এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান

    Saikat Bandyopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ৮৭২৫ বার পঠিত
  • হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্তান আদতে একই প্রকল্পের অংশ। আজকের সরকারি হিন্দি একটি অর্বাচীন ভাষা, তথাকথিত নব্য হিন্দুত্বের হাত ধরেই তার জন্ম। দেশভাগের আগে একটি-পৃথক-ভাষা হিসেবে হিন্দির কোনো অস্তিত্ব ছিলনা। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণে সুভাষচন্দ্র বসু অখণ্ড ভারতবর্ষের যোগাযোগরক্ষাকারী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন 'হিন্দুস্তানি'কে, হিন্দি নয়। হিন্দি বা উর্দু নামের আলাদা কোনো ভাষা সে সময় ছিলনা। শব্দদুটো ছিল, তারা লিপির পার্থক্য বোঝাতে হিন্দুস্তানির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত মাত্র। আর এই হিন্দুস্তানি কোনো নির্দিষ্ট ভাষা ছিলনা, ছিল একটি ছাতা মাত্র, যার মধ্যে নানারকম ভাষা বা কথনরীতি ঢুকে ছিল। আজ যাকে উর্দু বলি, সে তো ছিলই, আরও ছিল খড়িবোলি, আওধী, ভোজপুরি, মৈথিলী ইত্যাদি প্রভৃতি।

    এ হেন সেকুলার এবং বহুমাত্রিক হিন্দুস্তানিকে সরিয়ে হিন্দি নামক অর্বাচীন একটি ভাষার উদ্ভব হয় দেশভাগের পরে ( প্রকল্পটি আগে থেকেই চালু ছিল, কিন্তু সে জটিলতায় এখানে ঢুকছিনা)। এর দুটি কারণ ছিল। একটি ডাহা সাম্প্রদায়িক। যেজন্য উর্দু এবং হিন্দি দুটি আলাদা ভাষা তৈরির দরকার হল। যেন হিন্দি হিন্দুর ভাষা এবং উর্দু মুসলমানের। ভারত এবং পাকিস্তান তৈরির সঙ্গে এই সাম্প্রদায়িক বিভাজন একদম খাপে-খাপে যুক্ত। এই পদ্ধতিতেই ফার্সি শব্দ তাড়িয়ে, তৎসম শব্দ ঢুকিয়ে কৃত্রিম 'হিন্দি' নামক একটি ভাষা তৈরি শুরু করা হয়। প্রক্রিয়াটি দেশভাগের আগে থেকেই চালু ছিল, কিন্তু দেশভাগের পর সেটা সর্বশক্তিমান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প হয়ে দাঁড়ায়। দুই নম্বর কারণটি এর সঙ্গেই আসে। হিন্দি যেহেতু 'ভারত'এর ভাষা, তাই, সমস্ত আঞ্চলিক ভাষার উপরে কার্যত 'রাষ্ট্রভাষা' হিসেবে হিন্দি চাপানো শুরু হয়। একটু একটু করে আওধী, মৈথিলী, ভোজপুরির মতো ভাষাগুলিকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়। অন্যান্য উত্তর ভারতীয় ভাষাগুলির ক্ষেত্রে, পরোক্ষে হলেও, ধংসের পরিকল্পনাটি একই। এবং একই সঙ্গে ভারতকে একটি বহুজাতিক যুক্তরাষ্ট্রের বদলে এক-জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে চালানো শুরু হয়। 'এক ভাষা, এক সংস্কৃতি', 'বোম্বে আর ক্রিকেট আমাদের ঐক্যের প্রতীক', ইত্যাদি। বৈচিত্র্য বাদ দিয়ে স্রেফ ঐক্যের উপর জোর দেওয়া হয়। রাজভাষা প্রসার সমিতি সরকারিভাবে এবং বোম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আধা-সরকারি ভাবে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করে। বোম্বে সিনেমা খুব সূক্ষভাবে 'হিন্দু লব্জ' আর 'মুসলমান লব্জ'কে আলাদা করে দেয়। দেশবিভাগের আগে মান্টো হিন্দুস্তানি সিনেমার চিত্রনাট্য লিখতেন, কস্মিনকালেও তাঁর তাতে কোনো অসুবিধে হয়েছে বলে শোনা যায়না। কিন্তু ক্রমশ জানা যায় মান্টো যে উর্দু লেখক, আর প্রেমচাঁদ হিন্দি লেখক। এইসব তথ্য খুব সিস্টেমেটিকালি আমরা জানতে শুরু করি।

    এই প্রকল্প বিনা বাধায় হইহই করে চলেছিল এমন না। দেশভাগ যেমন বাকি সবাইকে বাদ দিয়ে কয়েকজন মাথার সিদ্ধান্তে প্রায় পিছনের দরজা দিয়ে সেরে ফেলা গিয়েছিল, এটা সেরকম হয়নি। ১৯৪৪ সালেও আজাদ-হিন্দ-ফৌজে সুভাষ চন্দ্র বসু রোমান হরফে হিন্দুস্তানির প্রচলন করেছিলেন যোগাযোগের ভাষা হিসেবে। ১৯৪৮ সাল থেকে সিপিআই এক-জাতি-এক-ভাষা তত্ত্বের বিরোধিতা করতে থাকে। পার্টির মধ্যেই একদিকে আসতে থাকে উর্দুকে পুনরন্তর্ভুক্তির দাবী, অন্যদিকে রাহুল সাংকৃত্যায়ন প্রমুখরা খড়িবোলি-আওধী-ব্রজভাষার সীমান্ত অনুযায়ী নতুন রাজ্য তৈরির কথা বলেন। ১৯৪৯ সালে সিপিআইএর নানা দলিলে খুব স্পষ্ট করেই ভারতকে একটি বহুজাতিক রাষ্ট্র (মাল্টিনেশন) বলা হয়। এবং মারোয়াড়ি-গুজরাতি পুঁজিপতিদের আধিপত্যের ছক হিসেবে এক-ভাষা (হিন্দি) কে তুলে ধরার তীব্র বিরোধিতা করা হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় আইনসভায় মাতৃভাষায় বলতে দেবার দাবীতে কক্ষত্যাগও করেছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে আঞ্চলিকভাবেও ভাষাগত জাতিসত্ত্বার দাবী মাথাচাড়া দিতে থাকে। ১৯৫২ সালে তেলুগু জাতিসত্ত্বার অধিকারের দাবীতে স্বাধীন ভারতে আমরণ অনশনে প্রাণ দেন শ্রীরামালু। কেন্দ্রীয় সরকার নতুন অন্ধ্র রাজ্য ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। ওই দশকেই জাতিসত্ত্বার লড়াই লড়ে বাংলার মানুষ এবং বামপন্থীরা বাংলা-বিহার সংযুক্তির পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেন। ১৯৬১ তে মাতৃভাষার দাবীতে প্রাণ দেন বরাকের মানুষ। এক-জাতি-এক-রাষ্ট্র তত্ত্বটি আপাতদৃষ্টিতে পরাস্ত হয় এবং ভাষাই রাজ্যগঠনের মাপকাঠি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

    এতে করে অবশ্য আগ্রাসন তার চরিত্র বদলায়নি। পদ্ধতি বদলেছিল মাত্র। এর মূল কারণ নিহিত ছিল 'শক্তিশালী কেন্দ্র'তে। সমকালীন একজন রাশিয়ান লেখক লিখেছিলেন, তাঁদের মিউনিসিপ্যালিটিগুলি ভারতের রাজ্য সরকারের থেকে বেশি ক্ষমতা রাখে। কেন্দ্র-রাজ্য দ্বন্দ্ব এক আলাদা বিষয়, সেটায় এখানে ঢুকবনা, এখানে পয়েন্টটা হল, 'শক্তিশালী কেন্দ্র'র নেতৃত্বে অর্বাচীন হিন্দিকে তৈরি করা শুরু হয়। এর আগে কংগ্রেসি হুইপ সত্ত্বেও মাত্র এক ভোটে সরকারি ভাষা হিসেবে 'হিন্দি'কে চয়ন করা হয়। দক্ষিণী একটি সংবাদপত্র লিখেছিল, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড হস্তক্ষেপ না করলে হিন্দি ভোটে হারত।

    পঞ্চাশের দশকের নতুন হিন্দি ভাষা বলাবাহুল্য খোঁড়াচ্ছিল। ফার্সি এবং অন্যান্য 'বিদেশী' শব্দ বিতাড়ন করে সংস্কৃত শব্দ ঢোকানো প্রচুর হাস্যরসেরও সূচনা করে। বহুল প্রচলিত 'উজির'কে তাড়িয়ে 'সচিব', 'মজলিশ' বা 'দরবার'কে তাড়িয়ে 'লোকসভা', এরকম হাজারো শব্দ তৈরি করা হচ্ছিল সে সময়। ভাষায় এগুলির চল ছিলনা, ফলে তথাকথিত হিন্দিভাষীরা ব্যবহারও করতে পারতেননা বা জানতেননা। দক্ষিণী সংবাদপত্রে এই নিয়ে ঠাট্টা করে বলা হয়, হিন্দিভাষীরা নেতারা নিজের ভাষায় বক্তব্যই রাখতে পারেননা। কথাটা ঠাট্টা হলেও একেবারে মিথ্যে ছিলনা। হ্যারিসন ওই দশকের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, সেই সময়ের শিক্ষিত বাঙালিরা ইংরিজির পাশাপাশি নিজের ভাষা জানতেন, অন্তত রবীন্দ্রসাহিত্যে দীক্ষিত ছিলেন। কিন্তু নব্য 'হিন্দি'ভাষীদের সেসব চল ছিলনা। মান্টো-চুঘতাই-ফয়েজ আর হিন্দি নয়, ফলে সে ঐতিহ্য থেকে তাঁরা বঞ্চিত। আওধীতে লেখা লক্ষৌএর মিঠে গজল-ঠুংরি আর তাঁদের নয়। মৈথিলীর অপার্থিব গীতিকবিতাকে হিন্দি তাঁরা বলতে পারেননা। অতএব হিন্দি তৈরি করা শুরু হয় কৃত্রিম, সংস্কৃতবোঝাই রসকষহীন একটি ভাষা হিসেবে।

    এই কৃত্রিম, অর্বাচীন ভাষাটিকে 'জাতীয়' ভাষা হিসেবে তুলে ধরা সহজ ছিলনা। সেজন্য প্রথমে বহু-জাতির পরিবর্তে এক-জাতির একটি প্রকল্প হাজির করা জরুরি ছিল। একাধিক যুদ্ধ এই প্রকল্পটিকে তৈরি করতে সক্ষম হয়। বিশেষ করে ১৯৬২ সালের চিন-ভারত যুদ্ধে, এমনকি কমিউনিস্ট পার্টিও ভেঙে যায়। যদিও তাত্ত্বিকভাবে কারণ ছিল আলাদা, কিন্তু অন্তত যুদ্ধটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল বলতে কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়। ১৯৭১ এর বাংলাদেশ যুদ্ধ বিষয়টিকে আরও একধাপ এগিয়ে দেয়। ইন্দিরা গান্ধী কার্যত 'জাতির নেত্রী' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যান। 'জাতিয়তা' হিসেবে বাঙালি বা গুজরাতি নয়, ভারতীয়ত্ব প্রাধান্য পেতে শুরু করে। বহু-জাতির বিপরীতে এই 'জাতিয়তা' এবং তার সঙ্গে হিন্দির সংযোগস্থাপনের কাজে বোম্বের চলচিত্র শিল্পও খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোনো রাজভাষা প্রসার সমিতি নয়, এক এবং অদ্বিতীয় বোম্বের উদ্যোগেই 'ভারতীয়' হিসেবে 'হিন্দি' সিনেমাকে উপস্থাপন করা শুরু হয়। এটা একেবারেই বেসরকারি পুঁজির জয়যাত্রা নয়, ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্র প্রত্যক্ষভাবে বিষয়টায় সহযোগিতা জুগিয়েছিল। নেহরু পঞ্চাশের দশকের শুরু থেকেই হিন্দি সিনেমার বিশ্বজয়ের অন্যতম কান্ডারি ছিলেন। তাঁর সক্রিয় উদ্যোগ রীতিমতো ঐতিহাসিকভাবে নথিভুক্ত।

    অনেকে অবশ্য বলেন, হিন্দি সিনেমা ছিল 'ইনক্লুসিভ'। উর্দু জবানকে সে নিজের অক্ষে স্থান দিয়েছিল, 'বিশুদ্ধ' হিন্দিকে নয়। কিন্তু, বস্তুত হিন্দি সিনেমা খুব স্পষ্ট করে হিন্দি-উর্দু বিভাজনকে তুলে ধরেছে এবং ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে এদের যোগাযোগ স্পষ্ট করে দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি 'উমরাও জান' এর মতো সিনেমা, যেখানে উর্দু জবানকে ব্যবহার করা হয়েছে মুসলমান খানদানির সঙ্গে যোগ করে। এটি নিঃসন্দেহে 'বাস্তবতা'র কারণে হয়নি। কারণ বাস্তবতা হল সিনেমায় বর্ণিত এলাকার ভাষা ছিল আওধী। ওই অঞ্চলেই ওয়াজিদ আলি শা লিখেছেন তাঁর বিখ্যাত বন্দিশগুলি, যা কখনই কথাকথিত হিন্দি বা উর্দু নয়। অবশ্য লক্ষৌতে প্রায় সমসময়েই কাটিয়ে গেছেন গালিবের মতো কবি, তিনি আওধীতে লেখেননি, যদিও তাঁর ভাষাও নিঃসন্দেহে শিক্ষিত সমাজ বুঝত। কিন্তু গালিব নিজের ভাষাকে আখছারই 'হিন্দি' বলেছেন। সে ভাষা ছিল সুন্দর ও পালিশ করা। সুমিত সরকার বলেছেন এই শীলিত ভাষায় হিন্দু ও মুসলমানদের সমান অধিকার ছিল। ফলে উর্দু=মুসলমান, হিন্দি=হিন্দু -- এই সমীকরণদ্বয় মোটেই বাস্তবসম্মত নয়, কিন্তু ভারত এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের মতো বোম্বে সিনেমাও এই একই বস্তুকে দাগ কেটে জনমানসে গেঁথে দিতে সক্ষম হয়েছিল।

    ফলে যুদ্ধ, সরকারি ভাষা, বোম্বে সিনেমা, এসবের যোগফলে গোটা সমীকরণটি দাঁড়ায় এরকমঃ ভারতবর্ষ বহুজাতিক দেশ নয়, একটিই জাতি। তার রাজভাষা (এই শব্দটি খুব সুকৌশলে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে) হল হিন্দি। ভারতের জাতিয়তার মূল সূত্র যেমন পাকিস্তান-বিরোধিতা (অর্থাৎ মূলগত সাম্প্রদায়িকতা), তেমনই রাজভাষার মূল সূত্র হল উর্দুর বিপরীতে সংস্কৃত নিয়ে দাঁড়ানো (সেই একই সাম্প্রদায়িকতা)। ভারতের ঐক্যের সূত্র যেমন শক্তিশালী কেন্দ্র, তেমনি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় ভাষা। আসমুদ্র হিমাচল যতবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাত মুঠো করে শপথ নিয়েছে, যতবার দেব আনন্দ থেকে অমিতাভ হয়ে শাহরুক খানে মুগ্ধ হয়ে 'গুরু' বলেছে, ততবারই এই মূলসূত্রগুলি গেঁথে গেছে জনতার বুকে। আধুনিক হিন্দি যেমন একটি শিকড়হীন ভাষা, ভারতের শক্তিশালী এককেন্দ্রিক (বৈচিত্র্যের সমাহারের বিপরীতে) 'জাতিয়তা' যেমন একটি কয়েক দশকের তৈরি করা ডিসকোর্স, একই ভাবে বোম্বের সিনেমাও সামগ্রিকভাবে একটি অলীক (রিয়েলিজমের বিপরীতে) জগতের সিনেমা।

    এই এক-জাতি-এক-ভাষা ডিসকোর্স দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করা হয়েছে। যুদ্ধ-সিনেমা-ক্রিকেট এবং সরকারি উদ্যোগ দীর্ঘদিন ধরেই চালু ছিল। মতাদর্শগত আধিপত্য তৈরি হতে সময় লাগে। অবশেষে আশির দশকে এসে পুরো আধিপত্যের গল্পটি হয়ে ওঠে আরও সরাসরি। দূরদর্শনে চালু করা হয় 'জাতীয় কার্যক্রম' এর বাধ্যতামূলক হিন্দি শিক্ষাক্রম। এর আগে পর্যন্ত রেডিওর জমানায় 'স্থানীয় সংবাদ' এবং 'দিল্লির খবর' দুইই প্রতিটি জাতির ভাষায় প্রচার করা হত। খোদ দিল্লি থেকেই শোনা যেত গোটা দেশের খবর। টিভি এসে এক ধাক্কায় 'জাতীয় কার্যক্রম'= হিন্দি/ইংরিজি করে দিল। এক-জাতি-এক-ভাষা তত্ত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হল। তবে এবার আর শুধু হিন্দি নয়, তার সঙ্গে আস্তে আস্তে ঢুকল আরেকটি যোগাযোগরক্ষাকারী ভাষা -- ইংরিজি। সেটা অবশ্য আরও একটু প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে আসে। ইন্দিরা গান্ধির জমানায় শিক্ষাকে রাজ্য তালিকা থেকে সরিয়ে যুগ্ম তালিকায় নিয়ে যাওয়া হয়, তৈরি হয় কেন্দ্রীয় বোর্ড, যার মাধ্যম মূলত ইংরিজি। পরবর্তী কয়েক দশক শিক্ষার আঞ্চলিকতাকে ধ্বংস করে নতুন এই 'রাজভাষা'র বিজয়ের দশক। ক্রমশ এই দুই ভাষায় তৈরি হবে গাদা-গাদা 'জাতীয়' চ্যানেল, তৈরি হবে গাদা 'কেন্দ্রীয়' বোর্ডের বিদ্যালয়। আঞ্চলিকতাকে অগ্রাহ্য করে 'ভারতীয় জাতিয়তা'র হুঙ্কারও সর্বোচ্চ গ্রামে পৌঁছবে ধীরে-ধীরে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও নব্বইয়ের দশক থেকেই যুক্তরাষ্ট্র শব্দটা কার্যত অচ্ছুত হয়ে যাবে। রাজ্যগুলির একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়াবে বিদেশী পুঁজি আকর্ষণ করার জন্য কামড়াকামড়ি। নিজের জাতির বা ভাষার হয়ে কথা বলার একমাত্র নাম হবে 'প্রাদেশিকতা'। ভুলে যাওয়া যাবে, ভারতে কোনো প্রদেশ নেই। ভারত নেশন-স্টেট নয়, যুক্তরাষ্ট্র, বহু জাতির বহু জাতিয়তার সমন্বয়। সেই জন্যই এই অঙ্গগুলিকে 'রাজ্য' বলা হয়, 'প্রদেশ' নয়।

    আধিপত্য অবশ্য এতে থামবেনা। এক-জাতি-এক(বা দুই)-ভাষা জিগিরের পরবর্তী যৌক্তিক পদক্ষেপ হল 'ঐক্য'এর অন্তরায় খুচরো 'প্রাদেশিকতা'কে ফুৎকারে উড়িয়ে দেওয়া। প্রথমে তা আসে ভাষার উপরে। এ কোনো অলীক কল্পনা নয়। মৈথিলী বা ভোজপুরি আজ প্রান্তিক। এমনকি বামপন্থীদের পোস্টারবালক বেগুসরাইয়ের ছেলে কানহাইয়া কুমারও আর বেগুসরাইয়ের মৈথিলী বলেননা, প্রাত্রিষ্ঠানিক হিন্দিতে কথা বলেন, একটু 'বিহারি' টান সহ। বাঙলার বিপ্লবী অবিপ্লবী নির্বিশেষে রাজনীতিকরা বিহারি শ্রমিকদের ভাষাকে 'সম্মান' দিয়ে যখন তাঁদের সঙ্গে হিন্দিতে কথা বলতে যান, তখন ভুলে যান, যে, এ একেবারেই একজন ওড়িয়ার ভাষাকে সম্মান করে তার সঙ্গে অসমীয়া বলার মতো ব্যাপার । কারণ বেশিরভাগ বিহারি শ্রমিকেরই ভাষা হিন্দি নয়, তাঁদের ওটা আলাদা করে শিখতে হয়েছে, এবং সেই কারণেই তাঁদের ভাষা অবলুপ্তপ্রায়।

    গোটা খন্ডিত ভারতবর্ষ জুড়েই এই হিন্দি-ইংরিজি যুগলবন্দী এক শিকড়হীন অদ্ভুত 'ঐক্য'এর ধারণার জন্ম দিয়েছে। বোম্বে, ক্রিকেট আর পাকিস্তান-বিরোধিতা (অংশত বাংলাদেশ) ছাড়া এর আর কোনো জমিগত ভিত্তি নেই। বোম্বের চড়া দাগের গান, নাচ আর মোটামোটা ডায়লগ ছাড়া এর কোনো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নেই। সেই কারণেই হিন্দির জায়গায় ক্রমশ ইংরিজির ঢুকে পড়ায় এর কোনো অসুবিধেও নেই, কারণ রক্ষা করার মতো কোনো ঐতিহ্যই এর নেই। আদ্যন্ত সাম্প্রদায়িক উৎসের এই আধিপত্যমূলক শিকড়হীন 'ভাষা' তৈরির প্রক্রিয়াটিতে উত্তর-ভারতের বুদ্ধিজীবীরা বিশেষ বাধা দেননি (কিছু বামপন্থী এবং কিছু তথাকথিত উর্দুভাষীর বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ ছাড়া)। তার ফল হিসেবে গোটা ভারত রাষ্ট্র জুড়ে এই শিকড়হীনতার প্রচার, প্রসার এবং গ্লোরিফিকেশন চলেছে এবং চলছে। এবং এই প্রক্রিয়ায় গুঁড়িয়ে যাচ্ছে বহুজাতিক এই রাষ্ট্রের বহুজাতীয় ঐতিহ্যগুলি। ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, যাপনের বৈচিত্র্য, সবকিছু।

    চল্লিশের শেষে বা পঞ্চাশের শুরুতে সিপিআই এর তাত্ত্বিক রামবিলাস শর্মা লিখেছিলেন, রাষ্ট্রভাষার দাবী ভারতীয় বৃহৎ পুঁজির সাম্রাজ্যবাদী এবং ঔপনিবেশিক অভিব্যক্তি ছাড়া আর কিছু নয়। নানা বর্ণের কমিউনিস্টদের অবস্থান গত ষাট-সত্তর বছরে অনেক বদলেছে, বদলেছে লব্জ, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্ক সম্পর্কে মৌলিক অবস্থান মোটের উপর একই আছে। তবুও তাঁদের মুখেও আর এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধতার লব্জ আর শোনা যায়না। হেজিমনি আর প্র্যাগম্যাটিজম বড় মায়াবী জিনিস।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ মে ২০১৯ | ৮৭২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • dd | 90045.207.2356.79 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:৩৮48136
  • আরে, ঈশেন তো এই সিরীজে একই কথার একাধিক প্রবন্ধো লিখে ফেললো।

    আমি ও প্রতিবারই জিজ্ঞেশ করি - এই হিন্দি সাম্রাজ্যবাদের হোয়াট ইজ দি বিকস আর কারা এটা করছে?

    যদি বিজেপি হয় , তাইলে তো কোনো প্রশ্নই নেই। অ্যাদ্দিন ছিলো গোবলয়ের পার্টী - তায় ঘোষিত নীতিই হচ্ছে, "হিন্দি, হিন্দু, হিন্দুস্তান"। নো কনফিউসন।

    কিন্তু কংরেস কেনো করবে? দেভে গৌড়া, মোরারজী দেশাই, নরসিংহা রাও - কেনো করবে? এদের কীসের কমপালসন হিন্দি আধিপত্য চালু রাখার?

    এর উত্তরে ,ঈশেন বাবু বলেন , ঐ ত্তো, ঐ ত্তো, উটিই হেজিমনি। অ্যাকচুয়ালি আমার প্রশ্নই হচ্ছে হিন্দি হেজেমনির কারনটাই বা কী আর যারা করছে (বিজেপি বাদে) তারাই বা কেনো করছে? হেজেমনি বলে দিলেই তো আর এক্ষপ্লানেশনটা হোলো না।

    আমার দেওয়া এগজাম্পলটা আবার দি। এক ছাত্র প্রশ্ন কল্লো, বাইরে রাখলে কপ্পুর উবে যায় কেনো? টীচার কইলেন,কেনোনা কপ্পুর একটি উদ্বায়ু পদাত্থো, সেই জন্নে। এটা একটা উত্তর হোলো?
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:৫৩48137
  • ভোট ব্যান্ক। হিন্দি বলিয়ে ভোটারের সংখ্যা বেশি।
  • pi | 7845.29.348912.134 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৪:৫৮48138
  • বড় বাজার।
  • PT | 561212.187.4545.13 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৫:৫২48139
  • মুর্শিদাবাদের না-শিক্ষিত মুসলমান ছেলেটি (১৫ থেকে শুরু) যখন কেরলে জোগাড়ের কাজ করতে যায় তার বাংলা ছাড়া আর একটি মাত্র কাজ চালানোর মত ভাষা জানা আছে।
    সেটি হিন্দি।

    একটা ভাষার দাপট তো অন্যত্রও আছে। যে কারণে Angewandte Chemie-র জার্মান version-এর পাশাপাশি Angewandte Chemie International Edition in English প্রকাশিত হয় আর কে না জানে উটি এখন রসায়নের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জার্নাল।

    রাষ্ট্রভাষা শব্দটি যদি নাও ব্যবহার করা হয়, তাহলেও তো একটা common ভাষা দরকার যা দিয়ে ভারতীয়রা অন্ততঃ কাজের কথাটাও বলবে।
    তো সেটি কোন ভাষা হবে?

    ইউওরোপের তো কোন রাষ্ট্রভাষা নেই। কিন্তু সকলেই তো ইংরিজি শিখছে নিজেদের ভাষার উন্নতিসাধনের সঙ্গে সঙ্গেই।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৬:১৬48140
  • এইটা এক লাইনে বলা মুশকিল। খ এসে এখনই বকে দেবে। তবু ছোটো করে বলি।
    এককেন্দ্রিক ভারতের ছক, তার অর্থনীতির রূপরেখা, কংগ্রেসের হাতে তৈরি নয় আদৌ। ঘনশ্যামদাস বিড়লা, জেআরডি টাটা, পুরুষোত্তমদাস ঠাকুরদাস, কস্তুরভাই লালভাই, অর্থাৎ ভারতের যত উল্লেখযোগ্য শিল্পপতিরা ছিলেন, ১৯৪৪-৪৫ সালে তাঁরা তৈরি করেন বোম্বে প্ল্যান। যদিও দেশভাগের পর সরকারিভাবে নেহরু বলেননি, যে, এই প্ল্যান গ্রহণ করছি, কিন্তু নেহরুর পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা মূলগতভাবে একই জিনিস ছিল। কী ছিল প্ল্যানে? খুব ছোটো করে বললে, ১। বাইরের প্রতিযোগিতার থেকে দেশের পুঁজির সংরক্ষণ। (নেহরু জমানায় অক্ষরে অক্ষরে এটি পালন করা হবে) ২। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতামূলক দুই সেক্টর। (একে বলা হবে মিশ্র অর্থনীতি) ৩। দেশীয় শিল্পের বাড়বৃদ্ধিতে সরকারি সহায়তা। (নেহরু জমানার লাইসেন্স রাজ, সরকারি গ্যারান্টি ইত্যাদি)।

    এই পুরো পরিকল্পনাতেই ভারতকে 'শিল্পোন্নত' করে তুলতে হবে এবং শিল্পকে দিতে হবে সরকারি সুরক্ষা, এরকম দাবীই ছিল। এই প্রত্যেকটি পয়েন্ট নিয়েই বিড়লা দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ সরকার এবং ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে দর-কষাকশি করে আসছিলেন। টাটার ব্যাপার একটু আলাদা। তাঁর মাথায় সরকারি হাত ইতিমধ্যেই ছিল। কিন্তু স্বাধীন সরকারো যাতে মাথায় হাত রাখে, সেটুকু নিশ্চিত করা টাটার পক্ষে দরকার ছিল। ফলে টাটা ও বিড়লা, ৩৫ সাল পর্যন্ত যাঁরা দুই বিবদমান গোষ্ঠীতে ছিলেন, তাঁরা বোম্বে প্ল্যানে এসে হাত মিলিয়ে ফেলেন।

    এটা সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যাপার। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে এটা অর্জন করতে গেলে দেশের অর্থনীতির উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দরকার। বিড়লা, বাজাজ দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের অর্থযোগানদার ছিলেন। ৩৫ এর পর টাটাও এই দিকে সরে আসেন। ফলে কংগ্রেসের উপর এঁদের প্রভাবের কোনো অভাব ছিলনা। কিন্তু রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণে মুসলিম লিগের উপরে এঁদের কোনো প্রভাব ছিলনা। ইস্পাহানি এবং অন্যান্য পশ্চিমী গোষ্ঠীগুলির সেই প্রভাব ছিল। ফলে রাজনৈতিকভাবে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য পেতে গেলে প্রস্তাবিত ভারত থেকে মুসলিম লিগ এবং তার পৃষ্ঠপোষক শিল্পগোষ্ঠীর থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হওয়াই টাটা-বিড়লার পক্ষে সুবিধেজনক ছিল। এই সুবিধের প্রশ্নটি অবশ্য ওঁরা স্পষ্ট করে লেখেননি, কিন্তু দেশভাগের পক্ষে বিড়লার সক্রিয় উদ্যোগ ভীষণভাবে ডকুমেন্টেড। তিনি এমনকি দেশভাগের উপকারিতা বর্ণনা করে একটি নাতিদীর্ঘ পুস্তিকাও লেখেন।

    এর পরে দেশভাগ হয়। বহুধাবিভক্ত ভারতবর্ষে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক একাধিপত্যের কাজ শুরু হয়। এর পরে আর টাটা বা বিড়লার চিঠিপত্র পাওয়া যায় না (যেতেও পারে, আমি পড়িনি)। ফলে বাকিটা আন্দাজ। রণদিভে লাইন যখন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টিতে চালু, এবং স্তালিন যখন বেঁচে, তখন খুব স্পষ্ট করেই ভারতীয় এবং রাশিয়ান তাত্ত্বিকরা বলেছেন, যে, ভারতবর্ষকে 'ঐক্যবদ্ধ' করা মারোয়াড়ি-গুজরাতি পুঁজিপতিদের একটি প্রকল্প এবং 'রাষ্ট্রভাষা' সেই কাজের হাতিয়ার। কংগ্রেসকে সেই দাবী মেনে নিতে হয়। এটা অবশ্য পুরোটাই স্পেকুলেশন, কারণটা আগেই বলেছি। কিন্তু যেটা স্পেকুলেশন নয়, সেটা হল, ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় আসার পর, খুব দ্রুত রাশিয়া এবং সিপিআই ভারতের পুঁজিপতিদের মধ্যে প্রগতিশীল জাতিয়তাবাদ খুঁজে পায়। ফলে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, যে, এককেন্দ্রিক একটি জাতীয়তাবাদ নির্মিত হচ্ছিল, পুঁজিপতিদের তাতে পৃষ্ঠপোষকতা ছিল, কংগ্রেস এবং ক্রুশ্চেভের রাশিয়াও তাতে একমত ছিল। এই হল সংক্ষেপে পুরো গল্প।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৬:৪৯48141
  • দিল্লিতে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ, স্টেট-ফেডারেল স্ট্রাকচারে পাওয়ার এবং অবশ্যই টাকপয়্সা যতটা পারা যায় ফেডারেল কন্ট্রোলে রাখা -- এগুলো তো ভ্যালিড পয়েন্ট, বোঝা যাচ্ছে।

    কিন্তু, টাটা-বিড়লা, গুজরাটি-মারোয়াড়ি দের হিন্দি ভাষার আধিপত্য হলে তাদের ব্যবসায় কি লাভ হবে সেটা ক্লিয়ার নয়। স্বাধীনতার আগে এরা কংগ্রেসকে ফান্ড করেছে, এবং এদের অ্যাজেন্ডা ছিল যে স্বাধীনতা পরবর্তী ভারতে যেন অন্য কোনো বাইরের কোম্পানি ব্যবসা না করতে পারে। কেবলমাত্র এরাই মার্কেট নেবে, এবং নিয়েছেও। হিন্দি জানলে কেরলের লোক বেশি করে টাটার নারকেল তেল বা নুন কিনবে এমন কিছু নেই।
  • জয়ন্তভট্টাচার্য | 7845.11.892323.234 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৬:৫৩48142
  • একটি প্রয়োজনীয় এবং জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে সহজবোধ্য, সুন্দর লেখা।

    এখানে আরেকটি প্রেক্ষিত থেকে বিষয়টিকে ভাবা যায়। Engrafted মডার্নিটির যে যাত্রা ১৯৪৭ পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রিক উদ্যোগে শুরু হয়েছিল সেখানে সবাই নাগরিক। অ-নাগরিক কেউ থাকতে পারেনা। আধুনিকতার একটি এবং একমাত্র ভাষ্যেই যাদের শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যেমন ঢোঁড়াই।

    আবার এদেরকে ধরা হবে একেকটি integer হিসেবে। এখানে ভগ্নাংশের কোন জায়গা নেই। উদো-বুধোর ত্রৈরাশিক না ভগ্নাংশ, এসব ভাবার কোন অবকাশই নেই।

    এরকম এক social psyche তৈরির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হল ভাষা এবং disciplinary time.
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৭:০৬48143
  • এটা কিন্তু মাইক্রো লেভেলেও হয়েছে, এবং কিছুটা প্রাকৃতিক নিয়মে। গত শতাব্দীতে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ভাষা ক্রমশঃ হেলেছে কলকাতার বাংলা ভাষার দিকে। আঞ্চলিক হিন্দুস্তানি হিন্দির সমগোত্রীয় ভাষা ক্রমশ হেলেছে হিন্দির দিকে। (যে কথা এখানে ঈশান লিখেছেও)। এক্জন তেলুগু ভদ্রলোক বলছিলেন, যে এখন অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গনায় ইংরেজি শব্দের প্রবল ব্যবহার তেলুগু ভাষাকে প্রায় শংকর ভাষার দিকে নিয়ে যাচ্ছে - তেলেগু+ইংরেজি+হিন্দি মিলে এক ভাষা।

    যদি আজ থেকে ১০০ বছর পরে এমনও হয়, যে সারা ভারতের একটিই ভাষা - হিন্দি এবং ইংরেজি মিশ্রিত শংকর ভাষা - এমন বিবর্তন তো আগেও হয়েছে।

    একথা ঠিক যে যারা অলরেডি হিন্দি/ইংরেজি জানে তারা এখন বাড়তি সুবিধে পাচ্ছে। কিন্তু সবাই জানলে তো এক দিক দিয়ে ভালই, তাহলে সবাই সমান সুবিধে পাবে।
  • রিভু | 89900.249.6734.3 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৮:১০48144
  • লেখাটা জাস্ট পড়তে শুরু করলাম ।
    "১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসের ভাষণে সুভাষচন্দ্র বসু অখণ্ড ভারতবর্ষের যোগাযোগরক্ষাকারী হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন 'হিন্দুস্তানি'কে, হিন্দি নয়। হিন্দি বা উর্দু নামের আলাদা কোনো ভাষা সে সময় ছিলনা। শব্দদুটো ছিল, তারা লিপির পার্থক্য বোঝাতে হিন্দুস্তানির প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত মাত্র।"

    উইলসন এর A glossary of judicial and revenue terms : and of useful words occuring in official documents relating to the administration of the government of British India (https://catalog.hathitrust.org/Record/001058548 ) ১৮৫৫ সালে বেরোয়, এখানে হিন্দিকে আলাদা ভাষা হিসেবেই ট্রিট করা হয়েছে । বইটার প্রিফেস এর কুড়ি নম্বর (রোমান xx , প্রিফেস এর অন্তর্গত ) পাতা পড়লে সেটা ক্লিয়ারলি দেখা যায়: https://books.google.com/books?id=y5FeAAAAcAAJ&pg=PR20&dq=it+prevails,+in+greater+or+lesser+approximation+to+Hindi&hl=en&sa=X&ved=0ahUKEwiR75zv56DiAhVndt8KHd2ADyIQ6AEIKDAA#v=onepage&q&f=false
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৮:১১48145
  • আমি মোটেই 'প্রাকৃতিক' কারণ বলিনি। ভীষণভাবে রাজনৈতিক কারণই বলেছি। প্রাকৃতিক কারণ উভমুখী হবার কথা। কিন্তু হিন্দিভাষীদের তেলুগু-মিশ্রিত বুলি, বা ইংরিজিভাষীদের তেলুগু-হিন্দি মিশ্রিত ইংরিজি বলতে শুনতে পাওয়া যায়না। :-)

    আর এই প্রকল্পে বিড়লার কী লাভ, তথ্য দিয়ে বলা মুশকিল। যেটুকু তথ্য দিয়ে বলা যায়ঃ

    ১। বিড়লা গান্ধি এবং মদনমোহন মালব্য উভয়েরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সংস্কৃত-ঘেঁষা হিন্দির প্রবক্তা ছিলেন মদনমোহন মালব্য। সম্ভবত এই নিয়ে তাঁদের চিঠি-চাপাটিও খুঁজে বার করা যাবে।

    ২। বিড়লা এবং অন্যান্য 'জাতীয়' ব্যবসায়ীরা 'আঞ্চলিকতা'র ঘোর বিরোধী ছিলেন। 'ভারতীয় জাতিয়তাবাদ'এর প্রবক্তা ছিলেন এক রকম করে। হিন্দি সেই জাতিয়তাবাদের ধারক।

    এর চেয়ে বেশি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক, মনে হয়না খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তবে সম্ভাবনা কম। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির আলোচনা আর তার সঙ্গে টাটা-বিড়লার সম্পর্ক, স্বাধীনতা-পূর্ব যুগে খুঁজে পাওয়া যতটা সহজ উত্তর-দেশভাগ ততটাই কঠিন। হয়তো ব্যাপারটা অতটা মনোলিথিক ছিলও না।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৮:২১48146
  • রিভু, ঠিক এই জিনিসটাই আমি এড়িয়ে গেছি। ওই যে ব্র্যাকেটের মধ্যে লিখেছি "প্রকল্পটি আগে থেকেই চালু ছিল, কিন্তু সে জটিলতায় এখানে ঢুকছিনা", এইটা সেই জটিলতা। হিন্দি-উর্দু বিভাজন বস্তুত বৃটিশের তৈরি। বস্তুত বৃটিশই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে সংস্কৃত-ঘেঁষা হিন্দি ভাষা তৈরি শুরু করে। বস্তুত বৃটিশই স্বাধীনতার আগেই বিহারের সরকারি ভাষা হিসেবে 'হিন্দি' চালু করে।
    এটা এড়িয়ে গেছি, কারণ, সুমিত সরকার দেখিয়েছেন, ১। এই বিভাজন কৃত্রিম (যেটা আমিও বলেছি), ২। এই বিভাজন জনমানসে গেড়ে বসেনি ব্রিটিশ আমলের শেষ দিকের আগে। বস্তুত উর্দু (অর্থাৎ কিনা পারসিক ঘেঁষা লিপিতে লেখা হিন্দুস্তানি) সংবাদপত্রের প্রচলন নাগরীর সংবাদপত্রের চেয়ে অনেক বেশি ছিল দীর্ঘদিন পর্যন্ত। এদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক এবং জল-অচল বিভাজনটা তৈরি করা হয় দেশভাগ সংলগ্ন সময়ে।
  • lcm | 45.35.0178.115 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৮:৪৩48147
  • কথ্য ভাষা হিসেবে উর্দু এবং হিন্দি নিয়ে কোনো সমস্যা ছিল না, এখনও ভারতের হিন্দিভাষী লোকজন পাকিস্তানের উর্দুভাষীদের কথা মোটামুটি বুঝতে পারে, এন্ড ভাইস-ভার্সা।

    কিন্তু লেখনীতে হিন্দি হল দেবনাগরী অক্ষর ভিত্তিক, আর, উর্দু ছিল ফার্সি (পার্সিয়ান) নাস্তালিক টাইপোগ্র্যাফি অনুযায়ী - এটি ছিল এক বিশাল বিভাজন।



    কীভাবে ভাষা শেখানো হবে, অর্থাৎ, লেখনী, অক্ষরবিন্যাস - এই ব্যাপারটিতে - হয় ফার্সি নয় সংস্কৃত ভিত্তিক দেবনাগরী - একটা বাছতেই হত, ফর প্র্যাকটিক্যাল রিজন।

    ভারতীয় ভাষাকে ফার্সী প্রভাব মুক্ত করার প্রয়াস অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। এবং একথা ঠিক এটি স্পনসর করে ব্রিটিশরা। জয়গোপাল তর্কালংকার (১৭৭৫-১৮৪৬) একটি ডিকশনারি বানিয়েছিলেন যেটি ছিল মূলত বাংলা থেকে ফার্সি ভাষার শব্দগুলি সরিয়ে দিয়ে বাংলা প্রতিশব্দ বসিয়ে দেবার জন্য।
  • lcm | 45.35.0178.115 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ০৮:৫২48148
  • ছবিটা এল না, এখানে দেখি -


    ভাষা শিক্ষার পরিকাঠামো তৈরি করতে হলে এই দুই লেখনপদ্ধতির মধ্যে একটিকে বাছতেই হয়। কথ্য ভাষার শব্দের মিশ্রণ যত সহজে হয়ে একটি শংকর কথ্য ভাষা তৈরি হয়, লেখনি তত সহজে নাও হতে পারে।
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৬ মে ২০১৯ ১০:৫২48149
  • দেশভাগের আগে উর্দু ছিলনা?
  • pp | 9004512.142.340112.12 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:০২48152
  • অনুরোধ টা মূলত ঈশান দা কে তবে যে কেউ ই লিখ্তে পারেন।
  • pp | 9004512.142.340112.12 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:০৪48153
  • "উর্দু সাধারণ লোকেদের ভাষা" বাকী ভাষাগুলো তবে কারা বলত?
  • pp | 9004512.142.340112.12 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:০৬48154
  • মানে বলতে চাইছি উর্দুর উতপত্তি হল কি ভাবে?
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:২২48164
  • আপনার বাকি কথার উত্তর পরে দিচ্ছি। একটু চা-জল খেয়ে। কিন্তু এই হিন্দি-উর্দুর যে পরিসংখ্যান দিয়েছেন, সেটা বস্তুত বৃটিশের এবং আরও বেশি করে পরবর্তী ভারত-পাকিস্তান সরকারের ন্যারেটিভ। আপনার পুরো চিন্তায় সেটাই ঘুরছে, ফলে কাউন্টার ন্যারেটিভটায় সমস্যা হচ্ছে।

    ন্যারেটিভটা আরও একবার বলি। এই যে, হিন্দি সংবাদপত্র এবং উর্দু সংবাদপত্র -- এদের তফাত হল লিপিতে। ভাষায় নয়। উর্দু, হিন্দি এবং হিন্দুস্তানি -- যে সময়ের কথা বলছি, এরা মোটামুটি সমার্থক ছিল। কখনও লিপির তফাত বোঝাতে, কখনও শীলিততর বোঝাতে, কখনও শুধুই একে অপরের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হত। কিন্তু হিন্দি, উর্দু কোনো আলাদা ভাষা হিসেবে স্বীকৃত হতনা (আলাদা লিপি মানেই আলাদা ভাষা নয়)।

    আলাদা লিপি=আলাদা ভাষা = আলাদা ধর্ম -- এই সমীকরণ প্রাথমিকভাবে বৃটিশ শুরু করে। একেই অনেক গুণ বাড়িয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয় স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানে।

    এই তো ন্যারেটিভ। এতে সমস্যা কোথায়? আপনি কি বলছেন হিন্দি, উর্দু, হিন্দুস্তানি -- এরা আলাদা ভাষাই ছিল? এই ধারণাটা মাথা থেকে ঝাড়ানোর জন্যই তো এতটা লেখালিখি। :-)

    আগের পোস্টের উত্তর পরে দিচ্ছি।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:২৯48165
  • কথ্য হিন্দি এবং কথ্য উর্দু-র মধ্যে পার্থক্য বড় কিছু না, আজও নেই ---
    Hindi and Urdu are considered different registers of a single language Hindustani, with Hindi drawing much of its vocabulary from Sanskrit and Urdu being more influenced by Persian.

    কিন্তু লেখার পদ্ধতি হিসেবে ধরলে দুটি ভিন্ন জগৎ। আলাদা অক্ষর, আলাদা গ্রামার, একটি লেখা হয় বাঁ দিকে থেকে ডান দিকে, অন্যটি উল্টো।
    বলছে -
    Both Hindi and Urdu are almost entirely mutually intelligible with one another, but have somewhat slightly distinct vocabulary and minor terminological differences. Another major difference is their writing systems are entirely different, with Hindi using Devanagari and Urdu using the Nastaliq script.

    হিন্দি এবং উর্দু - দুই ভাষারই ব্যুৎপত্তি খারিবোলি থেকে, উর্দুতে ফারসী শব্দের প্রাধান্য বেশি, হিন্দিতে সংস্কৃতের।

    খারি বোলি=দিল্লির অঞ্চলের ভাষা (৯০০-১২০০) যার উৎস ছিল প্রাকৃত ভাষা, খারি বোলি (stiff word) কে বলা হত শ্রুতিতে সামান্য কর্কশ, এর একটু মধুর ভার্সান ছিল ব্রজ ভাষা এবং অযোধ্যা অঞ্চলের সামন্য ভেরিয়েশনের আওয়াধি ভাষা।

    হিন্দি এবং উর্দুকে একসঙ্গে বলা হত হিন্দুস্তানি ভাষা নামে। মুঘল আমলে হিন্দুস্তানি ভাষাই ছিল কথ্য ভাষা, এবং উর্দু ছিল অফিসিয়াল ভাষা।

    বৃটিশরা শুরুতে ইংরেজির সঙ্গে উর্দুকে করেছিল অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ। এটা করেছিল কারণ তখনকার মুঘল আমলের কোর্ট-কাছারি রেজিস্ট্রেশন-দলিল সংক্রান্ত কাজ ফার্সি/উর্দু-তে হত, ওরা বেসিক অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ স্ট্রাকচারটা পাল্টাতে চায় নি।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:৪১48166
  • "আলাদা লিপি=আলাদা ভাষা = আলাদা ধর্ম -- এই সমীকরণ প্রাথমিকভাবে বৃটিশ শুরু করে।"

    এটা পুরোপুরি ঠিক নয়। অফিস কাছারির নথিপত্রে ইংরেজির সঙ্গে আরাবিক অক্ষরমালার পরিবর্তে দেবনাগরী অক্ষরে লেখালখির দাবী উঠেছিল বহুদিন ধরে। শুরুতে এই দাবীকে বৃটিশরা পাত্তা দেয় নি, কারণ আবার অন্য অক্ষরের প্রিন্ট বানাও, একগাদা ফালতু খরচ।

    প্রেমচন্দ শুরুর দিকে উর্দুতে লিখতেন। কিন্তু পরে বাধ্য হন হিন্দিতে লিখতে, কারণ ততদিনে উর্দু প্রেস কমে গেছে, হিন্দি ছাপাখানা সহজলভ্য ছিল।

    সংস্কৃত/হিন্দি=হিন্দু, ফারসী/উর্দু=মুসলিম ---- এই সমীকরণ আগে ছিল না তা নয়। বরাবরই ছিল। শাসককুলেরা সুযোগ মতন এর সুবিধে নিয়েছেন।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০১:৫৫48167
  • "প্রেমচন্দ শুরুর দিকে উর্দুতে লিখতেন। কিন্তু পরে বাধ্য হন হিন্দিতে লিখতে, কারণ ততদিনে উর্দু প্রেস কমে গেছে, হিন্দি ছাপাখানা সহজলভ্য ছিল।"

    অর্থাৎ সমস্যাটা হরফের। ভাষার পার্থক্যের না।

    আরও আগেরও উদাহরণ দিয়েছি। গালিব যে ভাষায় লিখতেন তার লিপি ছিল ওই তথাকথিত পারসিক। কিন্তু তাঁর ভাষা, তিনি বারবার বলেছেন হিন্দি। তখনও মুঘল সম্রাটরা দিল্লিতে।

    নবাব ওয়াজিদ আলি শা। তাঁর বিখ্যাত ঠুংরির একটি লাইনঃ চার কাহার মিলে মোরি ডোলিয়া সাজাবে। লিপিঃ ওই তথাকথিত পারসিক।

    ফলে মুঘল আমলে "লিপি = ভাষা" এই সমীকরণ ছিলনা। ভারতীয় মুঘল এবং লক্ষৌ এর শাসকরা উর্দু/হিন্দি/হিন্দুস্তানিকে ভারতীয় ভাষা হিসেবেই গণ্য করতেন। তাঁদের পছন্দের লিপি অবশ্যই ওই পারসিক ঘেঁষা বস্তুটিই ছিল।
  • lcm | 900900.0.0189.158 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০২:২৬48168
  • ঠিক, লিপি=ভাষা সমীকরণ ছিল না।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০২:৩৫48169
  • নাঃ ইঞ্জিরি না লিখলে দেখছি সৈকতবাবু পাত্তাই দিচ্ছেন না!

    The difference between 'Hindi' and 'Urdu' includes
    1. That of Script. Devanagari for Hindi and Arabic script for Urdu.
    2. That of vocabulary. For Hindi preference of words coming from Sanskrit and Prakrits (vernaculars). For Urdu preference of words borrowed from Arabic and Persian.

    Persian remained the language of the Moghul court for more than two centuries (1526-1761). By the end of the seventeenth century Urdu had become highly Persianized, rich in vocabulary and refined enough for graces of courtly address. Shah-i-Alam II who was enthroned in 1761 wrote poetry in Urdu and was a patron of Urdu poets. So was Bahadur Shah II, the last Moghul king
    91837-1857).

    The Muslim leaders resorted, saying that Urdu is a blend of underdeveloped vernaculars of north India which got groomed, refined, and enriched by Muslim poets and prose writers who chose to write it in the Arabic script. The Hindi of seven centuries ago, they said, was of the 'ap bharanash' ( a vernacular without a regular standardised grammar).

    মামুর কলে বোল্ড, ইটালিক্স না দিতে পারার কী জ্বালা সেটা যদি মামু একবার বুঝতেন!

    এইবার চা-জল খেয়ে লেগে পড়ুন পার্থক্য বোঝাতে।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০২:৪১48170
  • * So was Bahadur Shah II, the last Moghul king (1837-1857).
  • S | 458912.167.34.76 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০২:৫৬48171
  • For Hindi preference of words coming from Sanskrit and Prakrits (vernaculars). For Urdu preference of words borrowed from Arabic and Persian.

    এইটা কি প্রথম থেকেই ছিল? নাকি পরে ধর্মের টুপি পড়াতে গিয়ে জোড় করে করা হয়েছে?
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:০২48172
  • @S, বহু আগে থেকেই ছিল। হিন্দি পাতি, উর্দু রিফাইন্ড। তখন এই ধর্মের জিগির ওঠেইনি।
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:১৪48173
  • আদা জল খাবার কিছু নেই। এটা আপনি যেখান থেকে কোট করেছেন, সেটা পুরোটাই আমার বক্তব্যের অন্যতম উৎস। পুরোটা কোট করলেই হত।

    The "two languages" called "Hindi" and "Urdu" were now almost completely identical in grammatical structure. The The difference between them included
    1. That of Script. Devanagari for Hindi and Arabic script for Urdu.
    2. That of vocabulary. For Hindi preference of words coming from Sanskrit and Prakrits (vernaculars). For Urdu preference of words borrowed from Arabic and Persian.

    এছাড়াও প্রবন্ধে এই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাম্প্রদায়িক বিভাজনের অন্যান্য লক্ষণ টক্ষণ গুলিও পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে। পুরোটা পড়লে, বা কোট করলেই বোঝা যেত।

    অবশ্য আপনি অন্য কোনো সেকেন্ডারি সোর্স থেকেও পড়ে থাকতে পারেন, যারা অপকর্মটি করেছে। আমার সূত্র হল ইন্ডিয়ান ক্রিটিকস অফ গান্ধি। এই নিবন্ধের লেখক দাউদ রাহবার। এইটা যে এইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, আমার কল্পনারও অতীত ছিল। পুরোটা কোট করে দিতে পারলেই ভালো হত। কিন্তু অত টুকব কীকরে। :-)
  • Ishan | 2312.106.9002323.218 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:২৫48174
  • ওহো লেখা হলনা। "হিন্দি" এবং "উর্দু" এর কোটেশন মার্কগুলি লক্ষ্য করবেন। ব্যাকরণগতভাবে প্রায় সম্পূর্ণ এক হওয়া সত্ত্বেও তারা "তথাকথিত" ভাবে আলাদা বোঝানোর জন্যই ব্যবহার করা হয়েছে। এই কৃত্রিম বিভাজন তৈরির জন্য "হিন্দু রাজনীতি" অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে দায়ী করা হয়েছে। ওই নিবন্ধে।
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:৪০48175
  • কী মুশকিল! প্রথমত আপনিই চা-জলের কথা বলেছিলেন, সেটা আদা-জল কীভাবে হল? দ্বিতীয়ত আমিও ওই প্রবন্ধটি থেকেই লিখেছি। তবে সেই নিবন্ধের লেখক সম্পর্কে হ্যারল্ড কাওয়ার্ড যা লিখেছেন তাতে তিনি 'অপকর্ম' করেছেন সেটা বুঝব কী উপায়ে? বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক, কেম্ব্রিজের পি এইচ ডি কেন 'অপকর্ম'টি করলেন সেটা যদি না বুঝিয়ে বলেন?
  • এলেবেলে | 230123.142.1278.97 (*) | ১৭ মে ২০১৯ ০৩:৪৬48176
  • তাছাড়া আমি তো অনেক আগেই প্রবন্ধটি থেকে স্ন্যাপশটও দিয়েছি। এই 'আদা-জল খাওয়া' টার্ম ব্যবহারটা ভালো লাগল না। যাই হোক, আপনি লিখতে থাকুন। আমি কাটলাম। বলে কয়েই।
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন