এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০২৩০ বার পঠিত
  • ১।
    ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমবারের জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছরই গান্ধির সঙ্গে তাঁর বিবাদের শুরু। কোনো আশ্চর্য কারণে অনেক মহল থেকেই এই বিবাদকে ব্যক্তিগত, আবেগজাত, ইত্যাদি নানারকম ঢাকনা দিয়ে পরিবেশন করতে ভালবাসেন, কিন্তু আদতে বিষয়টি ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক, ভীষণভাবে তিক্ত, ভারতীয় রাজনৈতিককে মহলকে আড়াআড়িভাবে দুই ভাগে ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছিল। প্রায় জয় হয়ে আসা যুদ্ধটি সুভাষ নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন। সেটি তাঁর মহত্ব না ব্যর্থতা সে নিয়ে আলোচনা চলতে পারে, চালানো উচিতও, কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে এই বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেইনা, যদিও অবিভক্ত ভারত, বিশেষ করে বাংলার ভবিষ্যতের জন্য গান্ধি-সুভাষ বিতর্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভবত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল।

    এই বিতর্কটিতে ঢোকার আগে ১৯৩৭-৩৮ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া দরকার। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে এসেছে, শুরু হবে বছর খানেকের মধ্যে, কিন্তু তার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এর পাঁচ-ছয় বছর আগে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসকের উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা হয়েছে, ১৯৩২ সালের ম্যাকডোনাল্ডস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘোষণার মাধ্যমে। ওই বছরই গান্ধি-আম্বেদকরের মধ্যে সাক্ষরিত হয়েছে পুনা চুক্তি। ১৯৩৫ সালে বাঁটোয়ারার পরের ধাপ হিসেবে পাশ হয়েছে ভারত সরকার আইন, যাতে ভারতীয়দের দ্বারা কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভা কংগ্রেস বা লিগ কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, কিন্তু প্রাদেশিক নির্বাচনে তারা উভয়েই অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৩৭ সালেই হয়েছে এই নির্বাচন এবং বাংলা সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কৃষক প্রজা পার্টির নেতা ফজলুল হক।

    সুভাষ-গান্ধি বিতর্কে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই জন্য সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা/ভারত সরকার আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যাপারটি এখানে ছোটো করে দেখে নেওয়া দরকার। নির্বাচন এবং সরকার বলতেই আমরা এখন সার্বজনীন ভোটাধিকারের কথা ভাবি। কিন্তু ১৯৩৭ এর নির্বাচনে সার্বজনীন ভোটাধিকার তো ছিলই না, এমনকি বেশিরভাগ ভারতবাসীরই ভোট দেবার অধিকার ছিলনা। ভোটদানের অধিকার ছিল মূলত অবস্থাপন্ন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীরই এবং সংখ্যার বিচারে সেটা সামগ্রিক জনসংখ্যার ১৩%র মতো। এবং বৃটিশ ধর্মীয় বিভাজনের পদ্ধতি অনুযায়ী মুসলমান, হিন্দু এবং ইউরোপিয়ান জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষিত আসন ছিল। অবিভক্ত বাংলার ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত কমবেশি আধাআধি হলেও ২৫০ টি আসনের আইনসভায় ১১৫ টি আসন বরাদ্দ ছিল মুসলমানদের জন্য, হিন্দুদের জন্য ছিল ৮০ টি। ইউরোপিয়ানরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ টি আসন। এই বাঁটোয়ারার কথা প্রথম ঘোষণা হয় ১৯৩২ সালে, এবং ওই বছরই আম্বেদকরের সঙ্গে তফশিলী জাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে গান্ধি পুনা-চুক্তি করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই ৮০ টির মধ্যে মাত্র ৫০ টি বরাদ্দ হয় বাংলার বর্ণহিন্দুদের জন্য। বলাবাহুল্য পুনা-চুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রভাব বাংলায় পড়লেও চুক্তির আলোচনায় কোনো বাঙালি নেতাকে ডাকা হয়নি।

    স্বভাবতই বাঙলার ভদ্রলোক সমাজে এই নিয়ে তীব্র আলোড়ন ওঠে। সেটি অন্যায্যও ছিলনা। এই ভাগাভাগি একেবারেই সংখ্যানুপাতিক ছিলনা। তার কিয়দংশ ম্যাকডোনাল্ডসের অবদান, কিছুটা গান্ধির। কিছুটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উপরে টেনে তোলার শুভাকাঙ্খার ফসল, কিছুটা রাজনীতি-সক্রিয় বাঙালি ভদ্রলোককে সমঝে দেবার চেষ্টা, বাকিটুকু দ্বিজাতিতত্ত্বের ফলিত প্রয়োগ। কোনটি কত শতাংশ বলা মুশকিল, তবে অন্য সবকিছুর সঙ্গে এর যে একটি তীব্র সাম্প্রদায়িক অভিমুখ ছিল, তা অনস্বীকার্য। সেই সাম্প্রদায়িক অভিমুখ বেশ কিছুটা সাফল্যলাভও করে। ভদ্রলোক প্রতিবাদের এর একটি অংশ সরাসরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে চলে যান। উল্টোদিকে মুসলমান বুদ্ধিজীবিদের একটি অংশও একই ভাবে সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নেন। বর্ণহিন্দুদের কাছে এই ভাগাভাগি ছিল ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা। মুসলমান এবং তফশিলীদের কাছে যা আত্মপরিচয় ঘোষণার সুযোগ। ফলে ভাগাভাগি গভীরতর হয়। স্পষ্টতই বৃটিশের একটি লক্ষ্য তাইই ছিল। অদ্ভুতভাবে দলগুলিও এই বিভাজনে ইন্ধন দেয়। নির্বাচনে মুসলিম লিগ কেবল মুসলমান আসনে অংশগ্রহণ করে। বিভাজন আরও বাড়িয়ে গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস অংশগ্রহণ করে কেবলমাত্র হিন্দু আসনগুলিতে। প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়।

    আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এত বিরাট উদ্যমের পরেও বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা জয়ী হয়নি। বর্ণহিন্দু আসনগুলিতে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতলেও, মুসলমান আসনে মুসলিম লিগ একেবারেই ভালো করেনি। বেশিরভাগ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হয় মূলত মুসলমান চালিত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দল, ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি ( মুফাফফর আহমেদ এবং নজরুল ইসলাম উভয়েই এই পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন)। ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকারের প্রস্তাব দেন। ১৯০৫ সালের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয়ের প্রতিনিধিত্বে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এবং শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গান্ধির নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস দ্বিতীয়বার ধর্মনিরপেক্ষতার পিঠে ছুরি মারে (প্রথমটি ছিল কেবলমাত্র হিন্দু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত)। কংগ্রেস জানায়, তারা জোট সরকারে অংশগ্রহণ করবেনা, সমর্থনও দেবেনা। ফজলুল হক বাধ্য হন মুসলিম লিগের সঙ্গে জোটে যেতে।

    ২।
    সাম্প্রদায়িকতার এই অবাধ চাষবাসের মধ্যে দীর্ধ নির্বাসন/অসুস্থতার পর্ব কাটিয়ে সুভাষ দেশে ফেরেন। ১৯৩৮ এর শুরুর দিকে নির্বাচিত হন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে। লক্ষ্য হিসেবে তিনি ঘোষণা করেন সম্পূর্ণ স্বরাজ। তাঁর সামনে ছিল এই লক্ষ্যে জনসমষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ। ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বাংলায় যে সাম্প্রদায়িক গোলযোগ ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নিজ দায়িত্বে পাকিয়ে তুলেছিল, সেই গোলমালের সমাধান করার বিপুল কাজও তাঁর কাঁধে চেপেছিল। কংগ্রেসের পূর্বতন ভুল সংশোধনের কাজটি সহজ ছিলনা। ১৯৩৮ সালে সুভাষ ও তাঁরা দাদা শরৎ বাংলায় কংগ্রেসের সমর্থনে কৃষক প্রজা পার্টির সরকার গঠনের একটি পরিকল্পনা করেন। সরকার থেকে মুসলিম লিগকে সরিয়ে সেখানে কংগ্রেস আসবে, এবং হিন্দু-মুসলমান যৌথ নেতৃত্বে তৈরি হবে নতুন সরকার -- এটাই ছিল লক্ষ্য। কৃষক-প্রজা পার্টির ভিত্তি ছিল গরীব এবং মধ্য কৃষকরা। কংগ্রেসের হিন্দু জমিদার ও 'সর্বভারতীয়' ভিত্তির সঙ্গে সেটা ছিল স্পষ্টই আলাদা। সুভাষ চিত্তরঞ্জন দাশের শিষ্য হিসেবে মুসলমান জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার আদর্শও ছিল, যেটা কৃষক-প্রজা পার্টির লক্ষ্যের সঙ্গে সুসমঞ্জস । সুভাষ বাম ও র‌্যাডিকাল গোষ্ঠীকে সঙ্ঘবদ্ধ করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। এবং পরিকল্পনায় বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। পরিকল্পনার শেষ ধাপে তিনি ওয়ার্ধায় গিয়ে (গান্ধি তখন ওয়ার্ধায় ছিলেন) গান্ধির সঙ্গে আলোচনা করে অনুমোদনও নিয়েছিলেন। ব্যাপারটা জরুরি ছিল, কারণ সুভাষ সভাপতি হলেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে তখন গান্ধি-প্যাটেলের একাধিপত্ব।

    এরপরই ঘটে অদ্ভুত সেই ঘটনা, যা, অসাম্প্রদায়িক বোঝাপড়ার সম্ভাবনাকে আবারও সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঠেলে দেয়। আলোচনা করে কলকাতায় ফিরে আসার পরই, কলকাতার একচেটিয়া ব্যবসায়ী মহলে সুভাষের অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিরূপতা দেখা যায়। কীকরে এই পরিকল্পনা ফাঁস হল তার বিশদ বিবরণ পাওয়া না গেলেও, যা জানা যায়, যে, এর পরই হক মন্ত্রীসভার সদস্য নলিনীরঞ্জন সরকার (পরবর্তীতে এই শিল্পপতি হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের মধ্যে যাতায়াত করবেন), যিনি তখনও কংগ্রেসের কেউ নন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ও এক বিশিষ্ট সর্বভারতীয় শিল্পপতিকে নিয়ে গান্ধির সঙ্গে দেখা করেন। সেই শিল্পপতির নাম ঘনশ্যামদাস বিড়লা। এবং অবিলম্বে গান্ধি মত বদলে সুভাষকে চিঠি লেখেনঃ "নলিনীরঞ্জন সরকার, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং ঘনশ্যামদাস বিড়লার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আমাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, যে, বাংলার বর্তমান মন্ত্রীসভা ( মুসলিম লিগ এবং কেপিপির আঁতাত) বদলানো উচিত নয়"। চিঠিটি সুভাষের হাতে পাঠানো হয় ঘনশ্যামদাস বিড়লার হাত দিয়েই। বজ্রাহত (বজ্রাহত শব্দটি আলঙ্কারিক নয়, সুভাষ স্বয়ং ইংরিজিতে 'শক' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তারই বাংলা) সুভাষ উত্তরে যা লেখেন, তা মূলত এই, যে, আপনার সঙ্গে এত আলোচনার পর আপনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদলালেন, এই তিনজনের কথায়? বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় যারা কংগ্রেস চালায়, তাদের চেয়ে এই তিনজনেরই গুরুত্ব আপনার কাছে বেশি।

    এই চিঠিটিতে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সুভাষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং চিরাচরিত কংগ্রেসি ঘরানার সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্যের সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। চিঠিতে সুভাষ লিখছেনঃ
    "সিন্ধের ব্যাপারে মৌলানা সাহেবের সঙ্গে অমি সহ ওয়ার্কিং কমিটির আরও কিছু সদস্যের মতপার্থক্য হয়। এবং এখন বাংলার ক্ষেত্রে আমাদের মতামত সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
    মৌলানা সাহেবের মত, যা মনে হয়, বাংলার মতো মুসলমান প্রধান প্রদেশগুলিতে সাম্প্রদায়িক মুসলমান মন্ত্রীসভাগুলিকে বিব্রত করা উচিত নয়.... আমি উল্টোদিকে মনে করি যথা শীঘ্র সম্ভব জাতীয় স্বার্থে হক মন্ত্রীসভাকে ফেলে দেওয়া উচিত। এই প্রতিক্রিয়াশীল সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে বাংলায় পরিবেশ তত সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে।"

    এখানে অবশ্যই হক মন্ত্রীসভা বলতে কেপিপি বা ফজলুল হকের কথা বলা হচ্ছেনা, বরং সামগ্রিক মন্ত্রীসভাটির কথা বলা হচ্ছে, যেখানে কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিও ঢুকে বসে ছিল। স্পষ্টতই সুভাষ অসাম্প্রদায়িক একটি সরকার গড়তে চেয়েছিলেন, হিন্দু-মুসলমানের প্রতিনিধিত্বই যার ভিত্তি, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা যেখানে বর্জনীয়। এবং স্পষ্টই মৌলানা বা গান্ধির এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিলনা, যদি না উল্টো দিকে যাওয়াটাই তাঁদের অঘোষিত লক্ষ্যের অন্তর্গত হয়ে থাকে।

    এই চিঠিতে সুভাষের আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন গান্ধি এবং মৌলানা। মৌলানার সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথা সুভাষ চিঠিতে স্পষ্ট ভাবেই লিখেছেন, যদিও গান্ধির আকস্মিক মত বদল সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সে সম্পর্কে একটি কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় শরৎ বসুর তৎকালীন সচিব নীরদচন্দ্র চৌধুরির বয়ানে, যিনি সেই সময় সুভাষেরও চিঠিপত্রের দায়িত্ব বহন করতেন। নীরদের বক্তব্য অনুযায়ী, সুভাষ বিশ্বাস করতেন, যে কেবল মৌলানা নয়, গান্ধির মত পরিবর্তনের জন্য ঘনশ্যামদাস বিড়লাও দায়ি। তার কারণ একটিই। ঘনশ্যামদাসের ধারণা ছিল, যে, যদি হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য স্থাপিত হয়, তৈরি হয় কংগ্রেস এবং কেপিপির যৌথ সরকার, তাহলে কলকাতার অর্থনীতি এবং ব্যবসায় মারোয়াড়ি প্রাধান্য বিপদের মুখে পড়বে।

    সুভাষের লিখিত চিঠিপত্রে এই সন্দেহের কোনো উল্লেখ অবশ্যই পাওয়া যায়না। তবে বিশ্লেষণের বিচারে নীরদের পর্যবেক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথমত, গান্ধির উপর 'ঘনশ্যামদাসের প্রভাব অনস্বীকার্য ছিল। তিনি ছিলেন গান্ধির প্রধান অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। এবং তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মনে করার কোনো কারণ নেই। দেখা যাচ্ছে, এর চার বছর পর ১৯৪২ সালে তিনি মহাদেব দেশাইকে বলছেন "আমি (বাঙলা বিভাগের পক্ষে"। মনে রাখতে হবে এটি বলা হচ্ছে, ১৯৪২ এ। তখন ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে এবং বাংলার বিভাজন তখনও রাজনৈতিক ভাবে আলোচ্যও নয়। দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠীগতভাবে অবাঙালি শিল্পপতিরা পরবর্তীতে(৪৫-৪৬) বাংলা ভাগের উদ্যোগের পুরোভাগে ছিলেন। বিড়লা, জালান, গোয়েঙ্কা এবং বহুআলোচিত নলিনীরঞ্জন সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থেকে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করতেন। প্রদেশের সব এলাকা থেকে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা সংগঠিতভাবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানানও যে তাঁরা বাংলা বিভাজনের সমর্থক।

    সুভাষের চিঠিতে এই সব প্রসঙ্গের কোনো উল্লেখ নেই। এর অনেককিছুই ঘটবে ভবিষ্যতে, ফলে জানার কোনো উপায়ও ছিলনা তাঁর। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাঁর উচ্চারিত বাক্যগুলি পরবর্তীতে অমোঘ ভবিষ্যৎবাণী হিসেবেই দেখা দেয়। তীব্র ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর বিরুদ্ধেও তিনি সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু এই আবেগী উচ্চারণের কোনো ফল, বলাবাহুল্য হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে বসু ভ্রাতৃদ্বয়ের কার্যকরী পরিকল্পনাকে বাতিল করা হয়। কংগ্রেস-কেপিপি সরকারের সম্ভাবনায় তৃতীয়বারের মতো ছুরি মারা হয়। বাংলার সাম্প্রদাহিকতার উত্থানে যাকে, এক কথায় কংগ্রেস কথা গান্ধির সক্রিয় উদ্যোগ বলা যায়। এবং সুভাষ ও গান্ধির তিক্ততার ভিত্তিভূমি প্রস্তুত হয়।

    ৩।
    বিরোধের পরবর্তী এবং তিক্ততম অধ্যায়টি শুরু হয় এর অব্যবহিত পরেই। আগেই বলা হয়েছে সুভাষের র‌্যাডিকাল এবং বাম ঘরানার একটি অ্যাজেন্ডা ছিল। তার মূল কথা ছিল পূর্ণ স্বরাজের দাবী। কৃষকের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, এই পরিপূর্ণ বাম অ্যাজেন্ডাগুলিও তাঁর বৃহত্তর লক্ষ্যে ছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে একটি 'পরিকল্পনা কমিটি'ও তিনি তৈরি করেন, যে ধারণাকে পরে নেহেরু ব্যবহার করবেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বে। কৌতুকজনক ব্যাপার এই, যে, সেই ৩৭-৩৮ সালে সুভাষ ও নেহেরুকে একই সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর ধরা হত। সেই কারণেই নেহেরুকে সুভাষ এই পরিকল্পনা কমিটির দায়িত্ব দেন। মেঘনাদ সাহাও এর সগে যুক্ত ছিলেন। হরিবিষ্ণু কামাথের মতো ব্যক্তিকেও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখেছিলেন সুভাষ। মজা হয় এরপর। ডিটেলের প্রতি, সত্যিকারের পরিকল্পনার প্রতি বিমুখতা দেখিয়ে নেহেরু বিষয়টির পতনের সূচনা করেন এবং কামাথ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। এই ডিটেলহীন আলগা আদর্শবাদ পরবর্তীতে নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্বের সম্পদ হয়ে উঠবে, পরিকল্পনার আড়ালে কংগ্রেসঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের দেওয়া হবে লাইসেন্সরাজের অভয়ারণ্য, যা প্যাটেলের দক্ষিণপন্থার সঙ্গে চমৎকার খাপ খেয়ে যাবে। শিল্পপতিরাও এতদিনের পৃষ্ঠপোষকতার বিনিময়ে পাবেন বিভক্ত কিন্তু রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জহীন অখন্ড একটি বাজার, যা তাঁদের কাম্য ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর সেই ঘটনা এখানে আলোচ্য নয়, আপাতত বিষয়টা এই, যে, সুভাষ চিরাচরিত দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসি পৃষ্ঠপোষকতার বদলে একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার মুখ হয়ে উঠতে সক্ষম হন। তাঁর দাবী ছিল আসন্ন ইউরোপিয়ান সংকটকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণ স্বরাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ফলে গান্ধির সঙ্গে তীব্রতম সংঘাত অনিবার্যই ছিল।

    বৃটিশের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের প্রশ্নে এই তিক্ত বিরোধ শুরু হয় ১৯৩৮ এর শেষের দিকেই। আসন্ন ইউরোপীয় সংকটের প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের এআইসিসি অধিবেশনে রাজাগোপালাচারি একটি ধোঁয়াটে প্রস্তাব আনেন, যেখানে ব্রিটিশের শুভবুদ্ধির প্রতি একটি আবেদন জানানো হয়, যে, যদি যুদ্ধ আসে, তবে ব্রিটেন যেন ভারতের প্রতি যথার্থ ব্যবহার করে। এই প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বাম ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়। এক অর্থে এটি বৃটিশের সঙ্গে আপোষের উদ্যোগ, স্পষ্টতই সুভাষ বা র‌্যাডিকালরা, বিষয়টিকে সেইভাবেই দেখেন। তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের ভাষ্য অনুযায়ী, বামরা এই প্রস্তাবের একটি সংশোধনী আনেন, কিন্তু তা ওয়ার্কিং কমিটিতে গৃহীত হয়নি। সোমনাথ লাহিড়ি ও পিসি যোশি সহ ৭৩ জন প্রতিনিধি ওয়াক আউট করেন। সুভাষ তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই দিনই তাঁরা সুভাষের কাছে প্রস্তাব দেন, যে আশু কংগ্রেসের মধ্যে একটি যথার্থ মেরুকরণের প্রয়োজন।

    গান্ধি এই পুরো ব্যাপারটিতেই অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর চোখের সামনেই এইভাবে একটি বৃহৎ বাম জোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। স্পষ্টতই সুভাষ নিজেও এই ঘরানার চিন্তা পোষণ করতেন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আপোষহীন সংগ্রামের স্বার্থে একজন বাম ঘরানার নেতার ক্ংগ্রেস সভাপতি হওয়া উচিত, সুভাষের এই চিন্তার সঙ্গে জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো নেতারা একমত হন, এবং বাম জোট ক্রমশ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যায়। সুভাষ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিজের প্রার্থীপদ ঘোষণা করেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানান "বহু লোকে বিশ্বাস করেন, যে, আসন্ন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সামনের বছর কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে একটি আপোষের সম্ভাবনা আছে। স্বভবতই দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী কংগ্রেস সভাপতি পদে এমন কোনো বামপন্থীকে চায়না, যে আপোষ এবং দরকষাকষিতে পথের কাঁটা হতে পারে।"

    এর চেয়ে স্পষ্ট কথা আর হওয়া সম্ভব নয়। এবং এরপর যা হয়, তা ইতিহাস। গান্ধী আপোষহীন বাম ঘরানার কোনো র‌্যাডিকালকে সভাপতি পদে মেনে নিতে রাজি হননা। পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিতেও না। পূর্ণ স্বরাজপন্থী কাউকে সভাপতি করতেও তাঁর তীব্র অনীহা দেখা দেয়। আচার্য নরেন্দ্র দেবের মতো একজন আপোষে অরাজি মধ্যপন্থীর নামও প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু গান্ধিশিবির অনড় থাকে। গান্ধি পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিজের (এবং অবশ্যই প্যাটেলের) পক্ষের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। স্পষ্টতই দক্ষিণপন্থী শিবির গান্ধি ম্যাজিকের উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় গান্ধির আশীর্বাদধন্য সীতারামাইয়ার জয়লাভ অনিবার্য ছিল। কিন্তু ১৯৩৮ সাল ঠিক স্বাভাবিক সময় ছিলনা। ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথমবার র‌্যাডিকাল এবং বামপন্থীদের জোটকে সুভাষ ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন সেই বছর। সঙ্গে ছিল তাঁর নিজের ক্যারিশমা ও র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডা। ফলে ভোটাভুটিতে কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টি এবং কমিউনিস্টরা একযোগে সুভাষের পক্ষে ভোট দেন। এবং গান্ধির প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবার র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার একজন নেতা কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। এই জয় কোনো ব্যক্তিগত লড়াই ছিলনা, ছিল ডান ও বামের রাজনৈতিক যুদ্ধের ফলাফল।

    ৪।
    কিন্তু এই আখ্যান, সকলেই জানেন, সুভাষের জয়ের কাহিনী নয়। বরং সুভাষ ও তাঁর অ্যাজেন্ডার হেরে যাবার গল্প। গান্ধির নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী প্রত্যাঘাতের কাছে সেই চূড়ান্ত পরাজয়ের গল্পের সূচনা হয় এর পরেই। আপাতদৃষ্টিতে সভাপতিত্বে জয়লাভের পর সুভাষের সামনে আর বড় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। গণতান্ত্রিক পথে জয়লাভের পরে র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার অগ্রগতির রাস্তা খুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বভাবতই গান্ধি ও প্যাটেল এত সহজে জমি ছেড়ে দিতে রাজি হননি। গান্ধি সুভাষের জয়কে নিজের ব্যক্তিগত পরাজয় বলে ঘোষণা করেন। জবাবে সুভাষ আবার আবেগী হয়ে পড়েন ('যদি অন্য জনতার আস্থা অর্জন করেও আমি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির আস্থা অর্জন না করতে পারি, তবে তা আমার পক্ষে খুবই বেদনাদায়ক') এর পর খুব তুচ্ছ একটি টেলিগ্রামকে কেন্দ্র করে সুভাষ এবং শরৎ বাদ দিয়ে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি পদত্যাগ করে। এই জটিল পরিস্থিতিতে সুভাষের পুরোনো অসুস্থতাও আবার মাথা চাড়া দেয়। একেবারে অসময়ে। কিন্তু এইসব চাপে সুভাষের ব্যক্তিগত অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর রাজনৈতিক কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ কংগ্রেস সভাপতিকে পদচ্যুত করার কোনো বন্দোবস্তো কংগ্রেস সংবিধানে ছিলনা। এবং পদ্ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সভাপতি নিজের মতো ওয়ার্কিং কমিটি গড়ে নেবারও অধিকারী।

    এই ভাবে ১৯৩৯ সাল চলতে থাকে। সুভাষ যে ইউরোপীয় সঙ্কটের পূর্বানুমান করেছিলেন, তা আর মাত্র কয়েক মাস দূরে। মার্চ মাসে ত্রিপুরীতে কংগ্রেস অধিবেশন স্থিরীকৃত হয়। সুভাষ তখনও অসুস্থ। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তিক্ততা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, অবিশ্বাস চরম জায়গায় পৌঁছেছে। এতটাই, যে, অসুস্থ সুভাষকে স্ট্রেচারে করে সভাস্থলে আনলে বিপক্ষশিবিরের কেউকেউ কটাক্ষ করেন, যে, তিনি বগলে রসুন নিয়ে জ্বর বাধিয়েছেন। আর এই অধিবেশনেই দক্ষিণপন্থী শিবির তাদের অভাবনীয় চালটি চালে। ত্রিপুরী অধিবেশনে গোবিন্দবল্লভ পন্থ আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি গঠন সম্পর্কে একটি অভূতপূর্ব প্রস্তাব আনেন। আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি কীভাবে গঠিত হবে? পন্থ প্রস্তাব অনুযায়ী, সভাপতি নিজে নিজে করবেননা, "গান্ধিজির ইচ্ছানুসারে সভাপতি তাঁর ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করবেন"। অর্থাৎ, নির্বাচিত সভাপতি নয়, আসল কথাটি হল গান্ধির ইচ্ছা। এই অদ্ভুত ব্যাপারটির মানে বোঝাতে, লেনিন, মুসোলিনি, হিটলারের সঙ্গে গান্ধিকে তুলনা করে বলেন, "আমাদের গান্ধি আছেন", তো সেই সুবিধে নেওয়া হবেনা কেন? রাজাজি প্রস্তাবের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেন, যে, সুভাষের ভরসায় কংগ্রেসকে অর্পণ করার অর্থ হল ফুটো নৌকোয় নর্মদা নদী পার হওয়া। বিতর্ক চলাকালীনই, গান্ধীজি যে এই প্রস্তাবের পক্ষে রাজকোট থেকে টেলিফোনে সম্মতি দিয়েছেন, সেই মর্মে স্থানীয় খবরের কাগজে একটি রিপোর্টও বার হয়। ফলে গান্ধির অনুগামীরা সকলেই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।

    উল্টোদিকে সুভাষের ছিল বৃহৎ র‌্যাডিকাল জোট। তার একটি বড় অংশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, কোনো অজ্ঞাত কারণে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি তাদের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বাতিল করে এবং ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে পন্থ প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। এবং সুভাষের হাত থেকে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের অধিকার বস্তুত কেড়ে নেওয়া হয়। এক ধাক্কায় বামপন্থীদের জয়কে পরিণত করা হয় পরাজয়ে। প্রসঙ্গত সুভাষ সন্দেহ করেন, আরেক সমাজতন্ত্রী নেহেরু তাঁর পিঠে ছুরি মেরেছেন, এবং এরপরই তাঁদের বহুমাত্রিক তীব্র তিক্ততার শুরু।

    এর পরে বাকিটুকু বাম অ্যাজেন্ডার পরাজয়ের শেষাংশ মাত্র। সুভাষ নেহেরুর সঙ্গে তীব্র পত্রবিতর্কে জড়ান। গান্ধির সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটি নিয়ে বাদানুবাদে জড়ান। সবই তাঁর চিঠিপত্রে পাওয়া যায়। সে অতি চিত্তাকর্ষক উপন্যাসোপম ব্যাপার। সুভাষ জেদি যুবকের মতো গান্ধিকে অভিযোগ করছেন, জবাবে গান্ধির কাটাকাটা আবেগহীন স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান, এবং সঙ্গে অব্যর্থভাবেই সুভাষের শুভকামনা। সুভাষ লিখছেন পন্থ প্রস্তাবের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, তিনি সভাপতি হিসেবে পুরোটাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন, কিন্তু করেননি, কারণ তীব্র ভেদাভেদ তাহলে দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একই কারণে তিনি পদত্যাগ করতে চাননা, কারণ সেটা খুব খারাপ একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। গান্ধি জবাবে প্রায় ঋষির মতই নিস্পৃহ। বাকি যা হয় হোক, তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অটল থাকছেন । ফলে কোনো আপোষ হয়না। পরবর্তীতে কলকাতা অধিবেশনে সুভাষ পদত্যাগ করেন, কংগ্রেসের ইতিহাসে যা খুব খারাপ উদাহরণ হিসেবেই থেকে যায়, যতদিন না খারাপতর উদাহরণরা এসে ব্যাপারটি ভুলিয়ে দিতে পারে। বৃহৎ বাম নেতৃত্বের বদলে গান্ধী-প্যাটেল রাজত্বের রাস্তা নিষ্কন্টক হয়। নেহেরু পোশাকি সমাজতন্ত্রী হিসেবে এই জোটের অংশ হিসেবে থেকে যান, যা কংগ্রেসের ভাবমূর্তির পক্ষে খুবই ভাল হয়েছিল পরবর্তীতে। দক্ষিণপন্থী জোটের নেতৃত্বে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ইউরোপীয় সংকটে নিষ্ক্রিয় থাকে। সুভাষের ভবিষ্যৎবাণীকে যথার্থ প্রমাণ করে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী প্রতিরোধই গড়ে তোলেনি ওই তিন বছর। একমাত্র সুভাষ জার্মানি থেকে ফ্রি ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার শুরু করার পরই ভারত-ছাড় আন্দোলন শুরু হয়। হয়তো ঘটনাচক্র, হয়তো নয়। কংগ্রেস এবং লিগ রাজনীতির ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে সাম্প্রদায়িকতা বাংলা তথা গোটা উপমহাদেশে তার কালো ছায়া বিস্তার করে, যে ঘরানাকে সুভাষ ভাঙতে চেয়েও পারেননি। বা কংগ্রেসের ভাঙন এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাঙেননি। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে পন্থ প্রস্তাবকে পদাধিকারবলে অসাংবিধানিক হিসেবে নাকচ করে দিলে কী হতে পারত, তা নিয়ে বড়জোর এখন জল্পনা হতে পারে। ইতিহাস তাতে বদলাবেনা।


    ১. Bengal Devided The unmaking of a Nation -- Nitish Sengupta p 61-62
    ২. Congress President: Speeches, Articles, and Letters January 1938-May 1939 Subhas Chandra Bose (Author), Sisir Kumar Bose & Sugata Bose (Eds) p. 123 (নীতীশ সেনগুপ্তর পূর্বোক্ত বইয়েও এই চিঠির উল্লেখ আছে, কিন্তু অর্থগত ভাবে এক হলেও চিঠির বয়ান সামান্য আলাদা , এই লেখায় এই বইয়ের বয়ানটির অনুবাদই ব্যবহার করা হয়েছে)
    ৩. Nitish Sengupta p. 63
    ৪. Raj, Secrets, Revolution: A Life of Subhas Chandra Bose -- Mihir Bose p. 151
    ৫. Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition -- Joya Chatterji p. 291
    ৬. Joya Chatterji p. 291
    ৭. Mihir Bose p. 153
    ৮. Mihir Bose p. 154
    ৯. Mihir Bose p. 158 (পন্থ এবং রাজাজির বক্তৃতাংশ দুটিই এখান থেকে নেওয়া)।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০২৩০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • de | 90056.185.673423.53 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:২০79430
  • খুবই ভালো লেখা হয়েছে -

    ঘটনাগুলো জানা কিন্তু কার্য্যকারণ সম্বন্ধ, বামপন্থী যোগাযোগ এগুলো সম্পূর্ণ অজানা ছিলো -

    আরো আসুক এমন লেখা -

    ইংরাজী অনুবাদ হওয়া উচিত এই লেখার - এই তথ্যগুলোর সর্বভারতীয় মাত্রা পাওয়াটা খুবই জরুরী -
  • Izhikevich | 342323.191.1267.48 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০০79431
  • দেখি, যদি সময় পাই, এটার ইংরিজী করবো।
  • hu | 3478.58.6712.94 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:১০79425
  • "এর কোনোটিই যে মিথ্যে তা নয়, কিন্তু খন্ডচিত্র। প্রতিটি অ্যাজেন্ডায়ই কিছু জিনিস অপ্রয়োজনীয় বলে বাদ দিতে হয়। দেওয়া হয়। এই অনুল্লেখগুলিও তাই।"
    - এটা খুব জরুরী কথা। শুধু ইতিহাসপাঠের ক্ষেত্রেই নয়, সব জায়গায়। এই লেখায় তো বটেই, এই লেখকের অন্যান্য লেখাতেও এই দোষ কাটানোর সচেতন প্রয়াস চোখে পড়ছে। ভালো লাগছে সেটা।
  • Ekak | 340112.124.566712.159 (*) | ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৫79432
  • হিস্ট্রি মানেই , "ঘটনা কে রাজনৈতিক দৃষ্টি দিয়ে দেখা " । রাজনীতিটুকু বাদ্দিলে যা পড়ে থাকে তাকে বড়োজোর বৈজ্ঞানিক নৃতত্ব বলা যেতে পারে , ইতিহাস নয় । কাজেই , এই লেখার কাছে নৃতাত্বিক বায়াসলেসনেস আশা করিনা । যেটা আশা করি তা হলো , বামপন্থীদের হঠকারিতা ও দক্ষিনপন্থীদের আহাউহুর মাঝখানে সুভাষ একদম ভাগের মা হয়ে গ্যাসেন , সেইখান থেকে তুলে এনে বিশ্লেষণ । তার ও একটা রাজনীতি থাকলে থাক । চাৰ্নিং ইজ নেসেসারি । লেখাটা নো ডাউট পড়ে বুকমার্ক করে রাখার মতো । এগোক !
  • dc | 232312.174.233423.40 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:১০79457
  • আমার মনে হয় প্রোটেকশানিজম চালু না হলে বরং ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি এদ্দিনে অনেক বেশী ম্যাচিওর আর কমপিটিটিভ হতো। হয়তো প্রথম দশ বছর কমপিট করতে অসুবিধে হতো, কিন্তু তারপর আস্তে আস্তে এফিসিয়েন্সি বাড়তো। নেহরুভিয়ান ইকোনমিক পলিসিগুলো যে বিশাল ইনএফিসিএন্সি গুলো বানিয়েছিল সেগুলো তৈরি হতো না।
  • | 340123.99.121223.133 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৫79458
  • ইনটারেস্টিংলি কংগ্রেস সোশালিস্ট দের মধ্যে মিনু মাসানি এই ডিসি র মতাবলম্বী ছিলেন। মানে হাইন্ডসাইট দিয়ে দেখলে এবং আরো মজার বিজেপি/জনসংঘের আরো পরের 'রিয়াল নন অ্যালাইনমেন্ট' নীতি কে আলোচনায় আনলে দেখা যাবে , বাজপেয়ীজি দের ও তাই মত ছিল তবে সেটা সোভিয়েত ছোঁয়া বাঁচানোর লক্ষ্যে না বিজনেস এর এফিসিয়েন্সী বাড়ানোর লক্ষ্যে না আমেরিকার ক্লায়েন্ট স্টেট হবার পক্ষে এটা স্পেকুলেট করা মুশকিলঃ-) কংগ্রেস সোশালিস্ট রা ১৯৩৮/৩৯ নাগাদ প্রোটেকশনিজম চেয়েছিলেন কিনা এই মুহুর্তে হাতের কাছে এভিডেন্স নেই, তবে প্রবন্ধে রয়েছে কংগ্রেস সোশালিস্ট দের সম্পর্কে কিছু কথা, সেটা পড়ে দেখতে পারো।
    একটু খ্যাল রেখো টই টা কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স না হয়ে যায়।
  • dc | 232312.174.233423.40 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৩79459
  • খ দা, না না আর এই টইতে পোস্টাবো না। আমি এমনি আমার ক্যাপিটালিস্ট আর ফ্রি মার্কেটিয়ার ফিলোজফি থেকে বল্লাম, আমি সবসময়েই প্রোটেকশানিজম এর বিরোধী। এবার আবার আলোচনা চলুক ঃ)
  • | 2345.110.895612.238 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৯79460
  • আমি সেটা বলিনি ভুল বুঝো না।
  • dc | 232312.174.233423.40 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৯79461
  • খ দা, সিরিয়াসলি, ভুল বুঝিনি ঃ) আলোচনা চলুক।
  • দ্রি | 568912.233.010112.23 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫০79433
  • জয়া চ্যাটার্জির যে দুটো রেফারেন্স দিয়েছো তাতে পেজ নাম্বারটা সম্ভবত ভুল আছে। চেক করে দেখো তো।

    পাঁচের রেফারেন্স হবে পেজ ২৫৫। আর ছয়ের রেফারেন্স হবে পেজ ২৫৪।

    লেখা গুড হয়েছে। খেটেখুটে লিখেছো। ভগবান তোমার মঙ্গল করবেন।

    একটা ব্যাপার তোমার লেখায় ক্লিয়ার হয়নি। কেন মারওয়াড়ী কমিউনিটি পার্টিশান চেয়েছিল, মানে তাদের ইন্টারেস্টটা ঠিক কী ছিল। এই নিয়ে দু লাইন অ্যাড করতে পারতে। মনে হয় অনেক পাঠকই এই তথ্যে ইন্টারেস্টেড হবে।
  • কল্লোল | 342323.191.1212.11 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৬:৫৬79434
  • অবিভক্ত বাঙ্গলায় মুসলমান প্রাধান্য পাবে, তাতে মুসলমায় ব্যবসায়ীরা বনিজ্যের দখল নেবে এই ভয়ে।
  • দ্রি | 90090012.249.013423.83 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৯79435
  • মুসলিম লীগের ফাইন্যান্সার হাসান ইস্পাহানির ক্লিয়ার ডিম্যান্ড ছিল ইন্ডিপেন্ডেন্সের পর মুসলীম ব্যাবসায়ীদের সাপোর্ট করতে হবে (জয়া চ্যাটার্জি, পেজ ২৫৫)।

    তাই বিড়লার গেমটা সম্ভবত ছিল মুসলীম লীগকে বাংলায় আসতে দিয়ে তার বেসিসে পার্টিশান ডিম্যান্ড করা। একমাত্র পার্টিশান হলেই কংরেসের পক্ষে নিজের এলেমে (পশ্চিম)বঙ্গে পাওয়ারে আসা সম্ভব ছিল। পার্টিশান না হলে বাংলার পলিটিক্সে বরাবরই মুসলিম মেজরিটি হত।
  • শ্রাবনী | 340112.218.9002323.2 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩৭79436
  • খুব ভালো লেখা হয়েছে, ট্যু দ পয়েন্ট, গুড রিড। এই সময়টা নিয়ে ঈশান একটু ধারাবাহিক লিখলে পারে, পার্টিশানের তিক্ততা বা সেই নিয়ে আবেগ ছাড়া দলিল .......
  • | 340123.99.121223.134 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৮79437
  • হ্যা এই বিড়লা/মারোয়াড়ি/অবাঙালি ব্যবসায়ী প্রসঙ্গে আমার মনে হয় আরো ক্ল্যারিটির দরকার একটু আছে। আমারো এটা মনে হয়েছে। আমি এর আগে করা কমেন্টে বলেছিলাম, লেখাটা আংশিক ভাবে স্পেকুলেটিভ। সেটা যে কটা ভেবে মাথায় এসেছিল, তার মধ্যে এটা একটা।

    প্রশ্ন গুলো মোটামুটি এই মাথায় আসছে, একটু আলোচনা হলে ভালো হত। যারা আগ্রহ পাবেন পড়বেন, বাকিরা এখানেই স্কিপ করেন, ইহা সংক্ষিপ্ত নহে।

    ক - ১৯৪২ তে যিনি মহাদেব দেশাই কে ইনটারভিউ দিয়ে বলছেন, তাঁরা বাংলা ভাগের পক্ষে, তিনি ১৯৩৯ থেকে পার্টিশনের জন্য ছক কষছেন, এটা ভাবা টা , হাইন্ডসাইটের একটু বেশি ব্যবহার কিনা।

    খ - জয়া চ্যার্টাজির ভাষা একটু দেখতে হবে, কারণ সৈকত রেফারেন্স দিয়েই দিয়েছে, কিন্তু ঘটনা হল এগুলিঃ

    ১-চটকল গুলোর মালিকানা কি তখনো মারোয়াড়ি দের হাতে আসে নি? তাহলে পাটের সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে তাদের কি লাভ? যদি মালিকানা নাও এসে থাকে, লেবার বা কাঁচামাল সাপ্লায়ার হিসেবে তাদের ভূমিকা কি তখনো নগন্য, মানে ১৯৩৯ থেকেই, যখন থেকে অ্যাপারেন্টলি, বিড়লা দেশ ভাগের ছক কষছেন?

    ২- বাঙালি ব্যাবসায়ী , মার‌্যোয়াড়ী বা একচেটিয়া নন এরকম ব্যবসায়ী রা কার ফাইনানসিয়ার ছিলেন। তাঁরা কি সকলেই সুভাষ শরৎঅ বাবু দের পক্ষে ছিলেন , মানে অনুপাত কি। মানে কি অনুপাত হলে, বাঙলা ভাগের দায় থেকে তাঁরা মুক্ত হন?
    ৩ - ব্যাবসায়ী ছাড়াও যেসব বড়লোক গোষ্ঠী তাঁদের ভূমিকা কি, জমিদার গোষ্ঠী দেশ ভাগ আটকাতে চেয়েছেন বলে জানা নেই, তাঁদের সঙ্গে বিড়লা দের ভূমিকার আর কোথায় আলাদা?

    গ - এবং এটার সঙ্গে স্ট্রেট লাইনে স্বাধীনতা পরবর্তী প্রোটেকশনিজম কে কজালিটির কোন স্ট্রেচেই আদৌ জোড়া যায় কিনা। মানে পার্টিশন যদি নাও হত, নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের জাতীয় ক্যাপিটাল প্রোটেকশনিজম চাইবেনা কেন সেটা আমি বুঝিনি।

    নাকি বিড়লা দের পজিশন টা আদ্যন্ত সাম্প্রদায়িক, এবং এর সঙ্গে তাঁদের নিজেদের ব্যবসার ও সম্পর্ক ক্ষীণ?

    ঘ - মুসলমান মধ্যবিত্ত যদি ফজলুল হকের সঙ্গে থাকেন, আরবান অতো বড়লোক রা যদি লীগের সঙ্গে থেকে থাকেন, তাহলে 'মুসলমান ব্যবসায়ী' গোষ্ঠীর থেকে কি এমন প্রতিযোগিতা র আশংকা ছিল, যে বিড়লারা এই পদক্ষেপ নেবেন, ১৯৩৯ থেকেই।

    আমার সাধারণ ভাবে অনেক দিন থেকেই মনে হয়েছে, সুভাষ কে বাঙালি ন্যাশনালিস্ট দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে চাওয়ার দুটি মূল গলতা রয়েছে, বা আমাকে আরো পড়ে ব্যাপারটা বুঝতে হবে। আমার শিক্ষা এ ব্যাপারে খুব ই অসম্পূর্ণ। সুভাষ বাবু বাঙালি ন্যাশনালিস্ট ছিলেন না, সর্বভারতীয় অর্থেই দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী ছিলেন, এবং সেটাই তাঁকে অন্য সর্বভারতীয় নেতাদের ভয় পাবার মূল কারণ। এবং এখানেই, তিনি শরৎবাবুর থেকে আলাদা, দুজনের ই অসামান্য অসাম্প্রদায়িকতার রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও। আরেকটা সমস্যা হল, সুভাষ কংগ্রেসে কোণঠাসা হবার পরেও তাঁর সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গী বদলান নি, বদলালে, ফৌজ গঠন হয় না। সুতোরাঙ এটা ভাবার কারণ নেই, চল্লিশের দশকে শরৎঅবাবু র শেষ প্রচেষ্টা টা বাংলা কেন্দ্রিক হলেও, সুভাষের শেষ প্রচেষ্টা সর্ব অর্থেই সর্বভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গী থেকে সরে আসে নি। এবং মূলতঃ প্রচুর সীমাবদ্ধতা এবং আজগুবি পরিকল্পনা সত্ত্বেও সেকুলার বাঙালি দের চোখে সুভাষ কোনদিন তাঁর শ্রদ্ধার ভালোবাসার স্থান হারাবেন না।

    প্রবন্ধটি অত্যন্ত সুলিখিত হলেও আমার পড়তে গিয়ে আর যা যা সমস্যা হয়েছে আমি একে একে রেকর্ড করব। এমনিতে সৈকত (১) এর জন্য কোন ধন্যবাদ ই যথেষ্ট না।
  • দ্রি | 568912.129.2367.62 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫৬79438
  • মুসলিম লীগের একটা ফ্যাকশান (সুরাবর্দী, উইথ সাপোর্ট ফ্রম জিন্না) বাংলার পার্টিশান চায়নি, মুসলিম চেম্বার অফ কমার্সের ইন্টারেস্টে। এবং সেটা কিন্তু অবিভক্ত ভারতের বদলে নয়। মানে ভারত ভাগ হবে, কিন্তু পুরো বাংলাই পাকিস্তানে যাবে। জিন্নার মনে হত কোলকাতা ছাড়া বাংলা নিয়ে কী হবে? ইস্ট বেঙ্গল তখন ফুড ডেফিসিট ছিল। সব জুট মিল পশ্চিমে। কোল মাইন পশ্চিমে। কোলকাতার মত ইন্টারন্যাশানাল পোর্ট পশ্চিমে। জিন্নার একটা দাবী ছিল, কোলকাতাকে ফ্রি পোর্ট করে দেওয়া হোক। (হংকংএর মত?)

    আবার কিছু লোকের মত ছিল, (লাহোর রিজলিউশান) অবিভক্ত বাংলা ভারতেই থাকবে 'ইন্ডিপেন্ডেন্ট', 'অটোনোমাস' এবং সভারিন হয়ে। এখন কুর্দরা সিরিয়ার কাছে যেমন চাইছে।

    সেই বাজারে বিড়লা বিপদ বুঝে হাফ বেঙ্গল স্যাক্রিফাইজ করে বাকি হাফের ওপর গ্রিপ রাখার পলিটিক্স খেলে।
  • | 340123.99.121223.133 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:১৭79439
  • দ্রি যেটা বলছ সেটা অবশ্যই প্লজিবল। এবং জয়া চ্যাটারজি হাতের কাছে নেই, কিন্তু সম্ভবত এই আর্গুমেন্ট টা আলোচিত। কিন্তু এই আর্গুমেন্টে একটু টাইমের খেলা আছে। তুমি পার্টিশনের অল্প আগের সময়কার আন্ডার স্ট্যান্ডিং ১৯৩৯ কিংবা তার ও আগের বিভিন্ন অ্যাকশন বোঝাতে ব্যবহার করছ। মূল প্রবন্ধে যুক্তির এই চলন টা নিয়েই আমার খটকাটা আছে। সেটা কতদূর দস্তূর। তোমার যা বলার বলো, বাকি টা আমি আরেকটু সোর্স দেখে বলব।
  • দ্রি | 1256.15.780112.1 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:১৮79440
  • "চটকল গুলোর মালিকানা কি তখনো মারোয়াড়ি দের হাতে আসে নি? তাহলে পাটের সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে তাদের কি লাভ? যদি মালিকানা নাও এসে থাকে, লেবার বা কাঁচামাল সাপ্লায়ার হিসেবে তাদের ভূমিকা কি তখনো নগন্য, মানে ১৯৩৯ থেকেই, যখন থেকে অ্যাপারেন্টলি, বিড়লা দেশ ভাগের ছক কষছেন?"

    এই নিয়ে জয়া চ্যাটার্জীতে দুচার কথা আছে।

    চটকলের মালিকানা অনেক আগেই মারওয়াড়ীদের হাতে এসেছিল। গ্রেট ডিপ্রেশানের পরবর্তী সময়ে চটের বাজারে একটা মন্দা আসে। ঐ সময়ে চটের ফাটকা বাজারে স্পেকুলেট করে কিছু পয়সা করে। কিন্তু চট থেকে অন্য জিনিষে ডাইভার্সিফাই করে যায়, চিনি, পেপার, টেক্সটাইল, কেমিক্যাল, ব্যাঙ্কিং, ইন্সুরেন্স ইত্যাদি। কিন্তু কোলকাতা ছিল তাদের হাব। অতয়েব চটের কাঁচামাল তারা স্যাক্রিফাইজ করেছিল মার্কেট শেয়ার হারানোর ভয়ে। তখন মুসলিম চেম্বার অফ কমার্স সংগঠিতভাবে বাংলায় ঢুকতে চাইছিল। বৃটিশরা মুসলিম চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষ নিয়েছিল। দিস ওয়াজ আ থ্রেট টু বিড়লা।
  • দ্রি | 1256.15.780112.1 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:২৪79441
  • আমার যা বলার সবই আমি জয়া চ্যাটার্জি অথবা বিদ্যুৎ চক্কোত্তির থেকে টুকছি। এখানে অরিজিনালিটির কোন ক্লেম নেই।
  • PM | 012312.50.7812.99 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৩৪79442
  • কংগ্রেস ( বকলমে বিড়লা) চায় নি , পুরো বাংলা ভারতে থাকুক। সেক্ষেত্রে বাঙালিরা ভারতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতি হত (প্রায় ২০-২৫% ) । এটা কোনো ভাবেই কাম্য ছিলো না।

    ওদিকে পাকিস্তান ও চায় নি পুরো বাংলা পাকিস্তানে যাক। সেক্ষেত্রে পাকিস্তানের তত্কালীন সবচেয়ে বড় শহর আর অর্থনৈতিক কেন্দ্র হবার সুবাদে কলকাতা র রাজধানী (পাকিস্তানের) হাওয়া আটকানো যেতো না। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক কেন্দ্র পুর্ব পাকিস্তানেই ঘনীভুত হতো --সেটা ওদিকের নেতাদের ( মুলত ঃ পঃ পাকিস্তানের) কারুর ই কাম্য ছিলো না।

    তাই রাজনৈতিক ভাবে কেউ ই চায় নি বাংলা এক থাকুক। । এই অবজেকটিভ অ্যাচিভ করতে দুপক্ষই ধর্মীয় বিভেদ কে উস্কানী দেয়। আর দুপক্ষের নেতারা এদের হাতে ব্যবহৃত হয়। শরতচন্দ্র বসু মতো অল্প কয়েকজন খেলা টা বুঝলেও … জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে জনমত সংগঠিত করে হাওয়া ঘোরানোর মতো জায়্গায় ছিলেন না কেউ ই।

    সুতরাং আত্মঘাতী বাঙালীর ভাগ্যে যা জোটার তাই জুটলো দুপারেই…। ধর্ম নির্বিশেষে। ওপারে সরাসরি অত্যাচার , শোষণ আর এপারে ফ্রেত ইকোয়ালাইসেসন। ফল দুপারেই এক -- অর্থনৈতিক ভাবে ছিবড়ে হয়ে যাওয়া। ওপারে তবু তারা ঘুড়ে দাড়াচ্ছে-- সময় লাগবে অনেক। এপারে তো কোনো আশাই নেই।

    ঘটনা চক্রে এই পোস্ট টা এখন ঢাকা তে বসে করছি ঃ)
  • দ্রি | 1256.15.780112.1 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪২79443
  • "ব্যাবসায়ী ছাড়াও যেসব বড়লোক গোষ্ঠী তাঁদের ভূমিকা কি, জমিদার গোষ্ঠী দেশ ভাগ আটকাতে চেয়েছেন বলে জানা নেই, তাঁদের সঙ্গে বিড়লা দের ভূমিকার আর কোথায় আলাদা?"

    জয়া মুখার্জীতে বাংলা পার্টিশান কারা কারা চেয়েছিল তাদের লম্বা একটা লিস্ট আছে। তাতে অ্যাসোসিয়েশান অফ মিউনিসিপাল কমিশানার্স, বার অ্যাসোসিয়েশান, ট্রেড অ্যাসোসিয়েশান ইত্যাদির সাথে জমিনদার্স অ্যাসোসিয়েশানেরও উল্লেখ আছে।

    আবার অন্যদিকে মুসলিম লীগের একটা ফ্যাকশান, খাজা গ্রুপ (যারা পূর্ববঙ্গের জমিদারের অনুগত, অ্যাজ অপোজ্‌ড টু সুরাবর্দী ফ্যাকশান যারা পশ্চিমের ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট মুসলিম) ও কিন্তু বাংলার পার্টিশান চেয়েছিল।

    জটিল সময়। বিভিন্ন ইন্টারেস্ট। জটিল সমস্যা।

    তবে বিড়লার নামটা বেশী করে আসে কারন উনি কংগ্রেসের ক্যাম্পেন স্ট্র্যাটেজির কমিটি বসতেন, পার্টিকে ফাইন্যান্স করতেন। এবং গার্ন্ধীর ওপর ওনার ইনফ্লুয়েন্স ছিল।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৫79444
  • পার্টিশন বেঙ্গল ক্যাম্পেইন - -

    ... There was a strong calculation of economic self-interest in this campaign which was not only well orchestrated but also well funded. Businessmen, whether Bengalis or outsiders, in Calcutta and up country, played a prominent role in organizing the campaign.

    Birla, Jalan, Goenka, N R Sarkar... - all the millionaires sat on the committee that planned the strategy of the campaign at the highest level.

    Marwari traders from all over the province sent petitions to the All-India Congress committee which declared that business in Bengal under the Muslim League ministry was absolutely crippled and which were wholehearted in their support of the move to partition Bengal, describing it as a step that was necessary to restore peace and prosperity.

    Many of the public meetings organized in different parts of Bengal demanding immediate creation of a separate Hindu province were presided over (and of course paid for) by local business interests.

    For instance, the meeting in Dalimondalghat, Howrah was presided over by a local mill-owner, while pro-partition meeting in Siliguri was chaired by S C Kar, a well-to-do Bengali tea planter...
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:০৩79445
  • বিড়লা-দের ছিল আরও বড় ইন্টারেস্ট - টাটা এবং অন্য শিল্পপতিদের সঙ্গে মিলে - যা পরে Bombay Plan - https://en.wikipedia.org/wiki/Bombay_Plan এ রূপান্তরিত হয় । বেসিক্যালি এটা ছিল প্রোটেকশনিজ্‌ম্‌ - - যাতে ভারতের মার্কেটে সরকারি সহায়তায় শুধু টাটা-বিড়লা-লালভাই রা বিজনেস করবে কোনো কম্পিটিশন ছাড়া। প্রায় ৪০ বছর ছিল এই সিস্টেম।
  • দ্রি | 1256.15.780112.1 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:১৩79446
  • অ্যাবসোলিউটলি। প্রোটেকশানিজম হত এরই লিনিয়ার এক্সটেনশান, যার কথা খানুদাও বলেছেন।

    তবে সেটা হওয়ারই ছিল। কারন তখন মার্কেট ক্লোজ না করলে বিড়লার বদলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পনীরাই মনোপলি করে যেত।

    ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মনোপলির চেয়ে বিড়লার মনোপলি ভালো। তবে আরো ভালো হত যদি খানুদা আর এলসিএমের কোম্পানী বিড়লাকে কম্পিটিশান দিতে পারত।
  • সিকি | 122312.241.782312.12 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৩২79447
  • সুতোরাঙ শব্দটা বেশ পছন্দ হল। চোখের সামনে লালনীল সুতো দেখতে পেলাম যেন।
  • দ্রি | 90090012.249.013423.86 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৪০79448
  • "নাকি বিড়লা দের পজিশন টা আদ্যন্ত সাম্প্রদায়িক, এবং এর সঙ্গে তাঁদের নিজেদের ব্যবসার ও সম্পর্ক ক্ষীণ?"

    বিড়লারা অ্যাজ আ ফ্যামিলি সাম্প্রদায়িক কিনা তো জানা নেই। কিন্তু ঐ সময়ে ওদের বিজনেস কেস কলড ফর আ সাম্প্রদায়িক সলিউশান।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৫০79449
  • কিন্তু সেই সময়, এদের আর একটা বড় ভয় ছিল - সেটা হল কনভার্শন - অর্থাৎ যদি বলা হয় বিড়লা-টাটা দের বিজনেসের সরকারিকরণ করতে হবে। বা, অ্যাট লিস্ট ইন্ডিভিজুয়াল/ফ্যামিলি ওনারশিপ সরিয়ে কো-অপারেটিভ করতে হবে।

    সেটা আটকানো-র জন্য দরকার ছিল সকারি পলিসির কন্ট্রোল - শুরু হল ফান্ডিং যা দিয়ে গান্ধী-প্যাটেল-নেহেরু দের নীতি কন্ট্রোল করা যাবে। ১৯৪০ থেকে মোটামুটি মোটামুটি লার্জ ডোমেস্টিক বিজনেস ফান্ডিং ফর্মালিআজ করে।

    খেয়াল রাখতে হবে, সুভাষ বসু ১৯৩৭-১৯৩৮ এর কংগ্রেসে স্পিচ গুলোতে সোভিয়েত-বলশেভিক-লেনিন এর উল্লেখ করেছিলেন, সুভাষের সঙ্গে তৎকালীন ভারতীয় কম্যুনিস্ট নেতাদের সখ্যতা ছিল, ওনার আফগানিস্তান থেকে দেশ ছাড়ার বন্দোবস্ত করেছিলেন ডাঙ্গে, এম এন রায় একসময় সুভাষের প্রায় অ্যাডভাইসার গোছের রোলে ছিলেন, এবং সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন নিয়ে সুভাষ ওয়াজ প্রেটি সিরিয়াস, কংগ্রেস পার্টি ফান্ডিং নিয়েও একটা আইডিয়া খুঁজছিলেন --- এই ব্যাপারগুলো শুধু বিদেশি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নয়, ডোমেস্টিক বিজনেসম্যানদের পক্ষেও ছিল চরম অস্বস্তিকর, সেই জন্যেই বিড়্লা এবং বিগ বিজনেস প্রায় লবি করে সুভাষকে কংগ্রেস থেকে হঠালেন, এবং ফুল পার্টি ফান্ডিং এর বন্দোবস্ত নিজেদের হাতে নিয়ে নিল।

    এই ব্যাপারগুলো, সুভাষ বসু নিয়ে আলোচনায় সচারচর সামনে আসে না, সৈকত এনেছে - ভালো লেখা ।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৫৭79450
  • বিজনেসের দিক থেকে বিড়লারা সাম্প্রদায়িক সল্যুশন, পার্টিশন - এসব নিয়ে খুব ব্যতিব্যস্ত ছিলেন না, তারা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, তাদের বক্তব্য দেশ স্বাধীন হলে মার্কেট কারা পাবে। যদি মুসলিম মেজরিটি রুলিং হয়, তাহলে কোনো গ্যারান্টি নেই যে ফরেন কম্পিটিশন উঠে যাবে। তারা মুসলিম লিগ-কে ফান্ডিং দিয়ে কন্ট্রোল করতে পারছে না। কংগ্রেসকে পারছে। কিন্তু সেখানে প্রবলেম হল সুভাষ - যিনি তো প্রায় সোশালিস্ট সব সাজেশন দিচ্ছেন, সুতরাং সুভাষ হঠাও, আর বাংলা ভাগ করে দাও যাতে হিন্দু পার্টাটার পুরো মার্কেটটা ওদের হাতে থাকে। সিম্পল বিজনেস মার্কেট লজিক।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:০৯79451
  • দ্রি,
    ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির থেকে দেশের কন্ট্রোল বিড়লা-টাটা দের হাতে দিয়েও তো বেশিদিন টেঁকানো গেল না, স্বাধীনতার বছর ৪০ পরে মার্কেট তো সেই খুলে দিতেই হল। মাঝখান থেকে ঘনশ্যামদাস বিড়লা, জামশেদজী টাটা রা প্রায় স্বাধীনতা সংগ্রামী খেতাব পেয়ে গেলেন।
  • দ্রি | 90090012.249.013423.86 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:২৬79452
  • "যদি মুসলিম মেজরিটি রুলিং হয়, তাহলে কোনো গ্যারান্টি নেই যে ফরেন কম্পিটিশন উঠে যাবে।"

    তার চেয়েও বেশী মনে হয় মুসলিম মার্চেন্টদের সাথে ডাইরেক্ট কম্পিটিশানের ভয়।

    Similarly, the Muslim Chamber of Commerce, founded in 1932, was primarily an instrument for the protection of the non-Bengali (Muslim) commercial interests in Bengal. The Chamber, comprising Muslim merchants, manufacturers and bankers in Calcutta, including the Ispahani and Adamjee families, accounted for 890 members with a claimed capital of Rs 200 million. 11 It declared in 1934 – perhaps a wild claim – that apart form having a firm grip on the trade in salt, raw jute, rice and skins, its members controlled 75 per cent of Bengal’s coastal trade; 12 although this claim seems somewhat exaggerated, the fact that it was a force to reckon with in so far as the coastal trade was concerned can be substantiated with reference to an application of the Chittagong unit of the Muslim Chamber of Conference for ‘recognition from the Government of Bengal’. [বিদ্যুৎ চক্রবর্তী]
  • দ্রি | 90090012.249.013423.86 (*) | ২৪ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৩৪79453
  • চল্লিশ বছর পর মার্কেট খুলে দেওয়া ... ঠিক আছে। ততদিনে ছোটখাটো ইন্ডাস্ট্রিতে হাত পেকে গেছে। আর তখন মার্কেট খুলে যেমন ইম্পোর্ট হয়েছে, তেমন এক্সপোর্টও করতে পেরেছে।

    ১৯৪৭ এ মার্কেট খুলে দিলে কিছু এক্সপোর্ট করতে পারত?

    আইএমেফ থেকে লোন নিয়ে সবকিছু ইম্পোর্ট করতে হত। ডেট ট্র্যাপে চলে গিয়ে একটি ব্যানানা রিপাবলিকে পরিণত হত।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন