এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কাব্য

  • আজকের কবিতার পক্ষে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন/ কবির স্থানাঙ্ক বিষয়ক দুই চারিটি কথা - দ্বিতীয় পর্ব

    কুশান গুপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬৫৯ বার পঠিত
  • প্রথম পর্ব
    কবিতার উপযোগিতা নিয়ে বারোটি পাল্টা প্রশ্ন

    অনেকে একথা বলছেন যে আজকের জীবনে কবিতার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। অনেকে বলছেন কবিতার কোনো ভূমিকাই নেই আর, কবিতা আজ সম্পূর্ণই অপ্রাসঙ্গিক। কেউ বা অভিযোগ করেন সমসময়ের সঠিক চেহারা কবিতাতে নেই। আজকের কবিতা ও কবিরা, সেহেতু, ব্যর্থ। কিন্তু, প্রশ্ন এসে গেল, কবিতার কি কোনো সামাজিক দরকার নেই? কবিতার সামাজিক উপযোগিতা নিয়ে লিখতে আমি সার্বিকভাবে অক্ষম হলেও দু-চারটি জরুরী প্রশ্ন উত্থাপন করি। এর উত্তর দেওয়ার দায় কারুর খুব একটা নাই থাকতে পারে, এইসব প্রসঙ্গ চাইলে ফেলেও দিতে পারেন, তবু লিখছি:

    ১) কি কারণে একটি কবিতা লিখেই জীবনানন্দ চাকরি খোয়ালেন? কি এমন বিস্ফোরক বস্তু ছিল তাতে যে একজন ছাপোষা মধ্যবিত্ত চাকরি হারাতে পারেন? তিনি তো ততদিন অবধি খুব একটা কেউকেটা কবি ছিলেন না।
    ২) কি কারণে হাংরির তদ্যবধি নাম না জানা কবিদের পেছনে রাষ্ট্র পুলিশ লেলিয়ে দেয়? ব্যাপার মামলা ও কোর্ট অবধি গড়ায়। সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গিন্সবার্গ আবু সাইদ আয়ুবকে চিঠি লিখে জানান, আপনারা প্রতিবাদ করুন।
    ৩)কেনই বা আজকের জনপ্রিয় এক কবির একটি কবিতা নিয়ে তাঁর বিরূদ্ধেও মামলা হয়, হামলার ভয় দেখায় উগ্র ও অন্ধ সাম্প্ৰদায়িক লোকজন? ফেসবুক উত্তাল হয়ে ওঠে? ব্যাপার এতদূর গড়ায় যে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস প্রয়োজন হয়ে পড়ে।
    ৪) কেন একটি নকশালপ্রভাবিত ছাত্র সংগঠন লেনিন দিবসে সুভাষ মুখোপাধ্যায় নামক এক কবির কোটেশন তাদের পোস্টারে দেয়? মনে রাখতে হবে ইউনিয়নে থাকার কমপালশন এবং ভোট পাওয়ার দায় তাদের রয়েছে। উক্ত কবির বিরুদ্ধে জয়দেব বসু ‘ঘেন্না’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
    ৫) কেন আমরা বই না দেখে জনপ্রিয় গদ্যও কোট করতে পারিনা, অথচ, এমনকি অনেক আধুনিক কবিতা নির্ভুল গড়গড় করে অনেকেই বলে যেতে থাকেন?
    ৬) মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ব্যানারে কেন জীবনানন্দের একটি অরাজনৈতিক কবিতা, যার তেমন এক রাজনৈতিক ঝাঁঝ নেই, শ্লোগান হিসেবে ব্যবহৃত করেছিল?রূপসী বাংলার উক্ত ব্যবহৃত কবিতাটি:
    'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি...'
    ৭) কিভাবে বেস্ট সেলার 'মাধুকরী' উপন্যাসে জনপ্রিয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ এতগুলি সমকালীন বাংলা কবিতার অংশ তুলে ধরলেন? যদি সমকালীন বাংলা কবিতা সম্পর্কে পাঠক এতই বিমুখ তাহলে এই বই বাজারে কাটলো কি করে? মার্কেট রিস্ক ছিল না?
    ৮) কেন ‘ফিরে এসো চাকা’র ‘একটি উজ্জ্বল মাছ’ সৃজিত তাঁর একটি থ্রিলারধর্মী ছবিতে ব্যবহার করলেন? ওই ছবি কি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল?
    ৯) 'দেখতে ভালো মাখতে খারাপ' একটি সাবানের বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন। এই লাইন কতটা গদ্য, কতটা কবিতা?
    ১০) পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না' গদ্যের না কবিতার, কিসের কাছাকাছি?
    ১১) চন্দ্রবিন্দুর গান প্রসঙ্গেও একই প্রশ্ন। এগুলি বিক্রয়যোগ্য সঙ্গীত হলেও কিছু উত্তরাধুনিক কবিতার এলিমেন্ট কি নেই?
    ১২) নীহার রঞ্জন রায়ের আকরগ্রন্থ 'বাঙালির ইতিহাসে' কি কোনো কবিতা বা কবির উল্লেখ নেই?

    এইসব প্রশ্নগুলির উত্তর নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও নিজের আবছা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। কিন্তু, প্রশ্নগুলিতে কবি ও কবিতার ব্যবহারিক ও বাস্তবসম্মত দিকগুলিই রাখলাম।সংবিগ্ন পাঠককূল, সম্ভাব্য উত্তরগুলি নিয়ে একটু ভাবুন। সামাজিক জীবনে কবিতার উপযোগিতা ও প্রাসঙ্গিকতা হিসেবে হয়তো এগুলি বিবেচিত হতে পারে।

    ~~~~~~

    চর্যা কি আজও প্রাসঙ্গিক? স্থানাঙ্ক যদি হয়, কালাঙ্ক বলে কিছু হয় না?

    প্রথমে যে প্রসঙ্গ তুলেছিলাম সেই প্রসঙ্গে ফিরে আসি। কি উপায়ে কবিতা তৈরী হয় কেউ কি আদৌ জানে? মনে পড়ছে, সত্তরের কোন এক সালে, সম্ভবত ১৯৭৮(ভুল হতে পারে), 'অমৃত' নামক পত্রিকায়, সমকালীন দশ বারোজন কবিকে কবিতাসংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন রাখা হয়েছিল। কয়েকটা প্রশ্ন স্মৃতি থেকেই লিখছি।
    ১) কেন লেখেন?
    ২) কবিতায় শব্দের গুরুত্ব কি?
    ৩) কিভাবে লেখেন?
    ৪) সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?
    ৫) আপনি কি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ?

    বলাই বাহুল্য, বিভিন্ন কবির উত্তর বিভিন্ন ধরনের ছিল। এটাই স্বাভাবিক, কেননা শিল্প বা সাহিত্যে কোনোদিনই স্থির সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল ও অনুচিত। তাছাড়া ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির উত্তর এমনকি পদার্থবিদ্যার সামান্য উত্তরপত্রে যদি আলাদা হয়, তাহলে কবিতাতে আরো বেশি হওয়ারই কথা।কবির তালিকায় জয় গোস্বামী, রণজিৎ দাশ, বীতশোক ভট্টাচার্য, অনন্য রায়, তুষার চৌধুরী প্রমুখ ছিলেন। এটুকু মনে আছে যে জয় গোস্বামী ও বীতশোকের উত্তরগুলি ছিল বেশ দীর্ঘ। রণজিৎ দাশের উত্তর ছিল এতটাই সংক্ষিপ্ত যে মনে হবে যেন অবজেক্টিভ প্রশ্নের উত্তর লিখছেন। মনে পড়ছে রনজিতের 'কেন লেখেন' এর জবাবে লেখেন এই ধরণের এক লাইনের উত্তর:'আমার লিখনপ্রতিভা ও লিখনঅভ্যাস আছে তাই লিখি।' রণজিৎ জীবনানন্দ হলে 'হৃদয়ের মধ্যে রয়েছে এক বোধ, তারে আমি পারিনা এড়াতে'-হয়তো বা বলতেন। কিন্তু, পাঠক, ভেবে দেখুন, রণজিতের কথা ও জীবনানন্দের কথা কি এক নয়?

    'সমকালীন কোন কোন কবি আপনাকে প্রভাবিত করেন?' এই প্রশ্নের উত্তরে বীতশোক সম্ভবত উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি কালের বিভাজন মানেন না এবং চর্যার কবিরা তাঁকে খুবই প্রভাবিত করেন। প্রসঙ্গত, বীতশোকের তরুণ বয়সের এক দুঃসাহসিক কাজ ছিল, 'হাজার বছরের বাংলা কবিতা' বলে এক সম্পাদিত গ্রন্থ, যা সম্ভবত অধুনালুপ্ত। এখানে একটি তথ্য দিয়ে রাখি। তরুণ কবি সোমনাথ রায়ের ২০১২ তে প্রকাশিত 'ঘেন্নাপিত্তি'তে ও চর্যার কবিতাপ্রয়াস পাচ্ছি। লক্ষ্য করুন সোমনাথের এই প্রয়াস:
    মূল পদঃ কাহ্নুপাদানাম্
    চর্যাপদ-১০ (রাগ দেশাখ)

    নগরবাহিরি রে ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
    ছোই ছোই জাহ সো বাহ্মনাড়িয়া॥
    আলো ডোম্বি তোএ সম করিব মা সাঙ্গ।
    নিঘিন কাহ্ন কাপালি জোই লাংগ॥
    এক সো পদুমা চৌষঠ্‌ঠী পাখুড়ী।
    তহিঁ চড়ি নাচঅ ডোম্বী বাপুড়ী॥
    হা লো ডোম্বি তো পুছমি সদভাবে।
    আইসসি জাসি ডোম্বি কাহরি নাবেঁ॥
    তান্তি বিকণঅ ডোম্বি অবরনা চাংগেড়া।
    তোহোর অন্তরে ছাড়ি নড়পেড়া॥
    তু লো ডোম্বী হাঁউ কপালী।
    তোহোর অন্তরে মোএ ঘেণিলি হাড়ের মালী॥
    সরবর ভাঞ্জিঅ ডোম্বী খাঅ মোলাণ।
    মারমি ডোম্বি লেমি পরাণ॥

    প্রেম (কাহ্নপার পদ থেকে)

    প্রেমের আশ্চর্য বাড়ি সব হিসেবের থেকে দূরে
    জাতিভেদে বিত্তভেদে সবাই কখনও আসে ঘুরে
    এইবারে, দ্যাখ প্রেম আমিও দেখতে যাব তোকে
    ঘৃণাজয়ী যোগী আমি, লজ্জা ছেড়েছি নির্মোকে-
    সৃষ্টির রহস্যমূলে রতিকলা কামনার ঘোর
    সেইখানে লীলাময়ী প্রেম তোর নাচের আসর
    আমিও মোহিত হই, বিনম্রে রাখি জিজ্ঞাসা
    অজানার কোন পথে আশ্চর্য এই যাওয়া-আসা?
    যে সুতোয় বেঁধে দিস অদৃশ্য আলোর উজানে
    রঙের নেশায় মজে ভুলে গেছি বাকি সব মানে
    সেই পথে পথ হেঁটে পথ ভুলে আমি কাপালিক
    কামনাও হারিয়েছে এই শব, হাড়ের অধিক-
    শুকায় করুণাধারা, খায় প্রেম জীবনের সার
    সেই প্রেম খাব আমি সৃষ্টিচক্র করে ছারখার।

    কাহ্নু আজ বেঁচে থাকলে এই দেখে খুশি হতেন যে হাজার বছর পরে তাঁর কবিতা কিভাবে, কোন এক আশ্চর্য শুশ্রূষায় বেঁচে আছে। হরপ্রসাদও হয়ত অখুশি হতেন না।রবীন্দ্রনাথের 'আজি হতে শতবর্ষ পরে' এই কবিতা কি কোনো আশাবাদ না কি এক ধরণের অমরত্বের প্রত্যাশা? এই সেই অমরত্বের প্রত্যাশা যাকে সুনীল কবিতার তাচ্ছিল্য দিয়েই নেগেট করেন।কবীর সুমন 'মুখে মুখে ফেরা গানে', বেহুলার ইমেজ দিয়ে জানান যে বৈধব্য বাংলার রীতিই নয়। মনে প্রশ্ন ও সংশয় আসে, লখিন্দর কেন 'কালকেউটের' ছোবলে মারা গেলেন।লখিন্দরের মৃত্যু তো কালনাগিনীর কামড় বলেই তো ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছি। প্ৰশ্ন পায়, উত্তরও তো জানাই, তবু, মাঝে মাঝে মনে হয় একটু স্তব্ধতার গান শুনি। সুমনের গান কি গান না কবিতা? পল সাইমন কি গায়ক না কবি? ববি ডিলান কি নোবেল পেলেন কবিতার কারণে? তাহলে সুমনকে আমাদের দেশ, আমাদের বাংলা কেন সাহিত্যে পুরস্কার দিতে পারে না।

    কিন্তু, চর্যার স্রষ্টারা কি আজকের সোমনাথের এই ভাষা বুঝে ফেলতেন? হালকা আন্দাজে বলছি, তাঁরা কি জানতেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামক এক দেশ রয়েছে, যেখানে বসে হয়তো এই কবিতা লিখছেন এক গবেষক তরুণ কবি সোমনাথ।

    হাজার বছর আগের কবিরা এমনকি আজকের ফেসবুকে স্টেটাস আপডেট দেওয়া কবিদের সঙ্গেই যেন কিভাবে এক অলীক আত্মীয়তায় রয়েছেন। তাই , কাহ্নু, কৃত্তিবাস, জয়, বিনয় , সুনীল, মৃদুল, জয়দেব(বসু), সোমনাথ যেন নিরবচ্ছিন্ন কালপ্রবাহে একই সূত্রে বাঁধা, কিন্তু তাদের দেশ একই।সে আমাদের বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলা রে।মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতায় সত্যজিৎ রায়ের কথা। মনে পড়ে গেল বিভূতি ভূষণ। অপুর হাতে ধরা গ্লোব, সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের এই কবিতা আবৃত্তি করে অপু এই পুরস্কার জিতেছিল। সুদুরের পিয়াসী, কৌতূহলী, অপু এই গ্লোব সবসময় হাতে রাখত, সত্যজিতের ‘অপরাজিত’ সাক্ষ্য দেয়। কিন্তু এও মনে পড়ে গেল সত্যেন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের অভিযোগ: ' সত্যেন করতেন কিছু/যদি না ছুটতেন ছন্দের পিছু পিছু'।

    ভাষার ধরণ ভিন্ন কবিতে কবিতে, স্থানে আর কালে। যদি স্থানাঙ্ক বলে কিছু হয়, কালাঙ্ক বলে কি কিছু হয়? চর্যার প্রসঙ্গ আবার উত্থাপন করে বলি বীতশোক তাঁর একটি নিবন্ধে লিখেছেন যে চর্যার যুগে কবি বলে কোনো আলাদা পেশাদার ছিলেন না। চর্যার কবিরা জাল বুনতেন, চাষ করতেন, শিকার টিকার করতেন, এমনকি ফাঁসিও দিতেন।এই নিবন্ধ লেখা হয়েছিল আনুমানিক আশির দশকে। বীতশোকের পরবর্তী যুক্তি, আজকের আশির দশকে একই রকম প্রবণতা। অর্থাৎ, কবি বলে এখন আলাদা কেউ নেই। অধ্যাপক কবি, ব্যবসায়ীও কবি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্ৰমুখও কবি। যদি এই হাইপোথিসিসে কিছু সারবত্তা থাকে, তাহলে কি ২০১৮ এ একথা সত্য নয়? ২০০০ সন থেকে কি বিশ্বে, ভারতে, তথা বাংলায় কোনো গুণগত উল্লমফন হয়নি ভাবনায়, ভাষায়, ভঙ্গিতে?আজকের কবিতার ভাষা বোঝাতে বেছে নিলাম আপাতত একটি নাম, সায়ন কর ভৌমিক, তুলছি কবিতার অংশ, যেখান থেকে ব্যক্তি সায়নকে খুঁজুন, দেখুন স্থান ও কালকেও:
    'আজকাল সব ছন্নছাড়া হয়ে গেছে, রক্তচাপ, ক্ষুধামান্দ্য, সংসার, এমনকী যৌন সততা পর্যন্ত, রাতে ঘুম নাই, বাটামের ভয় আছে না?
    কিন্তু সে যাই হোক; এইসব শূন্য দশক, একের শতক এইসবই কিন্তু গাপ হয়ে ছিল নব্বইয়ের ভাঁজে।
    দহরম মহরম ছিল বাপু, তাহাদের সাথে। সাতে পাঁচেই ছিল সব, নয়ে ছয়ে, বাহান্ন তিপান্নতেও ছিল সব বাইপাসের ধারে ভুট্টাপোড়ার সাথে দুইটি ছিলিম।'

    যদি পড়তে পড়তে অনভ্যস্ত পাঠক অবিরত ধাক্কা খান, তবে পড়ুন পরের অংশটি:
    'টরেটক্কা সংকেত পাঠাই, পদ্য লিখি এখানে ওখানে
    ইউক্যালিপটাসের পাতা, ভেজাল দিই, এদিক ওদিক, একপাতায় ছাপিয়ে দিই টরেটক্কা,
    ক্যাপ্টেন স্পার্ক হলে ধরে ফেলতো ঠিক, বুঝে নিত সন্ধে নামার ঝোঁকে
    জনবহুল সাইকেলরিক্সাসঙ্কুল পথের কোনাখামচি ঘেঁষা
    ভুলভাল কোড।'

    এখানে পড়তে পড়তে প্রশ্ন আসতে পারে যৌন সততা আবার কি জিনিস? বাইপাস এই শব্দটি কবে থেকে কলকাতায় ঢুকে পড়ল তা ধরতে নির্ণায়ক কি এই কবিতা? 'ছিলিম', 'বাটামের ভয়', 'ভুলভাল' এগুলি তো চালু আড্ডার শব্দ যা আমরাও বলেছি। কিন্তু এই কবিতার প্যাটার্ন কি শক্তি, জয়, মৃদুল, জয়দেব থেকে কি অন্যরকম নয়?
    কোড বললে তা কতটা সফটওয়ার কোড? মনে পড়তে পারে কি ড্যান ব্রাউন? তাছাড়া সেমিওটিক্স বা চিহ্নবিদ্যা দিয়ে তৈরি 'মিনিং মেকিং' প্রকল্পের কথা বলা হচ্ছে? কি এখানে 'কোড'? মনে পড়তে পারে 'অথর ইজ ডেড' র প্রকল্প? ব্যানাল এই শব্দটি কবিতায় লেখা সঙ্গত? পাঠক কি কবির কবিতা ধরতে পারছে না? ধরার জন্য কি ক্যাপ্টেন স্পার্ক হতে হয়? কবি কি শক্তির পুরনো কিসসা আনলেন : পাঠককে এগিয়ে আসতে হয়, হৃদয় দিয়ে, দরদ দিয়ে, মগজ দিয়ে?কবি-পাঠকের সহাবস্থান কি এইসব কথায় রয়েছে? তাছাড়া শূন্য দশকের নির্মাণে কি নব্বইয়ের ভূমিকা ছিল?

    ~~~~~~

    কামিনী রায়ের কবিতা কি রবি ঠাকুর লিখতে পারতেন? যশোধরার কবিতা কি পুরুষ কবি লিখতে সক্ষম?

    ফেমিনিজমের অতিচর্চিত পুরনো কচকচানিতে না গিয়ে বলি সেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে যখন দেশ তথা ভারত, বাংলা আসলে ব্রিটিশ ভারত বা ব্রিটিশ বাংলা, ততদিন থেকে কামিনী রায় সহ একাধিক কবি তাঁদের কবিতা লিখছেন। এবং কামিনী রায়ের, 'পাছে লোকে কিছু বলে' আজও সমান প্রাসঙ্গিক না হলে এক ধরণের দ্বিধাগ্রস্ততা আজও কেন মহিলা কবির গলায়? পুরুষ বা নারী বিভাজন যদি নাই থাকে তাহলে কিভাবে তৃতীয় লিঙ্গ বলে একটা ব্যাপার থাকবে?
    তবুও মেয়েদের ঋতুকালীন প্রসঙ্গ আজ অনেক অকপট। তাই তাঁরা সেদিনের দ্রৌপদীর রূপা গাঙ্গুলির মত মেক আপ চড়িয়ে বস্ত্রহরণের সময় কনফিউজড স্বামীর হঠকারিতার জন্য কৃষ্ণকে বা নীতিশ ভরদ্বাজকে ডাকবেন না। কালকের দ্রৌপদী আজকের মহাশ্বেতার রক্তাক্ত দোপদী মেঝেন হয়ে এগিয়ে বলছেন: কাউন্টার কর, কাউন্টার কর। আজকের মহিলাদের কবিতার সুর বরং লিরিকস্বভাব হারিয়ে ফেলছে, আবার পুরুষ কোনো কবি ছন্দের ঝোঁক এত বেশি লিরিক লিখছেন যে তাতে যেন ধার ও ভার কমে যাচ্ছে।
    আজকের মেয়েদের দায়িত্ব নিতে অনেক বেশি হয়, অথচ তারা পুরোনো ট্রাডিশনের সিঁদুর মুছে ফেলছেন, কেমন একটা ছন্নছাড়া ভাব যেন তাদের, এমন এক পুরুষতান্ত্রিক অভিযোগ বাড়ছে। কেমন হয় তাঁদের কবিতা, যারা ফর্ম ফিলাপে বাধ্যত বা স্বতঃস্ফূর্ত কিনা জানিনা, জেন্ডারের জায়গায় F এ টিক দেন ?
    'মায়ামমতায় ভরা এ সংসারে এসে
    তুমি তো করেছ শুধু তুমুল অশান্তি, মাগো, বাড়ি যাও, বাড়ি যাও,
    আমাকে বলেছে সব প্রতিবেশী, পাড়াপড়শি , এমনকি নিজের ছেলেটিও।
    আমাকে বলেছে আমি অলক্ষ্মী পিচেশ।
    কেন বা বলবে না বল, আমি তো খেয়েছি সিগারেট আর আমি তো সন্ধে পার করে
    বাড়িতে ফিরেছি, কোন সন্ধেবাতি, হুলুধ্বনি, শঙ্খের বাতাস
    আমাদের বাড়িতে বহেনি।
    তারপর এসেছে বন্ধু, কবিদের দল, মধ্যরাতে আড্ডা দিতে
    ছেলে অন্য ঘরে বসে পড়া করছে, দোর দিয়ে, সেও তো জেনেছে
    তার মা অদ্ভুত, খাপছাড়া, কোন সাধারণ সতীলক্ষ্মী নয়।
    সবাই বলেছে তুমি বাড়ি যাও বাড়ি যাও, তার জন্য ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছি নিজের।
    শুধু যেই নিজের আনন্দ আমি রাখতে গেলাম সেই ঘটে
    ঘটটি গড়িয়ে পড়ল।
    স্বামী ও সংসার কোন কথাই বলল না। ছেলেও এবার চুপচাপ।
    আমি কি আমার সুখ নিজে নিজে রচনা করব , গো?
    আমি কি আমার ফ্ল্যাট একা একা সাজিয়ে ফেলেছি?
    আমার উনুনে আজ একজনের রান্না হবে নাকি?
    এই দুঃখে এই কষ্টে, আমি ঘট গুঁড়িয়ে ভেঙেছি...
    তারপর অলক্ষ্মী মায়ের মত একা একা ফিরে এসে ঘরে
    আমি সন্ধ্যা অবদি ঘুমাই, আর চুল খুলে বেপাড়ায় ঘুরি...
    অশান্তি বানাই আমি, মুখে মুখে ছড়া কাটি সমস্ত বিকেল...
    আর, আমি সারা পথ নিজের এ পদচিহ্ন ছড়িয়ে এসেছি... মনোদোষে।
    নিজের শরীর খান খান করে আমি আজ রোগজীর্ণ একজোড়া জ্বরতপ্ত চোখ...
    তৃতীয় নয়ন কই, সে তো ছিল, কুলুঙ্গিতে তোলা, আজ নামিয়ে পরে নি?'

    যশোধরা রায়চৌধুরী লিখছেন এই কবিতা। ফেসবুকে শেয়ার করলেন অপর এক কবি, যিনিও নারী। শেয়ারের দিন হলো এ বছরের লক্ষীপুজো। এর বেশি কিছু বলা এক ধরনের অর্বাচীনতা হয়ে যেতে পারে। পাঠক, পড়ুন। আপনিও পড়ুন, হে পাঠিকা।
    শুধু বলি এই কবিতায় কতটা রক্তক্ষরণ, দ্বিধায় দীর্নতাই বা কতটা? সনাক্ত করুন। কামিনী রায়ের 'পাছে লোকে কিছু বলে' কবিতার কিছু অংশ তুলে দিচ্ছি। কামিনী রায়ের সংশয়- প্রকল্পের চেয়ে কি যশোধরার সংশয়ের ধরণ কিছু আলাদা? কোথায় বা তা ভিন্ন? পাঠক, পড়ুন, সনাক্ত করুন। অল্পই তুলে দিচ্ছি কামিনী রায়:
    'করিতে পারি না কাজ
    সদা ভয় সদা লাজ
    সংশয়ে সংকল্প সদা টলে,
    আড়ালে আড়ালে থাকি নীরবে আপনা ঢাকি
    সম্মুখে চরণ নাহি চলে
    কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি-সযতনে শুষ্ক রাখি
    নির্মল নয়নের জলে
    পাছে লোকে কিছু বলে'

    এই দুটি কবিতা থেকে কান্না সনাক্ত করা যায় , ধরা যায় দুই সময়ের দুই কবির সংশয় ও সমস্যার যন্ত্রণা, যা প্রসূত কবিতায়। নারীর নিজস্ব অধিকার নিয়ে সমাজ কতদূর এগিয়েছে, এই প্রশ্নও এসে যেতে পারে।

    এবারে মিতুল দত্তের কবিতায় চোখ রাখি, পেয়ে যেতে পারি অন্য এক ঝোঁক:

    'সন্ধিবয়সের দিকে মুখ ছিল, করুণার দিকে
    কাকলির দিকে আর ক্ষুধিত পাষাণে লেখা আলোর অপেরা, আলো
    মিছরির ছুরির মতো আলো তার স্বভাবে ঢুকেছে
    শরীরের খানাখন্দে, যুবক, জ্বালানি আর গান
    উনুনে দিয়েছি আমি, তালপাতা খোঁপায় পরে শুয়ে আছি
    পিঁড়িতে সাজিয়ে সাদা, হে সাদা, হে শ্বেতপত্র, আমি তার রবিবাসরের
    সম্রাজ্ঞী-কেচ্ছার পাশে পাত্র চাই পাত্রী চাই ভরিয়ে তুলেছি
    আমি সেই চৈতন্যহারানো বিষ্ণুপ্রিয়া হতে চেয়ে
    হয়ে গেছি সূর্পনখা, নাক কেটে গুরুদন্ডবৎ
    মিশেছি তোমার খুরে, গোক্ষুর আমার
    তোমার মাথায় চড়ে ত্রিকাল দেখাব ভাবি আর
    ত্রিকাল আমাকে দেখে, আমি যেন সঙ, দর্জিপাড়া
    মর্জিনা নাচিয়ে যেন ঝুমঝুমি বাজাব'

    এখানে ‘ক্ষুধিত পাষাণে’র উল্লেখ কি সেই নারীচরিত্রের ওপর পুরুষ কর্তৃত্বের আভাস? সূর্পনখা, বিষ্ণুপ্রিয়া, মর্জিনা সবকটি নারীর উল্লেখের মধ্যে কি কোনো মিল আছে, যেগুলি এক ধরনের কষ্ট ও বঞ্চনার ইঙ্গিত দেয়? কাকলী ও করুণাও তো কোনো নারীরই নাম। নির্মাণ কৌশলে হয়ত বা মনে পড়তে পারে ইউরোপিয়ান বা ভারতীয় চলচ্চিত্র, যেখানে সমস্ত চরিত্রই নারী। তাছাড়া দর্জিপাড়া সমকালীন প্রান্তিক নারীর দিকেই যেন দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই কবিতার সঙ্গে নাটকের কোনো যোগ আছে? সন্ধিবয়েস কি বয়ঃসন্ধি নাকি তা আড়ি-ভাবের কবিতা। পুরুষচরিত্র-বিবর্জিত এই কবিতা কি এক সচেতন নির্মাণ নয়?

    ~~~~~~

    কবিতায় ধরা পড়ে সমকাল, ইতিহাস, প্রযুক্তি, অর্থনীতিও
    কবিতা থেকে কবিকে চেনা যায়,সমকাল অদ্ভূত ধরা পড়ে। একটি সাম্প্রতিক কবিতা পড়ুন:
    'অবশেষে বোতামের অক্ষরে অক্ষরে উপগ্রহ যোগ যদি যায় খুলে
    আমরা পৌঁছতে চেয়েছি চাঁদে-মধ্যরাত্রির সিকি ভাগ মাশুলে।
    নিতান্ত মামুলি কথা, তবু অনর্থক নয়, সীমিত সামর্থটুকু
    নিঙড়ে বরাতমাফিক কথার ক্ষরিত সুখ সামান্য আশয়
    পার করে দেয় তার পরদিন থেকে আরও কিছু চন্দ্রহীন তট।
    কেউ বুঝি আড়ি পেতেছিল সেইখানে? কেউ বুঝি লিখেছিল পট?
    সে-ই বুঝি পথ জুড়েছিল, বটঝুরি দোল দিয়ে দেওয়াল গেঁথেছে?'
    সুমন মান্নার ‘ফোনঘর’ এই কবিতায় যেন ফিরে আসছে ফেলে আসা এসটিডি যুগ, যা এখন গল্পের ও কবিতার বিষয়। উপগ্রহ যোগ আসলে স্যাটেলাইট মনে হয়, যা আজকের যোগাযোগের এক আবশ্যিক শর্ত। সিকি ভাগ মাশুল বললে মনে পড়ে কোনো এক রাত এগারোটার পরের তড়িৎদার বুথ, যেখানে উদ্বেগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে প্রেমিক ও প্রেমিকা। এখানে উল্লেখ্য, প্রেম করতে রাষ্ট্রীয় মাশুল লাগে, কবি জানিয়ে দিলেন। উদ্বিগ্ন প্রেমিক- প্রেমিকাকূল, উদ্বেগের কারণ লম্বা কিউ এবং সমস্ত লাইন ব্যস্ত। মনে পড়ে অল লাইনস আর বিজি, যা আজকের দিনেও মাঝে মাঝে শোনা যায়। সুমন যেন এক অজানা বান্ধবীর কথা বলছেন। সেই বান্ধবীর জন্য যেন মন খারাপ। তাই শেষ লাইনটি এরকম বিষণ্ণ : ' মাঝে মাঝে তাকে মনে পড়ে'। সুমন এক মারাত্মক কথা জানাচ্ছেন : ' নিতান্ত মামুলি কথা, তবু তা সাধারণ নয়'। মনে পড়ে বুদ্ধদেব বসুর লাইন: যা কিছু ব্যক্তিগত, তাই পবিত্র।


    ক্রমশঃ
    প্রথম পর্ব | তৃতীয় পর্ব
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কাব্য | ১২ জানুয়ারি ২০১৯ | ৭৬৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • b | 4512.139.6790012.6 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৩79536
  • ক্যাম্পের এই লাইনগুলো নিয়ে লোকজন উলুৎপুলুৎ হয়েছিলো।
    "তাহাদের প্রেমের সময় আসিয়াছে;
    তাহাদের হৃদয়ের বোন
    বনের আড়াল থেকে তাহাদের ডাকিতেছে
    জোছনায় –"

    আর অচিন্ত্যকুমারের কথিত পদ্যটি হল 'অবসরের গান', ঝরা পালক নয়, ধূসর পান্ডুলিপি-র।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:২৭79537
  • বুঝুন ঠ্যালা। তিনখানা কবিতা এসে হাজির। কবির কর্মচ্যুতির সম্ভাব্য কারণ। কোন্‌টাকে ধরি এখন? শ্রীরাধিকে চন্দ্রাবলি, কারে রেখে কারে বা ফেলি? ঃ-)
    (গপ্পোগুলো বানোয়াট না তো? কারণ কবিতাগুলো কাছাকাছি সময়ে লেখা নয়, অনেক বছর আগে পরে)
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩১79538
  • ধূসর পান্ডুলিপি প্রকাশের সময়কাল দেখলাম ১৯৩৬। "ক্যাম্পে(১৯৩১)"র ও অনেক পরের ব্যাপার। এদিকে চাকরি যাবার কাহিনি ১৯২৭ এর।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৩79539
  • তবে "বনলতা সেন" নিয়ে মনে হয় এরকম কিছু নেই। খুব বাঁচোয়া। ঃ-)
  • dc | 670112.208.8989.44 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৩79540
  • যে কোন কবিকেই কবিতা লেখার কারনে বরখাস্ত করা যায়। জীবনান্দ যে কবিতা লিখে চাকরি খুইয়েছিলেন এতে অবাক হওয়ার তো কিছু নেই!
  • dc | 670112.208.8989.44 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৯79541
  • ৫) কেন আমরা বই না দেখে জনপ্রিয় গদ্যও কোট করতে পারিনা, অথচ, এমনকি অনেক আধুনিক কবিতা নির্ভুল গড়গড় করে অনেকেই বলে যেতে থাকেন?

    এর উত্তরটাও জানা। আধুনিক কবিতা মনে রাখা সোজা, তাই আমরা গড়গড় করে বলে দিতে পারি। যেমন এই জনপ্রিয় আধুনিক কবিতাটিঃ

    আকাশে উড়িতেছিল কাক
    আমি তো অবাক।

    আরেকটা আধুনিক কবিতাঃ

    পরপর দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো বাড়ি, কোনটা নীল, কোনটা সবুজ, কোনটা হলুদ, কোনটা লাল। প্রতিটা বাড়িতে একটা করে টিভি আছে আর আছে একট করে ফ্রিজ। কোন কোন ফ্রিজে জমে আছে চারদিনের পুরনো মটন।

    তো দেখাই যাচ্ছে, আধুনিক কবিতা মুখস্থ করা সোজা।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৩79550
  • জীবনানন্দের কোন্‌ কবিতার জন্য চাকরি গিয়েছিল, সেই ব্যাপারটা কি ফয়সালা হল?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০৪79551
  • এলেবেলে,
    আপনার পোস্টের অপেক্ষায় আছি। কারণ এখন অবধি জীবনানন্দের ব্যাপারটা নিয়ে পরিষ্কার কোনো উত্তর পেলাম না।
  • র২হ | 232312.171.670112.90 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২৩79542
  • এহ কাক অবাক এইসব জোকগুলি পুরনো হয়ে গেছে।

    মাটনেরটা অবশ্য কবিতা/ প্রবন্ধ/ রিপোর্টিংএর দিকে টানা যায়। মাটনের ছাগলগুলোকে গরু বলে রটিয়ে দিলে কী হয় এইসব।
  • কুশান | 238912.66.788912.82 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৪79543
  • Tim-"পরের অংশ নিয়ে একটা প্রশ্ন ছিলো, "সংবিগ্ন পাঠককুল" কারা?"

    যদি বলি আপনি, আমি, আপনারা ও আমরা?

    যারা অংশ নিচ্ছেন।
  • কুশান | 238912.66.788912.82 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৯79544
  • Atoz- "আরে বাবা ওটা তো উপন্যাস, আত্মজীবনী বলে তো দাবী করেন নি তিনি!
    এখন আমরা যদি কৃত্তিবাসকে রামচন্দ্র বলে চেপে ধরি, তাহলে কী করে হয়? ঃ-)"

    একটা মৌলিক তফাৎ। কৃত্তিবাসী রামায়ণ আত্মজৈবনিক নয়। জীবনানন্দের উপন্যাসগুলি আত্মজৈবনিক। ভূমেন গুহর সম্পাদনা দেখলে এমনকি সম্পর্কিত অন্যান্য বেশ কিছু চরিত্র সনাক্ত করা যায়।

    আত্মজৈবনিক হলে ষোল আনা সত্য থাকবে এমন কথা নেই। কিন্তু, বারো আনা থাকতেও পারে।
  • সুকি | 348912.82.2323.227 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫২79545
  • "পুলক বন্দ্যো সিরিয়াস আলোচনায় ঢুকতে অনীহা কেন?"

    মনে হয় বোঝাতে পারি নি - পুলক বন্দোপাধ্যায়কে নিয়ে সিরিয়াস আলোচনায় কোনই অসুবিধা নেই। আমার বক্তব্য কেবল উনার ওই উল্লিখিত গানটি নিয়ে।

    এবার যদি আপনি একটু বিশদে বলেন কেন আপনি মনে করেন "ভজহরি মান্না" গান/কবিতা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা দরকার তা হলে হয়ত একমত/দ্বিমত হবার একটা প্রচেষ্টা দেওয়া যাবে।
  • সুকি | 348912.82.2323.227 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৮79546
  • "আবু সয়ীদ আইয়ুব সম্পাদিত সিরিয়াস ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’য় এই কবিতাটি স্থান পেল কী করে?
    ‘শুনেছ কি বলে গেল সীতারাম বন্দ্যো?
    আকাশের গায়ে নাকি টকটক গন্ধ?”

    কিভাবে স্থান পেলেন অন্নদাশংকর?"

    সত্যি কথা বলতে কি এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। আচ্ছা উনি কি লিখে গিয়েছিলেন কেন ওই কবিতাগুলি উনি আধুনিক কবিতা বলে মনে করেন? হাতের কাছে এই মুহুর্তে বইটি নেই, আর মনেও করতে পারছি না।

    এটাও হতে পারে যে আবু সয়ীদ আইয়ুব এর হাতে বেশী আধুনিক কবি ছিল না! বইটির ও তো একটা ভ্যলুম দরকার!
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:০৬79547
  • "যদি বলি আপনি, আমি, আপনারা ও আমরা?

    যারা অংশ নিচ্ছেন।"
    কুশানবাবু,
    আপনি, এবং আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই বাংলা কবিতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, দস্তুরমত চর্চা করেন। ওয়াকিবহাল মহল "বাংলা কবিতার সামাজিক প্রভাব" সম্পর্কে আলাদা করে ভাবতেই পারে, কিন্তু প্রভাব আছে কি নেই সেই প্রশ্নের উদাহরনসহ উত্তর তো তাঁদের জানা।
    এই কারণে আমার ধারণা হয়েছিলো যাঁরা কবিতা সম্পর্কে উদাসীন তাঁদের প্রতি (অর্থাৎ ঐ "অনেকে" যাঁরা কবিতার প্রয়োজন নেই বলেন) তাঁদের ঐ প্রশ্ন করা হয়েছিলো। যাই হোক, ধন্যবাদ। বাকি কথা এগোক, পড়ছি।
  • কুশান | 238912.66.678912.82 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৯79548
  • সুকি, আপনার প্রতিক্রিয়া পেলাম। উত্তর পরে দেব। আপনার রিজার্ভেশন আছে জানি। তবু, একবার আপনাকে মূল লেখাটি পড়তে অনুরোধ করব। পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত। একটি পত্রিকায় বেরিয়েছিল। দৈবাৎ নেটে পেলাম।

    Tim, আপনার পয়েন্ট ধরতে পেরেছি বোধহয়। আজ আমার খাতা জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট। কিছু খাতা এখনো বাকি। পরে ফিরব।

    আপাতত,

    রাঁধুনি-মিঠুয়া

    পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    জ্যামাইকা-গ্রীস গিয়ে
    কানাডা-প্যারিস গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    হাতে নিয়ে ডেকচি
    যেই তুলি হেঁচকি
    বিরিয়ানি কোর্মা
    পটলের দোলমা

    মিলেমিশে হয়ে যায় উচ্ছের ছেচকি
    মুখে দিলে এই হাসি এই পাবে কান্না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    খাইবার পাস গিয়ে
    রোম সাইপ্রাস গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    চ্যাং-ব্যাং-খলসে
    রোদ্দুরে ঝলসে
    খুন্তিটা বাজিয়ে
    যেই দিই সাজিয়ে
    অমনি সে হয়ে যায় 'মাগুরের ঝোল'-সে।
    ভুঁড়ির ভাবনা নেই
    যত খুশি খান না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    ম্যারিকা-এডেন গিয়ে
    কোপেনহেগেন গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    'হরেকরেকম'বা
    'রাঙ্গালুর দম' বা
    ঢেড়সের কচুরি
    খেজুরের খিচুড়ি
    মোটা খেলে রোগা হবে বেঁটে হবে লম্বা।
    ককিয়ে বলতে হবে-'কবরেজ আন না!'

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    ইস্তাম্বুল গিয়ে
    জাপান-কাবুল গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    কচি খসখসেতে
    গ্যাদালের রসেতে
    কিছু বিটনুনকে
    কিছুটা রসুনকে
    কচুর সাথে মাখি
    টম্যাটোর সসেতে
    চেখে নিন উপহার
    দশ রতি পান্না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    ফিজি-ব্যাবিলন গিয়ে
    তাহিতি-স্লোন গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    দুধে আর আখেতে
    পাকা পুঁইশাকেতে
    কড়াইটা তাতলে
    যদি দিই সাতলে
    গোগ্রাসে খেতে হবে চোখে-মুখে-নাকেতে
    ফুরোবে না যে খাবার যত খুশি চান না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    ঘানা-ব্রিসবেন গিয়ে
    মরক্কো-স্পেন গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।

    না কেটেই খাসিটা
    'টাটকা' কি 'বাসী' তা
    ঠিক পড়ে নজরে
    বলে দিই সজোরে
    মাংসটা ঝাল হবে মেটে হবে আশিটা।
    পেটে গিয়ে ব্যা ব্যা করে জুড়ে দেবে কান্না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    সুইজারল্যান্ড গিয়ে
    ইজিপ্ট-হল্যান্ড গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।
    আমি নই কেতাবি
    এ চ্যালেঞ্জ, এ দাবি
    ইহকাল কেটেছে
    পরকাল কেটেছে
    দলে দলে খেয়ে যান দম ভরে এ-খাবি
    থাকবে না খাওয়া নিয়ে লক্ষ বাহান্না।

    আমি শ্রী শ্রী মিঠুরাম মান্না
    পৃথিবীর ছাদে গিয়ে
    আসল ও-চাঁদে গিয়ে
    শিখেছি নতুন এই রান্না।
  • এলেবেলে | 2345.110.562323.34 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১৫79552
  • @Atoz, সত্যিই অত্যন্ত লজ্জিত আমার দেরির কারণে। আসলে রাতের দিক ছাড়া সাইটে আসার উপায় থাকে না। যাই হোক দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় 'জীবনানন্দ দাশ বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিপর্ব'-তে স্পষ্ট জানিয়েছেন ১৯২৮এ জীবনানন্দ সিটি কলেজ থেকে ছাঁটাই হন। চাকরি খোয়ানো আর ছাঁটাই সম্ভবত এক নয়। তিনি আরও জানিয়েছেন ১৯৩২ এর জানুয়ারি মাসে পরিচয় পত্রিকায় 'ক্যাম্পে' কবিতা প্রকাশিত হয়। সুতরাং ক্যাম্পে কবিতা লেখার 'অপরাধে' জীবনানন্দ কলেজের চাকরিটি খোয়াননি। সিটি কলেজে চাকরি খোয়ালেও ১৯২৯এ যথাক্রমে খুলনা বাগেরহাট কলেজ এবং দিল্লি রামযশ কলেজে তিনি যোগ দিয়েছেন। খুলনা কলেজের কর্তাব্যক্তিরা 'ক্যাম্পে' সম্পর্কে কিছুই জানতেন না - এটা ধরে নেওয়া অতি সরলীকরণ।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২১79553
  • অনেক ধন্যবাদ, এলেবেলে । জীবনানন্দের এই "একটি কবিতা লিখে চাকরি খোয়ানো" এটা মিথ তাহলে।
  • ~ | 781212.194.6790012.70 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২২79554
  • বাংলা উইকি

    ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়। সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি 'দাশগুপ্তের' বদলে কেবল 'দাশ' লিখতে শুরু করেন।

    প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি সিটি কলেজে তাঁর চাকরিটি হারান। ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজটিতে ছাত্র অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলাফলস্বরূপ কলেজটির ছাত্রভর্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। জীবনানন্দ ছিলেন কলেজটির শিক্ষকদের মধ্যে কনিষ্ঠতম এবং আর্থিক সমস্যাগ্রস্ত কলেজ প্রথমে তাঁকেই চাকরিচ্যুত করে। এই চাকুরিচ্যুতি দীর্ঘকাল জীবনানন্দের মনোবেদনার কারণ ছিল। কলকাতার সাহিত্যচক্রেও সে সময় তাঁর কবিতা কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হয়। সে সময়কার প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস শনিবারের চিঠি পত্রিকায় তাঁর রচনার নির্দয় সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন। কলকাতায় করবার মতো কোন কাজ ছিল না বলে কবি ছোট্ট শহর বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে মাত্র দুই মাস কুড়ি দিন পরেই তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন। এ সময় তিনি প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন।

    চাকুরি না থাকায় এ সময় তিনি চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ে গিয়েছিলেন। জীবনধারণের জন্যে তিনি গৃহশিক্ষকরূপে কাজ করতেন, এবং লেখালিখি থেকে সামান্য কিছু রোজগার হতো। সাথে সাথে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরির সন্ধান করছিলেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও তাঁর চাকুরীর মেয়াদ মাত্র চার মাস।

    ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিলো ঢাকা শহরে, পুরোনো ঢাকায় সদরঘাট সংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে।[৯] লাবণ্য গুপ্ত সে সময় ঢাকার ইডেন কলেজে লেখা-পড়া করছিলেন। জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

    বিয়ের পর আর তিনি দিল্লিতে ফিরে যাননি। এরপর প্রায় বছর পাঁচেক সময় জীবনানন্দ কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন। মাঝে কিছু দিন একটি বীমা কোম্পানির এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন; ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে অর্থ ধার করে ব্যবসা করেছেন; কিন্তু কোনটাই স্থায়ী হয়নি। এসময় তাঁর পিতা জীবিত এবং জীবনান্দের স্ত্রী বরিশালেই ছিলেন বলে জীবনানন্দের বেকারত্ব পারিবারিক দুরবস্থার কারণ হয়নি।

    ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। প্রায় সে সময়েই তাঁর ক্যাম্পে কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাথে সাথে তা কলকাতার সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার। অনেকেই এই কবিতাটি পাঠ করে তা অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।
  • ~ | 781212.194.6790012.70 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:২৭79555
  • আরেকটু উইকি (সরস্বতীপুজো)

    কর্মজীবন
    অধ্যাপনার কাজে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। এমএ পাসের পর কলকাতায় কলেজের বোর্ডিংয়ে থাকার প্রয়োজন হলে তিনি আইন পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯২৮-এ সরস্বতী পূজা নিয়ে গোলযোগ শুরু হলে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁকেও ছাঁটাই করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জীবনের শেষভাগে কিছুদিনের জন্য কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকা স্বরাজ-এর সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন। অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যার মধ্যে আছে সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯২২-১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ, খুলনা (১৯২৯); রামযশ কলেজ, দিল্লী (১৯৩০-১৯৩১), ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল (১৯৩৫-১৯৪৮), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা 'বিবেকানন্দ কলেজ', কলকাতা) (১৯৫৩) এবং হাওড়া গার্লস কলেজ, কলকাতা (১৯৫৩-১৯৫৪) তাঁর কর্মজীবন আদৌ মসৃণ ছিল না। চাকুরী তথা সুস্থির জীবিকার অভাব তাঁকে আমৃত্যু কষ্ট দিয়েছে। একটি চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে জীবিকার অভাব কিছুটা পুষিয়েছেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে অকাল মৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজ কর্মরত ছিলেন। দুই দফা দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানীর এজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন এবং প্রধানত গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। এছাড়া ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তার কর্মজীবনের ছায়াসঙ্গী।
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৩79556
  • আচ্ছা, জীবনানন্দের কোনো সন্তানসন্ততি বা সন্তানদের সন্তান কি জীবিত আছেন এখনও? এক মেয়ে আর এক ছেলে ছিল শুনেছিলাম। কী হল তাঁদের?
  • এলেবেলে | 2345.110.562323.34 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৪79557
  • 'ক্যাম্পে' নিয়ে যে অতিকথন দীর্ঘদিন ধরে গড়ে উঠেছিল তার ঝুঁটি ধরে নাড়িয়ে দিয়েছেন দেবীপ্রসাদ উক্ত গ্রন্থটির ৪৭৯ পৃষ্ঠায়। তিনি লিখছেন - " 'আত্মঘাতী ক্লান্তি' এবং 'বিজ্ঞানদৃষ্টির অভাব' এই দুটি অভিযোগই জীবনানন্দকে বিচলিত করেছিল এবং লক্ষণীয়, আমাদের জানিত যে দুটি মাত্র ক্ষেত্রে তিনি আত্মপ্রমাণে ব্যাকুলতা করেছিলেন তার একটি এই কবিতা ['আট বছর আগের একদিন']। (অপরটি 'পরিচয়'এ প্রকাশিত 'ক্যাম্পে' - প্রকাশ্যত সজনীকান্তের আক্রান্ত কিন্তু নেপথ্যে বহুজনের বিবেচনাতেই 'অশ্লীল' এবং সে বহুজনের এতখানিই প্রসার ছিল যে সে কবিতার জন্য জীবনানন্দের চাকুরি যাওয়ার অবিচলিত একটি কিংবদন্তী পর্যন্ত গড়ে ওঠে)।"

    সুতরাং ...
  • এলেবেলে | 2345.110.562323.34 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪০79558
  • ওহো, এই তথ্যটি লিখতে ভুলে গেছি যে আমার গ্রন্থটি ২০০৭ সংস্করণের। তার বারো বছর পেরিয়ে ওই অতিকথনের চর্বিতচর্বণ এতটা জায়গা নিল এই টইয়ের? খুবই হতাশাজনক সন্দেহ নেই। যেমন হতাশাজনক দেবীপ্রসাদের পরেও বাংলা উইকির রেফারেন্স!
  • এলেবেলে | 2345.110.562323.34 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪১79559
  • * বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত ১২.৪৫
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৫৩79560
  • উইকি তো নানা জায়্গা থেকে আহৃত তথ্যের সংকলনমাত্র। সেই রেফারেন্স আসুক না, ক্ষতি কী? বরং জোরদারই হয় বক্তব্য। (উইকি তে তো আহৃত তথ্যগুলোর তথ্যসূত্র দেওয়া থাকে। সেখানে হয়তো এইসব প্রামাণ্য বইগুলোরই রেফারেন্স আছে)
  • ~ | 781212.194.6790012.70 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৩৩79561
  • এলেবেলে কেন ধরে নিচ্ছেন ২০০৭ সালের দেজ সংস্করণ এ [বা আরো আগে ১৯৮৬তে প্রকাশিত বা ১৯৯৭ সংস্করণ এ] দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর 'জীবনানন্দ দাশ বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত" বইখানি সকলেরই সংগ্রহে আছে বা থাকা সম্ভব বা অন্তত সকলেই পড়ে ফেলেছেন বা ফেলা সম্ভব?

    নতুন বেরোনো বই থেকে অধুনালুপ্ত পত্রিকা কিছু একটা হাতবদল করতেই যখন যাদ-নব ছোটাছুটি লেগেই আছে? ;-)

    প্রসঙ্গ এলে আরো যেখানে যেখানে সেসম্পর্কিত যা যা রেফারেন্স আছে সেসবই উঠে তো আসেই।
  • ভজ | 232312.171.670112.90 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৪৫79549
  • মিঠুরামটা কি ব্যাপার? ভজহরি না? অরিজিনাল ভার্সনে মিঠুরাম? মূল লেখা আর গানে কি অনেক তফাৎ আছে? (জানিনা, গানের কথাগুলি এত মন দিয়ে শুনিনি কখনো)। তবে, এটা পড়েও কিন্তু বুঝতে পারলাম না, সিরিয়াস কেন- এটা একটু ব্যাখ্যার দাবী রাখে।
    সময় পেলে লিখবেন পরে।
  • এলেবেলে | 2345.110.562323.34 (*) | ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫২79562
  • @Atoz এবং @~ দুজনকেই প্রথমত বলি বাংলা উইকি নিয়ে আমার তেমন ছুতমার্গ নেই। তবে উপরোক্ত অংশটিতে রেফারেন্স বলতে এই অংশটি - ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৯ই মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সাথে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিলো ঢাকা শহরে, পুরোনো ঢাকায় সদরঘাট সংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে [৯]। এটি নেওয়া হয়েছে আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থের পরিশিষ্ট অংশের জীবনপঞ্জি থেকে। কিন্তু এখানে 'ক্যাম্পে' নিয়ে নির্দিষ্টভাবে কিছুই বলা হয়নি। তাই বলা আর কি।

    দ্বিতীয়ত আমি মোটেই ধরেই নিইনি যে '২০০৭ সালের দেজ সংস্করণ এ [বা আরো আগে ১৯৮৬তে প্রকাশিত বা ১৯৯৭ সংস্করণ এ] দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর 'জীবনানন্দ দাশ বিকাশ প্রতিষ্ঠার ইতিবৃত্ত" বইখানি সকলেরই সংগ্রহে আছে বা থাকা সম্ভব বা অন্তত সকলেই পড়ে ফেলেছেন বা ফেলা সম্ভব'। তা ধরে নিলে চাকরি খোয়ানোর কারণ হিসাবে 'ক্যাম্পে' নিয়ে এত আলোচনা সম্ভবই নয়।
  • সুকি | 348912.82.2323.227 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৬79568
  • ১৩৫৪ সালের কার্তিক মাসে লেখা "শিক্ষা-দীক্ষা-শিক্ষকতা" প্রবন্ধে (খুব সম্ভবত উনার মৃত্যুর পর ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত "কবিতার কথা" নামক প্রবন্ধ বইটি থেকে নেওয়া) জীবনানন্দ নিজে লিখছেনঃ

    "খুব ভালোবেসে যে শিক্ষকতার কাজ নিয়েছিলাম একদিন তা বলতে পারব না, শিক্ষকতায় লিপ্ত হয়ে থাকতে যে খুব ভালো লেগেছিল তা-ও নয়। তবে ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করে বেরিয়ে কি করব কোন কাজ নেব স্থির করতে করতে অনুভব করেছিলাম শিক্ষকতায় - কলেজের মাষ্টারির দিকেই আমার ঝোঁক বেশী"।

    এই প্রবন্ধে তিনি কিন্তু কবিতা লিখে চাকুরী হারাবার ব্যাপারে কিছু লেখেন নি। বরং শিক্ষকদের মাহিনা ইত্যাদি কত কম সেই নিয়েই লেখা আছে বেশী।
  • কুশান | 238912.66.9008912.34 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৫79569
  • সৈকত, এলেবেলে, ~ নামাঙ্কিত যিনি বললেন''আমি থিওরি দিলে তো আবার আপনেরা রে রে করে তেড়ে আসবেন। ', আপনার নামটা জানিনা, আপনার একাধিক কমেন্ট, r2h,এবং, সুকি, আপনাদের কথার থেকে অনেক মূল্যবান তথ্য উঠে এসেছে। Atoz সবার প্রথমে প্রশ্নটি রেখেছিলেন। তবু, একটু দ্রুত 'ফয়সালা' করতে চাইছেন যেন সবকিছু, একটু ধৈর্য রাখুন, আমার পরবর্তী বক্তব্য রাখব। আমি এখনো উপসংহারে আসতে পারিনি, তবে বেশ কিছু এলিমেন্ট পেয়েছি আপনাদের আলোচনার থেকে।
    সুকি এবং Tim এর আগের তোলা প্রশ্নে পরে অবশ্যই ফিরব।
  • এলেবেলে | 2345.110.233423.106 (*) | ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:২৮79570
  • রে বা রেফারেন্স বা ~ রেফারেন্স দিলে কেউ 'রে রে করে তেড়ে' আসবেন না, গ্যারান্টি। তবে এই সুযোগে 'ক্যাম্পে' নিয়ে আরও দু-চার কথা।

    সজনীকান্ত দাসের ‘ক্যাম্পে’ সমালোচনা


    জীবনানন্দের উত্তর



    ‘ক্যাম্পে’ কবিতা বিশ্লেষণ



    প্রথম পাঁচটি পাতা দেবীপ্রসাদের বই থেকে, শেষ দুটি নিয়েছি মঞ্জুভাষ মিত্র-র 'কবিতার কারুকার্য ও জীবনানন্দ দাশ' গ্রন্থ থেকে। দেবীপ্রসাদ তাঁর টীকায় বুদ্ধদেব এবং ভূমেন্দ্রর উল্লেখও করেছেন, সেটা পড়বেন অবশ্যই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন