এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • ভারতীয় দূতাবাসের বিবিধ সেক্সি স্টোরিজ, ১৯৮৫ থেকে অদ্যাবধি

    সে
    নাটক | ১৭ জুলাই ২০১৪ | ৩২২১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯647194
  • পোস্টার
    --------

    বিদেশে নিজের দেশকে সগর্বে রিপ্রেজেন্ট করবার একটা ইয়ে থাকে। দেশে বসে যতই ক্রিটিসিজম করে এর ওর তার মা বোন এক করা হোক না কেন, ফরেনের মাটিতে মেরা দেশ মহান।
    তখন তো ইন্টারনেট নেই, দেশে ইমেজ ফলিয়ে বেড়াবার জন্যে সিনেমা, মিউজিক, ঘর সাজানোর জিনিস এসবই মূলধন; সবচেয়ে বেশি এফেক্ট দিতো পোস্টার। ঈণ্ডীআ লেখা পোস্টার। আ২ ফর্ম্যাটের পোস্টার। তাতে কখনো থাকত তাজমলের ছবি, তো কখনো ঘোমটা পরা রাজস্থানী মরুবাসিনীর মোনালিসা হাসি, কখনো জঙ্গলে হাতির পাল নয়তো গণ্ডারের মুচকি হাসি। ঘুরে ফিরে ওয়াইল্ড লাইফ, তাজমহল এবং ট্রাইবাল নরনারী; তাজমহলটা খুব কমন।
    যেটা খুব হতো সেটা হচ্ছে, ভারত ছাড়াও আরো যেসব দেশের এইরকম প্রচারমূলক পোস্টার ছিলো, তাদের সঙ্গে ভারতীয়দের এ ব্যাপারে একটা রেষারেষির সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছল।
    আমরা এই পোস্টার জোগাড় করতাম মস্কোর ইন্ডিয়ান এম্ব্যাসী থেকে বিনামূল্যে। কোনো কাজে কোনো শহর থেকে ছাত্ররা কোনো কাজে এম্ব্যাসীতে গিয়ে অল্প স্যার স্যার করলেই একতাড়া পোস্টার হাতিয়ে নিতে পারত। এক এক লটে নতুন নতুন পোজে তাজমহলের ছবি, অল্প বাঘ হাতি গণ্ডার, কিছু ঘোমটা পরা রমণী।
    মস্কো থেকে সেই সব পোস্টার এনে নিজের্দের ঘরের দেয়াল শোভিত করা ছাড়াও একটা বিশেষ ডিউটি ছিলো। ইন্টারন্যাশানাল স্টুডেন্‌ট্‌স্‌দের ডীনের অফিসের দেয়ালের শোভা বাড়ানো। পুরোনো তাজমহল সরিয়ে নতুন তাজমহল - এভাবেই চলছিলো। পাশেই হয়ত আফ্রিকার কোনো দরিদ্র দেশের পোস্টার। আসলে ঠিক দেশ কিনা মনে নেই, পোস্টারগুলো রিপ্রেজেন্ট করতো গোটা আফ্রিকা মহাদেশকেই। অবিশ্যি দক্ষিণ আফিকা বাদ, তারা তখনো স্বাধীন হয় নি।
    সত্যি কথা বলতে কি যতই সপ্তম আশ্চর্য হোক বা যা হোক না কেন, তাজমহলের পাশে আফ্রিকান পোস্টার জাস্ট বেমানান।
    বেমানান টা হয়ত ঠিক শব্দ নয়, কিন্তু ঐ পোস্টারগুলোর মধ্যে অদ্ভুত কিছু থাকত। আকর্ষণ, অ্যাট্রাক্‌শান।
    ওয়াইল্ড লাইফ হয়তো আছে একটা দুটো, কিন্তু তার চেয়েও মারাত্মক আকর্ষণীয় যেগুলো, আফ্রিকান রমনী।
    ঘোমটা লজ্জা কোনোকিছুর ধার ধারে না, অধিকাংশই টপলেস - মরাল গ্রীবা ঘুরিয়ে কোনদিকে যেন চেয়ে রয়েছে, মাথায় একটা ঘড়া থাকতে পারে, তবে সেটা অপশনাল।
    আসল আকর্ষণ অন্যখানে - তার অনাবৃত বুক। কোথায় তখন ফোটোশপ? ঐ শেপ ঐ ফিগার, ধরে নিচ্ছি পোস্টার বানানোর সময় ফোটোয় যদি কিছু টাচ্‌ পড়েও থাকে অধিকাংশই অরিজিনাল।
    ডীনের অফিসে যে ই ঢোকে, তাক লেগে যায় দেখে ঐসব পোস্টার।
    হয়ত এক টপলেস রমণী হাত উঁচু করে ডাবের জল খাচ্ছে, সেই জল গড়িয়ে পড়ছে তার স্তন বেয়ে - ঠিক যেন মোমের মত ত্বকের ওপরে গড়িয়ে যাচ্ছে জলের ফোঁটা। ঘটমান বর্তমান।
    যে দেখে, সেই হাঁ করে চেয়ে থাকে। আঠার মতো আটকে যায় চোখের দৃষ্টি। ডাবের জল মুছিয়ে দিতে হাত উঠে আসে এত জীবন্ত সেই ফোটো। তলায় লেখা রয়েছে মালি বা মোজাম্বিক বা টোগো নয়ত নামিবিয়া। এর পাশে আমাদের তাজমহল।
    একগাদা কফিবিনের মধ্যে হাত ডুবিয়ে পোজ দেয় আফ্রিকান নারী, অনেক অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় সেদিকে। তার চোখের মণিদুটো কফিবিনের মতো, তার স্তনবৃন্তদুটো ও কফিবিন।
    আমাদের পোস্টারে টপলেস মেয়ে নেই। হয়ত আছে, হয়ত আমাদের দেয় না। এম্ব্যাসীর লোকেরা হয়ত ভালো জিনিসগুলো নিজেরা রেখে দেয় আমাদের ঝড়তি পড়তি মাল গচিয়ে দেয়।
    সেবার আমাদের শহরে কনসুলেট তৈরী হতে আমাদের পোয়া বারো হোলো। তখন কন্সুলেটের ক্লাস ফোর স্টাফেদের কিছু ছেলে জিগ্যেস করলো "ভালো" পোস্টার পাওয়া যাবে কিনা, তারা কিছু বলতে পারে না।
    শেষে মরিয়া হয়ে ভাইস কনসুলের কাছে (হোয়াইটনার খ্যাত) কথাটা পাড়ে এক সাহসী ছাত্র। প্রথমে তো তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নি। এমনিতেই পোস্টার বিশেষ আসছে না কী একটা কারণে যেন। তারপরে ছেলেটি পোস্টারের স্পেসিফিকেশন আস্তে আস্তে ব্যাখ্যা করে, তুলনা হিসেবে যতটা খুলে বলা যায় সেই ডাবের জলের পোস্টারটা বুঝিয়ে বলে।
    অবশ্য তাতে কোনো ফল হয় নি। যা বোঝা গেছল তা হোলো - ভালো জিনিস ওরা আমাদের দেবে না।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:২১647195
  • কিছু বানান ভুল চোখে পড়ল
    ঈণ্ডীআ = INDIA
    আ২ = A2
  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৬647196
  • সে,
    আসুন, বসুন, বেশ গুছিয়ে। এমন সব গল্প! তাড়াহুড়ো করে কাজের ছুতোয় পালিয়ে যাবেন না!ঃ))
  • Ranjan Roy | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৭647197
  • কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পারলাম না। রঞ্জনকুমারকে হারিয়ে বলবন্ত জেতায় ( বা রঞ্জনকুমার হেরে যাওয়ায়) আপনারা খুশি হলেন কেন?
  • s | 182.0.249.87 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৩:৪৯647198
  • অকপটে জানিয়ে রাখলাম। গুরুতে আমার বরাবরের ফেবারেট মামুর লেখা। কিন্তু 'সে' সেই সিংহাসনের হাতলের কাছে চলে এসেছে। আপনার অনবদ্য দেখার স্টাইল দিদিভাই। দেখা হলে একটু ফুটডাস্ট বুক করে রাখলাম। ঃ-)
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৪:০১647199
  • রঞ্জন কুমার আমার প্রচুর দিমাগ চেটেছিলো শভিনিস্ট কায়দায়। পরে একবার ওর সঙ্গে আমার প্রায় হাতাহাতি লেভেলের কেস হয় - কিন্তু তার সঙ্গে ভারতীয় দূতাবাসের কোনো যোগ নেই।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ০৪:৪৬647200
  • বুড্‌ঢা
    -----

    একেকটা ফেজ আসে মানুষের লাইফে - তেমনি দেশের ক্ষেত্রেও। ভারতবর্ষের অনেক কিছু পাল্টালো, সোনা বেচে ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের ঋণশোধ - যেটা কেউ ভাবতে পারেনি। ফরেণে থাকাকালীন সেটাতো বেশ অহংকারের খবর। তেমনি ভারত উৎসব। বিদেশের মাটিতে ভারতকে নিয়ে হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার। তারপরে তো কয়েক বছর ধরে অনেক অদলবদল হোলো, তবে নাইন্টিওয়ানের পরে আমরা বেশ আশাবাদী ছিলাম যে পাশ করে দেশে ফিরলে চাকরি পাওয়া যাবে। আগের মতো অতো টাফ হবে না।
    দেশ ভাগ হয়ে গেল, কনসুলেট এম্ব্যাসী বনে গেল, ডিরেক্ট ফ্লাইটের সংখ্যা হুহু করে বেড়ে গেল। ডিপ্লোমা - সার্টিফিকেট এসমস্ত অ্যাটেস্ট করতে আর মস্কো ছুটবার দরকার নেই, ঘরের পাশেই একটার পর একটা দেশের এম্ব্যাসী তৈরী হয়ে চলেছে।
    বানিজ্যিক কারণেই তখন ভারতের সঙ্গে খুব দহরম মহরম। আজ এদের প্রেসিডেন্ট ভারতে যায় তো কাল আমাদের প্রাইম মিনিস্টার এদিকে আসেন।
    আর এলেই সে খবর ঢাকা থাকে না। ল্যা ল্যা করে ছুটে যায় ছাত্রের দল দর্শন করতে।
    তো সেবার হপ্তাখানেকের জন্যে প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও এসেছেন, রয়েছেন অ্যামাসাডারের রেসিডেন্সে (সেই যেখানে কম্‌প্ল্যান বয় গিয়েছিলো) চাদ্দিকে কড়া পাহারা। ছোট্টো দোতলা বাড়ী, প্রধানমন্ত্রীকে সেটা ছেড়ে দিয়ে অ্যাম্বাসাডার স্বয়ং কোথায় অবস্থান করছেন সেটা পরিষ্কার নয়। সেনিয়ে আমাদের মাথাব্যাথার দরকার ও নেই।
    মোটকথা কী একটা হাইফাই উৎসব হচ্ছে ওপরমহলে; সেই হুজুগে ছোটোখাটো টেম্পোরারী কাজ জুটিয়ে কিছু পয়সা কামাবার ধান্দায় মেতেছে একদল ছাত্র।
    ছাত্রদের এসব কাজে নেবার সুবিধে হোলো, এদের দেশ থেকে বয়ে আনার ঝামেলা ও খরচ নেই। দুই এরা পয়সা কম নেবে, তিন দুদেশের ভাষাই জানে প্লাস সমস্ত ঘোঁৎঘাঁৎ এদের নখদর্পণে।
    প্রধানমন্ত্রী তো একা আসেননি, সঙ্গে এনেছেন লোক লস্কর পাত্র মিত্র বিরাট পল্টন। তাদের একেকজনের একেক বায়নাক্কা। যত নীচের দিকে পোস্ট তত তিরিক্ষি মেজাজ, তত বেশি পোজপাজের চেকনাই।
    এটা চাই, ওটা চাই, একে বুলাও, ওকে বেঁধে আনো, এটা কেন হয়নি, টোটাল আমলাতন্ত্র। তারই মধ্যে ছাত্রের দল এক হপ্তা ক্লাস কেটে ছুটে ছুটে ফাইফরমাস খেটে চলেছে। এঁকে একজায়গায় নিয়ে চলোরে, ওমুকের শপিং করিয়ে দাও, তেনার ব্যাগ তিনি ভুলে এসেছেন হোটেলে সেটা আনতে ছোটো, ওমুককে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে হবে, অতটার সময়ে অ্যাতোগুলো গাড়ী চাই। কম বয়সী ছাত্রদল খুব এন্থু নিয়ে সর্বক্ষণ খেটে চলে; একেকজনকে একেকরকম কাজের ভার দেওয়া হয়েছিলো, তার মধ্যে আমার চেনা ছেলে অতুলের দায়িত্ব ছিলো খাবার সার্ভ করা।
    এসব আমরা প্রথমে জানতামই না। সাতদিন পরে সবাই ফিরে যেতে এই ছেলে ছোকরাগুলো ছুটি পেলো। ভালোই ইনকাম হয়েছে, কিন্তু সবটাই পূর্ব প্রতিশ্রুত অর্থ - নো টিপ্‌স্‌। এই যে অ্যাতো খাটলো কোনো অতিরিক্ত বক্‌শিস নেই - বড্ড কঞ্জুস ইন্ডিয়ানগুলো। সকলেই একটু মনঃক্ষুন্ন টাইপ।
    অতুল অবিশ্যি এদের সঙ্গে কাজ করতো না। ওর কাজ ছিলো ইনডোরে, আগেই বলেছি খাবারের ডিপার্টমেন্টে। অবশ্য ওকে রাঁধতে হোতো না, সে সব কাজের জন্যে দেশ থেকেই স্পেশাল রাঁধুনীর টিম এসে গিয়েছিলো।
    তাহলে তুই কী কাজ করতিস অতুল?
    - সার্ভিস।
    - খাবার ড্রিঙ্ক্স্‌ এইসব সার্ভ করা? সেতো দিনে বড়োজোর তিন চার বার, বাকী সময়টুকু তো কোনো কাজই থাকত না তোর বল?
    অতুল রেগে যায়, শুধু চারবার? ঘন্টায় ঘন্টায় খালি চা খায় যে? মদ ছোঁয় না, কিন্তু সর্বক্ষণ চা চাই, খাবার খাবে এইটুকু, তাও ভেজিটেরিয়ান। কিন্তু চা দিতে দিতেই আমার দিনে চল্লিশবার সিঁড়ি দিয়ে ওপর নীচ করতে হোতো।
    - কে এত চা খায় রে? কার কথা বলছিস?
    অতুল নাম নেয় না মুখে শুধু গম্ভীর মুখে বলে - ঔর কৌণ? বুড্‌ঢা।
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৫:২৯647201
  • এনোসি
    --------

    এইটা বছর তেরো আগের ঘটনা, এখন যেখানে আছি সেই দেশে। এদেশে আসবার পরে পাসপোর্টে কিছু কারেকশান দরকার ছিলো। এখানে আসবার আগে কলকাতার পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম, তো তারা বললেন বাইরে যখন যাচ্ছেনই তখন বাইরে থেকেই করিয়ে নেবেন- তাড়াতাড়ি হবে, এখানে বুঝতেই তো পারছেন প্রচুর চাপ তার ওপরে আপনার পাসপোর্ট অন্য এম্ব্যাসী থেকে বানানো, ভেরিফিকেশনেই কয়েক মাস ডিলে হয়ে যাবে।
    দোষটা আমারই কিনা বুঝতে টাইম লেগেছিলো। আগে যখন নতুন করে পাসপোর্ট বানাতে হয়েছিলো সেই কন্‌সুলেটে, তখন সবই হাতে লেখা ব্যাপার স্যাপার, ভুলও হতো তাঁদের। সেই ভুল লেখাটি আবার তখন চট করে নোটিস করিনি, যখন নোটিস করলাম - বে এ এ শ দেরী হয়ে গিয়েছে। কাজে কাজেই ভুল শুধরোনোর সহজতম উপায় হচ্ছে বিদেশের মাটিতে বসে কারেকশানের বন্দোবস্ত করা।
    পাসপোর্ট নবীকরণের অজুহাত দেখিয়ে এম্ব্যাসীতে ফোন করে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্টের দিন ঠিক করলাম। অনেক দূরে সেই শহর, যেতে আসতে কথাবার্তা বলতে একটা গোটা দিন না হলেও আদ্দেকের বেশি সময় অফিস করতে পারব না। ছুটি চেয়ে নিলাম অফিসে। নির্দ্দিষ্ট দিনে ভোরবেলা রেলে চেপে চললাম রাজধানীতে, সেখানে পৌঁছে দুবার বাসের রাস্তা এবং কিছুটা হাঁটার পরে শ্যাওলা ও আগাছা মাখা পুরোনো নড়বড়ে ছোটোখাটো একটা দোতলা বাড়ী, তারই সামনে থেকে হাওয়ায় দুলছে আমাদের তেরঙ্গা। সে এক অদ্ভুত মায়াময় অনুভূতি! হঠাৎ কেমন যেন চোখে জল এসে যায়, কেমন যেন নিজের জায়গা মনে হতে থাকে। বেল টিপতে দরজা খুলে যায়, কোনো রক্ষী সেপাই সান্ত্রীর বাহুল্য নেই, ভারী কাঠের দরজার ওপারে চেনা চেনা গন্ধ। ছোটো খুপরি মতন জানলার পাশে সিল্কের শাড়ীতে ডেস্ক ক্লার্ক কাম রিসেপশান কর্মী - প্রৌঢ়া। লাইন বলতে তেমন কিছু নেই, একজন জানলায় কথা বলছিলেন, সম্ভবতঃ ট্র্যাভেল এজেন্ট গোছের কেউ হবেন, হাতে একতাড়া লাল পাসপোর্ট ও দরখাস্তের কাগজপত্র, ওঁর কথা হয়ে গেলেই আমার পালা। ভদ্রমহিলা একটু খিঁটখিঁটে, মেজাজ কিছুটা তিরিক্ষি, অবশ্য আমার তাতে কিছু এসে যায় না। এসেছি যখন কারেকশানের বন্দোবস্ত করেই ফিরতে হবে।
    আমার পালা আসে, সমস্ত বুঝিয়ে বলি তাঁকে। তিনি হাঁ করে কিছুক্ষণ শোনেন, তারপরে আমায় থামিয়ে দেন। বলেন - এরকম ভুল কেমন করে হোলো?
    প্রমাদ গনি আমি। ভুল করলো অন্য এক এম্ব্যাসী, তার দায়িত্ব আমি নেব কীকরে?
    কিন্তু সেটা মুখের ওপরে বললে হয়ত রুড শোনাবে, তাই বলি, ওঁরা ভুল করেছেন, আমিই দেখে নিইনি তখন ভালো করে.. দোষ আমারই।
    খুব বিরক্ত হন তিনি। গজগজ করতে করতে ভেতরের দিকে চলে যান, আমি ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকি। এবার বসবার সেই ঘর কাম করিডোরে ভালো করে দৃষিপাত করবার সুযোগ এলো। দেয়ালে মাননীয় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, এঁদের ফোটো, সঙ্গে আরেকজন ভদ্রলোকের হাসিহাসি ফোটো, চেনামুখ নয় - ইনিই সম্ভবতঃ রাষ্ট্রদূত। হ্যাঁ এঁর আরো ফোটো রয়েছে কোনো এক অনুষ্ঠানে বিরাট রাজনীতিকের সঙ্কে হ্যান্ডশেক করছেন। দেয়ালের আরেক পাশে একগাদা কাগজ পিন দিয়ে আটকানো, নোটিশ বোর্ডের মতো, কাছে গিয়ে আড়চোখে দেখলাম, সমস্তই বিয়ে করবার বিজ্ঞপ্তি ও নোটিস। এক মাসের মধ্যে কোনো বাধা না এলে বিয়েগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়ে যাবে। ওপাশে কয়েকটা প্লাস্টিকের চেয়ার, বসবো? নাকি দাঁড়িয়েই থাকবো? উনি যদি ফিরে এসে আমায় না দেখলে আবারো বিরক্ত হন?
    একটু খিদে খিদে পাচ্ছে, বাথ্রুমে গেলেও হোতো, কিন্তু কাকে জিগ্যেস করবো, কেউ তো নেই। অমনি জানলার পাশের দরজাটা খুলে বাইরে বেরিয়ে আসেন এক যুবক। যুবক? হ্যাঁ যুবকই বলা চলে প্রৌঢ় নন; তিনি আমার সঙ্গে দাঁড়িয়েই কথা বলেন, আবারো বোঝাই ব্যাপারটা, উনি ভুরু কুঁচকে চুপচাপ শুনে নেন, তারপরে আমাকে অপেক্ষা করতে বলে ভেতরে চলে যান।
    আমি এবার বসে অপেক্ষা করি। ইতিমধ্যে আরো মানুষজনের আনাগোনা শুরু হয় দেশি বিদেশি, তবে ভীড় নেই। এবার ভেতর থেকে একজন প্রৌঢ় ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন, পরে জেনেছিলাম তিনি যথেষ্ট উচ্চপদস্থ ব্যক্তি। এসে আমার পাশেই বসে পড়েন, এঁকে আরেকবার ব্যাপরটা বুঝিয়ে বলি। ইনি সব শুনেটুনে আমাকে দিয়ে কয়েকটা কাগজে দরখাস্ত করিয়ে নেন, আরি কীসব ফি টি দেবার ব্যাপার বুঝিয়ে দেন, এবং আশ্বাস দেন আমার পাস্পোর্ট অন্যদেশের ভারতীয় দূতাবাস থেকে ভেরিফায়েড হয়ে এলেই এনোসি পাওয়া যাবে, তখন কারেকশান করা যাবে।
    হাঁফ ছেড়ে বাঁচি, কৃতজ্ঞতা জানানোর জন্যে অনেকবার থ্যাঙ্কস্‌ জানাই।
    কিন্তু এনোসি আসতে সময় লাগবে সেটা বোঝা যায়, বলেন যে এনোসি এসে গেলে খবর দেবেন।
    লাফাতে লাফাতে ফিরে আসি নিজের শহরে। দু দুটো বাসের রাস্তা আনন্দে হেঁটে দৌড়ে লাফিয়ে উড়ে চলি। রেলে চাপবার পরেও মনে আনন্দ গুনগুনিয়ে গান বেরোয় অজান্তেই - পাশের সহযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে সেটা টের পেয়ে যাই।
    উঃ কী আনন্দ! ছুটি নিয়ে ভালোই হয়েছে আজ, এত আনন্দে কাজে মন বসতো না। ফুরফুরে মনে সেদিন জাস্ট বেড়িয়ে কাটিয়ে দিই।

    এর পর থেকে শুরু হয় অপেক্ষা, কবে খবর আসবে? টেলিফোনে নম্বর তো দিয়ে দিয়েছি তাদের। ঠিকানাও দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে ইমেল অ্যাড্রেস। কিন্তু কোনো খবর আসে না। দিন যায়, সপ্তাহ যায়, মাস চলে যায়, কোনো খবর আসে না।
    একদিন সাহস সঞ্চয় করে এম্ব্যাসীতে টেলিফোন করি। আবার সব যদি বুঝিয়ে বলতে হয় তবে তো দফা রফা হবে আমার, তাই শুধু "এনোসি" টুকুই বলি। উত্তর পাই এখোনো আসে নি পরে খোঁজ নেবেন।
    আবার এক সপ্তাহ পরে ফোন করি, খবর পাই প্রায় মাসখানেক আগেই নাকি এনোসি এসে গেছে!
    আনন্দে উৎসাহিত হয়ে জিগ্যেস করি , তবে কবে কারেকশান করাতে নিয়ে যাবো পাসপোর্ট?
    - যেকোনো ওয়ার্কিং ডে তে আসুন।
    আমার তর সয় না, দুম করে ছুটি নিয়ে নি পরের দিনই।
  • d | 59.14.95.5 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৬:১৫647202
  • তারপর? নির্ঘাত গুচ্ছ হ্যারাসমেন্ট?
  • সে | 203.108.233.65 | ২৯ জুলাই ২০১৪ ১৭:২৫647204
  • সেজেগুজে মনে আনন্দে চলেছি রাজধানী বের্ণ-এ। সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়েছি ভালো করে, কখন কোথায় আরো কীকী ফি ভরতে হবে বলা তো যায় না, দরকারী কাগজপত্র, পাসপোর্ট, গোটা কয়েক পাসপোর্ট সাইজ ফোটো, আরো অনেক টুকিটাকি।
    আজ ইচ্ছে আছে কাজ শেষ হয়ে গেলে ওদিকটায় ভালো করে ঘুরবার,এত দাম দিয়ে রেলের টিকিট কাটা হচ্ছে বারবার, সেটার সদ্ব্যবহার হওয়া দরকার।
    আজও সেই খিঁটখিঁটে রিসেপ্‌শনিস্ট। ও মেজাজ দেখালেও আমার পাত্তা দেবার দরকার নেই। তঁকে গিয়ে বললাম, পাসপোর্ট দেখালাম, তিনি পাসপোর্ট নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন।
    দাঁড়িয়ে আছি, দেখলাম ভেতর থেকে তিনি জানলার দিকে আসছেন, সঙ্গে এক ভদ্রলোক বেশ কোট প্যান্ট পরা, আমার পাসপোর্টটা তাঁর হাতে। মহিলা ইঙ্গিতে আমাকে দেখিয়ে দিয়ে ভেতরে কোথায় যেন চলে গেলেন।
    ভদ্রলোক তো মহিলার চেয়ারে বসলেন এবং আমাকে চমকে দিয়ে খাঁটি বাংলায় বললেন, আপনি বসুন আমি কাগজপত্র নিয়ে আসছি।
    আমার তো মনটা আনন্দে হুহু করে ওঠে, উঃ, বাঙালী পাওয়া গেল এতক্ষণে।
    একটু পরেই তিনি বাইরে এসে সেই বসবার জায়গায় আমার পাশে এসে বসলেন, বয়সে আমার চেয়ে বছর কয়েকের ছোটো ও হতে পারেন মনে হোলো - গুছিয়ে বসে বললেন, আপনার এনোসি তো এসে গেছে।
    - জানি, সেইজন্যেই তো এলাম।
    - কিন্তু এখন কারেকশান করাবেন?
    আমার বুকের মধ্যে ঢিপ্‌ঢিপ্‌, আবার কী ফ্যাক্‌ড়ারে বাবা! কিন্তু মনের ভাব চেপে রেখে শান্ত মুখে বললাম, কেন ? এখন করাতে অসুবিধেটা কোথায়?
    - না অসুবিধে নেই তেমন, তবে ঐ কাটাকুটি, তার ওপরে পাসপোর্ট তো এক্স্‌পায়ার করতে খুব বেশি বাকি নেই
    - না তা নেই, বছর দেড় দুই..
    - হুঁ, (চিন্তা করছেন) সঙ্গে ফোটো এনেছেন?
    - (জয় বাবা) এনেছি তো! এই দেখুন তিনটে, নানা পাঁচটা।
    - অতো গুলো লাগবেনা, এক কাজ করুন, একটা নতুন ফর্ম দিচ্ছি আনকোরা নতুন পাসপোর্ট করে নিন।
    এতো মেঘ না চাইতেই জল! এই না হলে বাঙালী? অথচ আমরা বলি কিনা বাঙালীই বাঙালীর মস্ত শত্রু, ছিঃ!
    আমি কৃতজ্ঞতায় প্রায় কেঁদে ফেলি।
    ফর্ম ভরে চলেছি, আর তিনি টুকটাক আমার অন্যান্য খবর জেনে নিচ্ছেন, কোথায় থাকি, কী করি, কেমন করে এদেশে এলাম, দেশে কে কে আছে। আমিও বলে চলেছি।
    ফর্ম ভরা হয়ে গেলে তিনি ফর্ম হাতে নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন, আমিও পাশের পোস্টাপিসে গিয়ে ফি এর পেমেন্ট করে এলাম।
    ফিরে আসতেই উনি বললেন, দেখুন বারোটায় তো এম্ব্যাসী বন্ধ হয়ে যাবে, আপনি যদি বারোটা অবধি কোথাও একটু ঘুরে আসতে পারেন তবে লাঞ্চে বেরোনোর সময় আপনাকে নিয়ে আমার বাড়ীতে যাবো, আমার স্ত্রীকে ফোনে বলে রেখেছি, আজ দুপুরে আপনি আমাদের বাড়ীতেই খাবেন।
    আমি সঙ্গে সঙ্গে নেমন্তন্ন অ্যাকসেপ্ট করলাম। ভদ্রলোক আমার সঙ্গে বেশ হেসে হেসে গল্প করলেন, কোলকাতায় কোথায় বাড়ী, স্ত্রী ও দুটি ছেলেমেয়ে রয়েছে এখানে, আরো নানান গল্প, কোন কলেজ, কোথায় কোথায় পোস্টিং হয়েছে এর আগে।
    আমিও খলবলিয়ে গল্প করে যাচ্ছি। তারপরে বাইরে গিয়ে অল্প গিফ্‌ট কিনে আনলাম বাচ্চাদের জন্যে সামান্য চকোলেট, ছোটো পুতুল, লোকের বাড়ী প্রথম যাবো, খালি হাতে কেমন করে যাবো?
    ফিরে আসতে আসতেই প্রায় বারোটা, দেখি তিনি বাইরে বেরিয়ে এলেন, আরো কয়েকজন বেরোলো, দরজায় তালা পড়ে গেল। লাঞ্চের পরে আর বাইরের লোক অ্যালাউড নয়।
    সকলেই নিজ নিজ বাড়ীতে লাঞ্চ খেতে চলল।
    পাশের গলিতেই তাঁর গাড়ী পার্ক করে রাখা, সেটা চড়ে বসলাম। গাড়ী ঘোরাতে ঘোরাতে ভদ্রলোক বললেন, সেই রিসেপশনিস্টের নাম করে, সেকি আপনাকে দেখল?
    - কে?
    - ঐ রিসেপশনিস্ট মহিলাটি
    - কই আমি তো দেখিনি! কেন?
    - না মানে আমরা দুজনে একসঙ্গে বেরোলাম তো, তাই।
    - একসঙ্গে বেরোলে কী হয়েছে?
    - আপনি খুব সরল, খুব সিম্পল, আপনি বুঝবেন না, এরা খুব প্যাঁচালো যাগ্গে বাদ্দিন। আচ্ছা এক কাজ করলে হয় না, চলুন না আজ অন্য কোথাও গিয়ে খাই? রেস্টুরেন্টে?
    - রেস্টুরেন্টে! কেন? সেতো খুব খরচের ব্যাপার, আপনি যে বললেন বাড়ীতে যাবেন?
    - বলেতো ছিলাম, এখন গাড়ী ঘুরিয়ে নিচ্ছি। (মুচকি হেসে) দাঁড়ান ..

    এই বলে মোবাইলে বৌকে ফোন করলেন, হ্যালো হ্যাঁ শোনো, উনি মানে যে ভদ্রমহিলার কথা বলেছিলাম, উনি আসলে ঠিক আসতে চাইছেন না, ওঁর তাড়া আছে ফিরে যেতে চান, ধরে রেখে কী হবে?

    ওদিক থেকে বৌয়ের হুংকার ফোন ভেদ করে শোনা যায়- তবে যে আমি অ্যাতো রান্না করলাম, তার কী হবে? চালাকি পেয়েছো?
    - ঠিকাছে নিয়ে আসছি।

    আমি যে শুনতে পেয়েছি সেটা উনি বুঝেছেন কিনা বুঝলাম না।
    উনি চলতে লাগলেন চুপচাপ। মাঝে একটা দুটো কথা। মিনিট দশের মধ্যেই গাড়ী পৌঁছে গেল সেই বহুতলের আন্ডারগ্রাউন্ডে। গাড়ী পার্ক করা হয়ে গেলে লিফটে করে আমরা উঠে গেলাম সাত তলায়। লিফ্‌ট্‌ থেকে বেরোতেই দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক সুন্দরী মহিলা, বেগুনী রঙ্গের সিল্কের শাড়ী।
    আমায় দেখেই বললেল - আসুন আসুন।
    মুখে স্নিগ্ধ স্মিত হাসি।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৪647205
  • আমায় বৌয়ের জিম্মায় গচ্ছিত রেখে তিনি গপাগপ লাঞ্চ খেয়ে বেরিয়ে গেলেন। সারা দুপুর বিকেল সেখানেই কাটালাম।
    সেদিন সন্ধ্যেয় আমার নতুন পাসপোর্ট নিয়ে তাঁর প্রত্যাগমন।
    গল্প এইটুকুই হতে পারতো, কিন্তু গল্পের মধ্যেও আরেকটা গল্প আছে, এবং সেটাও দূতাবাসের গল্প - যেটা শুনেছিলাম সেই দুপুরে ওঁর স্ত্রীর মুখে।
    সেটা হচ্ছে বেইরুটের গল্প।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ০২:৩৭647206
  • অ্যারেঞ্জড্‌ ম্যারেজ
    -------------------

    এই শিরোনামেই লিখব গল্পের ভেতরের গল্পটা
  • nina | 78.37.233.36 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ০৪:৫১647207
  • লিখব বলে হাওয়া ----বসি তাইলে
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ১৪:০৯647208
  • আপনাকে এবারে ভাত বেড়ে দি? আপনার সঙ্গে একসাথে খাবো বলে তখন ওকে আগে খাইয়ে দিলাম। কিছু মনে করেন নি তো? আজ আমার চান করা হোলো না জানেন তো। আসলে ও আমাকে আগেই বলেছে আপনার কথা, আপনার ফাইল নিয়ে ও ই তো কাজ করছিলো - তাই বাড়ী এসে বলল। আপনি শুক্তো খান তো? এখানে তেতো বলতে ঐ শুক্তো। কতদিন নিম বেগুন খাইনা সর্ষে ফোড়োন দিয়ে। একটু ডাল দিই? ডালটা আমি রোজই করি। সঙ্গে দুয়েকটা ভাজা। মাছ তো দেশের মতো পাওয়া যায় না, আর যা দাম, বাব্বা। মাংসও ঐরকম। খাসির মাংস দেশের মতো কোথায় পাবো? তারপরে টিনটিন খুব ডাল ভালোবাসে।
    টিনটিন?
    ছেলে। ইন্টারন্যাশানাল স্কুলে যাচ্ছে। এখন এই ক্লাস ওয়ান হোলো। মেয়েটা ওর ছোটো। এখোন প্লেস্কুলে দেবার ইচ্ছে আছে। আপনি তো কিছুই খাচ্ছেন না। আচ্ছা ফোনটা বাজল মনে হোলো না? আপনি কি শুনতে পেলেন?
    না, কিছু শুনতে পাইনি তো
    দাঁড়ান ফোনটা এখানে কাছে এনে রাখি।

    না কোনো ফোন আসেনি। আসলে ফ্ল্যাটটা খুব বড়ো তো ঐ .. ও ই দিকের ঘরটায় মোবাইল বাজলে এখান থেকে শোনা যায় না। একবার তো ব্যাটারি লো হয়ে গিয়ে ফোনটা কোথায় লুকিয়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা আপনি এমনিতে লাঞ্চে কী খান? বাইরে খান নিশ্চই? নাকি বাড়ি গিয়ে? ছুটির দিনে নিশ্চই রান্না করে খান? হ্যাঁ রোজ রোজ লাঞ্চে বাড়ি গিয়ে কেমন করে খাবেন। আপনি তো জব করেন। সার্ভিস। আমিও আগে সার্ভিস করতাম জানেন তো? ও বলেনি আপনাকে?
    আমার সঙ্গে তো জাস্ট অল্প কথা কথা হয়েছে।
    তার মানে বলেনি। আমি এর আগে স্কুলে পড়িয়েছি। দিল্লীতে যখন ছিলাম স্কুলে পড়াতাম। বাচ্চা হবার পরেও কন্টিনিউ করেছি। তারপরে একটার পর একটা ট্রান্সফার। দুবছর তিনবছর পরপরই তল্পিতল্পা গুটিয়ে নতুন জায়গায় চলো।
    দারুন তো!
    হ্যাঁ দারুন। এমনিতে অনেক দেশ দেখা হয়। সমস্তই গর্মেন্ট থেকে অ্যারেঞ্জ করে দেয় জিনিষপত্র লাগেজ ফ্ল্যাট বাচ্চাদের স্কুল টুল থাকলে।
    বেড়ান না? কত কি দেখবার আছে?
    হ্যাঁ বেড়াই তো। ছুটি দিন হলেই আগে খুব বেড়াতাম, এখন মেয়েটা হয়ে গিয়ে, আচ্ছা আপনি হাতটা ধুয়ে আসুন তারপরে একটা জিনিস খাওয়াবো। আইসক্রীম খান তো? এটা নতুন টেস্ট। লেবুর টেস্ট খেয়েছেন এর আগে?
    খাইনি।
    একী! না না ছি ছি একদম বাসনে হাত দেবেন্না আমি তুলে নেবো দুটো তো মাত্র প্লেট। বাকী সব ঢুকে যাবে ফ্রীজে।

    আপনারা তো বাইরে বেরোন কত কি খান, হয়তো খেয়েও থাকতে পারেন। কেম্নি একটু গলে গলে যাচ্ছে না? আমি কিন্তু এই ডীপফ্রীজ থেকে বার করলাম আপনি যখন হাত ধুতে গেস্‌লেন।
    না এটা আমি খাইনি। কী লেখা রয়েছে বাক্সের গায়ে?
    সর্বেট্‌। নতুন টাইপের আইসক্রীম না? আমার কিন্তু বেশ ভালোই লাগছে টেস্টটা। চলুননা ঐ ওখানে সোফায় বসে খাই। আপনি কী সার্ভিস করেন? কম্পিউটার? কীরকম স্যালারি দেয়?
    বাঃ এখান থেকে তো বাইরের অপূর্ব ভিউ পাওয়া যায়।
    হ্যাঁ সারাক্ষন তো ঐ ভিউ ই দেখছি। দাঁড়ান অ্যালবামটা নিয়ে আসি।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ১৫:৫৩647209
  • এগুলো সব হচ্ছে এখানকার ফোটো, এই লাস্ট এক দেড় বছরের। শুটিং খুব হয়তো, সব ফিল্মস্টারের সঙ্গেই তুলেছি।
    হবি?
    হ্যাঁ ঐ আরকি। শুটিং হচ্ছে খবর পেলেই চলে যেতাম, তারপরে একটু কাছে গিয়ে রিকোয়েস্ট করলে পাশে দাঁড়িয়ে ফোটো তুলতে দেয়। এই যে এগুলো মাধুরী, অনিল কাপুরের সঙ্গে অনেকগুলো আছে, ঋষি কাপুরের সঙ্গে যেগুলো ছিলো ওগুলো বোধয় এখন নেই দেশে রেখে এসেছি লাস্টবারে যখন গেলাম। প্রীটি জিন্টা খুব ভালো জানেন তো? রিকোয়েস্টও করতে হয় না, নিজেই ডেকে নেয়, বলে তোলো, আরেকটা তোলো। কি মিষ্টি না? নিজে নিজেই পোজ দেয়, আলগা হয়ে থাকে না, ও নিজেই আপনার কাঁধে হাতে দিয়ে দাঁড়াবে। এইখানে এটা খুব লাভ হয়েছে অনেক ফিল্মস্টারের সঙ্গে ফোটো তুলেছি।
    অন্যদেশে যেখানে থাকতেন সেখানে হিন্দি সিনেমার শুটিং হোতো না?
    না। কোথায়? বেইরুটে সিনেমার শুটিং কোথায়? সেখানে তো অন্য শুটিং, খুব ট্রাব্‌ল্‌ড্‌ জায়গা। তবে আপনি হয়তো ভাবছেন সবসময় মারামারি যেমন দেখায় আরকি টিভিতে সেরকম কিন্তু নয়, অন্তত আমরা সেরকম কোনো ঝামেলা পাইনি। খুব সুন্দর দেশ লেবানন। মানে মিড্‌ল্‌ ইস্ট বলতেই যে ছবিটা আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে তেমনটা নয়। আচ্ছা এখন কটা বাজল?
    দুটো প্রায়।
    ও তাহলে ঠিক আছে। আসলে বাচ্চারা আসবে সাড়ে তিনটেয়। কোনো কোনো দিন পোনে চারটে চারটেও হয়ে যায়। একটা আসবে ক্রেশ থেকে, অন্যটা স্কুলের পরে ঐ ওখান থেকেই ক্রেশ হয়ে, নীচের ফ্লোরের একটা ফ্যামিলি আছে ওরাই নিয়ে আসে, ওদের বাচ্চারাও যায়। শুনুন না, ঐ বেইরুটে যখন ছিলাম.. আচ্ছা আপনার কি টায়ার্ড লাগছে? দুপুরে ঘুমোনোর ওব্যেশ আছে? ও না, আপনি তো সার্ভিস করেন। আমিও দুপুরে ঘুমোই না। এখন তো তাও মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়ি, ওয়েটটা বেড়ে যাচ্ছে।
    কই না তো! আপনার তো দিব্যি স্লীম ফিগার।
    ধুস্‌ কী যে বলেন। আগে একদম পাতলা রোগা ছিলাম। বিয়ের আগে, মেয়ে হবার আগে অবধি। সেসব ফোটো, দাঁড়ান অন্য অ্যালবামে আছে বোধয় খুঁজে দেখতে হবে, হয় বাচ্চাদের ঘরে নাহলে কোলকাতায় রেখে এসেছি, এখন খুঁজতে গেলে আপনি বোর হয়ে যাবেন। যখন জব করতাম তখন তো ঘুমোনোর প্রশ্নই ছিলো না। আচ্ছা আপনি আমাকে একটা চাকরি খুঁজে দিন না। আপনার তো অফিস টফিসে অনেক চেনাজানা আছে।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ১৬:২০647210
  • এখন দিন ছোটো হয়ে যাচ্ছে তো, বিকেল বলে তেমন কিছু নেই ঝপ্‌ করে সন্ধ্যে হয়ে যাবে, লেবাননে কিন্তু অ্যাতটা তাড়াতাড়ি অন্ধকার হয় না। ওয়েদারটাও খুব ভালো পেয়েছি। সী বীচ্‌ আছে, এই অ্যাতটুকুটুকু ড্রেস পরে মেয়েরা ঘোরে। খুব স্মার্ট খুব ফ্যাশনেবল। ওটাকে তো মীড্‌ল্‌ ইস্টের প্যারিস বলে। ফ্রেঞ্চে কথা বলছে, অ্যারাবিকের মধ্যেও আবার ফ্রেঞ্চ মেশানো।
    আপনি বলতে পারেন?
    কী? ফ্রেঞ্চ না অ্যারাবিক? না বাবা। তখন কিছু শব্দ বুঝতাম। ইংলিশ ওখানেও চলে তবে খুব অল্প।
    লোকাল ভাষা শেখাটা তবে দরকারি নয় ওখানে?
    সে লাগতে পারে, যারা জব করছে তাদের লাগে। ইন্ডিয়ানদের মধ্যে একজনকে জানি যে ফ্লুয়েন্ট অ্যারাবিক বলতে পারতো। সে কিন্তু এমনিতে একদম নিরক্ষর প্রায়। অবাক লাগছে না? সে একটা পাঞ্জাবী মেয়ে। মেয়ে মানে বৌ। দাঁড়ান কাপড়গুলো ব্যালকনিতে রেখে এসেছি, এখন ঘরে না তুললে আর শুকোবে না।
  • de | 69.185.236.51 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ১৬:৫৬647211
  • খুব ভালো হচ্ছে --
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ১৯:১৬647212
  • এই একটা ঝামেলা এখানে জানেন তো বাইরে কাপড় শুকুদ্দিয়েসে একবার ভুলে গেলে সব আবার ভিজে ন্যাতা হয়ে যাবে। লেবাননে এই সব ঝামেলাই ছিলো না। কাজের লোক পাওয়া যায়, আঙুল নাড়িয়ে কাজ করানো যায়। এখানে ওসব ভুলে যান। অফিস থেকে এসবের অ্যালাওয়েন্সই দেবে না। ঐ যে পাঞ্জাবী বৌটার কথা বললাম, বেইরুটে সেই বৌটা টানা চারমাস ছিলো আমাদের বাড়ীতে। চারমাসের আরো বেশি হবে। পাঁচমাসের ওপরে ছিলো। আমি তো তখন খুব অসুস্থ।
    অসুস্থ ছিলেন?
    হ্যাঁ ঐ মেয়ে হবার আগে শরীর খুব খারাপ পুরো বেডরেস্ট। তারপরে মেয়ে হবার পরেও শরীর খুব খারাপ গেছে। শুধু বিছানায় শুয়ে থাকতাম। উঠে দাঁড়াবার শক্তি ছিলো না। টিনটিনও খুবই ছোটো তখন, এই মনে করুন তিন সাড়ে তিন বছর আগের কথা বলছি। এমনিতে রান্নাবান্না ঘরের সমস্ত কাজ, তার ওপরে আমার ঐ অবস্থা। ছেলেও তখন প্রচন্ড দুষ্টু হয়ে গেছে, এক মুহূর্ত সামালানো যাচ্ছে না। তখন এম্ব্যাসী থেকেই ওরা খবর দিলো যে একটা লোক পাওয়া গেছে। খুবই নিডি মেয়ে। এম্ব্যাসীতে সাহায্য চাইতে এসেছিলো, তখন ওরাই আমাদের কন্‌ট্যাক্ট করে বলে নেবো কিনা। মেয়েটা খুব কাজের ছিলো। পরিশ্রমী। এমনিতে রান্নাবান্নার কাজ বেশি নয়, ওসব দেশে তো কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স খুব ভালো। খুব মডার্ণ কিচেন। আরব দেশের মেয়েদের কিচেনের সব যন্ত্রপাতি দেখলে না আপনার তাক লেগে যাবে। কত্ত রকমের ফুড প্রোসেসার গ্রাইন্ডার ওভেন, মানে কী নেই? এসব দেশে সে তুলনায় কিচেনে আদ্দেক জিনিসই নেই। এরা তো রান্নাবান্নাই তেমন করে না। লেবাননে মেয়েরা খুব ভালোভালো রান্না করে, খুব যত্ন নেয় রান্নায়। আর ভীষন বিউটি কন্‌শাস্‌। ঐ পাঞ্জাবী মেয়েটাও ছিলো খুব স্টাইলিশ্‌। ভুরু প্লাক করা, নেলপালিশ, ক্রীম মেকাপ, চুলের স্টাইল, সবসময় সেজেগুজে ফিট্‌ফাট্‌। রান্নাটাও ভালো করত। তখন আমার রীচ্‌ খাবার খাওয়া একদম বারণ। কিন্তু ওর কাছে শুনেছি রান্না ভালো করত। লেবানিজরাও তো অনেক মশলা খায়। আমাদের মতো খায় না যদিও। আপনি বিকেলে চায়ের সঙ্গে কী খাবেন? মুড়ি মাখব? আমার কাছে মুড়ির মশলা আছে কিন্তু।
    আরে না না আবার এখন চা কেন? সবে তো ভাত খেলাম, আপনি বসুন তো।
    সেই মেয়েটাকে একটা আলাদা ঘর দেওয়া হয়েছিলো। এমনিতে খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। কিন্তু কি স্যাড লাইফ। মানে এমনিতে ম্যারেড। পাঞ্জাবের গ্রাম টাম থেকে এসেছে। স্বাস্থ্য ভালো দেখতেও মোটামুটি - মানে খারাপ নয়। কিন্তু লেখাপড়া শেখেনি। তারপরে যা হয় ওর হাসবেন্ডই ব্যবস্থা করে ওকে মিড্‌ল্‌ ইস্টে একটা কাজ করতে পাঠায়। সৌদিতে।
    কীরকম কাজ?
    কীরকম কাজ আবার হবে? অশিক্ষিত তো। ঐ সার্ভেন্ট মেইড এইসবই হবে কিছু। মানে ওর হাসবেন্ডই দালাল ফালালের থ্রু ব্যবস্থা করেছিলো। খরচও করেছিলো। কিন্তু ওকে দিয়ে ওরা অন্য কাজ করাতো। মারতো। অন্য কাজ মানে প্রস্‌টিটিউশান। খেতে দিতো না, বন্ধ করে রাখতো। হাসবেন্ডের সঙ্গে কোনো কন্‌ট্যাক্‌টই করতে পারছিলো না। কয়েক বছর পরে ও সেই চক্র থেকে পালায়। কীরকম করে জানি পালিয়ে প্রথমে আরেকটা দেশে গেছল, জর্ডন মনে হয়। তারপরে সেখান থেকে লেবানন। কীরকম চালু মেয়ে ভেবে দেখুন। আমি টুক করে চায়ের জলটা চাপিয়ে আসি।
  • Ekak | 24.96.26.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২০:২২647213
  • ভারী ছবিআল লেখা । নায়িকার জায়গায় কাবেরী বোস কে দেখতে পাচ্ছি । অনুচ্চ স্বর । কুটকুট করে কুটনো কাটার মত ডায়ালগ । ঘটিহাতা বেলাউজ ।
  • Ekak | 24.96.26.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২০:২৩647215
  • মানে , ভদ্রলোকের স্ত্রী ।
  • kiki | 127.194.69.27 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২১:৪৪647216
  • একক,
    ঃ)
    সে,
    তাপ্পর, তাপ্পর তাপ্পর?????
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২২:০৮647217
  • আরবী ভাষা শিখে গেল?
    গেল। ওতো যেসব লোকেদের সঙ্গে মিশতো তারা তো... মানে ওর কাস্টমাররা তো আর হিন্দি বলবে না। ঐ ভাষাটা জানত বলেই ওর আরো সুবিধে হয়েছে লুকিয়ে লুকিয়ে পালিয়ে লেবাননে আসবার। মানে কল্পনা করতে পারবেন না। পাসপোর্ট পর্যন্ত নেই। তারপরে বেইরুটের এম্ব্যাসীতে এসে বলছে আমায় দেশে পাঠিয়ে দাও। তখন ইন্ডিয়ান গর্মেন্টের থ্রু খোঁজ খবর নেওয়া হোলো। যতদিন না ওর একটা ব্যবস্থা হচ্ছে ও কোথায় থাকবে? সেইজন্যেই আমরা থাকতে দিলাম আর কি। এসব কাজ তো একদিনে হয় না। সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এই যে আপনার পাসপোর্টে একটা ভুল জিনিস ছিলো দেখলেন তো সেটা ঠিক করতে কতো ঝামেলা?
    হ্যাঁ, কিন্তু আপনার হাসবেন্ড যেরকম হেল্প করলেন, সেরকম কোথাও দেখা যায় না।
    আচ্ছা শুনুন, আপনার আজ অফিস কামাই হোলো না?
    আমিতো ছুটি নিয়েছি আগেই।
    ছুটি আগে থেকেই নেওয়া আছে? তবে যে ও বলল আপনার তাড়া আছে? কি জানি কী শুনেছি তখন। চা টা ঠিক হয়েছে?
    চমৎকার চা। আসাম?
    আসাম দার্জ্জিলিং মেশানো, এটা আমরা এম্ব্যাসী থেকে পাই। লেবাননে আবার চায়ের টেস্ট ফ্লেভার সব অন্যরকম। হ্যাঁ যা বলছিলাম, মেয়েটা জানেন তো আমাকে সব দেখিয়েছিলো, সারা গায়ে ভর্তি দাগ। মানে কী বলব আপনাকে - দেখে শিউরে উঠতে হয়। পিঠে তো আছেই, মানে কেটে গর্ত হয়ে হয়ে গেছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, আরই কী কী করেছে কে জানে। সামনেও এমনকি ব্রেস্ট ফেস্টেও যাতা রকমের মারের দাগ। এমনি ড্রেস পরে থাকলে বাইরে থেকে কিচ্ছু বুঝতে পারবেন না। খারাপ লাগে। তারপরে ওর কাছ থেকে অ্যাড্রেস ফ্যাড্রেস নিয়ে দেখা গেল যে হ্যাঁ জেনুইন কেস, ও সত্যি সত্যিই ইন্ডিয়ান। তখন পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে দেখিয়ে আরেকটা পাসপোর্ট ইস্যু করে দেওয়া হোলো, ওর হাসবেন্ডকে কন্ট্যাক্ট করল এম্ব্যাসী সব জানিয়েই। মানে সে ওকে ফেরৎ নেবে কি না। কিন্তু হাসবেন্ড রাজি হোলো না ফেরৎ নিতে। রাজি হলে এম্ব্যাসী এরকম কেসে টিকিট কেটে দেশে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু ওর হাসবেন্ড বলছে - না, ওর ফিরে এসে কী হবে? মোটকথা ওকে আর ঘরে তুলতে চাইছে না। আসলে ওতো আর ঐ সমাজে ঠিক মানিয়ে নিতে পারবে না। এই সমস্ত কিছু জানবার পরে লোকটা বৌকে কীকরে অ্যাকসেপ্ট করবে? তার পরে ওর স্বভাব চরিত্রও পাল্টে গেছে। মানে কী বলব আপনাকে, আমি তো শুয়ে থাকি উঠতে পারি না, তার মধ্যেই দেখছি ও আমার দামী দামী সালোয়ার কামিজগুলো পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বুটিকের জিনিস। অথচ ওকে কিন্তু দেওয়া হয়েছে। ও যখন এসেছিলো কিচ্ছু ছিলো না তো সঙ্গে? সমস্ত কাপড়জামা আমি নিজের আলমারি থেকে বের করে ওকে দিয়েছি। তা সত্ত্বেও আমার জিনিস বের করে পরেছে। ওর পরা জিনিস কি আমি আবার পরতে পারব বলুন? তারপরে আরেকটা জিনিস লক্ষ্য করেছি, সেটা অনেক পরে। ওয়াশিং মেশিনে ওর জামাকাপড় আমাদের জামাকাপড় সব এক লটে ঢুকিয়ে দিয়ে কাচছে। জাস্ট চিন্তা করুন। মাথা গরম হয়ে যায় না? কোত্থেকে কী অসুখ নিয়ে এসেছে সেসব কি আমরা জানি? এই সমস্ত দেখবার পরে আমার হেল্‌থটা একটু রিকভার করতেই ওকে ছাড়িয়ে দিলাম। ওরও তখন আরেকটা ট্রানস্‌ফার ডিউ হয়ে গেছে। যেসব কাপড় জামা দিয়েছিলাম সেসব তো নিলই, সেইসঙ্গে দুশো ডলার দেওয়া হোলো পারিশ্রমিক বাবদ।
    তারপর?
    তারপরে তো আমরা প্যারিসে ছিলাম, মধ্যিখানে দিল্লীতে মাস দুয়েক। ও আচ্ছা ঐ মেয়েটার তারপরে কী হোলো তারপরে সেইটা জানতে চাচ্ছেন? আবার কোথাও গিয়ে নিজের ব্যবস্থা করে নেবে। সেসব ব্যাপারে সেয়ানা আছে।
  • তাপস | 122.79.38.211 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২২:১৫647218
  • এই আপাত নৈর্ব্যক্তিক বয়ানের পিছনে, মিশকালো রঙের তিক্ততাটা খুব টের পাচ্ছি ।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩০ জুলাই ২০১৪ ২২:২৮647219
  • দেখেছেন কেমন করে সময় কেটে গেল? বাচ্চারা এসে গেল।
    হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি বাচ্চাদের দেখুন, আমাকে নিয়ে ভাববেন না।
    হ্যাঁ ওদের এখন খাবার করে দিই। আপনি আসুন না এদিকটায় রান্নাঘরে বসে বসেই কথা বলি। আচ্ছা আপনি অফ্‌টাইমে কী করেন? টিভি দেখেন? স্টোরি বুক্‌স্‌? এখানে তো টিভি প্রোগ্রাম সব জার্মানে নয় ফ্রেঞ্চে। গল্পের বই আগে পড়তাম না, এখনও বিশেষ মন দিতে পারি না। ম্যাগাজিন পড়তে ভালো লাগে। সেদিন একটা বই কিনলাম ইংলিশ বুকশপ থেকে- অ্যারেঞ্জ্‌ড্‌ ম্যারেজ।
    অ্যারেঞ্জ্‌ড্‌ ম্যারেজ?
    আমাদের নয়, ঐ বইটার নাম। আমাদের হচ্ছে ভাব করে বিয়ে। তারপরে বিয়ের ফাংশান টাংশান সবই আমাদের দুজনের বাড়ী থেকেই করেছে। কিন্তু বিয়েটা অ্যারেঞ্জ্‌ড্‌ ম্যারেজ নয়। ঐ বইটাতে অনেক ছোটোছোটো গল্প আছে, তার মধ্যে একটা গল্পে মিল পাই ঐ পাঞ্জাবী বৌটার। ঠিক হুবহু মিল নয় কিন্তু একটু ভাব আছে। আপনি পড়েননি না? আপনাকে দিতে পারতাম পড়তে কিন্তু ফেরৎ দিতে তো আবার এতদূরে আসতে হবে।
    ফেরৎ দেয়াটা সমস্যা নয়, বাই পোস্ট পাঠিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু আমার এখন বই পড়ার তেমন নেশা নেই। ভবিষ্যতে বইটা জোগাড় করে পড়ে নেবো।

    (সমাপ্ত)
  • i | 147.157.8.253 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৫৩647220
  • আগেও বলেছি বোধ হয় , কি যেন আছে সে -র লেখার ধরণে-সিনেমার মত দেখতে পাই তো বটেই-তার বাইরেও কিছু একটা অধরা থেকে যায়-সেইটা খুব টানে বরাবর।
    লিখুন। পড়ছি। পড়ব।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১২:৫২647221
  • আপনাদের আরেক দফা থ্যাঙ্ক্স্‌।
  • | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১৩:০০647222
  • এই বোটার জন্য আমার মনটা খারাপ হল।
  • | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১৩:০১647223
  • ^বৌটার জন্য।
  • সে | 203.108.233.65 | ৩১ জুলাই ২০১৪ ১৩:২৭647224
  • আমার দুই বৌয়ের জন্যেই মন ভার হয়।
  • Abhyu | 107.81.97.76 | ০৩ আগস্ট ২০১৪ ০৮:২৭647226
  • আরো লেখো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন