এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ‘দাদাগিরি’-র ভূত এবং ভূতের দাদাগিরি

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | ২১৬৮৬ বার পঠিত
  • রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে, শ্যাওড়া গাছের মাথায়, পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে, ছাপাখানায় এবং সুখী গৃহকোণে প্রায়শই ভূত দেখা যায়, সে নিয়ে কোনও পাষণ্ড কোনওদিনই সন্দেহ প্রকাশ করেনি । কিন্তু তাই বলে দুরদর্শনে, প্রশ্নোত্তর প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠানেও ? আজ্ঞে হ্যাঁ, দাদা ভরসা দিলে এই একুশ শতকেও ভূতের ‘কামব্যাক’ সম্ভব । দাদা বার বার পাহাড়প্রমাণ বাধা ঠেলে ভারতীয় ক্রিকেট দলে ‘কামব্যাক’ করেছেন, আর আমরা সব অধীর উত্তেজনায় আপিস কাচারি কামাই করে সে সব দেখেছি । তাহলে, তাঁর অঙ্গুলি হেলনে যে হাই ডেফিনিশন টিভির পর্দায় ভূতেরা ফিরে আসবে, সে কি আর খুব বেশি কথা হল ?

    গতকাল ভর সন্ধেবেলাতেই ‘জি বাংলা’ চ্যানেলের ‘দাদাগিরি’ অনুষ্ঠানে সঞ্চালক সৌরভ গাঙ্গুলির সামনে হাজির হলেন এক মহিলা, তিনি ভুত খুঁজে বেড়ান, এবং এই আশ্চর্য কর্মকাণ্ড সুসম্পন্ন করার জন্য তাঁর নাকি একটি গোটা দলই আছে ! তিনি ওঝা-গুণিনদের মতন গেঁয়ো তন্ত্রমন্ত্রের ভরসায় থাকেন না, দস্তুরমত ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে ভুত খোঁজেন । যদিও সৌরভ গাঙ্গুলি, মানে আমাদের দাদা, বারবারই তাঁকে ভরসা দিয়ে বলেছেন যে ভূতের অস্তিত্ব নিয়ে তাঁর মনে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই এবং কোনওকালে ছিল না, তবু সেই অকুতোভয় মহিলা ভূতের ‘প্রমাণ’ হিসেবে বিস্তর যন্তরপাতি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, আমাদের মত অজ্ঞ অকিঞ্চনকে প্রাজ্ঞ ও রোমাঞ্চিত করে তোলবার জন্য । তা, বন্ধুদের তরফে তীব্র প্ররোচনা-কবলিত অবস্থায় প্রাজ্ঞ ও রোমাঞ্চিত হবার চেষ্টায় ত্রুটি রাখার উপায় আমার ছিল না । সে চেষ্টার ফলাফল শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়াল সেটা বলবার জন্যই এই লেখা, তবে তার আগে একটু ভাল করে দেখে নেওয়া যাক, এই মহিলা ওই অনুষ্ঠানে ক্যামেরার সামনে ঠিক কী কী বললেন এবং করলেন । মহিলার নাম ‘ঈশিতা দাস সান্যাল’, এবং আমরা এরপর থেকে সাধারণত তাঁকে সে নামেই ডাকব ।

    আমরা টিভির পর্দায় যা দেখলাম, তার মোদ্দা কথাগুলো এই রকম । এই ঈশিতা দাস সান্যাল জানালেন, কোথাও ভূতের উপদ্রব হচ্ছে খবর পেলেই তিনি তাঁর ভূতান্বেষী বন্ধুদের নিয়ে সেখানে ছুটে যান এবং তাঁদের বিচিত্র সব যন্ত্রপাতি দিয়ে ভূত খুঁজে দেখেন । এ রকম দুটি ‘অভিজ্ঞতা’-র কথা তিনি ওই অনুষ্ঠানে বর্ণনা করলেন । প্রথমটি কার্শিয়াং-এর ‘ডাওহিল’ অঞ্চলের কথা, যেখানে রয়েছে ‘ডেথ রোড’ নামে একটি রাস্তা, যার নাকি ভূতের উপদ্রবের ব্যাপারে ভীষণই বদনাম । সেখানে নাকি তাঁরা তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র এবং তাপমাত্রা মাপার বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি নিয়ে গেছিলেন, এবং সে সব যন্ত্রে অস্বাভাবিক ‘রিডিং’ পেয়েছেন, যা নাকি ভূতের অস্তিত্বেরই প্রবল ইঙ্গিত । ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র নাকি সেখানে অস্বাভাবিকরকম জোরালো, এবং তাপমাত্রা যা হওয়া উচিত তার চেয়ে বেশি । তাছাড়া, সেখানে আরও অনেক ‘অস্বাভাবিক’ ঘটনা ঘটে । যেমন, বারবারই তাঁরা গাড়ি থেকে নামলেই বৃষ্টি পড়তে থাকে এবং গাড়িতে উঠলেই থেমে যেতে থাকে, হঠাৎ করে তাঁদের ক্যামেরা বন্ধ হয়ে যায়, আলো নিভে যায়, এবং তাঁর এক সঙ্গীর পিঠের ওপরে নখের জোরালো আঁচড় পড়ে রক্তপাত হয়ে যায়, গায়ে পোষাক পরা অবস্থাতেই ! আরেকটি ঘটনা ঘটে ইছাপুরের এক ‘প্রেত-উপদ্রুত’ ফ্ল্যাটবাড়িতে, যেখানে ওই আবাসনের জমিটির পুরোনো মালিক, যিনি কলহপ্রবণ ছিলেন এবং জলে ডুবে মারা যান, তাঁর ‘আত্মা’ নাকি এসে কলহ সৃষ্টি করতে থাকে আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে । তার ‘প্রমাণ’ হিসেবে অনুষ্ঠানে দেখানো হয় একটি ভিডিও, যেখানে ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা বসে আছেন একটি ছোট্ট যন্ত্রের সামনে, যার মাধ্যমে তাঁরা নাকি আত্মাকে কিছু প্রশ্ন করছেন এবং উত্তর পাচ্ছেন (আমার মনে হল যন্ত্রটি একটি সাধারণ স্মার্টফোন মাত্র, যাতে বিশেষ একটি ‘অ্যাপ’-এর সাহায্যে প্রশ্নকর্তার কথাগুলোরই উদ্ভট প্রতিধ্বনি হয়, এবং তা বানানো মোটেই কঠিন নয়) । ঈশিতার বলা নিছক গল্পগুলো বাদ দিলে ‘প্রমাণ’ হিসেবে যে দুটো ভিডিও দেখান হল তার দুটোই সম্পূর্ণ অকাজের । কার্শিয়াং-এর রাস্তায় তাঁর সঙ্গীর পিঠের আঁচড় যখন দেখানো হল, তখন অন্ধকারের মধ্যে শুধু পিঠটাই দেখানো হল, কারুর মুখ দেখা গেল না, আহত হবার মুহূর্তটির কোনও বিস্তারিত বর্ণনাও স্বয়ং আহতের মুখ দিয়ে শোনানো হল না । ঘটনাটি যে ঠিক ওই অঞ্চলেই ঘটছে, সে ব্যাপারেও ভিডিও-তে কোনও ইঙ্গিত রাখা হল না (যেমন, ঘটনাটি ঘটবার মুহূর্তেই তাকে ক্যামেরা দিয়ে ফলো করা, বা, পিঠের ক্লোজ আপ দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্যামেরা জুম আউট করে গোটা চিত্রটি তুলে ধরা বা ওই জাতীয় কিছু) । আর, ইছাপুরের ফ্ল্যাটের ঘটনায় শোনা গেল কিছু কষ্টশ্রাব্য উদ্ভট অবোধ্য প্রতিধ্বনি, যার আসলে কোনও মানেই হয়না । ‘ঘটনা’-র দশা যদি এই, তো তাহলে দেখা যাক ‘যন্ত্রপাতি’-গুলোর দশাটা ঠিক কেমন ।

    কী কী বৈদ্যুতিন যন্ত্র ঈশিতা দেখিয়েছেন, সে দিকে একটু তাকানো যাক । প্রথমত, একটি যন্ত্র যা দিয়ে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড বা তড়িচ্চুম্বকীয় ক্ষেত্র-র প্রাবল্য মাপা যায় (‘ই এম এফ মিটার’) । এ দিয়ে আসলে দেখা হয় মূলত কোনও বৈদ্যুতিক যন্ত্রের কাছাকাছি অঞ্চলের বিকিরণ (বেতার তরঙ্গের বিকিরণ), যাতে বোঝা যায় যন্ত্রটি ঠিকঠাক চলছে কিনা । আমাদের বাড়িতে সব সময়ই নানা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি চলে, কাজেই সেখানে ওই মিটার নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরঘুর করলে নানা রকম ‘রিডিং’ আসবে, সেটাই স্বাভাবিক । রাস্তাতেও ইলেক্ট্রিকের লাইন বা ওই ধরনের জিনিসের ধারকাছ দিয়ে গেলে মিটারের রিডিং বেড়ে যাবে, তার সঙ্গে ভূতের মোটেই সম্পর্ক নেই । দ্বিতীয়ত, তাপমাত্রা মাপার গোটা দুই যন্ত্র । এক্ষেত্রেও, বনে-জঙ্গলে বা বাড়িতে যেখানেই থাকুন না কেন, বাড়ির বিশেষ গঠন, জানলা-দরজা-গাছপালা থেকে দূরত্ব, ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার বা অন্যান্য যন্ত্রপাতির দুরত্ব, ঠিক কোন দিক থেকে রোদ কীভাবে এসে পড়ছে বা হাওয়া বইছে তার খুঁটিনাটি, এইসবের ওপর নির্ভর করে তাপমাত্রা ওঠানামা করতেই পারে, তাতেও ভুত বেচারার দোষ নেই । তৃতীয়ত, একটি লেজার ও একটি ইনফ্রা-রেড ‘প্রক্সিমিটি ডিটেক্টর’, যা যথাক্রমে লেজার ও ইনফ্রা-রেড রশ্মি বিকিরণ করে এবং সামনে কিছু থাকলে সে রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে যন্ত্রে ফিরে গিয়ে কাছাকাছি থাকা কোনও কিছুর অস্তিত্বের সংকেত দেয়, দূরত্বও জানিয়ে দেয় (মনে রাখবেন, কঠিন বস্তুর অস্তিত্ব, ভূতের নয় মোটেই)। চারপাশের বাধা এড়িয়ে ধাক্কা না খেয়ে নিজে নিজেই চলাফেরা করতে পারে এমন স্বয়ংক্রিয় রোবট-এ প্রায়শই এ ধরনের ‘সেন্সর’ ব্যবহার করা হয়, তবে কিনা, তারা ভূত দেখতে পায় এমন দাবি রোবট বিশেষজ্ঞরা আজ পর্যন্ত করেননি । আর তবে যন্ত্র বলতে বাকি রইল সেই প্রতিধ্বনি-অ্যাপওয়ালা প্ল্যাঞ্চেট-প্রবণ অত্যাশ্চর্য স্মার্টফোন, যাতে বিনোদন বলতে উদ্ভট প্রতিধ্বনি, আর ‘প্রমাণ’ বলতে লবডঙ্কা ! ভূতুড়ে বাণী যদি শোনাতেই হয়, তো তার মধ্যে বেচারা প্রশ্নকর্তার কথার বিকৃত প্রতিধ্বনি ঢোকালে তাতে যে কী ছাই সুবিধে হয়, সে বোধহয় শুধু ভূতপ্রেমীই জানে !

    কিন্তু, ভূতাকাঙ্খীদের আসল গণ্ডগোল ভূতুড়ে আঁচড় বা আগড়ম বাগড়ম যন্ত্রপাতিতে নেই, আছে তাঁদের কথাবার্তার মধ্যে, ভূতুড়ে কর্মকাণ্ডের ‘বৈজ্ঞানিক’ ব্যাখ্যার মধ্যে । এঁরা ‘ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড’, ‘এনার্জি’, এইসব কথা এমন অনায়াসে এবং এমন নিপাট অর্থহীনতার সঙ্গে বলতে পারেন, যেগুলো শুনলেই বোঝা যায়, এগুলো খায় না মাথায় মাখে সে ব্যাপারে তাঁরা বিন্দুবিসর্গও জানেন না । ঈশিতার বক্তব্য, আমাদের শরীর মন ও তার কাজকর্মের মধ্যে যেহেতু প্রচুর ‘এনার্জি’ থাকে, এবং ‘এনার্জি’ যেহেতু সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, অতএব আমরা মরে গেলেই নাকি সেই এনার্জি ধ্বংস না হয়ে ভূত হয়ে যায়, এবং পিঠে আঁচড় দেওয়া থেকে শুরু করে অন্য নানা বিচিত্র বেয়াদবি করে ভদ্রলোকেদের কাজকর্মে অত্যন্ত অসুবিধের সৃষ্টি করে । আচ্ছা, তাই নাকি ? কিন্তু, তাহলে কয়েকটা সহজ সরল প্রশ্নের উত্তর দিন দেখি ! সকালবেলা গাড়ির ট্যাঙ্কে তেল ভর্তি করে বেরিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরির পর দিনের শেষে যখন তেল পুড়ে শেষ হয়ে গিয়ে আবার পেট্রোল পাম্পে হাজির হতে হয়, তখন আগের তেলটা কি মোটরগাড়ি-দেহ থেকে বেরিয়ে ‘তেলভূত’ হয়ে ঘুরে বেড়ায় ? টর্চের ব্যাটারি পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়ার পর তার ভেতরকার শক্তি বুঝি ‘ব্যাটারিভূত’ হয়ে নিশুতি রাতে আপনার ছাদে হাঁটাহাঁটি করে ? কালীপুজোয় পুড়ে যাওয়া লাখো লাখো বাজি কি তবে সবই ‘ফুলঝুরি ভূত’ আর ‘চকলেট বোমা ভূত’ হয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্তাদের মাথায় গিয়ে চাপে ? নাঃ, এ যে অবাস্তব সে কথা বোধহয় সকলেই বুঝবেন ।

    ভূতুড়েবিজ্ঞানীদের কথায় গণ্ডগোলটা ঠিক কোথায় ? ‘এনার্জি’ যে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না, এ তো বিজ্ঞানেরই কথা, একে তো আর অস্বীকার করা যায় না । ভুলটা তবে কোথায় হচ্ছে ? ভুলটা হচ্ছে ‘প্রসেস’ আর ‘ফাংশন’ জাতীয় ধারণার সাথে ‘সাবস্টেন্স’ আর ‘কোয়ান্টিটি’ জাতীয় ধারণাকে গুলিয়ে দেওয়ার মধ্যে । উদাহরণ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করা যাক । একটা মোটরগাড়ি ও তার তেলটা হচ্ছে ‘সাবস্টেন্স’ বা বস্তু, তেলের ভেতরে আছে শক্তি নামক একটি বস্তুধর্ম বা ‘কোয়ান্টিটি’ যাকে আমরা বস্তুর কর্মক্ষমতা হিসেবে মাপতে পারি, মোটরগাড়ির ভেতরে বিশেষ ব্যবস্থায় তেলটা ক্রমাগত পুড়ে পুড়ে শক্তি সরবরাহ করে যেভাবে ইঞ্জিনটাকে চালু রাখছে সেটা হচ্ছে ‘প্রসেস’ বা প্রক্রিয়া, আর এই প্রক্রিয়ায় মোটরগাড়িটি যে আমাদেরকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অনায়াসে বয়ে নিয়ে যেতে পারছে সেটা হচ্ছে তার ‘ফাংশন’ বা ক্রিয়া । ঠিক তেমনিই, আমাদের দেহ ও খাবারদাবার হচ্ছে ‘সাবস্টেন্স’ বা বস্তু, খাবারের ভেতরে নিহিত আছে শক্তি নামক একটি বস্তুধর্ম বা ‘কোয়ান্টিটি’, আমাদের দেহের ভেতরে বিশেষ ব্যবস্থায় খাবারটা ক্রমাগত হজম হয়ে শক্তি সরবরাহ করে যেভাবে শরীর ও তার কাজকর্মকে চালু রাখছে সেটা হচ্ছে ‘প্রসেস’ বা প্রক্রিয়া, আর এই প্রক্রিয়ায় আমাদের শরীর ও মস্তিষ্ক যেভাবে এক অসাধারণ ছন্দে আমাদেরকে অনায়াসে বাঁচিয়ে রাখতে পারছে সেটা হচ্ছে তার ‘ফাংশন’ বা ক্রিয়া । আমাদের আহার-নিদ্রা-মৈথুন-চিন্তা-ভালবাসা-ক্রোধ-ঘৃণা সবই এই ‘ফাংশন’ । জটিলতা ও সূক্ষ্মতায় অবশ্যই আমাদের সাথে মোটরগাড়ির কোনও তুলনা হয়না, কিন্তু তা সত্ত্বেও দুয়ের মধ্যে এই মিলগুলো ভীষণ মৌলিক ও বাস্তব । কাজেই, এখন নিশ্চয়ই পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, ‘প্রসেস’ এবং ‘ফাংশন’ চালু রাখার জন্য ‘এনার্জি’ বা শক্তি অপরিহার্য, কিন্তু দুটো জিনিস মোটেই এক নয় । আমাদের শ্বাসনালী রুদ্ধ হয়ে গেলে, বা মোটরগাড়ির ইঞ্জিনে তেল আসবার নলটি বন্ধ হয়ে গেলে, দেহ বা গাড়ির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটতে পারে, ভেতরে খাদ্য বা তেল রূপে শক্তিভাণ্ডার সম্পূর্ণ অটুট থাকলেও । আবার উল্টোদিকে, সে ভাণ্ডার শেষ হয়ে গেলেও ভেতরের ব্যবস্থাটি অটুট থাকলে ‘প্রসেস’ এবং ‘ফাংশন’ আবারও চালু করে দেওয়া যায়, খাদ্য বা তেল পেটে পুরলেই । এই কথাগুলো মাথায় রাখলে কেউ আর নিশ্চয়ই এমনটা বলবেন না যে, আমরা (বা মোটরগাড়ি) শেষ হয়ে গেলে আমাদের (বা মোটরগাড়ির) ‘এনার্জি’ বেরিয়ে গিয়ে ভূত হয়ে ঘুরে বেড়ায়, বা ভূতবিজ্ঞানীর পিঠ চুলকোয় ।

    তাছাড়া, ‘থার্মোডিনামিক্স’ বা তাপগতিবিদ্যার আরও একটি নিয়ম বা প্রাকৃতিক সত্য এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য । এ বিদ্যার অনেকগুলো নিয়ম আছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় নিয়মটি হল, শক্তিকে একবার কাজে লাগিয়ে নিলে সে ধ্বংস না হলেও আর কর্মক্ষম অবস্থায় থাকে না, তাপ হিসেবে বস্তুর মধ্যেকার এক রকমের বিশৃঙ্খলা হয়ে থেকে যায়, তখন আর তাকে মোটেই কাজে লাগানো যায় না, ভূতুড়ে বাড়ির অন্ধকার ছাদে হাঁটাহাঁটি করে নিরীহ গেরস্তের কাজ বাড়ানোর তো প্রশ্নই ওঠে না । এ যদি না হত, তাহলে আর বারবার আমাদের তেল কয়লা পোড়াতে হত না, একই জ্বালানিতে চিরকাল কাজ চলত ।

    আসলে, ভূত বা 'আত্মা'-র ধারণাটি হল 'প্রসেস' বা ‘ফাংশন’-কে 'সাবস্টেন্স' বা বস্তু বলে ভুল করবার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত । জীবিতের তুলনায় সদ্যমৃত মানুষের (বা অন্য প্রাণির) দৈহিক তফাৎ কিছুই বোঝা যায় না, অথচ সে আর সাড়া দেবে না, কথা বলবে না, ভালবাসবে না, এমনকি রাগও করবে না । তাহলে নিশ্চয়ই কোনও এক রহস্যময় সূক্ষ্ম বস্তু আছে, যার নাম দেওয়া যাক 'আত্মা' --- দেহের মধ্যে তার থাকা বা না থাকাটাই তবে তফাৎ গড়ে দিচ্ছে ! আধুনিক মানুষ জানে যে বাইরে থেকে দেখতে এক হলেও আসলে জীবিত ও মৃত দেহের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ, এবং ওই দৈহিক তফাতটাই হল প্রাণ-মন থাকা বা না থাকারও কারণ । দেহ পচতে শুরু না করলে তফাত বোঝা যায় না, মনে হয় মানুষটা বুঝি ঘুমিয়ে আছে, এখুনি জেগে উঠতেও পারে, কিন্তু আসলে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই বিপাকীয় ক্রিয়া থেমে যায়, কোষগুলো মরে যেতে থাকে, রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়, হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়, শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়, মস্তিষ্কের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় । অথচ, আদিম মানুষের পক্ষে তা বোঝা অসম্ভব ছিল । তারা না জানত শব-ব্যবচ্ছেদবিদ্যা, না বুঝত আধুনিক শারীরবিদ্যা ও কোষতত্ত্ব, না ছিল তাদের হাতে মাইক্রোস্কোপ । তারা তাই বুঝতে পারে নি যে, প্রাণ-মন হল আসলে 'দেহ' নামক এক মহা জটিল বস্তু-সমবায়ের 'ফাংশন' বা ক্রিয়া --- জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পারিপার্শ্বিকের সাথে বিভিন্ন স্তরে অবিরাম চলতে থাকা এক আশ্চর্য মিথষ্ক্রিয়া । এই অতি গভীর ও সমৃদ্ধ প্রক্রিয়াকেই প্রাচীন মানুষ দেখেছিল এক সূক্ষ্ম বস্তু রূপে । এমন নয় যে তারা আমাদের চেয়ে বোকা ছিল । তারা জানত, ভেতরে ঢুকে থাকা বস্তু অন্য বস্তুর ধর্মকে পালটে দিতে পারে । কলসীর ভেতরে জল ঢাললে তার ওজন বেড়ে যায়, আবার তা বার করে নিলে সে ওজন কমেও যায় । জলের মধ্যে নুন বা চিনি মেশালে স্বাদ নোনতা বা মিষ্টি হয়ে যায়, আবার নানা প্রক্রিয়ায় আলাদা করে নিলে সে স্বাদ চলেও যায় । কাজেই, 'আত্মা' নামক সূক্ষ্ম বস্তু ঢুকে পড়ে দেহে প্রাণ-মন সঞ্চার করবে আর বেরিয়ে গিয়ে তাকে মড়া বানিয়ে দেবে, এ চিন্তা তাদের কাছে খুব বেশি অসম্ভব বলে মনে হয় নি । প্রাচীন মানুষের ক্ষেত্রে এইসব ভুল দোষের ছিল না, বরঞ্চ এগুলো তাদের চিন্তাশীলতা, অনুসন্ধিৎসা ও কল্পনাশক্তিরই প্রমাণ ।

    কিন্তু, আজকের দিনেও যারা এই প্রাচীন ভুল কাজে লাগিয়ে লোক ঠকায়, টেলিভিশনের মত আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কুসংস্কার প্রচারের গণ-আয়োজন করে, তারা কেমন লোক ?

    আঙুলটা তাই উঠুক এদের বিরুদ্ধেই ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ নভেম্বর ২০১৯ | ২১৬৮৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 237812.69.563412.81 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১০:১২48666
  • দেবাশিষবাবু,
    একটা কথা এই ফাঁকে স্বীকার করে নিই, প্রবীর ঘোষের নিয়মিত আপডেট সেই আজ প্রায় ২০ বছর ভালোভাবে নেওয়া হয় নি, মানে সেই দেশ ছাড়ার পর থেকে। তবে যখন প্রথম এই সব অ্যালিগেশন শুনি, তখন প্রথমেই মাথায় এসেছিল সেই বাঙালীর চিরকালীন নিজেদের মধ্যে খাবলা-খাবলির উদাহরন। তাই ব্যক্তব্যের সত্যতা নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করে নি। আমাদের কৈশোর, যৌবন বেলায় প্রবীর ঘোষ যা ইমপ্যাক্ট ফেলেছিলেন, তেমনটা আর কাউকে দেখিনি। তবে যাই হোক, এই প্রসঙ্গ থাক, বিশেষ করে এই টই যখন উনাকে নিয়ে নয়।
  • pani | 236712.158.23900.201 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৪৮48667
  • প্রবীর ঘোষ মানে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রেসিডেন্ট?
  • Debasis Bhattacharya | 236712.158.676712.112 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১১:০০48668
  • 'সুকি',

    বাঙালির 'খাবলাখাবলি'-র প্রবণতা অন্য ভাষাভাষীদের চেয়ে কম কিনা আমি জানি না । ভুয়ো ডিগ্রি, ভুয়ো চিকিৎসা এবং সেই সুবাদে রোগিনীদের যৌন হেনস্থার অভিযোগকে স্রেফ 'খাবলাখাবলি' বলে তুচ্ছ করাটা একান্তভাবে বাঙালিরই বৈশিষ্ট্য কিনা, তাও জানিনা । শুধু এটুকু বলতে পারি, ঘোষবাবু যৌবনে আমার ওপরও 'ইমপ্যাক্ট' ফেলেছিলেন, তাতে কোদালকে কোদাল বলতে আমার অসুবিধে হয়নি ।

    এ কথাগুলো এখানে খুব প্রাসঙ্গিক নয়, সে বিষয়ে একমত ।
  • aranya | 237812.68.344512.53 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১১:০৬48672
  • দেবাশিষ, এগুলো ১৮ বছর আগের ঘটনা। সৌরভের ভুত দেখার সাথে মিল আছে বলে লিখলাম।

    ২ বছর বয়সে এক রাতে, মাত্র একবার, আমার মেয়ে বলে যে একটা বাচ্চা তার দিকে চেয়ে মুখ ভেঙ্চাচ্ছে। মেয়ের মা তাতে ভয় পেয়ে মেয়েকে নিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যায়। আমি তখন আফিসে। আমি বাড়ী ফেরার পর ওরাও চলে আসে।

    মেয়ের কল্পনা বলেই এটাকে ধরে নিয়েছি। এর পর একদিন মেয়ের মা কোন একটা বাচ্চাকে হেঁটে যেতে দেখেছিল, সেও ১৭-১৮ বছর আগে একবার। হ্যালুসিনেশন বা বাড়ীর কাঁচের জানালা দিয়ে বাইরে কাউকে চলে যেতে দেখা - এমন কিছু একটা ঘটেছে আর কি।

    বিগ ডিল কিছু নয়, প্রাসঙ্গিক মনে হল, তাই লিখলাম।

    বাচ্চার মনে কুসংস্কার ইঃ প্রসঙ্গে আমার মনে হয়, একটা বয়স পর্যন্ত তারা ভুত, পেত্নী, দত্যি, দানা , ভগবান, ড্রাগন, পরী, সান্টা ক্ল্জ , পক্ষ্মীরাজ ঘোড়া ইঃ সব-ই বিশ্বাস করলে ভাল, তাতে কল্পনাশক্তি বাড়ে।
  • সুকি | 236712.158.676712.40 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১২:১১48669
  • ঠিক এই কারণেই কিছু লিখতে ইচ্ছা করে না - যেটা লিখি নি সেটা ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে খাবলা-খাবলি বলে 'তুচ্ছ' করছি এই প্রতিপাদ্য এনে কি লাভ হল কে জানে! যাক গে বাদ দিন, ভুল হয়েছে আমার আলোচনায় ঢুকে। সরি।
  • jafar | 236712.158.895612.238 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৪৭48670
  • চটলে হবে? এই তো বাঙালির খাবলাখাবলির হাতেগরম হকিকত। বুঝুন এবার ঠেলা।
  • haridas drakula | 237812.68.9008912.234 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:৪২48673
  • ঠাকুমার ঝুলি - পুড়িয়ে ফ্যাল বই, গুগাবাবা-র ডিভিডি আছড়ে ভাঙ্গ - সব কুসংস্কার দূর হঠো।
  • দীর্ঘশ্বাস | 236712.158.786712.21 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬48685
  • একটা মানুষ বিজ্ঞানের/টেকনোলজির ডিগ্রি পাওয়ার পরেও Debasis Bhattacharya তাঁর মূল লেখায় এনার্জি নিয়ে এতখানি কচলানোর পরেও এসব "চিরকালীন" প্রশ্ন থেকেই যায়।
  • এনার্জি | 124512.101.780112.191 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৫২48686
  • দেখুন কাজুবাবু, এনার্জি কথাটার ফিজিক্সে খুব নির্দিষ্ট ডেফিনিশন আছে। ওরকম দুমদাম ব্যবহার করলে বুকে বড় লাগে। সংখ্যালঘু লোক কিনা। আপনি বরং একটা রেডিওর কথা ভাবুন। দিব্যি চলছিল। চলতে চলতে হঠাৎ ভেতরে কোথায় একটা তার ছিঁড়ে গেল। রেডিও বন্ধ। মানুষেরও একই কেস হয়। স্রেফ ভেতরের সার্কিটটা অনেক বেশি জটিল।

    তবে এনার্জি দেখার আবদারটা ভারী কিউউউট লাগল! একদম 'টপ লেভেলের এনার্জি ভর্তি প্রাণ' :)
  • Atoz | 237812.69.4545.151 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:২৭48687
  • আরে একটা সিনেমার নাম দেখলাম "ইউরোপিয়ান সোল উইথ আমেরিকান স্পিরিট"। দেখুন দিকি! ঃ-)
    তাজা তাজা সব প্রাণ, স্পিরিটে ভর্তি। এনার্জি উপচে পড়ছে। এরা যখন ভূত হয় খুবই এনার্জেটিক ভূত হয়। ঝুঁটি নেড়ে দেয়, খুঁটি উপড়ে দেয়। কোন্‌ এক সিনেমায় ছিল, এক ভূত এক সুন্দরী মহিলার সঙ্গে ইন্টুমিন্টু করত, করে করে রীতিমতন ছানাপোনাও পয়দা করেছিল। ঃ-)
  • Kaju | 236712.158.895612.198 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৩48688
  • কে টেকনোলজির ডিগ্রি? আমি তো ক্লাস ওয়ান সবে। কীসব যে বলেন !

    ও যন্ত্র আর মানুষ একই? রোবট বউ তে দেখালো বটে। ওক্কে ওক্কে। বেশ, কিউট লাগল, আমিও মিউট হলাম।
  • ওফ | 236712.158.455612.90 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪১48689
  • বাঁচা গেল
  • Kaju | 236712.158.895612.162 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৬48690
  • সেকি এতক্ষণ মরে ছিলেন? যাক একজনের বা অনেকেরই মুর্দা দেহে জান ফেরালাম।
  • Atoz | 237812.69.4545.143 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৫২48691
  • না না কাজু, মিউট হবেন না প্লীজ। আমরা একদিন হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স নিয়ে আলোচনা করবোখন। তারপরে একটুখানি ধরুন কনজার্ভেশন অব ইনফর্মেশন, ইন্ফর্মেশন প্যারাডক্স এসব নিয়ে কথা হবে। ব্ল্যাকহোল কম্প্লিমেন্টারিটি নিয়ে অবশ্য আপনি নিজেই খুঁজে নিয়ে পড়তে পারেন। এসব খুবই নতুন ওপেন রিসার্চ এরিয়া। কথা হল ইন্ফর্মেশন তো নেই হয়ে যেতে পারে না, কোয়ান্টাম ফিজিক্স তা অনুমোদন করে না, তাই এইভাবে নানা গবেষণা করে দেখছেন ওঁরা, কীভাবে কীভাবে খুব কঠিন কঠিন অবস্থাতেও ইনফর্মেশন সুরক্ষিত থাকে।
    আমাদের এক একটা জীবনের এত ইনফর্মেশন, চিন্তা করুন একবার, সবই হলোগ্রামে চিত্রবাবুর কাছে থাকছে। ঃ-)
  • ফেলুদা | 124512.101.7878.211 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:১৪48692
  • কাজুবাবু, প্রাণ ব্যাপারটা কি, চৈতন্য কাকে বলে- এসব প্রশ্ন এখানে করে লাভ নেই। এখানে শুধু উট সম্পর্কে প্রশ্ন চলতে পারে। আপনি এরপর জানতে চাইবেন লোকে স্বপ্নের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে কিনা, করলে সে বিষয়ে কে কি প্রমাণ দিতে পারে- তাতে সবাই আরোই বিরক্ত হবে।
  • sm | 236712.158.895612.162 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:১৬48693
  • #searching
  • Atoz | 237812.69.4545.143 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:২০48694
  • কিন্তু স্বপ্নের প্রমাণ তো দিতে পারেন অভি। আপনি কি আশেপাশে আছেন, ডাক্তারবাবু?
  • Debasis Bhattacharya | 237812.69.453412.170 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:২৭48674
  • 'aranya'
    সমস্যা অনেক পেছনে ফেলে এসেছেন, জেনে ভাল লাগল । আশ্বস্ত হলাম । এবার ভাল লাগছে । ভাল থাকবেন ।
  • b | 237812.68.674512.43 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৩48695
  • শুধু মানুষেরই সার্কিট থামে? তিমি হাঙর গরু পাঁঠা হিপো হাতি শিলমাছ ইলিশমাছ উচ্চিংড়ে আরশোলা কাঁকড়াবিছে ভূপর্যটক মন্দার বোস এনাদের থামে না?
  • Kaju | 236712.158.895612.94 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৪48696
  • মিউট হয়েও উটকো নিকধারীদের নামকেত্তন থামছে না? বিরক্ত লাগছে।
  • তপেশ | 237812.68.674512.43 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৪০48697
  • আরো আছে। মায়া উপহিত চৈতন্য, ম্যাটার মাইন্ড কনফ্লুয়েন্স, অন্নময় কোশ, প্রাণময় কোশ, মনোময় কোশ, জ্ঞানময় কোশ, আলোককণা ফোটনের মত চিন্তার কণা মাইন্ডন, পঞ্চাত্মীকরণ, রাজযোগ, কূলকুন্ডলিনী কে জাগরূক করে সহস্রার আর মূলাধার চক্রের মধ্যে দিয়ে চালনা করা। মাইক্রোকজম দর্শন এবং উটের পাকস্থলীতে থাকা কুঁজ কুঁজ জল।
  • Atoz | 237812.69.4545.137 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৫৭48698
  • কোশ না, কোষ।
  • Atoz | 237812.69.4545.137 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০০48699
  • বি,
    ভূপর্যটক মন্দার বোসের সার্কিট প্রায় থেমে গেছিল না? ভয় পেয়ে? ডক্টর হাজরা ধরে ফেলবে সেই ভয়ে?
  • Atoz | 237812.69.4545.147 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০৬48700
  • এই যে আজকে যাঁরা ধরুন বাইনারি, হেক্সাডেসিমাল, বুলিয়ান লজিক, অ্যান্ডর গেট, গিগাবাইট মেমোরি ইত্যাদি টার্ম মিশিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন, তাঁরা যদি সিরাজুদ্দৌল্লার আমলে জন্মাতেন, তখন কীধরনের টার্ম ব্যবহার করতেন উচ্চশ্রেণীর আলোচনায়? ঃ-)
  • বানান | 237812.68.454512.228 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:২০48701
  • সংসদ আর আকাদেমিতে কোষ আর কোশ নিয়ে গোলমাল।
  • তপেশ | 237812.68.454512.228 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৪১48702
  • এটুযেড, এ কোশ সে কোষ নয়।
  • Atoz | 237812.69.4545.147 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৩48703
  • এ কোন্‌ কোশ? বারকোশ? যাতে ভর্তি করে লুচি আনে? ঃ-)
  • :-? | 236712.158.565623.141 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৭:৪৭48704
  • শক্তি তো বহুরকম, চিন্তা-শক্তি, দৈহিক-শক্তি ইটিসি। দেবাশিষবাবু বা আর কেউ যদি এই উদ্ধৃত অংশটি ব্যাখ্যা করে দেন শক্তির জায়গায় চিন্তা-শক্তি শব্দটি ব্যবহার করে তবে আলোকিত হই। মূল লেখা থেকেই অংশটি নেওয়াঃ
    “তাছাড়া, ‘থার্মোডিনামিক্স’ বা তাপগতিবিদ্যার আরও একটি নিয়ম বা প্রাকৃতিক সত্য এ প্রসঙ্গে স্মর্তব্য । এ বিদ্যার অনেকগুলো নিয়ম আছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় নিয়মটি হল, শক্তিকে একবার কাজে লাগিয়ে নিলে সে ধ্বংস না হলেও আর কর্মক্ষম অবস্থায় থাকে না, তাপ হিসেবে বস্তুর মধ্যেকার এক রকমের বিশৃঙ্খলা হয়ে থেকে যায়, তখন আর তাকে মোটেই কাজে লাগানো যায় না”।
    সত্যিই কি তাই হয় চিন্তাশক্তিতে?
  • ন্যাড়া | 237812.68.234512.226 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৮48705
  • ভূত-ভগবানকে কুসংস্কার বলে এক কথায় নাকচ করে দেওয়া সত্যিকারের বিজ্ঞানমনস্কতা নয়, বিজ্ঞানমনস্কতার ফ্যাশন। তাগা-তাবিচ, জলপড়া, নখদর্শন, ভূত ঝাড়া - এগুলোকে কুসংস্কার বলুন, ঠিক আছে।

    ভূত বা ভগবান বা ধর্ম বা টাকাপয়সা বা দেশ বা কমিউনিজম - এগুলো সবই কালেক্টিভ মিথ। জৈবিক বা ন্যাচারাল কোন অস্তিত্ব নেই। বিরাট সংখ্যক লোক এতে বিশ্বাস করে বলে এরা আছে। এদের কারুর কারুর কোন ফিজিকাল রিপ্রেজেন্টেশন আছে। টাকার ফিজিকাল রিপ্রেজেন্টেশন একধরণের ছাপা কাগজ। সবাই বিশ্বাস করে বলে এর মূল্য। দেশের ফিজিকাল রিপ্রেজেন্টেশন কাগজে ছাপা ম্যাপ, আরবিট্রারি সীমান্তে বন্দুক নিয়ে সৈন্য আর গভর্নমেন্ট। সবাই বিশ্বাস করে বলে এর মূল্য। মানুষ না থাকলে এরাও নেই। এগুলো ন্যাচারাল বা প্রাকৃতিক নয়। অর্থাৎ অতিপ্রাকৃতিক, মানে ভূত-গোত্রীয়।

    মানুষের সভ্যতার জন্যে এইসব কালেক্টিভ মিথের দরকার ছিল। কিছু কিছুর এখনও আছে। কিছু কিছুর প্রয়োজন ফুরিয়েও থাকতে পারে, কিন্তু এখনও বহু লোক অভ্যেসবশে বিশ্বাস করে।

    সুতরাং ভগবানে বিশ্বাস বা ভূতে বিশ্বাস প্রোমোট করা হচ্ছের বিরুদ্ধে যদি মামলা করতে হয়ে তাহলে টাকায় আস্থা প্রোমোট করা হচ্ছে বলে ইকোনামিস্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হয়। ন্যাশালিজম প্রোমোট করছে বলে সব দেশের সরকারের বিরুদ্ধে মাওম্লা করতে হয়। নেশনই নেই তো ন্যাশনালিজম। মামলা করতে হয়ে অমুকের বিরুদ্ধে কমিউনিজম প্রোমোট করছে বলে। এই অমুককে আমি অনেকদিন ধরে খুঁজছি।
  • avi | 237812.69.563412.81 (*) | ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৮:৫০48706
  • এতজদি, এই যে স্বপ্নের ব্যাখ্যা। প্রাণ মন শান্ত করা প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা।
    'নিতান্ত সরল অর্থ, অতি পরিষ্কার,

    বহু পুরাতন ভাব, নব আবিষ্কার।

    ত্র৻ম্বকের ত্রিনয়ন ত্রিকাল ত্রিগুণ

    শক্তিভেদে ব্যক্তিভেদ দ্বিগুণ বিগুণ।

    বিবর্তন আবর্তন সম্বর্তন আদি

    জীবশক্তি শিবশক্তি করে বিসম্বদী।

    আকর্ষণ বিকর্ষণ পুরুষ প্রকৃতি

    আণব চৌম্বকবলে আকৃতি বিকৃতি।

    কুশাগ্রে প্রবহমান জীবাত্মবিদ্যুৎ

    ধারণা পরমা শক্তি সেথায় উদ্ভূত।

    ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট--

    সংক্ষেপে বলিতে গেলে, হিং টিং ছট্‌।'
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন