এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সিনেমা

  • কৌশিক গাঙ্গুলির ‘সিনেমাওয়ালা’: একটি ব্যতিক্রমী ছবি

    শৌভ চট্টোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সিনেমা | ২৮ আগস্ট ২০১৬ | ২৫২৪ বার পঠিত
  • বাংলা সিনেমার কথা ভাবলেই, ইদানীং, প্রেমেন্দ্র মিত্রের "বিকৃত ক্ষুধার ফাঁদে" গল্পের সেই বিগতযৌবনা বেশ্যার (সম্ভবতঃ, তার নাম ছিল বেগুন, স্মৃতি যদি নিতান্তই বিশ্বাসঘাতকতা না করে) কথা মনে পড়ে যায়, যে, নিজের হতশ্রীকে গোপন করার উদ্দেশ্যে, উগ্র রঙ মেখে পথের ধারে দাঁড়িয়েছিল, যদিও সেই প্রসাধন, তার সৌন্দর্যের অভাবকে ঢাকাচাপা দেওয়ার পরিবর্তে, আরো বেশি করে বিজ্ঞাপিতই করছিল বরং। অনেক রাত অবধি, তবুও কোনো খদ্দের না পাওয়ায়, অবশেষে, কতকটা অনন্যোপায় হয়েই, সে এক ভয়ানক কুৎসিতদর্শন মানুষকে ঘরে নিয়ে যেতে সম্মত হয়। সেদিন, পয়সার নিতান্তই প্রয়োজন ছিল তার। এই উপমাটিকে যথোচিত সম্প্রসারিত করলে, শুধু যে সেই অসহায় বেশ্যাটির সঙ্গে বর্তমান বাংলা সিনেমার মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে তা নয়, বরং, সেই পূতিগন্ধময় অন্ধকার রাস্তাটির সঙ্গে বাঙালির ক্ষয়িষ্ণু সিনেমাবোধ, এবং ভয়ানক-দর্শন খরিদ্দারটির সঙ্গে বাঙালি দর্শকের মিলও আবিষ্কার করা সম্ভব।


    বিগত এক দশকের বাংলা ছবি (মানে, কাগজের ভাষায়, তথাকথিত "মননশীল" বাংলা ছবি) দেখলে একটা কথা খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, বাংলা সিনেমার সাথে আন্তর্জাতিক সিনেমার সম্পর্ক, যা সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক একদা স্থাপন করতে সমর্থ হয়েছিলেন, এখন প্রায় পূর্ণতঃ ছিন্ন হয়েছে। বাংলা সিনেমা, অধুনা, তার নির্মাণে ও মেজাজে, পরিপূর্ণ মধ্যবিত্ততার একটি পঙ্কিল আবর্তে পাক খেতে খেতে, একমনে, নিজেই নিজেকে ক্রমাগত ধ্বংস করে চলেছে। বিশ্বসিনেমার ভাষা যতই বদলে যাক না কেন, যতই জটিল হয়ে উঠুক না কেন তার অন্তর্গত আখ্যানের বুনন, বা সেই আখ্যানের সঙ্গে বহির্বাস্তবের লেনদেন ও টানাপোড়েন, বাংলা ছবি, তবুও, দৃশ্যের মাধ্যমে একটি নিটোল, নাটকীয় অথচ অন্তঃসারশূন্য গপ্প বলাকেই তার পবিত্র কর্তব্য ঠাউরে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে ব্যস্ত থাকবে। এমনকী, ছবির ভাষা নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে, শুধু যদি এটুকুই প্রত্যাশা করি যে সেই গল্প, আদতে, মধ্যবিত্তের কোন গূঢ় আস্তিত্বিক সংকট বা জটিল স্ববিরোধকে দর্শকের সামনে উপস্থাপিত করবে, তাহলেও আশাভঙ্গের শিকার হতে হয়। কেননা, মধ্যবিত্তের হাঁচি-কাশি-টিকটিকি-প্রেম-অপ্রেম-আমাশার গল্পকে, ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, সভ্যতার সংকট হিসেবে উপস্থাপিত করাই, এখন তার নতুন দস্তুর। এবং এই অন্তঃসারশূন্যতাকে আড়াল করার জন্যে রয়েছে আরোপিত কেতা, যা, বস্তুতপক্ষে, ষাট-সত্তরের দশকের আভাঁ-গার্দ ছবির থেকে ধার করা, পরবর্তীতে মিউজিক ভিডিওর জমানায় ব্যবহৃত হতে-হতে বাসি মাংসে পরিণত হওয়া, ক্যামেরা বা সম্পাদনার কৌশলমাত্র। বিশ্বসিনেমার কথা বাদ দিলেও, কেবল যদি হিন্দি বা মারাঠী সমান্তরাল ছবির কথাই ধরি, তাহলেও বোঝা যায়, বাংলা সিনেমা ঠিক কোন গর্তে গিয়ে মুখ লুকিয়েছে।


    ব্যতিক্রম কি নেই? রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে, গত দেড়দশকে নির্মিত ছবির মধ্যে থেকে, কেবল চারটি ছবির কথা স্মরণ করতে পারছি, যা আমার বেশ ভাল লেগেছিল—‘স্থানীয় সংবাদ’, ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’, ‘ফড়িং’ এবং ‘আসা-যাওয়ার মাঝে’। তাও, এর মধ্যে, প্রথম তিনটি ছবির ক্ষেত্রে ভাল লাগাটা আংশিক, যদিও শেষ ছবিটির ক্ষেত্রে আমার মুগ্ধতা ছিল সর্বাঙ্গীন। সম্প্রতি, এই ভাল-লাগা ছবির তালিকায়, অন্ততঃ প্রথম তিনটি ছবির সঙ্গে একসারিতে, একটি নতুন নাম যুক্ত হয়েছে—কৌশিক গাঙ্গুলির ‘সিনেমাওয়ালা’।


    যেসব দর্শক দেশি-বিদেশি ছবি দেখেন, তাঁদের কাছে ‘সিনেমাওয়ালা’ ছবির গল্প বোধহয় খুব অচেনা ঠেকবে না। বিশেষতঃ, যাঁরা তোরনাতোরের ‘সিনেমা পারাদিসো’ দেখেছেন, বা চাই মিং লিয়াঙের ‘গুডবাই ড্রাগন ইন’, তাঁরা জানেন, সিনেমা ও সিনেমাহল সম্পর্কিত নস্ট্যালজিয়ার বিষয়বস্তুটি সিনেমায় ততটা নতুন নয়। এই ছবিগুলির মতই (যদিও প্রত্যেকটি ছবির সামাজিক-অর্থনৈতিক পটভূমিকা ও বাস্তবতা স্বভাবতই ভিন্ন), ‘সিনেমাওয়ালা’-ও, ডিজিটাল মাধ্যম ও মাল্টিপ্লেক্সের যৌথ আগ্রাসনে খতম হয়ে যাওয়া সেলুলয়েড জমানা এবং একের পর এক বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমাহলের প্রতি কৌশিক গাঙ্গুলির নিজস্ব, ব্যক্তিগত শ্রদ্ধার্ঘ্য, এ-কথা তিনি নিজেও নানান জায়গায় বলেছেন। এবং সিনেমা-ইতিহাসের এই পটপরিবর্তনকে কৌশিকবাবু যুক্ত করতে চেয়েছেন, বা সংস্থাপিত করতে চেয়েছেন, একটি ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধের আবহে, যেখানে বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমাহলের মালিক প্রণবেন্দু দাসের সঙ্গে তার ছেলে প্রকাশের লড়াই, দুই প্রজন্মের মধ্যবর্তী দূরত্বকে ছাপিয়ে, দুটি বিরোধী মতাদর্শের সংঘাত হিসেবেই প্রতিভাত হয়। বিন্যাসের এই স্তরটি, একদিকে যেমন কাহিনি-কাঠামোর ওপর খড়-মাটি চাপানোর জন্যে পরিচালকের কাছে অপরিহার্য ছিল, বিশেষ করে বাঙালি-দর্শকের অভিরুচির কথা মাথায় রেখে, তেমনি অন্যদিকে, এই স্তরটির উপস্থিতিই, ছবিটিকে উপদেশাত্মক (ইংরিজিতে যাকে ডাইড্যাকটিক বলে) ও সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে, এ-কথা স্বীকার করা ভাল। প্রথমতঃ, ডিজিটাল সিনেমার যুগে সেলুলয়েডের ক্রম-অবলুপ্তি শুধুমাত্র ডিভিডি-বাটপাড়ি (যা, প্রকাশের মূল ব্যবসা) দিয়ে ব্যাখ্যা করাটা শিশুসুলভ, আর দ্বিতীয়তঃ, এই অবলুপ্তির আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষিতগুলিকে এড়িয়ে নীতিবাগীশতার বুলি কপচানোটাও খুব একটা কাজের কথা নয়। আমি পারিবারিক কাহিনির এই স্তরটিকে অবজ্ঞা করছি না, শুধু এটুকুই বলছি যে, এই স্তরে যদি আরো কিছু উপাদান সংযোজিত হত, তাহলে এই ছবিটি প্রায়-এপিক হলেও হতে পারত।


    এ তো গেল খারাপ লাগার জায়গা (আরো দু-একটা জায়গা আছে, সে-আলোচনায় একটু পরে আসব)। এসব সত্ত্বেও, ছবিটি আমার কেন ভাল লাগল, এবার সে-বিষয়ে কিছু কথা বলি। প্রথমতঃ, এই ছবির ধীর-মন্থর গতি আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলা সিনেমায় এমন লম্বা লম্বা শটের প্রয়োগ চট করে চোখে পড়ে না। বর্তমানে, বিশ্বসিনেমায় স্লো-মুভির বাড়বাড়ন্ত, বিশেষ করে আপিচাটপং ভীরাসেথাকুল বা লাভ দিয়াজের কাজ, অথবা নুরি বিলগে চেলান ও বেলা তারের ছবি, অন্ততঃ একজন বাঙালি পরিচালককে, কিছুটা হলেও প্রভাবিত করেছে, এমন ভাবনা আমাকে সান্ত্বনা দেয়। আর, আমার এও মনে হয়েছে যে, বর্তমান ব্যস্তসমস্ত জীবনের বিপরীতে, বিগতযুগের নাড়ির ধাতটিকে ধরার জন্যে, এই ধীরলয়টি একেবারে মোক্ষম ও যথোপযুক্ত ছিল। সিনেমা-জুড়ে, প্রণবেন্দুর বাঁধা সাইকেল রিকশা আর প্রকাশের মোটরবাইক ব্যবহারের মোটিফও এই গতির বৈপরীত্যকেই ক্রমাগত আভাষিত করে চলে। দ্বিতীয়তঃ, এই ছবিতে ঘটনা খুবই সামান্য—অন্ততঃ, ছবির প্রথমার্ধে, প্রায় কিছুই ঘটে না। এমনকী, যেসব জায়গায় ঘটনা নাটকীয় হয়ে উঠলেও উঠতে পারত, সেখানেও, সম্ভাব্য সমস্ত ঘনঘটাকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে, পরিচালক যেভাবে তাঁর নিস্পৃহ ও অনুত্তেজিত কথনের ভঙ্গিমাটি বজায় রাখেন, তাতে তাঁকে কুর্নিশ না-জানিয়ে উপায় থাকে না। উদাহরণ—প্রকাশের মা, প্রকাশের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জন্য উপহারস্বরূপ যে-গয়নাটি দেন, প্রকাশ নির্বিবাদে, স্ত্রীকে এ-বিষয়ে বিন্দুবিসর্গ না জানিয়ে, নিজের ব্যবসার স্বার্থে সেটি বিক্রি করে দেয়। এই ঘটনাটি, অন্যত্র, উচ্চকিত কোন্দল ও তৎপ্রসূত অতিনাটকীয় বিড়ম্বনায় পরিণত হতে পারত, কিন্তু কৌশিকবাবু এতই ভ্রূক্ষেপহীন ঔদাসীন্যে তা বিবৃত করেন যে, ঘটনাটির অভিঘাত দর্শকের কাছে দ্বিগুণ হয়ে ধরা দেয়, এবং, একই সঙ্গে, প্রকাশের স্বভাবের নির্মম ও নির্লজ্জ পাটোয়ারি দিকটিও এক ধাক্কায় সামনে চলে আসে। এই প্রসঙ্গে, এও বিশেষ লক্ষ্যণীয় যে, গপ্প-কেন্দ্রিক বাংলা সিনেমার সম্পূর্ণ উলটোপথে হেঁটে কৌশিকবাবু তাঁর কাহিনির কিছু কিছু জায়গাকে পুরোপুরি দর্শকের চিন্তাভাবনার ওপরেই ছেড়ে দিয়েছেন, এবং অনাবশ্যক ব্যাখ্যানের ধারকাছ মাড়াননি। যেমন, অতীতে কখনো প্রণবেন্দু ও তাঁর স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়েছিল, ছবি থেকে এইটুকুই শুধু আমরা অনুমান করতে পারি, এবং এ-ইঙ্গিতও পাই যে, তার পেছনে, সিনেমা ও নিজের সিনেমাহল নিয়ে প্রণবেন্দুর অত্যধিক মাতামাতিই দায়ী। কিন্তু, এর চেয়ে বিশদ কোনো ব্যাখ্যা, অনাবশ্যক ফ্ল্যাশব্যাক মারফত, কৌশিক তাঁর দর্শকের জন্যে বরাদ্দ করেননি। এই ধরণের ইঙ্গিতময় ওপেন-এন্ডেড বিন্যাস, হেমিংওয়ে বা রেমণ্ড কার্ভারের লেখার মতই, পাঠক-দর্শকের জন্যে অনেকটা ফাঁকা জায়গা ছেড়ে রাখে। এবং বাকিটুকু, মায় প্রকাশের সঙ্গে তার বাবার বিক্ষুব্ধ সম্পর্কের পেছনে এই ঘটনার অবদান অবধি, দর্শকের, তার নিজের মত করে, অনুমান করে নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে। এই স্বাদ, বাংলা সিনেমায়, খুব সুলভ নয়। অবিশ্যি, কাহিনিবিন্যাসে অতিমাত্রায় ন্যূনবাদী (মানে, মিনিমালিস্ট) হতে গিয়ে, দু-একটি জায়গায় কাহিনির যুক্তিক্রম খানিকটা হলেও ব্যাহত হয়েছে হয়তো-বা। যেমন, সিনেমার প্রতি প্রণবেন্দুর প্রেম ঠিক কবে থেকে ও কীভাবে, সে-বিষয়ে আলোকপাত না-করায়, তার সমস্ত নস্ট্যালজিয়া, বিষাদ ও মর্ষকাম, নিখাদ বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার পরিবর্তে, প্রায় বায়বীয় হয়েই রয়ে যায়।


    ভাল লাগার আরেকটি বড় কারণ এই যে, এ-ছবির নির্মাণ প্রায় মেদহীন, এবং অনর্থক চালিয়াতির পীড়া থেকে মুক্ত। একটি মধ্য অথবা নিম্নমানের ছবিকে মহান শিল্প হিসেবে প্রতিপন্ন করার আন্তরিক তাগিদে, বাঙালি পরিচালককূল যেসব প্রচলিত পন্থার আশ্রয়গ্রহণ করেন—যেমন, দু-একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত, অদ্ভুত ও অপ্রাসঙ্গিক ক্যামেরার অ্যাঙ্গল, বিবেচনাহীন স্বপ্নদৃশ্য, আঠালো সংলাপ, মেদুর নিসর্গদৃশ্য, আপাত-স্মার্ট কিন্তু আদতে অসার সম্পাদনাকৌশল—সেগুলি কৌশিকবাবু যথাসম্ভব পরিহার করেছেন। কয়েকটি মোটিফ ঘুরেফিরে এসেছে, যার মধ্যে সাইকেল রিকশা বনাম বাইকের কথা আগেই বলেছি। এছাড়া, সাইকেল রিকশার পেছনে ঝোলানো সিডি/ডিভিডির দৃশ্যটিও খুবই আগ্রহোদ্দীপক। এবং এই বৃত্তের, ও বৃত্তাকার গতির, মোটিফও বেশ অনেকবারই ফিরে এসেছে ছবিতে—কখনো চাকার ঘূর্ণনে, কখনো-বা নাগরদোলার। এর মধ্যে, একটি সময়বৃত্তের পূর্ণ হওয়ার ইঙ্গিত প্রছন্ন রয়েছে, এমন অনুমান করা হয়তো খুব অসঙ্গত হবে না। একদিকে যেমন প্রণবেন্দুর চরিত্রটি, পারিবারিক গণ্ডীতে, ক্রমশ তার প্যাট্রিয়ার্কাল কর্ণধারের ভূমিকা থেকে চ্যূত হয়, এবং ছেলের ঔদ্ধত্যের সামনে অসহায় ও দাঁতনখহীন হয়ে পড়ে, তেমনি অন্যদিকে, বাবা হতে-চলা প্রকাশ নিজেই ধীরে ধীরে হয়ে উঠতে থাকে আরেক পেট্রিয়ার্ক। সেলুলয়েড-যুগের অবসান ও ডিজিটাল-যুগের সূত্রপাতের সমান্তরালে, এই পারিবারিক পালাবদলটিও আসলে চক্রবৎ পরিবর্তনশীল সময়েরই দ্যোতনা বহন করে যার ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকে এই অনুচ্চকিত প্রতীকসমষ্টির ভেতর।


    চরিত্রচিত্রণের ক্ষেত্রে কৌশিকবাবুর মুন্সিয়ানা, আমার কাছে, প্রায় প্রত্যাশার অতীত। এই ছবিতে, কোনো চরিত্রই ঠিক সহজ শাদা-কালোর বিভাজনে আবদ্ধ নয়, বরং একটি বহুকৌণিক পরকলা দিয়ে তাদের খুঁটিয়ে দেখার চেষ্টা রয়েছে। প্রণবেন্দুর চরিত্রে পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও হরি-র চরিত্রে অরুণ গুহঠাকুরতার অভিনয় অসামান্য বললেও কম বলা হয়। এমনকী, প্রকাশের স্ত্রী-র ভূমিকায় সোহিনী সরকারও চমৎকার। কিন্তু, প্রকাশের চরিত্রে পরমব্রত-র অভিনয়, বরাবরের মতই, একঘেয়ে এবং অনর্থক ম্যানারিজম-আক্রান্ত। সম্ভবতঃ, সংলাপ বলার ক্ষেত্রেও পরমব্রত-র কিছু শিক্ষা ও অনুশীলনের প্রয়োজন রয়েছে।


    ব্যক্তিগতভাবে, আমার মনে হয়েছে, ছবির দ্বিতীয়ার্ধে কৌশিক গাঙ্গুলি একটু অনর্থক তাড়াহুড়ো করেছেন, হয়তো দ্রুত গুটিয়ে আনতে চেয়েছেন ন্যারেটিভের বিস্রস্ত সুতোগুলি। এর ফলে, ছবির মন্থর চালটি, যা শুরুতে আমাকে মুগ্ধ করেছিল, শেষ অবধি আর বজায় থাকেনি। যদিও, ছবির শেষ দৃশ্যটি, খানিকটা অনুমেয় হলেও (তোরনাতোরের ছবির দ্বারা অনুপ্রাণিতও হয়তো), অত্যন্ত কুশলতায় ও ন্যূনতম নাটকীয়তায় চিত্রায়িত, এবং, প্রয়োগগতভাবে মর্মস্পর্শী।


    জেমস জয়েস তাঁর ‘আ পোর্ট্রেইট অফ দি আর্টিস্ট অ্যাজ আ ইয়াং ম্যান’ উপন্যাসে, তাঁরই প্রতিভূ স্টিফেন ডিডালাসের মুখ দিয়ে একটি নিজস্ব নন্দনতত্ত্বের প্রস্তাবনা করেন। তিনি বলেন, সৎ শিল্প আসলে জঙ্গম নয়, তা স্থবির। পাঠক বা দর্শককে তা কোনো নির্দিষ্ট অনুভূতির দিকে চালিত করে না, বরং সমস্ত অনুভূতির উর্দ্ধে যে স্থির শান্তি, তার সন্ধান দেয়। এবং, তিনি এও বলেন যে, শিল্পের সৌন্দর্য আসলে লুকিয়ে রয়েছে তার ছন্দে, যে-ছন্দ আসলে সংহতির নামান্তর—অংশের সাথে অংশের, অংশের সাথে সমগ্রের, এবং সমগ্রের সাথে অংশের সংহতি। কৌশিক গাঙ্গুলির এই ছবিটি, সেই অর্থে, একটি সংহত নির্মাণ। এ-ছবি কোনো মহৎ বা কালজয়ী শিল্পকর্ম হয়তো নয়, কিন্তু সাম্প্রতিককালের আর-পাঁচটা বাংলা ছবির সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে, এই ছবিটিকে আমি বেশ খানিকটা এগিয়ে রাখব। এবং, সর্বোপরি, বাংলা ছবির এই ঊষর দিনগুলিতেও, দু-একটি ভাল কথা উচ্চারণের সুযোগ করে দেওয়ায়, কৌশিকবাবুর প্রতি, একজন দর্শক ও সিনেমাপ্রেমী হিসেবে, আমার কৃতজ্ঞতা রইল।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৮ আগস্ট ২০১৬ | ২৫২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • ranjan roy | 192.69.167.171 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৪:৫৯81214
  • ডিসি,
    কিন্তু এই ধরনের মন্থর চালের ধ্রুপদী সিনেমার রসগ্রহণ কি ইউটুবে টুকরো টুকরো করে দেখে সম্ভব?
  • Bikash Roy | 11.39.37.204 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৬:২৬81206
  • ami dekhechhi.... amar to darun legechhilo.... bisesh kore poran bandopadhyaya anobadyo.... "eta cinema- big screen " o "chop" erokom dialog khub kom dekhechhi. tobe lekhoker mato somalochana korar mato cinema bodh hoito amar nei. jamon param keo amar khub kharap lageni. r oi charti chhara kono valo bangla cinema gato 15 bachhore hoini eta mante parlam naa...
  • Bikash Roy | 11.39.37.204 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৬:২৭81207
  • ei muhurte jegulo mone porchhe..... arekti premer galpo, shabdo, shankhachil, moner manush, chotushkone, vuter vobishyot, dutta vs dutta, abohomaan egulo kintu amar valo legechhe....
  • রোবু | 213.132.214.87 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৩৭81208
  • লেখাটা পড়ে সিনেমাটা দেখার ইচ্ছে রইলো।
  • d | 144.159.168.72 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৮:১০81209
  • বেশ এটা তাহলে দেখতে হবে। এমনিতে সিনেমা নিয়ে আমার আগ্রহ প্রায় নেই। তাও লেখাটা পড়ে ইচ্ছে হল।
  • একক | 53.224.129.62 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৮:৩৮81210
  • ভালো লাগলো সমালোচনা পড়ে । কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক এসেছে । দুর্বল জায়গাগুলোও অল্পবিস্তর পয়েন্ট আউট হয়েছে ।

    আমার এই সিনেমাটা দেখতে গিয়ে আউট ডোরের কিছু জায়গায় বারবার বাপ্পাদিত্যর সিনেমাটোগ্রাফি মনে পড়ে যাচ্ছিল । জানিনা আর কারো এমন মনে হয়েছে কিনা ।
  • প্রতিভা | 233.191.27.0 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৯:১৯81211
  • সিনেমা দেখার সময় পাইনা। কিন্তু পড়ার একটা নেশা আছে। বিশেষ করে সমালোচনা সাহিত্য। লেখাটি তাই প্রথম থেকেই আগ্রহ জাগিয়েছিল। শেষ অব্দি সেটা বজায় রইলো।
    ঠাসবুনট লেখা। সিনেমার কাহিনী, শৈলী, অভিনয়, দর্শকের ওপর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া, সব চমৎকার ভাবে বিশ্লেষণ করার পরেও লাভ হয়েছে ভালো ছবির একটা তালিকা থাকায়।
    আমার প্রশ্ন মন্থর গতি নিয়ে। জানি, ধ্রুপদী সঙ্গীত যেমন, কিছু শিল্পমাধ্যমের রসগ্রহণ করতে হলে ধৈর্য ধরতে হয়। কিন্তু বড় পর্দায় দেখবার জন্য দূরে যেতে হবে, অনেকটা সময় বসে থাকতে হবে, তার থেকেও বড় কথা চোখের সামনে চলবে একটা মন্থর চালের কাহিনীপট, মনে যতই অস্থিরতা থাকুক না কেন ! এটা কি খুব বড় বোদ্ধা না হলে সাধারণ ভালো দর্শকের পক্ষে সম্ভব?
    ঐ যে শুরুতে বাঙালী দর্শককে যে ভাবে কামক্রেতার সঙ্গে তুলনা করা হলো সেই প্রেক্ষিতে জিজ্ঞাসা করলাম।
  • সুকি | 129.160.188.96 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৯:২৬81212
  • লেখা ভালো লেগেছে - ব্যালেন্সড লেখা। কিছু কিছু জায়গায় একমত না, কিন্তু সেটা তো হতেই পারে। লেখক চালাকির আশ্রয় না নিয়ে (যা চলচিত্রের আঁতেল সমালোচনায় দেখা যায় আজকাল) নিজের বক্তব্য যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন, মাঝে মাঝে যথোপযুক্ত রেফারেন্স সহ।
  • dc | 132.174.152.16 (*) | ৩০ আগস্ট ২০১৬ ০৯:৩৩81213
  • কেন টরেন্ট দিয়ে ডাউনলোড করে দেখে নিন না! আমি বহুকাল বড়ো পর্দায় বাংলা বা অন্যান্য সিনেমা দেখিনা, শুধু মেয়ে বায়না করে বলে ছোটদের কয়েকটা সিনেমা থিয়েটারে গিয়ে দেখতে হয়। আর টরেন্ট বা য়ুটুবে দেখার আরেকটা সুবিধে হলো হাতে যখনি সময় পাবেন, দশ কুড়ি মিনিট, তখনি দেখতে পারবেন। টানা দু ঘন্টা বসে দেখতে হবেনা।
  • PT | 213.110.242.8 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১০81216
  • "শঙ্খচিল" আর "রাজকাহিনী" দেখার পরে বাঙালী চিত্রপরিচালকদের কাছ থেকে কোন উন্নত মানের ছবি পাওয়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। "সিনেমাওয়ালা" সেই আশা খানিকটা হলেও ফিরিয়ে আনল। চমৎকার ছবি! শেষ দৃশ্যটি বেশ বুদ্ধিদীপ্ত।
    তবে কম্পু বা টিভিতে ছবিটি দেখবেন না.....অনুভবে খামতি থেকে যাবে।।
  • শৌভ | 113.224.105.10 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৭:০০81215
  • সবাইকে ধন্যবাদ, লেখাটি পড়ার জন্যে।

    কয়েকটি মন্তব্যে কিছু প্রশ্ন, বা প্রশ্নের আভাষ, রয়েছে। এখানে তার উত্তরও দিয়ে রাখি।

    ১। ভালো ছবি কাকে বলে, এটা নিজস্ব অভিরুচির ওপর নির্ভর করে। ফলে, এমন হতেই পারে যে, উল্লিখিত পাঁচটি ছবির বাইরে অনেক বাংলা ছবিই অনেকের ভাল লেগেছে। কিন্তু আমার লাগেনি। যদিও, "আবহমান" ছবিটি আমার ভাল লেগেছিল, বিশেষত তার বহুস্তরীয় আখ্যানের কারণে, কিন্তু এখানে তার নামটি বাদ পড়ে গেছে। বাকি ছবিগুলি, "ভূতের ভবিষ্যৎ", "চতুষ্কোণ", "শব্দ" ইত্যাদি আমার ভাল লাগেনি। বিশেষ করে, "চতুষ্কোণ" আমার খুবই খারাপ লেগেছিল। ছবির শেষে যে রাশ্যান রুলে-র দৃশ্যটি রয়েছে, তা এমনই ভ্রান্ত যে আমি হাসি চাপতে পারিনি। যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা মনে করে দেখুন, রিভলভারে মোট চারটি গুলি ভরা হয়েছিল। প্রথম দুটি ফাঁকা শট হয়। এর অর্থ, চতুর্থ শটটিতে, অবধারিতভাবে, গুলি বেরোবেই। এখন, অপর্ণা সেনের চরিত্রটি দুম করে মরে যেতে পারে না, কেননা সে বিখ্যাত, তার মরে যাওয়ায় হাজার হ্যাঙ্গাম, পুলিশ-ফৈজত, ছবি শেষ হতে দেরি। ফলে, পরমব্রত যে মরবেই, এটা তো নিশ্চিত! এই প্রশ্ন সৃজিত মুখুজ্জে-কে করায়, তিনি আমাকে ফেসবুকে ব্লক করেন। :)

    ২। ধ্রুপদী সঙ্গীতের মন্থরতার যেমন প্রকারভেদ আছে, তেমনই স্লো-ফিল্মের ক্ষেত্রেও। কিছু কিছু ছবি (যেমন, লাভ দিয়াজের বা ভীরাসেথাকুলের ছবি, বা বেলা তারের "সেটানট্যাঙ্গো") ধ্রুপদের মত, তাতে নোম-তোম সমেত বিস্তারিত আলাপ চলতেই থাকে, চলতেই থাকে। জোড়ে পৌঁছনোর আগেই, অতএব, অদীক্ষিত শ্রোতা, এক্ষেত্রে দর্শক, ঘুমিয়ে পড়ে। চেলান বা তারের বাকি ছবিগুলো হলো গিয়ে পূর্ণাঙ্গ খেয়াল--আওচার, বড়হত, বিস্তার, লয়কারি, বোল তান, এবং শেষে দ্রুত খেয়াল দিয়ে সমাপ্তি। আর, এই ছবিটি, বলা যায়, খেয়ালের সংক্ষিপ্ত রূপ, আওচার বা আলাপ তেমন নেই। পরিচালক, তাড়াতাড়ি লয়কারিতে পৌঁছেছেন। :) ফলে, হলে বা বাড়িতে বসে একটানা দেখতে ততখানি অসুবিধে হওয়ার কথা নয়।
  • dc | 120.227.231.122 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০৩81229
  • ঠিক ঠিক। তবে মাছমিষ্টি টাইপের সিনেমাগুলো দেখতে ভালোই লাগে। তাছাড়া আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস, এবার শবর, কেয়ার অফ স্যার, হাওয়া বদল, এই সব সিনেমাই দিব্যি দেখে ফেলা যায়।
  • + | 92.6.16.193 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৫৫81230
  • সিনেমাওয়ালা দেখলাম। গোটা সিনেমায় একটা জিনিসই বেমানান লাগল। পরমব্রত, বাংলা সিনেমায় কি কোনো অভিনেতা নেই?
  • Atoz | 161.141.85.8 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৯:৪৭81231
  • সিনেমাওয়ালা দেখলাম সেদিন। পরাণবাবুর অভিনয় পরাণ ভরে দিল।
  • h | 213.132.214.83 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:১০81217
  • কি সুন্দর লেখা। কি অপূর্ব সুন্দর। পরম করুণাময় ঈশ্বর যেন শৌভকে অনেক লেখাতে ভুলে না যান। এতো ভালো লাগে শৌভ র লেখা। আমি সিনেমা দেখতে ভালো বাসিনা, হয়তো ক্লস্ট্রোফোবিয়া আছে, আমার অন্ধকারে অনেকক্ষণ বসে থাকতে ভালো লাগে না। হয়তো আমিও দেখে ফেলবো। সিনেমা পারাদিসো যখন দেখেছিলাম, তখন আমার মনে হয়েছিল, যে শিশুটির চোখ দিয়ে দেখা হচ্ছে, সে দক্ষিন ইটালির জীবনের কথা কিছু বলছে যেমন ঠিক ই, কিন্তু তার 'প্রথম সবকিছু' ধরণের অভিজ্ঞতা ঐ সিনেমা হল কে কেন্দ্র করে হয়েছিল, এবং ঐ প্রিস্ট এর ঘন্টা বাজানোতে কাটা পড়া অংশ গুলো দিয়ে প্রায় আরেকটা সিনেমা তৈরী করে ফেলার সম্ভাবনা সেটা স্টানিং লেগেছিল। সেই সব মনে পড়ে গেল।

    হয়তো দেখবো। এমনিতে সিনেমা দেখি না বলে পরিবার অভিযোগ করেন সেই জন্যেই নাকি তাঁকে ফিলম হিস্টরি ছাড়তে হয়েছে, তো এটা হয়তো দেখবো।
  • h | 213.132.214.86 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:২০81218
  • সৃজিত মুখার্জির সিনেমা, মনীষ কি যেন র নাটক এগুলো আমার একেবারে বিরক্তি লাগে, মানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মত , মনে হয় মিটিং এ বসে আছি, এবার বাজেট চাইবে কেউ। যত কম আলোচনা হয় তত মংগল ও শান্তি। কৌশিক গাংগুলি শুধু নন, গত ১০-২০ বছরের পরিচালক দের সম্পর্কে আমার একটা রেজিস্টান্স আছে, যে আর্বান মিলিউ বেচে তাঁরা মননশীল বলে পরিচিতি লাভ করেছেন, সেই আর্বানিটি কেনো নামেও না ওঠেও না ছড়ায় ও না, একেবারে বালিগঞ্জ প্লেসে গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে, সেটা পরিষ্কার না। বিরক্ত লাগে, আমার কলকাতা শহর সম্পর্কে জাস্ট কোনো ভালো লাগা বা নস্টালজিয়া নেই, যা আছে তা বীরভূম ইত্যাদি নিয়ে, এটা আমার রোজগারের শহর, এখানে নানা লোকের সঙ্গে শোয়া আর মদ খাওয়া টাও চাকুরির চাপে তেমন ভাবে হয় নি, সংসার/বাসা সব ই হয়েছে, তবে মনে রাখার মত কিসুই নেই, বৈচিত্র যতটুকু সব ই বীরভূমেই, তো কলকাতা সিনেমা কে কেন বাংলা সিনেমা বলবো আর ভেবে পাই না, আর্বান স্পেস এর যে বৈচিত্রের মজা, সেটা পাই না, শহরটা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে যে গড়ে উঠছে, সেই পরিবর্তনে যারা বেনেফিশিয়ারি, তাদের নস্টালজিয়া আমার উপকারে লাগে না। তবে আপিসে বসে শৌভর লেখা পড়্তে পাওয়ার পেছনে যদি গ্লোবালাইজেশন থাকে, আমার সে গ্লোবালাইজেশনে আপত্তি নাই। কি সুন্দর। ওঃ। চোখে জল এসে গিয়েছে, এই যত্নটা আমি মিস করি।
  • dc | 120.227.231.122 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৪৪81219
  • রঞ্জনদা, টরেন্টের বা য়ুটুবের কথা বলেছি প্রতিভাকে, যিনি লিখেছেন "সিনেমা দেখার সময় পাইনা"। মানে জাস্ট একটা সাজেশান, হাতে বেশী সময় না থাকলে একটা সিনেমা অল্প অল্প করে দেখে নেওয়া যেতেও পারে।

    আর সৃজিত, অনীক, এনাদের সিনেমা দেখতে তো আমার ভালোই লাগে, যদিও এখানে দেখছি আর কারুর ভাল্লাগেনি। মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর, ভূতের ভবিষ্যত, আশ্চর্য প্রদীপ, জাতিশ্মর এই সব সিনেমাগুলোই দেখতে ভাল্লেগেছে। দিব্যি হাল্কাপুল্কা সিনেমা, সুন্দর গান, গুরুগম্ভীর মেসেজ নেই, আর কি চাওয়ার আছে? সৃজিত বাবুর লাস্ট সিনেমাটা দেখিনি, ওটায় নাকি কিসব মেসেজ টেসেজ আছে সেই ভয়ে, তবে মাছমিষ্টি বা হেমলক টাইপের সিনেমা আবার বানালে অবশ্যই দেখব (তবে চতুষ্কোন এর শেষটা অতি খাজা মার্কা হয়েছিল সে আর বলার অপেক্ষা রাখেনা)

    আর সিনেমা প্যারাডিসো প্রসঙ্গে মনে পড়লো হুগো নামের একটা সিনেমা দেখেছিলাম, সেটাও বেশ ভাল্লেগেছিল।
  • h | 213.132.214.84 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৫৭81220
  • দ্যাকা যাছে ডিসি যে ভাবে সিনেমা দেখতে ভালো বাসে, আমি সে ভাবে আপিস করতে ভালো বাসি, আসবো যাবো মাইনে পাবো চাপ নেব না, মাঝে মাঝে সুন্দর গান হলে আরো ভালো হত, আর গুরুগম্ভীর মেসেজ না থাকলে সবচেয়ে ভালো হত।
  • h | 213.132.214.84 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০০81221
  • ডিঃ মঃ ঃ-))))
  • dc | 120.227.231.122 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০০81222
  • ইস ওরকমভাবে যদি আপিস করতে পারতাম! ঃ(
  • dc | 120.227.231.122 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০২81223
  • মেরেছে মঃ মানে আবার কি?
  • d | 144.159.168.72 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:০৯81224
  • মস্করা
  • Arpan | 101.214.5.87 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:১১81225
  • ম দিয়ে তো কত কিছুই আছে। এই যেমন পঞ্চ 'ম'-কারের একটা নিয়ে নিলেই তো হল।

    ডিঃ মঃ
  • h | 213.132.214.84 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:১৭81226
  • সিনেমা দ্যাখা / আপিস করা/ গুরু করা সব কিছু র মধ্যে এই সব বাজে চাপহীন ইনুএন্ডো এবং বিচিত্র পাজি অর্পণ থাকা খুব ই গম্ভীর ভাবে জরুরী ;-)
  • dc | 116.200.132.187 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৩০81227
  • ঃ)
  • cb | 11.39.37.133 (*) | ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১২:৪৬81228
  • মাছমিষ্টি আবার সৃজিৎ এর কবে হল। ওটা তো মৈনাক ভৌমিকের :-)

    ওখানে নুনুব্রতর একটা সোলো ফোন কল এর সিন আছে। অসাধারণ
  • lcm | 83.162.22.190 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:২৫81232
  • সিনেমাটা দেখলাম, যথারীতি প্রায় ঘুমিয়ে পড়ছিলাম (খাঁটি অদীক্ষিত দর্শক হলে যা হয়) -- ঘুমোতে পারলাম না দুজনের জন্যে - প্রধানত অরুন গুহঠাকুরতা, আর, পরাণ বন্দোপাধ্যায়।

    তবে হ্যাঁ, শৌভ-র রিভিউটা খাসা হয়েছে। গদার নেই, কিন্তু আরো কারা সব আছে, সে থাগ্গে, একটু ওসব লাগে।
  • sinfaut | 11.39.13.249 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৭81233
  • কনফিডেন্ট অদীক্ষিত হওয়া অনেকদিনের ফ্যাড। নতুন কিছু না।
  • lcm | 179.229.10.212 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:২৮81234
  • নতুন কিছু না ! যাহ্‌, ভাবলাম নতুন কিছু বললাম। তো আরো কিছু কথা লিখি, নতুন কিছু নয় কিন্তু, তবু...

    বাংলায় ফিল্ম ক্রিটিসিজিম, মানে, অ্যাকাডেমিক ক্রিটিসিজিম্‌ - লেখা বেশি চোখে পড়ে না। জার্নালিস্টিক রিভিউ বা সিনেমা রিভিউ কাগজে বেরোলেও, ফিল্ম ক্রিটিসিজিম দেখি না বিশেষ। এই দুটি আলাদা জিনিস, যেমন, ফিল্ম দেখা আর ফিল্ম পড়া - watching a film এবং reading a film , দুটি আলাদা জিনিস। দ্বিতীয়টির জন্যে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ, এবং বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা লাগে।

    এমনকি বাংলায় মেইনস্ট্রিম জার্নালিস্টিক রিভিউ-ও খুব ভেগ, মানে ধরো, আনন্দবাজার ঋতুপর্ণ ঘোষের সিনেমার রিভিউ করাতো সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু চট্টোপাধ্যায়-দের দিয়ে। এনারা বাংলায় লেখালেখি করেন, কিন্তু তাই বলে নতুন সিনেমার জার্নালিস্টিক রিভিউ করার জন্যেও এদের ডাক পড়ত।

    গুরুতে আমি অন্তত তিনজনের লেখা দেখেছি --- শৌভ, অনিন্দ্য, পরিচয় -- এরা বাংলায় ফিল্ম ক্রিটিসিজিম লেখার প্রচেষ্টা করেছেন। এটা ভালো প্রয়াস। আরো অন্যরাও হয়ত করেছেন, চোখে পড়ে নি। বা, অন্য ওয়েব সাইট বা বাংলা ম্যাগাজিনের বেরোয় হয়ত।

    ভারত সরকারের তরফ থেকে একটা ফিল্ম ক্রিটিক পুরস্কার দেওয়া হত এক সময়। চিদানন্দ দাশগুপ্ত বোধহয় পেয়েছিলেন একবার। তারপরে কি বাংলায় লেখার জন্য কেউ কি পেয়েছেন। চিদানন্দবাবু কি বাংলায় লিখতেন?

    একটা কথা এখানে উঠতে পারে যে অ্যাকাডেমিক ক্রিটিসিজিম করার মতন ফিল্ম কি বাংলায় তৈরি হয় এখন। যদি না হয়, তাহলে যারা বাংলা ফিল্ম ক্রিটিক তারা বেশ বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠতে পারেন, যেমন এখানে শৌভর লেখার প্রথম প্যারায় মনে হয়েছে। এর থেকে কিন্তু একটা জিনিস হতেই পারে - এই যে কি নিয়ে লিখব, আলোচনাযোগ্য ফিল্মই তৈরি হয় না, ক্রিটিকরা ফ্রাস্ট্রেটেড - - ধুত্তেরি বলে ক্রিটিক নিজেই ফিল্ম তৈরি করতে আরম্ভ করলেন। এটা দারুন ব্যাপার হতে পারে। প্রায় দহ্স বছর ফিল্ম ক্রিটিসিজিম লিখতে লিখতে, গতানুগতিক ধারায় বীতশ্রদ্ধ হয়েই কিছুটা গদার নিজেই ফিল্ম বানাতে শুরু করেন। ট্রুফো-ও খানিক তাই। কে বলতে পারে, অনিন্দ্য-পরিচয়-শৌভ রাও এমন পথে চলবে কি না ---- আশায় বাঁচে চাষা ঃ-)
  • lcm | 179.229.10.212 (*) | ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ১১:৩২81235
  • একটা কথা বলা হয় নি, সিনেমাওয়ালা দেখার উৎসাহ জাগে শৌভ-র লেখাটা পড়ে। অনেক আগে, ইন্দ্রনীলের লেখা পড়ে সব চরিত্র কাল্পনিক দেখেছিলাম। আরো দু একটা ফিল্ম-ও ... নাম মনে পড়ছে না...
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন