এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • ভোট পর্যালোচনা- ২০১৯, পশ্চিমবঙ্গ

    সোমনাথ রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৯ মে ২০১৯ | ১৬৭৮৬ বার পঠিত
  • ক) ঐতিহাসিক ভুল


    আমরা যে পরিমন্ডলে বড়ো হয়েছি, সেখানে এমন একটি দল আছে, যাকে আমরা বেশ কিছুদিন গিলতেও পারি না এবং ওগড়াতেও পারিনা। সেই দলটি ঐতিহাসিক ভুল করে থাকে। প্রধানমন্ত্রিত্ব বিতর্ক থেকে নাগেরবাজার প্যাক্ট বিভিন্ন নিদর্শন তার। তবে দলের মাথারা আত্মসমালোচনা করেন। নিজের সমালোচনা নিজে করার একটা সুবিধের দিক হল তাঁদের অন্যের সমালোচনা স্বীকার  করতে হয় না। ফলে এই দলটির ব্যাপারে আমাদের আর কিছু তেমন এখন বিশেষ লিখে লাভ নেই। তাও শুরুতে গণেশপুজোর মতন রাখা রইল। বাকি উপাচারে এতদাধিপতয়ে শ্রীবিষ্ণবের মতন ফুল দেব মাঝে মাঝে।


    খ) সংঘ নাকি সংগঠন


    যেহেতু আলোচনা পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে আর এই বক্তব্য লোকসভা ভোটের শোকসভায় পাঠের জন্য পাঠানো হচ্ছে, ফলতঃ সুরতহালে কী এল জানতে চাইব বৈ কী! প্রথমে দেখার এই ১৮র ৪২ কি সংঘের কেরামতিতে হতে পারে? সংঘ পরিবার, হিন্দুত্ববাদী এই গোষ্ঠীটি বাংলায় বহুবছর ক্রিয়াশীল, বাকি ভারতের মতন। তবে মধ্যিখানে বাম আন্দোলনের ঘনঘটায় এদের টার্গেট অডিয়েন্স অন্য রেখায় প্রতিসৃত হয়েছিল। কিন্তু কলকাতাকেন্দ্রিকতা থেকে অফ ফোকাস বিভিন্ন অংশে গোকুলে বেড়েছে অবশ্যই। আর, দুম করে ভোটে জেতার থেকে বেশি কিছু তাদের লক্ষ্য থাকায় সামাজিক কাজকর্মে অংশীদার হওয়ার কাজ চালিয়ে গেছে। বিশ্বায়নের আগে আমরা মণিমেলা দেখেছি, বিজ্ঞান জাঠা দেখেছি, এমন কী পাড়ার ক্লাবগুলোর সক্রিয়তা দেখেছি। এখন সেই জায়গায় পোটেনশিয়াল অর্গানাইজাররা অর্কুট-ফেসবুক-টিন্ডার-হোয়াটস অ্যাপ করেন। ফলে সামাজিক পরিসরে সংগঠন ডুবে গেছে, সংঘের আলো উজ্জ্বল হয়েছে। হালে সরস্বতী বিদ্যামন্দির লোকের চোখে টোখে পড়ছে, কিন্তু সক্রিয়তা এক মাত্রায় বহুবছর ধরে থেকেছে। এই দিয়ে ভোটে জেতার সবটা হয়েছে মনে হয় না, কিন্তু কিছুটা হয় নি এমন নিশ্চয়ই নয়। সঙ্ঘারামে নিশ্চিতভাবে সংগঠনের ভিতপুজো হয়েছে। তাহলে বাকি থাকে সংগঠন। একটি সংগঠন ভালো চললে তার ভোট বাড়ে। বিশেষতঃ নতুন খেলতে নামা দল জেতে আর পুরোনো দল হারে ডিফেন্স-মিডফিল্ড-ফরওয়ার্ডের অর্গানাইজেশনের তারতম্য ঘটিয়েই। তার মানে ২ থেকে ১৮য় হেভি অফেন্স। ৩৪ থেকে ২২ এ ডিফেন্স ঝুলেছে, যতই ভোটভাগ বাড়ুক টাড়ুক না কেন। বল পজেশন তখনই কাজের যখন তা গোলে বাড়ে।  মনে রাখা দরকার, আমরা ২৩৫, ওরা ৩০ এর ভোটেও ৩৫% এর বেশি ভোট ওদের ভাগে ছিল।  ভোটকে সিটে পরিণত করার মধ্যে সাংগঠনিক কেরামতি থাকে।


    সিপিএমের ভাগে ২ থেকে শূন্য নিয়ে বেশি কিছু বলব না। তবে প্রকৃতি শূন্যস্থান পূরণ করে বলে শিশুবিজ্ঞানে লেখা ছিল। এটুকু খেয়াল করা অবশ্য যেতেই পারে যে ২০০৯এ বামশক্তি যে ১৬টি আসনে জিতেছিল, তার ১১টি এবার বিজেপির ভাগে পড়েছে। উল্টোদিকে দেখি  ২০০৯এ পাওয়া আসন, যা বিজেপি তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ২০১৯এ, তা হল হুগলি, ব্যারাকপুর, বনগাঁ আর রানাঘাট। এর মধ্যে ব্যারাকপুর আসনটা দ্রষ্টব্য, সেখানে তৃণমূলের সংগঠনের মূল লোকটি বিজেপিতে গিয়ে জিতেছেন। বনগাঁ আর রানাঘাটে নাগরিকত্ব বিলের ইস্যু ছিল, যা নিয়ে আমরা পরের পর্বগুলিতে আলোচনা করছি। ফলে বিজেপির ভোট এবং আসন দুইই বেড়ে যাওয়া, স্থানীয় সরকারে ক্ষমতাসীন দলের নাকের ডগা থেকে মার্জিনাল ভোটে একাধিক লোকসভা আসন বের করা, প্রার্থী প্রচার করতে পারেন নি, এমন জায়গাতেও ফল উলটে দেওয়া- এইসবই সাংগঠনিক কৃতিত্ব হিসেবে দেখা উচিত।


    গ) আইটি সেলের ভাইটি


    তিনি আমাদের হোয়্যাটস অ্যাপ করে গেছেন। আমরা প্রথমে পড়ি নি, তারপর খুলে দেখেছি মমতা ব্যানার্জির কার্টুন, তারপর স্কুলমেটদের গ্রুপে ফরওয়ার্ড করেছি। তারপর একদিন ট্রেনের তাসের আড্ডায় বিশরপাড়ার রবি বলেছে মেটিয়াবুরুজে অপহরণ নিয়ে একটা হেভি প্রতিবেদন এসেছে, সব কাগজ চেপে যাচ্ছে। বলেছি ফরওয়ার্ড করে দে তো। এই ভাবে বিছন থেকে দই জমেছে। কিছুক্ষণ আগে, আমার অফিসের এক সুইপার দেখলাম আরেকজনকে তার ফোন থেকে রাজনৈতিক খবর পড়ে শোনাচ্ছেন। দ্বিতীয়জনের কাছে স্মার্টফোন নেই মনে হল। তো হোয়াটস অ্যাপের ফরওয়ার্ড আমরা কাকে পাঠাচ্ছি আর কার থেকেই বা পাচ্ছি? কার থেকে নয়? পিসতুতো দিদি-সহকর্মী-মুদির দোকানমেট-স্কুলের বন্ধু ইত্যাদি, প্রভৃতি। আমাদের চেনা লোকজনই এগুলো পাঠাচ্ছে, যাদের রাজনৈতিক আনুগত্য-টত্যও নেই, মিডিয়াওলাদের মতন খবর বেচে খাবার জোটানোর দায় নেই। টিভিতে এক বিশেষ-অজ্ঞ এসে গাঁক গাঁক করে বলে গ্যালো- এন আর সি হওয়ায় নাকি আসামে হিন্দুরাই ক্যাম্পে ঢুকছে, তাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে নিশ্চয়ই তৃণমূলের কমিটিতে আছে, আমি হোয়াটস অ্যাপ পেয়েছি সীমান্ত থেকে যে সব লস্কররা ঢুকে আশেপাশের বস্তিতে থাকছে, এন আর সি হলে তাদের চুন চুনকে তিহার জেলে পোড়া হবে। আমার ভায়রা আমাকে পাঠিয়েছে, সে তৃণমূল বা বিজেপি নয় বরং বামমনস্ক। এইভাবে সাইবার স্পেসে, আমাদের নিজস্ব আলাপচারিতায় এমন এক সংগঠন গড়ে উঠেছে যেখানে নম্বর দিলে বিজেপি ৯৫ তৃণমূল -২০ আর মমতা ব্যানার্জির মিম বানিয়ে সিপিএম সেখানেও বিজেপির খাতায় বাকি ৫ নম্বর উঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু, কথা হল হোয়াটস অ্যাপ কার থেকে পাই? কাকে পাঠাই? আইটির ভাইটি কে বা কারা আমি জানিনা, কিন্তু তাঁর কাজ ভাইরাল হয়ে আমার কাছে আসে আমার চেনাশুনো লোকের থেকেই, পাঠাই ও তাদেরকেই। চেনাশুনো লোক আমাদের জন্য তারাই যাদের সাথে দেখাশোনা হয়। আশেপাশের লোক, এই শহর বা গঞ্জের, নইলে ট্রেনে একটা দুটো স্টেশন, বাসে কুড়ি মিনিট দূরে থাকে এরকম। ফলে এক ভৌগোলিক পরিসরে এই সাইবার স্পেস ক্রিয়ারত থাকে। হোয়্যাটস অ্যাপের সাংগঠনিক ক্ষমতাও ভৌগোলিক। মাটিতে চলা সংগঠন তার কর্মীদের হাত ধরে বুথ-ওয়ার্ড-পঞ্চায়েত-ব্লক ধরে গড়ে ওঠে, শক্তিশালী হয়, শক্তি ক্ষয়ও করে। মেসেঞ্জার-হোয়্যাটস অ্যাপের স্মার্ট সংগঠন, স্থানীয় কর্মীর ভূমি ঊর্ধ্বে ভোটের প্রচার চালিয়ে গেছে সেই ভৌগোলিক পরিসরেই, মূলতঃ।


    ঘ) ভৌগোলিক ঠিক




    চিত্র ১- বিধানসভা ভিত্তিক এগিয়ে থাকার হিসেব (লাল- বিজেপি, নীল- তৃণমূল)


    চিত্র ১ -এ রাজ্যের লোকসভা ভোটের ফল রাখা রইল।  একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে, তার মূল কারণ বিধানসভা কেন্দ্রে কে এগিয়ে সেই হিসেব ধরে এই ম্যাপপয়েন্টিং করা হয়েছে। এছাড়া কংগ্রেসের এগিয়ে থাকা বা  কংগ্রেস সিগিনিফিকেন্ট এই এলাকাগুলি আমরা ম্যাপে সাদা রেখে গেছি ধরিনি ( নির্দিষ্ট করে- মালদার দুটো লোকসভা আর বহরমপুর), আর মূল ম্যাপে গা ঘেঁষাঘেঁষি ব্যারাকপুর আর হুগলি কেন্দ্রের বিধানসভাগুলি ভালো করে বোঝা যাচ্ছিল না (এই অঞ্চল জনগনত্বে পৃথিবীর সামনের সারিতে)। মোটের ওপর নীল রঙে তৃণমূলের জেতা আর লাল রঙে বিজেপির জেতা বিধানসভা দেওয়া আছে। যেটা দেখার, উত্তরবঙ্গে দুটো আর দক্ষিণবঙ্গে দুটো নীল প্যাচ ছাড়া, বাকি সমস্ত লাল বা নীল দাগ দলাবেঁধে আছে , মানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল ধরে হয় টানা বিজেপি এগিয়ে, নতুবা তৃণমূল। এই চারটে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া জায়গা নিয়ে আমরা পরে কথা বলব।


    কিন্তু মূল ট্রেন্ড যেটা বিজেপি যেখানে এগোচ্ছে সেখানে আশেপাশের বেশ বড়ো অঞ্চল ধরে বিজেপি এগোচ্ছে, অঞ্চলগুলো এত বড়ো যে তার মধ্যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী, বিভিন্ন ধর্মগোষ্ঠী শহর-গ্রাম ইত্যাদি পড়ছে, মানে ধরুন দেড়খানা বা তিনখানা জেলা ধরে একটা বিজেপি জেতা পরিসর। আবার তৃণমূলও তাই। এই জেতার পরিসরটা একাধিক লোকসভাকে কাটছে। ধরুন ব্যারাকপুরের মধ্যে আমডাঙা তৃণমূল এগিয়ে তার পাশে খড়দা, অশোকনগর, বারাসত অন্য লোকসভাতে হলেও তৃণমূল জিতছে। দমদম আর বারাসতের দুটো বিজেপি বিধানসভা যথাক্রমে রাজারহাট গোপালপুর আর বিধাননগর- গায়ে গায়ে। আবার ঘাটালের ডেবরাতে বিজেপি এগিয়ে তার পাশেই তো পাঁশকুড়া পশ্চিম আর মেদিনীপুর বিজেপির থাকছে। এই ধারাটা গোটা রাজ্য জুড়েই প্রায়। এর উত্তর অধীর চৌধুরীর পকেট দিয়ে হয়। সেখানে কংগ্রেসের খুব ভালো ভোট সব বিধানসভায়, সাতটার চারটেতে এগিয়ে, বাকিগুলোতেও এত ভালো যে কংগ্রেসের ভোট বলে মনেই হয় না, আর তার কারণ কংগ্রেসের অসাধারণ সংগঠন আছে ঐ অঞ্চলে। অধীরবাবুর নিজস্ব সংগঠন। অর্থাৎ, সংগঠন, যা অঞ্চল ভেদে শক্তিশালী হয়, তা যেখানে প্রতিপক্ষের তুলনায় মজবুত, সেখানে মোদি হাওয়া, সারদা দুর্নীতি, টাকা খাটানো সব তুচ্ছ করে জয় এনেছে। নইলে পুরো দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জুড়ে তৃণমূল সব বিধানসভায় এগিয়ে, আর সারদায় ক্ষতি তো ঐ জেলাতে প্রচুর। দক্ষিণ চব্বিশে তৃণমূলের এমন সংগঠন যে ডিএ পেকমিশন ব্যর্থতার পরেও ডায়মন্ড হারবারে পোস্টাল ব্যালটে তৃণমূল এগিয়ে থাকে! তৃণমূল যেখানে ভালো রকম পিছিয়ে সেখানে ১০ বছর আগের ভোটেও সেই অবস্থায় ছিল। বাঁকুড়ায় ২০০৯এ ৩৬% ভোট ছিল, মেদিনীপুরে ৪২%। এখনও কিমাশ্চর্য তাই হয়ে গেছে। অনুরূপ হিসেব বালুরঘাট, বিষ্ণুপুর কিম্বা আসানসোলেও। বামপন্থীদের সংগঠন প্রবলতর ছিল ২০০৯-এ (তখন ভাঙন শুরু হয়ে গেছে), এখন একদমই অনুরূপ প্রাবল্য বিজেপির। তৃণমূলের সংগঠন যেখানে ২০১১র পরে গড়ে উঠেছে সেখানে সেখানে সেটি দুর্বল এবং বিজেপি সম্ভবতঃ পূর্বতন শক্তিশালী অন্য একটি সংগঠনের কাঠামো ধরে এগিয়েছে। ফলে সেখানে তৃণমূলের ভোট ২০০৯-এর হিসেবে প্রায় আটকে আছে এবং বিজেপির ভোট ২০০৯-এ বামদলের ভোটের সমান হয়ে গেছে। আর, আগে যা বলেছি, ২০০৯-এ বামশক্তির জেতা লোকসভা আসনের ১৫র ১১ টিতে এবার বিজেপি জিতেছে। বাকি ৪টি আসন যা তৃণমূল এবার পেয়েছে সেগুলি হল- আরামবাগ (১০০০+ ভোটে কোনও ক্রমে জেতা), পূর্ববর্ধমান, ঘাটাল ও বোলপুর।  তৃণমূলের সংগঠন বীরভূমে অনুব্রত মন্ডলের হাতে শক্তিশালী হয়েছে। ঘাটালে নির্ণায়ক হয়েছে কেশপুর বিধানসভা, ৭৮০০০ ভোটে এগিয়ে দিয়ে। কেশপুরে তৃণমূলের সংগঠন নিয়ে আমরা গত দুদশক ধরে শুনে আসছি। তাছাড়া সংগঠন তো শুধু একটা ব্লকে আটকে থাকে না, আশেপাশের ব্লকেও ছড়ায়। তাই, আশেপাশের বিধানসভাতেও যথাক্রমে লাল বা নীল রঙ ধরছে।


    এই যে বিন্যাসটা, যেখানে তৃণমূল এগিয়ে সেটা এবং তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নীল আর যেখানে বিজেপি এগিয়ে, আশেপাশের অঞ্চল লাল, যাদের জ্যামিতির পরিভাষায় হয়ত বা ম্যানিফোল্ড হিসেবে দেখা যাবে, সেটা এই নির্বাচনের মূল ধারা। একটা মাপক হিসেবে এখানে ভোটে জেতাকে ধরা হয়েছে, শুধু জেতা হারা দিয়ে অবশ্য সবটা ব্যাখ্যা হয় না। কিন্তু, লক্ষ্যণীয় বিষয় যেখানে একটি ম্যানিফোল্ডের সীমানা আর আরেকটি শুরু, তার কাছাকাছি দিয়ে একদলের ভোট শেয়ার কমে আসছে আরেকজনের বাড়ছে এরকম। অর্থাৎ একটা ভূমিগত বিন্যাসের ধারা মেনে ভোট ভাগ হচ্ছে, বিশেষতঃ বিজেপি আর তৃণমূলের মধ্যে। লোকসভা কেন্দ্রের বদলে বিধানসভা কেন্দ্রের নিরিখে ম্যাপ দেওয়া এইটা বুঝতেই যে এই ম্যানিফোল্ড-গুলি স্থানীয় সাংগঠনিক শক্তির হেরফেরে ভোটের ফলাফলের পরিণতির ইংগিতই দিচ্ছে। আমাদের হাতে বুথ ভিত্তিক তথ্য নেই, কেউ পেলে করে দেখতে পারেন সেইখানেও এই বিন্যাস দেখা যাচ্ছে কী না!


    ঙ) মিথ-মিথ্যে-মিথোজীবিতা


    বলা হচ্ছে এস সি ও এস টি রা তৃণমূলের দিক থেকে সরে গেছে। আমরা মালদা মুর্শিদাবাদ বাদে ৬৪টির মত এস সি সংরক্ষিত বিধানসসভা দেখলাম, তার ৩১টিতে তৃণমূল এগিয়ে।  যে এস সি বিধানসভাগুলি বনগাঁ রানাঘাট বা আলিপুরদুয়ারে গায়ে গায়ে লেগে আছে, সেইগুলির প্রায় সবকটিতেই বিজেপি এগিয়ে। তার আশেপাশের অসংরক্ষিত বিধানসভার ট্রেন্ড রঙ ও কিন্তু অনুরূপ। আবার যে সংরক্ষিত আসনগুলি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায়, তার সবগুলিতে তৃণমূল এগিয়ে। অর্থাৎ তপশিলি জাতিভুক্ত মানুষের আধিক্য সংশ্লিষ্ট বিধানসভাগুলিতে আলাদা করে ফলের তারতম্য ঘটাচ্ছে না, এবং সারা বাংলা জুড়ে তপশিলি জাতির আলাদা করে বিজেপিকে বেছে নেওয়ার সাধারণ কোনও রীতি এই ভোটে উঠে আসেনি। তবে, একথা অনস্বীকার্য যে রাণাঘাট আর বনগাঁয় বেশিরভাগ বিধানসভাই তপশিলি সংরক্ষিত। এবং গত দুটি লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে বিপুল সমর্থনের পরে এইখানকার মানুষ এবার বিপুলভাবে বিজেপির সঙ্গে গিয়েছেন। তার পিছনে একটা বড় ফ্যাক্টর অবশ্যই নাগরিকত্ব বিলের প্রতিশ্রুতি। আসামের এর আর সি-র উদাহরণ হাতের সামনে থাকলেও সেখানে বিজেপির প্রচারকে কাউন্টার করতে পারে নি বাকি দলগুলি। এছাড়াও আগে আলোচনা করা সংগঠনের শক্তির তারতম্যের ব্যাপারটা এসেই যাবে। রাণাঘাটের কৃষ্ণগঞ্জে একটি বিধানসভা উপনির্বাচন হয়েছিল এইবারই। সেখানে পূর্বের তৃণমূল এম এল এ-কে হত্যা করা হয়, সন্দেহের তীর বিজেপির দিকে থাকে। প্রায় সমস্ত প্রিসিডেন্স সরিয়ে রেখে সেই আসনে বিজেপি জেতে! দলিত এম এল এ হত্যা যেখানে জাতীয় রাজনীতিতে নির্ধারক পয়েন্ট হতে পারত, সেখানে সেই আসনের উপনির্বাচনেই সেই এম এল এ-র দল হেরে যায়, এ সাংগঠনিক বিচ্যুতি ছাড়া হতেই পারে না।


    যাই হোক, আমাদের চিত্র-১ এ চারটে পকেট আছে, যা তৃণমূলের দিকে থাকা বিধানসভা, চারদিক থেকে বিজেপি দিয়ে ঘেরা। উত্তরবঙ্গে সিতাই ও রাজগঞ্জ, দুটোই এস সি। দক্ষিণে মানবাজার ও বিনপুর, দুটিই এস টি। এর কাছাকাছি দুটো বিজেপির জেতা এস টি বিধানসভা রায়পুর ও রানিবাঁধ, যেখানে তৃণমূলের পিছিয়ে থাকা এবং সিপিএমের প্রাপ্ত ভোটের হিসেব মিলে যায়।


    এবার, তপশিলি উপজাতি সংরক্ষিত সিটের হিসেব যদি দেখি- ১৫ টির ৩ টি তৃণমূল পেয়েছে। অর্থাৎ এখানে একটা শক্তিশালী ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে যে তপশিলি উপজাতির মানুষজন বিজেপিকে বেছে নিচ্ছেন। তবে এর মধ্যে লক্ষ্যণীয়, ঐ পূর্বোল্লিখিত দুটি পকেট বাদ দিয়ে আর যে এস টি আসনে  তৃণমূল এগিয়েছে, সেই সন্দেশখালির আশেপাশের সব আসনই কিন্তু তৃণমূলের। আবার বাঁকুড়া-পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রামের এস টি আসনগুলির আশেপাশে সব আসন প্রায় বিজেপির। তবে, এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে তপশিলি উপজাতির মানুষ তো আর শুধু সংশ্লিষ্ট বিধানসভাতেই থাকেন না, আশেপাশে ছড়িয়ে থাকেন আর তাঁদের ভোট অঞ্চলের অন্যান্য বিধানসভাতেও প্রভাব ফেলেছে।


    এইখানে একটা মিথোজীবিতার তত্ত্ব আনা যায়। মানুষ একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রদায়, পেশা ব্যতিরেকে একে অন্যের সঙ্গে আদানপ্রদান করে। আমার প্রতিবেশী কী ভাবছে, বাজারের সবজিওলা কী বলছেন, ছেলের গৃহশিক্ষক কী চাইছেন এইসব আমার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে। আর, এই হাইপোথিসিসকে আমরা রাখছি আরেকটা হাইপোথিসিসের প্রতিতুলনায়। সেটা হল যে- মুসলিম ভোট প্রায় সর্বাংশে তৃণমূলে গেছে এবং সেইটাই তৃণমূলকে যেটুকু অক্সিজেন দেওয়ার দিয়েছে। বাংলার মুসলিম জনশতাংশ সবচেয়ে বেশি, দুটি জেলায়- মালদা আর মুর্শিদাবাদ। জনবসতির ৫০% এর বেশি মুসলমান। তার মধ্যে মালদায় একটিও আসন তৃণমূল পায় নি, মুর্শিদাবাদে তিনটির দুটি আসন পেয়েছে। আরও একটি মুসলিম সংখ্যাগুরু জেলা উত্তর দিনাজপুর। এখানে মুসলিম ৪৯% এর বেশি। এই জেলার ৯টি বিধানসভার ৫ টিতে তৃণমূল এগিয়ে, চারটিতে বিজেপি। এবং কোনও আসনেই ৪৯% এর কাছাকাছি ভোট তৃণমূলের নেই বরং কয়েকটি আসনে কংগ্রেস-সিপিএম ভালো ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ, মুসলিমরা সংখ্যাগুরু এমন অঞ্চলে তৃণমূলকে তাঁরা সম্প্রদায় বেঁধে ভোট দিয়েছেন এরকম মোটেই নয়। এরপরে যে দুটি জেলায় মুসলিম বসতি বেশি, মানে ১/৩ এর বেশি, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা এবং বীরভূম, দুটিতেই লোকসভার সব আসন তৃণমূলের, বিধানসভার প্রায় সব আসনও। দক্ষিণ চব্বিশের প্রায় সমস্ত বিধানসভায় ৫০% এর বেশি ভোট তৃণমূলের, কোথাও কোথাও তা ৭০-৮০ ছুঁয়েছে। এর মধ্যে তপশিলি জাতি অধ্যুষিত বিশাল এলাকাও রয়েছে। সিপিএম কংগ্রেসের ভোট অনেক কম, এস ইউ সি আইয়ের গড় যে দুটি কেন্দ্র, সেখানে উল্লেখযোগ্য ভাবে বিজেপির ভোট বেশ কিছুটা বেশি। বীরভূমেরও বহু কেন্দ্রে ৫০%এর বেশি ভোট তৃণমূলের। অর্থাৎ এই সমস্ত কেন্দ্রে ভোটের সোজা ধর্মীয় বিভাজন হয় নি, মুসলিম ভোট তৃণমূল আর হিন্দু ভোট বিজেপি এমন ভাবে ভোট ভাঙে নি। বরং উলটো ইংগিত পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে সেখানে ২০-২৫% মুসলমান, যেমন বর্ধমান হাওড়ার বিধানসভাগুলি, তার অনেকগুলিতে তৃণমূলের ভোট বেশ ভালো এসেছে, ৫০%এর কাছাকাছি। আবার উত্তরবঙ্গে ঐধরণের মুসলমান বিন্যাসে তৃণমূলের ভোট অত ভালো হয়ও নি। উত্তর চব্বিশ ও নদীয়ায় মিশ্র ফল, বিভিন্ন অঞ্চলে। এর মধ্যে যেখানে তৃণমূলের ভোট ভালো, সেখানে তপশিলিপ্রধান আসনেও তৃণমূল অনেকটা এগিয়ে। আবার সেটা হচ্ছে না বলে উত্তর চব্বিশ পরগণা ও নদীয়ার কিছু এলাকায় ফল ততটা ভালো হচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরে ১০% মুসলিম, সেখানে একটি আসন তৃণমূল পাচ্ছে। একদমই পাচ্ছে না বাঁকুড়া পুরুলিয়া দার্জিলিং এ, সেখানে মুসলিম জনশতাংশ দশের নিচে।


    বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা মুসলিমদের কাছে ভালো নয়, এখন অবধি এটা প্রতিষ্ঠিত। ফলে মুসলিম ভোট বিজেপির বিরুদ্ধেই যাওয়ার সম্ভাবনা। যে অঞ্চলে মুসলিমরা সংখ্যাগুরু, তাঁরা একাধিক দলকে বিজেপির বিরুদ্ধে বেছে নিচ্ছেন। যে অঞ্চলে সংখ্যালঘু কিন্তু উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছেন, সেখানে সম্ভবতঃ তৃণমূলকে বেছে নিচ্ছেন এবং মুসলিমদের বিজেপিজনিত আশংকা একভাবে তাঁদের প্রতিবেশী হিন্দুকে প্রভাবিত করছে, তাঁদের ভোট একতরফা বিজেপিতে যাচ্ছে না। বরং তৃণমূল আরও কিছুটা এগিয়ে যাচ্ছে। তপশিলি জাতির ভোটেও সেই প্রভাব আসছে। ব্যতিক্রম মতুয়া অঞ্চলগুলি, সেখানে নাগরিকত্ব ইস্যুতে তপশিলি ভোট একধারে বিজেপিতে গিয়েছে, হিন্দু-মুসলিম মিথোজীবিতার তত্ত্ব টেঁকে নি। যেখানে মুসলিম নেই, সেখানে বিজেপির মুসলিম-বিরোধিতার অভিযোগ তার ভোট হিন্দুদের কাছেও কমায় নি, কারণ হিন্দু জনগণ প্রতিবেশীর সহমর্মী হতে পারে নি।


    এর উল্টোদিকে আসছে তৃণমূলের মুসলিম তোষণ, ইমামভাতা প্রভৃতি 'পশ্চাদপট' জনগণের মধ্যে তার ভোট বাড়িয়েছে, কদিন বাদে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি হবে রাজ্যে। মুসলিম ধর্মীয় রাজনৈতিক দল এসে এই ভোট নিয়ে তৃণমূলকে অপ্রাসঙ্গিক করে দেবে এই সব বক্তব্য। বিজেপির পাশাপাশি বাম-লিবারেলরাও যার প্রচারে নেমেছেন। কমরেড নরেন্দ্র মোদী তো বলেইছেন, মানুষ দুধরণের- যাঁরা ওনাকে সমর্থন করেছেন আর যাঁরা ওনাকে সমর্থন করবেন। কিন্তু ধর্মীয় ভোট বিভাজনের জনপ্রিয় হয়ে ওঠা তত্ত্ব ১০-৩৫% মুসলিম জনবহুল এলাকায় বহুলাংশে তৃণমূলের ৫০% বা তার বেশি ভোটের হিসেব মেলায় না। হিন্দু-মুসমিল সম্পর্ককে শুধুমাত্র বৈরিতার আলোয় দেখলে হিসেবে অনেকটা ফাঁক থেকে যাবে।


    চ) নটেগাছ


    নোটের গাছি ছাগলে খেয়েছিল কিন্তু তা সত্তেও দেশব্যাপী বিরোধী হাতে পেনসিলও প্রায় রইল না। আরবান এলিট নোটাবিপ্লবীরাও উড়ে গেলেন মোদি হাওয়ায় আর গ্রামে বন্দরে তো কথাই নেই। পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেক কিছুর সাথে ঝামরে পরল সেই হাওয়া। কিছু রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টালো। একমাত্র যে সব জায়গায় (দাগ দিয়ে আবার বলা, জায়গা, অঞ্চল, ভৌগোলিক বিভাজন) তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী, হাওয়া বাঁক নিল সেখানে এসে। চলে গেল সেইসব জায়গায়, যেখানে তৃণমূলের সংগঠন শক্তিশালী নয়, নতুন এবং বামপন্থীদের সংগঠন যেখানে কদিন আগেও শক্তিশালী ছিল। এর পাশাপাশি এল সংঘের হাতে গড়ে ওঠে বিজেপির সংগঠন, যা আদিবাসী অঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। বিজেপির সংগঠন সম্ভবতঃ বাম সংগঠনের জীর্ণানি বাসাংসিতে পুনঃ প্রাণিত হল। এই লেখাটির সংশোধনপর্বে বন্ধুরা বললেন তৃণমূলের দুর্নীতি, অগণতন্ত্র, বিরোধীদের উপর অত্যাচার এই বিষয়গুলি পর্যালোচনা করতে। কিন্তু, আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারদা উপদ্রুত দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় একাধারে তৃণমূল জিতছে, অনুব্রত মন্ডলের পাঁচনবাড়ির হুমকি সত্তেও বীরভূমে জিতছে, আবার উন্নয়ন হয়েছে লোকে মেনে নিলেও ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়ায় হারছে। মুকুল রায়ের হাত ধরে মমতার সরকারের থেকে অধিক উন্নয়ন হবে, সৌমিত্র খাঁ বা অর্জুন সিংহ দল বদলানোয় তাঁদের পারফরমেন্স পালটে যাবে, এ মনে হয় সাধারণ ভোটাররা বিশ্বাস করেন না। তবে যেখানে বিজেপির সংগঠন বেশি সক্রিয় হয়েছে সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জনমত ভোটবাক্সে পড়ার বন্দোবস্ত করা গেছে। অন্যত্র, যেখানে তৃণমূল শক্তিশালী, স্থানীয় মানূষের অভাব অভিযোগকে ভোটে নির্ণায়ক হতে দেয় নি। এ কথা অনস্বীকার্য, ছোট স্তরের নেতার দুর্নীতি অত্যাচার সারদা বা রাফালের থেকে কম প্রভাব ফেলে না মানুষের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে, কিন্তু সংগঠনের স্ট্রাকচারটি ক্রিয়াশীল থাকলে, সেইগুলিকে অ্যাড্রেস করা বা তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ হয়ে যায়।


    তাই, ধর্ম নয়, মতাদর্শ নয়, উন্নয়নও নয়,  ম্যাচ শেষে দেখা গেল জিতল সংগঠনই, কারণ ভোট হয়ে যায় না, ভোট করানো হয়- যুদ্ধের মতনই।


    ছ) কী করিতে হইবে


    আমাদের কথা কেউ শোনে না। তাও এত কিছু লেখার পর একটু উপদেশ-সার ও লিখে যাই। এমনিই তৃণমূলকে আজকাল সকলেই বলে যাচ্ছে কী কী করা উচিত। আমরা বরং বলব, তৃণমূলের কী করিতে হইবে না! যেটা ২০০৯ এ সিপিএম করেছিল, সেইটা না করলেই মনে হয় হবে। স্থানীয় স্তরে সংগঠনকে ধরে রাখা আর মজবুত করা ছাড়া আর খুব কিছু করার নেই। আত্মসমালোচনার বদলে অন্যের সমালোচনা বিচার করে সেই অনুসারে কাজ করা, স্থানীয় রাজনীতির সুবিধা ভেবে রাজ্য রাজনীতি চালানো, ইত্যাদি। সব দোষ নিচুতলার কর্মীদের একাংশের নামে না চালিয়ে, নিচুতলার কর্মীদের পাশে উঁচুতলার দাঁড়ানো। কিছু নেতা বিজেপিতে যাবে, কিছু জেলেও হয়তো বা যাবে। কিন্তু অঞ্চল ধরে রাখার কাজে সরকারের সাহায্য এক্সটেন্ড করতেই হবে, অন্ততঃ ২০২১ অবধি। একচুয়ালি  মমতা ব্যানার্জি সরকারের বদলে পার্টিতে মন বেশি দিলে ভালোই হবে। ভোট শুধু সরকারি প্রকল্প দিয়ে আসে না। ডিএ মাইনর ইস্যু, তবে সরকারি চাকরিতে, স্কুল কলেজে নিয়োগ দরকার। সংগঠনের সার ওখানে জমে।


    আর বিজেপিকে? ২০০৯ এর পর তৃণমূল যা করেছিল, তাই। লোকের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখা। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প ইত্যাদি পাওয়ানো। বাংলা থেকে মন্ত্রী। বুদ্ধিজীবীদের চাকরি দেওয়া থাকলে কিছু উটকো ঝামেলা কম হয়, সেইসব।


    আমাদের? গ্যালারি আসলে খেলারই অঙ্গ। ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট কাটিয়ে খোরাক নিন। সব কিছুই আসলে ঘণ্টাখানেক সঙ্গে সুমন। আর, নাহলে মাঠে নেমে ইস্যুভিত্তিক লড়াই করুন, কিম্বা আইটি সেলের মতন ব্যক্তিগত মেসেজ ভাইরাল করার উপায় করুন। আমার মতন আত্মপ্রসাদ পেতে চাইলে আলাদা কথা, নতুবা ফেসবুকে বেশি লিখবেন না, ও কেউ সিরিয়াসলি নেয় না।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৯ মে ২০১৯ | ১৬৭৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 9003412.218.0145.104 (*) | ১১ জুন ২০১৯ ০৯:০১78547
  • হীরক রানী আবার আজকে বিদ্যাসাগর এর মূর্তি নিয়ে পদযাত্রায় নামার সুযোগ পেয়েছেন। আর দেখে কে।
  • sei | 456712.100.6723.66 (*) | ১১ জুন ২০১৯ ০৯:৩২78548
  • বিজনবাবু সেখানেই গেছেন মনে হচ্ছে।তাই আজ কোনো পোস্ট নেই ওনার।
  • dc | 232312.174.345612.142 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০১:১২78560
  • জ্যোতি বসু নাকি বেল ভিউ আর আমরি তে চিকিত্সা করাতেন পাছে হুস্কি খেয়ে খেয়ে লিভার খারাপ হওয়ার খবর প্রকাশ হয়ে যায়। এরকম একটা রটনা আছে নাকি, সত্যি মিথ্যে জানিনা বাপু।
  • মানিক | 78900.84.6767.126 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০১:১৬78561
  • হুস্কি খেয়ে লিভার খারাপ করাটা একটা বাংলাবিরোধী ব্যাপার। যাঃ, তুই সেই দুলাখ টাকা পাবি না।

    দ্যাকেলা।
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০১:৪৪78562
  • লিভার যে খারাপ হয়নি সে ব্যাপারে আমার কাছে পাক্কা খপর আছে। এমনকি স্কালও যে ফ্রাকচার হয়্নি সেটাও নিশ্চিত।
  • dc | 232312.174.345612.142 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০১:৪৬78563
  • আমার কাছে অবশ্য কোনটারই পাকা খবর নেই।
  • sm | 2345.110.9005612.137 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০২:৩৭78564
  • মানিক,জীবনে কটা স্কাল ফ্র্যাকচার দেখেছেন?চায়ের দোকানিও এমন আলটপকা মন্তব্য করে না।
    দুই,সিপিএম তথা বামেরা এমন কিছু মহৎ কাজ করে নি,যে তাদের বেটার বলতে হবে।
    তিন,জ্যোতি বাবু,নিরুপম সব প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন।
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:০৭78565
  • sm
    আপনার জন্য একটা ধাঁধা ছিল (12 June 2019 09:05:14 IST)
  • sm | 2345.110.895612.3 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:১৮78566
  • উত্তর জানি না।
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৩৫78549
  • sm-এর জন্য এই ধাঁধাটঃ
    নিম্নলিখিত বাক্যগুলি কাহার মুখনিঃসৃত?

    #Tata Motors identified the plot because of its connectivity: Singur is connected by a highway, it’s not far from the airport…

    #West Bengal needs industrialization. If you look at people of Singur only, a large section of agrarian families are now unable to sustain from farming alone. They are looking for other ways of augmenting their family income. So, large factories employing a lot of people are necessary,.......
  • dd | 90045.207.4556.207 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৩৭78550
  • লেনিন ?
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৪৩78551
  • আপনি উত্তর দিতে পারবেন জানতাম!! সেইজন্যে আপনাকে জিগাইনি।
  • dc | 232312.174.345612.142 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৪৪78552
  • রবীন্দ্রনাথ।
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৫০78553
  • আপনিও উত্তর দিতে পারবেন জানতাম!! সেইজন্যে আপনাকে জিগাইনি।
  • lcm | 673412.152.0123.156 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৩:৫১78554
  • ছাগোল ?
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৪:৩৯78555
  • হতেও পারে!!
  • Amit | 340123.0.34.2 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ০৫:২৯78557
  • এর পরের স্টেজটা মনে হয় উনি একেবারে সানি দেওলের মতো টিউব ওয়েল তুলে মারতে যাবেন।

    কবে যে একটু আধটু আসল অ্যাকশন দেখবো, জেবন টা নেতিয়ে গেলো একেবারে।
  • মানিক | 78900.84.6767.126 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ১২:৩৮78558
  • একটু অপ্রাসঙ্গিক। মমতার নাকি কখনো একটা মার খেয়ে খুলি ভেঙেছিল। সেটা আমার বিশ্বাস হয় না, কেন না স্কাল ফ্র্যাকচার একটা সিরিয়াস ব্যাপার। হলে কি হয় সেটা এই এনআরএস কাণ্ডে দেখা যাচ্ছে। যে কথাটা বলায় কেউ কেউ রাগ করেছিলেন।

    আর একবার বলি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইনভেস্টিগেশন না হওয়া অবধি মাননীয়ার খুলি ভাঙার গল্পটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।
  • PT | 671212.193.563412.115 (*) | ১২ জুন ২০১৯ ১২:৪৭78559
  • কেউ কেউ নাকি কখনো সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করায় না। সেখানে গেলে নাকি আগের সব চিকিৎসার ডিটেল দিতে হয়। সেজন্যে তারা নার্সিং হোমে চিকিৎসা করায়। সত্যি মিথ্যে জানিনা বাপু।
  • মানিক | 78900.84.6767.126 (*) | ১৫ জুন ২০১৯ ০১:২২78567
  • আপাততঃ পরিবহর স্কাল ফ্র্যাকচার শুনছি। এই ছেলেটির যা যা হয়েছে এবং হবে তার কোনোটাই মমতার হয়নি। মানসিক ভারসম্যহীনতাটা অবশ্য ওনার প্রিএক্সিস্টিং কন্ডিশন, হয়তো কনজেনিটাল। ওনার স্কাল ফ্র্যাকচারে আমার অবিশ্বাস আরো পোক্ত হল।

    sm, আপনার মুদী দোকানির মন্তব্যটা নিয়ে আর কিছু বলব না। শুধু এটুকুই, যে আমি যে কয়জন মুদী দোকানি দেখেছি তারা সবাই আপনার চেয়ে ভদ্র।
  • sm | 2345.110.892312.132 (*) | ১৫ জুন ২০১৯ ০১:৪২78568
  • আপনাকে একটি বোধ বুদ্ধিহীন অজ ব্যতীত কিছু বলতে পারলাম না।স্কাল ফ্র্যাকচার অনেক রকম হয়।তার কমপ্লিকেশন ও অনেক রকম।এমন কি স্কাল ফ্র্যাকচার না হয়েও মারাত্মক হেড ইনজুরি বা ইন্টারনাল ব্লিডিং হতে। পারে।
    সবার একই রকম কমপ্লিকেশন হবে কে বললো?
  • Du | 7845.184.90045.227 (*) | ১৫ জুন ২০১৯ ০৪:৪৩78569
  • আজকেই তো বললেন এস এস কে এমে ডাক্তাররা ওনাকে ধাক্কা দিয়েছেন।
  • PT | 90045.38.9003423.168 (*) | ১৭ জুন ২০১৯ ০৭:২০78570
  • শুধু পব-র নয় যদিওঃ
  • বামপন্থা ও ভবিষ্যতের ভারত | 90090012.195.015623.77 (*) | ১৭ জুন ২০১৯ ০৮:২৪78571
  • বামপন্থা ও ভবিষ্যতের ভারত

    June 1, 2019 চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম স্টেশন মাস্টারের টেবিল 1
    স্টেশন মাস্টার

    ...যদি প্রশ্ন জাগে, এমন নিষ্ঠুর হৃদয়বিদারক উপমা কি বামেদের প্রাপ্য ছিল? ঝটিতি উত্তর আসে, এ প্রাপ্য নির্ধারণ করিয়াছেন তাঁহারা নিজেরাই। যদি প্রশ্ন জাগে, এমত পশ্চাদ্‌গমনের আশু সমাধান কী, তাহারও উত্তর, সমাধান তাঁহাদেরই হস্তে। সে পথ কেমন বন্ধুর, কতদূর সমস্যাদীর্ণ, কেমন তার উচ্চাবচ সম্মুখগমন, ভবিষ্যৎই তাহা বলিতে পারে। জুন সংখ্যার বিষয়মুখ নির্বাচন করিতে বসিয়া চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রত্যয় হইয়াছে, রাত্রির নিবিড়তম অন্ধকারের মুহূর্ত হইতেই যেমত পরবর্তী ঊষাকালটির নির্মাণ শুরু হয়, ভারতবর্ষে বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখাটির অভিমুখ নির্ধারণের সূচনাকল্পেও তেমনই ইহাই সঠিক সময়বিন্দু। এই হতমান, হৃতগর্ব সময়ের গর্ভেই হয়তো বা পথের সঠিক সন্ধান মিলিতে পারে— এমন ভাবনাক্রম হইতেই এই সংখ্যার মূল বিষয়ভাবনা ‘বামপন্থা ও ভবিষ্যতের ভারত’-এর পরিকল্পনা।...

    জনপ্রিয় ‘সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম’-এ দিনকতক একটি বিচিত্র ছবি ঘোরাফেরা করিতে দেখা গেল। ছবির বিষয় গুরুতর কিছু নহে – বিক্রেতা (তাঁহাকে যদিচ দেখা যাইতেছে না) ঝাঁকাভর্তি লিচু বাজারে আনিয়াছিলেন বিক্রয়ের জন্য, দিনাবসানে তাহার সামান্য গুটিকয় অবিক্রীত রহিয়া গিয়াছে – রৌদ্রপীড়নে ও অবিক্রয়জনিত হতাশার লাঞ্ছনে তাহাদিগের অধিকাংশই করুণ, বিবর্ণ ও ফিকা। আলোকচিত্রের নিম্নে গোটা-গোটা অক্ষরে লিখা, “শীঘ্র খরিদ করুন, মাত্র সাড়ে সাত শতাংশ অবশিষ্ট… সস্তায় পাইবেন” ইত্যাদি। ছবির নিম্নে ‘লাইক’, নানাবিধ রসবতী মন্তব্য ও তদুপযোগী ‘ইমোটিকন’-এর বন্যা দেখিয়া বুঝিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না যে, কটাক্ষবাণের আশু লক্ষ্য রাজ্যে বামেদের ক্রমহ্রসমান জনসমর্থন ও প্রাপ্ত ভোটের হার; এবং বামেদের এ হেন অধঃপতন যে নিছক ব্যঙ্গ ও পরিহাসের অধিক কোনও মনোযোগ দাবি করে না, আলোচনার অভিমুখ ও বিষয়বস্তু হইতে তাহাও যৎপরোনাস্তি প্রতীয়মান হয়।কৌতুকের মাত্রা বর্ধিত হয় যখন নজরে আইসে যে, তথাকথিত বামমনস্ক বলিয়া সাধারণ্যে পরিচিত ব্যক্তিদিগেরও কেহ কেহ আপনাপন সময়রেখায় সেই চিত্র ‘শেয়ার’ করিতেছেন, তাহা লইয়া উপভোক্তাগণের সম্মিলিত হাস্যরসে সামিল হইতেছেন, এমনকী বামবিরোধী বলিয়া পরিচিতদের বক্রোক্তিতে সম্মতিসূচক মন্তব্যও করিতে ছাড়িতেছেন না।

    প্রসঙ্গটি প্রণিধানযোগ্য কেবল এই কারণেই নহে যে, আলোচ্য চিত্রটি রসিকতার ছলে একটি রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতি দৃষ্টিনিক্ষেপ করে। ইহার তাৎপর্য এইখানেও যে, গোটা বিষয়টির মধ্যে একটি প্রকাশ্য চটুলতা নজরে আইসে— রাজ্যে বামশক্তির ক্রমাবক্ষয় ও তজ্জনিত প্রাসঙ্গিকতাহ্রাস যে আদপে কোনও গুরুতর আলোচনার বিষয়ই নহে, তেমন একটি তাচ্ছিল্যের বার্তাও সেখানে প্রতিভাত হয়। সোশ্যাল মিডিয়া স্বভাবত ফাজিল, এমন ধরিয়া লইলে ল্যাঠা হয়তো বা চুকিয়া যায়, কিন্তু বহিরঙ্গের রসিকতার নির্মোক খসাইয়া সত্যই যদি কেহ এই তাচ্ছিল্যের নিহিতার্থ বুঝিতে চাহেন? যদি পূর্বাপর অনুধাবন করিতে চাহেন, গত কয় বৎসরে কী এমন ঘটিল যে, বামেরা এই রাজ্যের প্রধানতম নির্ণায়ক শক্তির সিংহাসন খোয়াইয়া ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থানে নামিয়া আসিলই শুধু নহে; অধিকন্তু রাজ্য-রাজনীতির এমন এক প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হইল, যাহাতে ভোটের পূর্বে কংগ্রেস আগাইয়া আসিয়া জোটের হাত বাড়াইয়া দিল না কেন বলিয়া আলিমুদ্দিনকে ক্রন্দন করিতে হয়, এবং ভোটের পরে বামভোটের সিংহভাগ বিজেপি-তে চলিয়া গেলে বিনাইয়া-বিনাইয়া “নেতৃত্ব ভোটারদিগকে এমন নির্দেশ কদাচ দেয় নাই, কিন্তু সমর্থকরা তৃণমূলের আক্রমণ হইতে আত্মরক্ষা করিবার নিমিত্ত বিজেপি-র ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিলে দল কী করিবে” জাতীয় আত্মপ্রতারণার আশ্রয় লইতে হয়। এই মুহূর্তে ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তৃণমূল ও বিজেপি-র মধ্যে বৃহত্তর রাজনৈতিক শত্রুটি কে ও কেন— সদ্যোসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে তাহা স্থির করিয়া উঠিতে না-পারার মাশুল দিতে গিয়া রাজ্যে বামশক্তি প্রায় নিশ্চিহ্ন হইবার মুখে ইহা অতএব অর্ধসত্য; তদপেক্ষা মৌলিকতর সত্যটি হইল এই যে, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করিতে ব্যস্ত কমিউনিস্টরা এমনকী রাজনৈতিক বিরোধী নির্বাচনের আবহমানকালীন পদ্ধতিটিও ভুলিয়া বসিয়া আছেন।

    কিন্তু বৃহত্তর বিচারে এই বাস্তবতাও অন্তিম সত্য নহে। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ এই রচনার উদ্দেশ্য নহে, তথাচ স্মরণে রাখা প্রয়োজন, একমাত্র বামশক্তির নিকটই প্রত্যাশা ছিল দেশজোড়া জাতীয়তাবাদী হাওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়াইয়া সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে একটি বিকল্প ভাষ্য রচনার— বিজেপি-র ক্ষুরধার জাতীয়তাবাদ, কংগ্রেসের নরম হিন্দুত্ব ও রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধাবাদী তোষণের রাজনীতির ত্রিধারার বাহিরে গিয়া একটি চতুর্থ মাত্রার প্রবর্তনা, যেখানে ভোটের প্রকৃত ইস্যুগুলি ধারাবাহিকভাবে আলোচনায় উঠিয়া আসে। মাত্রই কয়েকমাস আগে মহারাষ্ট্রে একের পর এক কৃষক আন্দোলন, দলিত, সামাজিক অনগ্রসর শ্রেণি ও অরণ্যবাসী প্রান্তিক মানুষের মনে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সেই ভাষ্যরচনার পরিপ্রেক্ষিৎ রচনা করিয়া রাখিয়াছিল। তদুপরি কর্মসংস্থানে ঘোরতর সংকোচন, অর্থনীতির দোলাচল ও শ্লথগতি, কৃষিক্ষেত্রে চূড়ান্ত অস্থিরতা, নির্মাণশিল্পে বৃদ্ধি হ্রাস, ক্ষুদ্রশিল্পের মুখ থুবড়াইয়া পড়াইত্যাদির কারণে শহর ও মফস্বলের মধ্যবিত্ত মানুষও যৎপরোনাস্তি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। অথচ দেখা গেল, ভোটের ভাষ্য রচিত হইল জাতীয়তাবাদী লাঙুল-আস্ফালনকে কেন্দ্র করিয়া। কেন্দ্রের শাসক দল যখন রামনবমীতে সশস্ত্র মিছিল বাহির করিলেন, রাজ্যের শাসকদল তখন হনুমানজয়ন্তী পালনের রাস্তা নিলেন। কংগ্রেস বহুতর আশা জাগাইয়া ‘ন্যায়’ভাষ্য প্রকাশ করিলেও কার্যক্ষেত্রে দলের কর্ণধার চৌকিদারকে চোর এবং নিজেকে খাঁটি হিন্দু তথা নিষ্ঠ ব্রাহ্মণ প্রমাণ করিতে সমধিক ব্যস্ত রহিলেন। ভারতবর্ষের প্রান্তিক মানুষের হইয়া কথা বলিবার জন্য অতঃপর বাকি ছিল কেবল বামেরা। তাহারাও যখন ভোটের পূর্বে রাজ্যে কয়টি আসনে লড়িবে তাহা লইয়া কংগ্রেসের সহিত বাক্যবিনিময়ে অর্থহীন কালক্ষেপ করিয়া চলিল ও অনন্তর সহসা মুখ্যমন্ত্রীর উচ্চারণদোষ লইয়া অধিকতর উদ্বিগ্ন হইয়া পড়িল, তখনই বুঝা গিয়াছিল সঙ্কট সমাগতপ্রায়। ভোটের ফলাফল সময়কালে সেই সঙ্কটকে সংখ্যায় অনুবাদ করিল মাত্র।

    গত অর্ধশতাব্দকালে এ দেশে বামেদের প্রধানতম সাফল্য বলিতে যাঁহারা পশ্চিমবঙ্গে ভূমিসংস্কারের উল্লেখ করেন, তাঁহারা সম্পূর্ণ সত্য বলেন না। তাহা ঐতিহাসিক অবশ্যই, কিন্তু তদপেক্ষা মৌলিক সাফল্য শ্রেণিসংগ্রামের আলোকে ভারতীয় সমাজের অগ্রগতি ও বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করা ও ভারতীয় রাজনীতির মূলস্রোতে শ্রমিক ও কৃষকের কণ্ঠস্বরকে প্রতিষ্ঠিত করার ধারাবাহিক প্রয়াস। খেদজনক যে, কেবলমাত্র কানহাইয়া কুমার বা জিজ্ঞেশ মেবানির ন্যায় গুটিকয় ব্যতিক্রম ব্যতীত এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সে বিষয়গুলি তুলিয়া ধরিবার আপ্রাণ উদ্যোগ তেমন চক্ষেই পড়িল না।

    তাহারই সংক্ষিপ্ত ও মর্মান্তিক ফলাফল, প্রায়-নিঃশেষিত লিচুর ঝাঁকার প্রাগুক্ত চিত্রকল্প। যদি প্রশ্ন জাগে, এমন নিষ্ঠুর হৃদয়বিদারক উপমা কি বামেদের প্রাপ্য ছিল? ঝটিতি উত্তর আসে, এ প্রাপ্য নির্ধারণ করিয়াছেন তাঁহারা নিজেরাই। যদি প্রশ্ন জাগে, এমত পশ্চাদ্‌গমনের আশু সমাধান কী, তাহারও উত্তর, সমাধান তাঁহাদেরই হস্তে। সে পথ কেমন বন্ধুর, কতদূর সমস্যাদীর্ণ, কেমন তার উচ্চাবচ সম্মুখগমন, ভবিষ্যৎই তাহা বলিতে পারে। জুন সংখ্যার বিষয়মুখ নির্বাচন করিতে বসিয়া চারনম্বর প্ল্যাটফর্মের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রত্যয় হইয়াছে, রাত্রির নিবিড়তম অন্ধকারের মুহূর্ত হইতেই যেমত পরবর্তী ঊষাকালটির নির্মাণ শুরু হয়, ভারতবর্ষে বামপন্থী রাজনীতির ভবিষ্যৎ পথরেখাটির অভিমুখ নির্ধারণের সূচনাকল্পেও তেমনই ইহাই সঠিক সময়বিন্দু। এই হতমান, হৃতগর্ব সময়ের গর্ভেই হয়তো বা পথের সঠিক সন্ধান মিলিতে পারে— এমন ভাবনাক্রম হইতেই এই সংখ্যার মূল বিষয়ভাবনা ‘বামপন্থা ও ভবিষ্যতের ভারত’-এর পরিকল্পনা। এই বিভাগে আমরা প্রাসঙ্গিকবোধে পুনর্মুদ্রণ করিয়াছি প্রখ্যাত মার্ক্সীয় চিন্তক প্রভাত পট্টনায়কের একটি ও বিজয় প্রসাদ ও সুধন্ব দেশপাণ্ডের অপর একটি নিবন্ধ। একইসঙ্গে, রহিয়াছে অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজাউল করীম, অনিকেত দাস ও শুভেন্দু দেবনাথ-এর চারটি অত্যন্ত জরুরি প্রবন্ধ। লেখাগুলি, আশা করি, আমাদিগকে পথ খুঁজিতে সাহায্য করিবে।

    এই সংখ্যাতে স্মরণ করা হইল সদ্যোপ্রয়াত সাহিত্যিক অদ্রীশ বর্ধনকে। তাঁহাকে স্মরণ করিলেন যশোধরা রায়চৌধুরী এবং কৌশিক মজুমদার। বিশেষ নিবন্ধ হিসেবে প্রবন্ধ বিভাগে তর্জমাপূর্ব্বক মুদ্রিত হইল অরুন্ধতী রায়ের আর্থার মিলার ফ্রিডম টু রাইট লেকচারটি। কেবিন গ্রাফিত্তিতে রহিল অতনু দেব কৃত একটি গ্রাফিক নিবন্ধ ‘কার্ল মার্কস ২০০’। আর, এ সংখ্যা হইতেই শুরু হইল কবি ও প্রাবন্ধিক হিন্দোল ভট্টাচার্যের নতুন ধারাবাহিক আত্মকথা ‘অসঙ্গতির সঙ্গত’।

    এতদ্ব্যতীত এই সংখ্যায় যথারীতি রহিল গল্প, অণুগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, অন্যগদ্য, সবুজ স্লিপার, ভালো খবর, হুইলার্স-সহ অন্যান্য সমস্ত নিয়মিত বিভাগ।

    সকলে ভাল থাকুন। কাগজটি সম্পর্কে আপনাদের মূল্যবান মতামত আমাদিগকে জানান।

    পুনশ্চ

    সম্পাদকীয় নিবন্ধটি লেখা যখন প্রায় শেষের পথে, খবর পাইতেছি, পশ্চিমবঙ্গে শোচনীয় নির্বাচনী ফলাফলের সুরতহাল করিতে চৌঠা জুন আলোচনায় বসিতেছে মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্যকমিটি। সেই মন্থনযজ্ঞ হইতে বাড়বাগ্নি উত্থিত হইবে, না কি হলাহল, না কি বহু-প্রতীক্ষিত অমৃত, সে কথা সময়ই বলিবে। আপাতত নেতৃবৃন্দের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ, ভোটে জিতিবার অঙ্কের বদলে সেই মনগুলিকে জিতুন যাহারা আপনাদের ভোট দিলে ভারতবর্ষ জিতিতে পারিত।
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ১৭ জুন ২০১৯ ০৯:০১78572
  • পিটির লিঙ্কের লেখাটি আমাদের খ-বাবুর (যদি কেউ না জানেন আর কি) :-)
  • PT | 891212.185.456712.146 (*) | ১৭ জুন ২০১৯ ১১:৩৭78573
  • "খ" কে পিছে কেয়া হ্যায়, তা তো জানতাম না। এখন বুঝছি যে সব প্রশ্ন আর সব উত্তর অমন নম্বা নম্বা হয় কেন!!
  • গবু | 2345.110.454512.212 (*) | ১৭ জুন ২০১৯ ১১:৫১78574
  • বা-প ও ভ-ভা প্রসঙ্গে: এই লেখাটা সাধুভাষায় লেখার উদ্দেশ্য কি হালকা ছ্যাবলামি, না ওনারা এই রকমই লিখে থাকেন? এটাকেই কথ্য ভাষায় লিখলে ভাল হত মনে হয়।
  • PT | 891212.185.456712.146 (*) | ১৯ জুন ২০১৯ ০১:২২78575
  • যাহা ওপরে ওঠে তাহা নামিয়াও আসে....বিশেষতঃ ভোটে বিপর্যয়ের পরেঃ
  • dc | 232312.174.892323.46 (*) | ১৯ জুন ২০১৯ ০২:৩৪78576
  • আর যাহা যতো বেশী ওঠে তাহার পতনও ততো বেশী হয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন