এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • আঠের বছর - মনে হয় এই তো সেদিন

    shrabani
    অন্যান্য | ১৬ জানুয়ারি ২০১২ | ১০৭৫২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kd | 59.93.246.233 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:১৯514868
  • প্রতি আপকামিং সিরিজগুলোয় শ্রাবনীর লেখা একটা করে চটি চাই, চাই, চাই।

    ভাবছি, সুমেরুর ক্যাম্পেন স্লোগান কী হবে!
  • ta | 203.88.22.147 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৩:৪৪514869
  • কেডি বাবু তফাত তো সর্বত্রই বিদ্‌য়্‌মান যেমন ধরুন আপনি বাপ তুলে কথা বললে কুনো দোষ নাই আবার কেউ রণজিত মল্লিকের মমতভযন নিয়ে বলেছিল বলে আপনি তার ডবল বাপান্ত করে ছেড়েছিলেন ! আজেই কারু বাপ তোলা বা বন্ধু তোলা টা ছারুন না , যাকে পোশ্নো করা তাকেই উত্তর দেওয়ার সুযোগ দিন
  • kd | 59.93.201.12 | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২৩:১৮514870
  • তা, আমি আজ পর্যন্ত এখানে কাউকে ""রণজিত মল্লিক''এর মমতভযন নিয়ে বলতে শুনিনি, তাই আমি তার বাপান্ত কি করে করবো বুঝিনা। **
    তবে সত্যিই যদি কেউ ওর নামে মিথ্যে কিছু বলতো, বাপান্ত করতুম কারণ ""রণজিত মল্লিক'' আমার ছোটবেলাকার বন্ধু।

    কিন্তু আসল ব্যাপারটাই তো কনফিউজিং। আমি যদি এখানে কারুর বাপ তুলে থাকি সেটা সুখের। তো? এখানে ""সুখে'' নামে কেউ কোনোদিন লিখেছেন কি? আমি তো দেখিনি। তাও সেই অজানা সুখের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ওকে?

    **আমাকে ভুল প্রমাণ করুন লিংক দিয়ে। আমি গুরু বা অন্য কোন ফোরামে কিছু লিখবো না। আদারওয়াইজ সকলেই বুঝবে আপনি ফাল্‌তু ভাট বকতে ভালোবাসেন।
  • shrabani | 124.124.244.107 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:০০514871
  • উৎপাতে চিৎপাত না হলেও মনের মধ্যে এরম একটা বিচ্ছিরি ভাব নিয়ে সকাল সন্ধ্যে কাটাতে বেশ অসুবিধে হয়, মুখ হরদমই তেতো তেতো। তবে তাই বলে নীলি ছাতরি ওয়ালাকে ডেকে অনুযোগ করার কথা ভাবিনি অথবা জ্বালাগাঁওয়ের জাগ্রতা জ্বালাদেবীর চরণে মাথা ঠুকে প্রতিকারের আবেদনও করা হয়নি। যতই হোক ননভেজী, অবিশ্বাসী বঙ্গালী তো, তাই "গড হেল্প দোজ হু ----" ইত্যাদিতেই বেশী ভরসা।
    তবে সময়টা ছিল নবরাত্রির বা আমাদের দেশোয়ালী রীতিতে বাসন্তী পূজার। শেরাওয়ালী বা সিংহবাহিনী তা তিনি যাই হোন না কেন, মনে হয় এসময় একটু বেশীই সজাগ থাকেন এবং মর্ত্যে আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেন, মানুষের কষ্ট দুর্দশা না চাইলেও দূর করে থাকেন, বাই ডিফল্ট। অন্তত এ ক্ষেত্রে তো সেরকমটাই দেখা গেল।

    কলেজীয়ানা টা বেশ জাঁকিয়ে বসেছে পাণ্ডের অন্তরের অন্দরে, ক্লাসে হল্লা হচ্ছে, নিরীহ স্যরেদের নাকের ডগা দিয়ে ইচ্ছেখুশী ঢোকা বেরনো হচ্ছে আর সবার উপরে মেয়েদের বিরক্ত করাও বেশ ভালোমতই হচ্ছে তা ঐ মেয়েদুটোর কোঁচকানো কপাল আর তিরিক্ষি ভঙ্গি দেখলেই টের পাওয়া যায়। তবে শুধু দিনরাত গাঁক গাঁক করে টেপ রেকর্ডার চালিয়ে আর রসের কথায় হল্লা বোলে দু চারটে ঐ ক্ষীণজীবি চেলা নিয়ে কি পাণ্ডের মত সিংহের আশ মেটে? আরো সাহসী কিছু করতে হবে, আরো লোককে আনতে হবে নিজের দলে! অতএব পরবর্তীতে নেওয়া হল কলেজী সাবালকত্বের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, দারুর আসর।

    আমরা অর্থাৎ আমি আর রেখা দুজনে সবসময় নিজেদের মধ্যেই থাকি, তখনো অন্যান্য কারুর সাথে ঐ মামুলী কথাবার্তা ছাড়া বন্ধুত্ব হয়নি। দরকারে আমার সহপাঠীরা বা রেখার কলেজের ছেলেরা সাহায্য করে, যেমন জরুরী কাজকর্ম, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা বা অফিশিয়াল কিছু হলে ওরাই জানান দিয়ে দেয়। এরকম করেই চলে যাচ্ছিল। তাই সপ্তাহব্যাপী যে পরিকল্পনা চলছিল সপ্তাহান্তের দারুর আসরের, তার আঁচ আমরা একেবারেই পাইনি।
    এদিকে ট্রেনিংয়ের লোকজন আমাদের দুজন মেয়েকে ক্লাস ও অন্যান্য বাঁধাধরা রুটিনের সুবিধার্থে ছেলেদের সাথে এক হোস্টেলে রাখলেও, সবাই বেশ একটু সজাগই থাকত মেয়েরা আছে বলে। কিছু গণ্ডগোলের পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয় কোনোভাবেই, সেজন্যই ঐ একতলায় মেয়েরা ইত্যাদি!
    সিকিউরিটীকে বলা ছিল আমাদের খেয়াল বেশী করে রাখতে। চাচা প্রায়ই রাতের বেলা আমাদের ঘরের সামনে পেছনে এসে ঘুরে তেলমাখানো চকচকে বাঁশের লাঠি ঠকঠক করে যেত। রাত্রি দশটা বেজে গেলে আমাদের মেন গেটের বাইরে যেতে দিতনা এই বলে যে শের বেরোতে পারে। সত্যি মিথ্যে জানিনা তবে তখন আমি বিশ্বাস করে খুব আশায় থাকতাম যে একদিন সত্যিই শের বেরোবে। শেরের সাথে মুখোমুখি মোলাকাতের আশায় রাতে চাচার কুঠরির পাশে গেটের এপারে দাঁড়িয়েও থাকতাম মাঝেসাঝে,কিন্তু আমার কী আর সে ভাগ্য!
    তবে চাচার সঙ্গে দোস্তি হয়েছিল খুব আর উপহার স্বরূপ পেয়েছিলাম একটা দারুন লাঠি,চাচারটার মতনই, বর্ষাকালে সেটা হাতে নিয়ে রাতে পথ চলতাম, ঠকঠক করে সাপখোপকে দূরে রাখা যাবে তাই! সবাই আমার হাতের ঐ লাঠি নিয়ে নানা কথা বলত,নানা লুক দিত এবং শেষমেশ সেই কারণেই আসার সময় আমাকে ঐ লাঠি ফেলে আসতে হয়েছিল তবে লাঠির শোক রয়ে গেছিল বেশ কিছুদিন!

    রোজ বিকেলে ক্লাস শেষ হলেই আমরা সবাই ছোট দলে বা দু এক জনে ভাগ হয়ে রওনা দিতাম টাউনশিপের মার্কেট বা শপিং কমপ্লেক্সের দিকে। ছোট জায়গা, আশেপাশে কিছু না থাকার জন্যে, এই কমপ্লেক্সটা বেশ বড় ছিল। মাঝে মাঝে খোলা চত্বর সামনে পিছনেও অনেকটা জায়গা আর দুটো গোল অঙ্গন ঘিরে দোকানপাট। সে আমলে আমাদের মূল ঠেক ছিল শক্তি রেস্তরাঁ, এখানে শুধু নাস্তা মানে জলখাবার আর চা কফি ইত্যাদি পাওয়া যেত। মেনু ঘুরেফিরে ঐ একই, দোসা ইডলি উত্তাপম ও ছোলে ভটুরে। আমরাও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওগুলৈ খেতাম, রেখা খেত ইডলি বা প্লেন দোসা ও কফি। এখানের এই খাবার ওর জন্যে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এটাই ওর সারাদিনের যাকে বলে মেন মীল। রুটি ও বা ওরা একেবারেই খেতনা, শুধু ডাল ভাত তরকারিও ঐরকম, ফেলে ছড়িয়ে। মাঝে সাঝে যেদিন দই থাকত ভালো করে দই ভাত খেত। এছাড়া রেখা ডিমের ঝোল ভাতও খুব ভালোবাসত, মাছ মাংস না খেলেও (এসব অবশ্য মেসে ঢুকত না, ডিমটা হত মাসে একবার আধবার, সবজির খুব আকাল পড়লে)।

    শক্তিতে বসে খেয়েদেয়ে আড্ডা দিয়ে দোকানে দোকানে ঘুরে বেশ খানিকটা সময় কাটত। কোনোদিন এর পরে ক্লাবের দিকে যেতাম গল্পের বই আনতে লাইব্রেরী থেকে অথবা কখনো এমনিই উদ্দেশ্যহীন ভাবে কলোনির রাস্তায় ঘুরে বেড়াতাম। মোটকথা আটটার আগে কেউ হোস্টেলমুখো হতাম না। কখনো আবার আটটার পরে ফিরে আসতাম সেই শক্তিতে, বাড়িতে ফোন করতে। একটিই এস টি ডি ফোন ছিল, তাতে জিরো ধরে বসে থাকতে হত। কোনো বুথ টুথ নয়, ফোনে কথা বলা শুরু হলে ক্যাশে বসা লোকটি (মালিক?) হাতের ঘড়ি দেখে যা সময় বলত তাই দিয়ে পয়সার হিসেব হত। এস টি ডি ফোনের দূর্লভতায় এই ব্যবস্থা মেনে নিয়ে আমরা কেউ কোনো প্রশ্ন তোলবার কথা মনেও আনতাম না।
    অলটারনেট ছিল স্টেশন অবধি হেঁটে গিয়ে দ্বিতীয় পাবলিক এস টি ডি তে লাইন দেওয়া। এক তো হাঁটাপথ অনেকটাই, দ্বিতীয়ত কলোনির বাইরের লোকেরা ও আশেপাশের গ্রামের লোকেদের জন্যে ঐ দোকানই একমাত্র ছিল, তাই ভীড় হত প্রচুর।
    হাত ব্যথা করত বলে পালা করে জিরো ধরা হত, যেই ডায়াল টোন পাওয়া যেত ফটাফট ডায়াল করা হত, কলের মাঝখানে একটু বেশি ফাঁক পড়লেই জিরো ডায়াল ফাঁকি দিয়ে চলে যেত অন্য কোনো ফোনে, অন্য কোনোখানে। কখনো কখনো ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও শুন্য সেই অধরাই রয়ে যেত!
    সেদিন রাত কাটত মন খারাপে, জেগে। পরদিন মুখ দেখেই লোকে বুঝে যেত কাল ফোন পাইনি। এরকমই কোনো এক দিনে আমরা ক্লাসের ফাঁকে টী ব্রেকের সময় গিয়ে ফুল চার্জে বাড়িতে কথা বলে এসেছিলাম, বাড়ির লোকে অবাক! কিন্তু কী করব, মন যে বুঝ মানেনা। সেই স্বল্প মাইনের ও টেলিকম রিভোলিউশনের আগের যুগে ফুল চার্জে তো দুরের কথা হাফ চার্জে ফোন করতে হলে, অফিসের ফ্রি ফান্ডের ফোন না হলে অনেক তালেবরদেরও দুবার ভাবতে হত!

    যাইহোক, সেই শনিবার বিকেলে শক্তি রেস্তোরাঁর চা জলখাবার পর্বের অন্তে তিনজন রওনা দিয়েছিল খতড়ীর পানে। সে আমলে শক্তিনগর ( মানে সেই ওপেন জেল, আমার দাদার মীর্জাপুরী বন্ধুর ভাষায়) আসা যাওয়ার বাস ট্রেন সবই গোণাগুনতি। টাউনশিপের মধ্যে রিক্সা বা বাসস্ট্যান্ডে রিক্সা অটো ইত্যাদি একটা সময় অবধি পাওয়া যায় ঐ দুরপাল্লার যাত্রীদের স্থানীয় যাতায়াতের জন্যে। প্ল্যান্টের লোকজনের কাছে প্রত্যেকেরই নিজেদের গাড়ী স্কুটার ইত্যাদি একাধিক যান ছিল, তাই শক্তিনগরের বাইরে কাছাকাছি যাবার জন্যে লোক্যাল ট্রান্সপোর্টের তেমন চল ছিল না। দুর গ্রামের লোকেরা কী করত জানিনা হয়ত হাঁটত ও টাইমের বাস ধরত, তা তারা তো আমাদের বৃত্তের বাইরের লোক!

    যাবার সময় দিনের আলোয় তিন মক্কেল বাসস্ট্যান্ড থেকে অটো ধরে দু তিনটি স্টপেজ পরে খতড়ী পৌঁছল, সেখানেই আছে সবচেয়ে কাছের দারুর দোকান। গুছিয়ে কেনাকাটাও হল। এরা কিন্তু সবাই ঐ পাণ্ডের চেলা নয়। এসব আমরা পরে জেনেছিলাম। চেলাদের মধ্যে একজনই ( একটু বোকা বোকা ছিল সে) দারুপার্টিতে যোগ দিতে রাজী ছিল। আসরের বাকী মেম্বাররা সব আমাদের ব্যাচের অন্যান্য রসিক জন, গন্ধে গন্ধে পাণ্ডের ঐদিনের কাণ্ডের সঙ্গী হয়েছিল। বাঙালীদের মধ্যে আমার দুই সহপাঠী ওর মধ্যে ছিলনা কিন্তু যদুকুলোদ্ভব চতুর্থজন শুধু রসের পূজারী ছিল তাই নয়, এই খতড়ী অভিযানের তিনজনের একজন নায়কও হয়ে পড়ে পাকেচক্রে।
    সে নাকি বিশেষজ্ঞ, কষ্টের পয়সায় রস কেনার ভারটা অন্যের হাতে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। এছাড়া দারু গ্রুপে ছিল "বঙ্গালী"প্রেমী সন্দীপ মহান্তি ও ইন্দোরের রাজেশ। তবে সন্দীপ ফিচেল হওয়ার সাথে সাথে মহা চালাক, সে খতড়ীর দলে ছিল না। রাজেশ ও দলপতি পাণ্ডে গিয়েছিল বঙ্গসন্তানটির সাথে।

    কেনাকাটা সেরে দিল ও মেজাজ তর হওয়াতে এরা ফেরার তাড়া ও যানবাহনের সমস্যার কথা একেবারে ভুলেই মেরে দিয়েছিল মনে হয়। তাই খতড়ীর (যদিও তখন ওটি একটি ছোট জায়গাই ছিল শুধু দারু দোকানের জন্যই খ্যাত) দেহাতী বাজারে ঘুরে এদিক ওদিক করে যখন ফেরার কথা মনে হল, তখন সবে নয়, বেশ এগিয়ে গিয়ে কলির সন্ধ্যে রাত্রি হয় হয় ভাব।
    রেনুকুটের রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকে তিনজন, হাতে কাগজে মোড়া তিনটি বোতল কিন্তু গাড়ির দেখা নাই রে নাই। এক আধটা যাও এল হয় ভরা, নয় তাদের গন্তব্য অন্যদিকে। শেষমেশ একটি জীপ দ্যাখে প্রায় খালি, শুধু ড্রাইভারের পাশে একজন বসে। হাত দেখাতে থেমেও গেল এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন, সেটি যাচ্ছে শক্তিনগরেই। তিনজন মহা আনন্দে চড়ে বসে জীপের পিছনে, শঙ্কা অন্তে মেজাজ মহা খুশ, আসন্ন আসরের খোশ আলোচনা চলতে লাগল পুরোদমে। জীপের ড্রাইভার ও তার সহযাত্রীকে পাত্তাই দেয়না তারা, এরা কোথা থেকে আসছে কোথায় যাবে সে জানারও দরকার মনে করে না!
    শক্তিনগরে ঢুকে জীপের যাত্রী সবিনয়ে জানতে চায় তিনজন কোথায় যাবে। এরা কিছু না ভেবেই ড্রাইভারকে আদেশ দেয় একেবারে ট্রেনিং হোস্টেলে যাওয়ার জন্যে। এই কথাটা এ জন্যে বলছি, পরে ছেলেদের আলোচনা শুনেছি যে ওরা বাসস্ট্যান্ডে নেমে পড়লে বা বাজারের কাছে নেমে হেঁটে এলে কেউ কোনোকিছু ধরতেই পারতনা। কিন্তু তারা তো তখন আর মাটিতে নেই, বিনা সাকীতেই শাহেন্‌শা মেজাজ তখন, ওসব ভাবনাচিন্তা তো গোলামের মতন, ওসব কে করে!

    শনিবারে রাতে হেভি আসর হল তিনতলায়, অবশ্য কী হল তা বিশদ কেউ আমাদের বলেনি তবে অশোক এদের কাছে শুনলাম বঙ্গজ সাথীটির নাকি মোহভঙ্গ ঘটেছে, পাণ্ডে ও মহান্তির এমন যুগলবন্দী শুনেছে সে যে তার দুজন দেশোয়ালি সহকর্মীর কাছে জানিয়েছে, দারুর জন্যেও সে আর কোনোদিন ঐ দলের সঙ্গে আসর জমাতে যাবেনা।
    আমরা শুধু শুনেই ছিলাম, যদি আমাদের নিয়েও সরস কুৎসিত আলোচনা হয়ে থাকে তাতে আমাদের কিছু মাথাব্যথা হয়নি। এতদিকে এত বিষয় ছিল তখন, এত ব্যস্ততা, প্রথম চাকরি, বাড়ি থেকে দুরে থাকা, নতুন জায়গা, সুন্দর প্রকৃতি, আমাদের আড়ালে কে কী বলছে ওসবকে আমরা একেবারেই পাত্তা দিই নি। অবশ্য অন্যন্য সহকর্মীএরাও এব্যাপারে প্রচণ্ড সদবুদ্ধি দেখিয়েছে এবং তাদের আমাদের প্রতি ব্যবহারে বা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় আমরা কোনোরকম এদিক ওদিক দেখিনি ঐ ঘটনার পরেও, সে জন্যেই হয়ত আমরাও তেমন কিছু টের পাইনি বা এই ঘটনা সে ভাবে কোনো রেখাপাত করেনি আমাদের মনে।
  • shrabani | 124.124.244.107 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:২৪514872
  • পরদিন রবিবার। রবিবার রাতে আমাদের মেস বন্ধ থাকত। সেদিন আমরা কয়েকজন যেতাম ক্লাবে রাতের খাওয়া সারতে। ক্লাবে পরিবেশ খুব সুন্দর ছিল, খেলাধূলার ব্যবস্থা, লাইব্রেরী, লাউঞ্জে টিভি, টিভিতে কেবল (কোন অজ্ঞাত কারণে আমাদের ট্রেনিং হোস্টেলের টিভিতে শুধু দূরদর্শন আসত, কেবল ঐ ওপর অবধি পাতা যায়নি)। তবে খাবার টা ছিল হপ্তা দর হপ্তা একই, তেলতেলে লুচি বা পুরি, আরো তেলতেলে পুলাও, তেলে ভাসি ডাল ও পনির।
    অনেকেই কিছুকাল খাওয়ার পর ক্লাব ছেড়ে মোতি ধাবা যাওয়া শুরু করল। মোতি ধাবা শক্তিনগরের এক বিখ্যাত পয়েন্ট। টাউনশিপের বাইরে স্টেশন ইত্যাদি ছাড়িয়ে একটা উঁচু টিলার ওপর সামান্য মাটির ধাবায়, বাঁশের বেঞ্চি। কিন্তু শুরুতে নাকি মাইলের পর মাইলের মধ্যে এই একটিই খাবার জায়গা ছিল বলে কম্পানির তাবড় তাবড় লোকেদের এই ধাবায় পায়ের ধূলো পড়েছে। কনস্ট্রাকশন পিরিয়ডে বিপুল বাহিনীকে খাবার খাইয়ে বাঁচিয়ে রেখেছে এই ধাবা।
    শ্যাম বেনেগাল যখন পঁচিশ বছর উপলক্ষ্যে ডকুমেন্টারি বানান তখন মোতি ধাবার একটি মুখ্য ভূমিকা থাকে তাতে। অতদূর ও টাউনশিপের বাইরে বলে আমরা মেয়েরা রাত্রে কোনোদিন যাইনি মোতির ধাবায়, তবে কোনো কারণে সকালে রান্না হয়নি বলে বার দুয়েক যেতে হয়েছে। সকালে শক্তি ও খোলা থাকেনা, ক্লাবেও খাবার পাওয়া যেতনা। বাজারের অন্যান্য খাবার দোকানের কথাও আসবে কখনো। আমার মোতি ধাবার খাবার কিছু আহামরি লাগেনি, যদিও অনেকের জিভে জল আসত ঐ ধাবার নামে। শুধু মনে আছে ডাল তরকারী রুটি সবেতে খুব করে ওপর থেকে ঘি ঢালত, ঘিয়ের বাটিও দিত, ঐ ঘিয়ের কল্যাণে খাবার গুলো গলা দিয়ে ফটাফট নেমে যেত!

    শনিবারের রাতের ঘটনার আসল রেশ টা মালুম হল সোমবারে ক্লাসে ঢুকে! সবাই সিটে বসেছি কী বসিনি থমথমে মুখে বাসু বাবুর আবির্ভাব। হেড অফ ট্রেনিং জৈন সাহেব সব ছেলেদের ডাকছে তার চেম্বারে। কো অর্ডিনেটর সিং সাব, বাসু, দত্ত এইসব টেকনিক্যাল ডিপার্টমেন্ট খেদানো লোকের ভীড়ে জৈন সাহেব ছিল একেবারে অন্যরকম, "দ্য বস"।
    তুখোড় এইচ আর ব্যক্তি, বাইরে থেকে আমাদের কম্পানির এইচ আরে জয়েন করেছে। ট্রেনিং সেন্টারে এসেছে তখন মাস কয়েক হয়েছে, এর মধ্যেই লোকে বুঝে গেছিল যে ইনি অনেক বড় রেসের ঘোড়া। হয়েছিলও তাই এরপর একমাসের মধ্যেই বদলি হয়ে পাওয়ার সেন্টার অর্থাৎ দিল্লীর কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। তা এনাকে খুব বেশী আমরা দেখতে পেতাম না, ট্যুরে ট্যুরেই থাকত,ভূমিকাটা অনেকটা নন প্লেয়িং ক্যাপ্টেনের ছিল বা বোর্ডের অনরারি ডাইরেক্টরের!

    কিন্তু সেই শুভদিনে কিভাবে যেন আগের রাতে অর্থাৎ রবিবারেই তিনি স্টেশনে অর্থাৎ শক্তিনগরে ফিরেছেন। তিনি না থাকলে হয়ত সেরকম কিছু হতনা যদিও শক্তিনগরের আকাশ বাতাস গাছ পালা থেকে শুরু করে কাছের বিন্ধ্য পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়ও পৌঁছে গেছে ট্রেনি হস্টেলের দারু পার্টির কথা, সেই ট্রেনি হস্টেল যেখানে এবারে দুই মহিলা ট্রেনিও বাস করে!
    আসলে সেরাতের সেই জীপটিতে ড্রাইভারের পাশের জনটি প্ল্যান্টের একজন ছোটখাটো বাবু ছিল, রেনুকুট স্টেশন থেকে ফিরছিল। জীপটি অফিসের নিজস্ব নয়, এরকম অনেক গাড়ি কনট্রাক্টে ভাড়া খাটে আমাদের অফিসে তাই তাতে কম্পানির নাম টাম লেখা থাকেনা।
    পাহাড়ী রাস্তায় খালি জীপে মহা ঝাঁকুনি এড়াতে বাবুটি সামনে ড্রাইভারের পাশে বসেছে, ওখানে এরকমটা হরদমই হয়। শহরের ছেলেরা ও দিল্লীর সাহেব, নাকউঁচু পাণ্ডে এই ব্যাপারটা চিন্তা করতে পারেনি, তাদের চোখে ড্রাইভারের পাশে বসা লোক কোনো তেমন কেউ হতে পারেনা!
    এছাড়া গাড়িটা যে অফিসের গাড়িও হতে পারে কোথাও লেখা না থাকলেও সেটা মাথায় আসেনি। আগেই বলেছি, মেজাজে ছিল, মাথায় সব অন্য চিন্তা, ধরাকে সরা দেখা অবস্থা, কোনো জিজ্ঞাসাবাদেরও প্রয়োজন মনে করেনি!

    জৈন সাহেব এমনিতে ফর্সা ছোটখাতো চেহারার মধ্যবয়সী ও অত্যন্ত স্মার্ট ভদ্রলোক, দেখে যা বোঝা যায়না তা হল উনি কট্টর জৈন।
    দারু ছোঁয় না, বেগুন কপি মুলো শালগম না খাওয়া থেকে শুরু করে নিষ্ঠাবান জৈনের সবকিছু মেনে চলেন অত্যন্ত কড়াকড়িভাবে।
    প্রায় সবাই বেরিয়ে এল এক এক করে অল্প ধমকানি জিজ্ঞাসাবাদের পর, রয়ে গেল পাণ্ডে আর দারুর আসরের অন্যান্যরা। ক্লাস চলতে লাগল স্বাভাবিক ভাবেই, টী ব্রেকের সময়েও জৈনের দরজা বন্ধ। পরে কখন এরা ছাড়া পেয়েছিল সঠিক জানতে পারিনি, তবে সারাদিনে এদের আর দেখা পাওয়া যায়নি।

    পাণ্ডের গান বাজনা কদিন বন্ধ রইল, ঘরের দরজাও। পরদিন ক্লাসে উপস্থিত হলেও তার গলার আওয়াজ আর কুতকুতে চোখেমুখে খিলখিলে নি:শব্দ সিগনেচার অট্টহাসিও আর দেখা যাচ্ছিল না । অস্বীকার করব না, শোরগোল কম হয়ে চারদিকে অদ্ভুত রকমের শান্তি বিরাজ করতে একটু কেমন কেমন লাগতে লাগল যেন, অস্বস্তিকর নীরবতা!
    এর কিছুদিন পরে দেখা গেল পাণ্ডে মহা সসম্ভ্রমে আমাদের দেখলে হ্যালো, গুডমর্নিং করছে। শুনেছিলাম জৈন সাহেব অনেকক্ষণ ধরে এইচ আরের রুলবুক, তার বিভিন্ন শব্দাবলী, এই শো কজ, সাসপেনসন ইত্যাদি ধরে এমন ক্লাস নিয়েছিল যে বাকী নব্য চাকুরেরা সব ঠিকমত হৃদয়ঙ্গম না করতে পারলেও, পাণ্ডের মত পুরনো পাপী মায় নেতা ব্যক্তির পাহাড়ী আলুর ন্যয় মাথাটি ভয়ে ছোট, দমের চন্দ্রমুখীর আলুর আকার নিয়েছিল!
    পাণ্ডের কলেজ লাইফের ইতি, উচ্চকিত "সামনেওয়ালী খিড়কীর" জায়গায় বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে নীচুগ্রামে ভেসে আসতে থাকল, "একদিন মিট জায়েগা মাটি কে মোল...."!

    কিছুদিন যাবার পরে এক পড়ন্ত বিকেলে ক্লাস শেষে ডাইনিং হল থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে আমি আর রেখা কৃষ্ণচূড়ার নীচে সাদা কালো পেন্ট করা চকচকে কালভার্টের ওপর বসে দুরে পাহাড়ের ওপর সুর্য ডুবে যাওয়া দেখছিলাম, গরম মসলা চায়ে চুমুক দিতে দিতে। পাণ্ডে এসে বিনয়ে মাথাটাকে প্রায় ধড়ের সঙ্গে মিশিয়ে ঘটা করে অনুমতি নিয়ে উল্টোদিকে বসল। ইনিয়ে বিনিয়ে একথা ওকথায় বলতে লাগল সে কত নিস্পাপ, আমরা তার বোনের মত ইত্যাদি। আমি অনেকদিন মনে মনে এই জিনিসটিকে কল্পনা করে জিভ শানাতাম, সুযোগে সেইসবেরই কিছু নমুনা মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল। লোকটি অ্যাসোশিয়েসনের নেতা, গালাগালি সহ্য করার অভ্যেস ভালৈ ছিল, অসুবিধে হলনা, বেশ হাসিমুখেই শুনে গেল।
    আর কিছু নয়, রাতে অশোক আর দেবাশিস এসে ধরল আমায়। "তুই আবার ভাষণ দিতে শুরু করেছিস, এখানেও?"
    কী হয়েছে? না পাণ্ডে সবাইকে বলছে, "খুব তেজী মেয়ে, ভালো বলতে পারে, বিলকুল ডর নেই"। দেবাশিস খুব দু:খী মুখ করে বলল, "তোর যে কী হবে! এই করে কলেজে কেউ জোটেনি, এখানেও কেউ জুটবেনা, সবাই তোকে ভয় করবে।"
    এদের সঙ্গে কলেজে তেমন ভাব ছিলনা কিন্তু এই কদিনে এখানে সম্পর্কটা অন্য মোড় নিচ্ছে। বাংলার বাইরে ওদের দুজনেরই এই প্রথম আসা।
    হিন্দিতে ঠোকর খেলে আমার কাছে আসে, আবার বাংলার সঙ্গে মিলিয়ে হিন্দি নিয়ে মজা করে আমাকে শোনায়। "বুঝলি, চিঠিটা একেবারে ঘিয়ে ভেজে দিয়ে এলাম।' কখনো ক্লাসের পরে, "শ্রাবণী, সব পাতা চলে গেল,(গাছ খালি করে)"। আমি হাসি ওদের হিন্দি শুনে। উত্তর ভারতীয় ধরণধারন মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে, এরকম দেহাতী জায়গায় তা না করে উপায় নেই, আর সেইসবে গাইড ঠাউরেছে আমাকে।
    কখনো এদিক ওদিক ঘুরে বাঙালী দাদাদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাদের বাড়ি গিয়ে একেবারে খাওয়ার নেমন্তন্ন আদায় করে আসে। খাওয়ার সত্যিই খুব অসুবিধে, রোজ ঐ এক তরকারী ভাজি, ডাল , ভাত আর রুটি। যে বাড়িতেই নেমন্তন্ন পায় আমার কথা বলে আমার জন্যেও নেমন্তন্ন আদায় করে নেয়। অবশ্য আমি যাই না, এক তো অচেনা কারুর বাড়িতে একেবারে খেতে চলে যাব আর তাছাড়া রেখাকে বাদ দিয়ে কোথাও যাওয়ার প্রশ্ন ওঠেনা।
    যাই হোক এতদিন কলেজে যা হয়নি তা হল এখানে, খুব শক্ত না হলেও নিবিড় ঠাসবুনোন একটা সখ্যতার জাল গড়ে উঠল আমার আর আমার দুই সহপাঠীর মধ্যে।

    তাই যখন আমি মজা করে বলি, "দরকার নেই কিছু হয়ে, কলেজে সব তো তোদের মত মুঙ্গফলী পার্টি। ওতে আমার হবেনা। আমার চাই চাঁদ তারা আনতে পারবে এমন কেউ"। তখন সদ্য কনট্র্যাক্ট, মেটিরিয়ালের মডিউল শেষ করা দেবাশিস সিরিয়াস ভান করে বলে "তাহলে তো এমনি টেন্ডারে হবেনা রে, গ্লোবাল টেন্ডার ডাকতে হবে যে।"! আমরা সবাই হেসে উঠি...
    "জগমে রহ জায়েঙ্গে, প্যারে তেরে বোল....."
  • de | 203.197.30.4 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৭:২০514873
  • ঠাস বুনোট গপ্পো, পুউরো মজলিশি মেজাজ!
  • siki | 122.177.217.207 | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ২১:০৩514874
  • স্যালুট।

    দেখেচো জনতা, দিল্লি এনসিআরের জলহাওয়ার কী তেজ? লোকে কীসের আনন্দে যে দিল্লি ছেড়ে কলকাতায় লুরুতে সেটেল করতে যায় ...
  • a | 65.204.229.11 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০০:১৯514875
  • এই একজনের লেখা পড়তেই বারবার গুরুতে আসা যায়। শ্রাবনীদি, কি বলে যে ভালো লাগা বোঝাব জানি না
  • rimi | 168.26.205.19 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০১:৫৯514876
  • সত্যিই দারুণ! আরো শুনতে চাই।
  • Nina | 69.141.168.183 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৯:২১514878
  • কদিন গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল গুরুতে --আসা--আর আজ শুক্কুরবার খোশমেজাজে ----কি আনন্দ শ্রাবণী নামটা দেখেই--আর পুরোটা পড়ে----আহ! কি আরাম---কিন্তু আরও পড়তে ইছে করছে যে
  • shrabani | 59.94.97.170 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ০৯:২৭514879
  • নিনদি...:))
    অয়ন, পড়িস যে, এতেই জানতে পারি...থ্যাঙ্ক ইউ!
  • bb | 117.213.212.1 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১১:১৪514880
  • শ্রাবণী আপনার লেখার মধ্যে দিয়ে আমাদের সময়ে টেকনিক্যাল লাইনে পড়া উচ্চশিক্ষিত মহিলাকেও কতখানি সুক্ষ বা সচকিত বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয় তা জানতে পারছি।
    আমরা অনেক সময় এইগুলি হয় বুঝতে পারিনি বা বোঝার মত সংবেদনশীলতা গড়ে ওঠে নি। খুব ভাল লাগছে পড়তে।
    আমিও তৃতীয় বর্ষের ট্রেনিং এ গিয়েছিলাম -বেলপাহাড় (হাওড়া -বোম্বে লাইনে ঝাড়সুগদায় নেমে যেতে হোত)। সেখানে কোলকাতা থেকে কাগজ পৌঁছতে তিনদিন পরে।
    আপনার লেখার মধ্যেদিয়ে সেই দিনগুলিতে ফিরে যাচ্ছি।
    খুব ভাল লাগছে, চালিয়ে যান।
  • kumu | 122.176.32.39 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৫:৫৬514881
  • শ্রাবণী,কী আর বলি,অপরূপ,অনবদ্য,অতুলনীয়।

    বিবি,হ্যাঁ,বৈষম্য আছে,থাকে।রাত নটার সময় ল্যাব থেকে ছুটি নিলে-
    প্রদীপের জন্য-আচ্ছা,যাও,অনেকক্ষণ খেটেছ।
    প্রদীপ্তার ক্ষেত্রে- এর মধ্যেই?মেয়েরা যে কেন বেশী পড়াশোনার চেষ্টা করে!আরে বাবা,যার যা কাজ,বিয়েথাওয়া কর,রান্নাবান্না য় মন দে,তা নয়,পি এইচ ডি করবেন।হুঁ:!
  • bb | 117.213.210.48 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৬:৫২514882
  • কুমুদি কিছুটা জানি, আমার স্ত্রী যখন টাটা স্টীলে কাজ করত, প্ল্যান্টের মধ্যে মহিলাদের বাথরুম ছিলনা, তাই যেতে হত হয় অফিসে নয় ৫ কিলোমিটার দুরে জেনারেল অফিসে। অনেক সময় সহকর্মীদের এটা বলাও অস্বস্তিকর।
    আর একা একা ট্যুরে যাওয়া, প্ল্যান্টে যাওয়া ইত্যাদি খুবই মুশকিল।
    কিন্ত এই পুরুষ সহকর্মীদের ইচ্ছাকৃত ভাবে বিপদে ফেলে মজা দেখা খুবই খারাপ।
    বাচ্ছা হওয়ার জন্য ছুটি পর্যন্ত বেশীদিন নিতে পারেনি তখন, সেই তুলনায় আমাদের মেয়েদের অফিসে এখন বোধহয় অনেক সম্মান দেওয়া হয়-অবশ্য এটা কোন মহিলা অনেক ভাল বলতে পারবেন বিশেষ করে যিনি দুই সময়ই দেখেছেন।
  • kumu | 122.176.32.39 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৭:১৯514883
  • হ্যাঁ,বিবি,ঠিক একদম।

    দুরকম সময়ই কিছুটা দেখেছি।আমাদের লাইনে মেয়েরা এখন কর্মক্ষেত্রে আগের চেয়ে বেশী আসছে।আগে পি এইচডি পর্যন্ত এগিয়েও বিয়ের পর ঘরে বসে যাওয়ার প্রবণতা ছিল।ঘরে থেকেও কিন্তু অনেক কিছু করা যায়,সেটা প্রায় কেউ ভাবত না।

    কাজের জায়গায় যেটা আনন্দের সঙ্গে দেখি,ছেলে/মেয়েদের মধ্যে ভেদাভেদটা করার মানসিকতাটা প্রায় নেই।এমনকি,আগে ছেলেরা মহিলা বসের আন্ডারে কাজ করাটা অপমানজনক মনে করত,এখন এসব কেউ ভাবে না।

    তবে ঐ টয়লেটের অসুবিধেটা এখনো দেখি।
  • bb | 117.213.210.48 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৮:৪৫514884
  • কুমুদি আমি কর্মজীবনে দুই-বার মহিলা বসের অধীনে কাজ করেছি (প্রথম বার ৩ বছর) আর এখন - কখনও এই রকম কিছু মনে হয়নি। বরং আমার দেখা সকল মহিলা ম্যানেজাররা অতন্ত: দক্ষতার সঙ্গে কর্মক্ষেত্র আর সংসার সামলান।
    এই সব ভেদাভেদ আজকাল উঠে যাচ্ছে বলে আশা করি।
  • pi | 72.83.80.169 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২ ১৯:০৭514885
  • কুমুদি, জানিনা সময় বদলেছে কিনা নাকি ভাগ্য ভাল ছিল। পি এইচ ডি বসের থেকে এরকম বৈষম্যের শিকার হতে হয়নি। আমার আগে পরে ব্যাচের মেয়েদেরও। পোস্ট ডকেও না। মানে বস খারুশ হলে ছেলে মেয়ে নির্বিশেষেই ন'টার সময় চলে যাওয়া নিয়ে কথা শুনিয়েছেন , নয়তো কাউকেই না :)
    উল্টে, যেসব মেয়েদের দূরে ফিরতে হত, তাদের তো অনেক রাত করতেই বারণ করা হত। আমি কখনো কখনো সাড়ে দশটা এগারোটার ট্রেন ধরলে বসের কাছেই ঝাড় খেয়েছি।

    তবে আমাদের একটা উইমেন্স সেল ছিল। একটু এদিক থেকে ওদিক হলে তাতে অভিযোগ জানানো যেত। লোকে সেটা নিয়ে বড় ভয়ে থাকতো :)। প্রেমে লেঙ্গী খেলেও সেখানে অভিযোগ জানানো হত এবং ছেলেটির তলব পড়তো :P
    তবে ওটার উদ্যোগে বেশ কিছু ভাল ব্যাপারও হয়েছিল। হয়তো ওটা থাকার জন্যই বৈষম্য সেভাবে ছিলনা।

    ক্যাম্পাসেই চাইল্ড কেয়ার চালু। অনেক মেয়েদেরই অনেক অসুবিধে কমে গেহি্‌চল, ওটা হবার জন্য।

    শ্রবাণীদির শেষের কয়েকটা কিস্তি পড়িনি, ভাল করে সময় নিয়ে পড়বো।

  • shrabani | 124.124.244.107 | ১৯ মার্চ ২০১২ ১৭:০৩514886
  • ক্লাস যখন আছে তখন পরীক্ষা না থেকে উপায় আছে? আমাদেরও ছিল, ছোট মডিউলের ক্ষেত্রে মডিউল শেষ হলেই টেস্ট, দীর্ঘ মডিউল গুলির মাঝে মাঝে, হপ্তা দশদিন পরে পরে। এবার পরীক্ষা থাকলে তাতে পাশ ফেলের প্রশ্ন ওঠে, সেটা একেসে একটু ঘোরানো প্যাঁচানো ব্যাপার। পরীক্ষায় গ্রেড দেওয়া হত, এ বি সি ডি ইত্যাদি। মোটামুটি বসলেই আর একেবারে সাদা খাতা জমা না দিলে ঐ ডি লোকে পেয়েই যেত। ট্রেনিংয়ের ফাইলে প্রত্যেকের নামের পাশে খোপকাটা ঘরে ঐ গ্রেডগুলো লেখা জরুরী ছিল, প্রমাণস্বরূপ, যে উক্ত ট্রেনী ঠিকঠাক নিয়ম মেনে ট্রেনিং করেছে। এবার যদি এটুকুই উদ্দেশ্য হয় তাহলে প্রত্যেক জনগণ ডি এর আগে আর কিছু ভাববেনা। তাই কোনো লিখিত নিয়ম ও রুলবুকে না থাকলেও হাওয়ায় ওড়ানো হত (ট্রেনিং ডিপার্টমেন্টের লোকেদের শ্রীমুখে) নানা ধরণের গুজব। ট্রেনিংয়ের নানা পরীক্ষা ও তারপরের অর্ধবার্ষিক এবং বার্ষিক অ্যাপ্রেজালের কৃতিত্বের ওপরই নাকি নির্ভর করবে ট্রেনিং শেষের পোস্টিং ও বছর তিনেক পরের প্রথম প্রোমোশনের ফলাফল ইত্যাদি!
    এইসব কারণে দু চারজন বাদ দিলে বাকী সব ছেলেরাই পরীক্ষার আগের দিনরাত খুব সিরিয়াস হয়ে পড়াশুনো করত এবং শেষপর্যন্ত আমাদের দলটিতে কেউ কোনোদিন ডি ছেড়ে সি ও পেয়েছে এমনটা হয়নি।
    এছাড়া জনাকয়েক ছিল তারা শুধু পরীক্ষার আগের দিন নয়, অনেক আগের আগের দিন থেকেই পড়াশুনো করত এবং ফলত প্রতিটি টেস্টেই এ, এ প্লাস ইত্যাদি পেত। আমার দুই সহপাঠি ও সন্দীপ মহান্তি এই পরীক্ষা নিবেদিত প্রাণ দলের প্রধান তিনজন সদস্য । ও, এছাড়া বছরশেষে সব জায়গার ট্রেনীদের মধ্যে থেকে তিনজনকে ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে গোল্ড সিলভার ও ব্রোনজ মেডেল দেওয়ারও প্রথা আছে। তাতে আর কী সুলাভ হয় জানিনা তবে মাঝেসাঝে লোকজন একে তাকে দেখিয়ে বলে, "ঐ দ্যাখো, ও হল অমুক ব্যাচের গোল্ড মেডালিস্ট" ইত্যাদি।
    আমরা দেখি, তবে আলাদা করে কিছু চোখে পড়বার মত মনে হয়নি একজনকেও, হয়ত জ্যোতি টোতি কয়লা ছাইয়ের প্রলেপে চাপা পড়ে গেছে। তবে তাদের দেখে খুব কিছু যাকে বলে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত হইনি কোনোকালেও, তাই ঐ মেডাল পাবার জন্যে পড়াশোনা করে সময় নষ্ট করতে যাই নি!

    তবে দেশের এইসব প্রান্তে, মেডেলের ওপর আবার বিয়ের পণের যোগাযোগ থাকাও বিচিত্র নয়!
    একবার আমার পরিচিত এক আন্টির ছেলের এক বন্ধু এসে আন্টির কাছে খুব দু:খ করতে লাগল, পরীক্ষায় সে সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছে বলে। আন্টিও ছেলেটির জন্যে বাস্তবিক দু:খিত হয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে থাকল, সেকেন্ড ক্লাস তো কী হয়েছে, সেকেন্ড ক্লাস কি ফ্যালনা নাকি! ছেলেটি দু:খ ভুলে উত্তেজিত, কী যে বলে আন্টি, ফ্যালনা নয়, কত লস জানে! আন্টি ইষৎ বেকায়দায়, কিসের লস ঠিক মাথায় ঢুকছেনা, চাকরি জনিত কিছু নাকি, সে এখন থেকে কী করে বলা যায়, ইত্যাদি চিন্তা মাথায়। ছেলেটি বেশ করুণাপরবশ হয়ে বন্ধুর মায়ের অজ্ঞানতা দুর করে, বাজারে দর হল ফার্স্ট ক্লাসরা গাড়ি পাবে শ্বশুরের কাছে, সেকেন্ড ক্লাসেরা স্কুটার! বলাই বাহুল্য ঘটনাটি উত্তর ভারতের এবং আন্টি প্রবাসী বাঙালী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারের ঘরণী, ছেলের মা হলেও উত্তর ভারতের বিবাহের বাজার সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান ছিলনা।
    সেইভাবেই কম্পানিতে পোস্ট অনুযায়ী পণের তারতম্য ঘটে এ তো কানাঘুষো শোনা ছিল, মেডাল অনুযায়ী ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিলনা!
    অন্যান্য দলে কী হচ্ছে সে খবর ছিলনা তবে প্রথম থেকেই শক্তিনগর দলের উপরোক্ত তিনজন জোর কদমে মেডালের দৌড়কে মাথায় রেখে চলা স্থির করেছিল তা তাদের রকম সকম দেখেই বোঝা যেত!

    যারা এই পরীক্ষার জন্যে ঐ আগের রাতে পড়াই যথেষ্ট মনে করত তাদের দৌড়ে আমরা দুজন মেয়ে অগ্রণী ছিলাম আর আমাদের প্রায় কাঁধের ওপর নিশ্বাস ফেলত ইন্দোরের রাজেশ। রাজেশ হল আপাদমস্তক সেই যাকে বলে একটি অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন কিন্তু বিগড়ে যাওয়া ছেলে। ইন্দোরের প্রফেসর মা বাপের একমাত্র ছেলে। ওর কথা সব ওর মুখ থেকেই শোনা। বাবার সঙ্গে ওর কথাবার্তা বন্ধ সে নাকি অনেককাল থেকে। মায়ের জন্যে প্রায়ই মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াত, একদিন হঠাৎ ব্যাগ তুলে হাঁটা দিল স্টেশনের দিকে বাড়ি যাবে বলে। দুদিন গায়েব থেকে ফিরে এসে কিন্তু সিংকে ঠিক ম্যানেজও করে ফেলল।
    বাবা মা চাননি ছেলে এত তাড়াতাড়ি পড়াশোনায় ইতি টেনে চাকরি করতে যাক। বাবা মা চায়নি বলেই ও চাকরি করতে এসেছে। কিন্তু ওর ক্লাস ভালো লাগত না, যেত ঐ পর্যন্তই, কোনো কিছু ঠিক করে দেখত না বা শুনত না। অনেকেই ওকে ঠিক পছন্দ করতনা, একমাত্র গুজরাটের দুজনের সঙ্গে খুব ভাব ছিল। এমনিতে সবাই মিলে হইচই, এখানে চলে যাওয়া ইত্যাদিতে খুব উৎসাহ ছিল, যেমন উৎসাহ ছিল দারু পার্টিতে। খুব গর্বের সঙ্গে বলত যে হেন নেশা নেই যা ও করে দেখেনি!
    ঘোষিত নেশাখোর, তবু ওর সঙ্গে কথা বললে মাঝে মাঝে দাগভর্তি বেনিয়মের কঠিন মুখের আড়াল থেকে কেমন একটা সরল বাচ্চা ছেলে উঁকিঝুঁকি মারত।

    রাজেশ দিনে ঘুমোতো (হ্যাঁ,ক্লাসে গিয়েও) আর অনেক অনেক রাত অবধি জেগে থাকত। কোনো রাত্রে আমরা হয়ত শোবার আগে কালভার্টের ওপর বসে গল্প করছি, রাজেশ বন্ধ ট্রেনিং সেন্টারের সামনের বাঁধানো উঁচুনীচু চত্বরটায় অন্ধকারে একা পায়চারী করতে করতে তারস্বরে চেঁচিয়ে গান করত, গানে একটিই লাইন ছিল "হেমা আ আ আ আ, দিল কী কালি"।
    আমি অনেকদিন ভাবতাম ঐ লাইনটির স্রষ্টা বোধহয় রাজেশ স্বয়ং। অনেককাল পরে একবার হঠাৎই টিভিতে চ্যানেল ঘোরাতে ঘোরাতে দেখলাম সাদা কালো সিনেমার দৃশ্যে দেবানন্দের লিপে গানের কথায় "হেমা দিল কী কালি"। সঙ্গে সঙ্গে রাজেশকে মনে করে হেসেছিলাম একা একাই। এত যুগের এত গান থাকতে ঐ বিশেষ গানের ঐ লাইন সে কেন গাইত তা কোনোদিন জানা হয়নি!

    প্রথম টেস্ট হল সেফটি মডিউলের ওপর। মডিউল টি অত্যন্ত ছোট, এক হপ্তার মধ্যেই সিলেবাস শেষ। যেহেতু নতুন ধরণের বিষয় ছিল, মন দিয়ে ক্লাসে শুনেছিলাম। আগের রাতে বই একটু উল্টেপাল্টেই পরের দিন ভালো পরীক্ষা দিলাম। প্রথম টেস্টে প্রায় প্রত্যেকেই এ বা এ প্লাস পেলাম। ব্যস, মনে হল এরকমই তো হওয়ার কথা, চাকরীর ট্রেনিংয়ে যদি সেই কলেজের মত ঘোঁতঘোঁত করে ঘাড় গুঁজে পড়াশোনা করে যেতে হয় তা তো অত্যন্ত বাজে ব্যাপার হবে। পরীক্ষার আগের রাতটুকুই শুধু বই খুলব, আর টকাটক এ টে পাব, এরকম না হলে চাকরীর ট্রেনিং!

    বেশীদিন অপেক্ষা করতে হলনা, পরের পরীক্ষাতেই টেনেটুনে বি। তবে বি বলে কী আর নিন্দের, অনেকেই পেয়েছিল ঐ দেবাশিস অশোক সন্দীপ এরকম কয়েকজন ছাড়া। কিন্তু সিং সাহেব আমাদের দুজনের খাতা হাতে ধরিয়ে এমন একখানা মুখভঙ্গী করলে যেন আমরা বি নয় ডি পেয়েছি বা এফ অর্থাৎ ফেলই করেছি। আমরা অবশ্য হাসি হাসি মুখেই খাতা নিলাম কারণ, পরীক্ষা হত সোমবার, রেজাল্ট দিত পরের শনিবার আর শনিবারে মেজাজ খুব ফুরফুরে থাকত, হাফ ডে হয়েই ছুটি।
    কাগজে কলমে উপস্থিত থাকলেও শনিবার লাঞ্চের পর থেকে ট্রেনিং সেন্টারের লোকেদের আর দেখা যেতনা, সেদিন আবার টাউনশিপের সাপ্তাহিক বাজারের দিন ছিল, বেলা চারটে থেকেই বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাজার বসত। এমনিতে রুক্ষ শুকনো পাহাড়ী এলাকায় সবজির আকাল, সপ্তাহে একদিন কী দুদিন সবজি আসত চালান বাইরে থেকে, দামও আকাশছোঁয়া। এই বাজারে একটু সস্তা টাটকা সবজি পাওয়া যেত, তাছাড়া মাছটা মুর্গিটা। তাই তাড়াতাড়ি বাজার যাওয়ার তাড়াটা সারা টাউনশিপের লোকেদের থাকত।
    ট্রেনিং সেন্টার ছাড়া প্ল্যান্টের ভেতরে অন্যান্য বিভাগেও অবিবাহিত বা বড় সাহেবরা ছাড়া অন্য সাধারণ লোকজনদের তেমন খুঁজে পাওয়া যেতনা শনিবারের বিকেলে। অবশ্য কারোর অফিসে খোঁজ করলে বা ফোন করলে শোনা যেত "অমুক এখন সাইটে আছেন", তা সে সাইট যখন শক্তিনগরের মধ্যে যেখানে হোক হতে পারে বিন্ধ্যনগর অবধি, তখন বাসস্ট্যান্ডের কাছের বাজারই বা সাইট হবেনা কেন!

    তৃতীয় টেস্টে আমরা আবার বি। এবার আর সিং সাহেব শুধু মুখে করুণ ভঙ্গী করে নিরস্ত হলেন না, ক্লাসের শেষে পড়ন্ত বিকেলে ট্রেনিং সেন্টারের সামনে আমাদের দুজনকে একপাশে ডেকে নিলেন। আমার চোখ তখন ইউক্যালিপটাস আর দেবদারুর ফাঁকে অস্ত যাই যাই সুর্যের হোরিখেলায়, রেখার নজর দুরে ডাইনিং হলের দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে গরম চায়ের কন্টেনার, তার দিকে। ক্লাস শেষে গরম চা দুকাপ না খেলে তার মাইগ্রেন শুরু হয়ে যায়।
    এমত দুই অমনযোগী শ্রোতাকে নিয়ে সিং তার পাখি পড়া শুরু করেছে, পিছনে তার লেফটেন্যান্ট দত্তবাবু। মেয়েরা জাতির ও কম্পানির ভবিষ্যত, তারা মন দিয়ে ক্লাস করবে, পড়াশোনা করবে, প্রতি টেস্টে এ প্লাস পাবে তবেই না কম্পানি বড় হবে। ছেলেরা যা খুশী করুক কিন্তু আমরা মেয়েরা পরীক্ষায় ভালো না করলে ট্রেনিং কো অর্ডিনেটর হিসেবে তার এবং শেষমেশ পুরো ট্রেনিং বিভাগের বদনাম। সে নাকি ভাবতে পারেনা যে মেয়ে ট্রেনীরা ছেলে ট্রেনীদের চেয়ে খারাপ ফল করছে।
    কানের কাছে এমনভাবে গুনগুন করলে যে আমি সূর্য উপাসনা ও রেখা চায়ের বাসনা ছেড়ে দু চারটে শব্দ কানে ঢুকিয়েই ফেললাম। তবে পুরোটা শুনলেও তখন মরমে ভালোমত প্রবেশ করেনি, করলে কী বলতাম বা করতাম জানিনা। আকাশে রঙের খেলা দেখে কেমন একটা বিহ্বলতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম, কোনোরকমে বোধে এসে শুধু প্রশ্ন করি " কেন? পরীক্ষা তো দিচ্ছি। মেয়েদের ভালো করতেই হবে এমন কোনো নিয়ম আছে নাকি আপনাদের এখানে?"

    সিং চুপ কারণ সে তো শুধু নামেই সিং, যার মাথায় সত্যিকারের সিং আছে সেই দত্ত বাবু পেছন থেকে ফুট কাটেন, "তোমাদের তো দুটো খাতা দেখার দরকার হয় না, একটা দেখলেই অন্যটা দেখা হয়ে যায়।"

    দেখলে, আমরা পাশাপাশি বসে একসাথে মিলেমিশে লিখি বলে খোঁটা দিল! তা এরকম তো অনেকেই করে যাদের যেমন গ্রুপ তারা একসাথেই পড়ে, পরীক্ষা দেয়, শুধু ঐ যারা মেডালের জন্যে লড়ছে তারা ছাড়া।

    পরীক্ষার দিন দেবাশিস আর অশোক যেমন সামনের সারিতে একা একা একটা বেঞ্চে বসে, দত্ত বা সিং ইত্যাদির নাকের ডগায়, যাতে তাদের কেউ জিজ্ঞেস করে বিরক্ত করতে না পারে বা জিজ্ঞেস করলে উত্তর দিতে না হয়। তা তাদের নিয়ে তো ইতিমধ্যেই হাসিঠাট্টা ইয়ার্কি শুরু হয়ে গেছে দলটার মধ্যে। ততদিনে আলাপ গাঢ় হচ্ছে অন্যদের সাথেও। প্রনব ই তো একদিন বলে গেল দেবাশিস আর অশোক নাকি রোজ সন্ধ্যেবেলায় মার্কেট থেকে ফিরে দিনের দিনের পড়া করতে বসে, সেই কারণে কেউ ওদের রুমের আশেপাশেও যায়না। ওরা এসব নিয়ে আলোচনা করছিল একদিন রাস্তায় বসে, আমি আর রেখা তখন ফিরছিলাম। আমাকে ডেকে মুখভঙ্গী করে প্রনব আর বিদিশার ওম বলল, "এই নমুনাদের তুই কোত্থেকে নিয়ে এসেছিস বলত?" আমার একটু গায়ে লাগল, অল্প ঝগড়াও করে ফেললাম, পড়ছে বেশ করছে, বদমায়েসী তো করছেনা পান্ডের মত। তবে সত্যি মাঝে মাঝে সহপাঠীদের মুখে দিনরাত টেকনিক্যাল কচাকচি শুনে শুনে আমারও বেশ অসহ্য লাগতে শুরু হয়েছিল।

    দেবাশিস সব ক্লাসে অগণিত প্রশ্ন করবে, লোকে এক লাইন পড়িয়েছে কী পড়ায়নি দেবাশিসের প্রশ্ন শুরু হয়ে যেত। সেসব প্রশ্ন যে খুব বুদ্ধিদীপ্ত হত তা নয়, বেশীরভাগই শুদ্ধ আলপটকা, কিন্তু বেচারা যারা পড়াতে আসত তারা তো কিছু প্রফেশন্যাল নয়, ঘাবড়ে গিয়ে একাকার, যা সে জানে সেটাও ঠিকমত বলতে পারতনা। আর দেবাশিস বসে বসে বিজ্ঞের হাসি হাসত। যেমন একজন কোনো একটা স্কীম পড়াচ্ছে, দেবাশিস বিভিন্ন পাইপের ডায়া জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করল। পাইপের কচাকচিতে স্কীমটাই কীরকম গুলিয়ে গেল বেচারা মাস্টারের!
    সবাই বলত দেবাশিস সেইসব প্রশ্নই করত যার উত্তর সে আগে থেকে কোথাও দেখে এসেছে!
    অশোকের আবার উল্টো রোগ। যে যা প্রশ্ন করত ক্লাসে অশোক উত্তর দেবে, অন্য কাউকে কোনো কথা বলতে দেবেনা, কেউ বলছে কিছু তার মাঝখানে ঢুকে পড়বে। কোনো প্রশ্ন করেছে ক্লাসে আর অশোক সে সম্বন্ধে কিছু জানেনা এরকম অবস্থায় সে প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ত, পাগলের মত প্ল্যান্টে এর ওর কাছে যাচ্ছে, লাইব্রেরী থেকে বই তুলে আনছে। এরা আবার নিজেদের দলের কারুকে আলোচনার যোগ্য মনে করত না, কিন্তু অনেকেই ছিল ধারাবাহিকভাবে না হলেও, ক্লাসে বেশ বুদ্ধির প্রশ্ন করত, মন্তব্য করত। দেবাশিসরা আবার এরকম আলোচনায় "এমা, এটাও জানেনা" মুখ করে বসে থাকত।
    দোষের মধ্যে আমাদের কলেজে পাওয়ার প্ল্যান্টের ব্যাপারে বেশ অনেক কিছুই পড়ানো হত, উদাহরণ হিসেবে সব কিছুতে আসত.....তাই বলতে নেই এমনকী আমিও অনেক কিছুই জানতাম যেটা সেই ট্রেনীংয়ের সময় খুব কাজ দিয়েছিল, তবে তাই বলে ওরকম একখানা সবজান্তা ভাব করলে লোকে অপছন্দ তো করবেই!

    মহান্তি অবশ্য চালু জিনিস, সেও পড়ে তবে ওরকম লোক দেখিয়ে নয়। তার সঙ্গী পরেশ, দলের কনিষ্ঠতম, শুধু আমার ভাই বলে বলছিনা এত ভালো ছেলে আর হয়না। তার সন্দীপভাইয়ের জন্যে নোট টোট প্রশ্ন উত্তর এসব পরেশই তৈরি করে রাখে, সন্দীপ তাই আড্ডা টাড্ডা দিয়ে ঘুরে বেড়ায়, মাঝে মাঝে শুধু চোখ বুলিয়ে নেয়, তাতেই হয়ে যায়। আসলে পরীক্ষাগুলো এমন কিছু হাতিঘোড়া ছিলনা, একটু খেয়াল করে ক্লাসে শুনলে বা তিন চার দিন ভালো করে পড়লেই ভালো করা যায়, আসলে আমাদের ইচ্ছেটাই ছিলনা। কলেজের মত এখানে এসেও পরীক্ষা ক্লাস এসব নিয়ে লড়াই করতে ভালো লাগছিল না। প্ল্যান্ট ভিজিট হোতো যেদিন বা পরবর্তীতে হাতেকলমে ট্রেনিংয়ে কিন্তু অনেক বেশী উৎসাহ পেতাম সবাই। তা বলে দত্ত এভাবে কথা শুনিয়ে চলে যাবে!

    আমি এবার পূর্ণ চেতনায়,যুগপ্‌ৎ সিং ও দত্তের দিকে তাকিয়ে বলি, "তাহলেই দেখুন, আপনাদের খাতা দেখার কাজ কত কমিয়ে দিয়েছি আমরা। আপনাদের তো ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ আমাদের।"
    বলে আর দাঁড়াই না, দৌড়াই চায়ের কন্টেনারের পানে, হতবাক ট্রেনিং কো অর্ডিনেটর দ্বয়ের এই এতবড় মাছিগেলা হাঁ। ওদিকে জাতি ও কম্পানির সম্ভাব্য আঁধার ভবিষ্যতের আঁচ পেয়ে অরুনদেবও লজ্জায় অন্তত সেদিনকার মত ডুব মারলেন।

    সিং সাব বিহারের লোক, মেয়েদের সম্বন্ধে তখনো ভাবনা চিন্তা গুলো বেশ চেনা কিছু গন্ডীর মধ্যেই আটকে ছিল বিশেষ করে ওনাদের দেশ গাঁয়ে। আমার কেমন পরে মনে হয়েছিল উনি সেই প্রচলিত ভাবনা গুলো ( "মেয়ে মাত্রেই মা, ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ার দায়িত্ব তাদের ওপর, মা ভালো না হলে সন্তান ভালো হয় না" )থেকেই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে এক্ষেত্রেও মেয়েদের ফাঁকি না দিয়ে ভালো রেজাল্ট করা উচিৎ ইত্যাদি। নাহলে কোন যুক্তিতে উনি আলাদা করে মেয়েদের পরীক্ষায় ভালো করতেই হবে ছেলেরা যে চুলোয় যায় যাক, বললে তা ঠিক পরিস্কার হয় না। হয়ত ওর নিজের কাছেও তা খুব স্বচ্ছ ছিলনা তাই আমার প্রশ্নের সোজা উত্তর দিতে পারেনি!

    শক্তিনগরের ছমাস ট্রেনিংয়ের দুটি ভাগ ছিল। প্রথমটি হল সাধারণ, তার অন্তর্গত সেফটি, ফাইন্যান্স, এইচ আর, কেমিস্ট্রি আর পাওয়ার প্ল্যান্টের নানা টেকনিক্যাল দিক যার মডিউলের নাম হল পাওয়ার প্ল্যান্ট ফ্যামিলিয়ারাইজেশন বা পি পি এফ। ইহাই ভিত্তি, ইহাই বাইবেল বা বেদ ইত্যাদি। প্রথম তিনমাস এসব নিয়েই জ্ঞানার্জন চলে, অবশ্যই পিপিএফ ই প্রধান এতে। দ্বিতীয় পর্যায়ে মানে পরের তিনমাস চলে বিষয়ভিত্তিক ট্রেনিং,ইলেকট্রিক্যাল, মেক্যানিকাল, ইনস্ট্রুমেন্টেশন ইত্যাদি যে যাতে আছে।
    আমাদের বিষয়ের জন্যে সেই আমলে শুধু শক্তিনগরেই একটা আলাদা ল্যাবরেটরী কাম ওয়ার্কশপ ছিল। সেই ল্যাব বা ওয়ার্কশপ ছিল ক্যাম্পাসের মধ্যেই, ট্রেনিং সেন্টার থেকে কিছুটা এগিয়ে স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশন সেন্টারের দিকে যাওয়ার পথে ডানদিকে।

    সেখানে যেতে গেলে একটা নালা পেরোতে হত, নালার ওপর কাঠের ঢেউখেলানো ছোট্ট ব্রিজ। ব্রিজ পেরোলেই একটা ফাঁকা ঘাসজমি, চারদিকে ঝোপঝাড় জঙ্গল, মধ্যিখানে ওয়ার্কশপের একতলা বড়ি, মাথায় টিনের ছাউনি। আদতে একখানা বিশাল হল, পার্টিশন দিয়ে দিয়ে সেখানে বিভিন্ন ল্যাব সেট করা হয়েছে, আবার একটা ক্লাসরুমও আছে, এছাড়া অধিকারীর ছোট অফিস।

    কাঠের ঐ ব্রিজের ওপর দিয়ে আমি আর রেখা একছুটে পা ঘসে ঘসে উঠে নেমে যেতাম, ছোটবেলার স্লিপে চড়ার স্মৃতিকে ঝালিয়ে নেওয়া আর কী!
    চারপাশে এমনই অনাদরের ঝোপজঙ্গল যে চলার পথে গাছে গাছে ঝোলা পাকা ধুঁধুল বা পুরুল, কখনো বা বাবুই পাখির বাসা এসে মাথা নাড়িয়ে দিত।
    এহেন ল্যাবে দুপুরবেলা নানা আওয়াজ, টি টি ট্টি... কু কু...টাক টাক টাক.... আরো কত রকমের ডাক।
    বড় জানালার বাইরে তাকালে মনকেমনীয়া ডানায় ভর দিয়ে পৌঁছে যেতাম আমার গ্রামের দখিন মাঠের ধারে, মধুগুলগুলি আম গাছের ছাওয়ায়। চারিদিকে আম পাকার গন্ধ, আমার নাকের ডগার কাছে বোলতা/ভোমরা ভোঁ ভোঁ গর্জন করছে, আমার মুখে ছোট ছোট কালো পোকা তাড়ালেও ফিরে ফিরে ঘুরে আসছে, ঘাড়ের ওপর হলুদ কাঠপিঁপড়ে সুড়সুড় করছে। অথবা রুরকীতে, স্কুলের মাঠের শেষে মরা খালের পারে, ইউক্যালির গায়ে সাইকেল ঠেকানো, আমরা খালে নেমে গেছি, বড় বুনো তেঁতুল গাছে ঢিল মারছি, ঝিরঝিরে তেঁতুলপাতার হাওয়া ঘাম শুকিয়ে ঠান্ডা করছে, খেয়াল নেই সেদিকে, মাটিতে পড়া তেঁতুলে হাতের চেটোয় মুছে নিয়ে কামড় বসালাম।

    আমার যখন মধু গুলগুলি আম ফুটো করে তার রসে ভরপুর হয়ে দখিন মাঠের হাওয়া খেতে ইচ্ছে করে, যখন মরা খালে নেমে তেঁতুল পাড়তে ইচ্ছে করে তখন আমি যন্ত্রপাতির নানা কলকব্জা অনুসন্ধানে এ ল্যাব ও ল্যাব করি, হাতে ঢিলের জায়গায় তেলকালি, সারা গায়ে ঝিরঝিরে হাওয়ার বদলে টেম্পারেচার বাথের সাদা গুঁড়ো!
    এত কিছু আপোশের পরেও কলঙ্কিনী মাছরাঙা সাব্যস্ত হই শুধু একটু কম পড়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে!

    হে দুনিয়া দিল কী কালি!
  • PM | 86.96.160.7 | ১৯ মার্চ ২০১২ ১৭:২৯514887
  • শ্রাবনি, আপনার লেখা নিয়ে কোনো কথা হবে না।

    আমি আপনার কলম থেকে একটা গল্পো পড়তে চাই যেটা মুখ্য চরিত্র একজন পুরুষ এবং তার দৃষ্টিকোন থেকেই বাকি চরিত্র আর ঘটনাগুলো দেখা। আমার মনে হয় এটা খুব ইন্টেরেস্টিং হবে।
  • sayan | 160.83.96.83 | ১৯ মার্চ ২০১২ ১৭:৩২514889
  • অসাধারণ! শুধু শেষ দু'টো প্যারা .... কারুর কারুর লেখা এমন জ্যান্ত হয়! একটা বন্ধু ছিল, কলেজফেরতা পথে মাথার উপর ঝুঁকে থাকা আমের বৌলের গন্ধে জিভ চাটতে দেখে ফেলেছিলাম একদিন। মাজিদ মাজিদি'র রঙ-এ-খুদা সিনেমাটায় একটা পাখী ডাকত এমন। কোনও পুরনো গন্ধ বা আওয়াজ হঠাৎ এক ধাক্কায় কেমন করে পুরনো দিনগুলো ফিরিয়ে দেয়, না?
  • shrabani | 117.239.15.28 | ১৯ মার্চ ২০১২ ১৭:৩৮514890
  • সায়ন এক্কেবারে ঠিক, সেদিনও পেয়েছিলাম, আজও পেলাম আমের গন্ধ, বউলের গন্ধ এমনকি বিরক্তিকর পোকাগুলোর স্পর্শও...এরা শুধু আমের সময়ই থাকে!:(((((
  • Nina | 12.149.39.84 | ২০ মার্চ ২০১২ ০০:৪৮514891
  • শ্রাবণী
    এরকম কথার ছবি আঁকা--না না ফটো তোলা--না না একেবারে যেন সিনেমা দেখছি---
    উফ! এত ভাল লাগলে আজকাল কেমন মনের মধ্যে গুনগুন করে --অসাম শা---:-)
  • shrabani | 117.239.15.28 | ২১ মার্চ ২০১২ ১৬:৩৩514892
  • হঠাৎ করেই মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বাড়ি যাওয়ার সুযোগ এল। মন তো সর্বক্ষণই যাই যাই করত কিন্তু সাহস করে ব্যবস্থা করে উঠতে পারিনি। অথচ চেষ্টা করলে উপায় হত না তা হয়ত নয়।
    কলকাতা তো আর রেখাদের কেরালার মত তিন দিন তিন রাতের ট্রেন জার্নি নয়, বেলা দুপুরে ট্রেনে উঠে পরদিন আলো ফোটার আগেই হাওড়ায়, হিসেব করলে আরো অনেকের থেকেই অনেক কাছের বাসিন্দা আমরা।
    একদিন ক্লাসে অশোক বলল সে পরের শনিবার বাড়ি যাচ্ছে, তার ছোট বোনের বিয়ে। ক্লাস কামাই করে অশোক যাচ্ছে আর আমি পারব না, মনে জোর এসে গেল । অশোকের বাড়ি যদিও বীরভূম সে প্রথমে কলকাতাই যাবে, কীসব কাজ আছে। সেসব মিটিয়ে একদিন পরে বাড়ি যাবে, ফেরার সময় অবশ্য আর কলকাতা হয়ে ফিরবেনা, অন্য কী একখানা রুট দিয়ে আসবে। তার মানে ওর সঙ্গ ধরলে প্রথমবার অজানা পথে একা যেতে হবেনা।
    আমার ইচ্ছে শুনে অশোক খুশীই হল, পথের সাথী কার না ভালো লাগে, পরামর্শ দিল সিং সাবের সাথে কথা বলতে। শনিবার গিয়ে পরের শনিবার ফেরা, রবিবার পৌঁছনো, সোমবার থেকে আবার ক্লাসে। পি পি এফ শুরু হয়েছিল, একটা পরীক্ষা সবে হয়েছে, পরের পরীক্ষার দেরী আছে। ফেরার সময় একাই ফিরব, তা যাওয়ার পথে তো রাস্তা চেনা হয়ে যাবে, তখন আর একা দোকা কী এসে যায়!
    সিং সাহেবের সঙ্গে কথা হয়ে গেল, উনি আপত্তি করলেন না। পরে দেখা গেল অনেকেই ঐ পরীক্ষা নেই সময়টায় বাড়ি যাচ্ছে।

    শনিবার প্রথম ক্লাসের শেষে হাজিরা খাতায় সই করে দৌড়তে দৌড়তে বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে রেনুকূটের বাসে চড়লাম। দৌড়লাম একদম আক্ষরিক অর্থেই। আমাদের ট্রেনিং সেন্টারটা এমন মাঝপথে যে সেখান থেকে খালি রিক্সা টিক্সা পাওয়া যেতনা। মার্কেট অর্থাৎ শপিং কমপ্লেক্সের কাছে গিয়ে রিক্সা ধরতে হত। সেদিন আমাদের এমনই ভাগ্য যে সেখানেও রিক্সা ছিলনা, বেলা নটা এমন একখানা বদখত সময় যে অফিসের গাড়িঘোড়া ইত্যাদির রাস্তায় নামার সময় হয়না, তাই লিফট পাওয়া গেলনা, যানের আশায় ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনপানে তাকাতে তাকাতে হাঁটতে শুরু করে শেষে দেখি বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেছি । তবে বাড়ি ফেরার আনন্দে তখন সেই পঙ্গুর গিরি লঙ্ঘনের জোর আমাদের মত প্যাংলাদের শরীরেও, ওটুকু রাস্তা হাঁটা তখন কিছুই না!

    এমনিতে কিছু না তবে বাসে বসে কিছুটা যাওয়ার পর টের পেলাম খিদে খিদে ভাব। সকাল আটটার দুইখান পরোটা এক্সারসাইজের চোটে হজম হয়ে গেছে। এ অবশ্য বিচিত্র কিছু নয়, যবে থেকে এখানে এসেছি দেখছি ক্ষিদে যেন বেড়ে গেছে। অন্যদের কথা জানিনা কিন্তু রেখা আর আমার একই অবস্থা, সর্বদাই বেশ খাই খাই ভাব। হতে পারে এলাকার জল ভালো, অথবা এও হতে পারে ঠিকঠাক খেতে না পেয়ে পেয়ে হেংলি হয়ে গেছি। আমার সন্দেহ দ্বিতীয়টাই সত্যি তবু সে কী আর মুখে বলা যায়, তাই প্রথমটা ভেবে নিয়েই শান্তি পেতাম, স্বাস্থ্যকর জায়গায় আছি!
    রোজ দুপুরে লাঞ্চের আগে ক্লাস শেষ হওয়া মাত্র আমি আর রেখা সকলের আগে দৌড়ে ডাইনিং হলে আসতাম। বাকীরা রুমে গিয়ে হাত মুখ ধোয়া ইত্যাদি সেরে ধীরেসুস্থে খেতে আসত যখন তখন আমাদের খাওয়া শেষ। প্রথম দিকে এনিয়ে অনেকেরই এ নিয়ে টুকরো মন্তব্য, তির্যক চাহনি এসব শুনেছি বা দেখেছি, গায়ে মাখিনি। যে প্রান্ত থেকে দলের বেশীরভাগ সদস্য এসেছে সে সব জায়গায় মেয়েরা আগে এসে হুড়মুড় করে হ্যাংলার মত খাবার থালায় হামলে পড়ছে এটা ওদের সমাজ ব্যবস্থায় একটু অদ্ভুত তো বটেই। আমার সুবিধে ছিল রেখার মত মেয়ে আমার সঙ্গী। ওদের দেশে সাধারনত "মেয়েরা এই করেনা, ঐ করেনা, মেয়েদের এরকম সাজেনা" ইত্যাদি বাধানিষেধ উত্তর ও মধ্য ভারতের মত প্রকট নয়, প্রায় নেই বললেও চলে। দলের বাকীরা ততদিনে আমাদের সম্বন্ধে যা ধারণা করার করেই নিয়েছে, তবু মাঝে সাঝে ঠাট্টার ছলে এই প্রসঙ্গ শুনেছি যে তাদের দলের দুই মহিলা সবার আগে খেতে যায়। কেউ কেউ দু একবার বলেওছে, "তোমরা কী ব্রেকফাস্ট করনা ঠিকমত, এত খিদে পায় কেন?" কিন্তু এ নিয়ে কোনোদিন সরাসরি আমাদের কেউ কিছু বলেনি (কেনই বা বলবে!)।

    তবে আমরা কেন সবার আগে দৌড়ে আসতাম তা বোধহয় শেষপর্যন্ত কেউ জানতে পারেনি বা আন্দাজ করতে পারেনি, আমাদের অসভ্য বা ভারতীয় নারীসমাজের কলঙ্ক ভেবে নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল, এর পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে তা কেউ ভাবেনি। সাধে কী মনে হয়,গোয়েন্দাগিরিতে ছেলেরা কোনোদিনই পটু হয়না, ভাবনাচিন্তাও বড় একমাত্রিক, মেয়েরা শুধু সুযোগের অভাবে পিছিয়ে!

    রেখার ঘরে ছিল আচারের শিশি। আমি ডাইনিং হলে দুটো থালায় ভাত তরকারী আর ডাল নিতে নিতে রেখা ঘর থেকে বাটিতে করে আচার নিয়ে আসত। সেই আচার দুভাগ করে দুজনের পাতে নিয়ে তার ওপরে ভাত চাপা দিতাম। সবাইকে দিয়ে খেতে গেলে সবেধন দু শিশি আচার দুদিনে শেষ হয়ে যায়, তাই এই লুকোচুরি। অড়হর ডাল, ভাত, তরকারীর পাতে অভিনব কুঁদরু, লৌকি, তরুই (ঝিঙে নয় ধুঁধুল) ঘুরেফিরে, একই মেনু। তরকারীর রেসিপিও এক, পেঁয়াজ টমেটো দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাজাভাজা। আচার ছিল বলে সেইসব কঠিন দিনে কোনোরকমে ভাত ডাল তাই দিয়ে গলধ:করন পিত্তিরক্ষা হত। রেখার আনা আচার শেষ হতে না হতে আমার বাড়ি যাওয়া ও নতুন আচারের আর ঘিয়ের সাপ্লাই নিয়ে আসা। অগস্ট মাসে আবার রেখা বাড়ি গিয়ে আচার আনল। ছমাস এই একইভাবে চলেছিল আমাদের, রোজ ঐ দৌড়ে লাঞ্চ করতে আসা, ভাতে লুকোনো ঘি আর আচার!
    তা এরকম রাজকীয় লাঞ্চের পর যে আমরা সারা দুপুর বিকেল অপেক্ষা করে থাকব কখন বাজারে গিয়ে শক্তিতে ছোলে ভটুরে বা মসালা দোসা খাব, অথবা ষষ্ঠীর দোকানের রোল আর তারসাথে পেটভরে চাট ফুচকা, এতে অবাক হওয়ার কিছু আছে কি! বাজারে ঘুরতাম শুধু খাওয়ার কথা চিন্তা করে, সেই সম্বন্ধীয় কেনা কাটায়। কখনও ম্যাগি কিনছি, ডিম কিনছি, কখনও বা মালয়ালী বেকারীর অখাদ্য কেক বিস্কিট। তবে জল হাওয়ার কিছুই কী আর গুণ ছিলনা, ঐসব নানাবিধ খেয়েদেয়েও দিব্যি হজম হয়ে যেত, একদিনও পেটের রোগে ভুগেছি বলে মনে পড়েনা।

    ট্রেন বেলা এগারোটায়, শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস। তখন এই ট্রেনটি ছাড়ত রেনুকুট থেকে, কোনো বিশেষ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্য মানে দূর্গাপুজা বা ক্রিসমাসের ছুটি ইত্যাদি ছাড়া রেনুকূটের যাত্রীরা কেউ ট্রেনে আগাম রিজার্ভেশন করতনা। রেনুকূটে নেমে প্রথমে স্টেশনে গেলাম টিকেট কাটতে। যতদুর মনে পড়ে বাস রাস্তা থেকে নীচে নেমে স্টেশনে যেতে হত , পাহাড়ের গায়ে কাটা সিঁড়ি বেয়ে। খালি ট্রেন প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে, এগারোটা বাজতে তখনও কিছুটা সময় বাকী। আমরা আবার উঠে এলাম রাস্তায়, উদ্দেশ্য, পেলে কোথাও একটু ভাত রুটি জাতীয় খাবার ভরপেট খেয়ে নেব। ট্রেনে প্যান্টি নেই এ সংবাদ জানা ছিল, খাওয়ার সময়টাতে সেরকম কোনো বড় স্টেশন পড়বেনা পথে, এও জানিয়ে দিয়েছে শুভাকাঙ্খীরা।
    বাস রাস্তায় উঠে এলাম খাবারের খোঁজে। বেলা বেশী হয়নি কিন্তু রোদ তখনই বেশ চড়া। আশেপাশে তেমন কোনো খাবারের দোকান কিছু চোখে পড়ল না। জায়গাটার তেমন ভালো চিনিনা, তার ওপর হাতে অঢেল সময় নেই যে ঘুরে ফিরে খুঁজে দেখব। বাস স্ট্যান্ডে ও কাছেপিঠে দু চারটে গুমটি যা পাওয়া গেল সেখানে এত তাড়াতাড়ি চা আর ধোঁয়া ধোঁয়া কাঁচের বয়ামে অদ্ভূত দর্শন বিস্কিট ছাড়া কিছু নেই। পানের দোকানে পান ছাড়া চিবিয়ে খাবার বলতে লজেন্স আর পানীয় রাখা আছে ফ্রুটি থামস আপ ইত্যাদি।
    গরমে পিচের সোজা রাস্তা ধরে দুজনে কিছুটা এগৈ, মানে স্টেশনকে দৃষ্টির বাইরে যেতে না দিয়ে যতটা হাঁটা যায় ঠিক ততটাই। রাস্তা থেকে একটু উঁচুতে একধারে চোখ পড়ে যায় কাঁকর মাটির দাওয়ায়। একটা ছোট্ট একঢালা চালা, ধাবার মত মাটির উনুন, একাধিক মুখওয়ালা,তাতে গোটা তিনেক মাঝারি সাইজের অয়ালুমিনিয়ামের ডেকচি বসানো। আগুন দেখা না গেলেও কিভাবে যেন মনে হয় উনুন জ্বলন্ত, আশা জাগে।
    একটি বৃদ্ধা বসে আছে, সাজপোষাক দেখেই বোঝা যায় এখানেরই মাটির মানুষী। দোনোমোনো করে জিজ্ঞেস করেই ফেলি খাবার আছে কিনা। সরাসরি উত্তর না দিয়ে নথ নাড়িয়ে ফোকলা দাঁতের মধ্যে দিয়ে কীসব বলতে শুরু করে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমাদেরই উদ্দেশ্যে, তাই এগিয়ে কান খাড়া করে শুনতে গেলাম, যদি বোঝা যায়। বোঝাশোনার আগেই চালার পেছন দিক থেকে ময়লা ধুতি ভাঁজ করে পরা, খালি গায়ে মাথায় গামছা বাঁধা এক প্রৌঢ় দৌড়ে এল, খদ্দের এসেছে। তার কথাবার্তা দেহাতী হলেও বুঝতে অসুবিধে হলনা।
    ভাত তরকারী ডাল পাওয়া যাবে তবে রুটি এখন পাওয়া যাবেনা, রুটি হয় বিকেলে। সেই বৈশাখী সকালে রেনুকূটের পিচগলা রাস্তায় অসময়ে আকাশের চাঁদ কেউ এনে দিলেও বোধহয় এত খুশী হতাম না যত না খিদের মুখে ভাত তরকারীর কথা শুনে হয়েছিলাম!
    অবশ্য সব সুখের মুহূর্তের মত এও ছিল ক্ষণিকের। চালার সামনে খোলা আকাশের নীচে বাঁশের নড়বড়ে একটি বেঞ্চির মত কিছুর দুদিকে দুজনে ব্যালান্স করে বসলাম, দোকানে তখন প্রৌঢ় ও বৃদ্ধার (মা ছেলে বোধহয়) মহা ব্যস্ততা। ডেকচিগুলোর ঢাকা খুলে সবেগে হাতা নাড়ছে একজন তো আর একজন শালপাতা ধুচ্ছে। শেষে ভাত এল, বাটিতে ডাল ও আলুর একটি তরকারী, নামে যদিও আলু মটর তবে ঝোলে ডুব দিয়ে খুঁজলেও মটর পাওয়া যাবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। জলের মত ডাল ভাতে মেখে মুখে দিয়ে আমার সেই অবস্থা, পারি না ফেলতে না পারি গিলতে। একে যদি এরা ভাত বলে তাহলে নিশচয়ই ধানকেই এরা চাল বলে!

    অশোকের দিকে তাকিয়ে দেখি খুব মন দিয়ে খাচ্ছে, একবার আমার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে অবস্থা দেখে একখানা করুণ "কী আর করা যাবে বল, যা পাচ্ছিস কষ্ট করে খেয়ে নে" মুখভঙ্গী করল। চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসছিল, এত খিদে পেয়েছে আর এই খাবার। গন্তব্য যদি বাড়ি না হত নির্ঘাত ডাক ছেড়ে কেঁদে ফেলতাম। কষ্ট করে চিবোতে লাগলাম। ডাল তো ঐ ছিরির, তবু আলুর ঝোলের লাল টকটকে রঙ দেখে আশা জাগে, হয়ত ঝাল ঝাল মুখরোচক হবে। মুখে তুলে দেখি ও হরি, সে আসলে সুন্দরী বিরহিনী আলুর ঝোল, পিয়া (তেল মশলা ইত্যাদি হবে) বিরহে বেসোয়াদী তার জীবনের সার, ঐ বাইরের রূপ রঙ টিই কোনোমতে টিকে আছে!
    ঐরকম খাওয়া তার ওপরে বুড়ি আমার সামনে বসে ক্রমাগত কত কী বলে যাচ্ছে, দেহাতী উচ্চারণ আর ফোকলা দাঁত ও নাকের নথের কৃপায় সেসব আমার কিছুই বোধগম্য হয়না। একটু আধটু যা বুঝলাম সে আমি গয়না পরিনি কেন, টিপ পরিনি কেন, ঐ ছেলেটা আমার কে হয়, এর সঙ্গে কোথায় যাচ্ছি, এইসব নানা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কোনোরকমে ফেলে ছড়িয়ে খেয়ে, দাম মিটিয়ে বুড়ির খপ্পর থেকে পলায়ন করি দুজনে!
  • shrabani | 117.239.15.28 | ২১ মার্চ ২০১২ ১৬:৫৭514893
  • স্টেশনে এসে দেখি অল্প ব্যস্ততা আমাদের ট্রেন কে ঘিরে, কালো পোশাকে টিটি, মালের ঠেলা, কিছু যাত্রীও উঠছে। এখন কী হয়েছে জানিনা, দুবার যাবার পথে যা দেখেছি (আসার পথে বাস ধরার তাড়ায় কিছু দেখার সময় থাকেনা) রেনুকূট স্টেশন আমার খুব পছন্দ হয়েছিল, শান্ত,নিস্তরঙ্গ, পরিস্কার, চারিদিকের সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যপট। এরকম একটা স্টেশনে ইচ্ছে করে বেঞইতে চুপচাপ সারা দুপুর বসে থাকি আলসেমিতে, অনেকটা সময় শুধু বসেই কাটিয়ে দিই।
    সেসময় শক্তিপুঞ্জে শুধু স্লীপার ক্লাস আর জেনারেল ডাব্বা। নির্ধারিত কামরায় উঠে দেখলাম এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত খালি। একদিকে ছটা বার্থের দুটোয় আমরা দুজন আর একটি পরিবারের চারজন। পরিবারটিতে একটি মহিলা, তিনি কোল ইন্ডিয়ার একজন অফিসারের বউ। কলকাতায় চলেছে, সঙ্গে তার বাবা মা, এনারা বেড়াতে এসেছিল মেয়ের কাছে, এখন ফিরছে, এছাড়া সঙ্গে মহিলার বছর পাঁচেকের বাচ্চা মেয়ে! ভদ্রমহিলা খুব আলাপী, এদিকে আছেন বছর তিনেকের ওপর, অনেকবার যাতায়াত করেন এই ট্রেনে, জানালেন বছরের কয়েকটা সময় ছাড়া এদিকে এরকমই খালি থাকে ট্রেন। পরিবারটিকে আরামে বসতে দিয়ে অশোক চলে গেল পাশের খোপে, সেখানে কেউ নেই, পা ছড়িয়ে শুতে বসতে পারবে। আমি স্থির করলাম পরিবারটির কাছাকাছি থাকব, এরকম খালি ট্রেনে একা অন্য কোথাও বসাটা ঠিক হবে কিনা কে জানে। তবে ওদের সঙ্গে না বসে এদিকের সাইড বার্থের নীচেটা আমি নিলাম। লম্বা সীটে আরাম করে গা এলিয়ে দুই জানালা জুড়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে যাত্রার শুরুটা মন্দ হল না।
    একটু চলতে না চলতেই কিছু গরম মালুম হতে লাগল, ওদের কাছে প্রচুর জল, কুলারে বরফ ভরে এনেছে। আমাদের সঙ্গে একটা জলের বোতলও নেই, সেযাত্রায় চিন্তামনি হয়ে চিনি বা জল ওনারাই যোগান দিলেন। ভদ্রমহিলা দুপুরে জোর করে নিজেদের সঙ্গে আমার রুমালেও বরফ বেঁধে দিলেন, ঘাড়ে মাথায় সেই ঠান্ডা রুমাল বোলাতে থাকলাম সবাই, নাহলে নাকি এত গরমে শরীর খারাপ করবে। ওদের কথা শুনলেও বলতে নেই সেই সব দিনে অত গরম ঠান্ডার বোধ আমাদের ছিলনা। মে মাসে শক্তিনগরেও বেশ গরম, কিন্তু আমরা কুলার এসি ইত্যাদি ছাড়াই দিন কাটাচ্ছিলাম, কোনো অসুবিধে হয়নি।
    এছাড়া যাত্রাপথে গরমে কাতর হবার সময় তখন কোথায়, ট্রেনের বাইরের দৃশ্যাবলী আমাকে টেনে ধরে রেখেছে। ছোট ছোট স্টেশনের পরে এক অপেক্ষাকৃত বড় স্টেশন আসে, নাম দেখে আমি অবাক, এত চেনা নাম, বুদ্ধদেব গুহের কত গল্পে পড়েছি।
    সেইই ডালটনগঞ্জ, সে যে এই রাস্তায় আমি জানতামও না। এই তাহলে ছোটনাগপুর, পালামৌ, এখানেই বেতলা, নেতারহাট, কোয়েল। সব অতিচেনা নামগুলো মাথার মধ্যে স্লাইডের মত ভেসে যায় একের পর এক। বাইরে তাকিয়ে মুখ ফেরানো যায়না, জল জঙ্গল, উঁচুনীচু,একী শোভা চারিদিকে।
    গরম টরম তখন তুচ্ছ হয়ে গেছে আমার কাছে। ওদিকে অশোক নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছে, বেচারা রাতে পড়াশোনা করেছে বোধায়। উল্টোদিকের ওরা আবার টাওয়েল চাদর ইত্যাদি দিয়ে জানালায় পর্দা আড়াল করেছে রোদের হাত থেকে বাঁচতে। কাকে আর বলি, কার সঙ্গে ভাগ করে নিই মনের আনন্দ? ভালো করে দেখি আর মনে মনে স্মৃতিপটে এঁকে নি, কাল বাড়ি পৌঁছে বলবার অনেক লোক পাব, "জানিস কাল কোয়েল দেখলাম, ভাবতে পারিস, কোয়েলের কাছের সেই কোয়েল!"

    এক দুই করে যাত্রী উঠছে নেমে যাচ্ছে, দুরের যাত্রী নয়, হয়ত ফাঁকা দেখে স্লীপার ক্লাসে উঠে পড়ছে তবে দরজার আশেপাশেই থাকে ভেতরে আসেনা, কেউ তাড়া দিলে বা ধরলে নেমে যাবে। কামরার মাঝখানে সেই আমরা কজন। সহযাত্রীরা সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি শুধু জেগে। আশ্চর্য অত গরম কিন্তু আমার সেরকম তৃষ্ণা নেই, ঐ ছিরির খাওয়া হয়েছে দিনে তবু ক্ষুধাও নেই, বুঁদ হয়ে আছি প্রকৃতিতে।
    শক্তিনগর বাসের ঐ ছমাসে দুবার বাড়ি যাওয়া আসা, এত ভালো লেগেছিল কিন্তু পরে আর কোনোদিন ফিরে যাওয়া হয়নি। এখন হয়ত ঐদিকে যেতে হলে বিরক্ত হব, ভয় পাব ঐসব এলাকায় কাজ পড়লে! ঝাড়খন্ড বিহারের এসব দিকে নতুন প্রজেক্ট আসছে বেশ কয়েকটা কিন্তু এমন অবস্থা যে ওদেশীরাও নিজেদের এলাকায় যেতে চায়না বলে শুনি। আমাদের ভালো লাগা গুলোও কেমন স্থান কাল পাত্রে বদলে বদলে যায়। কিন্তু স্মৃতি বদলায় না, আজ এতদিন পরে লিখতে বসে কোয়েলকে প্রথম দেখার রোমাঞ্চের স্মৃতি জেগে উঠে আমার সারা শরীরকে আবারো এক অপূর্ব ভালোলাগায় ভরে দিল!

    বিকেল হয়ে এসেছে, ঘুম ভাঙছে সবার একে একে। বাচ্চা মেয়েটি গরমে কাতর হয়ে পড়েছিল, ঘুম থেকে উঠে চাঙ্গা হয়ে সারা কামরায় ছোটাছুটি করতে থাকল। তাপ কমার সাথে সাথে সুন্দর হাওয়া বইতে শুরু করেছে, বাইরে তখনও জঙ্গল, লোক চোখে কমই পড়ে। কাঠকুড়ুনের দল ইতস্তত, এছাড়া মাঝে মাঝে স্টেশন আসে যখন একটু হইচই, কিছু বাড়িঘর। একে একে আসে লাতেহার, ম্যাকলাস্কিগঞ্জ, পত্রাতু। আমরা নানা গল্পে মাতি, অশোক স্টেশনে নেমে ওদের বোতল ভরে জল এনে দিয়েছে, চা ওয়ালা কে ডেকে এনেছে। চা আর চানাসেদ্ধ খেয়েছি সবাই। গল্প করলেও আমার মাথায় ঘোরে ঋজুদা, জঙ্গল,একটু উষ্ণতার জন্যে, কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলি।

    সন্ধ্যে হয় হয়, খিদে তৃষ্ণা পুরো যে গায়েব হয়নি তা এবার টের পাচ্ছি। অশোক জানতে এল "খাবার কী করবি রে?" কোল ইন্ডিয়ার মহিলাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল বরকাকানায় খাবার পাওয়া যাবে। ওদের সঙ্গে রাতের খাবার প্যাক করা আছে, তবে ওরা বললেও দুজন অনাহুত এভাবে তাতে ভাগ বসাতে পারিনা।
    এতক্ষন খেয়াল করিনি, বরকাকানা স্টেশন আসার আগে দেখলাম কামরায় বেশ কিছু যাত্রী উঠেছে, দেখে মনে হয় তারা দুরের, ট্রেনে রাত্রিবাস। বরকাকানায় ট্রেন কিছুক্ষণ থামে। অশোক খাবারের খোঁজে স্টেশনে নামতে যাবে এমন সময় শোনা গেল "খানা, খানা বোলিয়ে"। কাছে আসতে যাকে দেখলাম সে কিছুতেই রেলের কর্মচারী নয়, এমনকী এতদিন ধরে দুর পাল্লার ট্রেনে যারা খাবার দিয়েছে তাদের কারুর মত নয় । এজন্যে বললাম যে এরকম আর কোনো লোককে আমি মনে করতে পারিনা, মনে রাখিনি অথচ এর চেহারা আজ আঠের বছরের পারে এখনো চোখের সামনে ভাসে!

    কামরায় তখন আলো জ্বলেছে কি জ্বলেনি মনে নেই তবে পর্যাপ্ত আলো ছিলনাই মনে হচ্ছে। সেই স্বল্পালোকে দেখলাম, একটি মূর্তি এগিয়ে আসছে করিডর ধরে (আমি সাইডে বসে ছিলাম, তাই আমার চোখে প্রথম পড়ল, সরাসরি), পরণের ধুতি পাঞ্জাবি মলিন হলেও দেখে মনে হয় এককালে দামী ছিল। পাঞ্জাবির কাপড়টা সিল্ক না হলেও সূতির নয়, ময়লা হয়ে চকচক ভাবটা কমে গেছে। চোখ জবাফুলের মত লাল, ঠোঁটের র ঙও লাল। দুই লাল রঙের কারণ তবে ভিন্ন ভিন্ন। পা ইষ্‌ৎ টলমলে, গলার স্বরও জড়ানো, কারুর দিকে সোজা না তাকিয়েই "খানা, খানা" করতে করতে চলে আসছে। অবাক হয়ে দেখলাম তারইমধ্যে দু একজন ডেকে ডেকে অর্ডার দিচ্ছে, "পন্ডিতজী, একটা সাদা খানা", "পন্ডিত জী, দুটো চিকেন কারী"।
    লোকটি একটি ময়লা কাগজ বুকপকেট থেকে বার করে কানের ওপর গোঁজা পেনসিল বার করে কী লিখে নিচ্ছে সে ভগবানই জানেন, কারণ কোথাও থামছে না সে, ঐ চলতে চলতেই লেখা। আমাদের দলটার কাছে আসতে অর্ডার দেব কী, তাকে দেখছি হাঁ করে সব ভুলে। কোল ইন্ডিয়ার বাবা একটা চিকেন কারীর অর্ডার দিতে সম্বিত ফেরে, তাড়াতাড়ি অশোক বলে, "আমি আন্ডাকারী খাব"। আমি কিছু না ভেবেই বলে উঠি, "আমিও"। পন্ডিতজী "দো আন্ডাকারী" বলে না দাঁড়িয়ে এগিয়ে যায়।

    এর পরের ঘন্টা কাটে আশংকায়, উদ্বেগে, খাবার আসবে তো! শুধু পা টলমল নয় কাছে এসেছিল যখন দেশীর গন্ধে নাকে চাপা দিতে হয় এমন অবস্থা। শংকা অবশ্য আমাদের মত নভিসদেরই, অন্যদের দেখা গেল হেলদোল নেই। কিছুক্ষন পরে কোল ইন্ডিয়ারা লুচি তরকারী বার করে খেতে শুরু করল, আমি সরে অশোকের কাছে গিয়ে বসলাম। "হ্যাঁরে লোকটা তো মদে চুর, হুঁশই ছিলনা। তোর মনে হয় ও খাবার আনবে? আনলেও ঠিকঠাক এতগুলো অর্ডার আনতে পারবে বলে মনে হয়না।" আমার সন্দেহ ও কাগজে আদৌ কিছু লিখছিলনা, হয়ত পেনসিলটা শিস ভাঙা। এইরকম নানা জল্পনা কল্পনায় আর খাবার নিয়ে দোলাচলে আরো বেশী খিদে পেয়ে গেল, কত স্টেশনও পেরিয়ে গেল, খাবার আর আসেনা। নতুন বলে আমাদের জানা ছিলনা কোন স্টেশনে খাবার আসে।

    খাবারের আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি, বোকারো আসছে, ভাবছি প্ল্যাটফর্মে কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখব। ট্রেন থামতেই হই হই করে এসে পড়ল পন্ডিতজী, তখন তার রূপই অন্য, পুরোপুরি স্বাভাবিক পদচালনা, পূর্ণ চেতনায়। সঙ্গে সহকারী একজন আছে বুঝলাম অন্ধকারে দেখতে পেলাম না, কামরায় সে নিজেই সবার খাবার আনছে এক এক করে। শালপাতার থালায় গরম ভাত, পাতার বাটিতে মুসুরির ডাল আর ডিমের ঝোল, পাতের একপাশে নুন লেবু আর একতাল আলুভাতে, পেঁয়াজ কুচি ভাজা লঙ্কা দিয়ে মাখা। এই কমাস শক্তিনগরের হস্টেলের অড়হর ডাল আর ভাজির পর, সেদিন সকালের সেই বিস্বাদ আলুর ঝোল আর কড়কড়ে ভাতের পর ট্রেনের সেদিনের রাতের খাওয়াকে আমাদের অমৃত মনে হয়েছিল এ বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখেনা।
    তবে এর পরেরবার যখন গেছিলাম তখনও পন্ডিতজীকে একইভাবে ও তার দেওয়া খাবারকে একই স্বাদে পেয়েছিলাম। শক্তিনগরে বরকাকানার পন্ডিতজীর খাবারের ফ্যান কম ছিল না, এ লাইনে ঐ শালপাতার গরম খাবার ছিল এক অন্যতম আকর্ষণ যার জন্যে একমাত্র বাতিকগ্রস্ত ও অসুস্থ লোকেরা ছাড়া বাঙালীদের মধ্যে কেউই খাবার প্যাক করে নিয়ে যাওয়া পছন্দ করত না!

    তৃপ্তিভরে খেয়ে দেয়ে শুতে গেলাম যখন কামরার গুটিকয়েক আলো যা ছিল তাও নিভিয়ে দিয়েছে লোকে। পূর্নিমার রাত নাহলেও কাছাকাছি ছিল মনে হয়। কোনো প্ল্যানমাফিক ভ্রমণ নয়, ঘরে ফেরা, তবু হয়ত কোনো কারণে তাকে স্মরণীয় করার ষড়যন্ত্র রচা হয়েছিল কোথাও। চরাচর ভেসে যাচ্ছিল জোৎস্নায়, অনেক ঘুরেছি তার পরে, জঙ্গলে গিয়েও থেকেছি, তবু এত সুন্দর কোনোকিছু আর কখনো দেখিনি। অন্ধকারে মাঠ জঙ্গল ভেদ করে ছুটে চলেছে গাড়ি, ভেতরে বাইরে অন্য কোনো আলো নেই বলেই বোধহয় চাঁদের আলোকে এত গাঢ়, এত মায়াবী মনে হয়েছিল। সেই আলোতে জঙ্গল, নদীর জল, পাহাড়ের উঁচু কেমন অপার্থিব হয়ে উঠেছিল তা লেখার ভাষা আমার আয়ত্তে নেই।
    নিঝুম ট্রেনের ঝিকঝিকের সুর শুনতে শুনতে সেই সুন্দর রাতে একা জেগে থাকা মনে আছে, শেষে কখন একটু চটকা লেগেছিল তা আজ আর মনে নেই,তবে ধানবাদের পরেই হবে। ভোর চারটেয় বিফোর টাইমে হাওড়া স্টেশনে ঢুকলাম, মাত্র দুমাসের ব্যবধান, অথচ যেন কত শত বছরের পরে এই ফেরা। ঘুমন্ত নোংরা কালিমাখা স্টেশনটাকে, ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা আকাশের নীচে কালো জল ছলছল নদীকে, নিভন্ত মলিন হলুদ আলোয় জড়ানো শহরটাকে, এত ভালো এর আগে কখনো লেগেছে কি? মনে হয় না!
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ মার্চ ২০১২ ২১:২৬514894
  • শ্রাবণী
    তোর সুস্বাদু-লেখায় খাবারগুলো ও কেমন জিভে এসে যায়--হে হে বিরহি আলুর ঝোল আর কটকটে চাল/ভাত---ক্ষিদের মুখেও অদিকিচ্ছিরি (আমার মেয়ে বলত ছোটবেলায় বিচ্ছিরি কে )
    সঙ্গে একটু বিস্কুট কি পাউন্ড কেক জাতীয় খাবার রাখতিসনা কেন রে? আমরা খুব বেড়াতাম--মার ব্যাগে কিছু-মিছু ঠিক থাকত--ঐ রকম না খাবার পাওয়া পরিস্থিতির জন্য।
  • shrabani | 59.94.101.71 | ২১ মার্চ ২০১২ ২১:৪৩514895
  • নীনাদি, এখন রাখি,:) তবে সেই তো প্রথম প্রথম, নিজের খেয়াল নিজে রাখার অভ্যেস ছিলনা, পরের দিকে এই অসুবিধেগুলো হয়নি, ফেরার পথেও হয়নি, বাড়ি থেকে গুছিয়ে দিয়েছে.....তাই তার গল্পও নেই!
    তবে যতদিন হস্টেল মেস বা একা থাকা ছিল, এরকম ট্রেনে লোকজন বাড়ি থেকে খাবার গুছিয়ে প্যাক করে এনে খাচ্ছে দেখলে নিজেকে কেমন অনাথ মনে হত!
    এখন তো আমি রাজধানী তেও খাবার কিছু কিছু গুছিয়ে নিই, ফ্লাইট টায় কর্তা ঠেকিয়ে রাখে!:(
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ মার্চ ২০১২ ২২:০০514896
  • আজকাল তো ফ্লাইটে ই বরং খাবার প্যাক করা উচিৎ :-(
    আহা আগে কি ভাল খেতে হত প্লেনের খাবার-দাবার ! এরোপ্লেনের স্যান্ডিউইচের জন্যে বসে থাকতাম ছোটবেলায়--বাবা না খেয়ে নিয়ে আসত আমার জন্য প্লেন জার্নি করলে --
    আচ্ছা ছোটবেলায় একটা জিনিষ ফেরিওয়ালারা বিক্রী করত--
    টনটন ভাজা--সরু লম্বা প্যাকেটে--বেশ ঝাল ঝাল চানচুর-ফ্যামিলি---ওটা এমনিতে মা খেতে দিতনা--কিন্তু দুরপাল্লার রাস্তায় ব্যাগে রাখত---আর তো শুনিনা দেখিও না---কে জানে পাটনা ছাড়া আর কোথাও এর চল ছিল কিন:-০
  • titir | 128.210.80.42 | ২১ মার্চ ২০১২ ২৩:২৬514897
  • শ্রাবনী,
    একনিশ্বাসে পড়ে ফেললাম।
    মাঝে মাঝে মনে পড়ছিল বিভুতিভুষণের আরণ্যকের কথা। অপূর্ব!!
  • sayan | 115.241.78.201 | ২১ মার্চ ২০১২ ২৩:৪৮514898
  • ষড়যন্ত্র অবশ্যই রচনা করা হয়েছিল, নইলে এমন ভয়ংকর সুন্দর বর্ণনা সেই সব স্লিপারক্লাসময় দিনগুলোকে এক হ্যাঁচকায় টেনে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিত না, দিন-সাল-মোহ-ঋতু নির্বিশেষে। কুডোস টু ডিয়ার লেডি সর্বানীদি', এমন জ্যান্ত আর ছুঁতে-পারা-যায় একটা আঠেরো বছর লেখার জন্য! চাকার আবিষ্কার বড়ো আবিষ্কার। একটা কথা বলি? ঐ যে লিখলে, সব্বার পরিপাটি সবকিছু, আয়োজন ইত্যাদি দেখে নিজেকে অনাথ লাগা - ব্যাং অন! কিন্তু, ফ্র্যাঙ্কলি, ওরম সিচুয়েশনে নিজেকে অনাথ ভাবতে ভালোই লাগে :-) নাই বা জুটলো এক বেলার খাবার বা নেহাত কারুর "কৃপাদৃষ্টি', সচ্ছন্দে ইগনোরাবো। জার্নিকালীন ওই মিঠে-মৌতাত রাতগুলো শুষে খেয়েছি ট্রেনের দরজায় পা ঝুলিয়ে বসে হু-হু হাওয়ায়। অথবা গভীর রাতে লাল সিগন্যাল খেয়ে থেমে যাওয়া একটা ঘুমন্ত ট্রেন বেয়ে ট্র্যাকের ধারে নেমে আধভুতুড়ে কুয়াশা ঢাকা ঝুপ্পুস গাছগুলো একলা দাঁড়িয়ে, দেখে মনে হওয়া, এই নীরবতায় আমি বিরাজ করি, এইমূহুর্তে।

    ঠিক কতো ভালো লাগছে এই স্মৃতিচারণ পড়তে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। জাস্ট জেনো, প্রতিটা লাইন গোগ্রাসে গিলছি। :-)
  • i | 137.157.8.253 | ২২ মার্চ ২০১২ ০৩:৪৪514900
  • খুউব ভালো হচ্ছে এই সুতোর লেখা। খুব ভালো।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন