এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২০৯৯১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • siki | 122.177.251.103 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ২২:১০495753
  • ফ্রিতে বউয়ের কাছে গালাগাল খেয়ে গেলাম। আমায় নাকি চারবার ডেকেছিল, আমি শুনতে পাই নি।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১২:০৩495754
  • হাত্তালি ও হাত্তালি দেওন,মুগ্‌ধ ও টেনশনিত হওন--

    আবার পরের রোব্বার নাকি,অ শ্রাবণী!দিল্লীর গুরুদের জন্য কোন ইস্পেশাল বেবস্তা হয় না?
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১২:২৭495755
  • *************************
    অনেকগুলো মিসড কল পড়ে আছে ফোনে, একই নাম্বার থেকে। কার ফোন কে জানে! দেখে রেখে দেয়, পরে ফোন করবে। বিকেলে ওরা সবাই ভার্মার ঘরে বসে আছে, বড়সাহেব চৌহানও আছে। মাঝে একবার অভির সঙ্গে কথা হয়েছে। চৌহান অভির কাছে তার বন্ধুর প্রশংসা করল।
    ভার্মা বলল,
    -"ম্যাডাম নেকরামকে কোথাও পাওয়া গেলনা। ও কাল থানা থেকে ফিরে গিয়েই কোথায় চলে গেছে, ছেলেটাও নেই। আপনি যখন থেকে ওর ওপর নজর রাখতে বলেছিলেন তখন থেকেই আমি একজনকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সে ছিলও ওখানে, কিন্তু ওরা তার আগেই পালিয়েছে। এই লোকটি বুঝতেই পারেনি ঘরে কেউ নেই। এখন ওকে গ্রেফতার করতে গিয়ে দেখি নেই। সব জায়গায় খোঁজা হচ্ছে, ওর গ্রামের থানায়ও আমরা খবর পাঠিয়েছি, সেখানে গেলেই ধরবে। তবে সেখানে যাবে কী আর!"
    -"ভার্মাজী, আপনারা কাজ কবে শুরু করতে পারবেন?"
    উত্তর দিল চৌহান,
    -"প্রাইভেট প্রপার্টি ম্যাডাম, তারওপর লালজীরা দিল্লীতে যথেষ্ট প্রভাবশালী, মন্ত্রীসান্ত্রীদের সাথে ওঠা বসা। আমি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে সব বলে এসেছি। উনি চেষ্টা করছেন কথা বলে যদি অনুমতি পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে পুলিশী ওয়ারেন্ট নিয়ে গিয়ে তাড়াহুড়ো করতে গেলে পরে ঝামেলার সৃষ্টি হতে পারে, আমাদের পক্ষে ভালো হবেনা, চাকরির ব্যাপার বোঝেনই তো।"
    রাই বুঝতে পারে তবু ওর এই দেরী অসহনীয় মনে হয়।
    ভার্মা অন্যকথায় গিয়ে বলে,
    -"মাহরীর আশ্রমের খোঁজ পাওয়া গেছে কিন্তু ওদের গুরুজী এখন ওখানে নেই। ছোট আশ্রম, দু তিনজন কাজের লোক আছে, বাকী সব গ্রামের লোকেদের সাহায্যেই হয়। গুরুজীর কোনো ফোন নাম্বারও নেই, উনি নিজের কাছে মোবাইল রাখেন না। আমরা শালিখরামের সীতা কলোনির বাড়ির ওপর নজর রাখছি, উনি নিশ্চয়ই ওখানে আসবেন আজ বা কাল, পুলিশের সঙ্গে কী কথা হল জানতে।"
    -'ভার্মাজী, টেস্ট রিপোর্ট কবে আসবে?"
    -"কাল। আপনি কী আশা করছেন ম্যাডাম? ঐ রিপোর্টে কিছু পাওয়া যাবে?"
    -"জানিনা। সবই অনুমান। যদি কিছু পাওয়া যায়, সবদিক দেখে রাখা আর কি!"
    রাই এবার ভার্মা আর চৌহানের কাছে বিদায় নিয়ে উঠে পড়ে। ওরা আশ্বাস দেয় যখনই কিছু খবর আসবে বা নতুন কিছু জানা যাবে ওরা রাইকে ফোন করবে।
    বাড়ি ফিরে নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ঐ ফোনকলটার কথা আর মনে থাকেনা।

    পরদিন অফিসে পৌঁছেই থানায় ফোন করল। ভার্মাজী সকাল থেকে থানায় আসেনি। ভার্মার নাম্বার ডায়াল করবে কিনা ভাবতে ভাবতে ফোন নিয়ে এদিক ওদিক করতে গিয়ে আবার কালকের মিসড কলগুলো দেখে।
    কী ভেবে নাম্বারটা ডায়াল করে,
    -"হ্যালো, এই নাম্বার থেকে আমার ফোনে ফোন এসেছে।"
    -"হ্যাঁ, আমি করেছিলাম। আমি সুজিত, রাজেশ্বরীর কাজিন।"
    রাইয়ের মনে পড়ল ভার্মাই সুজিতকে রাইয়ের ফোন নাম্বার দিয়েছিল তাকে না পেলে যেন রাইকে ফোন করে। ভার্মা কী ফোন বন্ধ করে রেখেছে! সেকেন্ডে এসব ভাবনার মাঝেই কথা বলল,
    -"আরে হ্যাঁ, অমি রাই বলছি। কী ব্যাপার, ভার্মাজীকে পাচ্ছেন না ফোনে?"
    -"না, ভার্মাজীকে আমি ফোন করিনি। আপনি তো ঠিক পুলিশের লোক নয়, রাজেশ্বরীর হাজব্যান্ডদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ড, তাই না?"
    রাই বিনা দ্বিধায় "হ্যাঁ" বলে।
    -"পুলিশ বোধহয় আমার ওপর নজরদারী করছে। বেশ অস্বস্তি হচ্ছে, আপনার একটু সাহায্য চাই।"
    রাই জানে,কিন্তু সুজিতের তো বুঝতে পারার কথা নয়! ভয়টা কিসের?
    -"বলুন কীরকম সাহায্য, আমি চেষ্টা করব?
    সুজিত প্রথমে চুপ রইল, তারপর জিজ্ঞেস করল,
    -"আপনার সাথে দেখা করা যাবে?"
    রাই একটু ভাবে,
    -"কখন? কোথায়?"
    -" আমি এখানে সব জায়গা চিনিনা,তাই আপনিই বলে দিন কোথায়?"
    সুজিতের সঙ্গে দেখা করা কী দরকার এখন? তবে ভার্মারও ওকে দরকার হতে পারে।
    -"আমার অফিস আছে, সন্ধ্যের আগে হবেনা। আপনি নাহয় আজ সন্ধ্যেয় আমার এখানে চলে আসুন। মেট্রোতেও আসতে পারেন, স্টেশন থেকে রিক্সা করে মিনিট পাঁচেক লাগবে। অথবা সিটি ক্যাব নিয়ে চলে আসুন। আমি ঠিকানাটা বলে দিচ্ছি, লিখে নিন।"
    সুজিত ফোন রেখে দেবার পরমুহূর্তেই ভার্মার ফোন এল।
    -"ম্যাডাম, ফোনে সব বলা যাবেনা। আমি এখন দিল্লীতে। ফিরে আপনার কাছে আসছি। শুধু জেনে রাখুন অনুমতি পাওয়া গেছে, আমরা কাজ শুরু করছি। আসলে দুই রাজ্যের পুলিশের একসাথে হয়ে কাজ করাতে অনেক প্রোটোকল জড়িত থাকে তাই সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম।"
    রাই বুঝতে পারে, সন্ধ্যে অবধি অপেক্ষা করতেই হবে।
    আলোককে বলেছিল সুজিতের আসার কথা, আলোকের আবার আজকেই জরুরী মিটি,ং অন্য অফিসে, রাত্রি হয়ে যেতে পারে ফিরতে ফিরতে। সে একটু উৎকন্ঠায় জানতে চায়,
    -"কী আমায় থাকতে হবে নাকি? তাহলে কী বসকে বলব মিটিংয়ে যেতে পারবনা।"
    রাই হাসে,
    -"আরে না না, তুমি ছেলেটাকে কী মনে করেছ, ভদ্র ছেলে, খুনীটুনী নয়।"

    বাড়ি ফিরে তাড়াতাড়ি কাজকর্ম সারতে থাকে। সন্ধ্যে প্রায় সাড়ে সাতটার সময় গেট থেকে ফোন আসে, সুজিত বাড়ি খুঁজে এসে পড়েছে। ওপরে আসতে রাই দরজা খুলে ভেতরে বসায়। ছেলেটি এমনি স্মার্ট হলেও এখন একটু অস্বস্তিতে আছে বোঝাই যাচ্ছে, তাই জড়সড় লাগছে। রাই কফি দিয়ে এমনি টুকটাক কথা বলে ওকে সহজ করতে চেষ্টা করে।
    -"আগে বলুন আপনি কেন আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইছিলেন?"
    -"আসলে দুদিন ধরে কেমন মনে হচ্ছে কেউ আমার পিছু নিচ্ছে। আমার এখানে গাড়ি নেই, হোটেল থেকে অফিস বেশী দুরে নয়, আমি হাঁটতে ভালোবাসি। ওদিকের রাস্তা বেশ ফাঁকা ফাঁকা, তাই বোধহয় বুঝতে পারলাম, নাহলে ভীড়ে বা গাড়িতে থাকলে এরকম শহরে কেউ পিছু নিয়েছে বোঝা মুশকিল।"
    -"আমি এব্যাপারে কিছু জানিনা। ভার্মাকে জিজ্ঞেস করব। আপনাকে পুলিশ কি কোনোভাবে বিরক্ত করছে?"
    -"না অন্য আর কিছু নয়। তবে এই ব্যাপারটাই তো বিরক্তিকর।"
    রাই এবার একটু কঠিন গলায় বলে ওঠে,
    -"কেন?"
    সুজিত একটু চমকায়, ঠিক সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিতে পারেনা। রাই আবার বলে,
    -"আপনার যদি কিছু লুকোবার না থাকে, আপনি যদি কোনোভাবে অপরাধী না হন তাহলে সমস্যার কী আছে? পুলিশ দুদিন নজর রেখে যখন দেখবে আপনি ঠিকঠাক লোক তখন সরে যাবে।"
    -"না মানে, পুলিশ ঠিক কী সন্দেহ করে আমার ওপর নজর রাখছে, সেটা জানেন?"
    রাই এখনও সেই শক্ত গলায় বলে,
    -"না জানিনা। জানলেও অবশ্য আপনাকে বলতে পারতাম না। আমার তো এটা কোনো সমস্যা বলেই মনে হচ্ছেনা যদি না আপনার কিছু লুকোবার থাকে। রাজীর মৃত্যুতে আপনিই এখনও পর্যন্ত লাভবান, তার উইল অনুযায়ী। তাই আপনার ওপর পুলিশের নজর থাকবে এটা তো খুব স্বাভাবিক।"
    সুজিত তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
    -"বিশ্বাস করুন আমি এর কিছুই জানিনা। রাজী উইল করে আমাকে সম্পত্তি লিখে দিয়েছে এ আমার জানা ছিল না।"
    -"এখন কী করে জানলেন?"
    -"না মানে আমার বাবাকে জানিয়েছে উকিল, রাজীর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে।"
    রাই খুব তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে সুজিতের দিকে তাকায়,
    -"মি: মুকুন্দন, আপনার যদি কিছু বলার থাকে, এখনই সময়। পুলিশের এই কেসে জাল গুটিয়ে আসতে আর বেশী দেরী নেই। তখন যদি জানা যায় আপনি কিছু লুকিয়েছেন......", কথাটা শেষ করেনা।
    সুজিত একটু ঘাবড়ে গিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই ইন্টারকম ফোন বেজে উঠল,ভার্মা এসেছে।
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১২:৪৩495756
  • ভার্মা ঘরে ঢুকে সুজিতকে দেখে অবাক হলেও সেটা প্রকাশ না করে রাইকে বলে,
    -"ম্যাডাম, আপনার অনুমান ফার্মহাউসের ব্যাপারে একেবারে সঠিক। একটু দেরী হয়ে গেল, গিরীশকে দিল্লী পুলিশ অ্যারেস্ট করতে গেলে তাদের সঙ্গে আমাকেও থাকতে অনুরোধ করল।"
    রাই কিছু বলার আগেই সুজিত বলে উঠল,
    -"গিরীশ মানে রাজীর বাবা? রাজেশ্বরীর কেসে তাকে অ্যারেস্ট করেছেন আপনারা?"
    ভার্মা সোফায় বসতে বসতে বলল,
    -"না না, রাজেশ্বরীর কেসে নয়। গিরীশকে আমরা নির্মলার মৃত্যুর ব্যাপারে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করেছি।"
    -"নির্মলার মৃত্যু? আপনারা প্রমাণ পেয়েছেন নির্মলাকে মারা হয়েছিল? কিভাবে?"
    ভার্মা রাইয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল,
    -"রাই ম্যাডাম, এবার আপনি পুরো ব্যাপারটা একটু বিস্তারে বলুন না, কিছু কিছু জায়গা আমারও এখনো পরিস্কার নয়, তাছাড়া মি: মুকুন্দনেরও শোনা উচিৎ, উনিই তো নির্মলার একমাত্র আত্মীয় এখন। তবে তার আগে একটু চা যদি পাওয়া যেত।"
    রাই ওদের বসিয়ে ভার্মার জন্যে চা করতে গেল। চা আর খাবার নিয়ে যখন এল, সুজিত চুপ করে বসে আছে, ভার্মা ফোনে ব্যস্ত।
    ভার্মার খাওয়া শেষ হতে হতে আলোকও এসে গেল। সেও শুনল গিরীশের গ্রেফতার হওয়ার কথা। প্রাথমিক শোরগোল মিটলে সবাই উৎসুক হয়ে রাইয়ের দিকে তাকিয়ে,
    রাই আর সময় না নষ্ট করে শুরু করল,
    -"প্রথমেই সুজিতকে জানাই যে আমাদের বিশ্বাস পুলিশের লোকজন লালজীর ফার্মহাউস থেকে যে মৃতদেহের কঙ্কাল উদ্ধার করেছে তা নির্মলার। কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার পর তা প্রমাণও হয়ে যাবে। নেকরামকে পাওয়া গেলে অথবা গিরীশ যখন মুখ খুলবে তখন পাকাপাকি জানা যাবে।

    মানুষের মনের গতি বড় বিচিত্র, কোনো কার্যকারণে সব সময় তাকে বাঁধা যায়না। গিরীশ দিল্লীতে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরি পেয়ে যখন আসে তখন সে বিবাহিত, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এখানে থাকার কোনো ঠিক নেই, অচেনা শহর তাই নির্মলাকে তার শাশুড়ী আসতে দেয় না। গিরীশের এই শহরে প্রথম বন্ধু হয় শুভার ছোট দাদা, এভাবেই গিরীশের শুভাদের বাড়িতে যাতায়াত শুরু হয়। সে অত্যন্ত সুপুরুষ, শুভা তাকে দেখে প্রেমে পড়ে। শুভা এমনিতে দেখতে তেমন কিছু নয়, কিন্তু দিল্লীর মেয়ে, চটক আছে, পড়াশোনা নাচগানের শহুরে পালিশের কাছে সাধারণ নির্মলা ম্লান হয়ে যায়। গিরীশের ব্যক্তিত্বের অভাব আজও তাকে দেখলেই বোঝা যায়, আমার ধারণা শুভা অনায়াসে তাকে নিজের করায়ত্ত করে।
    রাজী হওয়ার পর হয়ত কিছু আন্দাজ করেই গিরীশের মা বউ ও নাতনীকে নিয়ে দিল্লীতে ছেলের কাছে আসে। এদিকে শুভা গিরীশকে তাড়া দিতে থাকে, বৌ মেয়েকে কাছে পেয়ে গিরীশের মত দুর্বল চরিত্র যদি আবার ঘুরে যায়, সে দেরী করতে চায়না।
    নির্মলাকে ডিভোর্স করলে তার মা শুভাকে মেনে নেবেনা ও তাকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করবে এ ভয় গিরীশের ছিল। তার চাকরি সামান্য, শুভার বাবাও এমন কিছু ধনী নয়, তার দাদারা আছে অংশীদার। শুভা বাবার মামরা আদুরে মেয়ে, সে প্রাচুর্যে অভ্যস্ত তা বাবার কালো পথের পুলিশী রোজগারেই আসুক আর যে ভাবেই আসুক।
    আমার ধারণা শুভারই মস্তিস্কপ্রসূত এটা যে কোনোভাবে নির্মলা যদি সরে যায় পথ থেকে তাহলে সবদিক বজায় থাকে। আর এটা করতে গেলে দিল্লীর মত জায়গাতেই সম্ভব কারণ এখানে পুলিশ বাবা সহায়। গিরীশ শুভার পুরোপুরি বশে, সে শুধু পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে। অবশ্য মনে হয় শুভার বাবা জানলে এদের এমন ঝুঁকি নিতে দিতনা না বা মেয়ের এরকম একটি বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ককে সমর্থন করত না, তাই এরা আগে থেকে তাকে কিছু জানায় নি। নেকরাম শুভার ছোটো বয়স থেকে আছে, কোলেপিঠে খেলিয়েছে। লোকটি ডাকাবুকো, তার অতীতও খুব পরিস্কার নয়, মার দাঙ্গায় প্রায়ই জড়িয়ে পড়ত। শুভার বাবা তাকে একটি প্রায় খুনের কেসে বাঁচায় ও তাকে নিজের বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে নিয়োগ করে। সেই থেকে এই পরিবারের জন্য সে সব কিছু করতে পারে। শুভা তাকে ধরে, নেকরামের মত লোকের কাছেও এ খুব একটা অন্যায় কিছু বলে মনে হয় না।

    সেসময় আমরা জেনেছি সন্ধ্যে হয়ে গেলে ফিরোজগাঁওতে রিক্সাও তেমন পাওয়া যেতনা, গ্রামের মধ্যে হাঁটা বা নিজের বাহন ছাড়া লোকের যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা ছিলনা। নেকরাম দিন দেখেছিল যখন তার পিসতুতো ভাই শালিখরামের সঙ্গী চৌবেজী ছুটিতে থাকবে। সেই দিনে গিরীশ বৌকে বলে বাজার থেকে হেঁটে না ফিরে মন্দিরে গিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে, সে তাকে স্কুটারে নিয়ে আসবে। সেইমত নির্মলা মন্দিরে যায়। সন্ধ্যের ঐ সময়টা মন্দিরের পুরোহিত বা তার ছেলে কেউ থাকতনা, যে কোনো একজন অনাথ বাচ্চা খালি থাকত। মন্দিরে পালপার্বণ ছাড়া লোকসমাগমও তেমন ছিলনা। মন্দিরের ভেতর থেকে গেটের ওখানে স্কুটারে এসে দাঁড়ালে ঠিকমত দেখাও যেতনা, একটা ঝোপের ছায়া এমনভাবে জায়গাটাকে আড়াল করত।
    ভার্মাজী যখন নেকরামের ইন্টারভিউ আমাকে শোনালেন, ভালো করে শুনে আমার সন্দেহ হয় যে নেকরাম যে গেট আর ঝাড়ির কথা বলছে সেটা আইয়াপ্পা মন্দিরের হতে পারেনা। ওখানে মন্দিরের গেট নেই ওরকম, সামনে কোনো ঝোপও নেই, বড় গাছ আছে। নেকরাম পুলিশকে বলেছে সে কোনোদিন ফিরোজগাওয়ের মন্দিরে যায়নি । কিন্তু ওর মাথার মধ্যে নির্মলার ব্যাপারটাই ঘুরছিল, রাজেশ্বরীর ঘটনায় সে দোষী নয়, তাই নিয়ে তার মাথাব্যথাও নেই। মন্দিরের প্রশ্নে সে আসলে ঝুলেলাল মন্দিরের বর্ণনা দিয়ে ফেলেছে, শান্তিবিহারের আইয়াপ্পা মন্দিরের নয়।

    যা বলছিলাম, নির্মলা ফিরোজগাঁওয়ে নবাগতা, তার ওপর ভাষার সমস্যার জন্য সে কারো সঙ্গে গল্পগাল করবে এ সম্ভাবনা কম,অতএব মন্দিরে তাকে কেউ খুব একটা খেয়াল করবেনা। প্রশ্ন আসতে পারে মন্দিরেই কেন অন্য কোনো জায়গায় অপেক্ষা করতে কেন বলল না গিরীশ বৌকে? মনে হয় অন্য কোনো শুনশান জায়গায় দাঁড়াতে বললে নির্মলা ভয় পেত, সে ভালো কিছু চেনেনা হয়ত শেষ অবধি স্বামীর কথামত না দাঁড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে বাড়িই চলে যেত। মন্দির তার পছন্দের জায়গা, সেখানে সে মাঝে মাঝেই যায়, সেখানে অপেক্ষা করতে তার আপত্তি নেই, বরং বাড়ির কাজ কর্ম, বাচ্চা, শাশুড়ির থেকে বাইরে গিয়ে একটু অবকাশ, সে খুশীমনেই রাজী হয়েছিল।
    গেটের সামনের রাস্তা ঝোপের আড়াল পড়ে বলে গিরীশ নিশ্চিত ছিল যে তাকে স্কুটারে কেউ দেখতে পায়নি। মন্দিরের ছেলেটি সম্ভবত গিরীশকে সত্যিই দেখেনি, সে নির্মলাকে যেতে দেখে ভেবেছে যে অন্যদিনের মত গিরীশ স্কুটার নিয়ে এসেছে বা নির্মলা হয়ত বলেছে যে তার স্বামী স্কুটার নিয়ে তাকে নিতে আসবে। সেই কারণেই পরে পুলিশের জেরার সামনে বাচ্চা ছেলেটি ভয় পেয়ে যায় ও ঘাবড়ে নিজের ওপরেই সন্দিহান হয়ে ওঠে। অজয়কে পুলিশ খুঁজছে, পেয়ে যাবে নিশ্চয়ই, তার মনে পড়লে আমরা নি:সন্দেহ হব।

    এরপরে কী হয়েছিল সেটা গিরীশ ও নেকরামই বলতে পারে। আমার ধারণা খুনটা নেকরাম করে। মন্দির থেকে ফার্মহাউসের রাস্তায় কোথাও গিরীশ স্কুটার দাঁড় করায় বা কোনো অছিলায় নির্মলাকে একা রেখে আড়ালে যায় ও নেকরাম এসে কাজ সারে। নেকরাম সন্ধ্যে থেকে এসে তার ভাই শালিখরামকে মদে কিছু মিশিয়ে খাইয়েছিল,কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ জাতীয়। গিরীশ ও নেকরাম যখন নির্মলার মৃতদেহ নিয়ে ফার্মহাউসে পৌঁছয় তখন সিকিউরিটী শালিখরাম ঘুমে অচেতন। তার কদিন আগেই পাঁচিলের ধার জুড়ে ঢেলে গাছের চারা লাগানো হয়েছিল, নরম খোঁড়া মাটি, সেখানেই ওরা মৃতদেহ পুঁতে ফেলে, কয়েকটা নতুন চারা কাটা পড়ে।
    সাতাশ বছরে সে সব গাছ বড় হয়ে গেছে, একরকমের গাছের সারির মধ্যে একজায়গায় কিছু অন্যরকম বেখাপ্পা গাছ দেখে পুলিশ সেখানেই খোঁড়া শুরু করে আর ফলও পায়। লালজীরা প্রভাবশালী লোক, গণ্যমান্য, তাদের ফার্মহাউসে ঢুকে নির্মলাকে খোঁজার কথা পুলিশ ভাববেনা। জীবিত নির্মলাকে তো নয়ই,কখনো কোনোভাবে যদি মৃতদেহ খোঁজার কথা আসে তাহলেও ফার্মহাউসের বিদেশী গাছের চারা নষ্ট করে তো কখনৈ নয়। খোঁজেও নি কেউ আজ পর্যন্ত, সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে ওদের পরিকল্পনা একেবারে নিখুঁত ছিল!
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫০495757
  • ডিভোর্স হলে বা কোনোভাবে নির্মলার মৃত্যু হলে তার বাবা ভাই বা গিরীশের মা, এরা সহজে তা মেনে নিত না, শুভার কথা পরে জানাজানি হলে সন্দেহ গিরীশের ওপর গিয়ে পড়ত। কিন্তু নিরুদ্দেশ হওয়াতে শেষ পর্যন্ত সবাই ভাবত যে স্বামী অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত জেনে নির্মলা নিজেই কোথাও চলে গেছে মনের দু:খে। এরকম ভেবেই নির্মলাকে খুন করা এবং খুন যাতে প্রমাণ না হয় কোনোভাবেই সে ব্যবস্থা করা!

    গিরীশ দু:খে ভেঙে পড়ার অভিনয় করতে থাকল, পুলিশে প্রাথমিক রিপোর্ট লেখানো ছাড়া পুলিশকে বেশী ঘাঁটাতে গেল না। গ্রামের পুলিশ থানা, তাদের এমন কিছু দায় পড়েনি নিজেদের উৎসাহে তদন্ত চালিয়ে যাবে, অতএব অচিরেই সব কিছু চাপা পড়ে গেল, কারুর মনেও রইল না। গিরীশ ওর মাকে বাচ্চা রাজীশুদ্ধু দেশে পাঠিয়ে দিল।
    সমস্যা হল যখন নির্মলার বাবা ভাই এসে খোঁজাখুঁজি শুরু করে দিল, গোয়েন্দা বিভাগে গেল। তখন মনে হয় এরা শুভার বাবার কাছে গিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, সেটাকে এখন চাপা দিতে হবে এমন কিছু বোঝায়। শুভার বাবা সব বুঝলেও তার কিছু করার ছিলনা, সন্তানস্নেহ বিষম বস্তু আবার তার খাস লোক নেকরামও জড়িত। শুভার বাবা যা জানা যায়, খুব কিছু সৎ অফিসার ছিলনা, স্বল্প মাইনেতে দিল্লী শহরে বাড়ি, ছেলেমেয়েদের ভালো পড়াশোনা, ছেলেকে বিদেশে পড়ানো,জীবন যাত্রার ধরণ এসবই তার অন্য পথের আয়ের কথা বলে দেয়। তিনি এমনই ব্যাপারটা চাপা দিলেন যে আজ গোয়েন্দা বিভাগে কোথাও কোনো রেকর্ড নেই এই কেসের! নির্মলার বাবা ভাই কিছুদিন ঘুরে ঘুরে নিস্ফল হয়ে ফিরে গেল।

    রাজেশ্বরীর কেসে তার মায়ের ঘটনাটা না এসে পড়লে আজও তার মৃত্যুর কথা জানা যেতনা। শুভা ও গিরীশের যখন বিয়ে হয় তখন হয়ত রাজেশ্বরীকে নিয়ে আসার ওদের পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু গিরীশের মা মনে হয় ঠিক কী হয়েছে না বুঝলেও নিজের ছেলেকে বরাবরই সন্দেহ করছিলেন। সমস্ত সম্পত্তি টাকা পয়সা তারই হাতে। তার মন পেতে এরা রাজীকে নিজেদের কাছে নিয়ে আসে, রাজীর জন্যে কনকাম্মাও আসতে বাধ্য হন। পরে শুভার নিজের ছেলেপুলে না হওয়ায়, সে রাজীকে নিজের মেয়ের মতই দেখতে শুরু করে।
    রাজীর ঠাকুমা কিন্তু কখনৈ ভোলেননি রাজী আসলে নির্মলার মেয়ে, তিনি চাইতেন রাজীর ওদিকেই বিয়ে হোক, নির্মলার দিকে কারোর সঙ্গে। তিনি খোঁজ করে সুজিতের বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন, কিন্তু তারা তখন বাইরে। বাইরে গিয়ে সুজিতের বাবার ধারণায় পরিবর্তন এসেছিল, সে সুজিতের সঙ্গে রাজীর বিয়ে দিতে চায়নি, চেয়েছিল ওরা দুজন পরিচিত হলে সেটা ভাইবোন হিসেবেই হোক। শুভা এতদিনে আর চাইতনা রাজী সত্য ঘটনা জানুক, সে তাই জোর করে রাজীর বিয়ে অর্কর সঙ্গে দেয়, গিরীশের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ে হলে রাজী নির্মলার কথা জানতেই পারত, কতজনকে আর আটকাবে! এই কারণেই শুভা রাজীকে নিয়ে গিরীশের দেশে কখনো যেতনা, রাজীর বিয়ের পর গেছে। ততদিনে পুরনো লোকেরা মারাটারা গেছে, কারুর আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।

  • pharida | 61.16.232.26 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০৩495758
  • শ্রাবণী - নিখুঁত !!

    শুধু রাজীকে বেঁচে থাকতে রাজি করিও পিলিজ :))

    ডি: ব্যক্তিগত মত !!
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৩:৩০495759
  • হ্যাঁ,রাজী-অর্কর জীবন অটুট থাকুক।
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৫:২১495760
  • গিরীশ পুরোপুরিই শুভার কথায় চলে, শুভা বুঝতে পারে রাজী তাদের সঙ্গে থাকলে কনকাম্মা তাদের ফেলতে পারবেনা। কনকাম্মা তবে কোনোদিনই নির্মলাকে ভোলেনি বা এদের ক্ষমা করেনি। তবু বয়স হয়েছে, অশক্ত অবস্থায় একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিচ্ছেদে যেতে পারেনি। তবু শেষমেশ সব কিছু যে শুধু রাজীকে দিয়ে গেছে তাই নয়, চিঠি লিখে রাজীকে সত্যিটা জানাবার ব্যবস্থাও করে গেছে।"
    এই পর্যন্ত বলে রাই একটু দম নেই। সবাই চুপ করে শুনছিল, ও থামতেই সুজিত বলল,
    -"আমি ভাবতে পারছিনা রাজীর বাবা এরকম, এত নীচ। পিসীর এরকম পরিণতির কথা জানলে বাবা ভীষন আঘাত পাবে। রাজীর কথা মনে করেও খারাপ লাগছে। "
    রাই ওর দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করে,
    -"রাজীর পক্ষে সব জানতে পারার মুহূর্তটা কতটা বেদনাদায়ক ছিল সেটা আন্দাজ করতে পারা যায়। কিন্তু সে আজকের যুগের বুদ্ধিমতী মেয়ে। নিজের বাবা ও সৎমার প্রতি রাগে ঘেন্নায় তার মন ভরে গেলেও সে তাড়াহুড়ো করে কিছু করেনি। সে জানত এরা এখন তার ভরসায়, ঠাকুমার যা কিছু সব তার। ওপরে ওপরে সব যেমন চলছিল সে চালিয়ে গেছে। অভিনয় ক্ষমতা তার ভালোই তা আমরা আগেই জেনেছি। অর্ক, ওর মা রাজীর হঠাৎ করে বাঙালীয়ানার ওপর বিরাগ, খাওয়া দাওয়া রহন সহন সব কিছু নাপসন্দ সেসব নিয়ে আমাকে বলেছে। সব শুনলে বুঝতে পারবে সবাই যে এর সঙ্গে অর্কদের কোনো সম্পর্ক নেই, তার সৎমার ওপর রাগেই সে এসব করেছে। হয়ত অর্কর ওপরও তার একটা বিরাগ জন্মেছে এই ভেবে যে শুভার জন্যই অর্কর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে!
    নির্মলার ওপর ভালোবাসায় ও শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করে সে বেশী করে মালয়ালী হয়ে উঠতে চেষ্টা করেছে।"

    রাই থামলে ভার্মা বলল,
    -"ম্যাডাম, শালিখরামের কাছে আজ সকালে ওর গুরুজীর সঙ্গী আসে। তার থেকে ঠিকানা নিয়ে গুরুজীর সঙ্গে পুলিশের লোক দেখা করে কথা বলেছে। উনিই শুভার ছোট দাদা। শালিখরাম নেকরামের সঙ্গে দেখা করার বিফল চেষ্টা করে ওদের বাড়ি থেকে ফেরার পথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে রাস্তায়। উনি তখন ওকে সুস্থ করে তুলে ওর সব কথা শোনেন। শালিখরামের মুখে নেকরামের কথা শুনেই ওনার নির্মলার ব্যাপারে সন্দেহ হয়। উনি তখন ওনার বাবার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে বাবা ওকে চুপ করিয়ে দেন, গিরীশকে এনিয়ে কিছু বলতে বারণ করেন শুভার দোহাই দিয়ে। উনি গিরীশের সঙ্গে আর কথা বলতেন না কিন্তু কিছু করতেও পারেন না নিজের আত্মীয়দের কথা ভেবে।
    শালিখরামকে উনি ওর এক বন্ধুর দোকানে কাজ দেন।

    এর কিছুদিন পরেই ওর স্ত্রী মাত্র কয়েকদিনের জ্বরে মারা যায়। এতে উনি খুব আপসেট হয়ে পড়েন, শুধু মনে হয় তার বাড়ির লোকের পাপের মূল্য তার স্ত্রীকে দিতে হল, চাকরিও ছেড়ে দেন। সব না জানলেও শুভার আর গিরীশের বিয়েতে উনি বাধা দেন, তাই নিয়ে গোলমাল হয়ে ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে।
    ওনার কাছে কোনো প্রমাণ ছিলনা, উনি নির্মলার সব ঘটনা জানতেন না,তাই পুলিশে যেতে পারেননি,তবে ওর মনে হয়েছিল নেকরাম কোনোভাবে জড়িত। উনি বোঝেন শুধু সন্দেহ নিয়ে গেলে বাবা কোনোমতেই কোনো তদন্ত হতে দেবে না, কিছু একটা করে সব চাপা দিয়ে দেবে।তাই শেষ অবধি কিছুই করতে পারেন না।

    ইতিমধ্যে শালিখরামের সঙ্গে ওর খুব ভালো পরিচয় হয়ে গেছিল। তার গ্রামের লোকেদের অবস্থার কথা শুনে ওখানে কিছু করার ইচ্ছে হয়। বাড়ি ছেড়ে উনি প্রথমে পাহাড়ে শালিখরামের দেশে চলে যান। সঙ্গে টাকাপয়সা ছিল, মাহরীতে জমি কিনে আশ্রম শুরু করেন। প্রথমে গ্রামের লোকেরাই সাহায্য করত, স্কুল হেলথ সেন্টার এসব চালাতে। এখন ওনার শহরের বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেকেই ওর এই কাজে জড়িয়ে গেছে, টাকাপয়সা নানাভাবে সাহায্য আসে। তবে আশ্রমের ঠাটবাট কম রেখে লোকের উপকারেই বেশী লাগেন ওরা।
    নিজের পরিবারের মধ্যে বোনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ উনি রাখেননি, ভাইয়ের সঙ্গে আছে। ওর বাবা নিজের খরচের অভ্যেসের দরুন টাকাপয়সা বেশী রেখে যাননি, ঐ বাড়ি টুকু ছাড়া। বাড়িটা ওদের দুই ভাইয়ের নামে, শুভাকে বাবা শান্তিবিহারের ফ্ল্যাট কেনার টাকা দিয়ে দেন, বাড়িতে অংশ না দিয়ে। ভাড়ার টাকায় উনি একটা ভাগ পান সেটা ওর বড় ভাই ওর অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেয়।
    বাবা মারা যাবার পরে উনি এখানে এলে বাড়িতে থাকেন তবে নেকরামের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক রাখেন না। ওনার সঙ্গে ওর সঙ্গীসাথী থাকে, তারাই কাজকর্ম করে, চাবিও একটা ওনার কাছে থাকে। বড় ভাইয়ের চাবি শুভাকে দেওয়া আছে।
    এরকমই একবার এসে রাজেশ্বরীর সঙ্গে ঘটনা চক্রে দেখা হয়ে যায়, রাজেশ্বরী কথা দেয় সে তার বাবা মাকে এই দেখা হওয়ার কথা বলবে না। তারপর থেকে উনি এলে কখনো আসত রাজেশ্বরী।
    কিছুদিন আগে এসে বাড়িতে গিয়ে শোনেন শুভারা এসে আছে। তখন বাড়িতে না উঠে ওর এক বন্ধুর বাড়ি ওঠেন। ওর সঙ্গী পাহাড়ের, সে নেকরামেরই আশেপাশের গাঁয়ের। নেকরামের সঙ্গে কথা বলে সে জানতে পারে রাজেশ্বরীর ব্যাপারটা। ইনি শুনে খুব আবাক হন, মায়ের মত মেয়েও হারিয়ে গেল বাজার থেকে, খারাপও লাগে মেয়েটার জন্যে।
    ওনার অনেক মহলে জানাশোনা আছে, পুলিশেও। সেখান থেকেই খোঁজখবর করেন, এবং পুলিশ যে নির্মলার ব্যাপারটা জেনেছে তাও জানতে পারেন। তখনই কেন যেন মনে হয় শালিখরামের ঘটনা পুলিশকে বললে যদি তদন্তে সাহায্য হয় বা অন্তত নেকরামকে পুলিশ ধরে। এই ভেবেই উনি শালিখরামকে পাঠান থানায়। এর বেশী ওনার আর কিছু জানা নেই।"
    সুজিত ভার্মাকে জিজ্ঞেস করে,
    -"আমার বাবাকে কী আসতে হবে? আমি এখনো বাবামাকে কিছুই জানাইনি ওদের বোনের ব্যাপার।"
    ভার্মা একবার রাইয়ের দিকে তাকায়, ইশারাতে কী যেন কথা হয়।
    -"এখন থাক, একটু আলোচনা করতে হবে, কী বলেন ম্যাডাম?"
    আলোক এতক্ষণ চুপ করে শুনছিল, সে বলে,
    -"সে নাহয় হল, কিন্তু রাজেশ্বরীকেও কী এরাই মেরেছে? সেই একইভাবে বাজার থেকে গায়েব করে?"
    ভার্মা একটু গম্ভীর হয়ে যায়,
    -"গিরীশকে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হলে কিছু জানা যাবে আশা করি। কাল শুভাকেও থানায় আনা হবে।"
    এরপর রাইকে বলে,
    -"আমি এখন উঠি ম্যাডাম। মি: মুকুন্দন, আপনি কাল একটু থানায় আসবেন। আপনাদের তরফ থেকে নির্মলার কেসটা ফাইল করতে হবে। কিছু ফর্মালিটিজ আছে"
    সুজিত ভার্মার হাত ঝাঁকিয়ে বলে,
    -'আপনারা এত করছেন, অনেক ধন্যবাদ, আমার ও আমার পরিবারের তরফ থেকে। আমি কাল সকালেই আপনার কাছে আসব।"
    ভার্মার সাথে রাই যায় লিফট অবধি, যে কথা সে জানতে চাইছিল তা সুজিতের সামনে বলা যায়না। ভার্মা বুঝতে পেরে রাইয়ের হাতে একটা কাগজ তুলে দেয়,
    -"আপনার সন্দেহ ঠিক, কিন্তু আমরা কিছুই ট্রেস করতে পারছিনা। ভদ্রলোক কোথাও যায়নি, মোবাইল বা ল্যান্ড লাইনের ফোনেও কোনো হদিশ পাচ্ছেনা। আপনি দেখুন চেষ্টা করে।"
    রাই ফিরে এসে দেখে সুজিত আলোকের সঙ্গে গল্প করছে। রাইকে আসতে দেখে আলোক সুজিতকে বলে ভেতরে যায়। সুজিত রাইকেও অনেক থ্যাঙ্ক ইউ টিউ বলে।
    রাই আরাম করে একটা চেয়ারে বসেছে। সুজিতের কথায় ঐ প্রসঙ্গে না গিয়ে বলে,
    -"আপনি রাজেশ্বরীর মৃত্যু সংবাদ যখন দেখলেন পেপারে, তখন খুব অবাক হয়েছিলেন না?"
    সুজিত যেন হঠাৎ মনে পড়েছে এভাবে বলে,
    -"হ্যাঁ, মানে আমি তো তার আগের দিনই এলাম, কিছু জানতাম না।"
    রাই সোফায় আরাম করে বসে বলে,
    -"সুজিত আপনি কেন এসেছেন আজ আমার সাথে দেখা করতে?"
    সুজিত ঠিক বুঝতে পারছেনা এমন ভাবে তাকালে রাই বলে,
    -"আপনি যখন বলবেন না তখন আমিই বলি।"
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৬:৫৭495761
  • ***************************
    রমা সবে সন্ধ্যে দিয়ে উঠেছে, অঞ্জনা লিভিং রুমের সোফায় বসে মোবাইলে বরের সঙ্গে কথা বলছে। অর্ক একটা বই খুলে বসে আছে, পড়ছে কিনা কে জানে! রমার ঘরে টিভি চালিয়ে কার্টুন দেখছে অঞ্জনার ছেলে কুট্টু। দরজায় বেল বাজল, অঞ্জনা অর্কর দিকে তাকালো, তার ওঠার কোনো লক্ষণ নেই, একটু বিরক্ত হয়েই মোবাইলে কথা বলতে বলতে গিয়ে দরজা খুলল। খুলেই অবশ্য অবাক ও অপ্রস্তুত, সঙ্গে সঙ্গে পরে ফোন করবে জানিয়ে ফোন রেখে রাইকে আপ্যায়ন করল।
    -"আসুন, ভেতরে আসুন।"
    রাইয়ের সঙ্গে একটি সুদর্শন যুবক, দেখে অবশ্য বাঙালী মনে হয় না। ছেলেটিকে এমনিতে স্মার্ট লাগে তবে এখন একটু দ্বিধা চোখে মুখে, অচেনা জায়গায় এলে যেমনটা হয়। রাইকে ঢুকতে দেখে অর্কও উঠে দাঁড়ালো, ওদিকে থেকে রমাও গলার আওয়াজ পেয়ে এসে পড়লে। রাইকে দেখে হাসতে গিয়ে চোখ পড়ে তার সঙ্গীর দিকে, হালকা বিস্ময়। রাই সেটা খেয়াল করে। সঙ্গে সঙ্গে কিছু না বলে ওদের সবাইকে বসতে বলে, সঙ্গী যুবকটিকেও।
    সবাই বসলে সে এদের উদ্দেশ্যে বলে,
    -"এর পরিচয় জানলে আপনারা খুব অবাক হবেন। এ হচ্ছে সুজিত, সুজিত মুকুন্দন, গাল্ফে থাকে,রাজীর মামার ছেলে।"
    বিস্ময়ের নানারকম অভিব্যক্তি তিনজনের চোখেমুখে, সবচেয়ে প্রথম সামলে নেয় অঞ্জনা।
    -"শুভা আন্টির ভাই তো শুনেছিলাম ইউ কে তে থাকে, আর ওর ছেলে আছে তাও জানতাম না। যাইহোক পরিচয় হয়ে ভালো লাগল সুজিত।"
    সুজিত কিছু বলেনা যদিও কথাবার্তা সব ইংরেজীতেই হচ্ছিল, শুধু মৃদু হাসে। রাইয়ের মুখ গম্ভীর,
    -"আমি ভুল বলেছিলাম, আসলে আপনাদের অবাক হওয়ার পালাটা এখন, যখন আমি বলব যে শুভা রাজীর সৎমা আর সুজিত হল রাজীর মা নির্মলার ভাইয়ের ছেলে।"
    এবার সবাই চুপ, দৃষ্টি সুজিতের দিকে, কিন্তু কেমন যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে সবাই। অর্কর চোখে অবিশ্বাস, সে একটু বিরক্তি সহকারেই রাইকে বলে,
    -"কী যা তা বলছেন আপনি? শুভা আন্টি রাজীর মা নয় সৎমা, মানে? এ আবার কী নতুন কাহিনী!"
    রমা ও অঞ্জনাও অর্ককে সমর্থন করে। রাই অবাক হয়না, এরকম একটা রিয়্যাকশন স্বাভাবিক। সে প্রাথমিক গোলযোগটা থিতোলে ওদের অনুরোধ করে ওর কথা একটু ধৈর্য্য ধরে শুনতে। কোনো কথাই বাদ দেয়না, রাজীর মার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও বলে।
    -"সত্যি বলছেন? আপনি মিথ্যেই বা বলবেন কেন! কিন্তু এযে কেমন অবিশ্বাস্য মনে হয়, সাতাশ বছরের ব্যবধানে মা আর মেয়ে একইভাবে নিখোঁজ! এ কী করে সম্ভব হয়?" অঞ্জনা বলে।
    অর্ক এখনও অবিশ্বাসী,
    -"রাজীর মায়ের কথা সে আমাকে কোনোদিন বলেনি, ওর বাবা মাও এনিয়ে কিছু বলেনি কখনো। আপনাকে কে বলেছে এসব কথা? ইনি? তা, ইনি যে সব সত্যি বলছেন তার কী মানে? এই মামা, মামাতো ভাই এরা এতদিন ছিল কোথায়? রাজীর কাছে এর আগে তো কোনোদিন আসেনি, আজ তার দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ভিড় করছে কেন? আপনি রাজীর বাবা মার কাছে একে না নিয়ে গিয়ে এখানে এনেছেন কেন? সেখানে গেলেই তো এদের আসল উদ্দেশ্যটা বোঝা যেত।"
    -"অর্ক, তুমি খুব উত্তেজিত, সেটা অস্বাভাবিকও বলছিনা। কিন্তু পুলিশী তদন্তে এসব আগেই উঠে এসেছে। তোমাদের এতদিন জানানো হয়নি কারণ পুলিশ এসব চাপা রেখেছিল। আজ প্রয়োজন হয়েছে তাই আমি ওকে তোমাদের বাড়ি নিয়ে এসেছি। রাজী নিজেও আগে জানতনা যে শুভা তার সৎমা, তোমাকে জানাবে কী করে? সে জেনেছে তার ঠাকুমার মৃত্যুর পরে। অবশ্য তখন সে কেন তোমায় বা তোমাদের জানায়নি তা আমি জানিনা।"
    অর্ক চুপ। রমা বলে,
    -"কিন্তু গিরীশ আর শুভা বিয়ের সময় এসব আমাদের জানায়নি কেন? জানালে কী হত, এই কারণে আমরা বিয়ে দিতাম না তা তো নয়!"
    রাই ভাবে এদের কী করে নির্মলার পুরো ব্যাপারটা জানানো যায়। জানাতে তো হবেই!
    একটু একটু করে পুরো ঘটনাটা বলে, গিরীশের অ্যারেস্ট হওয়ার খবর দিয়ে। সব শুনে এরা স্তম্ভিত। অনেকক্ষণ কেউ কিছু বলেনা। অর্ক মাথা নীচু করে থাকে, তারপরে মাথাটা তুলে ব্যগ্র হয়ে বলে,
    -"রাজীর বাবাকে আমি মাটির মানুষ মনে করতাম, ছি:। রাজীকেও কি ওরাই?"
    রমাও "ছি ছি" করতে থাকেন।
    শুধু অঞ্জনা বলে,
    -"আপনারা রাজীর মায়ের মৃত্যুরহস্য তো ভেদ করে ফেললেন কিন্তু রাজীকে কে মারল তা এখনো জানা গেলনা? এই যে একইভাবে ও বাজার থেকে উধাও হয়েছিল, এতে মনে হয়না ওর বাবা মারই প্ল্যান এটা? রাজীকে মেরে সব সম্পত্তি পেতে চেয়েছিল। পুলিশ শুভাকে গ্রেফতার করেনি কেন?"
    রাই খুব শান্তভাবে ওকে বলে,
    -"রাজীর সম্পত্তি তো তার স্বামীরই পাওয়ার কথা, বাবা মার নয়, এটা কী আর ওরা জানেনা, এতই কাঁচা?"
    এবার অঞ্জনা রাগে ফেটে পড়ে,
    -"আপনারা এখনো অর্ককে সন্দেহ করছেন? আমরা তো রাজীর কী সম্পত্তি আছে কিছুই জানতাম না। এনিয়ে কিছু শুনিনি কখনো। ভাই তো কোনোদিন ওদের কেরালার বাড়িতেও যায়নি। আমরা সাধারন মধ্যবিত্ত, ভাই নিজের ক্ষমতায় সব করেছে, আরো করবে। অন্যের সম্পত্তি টাকাপয়সা লাভের জন্য কোনো অনৈতিক কাজ করার মত শিক্ষা আমরা পাইনি!"
    রাই উত্তর না দিয়ে সুজিতের দিকে তাকায়। সুজিত বারান্দা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে হয়ত অস্বস্তি এড়াতেই। এ অবস্থায় শেষ কথাটা রাইকেই বলতে হবে। রাই অঞ্জনার দিকে হাত বাড়ানোর মত ভঙ্গী করে বলে,
    -"রাজেশ্বরী বা আপনাদের রাজী বেঁচে আছে, ওর কিছু হয়নি, নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা সাজানো ছিল।"
    তিনজোড়া অবিশ্বাসী চোখ ওর দিকে, কিছুক্ষণ সব চুপ। রাই আবার বলে,
    -"রাজী বেঁচে আছে।" অর্ক দুর্বল ভাবে অঞ্জনার দিকে তাকিয়ে বলে "দিদি", একইসঙ্গে অঞ্জনা "ভাই" ও রমা "জিনু" বলে ডেকে ওঠে।
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৭:১০495763
  • -"কোথায় সে? তুমি কী বলছ রাই, আমরা কিছুই বুঝতে পারছিনা। ওকে পেয়েছ তোমরা? তাহলে ঐ লাশটা কার?" রমা ব্যকুল হয়ে প্রশ্ন করে রাইকে।
    -"নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সাজানো? কে সাজিয়েছিল? এই এতদিন ধরে অর্ক, মা, আমাদের বাড়ির সবাই কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, আপনারা আমাদের কিছু বলেননি। আর ঐ লাশ, সত্যি তো ঐ লাশটা তবে কার?" অঞ্জনার কথায় রাই বলে,
    -"আমরাও জানতাম না মানে পুলিশ বা আমি। ঘটনাটা রাজীর নিজেরই সাজানো। একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবেন যে এই ঘটনা সাজাতে হলে সেটা রাজীর সমর্থন বা ইচ্ছে ছাড়া সম্ভব নয়।"
    অর্ক কিছু বলেনা, কেন? রাইয়ের একটু অদ্ভুত লাগে, ও অর্কর প্রতিক্রিয়া কী হবে ভেবেই সবচেয়ে চিন্তায় ছিল। অঞ্জনা এবার সুজিতকে বলে,
    -"রাজী সাজিয়েছে আপনাদের সাহায্যে? কিন্তু কেন? ভাইকে, আমাদের এভাবে হেনস্থা করে কী লাভ হল আপনাদের?" সুজিত কিছু বলার আগেই রাই বলে,
    -"অঞ্জনা, আমি একটু বুঝিয়ে বলি, অবশ্য এসবের কিছুটা আমি সুজিতের কাছে জেনেছি বাকীটা তদন্ত ও অনুমান। আপনারা আমাকে একটু সময় দিন।"
    এবার অর্ক কেমন একটা আছোঁয়া স্বরে বলে,
    -"বলুন আপনি। আমি পুরো ব্যাপারটা শুনতে চাই। কেন? কেন?"

    -"নির্মলার বাবা মেয়ের এভাবে নিরুদ্দেশ হওয়াতে ও তার খোঁজের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়েছিলেন এবং কিছুটা এই ঘটনা তার মৃত্যুর কারণ হয়, সুজিতের কাছে আমরা জেনেছি। শাশুড়ী কনকাম্মা কিন্তু রেহাই পাননি, সারাজীবন তিনি কষ্ট পেয়ে গেছেন, অথচ নিজের ছেলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি। নাতনীর প্রতি অসম্ভব মায়া ছিল, সেই কারণে তার সুস্থ জীবনের কথা ভেবেও হয়ত চুপ রয়ে গেছিলেন। তিনি কিন্তু জানতেন নির্মলা বেঁচে নেই,গিরীশই তার মৃত্যুর জন্যে দায়ী।
    নির্মলার গলায় একটি ভারী মঙ্গলসূত্র ছিল, প্রায় ভরি দশেকের। গিরীশ সেটির মায়া ত্যাগ করতে পারেনি, নিজের কাছে রেখে দেয় পরে হয়ত শুভাকে দিয়ে দিয়েছিল। এই মঙ্গলসূত্র কনকাম্মা পরে দেখে চিনতে পারে, গিরীশকে জিজ্ঞেস করতে সে বলে কনকাম্মার ভুল হয়েছে, নির্মলার গলায় অন্য হার ছিল। কনকাম্মা কিন্তু নিশ্চিত ছিলেন যে ঐ হার ঐদিন নির্মলার গলায় ছিল। তিনি পুলিশে বা নির্মলার বাবাকে এসব বলতে পারেননি তাহলে তার ছেলেকেই ধরা হবে, কিন্তু বিবেকের দংশন তাকে জ্বালিয়ে গেছে চিরকাল।
    শেষপর্যন্ত স্বর্গে হিসেব নিকেশ ঠিক রাখার তাগিদেই বোধহয় রাজীকে সব জানিয়ে নিজে পরিস্কার হতে চেয়েছেন। চিঠিতে তিনি এই মঙ্গলসূত্রের ব্যাপারটাও লিখে যান। রাজীও বুঝে যায় যে তার বাবাই তার মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী। কিন্তু সেও কীভাবে কী করবে বুঝে উঠতে পারেনা! বাবা সৎমার ওপর রাগ ঘৃণা হলেও সে বুদ্ধিমতী মেয়ে, সবদিক না দেখে না শুনে কিছু করতে চায় না।

    প্রথমেই সে তার মামার সঙ্গে যোগাযোগ করে, ঠিকানা ঠাকুমা রেখে গিয়েছিল। ঠাকুমা বেঁচে নেই, যা লিখে গেছে তা সত্যি মনে হলেও একবার ভালো করে সব যাচাই করে নিতে হবে। সুজিতদের সঙ্গে দেখা করে মামার কাছ থেকে সব জানতে পেরে তার সন্দেহ দুর হয়। তারপরে দিল্লী এসে সে এই ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখে এ কেসের কোথাও কোনো রেকর্ড নেই, উল্লেখ নেই, সব দলিল উধাও। সে বুঝতে পারে এ কেস খুলিয়ে আবার তদন্ত করা, তার মা কিভাবে মারা গিয়েছিল তা জানা অসম্ভব যদি না তার বাবা ও সৎমা নিজে থেকে দোষ স্বীকার করে।
    অনেক ভেবে চিন্তে এবং সুজিতের সঙ্গে পরামর্শ করে সে নিজের নিরুদ্দেশের পরিকল্পনা করে দুটো উদ্দেশ্য নিয়ে, এক, তার বাবা একমাত্র মেয়ের একইভাবে নিখোঁজ হওয়াতে মনস্তাপে যদি সব কথা স্বীকার করে। তবে বাবাকে আটকাতে শুভা আছে তাই দুই নম্বর ও ভেবেছিল যদি এই কেসের ভেতরে ওর মায়ের ঘটনাটা কোনোভাবে এসে পড়ে তাহলে পুলিশ ওর মায়ের ব্যাপারটার তদন্ত করতে বাধ্য হবে।

    রাজী দিল্লী এসে মিসেস থমাসের সঙ্গে দেখা করে, ও জানত মিসেস থমাসের সঙ্গে ঠাকুমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল আর উনি একজন অত্যন্ত বুদ্ধিমতী ও ব্যক্তিত্বসম্পন্না মহিলা, ঠাকুমা ওনাকে ভক্তি করতেন। মিসেস থমাসের সঙ্গে কথা বলে ও দেখল ওর ধারণা ঠিক, ঠাকুমা ওনাকে সব বলে গেছেন। মিসেস থমাসও রাজীকে সাহায্য করতে রাজী হলেন। কথা হল যে উনি পুলিশের কানে নির্মলার ব্যাপারটা আর রাজীর নিরুদ্দেশের সঙ্গে ওর মায়ের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাচক্রের যে মিল আছে সেটা তুলে দেবেন।
    রাজী মামার কাছে ঐ মন্দিরের ব্যাপারটা শুনেছিল, সেও তাই ঠিক করল সে মন্দিরের সামনে থেকে গাড়িতে উঠবে, সোনি ওখানে ওসময় থাকবে সে জানত। সোনিকে দেখলেই ও রাস্তা পেরিয়ে যাবে আর ডাকলে সাড়া দেবেনা। মন্দিরের সামনে থেকে ওকে কালো গাড়িতে তুলে নেয় মিসেস থমাসের মেয়ে, সে এসে মায়ের কাছে অপেক্ষা করছিল, ফোন পেয়ে মন্দিরে আসে। রাজী অন্য একটি ফোন ব্যবহার করে যার নাম্বার অর্কর জানা ছিলনা কিন্তু সুজিত বা মিসেস থমাস এদের ছিল।
    রাজী বাজার থেকে মন্দিরের দিকে যাবার আগে বুথ থেকে ফোন করে দেয়। সেদিন থেকে গুরগাঁওতে তার বাড়িতে থাকে রাজী। মিসেস থমাসকে অর্ক সেভাবে চেনেনা, তার মেয়ের সঙ্গে রাজীর যোগাযোগের কথা কেউ কল্পনাই করতে পারবেনা। আসলে এটা মিসেস থমাসের ব্যবস্থা, তার মেয়ের বাড়িতে থাকার ব্যাপারটা। মেয়ে এখন একা বাচ্চাকে নিয়ে, জামাই বিদেশ গেছে, রাজীর ওখানে লুকিয়ে থাকার কোনো বাধা নেই।

  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৭:১৯495764
  • এদিকে শান্তিবিহারের পুলিশ যখন মিসেস থমাসের কথায় পাত্তা দেয় না, তখন ওরা সবাই একটু চিন্তায় পড়ে। ওরা রাজীর লাশ খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটাতেও ঘাবড়ে যায়। সুজিত এসে যখন কাগজে দেখে খবরটা তখন সে তাড়াতাড়ি ফোন করে জানায় রাজীকে।
    লাশের কীর্তিটা যৌথভাবে গিরীশ ও রাজপালের।
    গিরীশ যখন পুরো ব্যাপারটা শোনে, তার সন্দেহ হয় অর্ককে। সে অর্ককে নিজের মতই ভাবে, তার তাই বদ্ধ ধারনা হয় অর্কই তার মেয়েকে খুন করেছে। সে চায় যেকোনোভাবে অর্ককে শাস্তি দিতে। আমরা ভাবছিলাম রাজপাল ওদের প্রভাবিত করছে অর্ককে দোষী ভাবতে আসলে উল্টো। ওরাই রাজপালকে ধরে বসেছিল যেভাবে হোক অর্ককে ধরতেই হবে।
    যখন রাজপাল গিরীশকে ফোন করে বলে রাজীর মত একটি লাশ পাওয়া গেছে পালওয়ালে তখন গিরীশই তার হাতে মঙ্গলসূত্র তুলে দেয় যা আসলে রাজীর নয়, রাজীর বিয়ের সময়ে একই দোকান থেকে কেনা শুভার হার। রাজপাল টাকা পেয়ে এ কাজে রাজী হয়। অর্ক লাশ দেখে চিনতে পারেনা কিন্তু তাতে কারুর সন্দেহ হয়না কারণ এতদিনের জলে ভাসা লাশ!
    তাই যখন ডি এন এ টেস্টের কথা ওঠে তখন রাজপাল ঘাবড়ে যায়। যদি কেউ মঙ্গলসূত্রের ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন তোলে! যারা লাশটি দেখেছিল সেই খোঁড়া ছেলেটি ও বনকর্মীদের কারোর গয়নার কথা মনে নেই, কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। এত ভারী একটা সোনার হার গলায়, নজরে পড়তই। পালওয়ালের পুলিশরা লাশ ছোঁয়নি রাজপালের নির্দেশে, রাজপাল ভার্মার আগে পৌঁছয়, সে ভান করে যেন তার হাতের হার ঐ লাশের গলা থেকে খোলা।
    গিরীশ তার শ্বশুরের দৌলতে এই শহরের পুলিশ বিভাগের কার্যকলাপ ভালোই জানত। তাই বড়মুখ করে ডি এন এ টেস্টে সায় দেয়। তারপর রাজপালকে টাকা দিয়ে ব্যবস্থা করতে বলে যাতে ঐ রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গিরীশের ধারণা হয়েছিল অর্ক রাজীকে মেরেছে বা মারিয়েছে কিন্তু হয়ত এমন ব্যবস্থা করেছে শ্বশুরের মতই যে কোনোদিন খুন প্রমাণ হবেনা, লাশ পাওয়া যাবেনা। তাই তার কাছে ঐ লাশ রাজীর বলে প্রমানিত হওয়া জরুরী মনে হয়েছিল।

    ভাগ্যবশত যতিন্দর আমাকে নিয়ে যায় মিসেস থমাসের কাছে, নাহলে অবশ্য খোঁজখবর নিয়ে উনি দু একদিনের মধ্যে ভার্মার কাছে যেতেন। সুজিত রাজীকে সাহায্য করতেই কাজ নিয়ে এদেশে আসে। সে ফিরোজগাঁও গিয়ে খোঁজখবর করে এই ভেবে যে দরকার হলে পুলিশের সাহায্য করবে। এসবে সত্যিই আমাদের সাহায্য হয় নির্মলার কেসে। তবে তখনও আমরা রাজীর নিরুদ্দেশের ব্যাপারে অন্ধকারে।
    সুজিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ কী করছে না করছে জানার জন্যে। আমার কিন্তু প্রথম থেকেই সুজিতের হাবভাব দেখে সন্দেহ হয়, রাজীর সঙ্গে তার ভালো বন্ধুত্ব (যদি কাজিন ব্যাপারটা নাও ধরি) অথচ তার মৃত্যুতে সেরকম কোনো শোক দু:খ নেই। অর্কর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপার মুখে বলছে, আমাদের কাছে ঠিকানা ফোন নাম্বার নিতে পারত কিন্তু নিল না। রাজীর ঠিক নির্মলার মত একইভাবে হারিয়ে যাওয়া এটা একমাত্র গিরীশ করতে পারে কিন্তু সে কেন করবে! এতে তো তারই বিপদ, নির্মলার কেস যা চাপা পড়ে গেছে আবার খুলবে। গিরীশ ছাড়া এরকম নিরুদ্দেশ মঞ্চস্থ করতে পারে একমাত্র রাজী নিজে।
    গিরীশকে দুর্বল করার চেষ্টায় মিসেস থমাসের মেয়ে (সুজিতের ফিল্মি আইডিয়ায়) সাউথ পার্কের ফোন বুথ থেকে রাজীর নামে ফোন করে। গিরীশ এতে ঘাবড়ে যায়, সে তো একটা মিথ্যে লাশকে রাজীর লাশ বানিয়েছে, সত্যিই যদি রাজী বেঁচে থাকে, অর্ক দোষী না হয়! রাজপালও ভয় পেয়ে যায়, তাই দেখে গিরীশ ভার্মার কাছে আসে। এই ব্যাপারটাতে গিরীশের এরকম রিয়্যাকশন আমার অদ্ভুত ঠেকে। তখনই মাথায় আসে তবে কী ঐ লাশটা সত্যিই রাজীর নয়? অর্ক বার বার বলেছে ওটা রাজী নয় যদিও সেভাবে গুছিয়ে কারণ বলতে পারেনি, তাহলে কি অর্কই ঠিক! আমি তখন ভার্মাকে বলি চুপি চুপি আর একবার ডি এন এ টেস্ট করাতে কাউকে কিছু আভাস না দিয়ে। দ্বিতীয়বার টেস্ট করে প্রমাণ হয়ে যায় ঐ লাশ রাজীর নয়। ফরেন্সিকের লোক যে রিপোর্ট বদলেছে ও রাজপাল দুজনেরই সাসপেনসন অর্ডার এতক্ষণে এসে গেছে বোধহয়।
    ফোনের ব্যাপারে বলে রাখি, সুজিতের মোবাইল ও হোটেলের ফোন পুলিশ মনিটর করছিল সমানে। কিন্তু সুজিত রাজী বা মিসেস থমাসের সঙ্গে যোগাযোগ করত অন্য ফোনে যার নাম্বার আমরা জানতাম না। মিসেস থমাসকে বা তার মেয়েকে আমরা কেউই সন্দেহ করিনি। আসলে রাজী যে বেঁচে আছে বা তার নিরুদ্দেশের ঘটনা যে তার নিজেরই সাজানো এটা গিরীশ ঐ ফোন পাবার আগে আমার মনে হয়নি। তারপর আমি ভার্মাকে ডি এন এ টেস্ট করতে বলি আবার।
    রাজীও তার অন্য ফোনে সুজিত বা তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করত। সুজিত কম্পিউটার প্রোফেশন্যাল, তারই নির্দেশে রাজী এমনভাবে নিজের মেলবক্স ব্যবহৃত কম্পিউটার সব কিছু থেকে সমস্ত রেকর্ড মুছে ফেলে।"
  • shrabani | 117.239.15.104 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৭:২৫495765
  • একটানে এতটা বলে থামে রাই। ঘরের লোকগুলো চুপচাপ শোনে যন্ত্রের মত, কোনো কথা বলেনা, প্রশ্ন করেনা। না করলেও অর্কর চোখে রাই যেন প্রশ্ন দেখতে পায় "কেন?কেন?"
    -"অর্ক, তুমি রাজীকে ভুল বুঝোনা। সে তোমাকে সব কিছু বলতে পারেনি, বলা উচিৎ ছিল, তোমাদের যা সম্পর্ক তাতে সবকিছু সবার আগে তোমার সাথেই শেয়ার করার কথা। কিন্তু অবস্থাটা বোঝো, তোমার সাথে তার সম্পর্কের মূল হল শুভা যে এই অবস্থায় সব জানার পর তার চোখে প্রধান অপরাধী। শুভার সাথে সাথে তোমাদের ওপর, বাঙালী ও বাঙালীয়ানার ওপর রাজীর বিতৃষ্ণা জন্মাল। সে বুঝতে পেরেছিল তার নিরুদ্দেশের ঘটনায় সবাই তোমায় সন্দেহ করবে, পুলিশে তোমায় হ্যারাস করবে, তোমাকে অনেককিছু সইতে হবে কিন্তু তাও সে তোমায় সব জানাতে পারেনি। তোমায় সে বিশ্বাস করতে পারেনি।"
    রাইয়ের কথার মাঝে সুজিত বলে ওঠে,
    -"আসলে এই লাশের ব্যাপারটা তো আমাদের প্ল্যানে ছিলনা। স্ত্রী নিরুদ্দেশ, স্বামীর ওপর সন্দেহ আসবে সম্পর্ক নিয়ে এইটুকুই। খুনের ঘটনা প্রমাণ হতে আপনার ওপর মানসিক চাপটা অনেক বেশী পড়েছে, রাজী এরকম হবে ভাবে নি।"
    অঞ্জনা বলে,
    -"এটা অন্যায়। এতদিনে রাজী আমাদের বা নিজের স্বামীকে চিনতে পারেনি? অর্ককে জানালে সে রাজীর সহায় হত। শুভা আন্টি ওরকম বলে সব বাঙালী খারাপ?"
    কেউ উত্তর করেনা, রমা সুজিতকে বলে,
    -"খুব খুব অন্যায় করেছে রাজী আমাদের না বলে, অন্তত অর্ককে সবকথা বলা তার উচিৎ ছিল। তোমরা ভাবতে পার কী মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে আমার ছেলে গেছে দিনের পর দিন? আশেপাশের লোক, আত্মীয় বন্ধু তার ওপরে পুলিশ তো আছেই সবাই তাকে স্ত্রীর হত্যাকারী সন্দেহে দেখেছে।"
    অর্ক কিন্তু তখনও চুপ। সুজিত ওর দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"রাজী সব কিছু লিখে নিজের স্বীকারোক্তি পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। ভার্মা কথা বলছে যাতে ওর বিরূদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। আপনাকে রাজী কিছু লিখে পাঠায়নি তবে আমাকে বলেছে আমি যেন ওর হয়ে ক্ষমা চেয়ে নি।"

    অর্করা সবাই এ কথায় অবাক হয়ে তাকায় সুজিতের দিকে। রাই মুখ ঘুরিয়ে থাকে। সন্দেহটা অঞ্জনাই মুখে আনে,
    -"রাজী এখন এখানে ফিরবেনা? ওতো গুরগাঁওতে আছে বললেন।"
    সুজিত অর্কর পাশে গিয়ে বসে। ওর পিঠে হাত রেখে বলে,
    -"প্লিজ, আপনি ওকে একটু সময় দিন। ও কিছুতেই এখানে ফিরতে রাজী হলনা। আজ ভোরের ফ্লাইটে ও আমার বাবার কাছে চলে গেছে। মেয়েটা খুব দু:খী। ও মনে করে ওর বাবা মার কথা জানলে সবাই ওকে করুণা করবে বা সন্দেহ করবে, মোট কথা কেউ ওকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারবেনা, আপনারাও নয়। তাই ও আমার বাবা মার কাছে থাকতে চায়। বাবাও বলল এ অবস্থায় ওকে ওখানেই পাঠিয়ে দিতে।
    আমার বিশ্বাস সব মিটে গেলে ও যখন দেখবে আপনি ওকে ভালোবাসেন, ওর জন্যে অপেক্ষা করে আছেন তখন ও ফিরে আসবে। সেই কদিন একটু ধৈর্য্য ধরুন, রাজীকে, আপনাদের সম্পর্ককে একটু সময় দিন। আমি আজ এখানে এসেছি আপনাদের সবাইয়ের কাছে এই অনুরোধ করতে। নাহলে কী হয়েছে না হয়েছে সেসব তো রাই ম্যাডাম বা পুলিশের লোক এসে আপনাদের জানাতে পারত।"

    রাই ও সুজিত যখন অর্কদের বাড়ি থেকে বেরোলো তখন কেউই বিদায় সম্ভাষণ টুকু জানাবার মতও অবস্থায় নেই, কেমন যেন একটা নীরবতার আচ্ছাদন ঘিরে ধরেছে সবকটি মানুষকে।

    রাইকে ওর বাড়ীতে ছেড়ে দিয়ে সুজিত চলে গেল। সে এখন কিছুদিন থাকবে, ভার্মার তাকে দরকার আছে, সেই কড়ারেই রাজীকে যেতে দেওয়া হয়েছে।
    রাতে ভার্মার ফোন এল নেকরামকে পাওয়া গেছে। সে সব স্বীকার করেছে। রাইয়ের ধারণাই ঠিক, নির্মলার খুন করেছে ঐ নেকরামই। এবার হয়ত গিরীশও মুখ খুলবে। ওরা উকিল দিয়েছে, শুভা খুব চেষ্টা করছে জামিন করতে।

    রাইয়ের খুব ক্লান্ত লাগে। চোখ বন্ধ করে বার বার অর্কর মুখটা ভাসে চোখের সামনে। কী করবে অর্ক এবার? রাজীর জন্যে অপেক্ষা? নাকি আজকালকার আধুনিক যুগের ছেলে দুদিনেই সব ভুলে নিজের জীবন, কেরিয়ারে মেতে যাবে? আর রাজী? সে কি ফিরবে কোনোদিন এদেশে? যেখানে তার সব আছে অথচ কিছুই নেই! সুজিতের কথা মনে হয়। খুব ভালো ছেলে, হয়ত ঐ পারবে সব ঠিক করে দিতে, নিজের পরিবারকে আবার স্বাভাবিক করতে, সবাইকে সাতাশ বছর আগেকার দুর্ঘটনা থেকে বার করে নিয়ে আসতে! নিশ্চয়ই পারবে, পারতেই হবে।
    সুজিতের কথা মনে করে রাইয়ের মুখে হাসি ফিরে আসে ঘুমে ঢলে পড়ার আগে।

    (শেষ)
  • PM | 86.96.228.84 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৭:৫৭495766
  • ভীষণ ভালো লাগলো। প্রত্যেক-টা চরিত্র ঠিক ঠাক ফুটে উঠেছে।

    প্রথম থেকে আবার পড়ব।

    পরের গল্পের জন্য তাগদা দিয়ে রাখলাম।
  • kumu | 122.160.159.184 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৮:০৩495767
  • চমৎকার,চমৎকার,চমৎকার।

    শ্রাবণী,ভাষা জানিনা এই অসাধারণ লেখার প্রশংসা করার।

    এটি বই করে বের করা হোক।
  • PM | 86.96.228.84 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৮:৩৫495768
  • এর পরে কি হলো তা একটা সমাজিক উপন্যাসের পটভুমিও তৈরী হয়ে রয়েছে :)
  • Du | 117.194.195.157 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ১৯:৩৮495769
  • দারুন হয়েছে। নিটোল। আবার পড়বো পুরোটা একসাথে।
  • siki | 122.177.251.103 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ২১:১১495770
  • আপাতত আমি পিডিএফ বানিয়ে দিচ্ছি। :-)
  • Sumit Roy | 72.231.206.88 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ২১:৩১495771
  • পবিত্র গরু, ব্যাটম্যান!
  • Sumit Roy | 72.231.206.88 | ২৮ নভেম্বর ২০১১ ২১:৩২495772
  • পবিত্র গরু, ব্যাটম্যান!
  • Asmita | 134.134.139.74 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০০:৪৯495774
  • দুর্দান্ত ভাল হয়েছে। next গল্প কবে পাচ্ছি?
  • rimi | 168.26.205.19 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০০:৫৭495775
  • একদম এক নি:শ্বাসে পড়ে ফেললাম! জমাট গল্প। কিন্তু একটা ব্যপার বুঝলাম না। রাজী মৃত্যুর পরে সব সম্পত্তি সুজিতকে দেবে এই মর্মে উইলটা কেন করল? আমি কি কিছু মিস করে গেছি?
  • Archie | 68.2.172.36 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০১:৫৩495776
  • দুর্দান্তো লেখা। PDF কি করে পাব?? আ কে পাথাতাম তহলে।
  • Archie | 68.2.172.36 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০১:৫৭495777
  • bhoyanokBanglalikhlamImean'make'
  • mita | 71.191.42.195 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০৪:৩৬495778
  • শ্রাবণী, দারুন, দারুন লাগলো! যেমন প্লট, তেমনি সুন্দর ভাবে শেষ করলে।
    খুব রিয়ালিস্টিক লাগল।
    রোজকার কাজকম্ম, চাকরি, সব কিছু সামলে কি করে যে এর'ম লেখো!
  • pi | 72.83.76.29 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০৪:৪০495779
  • শ্রাবণীদি, চমৎকার।
    একটা দুটো কোশ্চেন আছে, পরে করবো।
  • siki | 122.177.251.103 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০৭:৩৫495780
  • শ্রাবণীর অনুমতি পেলে আমি পিডিএফ পাঠিয়ে দিতে পারি। :-)
  • Asmita | 50.39.135.44 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০৭:৫৬495781
  • siki আমাকে পাঠাবেন pls, email id: [email protected]
  • titli | 14.96.222.49 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৩৮495782
  • সবকিছু ছেড়ে শুধু এমন বাংলা লেখার জন্য স্যালুট। প্রচুর ভেবেছেন , গুছিয়ে লিখেছেন। ধন্যবাদ।
  • pharida | 61.16.232.26 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ১০:০৯495783
  • শ্রাবণী, নয়াদিল্লিতে ভমা খুলেছে বলে সিকি বল্ল না - সেখানেই আমার তরফ থেকে তোমাদের একটা নেমন্তন্ন রইল।

    কাল একটা কাজে পড়তে পারিনি শেষটা। দারুণ হয়েছে - সিকির কাছে পিডিএফের আর্জি আমিও জানিয়ে রাখি।
  • siki | 123.242.248.130 | ২৯ নভেম্বর ২০১১ ১০:২৭495785
  • শ্রাবণী কিছু সময় নিয়ে লিখেছে বটে! বাহাত্তর পাতা লম্বা হয়েছে লেখাটা।

    শ্রাবণী কি তা হলে এটা এই বইমেলায় চটি আকারে বের করবে নাকি? সঙ্গে আগের লেখাগুলোও জুড়ে দিলে কিন্তু পুউরো উডল্যান্ডস হয়ে যবে! ইয়া গোব্‌দা!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন