এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বর্ষ শেষের বেদনা

    bip
    অন্যান্য | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ | ৮৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:২৮690018
  • (১)
    আমার বাংলা বানান এবং গঠন রীতি সত্যই এট্রোসিয়াস। যাকে বলে যাতা।

    ভাল লিখতে গেলে যত্ন আত্তি করতে হয়-শুধু লেখার আবেগে হাওয়া খেয়ে ফুরফুরে লিখতে গেলে, লেখাগুলোর অবস্থা যে ফকিরবাবার ছেঁড়া ফতুয়ার বেশী কিছু হবে না-তা বিলক্ষণ সত্য। আবার এটাও সত্য সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়াতে -কমিউনিকেশন স্টাইলটাই মুখ্য।

    বানান বা ভাষার বিশুদ্ধরীতি পান্ডিত্য দেখানোর নাট্যমঞ্চ হতে পারে-কিন্ত পাঠকের সাথে হৃদয় বিনিময়ের অন্তরায়। স্যোশাল মিডিয়ার সাথে মেইন স্ট্রিমের পার্থক্য হচ্ছে-এখানে পাঠকের রেসপন্সটা সব থেকে বেশী জরুরী। পাঠককে কমেন্ট করতে উৎসাহিত করে লেখাটিকে সমৃদ্ধ করা লেখকের মূল দায়িত্ব। লেখক যদি বিশুদ্ধ ভাষাচর্চা এবং অন্তহীন গবেষনা করে সোশ্যাল মিডিয়াতে লেখা নামান-পাঠকের ভূমিকা হয় গৌণ। সেটা মেইন স্ট্রিমে চলে-সোশ্যাল মিডিয়াতে চলে না। স্যোশাল মিডিয়াতে লেখকের মূল কাজ হচ্ছে নতুন চিন্তার জন্ম দেওয়া- বাকীটা লেখাটা গড়ে উঠুক পাঠকের হাতে।

    অভিজিত রায় এবং তার মুক্তমনা এই কাজটা খুব সাফল্যের সাথে করেছে। তার ফলও আমরা পেয়েছি হাতে নাতে। ২০১৫ সালে মুক্তমনার পাঁচজন ব্লগার খুন বা আক্রান্ত। এই নাড়া দিতে গিয়ে অভিজিত নিজেও শহীদ। মেইন স্ট্রিমের লেখকরা আছে বহাল তবিয়তে।

    বহুদিন আগে থেকেই লিখে এসেছি-স্যোশাল মিডিয়ার আগমনের ফলে রাজনৈতিক পার্টি এবং ক্ষমতাসীনদের বিছানাসঙ্গী হওয়া ছাড়া মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার আর বিশেষকিছু করনীয় নেই। তাদের বহুমূল্য পত্রিকার সাজগোজ, লে-আউট-গ্রাফিক্স-সবকিছুই সোনাগাছির রঙচং মাখা মেয়েগুলোকে মনে করিয়ে দেয়। হ্যা-প্রকারভেদত আছেই- কেউ হাই সোশাইটি কলগার্ল-কেও সরাসরি রাস্তায় দাঁড়িয়ে। আনন্দবাজারের সাথে ৩৬৫ দিনের পার্থক্য ওইটুকুই।
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:২৯690029
  • (২)
    তবুও এটা ধ্রুব সত্য আমার বাংলা খুব খারাপ। আশ্চর্য্য নই। কারন প্রতিভাতে বিশ্বাসী নই। চর্চায় আস্থা। যা চর্চা করি না-তার স্টান্ডার্ড খুব ভাল হওয়ার কথাও না।

    আমি যে বাংলায় দুলাইন লিখতে পারি-সেটা আমার কাছে পরম আশ্চর্য্যের। কেন সেই গল্পটাই লিখি। কারন অনেকেই দেখে আমি দিস্তার পর দিস্তা ভুল বানানে ভর্তি বাংলা লিখে চলেছি। অবিরাম, অফুরন্ত। কিন্ত কেউ এখনো জানে না-আমি কে-কোন পরিস্থিতিতে লিখি। কেনই বা লিখি।

    ছোটবেলায় বাংলা, সাহিত্য বা লেখালেখি-এসবে উৎসাহ ছিল না। কবিতা লাগত দুর্বোধ্য। বই প্রচুর কিনতাম। সব অঙ্ক বা বিজ্ঞানের বই। পরীক্ষার জন্য সেসব বই না। নিখাদ বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা থেকেই কিনতাম সেসব বই। আর বাবা ছিল ব্যার্থ রিটার্ড রাজনীতিবিদ। নিজে বাম রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে, বোধ হয় মনে কোথাও আশাছিল ছেলে রাজনীতিতে কিছু করবে। ফলে বাবা ছোটবেলাতে এনে দিত অনেক ইতিহাসের বই। বিজ্ঞানের পাশাপাশি ইতিহাসেও তৈরী হয় গভীর অনুরাগ। সাহিত্য, লেখালেখির ধারে কাছ দিয়ে যাই নি কোনদিন। বড়জোর শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসগুলো পড়ে ফেলেছিলাম গরমের ছুটিগুলোতে।

    শরৎচন্দ্র ত বেশ একঘেঁয়ে লাগত। সেই শালার পাঠশালা আর ক্ষেতক্ষামারিতে বাল্যপ্রেম-জাত ফাতের সমস্যা-ফলে প্রেমিকার বিয়ে বয়স্ক লোকের সাথে-আর তারপরে বিধবা হয়ে ফিরে এসে- দেহহীন, পাপবিদ্ধ পরকীয়া। বিধবাকে নিয়ে পালালেও বেশ রোমাঞ্চকর কিছুর সম্ভাবনা থাকে-কিন্ত সেসব কিছু নেই-শুধু জোলো ঘ্যানঘেনে প্লেটোনিক মনকষাকশি।

    উচ্চমাধ্যমিক যখন শেষ করলাম নরেন্দ্রপুর থেকে তখন একটাই সাহিত্যগ্রন্থ কিছুটা ভালো লেগেছিল-রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলী। সেই কৃতিত্বটাও সত্যদার ( স্বামী সূপর্নানন্দ মহারাজ) প্রাপ্য। উনি উপনিষদ দর্শন এত সুন্দর বুঝিয়েছিলেন, গীতাঞ্জলীর প্রতিটা লাইন মাথায় রেজোনেট করত।

    তাছাড়া আশেপাশেও যে খুব একটা বাংলা সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুদের ভীর তাও না। গ্রামে দুএকজন সাহিত্যপ্রেমী কাকু ছিল-তাদের বাড়িতে দেশ পত্রিকা আসত। আধুনিক সাহিত্য বা বুদ্ধিচর্চার সাথে যোগ ওই ছোট্টা পাক্ষিকটা দিয়েই। তাও বুঝতাম খুব সামান্য। নাটক গাণ বাজনার চর্চা ভালোই ছিল করিমপুরে-কিন্ত ওভারওল ওই ভাবে গভীর সাহিত্যপ্রেমী বন্ধু ছিল না। থাকার কথাও না।

    বাল্যবন্ধুদের অধিকাংশের বাবারই করিমপুর বাজারে বিজনেস। ক্লাস এইটে উঠতেই দেখলাম, অনেকেই বাবার দোকানে বসছে নিয়মিত। ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সাহিত্যিক বিজ্ঞানী হওয়ার এস্পিরেশন আশেপাশে ছিল না। তবে ক্রিকেট নাটকে সবার প্রবল উৎসাহ। আমার বড় হয়ে ওঠা ইন্টেলেকচুয়াল সেন্টার থেকে অনেক অনেক দূরে।

    আর নরেন্দ্রপুরে উচ্চমাধ্যমিকে যখন ভর্তি হলাম, চারিদিকে কেরিয়ারিস্ট ছেলেপুলে। সবাই আই আই টি বা বেঙ্গল জেইইতে ভাল র‍্যাঙ্ক করতে চব্বিশঘন্টা খাটছে। বন্ধুদের সাথে অধিকাংশ সময় আলোচনা-ওই ইরোডভের প্রব্লেমটা হল কি না -এই ইঙ্ক্যোয়ালিটিটার সল্যুউশন কেউ জানে কিনা! সবাই সোনামাণিকের মতন অঙ্ক আর ফিজিক্সের প্রব্লেমের সল্যুউশন খুঁজছে। সাহিত্য ফাহিত্য ছায়াপথের জিনিস। পরীক্ষার দুদিন আগে বাংলা নোটমুখস্থ করে উচ্চমাধ্যমিকে উৎরাতে হবে-ওই নোট সাহিত্যই সার জীবনে। নরেন্দ্রপুরের স্পেকট্রামটা হল মফঃশহর থেকে আসা গাঁতানো কেরিয়ারিস্ট পাব্লিক। জনতা জি এই এই জনার্দন।
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩০690035
  • (৩)
    উচ্চমাধ্যমিকের পর যখন আই আই টি খরগপুরে ঢুকছি-তখন আমি সাহিত্যে বেশ অশিক্ষিত। তখনো মাথার মধ্যে বিজ্ঞানী হওয়ার উদোম ইচ্ছা। যদিও আই আই টি খরগপুরে সাহিত্য অনুরাগী ছাত্র ছিল অনেক-তবে বাংলা সাহিত্যে নয়।

    সাহিত্যানুরাগের শুরু সেকেন্ড ইয়ার থেকে। থাকতাম আজাদ হলে। এটা আই আই টির প্রাচীনতম হোস্টেল। আজাদ হলের লাইব্রেরীতে বিশ্বসাহিত্যের বিরাট ভান্ডার। সমৃদ্ধ কালেকশন।

    বাংলা নাটকের প্রতিযোগিতা হত বছরে দুবার। সেই সূত্রেই একবার হলের নাটকের গ্রুপের ছাত্ররা মিলে ঠিক করলাম-নিজেরা স্ক্রিপ্ট নামাবো। অন্যহলে তখন বাদল সরকারের ভোমা বনাম এবং ইন্দ্রজিত। বাদল সরকারে মগ্ন প্রায় সব হলের ছেলেরা। আমার উইঙ্গের পাবলিকগুলো একটু এন্টি বাম। বলে দুঃশালা -বাংলা নাটক মানেই বাম। ফলে সিদ্ধান্ত- নিজেরাই লিখব।

    মুশকিল হচ্ছে আমাদের উইংটা ছিল কোলকাতার বাঙালীতে ভর্তি। যারা শুক্কুর বার হলেই ট্রেন ধরে কোলকাতার বাড়িতে ফেরে প্রেমিকাদের সাথে দেখা করার জন্য। আমিই একমাত্র গ্রাম থেকে আসা ছেলে। বাড়ি হোস্টেল থেকে অন্তত নঘন্টার পথ। ফলে উইকেন্ডে হোস্টেলেই থাকতে হয়। ওরা বলল্লো-এই তুই ত উইকেন্ডে কোথাও যাস না- তুই একটা স্ক্রিপ্ট নামিয়ে দে।

    আমি ভাবলাম দেখি ট্রাই মেরে। নিজে নতুন লিখব-এমন ক্যাপা নেই। ফলে একটা বিদেশী নাটকের ভাবানুবাদ নামানোটা হবে সেফ খেলা। কিন্ত কার নাটক নামানো যায়?

    সাহিত্যে তখনও আমার জ্ঞান খুব লিমিটেড। উচ্চমাধ্যমিকে বাংলায় মার্কস তোলার জন্য ছোটগল্প প্রসঙ্গে চেকভের নামটা ঠুকতে হত। ওই বাঙালীর দুচারটে নাম ড্রপ না করলে-মার্কস ওঠে না আর কি। ভাবলাম বাংলা ছোট গল্প থেকে স্ক্রিপ্ট নামালে ত চোতা ধরা খেয়ে যাব। ফলে চেকভের কোন গল্প থেকে নামিয়ে দিই। হলের লাইব্রেরীতে চেকভের পাঁচটা ভল্যুমের সম্পূর্ন কালেকশন।

    লেখক সিলেকশন ? ডান। কিন্ত কোন গল্প? চেকভের কোন গল্পই পড়ি নি কোনদিন । অগত্যা এক হপ্তা ধরে চেকভ পড়ি। এই একটা সপ্তাহ-আমার জীবনের গতিপথটাই বদলে যায়। ফরেভার। কোন গল্পটা এখন নাম মনে আসছে না-কিন্ত গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক কিশোর-সকাল থেকে বিকেল জানালার দিকে তাকিয়ে। জানালা দিয়ে বাইরে ছোট্ট নদী বন্দর। চাষীরা মাল নামাচ্ছে-ফরেরা নৌকা থেকে মাল নামা মাত্র হাঁকডাক করছে নিলামে সেগুলি তক্ষুনি কিনে নেবে।

    আমি তখন ঘোরে মধ্যে। করিমপুরে আমার বাড়ির সামনে খড়ে নদী-সামনে বক্সীপুরের ঘাট। নদীটা তখনো বেঁচে- কত নৌকার আনাগোনা। কতদিন গেছে বই খুলে শুধু নদীর সামনে তাকিয়ে নৌকা থেকে মাল ওঠা নামা দেখেই কাটিয়ে দিয়েছে আমার ভাবুক কৈশোর। একজন লেখক -যে ভারতীয়ও না-জন্মেছে আমার দেড়শো বছর আগে কত দূরে রাশিয়াতে-সে যে আমার শৈশবকে ওমন নিঃখুত ভাবে টাচ করে যাবে-এসব কোনদিন কল্পনাতেও ছিল না।

    ওই যে চেকভ থেকে শুরু হল-আস্তে আস্তে গোর্কি, টলস্টয়, ডস্টভয়েস্কি সব কিছুতেই ডুব দিতে থাকলাম। রাশিয়ান সাহিত্য ছাড়াও ইটালিয়ান, জার্মান, ল্যাটিন সাহিত্যে হাতখড়ি হল। ইটালিয়ান লেখক আলবার্টো মোরাভিয়া বিরাট ভালো লেগে গেল। কাফকার মেটামরফোসিস সম্পূর্ন অন্য অভিজ্ঞতা। ওক্টোভিও পাজ এবং পাবলো নেরুদার লেখাতে অন্য স্বাদ। আবার স্ক্যান্ডেনেভিয়ান সাহিত্যর গভীরতা মনোমুগ্ধকর । ইবসেন, হামসান, গুস্টাফ ফ্রডিং এরা অন্য জগতের বাসিন্দা। নো ওয়ান্ডার স্ক্যান্ডেনেভিয়ান সাহিত্য সব থেকে বেশী নোবেল প্রাইজ পেয়েছে।

    ফোর্থ ইয়ার পর্যন্ত ফিজিক্সটাও মোটামুটি সিরিয়াসলি পড়ছিলাম। ব্যাচের বাকী সবাই এর মতন জি এর ই, টোয়েফেল দিয়ে পি এই চ ডি করতে আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়-এই ছিল আমাদের বিশ্ববিভূবন।

    যদ্দিন ফিজিক্স পড়তে হয়েছে, মাথা তাও ঠিক ছিল। আমাদের ব্যাচটাও ছিল খুব ভাল। আমার ডিপার্টমেন্টের ব্যাচমেটদের প্রায় সবাই আমেরিকা বা ইউরোপে প্রতিষ্ঠিত নামকরা ডাকসাইটে অধ্যাপক এখন। নিজেদের মধ্যে নানান বিষয়ের চর্চা ছিল ব্যপক। ফিজিক্স পড়ার ওই একটা পজিটিভ সাইড-ব্যাচমেটরা ছিল বিজ্ঞানের জন্য ডেডিকেডেড প্রাণ।

    কিন্ত যেই আমেরিকা যাওয়ার সময় এগিয়ে আসে- ফাইনাল ইয়ার থেকে বিজ্ঞান চর্চা বাদ দিয়ে জি আর ই তে পারফেক্ট স্কোরের পেছনে ছুটতে হল, কিছুতেই ফোকাস করতে পারলাম না। কোন ইন্টারেস্ট পেলাম না।

    ফাইনাল ইয়ারে- সব বিষয়ে ইন্টারেস্ট হারিয়ে ঝেঁটিয়ে বিশ্বসাহিত্যের নেশায় পেয়ে বসল। জি আর ই র দুদিন আগেও আমি চুটিয়ে ক্রাইম এন্ড পানিশমেন্ট পড়ছি। আমেরিকা, ফিজিক্সের নেশা গেছে কেটে। এক অদ্ভুত ঘোরের দুনিয়ায় কাটিয়েছি ফাইনাল ইয়ারে। ইনফ্যাক্ট আমি তখন ঠিক করেই ফেলেছি-আর নিজেকে কষ্ট দিয়ে লাভ নেই। ইনকাম করাটা ফ্যাক্টর না-যেহেতু আই আই টি জেইই এর জন্য ফিজিক্স এবং ম্যাথ আমি পড়াতাম। আই আই টির টিউটোরিয়াল গুলোতে পড়ালে, ইঞ্জিনিয়ারিং এর থেকেও বেশী ইনকাম। ফলে আরো সাহিত্যের নেশা পেয়ে বসল। তবে আমি কিছু লিখছি না তখনো। শুধুই পড়ছি-আর প্রত্যেকটা লেখক এক অজানা অচেনা দুনিয়া খুলে দিচ্ছে।

    বাড়িতে জানালাম-আমি আমেরিকাতেও যাচ্ছি না-পি এই চ ডিও করছি না। আই আই টির জন্য টিউটোরিয়াল খুলে পড়াব। কারন ও কাজটা আমি ফার্স্ট ইয়ার থেকে করছি-আর ফালতু ঝামেলা করে কি হবে! বাবা মা এসব শুনে ভীষন আপসেট।

    এমন সময় এস বি আই ব্যাঙ্কের কাউন্টারে প্রফেসার রঞ্জন গাঙ্গুলীর সাথে দেখা। উনি আমার বন্ধু সম্রাটের বাবা। টেলিকম ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক। বল্লেন -কোন ইউনিভার্সিটিতে পি এই চ ডি করতে যাচ্ছ!

    খাইছে কাজ। আসলেই আমি ওসব কিছু করছি না। করার ইচ্ছাও ছিল না। শুধু বল্লাম এখনো কিছু প্ল্যান করি নি।

    ফলে উনি বল্লেন উনার কাছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের একটা প্রজেক্ট আছে-যাতে অপটিক্স ভাল জানা একজন দরকার। টেলিকমটা উনি শিখিয়ে দেবেন। অপটিকাল কমিনিউকেশন সেই ১৯৯৬ সালে উঠতি একটা ইঞ্জিনিয়ারিং এরিয়া- সর্বত্র ইন্টারনেট আসছে-আর অপটিক্যাল কমিউনিকেশন ছাড়া ইন্টারনেট সম্ভব না। ভাল ফিউচার।

    ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার প্ল্যান ছিল না। কোন কালেই ছিল না। সাহিত্য চর্চার জন্য কোলকাতায় ফিরব। টিউশন করতে গেলেও থাকার একটা জায়গা চাই। আই এই এস আই তে কম্পু সায়েন্সের এম টেকের এডমিশন টেস্টটা উতরে গেছি। ভাবছিলাম ওখানেই এডমিশন নিই। এমন অবস্থায় স্যারের অফারটা নিয়ে ভাবলাম। মোদ্দা কথা যেটা টানল-এদ্দিন ফিজিক্স যা শিখেছি-তা ফেলে দিতে হবে না-আবার ফিজিক্স নিয়ে পি এই চ ডিও করতে হচ্ছে না-অপটিক্যাল কমিনিউকেশন সাবজেক্টটা তখন টপ গিয়ারে। আই আই টির হোষ্টেল ছাড়তে হচ্ছে না। আর টিউটোরিয়ালের জন্য হলদিয়ার মতন উঠতি টাউনশিপ থেকে অফার খোলা। ফলে সব ভেবে দেখলাম, খরগপুরেই থেকে যায়। সাহিত্যের বই টই ও এখানেই পাওয়া অনেক সহজ!

    পি এই চ ডি শুরুর প্রথম ছমাস কেটেছে রাজকীয়। শুধুমাত্র রোব্বারে আই আই টির জন্য পড়িয়ে, ফেলোশিপের থেকে তিনগুন ইনকাম । আর হাতে কাঁচা টাকা আসলে প্রেমিকাও জুটবে। ফলে প্রেমিকা, নাটক, কবিতা, টিউটোরিয়াল-ইত্যাদি নিয়ে রিসার্চের কাজ হয়ে গেল গৌন। আর স্যারও থাকতেন প্রজেক্টের কাজে ইটালিতে। ফলে প্রথম ছমাস প্রেম, প্রেমের কবিতা আর নাটকটাই হল বেশী।

    এবার ছমাস বাদে স্যার দেখলেন কাজ এগোয় নি। যেহেতু আন্তর্জাতিক প্রজেক্ট-ছমাস অন্তর অন্তর লন্ডন, ইটালির পার্মা শহর আর খরগপুরে মিটিং বসত- নিজেদের অগ্রগতি নিয়ে ডিটেলেসএ আলোচনা, আদন প্রদান ইত্যাদি। উনি বল্লেন এইভাবে কাজ করলে পি এই চ ডি ছেড়ে দাও। আমিও দেখলাম-বড্ড ফাঁকি মারছি। এখন যেভাবে লেখালেখি করি আর কি।

    তবে প্রেমিকাকে ত আর ছাড়া যায় না, বাকী এক্টিভিটি গুলোই ছাড়তে হল। বহুদিন বাদে আবার সিরিয়াসলি অঙ্ক, বিজ্ঞান, প্রযুক্তিতে ব্যাক। পরবর্তী দুই বছরে আমি দুটো গুরুত্বপূর্ন কাজ করি-যার থেকে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পেপার হয়ে গেল সহজেই। ইটালিয়ান কাউন্টারপার্টরা বললো ওদের দেশে এসে পি এই চ ডির বাকী কাজ করতে। তবে সেটা হয় নি। কিন্ত ইটালিতে একটা কোম্পানী যারা আমার ফিল্ডেই সফটোয়ার বানাচ্ছিল-তারা ইন্টার্নশিপ দেয়। যেহেতু আমার নিজের ফিল্ডেই কাজ- ইটালির তুরিন শহরে চলে গেলাম ১৯৯৯ সালে। ওখানেই প্রথম ইন্ড্রাস্টি এক্সপোজার। বুঝালাম একাডেমিক্স এবং ইন্ডাস্ট্রি পুরো আলাদা। পি এই চডির শেষের কাজগুলো করি তুরিন শহরেই-তুরিন পলিটেকনিকের পাইরোলুইজি ছিলেন আমার লোক্যাল গাইড-এই লোকটা শুধু বিখ্যাতই না-মানুষ হিসাবেও ছিলেন অসাধারন।

    কিন্ত যা হয়-একটা ভাল পেশাদারি বৃত্তে ঢুকলে-চারিদিকে লোকজন ভীষন সিরিয়াস। দারুন সব কাজ করছে। ফলে তাল রাখতে নিজেকেও ফোকাসে রাখতে হয়। ফলে আস্তে আস্তে কবে সাহিত্যের নেশাটা ঘুচে গেছে টের পাই নি। আসলে তখন অপটিক্যাল কম্যুনিকেশনে বিশাল ইনভেস্টমেন্ট-বিরাট সম্ভাবনা। সিকামোর, সিয়েনা, করভিসের মতন কোম্পানীগুলো-কোনরকমে প্রযুক্তি বার করে একটা ফিল্ড ট্রায়াল দিয়েই বিলিয়ানার হতে শুরু করে। আর যেখানে টাকা সেখানে প্রতিযোগিতাও তীব্র।

    পি এই চ ডি শেষ করার আগেই আমেরিকাতে দুটো চাকরি পেলাম। দুটোই সিক্স ডিজিট স্যালারি। আমাদের সময় ইন্ডিয়াতে পি এই চ ডি করে এসব ভাবা যেত না। এখন অবশ্য গুগলে বিটেকের ছেলেরাও ওই ধরনের অফার পাচ্ছে। আমাদের ফিল্ডে প্রচুর টাকা- ব্যাঙের ছাতার মতন স্টার্টাপ-কিন্ত ট্রেইন্ড লোক নেই। এবং প্রত্যেকের দাবী পরের দিন যোগ দিতে হবে। যাইহোক, আমি থিসিস সাবমিট করে পরের দিন বিয়ে করি। সেই দিন রাতেই আমেরিকার প্লেনে।

    ভাববেন না উপন্যাস লিখছি। তখন সবাই টেলিকম স্টার্টাপ খুলে ভাবছে মিলিয়ানার বিলিয়ানার হবে। অনেকে হয়েও গেছে। আমি ইটালির আর্টিস কোম্পানীটার হয়ে যাদের জন্য সিমুলেশন মডেলিং করতাম-তাদের অনেকেই আমেরিকান স্টার্টাপ এবং স্টকঅপশনে মিলিয়ানার । আমি তখন অন্য ঘোরের জগতে। ভাবছি এরা যদি আমেরিকান স্বর্গরাজ্যে মিলিয়ান কামাতে পারে স্টার্টাপে-আমিও পারি!! ফলে রেজিস্ট্রি বিয়েটা সেরে, সেই রাতেই আমেরিকান স্টার্টাপে দৌঁড় ইস্টকোষ্টে ফেব্রুয়ারী মাসের ঠান্ডায়।

    তখন কোথায় সাহিত্য! সপ্তাহে সাতদিনই খাটি। বারো থেকে চোদ্দঘন্টা। আশা আগামী বছরেই স্টার্টাপটা কেউ কিনে নেবে বা আই পি ও হবে। ইনফ্যাক্ট একদম প্রথম দিকের কর্মী হওয়াতে প্রচুর স্টক অপশন ছিল আমার। সাকসেসফুল হলেই লটারী টিকিট-কয়েকশোকোটি টাকার স্বপ্ন । আর সেই লোভে প্রচুর গাধার খাটুনি।

    ঘোর ভাংল ২০০২ সালেই। কোম্পানীর অর্ধেক লোক ছাঁটাই-কারন সেকেন্ড রাউন্ড ইনভেস্টমেন্ট তুলতে পারল না। তখন সব টেলিকম স্টক গাধার ঘারে। মোহভঙ্গের বৃত্ত সম্পূর্ন হয় ২০০৩ সালের এপ্রিলে। আমাদের কোম্পানিটা সেকেন্ড রাউন্ডের অভাবে ভেরাইজনে ট্রায়ালে যেতে পারল না। মিলিয়ান ডলার দিয়ে যেসব সুইচ বানানো হয়েছিল-সেসব লোকেরা খুলে নিয়ে চলে গেল! কি অদ্ভুত ঘটনা। একেকটা অপ্টিক্যাল আমপ্লিফ্যায়ারের দাম দশ বিশ লাখের ওপরে। বেমালুম যে যা পারছে খুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি অবশ্য দুটো সিস্টেম তুলে নিয়ে গিয়ে আই আই টি চেন্নাইকে দান করে দিয়েছিলাম। এত খেটে যেগুলো বানিয়েছি-অন্তত কিছু ছাত্ররা তার থেকে উপকার পাক।

    দুশো কোটি টাকা দিয়ে বানানো একটা সিস্টেম লোকে আস্তে আস্তে খুলে নিয়ে যাচ্ছে-ওই দৃশ্য কোনদিন ভুলবো না। ক্যাপিটালিজম কত নিষ্ঠুর হতে পারে -তার ফার্স্টহ্যান্ড অভিজ্ঞতা। ওটাত শুধু দুশোকোটি টাকার গল্প না- গত দুই বছরে আমি এবং আমার চল্লিশজন কলিগের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে গড়ে উঠেছিল সেটা। রাত চারটে পাঁচটা পর্যন্ত কাজ করতাম কজনে মিলে। ওটাই ছিল আমাদের কোটি কোটি টাকার স্বপ্নের সৌধ। একদিনে দুঘন্টায় সব শেষ। আমি যেন উপনিষদের গল্পের নারদ। নারায়ণ আমাকে দেখাচ্ছেন-একদিন আমি সম্রাট -পরের দিন যুদ্ধে হেরে হঠাৎ ভিখিরি-সবটাই স্বপ্নে। " মায়া" কি বস্তু-সেই শিক্ষা দিতে নারদকে স্বপ্নের জগতের সম্রাট বানিয়েছিলেন নারায়ন।

    বুঝলাম ধণতন্ত্রে সবই মায়া। আবেগ, প্যাশন এসব থাকা ভাল-কিন্ত শেষ কথা বলবে মার্কেট। ধণতন্ত্র আসলেই জঙ্গল। শিকার উঠতেও পারে। আবার শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলের নিয়মে লাশ হওয়াটাও বিচিত্র না।
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩১690036
  • (৪)
    ভগ্ন হৃদয়ে নতুন চাকরি নিয়ে আসি ক্যালিফোর্নিয়াতে ২০০৩ সালের শেষে। ক্যালিফোর্নিয়া স্বর্গরাজ্য। প্রকৃত অর্থেই। তখন আর মিলিয়ান বিলিয়ানের স্বপ্ন দেখি না। বহুদিন গান সাহিত্য প্রকৃতি কোন কিছুই উপভোগ করি্নি। স্টার্টাপ আসলে প্রেসারকুকার । ওখানে শুধু সিদ্ধ হয়েছি।

    নতুন চাকরিটা সেই সুযোগ করে দিল। চাকরি সূত্রে গোটা ক্যালিফোর্নিয়া ঘুরতে হত। ফলে কোম্পানীর পয়সায় ঘোরার এলাহি সুযোগ। ক্যালিফোর্নিয়া এমন এক রাজ্য-যার প্রতিটা কর্নারে আমি ঘুরেছি কর্মসূত্রে। ক্যালিফোর্নিয়ার অপার সৌন্দর্য্য এবং আবহাওয়াতে আবার একটু একটু করে নিজেকে ফিরে পাচ্ছিলাম।

    জীবনের এই সন্ধিক্ষণে অভিজিত রায় এর সাথে অনলাইনে দেখা। আসলে বড় কোম্পানী-প্রায় মনোপলি-প্রচুর লাভ-কাজের চাপ কম-হাতে অঢেল সময়-বৌ দেশে গেছে মাস্টার্স কমপ্লিট করতে-এমন সুলুক্ষুনে সময়ে আমার জীবনে এল অভি। দেখলাম ছেলেটা অনলাইনে লড়ে যাচ্ছে। কখনো ইসলামের বিরুদ্ধে, কখনো কমিনিউস্টদের বিরুদ্ধে, কখনো হিন্দুত্ববাদিদের বিরুদ্ধে। ওদের একটা ছোট ওয়েব সাইট ও আছে।

    ১৯৯১ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ২০০৪ সালে অভির সাথে দেখা হওয়ার আগে কবার বাংলা লিখেছি -বোধ হয় হাতে গুনতে পারি। সেই পি এই চ ডির প্রথম বছরে যে নাটক লিখেছিলাম-সেটাই আমার শেষ লেখা। এরপরে দীর্ঘ আট বছর বাংলায় একটা শব্দও লিখি নি। বাংলা সফটোয়ার গুলো বিধঘুটে লাগত। ফলে মুক্তমনাতে প্রথম বছরে ইংরেজিতেই লিখতাম। অভি আমাকে বর্নসফট বলে একটা সফটোয়ার দিল। বললো ওটাতে চেষ্টা করে দেখ।

    ফ্রাংকলি স্পিকিং আমি ভাবিও নি-এত দীর্ঘদিনের অনভ্যাস কাটিয়ে কি করে বাংলায় লিখব। আদৌ লিখতে পারব কি না। দেখলাম লিখতে পারছি। কিন্ত বানানের বাবা মা এক করে দিয়েছি । অভিকে বল্লাম এই অবস্থা। ও বললো-আরে ছাড় ত-বাংলায় আমরা লিখছি-এটাই আসল কথা। সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা বানানের খুঁত ধরে তাদের ধান্দা অন্য। যাদের মধ্যে জ্ঞান পিপাসা আছে, তারা নিশ্চয় পড়বে। এইভাবে আমার বানান ভুলে ভরা একটা প্রবন্ধ ও মুক্তমনা সাইটে ছেপে দিল।

    ব্যস সেই শুরু। বানানের চাপ নেই দেখে, প্রাণ খুলে লিখতে লাগলাম। তখন হাতে সময় ছিল- ফলে অনেক পড়াশুনো করে পি ডি এফ গুলো নামাতাম। বানান ভুল থাকত। তবে এখনকার মতন ফাঁকিবাজি ছিল না। ইনফ্যাক্ট ২০০৫-২০০৬ পর্যন্ত মুক্তমনাতে সব থেকে বেশী লিখেছি আমি। অভির থেকেও অনেক বেশী। ও ঠাট্টা করে বলত তুমিই মুক্তমনা চালাচ্ছ। ওর ওটা পি এই চ ডি শেষ করার বছর। ও খুব একটা বেশী লিখত না তখন পি এই চ ডি শেষ করার চাপে। আমাকেই লিখতে বলত নানান ইস্যুতে।

    এই সময় আরেকটা ঘটনা -জনাব কুদ্দুস খানের সাথে পরিচয়। উনি ক্যালিফোর্নিয়ার বাংলাদেশীদের জন্য ভিন্নমত নামে একটা পাক্ষিক প্রিন্ট ম্যাগাজিন চালাতেন। একটা ওয়েব এডিশন ও ছিল। ২০০৫ সালের সেপটেম্বর মাসে উনি প্রস্তাব দিলেন চল দুজনে মিলে এটা চালায়-আরো বড় করি। তখন বাংলা লেখার এক বছর পূর্ন হয়েছে-ভরপুর কনফিডেন্স -আমিও লিখতে পারি। ফলে আমরা দুজনে মিলে ভিন্নমতকে ভারতীয় বাঙালী এবং বাংলাদেশীদের জন্য পাক্ষিক ম্যাগাজিন হিসাবে গড়ে তুলি। ক্যালিফোর্নিয়া, এরিজোনা এবং নেভাদার প্রতিটা বাঙালী গ্রসারি স্টোরেই পাওয়া যেত। ৩২ পাতার নিউজ ট্যাবলয়েড। কুড়ি পাতার বিজ্ঞাপন -সব বাংলাদেশ গ্রসারীর। তিন হাজার কপি ছাপাতাম। লাভ হত না। আবার লস ও হত না।

    এ এক বিরল অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ কমিউনিটিকে ক্লোজ থেকে জানার। আমি দেখেছি বেশ কিছু বাংলাদেশী মুদিখানার দোকানী এবং রিয়াল এস্টেটের এজেন্ট সাধ্যের বাইরে গিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাহায্য করেছেন-যে প্রবাসে একটা বাঙালী নিউজ পেপার টিকে থাকুক। আবার লস এঞ্জেলেসের বাংলাদেশী মসজিদে ভিন্নমত ম্যাগাজিন পোড়ানো হয়েছে, মহম্মদ আসগার কোরান নিয়ে প্রশ্ন তোলায়।

    সব বিজ্ঞাপন আসত বাংলাদেশীদের কাছ থেকে। ফলে প্রশ্ন উঠল-তাহলে পশ্চিম বঙ্গ বা ভারতের জন্য ৫০% পেজ ছাড়া হবে কেন? ভারতীয় বাঙালীরাত সব চাকরিজীবি। জনাব খান হাই হাই করে উঠলেন। বল্লেন আরে ওটাই ত ইউ এস পি। আমাদের প্রতিযোগী ছিল নিউয়ার্ক থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশী ম্যাগাজিন ঠিকানা। তারা ১০০% বাংলাদেশী ফোকাস। ১০,০০০ সার্কুলেশন। কিন্ত আমাদের যারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সেই বাংলাদেশী গ্রসারদের কাস্টমার আবার ভারতীয় বাঙালীরা। তারা ত চাইছে এমন পেপার যা দুই দিকের বাঙালীদের কাছেই যাক।

    আমি সেই দিন বুঝেছিলাম একমাত্র মার্কেটই পারে জাতি ধর্মকে মেশাতে! ব্যবসার একমাত্র জ্ঞাতি, জাতি, ধর্ম হচ্ছে কাস্টমার।

    ইনফ্যাক্ট সেখান থেকেই আমার সখের জার্নালিজমের শুরু। সম্পাদকের নেশা বড় নেশা। বাংলাদেশীদের মধ্যে আমি অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে উঠি। আসলে ওরা হিন্দু বলতে বুঝত-রক্ষণশীল কিছু লোক-যারা বাংলাদেশী মুসলমানদের সামনে চুপসে থাকে-পেছনে গালি দেয়-গরু খায় না। সব বাংলাদেশী প্রোগ্রামে আমার আমন্ত্রন ছিল-এগুলো কভার করার কথা ছিল কুদ্দুস ভাই এর। কিন্ত উনি বল্লেন, এদের মধ্যে এত দলাদলি-আমি লিখলে সমস্যা আছে। তুমি বাইরের লোক। তোমার রিপোর্টিং হবে সেফ। সম্পাদক হিসাবে খাতির, পার্টি-খাওয়া দাওয়া-বৌদিদের কাছে এক্সেস। তাদের আবদার যেন তাদের সেরা ফটোটা যায় ম্যাগাজিনে। এসব বৌদি সুন্দরীদের মধুময়ী হাঁসি কি আর স্টার্টাপ করে পাওয়া যায়? বৌদিদের জীবনের চাইচাপা যৌবনের আগুন সম্পাদক না হলে থোরিই না বুঝতাম!

    সত্যিই এ এক অন্য জীবন। করিমপুর ছাড়ার পর থেকে একাডেমিক এলিটদের আশেপাশেই জীবন কেটেছে। আবার ব্যাক টু নর্মাল।

    তবে আসল যে শিক্ষাটা পেলাম সেটা হচ্ছে এই যে মুসলমান -হিন্দু সম্প্রদায়ের মিলন সম্ভব। কিন্ত দুটো সম্প্রদায়ের লোকজনকেই উদার হতে হবে। আমেরিকাতে আমার অধিকাংশ বন্ধুই কিন্ত বাংলাদেশী মুসলমান।

    কুদ্দুস খানে স্ত্রীর অসুস্থতা শুরু হলে নানান কারনে ভিন্নমত চালানো কঠিন হয়ে ওঠে। উনিই ছিলেন আসল কম্পোজার। আমার বানান আর বাংলা উনিই ঠিক করে দিতেন। তাছারা আমি আস্তে আস্তে অনলাইন নিউজ ম্যাগাজিনেই মন দেওয়া শুরু করি। আমার মনে হয়েছিল প্রবাসে প্রিন্টের ভবিষ্যত নেই।
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩২690037
  • (৫)

    মিডিয়া এমন ভাবে আমাকে টানতে থাকল, মিডিয়া প্রযুক্তি আরো ভাল করে শেখার জন্য ২০০৭ সালে হলিউডের একটা স্টার্টাপে যোগ দিই। বারবাঙ্কে ডিজনি স্টুডিওর পাশেই ছিল আমাদের অফিস। প্রযুক্তিবিদ হিসাবেই কাজে যোগ দিয়েছিলাম। এখানে প্রথম ভিডিও অডীও এডিটিং শিখি ভাসা ভাসা। কাজ করতাম সেই প্রযুক্তিবিদ হিসাবে-কিন্ত কাজের ফাঁকে ফাঁকে এডিটরদের লাঞ্চ খাইয়ে শেখার চেষ্টার করতাম। যার ফলশ্রুতি ইউটিউবে আমার আমেচ্যার ভিডিও ব্লগিং। একই সাথে আমি দুটি মিডিয়া স্টার্টাপ খুলি। একটা বিনোদন টিভি-যেটা বাংলা সিনেমা স্ট্রিমিং এর জন্য। অন্যটা ফসাক টিভি-ভারতীয়দের জন্য ইন্টারনেট টিভি। প্রথমটা তিনমাস বাদেই বন্ধ করে দিতে হয়-কারন সেই সময় বাংলা সিনেমার ইন্টারনেট ডিস্ট্রিবিউশন রাইট বলে কিছু ছিল না। ফলে মুভি চাইতে গেলে লোক এবসার্ড টাকা চাইত। যেটা কোন বিজনেস মডেলই হতে পারে না।তাছাড়া ইউটিউবে সব পাইরেটেড মুভি পাওয়া যেত। ফলে ওই স্টার্টাপের কোন ভবিষ্যত ছিল না। আমি এবং জনাব খান, প্রচুর টাকা লস করে মাস তিনেকের মধ্যেই বন্ধ করে দিই।

    ফসাক টিভির ভাল ফাইন্সান্সিয়াল ব্যাকাপ ছিল প্রথমে। ভারতীয় ধনী ব্যবসায়ীর অভাব নেই দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে। তারা বিজ্ঞাপন, টাকা নিয়ে সাপোর্ট করতে এগিয়ে এসেছিল। মূল প্যাট্রন ছিলেন একজন দক্ষিন ভারতীয় হেজ ফান্ড ম্যানেজার। ২০০৮ এর রিশেশন শুরু হতে সব ব্যবসায়ীরা এত লস করা শুরু করল- সব স্পনসর গায়েব। ফলে ফসাক টিভি বন্ধ করা ছাড়া উপায় ছিল না।

    ২০০৮ এর রিশেসন শুরু হয় ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস থেকে। হলিউডের স্টার্টাপটাও রাউন্ড টু ফান্ডিং পাবে না এটাও বুঝে গেছিলাম। ফসাক টিভির স্পন্সরদের বিজনেসে ভরাডুবি। নতুন চাকরিতে জয়েন করা ছাড়া আমার উপায় ছিল না।

    এই ভাবেই মেরীল্যান্ডের সিয়েনাতে চলে আসি ২০০৮ সালের প্রথমে। সেই রিশেশনের বাজার অত ভাল অফার ফেরানো সম্ভব ছিল না।

    ইনফ্যাক্ট সিয়েনা আমাদের লাইনে টপ কোম্পানী। এখানে আর এন্ডিতে যোগ দিয়ে আবার বিজ্ঞান প্রযুক্তির কাজে মন দেওয়ার সুযোগ পেলাম বহুদিন বাদে। হাতে লেখার সময় ও এল কিছুটা। ২০০৬-২০০৭ এ লিখেছি খুব অল্প। সিয়েনাতে যোগ দেওয়ার পরে আবার লেখালেখির সেকেন্ড ফেজ শুরু।

    কিন্ত ধণতন্ত্রে কি কোন কিছুর নিশ্চয়তা আছে? সিয়েনাতে বেশ ভাল চলছে-প্রমোশন পেয়ে হায়েস্ট ইন্ডিভিজ্যুয়াল র‍্যাঙ্কে পৌছে গিয়েছি -সব চেয়ে জটিল নেটওয়ার্ক ডিজাইনের কাজ আমার কাছেই আসত। এমন সময় সিয়েনা কিনে বসল নর্টেলের লসে চলা অপটিক্যাল নেটোয়ার্ক ডিভিশনকে। যার কর্মী সংখ্যা সিয়েনার তিনগুন। হেলেসাপের খোরগোশ খাওয়ার গল্প। তখন থেকে আমরা সবাই জানতাম এক বা দুবছর বাদে মেরীল্যান্ডে আমাদের আর এন্ডি আর থাকবে না।

    সামনে দুটো অপশন । চাকরি চেঞ্জ বা নিজেই স্টার্টাপ খোলা। আমি অন্য চাকরি পেলাম-সিয়েনারা প্রতিযোগী কোম্পানী চিনের হুয়েই এর কাছ থেকে। ওরা অনেক বেশী টাকা দিয়ে ডাকল টেক্সাসে। ইনফ্যাক্ট হুয়েই আমেরিকার সিটিও আমার প্রাত্তন বস। অফার পেয়ে একবার ভাবলাম। এইভাবে ধণতন্ত্রের বোরে হয়ে আর কতদিন? বয়স তখন আটত্রিশ। কদ্দিন আর ভলি বলের মতন এ কোর্ট থেকে ওই কোর্ট? এটা কি জীবন হতে পারে? কর্পরেট লাইফের অন্তসার শুন্যতায় বেশ ক্লান্ত -অথচ কি করবো ঠিক নেই।

    ধনতন্ত্রই যখন সমস্যার কারন-হাতের সামনে দুটো অপশন থাকে। ধণতন্ত্রকেই সমাধান হিসাবে ব্যবহার করা। অথবা ধণতন্ত্রকে গালি দিয়ে বামেদের দলে নাম লিখিয়ে এক্টিভিস্ট হওয়া। ক্যাপিটালিজমের জন্যই আমার জীবনের সব দুর্দশা-কারন দাবার বোর্ডে রাজা মন্ত্রী হয়েও লাভ নেই। যে খেলছে সে ভুল খেললে পতন কেউ আটকাতে পারবে না। ফলে ধনতন্ত্রে খেলোয়ার হতে হবে-গুটি হয়ে লাভ নেই। আমার কাছে সেটাই সমাধান। ফলে ধনতন্ত্রকেই আমি ব্যবহার করছি, উত্তোরনে জন্য।

    দুহাজার বারোসালের জানুয়ারী মাসে সিয়েনা মেরিল্যান্ডের আর এন্ডি সেন্টার প্রায় তুলে দেয়। ওই দিন আসবে আগেই জানতাম। তার এক বছর আগে থেকেই প্রথম বিজনেসটা দাঁড় করিয়েছি। ইনফ্যাক্ট তখনই বিজনেস থেকে সংসার চালানোর টাকা আসছে। ফলে চাকরি খোঁজার প্রয়োজন হল না। যদিও ওটাই আমার জীবনের সব থেকে সাহসী সিদ্ধান্ত। তবে সাফল্য আসবে জানতাম। ইন্ড্রাস্টিয়াল সেন্সর মার্কেট চিনি তালুর মতন। ওই মার্কেটে একটা আউটসোর্সিং মডেল দাঁড় করাতে পারবো সেই বিশ্বাস ছিল।
  • bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১০:৩৩690038
  • (৬)

    ব্যবসার প্রথম আড়াই বছর মোটেও ভাল কাটে নি। ভুলভাল পার্টনার, কাস্টমার, স্ট্রাটেজি, যথেষ্ট পুঁজি নেই-অনেক কিছু নিয়ে ভুগেছি। আস্তে আস্তে ভুলভাল পার্টনার সরিয়ে, ঠিক ঠাক কাস্টমার এবং ইনভেস্টর পেতে আমার বছর আড়াই লেগেছে। ২০১৪ সালের আগস্টের পরে অবশ্য আমাকে ফিরে তাকাতে হয় নি। ইনফ্যাক্ট ২০১৫ আমার সেরা বছর । এই বছরেই সেক্টর ফাইভে দুটো দুহাজার স্কোয়ার ফিটের অফিস, ব্যাঙ্গালোরে দুহাজার স্কোয়ার ফিটের অফিস এবং জয়পুরে আরেকটা অফিস খুলেছি আমরা। হেড কাউন্ট পৌঁছেছে চল্লিশে। সবচেয়ে আনন্দের কথা আমাদের ইঞ্জিনিয়াররা এ বছর প্রায় বারোটা ইউ এস পেটেন্ট ফাইল করেছে। রেভিনিউ বেড়েছে তিনগুন। আশা করছি ২০১৬ তেও একই গতি বজায় রেখে হেড কাউন্ট একশো ছাড়াবে।

    কিন্ত এতকিছু ত এমনি এমনি হয় নি। এই বছর একটা দিনের জন্যও ছুটি নিই নি। কোথাও বেড়াতেও যায় নি। আমার কোন শনি রবিবার নেই। রিক্রিয়েশন বলতে মাঝে সাঝে একটু ঝাঁট জ্বালানো বাংলা লিখি। একদম ফ্রি মাইন্ডে। বানানের চাপ নেই।

    আগে অনেক কিছু পড়াশোনা করে, গবেষনা করে লিখতাম। ইনফ্যাক্ট রাজনৈতিক নেতা না অভিনেতা সিরিজটা লেখার জন্য অনেক কিছু রিসার্চ করেছি। কিন্ত লেখার সময় নেই। কাজের ফাঁকে, কনফারেন্সের ফাঁকে দুচার লাইন লিখে হাল্কা হওয়া। বছরে শ দুয়েক সিনেমা বা ডকু ফিল্ম দেখার অভ্যেস। এবছর চারটে ভালো সিনেমা দেখেছি কি না মনে নেই। কিছু পেতে গেলে কিছু হারতে হবে-এটাই মহাজাগতিক নিয়ম।

    এর মধ্যেই ২০১৫ সালে অভিকে হারানো। সাথে আরো পাঁচজন সহব্লগার। দুঃখ ক্ষোপ আক্ষেপ সব ঢাকা পরে যায় কাজের চাপে। অভিকে খুব মিস করি। বাঙালীদের মধ্যে সত্যিকারের মুক্তমনের ত কেউ নেই যার সাথে প্রাণ খুলে কথা বলা যায়। ২০১৬ সালের রং মশালগুলোর মধ্যে কোথাও না কোন অদৃশ অন্ধকার।
  • . | 122.110.86.223 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:০৩690039
  • এটা তো বেদনা নয়, এটাতো সো- হম হয়েছে।
  • de | 69.185.236.55 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:২৬690040
  • ভালো লাগলো -
  • san | 113.245.14.100 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৪:৫৭690041
  • সোশ্যাল মিডিয়া বলে বিশুদ্ধ ভাষাচর্চার প্রয়োজন নেই , এসব হল অক্ষমের অজুহাত। অযত্নের মানসিকতা দিয়ে কোথাও কোনো ভ্যালু-অ্যাড হয় না।

    সে বিষয়ে দ্বিমত হলেও , এই লেখাটা পড়তে আমার বেশ ভাল লেগেছে।
  • sch | 132.160.114.140 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৬:৪৩690019
  • "বাবা ছিল ব্যার্থ রিটার্ড রাজনীতিবিদ।" - এটা মনে হয় "রিটায়ার্ড " হবে
  • Bip | 81.244.130.85 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:১৩690020
  • Aro onek vul ache..
  • robu | 11.39.137.71 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:৩৯690021
  • ওভারল খারাপ হয়নি, আবার বোকা বোকা জায়গাও আছে।
  • sda | 74.233.173.198 | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:১২690022
  • এই লেখাটা ঠিকঠাক লাগলো।
  • aranya | 83.197.98.233 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৫৯690023
  • কম্পানি-টা দাঁড়িয়ে গেছে মনে হচ্ছে, আন্তরিক শুভেচ্ছা, বিপ্লব। বাঙালীর সফল ব্যবসায়িক উদ্যোগ তো হাতে গোনা
  • bip | 81.244.130.85 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১০:১৫690024
  • ধণতন্ত্রে কোন কিছুই দাঁড়ায় না। সবটাই চলমান প্রবাহ। হয় বাড়ে -না হলে শেষ। যদ্দিন বাড়বে বাড়ুক।
  • robu | 11.39.39.10 | ০৩ জানুয়ারি ২০১৬ ১৮:০৩690025
  • ধণতন্ত্রে কোন কিছুই দাঁড়ায় না?
  • kd | 127.194.231.25 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:১৬690026
  • শুধু দাঁড়িয়ে থাকলে প্রোডাকশন হবে কি করে? একটু আধটু আগে পিছে তো করতেই হবে। ঃ)
  • SKM | 83.255.71.184 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৪:২৫690027
  • It takes very hard work to run the company. Cngra & Best luck to Bip.
    I wanted to start a non-IT engg company in 2004 but gave up the idea as we are not in position to put hard work.
    After that, many of my friends requsted to start a joint company with them but refused.
  • SC | 117.206.249.8 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:১৬690028
  • বিপদার লেখাটা পড়লাম, বেশ ভালো লাগলো পড়ে, অনেক কিছু জানলাম।
    বিপদা এইধরনের লেখা লিখলেই তো পারো, অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা জানতে পারি।
    আর ইসে, মানে ওই বৌদিদের ব্যাপারটা আরেকটু elaborate করে একটা লেখা নামাও তো। :P

    ব্যবসার জন্য কনগ্রাটস। কম লোকই পারে। তবে বাঙালি বুদ্ধিজীবি এসবের মূল্য বুঝবে না।
  • bip | 81.244.130.85 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৫:৫২690030
  • Running business is very difficult. Hopefully we will grow much bigger.

    ব্যবসা করতে এক সময় নেশার ঘোরে নেমেছিলাম। তাতে ভালোই হয়েছে। অর্থনৈতিক লাভ, মানসিক তৃপ্তি সবই আছে।
    কিন্ত প্রচন্ড রিস্ক ছিল এক সময়। প্রচুর বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে গেছি। এত রিস্ক জানলে আবেগের বশে
    হয়ত নামতাম না।

    এখন পেছনে তাকানোর সময় নেই। এবছর চল্লিশ থেকে হেড কাউন্ট একশো করার প্ল্যান আছে।

    আমি ভালো লোক খুঁজছি। পি এল এম বা প্রোডাক্ট লাইন ম্যানেজমেন্টে।

    তবে ব্যবসা করতে গিয়ে ঠেকে, ঠকে প্রচুর শিখেছি। ব্যবসাতে প্রচুর কিছু শেখার আছে।
  • bip | 81.244.130.85 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ০৬:০২690031
  • @SC

    আমাদের করিমপুরে অদ্ভুত সংস্কৃতি ছিল। বুদ্ধিজীবি কেউ না। কিন্ত নাটক, গান, সংস্কৃতির চর্চা ছিল প্রচুর।
    আমরা বলিউড সংস্কৃতির সাথে বড় হই নি। বিশাল রবীন্দ্রচর্চা, বাউল গীতির চর্চার সাথে বড় হয়েছি।
    আবার এগুলোর পৃষ্টপোষকদের অনেকেই ছিল এপার ওপার করা স্মাগলার। তারা এসব চর্চায় উৎসাহ দিত।

    আমরা তিন দিন ধরে রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎযাপন করতাম। তাতে ডিবেট, নাচ , গান , ছবি আঁকা,
    প্রবন্ধ আঁকা সবকিছুই চলত।
    সেই বিশাল বাজেট ও ঊঠে যেত ব্যবসায়ীদের আনুকুল্যে।

    ব্যবসা এবং বাঙালী বুদ্ধিজীবি পরস্পরবিরোধি এটা কোলকাতা কেন্দ্রিক ধারনা-যাদের কলোনিয়াল হ্যাঙ্গোভার
    খুব বেশী। কোলকাতা কেন্দ্রিক যে বুদ্ধিজীবি চর্চা-তা নিয়ে সমস্যা আছে। এই সব মফঃশহরে
    সরকারি বেসরকারি চাকরি নেই। সবাই ব্যবসাই করে। সুতরাং ব্যবসা ও ব্যবসায়ীদের একটা
    সার্বিক সন্মান আছে। তারা চুটিয়ে নাটক, সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষনাও করে।
  • শ্রী সদা | 113.16.71.15 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৪০690032
  • বিপ, ঐ "ভুলভাল পার্টনার" অংশটা নিয়ে একটা আলাদা প্যারা হোক। জাতি জানতে চায়।
  • robu | 11.39.36.35 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ২২:৩৮690033
  • ঃ-)
  • PM | 233.223.154.253 | ০৪ জানুয়ারি ২০১৬ ২৩:৩৪690034
  • বিপ্লববাবু, অনেক শুভেচ্ছা
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন