এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্রেস জোকস- ০২

    Biplob Rahman লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ নভেম্বর ২০১৩ | ১৪৪৫ বার পঠিত
  • [গণমাধ্যমে প্রায়ই মজার মজার কিছু সত্যি ঘটনা ঘটে। এ সব কখনো কখনো প্রচলিত হাস্য কৌতুককে হার মানিয়ে দেয়। আবার এসব প্রেস জোকসের নেপথ্যে থাকে কষ্টকর সাংবাদিকতা পেশাটির অনেক অব্যক্ত কথা। এমনই কিছু বাস্তব ঘটনা নিয়ে এই 'প্রেস জোকস' পর্ব। রীতিমত প্রাপ্তমনস্কদের জন্য রচনা।]

    আমি বাংলার, বাংলা আমার
    ___________________
    ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার চিত্রশিল্পী সেনবাবু পান-প্রিয়তার জন্য বিখ্যাত। পকেটে ৫০ টাকা থাকলে উনি বাংলা, ৫০০ টাকা থাকলে কেরু আর ৫,০০০ টাকা থাকলে ফরেন লিকার টানতেন। আমাদের এই দাদাটি অবশ্য প্রতিদিন পান করতেন না; সপ্তাহে শুধু দুদিন তিনি মদ খেতেন; যেদিন বৃষ্টি হতো, আর যেদিন বৃষ্টি না হতো।

    আর খুব মুডে থাকলে উনি গুনগুন করে গান করতেন, আমি বাংলার, বাংলা আমার, ওতোপ্রোত মেশামেশি, আমি বাংলা ভালবাসি।...

    আমরা ক্ষুদে সাংবাদিকরা তখন একটু মুচকি হেসে বলতাম, হ’ দাদা, কবিয়াল রমেশ শীল এই গানটি আপনার জন্যেই লিখেছিলেন!

    সে সময় মোবাইল টেলিফোনের এতো চল হয়নি; অ্যানালগ ল্যান্ড ফোনই ভরসা। একদিন সন্ধ্যার পর কী কাজে যেনো ফোন করেছি, বাংলাবাজার পত্রিকায়। বন্ধু-বান্ধব কাউকে না পেয়ে সেনবাবুকে খুঁজলাম।

    ওপাশে ফোন কে ধরেছিলেন, জানি না। রসিকজন বললেন, দাদা তো এখন ‘বাংলাবাজারে’ নেই। ওনাকে এখন পাওয়া যাবে ‘বাংলার বাজারে’!

    আবারো সেনবাবু সমাচার
    _________________
    এক গ্রীষ্মে আমরা কয়েকজন ক্ষুদে সাংবাদিক সেনবাবুর সঙ্গে পান করতে বসেছি। ফরেন লিকার, পান-অনুপান, কোনোটারই অভাব নেই।

    তো মদ গিলতে গিলতে অনেক রাত হলো। দাদাবাবু এক সময় মাতাল হয়ে পড়লেন। হঠাৎ শুরু হলো তার অঝোর ধারায় কান্না। আমরা কিছুতেই তার কান্না থামাতে পারি না।

    আমরা সেনবাবুর চোখে-মুখে পানি ছিটিয়ে আদুরে গলায় জানতে চাই, কী হয়েছে দাদা, আমাদের বলুন।

    দাদা ভেউ ভেউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাল রাতে আমি কাঁঠাল খাইসিলাম।....এইটুকু বলে আবার তার ভ্যাঁএএএএএ শুরু হলো।....

    --তারপর? কাঁঠাল খেয়েছেন তো কী হয়েছে? এ নিয়ে কান্নার কী হলো?
    দাদা আবারো কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আর বলিস না, কাঁঠাল একটা জাতীয় ফল; আর আমি কী না এইটা বইসা বইসা খাইলাম!...

    প্রিজন্স সমীপে
    __________
    এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক রথি-মহারথিরা গণহারে গ্রেফতার হতে শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে দুই নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-খালেদাও আছেন। আর এই দুই নেত্রীকে রাখা হয়েছে শেরে বাংলা নগরের বিশেষ কারাগারে।

    তো প্রায় প্রতিদিনই তাদের মামলা ও জেলখানার বন্দি জীবনের নানা দিক নিয়ে কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন্স) মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

    সেদিনও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ২০-২৫ জন সাংবাদিক মেজর সিদ্দিকীকে ঘিরে ধরেছেন। ব্রিফিং চলছে...সবাই মন দিয়ে নোট নিচ্ছেন, বক্তব্য রেকর্ড করছেন। ব্রিফিং শেষে ২৪ ঘন্টার এক টিভি চ্যানেলের এক ক্ষুদে সাংবাদিক হঠাৎ মেজর সিদ্দিকীর পুরো নাম জানতে চাইলেন।

    উনি একটু থতমত খেলেন। কারণ ততদিনে তিনি মিডিয়ায় খুব পরিচিত একটি নাম। তবু অমায়িক একটি হাসি দিয়ে তিনি বলেলেন, আমি মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী, ডিআইজি-প্রিজন্স।

    ওই সাংবাদিকের পরের প্রশ্ন, মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকী তো আপনার নাম; তো ‘প্রিজন্স’ কী আপনার ডাক নাম?

    বুঝুন অবস্থা!

    আমি সাংবাদিক!
    ____________
    কয়েক বছর আগের কথা। কাওরান বাজারের একটি শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার একজন সিনিয়র রিপোর্টার। খুব খ্যাতনামা সাংবাদিক হলেও চালচলনে উনি খুব সাদাসিদে।

    একদিন অফিস যাওয়ার জন্য তিনি প্রেসক্লাব থেকে লোকাল বাসে উঠলেন। সামনের কয়েকটি আসন ফাঁকা থাকলেও তিনি একেবারে পেছনের একটি সিটে গিয়ে বসলেন।

    একটু পরে ওই একই অফিসের পিয়ন কালাম মিয়াও উঠলো একই বাসে; সে-ও অফিসে যাচ্ছে। কালাম মিয়া বসেছে সামনের দিকের একটি সিটে। সে অবশ্য ওই রিপোর্টারকে খেয়াল করেনি।

    একটু পরে বাস ছাড়তে না ছাড়তেই ওপাশ থেকে আসতে শুরু করলো একটি বিশাল মিছিল। তো কালাম মিয়া লাফিয়ে উঠে ড্রাইভারকে বললো, এই ড্রাইভার, জলদি গাড়ি থামাও। আমি অমুক পত্রিকার সাংবাদিক। এটা কিসের মিছিল, তা আমাকে জানতে হবে!

    ড্রাইভার বাস থামালেন। শীর্ষ পত্রিকার নাম শুনে ভরা-বাসের যাত্রীরা সকলে সশ্রদ্ধায় উঁকি-ঝুঁকি মেরে দেখতে শুরু করলেন পিয়ন কালামকে। আর কালামও খুব স্মার্টলি পকেট থেকে একটি নোট প্যাড ও বল পয়েন্ট বের করে জানালা দিয়ে মিছিলটি দেখে নিয়ে কী যেনো টোকাটুকি করলো। এর পর সে বেশ ডাঁটের সঙ্গে বললো, এই ড্রাউভার! গাড়ি চালাও!

    এদিকে ওই সিনিয়র রিপোর্টার তো লজ্জায় পারলে সিটের নীচে মাথা লুকান।...

    সাংবাদিক না ছাই!
    _____________
    ১৯৭২-৭৩ সালের কথা। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশে দৈনিক 'পাকিস্তান অবজার্ভার’ নাম বদলে হয়েছে ‘বাংলাদেশ অবজার্ভার’। সে সময় এটি খুবই নামকরা একটি ইংরেজী কাগজ। আর ভাষাশৈলীও ছিলো চমৎকার। মদ্যবিত্ত বাবা-মা বাসায় অবজার্ভার রাখতেন, যেনো ছেলে-মেয়েরা পত্রিকাটি পড়ে কিছু ইংরেজী শেখে।

    সে সময় অফিস-আদালতে কম্পিউটার চালু হয়নি। কাজ-কর্মে টাইপরাইটারই ছিলো ভরসা। দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিকরাও সংবাদটি প্রথমে টাইপরাইটারে লিখতেন। পরে এটি সম্পাদনার পর ছাপা হতো প্রেসে।

    তো অবজার্ভারের এক সাংবাদিক বিয়ে করবেন; পাত্রী পক্ষ এক সন্ধ্যায় গোপনে অবজার্ভার অফিসে গিয়ে সাংবাদিকের কাজ-কর্ম দেখেও গেলেন। তারপর তারা আর বিয়েতে কোনোভাবেই রাজী নয়।

    পাত্র কাম সাংবাদিক দেখা করলেন মেয়ের বাবার সঙ্গে। মেয়ের বাবা তো মুখ খিঁচিয়ে উঠলেন, আমরা তোমার অফিসে গোপনে খোঁজ নিয়েছি। তুমি সাংবাদিক না ছাই; তুমি তো সেখানে টাইপিস্ট!

    সাংবাদিকের বিয়ের তিন বছর
    ____________________
    সংবাদিকদের প্রায়ই কাজ সেরে বাসায় ফিরতে ফিরতে গভীর রাত হয়ে যায়। কখনো কখনো ভোররাত।

    তো মিডিয়া পাড়ায় সদ্য বিবাহিত সাংবাদিকদের নিয়ে একটি গল্প খুব চালু আছে। গল্পটি এ রকম:

    বিবাহিত সাংবাদিক নাকী বিয়ের প্রথম বছরে অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলে ঢাকা দেয়া ভাত গরম; আর বউও গরম।

    বিয়ের দ্বিতীয় বছরে তারা অনেক রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত গরম; কিন্তু বউ ঠাণ্ডা।

    বিয়ের তৃতীয় বছরে সাংবাদিক গভীর রাতে বাসায় ফিরে দেখে টেবিলের ভাত ঠাণ্ডা; আর বউও ঠাণ্ডা!!

    ইত্তেফাকীয় সমাচার
    _______________
    পাকিস্তান আমলের কথা। পুনর্গঠিত দৈনিক ইত্তেফাকের দায়িত্ব নিয়েছেন ডাকসাঁইটের সাংবাদিক মানিক মিয়া। মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর পরিবর্তে কাগজটির মাস্ট হেডের নীচে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাঁর নামই ছাপা হচ্ছে।

    তো মানিক মিয়া ছিলেন খুব রাশভাড়ি লোক। সে সময় তো সাংবাদপত্রে এতো নিয়োগনীতির বালাই ছিলো না। আর মানিক মিয়া কারো ওপর ক্ষেপে গেলে কথায় কথায় তার চাকরী নট করে দিতেন।

    একদিন সকালে তিনি ইত্তেফাকের অফিসে মন দিয়ে একটি গুরুতর সম্পাদকীয় দেখছেন। খুবই স্পর্শকাতর লেখা...একটু এদিক-সেদিক হলে আইয়ুব খানের রোষানলে পড়তে হবে--এমন অবস্থা।

    এ সময় তার খাস পিয়ন ছালাম মিয়া তাকে চা দিতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়লো টেবিলের ওপর। মানিক মিয়ার লেখা-টেখা সব চায়ে সয়লাব; তার দামী স্যুটেও লেগেছে চায়ের দাগ।

    তিনি ঠাণ্ডা গলায় বললেন, ছালাম! তোর চাকরী নট!..

    সে দিন পিয়ন ছালাম মিয়া মন খারাপ করে বাড়ি ফেরে। পরে বউয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে এক ফন্দী আঁটে।

    পরদিন সকালে মানিক মিয়া ইত্তেফাক অফিসে ঢুকতে গিয়ে দেখেন সিঁড়ির ওপর পিয়ন ছালাম মিয়া, তার বউ-পোলাপানসহ বসে আছে।

    মানিক মিয়া আবারো ঠাণ্ডা গলায় বলেন, ছালাম! এসব কী?

    ছালাম একটু মাথা চুলকে বলে, স্যার, আপনি ইত্তেফাকে চাকরী দিসেন, সেই বেতনের টাকায় বিয়া করছি, বউ-পুলাপান হইছে। এখন আপনি চাকরী 'নট' কইরা দিছেন। আমি না হয় আর ইত্তেফাকে নাই, কিন্তু আমার বউ-পুলাপান--এরা তো ইত্তেফাকের সম্পত্তি। আপনি এদের বুইঝা লন, এহন থেইকা আপনিই এদের খাওয়াইবেন, পরাইবেন, পালবেন!

    মানিক মিয়া একটু থমকে যান। পরে মুচকি হেসে ছালামকে বলেন, শিগগির একটা রিকশা ডেকে এদের তোর বাসায় পাঠিয়ে দে। আর এখন থেকে আবার কাজে লেগে যা!

    চিত্তেফাক
    _______
    ১৯৭৩-৭৪ সালে কথা। বঙ্গবন্ধু সর্বহারা পার্টির উৎপাতে অতিষ্ট। এমন সময় ইত্তেফাকে একটি নিউজ ছাপা হলো, 'সর্বহারা প্রধান সিরাজ সিকদার দলীয় কোন্দলে নিহত।'

    সে সময় সিরাজ সিকদার নাকি পার্টির মুখপত্র 'স্ফুলিঙ্গে' ছড়া লিখে নিজেই এর জবাব দিলেন--

    "সব খবরের মাঝে থাকে
    একটি করে মিথ্যে-ফাঁক,
    সিআইএ গুজব রটায়
    খবর ছাপে ইত্তেফাক!"

    খোমাখাতা
    _______
    মিডিয়া পাড়ায় 'আবুল কিসিমের' সাংবাদিক নেহাত কম নেই। এদেরই একজন সাংবাদিক সাজ্জাদ ভাই। কনফার্ম ব্যাচেলর সাজ্জাদ ভাই আবার প্রযুক্তি-প্রতিবন্ধীও বটে।

    তো সম্প্রতি এক ক্ষুদে সাংবাদিক তাকে কম্পিউটার-ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান দিয়েছে। আর ফেসবুকে খুলে দিয়েছে সাজ্জাদ ভাইয়ের একটি অ্যাকাউন্ট।

    সাজ্জাদ ভাইয়ের ধারণা, ফেসবুক ওনার নিজেস্ব সম্পত্তি; এখানে উনি কী করলেন, কেউ বোধহয় তা টের পাবে না!

    একদিন তার খোমা খাতায় আমরা কয়েকজন ক্ষুদে সাংবাদিক উঁকি মেরে দেখি, তার বন্ধু তালিকায় যোগ হয়েছে ১১ জন। এদের মধ্যে মেয়ের সংখ্যা ১০ জন, আর মাত্র একজন ছেলে সাংবাদিক রয়েছেন। বালিকাদের মধ্যে আবার কয়েকজন নারী-সাংবাদিকও আছেন।

    আরো কিছুদিন পরে আমরা আবার তার খোমা খাতায় উঁকি মারি। দেখি সাজ্জাদ ভাই সাহসী হয়ে উঠেছেন। এক বালিকা সাংবাদিকের দেয়ালে 'চিকা' মেরেছেন:

    "ওগো সুইটি, তুমি কখন অনলাইনে থাকো? আমি তোমার সঙ্গে চ্যাট করতে চাই!"

    কিছুদিন পরে দেখা গেলো, সাজ্জাদ ভাইয়ের দেয়ালে তার একমাত্র ছেলে সাংবাদিক বন্ধু পাল্টা 'চিকা' মেরেছে:

    "সাজ্জাদ ভাই, আপনি দেখি আমার মতোই ভোদাই!"

    নাটকের 'পাট' প্রসঙ্গে
    _______________
    ২০০০-২০০১ সালের কথা। আরেক আবুল সাংবাদিক ছানি একেবারে কাঠ-বেকার। তার সারাদিনের রুটিন ওয়ার্ক-- সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ক্যান্টিনে বসে গুলতানি মারা, আর ক্যান্টিনে বাকীতে চা-সিগারেট, দুপুরের ভাত, বিকালের নাস্তা সারা।

    সে সময় জসিম নামে আরেক সাংবাদিক পেশা পরিবর্তন করে ইটিভি ও বিটিভির জন্য প্যাকেজ নাটক বানানো শুরু করলো। আর রাতারাতি ওর নাটকগুলোও খুব হিট করলো; জসিম হয়ে উঠলো শো-বিজ অঙ্গণের একটি দামী নক্ষত্র।

    তো রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসে আড্ডাবাজী করতে করতে আর টিভিতে জসিমের নাটকগুলো দেখে ছানির ধারণা হলো, সে-ও নাটকে নাম লেখাবে। অভিনয় করে রাতারাতি বিখ্যাত হবে; আর তখন শো-বিজই হবে তার পেশা।

    তো এক সকালে সে জসিমকে মোবাইলে ফোন করলো, দোস্ত, আমারে তুমার নাটকে একটা 'পাট' (পার্ট বা রোল) দেও। আমি একটু নিজেরে টিবিতে দেখাইয়া বিখ্যাত হইতে চাই।

    জসিম যতোই তাকে বোঝায় যে, অভিনয় একটি শিল্প, এর জন্য রীতিমত প্রশিক্ষণ থাকা চাই; থাকা চাই চর্চ্চা ও মেধা, ছানি ততোই নাছোড়বান্দা, না দোস্ত, আমারে যে কোনো একটা 'পাট' দেও...ডায়লাগ না থাকলেও চইলবো, যে কোনো একটা ছোট-খাট 'পাট'।

    এরপর তার চললো প্রতিদিনই তার টেলিফোনে ঘ্যানঘ্যান...জসিম শেষমেষ ছানির অত্যাচারে একেবারে অতিষ্ট। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ালো, ছানির নম্বর দেখলে জসিম আর টেলিফোন ধরে না। শেষে ছানি জসিমের শ্যুটিং স্পটে গিয়ে হাজির হতে লাগলো।

    অনেক ভেবেচিন্তে জসিম নিজেই একদিন ছানিকে টেলিফোন করলো, দোস্ত তুমার জন্য একটা 'পাট' রাখছি। তুমি রাজি থাকলে বলো।

    ছানি তো খুশিতে আটখানা, কী 'পাট' দোস্ত?

    -তেমন কঠিন কিছু না। এই নায়িকার বান্ধবীর একটা 'পাট'। ডায়লগ নাই। তুমারে ক্যামেরায় দুই-তিনবার ভালো কইরা দেখাইবো।

    --তাই বইলা মাইয়ার 'পাট'?

    - দেখো দোস্ত, পড়শু দিনই সকালে আমার গাজিপুরে শ্যুটিং। যে মাইয়াটার নায়িকার বান্ধবীর 'পাট' করার কথা ছিলো, সে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর অভিনয়টা এমন কিছু না, নায়িকার হঠাৎ মন খুব খারাপ। সে শালবনের ভেতর লেকের পাড়ে উদাস হইয়া বইসা আছে। পাশে তার বান্ধবী, মানে শাড়ি-চুরি-উইগ-লিপস্টিক পইরা তুমি। ...

    ছানি একটু আমতা আমতা করতে শুরু করলে জসিম তাকে বুঝিয়ে বলে, দেখো দোস্ত, তুমার ফিগার ভালো, এমন চমৎকার মেকাপ দিমু যে কেউ ধরতেই পারবো না, তুমি পোলা না মাইয়া। আর তাছাড়া আগের দিনে তো যাত্রা-নাটক-সিনেমায় ছেলেরাই মেয়েদের 'পাট' করতো। এতে এতো লজ্জার কিছু নাই। ... তুমি চিন্তা কইরা দেখো, নাটক তো হিট হইবোই; তারপর তুমি হইলা নায়িকার বান্ধবী। একবার যদি তুমারে নায়িকার মনে ধরে...। অবশ্য তুমি রাজী না হইলে অন্য কথা; আমারে বিকল্প খুঁজতে হইবো।

    এ পর্যায়ে ছানি চিৎকার দিয়ে ওঠে, দোস্ত, আমি রাজী! পড়শু সকালে আমি তুমার শ্যুটিং স্পটে আইতাছি!

    এরপর ছানি আর নিজেকে সামলাতে পারে না। রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাংবাদিকদের আড্ডায় জনে জনে বলে বেড়ায় তার এই 'সুখবর'। আমরা যারাই খবরটি শুনি, তারাই মুচকি হাসি, কিন্তু কেউ তাকে গোমর ফাঁস করি না।

    রিপোর্টার্স ইউনিটিতে 'সুখবর'টি প্রচার শেষে ছানি প্রেসক্লাবে গিয়ে জনে জনে একই খবর প্রচার করে বেড়ায়। এক বেরসিক সিনিয়র সাংবাদিক তাকে গোমরটি ফাঁস করে দিলে ছানি তো রেগে একেবারে আগুন।

    সে তখনই ফোন করে জসিমকে। কিন্তু কিছুতেই তাকে আর টেলিফোনে পায় না। কারণ জসিম ততক্ষণে মোবাইল ফোনের সিম পাল্টে ফেলেছে।...

    আমাদের সালেহ ভাই
    ________________
    বিএনপি সরকারের আমল। বর্ষিয়ান ছড়াকার-সাংবাদিক সালেহ ভাই কখোনো বিদেশে যাননি।

    বিএনপি সরকারের সঙ্গে তার সখ্যতার সুযোগে সালেহ ভাই একদিন তখনকার সাংস্কৃতিক মন্ত্রীর কাছে গিয়ে বললেন, শুনেছি আপনি নাকী একটি সাংস্কৃতিক দলকে জাপান পাঠাচ্ছেন। এই দলে আমাকেও নেন। আমি একটু জাপান ঘুরে দেখতে চাই।

    মন্ত্রী বললেন, কিন্তু সালেহ সাহেব এই টিমে সবাই তো মেয়ে; আমি তো আপনাকে এই টিমে বিদেশে পাঠাতে পারি না।

    সালেহ ভাই মাথা চুলকে বলেন, ইয়ে, অভয় দিলে বলি, আসলে ৬০ বছর বয়স হলে ছেলে-আর মেয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না!

    আবারো সালেহ ভাই
    _____________
    বিএনপি সরকারের সময়। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব হলেন পুরনো সাংবাদিক মোজাম্মেল ভাই। মোজাম্মেল ভাই আবার পান-প্রিয়তার জন্য বিখ্যাত।

    তো সালেহ ভাই একদিন মোজাম্মেল ভাইকে নিয়ে একটি ছড়া লিখলেন, সেখানে আবার এরকম একটি পংতি আছে:

    "প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাকী
    এখন মাতাল মোজাম্মেল!"

    তো মোজাম্মেল ভাই এ কথা শুনে মহাক্ষিপ্ত। সালেহ ভাইকে এক চোট দেখে নেয়ার জন্য প্রায়ই তিনি প্রেস ক্লাবে ফোন করে জানতে চান, সালেহ ভাই সেখানে এসেছেন কী না। কিন্তু অনেকদিন সালেহ ভাইয়ের কোনো খবর নেই।

    একদিন সকালে মোজাম্মেল ভাই প্রেসক্লাবে ফোন করে জানলেন, সালেহ ভাই সেখানে এসেছেন। তরিঘরি করে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে গাড়ি নিয়ে এলেন প্রেসক্লাবে। দেখেন সালেহ ভাই এক জমাট আড্ডায় ব্যস্ত।

    মোজাম্মেল ভাই সবার সামনে ওনাকে ধরে বসলেন, আপনি নাকী আমকে নিয়ে ছড়া লিখেছন?

    সালেহ ভাই নির্লিপ্ত গলায় বললেন, হুমম...লিখেছি, তো কী হয়েছে? তাছাড়া এটা লেখকের ব্যক্তি স্বাধীনতা। আমি কী নিয়ে ছড়া লিখবো, না লিখবো, সে কৈফিয়ত আমি কাউকে দেবো না!

    --দেখুন, আমিও কিন্তু আপনাকে নিয়ে এ রকম ছড়া লিখতে পারি।

    -আপনি পারলে লিখুন না; আপনাকে বাধা দিচ্ছে কে?

    --আমি এই মুহূর্তেই আপনাকে নিয়ে ছড়া লিখতে পারি।

    -আচ্ছা লিখুন তো দেখি!

    --শোনেন তাহলে:

    "ওরে আমার সালেহ
    বিএনপি হলি হালে,
    তোরে পোঁছে কোন ?ালে!"...

    __

    [আপাতত ইতি]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ নভেম্বর ২০১৩ | ১৪৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • নির্মাল্য | 168.144.60.104 (*) | ১৮ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:৩১45564
  • ধন্যবাদ, বেশ ভালো লাগলো । তবে ছানির গোমর ফাঁস-এর ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম না।
  • Biplob Rahman | 212.164.212.20 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৩ ০২:৪২45566
  • # নির্মাল্য, বোZলেন না? গোমার ফাঁস এইটাই, জসিম মেয়ে সাজিয়ে ছানিকে হাস্যস্পদ করতে চেয়েছিল! এইটি ফাঁস করে দেওয়া আর কি! এই বার বোZলেন তো! :)

    অনেক ধন্যবাদ।

    #aranya, আবারো সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ। চলুক। (Y)
  • aranya | 154.160.226.53 (*) | ১৯ নভেম্বর ২০১৩ ১২:১৬45565
  • উপাদেয়, উপভোগ্য ইঃ। ভাল লাগল
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন