এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২০৮৯৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • titli | 121.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১২:১১495990
  • খুব সমস্যা হচ্ছে। আমি না আপিসে কাজ করতে পারছি না। টেনশন হচ্ছে।
    আর বাংলাটা কী ঝরঝরে। তাড়াতাড়ি প্লীইইইজ।

  • debu | 170.213.132.253 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১২:৩২495991
  • শ্রাবনি ।।।লেখাটা এতো ভালো হছে যে কি বলবো।।paypal account খুলে donation ও নিতে পারিস
  • shrabani | 117.239.15.102 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১২:৪৮495992
  • এটা একেবারে জনস্বার্থে জারি বিজ্ঞপ্তি:
    তিতলির মতো যারা টেনশনে আছে, প্লিজ। আমাকে এটা লিখতে বেশ চিন্তা ভাবনা করতে হচ্ছে মানে গোদা বাংলায় প্যাঁচ পয়জার, তাই সপ্তাহান্তে লিখে, হপ্তার প্রথমে তোলা, এর বেশী হবেনা। আপনারা দয়া করে টইটিকে ডুবাইয়া দিন। অবশ্য যাদের টেনশন হচ্ছেনা, তারা এখানে মতামত দিতে পারেন বা খুনী কে এসব লিখতে পারেন আর ফরিদা ও সিকি ক্লু গুলো আমাকে দিয়েও দিতে পারে যাতে আমি ওগুলো বানচাল করে দিতে পারি!:)
  • pharida | 61.16.232.26 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫৭495993
  • আমিও জনস্বার্থে জানিয়ে রাখি শ্রাবণী ১৯৩০ থেকে ১৯৬০ ও তার পরেও কিছুদিন অবধি ইংরাজীতে লিখতেন আগাথা ক্রিস্টি নামে :))
  • titli | 121.241.218.132 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০২495994
  • না না। কোয়ালিটি তে নো কম্প্রমাইজ। আপনি সময় নিন শ্রাবণী। আসলে আমি এনজয়িং দ্য টেনশন।
  • a | 208.240.243.170 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:০৭495995
  • এইটা আগেও বলেছিলাম, শ্রাবনীদি আপনি টাইম নিয়ে লিখুন, প্লিজ :)

    সিকি আর ফরিদা, লিখে দাও কুলু :)
  • siki | 123.242.248.130 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:৫৪495996
  • ক্লু-টা পেরাইভেটলিও পাঠিয়ে দিতে পারি, যদি চাও :-) ... রাজী ইন্টারনেটে অনেকক্ষণ সময়-কাটানো মানুষ ছিল যখন, একজন ইন্টারনেট-বিশারদের সাহায্য কাজেও লেগে যেতে পারে। একজনকার ইউজ করা ডেস্কটপ ল্যাপটপ থেকে কিন্তু বেশ কিছু তথ্য পাওয়া যেতে পারে, যদি সেই ইউজার টেকনিকাল লোক না হয়। টেকনিকাল হলে সেইসব তথ্য সে নিজেই লুকিয়ে ফেলতে পারে।

    সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সময় কাটানো লোককেও কিন্তু গুগল করে খুঁজে বের করা যায়। তার ফ্রেন্ডস লিস্ট বের করে ফেলা যায়।

    তবে আমার ক্লু ওসব দিকে নয়। :) টেক ইয়োর টাইম।
  • pharida | 61.16.232.26 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১৩:৫৮495997
  • লিখে দিলে শ্রাবণী বানচাল করে দেবে - কাজেই ঠিক হলেও ফেল - আমি তাই ক্লু লুকিয়ে ফেলি আস্তিনে :))

    কি "রাজী" তো ?
  • ranjan roy | 115.118.237.75 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ২৩:২৭495998
  • শ্রাবণী,
    আপনার ধ্যানে কোন বিঘ্ন ঘটাবো না। আপনার লেখার প্ল্যান ভাল। সপ্তাহান্তে তোলা। আমিও তিতলির মত বাকি দিনগুলো টেনশন উপভোগ করতে রাজি। দারুণ হচ্ছে।
  • sayan | 115.184.2.173 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০০:০১496000
  • @ debu, Date:28 Oct 2011 -- 11:33 AM
    ও আচ্ছা। আমি জাস্ট গেস করছিলাম। চটেন কেন! :-)
  • Tim | 173.163.204.9 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ০৩:০৯496001
  • শেষ হলে পড়বো বলে বসে আছি। শ্রাবণীদির আরেকটা মাস্টারপিস। থ্যাংকসগিভিং এ তারিয়ে তারিয়ে পড়া যাবে। :-)
  • debu | 170.213.132.253 | ০২ নভেম্বর ২০১১ ১০:২৮496002
  • পড়লে( বল্লে) হবে?
    খর্চা আছে
  • achintyarup | 115.111.248.6 | ০৩ নভেম্বর ২০১১ ০০:৫১496003
  • তেস্ত
  • shrabani | 117.239.15.104 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১১:০৬496004
  • ********************
    শান্তিবিহার বাজারের মুখটাকে বাঁদিকে রেখে সিগন্যালে ডানদিকে টার্ণ নিল গাড়ী। চওড়া ডাবল রোডটায় আজ ভীড় কম, একটু এগিয়ে বাঁদিকে আইয়াপ্পা মন্দির। যতিন্দর রাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করবে বাজারের মুখে, ভার্মা সেরকমই বলে দিয়েছিল। রাই নিজে গাড়ি চালিয়ে আসেনি, এদিকটা খুব ঘিঞ্জি, কোথায় পার্কিং পাবে না পাবে তাই রেন্টাল থেকে একটা গাড়ি নিয়ে এসেছে। বাজার থেকে মন্দির বেশী দুর নয়, ও গাড়িটাকে বাঁ দিকে দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ল, ড্রাইভারকে বলল মন্দিরের সামনে গাড়ি পার্ক করে অপেক্ষা করতে। এদিকটা ঘুরে শেষে তো সে মন্দিরেই যাবে, ওখানে রাস্তা একেবারে খালি, গাড়ি রাখার অনেক জায়গা। রাস্তা পার হয়ে বাজারে ঢোকার মুখে যতিন্দরের মোবাইল নাম্বারে ফোন করল। ভার্মা আজ সকালেই ওকে নাম্বারটা দিয়ে দিয়েছিল। সামনেই একটি লম্বা মত বছর তিরিশের লোক দাঁড়িয়েছিল একধারে, ফোন তুলেই সে রাইয়ের দিকে তাকালো, তারপরে ফোন কেটে এগিয়ে এল,
    -"রাই ম্যাডাম, ভার্মা সাব?"
    রাই হাসল অল্প, লোকটির চেহারাটা এদিককার জাঠ ধরণের, পেটানো, টানটান, তবে মুখটা বেশ বাচ্চা বাচ্চা, হাসিখুশি।
    -"যতিন্দর? নমস্তে, বুঝতে পেরে গেছেন?"
    রাইকে অবাক করে লোকটি বলল,
    -"আমি তো আপনাকে চিনি। গুপ্তা সাহেব যখন ছিলেন, আমি ভার্মা সাহেবের সাথে ঐ থানায় ছিলাম, আপনাকে দেখেছি সাবেদের সঙ্গে, মনে আছে।"
    রাইয়ের বেশ ভালো লাগল, ভার্মা আর অভির চেনা লোক মানে এর সাথে সহজে কথা বলা যাবে। অচেনা কেউ হলে সহজে সহজ হতে পারত না, এদেশীরা এখনো মেয়েদের সম্বন্ধে ঠিক সেরকম ভালো ধারণা পোষণ করেনা, বিশেষত রাইয়ের মত লেখাপড়া জানা চাকরি করা মেয়েদের প্রতি এদের একটা জাত অচ্ছেদ্দা থাকে। সেরকম হলে এমনি কিছু না, একটু অস্বস্তি হত।
    দুজনে মিলে বাজারে ঢুকল। সকালবেলা ভিড় কম। দোকানপাট যদিও খোলা আছে, রাস্তায় হকার আর ঠেলা নেই, সেসব বিকেলে বসে। ওরা গণেশ ভান্ডার, যেখানে অর্করা দোকান করে সেখানে গেল। রাই একটু জিজ্ঞাসাবাদ করল মালিককে, যতিন্দর সঙ্গে থাকায় ওরা রাইকে পুলিশের লোক মনে করেই কথা বলছিল। সেই ছেলেদুটি যারা অর্কর গাড়িতে মাল পৌঁছতে গেছিল তাদের সাথে ওরা সেই গলিটায় গেল। ফুলওয়ালির সঙ্গে দেখা হলনা, সেও বিকেলে বসে, এটা বোধহয় ভার্মা খেয়াল করেনি।

    গণেশ ভান্ডারের পাশেই একটা সরু গলি, সেই গলিটা ধরে একটু হাঁটতেই ওরা একটা চওড়া বড় রাস্তায় এসে পড়ল। ঐ রাস্তাটা রাইরা যে রাস্তা দিয়ে ঢুকেছে তার সমান্তরাল। একটু এগিয়ে গেলেই মোড় এল সেটা পার হয়ে কয়েক মিটার গেলেই আইয়াপ্পা মন্দির,পাঁচিলঘেরা, অনেকটা জায়গা জুড়ে, রাস্তার ধারেই। রাস্তা আর মন্দিরের মাঝের জায়গাটা সিমেন্ট বাঁধানো, একটা কৃষ্ণচূড়া আর দু তিনটে দেবদারু, একটা অমলতাস এরকম কয়েকটা গাছগাছালিতে জায়গাটা বেশ ছায়াঘন চারধার। সামনের গেট এখন বন্ধ, সকাল দশটায় মন্দিরের সময় শেষ, এখন এগারোটা বাজে,আবার বিকেলে খুলবে। তবু কিছু মানুষের আনাগোণা দেখা গেল হয়ত কাজে এসেছে, দর্শনার্থী নয়। পাশের জুতো রাখার স্টলটাও বন্ধ। একদিকে একটা আধখোলা সাইড গেট, সেখান দিয়ে অনেকে দরকারে যাতায়াত করে, এছাড়া পেছনের দিকেও গেট আছে আশ্রমিক দের চলাফেরার জন্য। রাই যতিন্দরকে নিয়ে সাইডগেটটা দিয়ে ঢুকে পড়ে, এই মন্দির ও বাইরে থেকেই দেখেছে, কোনোদিন ভেতরে ঢোকেনি। বাইরের গেট দিয়ে ঢুকলে মূল মন্দিরের পাঁচিল ও বড় কাঠের তৈরী কারুকার্য করা দরজা, সেটা এখন বন্ধ। দুই পাঁচিলের মধ্যিখানের চত্বরে দু চারটে দোকানদানি, সিকিউরিটীর কুঠরি, হাত পা ধোবার জায়গা ও পানীয় জল ইত্যাদির ব্যবস্থা। অনেক গাছপালাও আছে আর একেবারে শেষে একটা ছোট কাঠের দরজা আছে, ভেতরের লোকেদের ব্যবহারের জন্য। একজন গিয়ে সে দরজায় ধাক্কা দিতে দরজা অল্প খুলে তাকে ঢুকিয়ে আবার বন্ধ হয়ে গেল।

    একটা দোকান খোলা ছিল, সেখানে নানান মূর্তি, ধুপ ও দানী, ঘন্টা প্রদীপ, ধর্মীয় বই সিডি এরকম নানা সামগ্রী রাখা আছে। খদ্দের নেই, দোকানী একজন ফরসা মতন বৃদ্ধ, পরণে ধুতি ও ফতুয়া, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটি ডাস্টার নিয়ে জিনিসগুলো মুছে মুছে রাখছে। রাই গিয়ে দোকানটার সামনে দাঁড়ালো। দু একটা জিনিস হাতে নিয়ে দাম করতে করতে কথাটা পাড়ে,
    -"আচ্ছা, এই মন্দিরের বাইরে একটা পাগলি মেয়ে বসে থাকে, তাকে কোথায় পাওয়া যাবে?"
    ভদ্রলোক প্রশ্নটা শুনে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেনা, চশমার পুরু কাঁচের মধ্যে দিয়ে অবাক চোখে তাকায়। রাই আবার বলতে, বলেন,
    -"পাগল মেয়ে? কোন পাগল মেয়ে?"
    রাই ঘাবড়ায়, সেরেছে, এই মন্দিরে কখানা পাগলি মেয়ে আছে রে বাবা! সে আবার কিছু বলার আগেই যতিন্দর তাড়াতাড়ি বলে ওঠে,
    -"ঐ যে, ঐ মেয়েটা যে রোজ বাইরের চাতালে বসে ভিক্ষা করে। ও আসেনি আজকে?"
    লোকটি এবার একটু সহজ স্বাভাবিক,
    -"ও সোনি? ওতো ঠিক পাগল নয়, পাগলামি কিছু করেনা। আসলে ওর বয়স অনুপাতে বুদ্ধি পাকেনি, অনাথ মেয়ে। বাবা মার সঙ্গে শান্তি বিহারের ফুটপাথে থাকত, দুজনেই কী একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা যায়। সেই শকেই বোধহয় একটু অদ্ভুত হয়ে গেছে। এখানেই মন্দিরের বাইরে থাকে। মন্দির থেকে দুবেলা খেতে দেয়, রাতে এই শেডের নীচে শুয়ে থাকে। তা ওর সঙ্গে কী দরকার?"
    রাই ভদ্রলোকের দিকে তাকালো, মনে হল নেহাতই কৌতুহলের প্রশ্ন, কোনো কিছু সন্দেহ করে নয়। লোকটি বোধহয় যতিন্দরকে চেনেনা। সে যতিন্দরকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে একটু মিথ্যার আশ্রয় নেয়,
    -"না, আসলে এর আগে একদিন এসেছিলাম, তখন ও জামা চেয়েছিল। সেদিন সঙ্গে ছিলনা, পয়সা দিয়েছিলাম। আজ এদিকে আসার কথায় তাই ওর জন্যে পুরনো জামা নিয়ে এসেছিলাম। আমার কাজে দেরী হয়ে গেল, মন্দিরেও দর্শন হলনা। অন্তত মেয়েটাকে জামা দিয়ে যাই, নাহলে আবার কবে আসা হয়।"
    কথা বলতে বলতে একটা প্রদীপ পছন্দ করে ভদ্রলোকে হাতে দিল, উনিও প্যাক করতে করতেই উত্তর দিলেন,
    -"আছে কোথাও, একটু এদিক ওদিক দেখুন। এখন তো মন্দির বন্ধ হয়ে গেছে, দর্শনার্থী আসবেনা, তাই অন্য কোনোখানে গেছে। দুপুরে প্রসাদ খাওয়ার সময় ঠিক এসে পড়বে।"
    কেনা শেষ হয়ে গেলে ওরা বেরিয়ে এল। বাইরে এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল, যদি মেয়েটা আসে।
    -"ম্যাডাম, আপনি কি মন্দিরের ভেতরে যেতে চান। আমি তাহলে বলে দরজা খোলাতে পারি।" যতিন্দরের প্রশ্নে রাই একটু ভাবে, মন্দিরের ভেতরে গিয়ে কিছু করার নেই। সেদিন রাজী মন্দিরের ভেতরে যায় নি, কেউই তাকে দেখেনি। ঐ মেয়েটি তাকে দেখেছে মন্দিরের বাইরে। তার ঐ মেয়েটিকে দরকার।
    -"না, যতিন্দর, আমি মন্দিরে ঐ মেয়েটির সঙ্গেই কথা বলতে এসেছি। একটু অপেক্ষা করে দেখি, না হলে আর কী করা যাবে।"
    -"ম্যাডাম, একটা কথা ছিল, আমি ভার্মা সাহেবকেই বলতাম, কিন্তু সাবের সঙ্গে কথা বলার সময় একদম ভুলে গিয়েছিলাম।"
    রাই সোনিকে না পেয়ে খুবই আশাহত হয়েছে, কোনো কিছুই ভালো লাগছিলনা, তবু যতিন্দরের এ কথায় একটু কৌতুহলে তাকায়,কিছু না বলে।
    যতিন্দরের একটু আমতা করে না বলে,
    -"না, মানে হয়ত সেরকম কিছু দরকারী নয় তবু। এখানে একজন বুড়ি মেমসাব আছেন, মিসেস থমাস, আগে ইস্কুলের খুব বড় ম্যাডাম ছিলেন এখন রিটায়ার করে গেছেন অনেক দিন হোলো। তিনি ঐ যে মেয়েটির কেস তাদেরই সোস্যাইটিতে থাকেন, এই কিছুটা গিয়েই মোড় থেকে ঐ ডানদিকে যেতে হয়, বেশীদুরে নয়। তা তিনি একদিন থানায় এসেছিলেন কী যেন বলার ছিল বলে। বড় সাব বেরোচ্ছিলেন তা ছোট সাবের কাছে নিয়ে যেতে বললেন মেমসাহেবকে। ছোটোসাব আমাদের ঐরকমই, একটু গাছাড়া, যেটুকু না করলে নয়। সে তো মেম্‌সাবকে কী বলতে মেমসাব একেবারে রেগে কিছু কথা না বলেই চলে গেলেন। যাওয়ার সময় বলে গেসলেন পুলিশের কিছু জানার থাকলে যেন তারা ওঁর কাছে যায়, উনি আর থানায় আসবেন না। তা আমাদের এখান থেকে তো কেউ আর ওনার কাছে যেতে দেখিনি।
    আসলে ম্যাডাম, বড়সাব থানায় নতুন, নিজে যা ভালো বোঝেন করেন, কারুর কথা শোনেন না। হয়ত ভাবছেন, বুড়ি মানুষ মাথার ঠিক নেই, কাজ নেই তাই থানার সময় নষ্ট করতে চলে এসেছিল। কিন্তু ম্যাডাম, ঐ থমাস মেমসাব ওরকম আর পাঁচটা বয়স্ক মহিলার মত নয়,খুব ব্যক্তিত্বময়ী, এখানে লোকে খুব শ্রদ্ধা করে। উনি যখন এসেছিলেন নিশ্চয়ই কোনো কারণ ছিল। তা আমি বলি কী আপনি যখন এসেছেন, ওর সঙ্গে দেখা করুন না একবার। কাছেই, সময়ও কেটে যাবে, ততক্ষণে ঐ মেয়েটা এসে যাবে।"

    যেহেতু আগে এই বৃত্তান্ত শোনা ছিলনা, রাইয়ের একটু ধন্দ জাগে। কে মিসেস থমাস, কী বলতে চান! সে যতিন্দরের মত অত উৎসাহী হতে পারেনা, যদি সেরকম হত রাজপাল কী এই সূত্রটা এভাবে খোলা ছেড়ে দিত। ধাওয়ানের মত তারও মনে হয় যে মহিলা হয়ত চেনা মেয়ের কেস দেখে বেশী উত্তেজিত হয়ে থানায় ছুটেছিলেন। আজকে তার সোনির সঙ্গে দেখা করাটা বেশী জরুরী মনে হয়। তবু যতিন্দরকে নিরাশ করতে চায়না, তাই বলে,
    -"বেশ তো, কাছেই যখন একবার যাওয়া যাবে নাহয় মিসেস থমাসের কাছে। কিন্তু আগে সোনি আসুক, ওর সাথে কথা বলি তারপর। নাহলে ও যদি এসে আবার কোথাও চলে যায়।"
    যতিন্দর আর কিছু বলেনা। সেও অপেক্ষা করতে থাকে রাইয়ের সঙ্গে। প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেলে,শেষে আশা ছেড়ে দিয়ে রাই মিসেস থমাসের ওখানে যাওয়াই স্থির করে। তাকেও ঘরে পাওয়া যাবে কিনা কে জানে, অবশ্য যতিন্দর বলে যে তিনি সচরাচর বাইরে বেরোন না।
    বেলা হয়ে এসেছে, ওরা উল্টোদিকে রাস্তায় দাঁড় করানো গাড়ীতে উঠে বসে, যতিন্দর ড্রাইভারের পাশে বসে বুঝিয়ে দেয় কোথায় যেতে হবে। এটা ডাবল রোড,তাদের মন্দিরের দিকের রাস্তা ধরতে হবে। সামনেই সিগন্যাল, সেখান অবধি গিয়ে ইউ টার্ণ নিয়ে আবার গাড়ীটা মন্দিরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে, রাই অন্যমনস্কভাবে পথের ধারে চোখ রেখেছে, মনে মনে সোনির কথাই ভাবছে, কিভাবে ধরা যায় মেয়েটাকে। মন্দিরটা পেরিয়ে কিছুটা গেলে রাস্তার ধারে একটা নতুন বিল্ডিং তৈরী হচ্ছে, সামনে অনেকটা জায়গা জুড়ে বালি জমা করা আছে সেখানে কতগুলো রাস্তার ছেলেমেয়ে মলিন পোশাক, রুক্ষ চেহারায়, কাঞ্চা বা গুলি খেলছে। সামনেই তেমাথার সিগন্যাল তাই গাড়ী দাঁড়িয়ে পড়েছে, রাইয়ের মন ভার,চোখ বন্ধ। গাড়ীটা ডানদিকে সবে ঘুরেছে, কানে এল,"এ সোনি, এবার তোর চাল"।

    সোনি, সোনি, নামটা খুব চেনা মনে হচ্ছে, কোথায় শুনল যেন, বিদ্যুতের ঝিলিকের মত মাথায় আসতেই "রোকো রোকো" করে গাড়ীটা থামাতে বলল হুড়মুড় করে। বিরক্তিতে ড্রাইভারের মুখ্‌চোখ বিকৃত হয়ে এল আর একটা বিকট আওয়াজ করে ব্রেক কষল সে, যতিন্দর অবাক হয়ে পিছনে তাকালো। ভাগ্যিস শনিবারের দুপুরে এ অঞঅলে ট্র্যাফিক তেমন নেই, নাহলে নির্ঘাত পেছনে থেকে অন্য গাড়ি এসে ঠুকে দিত। রাই নেমে পড়ল, সঙ্গে যতিন্দরও।

    -"তুই সোনি, মন্দিরে থাকিস?" ডাক শুনে উঠে দাঁড়িয়েছে, পরনে একটা ময়লা ঘাঘরার মত স্কার্ট আর একটু কম ময়লা কুর্তা। ঘন ছোট ছোট লালচে কোঁকড়া রুক্ষ চুলে মুখখানা ঘেরা, গড়ন দেখে মনে হয় বয়স তের চোদ্দ বছরের মতো হবে তবে ঠিক বলা যায় না, বেশীও হতে পারে। দৃষ্টিও চুলের মতই, রুক্ষ, চ্যালেঞ্জের ভঙ্গীতে এক হাত কোমরে আর অন্য হাতে কাঁচের গুলি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।
    -"হাঁ, তো কী হল?"
    রাইয়ের আফশোষ হল ব্যাগে কিছুই নেই যে বাচ্চাগুলোর হাতে দেবে, কাছে পিঠে দোকান দেখা গেলে ড্রাইভারকে কিছু আনতে বলত। সব ব্যাপারেই রাই যতটা সম্ভব সোজাসুজি পরিস্কার কথা বলতে পছন্দ করে সে সামনে যেই হোক না কেন, এখানেও তার অন্যথা হলনা। সে সোনিকে জানালো, যে দিদি হারিয়ে গেছে, যার জন্য পুলিশ এসেছিল মন্দিরে, সে ঐ দিদির বন্ধু, দিদিকে খুঁজে বার করতে চায়। প্রথমে বুঝতে একটু সময় নিল মেয়েটা তারপর চোখে মুখে হাল্কা আগ্রহের আভাস। তাই দেখে রাই ওকে একটু সরে অন্য দিকে আসতে বলল, অন্য খেলুড়েরা খেলা থামিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, তাদের কথা ভেবে। সোনি আপত্তি করল না, ওরা সরে গাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। রাই একবার যতিন্দরের দিকে দেখে নিল, সে উদাস ভঙ্গীতে গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
    -"সোনি, ঐ দিদি যেদিন হারিয়ে গেছিল সেদিন তুই ওকে মন্দিরের কাছে দেখেছিলি রাত্তিরবেলায়?"
    -"তুমি পুলিশ?"
    -"না তো। কেন? আমি ঐ দিদির বরের বন্ধু।" ও ইচ্ছে করেই রাজীর মৃত্যুর খবর জানাচ্ছিল না সোনিকে।
    -"আমি তো মহারাজ কে বলেছিলাম সব। সেদিন মন্দির বন্ধ হওয়ার পরে লোকজন সব চলে গিয়েছে। আমি ভেতর থেকে প্রসাদ নিয়ে এখানে এসে দেখি পীপল এর তলায় কে দাঁড়িয়ে আছে। একটু ঠাহর করে দেখে মনে হল দিদি। এমনিতে দিদি মন্দিরে এলেই আমাকে পয়সা প্রসাদ বা কোনো জিনিস দেয় । সেদিন মন্দিরের দিকে এলৈ না,রাস্তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আশপাশ কেউ ছিলনা, আমি ভাবলাম মন্দির তো বন্ধ হয়ে গেছে তাহলে দিদি বোধহয় আমাকে কিছু দিতে এসেছে। দিদি বলে ডাকলাম,ঠিক তখনই একটা কালো গাড়ি এল আর দিদি তাতে উঠে চলে গেল।"
    রাই দুরে মন্দিরের দিকে দেখল। ওরা যে জায়গাটায় দাঁড়িয়ে আছে সেখান আর মন্দিরের মাঝামাঝি জায়গায় উল্টোদিকে পার্কের পাঁচিল ঘেঁসে একটা পীপল গাছ। ও হাত বাড়িয়ে সোনিকে ঐ গাছ টা দেখাল,
    -"কোন গাছ? ঐ গাছটার কথা বলছিস?"
    -"হ্যাঁ।"
    কল্পনা করতে চেষ্টা করল রাই, অন্ধকারে মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ঐ গাছতলায় দাঁড়ানো ব্যক্তিকে সঠিকভাবে চেনা সম্ভব কিনা। বাচ্চা মেয়ে, ওর দৃষ্টিশক্তি ভালোই হবে, তবু মনে হয় হলফ করে বলা যায়না। রাজীর আদলের কাউকেও দেখে থাকতে পারে।

    -"তুই কালো গাড়িটা ঠিক দেখেছিলি? কী করে বুঝলি গাড়িটা ঐ দিদিদেরই গাড়ি?"
    সোনি এখন অনেক সহজ, প্রচুর উৎসাহ নিয়ে বোঝাতে আরম্ভ করল,
    -"হাঁ তো, দিদি আর ঐ সাহেব তো অনেকবার আসত মন্দিরে। যখন মাজী ছিল তখন বেশী আসত, দিদি একাই আসত মাজীর সঙ্গে গাড়ী চালিয়ে। মাজী গাঁও চলে যাবার পরে কম আসে তবু আমি ওদের গাড়ি দেখলেই চিনতে পারি।"
    -"তাও, ঐসময় তো অন্ধেরা ছিল, একইরকমের গাড়ি অন্য কারুর ও তো হতে পারে, তাছাড়া দিদি হলে তোর কাছে আসবে না কেন? তুই ডেকেছিলি না?"
    এবার সোনি একটু দ্বিধায় পড়েছে মনে হল। তারপরে আমতা আমতা করে বলল,
    -"না মানে আমি ঠিক জোরে ডাকিনি, মন্দিরের ওখান থেকেই "দিদি" "দিদি" বলেছিলাম। মনে হয় দিদি শুনতে পায়নি।"
    -"কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিল দিদি ওখানে?"
    -"সে জানিনা। আমি তো মন্দিরের ভেতরে প্রসাদ নিতে গেছিলাম। বেরিয়ে এসে দেখলাম দিদিকে। যখন দিদি গাড়ির দিকে যাচ্ছে তখন ডাকলাম, তো দিদি শুনল না, গাড়িতে উঠে পড়ল।"

    রাই এবার একটু ভাবনায় পড়ল। ঐ মহিলা যদি রাজী হয় তাহলে সে মন্দির বন্ধ হবার পরে এসেছে অর্থাৎ আটটার পরে। সময়ের হিসেব মত অর্ক তাকে মোবাইলে ফোন করেছে পৌনে আটটা নাগাদ। মন্দির বাজার থেকে মিনিট দশেকের হাঁটা পথ। ধরা যাক অর্ককে বলেই সে মন্দিরে এসেছে এবং ফুলওয়ালীর ওখানে দেরী হতে মন্দির বন্ধের টাইম হয়ে গিয়ে দর্শন না হওয়াতে সে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছিল। মন্দির বন্ধের সময় আর রাজীর নিখোঁজ হওয়ার সময় প্রায় মিলে যাচ্ছে। তাহলে সে স্বামীকে ফোন করবেনা কেন ? অর্ক বাজারে খোঁজ করেছে বউয়ের,তার সাক্ষী আছে। অর্কর দেরী দেখেও রাজী ফোন করবেনা! হতে পারে ঐ মহিলা রাজী নয়, রাজীর মতই কোনো মহিলাকে দেখেছে সোনি, আর অন্ধকারে যে কোনো গাঢ় রঙের গাড়িই কালো মনে হবে। মেয়েটি সেঅর্থে পাগল নয়, হয়ত অপরিণতমনস্ক হওয়ার দরুন শিশুর মতই কল্পনাপ্রবণ, রাজীর নিরুদ্দেশের খবর শুনে নিজের দেখাকে মিলিয়ে কাহিনী তৈরী করছে!

    সোনির কাছ থেকে এর বেশী কিছু খবর আশা না করেই ও ব্যাগের ভেতর হাতড়াচ্ছিল মেয়েটাকে কিছু দেবে বলে। কত টাকা দিলে কম দেওয়া হবেনা অথচ বাচ্চা মেয়ের কাছ থেকে কেউ নিয়ে নেবে সেরকম ভয় ও থাকবেনা এই ভাবতে ভাবতে অন্যমনস্ক ভাবেই প্রশ্ন করে ফেলে,
    -"গাড়ি কে চালাচ্ছিল তুই দেখেছিলি, সাহেবই ছিল না অন্য কেউ?"
    -"না, পরিস্কার দেখিনি, তবে সাবই হবে?"
    হাতটা ব্যাগেই রয়ে যায়, কী বলতে কী শুনল সে! রাই এবার আর অন্যমনস্ক না, একদম পুরো মনোযোগের সঙ্গে জোরেই বলে ওঠে,
    -"তুই পুলিশকে বলেছিস তো ঠিক দেখিসনি? এখন আবার বানিয়ে বলছিস? অন্য আর কেউ ছিল গাড়িতে?"
    -"পুলিশ তো আমায় শুধু গাড়ি কেমন ছিল পুছেছিল। গাড়িটা খুব জোরে বেরিয়ে গেল, মন্দিরের সামনে অত জোরে কেউ গাড়ি চালায় না, ঐ দিদির বরই প্রত্যেক সময় অমন জোরে গাড়ি ঘোরাত। আর কাউকে তো দেখিনি, গাড়ি পুরো বন্ধ ছিল, কাঁচ তোলা।"
    রাই আবার মন্দির থেকে জায়গাটা দেখল যেখানে সোনির কথা অনুযায়ী গাড়িটা থেমেছিল।
    রাইয়ের হাতে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট উঠে আসে। মেয়েটা স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনা, দুই হাতে ঘাগরার দুদিকের খুঁট ধরে নাচের ভঙ্গীতে অর্ধবৃত্তাকার ভাবে ঘুরে ঘুরে কথা বলছে। কথা শুনে পাগল মনে হয়না আবার যে খুব বুদ্ধিসুদ্ধি তাও বোধায় নয়, অপরিণত। খুঁটিয়ে দেখল রাই, বানিয়ে বলছে মনে হচ্ছে না। ও যা বলছে তা ও হয় দেখেছে নয় ও ভাবে ও দেখেছে।
    যতিন্দরকে ডেকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। আজ আর মিসেস থমাসের ওখানে যাওয়া হবেনা, যতিন্দর একটু হতাশ শুনে, রাই ওকে আশ্বস্ত করে কাল আসবে বলে, যতিন্দরকে ফোনে সময় জানিয়ে দেবে, ও মিসেস থমাসের সাথে কথাও বলে রাখতে পারবে সেই মত।
    গাড়ি বাড়ির পানে বাঁ দিকের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে একবার পিছন ফিরে কাঁচের মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে দেখল সোনি আবার ফিরে গেছে ঐ বালির ঢিবির পাশে, ওর ক্ষুদে সঙ্গীদের সাথে খেলায় যোগ দিয়েছে।
    ***************************
  • shrabani | 117.239.15.104 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১১:১৭496005
  • ********************
    সকাল থেকে নানান ঝামেলায় বড় সাহেবের কাছে যাবে ভেবেও যেতে পারেনি ভার্মা। সাহেবও দুদিন ছুটিতে ছিলেন, আজই অফিসে এসেছেন, ঘরে সকাল থেকেই কেউ না কেউ ছিল। বিকেল পাঁচটায় যখন দুজনেই একটু খালি তখন আর দেরী না করে সাহেবের ঘরে ঢুকল। উনি ফোনে ব্যস্ত ছিলেন, হাত দিয়ে সামনের চেয়ারটা দেখিয়ে বসতে বললেন। মি: চৌহানের আর বছরখানেক আছে রিটায়ারমেন্টের, দিল্লীতেই বাড়ি, তাই শেষদিকে বাড়ির কাছে পোস্টিং নিয়ে এসেছেন। ফোনে কথা বলা শেষ হতেই সহাস্যে তাকালেন ভার্মার দিকে, উনিও ডিপার্টমেন্টের অনেকের মতই নিজের অধস্তন এই অফিসারটিকে বেশ পছন্দ করেন,
    -"কী ভার্মা, কী খবর,কেমন চলছে কাজকর্ম? ভালো কথা,আমাকে বোধহয় কাল লখনৌ যেতে হবে,মিটিং আছে, ঐ সামনের মাসে সি এমের ভিজিট নিয়ে আলোচনা।"
    -"স্যর,আসলে সেই মহিলার কেসটা নিয়ে একটু আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে এলাম, মিসেস রাজেশ্বরী ব্যানার্জী।"
    এবার চৌহানের কপালে ভাঁজ পড়ল, হাসিটাও প্রায় মিলিয়ে গেল। উনি খুব একটা ঝুটঝামেলা পছন্দ করেননা, সারাদিন রিটায়ারমেন্ট পরবর্তী পরিকল্পনা নয়ত লখনৌ তে কর্তাভজনা করতেই ব্যস্ত থাকেন। তবে একটা ভালো ব্যাপার হল,এঁর অধীনে যেসব লোক কাজ করে তাদের খুব একটা ঘাঁটান না, মোটামুটি যতদুর সম্ভব ফ্রি হ্যান্ড দেন। শুরুতে কিছুকাল দিল্লী পুলিশে কাজ করেছেন তাই এদিকে চেনাশোনাও প্রচুর, পুলিশের ওপর মহলে ও রাজনৈতিক মহলেও খাতির ভালোই, তার ফলে ঝামেলা হলে রাগারাগি করলেও সামলে দিতে পারেন শেষ পর্যন্ত। একটু মৃদু তিরস্কারের সুরেই বললেন,
    -"ভার্মা, ঐ কেসটা নিয়ে তোমার এত মাথা ঘামাবারই বা কী দরকার। দিল্লী পুলিশও তো দেখছে, তুমি ওদের দরকার মত সাহায্য করবে, ব্যস। কোনো মহলের কোনো চাপ কিছু নেই, আর এমনিতেও ও সাদাসিধে কেস। হয় ঐ স্বামী ভদ্রলোকই খুনী, নয় কোনো প্রেমিকের কান্ড। একটু ধীরে সুস্থে খোঁজখবর করলে আর ঐ ভদ্রলোককে একটু কড়া করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বেরিয়ে আসবে। তা সেসব ওদেরই করতে দাও, তুমি এব্যাপারে এত মন না দিয়ে বরং সি এম ভিজিটের ব্যবস্থাপনায় আমার সঙ্গে থাক।"
    ভার্মা ঘাবড়ালো না, সে এতদিনে বড়সাহেবকে ভালো চিনে গেছে। কিছুক্ষণ সি এম ভিজিট ও সাহেবের আসন্ন লখনৌ যাত্রা নিয়ে কথা হল। মেজাজ একটু হালকা হয়েছে দেখে আস্তে কিন্তু বেশ দৃঢ় ভাবে কথাটা পাড়ল,
    -"স্যর, কেসটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগছে আমার, তাই নিজের মত করে একটু তদন্ত করতে চাই। আপনি তো দিল্লীর রাজপালের কথা শুনেছেন,সে কেমন লোক, কিছু করবে বলে তো মনে হয়না। আসলে আপনার আগে যে গুপ্তা সাহেব ছিলেন, চেনেন তো আপনি, তার জানাশোনা একজনের রিলেটিভ ঐ ভদ্রলোক। গুপ্তা সাহেব তাই একটু ভালো করে দেখতে বলেছেন কেসটা, বিনা অপরাধে যেন লোকটি শাস্তি না পায়, এই আর কী। অপরাধ প্রমাণ হয়ে গেলে অবশ্য কারুরই কিছু বলার থাকবেনা।"
    এবার চৌহান উঠে বসে,অভিনব গুপ্তাকে সে ভালো চেনে, ডিপার্টমেন্টে খুব সুনাম তার,
    -"তাই নাকি? তা তুমি আমাকে আগে বলনি কেন? অভিনবও তো আমাকে ফোন করতে পারত।"
    -"না, আসলে গুপ্তা সাহেব আপনাকে ফোন করবে বলেছিলেন, কিন্তু আমিই বারণ করেছিলাম, রাজপাল বা ঐ মহিলার মাবাবা যদি জানতে পেরে কিছু গোলমাল পাকায়, তাই গুপ্তা সাহেবের নামটা আনতে চাইনি, এমনিতেই রাজপাল হাত ধুয়ে মি: ব্যানার্জীর পিছনে পড়ে রয়েছে।"
    -"আমাকে বললে আর ওরা জানত কী করে! তা তুমি কী করতে চাও? নতুন কোনো সূত্র পেয়েছ কী? অভিনবের কেস যখন, দ্যাখো কী করতে পার। ঐ রাজপাল তো একটা মহা বদমাশ লোক, তবে ওর ওপরওয়ালারা সবাই ওর ওপর খুব চটা, তাই আজকাল বেশ বেকায়দায় আছে। বেশী তড়পালে আমার নাম করে চুপ করিয়ে দিও, আমি ওর বসেদের ভালো চিনি।"
    -"স্যর, আমি ঐ মহিলার মা বাবার সঙ্গে কথা বলতে চাই কিন্তু সে সুযোগই হচ্ছেনা। ওরা রাজপাল ছাড়া কারুর সঙ্গে কোনো কথাই বলছেনা। ওদের সঙ্গে কথা বলার কথা বলতে গেলেই রাজপাল ঘুরিয়ে দেয়, সে সব জেনে নিয়েছে বলে। ভদ্রলোক আগে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকুরে ছিল, শান্তিবিহারের এম এল এর সঙ্গে জানাশোনা, আমি ঠিক জোরও করতে পারছিনা। এখন আপনি যদি কিছু উপায় করতে পারেন। ওদের সেভাবে জেরা না করলে তো মেয়েটির স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক, প্রেমিক ইত্যাদি জানাই যাবেনা ঠিকমত। আর ওরা দুজন ছাড়া আর তো কেউ ছেলেটিকে দোষী বলছেওনা, সবাই বলছে খুব হ্যাপী কাপল।"

    চৌহান কিছুক্ষণ ভাবল, ঐ এম এল এর কথা শুনেই বোধহয় কিছুটা দ্বিধায়। ভার্মা ব্যাপারটা বুঝে মনে করিয়ে দেয়,
    -"স্যর, ওখানে তো অন্য পার্টির লোক।"
    সাহেব এবার একটু নড়ে চড়ে কর্তব্য স্থির করে বলে,
    -"ঠিক আছে, তুমি চলে যাও। আমি রাজপালের বসের সঙ্গে কথা বলে নেব, রাজপাল এব্যাপারে কিছু বলতে এলে ওকে ওর বসের সঙ্গে কথা বলতে বলে দিও। তুমি শিওর ওদের সঙ্গে কথা বললে কিছু পাওয়া যাবে?"
    এবার ভার্মা সিরিয়াস,
    -"স্যর, এই কেসে কিছু একটা আছে যেটা আমরা দেখতে পাচ্ছিনা, কিছু একটা মিসিং লিঙ্ক আমরা মিস করছি এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।"
    -"দ্যাখ, আর অভিনবকে বোলো আমাকে একবার ফোন করতে, ওর সাথে আমার দরকার আছে।"

    ভার্মা বেরিয়ে এসে রাইকে ফোন লাগাল,
    -"ম্যাডাম, বড় সাহেবের সঙ্গে কথা হয়ে গেছে, আমি ভাবছি দেরি না করে কাল সকালেই মিসেস ব্যানার্জীর মা বাবার সঙ্গে দেখা করব। আপনার কাল অফিস আছে তো, তা পারবেন কী যেতে?"
    ওপারে রাইয়ের গলাটা একটু কেমন শোনাল, অন্যরকম,
    -"অফিস আছে কিন্তু যেতে হবেই ভার্মাজী। ওদের সঙ্গে দেখা করাটা এখন খুব জরুরী হয়ে পড়েছে।"
    ভার্মার কেমন লাগল, কিছু একটা হয়েছে, কী হয়েছে!
    -"কী ব্যাপার বলুন তো ম্যাডাম। আপনার সঙ্গে তো পরশু কথা হল, ঐ মন্দিরের মেয়েটির কথা নিয়ে। তারপরে আর কি কিছু হয়েছে?"
    -"আমি কালও শান্তিবিহারে গিয়েছিলাম যতিন্দরের সাথে একজন মিসেস থমাসের সঙ্গে দেখা করতে। আপনাকে বললাম না সেদিন রাজীর এক প্রতিবেশীর খোঁজ পেয়েছি! উনি রাজীরা যে অ্যাপার্টমেন্টে থাকত সেখানেই থাকেন। রাজীর ঠাকুমার সঙ্গে ওনার বন্ধুত্ব ছিল।"
    রাই একবার বলেছিল বটে কিন্তু সেদিন ভার্মা অত খেয়াল করে শোনেনি, বরং রাজেশ্বরীর বয়ফ্রেন্ড বা কাজিন নিয়ে বেশী চিন্তা হয়েছিল, সেখান থেকেই ওর বাবা মায়ের সঙ্গে দেখা করাটা একান্ত জরুরী মনে হয়েছিল।
    এছাড়া শান্তিবিহারের দিকটা রাজপালই দেখছে, সেরকম কিছু বলেনি কখনো। রাজীর বাবা প্রায় বছর দুয়েক হল বাড়ি বিক্রি করে চলে গেছে, এটা জানত। যদ্দুর জানে আশেপাশের প্রতিবেশীরা কেউ কিছু জানে বা রাজীকে দেখেছে কিনা ঐ রাতে সেসব খোঁজখবর শান্তিবিহারের পুলিশ করেছে।
    -"হ্যাঁ বলেছিলেন বটে, তবে আমি খুব বেশী গুরুত্ব দিই নি, সরি ম্যাডাম?"
    -"আরে না, আমিও তো তেমন গুরুত্ব দিইনি, তাই সেভাবে বলিনি আপনাকে। যতিন্দর বলেছিল ভদ্রমহিলা থানায় গিয়েছিলেন, কিন্তু আপনার রাজপাল বা অন্যরা ওঁকে পাত্তা দেননি, অথচ উনি ওখানকার খুব শ্রদ্ধেয় একজন ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন স্কুলটীচার। আমি ভেবেছিলাম রাজীর মা বাবার সঙ্গে তো দেখা করা যাচ্ছেনা, তাই এনার কাছেই ওদের বাড়ীর দিক সম্বন্ধে একটু খবর যদি পাই।"
    ভার্মা অবাক, আগে জানলে রাজপালের এ কথাটা বড়সাহেবকে বলা যেত। কিন্তু ঐ ভদ্রমহিলা এমন কী বললেন রাই ম্যাডামকে!
    -"তা উনি কী বললেন ম্যাডাম? নতুন কিছু, দরকারী খবর?"
    -"ফোনে বলবনা ভার্মাজী, বুঝিয়ে বলা যাবেনা সবকথা। কাল আমি ছুটি নিচ্ছি, আপনি আমার ওখানে আসুন তারপর প্রোগ্রাম ঠিক করা যাবে। তবে একটা কথা, ওদের কোনোরকম আগে থেকে খবর দেবেননা বা ফোন করবেন না, আমরা হঠাৎ করে গিয়ে পড়ব। আর একটা ব্যাপার, যদি আমার পরিচয় জানতে চায় তো বলবেন অর্কদের আত্মীয়, আমি আপনার সঙ্গে গেছি ওদের সাথে রাজীর শেষকৃত্য নিয়ে কথা বলতে, বডি কারা নেবে ইত্যাদি। আমি অঞ্জনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে নিচ্ছি, ওকে বুঝিয়ে দেব। আপনাকে আমি অফিস থেকে বেরিয়েই ফোন করতাম, ভালই হল আপনার ফোন এসে গেল।"

    রাই ফোন রেখে দিল, এদিকে ভার্মা পুরো হাঁ। নিজের অফিসের দিকে যেতে যেতে রাই ম্যাডামের কথাগুলোই ভাবতে লাগল। কিছু গুরুতর ব্যাপারের হদিশ পাওয়া গেছে, রাই ম্যাডামের মত শান্ত চুপচাপ মহিলাও বেশ উত্তেজিত হয়েছেন তা উনি যতই গলায় স্থির ভাব ফোটানোর চেষ্টা করুন না কেন!
    *********************
  • shrabani | 117.239.15.104 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১১:২৬496006
  • ****************************
    সি আর পার্কের এই দিকটা একটু ভেতরে, একেবারে শেষের দিকে। নির্জন প্রায় সরু রাস্তার ওপরে দোতলা বাড়ি। ভার্মা একবার ঠিকানাটা মিলিয়ে নিল, গেটের ওপর লেটারবক্স দেখে। একঢালা বাড়ি, একতলার প্রবেশপথ সামনের দিকে যেখানে প্রধান প্রবেশ দ্বার, পাশ দিয়ে আরও একটা গেট, সেখান থেকে সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলার ল্যান্ডিং ও তার উপরে ছাদে। রাই অর্কর কাছে শুনেছিল যে ছাদের ওপর বর্ষাতির দুটো ঘর রাজীর মার থাকার জন্য রাখা। বাড়িটায় বাগান বলে কিছু নেই, একদিকে যতটা খালি জায়গা আছে সেটা নিয়ে গ্যারাজ বানানো, গ্যারাজের ওপরে একখানা ঘর, জানালা খোলা। আর কোনোদিকে কিছু না দেখতে পেয়ে রাই ধরে নিল ঐ গ্যারাজের উপরের ঘরেই এবাড়ির যে কেয়ারটেকার সে বা তার পরিবার থাকে। রাইয়েরা গেট ঠেলে ঢুকতেই গ্যারাজের ওপরের ঘরের জানালায় একজোড়া চোখ দেখা গেল। ওরা কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকল, ঘরের ভেতরের মানুষটি বাইরে এলনা কিন্তু মনে হয় জানালা থেকেও সরলনা। এরা যেই দোতলা পেরিয়ে ছাদের সিঁড়ির দিকে পা বাড়িয়েছে, একজন ঐ ঘরটা থেকে বেরিয়ে এসে লাগোয়া এক চিলতে বারান্দা কাম ল্যান্ডিং এর মত জায়গায় যেখান থেকে গ্যারাজের ওপরে যাবার ঘোরানো লোহার সিঁড়ি নীচে নেমে এসেছে সেখানে দাঁড়ালো।
    -"কাকে চাই, ওপরে কোথায় যাচ্ছেন?"
    বয়স্ক লোকটি এককালে বেশ লম্বাই ছিল, এখন বয়সের ভারে ইষৎ নুয়ে আছে তবে এমনিতে বেশ সবল, পরনে খাকি বারমুডা আর একটা ময়লা কুর্তা। লোকটির মুখ দেখে রাইয়ের মনে হল এ পাহাড়ের লোক।
    ভার্মা পুলিশী চালে উত্তর দিল,
    -"আমি থানা থেকে আসছি, মি: গিরীশের সাথে দরকার আছে।"
    এই প্রথম রাই একজনকে দেখল, একটি সাধারণ লোক যে পুলিশের নামে ঘাবড়াল না, উল্টে বেশ ডাঁটেই বলল,
    -"আপনি ফোন করে এসেছেন? আমাকে তো ওরা বলেনি কেউ আসবে বলে। আপনি কোথাকার পুলিশ?" শেষ কথাটা বেশ একটু তাচ্ছিল্যের সাথেই বলল রাইকে আপদমস্তক দেখতে দেখতে। ভার্মা প্লেন ড্রেসে আছে তার ওপর সঙ্গে রাই, প্রশ্ন আসারই কথা কিন্তু সেটা এর মত কারুর কাছ থেকে আসবে রাই আশা করেনি।
    ভার্মা অবশ্য জাত পুলিশ, কোনো কিছুতেই বিচলিত না হয়ে নিজের হাতে কনট্রোল তুলে নিতে ভালোই পারে। সোজা উত্তর না দিয়ে, গর্জন করে বলল,
    -"তুই কে, এখানে কী করিস? বাড়িতে পুলিশ কেন আসে, খুন হলে পুলিশ আসবে না কী ব্যান্ড পার্টি আসবে, হাঁ? পুলিশকে খবর দিয়ে চিঠি লিখে আসতে হবে, তাই না? তা এখনি দিচ্ছি খবর, যা গিয়ে খবর দে বাবুকে। তারপরে তোদের সবার খবর নেব আমি।"
    রাই তো ভার্মার বুলি শুনে অবাক, লোকটার কিন্তু খুব কিছু হেলদোল নেই, সেও জবাবে সমান তেজে কিছু একটা বলতে যাবে এমন সময় ছাদের ঢোকার মুখে সরু কোলাপসিবলের ঐদিকে একজন লোক এসে দাঁড়াল,
    -"কী হয়েছে নেকরাম? কারা এসেছে?"
    রাইয়ের মনে হল এ নিশচয়ই রাজীর বাবা। নেকরামের দৃষ্টি অনুসরণ করে ভদ্রলোকের চোখ গেল ভার্মার দিকে, তার আড়ালে ছোটখাটো রাইকে বোধহয় খেয়াল করেনা। গেট খুলতে খুলতে জিজ্ঞেস করে,
    -"একী, ভার্মা আপনি? কী ব্যাপার?"
    ভার্মা ওপরে উঠতে উঠতে বলে,
    -"আপনার সঙ্গে আর ম্যাডামের সঙ্গে একটু কথা ছিল, চলুন ভেতরে গিয়ে বলছি।"
    রাই ভার্মাকে অনুসরণ করতে করতে নেকরামের দিকে তাকায়, সে তখন তার ঘরে ঢুকছে, খোলা দরজা দিয়ে ঘরের ভেতরটা দেখল রাই, বেশ বড় ঘর, সাজানো, এক চিলতে রান্নার জায়গা, একটা দরজা দেখা যাচ্ছে, হয়ত বাথরুমের। সাধারন কেয়ারটেকারের ঘরের মত খুপরি নোংরা অন্ধকার ঘর নয়। নেকরাম কী একাই থাকে? লোকটাকে বেশ জাঁদরেল মনে হল, ও নিশচয়ই রাজীকে ভালো চিনত, রাজীর কাছে এবাড়ির চাবিও তো থাকত।
  • shrabani | 117.239.15.104 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১১:৪৪496007
  • দুটো পাশাপাশি ঘর আর কিছুটা ঢাকা বারান্দা মত। সেখানে কতগুলো বেতের চেয়ার টেবিল ছড়ানো রয়েছে, সবুজ রং করা, একদিকে রান্না করার জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম আছে, সেখানে গ্যাস স্টোভ আর কিছু বাসন পত্র আছে। আরেকদিকে একটি সিঙ্ক আর ছোটো ফ্রিজ। বসার জায়গাটায় একটু ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব, পাশের বাড়ির আম গাছ আর সুপারি গাছের ছায়া পড়ে কিছুটা আলো আঁধারির সৃষ্টি করেছে। রাজীর বাবা গিরীশের মুখের ভাব বেশ অপ্রসন্ন, বোঝা গেল সে একেবারেই খুশী হয়নি ওদের দেখে, বসতেও বলল না। ভার্মা অবশ্য নিজেই বসে পড়ল চেয়ারে, দেখাদেখি রাইও। গিরীশ ভার্মার দিকে তাকিয়ে বেশ কড়াভাবে বলল,
    -"আমার স্ত্রী খুবই আপসেট, বিছানা থেকে উঠছেনা। ওর সঙ্গে কথা বলা কি খুব দরকার? আমরা তো যা বলার শান্তিবিহার থানায় বলেছি।"
    ভার্মাও জবাবে গলাটাকে মধুর কঠিন করে বলল,
    -"দরকার না হলে কি আর এসময় এসে আপনাদের বিরক্ত করি সাব? আমি আমাদের বড় সাহেবের কথায় এসেছি, ওনার কথা হয়েছে দিল্লী পুলিশের বড় কর্তার সঙ্গে। শান্তিবিহারের কাজে তারা খুশী নয়, আমাদের আরও একটু সক্রিয় হতে ওনারাই অনুরোধ করেছেন। আপনি রাজপালকে যা বলেছেন তারপরেও কিছু ডেভেলপমেন্ট হয়েছে সেসব নিয়ে আমি কথা বলতে এসেছি। তা ম্যাডাম অসুস্থ হলে আপনাদের যদি আপত্তি না থাকে আমরা ঘরে গিয়ে কথা বলতে পারি ওনার সঙ্গে, এই ম্যাডামও থাকবেন সঙ্গে।"

    ভার্মা ইচ্ছে করেই ভাবে ভঙ্গীতে বোঝাতে চাইল সেই এখন এ কেসের মুখ্য তদন্তকারী অফিসার, রাজপাল নয়। টোটকায় কাজ হল, ওর কথা শুনে গিরীশের তেরিয়া ভাবটা কমল মনে হল, একটু বিভ্রান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,
    -"দেখি জিজ্ঞেস করে, যদি উঠে আসতে পারে একবার"।
    ভার্মা রাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসল, রাইও, ভালোকথা ভালোভাবে বললে কেউ আজকাল পাত্তাই দেয়না!
    কয়েক সেকেন্ডেই ফিরে এসে গিরীশ জানাল ওদের ওর স্ত্রী শুভা আসছে তৈরী হয়ে। কেউ কোনো কথা বলছিল না, সবাই অপেক্ষায়। রাই ভালো করে দেখছিল রাজীর বাবাকে। বয়স হয়েছে কিন্তু এখনও বেশ ভালো দেখতে ভদ্রলোককে, হ্যান্ডসাম বৃদ্ধ। লম্বা টান টান চেহারা, রঙ টা মাজা মাজা, মাথার চুল সব সাদা, মুখচোখ কাটা কাটা, বয়সকালে মনে হয় খুবই সুপুরুষ ছিলেন। রাজীর মুখের সঙ্গে বেশ মিল আছে।
    রাই উদগ্রীব হয়ে বসে রইল ওর স্ত্রীকে দেখার জন্যে। মিনিট দুয়েক পরে যে ভদ্রমহিলা বেরিয়ে এলেন তাকে দেখে কিন্তু ও হতাশ হল, তিনি একেবারেই সে অর্থে সুন্দরী নন। শুভা এসে ওদের দুজনকে নমস্কার করে একটা চেয়ার টেনে বসল। মুখটা ঈষৎ বিষন্ন দেখালেও এমনি চলাফেরা বা চেহারায় অসুস্থতা বা শোকের তেমন লক্ষণ নেই। প্রথম দেখায় সাধারণ লাগলেও রাই ভালো করে দেখে বুঝল ভদ্রমহিলা সব মিলিয়ে কিন্তু টানটান স্মার্ট, বরং ওর স্বামী অত সুপুরুষ হয়েও একটু শিথিল আলুথালু ধরণের, তড়বড় করে কথা বলে। শুভার পরণে বেশ সুন্দর চওড়া পাড়ের শাড়ি, মানানসই অল্প গহনা, চওড়া কপালে বড় একটা টিপ, মুখে হালকা প্রসাধন।
    একটা ব্যাপার হল স্বামী স্ত্রী কেউই রাইয়ের উপস্থিতি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলছেনা অথবা তার পরিচয় জানতে চাইছেনা, ভার্মাও আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না। ওদের নজর শুধুই ভার্মার দিকে। ভার্মা একবার রাইয়ের দিকে তাকিয়ে যেন সম্মতি নিয়ে শুরু করল,
    -"সরি, আপনি অসুস্থ তাও আপনাদের বিরক্ত করতে হচ্ছে। আসলে আমরা তদন্তের মাঝে মিসেস ব্যানার্জীর স্কুলের বন্ধুদের কাছে জানলাম, উনি ওনার এক বিদেশের কাজিনের সাথে খুব ক্লোজ ছিলেন, প্রায় প্রতিদিনই তার সাথে চ্যাট হত ওনার। এই কাজিনের সঙ্গে আমরা কথা বলতে চাই। ওর যোগাযোগের ঠিকানা ফোন নাম্বারটা চাই।"
    গিরীশ ও শুভা দুজনেই পরস্পরের দিকে দেখে একবার বিস্ময়ে। তারপর শুভা বলে ওঠে,
    -"বিদেশের কাজিন? বিদেশে কোনো কাজিন নেই তো।"
    তারপরেই আবার কি ভেবে বলে ওঠে,
    -"অবশ্য আমার বড় ভাই থাকে বিদেশে, ওর স্ত্রী বিদেশী, ওদের এক মেয়ে আছে। কিন্তু তাদের সাথে রাজীর তেমন কোনো যোগাযোগ ছিলনা, আমারই যোগাযোগ খুব অল্প। ভাই আসে দেশে কাজেকম্মে, ওর বৌ মেয়ে তো আসেও না।"
    ভার্মা এবার গিরীশের দিকে তাকায়,
    -"আপনার মেয়ে তার বন্ধুদের বলেছে সে কাজিনের সাথে চ্যাট করে, আর এই কাজিন একজন পুরুষ। কে হতে পারে বলে মনে হয় আপনার? আপনার ওদিকের কোনো আত্মীয়স্বজন?"
    গিরীশ একবার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে নেয়, তারপর বলে,
    -"সেরকম কোনো কাজিন নেই রাজীর। আমি এক ছেলে, আমার বাবাও এক ছেলে ছিলেন। আমি অনেককাল দেশে ছিলাম না, আমার ওদিকে আত্মীয়স্বজন, আমার মায়ের তরফের কিছু আছে, তাদের মধ্যে কেউ রাজীর বয়সী বা কাছাকাছি বয়সের নেই, সবাই হয় অনেক বড় বা বেশ ছোট। রাজীও ওদিকের সবাইকে সেরকম চেনেনা, ঘনিষ্ঠ হওয়া তো দুরের কথা। ওতো আমরা ওখানে সেটল করার পর কয়েকবার মাত্র গেছে, সবার সঙ্গে একটু আধটু পরিচয় হয়েছে। এরকম কোনো কাজিনের কথা আমরা জানিনা, ওর বন্ধুদের কিছু ভুল হচ্ছে।"
    শুভাও ঘাড় নেড়ে সায় দিল স্বামীর কথায়।
    এবার রাই মুখ খোলে।ধীরে, শান্তভাবে,গিরীশের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে,
    -"আপনার কেউ নেই, আপনার স্ত্রীরও কেউ ছিলনা, ঠিক জানেন আপনি?"
    গিরীশ একটু বিরক্ত, এই প্রথম বোধহয় ভার্মার সঙ্গী মহিলাকে খেয়াল করল, এটা আবার কে বটে!
    -"আগেই শুনলেন তো, শুভার তরফেও সেরকম কেউ নেই।"
    -"তাতো শুনলাম, কিন্তু আমি যে আপনার প্রথম স্ত্রী অর্থাৎ রাজীর মায়ের তরফের কথা জিজ্ঞেস করছি মি: গিরীশ।"
  • shrabani | 117.239.15.104 | ০৭ নভেম্বর ২০১১ ১২:১১496008
  • গিরীশ আর শুভা দুজনেই এ কথা শুনে ভীষণ চমকে কেমন একটা হয়ে গেল, মুখ দেখে মনে হল যেন কোনো বিস্ফোরণ ঘটেছে বা মাথায় বাজ পড়েছে।
    রাই আর ভার্মা চুপ করে একদৃষ্টে ওদের প্রতিক্রিয়া দেখতে থাকে। শুভাই প্রথম সামলে নিয়ে মুখ খোলে, চোখটোখ তুলে একখানা নাটকীয় ভঙ্গী করে,
    -"না, আমিই রাজীর মা। রাজী আমারই মেয়ে। আপনারা এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন, কেন এসেছেন আপনারা, কী মতলবে?"
    বলে আঁচলে মুখ ঢেকে কান্নার ভাব করে বসে রইল। গিরীশের মুখটা প্রথমে ছাইয়ের মত ফ্যাকাশে হয়ে গিয়েছিল, স্ত্রীর কথা শুনে সম্বিত ফিরে পেয়ে একেবারে বেগুনি হয়ে উঠল। চেয়ার থেকে উঠে শুভার পাশে গিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতে দিতে ভার্মার দিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বলল,
    -"ইনি কে? এসব কী আজেবাজে কথা বলছেন? রাজী আমার আর শুভার মেয়ে। আপনারা খোঁজ নিন শান্তিবিহারে, সবাই সাক্ষী দেবে। এসব আজেবাজে কাহিনী বানিয়ে আপনি আমাদের ফাঁসাতে এসেছেন অর্কর হয়ে? ওকে এইভাবে বাঁচাবেন ভেবেছেন? আমি ওকে দেখে নেব, ঐ মেরেছে আমার মেয়েকে। আমার মেয়ে কার সঙ্গে চ্যাট করছিল তা তদন্ত করেছেন, অর্কর কারু সঙ্গে কিছু ছিল কিনা সেসব কেন দেখছেন না আপনারা?"
    ভার্মাও এবার নিজের মূর্তি ধরল। গিরীশের থেকেও জোর গলায় বলল,
    -"আপনারা শান্ত হয়ে বসুন। পুলিশের সঙ্গে বেশী চালাকি করার চেষ্টা করবেন না, লাভ হবেনা। আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমরা সব খবর নিয়েই এসেছি।"
    শুভার মুখের আঁচল সরে গেছে, চোখে জলের জায়গায় ভয়ের ছায়া। রাই একটু সরে গিয়ে পুরো ব্যাপারটা দেখতে থাকে দর্শকের মত। তার কাজ শেষ, এসব জায়গায় ভার্মাই উপযুক্ত। গিরীশ উত্তেজিত হয়ে আবার কী বলতে যাবে, ভার্মা হাত তুলে থামিয়ে দেয়,
    -"মি: গিরীশ, রাজেশ্বরী আপনার প্রথমা স্ত্রীর মেয়ে, ইনি আপনার দ্বিতীয়া স্ত্রী, একথাটা আপনি আগে বলেননি কেন? শুধু তাই নয়, মি: ব্যানার্জী বা তার বাড়ির কেউও জানেনা একথা, তাদেরও কিছু বলেননি আপনি,। কেন?
    শুভা চুপ করে আছে, গিরীশ এখনও তড়পাচ্ছে,
    -"সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। রাজীকে শুভা জন্ম না দিতে পারে কিন্তু ঐ রাজীর মা, ছোট থেকে ঐ ওকে এতবড় করেছে, আর আজ মেয়ের অকাল মৃত্যুতে কিরকম আপসেট সেটা তো আপনারা দেখছেনই! আমার প্রথম স্ত্রী যখন মারা যায় তখন রাজী চার মাসের, রাজী শুভাকেই মা বলে জেনেছে চিরদিন। আমরা তাকেও কখনো কিছু বলিনি এ নিয়ে, তাই অর্কদেরও বলার দরকার আছে মনে করিনি। কিন্তু তার সঙ্গে এ কেসের কী সম্বন্ধ?"
    এবার রাই আর চুপ থাকতে পারেনা,
    -"আপনার প্রথম স্ত্রী মারা গেছিলেন, আপনি শিওর? উনি নিখোঁজ হয়ে যাননি তো?"
    গিরীশ হতবাক, রাইয়ের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন কিছু বলতেও ভুলে যায়। এবার ভার্মা বলে,
    -"আপনি তো সেইসময় সবাইকে বলেছিলেন আপনার স্ত্রী বাজারের থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, আর ফেরেনি। ঠিক আপনার মেয়ে রাজেশ্বরীর মত। ব্যাপারটা কী হয়েছিল আসলে বলুন তো মি: গিরীশ?"

    গিরীশ এবার হাল ছেড়ে দিয়ে মাথা নীচু করে বসে পড়ে, কিছুই বলেনা। শুভারও মাথা নীচু, এদের দিকে তাকায়ও না, জড়ভরতের মত বসে থাকে একভাবে, নিস্পন্দ। ভার্মা আবার বলে,
    -"আমরা অপেক্ষা করছি, আপনি আমাদের আপনার স্ত্রীর কথা সব বলুন। কবে হয়েছিল, কোথায়, সব কিছু। আপনি না বললে যেভাবে আপনার প্রথম স্ত্রীর কথা জেনেছি, বাকীটুকুও জেনে নেব কোনো না কোনো ভাবে, তাই কিছু না লুকিয়ে সব বলুন।"
    গিরীশ খুব যেন কষ্ট হচ্ছে এভাবে মাথাটা তুলল।
    -"আমরা তখন ফিরোজগাঁও তে থাকতাম। আমি বছরখানেক হয়েছে দিল্লী এসেছি চাকরি নিয়ে। রাজী সবে হয়েছে। তাকে বাড়িতে আমার মায়ের কাছে রেখে আমার স্ত্রী নির্মলা বাজারে গিয়েছিল বিকেলে, একাই যেত বাজারে মাসকাবারী দোকান করতে। অনেকসময় রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে আসত, কখনো আমি অফিস থেকে ফেরার পথে স্কুটারে তুলে নিয়ে আসতাম। সেদিন আমি ফেরার পথে যেখানে ও দাঁড়াতো সেখানে দেখলাম ও নেই। বাড়ি এসে শুনি ও ফেরেনি। তখন আবার বেরিয়ে বাজারে খুঁজলাম, চতুর্দিকে খুঁজলাম, ফিরোজগাঁও ছোট জায়গা, কোথাও পেলাম না। নির্মলা এদিকের রাস্তাঘাট খুব একটা চিনতনা, ওর সেই মাস তিনেক হয়েছিল এদেশে এসে। পরদিন লোক্যাল থানায় খবর দিলাম, তারাও খুঁজল অনেক। পাওয়া গেলনা।"
    -"তাহলে উনি মারা গেছেন এমন কোনো প্রমাণ আপনার কাছে নেই?"
    গিরীশ রাইয়ের এ প্রশ্নে ঘাড় নাড়ল,
    -"তা নেই, তবে আর কী হবে? বেঁচে থাকলে তো খবর পেতাম।"
    -"কিন্তু কীভাবে? কতদিন খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল? পুলিশ কিছুই বার করতে পারেনি?"
    -"না:। আমি তখন বাচ্চা মেয়ে আর বুড়ো মাকে নিয়ে হিমশিম। আত্মীয়স্বজন কেউ নেই কাছে। একবার ভেবেছিলাম চাকরি ছেড়ে চলে যাব। শুভার ছোট দাদা আমার কলীগ ছিল, ও খুব সাহায্য করেছিল। মা রাজীকে নিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিল, সেখানেই ছিল রাজী কিছুদিন। পরে শুভা আর আমি ওকে নিয়ে আসি এখানে, শান্তিবিহারের বাড়ি হয়, সংসারে শান্তি আসে। আজ এতদিন পরে আবার সব গোলমাল হয়ে গেল।"
    -"রাজী কিছুই জানত না এসব কথা?"
    -"না, আমরা কেউ কিছু বলবনা ঠিক করেছিলাম, আমরা চাইনি ওর জীবনে এটা নিয়ে কোনো গোলযোগের সৃষ্টি হোক। শান্তিবিহার নতুন জায়গা, সেখানে সবাই রাজীকে শুভার কোলেই দেখেছে।"

    রাই ভাবল সেই শান্তিবিহারের মিসেস থমাসই জানত, রাজীর ঠাকুমা তাকে সব বলেছে।আরও কে কে জানে কেজানে!
    -"আপনার অফিসে কেউ জানতনা, এতবড় ঘটনা? সেরকম হলে অর্কর বাবারও তো জানার কথা, উনি তো আপনার সাথে একই অফিসে ছিলেন।"
    -"অর্কর বাবার সঙ্গে আমি অন্যজায়গায় কাজ করি এর পরে, অন্য অফিসে বদলি হয়ে। সেইসময় আমি নতুন চাকরি পেয়েছি, অফিসে কারুকে কিছু বলিনি, শুধু বস জানতেন। তিনি কাউকে বলেননি, বয়স্ক ছিলেন, কিছুদিন পরেই অবসর নেন, অনেকদিন হল মারাও গেছেন। শুভার দাদা ছাড়া ঐ অফিসে কারো সাথে কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিলনা আমার, নতুন ছিলাম, ভাষার সমস্যা ছিল।"
    ভার্মা রাইয়ের দিকে তাকালো, আর কী জিজ্ঞাস্য আছে। রাই গিরীশকেই জিজ্ঞেস করে,
    -"তাহলে আপনার প্রথমা স্ত্রীর দিকেও রাজীর কোনো কাজিন নেই?"
    -"তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিলনা। নির্মলার এক ভাই ছিল বটে, কিন্তু তার ছেলেমেয়ে কী আমি জানিনা। আর রাজী যখন নির্মলার কথাই জানত না তখন সেই কাজিনদের কথাই বা জানবে কী করে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগই বা হবে কোথায়!"
    -"ওনার ভাই বাবা এরা খোঁজ করেনি, এখানে আসেনি?
    গিরীশ এবার একটু অসহিষ্ণু ভাব দেখায়,
    -"এইসব পুরোনো কথা এখন উঠছে কেন? আমার মেয়ের খুনের কিনারা না করে আপনারা সাতাশ বছর আগে কী ঘটেছিল তা নিয়ে এত পড়ছেন কেন? আপনারা অর্কর দিকটা ভালো করে দেখুন, ওর নিশ্চয়ই কোনো মোটিভ আছে। ঐ মেরেছে রাজীকে।"
    এবার ভার্মা বলে,
    -"আমরা কী করছি না করছি সেটা তো আপনাকে বলা যাবেনা, আপনি শুধু আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিন ঠিকঠাক। আপনার প্রথমা স্ত্রীর বাবা ভাই এরা এসেছিলেন?"
    -হ্যাঁ, এসেছিলেন। কেস দিল্লী পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে গেছিল, কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। পুলিশেরও ধারণা ছিল যে নির্মলা মারা গিয়েছে।"
    রাই জিজ্ঞেস করে,
    -"ওদের বাড়ি কোথায় তা তো আপনার জানা আছে নিশ্চয়ই, তাদের ঠিকানাটা?"
    গিরীশ বেশ অনিচ্ছার সাথে বলে,
    -"ক্যানানোর এ। ঠিকানা মনে নেই। তবে সে বাড়িতে কেউ নেই শুনেছি, নির্মলার বাবা মা অনেকদিন মারা গেছে, ভাই ওখানে নেই।"
    -"ভাই কোথায় আছে?"
    -"ঠিক জানিনা তবে শুনেছি গাল্ফে।"
    রাই ভার্মার দিকে তাকায়। রাজীর মামা তাহলে বিদেশে থাকে।
    রাই একটু গল্পের সুরে গিরীশ আর শুভা দুজনের দিকেই বলে,
    -"আচ্ছা আপনারা যে অর্ককে সন্দেহ করছেন তার কোনো ভিত্তি আছে না এমনিই? রাজীর মৃত্যুতে ওর কী লাভ মনে হয় আপনাদের?"
    গিরীশ আবার উত্তেজিত,
    -"ওতো সঙ্গে ছিল রাজীর, কয়েক মিনিটে রাজী হারিয়ে গেল। এ সম্ভবই নয়, আমরা ঐ এলাকায় থাকতাম, ওখানে ভরা বাজার থেকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে কোনোদিন শুনিনি। লাভ জানিনা, সে আপনারা খুঁজে বার করুন।"
    রাই ওর উত্তেজনা দেখে মৃদু হেসে শুভাকে বলে,
    -"আচ্ছা, রাজীর গয়নাগাঁটি তো সব আপনার কাছে, তাই না?"
    এতক্ষনে শুভার কথা ফোটে, বেশ একটু তীব্র স্বরে বলে,
    -"হ্যাঁ, ওর লকার নেওয়া হয়নি তাই আমার এখানের লকারেই ছিল। আমি তো এখানে থাকিনা, রাজীই লকার অপারেট করত। অর্করা কী রাজীর গয়না চায়? চাইলে দিয়ে দেব, নিয়ে যাক ওরা, মেয়েই রইলনা, তার গয়না নিয়ে আমরা কী করব!"

    রাই পাত্তা দিলনা,
    -"না কটা গয়নার জন্যে কী ওরকম একটা ছেলে বৌকে খুন করতে পারে, বিশেষ করে গয়না যখন আপনার লকারে, সেগুলো উদ্ধার করাও শক্ত যদি আপনি হাতে করে না দেন! আমি অর্কর লাভ বুঝতে চেষ্টা করছি। আচ্ছা, রাজীর নামে কোনো সম্পত্তি ছিলনা, বিষয়?"
    স্বামী স্ত্রীর মুখ আবার ছাই পানা। ওদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে চলতে চলতে রাই অজান্তেই বোধহয় কোনো ব্যথার জায়গায় হাত দিয়ে দিয়েছে। ভার্মাও ওদের অবস্থা দেখে কৌতূহলী, রাই প্রশ্ন করে উন্মুখ ভাবে তাকিয়ে আছে। গিরীশ যেন বুঝে নেয় যে জবাব না দিলে রেহাই নেই, তাই আবার বেশ অনিচ্ছাপূর্বক বলে,
    -"তেমন কিছু নেই, আমরা সাধারণ মধ্যবিত্ত, চাকুরীজিবী, দেশে অল্প জমিজমা আছে। রাজীর ঠাকুমা মানে আমার মা বোধহয় কিছু জমি রাজীর নামে করে গেছেন।"
    ভার্মা এবার স্পষ্টতই ধমক দেয়,
    -"বোধহয় মানে, আপনি নিশ্চিত জানেন না?"
    ধমক খেয়ে গিরীশ বলে,
    -"হ্যাঁ, মানে দু একটা জমি রাজীর নামে আছে। "
    এবার রাই বলে,
    -"রাজীর মৃত্যুতে সে সম্পত্তি অর্কর হওয়া উচিৎ যদি না রাজী বা ওর ঠাকুমা অন্য কিছু ব্যবস্থা করে যায়। কিন্তু ঐ অল্প জমির জন্য খুন করে কেউ! সে হলে অর্কর রাজীর মৃত্যুতে পয়সাকড়ির লাভ বিশেষ দেখা যাচ্ছেনা।"
    গিরীশ ওর কথাটা লুফে নিয়ে বলে,
    -" নাই তো। ওর নিশ্চয়ই কোনো অন্য অ্যাফেয়ার আছে, আপনারা ওকে লক আপে পুরে জিজ্ঞাসাবাদ করুন, ঠিক বলে দেবে। পুলিশ তো ওকে কিছুই করছেনা, উল্টে আমাদের বিরক্ত করছে।"
    ভার্মা বলে,
    -"অল্প হোক আর যাই হোক ম্যাডাম, এই সম্পত্তির ব্যাপারটা জানতে হবে ঠিক করে। রাজেশ্বরীর কোনো উইলটুইল আছে কিনা। মি: গিরীশ, আপনাদের কেরালায় উকিল কে? তার নামঠিকানা দিন আমাকে।"
    গিরীশ এবার কোনো আপত্তি না করে উকিলের নাম ঠিকানা লিখে দেয়।
    ভার্মা আর রাই এবার উঠে পড়ে, অনেক কাজ আছে তাদের।
    -"আপনারা আমাদের না বলে এখান থেকে যাবেন না। আমরা আরও কিছু জানার হলে ভবিষ্যতেও আসতে পারি।" সিঁড়ির মুখে এসে রাইয়ের কী মনে হতে বলল,
    -"রাজীর বডি দু এক দিনের মধ্যে ছেড়ে দেবে পুলিশ। ভালো হয় আপনারা শেষ কাজটা দুই বাড়ী মিলে করলে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য তিক্ততা ভুলে। ওরা রাজী, আপনি যদি বলেন, অর্কর দিদি আপনাদের ফোন করে সব ব্যবস্থা করবে।"
    গিরীশ রাগেনা বা উত্তেজিত হয়না, শুধু শুভার দিকে তাকায়, শুভার চোখ বেশ জলটলটল, বলে,
    -" আমাদের আপত্তি নেই, ওরা যদি ব্যবস্থা করে তো করুক। আর যে যাবার সে তো চলেই গেছে, আমাদের যে ক্ষতি হোয়ে গেল......"।
    ওরা উত্তর করেনা, নামতে শুরু করে, গিরীশও ওদের সঙ্গে একটু নামে। ওদের পায়ের আওয়াজেই বোধহয় নেকরাম বেরিয়ে আসে তার বারান্দায়। তার দৃষ্টি বেশ রুক্ষ, বিশেষ করে ভার্মার দিকে তো একেবারে জ্বলন্ত চোখে তাকায়। ভার্মা অবশ্য খেয়াল করে না, আগে আগে নেমে যায়। রাই গিরীশকে জিজ্ঞেস করে,
    -"এই নেকরাম আপনাদের এখানে কতদিন আছে? ওর তো বেশ বয়স হয়েছে, ও পারে আপনাদের বাড়ির দেখাশোনা করতে?"
    -"ও আসলে শুভার বাবার আমলের লোক। ওনার ব্যক্তিগত অ্যাটেনডেন্ট ছিল। আলমোড়ার গ্রামে ওর বাড়ি, পরিবার আছে, কিন্তু ও এখানে থাকতেই ভালবাসে। দিল্লীতে ওর আত্মীয়স্বজন সব ছড়ানো। এখন অবশ্য একা থাকেনা, ওর ছোট ছেলেটাও এখানে থেকে একটা কারখানায় চাকরি করে। নেকরাম এখন আমাদের বাড়ির সদস্যের মতই।"
    রাই যেতে যেতে নেকরামের কথা ভাবে, পুলিশকে ওর এত অপছ্‌ন্দ কেন! এমন তো নয় যে পুলিশ রাজীর মৃত্যুর ব্যাপারে বার বার আসছে, গিরীশ শুভাকে বিরক্ত করছে, তাহলে? পুলিশের সঙ্গে ওর দুশমনী কী, তাদের ভয়ই বা করেনা কেন ও?
    ************************
  • Nina | 69.141.168.183 | ০৮ নভেম্বর ২০১১ ০৯:০৫496009
  • আবার সেই উইকএন্ড? :-((
  • siki | 122.177.237.71 | ০৮ নভেম্বর ২০১১ ১১:২৬496011
  • কোনও মানে হয় এইভাবে ঝুলিয়ে রাখার? আমার খাবার হজম হচ্ছে না :-((
  • Netai | 121.241.98.225 | ০৮ নভেম্বর ২০১১ ১১:৫০496012
  • আমার তো বেশ লাগছে।
    ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস। :)
  • Nina | 69.141.168.183 | ১১ নভেম্বর ২০১১ ০৭:৪৭496013
  • উইকএন্ড এসে গেল বলে----আবার এগোবে (একটু?!)
  • PM | 86.96.228.84 | ১৩ নভেম্বর ২০১১ ১৯:০৭496014
  • উইকএন্ড তো প্রায় চলে গেলো?
  • Nina | 69.141.168.183 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ০৮:৪৮496015
  • :-((((
  • Sujata | 203.197.123.130 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৫১496016
  • কই !
  • PM | 86.96.228.84 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১০:৪২496017
  • আশায় মরে চাষা... রাজি-র FIR তো করা হয়ে গেছে.... শ্রাবনী-র নামে কি একটা করতে হবে? :(
  • shrabani | 117.239.15.102 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১১:৪৫496018
  • দিল্লির উপকন্ঠে ফিরোজগাঁও, এদিকের হিসেবে গ্রামই,নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বাস। এখনো অনেকেই যারা দিল্লিতে চাকরি করে অথচ দিল্লির আকাশছোঁয়া বাড়ি ভাড়া দিতে অপারগ, এইরকম দিল্লীর কাছেপিঠে জায়গা খুঁজে নেয় পরিবার নিয়ে বসবাসের জন্য। একটু ভেতরে গেলে মফস্বল শহরকে মনে পড়িয়ে দেয়, সারি সারি নানা মুহল্লা, ছোট বড় নানা আকারের ছিরিছাঁদহীন ঘরবাড়ি একটার ওপরে আর একটা চেপে আছে, সরু সরু রাস্তা, রাস্তার ওপরেই খাটিয়া পেতে আড্ডা, বাচ্চাদের খেলাধূলো। এককালে কিছু পরিকল্পনা ছিল পার্ক ইত্যাদির,তার নিদর্শন স্বরূপ কিছু সবুজ বেখাপ্পা গাছ মাঝে মাঝে, তবে সেসব পার্কের জায়গা দখল করে নিয়েছে দোকানপাট, লোকের ঘর এগিয়ে এসে।
    গিরীশের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছে দেখল সেখানে একটি নতুন ফ্ল্যাট বাড়ি উঠছে। আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানল, আগের বাড়ির মালিক মারা যাবার পর ভাগাভাগি হয়ে ছেলেরা বাড়ি শুদ্ধু জমি বিক্রি করে দিয়েছে। ওরা কেউ এখানে থাকেনা, আশেপাশে খোঁজ নিল, ভাড়াটে পালটায়, পুরনো বাসিন্দা, অনেক বছর আছে এখানে, এমন কাউকেই পাওয়া গেলনা। এক দু জন যারা বয়স্ক বাড়ির মালিক, তাদেরও কারোর এত আগের কথা মনে নেই, কিছুই মনে করতে পারল না।
    কিছুক্ষণ এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি করে হাল ছেড়ে দিয়ে ভার্মা থানায় যাওয়া স্থির করল, রাই অবশ্য বাজার ঘুরে দেখার কথা বলেছিল। ভার্মার খুব একটা ভরসা হল না সেখানে কিছু জানা যাবে বলে। একটা বাজার চকের কাছে, সেখানে বাসস্ট্যান্ড, এছাড়াও দু একটা ছোটোখাটো বাজার আছে। গিরীশের কথামত সাতাশ বছর আগে এখানে একটাই বাজার ছিল, সেটা ঠিক কোথায় ছিল তাতেও সন্দেহ আছে। থানায় গিয়ে দেখা গেল, সে নামেই থানা, আসলে ছোট এক পুলিশ চৌকি। থানায় ইনচার্জ নেই, সে পেছনে কোয়ার্টারে, দুটো কনস্টেবল জামাটামা খুলে থানার সামনে গাছের নীচে খাটিয়ায় আরাম করে বসে তাস খেলছে, ভেতরে কেউ নেই, দুয়ারে একটা কুকুর শুয়ে আছে। ভার্মা সোজা গেল তাসের আসরে, রাই ব্যাপারস্যাপার দেখে না নেমে গাড়িতে বসে রইল!
    ভার্মার পরিচয় পেতেই দলটায় একটা হুড়োহুড়ি পড়ে গেল, কনস্টেবলরা জামা গায়ে দিতে দিতে দৌড়ল সাহেবকে বাড়ি থেকে ডেকে আনতে। প্রায় ঘন্টাখানেক পরে ভার্মা থানা থেকে বেরিয়ে এল, সঙ্গে থানার ইন চার্জ ভদ্রলোক। রাইয়ের কী পরিচয় ভার্মা দিয়েছে জানেনা, সে এসে খুব নমস্তে করল ম্যাডামকে, চা টা কিছু খেলেন না বলে দু:খ প্রকাশও করল। ভার্মা গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে চকের বাজারের দিকে যেতে বলল।
    -"এদের এখানে কিছুই প্রায় নেই, অত বছর আগেকার কোনো রেকর্ডই নেই। এখন দিল্লী পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে খুঁজতে হবে, সেখানে রেকর্ড থাকবেই। এই অফিসার তো এ থানায় বছর দুয়েক হল এসেছে, কিছুই জানেনা এখানের সম্বন্ধে। তবে একজন কনস্টেবল স্থানীয়,অনেকদিন আছে, সে বলল ঐ চকের বাজারই এখানকার পুরনো বাজার। আচ্ছা ম্যাডাম, আপনার কী মনে হয়, সত্যিই রাজেশ্বরীর মায়ের ঘটনার সঙ্গে আমাদের কেসের কোনো সম্পর্ক আছে?"
    রাই একটু আস্তে আস্তে যেন কী ভাবছে এমন করে বলল,
    -"আমি সত্যিই জানিনা ভার্মাজী। মিসেস থমাসও জানেন না, কিন্তু ওনার মনে হয়েছিল যে মা ও মেয়ের এভাবে প্রায় একইভাবে বাজার থেকে নিখোঁজ হওয়াটা স্রিফ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নাও হতে পারে, আরো অন্য কোনো ব্যাপার আছে। তাই উনি বন্ধুর কাছে গোপনীয়তার শপথ ভেঙে পুলিশের কাছে গিয়েছিলেন। আমারও কীরকম ওনারই মত মনে হচ্ছে, কিন্তু এখনই কোনো যুক্তি আমি দেখাতে পারছিনা। গিরীশের এই প্রথম স্ত্রীর ব্যাপারটা আগেই বলা উচিৎ ছিল বলে আমি মনে করি, অন্তত রাজীর মা যে শুভা নয় সেটা। মিসেস থমাস এও বললেন যে যতদুর উনি জানেন, কেরালার সমস্ত সম্পত্তি গিরীশের মায়ের ছিল, যেখানে ওরা থাকে সেটা ওর মায়েরই বাপের বাড়ি। সেই কারণেই হয়ত ওরা প্রথম দিকে রাজীকে নিয়ে এসেছিল, মাকে খুশী করতে। মিসেস থমাসের মতে রাজীর ঠাকুমা কনকাম্মা শুভার ওপর একেবারেই খুশী ছিলেন না, নিজের ছেলের ওপরও না। ওনার যা টান, স্নেহ ভালোবাসা ছিল সব রাজীর জন্যে। ব্যাপারটা বেশ ভাববার মত, আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের উকিলের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। "

    এর আগেই ভার্মার সঙ্গে কেরালার গিরীশদের ওখানের থানার যোগাযোগ হয়েছে, ওর মোবাইলে নাম্বার ছিল। রাইয়ের কথায় ও গাড়িতে বসেই ফোন লাগালো। ওদিকের পুলিশ অফিসারটি বেশ ভালো, আগেই কথা হয়েছিল, চেনাজানাও। ভার্মা তাকে উকিলের নাম জানিয়ে অনুরোধ করল অফিসার যেন নিজে গিয়ে উকিলের সাথে দেখা করে সব জেনে আসে। সেইসঙ্গে রাই আরও কিছু খোঁজখবর নিতে বলে দিল, রাজীর ঠাকুমা ও মায়ের বাড়ির।
    গাড়ি এসে চকবাজারে দাঁড়ালো। বাজার সেরকম কিছু নয়, তেমাথার মোড়ে একটা গোলচক্কর,বাসস্ট্যান্ড। কিছুটা এলাকা জুড়ে রাস্তার দুইধারে দোকান পাট। ওরা নেমেই খোঁজ করল পুরনো দোকান যারা আছে, অনেক বছর ধরে সেইসব দোকানের। এক এক করে সব দোকানেই ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকল। কোথাও কিছু জানা গেলনা, দোকান পুরনো হলেও অনেক জায়গায় পুরনো লোক নেই, কোথাও পুরনো লোক দু একজন থাকলেও তাদের সাতাশ বছর আগের ঘটনা মনে নেই। শেষ যে দোকানটিতে ঢুকল সেটি একটি মুদীখানা, বৃদ্ধ লালাজী বসে আছে দোকানে। আটা ময়দা চাল গুড়ের বস্তা সবের একটা মিশ্র গন্ধ রাইকে কেমন ওর ছোটোবেলার সেই ছোট্ট শহরের দোকানের কথা মনে করিয়ে দেয়। আজকাল সুপার মার্কেটের চাকচিক্যে এসব গন্ধ যেন চিরদিনের মত হারিয়ে গেছে!
    লালাজীও সেই পুরনো স্কুলেরই লোক মনে হলে, পরিচয় না জেনেই আপ্যায়ন করলে সাদরে, দুপুরবেলায় দোকান খালি। লোকটির বয়স হয়েছে, দোকানটিও পুরনো, এদের মনে আশা জাগে, কে বলতে পারে হয়ত রাজীর মা নির্মলা এই দোকানেই শেষ সওদা করেছিল!
    অচিরেই অবশ্য আশা ভঙ্গ হল, লালাজী ফিরোজগাঁওয়ের লোক নয়, পাশের গ্রামের লোক। দোকান ওনার বাবার প্রতিষ্ঠা করা, আগে ওনার বাবাই বসতেন, উনি ওনার নিজগ্রামের দোকানে বসতেন। এখন দুই দোকানেই ছেলেরা বসে, উনি মাঝেসাঝে আসেন দুই দোকানেই। ভার্মার চোখে মুখে হতাশার ভাব স্পষ্ট, দোকান থেকে বেরোতে বেরোতে বললে
    -"কী অবস্থা, এরকম একটা ঘটনা, সাতাশ বছরেই মানুষের মন থেকে ধুয়েমুছে সাফ, কারুর কিছু মনে নেই!"
    রাই চিন্তা জড়ানো স্বরে বলে,
    -"সেটা খুব স্বাভাবিক নয়, তাই না?"
    ভার্মা ঠিক না বুঝে জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকায়, রাই এবার বুঝিয়ে বলে,
    -"দিল্লীর কাছে হলেও, এই জায়গাটা এত বছরেও খুব একটা বদলায় নি, শুধু বাড়িঘর দোকানপাট ও লোকজনের সংখ্যা একটু বেড়েছে। নাহলে তাকিয়ে দেখুন, এখনও বেশ মফস্বলের গন্ধ আছে। বাড়ির সামনে খাটিয়া পেতে এবাড়ি ওবাড়ির লোকেরা গল্প করছে, বাচ্চারা গলিতে খেলছে, বয়স্করা মাথায় পাগড়ি জড়িয়ে গাছতলায় বসে জটলা করছে। স্কুলের মাথায় ছাত নেই, মাস্টারজী বারান্দায় ব্ল্যাকবোর্ড পেতে মাটিতে বসা ছাত্রছাত্রীদের চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে গিনতি করাচ্ছে। রাজধানীর থেকে বিশ কিলোমিটার দুরত্বে আছি মনেই হচ্ছেনা, মনে হয় কোথায় যেন এসে গেছি। এরকম জায়গায় সচরাচর কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনা, তাই সেরকম কোনো ঘটনা ঘটলে লোকের মনে থাকা উচিত, অনেক পুরনো হলেও। তাহলে কেন কারুর কিছু মনে নেই?"
    -"কেন মনে হয় ম্যাডাম?"
    -"একটা কারণ হতে পারে ঘটনা টা একজন ভিনদেশী পরিবারের, যারা ঘটনার আগে পরে বেশীদিন এখানে বাস করেনি। দ্বিতীয়ত, ঘটনাটা নিয়ে সেরকম হইচই হয়নি, পুলিশের ত্‌ৎপরতা সেরকম ছিলনা, সোজা কথায় ঘটনাটি খুব শীগগির চাপা পড়ে যায়।"
    দোকান থেকে ওরা বেরিয়ে এসেছে, গাড়ির দিকে যেতে যেতে হঠাৎ রাই ফিরে গিয়ে দোকানে ঢোকে আবার, একটু হকচকিয়ে গেলেও ভার্মা ওর পিছু নেয়। লালাজীও অবাক, তবু "আইয়ে আইয়ে ম্যাডাম" করে অভ্যর্থনা জানাতে ভুল হয়না।
    -"লালাজী এখানে, এই গাঁয়ের মন্দির কোথায়? কতগুলো মন্দির আছে, কোনটা সবচেয়ে পুরনো, জানেন আপনি?"
    জিজ্ঞেস করেই রাইয়ের সন্দেহ হল, লোকটি তো অন্য গাঁয়ের, ঠিক বলতে পারবে কি! কিন্তু তার সব সন্দেহ নিরসন করে লালাজী এই প্রথম হ্যাঁ তে জবাব দিল,
    -"ম্যাডাম, এই গাঁয়ে বড়া মন্দির একটাই আছে, খুব প্রাচীনও। ঐ বাঁদিকের রাস্তা ধরে কিছুটা গেলে একদম গ্রামের শেষে গৌরীকুন্ডের ধারে ঝুলেলালের মন্দির। এছাড়া চকের শেষে শেরাওয়ালী মাতার ছোট মন্দির, সে এই হালে তৈরী, নবরাত্রি উৎসব হয় সেখানে। ঝুলেলালের মন্দির এগাঁয়ের সেঠ জমিদার লালজীদের প্রতিষ্ঠিত। এখানকার অধিকাংশ জমিজমা আগে ওদেরই ছিল, এখন আর নেই। অনেক শরিক, ভাগাভাগি হয়ে সব বেচেটেচে দিয়েছে অনেককাল। এখন শুধু ঝুলেলালের মন্দির পেরিয়ে কিছুটা গেলে একটা ফার্মহাউস আছে ঐ লালজীদের বড় তরফের। ওদের সব ব্যবসাপত্র করে ভালো অবস্থা, দিল্লী নয়ডার দিকে কোথায় বিশাল বাড়ি, মাঝেসাঝে আসে ঐ ফার্মহাউসে, বন্ধুবান্ধব সব বড় বড় লোকেদের নিয়ে পার্টি হয়। এমনিতে খালিই পড়ে থাকে, একজন কেয়ারটেকার আর সিকিউরিটী আছে। মন্দিরের ট্রাস্টেও বোধহয় গাঁয়ের কেউ কেউ আছে, লালজীদেরও কেউ আছে।"
  • shrabani | 117.239.15.102 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১১:৫৪496019
  • মন্দিরের রাস্তার নির্দেশটা আরেকবার ভালো করে বুঝে নিয়ে ওরা দোকান থেকে বেরিয়ে এল। ভার্মা এতক্ষণ কোনো কথা বলেনি, কিন্তু বেরিয়ে এসেই আর সামলাতে পারলনা,
    -"ম্যাডাম, হঠাৎ মন্দিরের কথা কেন? আপনি এখন ঐ মন্দিরে যাবেন নাকি?"
    গাড়িতে উঠে রাই বলল,
    -"কেমন যেন মনে হল ভার্মাজী, একবার মন্দিরের খোঁজ নি। এরকম একটা গাঁয়ে মন্দিরের খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, যা কেউ মনে করতে পারেনি তা মন্দিরের কোনো পুরনো লোক বা পুরোহিতের স্মরণে থাকতেও পারে। একবার চেষ্টা করতে দোষ কী!"
    ভার্মা কী ভাবলো, তারপর রাইকে বলল,
    -"শুধু এই কারণেই আপনার মন্দিরের কথা মনে এল, না আর কিছু?"
    রাই হেসে ফেলল,
    -"আপনার পুলিশী বুদ্ধি ভার্মাজী, আপনাকে লুকোতে পারবনা! আসলে মনে বারে বারে রাজীর ঘটনার সঙ্গে ওর মায়ের ঘটনার একটা প্যারালেল এসে যাচ্ছে। রাজীকে হয়ত বা শান্তিবিহারের মন্দিরে শেষ দেখা গেছে,রাজীর মায়ের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু ছিলনাতো! জানি গিরীশ এমন কিছু বলেননি, তবু তিনি যে সব কথাই ঠিক বলছেন তা ভাবার তো কোনো কারন নেই, বরং উল্টোটাই। যা বোঝা যাচ্ছে রাজীর ঘটনা নিয়ে যত শোরগোল হচ্ছে, পুলিশী তদন্ত, সেরকমটা নির্মলার ক্ষেত্রে হয়ত হয়নি। আপনি একটা জিনিস খেয়াল করেছেন, ওদের কথা থেকে মনে হল, রাজীর খুব ছোট বয়সেই গিরীশ শুভাকে বিয়ে করে। কেন? যেখানে বৌ মারা গেছে নিশ্চিত নয়, ধারণা মাত্র, সেখানে দ্বিতীয় বিয়ের জন্যে অপেক্ষার পিরিয়ডটা আপনার অনেক কম মনে হচ্ছে না? মারা গেলে, বাচ্চার জন্যে তাড়াতাড়ি বিয়ে করার যুক্তি ছিল। মিসেস থমাসের কথা অনুযায়ী, রাজীর ঠাকুমা গিরীশের সঙ্গে শুভার বিয়ে মেনে নেয়নি। শুভা অন্য জাতের, অন্য ভাষাভাষীর মেয়ে, গিরীশের থেকে কিছুটা ছোটও। এ বিয়ে প্রেমের বিয়ে। গিরীশ হয়ত বোঝাতে চাইবে যে তার অসহায় অবস্থা দেখে শুভা তার প্রতি করুণাপরবশ হয়ে তাকে বিয়ে করে বা তার প্রতি অনুরক্ত হয়। হতে পারে, গিরীশ খুবই সুপুরুষ আর শুভার সেসময় বয়স কম। কিন্তু গিরীশ তার মায়ের বিরূদ্ধে গিয়ে এরকম একটা অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবে এটা খুব স্বাভাবিক নয়। যদি এমন হয় যে নির্মলা নিখোঁজ হওয়ার আগে থেকেই গিরীশ আর শুভার একটা সম্পর্ক ছিল!"

    মন্দিরটা বড় রাস্তা থেকে একটু ভেতরে, ড্রাইভার একটু ভুলপথে চলে গেছিল, একজনকে গৌরীকুন্ডের মন্দির কোথায় জিজ্ঞেস করে আবার ফিরল। রাস্তা থেকে ভেতরে কিছুটা গাছপালা ঘেরা মন্দির। একপাশে গৌরীকুন্ড, একটি মাঝারি সাইজের পুকুর, বাঁধানো ঘাট। মন্দিরের সামনে কিছুটা খালি জায়গা, সেখানে গাড়ি দাঁড় করালো। মন্দিরের গেটের দিকে যেতে যেতে ভার্মা আগের কথা প্রসঙ্গে বলে,
    -"মানলাম, রাজীর মায়ের ব্যাপারটায় কিছু গন্ডগোল আছে, কিন্তু তার মেয়ের খুনের সঙ্গে সম্বন্ধটা আমি বুঝতে পারছিনা। ধরুন কেউ রাজীকে তার মায়ের মত করে গায়েব করেছে বা হত্যা করেছে, কেন? যদি রাজীর মায়ের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার জন্য যে দায়ী সেই রাজীকেও মেরেছে সে একই রাস্তা ফলো করবে কেন, এটা করে তো তার পুরনো পাপের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে?"
    মূল মন্দিরটি রাধাকৃষ্ণের, কয়েকটা সিঁড়ি উঠে গোল আকারের দালান ঘেরা। একপাশে আরও কয়েকটা ছোট ছোট খুপরি মন্দির, শিবের, হনুমানজীর, রামসীতা। মন্দিরের দরজা খোলা, সামনে কম্বল আসনের ওপরএকজন প্রৌঢ় বসেছিলেন, হলুদ ধুতি আর সাদা ফতুয়া পরে, সামনে রাখা দানপেটী। রাই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ভার্মার প্রশ্নের উত্তরে বলে,
    -"কিন্তু একটা কথা ভুলছেন আপনি যে মিসেস থমাসের মত কেউ যে জানত নির্মলার ব্যাপারটা সেটা সে হয়ত ধারণা করেনি, তাই ভয়টা ছিলনা। অবশ্য হয়ত গিরীশের দেশে আরও কেউ জানতে পারে, আবার নাও জানতে পারে। গিরীশের মা মিসেস থমাসের মত মহিলার সংস্পর্শে এসে তাকে সব কথা বলে হালকা হতে চেয়েছেন, হতে পারে তা এইজন্যে যে ছেলের চাপে বা ছেলে ও নাতনীর স্নেহে তিনি এসব কথা সেভাবে কারো সাথে আলোচনা করতে পারেননি কোনোদিন। তার আত্মীয়রা নির্মলা রাজীর মা এটা জানলেও সে কী অবস্থায় মারা যায় বা এই দুরদেশে তার কী হয় সেসব ঠিকমত নাও জানতে পারে। নির্মলার বাপের বাড়িতে যারা ব্যাপারটা জানত কিছুটা তারা তো কেউ নেই বা বিদেশে আছে শুনলেন।"
    প্রৌঢ় ভদ্রলোকটিই দেখা গেল বর্তমান পুরোহিত। ভার্মা নিজের পরিচয় দিতে উনি উঠে দাঁড়ালেন, একটু বিস্ময় চোখেমুখে। ভার্মা গুছিয়ে সংক্ষিপ্তভাবে জানাল তাদের আসার উদ্দেশ্য। এরা অবাক হয়ে শুনল পুরোহিত বলছেন,
    -"হ্যাঁ, আমার মনে আছে ঐ ঘটনা। তখন আমার বাবা এখানের পুরোহিত ছিলেন, আমি তার সহায়ক। ঐ মহিলা মাঝে মাঝেই মন্দিরে আসতেন বাজার ঘুরে, কখনও একা কখনো বা সঙ্গে বাচ্চা ও মাতাজী থাকত, তবে ওনার স্বামীকে কোনোদিন আসতে দেখেছি বলে মনে পড়েনা। এই মন্দিরে রোজ অত ভীড় হয়না, পালে পার্বণে ছাড়া। সন্ধ্যেয় আরতির পরে মন্দিরের দরজা খোলাই থাকত। পেছনেই আমাদের ঘর, বাবা আমাকে নিয়ে থাকতেন। গুটিকয়েক অনাথ ছেলেও থাকত তখন, মন্দিরের খরচা থেকেই তাদের থাকা খাওয়ার খরচ বহন করা হত, বাবা তাদের পড়াতেন, গুরুকুলের মত।
    তা সেদিন সন্ধ্যেয় আরতির পরে আমরা ঘরে ছিলাম, বাবা ছেলেদের পড়াচ্ছিল, আমি একটি ছেলেকে নিয়ে রান্নার দিকটা দেখছিলাম। মন্দিরে ঐ ছেলেদের মধ্যে থেকেই একজন পালা করে বসত, দানবাক্স ইত্যাদি খেয়াল রাখত, কেউ এলে ফুল প্রসাদ দিত। সেদিন যে ছেলেটি ছিল সে ঐ মহিলার নিখোঁজ হবার কথা শুনে বলে যে মহিলা সেদিন মন্দিরে এসেছিল। কিছুক্ষণ থেকে তারপরে চলে যায়। অন্ধকারে ভালো দেখেনি তবে তার মনে হয়েছিল গেটে একজন ভদ্রলোক স্কুটার নিয়ে এসেছিল, সেই স্কুটারে চেপেই মহিলা চলে যায়। পরে ছেলেটিকে পুলিশে নিয়ে যায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে, সেখানে কী হয় সে বলেনি তবে পুলিশ বলে ছেলেটি সব বানিয়ে বলছে, ও ঐদিন মহিলাকে আসলে দেখেনি, আগে কোনোদিন দেখেছে। পুলিশ স্টেশন থেকে ফিরে এসে ছেলেটিও তাই বলে যে আসলে ওটা অন্যদিনের কথা, তার ভুল হয়েছিল। এরপরে আমরা আর ব্যাপারটা নিয়ে মাথা ঘামাই নি।"
    রাইই প্রশ্ন করে,
    -"পুলিশ এব্যাপারে আপনাদের কাছে আসেনি?"
    -"না, একেবারেই না। ঐ ছেলেটির কথা বোধহয় কারো কাছে শুনে থাকবে, গ্রামে কথা খুব তাড়াতাড়ি রটে। সেই শুনে দিন দুয়েক পরে এসে শুধু ছেলেটিকে নিয়ে যায়, বাবার সঙ্গে কোনো কথাও বলেনা। বাবা খুবই রেগে গিয়েছিলেন, বড় লালজী সাহেব পরে হোলির উৎসবে এলে তাকে জানিয়েছিলেন। তবে পুলিশ আর কোনো ঝামেলা করেনি বলে সবাই চেপে যেতে বলেছিল।"
    -"আচ্ছা, সেই ছেলেটি তো এখন বড়, সে এখন কোথায় আছে?"
    -"আমি ঠিক জানিনা। তার পরে নানা ঝামেলায় ঐ অনাথ ছেলেদের আশ্রয় দেবার ব্যাপারটা উঠে গেছিল, মন্দিরের আয়ও তেমন না, লালজীদের সাহায্যও কমে এসেছিল। ঐসব ছেলেরা বড় হয়ে এদিক ওদিক চলে গেছে কাজকম্ম নিয়ে, তবে মোটামুটি সবাই করে খাচ্ছে, বাবাই চেনাজানা লোকেদের ধরে কাজ জুটিয়ে দিয়েছে ওদের। এদিকে আর কেউ বড় একটা আসেনা বাবা মারা যাবার পর থেকে। আমিও ঠিক জানিনা অজয় মানে ঐ ছেলেটি এখন কোথায়। তবে মাঝেসাঝে ওর সঙ্গীসাথীরা কেউ আসে পুরনো জায়গা দেখতে, সেরকম কেউ এলে খোঁজ করব, হয়ত ওদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আছে।"
    রাই আর ভার্মা দুজনেই একটু অবাক হল, ইনি তা বেশ ভালো লোক, এতদিনকার কথা পরিস্কার জানালেন, তারপরে আবার সাহায্য করতে এত উদগ্রীব। ভার্মা না বলে পারেনা,
    -"আপনার তো বেশ সব কথা মনে আছে, পন্ডিতজী। আমরা তো এখানে সবাইকে জিজ্ঞেস করে করে হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।"
    -"আরে, এই নিয়ে তো দুদিন আগেই একজন খোঁজ নিয়ে গেল। তখন তো বসে বসে সব মনে করলাম, আপনারা জিজ্ঞেস করতে তাই এত সহজে বলতে পারলাম।"
    রাই আর ভার্মা দুজনে চাওয়াচাওয়ি করে। এই ব্যাপার নিয়ে খোঁজ নিয়ে গেল, দুদিন আগে।
    -"কে এসেছিল খোঁজ নিতে, পুলিশের লোক?"
    -" না মনে হয়। অবশ্য আমি জিজ্ঞেস করিনি। দাঁড়ান, উনি একটা ঠিকানা লিখে দিয়ে গেছিলেন, ঐ ছেলেটির খবর পেলে জানাতে।"
    এরা নির্বাক উত্তেজনায় বসে রইল, পন্ডিতজী মন্দিরের পিছনে ঘরের দিকে গেলেন ঠিকানা আনতে। কিছুক্ষণ পরে একটা কাগজ এনে দিল, দামী হোটেলের লেটারহেড, লীলা হোটেলের ফোন নাম্বার আর রুম নাম্বার লেখা, সুজিত মুকুন্দন।
    **********************************
  • Shn | 117.192.131.162 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১২:৩০496020
  • এই বারের কিস্তি পড়ে মন ভরলো না... বড্ড কম।
  • shrabani | 117.239.15.104 | ১৪ নভেম্বর ২০১১ ১২:৫৬496022
  • সুহাসিনী,
    :))
    এ হপ্তা আমার ওয়ার্কশপ, এ হপ্তা আমার ট্রেনিং:(((.....সময় নেই, অন্য দিন তুলব।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু মতামত দিন