এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২০৬৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Debashis | 89.147.0.175 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১৬:৩৯496023
  • শ্রাবণী

    এ পাড়ায় আমি লিখি না। শুধু পাঠক। তবু আপনার গল্পের টানে লিখতে হল। আপনার এই লেখা নেশা ধরিয়ে দেয়। পড়ার নেশা। unputdownable (মানে যে বই একবার পড়া শুরু করলে আর নামিয়ে রাখা যায় না :)।) লেখা আপনার।

    আমি জানি, কাজের মাঝে সময় করে লেখা খুবই মুশকিল। অন্য পাড়ায় একটি ধারাবাহিকে আমিও একই ভাবে আটকে গেছি। তবু আপনাকে অনুরোধ, একদিন সময় করে একটু বসে পড়ুন। এ সপ্তাহে সত্যিই বড় কম পেলাম, আশ মিটল না পড়ে।

    দেবাশিস
  • Update | 122.248.183.1 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১৮:১৮496024
  • Name:shrabaniMail:Country:

    IPAddress:117.239.15.104Date:14Nov2011 -- 05:34PM

    দেবাশীষ,
    ধন্যবাদ, আমি চেষ্টা করব এবার সময় করে বসে একেবারে শেষ করে দেওয়ার, অনেকদিন ধরে চলছে এটা সত্যিই .... সঙ্গে থাকার জন্য অন্য সব্বাইকেও
  • Nina | 12.149.39.84 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ২০:৩৫496025
  • শ্রাবণী
    আমি 8th Dec দেশের জন্য রওনা হব--প্লিজ প্লিজ তার আগে শেষ কোরো----আর দিল্লীতে তোমার সঙ্গে খুউব দেখা করার ইচ্ছে---11th Dec দিল্লীহাটে এস প্লিজ।
  • Zzzz | 99.227.174.103 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ২২:৪১496026
  • আরে না না। আমি যাচ্ছি ৩০শে নভেম্বর। তার আগে শেষ করো প্লিজ।
  • hukomukho | 117.194.64.206 | ১৯ নভেম্বর ২০১১ ২২:৩৪496027
  • হেঁইয়ো তুললাম ।
  • a | 208.240.243.170 | ২০ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৪৭496028
  • নিচে যেতে দেব না এটাকে :)
  • Debashis | 89.147.0.175 | ২০ নভেম্বর ২০১১ ১৫:৪০496029
  • week end চলে গেল যে প্রায়। টইটা ডুবতে দেওয়া যবে না।
  • titli | 121.241.218.132 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১০:৪৫496030
  • আজ হবে তো?
  • ranjan roy | 14.97.13.96 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১১:১৮496031
  • ডুবতে দেব না। ""প্রতিচ্ছায়া'' নামটা ভাবাচ্ছে। মা- মেয়ের একই ভাবে হাপিস হওয়া! কিন্তু সময়ের এত বড় ব্যবধানে? ভাবাচ্ছে।
  • um | 115.113.42.99 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫৪495730
  • না আজ আর আসা নেই মনে হচছে।।।
  • PM | 86.96.228.84 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫৮495731
  • এক সপ্তা ধরে কি মিটিং চলছে রে বাবা। নাকি ডিম্যন্ড তৈরী করা হচ্ছে? :)
  • Shn | 59.144.10.250 | ২১ নভেম্বর ২০১১ ১৫:৩৭495732
  • শ্রাবণী, আর কত অপেক্ষা করাবে?
  • nabanita | 152.79.101.232 | ২২ নভেম্বর ২০১১ ২১:৪২495733
  • শ্রাবণী ঈঈঈঈঈঈঈ, বাকি গল্প কোথায় গেল? আর অপেক্ষা করিয়ো না please please
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ নভেম্বর ২০১১ ২১:৪৩495734
  • সত্যি--এবারে প্রাণ ছটফট --কি হল কি হল কি হল=====
  • PM | 2.50.40.193 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:৫৩495735
  • এরম করলে খেলবো না
  • siki | 123.242.248.130 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৪৩495736
  • শ্রাবণীর সাথে কথা হয়েছিল। গত সপ্তাহে প্রচন্ড বিজি ছিল, লেখার সময় পায় নি। এই উইকেন্ডে বসতে পারে।
  • i | 137.157.8.253 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৫১495737
  • মা, মেয়ে, মামা( সন্ন্যাসী), মালা , মুকুন্দন.... মাকড়সার জালের নকশা...
    আরো ভাবি আরো ভাবি...
  • Du | 117.194.198.24 | ২৩ নভেম্বর ২০১১ ১০:১০495738
  • এবারে ও শেষ করেই পেস্ট করবে :)
  • shrabani | 59.94.106.231 | ২৬ নভেম্বর ২০১১ ১২:৩৫495739
  • ******************************
    -"এই লোকটির কোনো বর্ণনা দিতে পারেন পন্ডিতজী,কিরকম দেখতে ইত্যাদি?"
    ভার্মার কথায় পন্ডিতজী একটু ভাবল,
    -"দেখতে মানে ভালোই, জওয়ান আদমী, লম্বা, দোহারা, বয়স ত্রিশ বত্রিশ হবে। মনে হয় বাইরের মুলুকের লোক, হিন্দি সেরকম বলতে পারেনা,ইংরেজীই বলছিল, তবে দেশী। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন এসব কথা জানতে চাইছে এতদিন পরে, তা বলল ঐ মহিলা ওর আত্মীয়া ছিলেন, এদেশে এই প্রথম এসেছে, একবার জায়গাটা দেখে গেল।"
    -"কোথা থেকে এসেছে জানতে চান নি?"
    -"না সাহেব, মন্দিরে আরো লোকজন আসছিল, কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে কথাবার্তা হচ্ছিল, শেষের দিকে একটু বেশী ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, তাই ঠিকানা দিয়ে চলে গেলেন উনি।"
    ভার্মা আর কথা না বাড়িয়ে নম্বরগুলো নিয়ে নিল আর নিজের ও থানার ফোন নাম্বার দিয়ে বলল অজয় মানে সেই ছেলেটির ঠিকানা জানতে পারলে শুধু তাকেই জানাতে। ওরা মন্দির থেকে বেরিয়ে এল,পন্ডিতজীও ওদের সঙ্গে গেট অবধি এগিয়ে দিতে এল। এরা গাড়িতে উঠলে যখন ড্রাইভার যেদিক দিয়ে এসেছে সেইদিকে গাড়ি ঘোরাতে যাবে তখন ওনার খেয়াল হল,
    -"আরে আপনারা তো দিল্লি ফিরবেন?"
    -"হ্যাঁ।"
    উনি উল্টোদিকে গৌরীকুন্ডের পাশের একটা সরু রাস্তা দেখিয়ে বললেন
    -"তাহলে আর গ্রামের ভেতরে যাচ্ছেন কেন? ওদিকে রাস্তা খারাপ, ভিড়ও বেশী হয়। এই রাস্তা দিয়ে গেলে ফার্মহাউসের কাছে গিয়ে বাইপাস পাবেন। বাইপাস ধরে কিছুদুর গেলে দিল্লি আসবে, ফাঁকা রাস্তা, তাড়াতাড়ি পৌঁছে যাবেন।"
    ভার্মা পুরোহিতকে ধন্যবাদ জানিয়ে ড্রাইভারকে ওনার দেখানো রাস্তায় চলতে নির্দেশ দিল। মাঝদুপুর প্রায়, পেটে কিছু পড়েনি সেই সকালের ব্রেকফাস্টের পর, উত্তেজনায় খিদে তেষ্টা ভুলে গিয়েছিল, কিন্তু এখন গাড়িতে বসে রাইয়ের প্রচণ্ড খিদে পেল। ভার্মা নিজের নোটবুকে লীলা হোটেলের নাম্বার আর নামটা দেখছিল,
    -"ম্যাডাম, চলুন না একবার হোটেল ঘুরে যাই। আপনি সঙ্গে থাকলে ভালই হয়, ঐ মন্দিরের ব্যাপারটা আপনি না বললে তো মাথায়ও আসতনা।"
    রাইয়েরও সেরকম ইচ্ছে, সে একটু হেসে বলল,
    -"তা না হয় যাব, কিন্তু পেটে কিছু না পড়লে আর যে দাঁড়াতে পারব না ভার্মাজী। রাস্তায় কোথাও মোটামুটি পরিস্কার একটা ধাবাটাবা দেখলে একটু দাঁড় করাবেন, খেতে হবে।"
    ভার্মা লজ্জা পেয়ে নিজেকেই ছি ছি করতে লাগল, ম্যাডামকে চা পর্যন্ত খাওয়ানো হয়নি কোথাও। তাদের তো এরকম হয়ই, কিন্তু ম্যাডামের অভ্যেস নেই, তার খেয়াল করা উচিৎ ছিল। সে ড্রাইভারকে বলে দিল, খাবার জায়গা দেখলেই গাড়ী থামাতে।
    প্রায় কিলোমিটার খানেক চলার পরে একটা গেট এল, উঁচু পাঁচিলঘেরা জায়গা, বাইরে থেকে বাড়ি দেখা যায়না, গেটে সিকিউরিটীর কুঠরি এখন বন্ধ। রাই দেখে বুঝল এটাই মন্দিরের মালিক লালজীদের ফার্মহাউস। ঐ পাঁচিলের গা দিয়ে গিয়ে গাড়িটা একটা বড় রাস্তায় উঠল, দু চারটে গাড়ি সে পথে চলাচল করছে দেখা গেল। কিছুদুর গিয়ে একটা ছোট ধাবা মতন দেখে ড্রাইভার গাড়ি থামাল। বেশী কিছু পাওয়া গেলনা,গরম পুরী, সবজি আর চা। খিদের সময় তাই অমৃত মনে হচ্ছিল, পেটভরে খেল তিনজনে। খাওয়াদাওয়া সেরে গাড়ি যখন আবার চলতে শুরু করল রাই রোদচশমার আড়ালে চোখ বুজেছে, ভার্মাও চুপচাপ। আগেই আলোককে ফোন করে দিয়েছিল, তার ফেরার ঠিক নেই, আলোক যেন তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাড়ি ফেরে।
    ঝিমোনোর ফাঁকে সারাদিনের ঘটনা আবার ফিরে ফিরে দেখছিল রাই। এই মুকুন্দনই কি রাজীর মামার ছেলে, যে গাল্ফে থাকে! সে কবে এসেছে এখানে, কেন? পুলিশ রাজীর মায়ের ব্যাপারে যা মনে হচ্ছে সেরকম ভালো করে তদন্ত করেনি। কেন? মন্দিরের ছেলেটি কী সত্যিই দেখেছিল নির্মলাকে ঐদিন সন্ধ্যেয় স্কুটারে যেতে, মানে গিরীশের স্কুটারে! ঠিক যেমন করে সোনি বলছে রাজীকে দেখেছে অর্কর গাড়িতে যেতে, অন্ধকারে!

    এতকিছুর মধ্যেও সব ছাপিয়ে বারবার নেকরামের জ্বলন্ত দৃষ্টিটা মনে ভেসে আসছিল। কী মনে হতেই ধড়পড় করে উঠে পড়ল রাই,
    -"ভার্মাজী।"
    ভার্মারও বোধহয় ঝিমুনি এসে গিয়েছিল, আচমকা ডাক শুনে চটকা ভেঙে "কী কী" করে উঠল।
    -"ভার্মাজী, নেকরামকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়না? আমার কেমন মনে হচ্ছে ওর সঙ্গে একবার ভালো করে কথা বলা দরকার। ও শুভার বাবার আমলের লোক, শুভা গিরীশের সম্পর্কের সত্যটা ও নিশ্চয় জানবে,পুরনো কথা। পুলিশকে গ্রাহ্য করেনা, এটা আমার খুব অস্বাভাবিক লাগল। হয় ও একজন পোড় খাওয়া অপরাধী নয়তো বা পুলিশে কখনো কাজটাজ করেছে, যাই হোক, ওর অতীতটা জানতে পারলে ভালো হত। "
    ভার্মা অতটা উৎসাহী হতে পারেনা, একটু দ্বিধায় বলে,
    -"হতে পারে, ওকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করাই যায়, কিন্তু তাতে আমাদের কেসের কী সুবিধে হবে জানিনা। ওকে রাজপাল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে আগে, মিসেস ব্যানার্জী ঐদিন বা ওর আগেও অনেকদিন ওবাড়ী যায়নি। সাধারনত উনি ওবাড়ি কমই যেতেন।"
    রাই বুঝল ভার্মা রাজীর মায়ের সাতাশ বছর আগের নিখোঁজ হওয়ার কেসের চেয়ে বর্তমানে মেয়ের খুনের কেস নিয়ে বেশী চিন্তিত। সেটাই স্বাভাবিক, সেও রাজীর খুনেরই কিনারা করতে চায়, অর্কর ওপর যেন মিথ্যে দোষ না চাপে তা নিশ্চিত করতে চায়, তবু কেমন যেন দুটো কেসের এই মিল তাকে ভাবাচ্ছে, কেমন যেন কিছু একটা সম্পর্ক আছে এই দুই ঘটনার মধ্যে। একজন মহিলা সব ছেড়েছুড়ে অচেনা দেশে এসেছিল স্বামীর হাত ধরে, ছোট্ট বাচ্চা, কত স্বপ্ন এরকম সময় থাকে মেয়েদের, ভবিষ্যতের কত রঙীন কল্পনা। সব কিভাবে কেমন করে ওলোটপালোট হয়ে গেল, কেউ জানেনা! কী তার পরিণতি হয়েছিল সেটা পর্যন্ত তার নিকটজনেরা কেউ জানতে পারেনি বা জানতে চেষ্টা করেনি। রাজীর সাথে সাথে নির্মলার জন্যেও সহানুভূতিতে মন আপ্লুত হয়ে উঠছে রাইয়ের।
    কিন্তু দুটো কেসের সম্পর্ক শুধু তারই মনে, কোনো প্রমাণ নেই, সূত্র নেই, কী করে বোঝাবে সে ভার্মাকে বা অন্যদের! তবু সে আবারও অনুরোধ করল ভার্মাকে কালই যেন নেকরামকে থানায় এনে কথা বলা হয় এবং তার সম্বন্ধে সব খবর নেওয়া হয়। ভার্মার অবশ্য রাই ম্যাডামের ওপর প্রভূত আস্থা, তাই ঠিক নিজে জরুরী মনে না করলেও রাইয়ের কথামত নেকরামকে থানায় এনে কালই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কথা দিল।

    দুপুরের দিকে রাস্তা খালি, বেশ তাড়াতাড়িই ওরা লীলা হোটেলে পৌঁছে গেল। রিসেপশনে প্রথমটায় ভার্মা নিজের পুলিশী পরিচয় দেয়নি। খোঁজ নিয়ে ওরা জানল সুজিত মুকুন্দন রুমেই আছে। রিসেপশনের মহিলা যখন রুমে ফোন করতে যাবে তখন ভার্মা নিজের আই কার্ড দেখাল রুমে ফোন করতে বারণ করে। এটুকু তৈরী হওয়ার সময়ও দিতে চায়না মি: মুকুন্দনকে। রিসেপশনিস্টের চোখে হালকা ভয় পুলিশের নামে, রাই মেয়েটিকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বোঝালো, মি: মুকুন্দনের এক আত্মীয় অয়াক্সিডেন্টে মারা গেছে, ওরা সেই খবর দিতে এসেছে, অন্য কোনো ব্যাপার নেই, এনিয়ে মেয়েটিকে কোনো আলোচনা করতেও বারণ করল। সে কতটা ওদের বিশ্বাস করল বোঝা গেলনা তবে এনিয়ে আর কোনো কথা বাড়ালোনা।

    লিফটে সাততলায় উঠে নম্বর মিলিয়ে একদম কোণের ঘরের দরজায় ভার্মা নক করল, রাই একটু তফাতে দাঁড়িয়ে। দরজা খুলল বছর তিরিশের একটি যুবক, ঘুমচোখে হালকা বিরক্তি। ভার্মাকে হোটেলের স্টাফ ভেবেছিল বোধহয়, বেশ রেগে কিছু একটা বলতে গিয়ে তার চোখ পড়ল রাইয়ের দিকে। রাগটাকে গিলে নিয়ে বলল,
    -"ইয়েস?"
    -"মি: মুকুন্দন? আমি পুলিশের পক্ষ থেকে আসছি। আপনার সঙ্গে কিছু কথা ছিল।"
    পুলিশের নাম শুনে লোকটির ঘুম উধাও। বিশ্বাস অবিশ্বাসের দ্বন্দ চোখে নিয়ে ওদের ভেতরে আসতে বলল। নির্ঘাত রাইকে দেখে পুলিশের লোক বলে মনে হচ্ছিলনা ওর, সন্দেহ সেই কারণেই। ভার্মা সেটা বুঝতে পেরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে নিজের কার্ড বার করে দেখাল। বিছানার পাশে একটা সোফায় ওদের বসিয়ে নিজে বিছানায় বসল সুজিত। রাই চারদিকে তাকিয়ে দেখল, বেশ সাজানো গোছানো ঘর যেমনটা হয় দামী হোটেলে। বিছানার ওপরে ল্যাপটপ খোলা আছে, একটা ফাইল। এছাড়া সারা ঘরে অগোছালো কিছু নেই। সুজিতের পরণে জীনস আর টিশার্ট। কম্পিউটারে কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিল মনে হয়। ভার্মা সরাসরি কাজের কথায় আসে, ফিরোজগাঁওয়ের মন্দিরের পুরোহিতের কথা জানিয়ে জিজ্ঞেস করে,
    -"আপনি হঠাৎ এতকাল পরে নির্মলার খোঁজ করে ওখানে গেছিলেন কেন? ওর সঙ্গে আপনার কী সম্পর্ক।"
    সুজিত মাথা নীচু করে একটু চিন্তা করে, তারপরে যেন স্থির করে ফেলেছে এমন একটা ভঙ্গীতে মাথা তুলে সরাসরি ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"উনি আমার বাবার বোন, আমার পিসী ছিলেন।"
  • shrabani | 59.94.106.231 | ২৬ নভেম্বর ২০১১ ১২:৪৮495741
  • -"তাহলে রাজেশ্বরী আপনার পিসীর মেয়ে। আপনার সঙ্গে ওর যোগাযোগ ছিল? আপনি রাজেশ্বরীর মৃত্যুর খবর পেয়েছেন? কবে এসেছেন এ দেশে?" রাই একদৃষ্টিতে সুজিতের দিকে তাকিয়ে ছিল, রাজেশ্বরীর মৃত্যুর কথায় ওর প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করছিল। ঘনিষ্ঠতা কিরকম কে জানে, তবে কোনো বিষাদের ছায়া নজরে পড়লনা, একটু দ্বিধা, একটু দোটানার মত, কী বলবে না বলবে!
    -"হ্যা,ঁ কিছুদিন আগে ওর ঠাকুমার মৃত্যুর পর ও আমাদের কথা জানতে পেরে আমার বাবার সাথে যোগাযোগ করে। তারপর থেকে মাঝেমাঝে আমার সাথে নেটে কথাবার্তা হত, বাবাও দু একবার ওকে মোবাইলে ফোন করেছে। তবে ওর মৃত্যুর খবর আমরা পাইনি, কারণ ওর মা বাবা কেউ জানতনা আমাদের সাথে ওর যোগাযোগের কথা, ওর স্বামীও না। আমি চারদিন হলো এদেশে এসেছি অফিসের কাজে। আসার আগে খুব ব্যস্ত থাকায় ওকে ফোন বা মেল করিনি। এসে ফোন করছিলাম কিন্তু নাম্বার নেই বলছিল। পরদিন সকালে পেপারে খবরটা দেখি, খুব ছোট্ট খবর কিন্তু ছবি আর নাম দেখে চিনতে ভুল হয়না। খবরটা দেখে সঙ্গে সঙ্গে আমি বাবাকে জানাই। বাবা শুনে অবধি খুবই শকড। ওর স্বামীর ফোন নাম্বার বা ঠিকানা জানা নেই তাই ইচ্ছে থাকলেও তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। আমার বাবা চায়না রাজেশ্বরীর বাবার সঙ্গে আমাদের কোনোরকম যোগাযোগ হোক , তাই কেউই জানেনা আমার আসার কথা।"
    ভার্মা প্রমাণ হিসেবে সুজিতের পাসপোর্ট দেখতে চাইল। সুজিত পাসপোর্ট আর টিকিটের প্রিন্ট আউট দুইই দেখাল, তার এদেশে আসার দিন নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
    কথার মাঝে মোবাইল বেজে উঠল ভার্মার, স্ক্রিনে নাম্বার দেখে সে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। রাই একা, অনেকক্ষণ থেকে তার মনে হচ্ছিল আরও একটু খোলাখুলি কথা বলে ছেলেটির সঙ্গে, পুলিশী জেরার বাইরে গিয়ে, মনে অনেক প্রশ্ন। এতখনে সুযোগ পেয়ে সে আর চুপ থাকেনা।
    -"রাজেশ্বরী কিভাবে আপনাদের কথা জানতে পারে, এনিয়ে কিছু বলেছিল?"
    সুজিত একটু যেন অন্যমনস্কভাবে জবাব দেয়,
    -"ঠিক জানিনা, ওর ঠাকুমার মৃত্যুর কিছুদিন পরে বাবা ওর চিঠি পায়। তারপর বাবা ওকে ফোন করে। মনে হয় ওর ঠাকুমাই সব জানিয়ে ছিলেন মারা যাবার আগে। উনি আমাদের ঠিকানা জানতেন, মাঝেসাঝে চিঠিও দিতেন বাবাকে।"
    -"আপনার সঙ্গে ওর প্রথম দেখা কবে হয় ?"
    সুজিত একটু অবাক হয়েই এবার পুরো মনোযোগ দেয় রাইয়ের কথায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয় না, যেন প্রশ্নটা ভালো করে বুঝে নিচ্ছে। রাই সেটা বুঝতে পেরেই বলে,
    -"আমি ঠিক পুলিশের লোক নই, রাজীর স্বামীর পারিবারিক বন্ধু, পুলিশের সঙ্গে জানাশোনা আছে, এইমাত্র। রাজীর স্কুলের বন্ধুরা বলেছে ও প্রতিদিন ওর কাজিনের সাথে চ্যাট করত। এতটা ঘনিষ্ঠতা, বন্ধুত্ব আপনাদের মধ্যে এই কদিনে, সেসবই শুধু দূর থেকে এ কথা আমাকে বিশ্বাস করতে বলবেন না।"

    সুজিত এবার সোজা উত্তর দেয়,
    -"হ্যাঁ, দেখা হয়েছিল। আমাদের ব্যাঙ্গালোরে একটা ফ্ল্যাট আছে, আমরা মানে মা বাবা ও আমি যখন দেশে আসি, সেখানেই উঠি। রাজীর সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ার পর আমরা যখন এলাম ও তখন আমাদের সঙ্গে ব্যাঙ্গালোরে এসে দেখা করে। আর তখনই ওর সঙ্গে ভালো করে আলাপ হয়।"
    -"ওকী ওর মায়ের সব কথা আপনার বাবার কাছেই শোনে?"
    -"হ্যাঁ, এমনকী আমি বা আমার মাও এই প্রথম সব শুনি । বাবা এনিয়ে কোনোদিন কোনো আলোচনা করেনি আমাদের সাথে। পিসী মারা গেছেন এটুকুই জানতাম, বাবা আর দাদু দিল্লী থেকে ফিরেও মাকে বা ঠাকুমাকে সব কথা বলেনি কোনোদিন। ওরা এখানে এসেছিল পিসীকে খুঁজতে কিন্তু পুলিশের সেরকম সাহায্য পায়নি। এখানে ওরা কাউকে চিনতনা, ভাষাও জানতনা। অবশ্য বাবা রাজীকে বলেনি কিন্তু বাবার মতে রাজীর বাবাও সেভাবে চেষ্টা করেনি নিজের স্ত্রীকে খুঁজতে। অথচ উনি সরকারী চাকরি করতেন, অফিসের সাহায্যে পুলিশের ওপর জোর খাটাতে পারতেন, কিন্তু সেসব কিছুই তিনি করেননি। দাদু শেষদিন অবধি এনিয়ে দু:খ পেয়ে গেছেন যে মেয়ে মারা গেছে কিনা তাও তিনি নিশ্চিত জানেননা, তাই তার কোনো ক্রিয়াকর্মও করা হয়নি। আমার দাদু আর ঠাকুমা রাজীকে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন, রাজীর বাবা আর ঠাকুমা দেয়নি। বাবা এর কিছুদিন পরে চাকরি নিয়ে বাইরে চলে যায়। এর অল্পদিন পরেই দাদু মারা যান, এরপর কেরালার সব বিক্রি করে আমরা ঠাকুমাকে নিয়ে পাকাপাকিভাবে গাল্ফে চলে যাই। এদেশে আমার মামা থাকে ব্যাঙ্গালোরে, পরে তার কথায় বাবা ওখানে একটা ফ্ল্যাট কিনে রাখে। ঠাকুমাকে নিয়ে মা আসত প্রতিবছর দাদুর শ্রাদ্ধ করতে, তখন ওখানেই ওঠা হত। বছর পাঁচেক আগে ঠাকুমা মারা গেলে আমাদের এখানে আসা অনিয়মিত হয়ে পড়ে।"
    -"রাজীর পক্ষে তো সমস্ত ব্যাপারটা খুব আকস্মিক, ওর প্রতিক্রিয়া কীরকম ছিল আপনাদের সঙ্গে দেখা হয়ে বা মায়ের কথা জেনে?"
    -"পুরোটা বলতে পারবনা। কারণ ও সমস্ত ব্যাপারটা জানার বেশ কিছুদিন পরে আমাদের সঙ্গে ওর দেখা হয়। তবে আমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে ও খুব খুশী হয়েছিল, মনে হচ্ছিল যেন অনেকদিনের চেনা। কয়েকদিন ছিল আমাদের সাথে,খুব ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে মাবাবার সঙ্গে, মেয়ের মত। আমার সাথেও খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তারপর থেকে আমরা রেগুলার যোগাযোগ রাখতাম।"
    -"রাজী সব জেনেশুনেও কিন্তু ওর বাবার সঙ্গে এনিয়ে কথা বলেনি বা স্বামীকেও কিছু জানায়নি। আপনি প্রথম দিল্লী এসেই ফিরোজগাঁও ছুটেছেন, অথচ রাজী কোনোদিন ঐ মন্দিরে যায়নি মায়ের খোঁজ করতে, গেলে ঐ পুরোহিতের মনে থাকত। কেন বলতে পারেন? আপনারা তো বন্ধু ছিলেন। কখনো কথা হয়নি এ বিষয়ে?"
    সুজিত কিছু বলতে যাবে সেইসময় ভার্মা ফোন করা শেষ করে ঘরে ঢুকল। রাই প্রশ্নটা আবার করল, ভার্মাও সুজিতের উত্তরের অপেক্ষায়।
    -"না, হয়নি। আমাদের মধ্যে সাধারণ বন্ধুর মতই কথা হত, এনিয়ে কখনো তেমন আলোচনা হয়নি। রাজীর মা মানে আমার পিসীর কোনো স্মৃতিই রাজীর মনে ছিলনা, আমিও তখন খুব ছোটো ছিলাম, আমারও ওনাকে মনে নেই।"
    রাই কী মনে পড়ায় বলে,
    -"ওর সম্বন্ধে নানা কথা শুনে যা মনে হয় রাজী খুব চাপা মেয়ে ছিল। এতকিছু ও কাউকে বলেনি, বাবামাকে নয়, স্বামীকেও নয়। আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগের কথাও। ওর মনে কী ছিল সেটা আন্দাজ করা বেশ কঠিন মনে হচ্ছে। আচ্ছা আপনি ফিরোজগাঁও গিয়ে আর কোথাও না গিয়ে ঐ মন্দিরে গেলেন কেন? ঐ ছেলেটির আপনার পিসীকে সেইরাতে দেখার কথা নিয়েই বা খোঁজখবর করার কথা মনে হল কেন?"
    সুজিত একটু থতমত খেল, এমনিতে বুদ্ধিমানই মনে হয়, এতক্ষনে ভার্মার পুলিশী জিজ্ঞাসায় সে সড়গড় হয়ে এসেছে। কিন্তু এই মহিলা আবার কোথা থেকে কী সব প্রশ্ন তুলছে, মুখখানায় যেন সেরকমই ভাব! ভার্মা চুপ করে সাগ্রহে রাইয়ের প্রশ্ন শুনছে, মুখে তারিফযুক্ত প্রশ্রয়।
    -"আসলে বাবার কাছে পিসীর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা বিশদভাবে আমি হালেই শুনি, রাজীর সঙ্গে দেখা হওয়ার সময়। শুনে অবধি আমার খুব অবাক লেগেছিল। একজন মহিলা এভাবে উধাও হয়ে গেল কোথাও কোনো সূত্র না রেখে। মাঝে মাঝেই বাবার সঙ্গে আজকাল আলোচনা হয় এ নিয়ে। ছুটি ছিল ঐদিন, এখানে কাউকে চিনিনা, কোনো কাজ নেই, তাই ভাবলাম একবার ফিরোজগাঁও জায়গাটা দেখে আসি। ঐ জায়গার ঐ ঘটনাই বলতে গেলে আমাদের পরিবারে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। মন্দিরের বাচ্চা ছেলেটি প্রথমে পিসীকে সেদিন দেখেছিল একথা বাবা আর দাদু রাজীর ঠাকুমার কাছে শোনে। পরে ওরা যখন গিয়ে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে সে তখন সেকথা অস্বীকার করে। বাবা আর দাদু যাওয়ার আগে নাকি ছেলেটিকে পুলিশও থানায় নিয়ে গিয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদ করতে। তারপর থেকেই ছেলেটির বয়ান বদলে যায়। এই ব্যাপারটা আমার খুব অদ্ভুত লাগে। ছেলেটি এখন একজন পূর্ণবয়স্ক, এখন হয়ত সে বললেও বলতে পারে সেদিন সত্যি সে কী দেখেছিল, তাই মন্দিরে গিয়ে ওর খোঁজ করি।"
    -"আপনি বা আপনারা কী সত্যি চান নির্মলার কী হয়েছিল তা জানতে? তাহলে এতদিন আপনার বাবা সে চেষ্টা করেননি কেন? উনি বিদেশী, এন আর আই, এখানে দিল্লীতে এলে সরকারের ঘরে সেই পরিচয়ে খাতির কম হতনা, চাইলে ঐ কেসের খাতা আবার খোলাতে পারতেন।"
    সুজিত একটু তেজের সাথে বলে,
    -"আমার বাবা আমার ফিরোজগাঁও যাবার কথা কিছু জানেন না। আমি তো বললাম রাজী যদি না আমাদের সাথে যোগাযোগ করত বাবা আমাদেরও কিছু বলতেন না। ওনার বোন তো আর ফিরে আসবেনা, উনি তাই হয়ত এনিয়ে আর কিছু করতে চাননি কোনোদিন, ভুলে ছিলেন সবকিছু। আমার জানার ইচ্ছে হয়েছিল, স্রিফ কৌতূহল, জেনে কী করব, কেসের খাতা খোলাব কিনা, এসব নিয়ে ভাবিনি।"
    রাই আর কিছু বলেনা। ভার্মা বলে,
    -"আপনি রাজেশ্বরীর ব্যাপারে আমাদের কিছু বলতে পারেন? ওনার কোনো সমস্যা চলছিল, কিছু বলেছিলেন আপনাকে?"
    সুজিত আবার সহজ, এ যেন জানা প্রশ্ন,
    -"না, আমি সেরকম কিছু জানিনা। আমি তো বুঝতেই পারছিনা এসব কী করে হল।"
    আবার রাই জিজ্ঞেস করে, সুজিতের চোখে সোজাসুজি তাকিয়ে,
    -"রাজীও সেই একইভাবে বাজার থেকে নিখোঁজ হয়, সেই একইভাবে একটি মন্দিরের অনাথ মেয়ে রাজীকে শেষ দেখে বলে মনে করে। আপনি তো নির্মলার ঘটনা বাবার কাছ থেকে শুনে তা নিয়ে অনেক ভাবনাচিন্তা করেছেন। রাজীর ব্যাপারে আপনার কিছু মনে হয়, কী হতে পারে?"
    -"কিন্তু কাগজে দেখলাম রাজীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে। দুটো কেস তো তাহলে আর এক থাকেনা।"
    সুজিত সত্যিই বুদ্ধিমান। রাই ভার্মার দিকে তাকালো, তার এখন আর কিছু জানার নেই।
    ভার্মা উঠতে উঠতে বলল,
    -"আপনার অফিসের কাজ আর কতদিন মি: মুকুন্দন?"
    -"ঠিক বলা যাবেনা, দিন দশেক লাগার কথা। বেশী সময়ও লাগতে পারে, আবার দুদিন আগেও হয়ে যেতে পারে।"
    -"কাজ হয়ে গেলে যাবার আগে আমাদের জানিয়ে যাবেন। আপনার সঙ্গে আরও দরকার হতে পারে। কিছু মনে হলে বা কিছু জানতে পারলে সেটাও আমাকে জানাবেন। আমার কার্ডে মোবাইল নাম্বার আছে।"
    কী ভেবে ভার্মা শেষকালে রাইকে অনুরোধ করল রাইয়ের ফোন নাম্বারও সুজিতকে দিয়ে রাখতে। তাকে ফোনে না পেলে সুজিত যেন রাইকে ফোন করে। রাই আপত্তি করল না, ভার্মা সুজিতকে এখন পুলিশের হিসেবের বাইরে রাখতে চাইছে তাই থানার বা ওর অফিসের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না বলে রাইয়ের নাম্বার দিচ্ছে।

  • shrabani | 59.94.106.231 | ২৬ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০৭495742
  • গাড়িতে যেতে যেতে ভার্মা বলে,
    -"ম্যাডাম, তখন ফোনটা কেরালা থেকে এসেছিল, ওখানকার থানার অফিসারের।" গাড়িতে যেতে যেতে ভার্মা বলে।
    রাই উৎসুক,
    -"কী বলল? উকিলের সঙ্গে কথা হয়েছে?"
    -"হ্যাঁ হয়েছে। ওদের শহরে রাজেশ্বরীর ঠাকুমার ও ঐ পরিবারের যে উকিল তার সঙ্গে কথা হয়েছে। যেটা ইন্টারেস্টিং তা হল ওখানের সম্পত্তি সব রাজেশ্বরীর ঠাকুমার নামে, তিনি তার বাবার একমাত্র সন্তান ছিলেন। সে সম্পত্তি এমনিতে খুব বেশী নয়, তবে জমির দাম যেহেতু ওদিকে অনেক তাই তার মূল্য ধরলে ভালই। এদিকে গিরীশ আবার একমাত্র ছেলে তাই সবাই জানত যে সমস্ত সম্পত্তি পরে তারই হবে। ওদের ছোট পুরনো বাড়ির পাশে গিরীশ রিটায়ারমেন্টের পরে বেশ বড় এক বাড়ি তৈরী করে অনেকটা জায়গা নিয়ে। শুভা সেখানে একটা ছোটদের নাচের স্কুলও খুলেছে। এদিকে কনকাম্মা মারা যাবার কিছুদিন পরে কোচিনের এক পুরনো ল ফার্ম থেকে রাজেশ্বরীকে ডেকে পাঠায়। তখন জানা যায় যে ঠাকুমা বেশীরভাগ সম্পত্তি উইল করে তার নাতনীকে দিয়ে গেছে, গিরীশকে শুধু পুরনো বাড়িটা দিয়েছে। এছাড়া রাজেশ্বরীর মায়ের বিয়েতে যৌতুক হিসেবে যেসব সম্পত্তি পেয়েছিল সেসবও রাজেশ্বরীর নামে তার দাদুর দানপত্র অনুযায়ী। জানাজানি হলে যদি গিরীশ শুভা বা আত্মীয়স্বজনরা কোনো চাপ দেয় তাই হয়ত ওর ঠাকুমা নিজের পরিচিত উকিলের কাছে উইল বা দানপত্র যাই হোক সেসব না করে নামী দামী ফার্মেপাকা উকিল দিয়ে বন্দোবস্ত করেছিল। এখন দাঁড়াচ্ছে যে গিরীশ নিজের পয়সা খরচ করে যে বাড়ি করেছে সে জায়গাটাও তার নামে নয়, রাজেশ্বরীর নামে!
    আজ সকালে গিরীশ আর শুভা একথা আমাদের কাছ থেকে লুকোলো কেন! ওদের সম্পত্তি হলেও সেতো একদিন ওদের মেয়েরই হত। কথা হচ্ছে আইনে কী বলে, রাজেশ্বরীর সম্পত্তি এখন অর্কর পাওয়া উচিৎ কিনা? তাহলে তো গিরীশদের খুবই অসুবিধে হয়ে যাবে।"
    রাই একটু ভাবল,
    -"তাহলে এতদিনে একটা মোটিভ পাওয়া গেল অর্কর বিরূদ্ধে। আপনি অর্কর সবদিক ভালো করে দেখেছিলেন, কোনোভাবে অন্য কোনো সম্পর্কের কোনো ইশারা?'
    -"না ম্যাডাম, ওর ফোন রেকর্ড, অফিস ইত্যাদি আমরা ভালো করে চেক করেছি। কোথাও সেরকম কোনো লক্ষণ নেই। ও, আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি, রাজেশ্বরীর ইমেল অয়াকাউন্ট আমরা চেক করতে পেরেছি। সেখানে কিছু নেই, কোনো মেলই নেই। স্কুলের ও বাড়ীর কম্পিউটার পরীক্ষা করেছে এক্সপার্টরা। ওরা বলছে হয় রাজেশ্বরী কম্পিউটার ব্যবহার করেনি নয়ত কোনো কম্পিউটার প্রোফেশ্যনাল সমস্ত রেকর্ড মুছে দিয়েছে। ওর ফোন রেকর্ডেও দেশের বাইরের থেকে কোনো ফোন নেই। অথচ সুজিত বলল তার বাবা রাজেশ্বরীকে ফোন করত, বা সে মেলে যোগাযোগ করত।"
    ভার্মাকে চিন্তিত দেখাল। রাই এগুলো আগে জানতনা, তাই খেয়াল করেনি, এখন জেনে ভাবনায় পড়ল। অর্ক কম্পিউটার প্রোফেশ্যনাল নয়, তার কর্মক্ষেত্র অন্য, রাই আগেই জেনেছে। যদি সে শিখেও নেয় কারুর থেকে, স্কুলের কম্পিউটার তার ছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাহলে?

    বাড়ি ফিরে রাই দেখল আলোক অনেক আগেই ফিরেছে আজ। মেয়ে খেলে এসে পড়ার টেবিলে। ওর খুব ক্লান্ত লাগছিল সারাদিন ঘোরাঘুরির পরে। গা ধুয়ে নিজের জন্যে কফি বানিয়ে নিয়ে বসার ঘরে এসে আরাম চেয়ারটায় বসল। আলোক ইকনমিক টাইমসে বুঁদ হয়ে আছে। কাগজ থেকে মুখ না তুলেই বলল,
    -"কী ব্যাপার, তোমাদের তদন্ত খুব সিরিয়াস জায়গায় পৌঁছেছে মনে হচ্ছে, সারাদিন কোথায় কোথায় ঘুরলে?"
    রাই জানে আলোক জিজ্ঞেস করতে হয় তাই করছে, বললে ভালো করে শুনবেওনা। তবু ও কফিতে চুমুক দিতে দিতে একটু একটু করে সারাদিন কী হয়েছে না হয়েছে বলতে থাকে, যত না আলোকের জন্য তার চেয়ে বেশী নিজেকেই শোনানোর জন্য, টুকরো টুকরো ভাবনাগুলোকে সাজিয়ে কোনো ছবি পাওয়া যায় নাকি তা দেখতে।
    -"আচ্ছা, ধর একসঙ্গে একবাড়িতে থেকে স্বামীস্ত্রীর মধ্যে একজন যদি অন্য কারোর সঙ্গে কোনোরকম রোম্যানটিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে তাহলে অন্যজন তা একেবারে টের পাবেনা এটা সম্ভব?"
    প্রশ্ন টা হয়ত নিজেকেই করছিল কিন্তু আলোকের কাগজ পড়া শেষ, তার কানে ঢুকেছিল কথা। সে হেসে বলল,
    -"হঠাৎ, কী আবার হল?"
    -"না ধর এই রাজী আর অর্কর ব্যাপারটা। রাজীর স্কুলের ঐ মেয়েটি বলছে রাজী এমন কিছু লিখছিল চ্যাটে যেটা লোকে বয়ফ্রেন্ডকে লিখবে, অর্থাৎ রাজী ও সুজিতের সম্পর্কটা সেই ধরণের। কিন্তু অর্কর সাথে কথা বলে একবারও মনে হয়না রাজীর কোনো বয়ফ্রেন্ড সম্পর্কে সে কিছু জানে বা এরকম কিছু হতে পারে বলে তার ধারণা আছে। আমি ওকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখেছি, মনে হয়না ও অভিনয় করছে। আজ রাজীর কাজিনকে দেখেও আমার মনে হলনা রাজীর মৃত্যুতে ও খুব শোকাতুর। এমনকী খুব যে কিছু দু:খ হয়েছে তাও মনে হলনা। যেটা ওদের মধ্যে অন্য কিছু না থাকলে খুব স্বাভাবিক, কারণ ওদের কাজিন হিসেবে চেনাজানাটা খুব অল্প দিনের, ছোটবেলার সম্পর্ক নয়, গভীরতার অভাব থাকতেই পারে।"
    আলোক বেশ মন দিয়ে শুনছিল,
    -"তুমি ঐ মেয়েটির কথা এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন? মেয়েটির বয়স কেমন আর দেখতেই বা কেমন?"
    -"কেন?"
    -"আরে বলই না। নাও আমি একটা আন্দাজ করছি, গোয়েন্দার বর তো, তুমি মিলছে কিনা বল। মেয়েটি দেখতে খুবই সাধারন আর বয়স পঁচিশ বা তার বেশী।"
    রাই বুঝতে না পারলেও মজা পেল খেলাটায়, সারাদিনের প্রথম হালকা মুহূর্ত।
    -"হতে পারে পঁচিশ বা বেশী তবে দেখলে কমই লাগে, রোগা ছোটখাটো, দেখতে খুবই সাধারণ।"
    -"হতেই হবে। এদিকের লোকেদের হিসেবে ঐ মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে অনেককাল, নির্ঘাত বিয়ে হচ্ছে না। রাজীর মত সুন্দরী মেয়ে, হ্যান্ডসাম বর, ভালো ঘর আছে, এসব নিয়ে ওর মনে মনে হয়ত হালকা হিংসে আছে। হতে পারে সেটা ও নিজেও সেভাবে বোঝেনা। এছাড়া হয়ত ওর বাড়ী দ্যাখোগে খুব গোঁড়া ধরণের, ছেলেদের সঙ্গে সেভাবে মেশার সুযোগ হয়নি। তাই বর ছাড়া অন্য কারুর সঙ্গে চ্যাট করছে দেখেই কোনো নিষিদ্ধ ব্যাপার ধরে নিয়েছে। চ্যাটে ও কী এমন কথা দেখেছে, ওখানে তো লোকে অনেক শর্ট মেসেজ ফরম্যাটে লেখে!
    রাজী আর সুজিতের এই রোজের আলাপচারিতা, সেটা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। রাজী সুজিতের পরিচয় বা ওর মায়ের কথা অর্ককে বা শ্বশুরবাড়ীতে জানাতে চায়নি। পুরো ব্যাপারটা তো সত্যিই বেশ রহস্যজনক, কে কীরকম ভাবে নেবে, কী কী প্রশ্ন উঠবে ওর মাবাবা সম্পর্কে। তাই ও বাড়ি থেকে সুজিতের সঙ্গে চ্যাট না করে স্কুল থেকে করত। বাবা আর সৎমার ওপরে ক্ষোভ, অর্ককে সব কথা বলতে পারছেনা, এরকম অবস্থায় মামাতো ভাই সুজিতই ওর খোলা জানালা, তার সাথেই সব কথা অনায়াসে আলোচনা করতে পারে। এরমধ্যে অন্য কোনো ব্যাপার নেই।"

    রাই আলোকের বিশ্লেষণকে একেবারে পুরো পয়েন্ট না দিলেও ফেলতেও পারেনা। রীটার কথা ছাড়া সুজিত রাজীর বয়ফ্রেন্ড এ তথ্যের আর কোনো ভিত্তি নেই। কিন্তু রাজীকে মরতে হোলো কেন তাহলে! চোখ বন্ধ করে ভাবতে ভাবতে ঘুম ধরে গেছিল, ভাঙল ফোনের আওয়াজে। ভার্মার ফোন।
    -"ম্যাডাম বিশ্রাম করছিলেন, বিরক্ত করলাম?"
    -"না না ভার্মাজী, বলুন কী ব্যাপার?"
    -"আপনাকে একটা কথা জানানোর ছিল।"
    -"কী?"
    -"ম্যাডাম, কোচিনের ঐ ল ফার্ম থেকে উকিল যিনি রাজীর ঠাকুমার উইলের সব কাগজপত্র করেছেন তিনি ফোন করেছিলেন এই মাত্র। ওরা রাজেশ্বরীর মৃত্যু সংবাদ আগে পায়নি। রাজেশ্বরী কয়েক মাস আগে একটা উইল করে। সেই উইল অনুযায়ী ওর কিছু হলে সমস্ত সম্পত্তি ওর মামার ছেলে সুজিত মুকুন্দন পাবে। অবশ্য উনি বললেন আইনি অনেক ব্যাপার আছে, অর্ক বা রাজীর বাবা এই উইল কনটেস্ট করতে পারে। তাহলেও রাজেশ্বরীর মায়ের সম্পত্তি যা সুজিতের ঠাকুর্দার দেওয়া তা হয়ত সুজিত পেয়ে যেতে পারে।"
    রাই চুপ করে থাকে। সেসব যা হয় হবে কিন্তু রাজী হঠাৎ উইল করতে গেল কেন! আর উইল করে সবকিছু সুজিতকে দিল কেন? যদি তার এও মনে হয় যে তার মায়ের সম্পত্তি সুজিতের পাওয়া উচিৎ তাহলে তার ঠাকুমার সম্পত্তিও তো তার বাবার পাওয়া উচিৎ। নাকি সে ভেবেছিল তার আগেই তার বাবা চলে যাবে। তাহলে সাত তাড়াতাড়ি উইল করল কেন!
    -"ভার্মা জী, ঐ উকিল ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করবেন, উইল করার আইডিয়াটা কার মাথায় আসে, রাজীর নিজের না উকিলের পরামর্শ।
    -"করেছিলাম ম্যাডাম। উনি তো বললেন রাজেশ্বরীই ওদের কাছে আসে উইল করার জন্য।"
    -"রাজী তাহলে বেশ ধনী মহিলা ছিল বলা যায়। ওদের সম্পত্তির পরিমাণ কিরকম, কিছু বলেছে উকিল?"
    -"হ্যাঁ ম্যাডাম। আমিও ঐকথাই জিজ্ঞেস করেছিলাম। উনি আমাকে মেল করবেন বল্লেন বিশদে, তবে খুব বেশী না হলেও সম্পত্তি কমও নয়। আর একটা কথা, গিরীশ ও শুভা উকিলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল গিরীশের মায়ের মৃত্যুর পর যখন উইলের ব্যাপারটা জানাজানি হল। ওরা দুজনেই প্রচন্ড হতাশ হয়েছিল। গিরীশরা বেশ খরুচে দম্পতি ছিল, পয়সাকড়ি তেমন করতে পারেনি, দরকারও মনে করেনি, মায়ের যা আছে সব তাদেরই হবে জানত। এছাড়া বাড়ি করতে গিয়ে নিজের যা ছিল প্রায় সবই খরচ করে ফেলেছিল। উকিলদের অনেক সোর্স থাকে, উনি কিভাবে জেনেছিলেন যে শুভা কেরালায় সারাবছর থাকতে চাইছিলনা, তাই ওরা দিল্লীতেও একটা ভালো ফ্ল্যাট বুক করেছে গিরীশের মা মারা যাবার কিছুদিন আগেই। এত টাকা ওদের ছিলনা, ওরা মায়ের টাকা পাবে বলেই এমন ভবিষ্যত পরিকল্পনা করেছিল। সেসব বানচাল হয়ে যাবার উপক্রম হল মায়ের উইলে। যদি বলেন ওদের মেয়েরই তো সব, সে হলেও রাজেশ্বরী তো আর একা নয়, অর্কও আছে। ওরা বাবাকে দরকারে সাহায্য করতে পারে কিন্তু বিলাসের খরচ যোগাতে যাবে কী!
    গিরীশ উকিলের কাছে জানতে চেয়েছিল কিভাবে কী করলে সম্পত্তি সব আবার তার হবে। এরপরে রাজেশ্বরীর সঙ্গে এব্যাপারে ওদের কিছু মনান্তর হয়েছিল মনে হয় তাই রাজেশ্বরী বেশ তাড়াহুড়ো করে রাগের মাথায়ই নিজের উইল করে। যদিও উকিলকে সে কিছু বলেনি তবু উনি আন্দাজ করেছিলেন। আরও একটা কথা, রাজেশ্বরীর ঠাকুমা এই উকিলদের একটি খাম দিয়ে যান, ওর মৃত্যুর পর রাজেশ্বরীর হাতে দেওয়ার জন্য। মনে হয় ঐ খামেই সেই চিঠি ছিল যাতে কনকাম্মা নাতনীকে সব কথা জানিয়ে যায়।"

    রাইও এরকমই কিছু ভেবেছিল। এনিয়ে আর কথা না বলে ভার্মাকে মনে করায়,
    -"ভার্মাজী, ঐ নেকরামকে কালই থানায় আনিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করুন।"
    ভার্মা এবার আর আপত্তি করল না,
    -"হ্যাঁ ম্যাডাম। আজ আমরা চলে আসার পর ওরা রাজপালের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের যাওয়ার কথা জানায়। রাজপাল রেগেমেগে ওর বসের কাছে যায় আমার নামে অভিযোগ জানাতে। ভাগ্যিস ওরা রাজপালকে ঐ নির্মলার ব্যাপারটা কিছু বলেনি, ওর বসকে আমার বড়সাহেব এসব নিয়ে আগেই ফোন করেছিলেন। উনি রাজপালকে খুব কড়কে দিয়েছেন। রাজপাল এখন আবার আমাকে খুব খাতির করে ফোন করছিল। মনে হয় কিছুদিন ও চুপচাপ থাকবে, এই সুযোগে আমি কালই কাউকে পাঠিয়ে নেকরামকে ডেকে আনছি। ও ভালো কথা, আপনার খুব অবাক লাগছিল না, নেকরাম কেন পুলিশের নাম শুনে ঘাবড়ালো না একথা ভেবে?"
    -"হ্যাঁ, কেন? ও কী পুলিশে ছিল?"
    -"না, সে নয়। শুভার বাবা অর্থাৎ গিরীশের শ্বশুর পুলিশ অফিসার ছিল, নেকরাম তার খাস চাকর ছিল।"
    ভার্মা ফোন রেখে দেওয়ার পরে রাই উঠল খাওয়া দাওয়ার জোগাড় করতে। ছোট ছোট পাজলের টুকরো টুকরো সমাধান পেয়ে যাচ্ছে কিন্তু তাতে রাজীর মৃত্যু রহস্যের সমাধানের দিকে কতটা এগোচ্ছে ওরা তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। শুভার বাবা পুলিশ অফিসার ছিলেন, গিরীশ কি ইচ্ছে করেই সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেল? নাহলে নির্মলার কেসের ব্যাপারে শুভার দাদার নাম এল অথচ পুলিশ অফিসার বাবার কথা এলনা!
    রাজীর মৃত্যুতে প্রায় সবারই প্রাপ্তি দেখা যাচ্ছে, সুজিত, হয়ত বা অর্ক ও গিরীশেরও। কিন্তু রাজী বেঁচে থাকলেও এরা তার নিকটজন, তার সবই এদের দরকার মত এরা পেয়ে যেত, মারার কী দরকার হল? না, নতুন করে ভাবতে হবে, রাজীর মৃত্যুর কোনো মোটিভই খুব পোক্ত নয়!
  • shrabani | 59.94.105.107 | ২৬ নভেম্বর ২০১১ ২২:৪১495743
  • *******************************
    ভোর ভোর ঘুম ভেঙে গেল রাইয়ের, তখনও ভালো করে বাইরে আলো ফোটেনি। গতরাত্তিরে অবশ্য সারাদিনের ক্লান্তিতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিল। মুখটুখ ধুয়ে চা নিয়ে এসে বারান্দায় বসল যখন তখন সারা বাড়ি ঘুমিয়ে আছে। এমনিতে এখন অনেক ফ্রেশ লাগছে, ভাবনাগুলোও অনেক স্বচ্ছ, কিন্তু তবু তার মাথা জুড়ে আছে রাজেশ্বরী ও নির্মলা। দুই মা মেয়ের কারোকে একা ফেলে শুধু অন্যকে নিয়ে ভাবতে পারছেনা।
    মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়ে রাই কাগজ নিয়ে বসল চানে না ঢুকে, আলোক তাই দেখে জানতে চাইল,
    -"কী ব্যাপার, তুমি আজও অফিস যাবেনা নাকি?"
    হালকা বিরক্তির আভাস আলোকের গলায়। গোয়েন্দাগিরি যতক্ষণ শখের আছে ঠিক আছে, তার জন্যে দিনের পর দিন অফিস ছুটি করে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানোকে সে সমর্থন করতে পারছেনা। রাই বুঝতে পারলেও, বিরক্তিটা গায়ে মাখলনা,
    -"না যাব, কাল গেলাম না, আজ কাজ রয়েছে। তুমি চানে যাও, আমি একটু ভার্মাকে ফোন করে তারপর যাব।"
    আলোক আর কিছু বলল না। অফিস যাবে যখন তখন তার আর কিছু বলার নেই। সাড়ে সাতটা বেজেছে দেখে রাই মোবাইল তুলে নিল, খুব সকালে ভার্মাকে ফোন করে বিরক্ত করতে চায়নি।

    -" তুই শুভা ম্যাডামদের বাড়িতে কবে থেকে আছিস?"
    গোঁয়ারের মত অন্যদিকে তাকিয়ে বসে থাকে হাট্টাকাট্টা লোকটা, উত্তর করেনা।সিনহার হাত নিশপিস করে তবে ভার্মা খুব কড়াভাবে মানা করে রেখেছে, গায়ে হাত তোলা যেন না হয়, বুড়ো মানুষ। হুঁ, বুড়ো মানুষ, চেহারা দেখে মনে হয় সাত জোয়ানের মহড়া নিতে পারে একা!
    ভার্মা নিজে যায়নি নেকরামকে আনতে, জুনিয়র সিনহাকে পাঠিয়েছিল। এখন তার জিজ্ঞাসাবাদের সময়ও তার সামনে এলনা। পাশের ঘরে বসে ছোট্ট খুপরি দিয়ে সব দেখছে শুনছে। দরকার হলে সামনে যাবে। সকালে শুভা আর গিরীশ বেরিয়ে যেতেই সিনহা আর তার সঙ্গীরা গিয়ে নেকরামকে থানায় নিয়ে আসে। প্রথমে অনেক গাঁইগুঁই করছিল কানুনের কথা বলে, কিন্তু সিনহা ধমকধামক দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। নেকরামের ছেলে ছিল ঘরে, সিনহা তাকে বোঝাতে যে তারা শুধু কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে নিয়ে যেতে চাইছে ওর বাবাকে, সেও নেকরামকে পুলিশের সাথে পাঙ্গা নিতে বারণ করে।
    সিনহা আবারো জিজ্ঞেস করে, এবার একটু ধীরে কিন্তু উদ্ধত ভঙ্গীতে জবাব আসে,
    -"অনেক সাল, শুভা দিদির বচপন থেকে।"
    -"গিরীশকে কবে থেকে চিনিস?"
    -"সেও অনেক কাল হবে। ছোট ভাইয়ের বন্ধু ছিল, পরে দিদির সাথে শাদী হল।"
    -"রাজেশ্বরী,যে মারা গেছে তাকে শেষ কবে দেখেছিস?"
    -"মনে নেই। অনেকদিন সে যায়না ওদিকে। গত বছর যখন এরা এসেছিল তখন বোধহয় রাজী আর ওর স্বামী এসেছিল বাপমার সঙ্গে দেখা করতে।"
    -"গিরীশের আগের স্ত্রী নির্মলাকে চিনতিস তুই?"
    -"না।"
    নেকরামের চোখমুখ কি আরো কঠিন হয়ে উঠল না ভার্মার দেখার ভুল? শুভা ও গিরীশকে নিয়ে আরো প্রশ্নে নেকরাম ছাড়া ছাড়া উত্তর দিল, কিছুই সে জানেনা। তবে গিরীশ শহরে আসার পর পরই শুভার দাদার সঙ্গে তার ভাব ও নিয়মিত ও বাড়িতে যাতায়াত, এটা স্বীকার করে নিল। রাজেশ্বরীর সঙ্গে শুভার সম্পর্ক সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলল কেউ বুঝতেই পারত না যে রাজী শুভার নিজের মেয়ে নয়!
    ভার্মার একটু অস্থির লাগে, কী জন্যে রাই ম্যাডাম একে এত গুরুত্ব দিচ্ছে কে জানে! সে ঘরে ঢুকে সিনহাকে বাইরে যেতে বলে। একা নেকরামের মুখোমুখি, ভার্মাকে দেখেও নেকরামের ভাবভঙ্গীর কোনো পরিবর্তন নেই।
    -"নেকরাম, তোমার তো বয়স হয়েছে, গাঁয়ে তোমার পরিবার আছে, ছেলেমেয়ে নাতি নাতনী। তা এই বয়সে গাঁয়ে না ফিরে গিয়ে এখানে রয়ে গেছ কেন?"
    নেকরাম একই রকম মেজাজে বলে,
    -"এই সওয়াল করতে আমাকে এখানে নিয়ে এলেন?" ভার্মা ভেতরের উষ্মা প্রকাশ করেনা,সংযত থাকে,
    -"তুমি তো পুলিশ অফিসারের সঙ্গী ছিলে, জান তো পুলিশকে সব জানতে হয়, সাধারণ লোকে অনেক সময় যা দেখেনা বোঝেনা, পুলিশকে সে সবকিছু দেখতে বুঝতে হয়। আমায় উল্টে সওয়াল না করে আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার জবাব দাও।"
    -"আমি চলে গেলে এই বাড়ির দেখাশোনা কে করবে। বড়ভাই আসেনা কিন্তু ছোটভাই তো আসে মাঝে মাঝে, শুভা দিদি আসে, ওদের জন্যে সব ঠিক করে কে রাখবে। তাছাড়া প্রায় পঁয়তাল্লিশ বছর ধরে এখানে আছি, এখন আমার এখানে থাকতেই ভালো লাগে, এই বাড়িতে। গাঁয়ে যাই মাঝে মাঝে যখন ইচ্ছে হয়। জরু মরে গেছে, ছেলে মেয়েদের সংসার, বেশীদিন সেখানে থাকতে ভালো লাগেনা।"
    -"ছোটভাই মানে গিরীশের বন্ধু? কোথায় থাকে সে?"
    -"ঠিক জানিনা, ঘোরাঘুরি করে। পাহাড়ে কোথায় আশ্রম আছে ।"
    -"তা সে সাধু হয়ে গেল কেন?"
    নেকরাম প্রথমে জবাব দেয় না। ভার্মা খুব ভেবে প্রশ্ন করেনি এমনিই কথার পিঠে কথা, তাই চট জবাব না পাওয়াতে অবাক হল। আবার জিজ্ঞেস করতে নেকরাম একটু উদাস স্বরে বলে,
    -"ছোটী বহু কে খুব ভালোবাসত, সে হঠাৎ মারা গেল,তার পর থেকেই কেমন বাওরা হয়ে গেল। ঘুরে বেড়াত, অফিস যেতনা, তারপর একদিন সাহেবের সঙ্গে ঝগড়া করে ঘর ছেড়ে চলে গেল। সাহেবের মারা যাওয়ার খবর কোথা থেকে পেয়ে এসেছিল।"
    রাইকে মনে করে ভার্মা,রাই বলেছে নেকরাম হয়ত সোজাসুজি কোনো উত্তর দেবেনা, ওর সঙ্গে প্রচুর কথা বলতে হবে, যতক্ষণ কথা বলা যায়, যা খুশী কথা। কথা বলতে বলতে কখন বেফাঁস কিছু বলে সেই অপেক্ষায় থাকতে হবে। তাই সে বলে,
    -"গিরীশের প্রথম বৌয়ের নিখোঁজের কথা কিছু মনে আছে তোমার? গিরীশ নিশ্‌চয়ই তোমার সাহেবের কাছে এসেছিল সাহায্য চাইতে, তার চেনাজানার মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার। আসেনি?"
    -"আসতে পারে, আমাকে কেউ কিছু বলেনি। আমি নোকর মানুষ, সাহেবদের মধ্যে কী কথা হচ্ছে আমি কী করে জানব!"
    ভার্মা ধৈর্য্য হারায় না,
    -"গিরীশ কোনোদিন তার প্রথমা স্ত্রীকে নিয়ে শুভাদের বাড়ি মানে তার বন্ধুর বাড়ি যায়নি?"
    -"জানিনা, আমি দেখিনি।"
    -"তুমি কোনোদিন ওদের ফিরোজগাঁওয়ের বাড়িতে গিয়েছিলে? শুভা আর গিরীশের বিয়ের আগে বা পরে?"
    -"না, ওরা বিয়ের পরে শুভাদিদির বাড়িতেই ছিল, ফিরোজগাঁওর বাড়ি আগেই ছেড়ে দিয়েছিল। তখন দোতলায় ভাড়া ছিল না, ছাদে বর্ষাতিও বানানো হয়নি। ছোটদাদা, তার বউ, সাহেব আর শুভাদিদিরা ছিল। এতলোকে, ঐ দুটো ঘর, অসুবিধে হত, তাই ওরা শান্তি বিহারে চলে যায়, সাহেবই ব্যবস্থা করে দেয়। প্রথমে ভাড়া বাড়িতে ছিল, পরে ফ্ল্যাট কেনে।"
    -"রাজেশ্বরী বাজার থেকে হারিয়ে গিয়েছিল পরে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়, তুমি জান?"
    -"হাঁ, শুনেছি।"
    -"রাজেশ্বরীর মাও বাজার থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, তুমি জানতে?"
    নেকরাম এ প্রশ্নের উত্তর দেয়না প্রথমে। ভার্মা আবার প্রশ্ন করতে বলে,
    -"ঠিক মনে নেই, অতকাল আগের কথা। শুনেছিলাম মনে হচ্ছে।"
    -"তার কিন্তু মৃতদেহ পাওয়া যায়নি, হয়ত সে বেঁচে ছিল বা আছে?"
    নেকরাম এ কথায় কিছু বলেনা।
    -"শুভা আর গিরীশের বিয়ে কবে হয় মনে আছে? রাজেশ্বরীর তখন কত বয়স?"
    -"ঠিক মনে নেই। বিয়ের সময় তো মেয়েকে দেখিনি, পরে শান্তিবিহারের বাড়িতে দেখেছি, তখন বছর দেড় দুয়েক বয়স হবে।"
    -"রাজেশ্বরীর খোঁজ করতে ওর স্বামী তোমার কাছে গিয়েছিল?"
    -"হ্যাঁ, কিন্তু সে তো অনেকদিন ওদিকে যায়নি, আমি দামাদজীকে বলেছিলাম সে কথা।"
    -"রাজেশ্বরীকে আইয়াপ্পা মন্দিরের একটা মেয়ে মন্দিরের উল্টো দিকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে শেষ দেখেছিল, পরে সে একটা গাড়িতে উঠে চলে যায়। তোমাদের বাড়িতে কোনো গাড়ি আছে, গিরীশ শুভার গাড়ি?"
    -"না, গাড়ি নেই। ওরা কোথাও যেতে হলে গাড়ি ভাড়া নেয়, সাহেবের মানে শুভা দিদির বাবার পুরনো ফিয়েট অনেক দিন হোলো বিক্রি হয়ে গেছে।"
    ভার্মা আর কী জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছেনা। নেকরামের গ্রামের ঠিকানা নিয়ে নিয়েছে সিনহা। সেখানে কাউকে পাঠিয়ে কতগুলো ব্যাপারে খোঁজ নিতে হবে। কেমন যেন নিজেকেই জিজ্ঞেস করছে এমন ভাবে ভার্মার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়,
    -"মন্দিরে মেয়েটা কার গাড়িতে যেতে দেখল মহিলাকে, ঠিক দেখেছে কিনা কে জানে!"
    -"গেটের সামনে তো ঝাড়ির ছায়া পড়ে অন্ধকারে, মন্দিরে বসে গেটের কাছ ঠিকমত নজরে আসেনা মোটেই, বকোয়াস করেছে ঐ বাচ্চাটা!"
    ভার্মা নেকরামের যেচে উত্তর দেওয়া দেখে একটু অবাক হয়,
    -"তুমি দেখেছ আইয়াপ্পা মন্দির? হ্যাঁ,অন্ধকারে মন্দিরের সামনে থেকে রাস্তা ঠাহর করা মুশকিল।"
    নেকরাম তড়িঘড়ি বলে ওঠে,
    -"হাঁ হাঁ,আমি অনেকবার গেছি শান্তিবিহারে মন্দিরে। শুভা দিদি তো ওখানেই থাকত।"
    -"নেকরাম, তুমি এখন বাড়ি যাও। কিন্তু শহর ছেড়ে কোথাও যেও না।"

    নেকরামকে ধরে রেখে আর কী জিজ্ঞেস করবে ভার্মা বুঝতে পারল না। ও গিরীশ আর শুভার বিয়ের আগের সম্পর্ক নিয়ে জানলেও বলবেনা। তবে এটা জানা গেছে যে ওরা নির্মলার যাওয়ার বছরখানেকের মধ্যেই বিয়ে করেছে। শান্তিবিহারে যখন ওরা রাজেশ্বরীকে নিয়ে এসেছে তখন তার বয়স দেড় কী দুই, সেই হিসেবে সময়টা ওরকমই দাঁড়াচ্ছে। অবশ্য ভার্মা খুব বেশী হতাশ হয় না, নেকরামকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা রাইয়ের মতলব, তার নয়। নির্মলার ব্যাপারে জেনে রাজেশ্বরী কেসের সুরাহা হবে সে মনে করেনা। তবু ম্যাডামকে জানাতে হবে সব কথা।
    লাঞ্চ টাইমে ভার্মার কাছে নেকরামের কথা শুনল রাই। ভার্মা টেলিফোনেই পুরো জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের রেকর্ডিং শুনিয়ে দিল রাইকে।
    -"ম্যাডাম, তেমন কিছু তো পরিস্কার হলনা। কোনো নতুন কথাও জানা গেলনা।"
    রাই চুপ করে রইল। দু এক কথার পরে ভার্মা জানালো অঞ্জনা ফোন করেছিল রাজীর বডি নেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে। রাজপাল ঝামেলা করছে, গিরীশরাও চুপ। তবে ভার্মা কথা বলেছে, দু এক দিনের মধ্যে বডি তুলে দেওয়া হবে অর্কদের হাতে। সুজিত মুকুন্দনের ওপরেও নজর রাখছে ভার্মার লোক, সে আজ সকাল থেকেই অফিসে।
    খাওয়াদাওয়ার পরে অফিসে এসে সীটে বসে রাই চোখ বন্ধ করে নিজের স্মৃতির রেকর্ডে বার বার শুনতে লাগল নেকরামের ইন্টারভিউ।
  • shrabani | 59.94.105.107 | ২৬ নভেম্বর ২০১১ ২৩:০৮495744
  • *****************************
    -"হ্যালো, মি:গিরীশ?'
    -"হ্যাঁ,বলছি।"
    -"নিন, কথা বলুন"।
    কিছুক্ষণ চুপচাপ। লাইনটা কেটে গেল নাকি। গিরীশ আবার হ্যালো হ্যালো করে। হঠাৎ অস্পষ্ট চাপা একটা আওয়াজ,
    -"বাবা, আমি রাজী। আমি ভালো নেই............।"

    থানায় এসে ভার্মা আজ অনেকগুলো ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বড়সাহেব ডেকে পাঠিয়েছিলেন, আসন্ন সি এম ভিজিট নিয়ে একটা বিভাগীয় মিটিংও হয়ে গেল। সাহেবের নির্দেশে এরপর সে গাড়ি নিয়ে বেরোলো রুটটা একবার ভালো করে দেখে নিতে। পরদিন লখনৌ থেকে বড় অফিসারদের একটা টীম আসার কথা। বিকেলে শহরের সিইও একটা মিটিং ডেকেছে তাতেও যেতে হবে সাহেবের সাথে। সকালে ঘুরেটুরে থানার দিকে ফিরছে তখন সিনহার ফোন এল।
    -"স্যর, আপনি কোথায়?"
    -"এই পানবাহারের মোড়ে, থানার দিকেই আসছি। কেন, কী হল সিনহা?"
    -"না ঠিক আছে, তাহলে তো আপনি পাঁচ মিনিটে পৌঁছে যাবেন। আসুন, তারপরেই কথা হবে।"
    থানায় ঢুকে নিজের ঘরে যাবার আগে দোতলায় বড়সাহেবের ঘরে যেতে যাবে, ওর ঘর থেকে সিনহা বেরিয়ে এল। হয়ত গাড়ি ঢোকার আওয়াজ পেয়েছে।
    -"কী ব্যাপার সিনহা, ফোন করেছিলে কেন?"
    -"স্যর, সেই মিসেস ব্যানার্জীর বাবা এসে বসে আছেন অনেকক্ষণ। আমাদের কিছু বলছেন না, উনি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে চান। খুব ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলেন তাই আপনাকে ফোন করেছিলাম।"
    আজ সারাদিনের ব্যস্ততায় ভার্মার এই কেসটার কথা মনে হয়নি। এখন গিরীশের কথা শুনে একটা ব্যগ্রতা জেগে উঠল। সে বসের কাছে যাওয়া মুলতুবি রেখে নিজের চেম্বারের দিকে গেল।
    তাকে ঢুকতে দেখে গিরীশ উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ভার্মা "বসুন, বসুন" করতে করতে নিজের চেয়ারে বসে বলল,
    -"হ্যাঁ এখন বলুন কী ব্যাপার। কী জন্য খুঁজছিলেন আমাকে?"
    -"আপনারা ভালো করে তদন্ত করছেন না অর্ক সম্বন্ধে, ওকে ছেড়ে রেখেছেন। দেখুন ও কীরকম বদমায়েশী করছে আমাদের সঙ্গে।"
    ভার্মা অবাক হল। অর্ক আবার কী করল! যতদুর দেখেছে অর্ক এদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহারই করছে, অভদ্রতা যা হচ্ছে সে এই তরফে, রাজপালের মদতে।
    -"মি: ব্যানার্জী? কী করেছে?"
    -"আজ ভোরে আমার মোবাইলে একটা ফোন আসে। ভালো করে আওয়াজ শোনাও যাচ্ছিল না, বোঝাও যাচ্ছিলনা। বলল সে নাকি রাজী, আমার মেয়ে। কীরকম বদমায়েশী চিন্তা করুন।"
    ভার্মা একটু চমকায়। এ আবার কী নতুন আপদ! ভদ্রলোক বেশ আপসেট, চোখমুখ দেখেই মনে হচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে রাজপালের কাছে না গিয়ে এখানে তার কাছে কেন। এদের উকিল তো রাজপাল। গিরীশ বোধহয় ভার্মার মুখের দিকে তাকিয়ে তার ভাবনাটা আন্দাজ করতে পারল।
    -"আমি রাজপালের কাছে গিয়েছিলাম, সে বলল আপনাকে এসে বলতে। তার ধারণা এ অর্কর কাজ, আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করছে, আমরা ওর নামে শান্তিবিহার থানায় রিপোর্ট করেছি তাই এসব করছে আমাদের বিরক্ত করতে, দু:খ দিতে!"
    -"ঠিক আছে দেখছি। আপনি নাম্বারটা দিন আগে।" ভার্মা সিনহাকে ডেকে পাঠাল। নাম্বার ট্রেস করে দেখা গেল ওটা সাউথ পার্কের রাস্তার ধারের একটা পাবলিক কল বুথ। সাউথ পার্ক এখান থেকে অনেক দুর। রাত থাকতে উঠে অর্ক এক দেড় ঘন্টা গাড়ি চালিয়ে ফোন করতে সাউথ পার্ক গেছে!
    -"ফোনে আপনাকে আর কিছু বলেছে না শুধু আপনার মেয়ের নাম করেই রেখে দিয়েছে?"
    গিরীশ ভেবে বলে,
    -"খুব অস্পষ্ট ছিল স্বর, ভালো শোনা যাচ্ছিলনা। "রাজী বলছি" টাই ঠিক করে শুনলাম। তারপরে কী একটা বলে কেটে দিল, ভালো শুনতে পেলাম না। আমি বারবার ফোন করলাম ঐ নাম্বারে কিন্তু কেউ ওঠালো না।"
    -"মি: ব্যানার্জীর গলা মনে হল আপনার? আপনি নিশ্চয় মি: ব্যানার্জীর গলা অস্পষ্ট হলেও বুঝতে পারবেন।"
    গিরীশ অনিচ্ছাসত্বেও বলল,
    -"না অর্কর গলা নয়। মেয়েলী গলা, তবে রাজীর গলার সঙ্গে কোনো মিল নেই, খুব আবছা শোনা গেল।"
    -"আবছা, অস্পষ্ট যখন তখন মিল নেই তা নিশ্চিত কী করে বলছেন?"
    গিরীশ চুপ, ভার্মা আবার বলে,
    -"কিন্তু এরকম ফোন করে কার কী লাভ? আপনার মেয়ের দেহ আপনি নিজে শনাক্ত করেছেন, প্রমাণ হয়ে গেছে। আপনি এরকম একটা ফোন পেয়ে দু:খিত হতে পারেন বড়জোর, আর কিছু না! তাহলে আপনাকে কে আপনার মেয়ের নাম দিয়ে ফোন করল?"
    গিরীশ এখন অনেকটাই শান্ত,
    -"জানিনা, কিন্তু আপনি ভালো করে অর্কর ওপর নজর রাখুন। ঐ আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্যে দায়ী, ওকে চাপ দিন আপনারা।"
    গিরীশকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠালো ভার্মা, এ নিয়ে আরো খোঁজখবর করবে কথা দিয়ে। গিরীশ চলে যাবার পরে ও বড়সাহেবের কাছে গেল সারাদিনের রিপোর্ট দিতে। দুপুরে বাড়ি এসে খাওয়াদাওয়ার পর আর থানায় গেলনা। বিকেলে গাড়িকে বাড়িতেই আসতে বলে দিল, সোজা মিটিংয়ে চলে যাবে। শুয়ে শুয়ে সকালের সব ঘটনা ছাপিয়ে গিরীশের কাছে আসা ফোন কলটাই মনে পড়ছে। ভদ্রলোক অর্ককে ফাঁদে ফেলবার জন্য গল্প বানাচ্ছেনা তো! সাউথ পার্ক এখান থেকে দুর হলেও গিরীশের বাড়ি থেকে দুর নয়। নিজেই গিয়ে বুথ থেকে নিজের মোবাইলে ডায়াল করেনি তো!

    রাইয়ের এখন লাঞ্চ আওয়ার,ভার্মা ফোন লাগাল, ঘটনাটা জানাতে হবে, একটু পুলিশী ধরণের বাইরে গিয়ে আউট অফ বক্স চিন্তাধারা দরকার আর রাই সেরকম ভাবতে পারে বলেই ম্যাডামের অনেক কথা মিলে যায় অনেক সময়।
    রাই শোনে সব, মিলছেনা, অনেক কিছুই মিলছেনা। যদি রাজীর নাম করে কেউ ফোনও করে গিরীশ তা নিয়ে এত হইচই করছে কেন, পুলিশকে জানিয়ে রেখে দেওয়াই তো যথেষ্ট। রাজপালকে বলে আবার ভার্মার কাছে এসেছে। অর্ককে ও প্রথম থেকে দোষী করছে অথচ কোনো প্রমাণ নেই, মোটিভও সেইভাবে কিছু নেই, তাই কি মরিয়া হয়ে গেছে?
    -"ভার্মাজী, রাজীর বডি কবে ছাড়ছেন আপনারা?"
    -"পরশু, কাল জানিয়ে দেব ব্যানার্জীদের। কেন ম্যাডাম?"
    -"আপনি আমার কথা খুব ভালো করে শুনুন। এই ফোন কলের ব্যাপারটায় আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে। আপনাকে নিজে কাজটা করতে হবে, অন্য কাউকে ভার দিলে চলবে না। সুজিত আর অর্কর ওপর যেভাবে নজর রাখছেন সেভাবে গিরীশের ওপরেও নজর রাখুন কিছুদিন।"
    -"ম্যাডাম, কাজটা কী করতে হবে?"
    -"ভার্মাজী মিটিং শেষ হলে সে যত রাত্রিই হোক আপনি আমার বাড়ি আসতে পারবেন?"
  • a | 208.240.243.170 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৬495745
  • নি:শ্বাস বন্ধ করে পড়ছি।

    শেষটাও কিন্তু এরকম দুর্দান্ত চাই
  • PM | 2.50.40.193 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ০০:১৮495746
  • এই পরিস্থিতিতে আমি সিকি-কেও সন্দেহের বাইরে রাখছি না। ও-ও দিল্লী-তে থাকে:)

    এখন-ও রোববার বাকী আছে। আরেকটা ইন্সটল্মেন্ট পাওয়া যাবে কি?
  • shrabani | 59.94.98.34 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৫৮495747
  • :))) আর সংখ্যা টংখ্যা নয়। এবার শেষের পালা................
  • Debashis | 89.147.0.172 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ১৫:৪২495748
  • রুদ্ধশ্বাস একেই বলে। দয়া করে তাড়াহুড়ো করে শেষ করবেন না। অন্তিম পর্বও একই রকম জমাটি চাই।
  • shrabani | 59.94.98.49 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ২০:০৮495749
  • *****************************
    নেশার জিনিস দেখলে শালিখরামের আজকাল কেমন একটা ভয়মেশানো অদ্ভুত অনুভূতি হয় মনের ভেতর। ঐ নেশার কারণে তার যে একদিন সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছিল তা ভুলতে পারেনা কিছুতেই। তখন অল্পদিন হোলো এসেছে এই শহরে, চাকরিটা তার গাঁয়ের এক পড়শীর, সে অসুস্থ হয়ে পড়ায় শালিখরামকে নিয়ে এসে নিজের জায়গায় কাজে লাগায়।
    ওদের অবস্থা ভালো ছিলনা, জমিজমা এত অল্প যে গাঁয়ে থাকলে একবেলা ঠিকমত খাওয়াও জোটেনা। মা বউ ছেলে, খাবার মুখ নেহাত কম নয় বাড়িতে। চাকরি পেয়ে সে বর্তে গিয়েছিল,শহরটাকেও বেশ পছন্দ হয়েছিল, তার অনেক আত্মীয় স্বজন তখন এখানের নানা জায়গায় ছড়িয়ে আছে।
    শহর ভালো লাগলেও কাজ ভালো লাগেনি। কাজ কিছু নয় পাহারা দেওয়া, জায়গাটা শহরের লাগোয়া একটা গাঁয়ের প্রান্তে, লোকালয় থেকে একটু তফাতে। শালিখরাম পরেশান হয়ে যেত, সারাদিন রাত যদি মাঠের ধারে ভুতের বাড়ি পাহারা দিতে হয় তাহলে লোকে পাগল হবে না! কেয়ারটেকার ছিল ভজনলাল, সে আবার সাহেবদের লতায় পাতায় আত্মীয় হত, রোয়াব খুব তার। ভজনলালের পরিবার থাকত পাশের গাঁয়ে। রোজ রাতে ঐজন্যে সে এবাড়ীতে থাকত না, শুধু সাহেবরা এলে থাকত। সকালে এসে ঘর খুলে লোক দিয়ে পরিস্কার করিয়ে, বাগানে মালীকে দিয়ে কাজটাজ করিয়ে, সবার ওপরে খবরদারী করে সন্ধ্যেয় সব বন্ধ করে চলে যেত। তখন এতবড় এই ফার্মহাউসে শুধু শালিখরাম আর চৌবেজী। চৌবেজী সন্ধ্যে থেকেই রামায়ণ আর হনুমান চালিশা পড়ত ভুত তাড়াতে, আর রাত দশটা বাজলেই খেয়েদেয়ে পিছনের গেট বন্ধ করে সেখানে খাটিয়া পেতে ঘুম দিত। সামনের গেটে শালিখরাম একা, ভয়ে প্রাণ বেরিয়ে যেত। গাঁয়ের দু চারজন নেশাখোর যখন তার কুঠরিতে নেশা করতে আসতে লাগল মাঝে মাঝে, সে বারণ করল না। ওরা থাকলে ভয়টা একটু কম লাগত। যেদিন ওরা আসত,দের রাত অবধি আড্ডা বসত, ভালোই কাটত সময়। ওদের পাল্লায় পড়ে তারও নেশাতে হাতেখড়ি হল তবে সে পাকা নেশাড়ু কখনোই ছিলনা। সেই একদিন যে তার কী হয়েছিল!
    কাজটা তো মন্দ ছিলনা, পয়সাকড়িও ভালো দিত, এছাড়া ক্ষেতের আলুটা মুলোটা গাছের ফল এসবের বিক্রির ভাগ পাওয়া যেত ভজনলালের সঙ্গে মিলেমিশে। কোথা হতে কী যে হয়ে গেল, তবে গুরুর কৃপায় এখন সব ঠিক হয়ে গেছে। তবু আজও নেশার জিনিস বা নেশাখোরের থেকে সে শতহস্ত দুরে থাকে।

    -"শালিখরাম।"
    -"হাঁ মহাত্মাজী।"
    -"তোকে যে একটা কাজ করতে হবে"।
    -"কী কাজ মায় বাপ? হুকুম করুন।"
    -"এবার যে সময় এসেছে, তোকে সেই রাতের কথা গিয়ে পুলিশকে গিয়ে বলতে হবে।"
    -"কোন রাত হুজুর?"
    -"ভুলে গেলি? তোর সেই শেষ নেশা করার কথা?"
    -"আরে ছি,সে কী ভোলবার মহাত্মা? কিন্তু সে রাতের কথা আমি কিছু জানিনা হুজুর, বেহুঁশ ছিলাম,সেই জন্যেই তো আমাকে শাস্তি পেতে হয়েছিল।"
    -"সেই কথাই তোকে বলতে হবে। তোর বেহুঁশীর কথা, নেশার কথা, শাস্তির কথা,যা তুই জানিস সব কথা। এখন চল, আমি তোকে পুলিশ স্টেশনের বাইরে নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেব। ভেতরে গিয়ে কার সঙ্গে কথা বলতে হবে সে যেতে যেতে বুঝিয়ে দেব।"
    -"কিন্তু সেসব কথা এখন এতদিনে কেন মহাত্মা? তাছাড়া পুলিশের ব্যাপার, ওরা তো এমনিই বিনা কারণে লোককে ধরে রাখে, মারে। এখন উমর হয়ে গেছে বাবা, ডর লাগে।"
    -"দরকার পড়েছে রে, কোনো ডর নেই, আমি সামনে যাবনা তবে নজর রাখব, তোকে ওরা কিচ্ছু করবেনা। যদি কিছু করেও আমি সামলে নেব, আমার ওপর ভরসা আছে তো?"
    -"পুরা ভরোসা আছে গুরুজী, আপনি যা বলবেন।"
    -"আজ দরকার নাহলে তোকে একলা পাঠাতাম না। সংসার, সম্পর্ক এসব কখন কোন পথে যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন কীবা সন্ন্যাসী কীবা গৃহী!"

    "ম্যাডাম, একবার থানায় আসতে পারবেন?"
    -"ভার্মা, এখন? আমি এইমাত্র অফিসে ঢুকলাম যে।"
    বলেই রাইয়ের মনে হল খুব জরুরী কিছু না হলে ভার্মা সাতসকালে ওকে থানায় যেতে বলবেনা। এমনিতে ভার্মা সব ব্যাপারেই ওর বাড়ি এসেছে, ওকে থানায় যেতে বলেনি কখনো। তাই আবার বলে ওঠে,
    -"কেন বলুন তো? কী হল?"
    -"না মানে খুব অসুবিধে না থাকলে এক্ষুনি একবার চলে আসুন কিছুক্ষনের জন্যে। চেনেন তো? আপনার অফিস থেকে রিক্সায় মিনিট কয়েক লাগবে।"
    রাই চেনে থানার রাস্তা। সে আর কথা না বলে সব বন্ধঝন্ধ করে ছোট পার্স আর মোবাইলটা তুলে নিয়ে বসের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। মেয়ের স্কুল থেকে ডাক এসেছে বলবে।
    থানায় পৌঁছে দেখল বাইরে ভার্মার একজন জুনিয়র অফিসার ওর জন্যে অপেক্ষা করছে। "রাই ম্যাডাম? আমার সঙ্গে আসুন।" সঙ্গে করে নিয়ে গেল দোতলার একটা ঘরে। রাই আগে এসেছে যখন তখন অভি ছিল, সেও প্রায় বছর চারেক হয়ে গেল। এমনিতে খুব কিছু বদলায়নি, দোতলাটা অপেক্ষাকৃত পরিস্কার আর লোকজন বিশেষ নেই। টানা বারান্দার শেষপ্রান্তে একটা আধা অন্ধকার ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে অফিসারটি চলে গেল। ঘরে একটা বেঞ্চি,দু তিনটে কাঠের চেয়ার আর একটা টেবিল ছাড়া অন্য কোনো আসবাবপত্র নেই, জানালা সব বন্ধ, একটা কম ওয়াটের বাল্ব মাঝখানে জ্বলে চারপাশের অন্ধকারকে আরো গাঢ় করে তুলেছে । ভার্মা একটা চেয়ারে বসেছিল, ও ঢুকতেই উঠে দাঁড়ালো।
    -"ম্যাডাম, আসুন আসুন। সরি বিরক্ত করলাম, কিন্তু এই ব্যাপারটায় মনে হল আপনার উপস্থিতি জরুরী।"
    -"কী হয়েছে ভার্মাজী?"
    -"ম্যাডাম, এ হল শালিখরাম। সাতাশ বছর আগে ফিরোজগাঁওয়ে লালজীদের ফার্মহাউসের সিকিউরিটী ছিল।"
    এতক্ষন রাই ঘরের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি আঁচ করতে পারেনি। এখন অন্ধকারে চোখ সইয়ে ভার্মার নির্দেশ অনুসারে কোণের বেঞ্চির ওপর একজন মানুষ চোখে পড়ল। ভালো করে দেখে লোকটির বয়স এই পঞ্চান্ন ছাপ্পান্ন হবে মনে হল। রোগা রোগা চেহারা তবে বসে থাকলেও বোঝা যায় বেশ লম্বা গঠন। মাথা অগোছালো আধকাঁচা আধপাকা চুলে ভর্তি, মুখখানাও বেশ শুকনো খড়ি ওঠা। পরণে সাদা ময়লা পাজামা আর একটা মেটে র ঙের কুর্তা, একটা গরমের চাদরও জড়ানো গায়ে। রাইয়ের দিকে তাকিয়ে দু হাত জুড়ে নমস্তে করল। রাইও উত্তরে মাথাটা ইষৎ নামালো। লোকটার চোখদুটো খুব ইন্টারেস্টিং,কেমন একটা উদাস সরল দৃষ্টি।
    -"শালিখরাম ঘন্টাখানেক আগে থানায় এসে রাজেশ্বরীর কেসের অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। থানার লোকেরা পাত্তা দেয়নি, ভাগিয়ে দিচ্ছিল,কিন্তু ও যাচ্ছিলনা, কাকুতিমিনতি করছিল। ভাগ্যিস সিনহা ওখান দিয়ে আসছিল, গোলমাল দেখে দেখতে গিয়ে রাজেশ্বরীর কেস শুনে সোজা আমার কাছে নিয়ে আসে একে। শালিখরাম বলছে ওর কোন গুরুজী নাকি ওকে পাঠিয়েছে আমার কাছে সব কথা বলতে।"
    রাই দেখে শালিখরাম একটু হাসি হাসি মুখে ভার্মার কথা শুনছে, ওকে নিয়ে কথা হলেও কথার মাঝে কিছু বলছেনা। লোকটাকে দেখে অবাক লাগে রাইয়ের, কেমন যেন একটা নির্লিপ্ত ভাব। সে কেন এসে পুলিশের ব্যাপারে জড়াচ্ছে, কে ওর গুরুজী! সবকিছু জানার জন্যে অস্থির হয়ে ভার্মাকে তাড়া দেয়।
    -"কী জানে ও? কী বলেছে আপনাকে?"
    -"সেরকম কিছু না। তাই আমি চাই আপনিও শুনুন ওর কথা। ও নাকি এক রাতে নেশা করে বেহুঁশ হয়ে গেছিল, অথচ এমনিতে ও সব দিন নেশা করত না, করলেও এরকম বেহুঁশ হবার মত নেশা কখনই করত না। ও পরিস্কার বলছে না কিন্তু আমার মনে হয় যে দিন নির্মলা নিখোঁজ হয়েছিল, এ সেই রাতের কথা।"
    ভার্মা এবার শালিখরামের দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"শালিখরাম, ইনি আমাদের ম্যাডাম, তুমি একে সব কথা বল তো আরেকবার।"
    শালিখরাম আবার হাত জোড় করে।
    -"ম্যাডাম জী, মহাত্মাজী আমার ভগবান। উনি না থাকলে আজ যে আমার কী হত, ভেসে যেতাম, আমার পুরো পরিবার শেষ হয়ে যেত।"
    রাই কিছুই বোঝেনা, কে এই মহাত্মাজী, গুরুজী। তবু ও শালিখরামের কথায় বাধা দেয়না, ভার্মাকেও ইঙ্গিতে চুপ থাকতে বলে।
    -"ম্যাডামজী, মহাত্মা বলল, সময় হয়েছে শালিখরাম। তোর সাথে যে অন্যায় হয়েছিল তা পুলিশকে গিয়ে বল, এতে সবার ভালো হবে, অন্যায়ের প্রতিকার হবে। আমি কিছুই জানিনা ম্যাডামজী, কার ভালো হবে,কী অন্যায়! আমি শুধু বাবার আদেশ পালন করি। সেই রাতে ম্যাডাম আমি কী করে যেন বেহুঁশ হয়ে গেলাম। সবাই বলল নেশা করেছে, বেওড়া হয়েছে। কিন্তু আমার বেটার কসম সাব, আমি অত নেশা করিনি। সন্ধ্যে হলে ঐ ভুতের পুরীতে শুধু পিছনের গেটে চৌবেজী আর সামনে একা আমি, খুব ভয় করত মাঝে মাঝে। গাঁয়ের দু চারজন নেশাড়ু মাঝে মাঝে এসে আসর বসাত, তারা থাকলে ভয়টা কম লাগত। তাদের খুশী করতে একটু আধটু খেতাম, সেও রোজ নয়।
    সেদিন সন্ধ্যেয় ভাই এসে বোতল খুলল, বলল ওর মালিকের ছেলে দিয়েছে, বিলিতী। তাই একটু চেখে দেখলুম, বিলিতী আসলী মাল ছিল বলে কী কে জানে, জবর নেশা হয়ে গেল একটু তেই। তারপর রাতভোর আর কিছু মনে নেই। সেরাতে আবার চৌবেজীও ছিলনা, ছুটি নিয়ে কদিন গাঁও গেছিল। আমাদের দুজনের কেউ একজন ছুটিতে গেলে ভজনলালের রাতে থাকার কথা। ভজনলাল মানে ফার্মহাউসের কেয়ারটেকার, কিন্তু সে থাকত না। পাশের গাঁয়ে ওর বাড়ি, ও বাড়ি গিয়ে ঘুমতো। সকালে ভজনলাল এসে দেখে আমি তখনও ঘুমোচ্ছি, ঐ চেঁচামেচি করল, মুখে নেশার গন্ধ পেয়েছিল। আমি যখন নেশায় অচেতন ছিলাম, সেই ফাঁকে নাকি চোর ঢুকেছিল ফার্মহাউসে। মালিকরা দিল্লী থেকে ম্যানেজারকে পাঠাল, সে এসে ভজনলালের কাছে সব শুনে আমাকে তাড়িয়ে দিল। আমি অনেক মিনতি করলাম, কিন্তু শুনলনা, বেশী কথা বললে পুলিশ ডেকে হাজতে পাঠিয়ে দেবে বলল। শুনলাম সেই রাতেই গাঁয়ের একটা মেয়েও হারিয়ে গেছিল। ভজনলাল বলছিল ঐ চোরগুলোই নাকি মেয়েটাকে তুলে নিয়ে গেছিল।"
    রাই চমকালো। ভার্মা ঠিকই ধরেছে, এ সেই রাতেরই কথা। কিন্তু শালিখরামকে কে পাঠিয়েছে? যে পাঠিয়েছে সে মনে করে যে নির্মলার ব্যাপারে শালিখরামের এই ঘটনার সম্পর্ক আছে। কিন্তু রাজেশ্বরীর কেসে পুলিশ নির্মলা অবধি পৌঁছেছে সেটা সে কী করে জানল!

    রাই শালিখরামকে বাধা দেয়,
    -"কী কী চুরি গেছিল ফার্মহাউস থেকে? এমন কী দামী জিনিস থাকত সেখানে?"
    শালিখরাম কপালে হাত দিল,
    -"না ম্যাডামজী, আসলে কিছুই চুরি যায়নি। সব ভজনলালের সাজানো। বাউন্ডারী ওয়ালের ধারে ধারে বিদেশী গাছের দামী চারা এনে সার সার লাগানো হয়েছিল সারা কম্পাউন্ড জুড়ে। পাঁচিলের ধারে মাটি তখনো কাঁচা ছিল, সেখানে পায়ের চিহ্ন পড়েছিল, কিছু চারা নষ্ট হয়ে গেছিল, তাই দেখে চোর যে এসেছিল তা বোঝা গিয়েছিল নাহলে কেউ বুঝতেও পারত না। কিন্তু আসলে চুরি কিছুই যায়নি। সেরকম কিছু দামী জিনিস ছিলই না, আসবাবপত্র, বাসন কোসন গাছ ফুল, ক্ষেতে সামান্য আনাজপত্র। ভজনলাল সুযোগ বুঝে কিছু জিনিস বস্তা ভরে নিজের বাড়ীতে রেখে এসেছিল, তারপরে বলেছিল চুরি হয়ে গেছে।"
    -"তারপর, তোমার কী হল?"
    -'আমার ম্যাডাম নোকরি চলে গেল। সাহেবেরা খুব গুস্‌সা হল। অন্য কোথাও কাজ খুঁজতে গেলে তারা এই সাহেবদের কাছে খোঁজ নিত, আর সাহেবরা আমার বদনাম করত নেশাড়ু বলে। এই শহরে কেউ আমায় কাজ দিচ্ছিল না। খুব কষ্টে দিন চলছিল মুটে মজুরী করে কোনোরকমে। বিরাদরীর লোকেরাও তখন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিল। গাঁয়ে ফিরে যাব সেখানেও জমিজমা ছিলনা, খাব কী, বৌ ছেলেকে খেতে কী দেব! নিজের খরচ চালিয়ে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারছিলাম না, মমেরা ভাইয়ের কাছে গেলাম টাকার জন্যে, তা সেও রোজ ফিরিয়ে দিত দেখা না করে। আমাকে দেখলেও গেট খুলতই না। সেদিন খুব খাটনি গেছে, রোদে হেঁটে গেছি ওর ওখানে,যদি কিছু কাজের ব্যবস্থা হয়। তা কাজের মেয়ে বলল সে নেই, ঢুকতে দিলনা। এতটুকু দানা নেই পেটে, কিছুদুর গিয়ে ফুটপাতের ওপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম। আমার ভাগ্য মহাত্মা দেখতে পেলেন,আমি বেঁচে গেলাম। তারপর উনি আমার সব কথা শুনে আমায় দয়া করলেন। ওর দয়াতেই আবার কাজ হল, সব হল। শুধু ওনার কথা রেখে আর জীবনেও নেশা ছুঁইনি, কারোকে ঠকাইনি। ছেলে লেখাপড়া শিখে গুরুজীর আশ্রমে কাজ করছে, আমরা বুড়োবুড়ি এখানে আছি, সীতা কলোনিতে একখানা ঘর আছে, আনন্দেই কেটে যায়।"
    ভার্মা জানতে চায়,
    -"এই মহাত্মা বা গুরুজী কে? কোথায় থাকেন?"
    -"উনি আমাদের মত লোকের ভগবান সাব। আমার দেশের কাছে ওনার আশ্রম, মাহরীতে, একটা পাহাড়ের উপরে। গরীবদু:খী দের নিয়ে কাজ করেন, সব আমিও জানিনা। মাঝে মাঝে শহরে এলে আমাদের বাড়ি আসেন।"
    -"শহরে ওনার বাড়ি কোথায়?"
    -"সে আমি জানিনা। এত লোকে ওঁকে ভালোবাসে, সবার বাড়িই ওর বাড়ি। আমি ওনার সাথে ঘুরেছি, যার বাড়িতে যান সেই খুশী হয়, কত বন্ধু ওনার।"
    রাই বুঝল লোকটি সহজ সরল, প্রথম জীবনে ওরকম একটা ধাক্কা খাওয়ার পর এখন কোনো কিছুতে থাকেনা, সাদাসিধে জীবন যাপন করে। রাই একটু অধৈর্য্য হয়ে ভার্মাকে বলল,
    -"এই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলতে হবে। ফার্মহাউসের চুরি আর নির্মলার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার কী সম্পর্ক তা উনি নিশ্চয়ই কোনোভাবে জানেন।"
    ভার্মা বলল,
    -"কিন্তু এতো তার নামও বলতে পারছেনা, আশ্রমের খোঁজ করছি আমরা, এর বাড়ি গৌরীপুরে, উত্তরাঞ্চলে, মাহরী ওদিকেই হবে। কাছাকাছি থানার ঠিকানা খুঁজছে আমার লোকেরা।"

    রাই একটা চেয়ারে বসেছিল, এরা জানালা খোলেনি কেন কে জানে। হয়ত এই ঘরে যা কথা হয় তা বাইরে থেকে যাতে কেউ না শোনে তাই এই ব্যবস্থা। দরজা ভেজানো ছিল, ভার্মা বাইরে গিয়ে কাউকে কিছু বলল। একটু পরে একটা লোক তিন গ্লাস চা নিয়ে এসে ওদের তিনজনকে দিল। শালিখরাম চা পেয়ে কেমন একটা শিশুর মত খুশী হয়ে উঠল, আরাম করে শব্দ করে চায়ে চুমুক দিল। রাইয়ের লোকটাকে খুব ভালো লাগছিল, আজকের যুগে এমন সরল লোক দেখা যায়না। সেইসঙ্গে ওর গুরুজীকে জানতে বা দেখতে ইচ্ছে করছিল। কেমন সেই মানুষটি?
    -"ভার্মাজী, এই ফার্মহাউসের চুরির ব্যাপারটা ফিরোজগাঁওয়ের লোকেদের একবার জিজ্ঞেস করলে হয়না? নির্মলার কথা না মনে থাকুক, লালজীরা গ্রামের সেঠ, তাদের বাড়ির চুরির ঘটনা পুরনো লোকেদের মনে থাকতে পারে।"
    -"তাতে কিছু লাভ হবে ম্যাডাম? আমরা তো রাজেশ্বরীর আর তার মায়ের ব্যাপারে জানতে চাই। ওখানে তো সবাইকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি কেউ কিছু বলতে পারেনি। চুরির কথা মনে থাকলেও যদি তার সঙ্গে নির্মলার ঘটনার কোনো যোগসূত্র যদি কেউ না দিতে পারে শুধু চুরির কথা জেনে কী লাভ! শালিখরামের গুরুজীর ব্যাপারটা আমার অদ্ভুত লাগছে, উনি শালিখরামকে পাঠালেন, নিজে এলেন না কেন?"
    রাই একটু অন্যমনস্কভাবে বলল,
    -"হয়ত উনি ভেবেছেন আমরা শালিখরামের কথাতেই সব বুঝতে পারব। উনি পেরেছেন, কিন্তু আমরা পারছিনা, কেন!"
    শালিখরামের চা খাওয়া শেষ, সে উসখুশ করছে, মনে হল যেতে চাইছে কিন্তু ওরা না বললে যেতে পারছেনা।
    রাই সেদিকে খেয়াল করল না, মনে মনে শালিখরামের বলা ঘটনাটার কথাই ভাবতে থাকে, ভাবতে ভাবতে ভ্রুদুটো কুঁচকে আসে, অজান্তেই দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে। ওদিকে ভার্মা মোবাইলে কাকে ধরার চেষ্টা করছে।

    -"শালিখরাম, তোমার ভাই তোমাকে মদ খাইয়েছিল সে রাতে, বললেনা?"
    শালিখরাম ঘাড় নাড়ে।
    -"তোমার নিজের ভাই? সে কখন বাড়ি গিয়েছিল, তার বাড়ি কোথায়? সেকী এর আগেও কখনো এভাবে তোমার সাথে মদ খেতে এসেছে? "
    রাইয়ের গলা শুনে ভার্মা ফোন ছেড়ে দেয়, শালিখরামও তাকায় এদিকে। রাই সাগ্রহে উত্তরের অপেক্ষায়,
    -"না, ম্যাডাম, আমার ঐ মমেরা ভাই, মামার ছেলে, আমার অনেক আগে থেকে সে এই শহরে আছে। সে আমার ওখেনে বিশেষ আসতনা, দরকার ছাড়া। গাঁও যাওয়ার সময় কিছু পাঠাতে হলে তখন আসত। । সেই প্রথম সে আমার জন্য বোতল নিয়ে এল, আমি খেতে চাইনি, আমি সেরকম নেশা করতাম না কখনো তায় আবার সাঁঝবেলায়। কিন্তু ঐ যে বলল বিলেত থেকে আনা, জোর করল, আমার শুনে কেমন ইচ্ছে হল, খেয়ে ফেললুম।"
    -"তোমার ভাই এশহরে থাকে এখনো, দেখা করা যায় তার সঙ্গে? কী নাম তার?"
  • guess | 72.83.76.29 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ২১:৩০495750
  • নেকরাম।

    গুরুজী শালাবাবু ?
  • PM | 2.50.40.193 | ২৭ নভেম্বর ২০১১ ২১:৩৮495752
  • আশা করছি শেষটা " জামাই ঠকান" হবে না :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন