এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  নাটক

  • রুদ্রপ্রসাদবাবু নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলা নিয়ে যা বলেছেন সে প্রসঙ্গে কিছু কথা

    শুদ্ধ
    নাটক | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ | ১৮৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • শুদ্ধ | 127.194.242.203 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১২:৫৯582355
  • তিনি বলেছেন যা আমার মতন করে যা বুঝি তাতেঃ

    ১- সরকার এই মাধ্যমের জোর বোঝে না।

    ২- নতুন ছেলেমেয়েরা আসে না। বিদেশে কেমন আসে! শেক্সপীয়রের নাটক দেখতে দেখতে প্রেমে পরে। প্রেম করতে নাটক দেখতে আসে ইত্যাদি।

    ৩- দর্শক দেখছে না।

    ৪- এ সব কেন হচ্ছে তা তিনি বুঝছেন না।

    পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথাঃ

    ১- নাটকের শিক্ষা অন্যান্য অনেক দেশে প্রজন্মের পরে প্রজন্ম ধরে চলছে, একটি সিরিয়াস কাঠামো তৈরী করে। স্কুলে, কলেজে নাটক পাঠ্য এবং নাট্যশিক্ষা বেশ কিছু হয় বিষয় ধরে। নাটক করলে খেতে পাওয়া যায়। নাটক যাঁরা করেন তাঁরা সিনেমা বা সিরিয়াল করেন না এবং পেজ থ্রী সেলিব্রিটি নন বলে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স-এ ভোগেন না। বরং জানেন স্পষ্টতই কোন জীবন তাঁরা চেয়েছেন কেন চেয়েছেন! শিক্ষা ও সুযোগের বিষয়ে এখানকার মতন সর্ব বিষয়ে সাঙ্ঘাতিক বৈষম্য কম থাকা ও থাকলে তা নিয়ে লড়াইটা জোরদার থাকার জন্যও যে কেউ যে কোনো পেশাকে সম্মান করতে শিখেছেন। ডাক্তার,এঞ্জিনীয়ার,এম বি এ ইত্যাদি না হলে জীবন শেষ এমন মূর্খামো জাতীয় স্বভাব না। তাই চাকরীজীবি কেরাণী ও হোয়াইট কলার লেবার জীবনের বাইরের জীবনের কথা ভাবতে অসুবিধে হয় না। অতএব স্বচ্ছন্দে নাটকেও আসতে পারে।

    ২- নাটকের জন্য যে কেউ টাকা দিতে পারে, যে কোনো শিল্পমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখাটা রাষ্ট্রপরিচালনার বড় কাজ একটি। এবং কোনো রাষ্ট্র আসলে একে বাঁচাচ্ছে না, বাঁচাচ্ছে জনগণের করের টাকা, জনগণের শিল্প-সংস্কৃতিকে। কিন্তু দল আর লোক বেছে দিলে সে টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট আর গাড়িই হবে, নাট্যচর্চা হবে না। এতদিন ধরে তাই হয়েছে। একটি গোষ্ঠী ঘিরে অনেকগুলো স্যাটেলাইট গোষ্ঠী তৈরী হয়েছে মাত্র, যারা সকলেই জানেন যে নাট্যচর্চার খুব সিরিয়াস মুখ করে তাঁরা যা করেন তাকে আর যাই হোক নাট্যচর্চা বলা চলে না। প্রযোজনার মান দেখে অনুদান দেওয়া বা প্রযোজনা ছাড়াও অন্যান্য কাজের সত্যিকারের রিভিউ করে অনুদান দেওয়া খুব কঠিন কাজ কখনোই ছিল না। কিন্ত তা হলে দলে দলে নানা রঙের রাজনৈতিক তাঁবেদার তৈরী করা যায় না, যেত না।

    ৩- মৌলিক নাটক বাদ দিয়ে 'ফেরিওয়ালার মৃত্যু' জাতীয় নাটক নিয়ে মঞ্চে মাতামাতি ঠিক কেন হল দীর্ঘ দু তিন দশক জুড়ে? মৌলিক বিষয়ের কি খুব অভাব পড়েছে? ফেরিওয়ালার মৃত্যু কি অসামান্য একটি নাটক যে তার অনুবাদ না হলে লোক বিপুল বঞ্চিত হত? নাকি ওই সব ড্রইংরুম ওয়ান্ডার না করলে ঠিকঠাক ফোর্ডের অনুদান জোটে না?

    ৪- এখানে নাট্যচর্চার একটি বড় সমস্যা মঞ্চ ও তার রাজনৈতিক বা সরকারী দখলদারী। বেশ কটি নাট্যমঞ্চের প্রয়োজন ছিল যা কোনো দলতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। অনেক অনেক কাল ধরেই এই প্রয়োজন অনুভূত হচ্ছে। কিন্তু সে মঞ্চ হবার বা হওয়ানোর জন্য নাট্যবিজ্ঞরা কোনোদিন গলা তুললেন না কেন? সেই শম্ভুবাবুর মঞ্চ হবে বলে জাতীয় নাট্যমঞ্চ প্রয়াস বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকে এতটা সাইলেন্স কেন? একথা কে জানে না যে মঞ্চ নিয়ন্ত্রণে থাকায় অপছন্দের নাটককে সময় না দিলেই নাটক আটকে যায়, ব্রিটিশ আমলের মতন নাট্য নিয়ন্ত্রণ আইন করে আটকাতে হয় না। এ ভাঙার চেষ্টা না হলে স্তুতিবাদী বা পলায়নপর বা আখের গোছানোর নাটকের সংখ্যা কমবে কি দিয়ে?

    ৫- আমাদের নাটকের ইতিহাসটা খুব অস্পষ্টও তো না। যে নাটক ও নাট্যচেতনার উপরে ভর করে দর্শক এখানে এককালে এসে ভরিয়েছেন সে নাটক তো স্পষ্টতই দায়বদ্ধ নাটক। কখনো সরাসরি রাজনৈতিক (নবান্ন,রক্তকরবী,ব্যারিকেড,তিন পয়সার পালা ইত্যাদি) তো কখনো মহৎ নাট্য ও সাহিত্যের মহৎ উপাদান সমৃদ্ধ নাট্যগুণের পরিচায়ক, অবশ্যই রাজনৈতিক ভিন্নার্থে (মঞ্জরী আমের মঞ্জরী, তিতাস একটি নদীর নাম,পাপপূণ্য ইত্যাদি))। সেইসেই সব নাটক ছেড়ে কারা বাজারে রটালো যে দর্শক নাকি কমেডির নামে শ্যামবাজারি ভাঁড়ামো না দেখলে মঞ্চে আসে না?কারা নাটককে সার্কাস বানালো? এন্টারটেইনমেন্ট নাকি আসল উদ্দেশ্য নাটকের এসব উচ্ছিষ্টে কারা পাতা ভরালো? কারা সব দলে দলে হাসিনার হাসি আর ন্যাপলার ন্যাকামি নাটক হিসেবে মঞ্চে করতে লাগলো খেই না পেয়ে? খেই না পাওয়ার কারণ ছিল সরাসরি রাজনৈতিক নাটক করলে সমালোচনা করতে হবে, করতে হলে ব্যবস্থার অপ্রিয় হতে হবে, না করলে লোকে বুঝে নেবে ধান্দাবাজী হচ্ছে- এই দুই-এর বিরোধ। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ গুলি মেরে যদ্দিন চলেছে তদ্দিন চলেছে, তারপরে ভারতে কোনো বাদের চাপে মানুষের হাল ওষ্ঠাগত ছিল না তো, তাই নৈঃশব্দ! কথা হচ্ছে যে দর্শক নাটক দেখতে আসতেন, তাঁরা এখানে কি হাতিবাজারী থিয়েটার আর মূল ধারার পঞ্চাশ-ষাটের সিনেমা গপ্পো দেখতে আসতেন? না আসতেন না। যখন থেকে সেই মধ্যমেধায় সব ছেয়ে গেল, যখন থেকে শ্যামবাজার উঠে এল রবীন্দ্রসদন চত্ত্বরে তখন থেকেই এই হাল। এগুলো কি রুদ্রবাবুর অজানা? রুদ্রবাবুর কি অজানা সেই সব কমিটেড ছেলেমেয়েদের কথা যারা উঠে আসছিল নতুন নাটকের ভাবনা নিয়ে, যারা চ্যালেঞ্জ করতে পারতো নির্দেশকের একনায়কোচিত কেদ্দানিকে, তাদের কি ভাবে কত কত সংগঠন থেকে ঘাড়ে ধরে বা কায়দা করে বিদায় দেওয়া হয়েছে সে কথা? দলের মাথায় যাঁরা বসতেন তাঁদের সে মৌরসীপাট্টার খেলা কি অজানা? বাংলার নাট্যমঞ্চকে তাঁবেদারের জেল্লাক্ষেত্র করলো কারা? করার পরে আজ কেঁদে কি হবে?

    ৬- নান্দীকারের জাতীয় নাট্যমেলায় এককালে বেশ কিছু অসামান্য প্রযোজনা দেখা যেত। আজকে কারা আসে? গত কয়েক বছর ধরে এ কাদের ডাকেন? কেন ন্যাশলান স্কুল অব ড্রামার বোকা প্রযোজনায় ভীড় হয়ে থাকে সূচী? কেন নাটকের পরিসর বেড়ে নাট্যমেলা মঞ্চ থেকে বাইরেও আসে না? সবই কি অর্থের অভাব?

    ৭- শেষ করি একটা সিমিলি টেনে। ব্রিটিশ নাট্যনিয়ন্ত্রণ আইন আসার আগে অব্দি নীলদর্পণের মতন নাটক হয়েছে। মানুষ দেখেছেন। তারপরেও হয়েছে জাতীয় রসে চোবানো নানা নাটক।কখনো হিন্দু জাতীয়তাবাদ কখনো সেকুলার মুখ, কখনো সামাজিক সঙ্কটের উপরিতলটুকু নাটকের বিষয় হয়েছে। যোগেশ-ও লোক ভীড় করে দেখেছে। কিন্তু দিন তো এক যায় না। এক সময় এল যখন দর্শকও বুঝে গেল এ সব কাগজের বাঘ। রাষ্ট্রের নির্ধারিত সীমানার বাইরে কোনো কথা বলবে না। সামাজিক সংস্কারের কথাও বলবে মেপেজুকে, কেন না নাটক বেচতে হবে এদের। তাছাড়া বলার কথা, বলার ধরণ সব গেল পুরোনো হয়ে। মদ, মহিলা, মাৎসন্যায় ক্ষেত্র হল বাংলার রঙ্গমঞ্চ। অর্ধেন্দু মুস্তাফির প্রবেশ ঘোড়ায় চড়ে হতে থাকলো। গিরিশ বাবুর কন্ঠ কাঁপানো শিথিল হল। অমৃতলাল কি লিখছেন আর নিজেও জানেন না। মঞ্চে হাতিও উঠে এল এন্টারটেইনমেন্ট-এর জন্য। শিশির ভাদুড়ি, দানীবাবুর আমলও কষ্টে চললো। চেনা ছকের বাইরে গেলেই আর নাটক চলে না। রবিবাবুকেও মঞ্চে আনা হলে লোক দেখে না। সে বড় কঠিন সময়। সিনেমা সব খায়নি তখনো। টেলি তো ছিলই না। রেডিও ছিল। কিন্তু সেও সব ভুলিয়েছে এমন না। দর্শক দেখে না এই আক্ষেপে ভরপুর সব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এল। এল ফ্যাসীবিরধিতার মঞ্চ। বাঁশ বেঁধে নাটক হতে শুরু করলো। নতুন নাটক। নতুন ধরণের নাটক। নবান্ন, জ্বালা, সাঁকো, এমনকি দুঃখীর ইমান হতে হল পেশাদারী মঞ্চে। লোক নাটক দেখলো। তারপরে অনেককাল একটানা লোক নাটক দেখেছে। এক সময়ে আসলে আজকের বাবুদের অভ্যাস হয়ে গেছিল যে নাটক তাঁরা করবেন আর পালে পালে লোক আসবে। গণনাট্য ছেড়েই দিলাম, নবনাট্যের মূল আদর্শটিও দলাদলি আর দল ভাঙন আর দালালির স্রোতে ভেসে গেল। লোক বুঝে গেলেন দৌড় কদ্দূর। দর্শক মুখ ফিরিয়েছে। বেশ করেছে। যে দিন আবার নাটক নিয়ে নতুনরা এসে দাঁড়াবে, নতুন নাটক নিয়ে, নতুন আদর্শ নিয়ে সেদিন আসবে। আসবেই। একথা ইতিহাস বলেছে। বারেবারে বলেছে। দেশেকালে বলেছে। সেই নতুন নাটকের সন্ধান না করে লোককে দুষলে সে কেবল হাস্যকর হয়ে দাঁড়ায়, আর কিছু নয়।

    প্রসঙ্গত কিছু ক্রোধ বেরিয়ে এল। মাধ্যমটার সঙ্গে দীর্ঘকাল আছি। দেখছি অনেক, সহ্য হয় না। আমার দুঃসাহস মার্জনীয় হোক!!!
  • Sibu | 118.23.96.4 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:৩৪582366
  • এই লেখাটার মূল বিষয় নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। তবে লেখাটার দুটো পয়েন নিয়ে কিছু বক্তব্য আছে।

    ১। ফেরিওয়ালার মৃত্যু কি আর্থার মিলারের ডেথ অফ এ সেলসম্যান? তাহলে শুদ্ধর ৩ নং পয়েনটি একটু সুইপিং। মানে কোন যুক্তি তক্কো ছাড়া ওরকম কথা শুনলে অসুবিধা হয়।

    ২। শুদ্ধর ১ নং পয়েনটি পুরোপুরি সঠিক নয়। মার্কিন মুলুকে স্টেজের অভিনেতাদের হলিউডে বা টিভি সিরিয়ালে সুযোগ খোঁজার প্রবনতা খুবই আছে। দারিদ্র্যও ছোট দলের অভিনেতাদের মধ্যে খুবই বেশী। কিভাবে স্টেজ থেকে হলিউডে বা টিভি সিরিয়ালে যেতে হবে সে নিয়ে পরামর্শের ও পরামর্শদাতার সংখ্যাও অনেক। এই নেটপাতাটা যেমন - http://actortips.com/making-the-move-from-stage-to-screen/

    বাকীটা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।
  • শুদ্ধ | 127.194.242.203 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:১৫582377
  • হ্যাঁ, শিবুদা, কথাটা সুইপিং। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত মতে নাটকটি মধ্যমানের। মিলারকেও আমার তাই মনে হয়। এর চেয়ে ও' নীল বা টেনেসি অনেক বেটার। তবে এ আমার ব্যাক্তিগত মতই। কথাটা আসলে শুধু অনুবাদ প্রসঙ্গে। নান্দীকার একটা বড় সময় অনুবাদ চর্চা করে চলেছে। এটা নাকি উন্নত নাটক চর্চা। মিলার দিয়ে উন্নত নাটক চর্চা করতে হবে? তাহলে শঙ্করের উপন্যাস কি দোষ করলো? কি কান্ড! নাট্যকার দুনিয়ায় কম পড়িয়াছে? পরে এ কাব্য অনেকদূর গড়িয়েছে। গ্র্যান্ডের নীচের দোকান থেকে ইংরেজী বা ইংরেজীতে অনুদিত বই নিয়ে বাংলা অনেক মৌলিক নাটক লেখা হয়ে গ্যাছে। রমরম করে নাট্যকার পয়দা হয়েছে। এঁদের স্যাটেলাইট দলেরাও অনুবাদ করে অনুদান পেয়েছেন ভায়া এঁরা। এ সব অনেক কিস্যা। সব লিখছি না।

    ১ নং পয়েন্ট-এর প্রেক্ষিতে বলি, কথাটা ঠিকই যে সকলেই সিনেমা সিরিয়াল এড়িয়ে চলে না। কিন্তু অফ অফ ব্রডওয়ের বেশীটাই চলে। আমি কয়েকজনকে জানিও। কয়েকটি সংগঠনকে। কিন্তু আমার বলার উদ্দেশ্য এ নয় যে এড়িয়ে না গেলেই হবে না। বলার উদ্দেশ্য হল অন্য মাধ্যমে কাজ না করলে আমি লজ্জিত হব না এই মানসিকতা থাকা বা গড়ার কথা। আমি নিজে এখানে বহু মাধ্যমেই কাজ করেছি। সব কটা মাধ্যমে। কিন্তু কখনো মনে হয়নি যে নাটক শুধু করলে আমি অন্য মাধ্যমে কাজ না করলে আমি জাতে উঠলাম না। এখন সেটাই দেখছি চারপাশে।

    আমি নিজে সিরিয়াল সিনেমা খ্যাত আমার অভিনেতা বন্ধুকে বলতে শুনেছি- 'নাটক তো আমার সেলিব্রিটি স্ট্যাটাস কাজে লাগায়, এখন যদি শুধু নাটক নিয়ে থাকতাম তাহলে আমি কি সেলিব্রিটি হতাম'? যে নাটক এভাবে সম্পদশালী হয় তা আমার কাছে অত্যন্ত বিরক্তিকর। অন্য মাধ্যমে বেশী কাজ করা লোক এলে সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কত সময় তাঁরা দিতে পারেন মহড়ায়? ছটা দশটা মহড়ার পরে মঞ্চে নাটক এসে যাচ্ছে। নতুন ছেলেমেয়েরা দিনের পর দিন মহড়া দেয়, তারা ছদিন দশদিনে কাজ শেষ করে নেয়। আমি ঠিক জানি না এঁরা কোন অবতার অভিনেতা যে ছদিনে নাটকে চরিত্র সামলে ফেলছেন! এটা আমার চ্যাংড়ামো বলেই মনে হয়।

    অনেক মহামহিমকে দুঃখ করতে শুনেছি যে তাঁকে কেউ চেনে না। নাটকের দর্শক চেনেন। আসলে তিনি দুঃখ করছেন তিনি পপস্টারের মতন নন বলে। কি জ্বালা! ছোটরা সেটাই বুঝছে যে নাটকে লোক চেনে না। আরে সেটাই তো স্বাভাবিক, নাটকে বেশী লোক চিনবে না, reach কম তার। বেশী হলে চিনতো! আমরা যখন এটা করতে এসেছি উত্তমকুমার হবার বাসনা নিয়ে তো আসিনি। কেউ এসে থাকলে সে তার সমস্যা! কিন্তু সেটা অনেকের সমস্যা হয়ে উঠছে কারণ তাঁরা ক্রমাগত নেগেটিভ বলে চলেছেন, আপশোষ করে চলেছেন। নতুনরা শিখছে সত্যিই তো তাহলে নাটক কিছুই দেয় না। তারা অন্য রাস্তার সন্ধান করছে। অসম্মানটা এখানে।

    দেয় না মানে? একটি মাত্র সন্ধ্যা অভিনয় করেছি যে চরিত্রের সেই চরিত্রের জন্য দর্শক মনে রেখেছে কুড়ি বছর। আচমকা দেখা হলে বলেছে, 'ওফ্‌, কি করেছিলেন! এখনো গায়ে কাঁটা দেয়।' বলে দিচ্ছেন চরিত্রের সংলাপ। 'আরে সিনেমা হলে কয়েককোটিবার দেখে ফেলতাম'। প্রাপ্তি না? দর্শক বলছেন আপনাদের কাজ দেখার পর থেকে নতুন করে ভেবেছি। দেখুন সমবায় বানিয়েছি আমরা। দেখুন এখানে রুখে দাঁড়িয়েছি। প্রাপ্তি না? এঁদের জীবনের এমন অনেক প্রাপ্তিকে অনায়াসে পথে ফেলে দিচ্ছেন শুধু কয়েকমুহুর্তের বৃহত্তর আলোর লোভে। তাকে অসম্মান করছেন। এটা অন্যত্র আমি খুব হচ্ছে বলে দেখিনি। অন্য মাধ্যমে কাজ তারা পেতে চায়। কিন্তু না পেলে এ কথা বলে না যে সে কিছুই পেল না। আমি অন্তত বলতে শুনিনি।

    শম্ভুবাবু দু চারটে সিনেমা করেছিলেন বলে সেলিব্রিটি নন, সিনেমাওয়ালা অভিনেতারাই সেলিব্রিটি? আসলে মনে হয় এখানে একটা দৈন্য প্রকাশ পায়। মাধ্যমের প্রতি বেসিক সততার অভাব ঘটে।, নাটক সিনেমা না, মহড়ার পর মহড়া না হলে তা নিখুঁত হয় না, উন্নত হয় না, হতে পারে না। এটা প্রায়োগিক মাধ্যম। অন্য মাধ্যমের মানুষ কাজ করবেন না তাহলে? করুন না। করলে সম্মান করে করুন। তাঁর বাড়ির ই এম আই, গাড়ির ই এম আই মেটানোর জন্য যদি শ্যুটিং বেশী কাজের হয় সেটা করুন, নাটকে অভিনয় না করলেও হবে। একটি চরিত্র দীর্ঘদিনের সাধনায় যেভাবে তৈরী হয় আর স্বল্পদিনে শুধু স্কিলনির্ভরতায় যা হয় তার ফারাক আমি জানি। সেটাই বলাটা উদ্দেশ্য ছিল মাত্র। এটাই শুধু এমন বলাটা না। আমার বোধহয় আরেকটু পরিস্কার করা উচিত ছিল।
  • একক | 24.99.170.237 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৫৪582388
  • শুদ্ধ
    আমি নাটকের পাঠক ও দর্শক মাত্র। এখন নাটক দেখার সুযোগ একদম পাইনা । তবে পড়ার নেশাটা রয়ে গেছে । সেটাকে নাত্যপ্রেম বলা হবে না সাহিত্যপ্রেম আমি জানি নে । তবে দীর্ঘদিন দেখার ইতিহাস আছে তো । তাই পড়তে পড়তেও আসলে দৃশ্য ভেসে ওঠে ।

    তা যে কথা টা বলছিলুম : তোমার লেখার অধিকাংশ পয়েন্ট এর সঙ্গে একমত হয়েও যেটা বুঝতে পারলুম না যে নাটক করে বেসিক জীবনযাত্রা চালিয়ে নেওয়ার মতো রোজগারের পথ যদি তৈরী না হয় তাহলে নতুন ছেলে-মেয়ে রা কিভাবে তাদের ভালোবাসা বলো বা অধ্যবসায় ধরে রাখবে । মানুষ শ্যাম্বাজারী ভাঁড়াম দেখতে চায় এটা একদম বাজে কথা এবং ঠিকঠাক এড্রেস করেচ । আসলে বিতর্কিত বা /এমনকি বিতর্কিত নয় অথচ নাটক হিসেবে নাবানো কঠিন এমন প্রযোজনা তে হাত দেবার কোনো ইচ্ছেই নেই এনাদের ।

    কিন্তু আমারও বেশ কিছু বন্ধু কে নোটকে নিবেদিতপ্রাণ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে সরে যেতে দেখেছি তাই সেই অনিবার্য প্রশ্ন টা এসেই : নাটক করা টাকে একটা অর্থকরী মিডিয়াম হিসেবে তুলে ধরার কোনো দায় কী স্টেট এর নেই ? একা স্টেট এর ই দায় এটা অবস্যই বলছিনা ।
  • শুদ্ধ | 127.194.226.165 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৬:২৫582399
  • একক,

    কথাটা খুব বড়। খেতে না পেলে কি করে হবে! যখন প্রথম শুরু করেছিলাম গাঁ-গেরাম পরিবার সকলে দুয়ো দিয়েছে, বাহার নিকাল করে দিয়েছে। গোল্লায় যাচ্ছি বলে। বহু বন্ধুরা চলে গ্যাছেন নাটক ছেড়ে। আমিও গেছিলাম। সরকারের থেকে পয়সা নিয়ে নাটক করলে উমেদারীই কাজ হয়ে দাঁড়াবে এটা দেখেছি বলে সে রাস্তায় যাইনি। যাইনি নাটক নিয়ে গবেষণার নামে হাস্যকর কাজ করে পেট চালানোতে। জীবিকা ছিল না। দল দায় নেওয়ার ক্ষমতায় ছিল না, কখনো বা তাদের ইচ্ছেও ছিল না। চলে গেছি নাটকের মঞ্চ ছেড়ে। জীবিকার জন্য বহু কাজ করেছি। দিন রাত এক করে করেছি। নাটকের ধারে কাছেও যাইনি। বারো বছর চুপচাপ লড়েছি। তারপরে যেদিন ফিরেছি সেদিন হাতে টাকা নিয়ে ফিরেছি। সংগঠন করেছি। ছেলেমেয়েদের স্কুল করে পড়িয়েছি, কাজ করিয়েছি। কারোর থেকে এক পয়সা না নিয়েও তাদের ভাতাও দিয়েছি। সুন্দরবন থেকে আদি সপ্তগ্রাম সর্বত্র আমার ছেলেমেয়েরা আছে। জীবিকার জন্য তাদের কাজ শিখিয়েছি। তারা আলো থেকে কাঠ সমস্ত মাধ্যমের কাজ শিখেছে। নাটকের কাজে এসে নতুন করে পড়াশোনা শিখেছে। অনেকে অন্য জীবিকায় গিয়েছে সেই শিক্ষার ভরসায়। অনেকে সরেও গিয়েছে নানা ব্যাক্তিগত কারণে। কেউ কেউ লড়ে যাচ্ছে। তারপরে একদিন আমার সমস্ত সঞ্চয় গিয়েছে দুর্ঘটনায়। লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। সংগঠন প্রায় বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ আবার নতুন করে কাজ করছি। নতুন করে ছেলেমেয়েদের শেখাচ্ছি। কাউকে কাউকে প্রতিপালন করছি। কিন্তু যে সমস্যার কথা বলছো তার সমাধান হচ্ছে না।

    কেন হচ্ছে না সে কথা বলি! নাটক করে যারা তাদের নিজস্ব মঞ্চ নেই। দর্শক চাইলেও নিয়ম করে আসতে পারেন না দেখতে। উপার্জনও অনিয়মিত হয় তাই। যদি নিজস্ব জায়গা থাকতো তাহলে কিন্তু এ দিক থেকে হতে পারতো উপার্জন, থিয়েটার কোম্পানি করেই। একবার উপাদান বানিয়ে সারা বছর এক জায়গায় রেখে চালাতে পারলে খরচ অনেক কমে। এক সময়ে দেখা যায় খরচ উঠে গিয়েও অনেকটা বাড়তি হচ্ছে। সেটার উপায় নেই স্থায়ী জায়গা নেই বলে।

    একটা পরিকল্পনা করেছিলাম একদম নাটক জীবনের শুরুর দিকে। একটা সমবায় করে বাণিজ্য এবং কাজ। কেন না এখানে শুধু নাটক করে খেতে পাব না। আবার শুধু নাটক করেই দিন চলবে না যখন তখন অন্য জীবিকাও দরকার। কিন্তু জীবিকা যেন জীবনকে হত্যা না করে। তার একটা মিলমিশ করে চলা যায়। ক্যাডবেরির ডিলারশিপ থেকে চাষের কাজ সবটাই খতিয়ে দেখেছি। কিন্তু লোক থাকেনি। ভয়ে সরে গিয়েছে। আমার বয়স কম আর আমি অ্যাডভেঞ্চারাস। সাফল্য-ব্যার্থতা নিয়ে ভাবিত বা লজ্জিত নই। আজকে দেখা হলে বলে- থাকলে কিন্তু হত হয়তো, কেন না তারা সেই সব কাজই করছে এখন জীবিকার জন্য, শুধু কাজটার ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। কাজের বাইরে তাদের জীবন নেই আর। নাটক ডুবিয়া গ্যাছে। একসঙ্গে করলে সেই নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব ছিল। যাই হোক, এখন তারা আর করতে পারবে না।

    দ্বিতীয়বার পরিকল্পনাটা আরেকটু বড় ছিল। একটা নিজেদের জন্য স্থায়ী মঞ্চ। সেখানে অন্যদের মহড়া থেকে ছবির এক্সিবিসন সবের ব্যবস্থা রাখা। চাইলে একটা সিনেমা দেখানোও যেতে পারে বন্ধুদের। স্বল্প ভাড়াতেই দেওয়া হবে। অন্য সংস্কৃতির জন্য স্পেস বানানো যাবে। একটা জম্পেশ নাটক ও সিনেমার লাইব্রেরী করা। সেখানে বসে বই পড়া যাবে, সিনেমা দেখা যাবে। কফি খাওয়া যাবে। সেইখানেই পাওয়া যাবে নানা হাতের কাজ। সেখানে দেখা যাবে ঘর সাজাবার সামগ্রীর থেকে আসবাবপত্রের নানা নকশা ও স্যাম্পেল। চাইলে বানিয়ে দেব আমরা। সাধ্যবিত্তের নাগালে অ্যায়েস্থেটিক্যাল ব্যাপার। আয় হবে আমাদের। জমি দেখেছিলাম। জমির টাকা ছিল। বিকল্প ইঞ্জিনীয়ারিং-এর মাধ্যমে জায়গাটা বানানোর পরিকল্পনা চলছিল। তাতে পরিবেশবান্ধব হয় ও খরচও কম হয়। সেই টাকাটা প্রায় জোগাড় হবার মুখে। কোনো এক দুর্ঘটনায়, কারোর এক অদূরদর্শিতায় আমাদের কারোর জানার বাইরে আমার উপার্জিত সব টাকা নষ্ট হয়েছে। প্রায় পঁয়ত্রিশ লক্ষ টাকা গিয়েছে ডুবে। সব ভেঙে গিয়েছে। পারিনি। কিন্তু জানি পারলে অনেক কাজ হত।

    এখন আবার চেষ্টা করছি। কলকাতার আসেপাশের জমি যদি নিতে পারি। গ্রামের দিকে একটা পূর্ণাঙ্গ শিল্প শিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে পারি। কলকাতার ধারে কাছে আউটলেট, হল সমেত। বড় না, ইন্টিমেট থিয়েটার স্পেস। গ্রামের দিকের কেন্দ্র ও সমান্তরাল কৃষিক্ষেত্র। চাষ হবে ক্ষেতে, পুকুরে। একদল ছেলেমেয়ে বাছাই করে নির্দিষ্ট সময় রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা হবে গ্রামীণ কেন্দ্রে। তাদের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যায়ের প্রশ্ন নেই। তারা আমাদের উপার্জনে পড়বে। কিচেন গার্ডেন হবে। কয়েকটা ঘর লাগবে তাদের থাকার প্রয়োজনের বাইরেও। বন্ধুরা চাইলে যেতে পারবে, থাকতে পারবে কদিন। কাজে অংশ নিতে পারবে। তবে হ্যাঁ, বন্ধুদের থেকে কিছু অনুদান নেব থাকা খাওয়ার। লোক সংস্কৃতির সঙ্গে নিয়মিত আদানপ্রদান ক্ষেত্র হবে সেটা। আধুনিক কাজের সঙ্গে তাদেরো দেখা সাক্ষাতকেন্দ্র হবে সেটা। জমির ধান, ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ খেতে দেবে আমাদের। বাকী উপার্জন, ব্যবস্থা চালানোর কাজে লাগবে। প্রয়োজনে কিছু টাকা নানা বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তার লাভ দিয়ে কাজ ও জীবন ওদের চালানো যাবে। ভাবছি। চেষ্টা করছি। আমি সরকারের থেকে চাইছি না। চাইবোও না। আমি আমার দায় থেকে কাজ করি। সরকারের বা রাষ্ট্রের দায় থাকলে পাশে আসবে, না থাকলে না। ভিক্ষা করবো না। কয়েকজন মিলে রোজগার করছি আবার। নানা পথে। সঙ্গে মানুষ এলে আনন্দে নেব সঙ্গ। পারবো কি? জানি না। পারার জন্য সব করে যাব এটুকু জানি। হলে এইভাবেই হবে। না হলে হবে না।

    এর বাইরে বলি, দেখ কেউ অন্য কোথাও উপার্জন করলে আমার আপত্তি নেই। আপত্তি আছে Taken for granted করায়। আমি অন্যত্র উপার্জন করেও কাজ করি, কিন্তু এটা করি না। প্রয়োজনে আমার উপার্জনকে বা তার সময়কে মাপের মধ্যে রাখি। না হলে আমি এ কাজকে অবজ্ঞা করে বসবো। তাঁদেরও সেটা বারেবারে ভেবে দেখতে বলি। জীবনের কিছু লোভকে ফেলে দিতে হয়, সেটাই শিক্ষা। চাহিদার শেষ নেই। বাড়ালেই বাড়াতে থাকে। Simple living high thinking সহজ না জানি, কিন্তু এটাও জানি করা যায় চাইলে। আর নিজেরা না লড়লে অন্য কেউ সমাধান নিয়ে আসবে না। লড়ে রাস্তা বের করতে হবে। ছেড়ে দিলে তো মিটেই গেল, ওই ছেড়ে দেওয়া বা নাম কা ওয়াস্তে ধরে থাকা, বা মাধ্যমকে এক্সপ্লয়েট করাটায় আমার আপত্তি আছে।

    আমি বহুজনকে জানি এই মাধ্যমে তাঁরা তখনই আসেন যখন অন্য মাধ্যমে কাজ কমে, বা কাজ করার মতন যথেষ্ট দক্ষতা তাঁদের নেই সেখানে। এখানে এলে স্টারও হওয়া যায়, আবার অন্য মাধ্যমেও প্রাসঙ্গিক থাকা যায়। খবর হওয়ার জন্য এটা এখনো একটা মাধ্যম। সেটা তাঁরা খুব ভাল জানেন। যখন দেখছেন ক্যারিয়ারে বাতাস লাগছে না এখানে এসে নাট্যচর্চা করে বাজারের পাতায় ছবি হচ্ছেন, আবার দৌড়চ্ছেন ক্যারিয়ার পুনরুদ্ধারে। তাহলে কি সত্যিই ভালবাসেন এমন মানুষ নেই সেই সব অন্য মাধ্যমে? খিদে থেকে এ কাজ করেন না? জানি আছেন। তাঁদেরকে বলি ভাল যদি বাসেনই তাহলে নতুন করে ভাবুন। আপনার ব্যাক্তিগত সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়াটাই আমাদের থিয়েটারের সমস্যার সমাধান না। ব্যাক্তিগতভাবে এর সমাধান করে স্বান্তনা পাওয়ার মানে আপনি কিন্তু মূল আদর্শটির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। সচেতন হলে আপনিই কিন্তু আমাদের উজ্জ্বল কোনো সমাধান এনে দিতেও পারেন। সেদিকেও নজরটা রাখুন। আমার সমস্যার ব্যাক্তিগত সমাধান আমাকে ধনী করে, থিয়েটারকে না।

    শেষ কথা, রাষ্ট্র জানে এর শক্তি। রুদ্রবাবুর বক্তব্যের বিপরীতেই বলছি। জানে বলেই একে সমর্থন দেয় এমন ভাবে যাতে এর মেরুদন্ড ভেঙে যায়। রাষ্ট্র জানে সিরিয়াস সিনেমার কোমর ভাঙতে গেলে এন এফ ডি সি তুলে দিতে হয় কিছু নির্দেশক খামোখা মাল কামিয়ে নিচ্ছে এই অভিযোগে। ধর একটা নাট্য দল অনুদান চাইছে, তাকে কি করতে হয় বলতো? বিশেষ লোক ধরতে হয়। তিনি রেকমেন্ড করবেন, তিনি লাইন ধরিয়ে দেবেন। ধরা যাক কেন্দ্রের অনুদানের জন্য যাচ্ছ। সেখানে যেতে হলে সরাসরি যেতে পারবে না। রাজ্যের নির্দিষ্ট বিভাগ আছে সেখান থেকে তোমার নাম না পাঠালে অনুদান পাবে না। আবার রাজ্যে অনুদান নেবে, সেখানেও এক ব্যাপার। দলের হয়ে ভোটে নাটক করতে হবে, নয় দলের হয়ে জোটে থাকতে হবে। সরকারের বিরোধ করাই যাবে না। করলে অনুদান ছেড়ে দাও, গ্রুপ থিয়েটারের তকমাটুকুও দেবে না। না দিলে? আমাকে যেমন শো করতে হলে নানান ট্যাক্স আর হল ভাড়ায় জেরবার হয়ে যেতে হয়। জানি টাকা আসবে না, তবু সব ঢেলে শো করে যাই। কেন না কোনো এক কেরাণী ঠিক করেছিল সোসাইটি অ্যাক্ট-এ রেজিস্টার্ড দলে নাটক ছাড়াও অন্য অনেক কিছু চর্চার কথা আছে এবং এরা করছে তা, তাই এরা গ্রুপ থিয়েটার না। ভাবো, এই মূর্খটি যে জানেই না থিয়েটার একটা কালেক্টিভ আর্ট ফর্ম, এ ঠিক করেছে দীর্ঘ বছর কোন দল কি পাবে! এর ঠিক করার বাইরে এমনকি তথ্যকেন্দ্রের বা এর বিভাগীয় সেক্রেটারীর কথাও চলে না। এ কিন্তু শুধুই কেরাণী। কিন্তু দলীয় লোক। তাই অপার ক্ষমতা। এখন কি বদলে গিয়েছে সব? আমি যদ্দূর জানি, না, বদলায়নি। এঁরা সব দলেই জানেন আমি অনুগত নই, কাজেই কাজ করতে গেলে আমাকে বাঁশ নিয়েই কাজ করতে হবে। রাষ্ট্রীয় দায় রাষ্ট্র উপেক্ষা করেই যাবে। সেখান থেকেই আমি সমাধান খুঁজছি, সমাধান পেতেই হবে।
  • anamitra | 127.194.7.178 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ১৮:০৫582409
  • শুদ্ধ দা, লেখাটা পড়লাম। পয়েন্টগুলো ভালো লাগলো। রুদ্রপ্রসাদের কথাগুলো থেকে আমারও মনে কিঞ্চিত ক্রোধের সৃষ্টি হযেছিল। তোমার মত এত গুছিয়ে লিখতে পারবনা বলেই কোথাও কিছু লিখিনি।
    এককথায়, ধন্যবাদ।
  • কল্লোল | 111.63.138.81 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২০:৪২582410
  • শুদ্ধ।
    জানিনা কথাটা এইভাবে বলাটা ঠিক কি না। তবু, বিশ্বাসের জায়গা থেকে আমি বলতে বাধ্য।
    রুদ্রপ্রসাদ এন্ড কোংদের নিয়ে কোন আলোচনায় আমার রুচি নাই। যেসব নামকরা বাংলা নাটকের গ্রুপ এখন করে খাচ্ছে, তাদের রাজনৈতিক মতের বিভিন্নতা স্বত্বেও তারা অসলে একই বর্গে অবস্থান করে - সেটি ধান্দাবাজী। এর মধ্যেদিয়ে তারা বহু "অসাধারণ" প্রযোজনাও করে থাকেন।
    আমার অভিজ্ঞতায় এদের বাইরে আমি কয়েক ধরনের নাটকের দল দেখেছি।
    ১) মটলি - মূলতঃ নাসিরুদ্দিন শাহের দল বলে পরিচিত। এদের দলের অনেকেই সিনেমায় অভিনয় করে জীবন ও নাটক চালান। তবে নাসির, বেঞ্জামিন, রত্না এঁদের কারনে মটলির নাটকের প্রচন্ড চাহিদা। যদিও কোন প্রযোজনায় নাসির অভিনয় না করলে (এমনকি নাসির পরিচালিত হলেও) চাহিদা ৫০% কমে যায়। কিন্তু এঁরা শো প্রতি (নাসির অভিনয় করলে) ৭ লক্ষ, (না করলে) ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে থাকেন।
    এরকমভাবেই কাজ করেন রজিত কাপুর, শাহনওয়াজ পটেল, রজত কাপুর, সেওয়ানন্দ কিরকিরে। এই একইভাবে কাজ করেন বাংলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অনেক কম টাকায়।
    ২) দ্য কোম্পানী থিয়েটার - অতুল কুমার/বিনয় পাঠকদের দল। এঁরা সিনেমায় অভিনয় করেন না। নাটকই জীবিকা। ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা শো প্রতি নিয়ে থাকেন।
    ৩) সিএফডি ব্যাঙ্গালোর - প্রকাশ বেলোয়ারীর দল বলে পরিচিত। মূলতঃ নানান জীবিকা থেকে আসা মানুষ ভালোবেসে নাটক করেন। এঁরা পকেট থেকে টাকা ঢেলে নাটক করেন। কোন অনুদান-টান নেন না। এরকমই বাংলায় তথা সারা ভারতে বহু নাটকের দল আছে।
    ৪) শতাব্দী, আয়না, পথসেনা - এঁরা তৃতীয় ধারার নাটকে বিশ্বাস করেন। নানান জীবিকায় আছেন। ভালবেসে, পকেট থেকে পয়সা দিয়ে নাটক করেন।
    এ`দের কেউ কেউ সমবায়, শুওর পালন ইত্যাদি করতে গেছিলেন। সাময়িক সাফল্য পান। পরে নানান খেওয়াখেয়িতে উবে যান।
  • কল্লোল | 111.63.138.81 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২০:৫৯582411
  • আর আছেন, সঞ্জনা কাপুর (পৈতৃক সুত্রে পাওয়া পৃথ্বী থিয়েটার)। আছেন অরুন্ধতী নাগ। একক প্রচেষ্টায় সরকারী/বেসরকারী সাহাযে রঙ্গশংকরা নামে একটি থিয়েটার গড়ে তুলেছেন। নিজে কোন দল চালান না (রঙ্গশংকরা চালাতেই দম বেরিয়ে যায় - অরুন্ধতী উবাচ), তবে ফ্রিলান্সার হিসাবে অভিনয় করে থাকেন।

    আপনি যেভাবে নাটক করার কথা বলছেন -
    "এখন আবার চেষ্টা করছি। কলকাতার আসেপাশের জমি যদি নিতে পারি। গ্রামের দিকে একটা পূর্ণাঙ্গ শিল্প শিক্ষণ কেন্দ্র গড়তে পারি। কলকাতার ধারে কাছে আউটলেট, হল সমেত। বড় না, ইন্টিমেট থিয়েটার স্পেস। গ্রামের দিকের কেন্দ্র ও সমান্তরাল কৃষিক্ষেত্র। চাষ হবে ক্ষেতে, পুকুরে। একদল ছেলেমেয়ে বাছাই করে নির্দিষ্ট সময় রেখে শিক্ষার ব্যবস্থা হবে গ্রামীণ কেন্দ্রে। তাদের শিক্ষার জন্য অর্থ ব্যায়ের প্রশ্ন নেই। তারা আমাদের উপার্জনে পড়বে। কিচেন গার্ডেন হবে। কয়েকটা ঘর লাগবে তাদের থাকার প্রয়োজনের বাইরেও। বন্ধুরা চাইলে যেতে পারবে, থাকতে পারবে কদিন। কাজে অংশ নিতে পারবে। তবে হ্যাঁ, বন্ধুদের থেকে কিছু অনুদান নেব থাকা খাওয়ার। লোক সংস্কৃতির সঙ্গে নিয়মিত আদানপ্রদান ক্ষেত্র হবে সেটা। আধুনিক কাজের সঙ্গে তাদেরো দেখা সাক্ষাতকেন্দ্র হবে সেটা। জমির ধান, ক্ষেতের ফসল, পুকুরের মাছ খেতে দেবে আমাদের। বাকী উপার্জন, ব্যবস্থা চালানোর কাজে লাগবে। প্রয়োজনে কিছু টাকা নানা বাণিজ্য ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তার লাভ দিয়ে কাজ ও জীবন ওদের চালানো যাবে। ভাবছি।"
    আমার কিছু প্রশ্ন আছে। কে/কারা চাষ করবে ক্ষেত ও পুকুরে? তাদের দেখাশুনা করবে কে? তাদের পারিশ্রমিক আসবে কোথা থেকে?
    জানি এসবেরই জবাব আছে। কিন্তু এসব করে, তারপর নাটক করা বেশ অসম্ভব বিষয়। শুধু একটা থিয়েটার হল চালিয়েই দম বেরিয়ে যাচ্ছে, আপনি তো ক্ষেতখামারও চালাবেন বলছেন।
    আপনার স্বপ্নে আঘাত করতে চাই না। এটি একটি (অন্য ক্ষেত্রে) ঘরপোড়া গরুর মতামত বলে ধরবেন।
  • ন্যাড়া | 213.83.248.37 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:০৩582412
  • নতুন ছেলেমেয়ে আসছে না বা দর্শক দেখছে না বলেই সরকার এই মাধ্যমকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।

    অন্য গণমাধ্যম বিশেষ করে টেলিভিশনের সিরিয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গোল খাচ্ছে নাটক। একটা তো reach-এর ব্যাপার আছে। তার থেকেও যেটা বেশি আছে, সেটা হল কূপমন্ডুকতার প্রবলেম। বাংলা নাটক, এখনও ষাট-সত্তরের দশকে পড়ে আছে। বিশ্বের নাটক এগিয়ে গেছে অন্ততঃ কুড়ি কুড়ি বছর। এখন মানুষ মূলতঃ নাটক দেখে নস্ট্যালজিয়ায়। সেইজন্যে এখনও চেতনা জগন্নাথ নাবালে লোকে হামলে পড়ে। কারা সেই লোক? আমার মতন মাঝবয়েসী বা প্রবীনতররা। আগের বছর দেখলাম রুদ্রবাবুরই "অজ্ঞাতবাস"। যে মাউন্টিং হয়েছে, সে একেবারে সত্তরের সময়ের। গল্প যতই সমসাময়িক হোক, উপস্থাপনা বস্তাপচা। বাংলা নাটকের কটা লোক নিয়মিত বিশ্ব নাট্যশালার নাটক দেখেন? ওয়ার্কশপ করেন, পড়াশুনো করেন? যিনি কিছুটা করতেন, সুমন মুখোপাধ্যায় তিনি তো এখন সিনেমা করাতেই বেশি আগ্রহী। আমরা তো এখনও একটা রেপার্টরি থিয়েটারই তৈরি করে উঠতে পারলাম না। যতক্ষণ না, বাংলা নাটক ঢেলে সেজে উঠছে, আধুনিক ভাষা ব্যবহার করছে, কোন আশা নেই। সেই সঙ্গে আছে মৌরসীপাট্টার গল্প। "কী হনু"-র গল্প।
  • একক | 24.99.170.237 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:০৩582356
  • ন্যাড়া বাবু
    কুপমন্ডুকতার সমস্যা টা ঠিক হলেও খুব বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ রাখে । এটা ঠিক যে বাঙালির নাট্যচিন্তার দৌড় ওই সেখ কবি থেকে ব্রেশট অবধি। কোনদিন পিন্টার এও হাত দিতে দেখলুম না । নিজেরা লিখলেও সেই ঘুরেফিরে এক যাঁতাকল । কিন্তু এ কথা তো সাহিত্য-কবিতা সব ক্ষেত্রেই সত্য। টার পড়েও বই বিক্কিরি হচ্ছে । বস্তাপচা উপন্যাস ও বাজারের হাত ধরে পৌছেছে ঘরে ঘরে ।ছোটো হলেও একটা বাজার আছে ।

    আমার মনে হয় প্রথমে ইকনমিক মডেল টা ঠিক করা দরকার । মান আসবে ঠিক । শুদ্ধ যে ইকনমিক মডেল টা বল্লো ওটা নিয়ে প্রশ্ন আছে । কল্লোল দা যে প্রশ্ন টা করলো সেটাই । যে ঐসব ঝক্কি সামলে শুদ্ধ যেমন চাইছে নাটকের জন্যে সেই সময় বেড়োবে তো ?
  • বলরাম হাড়ি | 24.96.105.24 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৩২582357
  • আমার মনে হয় ন্যাড়াস্যার কূপমণ্ডুকতা বলতে প্রোডাকশনের কথা বুঝিয়েছেন। মাউন্টিং-এর কথা পড়ে মনে হল। স্রেফ টেক্সটের দিক থেকে দেখলে হালের মিশরিয় বা আলাস্কান নাটকের তর্জমা করে মঞ্চস্থ না হওয়া খুব একটা কূপমণ্ডুকতা মনে হয় না। এই সীমাবদ্ধতা সারা পৃথিবীর সব থিয়েটারেই অল্পবিস্তর থাকে। ব্রডওয়ে বা ওয়েস্ট এন্ড-এও সাদাত হাসান মান্টো বা বিজয় দান দেথা থাকবেন না। বরং বাংলা থিয়েটার নিয়ে উল্টো অভিযোগ আছে। যেটা শুদ্ধবাবুই করেছেন। কি দরকার বিদেশি নাটকের তর্জমার ইত্যাদি ইত্যাদি।

    তবে এত হতাশার কোনও কারণ আছে বলে মনে করি না। রুদ্রবাবুও কি নিয়ে হতাশ বুঝলাম না। নান্দীকার নাট্য উৎসব নিয়ে হতাশা থাকতেই পারে। এখন খোদ কলকাতায় অন্তত গোটা দশেক ভাল নাট্য উৎসব হয়। নাটক কেউ দেখতে আসছে না ইত্যাদি হলে এত নাটক হয়ই বা কি করে, আর হল ভাড়া পাওয়া যায় নাই বা কেন?
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১২ ২৩:৫২582358
  • সব মাধ্যমের লোকেদের এই হতাশা সর্বকালে থাকে। লোকে ভাল নাটক দেখছে না, ভাল বই বিক্রি হচ্ছে না, আল সিনেমা ফ্লপ করছে ইত্যাদি হাহাকার।

    আরে, লোককে দেখানোটাও তো একটা কাজ। মানুষ তোমার কাজ কেন দেখবে তুমি যদি তাকে এনগেজ করতে না পারো? বহুকাল কলকাতায় না থাকার ফলে নাটকের কথা বলতে পারব না (তাতেও শেষ বার গিয়ে যে কটা দেখেছি, ২০১১ সালে, কোনো মন্তব্য না করাই ভাল), কিন্তু গত ১০ বছরে কখানা বাংলা বই লেখা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক অপ্রাতিষ্ঠানিক গপ্প উপন্যাস সব মিলিয়ে, যা পাঠককে এনগেজ করে? কাংগাল মালসাট বাদে তো একটা নাম-ও মনে পড়ছে না ! দু পাতা পড়লে হয় বোর হয়ে বন্ধ করে দিতে হয় নাহলে সিউডো আঁতলামীতে ঝাঁট জ্বলে যায়। সেম ইজ ট্রু ফর বাংলা সিনেমা। এখানেই তো কনটেম্পোরারি আইরিশ বা ইংলিশ লিটারেচার/সিনেমা আমাদের দশ গোল দিয়ে বসে আছে। ওখানে যে স্প্যানে ভাবছে, ২০০০-এর পর যা সব সিনেমা/ উপন্যাস ইত্যাদি এসেছে, তার ধারে কাছে আমরা যেতে পারব? বেশি বাংলা নাটক রিসেন্টলি না দেখায় কমপেয়ার করব না, কিন্তু আমি সিওর নাটকেও এক-ই ব্যাপার। ডাবলিনের যে কোনো প্রোডাকশনের ধারে কাছে দাঁড়াতে পারবে না। সেটা শুধু টাকার জন্যে নয়। আমাদের মানসিকতায় কোথাও আমরা মধ্যমেধাটাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছি।

    মানুষের কি দোষ? এনগেজ করতে না পারলে সেটা প্রোডিউসারের দায়। কাংগাল মালসাট ভাল বিক্রি হয়েছে। হারবার্ট হয়েছে। মসোলিয়াম ফ্লপ করেছে। .কারণ সহজবোধ্য। .
  • শুদ্ধ | 127.194.226.97 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০২:১১582359
  • কল্লোলদা, (একক-ও)
    রতন থিয়ামদের টিম কিন্তু এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। আপনার তোলা প্রশ্নগুলোর উত্তর আছে। সময়ে সুযোগে সে আলোচনাও হবে। এখানে অন্য একটা কথা বলি। নাটক নিয়ে ভাবনা বলার আগে আমার সংস্কৃতি সংক্রান্ত ধারণার কথাটা বলি। সেটা ২৪/৭-এর জীবনযাপন। সেখানে আমি যদি ধরুণ ব্যাঙ্কের চাকুরে হই বা আলুর ব্যবসায়ী আমার সংস্কৃতিতে সেই উপার্জনের থেকে একটি ছাপ এসে পড়বেই।

    ক্ষতি আছে কি? আমার কাছে নেই। নাটক একধরণের আয়না-ও বটে। নানা কিছু ছাপ ফেলে, ইন্টারপ্রিটেড হয় ইত্যাদি। তার জন্য কিছু স্কিলের প্রয়োজন হয়। সে স্কিল বাড়ানোর কাজটা জীবনের দৈনন্দিন নানা কাজের সঙ্গেই করা যায়। এখানে একটা কথা বলি, একটু নিজের কথা বলা হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এড়িয়ে গেলে কথাটা বোধহয় বোঝাতে পারবো না। নাটকের জন্য যে স্কিলটা বা স্কিলগুলো দরকার হয় তা আমার আছে। যাঁরা কাজ দেখেছেন তাঁরা জানেন। কিন্তু সেটার জন্য আমি ঘরের দরজা বন্ধ করে রেওয়াজ করার পরিবেশ পাইনি। অর্থনৈতিক সঙ্গতিও ছিল না। আমাকে কাজ করতে করতেই সে স্কিল বাড়াতে হয়েছে। পন্থা আবিষ্কার করতে হয়েছে। আজকে কোনো অভিনেতার সঙ্গেই আমার মঞ্চে পাল্লা দিতে সমস্যা নেই। তিনি যিনিই হন না কেন স্কিল দিয়ে আমাকে পেছনে ফেলতে পারবেন না। সুতরাং যে মডেল আমি ভাবছি সেখানে এভাবে শিক্ষা হবে।

    হবে কেন না যারা নাটক বা অন্যান্য শিল্প মাধ্যম নিয়ে কাজ শিখবে তারা এই চাষাবাদের কিছু কাজ নিজের হাতেও করবে। করতে হবে। শরীরশিক্ষার সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এ কাজ আমি নিজে কিছু দিন করে দেখেছি বুদ্ধি করে প্রয়োগ করলে শরীরের নানা ভাল হয়। এককালে খেলাধুলো করতাম। জিমন্যাস্টিক থেকে ফুটবল সবটাই এবং জেলা-বাংলা এই সব ও করেছি সে কালে। কিন্তু শরীর আমার তৈরী হয়েছিল পুকুরে/নদীতে সাঁতারে, জলের বালতি টেনে পেশীর জোর ইত্যাদি বাড়িয়ে। বলছি না জিমে মাত্রা মেপে নিয়ন্ত্রণ করে করা যায় না, কিন্তু আমার মনে হয় এ কাজগুলোতে আনুষঙ্গিক ভাবে মানসিক কাঠামোর-ও যে বিকাশ ঘটে তা জিমে ঘটে না। সুতরাং আমার ক্ষেত্রে প্রকৃতির নানা উপাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপারও আমার কাছে গুরত্বপূর্ণ। আমি সমাজবদ্ধ। সুতরাং শিক্ষার সামাজিক ভাবনা একটা প্রয়োজনীয় উপাদান আমার কাছে। সেটা জীবনযাপনের কোনো বিষয়কে বাদ দিয়ে হতে পারে না। যেমন ধরুণ আমাদের টিমে একটা সাধারণ অভ্যাস আছে। কোনো ছেলে এলে তাকে প্রথমে আমরা চা করা দিয়ে শুরু করাই। তারপরে বাসন মাজাই, কাপড় কাচাই দরকারে, রান্না করাই ইত্যাদি। কেন না সাধারণভাবে এই ধরণের কাজ আমাদের ছেলেরা বাড়ির পরিবেশে করে না। কেউ কেউ ব্যাতিক্রম। তাই এইভাবে তাকে যাপনের নানা স্তরে নিয়ে যাওয়া হয় যেখান থেকে সে একধরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা পাবে ও নিজের যাপনকেও বানাবে। তো, চাষাবাদ ইত্যাকার সম্পর্কেও তেমন কিছু ভাবনা আছে। বিষদে আর যাচ্ছি না।

    এই প্রসঙ্গে আরো একটা কথা বলি। যখন মেঘনাদ বধ কাব্যে হাত দিয়েছিলাম শহরের বস্তির এবং গ্রামের নিম্নবর্গ নিয়েই হাত দিয়েছিলাম। তাদের উচ্চারিত বাংলা শুনলে কানে আঙুল দিয়ে লোক পালাতো। বহু বোদ্ধা আমাকে বলেছিলেন এদের দিয়ে হবে না। প্রযোজনার জন্য চার বছর কাজ করেছি। শরীর বানাতে এসব পদ্ধতির সঙ্গে তলোয়ার, রণ পা, মার্শাল আর্টস সব মিশিয়ে কাজ করিয়েছি। নাচ শিখিয়েছি। গান ,বাদ্যযন্ত্র-ও। পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী, অর্থনীতি, পলিটিক্যাল সায়ান্স, ফিলোজফি,ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজির নিয়মিত ক্লাস করিয়েছি। আমাদের মডেল এবং কোর্স বানিয়ে। তারা চার বছর পরে গাধার খাটুনি খেটে মেঘনাদ করেছে। হ্যাঁ, সব শিখে গিয়েছে এমন না, কিন্তু অনেকটা এগিয়েছে। জীবনের কাঠামোগত সিরিয়াস পরিবর্তন হয়েছে। মেঘনাদ যখন করেছে মঞ্চে তখন দর্শকরা তাদের সেলামও ঠুকেছে। শো বেশী করতে পারিনি নানা সমস্যায়। আমার দীর্ঘকালিন অসুস্থতার তখনই শুরু আর অর্থনৈতিক সমস্যারও। কিন্তু কলোনির ছেলেটি যখন মেঘনাদ করতে মঞ্চে উঠেছে, কি ভিন্ন ডায়ালেক্ট বলা বাকী ছেলেমেয়েদের একাংশ তখন ওই ছাপগুলো কিন্তু ছিল না। ফলে আমাকে কখনোই আগের মেঘনাদের সঙ্গে তুলনা হলে কি হবে ভেবে গুটিয়ে থাকতে হয়নি। আমার ছেলেমেয়েরা কেউ কম মান তৈরী করেনি মঞ্চে।

    তাই আমি হাতেকলমে জানি কি ভাবে কোন ফলাফলে পৌঁছোনো যায় দাদা। সব জানি বলবো না, তবে অনেকটা এক্সটেন্ট-এ জানি। সঞ্জনা, নাসির বা সিএফডি-র থেকে আমার অনেক কাছের মডেল পোল্যান্ডের পুওর থিয়েটার, ব্রাজিলের সমবায়িক কাজ, মেক্সিকোর লিভিং দের কাজ। সঞ্জয় বা নাসিরদের সঙ্গে কোথাও একটা দর্শনগত বিরোধ হয় আমার ভাবনার। বাকীরা সমবায় করে কাজ করেন। খেয়োখেয়ি সেখানেও নানা সময়ে হয়েছে। স্পেনে তো হরহামেশা হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজ থামেনি। একদল চলে গিয়েছে, অন্যদল লড়াই জারী রেখেছে। হ্যাঁ, অনেকের সঙ্গেই আমি বিষয়গত ভাবে একমত নই। যেমন লা ফরা ডেলস বায়োস। যৌনতা নির্ভরতাই এদের টিকিয়ে রেখেছে। কিন্তু সমবায় এবং তার সঙ্গে ঘটে চলা স্ট্রীট থিয়েটারের কারবার নিয়ে আমি উল্লসিত।

    বাকী বন্ধুরা,

    যা বললেন তার সঙ্গে আমি একমত। প্রযোজনার ভাষা, বিষয়, উপস্থাপনা সব নিয়েই ভাবা দরকার। সে সব না করে দর্শক নেই বলে কান্নায় আমার না আছে আস্থা না আছে রুচী।
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০৩:০১582360
  • শুদ্ধ, আপনার নাট্যভাবনার বেসিক একটা জায়গায় আমার খটকা লাগছে। একটু বিশদে খটকার জায়গাটা বলি, আশা করি ক্লীয়ার করে দেবেন।

    বস্তির ছেলেপুলেদের দিয়ে মেঘনাদবধ-কাব্য করালেন, কিন্তু সেখানে আপনাকে ৪ বছর পরিশ্রম করতে হল তাদের ডায়ালেক্ট ঠিক করার জন্য। কোনো প্রয়োজন ছিল কি? আপনি তো খুব সহজেই কোনো দক্ষ অভিনেতাকে পেয়ে যেতে পারতেন। আপনার বেসিক গোলটা কি? নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে মেঘনাদ-বধ নামানো, তাই তো? সেটা হতেই পারে যে আপনি সাব-অল্টার্ণ দৃষ্টি থেকে নাটকটাকে দেখছেন, তাই বস্তির ছেলেদের দিয়ে করাচ্ছেন। কিন্তু তাহলে তাদের ডায়ালেক্ট চেঞ্জ করার দরকার কি? সেই ক্রুড জীবন-কেই মঞ্চে এনে মেঘনাদবধের একটা অন্য ইন্টারপ্রিটেশন দেওয়া যেত। কিন্তু আপনি তাদের পেছনে চার বছর খেটে তাদের এমনভাবে গড়ে তুললেন যে স্টেজে দেখে মনে হল, আরে, এদের সংগে তো আমাদের কোনোই তফাত নেই! এখানেই কিন্তু আপনার গোলটা নড়ে গেল। আপনি নাটক করতে চান না বস্তির ছেলেমেয়েদের মধ্যে কাজ? প্রথমটা হলে, শুধু শুধু চার বছর না খেটে প্রশিক্ষিত অভিনেতাকে দিয়েই করা যেত। দ্বিতীয়টা সমাজ-সংস্কার, যা খুব মহত ব্যাপার, কিন্তু তার সংগে নাট্য্ভাবনার সম্পর্ক? কতটুকু?

    এই প্রশ্নটা আমায় ভাবায় কারণ মাঝে মাঝেই কাগজে পড়ি জেলবন্দীদের নিয়ে নাটক, যৌনকর্মীদের নিয়ে নাটক। সকলে নাট্যপ্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানায়, যা অবশ্য-ই সাধুবাদ জানাবার যোগ্য। কিন্তু নাটকটা নাটক হিসেবে কেমন দাঁড়াল, সেটার হিসেব কোথায়?

    যদি একটা শিল্পমাধ্যমকে আমি রিপ্রেজেন্ট করি, এবং আমার দায়বদ্ধতা শুধুই সেই মাধ্যমের কাছে, তাহলে শুধু শুধু সেই মাধ্যমের উপাদান নিয়ে আমি ভাবতে যাব কেন? আমি যদি ভাল উপাদান হাতের কাছে হাতের কাছে পাই যার পেছনে খাটতে কম হবে, তাহলে সেটা নিয়েই কাজ করব না কি? হ্যাঁ, ভাবব তখনি, যখন সেই উপাদান আমার রিপ্রেজেন্টেশনকে এফেক্ট করবে। মানে, নিম্নবর্গের চোখ দিয়ে মেঘনাদবধ, এরকম কোনো রিপ্রেজেন্টেশন করতে গেলে অবশ্য-ই নিম্নবর্গকে দিয়েই করাব, উইথ অল দেয়ার ডায়লেক্ট্স, জীবনচর্যা এন্ড কিপিং এভরিথিং ইনট্যাক্ট। তার বদলে তাদের ট্রেনিং দিয়ে মুলধারার মতন নাটক করানো, সেটা খুব জরুরী কাজ হলেও, সেটা নাট্যশিক্ষার কাজ, তার সংগে ভাল প্রোডাকশনের সম্পর্ক কতটুকু?

    গ্রোতোভস্কিরা পোলান্ডে এ জিনিস করেছিলেন শুনেছি। ওই যে ওই নাটকটা, যেখানে কয়েকজন গ্রামবাসী যীশুর জীবন অভিনয় করছে আর গ্রামের পাগলকে দেওয়া হয়েছে যীশুর রোল। অনেককাল আগে পড়া, নাম ভুলে গেছি। সেখানে নাকি গ্রামবাসীদের দিয়েই করানো হত। তার একটা কারণ বুঝি। এক্ষেত্রে বুঝিনি। ......
  • শুদ্ধ | 127.194.226.97 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০৪:০৯582361
  • এক, আমি মধুসূদনের মেঘনাদবধ করছিলাম- যার বাংলা এবং উচ্চারণ বাদ দিয়ে করলে সেটা আর মধুসূদনের থাকতো না। ওটা আমার দায় মধুসূদনের প্রতি। কোনো সব অল্টার্ণ দিয়েই সে দায় ঢাকতে আমি অক্ষম। এছাড়াও, যদি কোনো নাটক করতাম যেখানে মুন্ডা চরিত্রে অভিনেতাকে অভিনয় করতে হবে এবং সেই ডায়ালেক্ট লাগবে তাহলে তার জন্যও প্রস্তুতি নিতে হয়। এটা কোনো নতুন বিষয় না। আরেকটু বিশদে বলি, উচ্চারণের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন নাটকের একটা বড় প্রয়োজন। নানা চরিত্রে নানা ডায়ালেক্ট লাগে, কিন্তু শান্তিপুরী উচ্চারণ শিখতেই হবে প্রথমে। বেশীরভাগ নাটকেই সেই উচ্চারণ লাগে। যে কোনো অভিনেতাকেই শিখতে হয়। কাজেই কাজটা কাজের মধ্যেই পড়ে। এর পরে যেমন যেমন চরিত্র আসবে তেমন তেমন শিক্ষা। আপনি খেয়াল করেননি প্রায়োগিক প্রয়োজনটা বা নাট্যচর্চায় এর ধারাবাহিক ভূমিকাটা। একটা প্রযোজনাতে কাজ শেষ হয় না, আর প্রস্তুতিও শুধু একটা প্রযোজনার হয় না। তাকে সামনে রেখে হয়,এই মাত্র।

    দুই,নাটক করাটা আমি যেখান থেকে শুরু করেছি সেটা খুব স্পষ্ট রাজনৈতিক জায়গা। সেখানে বস্তি বলেই শুধু না, বিশেষ একটা ক্লাসের জন্য কাজ করার ব্যাপারটাও ছিল। এবং গণনাট্য থেকে নবনাট্য-তেও থিয়েটার লোকশিক্ষার মাধ্যম এই ভাবনাটাও ছিল। না থাকলে যাঁরা সমাজে সুবিধে পান ও তৈরী শুধু তাদের নিয়েই সেখানেও কাজ করলেই তো হোতো তাই না? তা কিন্তু হয়নি। বহু মানুষ এসেছেন যাঁরা সুযোগ কম পেয়েছেন সমাজে। আমার গোলটা ওইখান থেকে এসেছে তো! তাই দুটো কাজই আমার কাছে সমান গুরুত্বের।

    আপনার কথামত, যারা তৈরী তাদের নিয়েই শুধু কাজ করলে, সামগ্রিকভাবেই, আমার দল বলে না, নাটক করার জন্য নতুন ছেলেমেয়ে আসবে কোথা থেকে? অর্থবান অংশের ছেলেমেয়েদের বড় অংশই শখের নাট্যচর্চা কখনো করলেও তাদের পেশা ও জীবনে প্রতিষ্ঠাকেই সার জানে। তারা নাটকের জন্য সময় নষ্ট করে নাকি? যারা কিছুটা হলেও করতে পারে এখনো তারা মধ্যবিত্ত, বেশীটাই নিম্নমধ্যবিত্ত। তাদের তৈরী করবে কে বা কারা? না হলে তো নাটক এক প্রজন্মেই শেষ। কোথাও একটা বোধহয় আপনি নড়িয়ে দিচ্ছেন বিষয়টাকে। ভাল প্রযোজনার পাশাপাশি ভাল নাট্যকর্মী তৈরী করাটাও একটা বিরাট কাজ এবং অবশ্যই এখানে ক্লাস বিষয়ে সচেতন থেকেই করা দরকার। তাহলে কি বাকী ক্লাসেদের বাদ দিতে হবে? একদম না। তারা থাকলে ভাল। আমার অভিজ্ঞতা বলে ভাল অংশের ছেলেমেয়েরা থাকে না বেশীদিন এলেও। দুর্বল অংশের থেকে এলে থাকে বেশী। জোরটা দুর্বল অংশে দিয়েই করতে হবে। অন্তত আমার কাজের ক্ষেত্রে এটা আমি করি ও করবো। আগেও অনেকেই করতেন, কেন না নাটকে খুব বিত্তবান বাড়ি থেকে ছেলেমেয়ে তো আসতো না বেশী।

    তবে ওই যে বললেন না নাটকটা নাটক হিসেব কেমন, সেটা বাদ দিয়ে কিছুই করা যায় না। একদম ঠিক কথা বলেছেন। প্রযোজনা বানাতে সময় লেগেছে ওই মানটায় পৌঁছোনোর জন্য। নাটকটা যতটুকু হয়েছিল শো, তাতে যে রিভিউ পেয়েছিলো তাই বলেছে নাটকটা নাটক হিসেবে কেমন! আমি সামান্য জ্ঞানে বলি, যা হয়েছে তাতে ভারতের কোনো মঞ্চে লজ্জা পাবার মতন কাজ আমরা করিনি। সেটা অনেকেই জানেন এখানে। একটা কথা আমার কাছে পরিস্কার, আমি কুমোরটুলিকে নিয়ে যদি ন্যাশনাল লীগ খেলতে যাই তাহলে জেতার জন্যই যাব, অন্য কিছু করতে না। এবং আমি সংরক্ষণ চাইবো না।

    আমি শিল্পমাধ্যমকে আমার কাজের মাধ্যম ভাবি, সংস্কৃতি ও তাতে আমার ভূমিকার মাধ্যম হিসেবে ভাবি, তার বেশী কিছু না। শুধু উচ্চমার্গীয় শিল্পসৃষ্টি করাটাকেই আমার কাজ মনে করি না, কাজটা করিয়ে শিল্পের পাশাপাশি শিল্পিদের ক্ষেত্রে উচ্চমার্গের প্রভাব পড়লো কি না তা দেখাটাও চেষ্টার মধ্যে রাখি। খুব ভাল কথা বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন, প্রযোজনাটায় এদের পাশাপাশিই পার্শ্বচরিত্রে যাঁরা অভিনয় করছিলেন তাঁরা অনেকেই এন এস ডি, রবীন্দ্রভারতী ইত্যাদি পাস আউট। তা বলে কাউকে কারোর জন্য আপোসে জায়গা দিতে হয়নি। সকলেই যোগ্যতার সঙ্গে নিজের জায়গা রেখেছে। আমার কাছে এটা একটা প্রয়োজনীয় অ্যাচিভমেন্ট সিদ্ধার্থ। অর্থাৎ শুধু বিশেষ অংশ থেকে এসেছে বলেই না, এসে যে এন এস ডি যেতে পারবে না কোনোদিন শিক্ষাগত ও অর্থগত কারণে, সেও পাল্লা দিয়েই কাজ করেছে। তাছাড়া আমার লেখায় আপনার কেন মনে হল বলুন তো যে যেভাবে হোক শুধু ভাল প্রযোজনাই আমার ইচ্ছে? হা হা হা হা হা...! হলে তো এত কিছু ভাবার দরকারই ছিল না। অভিনেতা ভাড়া করে নিয়ে বেশী টাকা দিয়ে কোম্পানি খুলে দিতাম। তা সেটাতো হাতিবাগানের ফর্ম। সে ফর্মে কেউ কাজ করলে আমার বলার কিছু নেই, কিন্তু এটা বলার আছে যে যাঁরা করবেন ও ভাবে কাজ তাঁদের এত ভাবার প্রয়োজন নেই, বা ভাববেনই না। নাট্যশিক্ষা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যাথা কোনোদিন ছিল না হবেও না।

    আর সবশেষে বলি, এখানের নাট্যচর্চা সম্পর্কে আপনার প্রত্যক্ষ ধারণা মনে হচ্ছে খুব বেশী না। আপনি বলছেন না, যে তৈরী বা প্রায় তৈরী পাওয়ার কথা, তা যে কতটা দুর্লভ সে কাজ করতে থাকলে জানতে পারবেন এখানে। বেশীরভাগই কম বেশী তৈরী করেন এখনো কর্মী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেটা ছোট জায়গাগুলোতে। প্রচুর ভুল সমেত তৈরী করেন। বড় জায়গায় এখন সেখান থেকে যা তৈরী হল তার থেকে কিছু ঝেড়েবেছে দিয়েই কাজ চালানো হয়। ক্রমশ স্টার নির্ভর নাটকের সূত্রটা এসে গ্যাছে বলে আরো কম তৈরী নিয়ে ভাবতে হয়। দুটি স্টার মঞ্চে ছেড়ে দিলে নাটক শেষ। নান্দীকার ব্যাতিক্রম। কিছু তৈরীর কাজ ওঁরা করেছেন, কিন্তু একটা সময়ের পর থেকে সে কাজটাও খুব কমজোরী হয়ে গিয়েছে। কলাকৌশল জানলেও নাটকের অন্যান্য জ্ঞান নেই, তাই একটি বিশেষ ধাঁচ ছাড়া কাজ করতে তারা সমস্যায় পড়ছে বাইরে এসে।

    যাই হোক, আমার ফোকাসে দুটোই পরে সিদ্ধার্থ। কাজেই নড়ার কোনো প্রশ্নই নেই। তেলা মাথাতেই তেল দেব না এটা আমার কাছে অন্তত খুব সত্যি।
  • aranya | 154.160.98.31 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০৫:০৯582362
  • শুদ্ধ, আপনার স্বপ্ন সত্যি হোক। নিজে নাটকের জগতের লোক নই, দেখতে ভাল লাগে, এইটুকুই। নন-ট্রিভিয়াল কাজ করছেন কিছু, লেখা পড়ে এটুকু বুঝতে পারছি।

    বাংলা মৌলিক নাটকের অভাব প্রসঙ্গে, নিউ জার্সীর সুদীপ্ত-দার (সুদীপ্ত ভৌমিক) নাটকগুলো আপনার কেমন লাগে - রণ, কালশুদ্ধি, ট্যাকোনিক পার্কওয়ে ইঃ? আর, ব্রাত্য-র লেখা নাটকগুলো ই বা কেমন - উইংকল টুইংকল, বাবলি, রুদ্ধসংগীত..?

    শুধু এই দুজন নাট্যকারের নাম করলাম, কারণ এদের লেখা নাটক দেখেছি ও পড়েছি। আরও কেউ কেউ লিখছেন নিস্চয়ই, মৌলিক বাংলা নাটক, যা আমার চোখে পড়ে নি।
  • কল্লোল | 125.242.184.54 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০৬:১৭582363
  • শুদ্ধ।
    চা করা, বাসন মাজা, কাপড় কাচা জাতীয় কাজের থেকে চাষ করা (মাঠে বা পুকুরে) গুণগত ভাবে উচ্চস্তরের কাজ। এর জন্য একটা বেসিক স্কিল সেট লাগে, প্রচুর সময় লাগে। এছাড়াও আমাদের দেশে (বৃষ্টি নির্ভর চাষ) ভীষণ অনিশ্চিত। ধরুণ পরপর দুবছর খরা হলো। কি করবেন?
    আর এই সব কাজে একটা গোটা পরিবারের (যারা পুরুষানুক্রমে এগুলো করে আসছে) প্রায় বছর ঘুরে যায়। নাটক করবেন কখন?
    যাই হোক। আপনার চিন্তা সার্থক হোক - এই কামনাটুকু তো করতেই পারি।
  • dukhe | 212.54.74.119 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ০৯:৪০582364
  • 'ফেরিওয়ালার মৃত্যু'-র একটা ভিসিডি বের করেছিল নান্দীকার। আমারটা নষ্ট হয়ে গেছে। কারো কাছে আছে কি?
    নাটকগুলোর ডিভিডি করে রাখে না কেন এটা সত্যিই মাথায় ঢোকে না। এই ধরুন জগন্নাথ - ডিভিডি বের করলে কি কেউ কিনবে না? নাকি টিকিট বিক্কিরি পড়ে যাবে?
    এটাও বুঝি না যে নাটকে যদি নতুন ছেলেমেয়েরা নাই আসে তবে এত নাটকের দল বাড়ে কেন, মঞ্চে মঞ্চে নাটক করেই বা কারা? হাড়িবাবুকে ক।
    শুদ্ধবাবুর (এইটা আবার কেমন 'রুদ্রবাবু'র মত শোনাল!) প্রয়াস নিয়ে কখনো সাক্ষাতে কথা বলার ইচ্ছে রইল।
  • সিদ্ধার্থ | 141.104.245.196 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১০:২৪582365
  • বুঝলাম শুদ্ধ। কনফিউশন ক্লীয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আপনার নীতিগত প্রয়াস নিয়ে আপত্তি নেই, পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন আছে। ওই যেটা কল্লোলদা বলল। অবশ্য সেটা দুধরণের দেখার পার্থক্যের জন্যেই হবে।

    না, কলকাতায় প্রযোজনা নিয়ে অভিজ্ঞতা বেশি নেই। আমরা দর্শক হিসেবে তৈরী জিনিসটা দেখি। তার পেছনের ঘাম রক্তটা আড়ালে থেকে যায়। আমি খুব সামান্য দেখেছি কিছু নাট্কের বন্ধুর সূত্রে। সেটা বলার মতন কিছু না।
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১১:৪১582367
  • ব্রাত্য-র অভিনয় ও নির্দেশনা তেমন আহা মরি না লাগলেও ব্রাত্য-র কলম বেশ শক্তিশালী ছিল। এখন তো আর দেখি না অবশ্য।
    শুদ্ধবাবুর প্রয়াস সফল হোক। কখনো হয়ত, কোনো না কোনো ভাবে, জড়িয়ে পরার ইচ্ছে রইলো। দেখা যাক।
  • শুদ্ধ | 127.194.241.2 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:৪৩582368
  • কল্লোলদা,
    এক প্রস্থ ভাবনা-চিন্তা করেছি। কিছু কাজও করেছি এ নিয়ে। যদি সঙ্গতি তৈরী হয় এই কাজটা ঠিকঠাক তাহলে এটার সম্পর্কে আরো কথা বলা যাবে। আপনার কথাগুলো বা একক এবং সিদ্ধার্থের কথাগুলোর ভিত্তি আমি জানি। মন দিয়ে ভেবেছি ও এখনো ভাবছি। তবে এখন এটুকু বলতে পারি এ কাজ করা সম্ভব। কাজটা যদি করতে পারি তখন আবার কথা হবে আপনাদের সঙ্গে।

    দুখে এবং কৃশানু,

    দুজনকেই বলছি খুব ভাল হবে যদি কখনো এ নিয়ে সামনাসামনি কথা হয়, কাজ হয়। সঙ্গ খুব লাগে এ ধরণের প্রয়াসে।

    অরণ্য,
    সুদীপ্তদার নাটক বা ব্রাত্যর নাটক তাঁদের মতন করে আমার ভালই লাগে। তবে সঙ্গে একথাও বলি ব্রাত্য কিন্তু আরো কিছুটা কাজ করতেই পারেন বা পারতেন। শুধু কাহিনীনির্ভরতার বাইরেও কাজ ওনার করার ক্ষমতা আছে। শুধু স্কিটের প্যাটার্ণে সময়কে অ্যাড্রেস করে লেখার বাইরেও উনি লিখতে পারেন। বেশ ক্ষমতাবান নাট্যকার, কিন্তু কোথাও নিজেকে লঘু করে দেখছেন বলে কখনো কখনো মনে হয়েছে আমার। সুদীপ্তদার ক্ষেত্রে ওনার নাটকের সমস্যাগুলোর সঙ্গে আম বাঙালির সমস্যার কিছু দূরত্ব আছে। আর সংলাপ নির্ভরতার একটা ধারা আছে। সুদীপ্তদা, মোহিতবাবুদের (পরেরদিকের) ধারার শক্তিশালী কলম। তবে গল্পের এই ধারাটির বাইরের কাজও সুদীপ্তদার কলমে দেখার আগ্রহ আছে আমার। মানুষ সুদীপ্তদা আমার খুব প্রিয়, আমি অপেক্ষায় আছি আরো অন্য ধাঁচার কাজের।

    দুখে,
    আরেকবার। রুদ্রবাবুর মতন শোনালে বাবু বাদ দিয়ে দেবেন। আমার বড় ভয় আছে যে রুদ্রবাবু হতে। হা হা হা হা হা...

    আর নাটকের ভিডিও করে রাখা যায়। কিন্তু একটু সমস্যা আছে। ভিডিও করতে গেলে যদি শুধু লং শটে করতে হয় তাহলে আপনি নাট্যমঞ্চের মজাটা পাবেন না। গোটাটা এতটাই ফ্ল্যাট লাগবে যে মানে পাওয়া ও জড়িয়ে থাকা মুশকিল। আবার যদি ভিডিওতে নানান শটে ইন্টারপ্রেট করে করতে হয় তাহলে বহু অভিনয় এবং বিষয় উচ্চকিত লাগবে। ক্লোজ শটে নাটকের অভিনেতার এক্সপ্রেসন কিন্তু সিনেমা বা ভিডিও-র মানে বেশ বাড়াবাড়ি। সেক্ষেত্রে ভিডিও করলে নাটকের নাট্যগুণ ক্ষুণ্ণ করেও অনেকে করেন, ভিডিও-র মাপে কাজ করে। সেটার কোনো মানে হয় না। তাতে নাটক বাদ দিয়ে আর সব থাকে। এই সব নানান সমস্যা আর কি!
  • Ekak | 69.99.230.125 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৩:৫৬582369
  • ধৈর্য ধরে বুঝিয়ে বলার জন্যে শুদ্ধ কে ধন্যবাদ । ধন্দ যে একেবারে কাটল তা নয় , আসলে কৃষি কে মডেল হিসেবে ব্যবহার নিয়ে অনেক প্রস এন্ড কনস আর কি , তবে আমার বিশ্বাস সেই বাধাগুলো শুদ্ধ পেরিয়ে যেতে পারবে । সুচিন্তিত পরিশ্রমের বিকল্প নেই । অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো ।

    আর একবার বিরক্ত করব। একটাই প্রশ্ন : এত পরিশ্রম করে ,অভিনয় শিখে ,ক্লাস কনশাসনেস এর জায়গায় এতটা দায়বদ্ধ থেকে শেষমেষ মেঘনাদবধ কেন ? কেন এলিট এর সংস্কৃতির মাঝে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা ?
    আমার নাটক যদি আমার সংগ্রাম কেই তুলে ধরতে না পারে তো কিসের নাটক ?
  • কৃশানু | 213.147.88.10 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:০১582370
  • একক দার কথার সাথে একমত হলাম না। মেঘনাদবধ এলিট এর সংস্কৃতি ক্যান হবে? এ তো প্রাতিষ্ঠানিকতা-র বিরুদ্ধে সংগ্রাম এরই ঘোষণা।
  • Ekak | 69.99.230.125 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৩০582371
  • কৃশানুর কথার উত্তর দিতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় । সংক্ষেপে বলি এলিট মানে কোনো কন্টেন্ট নয় , ফর্ম । প্রাতিষ্ঠানিকতা হোক বা প্রতিস্থান্বিরধিতা দুটোতেই এলিট ফর্ম সম্ভব । এইযে এক এর বিরুদ্ধে এক এর সংগ্রাম । বীরপূজা । সামনে নেতা না থাকলে লরা যাবেনা ।। সে রাম হোক বা রাবন । এটাই এলিট দের অবদান । ইউ নিড আ হিরো । প্রান্তিক মানুষের সংগ্রাম তো একক হিরোগিরি নয় । তাই এই ফর্ম তাকে এলিট বলেছি । ভাষা ইত্যাদি তো বাদ ই দিলুম । সেগুলু বাহ্য ।
  • dukhe | 212.54.74.119 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ১৪:৩৩582372
  • শুদ্ধ, ভিডিও-র সীমাবদ্ধতা তো থাকবেই। কিন্তু তার মধ্যে দিয়েই একটা ডকুমেন্টেশন তো হয়ে থাকতে পারে ভবিষ্যতের মানুষের জন্য। অয়দিপাউস বা টিনের তলোয়ার আমি দেখিনি, কিন্তু অডিও ক্যাসেট মারফত কিছুটা আভাস পাই। দূরদর্শনে ডাকঘর দেখে বুঝতে পারি শম্ভু মিত্রের শারীরিক অভিনয়টা কেমন ছিল। কিন্তু পাপপুণ্য, মঞ্জরী আমের মঞ্জরী? কেমন হত সে সব? নো ক্লু।
    অবশ্যই মঞ্চের অভিজ্ঞতার বিকল্প না, কিন্তু সম্পূর্ণ হারিয়ে ফেলার চেয়ে মন্দ কী?
    আশা করি দেখা হবে। আমি রুবি হাসপাতালের কাছে থাকি।
  • rivu | 78.232.113.69 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:২৪582373
  • " বীরপূজা । সামনে নেতা না থাকলে লরা যাবেনা ।" একক এর এই কথাটার আরেকটু ক্ল্যারিফিকেশন আশা করছি। তথাকথিত প্রান্তিক মানুষের সংগ্রাম বলতে আমার যা মনে পড়ছে এই মুহুর্তে, তিতুমীর, সান্তাল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ, বা আরেকটু পরে বোম্বাই মিলের ধর্মঘট, সবেতেই তো আমরা নেতাদের উত্থান দেখতে পাই। নেতা ছাড়া বিদ্রোহ সংগঠনটা হবে কি ভাবে?
  • rivu | 78.232.113.69 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২১:২৭582374
  • ও অবশ্যই শুদ্ধকে সাধুবাদ দিয়ে গেলাম। প্রচেষ্টা চলুক। এটাতো একটা ইউনিক সোশাল এক্সপেরিমেন্ট, শেষ হলে মডেলটার সাফল্য বা কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কিনা তা বোঝা যাবে।
  • ন্যাড়া | 213.83.248.37 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২২:৫৩582375
  • সুদীপ্তদার নাটক একটা বিরাট শূণ্যতা পূরণ করছে। অভিবাসী বাঙালীর নিজস্ব কোন স্বর ছিল না, সুদীপ্তদা সেইটা আনছেন। যাঁরাই বিদেশে কোনরকম সিরিয়াস নাট্যচর্চার চেষ্টা করেছেন, তাঁরাই জানবেন দেশের নাটক অভিবাসী বাঙালীকে ছুঁতে পারে না। তাদের জীবন আলাদা, সমস্যা আলাদা, চাহিদা আলাদা ... ইউনিভার্সাল ট্রুথের গল্প ভাঙিয়ে বেশিদিন চালান যায় না। সেদিক থেকে সুদীপ্তদা একটা অসম্ভব ভাল কাজ করছেন।

    নাটক বাচিক কিনা, সেটা অনেকসময়ই মাউন্টিং-এর ওপর নির্ভর করে। উৎপল দত্ত শম্ভূ মিত্তিরের নাটককে বাচিক বলেছিলেন। উৎপল দত্তর বলা সাজে, কারণ যৎসামান্য যা ওনার কাজ দেখেছি, আর যা পড়েছি, তাতে মনে হয়েছে উৎপলের থেকে ভিশুয়াল আর কোন পরিচালক আসেননি। সেরকম দক্ষ পরিচালকের হাতে পড়লে সুদীপ্তদার নাটক যথেষ্ট ভিশুয়াল হয়ে উঠতে পারে। আমি নিজে ওনার 'রন" করেছি। সময়াভাবে ভাল কাজ হয়নি, সে কথা স্বীকার করব। কিন্তু এও মনে হয়েছে ওখানে ভিশুয়ালের অনেক সুযোগ আছে। সুদীপ্তদার কাছে ওনার নিজের প্রোডাকশনের কথা যা শুনেছি, তাতে মনে হয়েছে উনি তার অনেকটা করেওছিলেন।

    আসলে স্টেজে অনেক লোক থাকলে সুযোগ বেড়ে যায়। পটভূমিকাও কাজ করে। এক্ষুনি মনে পড়ছে "মাধব-মালঞ্চি"র হাটের দৃশ্য, তিস্তাপারের প্রথম দৃশ্য, "দুই-হুজুর"-এর পার্কের দৃশ্য। আর উৎপল দত্ত এর রাজা ছিলেন।

    যাকগে, এসবই নাটকে-হাল-ছেড়ে-দেওয়া এক বৃদ্ধে প্রলাপ।
  • ন্যাড়া | 213.83.248.37 | ১৭ ডিসেম্বর ২০১২ ২৩:১৪582376
  • পিন্টারে 'বার্থডে পার্টি"-র একটা বাংলা প্রোডাকশান হয়েছিল না, "জন্মদিন" নাম দিয়ে? অজিতেশবাবু কি?
  • শুদ্ধ | 127.194.241.81 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১২ ০০:০৯582378
  • একক,
    আমার নিজের ধারণা এবং নাট্যশিক্ষায় দেখেছি সবার আগে ক্লাসিকের বেড়াটা টপকাতে হয়। ওতে বহু শিক্ষার উপকরণ থাকে যা না পেলে হবে না। কাজেই আগে এটা। আর হ্যাঁ, সেই সুযোগে উপনিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ও আলোচ্যে চলে আসে। সেই শিক্ষাও জরুরী। জাতীয়তা, ছদ্মজাতীয়তা, খন্ড ও সাম্প্রদায়িক জাতীয়তা এই সব নানানটা। মেঘনাদ তার সবচে ভাল টেক্সট। জানোইতো কোনো কাজই একলাফে হবে না, হলে ভাল হবে না। তাই...

    দুখে, হ্যাঁ, তথ্যের জন্য দরকারী বটেই। তবে খুব সতর্ক হয়ে ব্যবহার করা ভাল। হ্যাঁ, দেখা হবেই। আমিও ও তল্লাটেই থাকি বহু সময়। যোগাযোগ করে নেব। :)

    ন্যাড়া, আমি সুদীপ্তদার কাজ এই দেশে দেখেছি। আছে সুযোগ। কিন্তু সেটার জন্য কিন্তু বেশ কিছু ভাঙচূর লাগবে। মানে আমার মনে হয়েছে আর কি! আর এতো ঠিকই যে ওখানকার সমস্যার চেহারা ওতে আছেই। আর 'রণ' আপনি করেছেন জানলে দেখতে যেতাম অবশ্যই। হাল ছেড়ে দিচ্ছেন কেন? দয়া করে ছাড়বেন না। ছেড়ে দিলে তো শেষ হয়েই যাবে, তাই না?

    রিভু, অনেক ধন্যবাদ। সত্যিই কাজ এগোলে বোঝা যাবে।

    অনামিত্র, তোকেও। :)
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন