এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  গান

  • বাংলা গান ও সুমন

    ন্যাড়া
    গান | ২৫ আগস্ট ২০১২ | ৮৪০৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ন্যাড়া | 132.179.52.81 | ২৫ আগস্ট ২০১২ ১৩:৩১568804
  • কাব্য করে যদি বলা হয় ঊনিশশো বিরানব্বইয়ে সুমনের "তোমাকে চাই" বাংলা গানের মরা গাঙে
    জোয়ার এনেছিল, তাহলে হয়তো কিঞ্চিৎ ন্যাকামো হয় - কিন্তু সত্যের অপলাপ হয় না |
    সত্তরে যে অবনমনের শুরু, আশিতে সেই বাংলা গানের ধারা প্রায় একেবারে শুকিয়ে গেল |
    শুধু বাংলা গানই নয়, সামগ্রিকভাবে বাংলা ছবি, নাটক সর্বত্রই এই একই ছবি | হয়তো
    কিছু ব্যতিক্রম ছিল সাহিত্যে - বিশেষতঃ কবিতায় |

    বাংলা গানের আশির দশকের অবস্থাটা দেখা যাক | সত্তরে মারা গেছেন শচীন দেব বর্মন,
    নচিকেতা ঘোষ, সুধীন দাসগুপ্ত - শেষের দুজনের মৃত্যু অকালে, সৃষ্টিক্ষমতার
    প্রায়-শীর্ষে থেকে | শচীন দেবের মৃত্যু পরিণত বয়সে হলেও, তিনি তখনও সৃজনে
    ক্রিয়াশীল ছিলেন | শুধু হিন্দি ছবিতেই নয়, প্রতি বছর পুজোয় বাংলা গানও পাচ্ছিল
    শচীনদেবের নতুন সৃষ্টি | সত্তর থেকেই হেমন্ত-কন্ঠ পড়তির দিকে | আশির শেষের দিকে
    হেমন্তর মৃত্যু কন্ঠবাদনের দিক থেকে নতুন কোন শূণ্যতা সৃষ্টি না করলেও, ফাঁক তৈরি
    করেছিল সুরসৃষ্টির দিক থেকে | যদিও আশির গোড়া থেকেই বাংলা ছবি বলিউড-মুখী | সেখানে
    আমদানী হবে বাপ্পি লাহিড়ী-মার্কা জগঝম্প | তবে এ কথা স্বীকার করব, বাপ্পি লাহিড়ী ও
    রাহুল দেব বর্মন বাংলায় মেলোডি থেকে কখনই খুব দূরে সরে যাননি | সলিল চৌধুরী ফিরে
    এসেছেন কলকাতায় | কিন্তু তাঁর নজর তখন রেকরডিং স্টুডিওতে | যদিও মাঝে মাঝে
    কিছু ভাল গান বেরিয়ে আসছে তাঁর হাত দিয়ে, তবুও প্রাইমটাইমের সলিলের তুলনায়
    আশির সলিল অনেক বিবর্ণ | গণসংগীত ঘুরপাক খাচ্ছে পুরোন আবর্তে |

    এরকম একটা সময়ে, যখন বাংলা গানের নাভিশ্বাস, সুমন চট্টোপাধ্যায়ের মঞ্চে অবতরণ |
    এবং প্রথম শ্রবনেই নবীন শ্রোতাদের পতন ও মূর্ছা | শুধু গানের জন্যেই নয়, সুমন
    নিজের মঞ্চপরিবেশনায় নিয়ে এলেন সম্পূর্ণ এক প্যাকেজ | এর আগে ঊষা উত্থুপ ছাড়া
    অধিকাংশ বাংলা গায়ক-গায়িকার মঞ্চ উপস্থাপনা ছিল সংগীত পরিবেশন | আসতেন, বসে
    হারমোনিয়াম ধরে, খাতা খুলে একের পর এক গান গেয়ে নমস্কার করে মঞ্চ থেকে প্রস্থান
    করতেন | হয়ত নিচুগলায় একটা দুটো কথা বলতেন মঞ্চে বসে থাকা বাদনদলের সঙ্গে, হয়তো দু
    চারটে কথা ছুঁড়ে দিতেন শ্রোতাদের দিকে |

    এই দৃশ্যের বদল হল সুমনের সঙ্গে | নিরাভরন মঞ্চের সামনের দিকে L অক্ষরের মতন রাখা
    দুটি কী-বোর্ড সিন্থেসাইজার, একটু পেছনে স্ট্যান্ডে রাখা একটি ক্ল্যাসিকাল গিটার |
    এক মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক লম্বা পায়ে মঞ্চে ঢুকে বিনা-বাক্যব্যয়ে কীবোর্ডের বোতাম টিপে
    শুরু করে দিতেন গান | সময় যত এগোত, সুমনের বাক্যজালের ছটাও তত বাড়ত | তৈরি করতেন
    শ্রোতাদের সঙ্গে এক অসামান্য সংযোগ | ভেবে দেখলে এও এক পারফরমেন্স স্ট্র্যাটেজি | তিন
    ঘন্টার একক অনুষ্ঠানে গলার বিরাম নেওয়ার প্রয়োজনেও |

    সুমন চট্টোপাধ্যায়কে বিশেষ কেউ চিনতেন না | ষাট-সত্তরের দশকে বেতারে গান গাইতেন
    সুমন, কিন্তু খুব সাড়া জাগাতে পেরেছেন বলে মনে হয় না | মহীন পরবর্তী ব্যান্ড যুগের
    সুমন তৈরি করেছিলেন "নাগরিক" | সেও বিশেষ সাড়া জাগায়নি | "নাগরিক"-এর তিনটি
    অ্যালবাম "অন্য কথা, অন্য গান", "অন্য কথা, অন্য গান - ২" ও "নিকারাগুয়ার জন্য"-র
    খোঁজ পড়ল সুমন চট্টোপাধ্যায় বিখ্যাত হবার পর |

    "নাগরিক" আমলের সুমনের গানে শ্লেষ ছিল তীক্ষ্ণ | ভেবে দেখুন এই গানটি -

    দুচোখ বুজে যাও, কিছু চেয়ে দেখ না
    দুকান বুজে যাও, কিছু শুনে রেখ না,
    কত কী করছে লোকে
    কত কী বলছে লোকে
    যাও ভুলে যাও, কিছু মনে রেখ না |

    মনে রাখা বিপদ বড়, কথায় কথায় মনে পড়ে
    সেদিন ঐ ওপাড়াতে, কে যেন গেছে মরে |
    কী ভাবে মরে গেছে, চেয়ে যদি দেখেই থাক
    অথবা পথের ধারে আচমকা শুনেই থাক -

    সে ছিল তোমার-আমার মতই একটা দিব্যি মানুষ |
    ছিল তার ছেলেমেয়ে, বিছানায় মেয়েমানুষ |
    ছিল তার একটা মাথা, দুটো হাত আর দুখানি পা -
    ময়লা জামাকাপড় কেচে দিত পাড়ার ধোপা |
    খিদে পেলে ধিদে পেত তোমার-আমার মতই তারও,
    মিল ছিল আরও অনেক - গোঁজামিলও বলতে পারো |
    এরই মাঝে একটা অমিল, ভীষণরকম অমিল ছিল
    মাসদুই আগে হঠাৎ লোকটার চাকরি গেল |
    ফলে কী হল জান?

    না, জেন না, জানলে লোকে বলবে কী?
    লোকে খাচ্ছে না ভাবলে গরম ভাতে ঘি
    কী করে চটকাবে আর?
    কে খাবে তোমার খাবার?
    না, জেন না, জানলে লোকে বলবে কী?

    "নাগরিক" আমলের এই তীক্ষ্ণ শ্লেষ, বিরানব্বই-পরবর্তী সুমনে হয়ে গেল অনেক
    সোজা-সাপ্টা, সরল | "তিন-তালের গান"-এ প্রায় একই অনুরণন শুনি অনেক সরাসরি ভঙ্গিতে -

    কেউ যদি বেশি খাও
    খাবার হিসেব নাও
    কেননা অনেক লোক ভাল করে খায় না |

    খাওয়া না-খাওয়ার খেলা
    যদি চলে সারাবেলা
    হঠাৎ কী ঘটে যায়, কিচ্ছু বলা যায় না |

    ** ***

    সুমন বাংলার আবহমান সঙ্গীতধারার উত্তরধিকারী | যে ধারার শুরু নিধুবাবুর গান দিয়ে,
    যখন বাংলার নিজস্ব মান্য নাগরিক সঙ্গীত তৈরির তাগিদে পশ্চিম-ভারতের আধা-ধ্রূপদী টপ্পাকে
    বাংলা কথায় পুরে শুরু করেছিলেন এক নতুন সঙ্গীতধারা | মূলতঃ সেই ধারাই রবীন্দ্রনাথ,
    দ্বিজেন্দ্রলাল, হিমাংশু দত্ত, সলিল চৌধুরীদের সৃজনে গতিপথ বদলাতে বদলাতে বাংলা
    গানের অবয়ব তৈরি করেছে, যাকে আলগাভাবে বাংলা কাব্যসঙ্গীত বলতে পারি | যে অবয়বে
    সুরের দিক থেকে তাদের নিশ্চিত ও দীর্ঘমেয়াদী চিহ্ণ রেখে গেছেন অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, নজরুল,
    অনুপম ঘটক, কমল দাশগুপ্ত, রবীন চট্টোপাধ্যায়, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়, জ্ঞানপ্রকাশ
    ঘোষ, শচীন দেব বর্মন, নচিকেতা ঘোষ, সুধীন দাশগুপ্ত, রাহুল দেব বর্মন প্রমুখরা | আর
    গানের কথায় দেখেছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তুলসী লাহিড়ী, হেমেন্দ্রকুমার রায়, অজয় ভট্টাচার্য, হীরেন বসু, গৌরীপ্রসন্ন,
    পুলক বন্দোপাধ্যায়দের নিজস্ব স্বাক্ষর | সংখ্যায় অনেক কম হলেও এই ধারাতেই অন্য
    স্বাদ এনে দিয়েছিলেন মোহিনী চৌধুরী, প্রেমেন্দ্র মিত্র, বিমলচন্দ্র ঘোষেরা | বা পরে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় |

    সুমনের সাঙ্গীতিক উত্তরাধিকার তো এই-ই | বাংলা কাব্যসঙ্গীতকে যদি একটি ভিন্ন জঁরা
    (genre) ধরি, তবে সুমনের গান সেই জঁরাতেই পড়বে | সুমন নিজে কখনও কখনও তাঁর নিজের
    গানকে নাগরিক লোকসঙ্গীতের ধারায় ফেলেছেন | ধার করতে চেয়েছেন উডি গাথরি, বব ডিলান বা
    পিট সিগারের উত্তরাধিকার | হয়তো খুব ভুল নয় সেই সাঙ্গীতিক ছাপ | অন্ততঃ প্রথম ক'বছর তাঁর
    গান নাগরিক জনতার হাতে হাতে নিশানের মতন ঘুরেছিল |

    এখানে গানের অর্থনীতি নিয়ে কিছু কথা বলা প্রয়োজন | রামপ্রসাদ সেন থেকে রামনিধি গুপ্ত হয়ে
    রবীন্দ্র, দ্বিজেন্দ্র, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত - কেউই পেশাদার সঙ্গীতকার ছিলেন না | সকলেই গান
    লিখেছেন মনের আনন্দে | এরপরে গ্রামোফোন ও সবাক চলচ্চিত্রের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেল
    গানের চাহিদার, প্রয়োজন হল নিয়মিত গানের যোগানের | তৈরি হল সঙ্গীত অর্থনীতির | শুধু অপেশাদার
    সঙ্গীতজ্ঞদের ওপরে ভরসা করে ইন্ডাস্ট্রি চলবে না | ফলে তৈরি হল পেশাদার সঙ্গীতজ্ঞের, যারা গান
    তৈরি করে বেচে জীবনধারণ করবেন | নজরুল এ পথের পথিকৃৎ | এলেন তুলসী লাহিড়ি, হেমেন্দ্রকুমার
    রায়রা | এরই সঙ্গে গান হয়ে গেল বিভাজিত শিল্প | যিনি গান লিখছেন, তিনিই গানে সুর করছেন না |
    সুর করছেন অন্য একজন | আবার গাইবেন হয়তো তৃতীয় কোন ব্যক্তি | ফলে গান আন্তরিক থেকে হয়ে
    পড়ল ফরমায়েসি | সৃষ্টির গুণগত মানরক্ষা করার আর সেই তাগিদ রইল না |

    সুতরাং, রবীন্দ্রনাথ কি লালন শাহের সমগ্র সৃষ্টি থেকে যেরকমভাবে তাঁদের জীবনবোধ বেরিয়ে আসে,
    পরবর্তীকালের কোন গীতরচয়িতার সৃষ্টিকেই আর সেরকম অখন্ডভাবে দেখা সম্ভব হল না |

    সঙ্গীতের বাজার পেশাদার হয়ে যাওয়ায় অনেক ধুরন্ধর সঙ্গীতজ্ঞ গানকে পেশা হিসেবে নিতে পারলেন |
    গানের বাজারে নতুন প্রতিভা আসার পথ সুগম হয়ে গেল | আবার অন্যদিকে সঙ্গীতসৃষ্টি বাজার-চালিত
    হয়ে যাবার দরুণ সঙ্গীত রচয়িতারা একে অন্যের সঙ্গে এক
    ধরণের প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়লেন | অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রতিযোগিতায় লাভবান হল সঙ্গীত | বাংলা
    সঙ্গীত পুষ্ট হল নতুন শিল্পীর গানে, নতুন দেশি-বিদেশী এলিমেন্ট এল গানে, নতুন নতুন বাদ্যযন্ত্র, শব্দ ও
    টেকনোলজির আমদানী করলেন সঙ্গীতকাররা | সব মিলিয়ে বেশ হৈ-হৈ রৈ-রৈ ব্যাপার |

    সুমন অপেশাদারভাবে আশির দশকে শুরু করেছিলেন 'নাগরিক' গায়নদল তৈরি করে | দাঁড়ায়নি | পরে আশির
    শেষে, নব্বইয়ের প্রথমে বাজারে নাবলেন আটঘাট বেঁধে | হতে চাইলেন পেশাদার সঙ্গীতজ্ঞ | কিন্তু ততদিনে
    বাংলা ছবিতে গানের বাজার একেবারে পড়তির দিকে এবং সে বাজারে গান তৈরি করার সাধ বা সাধ্য
    সুমনের নেই | শুধু ক্যাসেট বিক্রি করে সংসার চলবে না | প্রয়োজন লাইভ অনুষ্ঠানের | কিন্তু সুমনের
    গানের যে শ্রোতা তার একেবারেই নগর কলকাতা-কেন্দ্রিক | সুমনের পক্ষে যাত্রাদলের মতন গ্রামে গ্রামে
    কল-শো জুটিয়ে ঘোরা সম্ভব নয়, কারণ সেখানে তাঁর গানের চাহিদা নেই |

    এর একটা আনইন্টেন্ডেড কন্সিকোয়েন্স দেখা গেল | সুমনকে ফরমায়েশি গান তৈরি করতে হল না | সেই
    হিসেবে তিনি একেবারে রবীন্দ্র-দ্বিজেন্দ্র-অতুল-রজনীর সমসাময়িক | কিছু ছুটকো-ছাটকা ছবির
    গান-টান বাদ দিলে, সুমনের সৃষ্টিকে প্রায় অখন্ডভাবেই দেখা যায় | আর ফরমায়েশি গান তৈরি করতে
    হয়নি বলে নিজের গানের একটা ন্যুনতম মান ধরে রাখাও সম্ভব হয়েছে, যে সুযোগ নজরুল থেকে সলিল
    থেকে গৌরিপ্রসন্নরা পাননি |

    এরপর আসব সুমনের গানের কথায় |
  • Rit | 213.110.243.21 | ২৫ আগস্ট ২০১২ ১৪:৪২568915
  • বাহ।
  • ডিডি | 125.242.232.218 | ২৫ আগস্ট ২০১২ ১৫:১৩569026
  • অহো অহো অহো। এই ই না হলে ন্যাড়া সাহেব!!!

    এই গুচ'র পাড়ায় এতো চমোৎকার সব সংগীত বোদ্ধা রয়েছেন যে আলোচোনা বা লেখার মান বাংলায় সর্বোত্তোম হওয়ারই কথা। কিন্তু কি করে জানি না,(না লিখেও পারি না) একেবারে ভক্তিরসে ভেজা কাঁথার মতন লেখাও চলে আসে।

    সে যাহোক। এই ধরনের লেখা গুচর সম্পদ। হোক হোক।
  • siki | 96.98.43.85 | ২৫ আগস্ট ২০১২ ১৫:৫৮569107
  • অপেক্ষায় আছি ...
  • Blank | 69.93.210.77 | ২৫ আগস্ট ২০১২ ২২:০৬569118
  • খুব ভাল লাগছে পড়তে। পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি ন্যাড়া দা।
  • সুকি | 71.6.243.27 | ২৬ আগস্ট ২০১২ ১১:৫৩569129
  • বাঃ, দারুণ লেখা - আরো পড়ার আশায় রইলাম - বিশেষ আগ্রহ থাকল গানের কথা নিয়ে আলোচনা
  • siki | 96.98.43.85 | ২৬ আগস্ট ২০১২ ২২:১১569140
  • পরের লেখা কই?
  • aranya | 78.38.243.161 | ২৬ আগস্ট ২০১২ ২২:৫৩569151
  • যাক, কুড়ি কুড়ি বছর লেখাটা একটা কাজের কাজ করেছে, ন্যাড়াকে মাঠে নামিয়েছে :-)

    ভাল লাগছে। গানের কথা-র অপেক্ষায়।

    রবীন্দ্রোত্তর যুগে কোয়ালিটি/কোয়ান্টিটির কম্বিতে সত্যিই কাদের লিরিসিস্ট হিসেবে ন্যাড়া উল্লেখযোগ্য মনে করে, জানতে চাই।
  • DB | 125.250.99.118 | ২৬ আগস্ট ২০১২ ২৩:১৯569162
  • বাংলা গানের ধারায় অর্থনীতির প্রসঙ্গটা তোলা খুবই যথাযথ হয়েছে।সত্তরের দশক থেকে আরম্ভ করে পুরোদস্তুর সুমনের আবির্ভাব অবধি বাংলা গান কথা আর সুর দুই দিকে থেকেই একটা বৈচিত্রহীনতায় আক্রান্ত হয়েছিল।তার পিছনের কারণটাও মনে হয় ঐ অর্থনৈতিক ফ্যাকটর। গান জিনিষটা রেকর্ড কোম্প্যানিগুলোর সৌজন্যে একটা পণ্য হয়ে উঠেছিল ।ম্যানুফ্যাক্চারিং এর ক্ষেত্রে বৈচিত্র বা variety র চেয়ে Standardisation ই অগ্রধিকার পায়।সেই তত্বই বোধহয় কাজ করেছিল বাংলা গানের ক্ষেত্রে।
    সুমনও গানের অর্থনীতির বাইরের লোক নন।তাই আমারো কেমন যেন মনে হচ্ছে একটু একটু করে তিনিও এক ধরণের standard format এ অটকে পড়ছেন না তো? কে জানে। সময়ই জবাব দেবে
  • Ishan | 60.82.180.165 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ০৬:৩৭568805
  • এইখানে একটা কথা না লিখে পারছি না। ইদানিং সুমনকে আবহমান বাংলা গানের ধারার উত্তরাধিকারী হিসেবে দেখা শুরু হয়েছে। ন্যাড়াদা যেমন লিখেছেন। এমনকি সুমনও অন্ততঃ গত বছরদশেক, কথাবার্তায় সেরকমই বলে থাকেন। ভুল বললাম, ইদানিং না, "তোমাকে চাই" এর আমল থেকেই সুমনের কথাবার্তায় সেরকম ইঙ্গিত ছিল। মিডিয়া যখন এই অন্য ধারার গানকে "জীবনমুখী" লেবেল দিচ্ছে, কে কে "জীবনমুখী" গান করছেন, তার লিস্টি বানাচ্ছে, পাল্টায় হৈমন্তী শুক্লা বলছেন, "আমরা কি তাহলে মরণমুখী গান গাই?" তখনও, সেই স্রোতের মধ্যেও সুমন, শুধু সুমনই খুব স্পষ্ট করে করে বলছেন, নতুন কোনো লেবেল মারার কিছু নেই, আমি বাংলা আধুনিক গান গাই। নচিকেতা চক্রবর্তী তাঁর একটি অ্যালবামে "জীবনমুখী" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তিনি তাঁর গানকে জীবনমুখী মনে করতেই পারেন, কিন্তু বিভিন্ন ফর্মে বিভিন্ন রকম "আধুনিক" গান যাঁরা গাইছেন, সকলেই এই একটা তকমায় গেঁথে ফেলা যায়না। আমি বাংলা আধুনিক গান গাই। ইত্যাদি।

    মানে, বাংলা গানের ধারায়, সুমনকে দেখা হচ্ছে বাংলা গানের আবহমান স্রোতের অংশ হিসেবে, বিবর্তনের অংশ হিসেবে, কোনো "ছেদ" হিসেবে নয়। বাকি সকলেই, এমনকি সুমনও, নিজেকে সেই একই ভাবে দেখছেন। ছেদ নয়, ধারাবাহিকতা। এই হল সেই দেখার ভঙ্গী।

    কিন্তু বলা বাহুল্য, আমরা যারা ১৯৮৮-৮৯-৯০ বা কাছাকাছি সময়ে সুমনকে, বিশেষ করে মঞ্চের সুমনকে দেখি, শুনি, চমকে যাই, ভালোবাসি, তারা সুমনের মধ্যে ভারতীয়ত্ব কিছু খুঁজে পাইনি। ভঙ্গীতে পাইনি। যন্ত্রানুষঙ্গে পাইনি। সুরে, হ্যাঁ, সুরেও পাইনি। সুমনের যে সুর তা একেবারে অভারতীয় কিছু না, কিন্তু ওই সুর ট্র্যাডিশনাল বাংলা গানে দিলে, তাকে স্রোতারা ছড়ার গান হিসেবেই দেখতেন। আর সিরিয়াস স্রোতাদের কানে, একঘেয়ে তো লাগতই। "এটা আবার কী সুর হয়েছে?" এই কথা আমি খুব সিরিয়াস সঙ্গীতবোদ্ধাদের বহুবার বলতে শুনেছি। বরং পশ্চিমী গান, বিশেষ করে ডিলান-কোহেন শোনা স্রোতারা সুরের এই চলনের সঙ্গে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছিলেন, -- এও চোখে দেখা ঘটনা।

    আর সুর-টুর যদি ছেড়েও দেন, তাহলে বাংলা গানের লিরিকে এই কান্ড আমরা, বাংলা গানের তদানীন্তন স্রোতারা কস্মিন কালেও শুনি। বাংলা গানের কথা বলতে আমরা সত্যিই বুঝতাম এমন লিরিক, যেখানে ফুল, চাঁদ, তারা ও পাখি নিয়ে লিখতে হয়। বা অন্তরের অন্তরতমকে আকুতি জানাতে হয়। এর বাইরে যা আছে, তা খানিক গণসঙ্গীত, স্লোগান শুনিয়ে কান পচিয়ে দিল। আর বাদবাকি কলকাতার রসগোল্লা। সিনেমায় যা দেখি, যা লিখব ভাবি, বা পড়ি, বাংলা গানে কোথাও তার কোনো ছাপ নেই। সিধে বাংলায় আমরা জানতাম, বাংলা গানে সমসাময়িকতার কোনো জায়গা নেই। বাংলা গানের মৃণাল সেন হয়না, সন্দীপন চাটুজ্জেও হয়না। শুধু ফুল, তারা, এ অমার গুরুদক্ষিণা, আর সফদর হাসমি লাল সেলাম হয়। আর, হয়, শ্যামা শাপমোচনের অশ্রোমোচন তো হয়ই। বছরের পর বছর পাড়ায় পাড়ায় বোদ্ধারা রবীন্দ্রনাথের উপর নানাবিধ স্ক্রিপ্ট লিখে রবীন্দ্র গীতি আলেখ্য করে চলেন। সেখানে মেয়েরা নাচে। শান্তিকেতনে ওরে গৃবাসী হয়। এইসব।

    "হয়ে ওঠা গান' এ সুমন এটাকে মান্যতাও দিয়েছেন। হাতের কাছে নেই বলে কোট করতে পারলাম না। কিন্তু সুমনের বক্তব্য মোটামুটি এই, যে, সত্তরের দশকে যখন লাশ পড়ছে টপাটপ, মুড়িমুড়কির মতো গুলি চলছে, জরুরি অবস্থায় যখন মার্চ-পাস্ট করছে সঞ্জয় বাহিনী, তখন বা তার পরে, এমনকি শঙ্খ ঘোষও চুপচাপ লিখছেন, কঠিন বিকল্পের কোনো পরিশ্রম নেই, বা তার আগে হাংরিরা স্রেফ লেখার কারণেই জেলে যাচ্ছেন, বা যাব যাব করছেন, তখন, বাংলা গান একমনে মধ্য তেতালায় "যাদুভরি পিয়া কি নজরিয়া" গেয়ে চলেছে। বাংলা গান পড়ে আছে সমসাময়িকতাহীন সুদূর অতীতে। মান্ধাতার জমানায়।

    সুমন, এই মান্ধাতার আমল থেকে পপুলার বাংলা লিরিককে তুলে এনেছিলেন। এটা ধারাবাহিকতা নয়, এটা বাংলা গানের ছেদ। আমরা যারা সে সময় সুমন শুনেছি, একেক খানা কলি শুনে বুকে আমূল ছুরি গেঁথে গেছে, তারা কিন্তু ধারাবাহিকতার জন্য শুনিনি। এই ছেদ এর জন্যই শুনেছি। এই ছেদ না থাকলে সুমন সুমন হতেন না। সে তিনি স্বীকার করুন বা না করুন।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ০৬:৩৯568816
  • শ্রোতারা সব স্রোতা হয়ে গেছে। গানের স্রোতের কথা ভাবতে গিয়েই মনে হয়। :)
  • aranya | 78.38.243.161 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ০৬:৫১568827
  • সত্যি কথাটা বলার জন্য ঈশানকে ধন্যবাদ।
  • Ishan | 60.82.180.165 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ০৮:৩৫568838
  • আমি সালে সম্ভবতঃ একটু গোলমাল করেছি। ৮৮-৮৯-৯০ লিখেছি। কিন্তু সুমন কলকাতা উৎসবে কবে গেয়েছিলেন, সেটা ফ্র্যাঙ্কলি, মনে নেই। ওটা একটু পরেও হতে পারে। উৎসবটার নাম কলকাতা উৎসবই ছিল কিনা, সেটা নিয়েও, এই লেখার সময়েই একটু কনফিউশন দেখা দিচ্ছে। :)
  • db | 125.250.66.30 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ০৯:২৭568849
  • সুমনের গানের প্রথম সঙ্কলন তোমাকে চাই যখন প্রথম শুনি তখন সত্যই চমকে উঠেছিলাম।অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম যে অনেক শব্দ বা বাক্য ,যেগুলিকে তার আগে অবধি ভেবে সুরের সঙ্গে মিলে গিয়ে একটা সার্থক দ্রবন তৈরী করতে পারে বলে ভাবতেই পারতামনা,সেই সব শব্দ কে অবলীলায় সুমন গানের আঙিনায় টেনে এনেছেন।"পেটকাটি চাঁদিয়াল মোম বাতি বগ্গা" বা "গড়িয়া হাটার মোড়" জাতীয় আপাত অকাব্যিক দৈনন্দিনতার ধুলোবালি মাখান শব্দগুলিও যে গানে সুরের সঙ্গে ব্যবহার করা যায় তা অন্তত আমার কাছে অক্ল্পনীয় ছিল।প্রচলিত ভারতীয় সংগীতের সুর এই শব্দগুলিকে বহন করতে অক্ষম সে কথা বোধহয় সুমন বুঝেছিলেন তাই পশ্চিমের দিকে তাকিয়েছিলেন।যদিও সে সুরে কতটা সাংগীতিক বেদনা অনুভব করতে পারি তা নিয়ে সংশয় আজও ঘোচেনি আমার তবু একটা কথা স্বীকার করতেই হবে যে কোন কোন শব্দ কেবল উচ্চারণের কৌশলে সুরের মতই বেজে উঠতে পারে যেমনটা হয়েছে "উচ্চ্কন্ঠে "লেনিন" শব্দটির ক্ষেত্রে।
    তবে, লিরিকের আয়তনের বিপুলত্ব সুরকে অনেকটাই কোনঠাসা করে ফেলেছে অনেক গানে - তা নিয়েও বোধ হয় তর্কের অবকাশ নেই।"সুমনচাটুজ্জের একঘেয়ে সুর" এ স্বীকারোক্তি সুমন নিজেই তার গানে করেছেন।তাই সুমনের গানকে সংগীতের কোন শ্রেনীতে রাখব তার কূল খুঁজে পাইনা।মাঝে মাঝে মনে হয় এ গুলিকে হয়ত কথকতার পর্যায়ভুক্ত করাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
    অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। প্রতিদিন সূর্য ওঠে তোমায় দেখবে বলে - ভারতীয় সংগীতের রীতিতেই রচিত পুরোদোস্তুর সংগীত, "চেনা দুঃখ চেনা সুখ" এ সুরে নাটকীয়তা শ্রবণকে আকর্ষন করবেই এও বিশ্দ্ধু সংগীত বলেই আমার মনে হয়।
  • নচিভক্ত | 69.160.210.2 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ১২:১০568860
  • সুমনের পুরো গান একটাই। কথা সুরের সার্থক যুগলবন্দীতে। সারারাত জ্বলেছে নিবিড়।
  • ন্যাড়া | 132.178.221.223 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ১৯:৩৯568871
  • বিরানব্বইতে যখন সুমনের 'তোমাকে চাই' প্রকাশিত হল, তখন বাংলা গানের মাঠ মোটামুটি ফাঁকা |
    পুরোনদের চর্বিত-চর্বন আর নইলে দ্বিতীয়-তৃতীয় শ্রেণীর সঙ্গীত রচয়িতারা মাঠের দখল নিয়েছেন | এমন একটা
    কথা চলে যে 'তোমাকে চাই'-এর আগে যদি নচিকেতার প্রথম অ্যালবাম 'এই বেশ ভাল আছি' প্রকাশিত হত
    তাহলে কী হত | আমরা সেসব ফাটকার মধ্যে না গিয়েও বলতে পারি যে সুমন ফাঁকা মাঠের সুযোগ পেলেও
    মাঠে পুরোন প্লেয়াররা তাদের সৃষ্টিক্ষমতার চরমে থাকলেও সুমন নতুনত্বের স্বাদ এনে দিতে পারতেন |

    সুমনের গলা ভরাট, প্রায় ব্যারিটোন | স্পষ্ট উচ্চারণ | সুরে থাকে, যদিও স্পর্শস্বরের ব্যবহার খুব স্পষ্ট নয় | বাঙালি
    আম-শ্রোতা যেধরণের টিম্বার, উচ্চারণ, স্বরপ্রয়োগ পছন্দ করে এসেছেন পঙ্কজ মল্লিক, দেবব্রত বিশ্বাস, ধীরেন্দ্রচন্দ্র
    মিত্রদের থেকে - সুমনের গলার টিম্বার সেই ধরণের |

    সুমনের গানে বাঙালি শ্রোতার প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাওয়া ? প্রথম গান "তোমাকে চাই"-তে স্পষ্ট
    কামনা বাংলা গানে নতুন উচ্চারণ | যে কামনার উচ্চারণ বাংলা কবিতায় শোনা গেছে পঞ্চাশের দশকে অরুণ সরকারের
    কবিতায় -

    তোমাকে চাই আমি তোমাকে চাই
    তোমাকে ছাড়া নেই শান্তি নেই
    রক্তকিংশুকে জ্বালিয়ে দাও
    আমার বৈশাখী রাত্রিদিন |

    সুমন তাঁর গানে মধ্যবিত্ত বাঙালির শহুরে চিত্তপট ও চিত্রপট ধরলেন এক সিনেম্যাটিক টেকনিক ব্যবহার করে | সিনেমায়
    মন্তাজের ব্যবহার বহুদিন ধরে হয়ে এসেছেন | খন্ড কিছু চিত্র - কখনও বিক্ষিপ্তও - মুন্সিয়ানার সঙ্গে পরপর সাজিয়ে এক পূর্ণ
    ছবি বা আইডিয়া তৈরি করা মন্তাজের কাজ | সুমন সেই টেকনিক ব্যবহার করলেন এই গানে | পরে আরও অনেক গানেই
    সুমন এই টেকনিকের ব্যবহার করবে, বিশেষতঃ কলকাতা বিষয়ক গানগুলোতে -

    ১ |

    কবেকার কলকাতা শহরের পথে
    পুরোন-নতুন মুখ ঘরে ইমারতে |
    অগুন্তি মানুষের ক্লান্ত মিছিলে
    অচেনা ছুটির ছোঁয়া তুমি এনে দিলে ||

    ২ |

    বেদম ট্র্যাফিক জ্যাম
    ঠান্ডা সালামি-হ্যাম
    চকলেট ক্যাডবেরি
    মাদার ডেয়ারি -

    ৩ |

    তোমাকে দেখছি কফি হাউজের ভিড়ে
    তোমাকে দেখছি খুঁজছ পুরোন বই
    পুরোন কিংবা নতুন মলাটে আমি
    আসলে কিন্তু তোমাকেই খুঁজবই |

    সেই সঙ্গে সুমন গানে ধরলেন মধ্যবিত্ত শিক্ষিত বাঙালির ধারণায় যা কুইন্টেসেনশিয়াল বাঙালিয়ানা আর তার নস্ট্যালজিয়ার জায়গাটা | যেমন,

    শীর্ষেন্দুর কোন নতুন নভেলে
    হঠাৎ পড়তে-বসা আবোল-তাবোলে
    অবোধ্য কবিতায়, ঠুংরি-খেয়ালে
    শ্লোগানে শ্লোগানে ঢাকা দেয়ালে দেয়ালে -
    সলিল চৌধুরীর ফেলে আসা গানে
    চৌরাসিয়ার বাঁশি, মুখরিত তানে
    ভুলে-যাওয়া হিমাংশু দত্তর সুরে
    সেই কবেকার অনুরোধের আসরে -

    মধ্যবিত্ত, শহুরে বাঙালির মনে হল - আরে, এ তো একেবারে আমাদের মতন | এই সংযোগটা খুব জরুরি হয়ে উঠেছিল | এইখানেই সুমন ঢুকে
    পড়লেন মধ্যবিত্তর হেঁসেলে | এ একেবারে শহুরে, কলেজে-পড়া মধ্যবিত্তর হেঁসেল | অথচ এই বাঙালিয়ানাকে সুমন তাঁর পরিমিতিবোধ দিয়ে
    একটা গন্ডিতে আটকে রাখলেন, কখনই
    "বাঙালি জাগো" ধরণের প্রাদেশিকতায় ঠেলে নিয়ে গেলেন না | ওই অ্যালবামেরই অন্য গান "গড়িয়াহাটার মোড়"-এর আগের
    পাঠ ও গায়নে এই কথাগুলো ছিল | "তোমাকে চাই" প্রকাশিত হবার আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই কথাগুলো তিনি গাইতেনও -

    টেলিভিশনের যাঁতা
    পিষে ফেলে কলকাতা
    দূর্দর্শনাচার, হিন্দি কথা
    নয় আমাদের জন্য |

    আরেক জায়গায় ছিল -

    জ্ঞান দিয়ে গান গাওয়া
    অনুপ জলোটা
    নয় আমাদের জন্য |

    কিন্তু যখন গানটা ক্যাসেট হয়ে বেরোল, এই পংক্তিগুলো সুমন বাদ দিয়ে দিলেন | অর্থাৎ সুমন নিজেকে কোনরকম মার্জিনে নিয়ে যেতে
    চাইলেন না | ব্যক্তিগত জীবনে সুমনের বাংলা ও গান নিয়ে প্রত্যয় ও আবেগ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই | তা নইলে কেউ মধ্যবয়সে তৈরি
    জীবিকা ছেড়ে স্রেফ বাংলা গান গাইবার জন্যে শূণ্য থেকে শুরু করতে পারে না | কিন্তু সেই আবেগের ফান্ডামেন্টালিজমকে নিজের
    শৈল্পিক বোধ ও এস্থেটিক্স দিয়ে গন্ডি কেটে রাখলেন | কুইন্টেসেনশিয়াল বাঙালিয়ানাকে ধরতে চাইলে নস্ট্যালজিয়া, কথ্য ও ইডিওমেটিক
    ভাষা দিয়ে | মোটামুটি কুড়ি-থেকে-পঞ্চাশ - এই বয়েসটাকে ধরলেন | যারা জানে পেটকাটি চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গা - এগুলো কী
    জিনিস; যারা হিমাংশু দত্তর নাম জানে, শীর্ষেন্দু পড়ে | নিজের শ্রোতাকুলের বাউন্ডারি কন্ডিশন ঠিক করে নিলেন এইভাবে | আর এখানেই
    স্থির হয়ে গেল বাংলা গানে জনাদৃত গায়কদের তালিকায় হেমন্ত, মান্না, শ্যামল প্রমুখদের সঙ্গে সুমন কখনই ঠাঁই পাবেন না | গ্রামে কী গঞ্জশহরে
    পুজো প্যান্ডেলে তাঁর গান বাজবে না |
  • aka | 178.26.215.13 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২০:৩২568882
  • ভালো লাগছে। বিশেষত শেষ প্যারাটা এত সঠিক অ্যানালিসিস আর ঈশানের কথাও একদম ঠিক যারা সুমনের গান শুনেছিল ছেদ হিসেবেই শুনেছিল।
  • তাতিন | 127.197.72.122 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২১:১৫568893
  • শুধু কুড়ি থেকে পঞ্চাশ বললে তো খেলবোনা। আমাদের সদ্য টিনবয়েসকেও ধরেছিলেন, জাপটেই ধরেছিলেন, সে কথাও লিখতে হবে। মফস্বল ছেড়ে একটু একটু করে কলকাতা দেখা দিতে শুরু করে সুমনের লিরিক ধ'রেই- 'শহরে আসছে ওই তো সোনারপুর, আসলে কিন্তু তোমার ট্রেনেই চড়ে'।
    এর পাশাপাশি অমিতাভ দু হপ্তা আগে আনন্দবাজারে আমির খঁ সাহেবকে নিয়ে যা লিখেছিল, আমির খাঁ, বড়ে গুলাম, আখতারি বা ডিলান, সিগার, সাইমন, বিঠোভেনকেও ওই ট্রেনের জানলা থেকে দেখতে পাই, হাইস্কুলের দলবল।

    লেখাটা অসামান্য হচ্ছে-
  • একক | 24.99.74.34 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২১:২৭568904
  • ছেদের জন্যে
    আর
    ছেদ হিসেবে

    দুটো এক নাকি ! :( :ও
  • Tim | 12.133.1.253 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২১:৪১568916
  • একদম। আমি ক্লাস এইট কি নাইনে তোমাকে চাই শুনি, এবং মামুর ভাষায় এক শোনাতেই পতন ও মূর্ছা। বলা বাহুল্য, বাংলা ভাষায় অমন গান লেখা ও গাওয়া যায়, তার আগে আমি জানতাম না।
    সুমনের নিজের সাক্ষাৎকারে কিন্তু ধারাবাহিকতা আর ছেদ দুটোই এসেছে ঘুরে ফিরে। আমার সলিল বা অনুরূপ মঞ্চে বলছেন একইসঙ্গে অনেক অনেক গানের মিলেমিশে সাঙ্গীতিক বোধ তৈরীর কথা। আবার রেডিওর পুরোনো সাক্ষাৎকারে বলছেন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোররাতে লাশ হয়ে ফেরে যখন মানুষ, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে কিকরে রবীন্দ্র-নজরুল গাইবো?
    আমার মনে হয় এই দ্বন্দ্বটাও সুমনের গানের অঙ্গ।

    ন্যাড়াদার লেখা আগেও যতবার পড়েছি মুগ্ধতাই বেড়েছে শুধু। এবারও তার ব্যতিক্রম হলোনা।
  • TIm | 12.133.1.253 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২১:৪২568927
  • যাব্বাবা একক এসে ঢুকে গেছে মাঝে। আমার পোস্টটা তাতিনের পরেই পড়তে হবে।
  • r2h | 208.175.62.19 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২১:৫৫568938
  • হুঁ, আমারও ক্লাস নাইন।
    প্রথম শুনেছিলাম মন খারাপ করা বিকেল। ভুঁড়িহীন রোগাপটকা ছিলাম, ব্লাডপ্রেশার না সুগার কি একটা খুব কমে যাওয়াতে কিছুদিন বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। বেরুনোর সুযোগ পেয়ে টহল দিতে গিয়ে এক বন্ধুর বাড়ি পোঁছলে সে বললো সুমন চট্টোপাধ্যায় নামে একজন নতুন একটা বাংলা গানের ক্যাসেট বেরে করেছে, শুনবি? বিশাল হাসি ঠাট্টা খৌয়া খৌয়া করেছিলাম বাংলা গান, নতুন হ্যা হ্যা, কি যে বলে। তো সে কথা না বাড়িয়ে মন খারাপ করা বিকেল চালিয়ে দিল। আর তারপর আগের ঠাট্টা মস্করার প্রতিশোধ হিসেবে আর কিছুই শুনতে দিল না। পরদিন চেয়ে চিন্তে পয়সা কড়ি জোগাড় করে সারা শহর(শহরে অবশ্য ম্যাক্স গোটা দশেক ক্যাসেটের দোকান ছিল) খুঁজে পাওয়া গেল তোমাকে চাই।

    ন্যাড়াদা, ইশান্দাকে ধন্যবাদ, এই লেখাগুলোর জন্যে, চলতে থাকুক।
  • Blank | 180.153.65.102 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২২:০৪568949
  • তখন আমার ক্লাশ ফোর বা সদ্য ফাইভ। আঁকার ইস্কুলে ছবি আঁকার ফাঁকে শোনা প্রথম সুমন। প্রথম বার গান শুনে অমন চমকে যাওয়া। বোঝা না বোঝার মাঝখানে অন্যরকম গান, অন্যরকম করে গাইছে কেউ।
    ন্যাড়াদার লেখা টা চলুক।
  • তাতিন | 127.197.72.122 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২২:১৫568960
  • আমার সুমনের গান নয়ে প্রথম শোনা দুটো আলোচনা মনে আছে-
    --
    সৌরভ দালাল আমার সঙ্গে রিক্সায় যেতঃ
    সৌরভ- আমাদের বাড়িওলার ছেলে কার একটা ক্যাসেট কিনে এনেছে, সে শুধু 'দশফুট বাই দশফুট, দশফুট বাই দশফুট' করে গেয়ে যায়
    আমি- লাইনগুলো কী? দশফুট বাই দশফুট একটা ঘর বানাবো আমি, তার মধ্যে থাকবে আমার মত গায়ক গাধারা-
    --সমবেত হাস্য

    বড়মেসো একদিন বলল-
    -পাগল। একটা ক্যাসেট দিল একজন, গান হচ্ছে -পাগোওওওল করে। নিয়ে যা- তোদের মজা লাগতে পারে।
    - হ্যাঁ দাও, রেকর্ড করা যাবে তো এটায়, শুনে কিছু রেকর্ড করে নেব।

    শুনতে নিয়ে এসে শুনি যুগসন্ধির শব্দ!
  • siki | 96.98.43.85 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২২:৪০568971
  • আমার তখন ক্লাস ইলেভেন। ছকবাজি করি, বা করার চেষ্টা করি বাংলা কোচিং বা কেমিস্ট্রি কোচিংয়ে।

    ব্যাগের ওপর হলুদ ফেব্রিক কালারে পেন্ট করেছিলাম "তোমাকে চাই", ঠিক ক্যাসেটের ইনলে কভারে যে রকম স্টাইলে লেখা, সেইভাবে।

    দুর্দান্ত হচ্ছে। চলুক।
  • | 127.194.104.210 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২২:৪২568982
  • ন্যাড়া দার লেখা টা খুব ভালো লাগলো।
  • Rit | 213.110.243.21 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২৩:১০568993
  • আমি প্রথম সুমন শুনি ১৯৯৭ এ। তখন ক্লাস সেভেন। সবাই যেমন বললেন সুমন যেহেতু গ্রাম বাংলার জন্য লেখেন নি, তাই দূর বাঁকুড়ার গ্রাম বাংলায় সুমন শোনার সৌভাগ্য হয় নি। আমি শুনেছিলাম আন্দুলে মাসি বাড়ি এসে। ঐ তারপর যা হয়, পতন ও মূর্ছা। এখনও সে মূর্ছা ভাঙেনি।

    ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল ছলাৎ ছল
    ঘাটের কাছে গল্প করে নদীর জল

    গঙ্গা নিয়ে লেখা হলেও এই নদী কি ছোটবেলায় আমি দেখিনি? শিলাবতীর পাথরের সাথে জলের অনেক কথা বলার সাক্ষী ছোট্ট আমি। আমার প্রিয় বন্ধু ঐ নদীকে আমি ভুলব কি করে?

    বা

    সেই পথে একা একা হাঁটতেন বিভুতিভূষন।

    ঐ পথও আমার খুব চেনা। গ্রামের জঙ্গলে বসে পথের পাঁচালী বা আরন্যক তো আমি পড়েছি ছোটবেলায়।

    বা

    বাঁশুরিয়া বাজাও বাঁশী দেখি না তোমায়
    গেঁয়ো সুর ভেসে বেড়ায় শহুরে হাওয়ায়।
    এ শহরে এসেছ তুমি কবে কোন রাজ্য থেকে
    তোমাদের দেশে বুঝি সব মানুষই বাঁশী শেখে।
    আমাদের স্কুল কলেজে শেখে লোকে লেখাপড়া
    প্রানে গান নাই মিছে তাই রবি ঠাকুর মূর্তি গড়া।

    গ্রামের মাঠে রাখালের বাঁশী শোনার অভিজ্ঞতা আমার আছে। তখনো গ্রামে টিভি আসে নি। রেডিও ছিল, কিন্তু শরতের সোনালী বিকেলে রাখালের বাঁশীর বিশুদ্ধতার কাছে রেডিওর গান ম্লান হয়ে হয়ে যেত।

    যে গানটা আমাকে সব চেয়ে ছুঁয়ে গেছ্ল সেটা কিন্তু জাতিস্মর।

    অমরত্বের প্রত্যাশা নেই নেই কোনও দাবী দাওয়া
    এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকেই পাওয়া।

    ধন্যবাদ সুমন। সর্বকালের ইয়েদের মতে সর্বকালের সেরা সুরকার, গীতিকারদের র‌্যাঙ্কিং যে ইয়েরা করতে চাক করুক গে যাক। আমি বসে বসে বরং জাতিস্মর শুনি।
  • pi | 82.83.74.139 | ২৭ আগস্ট ২০১২ ২৩:৫০569004
  • মফস্বলে সুমন পৌঁছাতে পারেন নি , একথা মনে হয়নি।
  • hu | 22.34.246.72 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ০০:০৮569015
  • এটা কিন্তু অনেকটাই সত্যি। আমাদের মফস্বল শহরে নচিকেতা চক্রবর্তী যেমন তোলপাড় ফেলে দিয়েছিলেন তেমন উন্মাদনা সুমনকে নিয়ে দেখি নি। আমার নিজের ক্যাসেট প্লেয়ার ছিল না। পাড়ার প্যান্ডেলে শুনে শুনে নীলাঞ্জনা বা যখন সময় থমকে দাঁড়ায় সে সময় মুখস্থ ছিল। সুমনের গান প্রথম সে ভাবে শুনি কলকাতায় এসে। তাও সুমনের গলায় নয়। টুয়েলভের ফেয়ারওয়েলে অমৃতাদি গাইল - এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু। মনে হল বাপ রে! এমন গানও হয়!
  • সিকি | 96.98.43.85 | ২৮ আগস্ট ২০১২ ০০:১১569027
  • আমাদের মফস্বলে তো সুমন দিব্য সাড়া ফেলেছিলেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন