্যক্তিগত অভজ্ঞতার মাপে) বিভিন্ন মাত্রায় একমত, মানে এই সংসারের ঝুল ঝাড়া-কাপড় কাচা-পর্দার সঙ্গে চাদরের রঙ মেলানো (কাজগুলো ঠিক এইই নয় সব সময়, বদলে যায় এক নারী থেকে অন্য নারীতে) এতে মনে প্রসারতা বাড়ুক না বাড়ুক মেয়েদের কাছে যে এগুলো খুব জরুরী এবং সেই জরুরী ভাবাটা মেয়েদের এগিয়ে যেতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, সেটা মেয়েরা কেউ  সরাসরি অস্বীকার করতে পারছেন না। এই কাজগুলো চলনসই ঘরনের অর্থকরী হয়ে উঠলে মেয়েরা অনেকেই হয়তো বাইরের জগতের ‘চ্যালেঞ্জিং’ কাজে সেভাবে দলে দলে এগিয়ে নাও যেতে পারেন। আবার যেহেতু স্বামীর বেতন থেকে স্ত্রীর বেতন হচ্ছে, তাই স্ত্রীকে চাকরী করতে না দেওয়াটা স্বামীর অধিকারের মধ্যে পড়ে যেতে পারে (মানে স্বামী সেটা ভেবে ফেলতে পারেন !)। সেটা কি তথাকথিত ‘নারীমুক্তি’র বিরোধী হয়ে উঠবে বা বাইরের জগতে যে নারী-পুরুষ সাম্য আস্তে আস্তে গড়ে উঠছে, তাকে টাল খাইয়ে দেবে ? বিশেষ করে ততটা অর্থকরী নয় এমন যে কাজগুলো মূলতঃ সময় কাটাবার জন্যই মেয়েরা করে থাকেন, যেমন বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ, বৃদ্ধ, নারী ও শিশুকল্যাণেরই তো কাজ বেশীর ভাগ, সেসবও যদি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়, সেও তো খুব ভালো হবে না ! অনেক সময় মেয়েরা প্রথম দিকে কাজের জগত থেকে সরে দাঁড়ালেও, সংসারের চাপ কিছুটা কমলে আবার কাজের জগতে ফিরে আসতে চান, বেতনক্রম চালু হয়ে গেলে সেই তাগিদটাও কমে যাবে না তো ! 


    তবে এইসব প্রান্তিক সমস্যার কথা ভেবে তো কেন্দ্রীয় সমস্যাটাকে দুরে সরিয়ে রাখা চলে না। আসলে একটা পদ্ধতি বাস্তবায়িত হতে শুরু না করলে তার ত্রুটিগুলো বোঝা যায় না, সমস্যাগুলোরও মোকাবিলা করা যায় না। তাই সাহস করে মেয়েদের বেতন দেওয়াটা চালু করে না ফেললে কিচ্ছু বোঝা যাবে না। তাই আসুন আমরা এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করি, কারণ আজকের আলোচনাই কালকের তুলোধোনা (বিরোধি-পক্ষকে) হয়ে উঠবার ক্ষমতা রাখে !


    পুনশ্চঃ আগেই বলেছি এই লেখা আসলে অনেকের লেখা। অনেকের মতামত, বক্তব্য শুধুমাত্র গুছিয়ে তোলা, তাই একে বলা যায় আসলে লেখা-পড়া-শোনা। এই বিষয়টা নিয়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই, জোরদা্র তক্কাতক্কি যাই হোক সব সেই অ্যাকাউন্টেই জমা ড়বে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ১০ এপ্রিল ২০১৫ | ৭৫৮৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:২৩86315
  • কিন্তু সেরকম তো প্রচুর লোকজনই করেন।
  • জলপাই | 122.79.37.81 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৪86317
  • আমার আসলে খেলেই ঘুম পায় আর ঘুমোলেই খিদে পায়। সময় টের পাই না।
  • জলপাই | 122.79.37.81 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৪86316
  • আমার আসলে খেলেই ঘুম পায় আর ঘুমোলেই খিদে পায়। সময় টের পাই না।
  • জলপাই | 122.79.37.81 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৫86319
  • আমার আসলে খেলেই ঘুম পায় আর ঘুমোলেই খিদে পায়। সময় টের পাই না।
  • জলপাই | 122.79.37.81 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৫86318
  • আমার আসলে খেলেই ঘুম পায় আর ঘুমোলেই খিদে পায়। সময় টের পাই না।
  • জলপাই | 122.79.37.81 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৪৭86320
  • এ বিভ্রাটের জন্য আমি দায়ী নই। তবে ক্ষমাপ্রার্থী।
  • একক | 24.99.53.18 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৪:৫০86321
  • এবার একটা উল্টো প্রশ্ন রাখছি । দেখা যাচ্ছে মেয়েরা ঘরের কাজ করেন যার জন্যে তিন বা পাঁচ ঘন্টার বেশি লাগার কথা নয় । বাচ্চা একটু বড় হয়ে গেলে আর কোলেপিঠে করার ঝামেলাও নেই । তাহলে এই যুগ যুগ ধরে এত ফাঁকা সময় পেয়েও ইন জেনেরাল মেয়েদের প্রডাকটিভিটি বাড়লো না কেন ? মানে যাঁদের ইঞ্জিনিয়ার/বিজ্ঞানী/চ্যাতার্দ হওয়ার হচ্ছেন সেটা বলছিনা কিন্তু ।এইযে যাঁরা এক্সট্রা মাইলেজ টা পেলেন সেটাকে প্রডাকটিভ কাজে কনভার্ট হলে তো অনেককিছু হওয়ার কথা । কিন্তু দেখা যাচ্ছে আলটিমেটলি টিভি সিরিয়াল এর ভিউআরশিপ + ফিমেল ম্যাগাজিন এর বিক্কিরি বাড়া ছাড়া এক্সট্রা কিছু ভ্যালু এড হোম স্টেইঙ মেয়েরা করেননি ।

    তাহলে ,বাড়িতে থাকা ব্যাপারটাই কি মানুষ কে আনপ্রডাকটিভ করে দেয় ?
  • hu | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:০১86322
  • যুগ যুগ ধরে ফাঁকা সময় পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে বড় সংসারে শুনেছি দুপুরের ভাতের বাসন মাজা শেষ করেই রাতের জন্য আটা মাখতে বসে যেতে হত। ফ্রিজ ছিল না। একবারে বেশি করে রান্না করে রাখাও সম্ভব ছিলনা। আর প্রডাকটিভ কাজ হয়নি কে বলল? আমার ঠাকুমা অপূর্ব সব সেলাই করতেন। আসন বুনতেন। যাদের রান্নার নেশা ছিল তারা বড়ি-আচার এসব বানাতেন। অক্ষদির লেখাতেই পড়েছি একরকম মিষ্টির কথা - যার প্রতিটা টুকরো ঝিরিঝিরি চিঁড়ের আকারে বানানো হত। সেসব বানাতে নিশ্চয়ই অনেক সময় লাগত। আমি যে তিনঘন্টার হিসেব দিলাম সেটা রোজকার বিশেষত্বহীন ঘরকন্নার হিসেব। নিজে একসময় চাকরী ছেড়ে ঘরে বসেছিলাম। দৈনন্দিন কাজগুলো করতে ওর চেয়ে বেশি সময় লাগত না।
    তবে নিজের ক্ষেত্রে দেখেছি বাড়িতে বসে থাকলে আনপ্রোডাক্টিভ হয়ে যাই। এমনকি কফিশপে বসে ভালো কনসেনট্রেট করতে পারি। ঘরে বসে পারিনা। কিন্তু এটা ব্যক্তিবিশেষে এক একরকম। জেনারালাইজ করা যাবেনা।
  • Atoz | 161.141.84.175 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:০৭86324
  • আসলে ব্যাপারটা খুবই জটিল।
    দাড়িদাদুও জানতেন।
    "যাহা পাই তাহা ভুল করে পাই/ যাহা চাই তাহা পাই না।" ঃ-)
    তবে কিনা তিনি বড়লোক ছিলেন, মাস এনে মাস খাওয়ার চাপ ব্যাপারটা হয়তো সেভাবে ---
  • S | 160.148.14.8 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:০৭86323
  • মেয়েরা যে করেনি কিছু সেটা কি করে জানা গেল? মানে কোনো মেয়ে হয়তো গল্প লিখল বা ছবি আঁকলো কিন্তু কাউকে না দেখিয়ে (পরিবারের অন্যদের থেকে বাধা আসতে পারে সেই ভয়ে) ছিঁড়ে ফেলে দিল। আর রান্নাবান্না, আচার বানানো সেলাই-ফোঁড়াই ইত্যাদি কি প্রোডাক্টিভিটি হিসাবে ধরা হবে ? প্রোডাক্টিভ মানুষের ডেফিনিশন কি ?
  • একক | 24.99.53.18 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৪86325
  • হু ,আমি যে পার্ট টা বলিনি আপনি সেটা বললেন :) অবস্যই যুগযুগ ধরে ফাঁকা সময় পাওয়া যায়নি । কিন্তু আমার প্রশ্নের সেট থেকে আপনার উত্তর এর সেট বাদ দিলে বোঝা যায় ,

    ১)যন্ত্রসভ্যতা যত উন্নত হয়েছে তত ঘরের কাজে ফাঁকা সময় বেড়েছে ।
    ২)যিনি বাইরে কাজ করছেন তিনি রোবট যুগ এসে গেলেও মিনিমাম আট ঘন্টা +যাতায়াত মিলিয়ে ঘন্টা দশ লেবার দিচ্চ্ছেন নইলে রোজগার কমে যাবে ।
    ৩) এদিকে বাড়িতে যিনি তাঁর ফাঁকা সময় বেড়েই চলেছে । সেলাই থেকে চিঁড়েভাজা কিছুই আর বাড়িতে হচ্ছেনা । এদিকে যুগ পাল্টালেও নেচার অফ প্রোডাকটিভিটি তাঁরা পাল্টান নি ।

    এর থেকে কি জেনেরাল কনক্লুশন টানা যায় যে,

    ক) মানুষ বাই নেচার প্রডাক্টিভ বা থটফুল নয় । নেহাৎ আপিসের চাপ/রোজগারের দায় থাকে তাই প্রদাক্তিভিটি আসে ।
    খ)বাড়ির বাইরে না বেরোলে কমিউনিকেশন/রিয়েল ওয়ার্ল্ড কনফ্লিক্ট কমে আসে ।কাজেই প্রবলেম-সলিউশন মোড টাই আর থাকেনা ।প্রদাক্তিভিটি বিকামস লেস অর নিল ।
  • Atoz | 161.141.84.175 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৭86326
  • যারা আপিসে বা অন্যত্র কাজ করেন, তাদেরই বা কত শতাংশ সেরকম ক্রিয়েটিভ ধরনের প্রোডাক্টিভ? বেশীরভাগই তো থোড় বড়ি খাড়া কাজই করেন।
  • | 24.97.213.133 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৮86327
  • S 22:37

    আশাপুর্ণা দেবীর বোন কবিতা লিখতেন। কিছু পত্রিকায় পাঠালে ছাপাও হয়। বাড়ীর বৌ কবিতা লিখছে আবার সেটা বাইরে ছাপাও হচ্ছে -- এইতী বাড়ীতে প্রচন্ড ঝামেলা হয়, হেন্স্থা ও মানসিক অত্যাচার (কে জানে শারিরীকও ছিল কি না) উনি ক্ষোভে সমস্ত খাতা পুড়িয়ে ফেলেন।
    কিন্তু লিখে গেছিলেন আজীবন, খুব লুকিয়ে। খুব সম্ভবতঃ মৃত্যুর বেশ অনেক পরে অবিষ্কার হয়।
    এই কিছুদিন আগে বই হিসেবে প্রকাশ হয়েছে ওঁর মেয়ের উদ্যোগে।
  • Tim | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৯86329
  • না একথা সম্পূর্ন ঠিক নয়। কেউ কেউ আপিসে গিয়ে আঁচড়ে আঁচড়ে লাখের অঙ্কে প্রডাক্টিভিটি বাড়ান শুন্তে পাই।
  • | 24.97.213.133 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:১৯86328
  • *এইতে
    **হেনস্থা
    ***আবিষ্কার
  • একক | 24.99.193.11 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২১86330
  • @এস
    এরকম "প্রকৃত শিক্ষা কাহাকে বলে " টাইপ যুক্তি দিলে মুশকিল :( যা প্রডাক্টিভ কাজ হিসেবে মূল্য পাচ্চেনা তা প্রদাক্তিভিটি নয় । ঈদিকে সুতোর কাজ করা সাধের আসন ত্যাগ করে ডাইনিং চেয়ার বাগাবো উদিকে প্রদাক্তিভিতির কথা উটলে বলবো মেয়েরা কী সুন্দর আসন বুনতেন এরচে বড় মুরগি করা পুরুষবাদ আর হয়না :P

    আমি একচুয়ালি বোঝার চেস্টা কচ্চি ,বাড়িতে থাকা ব্যাপারটা স্বাধীন মানুষ হিসেবে লেস পাওয়ারফুল করে তোলে কিনা ইন দ্য সেন্স অফ পার্সোনাল প্রদাক্তিভিটি ।সে ছেলে হোক মেয়ে হোক যেই হোক ।
  • kiki | 53.230.133.92 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২২86331
  • উফ! কতদিকে নজর রাখবো! যাগ্গে কি ঠিক হলো বলে দেবেন , বছরে ছবার বেড়াতে যাবার পয়সা দিলে মাইনের দাবী নাই, জানায়ে গেলাম।
  • hu | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৩86333
  • বাই নেচার প্রোডাক্টিভ বা থটফুল নয় -এর সাথে একমত হতে পারলাম না। আমি অনেককেই জানি যাঁরা বাইরে কাজ না করলেও ঘরে বসে অনেক কিছু শেখেন বা বানান। এখন ফেসবুক এসে গিয়ে কানেক্টিভিটি বেড়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের বানানো জিনিস বিক্রি করতেও দেখি। ভারতে ইবে কতটা পপুলার জানি না। এখন পপুলার না হলেও ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই হবে। ইবের মাধ্যমে ছোট ব্যবসায়ীরা শুরু করতেই পারেন। সর্বোপরি, যাঁরা বাইরে কাজ করতে বেরোচ্ছেন তাঁরাও তো প্রোডাক্টিভ থাকতে চান বলেই বেরোচ্ছেন। মেয়েদের কাছে এখনও এটা চয়েস। ইচ্ছে করলে কাটিয়ে দেওয়াও যায়। যাঁরা কাটিয়ে দিচ্ছেন না তারা নিশ্চয়ই প্রোডাক্টিভিটিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।
  • S | 160.148.14.8 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৩86332
  • ধন্যবাদ দ। সেটাই বলতে চেয়েছি। মেয়েরা বাড়িতে বসে কি করেছেন না জেনেই সুইপিং স্টেটমেন্ট করা যাচ্ছে যে মেয়েরা জেনেরালি আনপ্রোডাক্টিভ।
  • Tim | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৬86334
  • একক এখন একটু খেলছে পোকার ফেস করে। যথাসময় ঝুলি থেকে বাজার আর প্রডাক্টের বেড়াল বেরোবে। ঃ-)
  • একক | 24.99.193.11 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৭86335
  • এস আবার গুলিয়ে দেওয়া লজিক দিচ্ছেন ক্যানো ? :( যার প্রডাক্টিভ বাজারমূল্য নাই তা প্রডাক্টিভ নয় । এই লাইন টা না টেনে নিলে জানলা দিয়ে পুকুরপারে তাকিয়ে থাকাও একরকম প্রদাক্তিভিটি ।

    হু এর ইন্টারনেট বেসড পয়েন্ট টা তে ক ।এই একটা জিনিস ঘর আর বাইরের ব্যবধান কমাতে পারে কিছুটা হলেও
  • কীবোর্ডে চোয়ালচর্চা | 127.194.211.235 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:২৯86336
  • গাদা লেখক সারাদিন বাড়িতে বসে লিখে চলেছে। প্রোডাক্টিভিটির হদ্দমুদ্দ। আর কোনো কাজ করেনা। আপিসবাবুরাও বাড়ি ফিরে কীবোর্ডে চোয়ালচর্চা করেই চলেছেন। বাংলা ভাষায় নেট গার্বেজ প্রোডাকশন। তদুপরি সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট আছে - টিভি, খবরের কাগজ, গল্পের বই, পত্রিকা, ইউটিউব, সিডি-ডিভিডি, এফ এম।
  • Sinjini | 192.68.54.159 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩০86300
  • lekhata khub mon diye porlam. Shotyii dhonyobad, post korar jonno.

    Ei grihosromer mulyayon ebong arthik beton, ei nie haddahaddi hoe gechhe FB group e jekhane amra gender equality nie kotha boli, ebong darun interesting kichhu proshno uthe eschhe, like:

    1. How will we perceive a conjugal relationship to be one of an employee- employer model? Appraisals, bonus, etc.

    2. Is the skill transferable?

    3. What if husband doesn't like the quality and aesthetics of wife's work? Does she have an opportunity cost?

    4. What if husband is laid off?

    5. How will salary vary by husband's affordability/ earnings?

    6. Will she contribute part or whole of her earnings back to family finds as is reasonable?

    7. What if wife's earning from household fall short of her cost of living?

    8. Most importantly, in my opinion, are we ready to accept house husbands along the same logic?

    Ekjon likhechhilo, women "choose to" stay at home, men "have to" earn! Shorboibo shotyo noy ki?
  • Sinjini | 192.68.54.159 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩০86299
  • lekhata khub mon diye porlam. Shotyii dhonyobad, post korar jonno.

    Ei grihosromer mulyayon ebong arthik beton, ei nie haddahaddi hoe gechhe FB group e jekhane amra gender equality nie kotha boli, ebong darun interesting kichhu proshno uthe eschhe, like:

    1. How will we perceive a conjugal relationship to be one of an employee- employer model? Appraisals, bonus, etc.

    2. Is the skill transferable?

    3. What if husband doesn't like the quality and aesthetics of wife's work? Does she have an opportunity cost?

    4. What if husband is laid off?

    5. How will salary vary by husband's affordability/ earnings?

    6. Will she contribute part or whole of her earnings back to family finds as is reasonable?

    7. What if wife's earning from household fall short of her cost of living?

    8. Most importantly, in my opinion, are we ready to accept house husbands along the same logic?

    Ekjon likhechhilo, women "choose to" stay at home, men "have to" earn! Shorboibo shotyo noy ki?
  • Atoz | 161.141.84.175 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩১86339
  • আসলে প্রোডাক্টগুলো টাকায় কনভার্ট করতে হবার একটা শর্ত এসে যায়। তবেই মেনে নেবে সমাজ। নাহলে সে ফুলের আসনই করুক, গয়না বড়িই করুক, নারকেলের ঝিরিঝিরি করুক, লোকে মুখে মুখে আলগা ডুব্যা হরিন্নাম করে ছেড়ে দেবে।
    এই সেই জনই যদি বুটিক ফুটিক খুলে হামকী ধামকী ব্যবসা শুরু করেন, সব তখন অবাক বিস্ময়ে উফ কী সফল, কী প্রোডাক্টিভ, কী ভালো- এসব বলবে। ঃ-)
  • hu | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩১86338
  • এরকম "প্রকৃত শিক্ষা কাহাকে বলে " টাইপ যুক্তি দিলে মুশকিল ঃ( যা প্রডাক্টিভ কাজ হিসেবে মূল্য পাচ্চেনা তা প্রদাক্তিভিটি নয় । ঈদিকে সুতোর কাজ করা সাধের আসন ত্যাগ করে ডাইনিং চেয়ার বাগাবো উদিকে প্রদাক্তিভিতির কথা উটলে বলবো মেয়েরা কী সুন্দর আসন বুনতেন এরচে বড় মুরগি করা পুরুষবাদ আর হয়না ঃ
    -------------------------------

    এটা ঠিক যুক্তি হলনা। এককের টেন্সে গুলিয়ে গেছে। "ডাইনিং চেয়ার বাগাবো"র সাথে "আসন বুনতেন"-এর তুলনা হবে কি করে। ডাইনিং টেবল এখন বাগাচ্ছেন। আসন আপনার দিদিমা বুনতেন।
  • একক | 24.99.193.11 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩১86337
  • ঐজন্যেই তো লাইন টানলুম ।এইযে গুরুতে আড্ডা দিচ্ছি এটা কোনো প্রদাক্তিভিটি না ।
  • একক | 24.99.193.11 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩৩86340
  • আতোজ
    ক্রিয়েটিভ বলি নি :( প্রডাক্টিভ বলেছি । মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে ক্রিয়েটিভ হওয়া জরুরি নয় ।
  • hu | 101.185.15.226 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩৪86341
  • না না, এর সাথে যুগের সম্পর্ক আছে। দিদিমা বা তস্য দিদিমারা যদি আসনের দোকান দিতেন তাহলে ঢি ঢি পড়ে যেত। "আমি মেয়েমানুষ হইয়া রোজগার করিয়া আনিব?" HHB :-))
  • একক | 24.99.193.11 (*) | ১৩ এপ্রিল ২০১৫ ০৫:৩৭86342
  • হু ,আসন শুধু দিদিমা না আমার মা কেও সুতোর কাজ করতে দেখেছি । কিন্তু চেয়ার-টেবিল আসার পর সে কাজের কোনো মূল্য ছিলনা । আমার বক্তব্য এটাই যে প্রদাক্তিভিতির কথা উঠলে আমরা ঘুরেফিরে এই গয়না বড়ি-আসন-নকশী কাঁথা এসব বলি.........কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে ওগুলো না আমরা মার্কেট করেছি না পার্সোনাল কনসাম্পশন ।তাহলে এই বলার মানে কী ?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন