এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বাংলা ভাষার জন্য দুফোঁটা দীর্ঘস্বাস অথবা দ্বিচারিতা

    bip
    অন্যান্য | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ | ৯০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ | 79.138.209.156 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১০:৫৯669231
  • আজ অমর একুশে। ভাষা দিবস। বাংলা ভাষার জন্য দুফোঁটা চোখের জল ফেলার দিন। আসলে সবটাই দ্বিচারিতা। অন্তত নিজের দিকে তাকালে সেটাই আগে মনে হবে।

    ছোটবেলাতে গণিত, পদার্থবিদ্যা বা ইংরেজি নিঁখুত ভাবে শিখতে হত। কিন্ত বাংলাটা ছিল শুধু নোট মুখস্থ করে উদ্ধার করার জন্য। ভবিষ্যতে কোন কাজে আসবে? না উচ্চ শিক্ষায়, না চাকরিতে, না প্রেমে। বাংলায় অজস্র বানান ভুল করতাম ছোটবেলা থেকেই। কেও দেখেনি কোনদিন। বাংলার শিক্ষক মশাইরা একটু বকে দিতেন-বাবা আর দুটোত বছর- তারপর বাংলা থেকে ছুটি। বাংলা পরীক্ষা নিয়ে বন্ধুরা হাসাহাসি করতাম। পরীক্ষার দিন হল থেকে বেড়িয়ে এ ওকে জিগোতেম-কত পাতা ভাটালি? মানে বাংলা পরীক্ষার খাতা মাস্টারমশাইরা দেখবেন না । দিস্তাভরে গরুর রচনা লিখলেই হল। এটা ছিল আমাদের ধারনা। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতন আমার হাতের লেখা ছিল খারাপ। ভীষন খারাপ। ফলে বানান, গঠন এবং হাতের লেখার যুগপৎ ব্যর্থতায়, বাংলাতে খুব কম নাম্বার পেতাম। তাই নিয়ে কারোর কোন মাথাব্যাথা ছিল না । অঙ্কে ৯৯ পেলেও মা একবার জিজ্ঞেস করত কোনটা ভুল করলি। বাংলাতে ৫০ পেলে বাড়িতে বলত, আরেকটু ভাটিয়ে লিখতে পারলি না ?

    উচ্চমাধ্যমিকের পর আর বাংলা লিখতে হল না কোন দিন। সেটা ১৯৯১ সাল। তাও বাড়িতে ফোন আসার আগে সপ্তাহে একটা করে চিঠি লিখতে হত মাকে। ১৯৯৩ সাল নাগাদ গ্রামশহরেও ফোন চলে এল। ব্যস-সপ্তাহে একদিন বাংলা লেখার যেটুকু দরকার ছিল, তার থেকেও মুক্ত হলাম। তারপর টানা এগারো বছর একটাও বাংলা শব্দ কোথাও লিখতে হয় নি। ইনফ্যাক্ট নেট জগতেও প্রথমে ইংরেজিতেই লিখতাম। তখন বাংলায় অভ্র আসে নি। সেটা ২০০৪ সাল। ছিল বর্নসফট বলে একটা বাংলা টাইপিং সফটওয়ার। বাংলাদেশী লেখক বন্ধুদের উৎসাহে, বর্নসফটেই লেখা শুরু করি সেই বছর । নিশ্চিত ছিলাম হাত থেকে একটা লাইনও বেড়োবে না । কঠিন কঠিন বানান। ক্রমাগত বুঝেছি, মাতৃভাষা সত্যিই মাতৃদুগ্ধ। যে ভাষা মনে জমে থাকে, তা বানান না মেনেও ঠিকই বেড়িয়ে আসবে।

    সেই শুরু। তারপর থেকে লিখেই চলেছি। অনর্গল। ভুল ভাল গঠন আর বানানেই বাংলা লিখি। তাও লিখি। কারন এই প্রবাসে প্রাণের কথা আর কাকেই বা বলবো? জমে থাকা অনুভূতিগুলো মাটির নীচে থাকা মিথেন গ্যাসের মতন উর্ধচাপে নির্গত হতে থাকে। হয়ত পশ্চিম বঙ্গে থাকলে লিখতে হত না । কারন মনের কথা বলার লোক থাকত অনেক। এবং আমি দেখেওছি, ভারতে গেলেই আমার লেখার ইচ্ছা কমে যায়। আসলে মনের কথাটা খুলে বলার লোক পেলে, আর দরকার হয় না লেখার।

    বই পড়ার সময়, অবসর ধৈর্য্য কোনটাই আর নেই । মাঝে সাঝে দু একটা কবিতা বা ছোটগল্প পড়ে ফেলি বাংলায়। অখন্ড কাজের চাপে ওটাই আমার রিক্রিয়েশন । অথবা ওইটুকুই নাড়ির যোগ। ছেলেও আমার সাথে কথা বলে ইংরেজিতে। নাতি নাতনি হলে, তারাও ইংরেজিতেই বলবে। আশে পাশের বাঙালীরাও বাংলায় কথা বলাতে খুব বেশী স্বচ্ছন্দ নয়। তবে উইকেন্ড পার্টিতে বাংলিশ আড্ডা হয়। হুইস্কির দুপেগের আগে বাংলা। নেশা চাপলে ইংরেজি। বিলিতি মাল ত!

    শুধু একটা পজিটিভ টোনে লেখাটা শেষ করি। কেন বাংলায় লিখব? অথবা কেন লিখব ? কারন লেখার মাধ্যমেই চিন্তার গভীরতাটা অন্যকে সহজে বোঝাতে পারি। লেখালেখি করার অভ্যেস থাকলে দূরহ একটা ধারনা খুব সহজে বোঝানো সম্ভব হয়। পেশাদারি জীবনে মার্কেটিং , সেলস বা ব্যবসায়, এই স্কিলটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ন। লেখালেখির অভ্যেস না থাকলে, আজথেকে কুড়ি বছর আগে ছাত্র জীবনে ট্যান থিটা ভাষাতেই কথা বলতে অভ্যস্ত ছিলাম। এখন একটা গুছিয়ে গল্প বলতে সক্ষম-নইলে আমেরিকাতে ব্যবসা করে খেতে হত না । এই স্কিলটা লেখালেখি করতে করতেই এসেছে। টেকনিক্যাল স্কিল নিয়ে পেশাদার জগতে খুব বেশীদূর ওঠা যায় না -কিছুদূর গিয়ে, গল্প বলার স্কিলটাও লাগে।

    শুধু এই কারনেই আমি নতুন প্রজন্মকে বাংলায় লিখতে বলব। বানান, ভাষার পরোয়া না করে, ভাষা পুলিশের হুইসেল অগ্রাহ্য করে শুধুই নিজের চিন্তাটাকে জমিয়ে ক্ষীর করে নামিয়ে দাও। অন্য কারুর না আসুক, নিজের কাজে আসবে।

    http://biplabbangla.blogspot.com/2015/02/blog-post_20.html
  • dd | 132.171.119.193 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৭:৫০669232
  • এটা বোধয় শুধু বংগভাষীদের একারই সমস্যা নয়।

    এই ত্তো লুরুতে আছি কুরি বছোর। এখানেও একই প্রবলেম। কেউ কন্নড় ভাষা শিখতে চায় না। সবাই আংরেজী মিডিয়ম স্কুলেই দিতে চায় বাচ্চাদের। সরকার থেকে চাপে পরে নানান আইনী কৌশল করতে চায় - অ্যাট লিস্ট প্রাইমারী পর্যন্ত্য কন্নরে শিখাতে হবে সব কিছু।

    শুনছে কে? না মানে কোর্ট না শোনে পাব্লিক। এমন কি পলিটিশিয়ানেরা - যারা কম্পালসারী কন্নর চায় তারাও তাদের ছেলে পুলেদের ইংলিশ মিডিয়ম স্কুলে দেয়। একেবারে ৯০ দশকের বাম ফ্রন্ট কেস। এমন কি কন্নর সিনেমাও আর চলে না। জোর জার করে হলে বাধ্যতামুলক ভাবে কন্নর সিনেমা রিলিজ করলেও হল ফাঁকা থাকে।

    আরো একটা প্রেক্ষিত আছে। এখন হরবখৎ বিভিন্ন ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষ বে থা করে বাচ্চা করছে - থাকছেও অন্য প্রদেশে। ফলে "মাতৃ ভাষা"র ডেফিনিশনটাই বদলে যাচ্ছে। বাই ডিফল্ট ইংরেজীটাই ভারত বর্ষের নগরবাসীদের মুখের ভাষা হচ্ছে।

    ভালো কি মন্দো - এই তক্কে যাচ্ছি না। কিন্তু এটাই ফ্যাক্ট।

    কালের রথকে আটকাবে কে?
  • PT | 213.110.246.230 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৮:১৯669233
  • "এখন হরবখৎ বিভিন্ন ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষ বে থা করে বাচ্চা করছে - থাকছেও অন্য প্রদেশে। ফলে "মাতৃ ভাষা"র ডেফিনিশনটাই বদলে যাচ্ছে।"
    ইওরোপে আক্ছাড় অন্য ভাষাভাষীদের মধ্যে বিয়ে হয়। বেশীর ভাগই তিনটে ভাষা শেখে। অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করে। কিন্তু দেশ বা রাষ্ট্র এমনকি ব্যক্তি তাই বলে মাতৃভাষা জলাঞ্জলী দিচ্ছে না। সেখানকার বিভিন্ন দেশের identity অনেকাংশেই নির্ভর করছে ভাষার ওপরে।
  • Abhyu | 85.137.14.101 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ১৯:৩৪669234
  • বিপদার লেখাটা ভালো লাগল। "ভুল ভাল গঠন আর বানানেই বাংলা লিখি। তাও লিখি। কারন এই প্রবাসে প্রাণের কথা আর কাকেই বা বলবো?" - ঠিক কথা। আমাদের আইডেন্টিটির সঙ্গে ভাষা ভীষণভাবে জড়িত - মাইকেলেরও আগে থেকে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন