এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • সুভাষ, গান্ধি ও ত্রিপুরী অধিবেশন

    সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০০৭১ বার পঠিত
  • ১।
    ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু প্রথমবারের জন্য ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছরই গান্ধির সঙ্গে তাঁর বিবাদের শুরু। কোনো আশ্চর্য কারণে অনেক মহল থেকেই এই বিবাদকে ব্যক্তিগত, আবেগজাত, ইত্যাদি নানারকম ঢাকনা দিয়ে পরিবেশন করতে ভালবাসেন, কিন্তু আদতে বিষয়টি ছিল তীব্রভাবে রাজনৈতিক, ভীষণভাবে তিক্ত, ভারতীয় রাজনৈতিককে মহলকে আড়াআড়িভাবে দুই ভাগে ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছিল। প্রায় জয় হয়ে আসা যুদ্ধটি সুভাষ নিজের দায়িত্বে ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন। সেটি তাঁর মহত্ব না ব্যর্থতা সে নিয়ে আলোচনা চলতে পারে, চালানো উচিতও, কিন্তু কোনো অজ্ঞাত কারণে এই বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেইনা, যদিও অবিভক্ত ভারত, বিশেষ করে বাংলার ভবিষ্যতের জন্য গান্ধি-সুভাষ বিতর্ক অতীব গুরুত্বপূর্ণ, সম্ভবত বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল।

    এই বিতর্কটিতে ঢোকার আগে ১৯৩৭-৩৮ সালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর একবার নজর বুলিয়ে নেওয়া দরকার। ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘনিয়ে এসেছে, শুরু হবে বছর খানেকের মধ্যে, কিন্তু তার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এর পাঁচ-ছয় বছর আগে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসকের উদ্যোগে প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার সূচনা হয়েছে, ১৯৩২ সালের ম্যাকডোনাল্ডস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা ঘোষণার মাধ্যমে। ওই বছরই গান্ধি-আম্বেদকরের মধ্যে সাক্ষরিত হয়েছে পুনা চুক্তি। ১৯৩৫ সালে বাঁটোয়ারার পরের ধাপ হিসেবে পাশ হয়েছে ভারত সরকার আইন, যাতে ভারতীয়দের দ্বারা কেন্দ্রীয় এবং প্রাদেশিক আইনসভা নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় আইনসভা কংগ্রেস বা লিগ কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়নি, কিন্তু প্রাদেশিক নির্বাচনে তারা উভয়েই অংশগ্রহণ করেছে। ১৯৩৭ সালেই হয়েছে এই নির্বাচন এবং বাংলা সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন কৃষক প্রজা পার্টির নেতা ফজলুল হক।

    সুভাষ-গান্ধি বিতর্কে এই নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই জন্য সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা/ভারত সরকার আইন অনুযায়ী নির্বাচনের ব্যাপারটি এখানে ছোটো করে দেখে নেওয়া দরকার। নির্বাচন এবং সরকার বলতেই আমরা এখন সার্বজনীন ভোটাধিকারের কথা ভাবি। কিন্তু ১৯৩৭ এর নির্বাচনে সার্বজনীন ভোটাধিকার তো ছিলই না, এমনকি বেশিরভাগ ভারতবাসীরই ভোট দেবার অধিকার ছিলনা। ভোটদানের অধিকার ছিল মূলত অবস্থাপন্ন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠীরই এবং সংখ্যার বিচারে সেটা সামগ্রিক জনসংখ্যার ১৩%র মতো। এবং বৃটিশ ধর্মীয় বিভাজনের পদ্ধতি অনুযায়ী মুসলমান, হিন্দু এবং ইউরোপিয়ান জনগোষ্ঠীর জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষিত আসন ছিল। অবিভক্ত বাংলার ক্ষেত্রে হিন্দু-মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাত কমবেশি আধাআধি হলেও ২৫০ টি আসনের আইনসভায় ১১৫ টি আসন বরাদ্দ ছিল মুসলমানদের জন্য, হিন্দুদের জন্য ছিল ৮০ টি। ইউরোপিয়ানরা সংখ্যায় নগণ্য হলেও তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল ২৫ টি আসন। এই বাঁটোয়ারার কথা প্রথম ঘোষণা হয় ১৯৩২ সালে, এবং ওই বছরই আম্বেদকরের সঙ্গে তফশিলী জাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে গান্ধি পুনা-চুক্তি করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই ৮০ টির মধ্যে মাত্র ৫০ টি বরাদ্দ হয় বাংলার বর্ণহিন্দুদের জন্য। বলাবাহুল্য পুনা-চুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রভাব বাংলায় পড়লেও চুক্তির আলোচনায় কোনো বাঙালি নেতাকে ডাকা হয়নি।

    স্বভাবতই বাঙলার ভদ্রলোক সমাজে এই নিয়ে তীব্র আলোড়ন ওঠে। সেটি অন্যায্যও ছিলনা। এই ভাগাভাগি একেবারেই সংখ্যানুপাতিক ছিলনা। তার কিয়দংশ ম্যাকডোনাল্ডসের অবদান, কিছুটা গান্ধির। কিছুটা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে উপরে টেনে তোলার শুভাকাঙ্খার ফসল, কিছুটা রাজনীতি-সক্রিয় বাঙালি ভদ্রলোককে সমঝে দেবার চেষ্টা, বাকিটুকু দ্বিজাতিতত্ত্বের ফলিত প্রয়োগ। কোনটি কত শতাংশ বলা মুশকিল, তবে অন্য সবকিছুর সঙ্গে এর যে একটি তীব্র সাম্প্রদায়িক অভিমুখ ছিল, তা অনস্বীকার্য। সেই সাম্প্রদায়িক অভিমুখ বেশ কিছুটা সাফল্যলাভও করে। ভদ্রলোক প্রতিবাদের এর একটি অংশ সরাসরি সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গীতে চলে যান। উল্টোদিকে মুসলমান বুদ্ধিজীবিদের একটি অংশও একই ভাবে সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নেন। বর্ণহিন্দুদের কাছে এই ভাগাভাগি ছিল ইচ্ছাকৃত বঞ্চনা। মুসলমান এবং তফশিলীদের কাছে যা আত্মপরিচয় ঘোষণার সুযোগ। ফলে ভাগাভাগি গভীরতর হয়। স্পষ্টতই বৃটিশের একটি লক্ষ্য তাইই ছিল। অদ্ভুতভাবে দলগুলিও এই বিভাজনে ইন্ধন দেয়। নির্বাচনে মুসলিম লিগ কেবল মুসলমান আসনে অংশগ্রহণ করে। বিভাজন আরও বাড়িয়ে গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস অংশগ্রহণ করে কেবলমাত্র হিন্দু আসনগুলিতে। প্রাতিষ্ঠানিক সাম্প্রদায়িকতার দরজা হাট করে খুলে দেওয়া হয়।

    আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এত বিরাট উদ্যমের পরেও বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা জয়ী হয়নি। বর্ণহিন্দু আসনগুলিতে কংগ্রেস বিপুলভাবে জিতলেও, মুসলমান আসনে মুসলিম লিগ একেবারেই ভালো করেনি। বেশিরভাগ আসনে জিতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ পার্টি হয় মূলত মুসলমান চালিত কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ দল, ফজলুল হকের কৃষক-প্রজা পার্টি ( মুফাফফর আহমেদ এবং নজরুল ইসলাম উভয়েই এই পার্টির ঘনিষ্ঠ ছিলেন)। ফজলুল হক কংগ্রেসের সঙ্গে জোট সরকারের প্রস্তাব দেন। ১৯০৫ সালের ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখে বাংলায় হিন্দু-মুসলিম উভয়ের প্রতিনিধিত্বে ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সম্ভাবনা তৈরি হয়। এবং শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গান্ধির নেতৃত্বে ধর্মনিরপেক্ষ দল কংগ্রেস দ্বিতীয়বার ধর্মনিরপেক্ষতার পিঠে ছুরি মারে (প্রথমটি ছিল কেবলমাত্র হিন্দু আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত)। কংগ্রেস জানায়, তারা জোট সরকারে অংশগ্রহণ করবেনা, সমর্থনও দেবেনা। ফজলুল হক বাধ্য হন মুসলিম লিগের সঙ্গে জোটে যেতে।

    ২।
    সাম্প্রদায়িকতার এই অবাধ চাষবাসের মধ্যে দীর্ধ নির্বাসন/অসুস্থতার পর্ব কাটিয়ে সুভাষ দেশে ফেরেন। ১৯৩৮ এর শুরুর দিকে নির্বাচিত হন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে। লক্ষ্য হিসেবে তিনি ঘোষণা করেন সম্পূর্ণ স্বরাজ। তাঁর সামনে ছিল এই লক্ষ্যে জনসমষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ। ভারতবর্ষে, বিশেষ করে বাংলায় যে সাম্প্রদায়িক গোলযোগ ইতিমধ্যেই কংগ্রেস নিজ দায়িত্বে পাকিয়ে তুলেছিল, সেই গোলমালের সমাধান করার বিপুল কাজও তাঁর কাঁধে চেপেছিল। কংগ্রেসের পূর্বতন ভুল সংশোধনের কাজটি সহজ ছিলনা। ১৯৩৮ সালে সুভাষ ও তাঁরা দাদা শরৎ বাংলায় কংগ্রেসের সমর্থনে কৃষক প্রজা পার্টির সরকার গঠনের একটি পরিকল্পনা করেন। সরকার থেকে মুসলিম লিগকে সরিয়ে সেখানে কংগ্রেস আসবে, এবং হিন্দু-মুসলমান যৌথ নেতৃত্বে তৈরি হবে নতুন সরকার -- এটাই ছিল লক্ষ্য। কৃষক-প্রজা পার্টির ভিত্তি ছিল গরীব এবং মধ্য কৃষকরা। কংগ্রেসের হিন্দু জমিদার ও 'সর্বভারতীয়' ভিত্তির সঙ্গে সেটা ছিল স্পষ্টই আলাদা। সুভাষ চিত্তরঞ্জন দাশের শিষ্য হিসেবে মুসলমান জনগোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন। একই সঙ্গে তাঁর একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার আদর্শও ছিল, যেটা কৃষক-প্রজা পার্টির লক্ষ্যের সঙ্গে সুসমঞ্জস । সুভাষ বাম ও র‌্যাডিকাল গোষ্ঠীকে সঙ্ঘবদ্ধ করতেও সক্ষম হয়েছিলেন। এবং পরিকল্পনায় বহুদূর এগিয়েও গিয়েছিলেন। পরিকল্পনার শেষ ধাপে তিনি ওয়ার্ধায় গিয়ে (গান্ধি তখন ওয়ার্ধায় ছিলেন) গান্ধির সঙ্গে আলোচনা করে অনুমোদনও নিয়েছিলেন। ব্যাপারটা জরুরি ছিল, কারণ সুভাষ সভাপতি হলেও কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিতে তখন গান্ধি-প্যাটেলের একাধিপত্ব।

    এরপরই ঘটে অদ্ভুত সেই ঘটনা, যা, অসাম্প্রদায়িক বোঝাপড়ার সম্ভাবনাকে আবারও সম্পূর্ণ উল্টোদিকে ঠেলে দেয়। আলোচনা করে কলকাতায় ফিরে আসার পরই, কলকাতার একচেটিয়া ব্যবসায়ী মহলে সুভাষের অ্যাজেন্ডা নিয়ে বিরূপতা দেখা যায়। কীকরে এই পরিকল্পনা ফাঁস হল তার বিশদ বিবরণ পাওয়া না গেলেও, যা জানা যায়, যে, এর পরই হক মন্ত্রীসভার সদস্য নলিনীরঞ্জন সরকার (পরবর্তীতে এই শিল্পপতি হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের মধ্যে যাতায়াত করবেন), যিনি তখনও কংগ্রেসের কেউ নন, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ও এক বিশিষ্ট সর্বভারতীয় শিল্পপতিকে নিয়ে গান্ধির সঙ্গে দেখা করেন। সেই শিল্পপতির নাম ঘনশ্যামদাস বিড়লা। এবং অবিলম্বে গান্ধি মত বদলে সুভাষকে চিঠি লেখেনঃ "নলিনীরঞ্জন সরকার, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং ঘনশ্যামদাস বিড়লার সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা আমাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে, যে, বাংলার বর্তমান মন্ত্রীসভা ( মুসলিম লিগ এবং কেপিপির আঁতাত) বদলানো উচিত নয়"। চিঠিটি সুভাষের হাতে পাঠানো হয় ঘনশ্যামদাস বিড়লার হাত দিয়েই। বজ্রাহত (বজ্রাহত শব্দটি আলঙ্কারিক নয়, সুভাষ স্বয়ং ইংরিজিতে 'শক' শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তারই বাংলা) সুভাষ উত্তরে যা লেখেন, তা মূলত এই, যে, আপনার সঙ্গে এত আলোচনার পর আপনি হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত বদলালেন, এই তিনজনের কথায়? বোঝাই যাচ্ছে বাংলায় যারা কংগ্রেস চালায়, তাদের চেয়ে এই তিনজনেরই গুরুত্ব আপনার কাছে বেশি।

    এই চিঠিটিতে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সুভাষের দৃষ্টিভঙ্গী এবং চিরাচরিত কংগ্রেসি ঘরানার সঙ্গে তীব্র মতপার্থক্যের সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। চিঠিতে সুভাষ লিখছেনঃ
    "সিন্ধের ব্যাপারে মৌলানা সাহেবের সঙ্গে অমি সহ ওয়ার্কিং কমিটির আরও কিছু সদস্যের মতপার্থক্য হয়। এবং এখন বাংলার ক্ষেত্রে আমাদের মতামত সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে।
    মৌলানা সাহেবের মত, যা মনে হয়, বাংলার মতো মুসলমান প্রধান প্রদেশগুলিতে সাম্প্রদায়িক মুসলমান মন্ত্রীসভাগুলিকে বিব্রত করা উচিত নয়.... আমি উল্টোদিকে মনে করি যথা শীঘ্র সম্ভব জাতীয় স্বার্থে হক মন্ত্রীসভাকে ফেলে দেওয়া উচিত। এই প্রতিক্রিয়াশীল সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে বাংলায় পরিবেশ তত সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে।"

    এখানে অবশ্যই হক মন্ত্রীসভা বলতে কেপিপি বা ফজলুল হকের কথা বলা হচ্ছেনা, বরং সামগ্রিক মন্ত্রীসভাটির কথা বলা হচ্ছে, যেখানে কিছু সাম্প্রদায়িক শক্তিও ঢুকে বসে ছিল। স্পষ্টতই সুভাষ অসাম্প্রদায়িক একটি সরকার গড়তে চেয়েছিলেন, হিন্দু-মুসলমানের প্রতিনিধিত্বই যার ভিত্তি, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা যেখানে বর্জনীয়। এবং স্পষ্টই মৌলানা বা গান্ধির এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা ছিলনা, যদি না উল্টো দিকে যাওয়াটাই তাঁদের অঘোষিত লক্ষ্যের অন্তর্গত হয়ে থাকে।

    এই চিঠিতে সুভাষের আক্রমণের কেন্দ্রে ছিলেন গান্ধি এবং মৌলানা। মৌলানার সঙ্গে তাঁর বিরোধের কথা সুভাষ চিঠিতে স্পষ্ট ভাবেই লিখেছেন, যদিও গান্ধির আকস্মিক মত বদল সম্পর্কে কোনো ব্যাখ্যা দেননি। সে সম্পর্কে একটি কৌতুহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় শরৎ বসুর তৎকালীন সচিব নীরদচন্দ্র চৌধুরির বয়ানে, যিনি সেই সময় সুভাষেরও চিঠিপত্রের দায়িত্ব বহন করতেন। নীরদের বক্তব্য অনুযায়ী, সুভাষ বিশ্বাস করতেন, যে কেবল মৌলানা নয়, গান্ধির মত পরিবর্তনের জন্য ঘনশ্যামদাস বিড়লাও দায়ি। তার কারণ একটিই। ঘনশ্যামদাসের ধারণা ছিল, যে, যদি হিন্দু-মুসলমানের ঐক্য স্থাপিত হয়, তৈরি হয় কংগ্রেস এবং কেপিপির যৌথ সরকার, তাহলে কলকাতার অর্থনীতি এবং ব্যবসায় মারোয়াড়ি প্রাধান্য বিপদের মুখে পড়বে।

    সুভাষের লিখিত চিঠিপত্রে এই সন্দেহের কোনো উল্লেখ অবশ্যই পাওয়া যায়না। তবে বিশ্লেষণের বিচারে নীরদের পর্যবেক্ষণটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথমত, গান্ধির উপর 'ঘনশ্যামদাসের প্রভাব অনস্বীকার্য ছিল। তিনি ছিলেন গান্ধির প্রধান অর্থনৈতিক পৃষ্ঠপোষক। এবং তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পৃষ্ঠপোষক ছিলেন মনে করার কোনো কারণ নেই। দেখা যাচ্ছে, এর চার বছর পর ১৯৪২ সালে তিনি মহাদেব দেশাইকে বলছেন "আমি (বাঙলা বিভাগের পক্ষে"। মনে রাখতে হবে এটি বলা হচ্ছে, ১৯৪২ এ। তখন ভারত ছাড় আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে এবং বাংলার বিভাজন তখনও রাজনৈতিক ভাবে আলোচ্যও নয়। দ্বিতীয়ত, গোষ্ঠীগতভাবে অবাঙালি শিল্পপতিরা পরবর্তীতে(৪৫-৪৬) বাংলা ভাগের উদ্যোগের পুরোভাগে ছিলেন। বিড়লা, জালান, গোয়েঙ্কা এবং বহুআলোচিত নলিনীরঞ্জন সরকার উচ্চপর্যায়ের কমিটিতে থেকে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করতেন। প্রদেশের সব এলাকা থেকে মারোয়াড়ি ব্যবসায়ীরা সংগঠিতভাবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে জানানও যে তাঁরা বাংলা বিভাজনের সমর্থক।

    সুভাষের চিঠিতে এই সব প্রসঙ্গের কোনো উল্লেখ নেই। এর অনেককিছুই ঘটবে ভবিষ্যতে, ফলে জানার কোনো উপায়ও ছিলনা তাঁর। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে তাঁর উচ্চারিত বাক্যগুলি পরবর্তীতে অমোঘ ভবিষ্যৎবাণী হিসেবেই দেখা দেয়। তীব্র ভাবে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়ানোর বিরুদ্ধেও তিনি সওয়াল করেছিলেন। কিন্তু এই আবেগী উচ্চারণের কোনো ফল, বলাবাহুল্য হয়নি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশ্নে বসু ভ্রাতৃদ্বয়ের কার্যকরী পরিকল্পনাকে বাতিল করা হয়। কংগ্রেস-কেপিপি সরকারের সম্ভাবনায় তৃতীয়বারের মতো ছুরি মারা হয়। বাংলার সাম্প্রদাহিকতার উত্থানে যাকে, এক কথায় কংগ্রেস কথা গান্ধির সক্রিয় উদ্যোগ বলা যায়। এবং সুভাষ ও গান্ধির তিক্ততার ভিত্তিভূমি প্রস্তুত হয়।

    ৩।
    বিরোধের পরবর্তী এবং তিক্ততম অধ্যায়টি শুরু হয় এর অব্যবহিত পরেই। আগেই বলা হয়েছে সুভাষের র‌্যাডিকাল এবং বাম ঘরানার একটি অ্যাজেন্ডা ছিল। তার মূল কথা ছিল পূর্ণ স্বরাজের দাবী। কৃষকের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, এই পরিপূর্ণ বাম অ্যাজেন্ডাগুলিও তাঁর বৃহত্তর লক্ষ্যে ছিল। কংগ্রেসের নেতৃত্বে একটি 'পরিকল্পনা কমিটি'ও তিনি তৈরি করেন, যে ধারণাকে পরে নেহেরু ব্যবহার করবেন তাঁর প্রধানমন্ত্রীত্বে। কৌতুকজনক ব্যাপার এই, যে, সেই ৩৭-৩৮ সালে সুভাষ ও নেহেরুকে একই সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর ধরা হত। সেই কারণেই নেহেরুকে সুভাষ এই পরিকল্পনা কমিটির দায়িত্ব দেন। মেঘনাদ সাহাও এর সগে যুক্ত ছিলেন। হরিবিষ্ণু কামাথের মতো ব্যক্তিকেও কমিটির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রেখেছিলেন সুভাষ। মজা হয় এরপর। ডিটেলের প্রতি, সত্যিকারের পরিকল্পনার প্রতি বিমুখতা দেখিয়ে নেহেরু বিষয়টির পতনের সূচনা করেন এবং কামাথ কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। এই ডিটেলহীন আলগা আদর্শবাদ পরবর্তীতে নেহেরুর প্রধানমন্ত্রীত্বের সম্পদ হয়ে উঠবে, পরিকল্পনার আড়ালে কংগ্রেসঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের দেওয়া হবে লাইসেন্সরাজের অভয়ারণ্য, যা প্যাটেলের দক্ষিণপন্থার সঙ্গে চমৎকার খাপ খেয়ে যাবে। শিল্পপতিরাও এতদিনের পৃষ্ঠপোষকতার বিনিময়ে পাবেন বিভক্ত কিন্তু রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জহীন অখন্ড একটি বাজার, যা তাঁদের কাম্য ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর সেই ঘটনা এখানে আলোচ্য নয়, আপাতত বিষয়টা এই, যে, সুভাষ চিরাচরিত দক্ষিণপন্থী কংগ্রেসি পৃষ্ঠপোষকতার বদলে একটি র‌্যাডিকাল বাম ঘরানার মুখ হয়ে উঠতে সক্ষম হন। তাঁর দাবী ছিল আসন্ন ইউরোপিয়ান সংকটকে কাজে লাগিয়ে পূর্ণ স্বরাজের দিকে এগিয়ে যাওয়া। ফলে গান্ধির সঙ্গে তীব্রতম সংঘাত অনিবার্যই ছিল।

    বৃটিশের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের প্রশ্নে এই তিক্ত বিরোধ শুরু হয় ১৯৩৮ এর শেষের দিকেই। আসন্ন ইউরোপীয় সংকটের প্রেক্ষিতে সেপ্টেম্বরের এআইসিসি অধিবেশনে রাজাগোপালাচারি একটি ধোঁয়াটে প্রস্তাব আনেন, যেখানে ব্রিটিশের শুভবুদ্ধির প্রতি একটি আবেদন জানানো হয়, যে, যদি যুদ্ধ আসে, তবে ব্রিটেন যেন ভারতের প্রতি যথার্থ ব্যবহার করে। এই প্রস্তাব নিয়ে কংগ্রেসের মধ্যেই বাম ও দক্ষিণপন্থীদের মধ্যে দ্বৈরথ শুরু হয়। এক অর্থে এটি বৃটিশের সঙ্গে আপোষের উদ্যোগ, স্পষ্টতই সুভাষ বা র‌্যাডিকালরা, বিষয়টিকে সেইভাবেই দেখেন। তৎকালীন কমিউনিস্ট নেতা নীহারেন্দু দত্ত মজুমদারের ভাষ্য অনুযায়ী, বামরা এই প্রস্তাবের একটি সংশোধনী আনেন, কিন্তু তা ওয়ার্কিং কমিটিতে গৃহীত হয়নি। সোমনাথ লাহিড়ি ও পিসি যোশি সহ ৭৩ জন প্রতিনিধি ওয়াক আউট করেন। সুভাষ তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। সেই দিনই তাঁরা সুভাষের কাছে প্রস্তাব দেন, যে আশু কংগ্রেসের মধ্যে একটি যথার্থ মেরুকরণের প্রয়োজন।

    গান্ধি এই পুরো ব্যাপারটিতেই অত্যন্ত ক্ষিপ্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁর চোখের সামনেই এইভাবে একটি বৃহৎ বাম জোটের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। স্পষ্টতই সুভাষ নিজেও এই ঘরানার চিন্তা পোষণ করতেন। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আপোষহীন সংগ্রামের স্বার্থে একজন বাম ঘরানার নেতার ক্ংগ্রেস সভাপতি হওয়া উচিত, সুভাষের এই চিন্তার সঙ্গে জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো নেতারা একমত হন, এবং বাম জোট ক্রমশ বাস্তবতার দিকে এগিয়ে যায়। সুভাষ কংগ্রেস সভাপতি পদে নিজের প্রার্থীপদ ঘোষণা করেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি জানান "বহু লোকে বিশ্বাস করেন, যে, আসন্ন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে সামনের বছর কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী এবং ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে একটি আপোষের সম্ভাবনা আছে। স্বভবতই দক্ষিণপন্থী গোষ্ঠী কংগ্রেস সভাপতি পদে এমন কোনো বামপন্থীকে চায়না, যে আপোষ এবং দরকষাকষিতে পথের কাঁটা হতে পারে।"

    এর চেয়ে স্পষ্ট কথা আর হওয়া সম্ভব নয়। এবং এরপর যা হয়, তা ইতিহাস। গান্ধী আপোষহীন বাম ঘরানার কোনো র‌্যাডিকালকে সভাপতি পদে মেনে নিতে রাজি হননা। পূর্ণ স্বরাজের ডাক দিতেও না। পূর্ণ স্বরাজপন্থী কাউকে সভাপতি করতেও তাঁর তীব্র অনীহা দেখা দেয়। আচার্য নরেন্দ্র দেবের মতো একজন আপোষে অরাজি মধ্যপন্থীর নামও প্রস্তাব করা হয়, কিন্তু গান্ধিশিবির অনড় থাকে। গান্ধি পট্টভি সীতারামাইয়াকে নিজের (এবং অবশ্যই প্যাটেলের) পক্ষের প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন। স্পষ্টতই দক্ষিণপন্থী শিবির গান্ধি ম্যাজিকের উপরেই সম্পূর্ণ ভরসা রেখেছিল। স্বাভাবিক অবস্থায় গান্ধির আশীর্বাদধন্য সীতারামাইয়ার জয়লাভ অনিবার্য ছিল। কিন্তু ১৯৩৮ সাল ঠিক স্বাভাবিক সময় ছিলনা। ভারতবর্ষের ইতিহাসে প্রথমবার র‌্যাডিকাল এবং বামপন্থীদের জোটকে সুভাষ ঐক্যবদ্ধ করতে সমর্থ হন সেই বছর। সঙ্গে ছিল তাঁর নিজের ক্যারিশমা ও র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডা। ফলে ভোটাভুটিতে কংগ্রেস সোশালিস্ট পার্টি এবং কমিউনিস্টরা একযোগে সুভাষের পক্ষে ভোট দেন। এবং গান্ধির প্রার্থীকে পরাজিত করে প্রথমবার র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার একজন নেতা কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। এই জয় কোনো ব্যক্তিগত লড়াই ছিলনা, ছিল ডান ও বামের রাজনৈতিক যুদ্ধের ফলাফল।

    ৪।
    কিন্তু এই আখ্যান, সকলেই জানেন, সুভাষের জয়ের কাহিনী নয়। বরং সুভাষ ও তাঁর অ্যাজেন্ডার হেরে যাবার গল্প। গান্ধির নেতৃত্বে দক্ষিণপন্থী প্রত্যাঘাতের কাছে সেই চূড়ান্ত পরাজয়ের গল্পের সূচনা হয় এর পরেই। আপাতদৃষ্টিতে সভাপতিত্বে জয়লাভের পর সুভাষের সামনে আর বড় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। গণতান্ত্রিক পথে জয়লাভের পরে র‌্যাডিকাল অ্যাজেন্ডার অগ্রগতির রাস্তা খুলে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু স্বভাবতই গান্ধি ও প্যাটেল এত সহজে জমি ছেড়ে দিতে রাজি হননি। গান্ধি সুভাষের জয়কে নিজের ব্যক্তিগত পরাজয় বলে ঘোষণা করেন। জবাবে সুভাষ আবার আবেগী হয়ে পড়েন ('যদি অন্য জনতার আস্থা অর্জন করেও আমি ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির আস্থা অর্জন না করতে পারি, তবে তা আমার পক্ষে খুবই বেদনাদায়ক') এর পর খুব তুচ্ছ একটি টেলিগ্রামকে কেন্দ্র করে সুভাষ এবং শরৎ বাদ দিয়ে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি পদত্যাগ করে। এই জটিল পরিস্থিতিতে সুভাষের পুরোনো অসুস্থতাও আবার মাথা চাড়া দেয়। একেবারে অসময়ে। কিন্তু এইসব চাপে সুভাষের ব্যক্তিগত অসুস্থতা বেড়ে যাওয়া ছাড়া আর রাজনৈতিক কোনো ক্ষতি হয়নি। কারণ কংগ্রেস সভাপতিকে পদচ্যুত করার কোনো বন্দোবস্তো কংগ্রেস সংবিধানে ছিলনা। এবং পদ্ত্যাগীদের বাদ দিয়ে সভাপতি নিজের মতো ওয়ার্কিং কমিটি গড়ে নেবারও অধিকারী।

    এই ভাবে ১৯৩৯ সাল চলতে থাকে। সুভাষ যে ইউরোপীয় সঙ্কটের পূর্বানুমান করেছিলেন, তা আর মাত্র কয়েক মাস দূরে। মার্চ মাসে ত্রিপুরীতে কংগ্রেস অধিবেশন স্থিরীকৃত হয়। সুভাষ তখনও অসুস্থ। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে তিক্ততা, কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি, অবিশ্বাস চরম জায়গায় পৌঁছেছে। এতটাই, যে, অসুস্থ সুভাষকে স্ট্রেচারে করে সভাস্থলে আনলে বিপক্ষশিবিরের কেউকেউ কটাক্ষ করেন, যে, তিনি বগলে রসুন নিয়ে জ্বর বাধিয়েছেন। আর এই অধিবেশনেই দক্ষিণপন্থী শিবির তাদের অভাবনীয় চালটি চালে। ত্রিপুরী অধিবেশনে গোবিন্দবল্লভ পন্থ আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি গঠন সম্পর্কে একটি অভূতপূর্ব প্রস্তাব আনেন। আসন্ন ওয়ার্কিং কমিটি কীভাবে গঠিত হবে? পন্থ প্রস্তাব অনুযায়ী, সভাপতি নিজে নিজে করবেননা, "গান্ধিজির ইচ্ছানুসারে সভাপতি তাঁর ওয়ার্কিং কমিটি তৈরি করবেন"। অর্থাৎ, নির্বাচিত সভাপতি নয়, আসল কথাটি হল গান্ধির ইচ্ছা। এই অদ্ভুত ব্যাপারটির মানে বোঝাতে, লেনিন, মুসোলিনি, হিটলারের সঙ্গে গান্ধিকে তুলনা করে বলেন, "আমাদের গান্ধি আছেন", তো সেই সুবিধে নেওয়া হবেনা কেন? রাজাজি প্রস্তাবের পক্ষে বলতে গিয়ে বলেন, যে, সুভাষের ভরসায় কংগ্রেসকে অর্পণ করার অর্থ হল ফুটো নৌকোয় নর্মদা নদী পার হওয়া। বিতর্ক চলাকালীনই, গান্ধীজি যে এই প্রস্তাবের পক্ষে রাজকোট থেকে টেলিফোনে সম্মতি দিয়েছেন, সেই মর্মে স্থানীয় খবরের কাগজে একটি রিপোর্টও বার হয়। ফলে গান্ধির অনুগামীরা সকলেই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন।

    উল্টোদিকে সুভাষের ছিল বৃহৎ র‌্যাডিকাল জোট। তার একটি বড় অংশ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও, কোনো অজ্ঞাত কারণে কংগ্রেস সোসালিস্ট পার্টি তাদের বিরোধিতার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বাতিল করে এবং ভোটদানে বিরত থাকে। ফলে পন্থ প্রস্তাবটি পাশ হয়ে যায়। এবং সুভাষের হাত থেকে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের অধিকার বস্তুত কেড়ে নেওয়া হয়। এক ধাক্কায় বামপন্থীদের জয়কে পরিণত করা হয় পরাজয়ে। প্রসঙ্গত সুভাষ সন্দেহ করেন, আরেক সমাজতন্ত্রী নেহেরু তাঁর পিঠে ছুরি মেরেছেন, এবং এরপরই তাঁদের বহুমাত্রিক তীব্র তিক্ততার শুরু।

    এর পরে বাকিটুকু বাম অ্যাজেন্ডার পরাজয়ের শেষাংশ মাত্র। সুভাষ নেহেরুর সঙ্গে তীব্র পত্রবিতর্কে জড়ান। গান্ধির সঙ্গে ওয়ার্কিং কমিটি নিয়ে বাদানুবাদে জড়ান। সবই তাঁর চিঠিপত্রে পাওয়া যায়। সে অতি চিত্তাকর্ষক উপন্যাসোপম ব্যাপার। সুভাষ জেদি যুবকের মতো গান্ধিকে অভিযোগ করছেন, জবাবে গান্ধির কাটাকাটা আবেগহীন স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান, এবং সঙ্গে অব্যর্থভাবেই সুভাষের শুভকামনা। সুভাষ লিখছেন পন্থ প্রস্তাবের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই, তিনি সভাপতি হিসেবে পুরোটাকেই চ্যালেঞ্জ করতে পারতেন, কিন্তু করেননি, কারণ তীব্র ভেদাভেদ তাহলে দুনিয়ার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। একই কারণে তিনি পদত্যাগ করতে চাননা, কারণ সেটা খুব খারাপ একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। গান্ধি জবাবে প্রায় ঋষির মতই নিস্পৃহ। বাকি যা হয় হোক, তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিজের অবস্থানে অটল থাকছেন । ফলে কোনো আপোষ হয়না। পরবর্তীতে কলকাতা অধিবেশনে সুভাষ পদত্যাগ করেন, কংগ্রেসের ইতিহাসে যা খুব খারাপ উদাহরণ হিসেবেই থেকে যায়, যতদিন না খারাপতর উদাহরণরা এসে ব্যাপারটি ভুলিয়ে দিতে পারে। বৃহৎ বাম নেতৃত্বের বদলে গান্ধী-প্যাটেল রাজত্বের রাস্তা নিষ্কন্টক হয়। নেহেরু পোশাকি সমাজতন্ত্রী হিসেবে এই জোটের অংশ হিসেবে থেকে যান, যা কংগ্রেসের ভাবমূর্তির পক্ষে খুবই ভাল হয়েছিল পরবর্তীতে। দক্ষিণপন্থী জোটের নেতৃত্বে ১৯৪২ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস ইউরোপীয় সংকটে নিষ্ক্রিয় থাকে। সুভাষের ভবিষ্যৎবাণীকে যথার্থ প্রমাণ করে তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকরী প্রতিরোধই গড়ে তোলেনি ওই তিন বছর। একমাত্র সুভাষ জার্মানি থেকে ফ্রি ইন্ডিয়া রেডিও সম্প্রচার শুরু করার পরই ভারত-ছাড় আন্দোলন শুরু হয়। হয়তো ঘটনাচক্র, হয়তো নয়। কংগ্রেস এবং লিগ রাজনীতির ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে সাম্প্রদায়িকতা বাংলা তথা গোটা উপমহাদেশে তার কালো ছায়া বিস্তার করে, যে ঘরানাকে সুভাষ ভাঙতে চেয়েও পারেননি। বা কংগ্রেসের ভাঙন এড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাঙেননি। কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে পন্থ প্রস্তাবকে পদাধিকারবলে অসাংবিধানিক হিসেবে নাকচ করে দিলে কী হতে পারত, তা নিয়ে বড়জোর এখন জল্পনা হতে পারে। ইতিহাস তাতে বদলাবেনা।


    ১. Bengal Devided The unmaking of a Nation -- Nitish Sengupta p 61-62
    ২. Congress President: Speeches, Articles, and Letters January 1938-May 1939 Subhas Chandra Bose (Author), Sisir Kumar Bose & Sugata Bose (Eds) p. 123 (নীতীশ সেনগুপ্তর পূর্বোক্ত বইয়েও এই চিঠির উল্লেখ আছে, কিন্তু অর্থগত ভাবে এক হলেও চিঠির বয়ান সামান্য আলাদা , এই লেখায় এই বইয়ের বয়ানটির অনুবাদই ব্যবহার করা হয়েছে)
    ৩. Nitish Sengupta p. 63
    ৪. Raj, Secrets, Revolution: A Life of Subhas Chandra Bose -- Mihir Bose p. 151
    ৫. Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition -- Joya Chatterji p. 291
    ৬. Joya Chatterji p. 291
    ৭. Mihir Bose p. 153
    ৮. Mihir Bose p. 154
    ৯. Mihir Bose p. 158 (পন্থ এবং রাজাজির বক্তৃতাংশ দুটিই এখান থেকে নেওয়া)।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ | ১০০৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪১79399
  • 'কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে পন্থ প্রস্তাবকে পদাধিকারবলে অসাংবিধানিক হিসেবে নাকচ করে দিলে কী হতে পারত'
    - জল্পনায় লাভ নাই, তাও ভাবি, সত্যিই যদি সুভাষ এটা করতেন..

    জে ডি বিড়লা বা হিন্দু ব্যবসায়ী গোষ্ঠী-র ভূমিকার কথা তেমন ভাবে পড়িনি আগে
  • amit | 340123.0.34.2 (*) | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫০79400
  • একটা প্রশ্ন আছে এর প্রেক্ষিতে: " ওই বছরই আম্বেদকরের সঙ্গে তফশিলী জাতিদের সংরক্ষণ নিয়ে গান্ধি পুনা-চুক্তি করেন। সেই চুক্তি অনুযায়ী এই ৮০ টির মধ্যে মাত্র ৫০ টি বরাদ্দ হয় বাংলার বর্ণহিন্দুদের জন্য। বলাবাহুল্য পুনা-চুক্তির সবচেয়ে বেশি প্রভাব বাংলায় পড়লেও চুক্তির আলোচনায় কোনো বাঙালি নেতাকে ডাকা হয়নি। স্বভাবতই বাঙলার ভদ্রলোক সমাজে এই নিয়ে তীব্র আলোড়ন ওঠে। সেটি অন্যায্যও ছিলনা। এই ভাগাভাগি একেবারেই সংখ্যানুপাতিক ছিলনা। "

    এখানে ঠিক কি বলতে চাওয়া হচ্ছে ? বাংলাতে দলিত আর বর্ণহিন্দুদের সংখ্যা অনুপাত সেই সময় মোটামুটি কত- % ছিল কোনো ডাটা আছে-? মুসলিম জনসংখ্যা অনুপাত ই বা কত ছিল ? "একেবারেই সংখ্যানুপাতিক ছিলনা।"- এই বেসিস এ কিভাবে পৌঁছনো গেলো ?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:২৯79401
  • এই লেখা আর এর মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সম্পর্কিত এই লেখকের অন্যান্য লেখাও খুব মন দিয়ে পড়ছি। ইতিহাসের এই বিশ্লেষণ খুব জরুরী। স্বীকৃত মূলধারার ইতিহাসের মধ্যে এইসব সূক্ষ্ম ডিটেলগুলো এড়িয়ে যাওয়া হয় বা স্রেফ চেপে দেওয়া হয়। তার ফলে অনেক সত্যই আমাদের কাছ থেকে গোপণ থেকে যায়।
    উঠে আসুক, আরো সবিস্তারে সব উঠে আসুক। সত্য স্পষ্টতর হোক।
  • Tim | 89900.253.8956.205 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৯79403
  • অসম্ভব ভালো হয়েছে লেখাটা।
  • কুশান | 238912.66.9008912.203 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৫79409
  • চমৎকার ইতিহাসের ন্যারেটিভ। ওই সময়ের বহু ধরনের বয়ান আছে। এই লেখা নৈর্ব্যক্তিক সত্যের অনুসারী।

    এই প্রসঙ্গে বলি কিছু অপ্রসঙ্গ। গৌরকিশোর ঘোষের 'প্রেম নেই' এবং সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের ' অলীক মানুষ' দুটি উপন্যাসেই সেই সময়কালীন ইতিহাস আছে। দুটি উপন্যাস জাতে যদিও আলাদা।
    এই লেখাটি টুকে রাখলাম। ভাবছি উপন্যাস দুটি আবার পড়বো। কংগ্রেসের ভূমিকা, সাধারণ মানুষের হাহাকার, সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ এবং তৎকালীন সমাজ ও রাজনীতি সব ছিল।
    গৌরকিশোর এই নিয়ে আরো কাজ করেছেন।

    সৈকত, আরো লিখুন।
  • কুশান | 238912.66.9008912.203 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০১79410
  • লেখাটি নিজের ফেসবুকের দেয়ালে সাঁটলাম।
  • dd | 90045.207.90045.167 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪২79404
  • ইন্টেরেস্টিং।

    ঐ ৪র্থ প্যারায় আছে "এর পর খুব তুচ্ছ একটি টেলিগ্রামকে কেন্দ্র করে সুভাষ এবং শরৎ বাদ দিয়ে গোটা ওয়ার্কিং কমিটি পদত্যাগ করে।"। এটা একটু ডিটেইল্স পাওয়া যাবে ?
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৯79405
  • হ্যাঁ। ত্রিপুরীর অধিবেশন ছিল মার্চে। তার কয়েক সপ্তাহ আগে ওয়ার্ধায় ছিল ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে। সুভাষ সে সময় অসুস্থ। ডাক্তাররা মিটিং এ যেতে বারন করেন। সুভাষ তখন প্যাটেলকে একটি টেলিগ্রাম করেন। সুভাষের চিঠিপত্রের সংকলনে টেলিগ্রামটি আছে। একদম ভার্বাটিম টুকে দিলামঃ
    ------------
    Sardar Patel, Wardha

    KINDLY SEE MY TELEGRAM TO MAHATMAJI. REGRETFULLY FEEL WORKING COMMITTEE MUST BE POSTPONED TILL CONGRESS. PLEASE CONSULT COLLEAGUES AND WIRE OPINION -- SUBHAS
    ---------------

    রাজেন্দ্রপ্রসাদের চিঠিচাপাটিতে পাচ্ছি উনি গান্ধিকেও একটি তার করেন। তার বয়ান এইরকমঃ
    ----------------
    SEEN TODAY DOCTORS TELEGRAM DESPATCHED LAST NIGHT. HAVE BEEN FIGHTING DOCTOR AND DESEASE IN ORDER COME WARDHA BUT REGRETFULLY RECOGNISED NOW CANNOT UNDERTAKE JOURNEY. ORDINARY WORKING COMMITTEE MEETING COULD HAVE TRANSACTED BUSINESS DESPITE MY ABSENSE BUT DOUBT IF THAT COULD BE DONE NOW. CONSEQUENTLY ONLY ALTERNATIVE IS FOR WORKING COMMITTEE MEET BEFOEW CONGRESS. YOUR PRESENCE AT TRIPURI INDISPENDABLY NECESSARY. KINDLY INFORM ME DEVELOPMENTS IF ANY SINCE I SAW YOU. PLEASE SHOW TELEGRAM SARDARJI.
    SUBHAS
    ----------------

    দুটিরই তারিখ ফেব্রুয়ারির একুশ।
    টুকতে গিয়ে কোনো বানান ভুল না করলে এই দুটিই ছিল সেই টেলিগ্রাম। এর পরই দক্ষিণপন্থীরা পদত্যাগ করেন। ১৫ জনের মধ্যে ১২ জন পদত্যাগ করেন। মিহির বোস লিখেছেন পদত্যাগপত্রটি স্বয়ং গান্ধির লেখা। তবে অন্য চিঠি চাপাটিতে আমি সেরকম কিছু দেখিনি। উনিও কোনো সূত্র দেননি।

    পদত্যাগপত্রটির দুটি ভারসান। টেলিগ্রামটি টুকে দিলাম।
    ------------------
    WE REGRET YOUR ILLNESS PREVENTED OUR MEETING HENCE NO OPPORTUNITY PERSONAL DISCUSSION PRESENT SITUATION. UNDER CIRCUMSTANCES WE ALL REGRETFULLY DECIDE RESIGN WORKING COMMITTEE. LETTER RESIGNATION FOLLOWS ALSO GIVING IT PRESS TO AVOID PUBLIC MISUNDERSTANDING AND UNFOUNDED RUMOURS.
    ---------------
    তারিখ ২২। অর্থাৎ পরেরদিন।

    এই টেলিগ্রাম মারফত পদত্যাগ করেছিলেন ১২ জন। ১৫ থেকে ১২ বাদ দিলে পড়ে থাকে ৩। সুভাষ ও শরৎ বাদে তৃতীয়জন হলেন নেহেরু। তিনি যূথের সংগে পদত্যাগ না করে আলাদা বিবৃতি দেন। পরে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য একটি পুস্তিকা লেখেন। তার নাম হু আর উই। দুটিই বড্ড বড়। টোকা মুশকিল।

    এসব মিটে যাবার পর নেহেরু ও সুভাষ এই বিবৃতি নিয়ে পাতার পর পাতা চিঠি লিখেছিলেন। সুভাষ একেবারে ছেলেমানুষের মতো ঝগড়া করেছিলেনই বলা যায়। কাকে বোঝানোর চেষ্টায় ঈশ্বরই জানেন। সে খুব ইন্টারেস্টিং। কিন্তু অত টোকা তো অসম্ভব ব্যাপার।
  • বাদশা | 7823.7.230112.192 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২০79411
  • লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানাই
  • কল্লোল | 342323.191.6712.85 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৩79412
  • এই বিষয় নিয়ে (বাংলা ভাগ ও তার অরিপ্রেক্ষিত) আরও টুকরো টুকরো অনেক লেখা আছে। সে গুলোকে একত্র করে একটা বই হোক।
    এমনিতেও প্রায় কাছাকাছি বিষয় নিয়ে আর একটা বইয়ের কথা ভাবাই হচ্ছে। দুটো বইই ১৫ আগস্ট ২০১৯ প্রকাশিত হোক।
    দ্যাখা যাক না, একটু হৈচৈ লাগনো যায় কি না।
  • dd | 90045.207.4556.16 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪৬79413
  • হ্যাঁ, আমারো মনে হোলো লেখাটা অনেককে পড়ে শোনাই।
  • | 670112.220.9007812.145 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৩৭79414
  • খুব ভাল লেখা, খুবই।
  • | 230123.142.5678.76 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪১79415
  • অত্যন্ত সুলিখিত, নো ফ্রিলস লজিক‌। দীর্ঘদিন ধরে আমরা সৈকতের গদ্যের ফ‍্যান। কিন্তু নতুন তথ‍্য কিছু পাচ্ছি না , নীতিশ সেনগুপ্তের এটাই মেন বক্তব্য। কিন্তু কয়েকটা জায়গা একটু বেশি স্পেকুলেটিভ লাগল।
  • | 230123.142.5678.76 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৫:৫৫79416
  • অমিত দে (অমলেন্দু দে র ছেলে) এর করা ফজলুল হকের পেপার্স আছে , এবং রাজমোহন গান্ধী র মুসলিম মাইন্ডস বলে একটা ব ই আছে, সম্ভব ত ওঁর পিএইচডি থিসিস এর পুস্তক রুপ তাতে ফজলুল হকের একটা প্রোফাইল আছে, মোটামুটি তাঁর পার্টির পজিশন ক্লিয়ার ক‍রা। আগ্রহী রা দেখতে পারেন।
  • Izhikevich | 891212.185.5678.71 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:১৭79407
  • ভালো হয়েছে লেখাটা।
  • T | 561212.112.4578.134 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০২79408
  • দারুণ হয়েচে।
  • অর্জুন অভিষেক | 561212.96.9002312.122 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:০৯79417
  • পড়লাম। পরে মন্তব্য করব। সুলিখিত।

    তবে লেখক Gandhi বানানে ী না দিয়ে ি দিলেন কেন?

    রেফারেন্স হিসেবে আরেকটি বইয়ের নাম বলতে পারি শংকর ঘোষের 'হস্তান্তর' (তিন খণ্ড)।

    এই কিছুদিন আগে গান্ধী সংক্রান্ত বইয়ের রেফারেন্স হিসেবে এক বিখ্যাত ইতিহাসবিদকে (আমার শ্রদ্ধেয় এবং 'গুরু' র একটি বই তিনি গত বইমেলায় উদ্বোধন করেছেন) ত্রিপুরী অধিবেশন প্রসঙ্গ তুলতে বেশ তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বলে ওঠেন ' দূর, দূর, সুভাষকে তো তখন কলকাতার রসগোল্লা '। স্বাভাবিক ভাবেই একটু বিরক্ত বোধ করেছিলাম।

    তারপর এই লেখা বেশ রিফ্রেশিং।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২১79418
  • না তো। নীতীশ সেনগুপ্তয় ত্রিপুরী অধিবেশনের কোনো বিবরণ নেই। পন্থ প্রস্তাবের কথাও নেই। জয়া চ্যাটার্জিও তাই। বস্তুত এঁদের বই পড়লে কারো পক্ষে একটুও আন্দাজ করাই সম্ভব নয়, সুভাষ কেন পদত্যাগ করেছিলেন। মনে হবে কিছু খিটিমিটি হয়েছিল, তারপর আবেগী হয়ে পদত্যাগ। এর পিছনে যে একটা রাজনৈতিক যুদ্ধ ছিল, বৃহৎ বাম কোয়ালিশনের একটা ইতিহাস ছিল, সেটা বোঝার কোনো উপায় নেই এঁদের লেখা পড়ে। বস্তুত বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসকারদের প্রতি এটি আমার সমালোচনা।

    এরকম আরও কিছু জিনিস বাংলার চালু ইতিহাস লেখায় অনুল্লিখিত। আগেও গুরুতেই বোধহয় লিখেছিলাম, কংগ্রেস, মুসলিম লিগ, কেপিপি, ফরোয়ার্ড ব্লকের ফান্ডিং। যে ইঙ্গিতগুলি পাওয়া যায়, তা হল সুভাষ ফান্ডিং পেতেন মূলত মাঝারি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। কেপিপির টাকার উৎস মাঝারি ব্যবসায়ী, ধনী এবং মধ্য চাষী। গান্ধির কংগ্রেস এবং জিন্নার মুসলিম লিগ দুটি আলাদা এবং প্রতিযোগী গোষ্ঠীর বৃহৎ শিল্পপতিদের কাছ থেকে টাকা পেত। গান্ধির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বিড়লা আর লিগের ইস্পাহানি। জয়া চ্যাটার্জি ৪৫-৪৬ সালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছু করেছেন। কিন্তু তার আগে না। অথচ এই টাকার সূত্র উদ্ধার করা এবং দেশভাগের অ্যাজেন্ডার সঙ্গে তার সংযোগ খুঁজে বার করা এমন কিছু কঠিন না। কারণ বৃটিশ গোয়েন্দা দপ্তর এই কাজটি করেই রেখেছে। অথচ সে নিয়ে কোথাও কিছু লেখা চোখে পড়েনা। গোয়েন্দা দপ্তরের নথি আছে এটা আমি জানি, কিন্তু এখনও জোগাড় করতে পারিনি। সম্ভব কিনা জানিনা। পেলেই লিখব। কিন্তু গবেষকরা এটা জোগাড় করতে পারতেন, হয়তো করেছেনও, কিন্তু লেখেননি।

    তার মানে এই নয়, যে, গান্ধির সঙ্গে বিড়লার সংযোগ, বা ত্রিপুরী, এগুলি গোপন তথ্য। কিন্তু ইংরিজি ভাষার চালু ইতিহাসে এসবের অনুল্লেখগুলিই আমার এই লেখা লেখার কারণ। ইংরিজি শব্দটা আলাদা করে উল্লেখ করলাম। সেটা ইচ্ছাকৃত। কারণ ইংরিজিতে ইতিহাস লেখার কিছু ঘরানা আছে। যেমন রামচন্দ্র গুহর ইতিহাস মূলত ভারতীয় জাতিয়তাবাদী ঘরানার। সেখানে দেশভাগের মূল কারণ জিন্না, স্পষ্ট করে না হলেও বক্তব্যের ধরণে সেটা পরিষ্কার। উল্টো দিকে জয়া চ্যাটার্জি কেম্ব্রিজ স্কুলের। দেশবিভাগে হিন্দু ভদ্রলোকের দায় তুলে ধরাই তাঁর অ্যাজেন্ডা। এর কোনোটিই যে মিথ্যে তা নয়, কিন্তু খন্ডচিত্র। প্রতিটি অ্যাজেন্ডায়ই কিছু জিনিস অপ্রয়োজনীয় বলে বাদ দিতে হয়। দেওয়া হয়। এই অনুল্লেখগুলিও তাই।

    এবার, এগুলি ইংরিজিতে লেখা। নানা স্কুল, স্বীকৃতি, ঘরানা এইসব মেনে চলার বাধ্যবাধকতা আছে। যা আমার নেই। আমার ঘরানা অন্য। আমি বাংলা ভাষায় লিখি, মোটে তেরোটি লোক আমার লেখা পড়ে, পাবলিশ অর পেরিশের গল্প নেই। সেটাই আমার জোর। এখানে বাংলা শব্দটাও, ইংরিজির মতো জোর দিয়ে ব্যবহার করলাম, কারণ সেটাই আমার স্বঘোষিত ঘরানা। ত্রিপুরী অধিবেশন, সুভাষ বসুর দেশত্যাগ করা, বাংলার দু-টুকরো হয়ে গোল্লায় যাওয়া এসবে আমার গা কিরকির করে। ফলে এই বিষয়ে কোনো ডিটেলই আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় নয়। এই দৃষ্টিভঙ্গীটি ইংরিজিতে লেখা ডান-বাম-মধ্য কোনো ইতিহাসেই পাওয়া যাবেনা।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৮:২৩79419
  • আগেরটা খ এর কথার উত্তর। অর্জুনের নয়।
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪১79420
  • 'ত্রিপুরী অধিবেশন, সুভাষ বসুর দেশত্যাগ করা, বাংলার দু-টুকরো হয়ে গোল্লায় যাওয়া এসবে আমার গা কিরকির করে'
    - আমারও। সিরিয়াসলি। নেহাত খাটতে ইচ্ছে করে না, আর কলমের জোর নেই, তাই লিখি না।

    দেশভাগ অনিবার্য ছিল না, সাম্প্রদায়িকতা-কেও রোখা যেত - অন্ততঃ বাংলায় , কিছু ঘটনা যদি অন্য রকম ঘটত - এ কষ্ট কখনো যাবে না
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৪৬79421
  • সুভাষের দেশে ফিরে আসা নিয়ে প্রচুর ঠাট্টা তামাশা হয়ে থাকে।
    ৪৬/৪৭-এ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ-কে ঠেকানোর জোর ঐ একজনেরই ছিল, যদি দেশে থাকতেন তখন।
  • Du | 7845.184.0145.60 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৯:৫৫79422
  • উত্তরটা দারুন পছন্দ হইল। ইতিহাসকে সহজে আর বাংলায় পড়তে পাবার দরকার আছে অনেকের, দেশের জন্যও সেটা দরকার।
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:০২79423
  • রামচন্দ্র গুহ, জয়া চ্যাটার্জি - এরা কিছুটা বায়াসড, ঈশানের কথায় মনে হচ্ছে। মূলধারার ইতিহাসবিদ-দের মধ্যে এমন কেউ নেই, যিনি শুধু তথ্যের ওপরই জোর দিয়েছেন, সচেতন চেষ্টা করেছেন যাতে তার লেখায় কোন বায়াস না থাকে?
    মানে প্রকৃত ইতিহাসবিদের যা কাজ, দেশভাগের সময়ের ওপর (খুব বেশি দিন আগের ও নয়, যে তথ্য পেতে অসুবিধা হবে) সেটা করেছেন, এমন কেউ নেই?
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৩৫79424
  • ঈশানের সঙ্গে বহু ব্যাপারে মতবিরোধ থাকলেও এই ইতিহাস ব্যাপারে এক্কেবারে একমত। ইতিহাস খননের প্রয়োজন আছে। প্রচলিত ইতিহাসবিদরা সকলেই কোনো না কোনো ঘরানার লোক। অন্য উপায়ও তো নেই তাঁদের, বই বার করতে অনেককিছুর ভেতর দিয়ে যেতে হয়, স্তরের পর স্তর নানাকিছু শর্ত মেটাতে হয়। একটা কোথাও আটকে গেলেই আর বার হবে না।
  • Ishan | 89900.222.34900.92 (*) | ২১ জানুয়ারি ২০১৯ ১২:৪২79402
  • প্রশ্নের উত্তরঃ
    ১৯৩১ সালের জনগণনা অনুযায়ী বাংলায় মুসলমান সংখ্যা মোটামুটি ৫৪%। হিন্দু ৪৪%। আদিবাসীদের হিন্দু জনসংখ্যায় যোগ করলে সংখ্যাটা ২% মতো বাড়বে। ইউপোরিয়ানদের সংখ্যা ১% এরও কম ছিল।

    সরকারের প্রস্তাবিত বাঁটোয়ারা অনুযায়ী বিধানসভায় আসনসংখ্যা ছিল এই রকমঃ
    মুসলমান ১১৭
    মুসলমান মহিলা ২
    সাধারণ (অর্থাৎ হিন্দু) ৭০
    অনুন্নত (অর্থাৎ আজকের ভাষায় তফশিলী ) ১০
    সাধারণ মহিলা ২
    ইউরোপিয় ১১
    ইউরোপীয় ব্যবসায়ী ১৪
    ভারতীয় ব্যবসয়ী ৫
    জমিদার ৫
    বিশ্ববিদ্যালয় ২
    শ্রমিক ৮
    অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ৩
    অ্যাংলো মহিলা ১

    নির্বাচনের পদ্ধতি ছিল আজকের বিচারে অদ্ভুত। মুসলমানরা মুসলমানদের ভোট দেবেন (হিন্দুরা পারবেননা )। হিন্দু আসনে একই ভাবে হিন্দুরাই ভোট দেবেন, ইউরোপিয়ানরা দেবেন ইউরোপিয়ানদের, জমিদাররা জমিদারদের ইত্যাদি।

    জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন বন্টন হলে মুসলমান এবং হিন্দুদের সংখ্যা হয় ১৩০-১১০ এর মতো। বাকি ১০ অন্যান্য। সে জায়গায় সংখ্যা ছিল ১১৯ - ৮০।

    এটি ইংরেজের আইন অনুযায়ী। এর উপরে প্রযুক্ত হয় গান্ধি-আম্বেদকর পুনা চুক্তি। ইংরেজের আইন অনুযায়ী ৮০র মধ্যে ১০ টি ছিল অনুন্নত সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত। পুনা চুক্তির পরে সেটা হয়ে যায় ৩০। অর্থাৎ অনুপাত দাঁড়ায় এরকমঃ মুসলমান ১১৯, বর্ণহিন্দু ৫০, অনুন্নত হিন্দু ৩০, ইউরোপীয়ান ২৫। বর্ণহিন্দুদের অর্ধেক সংখ্যক আসন পায় ইউরোপীয়ানরা। মুসলমানরা পায় প্রায় আড়াইগুণ।

    এবার প্রশ্ন হল অনুন্নত হিন্দুদের সংখ্যা কত ছিল সে সময়। জনগণনার ক্ষেত্রে ১৯৩১ এ ব্যাপারটা আজকের মতো নির্দিষ্ট করে সংজ্ঞায়িত ছিলনা, ফলে যা পাওয়া যায় সবই এস্টিমেট। বিক্ষুব্ধ হিন্দু উচ্চবর্ণের কারো কারো মতে নিম্নশ্রেণীর সংখ্যা ছিল ৪ লক্ষের বেশি না। আবার সেন্সাস কমিশনের এস্টিমেট ছিল ৬০ লক্ষ। অর্থাৎ জনসংখ্যার মোটামুটি ১% থেকে ১২% (রাফ হিসেব)। সর্বোচ্চ এস্টিমেটটিই যদি নেওয়া হয়, তবে ৮০র মধ্যে সংরক্ষিত আসন সংখ্যার বিচারে হওয়া উচিত ২০। আর পুরোটাই যদি সংখ্যার বিচারে হয়, তো মুসলমান ১৩০, হিন্দু উচ্চবর্ণ ৮০, নিম্নবর্ণ ৩০, অন্যান্য ১০ -- এরকম একটা সংখ্যায় আসা উচিত।

    এই হল পুরো তথ্য।
  • aranya | 3478.160.342312.238 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০৯79426
  • কোনরকম অ্যাজেন্ডা-ই থাকার কথা না। একজন ইতিহাসবিদের শুধু সত্য ইতিহাসের প্রতিই দায়বদ্ধ থাকা উচিত
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৬79427
  • কিন্তু ফান্ডিং আসবে কোথা থেকে? প্রোজেক্ট সম্পূর্ণ করতে ভালো গ্র্যান্ট লাগবে। বই বের করতেও প্রচুর অর্থবল এবং রেপুটেশনওয়ালা বিশ্ববিদ্যালয় সংশিষ্ট প্রকাশক দরকার।
  • b | 562312.20.2389.164 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৪79428
  • ওরকম আনবায়াসড বলে কিছু হয় না। । গবেষণা করে নতুন কিছু বলতে গেলে , যেটা পূর্বসূরীরা বলেন নি (বা যেভাবে ব্যাখ্যা দেন নি), তার ওপরে ঝোঁক পড়বেই। নিজের ভ্যালু জাজমেন্ট ছেড়েই দিলাম।

    পাঠক হিসেবে সেটাকে খন্ডদর্শন হিসেবে মেনে নিয়েই এগোতে হবে।
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ২২ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:২৩79429
  • 'ওরকম আনবায়াসড বলে কিছু হয় না' - বি'কে একটা বড় হাতের ক দিলাম। ঐ অ-ও হয় চন্দ্রবিন্দুইও হয় টাইপের অবস্থান আদতে অশ্বডিম্ব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে প্রতিক্রিয়া দিন