এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর

  • প্রোফেসর শঙ্কু ও টাকার কল

    J
    বইপত্তর | ২৮ জুলাই ২০০৬ | ১৭৪২ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • J | 160.62.4.10 | ২৮ জুলাই ২০০৬ ১৪:০৭632540
  • গিরিডি
    ২৮শে জুলাই ২০০৬
    বিকেল সাড়ে চারটে

    এই মাত্র চায়ের আড্ডা সেরে অবিনাশবাবু চলে গেলেন। বেশ কয়েকদিন ডায়েরী লেখা হয় নি। আমার এবারের আবিষ্কার এ.টি.এম. নিয়ে গত দেড়মাস যে কিভাবে কেটে গেছে নিজেই জানিনা।
    গবেষণার কাজে যখন ডুবে থাকি, ঘুমের প্রয়োজনও খুব কমে যায় আমার। সারাদিনে হয়ত এক থেকে দেড়ঘন্টা ঘুমোই।
    আমার পোষা বেড়াল নিউটনও সেসময়ে খুব শান্ত হয়ে থাকে, কাজে বাধা হতে পারে জেনে কোনো অসুবিধে করে না।
    .টি.এম. এর কাজটা হয়ে যাবার পরেই আজ উশ্রীর ধারে মর্নিং ওয়াক সেরে ফিরতি পথে বাজারে গেলাম। সেখানে অবিনাশবাবুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমার এবারের গবেষণার কাজ আপাতত: শেষ শুনে ভদ্রলোক খুব খুশী। কারণটা আর কিছুই নয়, এবার থেকে রোজ বিকেলে আবার আড্ডা মারতে আসতে পারবেন বলে। তবুও জিগ্যেস করে বসলেন, " কীসের ওপর এবার কাজ করলেন মশাই?"
    আমি সংক্ষেপে উত্তর দিলাম "এ.টি.এম."
    সঙ্গে সঙ্গে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন ভদ্রলোক, " সেই টাকার কল !!! সেতো কবেই আবিষ্কার হয়ে গেছে মশাই। গতবার আমার ভাগ্নের সঙ্গে রাঁচিতে দেখে এলুম, কার্ড ঢোকালেই টাকা বেরিয়ে আসছে..."
    বুঝলাম ভদ্রলোক, আমার এই এ.টি.এম. কে ব্যাঙ্কের অটোমেটেড টেলর মেশিনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন, কিন্তু বাজারে দাঁড়িয়ে আমার গবেষণার ব্যাপারে বিশদে আলোচনা করার কোনো মানে হয় না।
    ওঁকে বিকেলে আসতে বলে,
    নিউটনের জন্যে ট্যাংরা মাছ কিনে বাড়ী ফিরলাম। ট্যাংরামাছ শুধু নিউতনের নয়, আমারও পছন্দ।
    .টি.এম. সম্বন্ধে কাজের কথা বিশেষ কাউকেই জানাই নি।
    ভাবছি পোর্তুগালের বিজ্ঞানী পাওলো কাভাকো কে একটা ইমেল লিখবো এই নিয়ে। প্রায় হপ্তাখানেক হলো ইমেল দেখা হয় নি।
  • J | 160.62.4.10 | ২৮ জুলাই ২০০৬ ১৫:১০632551
  • গিরিডি,
    ২৮শে জুলাই
    রাত সাড়ে দশটা

    প্রায় শখানেক ইমেলের ভীড় থেকে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ইমেলগুলো খুঁজে পড়তে পরতেই কেটে গেল কয়েক ঘন্টা।
    পাওলো কে মোটামুটি জানিয়ে দিলাম, যে আমার এই "এ.টি.এম." যন্ত্র আর বিশেষ কিছুই নয়, একধণের ডামি। খুব হাল্কা মেজাজেই এর নাম দিয়েছিলাম "অ্যানাদার টকিং মেশিন", কারণ এই যন্ত্র কথা বলে। শুধু শিখিয়ে দেওয়া কথা নয়, এমন কোনো প্রশ্ন , যেটার উত্তর একে আগে শিখিয়ে দেওয়া হয় নি, অল্প সময় নিয়ে সামান্য "ভেবে" সেই প্রশ্নেরও উতার দেয় আমার যন্ত্র।
    এই "ভেবে" উত্তর দেবার ব্যাপারটার জন্যেই আমাকে যা খাটতে হয়েছে। বাকী যেগুলো, মানে আমার গলার স্বরের রেকর্ডিং করে ওর ভেতরে "ঢুকিয়ে দেওয়া", কিংবা বাংলা ইংরিজি ছড়াও স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পোর্তুগীজ, জার্মান এইসব ভাষায় কথা বলতে পারা এগুলো ছিলো অপেক্ষাকৃত সহজ ব্যাপার।
    "এ.টি.এম." কখনই আমাকে রিপ্লেস করতে পারবে না, কিন্তু যখন আমি কোথাও বেড়াতে যাই, তখন টেলিফোনটাকে আন্সারিং মেশিনে রেখে যেতে ইচ্ছে করে না। আমি চাই ঐ সময়ে "এ.টি.এম." আমার ফোনকলগুলো রিসিভ করবে, মোটামুটি "ভেবে চিন্তে" উত্তর দেবে। অন্যদিকে আমি ছুটিগুলো কাটাবো নিশ্চিন্তে।
    দরকার হলে "এ.টি.এম." আমার ইমেলগুলোরও জবাব দিতে পারে। তবে খুব অল্প কিছু সেনটেন্সে। গুরুত্বপূর্ণ ইমেলের উত্তর ওকে দিয়ে না দেওয়ানোই ভালো।
    এই নিয়ে বেশকিছুদিন ধরে প্রচুর টেস্ট করেছি। তারমধ্যে গতকাল একটা মজার ব্যাপারই হয়ে গেল।
    ও কতটা তৎপরতার সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারে, সেটা টেস্ট করবার জন্যে ওকে ফোন করলাম একটু দূরে বসে। ওযথারীতি আমার শিখিয়ে দেওয়া কায়দায় অবিকল আমার গলার স্বরে বলল , " হ্যালো, শঙ্কু স্পীকিং"।
    তখন আমি বললাম, " আমিও শঙ্কু কথা বলছি।"
    এর উত্তরে ও কী বলে, সেটা জানবার কৌতুহল ছিলো প্রবল, কারণ ও নিজেকে শঙ্কু বলে পরিচয় দিলেও, আরেকজনের নাম যদি শঙ্কু হয়, তবে ও কিভাবে রিয়াক্ট করে সেটা আমি দেখতে চাইছিলাম।
    আমাকে হতবাক করে দিয়ে "এ.টি.এম." বলল, "আপনি তো কালকেও ফোন করেছিলেন, আপনার গলার স্বর শুনেই আপনাকে চিনতে পেরেছি শঙ্কু, বলুন আপনার জন্যে কী করতে পারি?"
    আর কোনো চিন্তা নেই, "এ.টি.এম." এখন গলার স্বর শুনে লোকজনকে চিনে নিতে পারছে, পুরোনো কথোপকথন মনে রাখতে পারছে।
    ওকে কোনো কনফারেন্সে প্রেজেন্ট করবার ইচ্ছে আমার নেই। আমি চাই আমার ব্যস্ততার সময়ে ও আমার টেলিফোন ইমেল এসবের উত্তর দিক।
    কাল সকালে যদি বৃষ্টি না পড়ে অবিনাশবাবুর ইচ্ছে উশ্রীর ধারে চড়ুইভাতি করার। নিউটন কেমন করে যেন এটা বুঝতে পেরেছে, তা ওর লাফ ঝাঁফ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
    চড়ুইভাতির সময়টা "এ.টি.এম." কে কানেক্ট করে রেখে যাবো টেলিফোন আর ইমেলে। আমার অনুপস্থিতিতে ও কীভাবে পরিস্থিতি সামলায় সেটা দেখতে চাই।
  • J | 160.62.4.10 | ২৮ জুলাই ২০০৬ ১৫:৪৫632562
  • গিরিডি
    ২৯শে জুলাই ২০০৬
    ভোর সওয়া ছটা

    ভোর রাতের দিকে টিপ্‌টিপ্‌ বৃষ্টি থাকলেও, সূর্যোদয়ের পর থেকেই আকাশে সামান্য মেঘ, কিন্তু বৃষ্টি একদম নেই।
    প্রহ্লাদ রান্নার সরঙ্‌জাম গুছিয়ে নিচ্ছে, নিউটনের আনন্দ আর ধরে না!
    সাড়ে ছটার মধ্যে অবিনাশবাবু এসে পড়বেন।
    আমি গোছগাছ করে "এ.টি.এম." কে জুড়ে দিলাম ফোন আর কপি্‌মউটারের সঙ্গে।
    আশা করছি আজ পাওলোর কাচ্ছ থেকে আমার আগের মেলটার উত্তর পাবো।
    লিসবনের পদার্থবিজ্ঞানী মহলে প্রচার বিমুখ পাওলোর সেরকম নামডাক না থাকলেও এরকম ছোটোখাটো যন্ত্র তৈরী ওর একটা নেশা। গেলবার আমার পোর্তুগাল সফরের সময়ে বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে যখন প্রভূত "বোর" হচ্ছি, তখন পাওলো সেটা লক্ষ্য করে নিজে থেকেই এগিয়ে এসে আমার সঙ্গে ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরিজিতে আলাপ করে। সেই সময়ে জানতে পারি দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহারের উপযোগী কত যন্ত্র ও আবিষ্কার করেছে, কিন্তু পেটেন্ট নেয় নি।
    সম্মেলন থেকে ফিরে এসেও ইমেলে আমরা যোগাযোগ রেখে চলেছি। এই যন্ত্রটা বানাবার পরেই তাই সর্বপ্রথম পাওলোর কথা মনে পড়ল-
    অবিনাশবাবু এসে পড়েছেন, তা নীচে প্রহ্লাদের সঙ্গে ওঁর চেঁচামেচির আওয়াজ শুনেই বুঝতে পারছি।
    এখন বেরোতে হবে।
  • Paramita | 64.105.168.210 | ২৮ জুলাই ২০০৬ ১৮:৫৫632573
  • তাপ্পর, তাপ্পর?
  • Tirthankar | 130.207.93.156 | ২৯ জুলাই ২০০৬ ০১:০৫632580
  • যো-দি, থ্রেডটা দেখেই ব্যপক ফূর্তি পেলুম। তাড়াতাড়ি নামাও, ঝটপট, জলদি।

    সুধীবৃন্দ, এই লেখিকার রচিত আগের দুটি রুদ্ধশ্বাস শঙ্কু কাহিনী "প্রফেসর শঙ্কু ও মোংরু' ও "দার্পচূর্ণ'-র সফ্‌ট্‌ কপির প্রয়োজন হলে [email protected]-এ যোগাযোগ করতে পারেন।

    বাংলা আসছে না, তাই বানানভুলের ত্রুটি মার্জনীয়।
  • m | 67.173.95.163 | ২৯ জুলাই ২০০৬ ০১:৫৭632581
  • তারপর?
  • Riju | 203.197.96.50 | ২৯ জুলাই ২০০৬ ১২:৩৪632582
  • যো দি দুরন্ত হচ্ছে
  • Su | 59.93.207.242 | ২৯ জুলাই ২০০৬ ১৩:৩১632583
  • শিগ্গির পরের কিস্তি দাও!

    সু
  • G | 203.206.240.154 | ৩০ জুলাই ২০০৬ ১৮:৪১632584
  • যো - তারপর? জব্বর লিখছো কিন্তু!
  • tan | 131.95.121.127 | ৩১ জুলাই ২০০৬ ১৯:৫৪632541
  • প্রফেসর শঙ্কু কেমন আছেন? অনেকদিন খবর নেই! চিন্তা হয়,বুড়ো মানুষ,দেখাশোনার ঠিকঠাক লোকও নেই প্রহ্লাদ ছাড়া!
  • trq | 211.28.248.189 | ৩১ জুলাই ২০০৬ ২০:২১632542
  • আরে শেষ করো না ক্যান! প্রতিদিন কত আশা কইরা আসি! :-(
  • J | 160.62.4.10 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ১৫:২৪632543
  • গিরিডি
    ২৯শে জুলাই
    বিকেল চারটে

    চড়ুইভাতির জন্যে বেরোতে যাবো, এমন সময়ে তেড়ে বৃষ্টি এলো।
    সমস্ত আয়োজন সত্বেও বেরোতে না পারায় অবিনাশবাবু বেজার মুখ করে আমার ল্যাবরেটরীতে সারাদিন আড্ডা দিয়ে কাটালেন। সেই সঙ্গে এ.টি.এম কে নিয়ে ওঁর অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে বললাম, "আমাকে প্রশ্ন না করে ওকেই সরাসরি প্রশ্ন করে দেখুন"।
    এবার উনি এ.টি.এম এর সঙ্গে ফোনে কিছুক্ষণ গল্প করলেন।
    কাল পরশু যদি বৃষ্টি না থাকে, তবে অবিনাশবাবু চড়ুইভাতির প্ল্যান বাতিল করতে চান না।
    পাওলোর ইমেলের উত্তর পেয়েছি। এ.টি.এম কে নিয়ে সে ও খুব উৎসাহিত। আমার যন্ত্র ঠিক কী কী কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে জানতে আগ্রহী পাওলো। আমি ছাড়া আর কোনো বিজ্ঞানী এ নিয়ে কাজ করছেন কিনা তা ও জানতে চেয়েছে সে।
    আমি মোটামুটি একটা লিস্ট করে পাওলোকে পাঠিয়ে দিলাম। সঙ্গে এ ও জানালাম যে এই একই বিষয় নিয়ে যদি অন্য কেউ "কাজ" করেও থাকে, তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই, কারণ এ.টি.এম কে আমি বানিয়েছি আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনে।
    এ মুহূর্তে যতদূর জানি কর্ণাটকের বিজ্ঞানী প্রোফেসর মূর্তি এনিয়ে কিছু গবেষণামূলক প্রবন্ধ ছেপেছিলেন, তবে তাঁর কাজ কতদূর এগিয়েছিলো জানি না। পাওলোকে মূর্তির কাজের ব্যাপারে রেফার করে, এ ও জানিয়ে দিলাম যে এ.টি.এম দেখবার জন্যে সে যদি গিরিডি আসতে চায়, আমার সাদর নিমন্ত্রণ রইল।
    প্রহ্লাদ কফি নিয়ে এসেছে। এখন লাইব্রেরী তে বসে কফি খেতে খেতে বই পড়ব।
  • J | 160.62.4.10 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ১৫:২৭632544
  • গিরিডি
    ৩১শে জুলাই
    রাত দশটা

    এত তাড়াতাড়ি এতোগুলো ঘটনা ঘটে গেল যেগুলো এইবেলা গুছিয়ে লিখে ফেলছি।
    গত কদিন বাদলা থাকায় চড়ুইভাতি হয়নি, আজ সকাল থেকেই আকাশটা পরিষ্কার ছিলো, তাই সকাল সকাল উশ্রীর ধারে চড়ুইভাতি করবার সময়ে গরমও বিশেষ লাগে নি। রান্নার পদ বলতে ছিলো খিঁচুড়ি, মাছ ভাজা আর চাটনি। রান্নার দায়িত্বে ছিলেন অবিনাশবাবু একাই, যদিও উনুন জ্বালানো জল এনে দেওয়া এসব কাজ প্রহ্লাদই সামলাচ্ছিলো। সাড়ে দশটা নাগাদ অবিনাশবাবুর খেয়াল হয় যে নুন আনা হয় নি, যদিও তখন অর্ধেক রান্না হয়ে এসেছে। অগত্যা প্রহ্লাদ ছোটে বাড়ীতে নুন আনতে।
    আমি একটা ছাতিম গাছের তলায় বসে জিরোচ্ছি, নিউটন আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, এমন সময় আমার হাতঘড়িতে বিপ বিপ করে অ্যালার্ম বাজতে লাগল।
    এটা সময়ের অ্যালার্ম নয়, এ.টি.এম. এর সঙ্গে আমার ঘড়িকে একটা বিশেষ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সিতে বেঁধে দিয়েছি, যাতে কোনো কারণে ওর ব্যাটারী ফুরিয়ে এলে আমি জানতে পারি। এটা সেই অ্যালার্ম। কিন্তু এ.টি.এম. এর তো এখন ব্যাটারী ফুরিয়ে আসবার সময় নয়, ঘর থেকে বেরোবার আগে ওকে সরাসরি ইলেকট্রিক কানেকশানে জুড়ে এসেছি। তবে কি পাওয়ার ফেলিওর হয়ে গেছে? তাই-ই যদিবা হয়, এত তাড়াতাড়ি তো ব্যাটারীর চার্জ কমে যেতে পারে না।
    অবশ্য এনিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী হবে, চড়ুইভাতি সেরে বাড়ী ফিরে এ.টি.এম. কি গন্ডগোল হচ্ছে ভালো করে দেখে নেবো এই ভেবে বসে রইলাম।
    ঘন্টা দেড়েক পরেও প্রহ্লাদ নুন নিয়ে ফিরছে না দেখে অবিনাশবাবু অস্থির হয়ে উঠলেন, এদিকে রান্নার জ্বালানীও ততক্ষণে শেষ। সত্যিই তো বাড়ী থেকে নুন নিয়ে আসতে ঘন্টাখানেকের বেশী লাগা উচিৎ নয়, তাই আমরা বাড়ীর পথে হাঁটা দিলাম।
    কিছুটা হাঁটতেই প্রহ্লাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। প্রহ্লাদের কাছে শুনলাম, বাড়ীতে ঢুকবার সময়ে সে লক্ষ্য করে সদর দরজা খোলা, এবং এ ও বুঝতে পারে কেউ ঢুকেছে আমার ল্যাবরেটরিতে। ল্যাবরেটরিতে ঢুকতে গেলে, দুজন লোক প্রহ্লাদ কে মাথায় বাড়ি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পরে প্রহ্লাদের জ্ঞান ফিরলে সে ল্যাবরেটরিতে ঢুকে দেখতে পায় সব তছনছ হয়ে আছে। বাতি জ্বলছে না, অর্থাৎ ইলেকট্রিকের কনেকশান নেই, তবুও সেই অবস্থায় এ.টি.এম. টেলিফোনে কথা বলে চলেছে।
    এই ঘটনার পরে আর চড়ুইভাতি করবার কোনো মানে হয় না, আমি বাড়ী ফিরে এসে দেখলাম সব কিছু।
    কী বিশ্রীভাবে আমার ল্যাবরেটরী তছনছ করা হয়েছে তার বর্ণনা দেবার মতো অবস্থা আমার নেই। সমস্ত ঘর তছনছ হওয়া সঙ্কেÄও এ.টি.এম. অবিক্ষত, কয়েকটা অদরকরী কাগজপত্রের সঙ্গে চুরি গেছে একটি মহামূল্যবান জিনিস, এ.টি.এম. এর তৈরী করবার পুরো ডায়াগ্রাম সহ আমার এই গবেষণার সমস্ত কাগজপত্র।
    এতক্ষণ ডায়েরী লিখবার মতো মনের অবস্থা ছিলো না। এই দীর্ঘ বৈজ্ঞানিক জীবনে অনেক বিপদসঙ্কুল অবস্থাতেও আমি কখনো ভেঙ্গে পড়ি না, তাই এখন মাথা ঠান্ডা করে সমস্ত কাগজপত্র আবার লিখে ফেলতে হবে।
    আমাদের এই তল্লাটে চুরির ঘটনা নেই বললেই চলে। অবশ্য বোঝাই যাচ্ছে যে এটা কোনো ছিঁচকে চোরের কাজ নয়। এর পেছনে হাত আছে অন্য কারো। সারাদিনের এই ধকলে আমি ক্লান্ত, এখন ঘুমোতে যাবো।
  • J | 160.62.4.10 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ১৫:৫৫632545
  • গিরিডি
    পয়লা আগস্ট
    দুপুর দুটো

    গতকালের ঘটনার সময়ে এ.টি.এম. দুটো ফোন কলের উত্তর দিয়েছিলো, একটি পাওলোর, অন্য ফোনটা কার কাছ থেকে এসেছিলো অর্থাৎ সেই ফোনের নম্বর আমার যন্ত্র বুঝে উঠতে পারে নি, যদিও পুরো ফোন কলটাই রেকর্ডেড হয়ে গেছে এবং যিনি ফোন করেছিলেন, তিনি নিজের পরিচয় সম্পূর্ণ অজ্ঞাত রেখেছেন।
    আমি যদিও প্রমাণ ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি না, তবুও মনে হচ্ছে এই বিশেষ "ফোন কল" এর সঙ্গে গতকালের ঐ চুরির কোনো সম্পর্ক থাকা অসম্ভব নয়।
    আজ আবার পাওলোর ইমেল পেলাম। আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সে লিখেছে যে প্রোফেসর মূর্তির গবেষণামুলক প্রবন্ধগুলো সে মন দিয়ে পড়েছে; এবং এর পরেই সে সরাসরি মূর্তির সঙ্গে আলাপে আগ্রহী হয়ে ইমেল করেছিলো কিন্তু এখনো অবধি কোনো উত্তর পায় নি। তবে আমার নিমন্ত্রণের কথা মাথায় রেখে পাওলো আগামী সপ্তাহে ভারতে আসবার পরিকল্পনা করছে। পাওলো এ ও লিখেছে যে, যেহেতু সে এর আগে ভারতে আসেনি, তাই শুধু এ.টি.এম. ই নয়, তার আরেক উদ্দেশ্য যে একটু বেড়ানো, সে কথা যেন মাথায় রাখি।
    আমি সঙ্গে সঙ্গে পাওলোকে উত্তর দিয়ে ইমেল করে দিলাম।
    .টি.এম. এর গবেষণা বিষয়ক নথিপত্র প্রায় সবই আবার মোটামুটি তৈরী করে ফেলছি। তবে এবার সমস্ত কাগজপত্রের কপি বানিয়ে রাখা দরকার।

  • Parolin | 213.94.228.210 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ১৮:২৪632546
  • অদ্ভুত ভালো হচ্চে। চালাও যোদি।
  • J | 160.62.4.10 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ২০:৪৮632547
  • গিরিডি
    পাঁচুই আগস্ট
    সকাল দশটা

    গত তিনদিন ডায়েরী লেখা হয় নি, কারণ এ.টি.এম. এর সমস্ত গবেষণার কাগজ আবার বানাতে হয়েছে। এর মধ্যে দুরাত একটানা জেগেছি, কোনো ফোনকল বা ইমেল রিসিভ করিনি। আমার হয়ে উত্তর দিয়েছে আমার সহকারী, এ.টি.এম.
    এ কদিন অবিনাশবাবুও আসেননি, কিন্তু আজ ভোরের দিকে কাজের শেষে বারান্দায় একটু দাঁড়িয়েছিলাম, আর তখনই দেখলাম উনি হন্‌হন্‌ করে হেঁটে আসছেন এদিকেই। বাড়ীতে ঢুকেই প্রথমে প্রহ্লাদকে চায়ের অর্ডার দিলেন, তারপরে চেঁচাতে চেঁচাতে দোতলায় আমার লাইব্রেরীতে ঢুকে পড়লেন, "আরে দেখেছেন মশাই কী কান্ড! আপনার যন্ত্র তো হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে, আজকের খবরের কাগজ পড়েছেন?"
    সত্যিই গ ততিনদিন খবরের কাগজ পড়া হয় নি। তবে অবিনাশববুর হাতেই ছিলো আজকের খবরের কাগজ, তাতে প্রথম পৃষ্ঠায়ই প্রোফেরর মূর্তির ছবিসহ একটি প্রতিবেদন এ.টি.এম. নিয়ে।
    মোটামুটি খবরটা পড়ে যা বুঝলাম তাতে প্রোফেসর মূর্তি নিজেকে এ.টি.এম. এর আবিষ্কর্তা হিসেবে দাবী করেছেন, এবং পেটেন্ট নেবার জন্যে যেটুকু সময় দরকার, সেটুকু সময়ও অপেক্ষা করতে না পেরে, সাংবাদিকদের ডেকে একথা খবরের কাগজে ছাপিয়েছেন। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগলো যেটা, সেটা হচ্ছে তাড়াহুড়োয় উনি যন্ত্রটার একটা নিজস্ব নতুন নাম পর্যন্ত দিতে পারেননি, আমার সমস্ত কাগজপত্র চুরি তো করেইছেন, সেই সঙ্গে আমার দেওয়া এ.টি.এম. নামটাও বদলাতে পারেন নি।
    অবিনাশবাবু রাগে থরথর করে কাঁপছেন, তা সঙ্কেÄও আমাকে নিরুত্তাপ দেখে উনি খুব আশ্চর্য হয়েছেন সেটা ওঁকে দেখেই বুঝতে পারলাম।
    - আরে আপনি প্রতিবাদ করবেন না মশাই? আপনার আবিষ্কার করা জিনিস, ঐ মূর্তি নিজের নামে চালিয়ে দেবে, আর আপনি তা চুপচাপ দেখবেন?

    বিজ্ঞানীদের মধ্যে এধরণের কত রেষারেষি আর চুরির নমুনা দেখেছি তার ফিরিস্তি অবিনাশবাবুকে দিলে ওঁর যে কী অবস্থা হবে সেটা ভাবতে গিয়েই হাসি পেয়ে গেল।

    - আপনি হাসছেন? আরে মশাই আপনি হাসছেন?
    অবিনাশ বাবু সত্যিই অবাক হয়েছেন।
    বললাম, "দেখুন, কেউ যদি এত সামান্য একটা আবিষকার, তাও অন্যের থেকে চুরি ক'রে, প্রেস কনফারেন্স ডেকে জাহির করে আনন্দ পায়, তবে আমি আর কীই বা করতে পারি? এ.টি.এম. কে আমি কখনই পেটেন্ট নেবো বা বিজ্ঞানী সম্মেলনে প্রেজেন্ট করব বলে তৈরী করিনি। এমনকি ওকে নিয়ে কোনো সায়েন্টিফিক জার্নালেও আমি কোনো পেপার পাবলিশ করিনি। ও আমার বন্ধু ও সহকারী হিসেবেই থাকুক। অন্য কেউ এই নিয়ে মাতামাতি করলেও আমার কোনো ক্ষতি নেই"।
    উত্তরটা যে অবিনাশবাবুর তেমন মনোমতো হয়নি, তা ওঁর গজগজ করা দেখেই বুঝতে পরলাম।

    কিন্তু আমার আরো অনেক জরুরী কাজ বাকী, পরশু পাওলো আসছে। তার সঙ্গে বেড়াবার একটা প্ল্যান করে ফেলেছি। পাওলোর সঙ্গে ইংরিজিতে কথা বলতে হবে শুনে অবিনাশবাবুও বেজায় উত্তেজিত।

  • J | 160.62.4.10 | ০২ আগস্ট ২০০৬ ২১:১৪632548
  • গিরিডি
    পাঁচুই আগস্ট
    সন্ধ্যে সাতটা

    পাওলোর সঙ্গে ভারতের কোন কোন জায়গায় বেড়াতে যাবো সেই নিয়ে একটা ইমেল লিখেছিলাম ওকে। ইমেল পেয়েই ও আমাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল।
    - হ্যাল্লো শঙ্কু, আশাকরি তোমার মেশিনের সঙ্গে কথা বলছি না।

    আমি আশ্বস্ত করাতে পাওলো বলল যে প্রোফেসর মূর্তির ডাকা বিশেষ বিজ্ঞানী সম্মেলনে সে আমন্ত্রণ পেয়েছে এবং জানতে চাইল যে আমার বাড়ী থেকে জায়গাটা কতদূর, আশেপাশে দ্রষ্টব্য কী কী আছে, ইত্যাদি।
    মূর্তি যে তড়িঘড়ি বিজ্ঞানী সম্মেলন ডেকে নিজের "আবিষ্কারের" কথা জাহির করবে এবং সেই সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানাবে না, এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই।
    কিন্তু পাওলোর সঙ্গে আমি ঐ সম্মেলনে যেতে পারছি না সেকথা ওকে সরাসরি জানিয়ে দিলাম।
    আমি আমন্ত্রিত নই জেনে পাওলোও অবাক হয়েছে, যদিও গত সপ্তাহে আমার বাড়ীতে চুরির ঘটনা ওর সম্পূর্ণ অজানা।
    আমি এ.টি.এম. কে নিয়ে আরো নতুন কিছু করবার কথা ভাবছি। ওর "স্মৃতিশক্তি" বাড়িয়ে তোলা ও সেই সঙ্গে ও যাতে "দেখতে" পায় সেই ব্যবস্থাও করতে চাই। ওকে রোবট না বানিয়েও মাঝে মধ্যে কিছু নতুন নতুন ফাংশান জুড়ে দিতে পারলে আমার নিজেরই ভালো লাগবে। দেখা যাক কতদূর কী এগোয়।
  • J | 84.72.45.33 | ০৩ আগস্ট ২০০৬ ০১:১৫632549
  • গিরিডি
    ৮ই আগস্ট
    ভোর সাড়ে পাঁচটা

    গতকাল রাতে পাওলো এসে পৌঁছেছে। লিসবনের সেই বিজ্ঞানী সম্মেলনের টানা চারবছর বাদে এই দ্বিতীয়বার আমাদের সাক্ষাৎ হলো। এই সময়ের মধ্যে ওর চটপটে স্বভাবের কোনো পরিবর্তন হয় নি যদিও মাথার অর্ধেকের বেশী এখন টাক।
    পাওলো এসে পৌঁছেই প্রথমে এ.টি.এম কে দেখতে চাইলো।
    এতটা পথ সফর করে এসেও এ.টি.এম কে দেখবার আগ্রহে আর স্বভাবসুলভ কৌতুহলে তার এতটুকুও ক্লান্তি নেই।
    ডিনারের পরেই আমরা এ.টি.এম কে নিয়ে বসলাম লাইব্রেরীতে।
    গতকাল সকাল থেকেই আমার সহকারী এ.টি.এম "দেখতে" পাচ্ছে, ওর "স্মরণশক্তি"ও বাড়িয়ে দিয়েছি কয়েকগুণ। কিছুক্ষণ ধরে ওকে নিয়ে নাড়াচাড়া করে পাওলো বেজায় খুশী, আমাকে ব্যাঙ্গালোরের সম্মেলনে যাবার জন্যে পেড়পেড়ি করতে লাগলো।
    এবার আমি বাধ্য হয়েই ওকে আসল কথাগুলো বললাম, প্রহ্লাদের ওপর আক্রমন থেকে শুরু করে আমার কাগজপত্র চুরি যাওয়া, সাততাড়াতাড়ি মূর্তির সাংবাদিক ডেকে প্রচার এবং এই সম্মেলনে আমার আমন্ত্রিত না হওয়া।
    পাওলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ।
    ইতিমধ্যে যথেষ্ট রাত হয়ে গিয়েছিলো, গুডনাইট জানাবার আগে পাওলো বলল, "শঙ্কু, একটা কথা আমাকে ভাবাচ্ছে। যে লোক তোমার আবিষ্কারকে গুন্ডা লাগিয়ে চুরি করতে পারে, তার হাতে তোমার এ.টি.এম. এর অপব্যবহার হবার সম্ভবনাও কিন্তু উড়িয়ে দেবার নয়"।
    এই ব্যাপারটা আমিও ভেবে দেখেছি, কিন্তু এব্যাপারে আমার এখন কিছুই করবার নেই।
    পাওলো আরো বলল, "দ্যাখো শঙ্কু, তোমার এই আবিষ্কারের কথা আমিই মূর্তিকে জানাই। তাই যে ক্ষতি তোমার হয়েছে তার দায় আমারও আছে। তুমি আমার বন্ধু, মূর্তির ক্ষমতা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই, তবে তোমার আবিষ্কৃত যন্ত্রের অপব্যবহার যাতে না হয়, সেদিকটা আমাদের ভেবে দেখতে হবে।"

    প্রহ্লাদকে বলে দিয়েছি আজ ব্রেকফাস্টে লুচি আর আলুভাজা করতে।
    নিউটন এখন টেবিলের ওপর উঠে পড়েছে, ডায়েরী পরে লিখব।
  • Su | 59.93.242.142 | ০৩ আগস্ট ২০০৬ ১২:৫১632550
  • বাহবা! মনে হচ্ছে ছোটবেলায় আছি, সন্দেশ পড়ছি।
    সু
  • J | 160.62.4.10 | ০৩ আগস্ট ২০০৬ ১৩:৪৮632552
  • গিরিডি
    ৮ই আগস্ট
    সন্ধ্যে সাতটা

    আজ সারাদিন কাটল উশ্রীর ধারে বনভোজনে। লুচি আলুভাজা শেষ করে সবে পাওলোকে নিয়ে বেড়াতে বেরোবো ভাবছি, এমন সময়ে অবিনাশবাবু এসে উপস্থিত।
    এ কদিনে ভদ্রলোক সকাল বিকেল ইংরিজিতে কথা বলা প্র্যাকটিশ করেছেন বই পড়ে পড়ে।
    ওঁর প্রস্তাব এবং আবদারমতো আমাদের আজ উশ্রীর ধারে চড়ুইভাতি করতেই হলো। অবিনাশবাবু অনর্গল কথা বলেই চললেন পাওলোর সঙ্গে। পাওলো ফোটো তুলছে একটার পর একটা, অবিনাশবাবুর ফোটো তুলতে গেলেই উনি হাসি হাসি মুখ করে পোজ দিচ্ছেন।
    আলুর দমে বেশী ঝাল হয়েছে কিনা পাওলোকে জিগ্যেস করতে গিয়েই থমকে খেই হারিয়ে অবিনাশবাবু আমাকে প্রশ্ন করলেন, "ঝালের ইংরিজি কী বলুনতো মশাই? পেটে আসছে কিন্তু মুখে আসচে না।"
    নিউটন সর্বক্ষণ আমার সঙ্গেই ছিলো।
    সারাদিনে একবারও পাওলোর সঙ্গে গবেষণার ব্যাপারে কোনো আলোচনা হয় নি।
  • J | 160.62.4.10 | ০৩ আগস্ট ২০০৬ ১৫:৪৫632553
  • গিরিডি
    ১১ই আগস্ট
    দুপুর একটা

    আজ আমার জীবনে এক অদ্ভুত সাফল্যের দিন। যে যন্ত্রকে শুধু ব্যক্তিগত প্রয়োজনের জন্যে তৈরী করেছিলাম, সে আজ আমাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
    একটু গুছিয়ে লিখি।
    গত দুদিন আমাদের ছিলো বিরামহীন কাজের পালা। এ.টি.এম এর মধ্যে আরো বেশ কিছু ফাংশান ঢোকাতে সক্ষম হয়েছি। এর জন্যে পাওলোর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ও আমাকে উৎসাহ ও মনোবল না জোগালে আমাদের এই যন্ত্র নিয়ে আর এক্সপেরিমেন্ট করা হয়ত হতোই না।

    অনেক অনুরোধ করা সত্বেও আমি ঐ কনফারেন্সে যেতে রাজি না হওয়ায়, পাওলো এ.টি.এম কে ব্যাঙ্গালোরে নিয়ে যেতে চাইলো। এর সঙ্গে সে প্রতিশ্রুতি দিলো যে নিতান্ত প্রয়োজন না হলে, সে ডেমন্‌স্ট্রেশান দেবে না।
    এর মধ্যে এটিএমকে আমরা আরো বেশ কয়েকটি ভাষা শিখিয়েছি, এছাড়া রেডিও সিগ্‌ন্যালের সাহায্যে ও যাতে অত দূর থেকেও আমার সঙ্গে "কথা" বলতে পারে এসব ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওকে টানা দুদিন অন্‌ রাখবার জন্যে জুড়ে দিয়েছি শক্তিশালী ব্যাটারী। শুধু এই ই নয়, আমাদের গত দুদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলস্বরূপ এ.টি.এম এখন নিজে নিজেই বেশ কিছু কথোপকথন, সংলাপ, প্রশ্নোত্তর চালিয়ে যেতে পারে।
    আজ ভোরে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে পাওলো আমাকে এ.টি.এম মারফৎ জানিয়েছে পৌঁছসংবাদ।
    দশটা নাগাদ আমি যেই কম্প্যুটার অন্‌ করতে যাবো, বেজে উঠলো ফোন।
    পাওলো জানাচ্ছে, কনফারেন্স শুরু হয়ে গেছে, "শঙ্কু, জলদি কম্প্যুটার অন্‌ করো, এ.টি.এম এর মাধ্যমে তোমাকে সরাসরি পাঠাচ্ছি কনফারেন্সের লাইভ ভিডিও"।
    পাওলোর সঙ্গে কথা বলে যা জানলাম, এ.টি.এম কে সে ব্যাগে করে নিয়ে ঢুকেছে অডিটোরিয়ামে, আর ব্যাগের ঢাকনা খুলে অন্‌ করে দিয়েছে ওকে, সেই সঙ্গে ওর "চোখ" দিয়ে রেকর্ড হচ্ছে পুরো অনুষ্ঠান, আর তা সরাসরি পাঠিয়ে দিচ্ছে ও আমার কম্প্যুটারে।
    আমার সামনে কম্প্যুটারের স্ক্রীনে ভেসে উঠল কনফারেন্সের দৃশ্য।
    কয়েকশো দর্শকের সামনে বক্তৃতা দিয়ে চলেছেন প্রোফেসর অবতার মূর্তি; কীভাবে কত পরিশ্রম আর সময় ব্যয় করে তিনি এই যন্ত্র বানাতে পেরেছেন, তার বিবরণ চলতে লাগলো।
    পাওলো দেখলাম চুপচাপ বসে আছে, তার মুখে কোনো অভিব্যক্তি নেই।
    সংবাদমাধ্যমের আর টিভি থেকে আসা কিছু লোকজন মূর্তিকে প্রশ্ন করে চলেছেন, এসেছেন দেশ বিদেশের বেশ কিছু বিজ্ঞানী। পাওলো ছাড়া আমার চেনা কাউকে দেখলাম না।
    স্টেজের ওপরে বেশ ঘটা করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মূর্তির বানানো এটিএম। একটা নয় গোটা তিনেক। সেই তিনটি এটিএম হচ্ছে, মূর্তির অধীনস্থ তিন বিজ্ঞানীর রিপ্রেজেন্টিটিভ। ঐ তিন তরুণ বিজ্ঞানীর হয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে কথা বলবে এটিএম গুলো, এটাই হবে মূল ডেমন্‌স্‌ট্রেশান।
    সেই তিন বিজ্ঞানীর মুখও ক্লোজ আপে দেখালো আমাকে এটিএম। উৎকন্ঠা আর ক্লান্তির ছাপ সেই তিন তরুণদের মুখে। এদিকে হাসি হাসি মুখে মূর্তি দিয়ে চলেছেন বক্তৃতা, গড় গড় করে বলে চলেছেন একটার পর একটা মিথ্যে।
    এরপরে বিরতি দেওয়া হলো।
    পাওলো জানালো ওরা এখন খেতে যাচ্ছে। লাঞ্চের পরেই শুরু হবে সম্মেলনের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং অধ্যায়।
  • Prantik Debnath | 213.68.11.198 | ০৪ আগস্ট ২০০৬ ২১:২৯632554
  • ব্রাভো, যো।
  • Samik | 59.144.176.123 | ০৪ আগস্ট ২০০৬ ২৩:৪৫632555
  • তোমাকে শ'দেড়েক FC। উফ্‌ফ্‌, তিলুবাবুর গপ্পো এর আগে কোনওদিন ধারাবাহিকে পড়তে হয় নি, আর পারছি না উত্তেজনা ধরে রাখতে।

    হাইনরিখবাবু আর জেরেমি-মশাই দেখা দেবেন না এ গপ্পে?
  • tan | 131.95.121.127 | ০৪ আগস্ট ২০০৬ ২৩:৪৭632556
  • আরে ক্রোলের নাম তো উইলহেল্ম! আর জেরেমির সারনেম তো সন্ডার্স!

  • Samik | 59.144.176.123 | ০৪ আগস্ট ২০০৬ ২৩:৫১632557
  • হ্যাঁ হ্যাঁ তাও তো বটে। কিন্তু কোনও একটা গল্পে যেন হাইনরিখ ক্রোলও পড়েছিলাম। তবে বেশির ভাগ গল্পেই উইলহেল্ম ক্রোলই আছে।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৫ আগস্ট ২০০৬ ০০:১৩632558
  • হয়তো দুটোই সত্যি,একটা ফার্স্ট নেম একটা মিডলনেম!!!
    বলো তো কোথায় ক্রোলের সঙ্গে শঙ্কুর প্রথম দেখা হয়?
    আর জেরেমি সন্ডার্সের সঙ্গেই বা কোথায় প্রথম দেখা হয় শঙ্কুর?
  • J | 160.62.4.10 | ০৭ আগস্ট ২০০৬ ১৭:৩৪632559
  • গিরিডি
    ১২ই আগস্ট
    ভোর ছটা

    গতকাল আর ডায়েরী লেখা হয় নি, লেখা সম্ভবও ছিলো না। পাওলো লাঞ্চের জন্যে বেরিয়ে যাবার পরেই হন্তদন্ত হয়ে উপস্থিত অবিনাশবাবু। অবিনাশবাবু টিভিতে নাকি পাওলো আর এটিএম কে দেখেই আমাকে জানাতে এসেছেন।
    যা জানা গেলো তা হচ্ছে টিভিতেও নাকি প্রোফেসর মূর্তির এই "কীর্তি" ও কনফারেন্সের সমস্ত ঘটনা সরাসরি দেখানো হচ্ছে। যথারীতি লাঞ্চের সময়ের পরে, অবিনাশবাবু টিভি দেখতে লাগলেন এবং আমি কম্প্যুটারের পর্দায় দেখতে লাগলাম সম্মেলন, এটিএম এর চোখ দিয়ে। মূর্তির তৈরী তিনটি এটিএম কেই প্রশ্ন করে চললেন অনেক বৈজ্ঞানিক ও সাংবাদিক। যদিও সেগুলো খুবই সাধারণ প্রশ্ন এবং তার মধ্যে "ভেবে" উত্তর দেবার ব্যাপারটা খুবই কম। যাইহোক, এই ধরণের প্রশ্নোত্তর শুনতে শুনতে যখন বেশ বিরক্ত বোধ করছি, পাওলো আমাকে ফোনে জানালো যে ও এখন এটিএমকে সরাসরি মঞ্চে নিয়ে গিয়ে তার খুঁটিনাটি দর্শকদের দেখাতে চায়। অতএব এরপর আমি যা দেখেছি সবই টিভিতে অবিনাশবাবুর সঙ্গে।পাওলোর এই আকষ্মিকভাবে মঞ্চে এসে উপস্থিত হবার জন্যে একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না মূর্তি ও তিন তরুন বৈজ্ঞানিক।
    এটিএম কে একটা ছোট্টো টুলের ওপর রেখে, হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে পাওলো বলতে শুরু করলো,"উপস্থিত দর্শকগণ ও বন্ধুরা, আমার সঙ্গেও রয়েছে একটি এটিএম যন্ত্র, যার আবিষ্কর্তা আমার বিজ্ঞানী বন্ধু প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু। শঙ্কু আজ এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত না হওয়ায় আমিই শঙ্কুর তৈরী এটিএম এর একটা ছোট্টো ডেমনস্ট্রেশান দিতে চাই.."
    দর্শকমন্ডলীর একাংশ থেকে হাততালির শব্দ শোনা গেল, কিন্তু দর্শকদের এক বিরাট অংশ সম্পূর্ন শান্ত। যারা সমর্থন করেছিলেন, তাদের মধ্যে দেখতে পেলাম দেশবিদেশের বৈজ্ঞানিক ও সাংবাদিকদের। আর অন্যরা খুব সম্ভবত: প্রোফেসর মূর্তির কর্মচারী। দেশের তরুণ বৈজ্ঞানিকদের প্রচুর টাকার লোভ দেখিয়ে নিজের কোম্পানী খুলেছেন মূর্তি,কোম্পানীর নাম দিয়েছেন "অবতার কর্পোরেশন" আর সেখানে দিনরাত খেটে চলেছেন তরুণ কর্পোরেট বৈজ্ঞানিকেরা - এখবর আগেই আমার কয়েকজন বন্ধুর কাছে পেয়েছি।
    এবার প্রতিবাদ করলেন মূর্তি স্বয়ং। সময় নাকি আর বেশি নেই, ওঁর আরো অনেক কিছু নাকি দেখাবার আছে, কাজেই অন্য কোনো সময়ে যদি আরেকটা সম্মেলন ডেকে এসব করা হয়, তবে, ... ইত্যাদি ইত্যাদি। এইসব অজুহাত দেওয়া সত্বেও, হঠাৎ দর্শকদের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিলেন এক সুইস বৈজ্ঞানিক, নাম টোবিয়াস।
    টোবিয়াসের বক্তব্য হচ্ছে, আরেকটা একই ধরণের যন্ত্র যখন ইতিমধ্যেই আবিষ্কৃত হয়ে গেছে, তখন সেটাও দেখা হোক, এতে আপত্তির কী থাকতে পারে?
    অতএব পাওলো ডেমনস্ট্রেশান শুরু করলো।
    প্রায় দেড় হাজার দর্শকে ঠাশা অডিটোরিয়াম শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় দেখতে লাগলো এটিএম এর খেলা।
    পাওলো যেটা করল, সেটা হচ্ছে, টেলিফোনের মাধ্যমে ঐ তিনটি এটিএমএর সঙ্গে আমার এটিএমএর কথা বলানো।
    আমার এটিএম নি:সন্দেহে অনেক বেশি বুদ্ধিমান এবং সে ভাবতেও পারে অনেক পরিষ্কার ভাবে।
    যাইহোক, প্রথম কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঐ তিনটি এটিএম আমার এটিএম এর সঙ্গে কথায় এঁটে উঠতে না পেরে "অফলাইন" হয়ে গেল। কলকব্জা বিগড়েছে কিনা দেখতে ঐ এটিএমতিনটির দায়িত্বে যে তিন বৈজ্ঞানিক ছিলেন তাঁরা যন্ত্রগুলোর ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।
    এই সময়ে মূর্তির কর্মচারী বৈজ্ঞানিকেরা দর্শকের আসনে বসেই চেঁচামেচি শুরু করলেন। ইচ্ছা সম্মেলন ওখানেই স্থগিত রাখা। পাওলো এসময়ে তার উপস্থিতবুদ্ধির প্রমাণ দিলো। ওদের তিনটি যন্ত্রই বিকল হওয়ায়, পাওলো সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালো যে আর যন্ত্র নয়, শঙ্কুর এটিএম এখন ঐ তিন বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের জন্যে প্রস্তুত।
    মূর্তি যে ঠিক এতটার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না, সেটা তাঁর ফ্যাকাশে মুখের ওপর টিভি ক্যামেরা জুম করতেই পরিষ্কার বোঝা গেল। কিন্তু তখন আর ফিরবার পথ নেই।
    মিনিট দুয়েকের মধ্যেই পাওলো একটা অসাধারণ কাঠামো বানিয়ে ফেললো। তিনজন তরুণ কর্পোরেট বৈজ্ঞানিকের সঙ্গে টেলিফোনে একযোগে কথা বলবে আমার তৈরী এটিএম, এবং শুধু তাই ই নয়, যদি কোনো কিছু লিখে বোঝাবার দরকার হয়, তবে এটিএম ও সেই তিন বৈজ্ঞানিক, দুতরফেই থাকছে একটি করে কম্প্যুটার; আর সবকিছু বড়ো করে দেখা যাবে পেছনের পর্দায়।
    প্রথমদিকে কর্পোরেট বিজ্ঞানীরা কিছু অঙ্ক কষতে দিলেন ওকে; অঙ্ক কষানো যদিও প্রথমদিকে এটিএম কে "শেখানো" হয় নি, তবুও কনফারেন্সে ওকে প্রস্তুত করার জন্যে শেষের দিকে পাওলো এগুলো ওর মধ্যে "ঢুকিয়ে" দিয়েছিলো। আমার এটিএম, তাই অনায়াসেই বেশ কিছু অঙ্ক নির্ভুলভাবে কষে ফেললো, আর তা দেখা গেল পেছনের পর্দায়। উচ্ছ্বসিত জনতার বিপুল করতালির মধ্যে হঠাৎ দেখলাম মূর্তি আর নিজের সীটে বসে নেই। অথচ সে মুহূর্তে পাওলোও স্টেজে, তাই টিভিতে যা দেখাচ্ছে তার বাইরে কিছুই দেখা সম্ভব নয়।
    এবার এটিএম এর পালা। এটিএম প্রশ্ন করল, প্রথম বৈজ্ঞানিককে।
    -"আপনার নাম কী"।
    এইরকম সহজ প্রশ্ন শুনে, সমস্ত দর্শকদের দিক থেকে বিপুল হাসির শব্দ। স্টেজের বৈজ্ঞানিকেরাও হাসতে শুরু করেছেন, তবু, সেই তরুণ হাসতে হাসতেই বললেন তাঁর নাম। রবি।
    এবার দ্বিতীয় প্রশ্ন,
    -রবি, আপনার বন্ধুর নাম কী?
    আবারো বিপুল হাসিতে ফেটে পড়ল অডিটোরিয়াম।
    পাওলো স্থির বসে আর একটা ছোট্ট টুলে, পাওলোর নিয়ন্ত্রণেই এটিএম এ পর্যন্ত এই দুটি প্রশ্ন করেছে। প্রোফেসর মূর্তিকে এবার দেখা গেল। স্টেজের মাঝখানে গটগট করে এসে উপস্থিত হলেন তিনি, মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে শুরু করলেন , "ডক্টর পাওলো কাভাকো, আপনার এটিএম আমাদের অনেক কৌতুক দিয়েছে, এরকম গুরুগম্ভীর সভায় সকলকে হাসানোর জন্যে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি; কিন্তু নাউ ইট ইজ এনাফ। যথেষ্ট হয়েছে, এখানে আমরা গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করতে এসেছি, এটি কোনো শিশুদের টিভি শো নয়, অতএব আমার অনুরোধ আপনি যদি আপনার পুতুলটিকে নিয়ে এবার খেলা বন্ধ না করেন তবে আমাদের অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে..."
    প্রোফেসর মূর্তির কথা প্রায় কেড়ে নিয়ে পাওলো উত্তর দিলো,
    -অবশ্যই প্রোফেসর। নিশ্চয় আমরা স্টেজ ছেড়ে চলে যাবো। কিন্তু আমার এই "পুতুল"টির করা ঐ সামান্য প্রশ্নটির উত্তর কিন্তু এখনো পাই নি।
    মুহূর্তের মধ্যে সবাই চুপ।
    স্থির দৃষ্টিতে রবির দিকে তাকিয়ে আছে পাওলো, উত্তরের অপেক্ষায়, কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
    এদিকে অবিনাশবাবু মন্তব্য করলেন, " লোকটা কি বোবা হয়ে গেলো নাকি মশায়? নিজের বন্ধুর নাম বলতে পারছে না, এ কীরকম লোক? সব ভুলে গেছে নাকি?"
    এটিএম আবার প্রশ্ন করল, "রবি, আপনার বন্ধুর নাম কী?"
    রবি এখনও চুপ। রবির সঙ্গী দুই বিজ্ঞানীও কোনো কথা বলছেন না।
    গোটা অডিটোরিয়াম জুড়ে একটা গুঞ্জন শুরু হলো, আর পাওলো সেই মুহূর্তে অন করে দিলো রবির সঙ্গে যুক্ত কম্পুটারের মনিটর।
    আমাদের সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে মনিটরে প্রতিফলিত হলো ছোটো ছোটো দুটি বাক্য, যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, " বন্ধু শব্দটি অচেনা। অভিধানে নেই"।
    দর্শকের একাংশ থেকে বেরিয়ে এলো সম্মিলিত দীর্ঘশ্বাসের শব্দ।
    -কী ভয়ানক!
    চেঁচিয়ে উঠলেন অবিনাশবাবু। "কোনো বন্ধু নেই? এত বুদ্ধিমান লোকটার কোনো বন্ধু নেই? কী অবাক কান্ড মশাই!"
    অবাক হবার পালা তখনো আরো বাকি।
    বাকি দুই বৈজ্ঞানিকও, কোনো বন্ধু-র নাম করতে পারলেন না।
    পাওলো প্রশ্ন করিয়ে চলেছে এটিএম কে দিয়ে, আর তার উত্তর তিন বিজ্ঞানীই দিয়ে যাচ্ছেন অবিকল এক, তিনজনেরই হুবহু এক উত্তর।
    এটিএম প্রশ্ন করছে।

    - আপনার কাছে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস কী?
    উত্তর এলো
    - টাকা।
    এটিএম আবার প্রশ্ন করল।
    - কীসের জন্যে আপনার এই গবেষণা?
    - টাকা।
    - কী উদ্দেশ্যে আপনারা দিনরাত নিরলস গবেষণা করে চলেছেন?
    এবারও উত্তরের কোনো পরিবর্তন হলো না।

    এর পর থেকে প্রায় গোটা ছয়েক প্রশ্নের উত্তর ছিলো একটাই শব্দ, "টাকা"।
    আর "বন্ধু", "প্রিয়জন" এইসব শব্দ হয় পাওয়া যায় নি এদের অভিধানে, কিম্বা কম্প্যুটারের স্ক্রীনে লেখা হয়েছে, " সিন্ট্যাক্স এরর, কম্যান্ড নট ফাউন্ড"।
    এই খেলা কতক্ষণ চলত জানি না, কিন্তু হঠাৎ দর্শকের আসন থেকে উঠে এসে প্রোফেসর মূর্তির কর্মচারীরা আক্রমণ করল পাওলোকে।
    আর ঠিক এই সময়েই টিভির সরাসরি টেলিকাস্ট বন্ধ হয়ে যায়।
    মোটকথা এরমধ্যেই সর্বত্র জানাজানি হয়ে যায় প্রোফেসর অবতার মূর্তির বুজরুকি।
    আমি পাওলোকে বারবার চেষ্টা করেও ফোনে পেলাম না।
    সন্ধ্যে ছটা নাগাদ ফোন এলো ব্যাঙ্গালোরের এক নামকরা হাসপাতাল থেকে। পাওলো প্রোফেসরের কর্মচারীদের দ্বারা আক্রান্ত হবার পরে রীতিমত আহত। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পড়ার আগেই চলে প্রোফেসর ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ধ্বংসাত্মক অভিযান। পাওলো ফোনে যা জানালো তা হচ্ছে এটিএম কে ওরা টুকরো টুকরো করে ভেঙ্গে ফেললেও, সমস্ত কিছু রেকর্ডেড হয়ে গেছে টিভির ক্যামেরায়। সবকিছু সম্প্রচার করা সম্ভব হয় নি।

    এই ঘটনার পরে আমার অবিলম্বে ব্যাঙ্গালোর যাওয়ার প্রয়োজন।
    অবিনাশবাবুর ভাগ্নের চেষায় প্লেনের টিকিট পাওয়া গেছে। আজই রওনা হচ্ছি ব্যাঙ্গালোর।

  • Arjit | 128.240.229.3 | ০৭ আগস্ট ২০০৬ ১৮:১২632560
  • সন্ডার্সকে তো মিরাকিউরল দিয়ে শঙ্কু সারিয়ে দিয়েছিলো। তার আগে অবধি সন্ডার্স শঙ্কুর পেনফ্রেন্ড ছিলো।
  • tan | 131.95.121.127 | ০৭ আগস্ট ২০০৬ ১৯:০৮632561
  • যোদি,দারুণ!!!!!!

    ঠিক অরিজিৎ,ভালো হয়ে উঠে তারপরেই তো সোজা গিরিডিতে এসে পড়েছিলো সন্ডার্স!
    ক্রোলকে কোথায় প্রথম দেখেছিলো শংকু বলো তো!
    একশৃঙ্গ অভিযানে কি? ঐ যে আঙুলা নেড়ে ওয়ান টু হিসেব করতো ক্রোল, কর গুণতে জানতো না!
  • i | 202.128.112.253 | ০৮ আগস্ট ২০০৬ ০৬:৫৯632563
  • য,
    এইটে শেষ হলে ওপাড়ায় প্রফেসরের যে গল্পটা অসমাপ্ত রেখেছিলে(শংকু আর অ্যাটলান্টিস?), সেটা লিখতে হবে কিন্তুক....
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন