এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প : প্রতিচ্ছায়া

    shrabani
    অন্যান্য | ১১ অক্টোবর ২০১১ | ২০৬৪৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ranjan roy | 14.97.196.212 | ১৮ অক্টোবর ২০১১ ২৩:০৬495957
  • শ্রাবণী, চমৎকার! চরিত্রচিত্রণ , পরিবেশ খুব ভাল লগছে। আপনি আপনার সুবিধেমত লিখুন।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২১ অক্টোবর ২০১১ ০১:০৬495958
  • একেবারে পরিপাটি সুন্দর---শুধু অপেক্ষাটা এক্টু কষ্টকর --তবে সবুরে মেওয়া ফলে ---আর এক্টু বসি----
  • Nina | 12.149.39.84 | ২২ অক্টোবর ২০১১ ০০:৫৪495959
  • ধাওয়ানটাকে ধরে মারতে হয়!!
  • shrabani | 124.124.86.86 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ১১:৪৮495960
  • *****************************
    মর্গ থেকে বেরিয়ে এসে অর্ক আর পারলনা, রাস্তার একধারে গিয়ে পেটের ভেতরের সবকিছু উগরে দিল। এতদিন সিনেমা টেলিভিশনেই দেখেছে, এই প্রথম সে কোনো সত্যিকারের মর্গে পা দিল।
    সঙ্গের পুলিশটি ভার্মার জুনিয়র, একটা জলের বোতল নিয়ে তার দিকে এগিয়ে এল। বোতল থেকে জল নিয়ে মুখেচোখে দিয়ে একটু ধাতস্থ হয়ে সে একটা কৃতজ্ঞ দৃষ্টি দিল ছেলেটির দিকে।
    -"আপনি গাড়ী চালিয়ে যেতে পারবেন না আমি আমাদের ড্রাইভারকে বলব ভ্যানে করে ছেড়ে আসতে?"
    ছেলেটির গলায় সহানুভূতির স্বর। অর্ক তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আস্তে আস্তে একটু দুরে পার্ক করা গাড়ীর দিকে গেল। লক খুলে গাড়ীর এসিটা চালিয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। একটু দুরে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশের ভ্যান। জুনিয়র অফিসারটি কনস্টেবলকে নিয়ে গাড়ীতে উঠতে যাবে, তার মোবাইল বেজে উঠল বোধহয়। ফোন কানে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভারকে কী ইশারা করে অর্কর গাড়ীর দিকে এল। ওকে আসতে দেখে অর্ক কাঁচটা একটু নামালো,
    -"আপনার মোবাইল কি সুইচ অফ করা আছে? ভার্মা সাহেবের ফোন। নিন, কথা বলুন।" অর্কর খেয়াল হল মর্গে ঢোকবার আগে ফোন অফ করে দিয়েছিল। পকেট থেকে বার করে সুইচ অন করতে করতে ভার্মার ফোন ধরল। কথা শেষ হলে ছেলেটিকে ফোন ফেরত দিল। একটু হেসে ছেলেটি বিদায় নিয়ে চলে গেল। ওদের ভ্যানটা বেরিয়ে যেতেই অর্কও গাড়ী চালু করল। একটু ভালো লাগছে এখন। ভার্মা থানায় যেতে বলেছে একবার, কী সব ফর্মালিটীজ আছে। এমনিতে আজকে তার অফিস থেকে ছুটি নেওয়া আছে। যদি কাজ মিটে যায় তাহলে কী অফিস চলে যাবে সেকেন্ড হাফে না খেয়েদেয়ে বাড়ীতে আজ বিশ্রাম নেবে ভাবতে ভাবতে বর্ডার পেরোল।

    থানায় পৌঁছতেই একজন ওকে ভার্মার ঘরে নিয়ে গেল। অর্ক প্রথম থেকেই দেখেছে ভার্মার ব্যবহার একটু বেশী ভদ্র, ওর অন্যান্য জাতভাইয়েদের মত নয়। শান্তিবিহারের রাজপালের দৃষ্টির সামনে দাঁড়ালেই ওর কেমন যেন কোনো অপরাধ না করেও নিজেকে অপরাধী স্বীকার করে ওর হাতে সঁপে দিতে ইচ্ছে করে, এমনই এক মানসিক যন্ত্রনার উদ্রেক হয়!
    শুধু এদের সাহায্যেই রাজীকে খুঁজতে হবে, তাই চুপ করে ঐ রাজপালকে সহ্য করে। আজ দিল্লীর মর্গে যাবার সময় সে বেশ অস্বস্তিতে ছিল, হয়ত রাজপালের সঙ্গে বা রাজীর বাবামা কারুর সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। এমনিতে রাজীর বাবা মা ওর বাড়ী আসেনি, ওর সঙ্গে দেখা করার চেষ্টাও করেননি। একদিন শুধু রাজীর বাবার উপস্থিতিতে রাজপাল ওকে ডেকে পাঠিয়েছিল শান্তিবিহার থানায়। একদা স্নেহপ্রবণ শ্বশুরের ওরকম ঠান্ডা কাঠকাঠ ব্যবহার দেখে অর্ক অবাক। উনি ওর সঙ্গে একান্তে কথা বলার চেষ্টাই করলেন না, সব কথা ঐ রাজপালের মাধ্যমে। ওর অপরাধ কী? সেদিন রাতে সঙ্গে সঙ্গে ওদের জানায়নি, পুলিশে খবর দেয়নি, সেজন্যে সে নিজেও তো এখন আফশোষ করছে, কিন্তু ওরা বুঝছে না, একবার বোঝাবার সুযোগও দিচ্ছেনা!

    -"আসুন ব্যানার্জী সাব। চা খাবেন না কফি?"
    কিছু খাবেনা বলা সত্বেও ভার্মা কফি আনাল। জোর করেই খাওয়াল। স্টিম্যুলান্ট, নার্ভ স্টেডি করতে সাহায্য করবে। ইচ্ছে না করলেও কফিটা জোর করে খেল অর্ক। গরম খাবার পরে কিন্তু অনেকটা চাঙ্গা লাগছিল। ভার্মা শান্তভাবে অপেক্ষা করছিল তার কফি শেষ হওয়ার। অর্কই শুরু করল,
    -"ইন্সপেক্টর, কী বীভৎস দৃশ্য! কিন্তু আপনারা ভুল করছেন, ও বডি রাজী মানে আমার ওয়াইফের নয়। আমি আপনার অফিসারকেও বলেছি।"
    ভার্মা অবাক হয়না, এতদিনের পুরনো জল খেয়ে ফুলে ওঠা লাশ দেখে এরা সহজে চিনতে পারবে সে আশা করেনি। রাজপালের কাছে শুনেছে মেয়েটীর মা আসেনি, বাবা এসেছিল। তিনি অবশ্য এর মত জোর দিয়ে কিছু বলেননি তবে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সে এবার ড্রয়ার থেকে একটা প্যাকেট বার করে খুলে অর্কর সামনে রাখে। গলার মঙ্গলসূত্র। কানেটানে গয়না ছিলনা বা জলে পড়ে গেছে। দুহাতে দুটো সোনার বালা আছে তবে সেগুলো খোলা যায়নি, পোস্টমর্টেমের সময় দেখা যাবে। খুব নরমস্বরে ভার্মা বলে
    -"দেখুন তো সাব, এটা চিনতে পারেন কিনা?"
    অর্ক একটু তাকিয়ে রইল। রাজীর গলার মঙ্গলসূত্র! হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। রাজী এক মঙ্গলসূত্র খুব বেশিদিন পরেনা। একাধিক সোনার চেন ও মঙ্গলসূত্র আছে, সেও ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পরতে ভালোবাসে। গয়না খুব বেশি আগে পরতনা, ইদানীং পরতো, তবে ভিড় বাজারে যাবার আগে খুলেই যেত বোধহয়। ওর গয়না সব রাজীর মায়ের শান্তিবিহারের ব্যাঙ্কের লকারে থাকে। অর্ক কোনোদিন খুঁটিয়ে দেখেনি ওর গয়নাগাঁটি শুধু ওর নিজের দেওয়া একটা হীরের আংটি মনে আছে। সেও রাজী সবসময় আঙুলে পরতনা।
    -"এই গয়না কিস্যু প্রমাণ করেনা। এরকম গয়না তো যার হোক হতে পারে। আমি এদেখে কিছু বলতে পারছিনা।"
    ভার্মা চুপ। এবার অর্ক একটু অসহিষ্ণু হয়ে পড়ে,
    -"আপনারা বিশ্বাস করুন আমি বলছি ঐ বডি আমার স্ত্রীর নয়। আপনারা এসব করে সময় নষ্ট করছেন, যেভাবে হোক কেস চাপা দেবার চেষ্টা করছেন। প্লীজ এসব না করে আমার স্ত্রীকে খুঁজে বার করুন।"
    এবার ভার্মা নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে। তারপর ধীরে কিন্তু একটা কঠিন পুলিশী স্বরে বলে,
    -"আপনার স্ত্রীর কেস আমরা খুব সিরিয়াসলী নিয়েছি মি: ব্যানার্জী সে আপনি আমাদের যাই মনে করুন। এই হারটা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখুন। মঙ্গলসূত্র টা টিপিক্যাল দক্ষিন ভারতের, লকেটে লক্ষ্মীমূর্তি, এদিকে এরকম ডিজাইনের চল নেই। এছাড়া বালা আর এটা দুটোই ভারী সোনার। আপনার স্ত্রীর মাকেও দেখানো হবে। উনি হয়ত আপনার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন। গয়নাতে দোকানের মার্ক আছে। ওনাদের কাছে দোকানের নাম জেনে সেটাও কনফার্ম করা যাবে।"
    অর্ক এতগুলো কথা শুনে কেমন থম মেরে যায়। তারপরে একটু তেরিয়া হয়ে চ্যালেঞ্জের সুরে বলে,
    -"একই দোকানের গয়না বলে প্রমাণ হয়ে গেলে কি আপনারা ধরে নেবেন এই মহিলা রাজী? অন্য কোনো মহিলা একই দোকানের গয়না পরতে পারেনা? এই শহরে দক্ষিণীদের পপুলেশন জানেন আপনি?"
    ভার্মা এবার আরও কড়া হয়ে বলে,
    -"আপনিই বা কেন এত শিওর হয়ে বলছেন যে বডিটা আপনার স্ত্রীর নয়? বডির অবস্থা দেখে চেনা যাচ্ছেনা, এছাড়া আর কোনো কারণ আছে কি? এমন তো নয় যে আসলে আপনি জানেন আপনার স্ত্রী কোথায় বা তার বডি কোথায়, আপনিই তার পরিণতির জন্যে দায়ী। যেভাবে সব ঘটনা ঘটছে তাতে লোকের তো এরকমই মনে হবে আর জেনে রাখুন হচ্ছেও।আমি আপনার ওয়েল উইশার হিসেবে বলছি ব্যানার্জী সাহেব, পুলিশের কাজে সম্পুর্ণ সহযোগীতা করুন, এরকম অসহিষ্ণু হয়ে উল্টোপাল্টা কিছু করবেননা, শুধু কেসের জন্যেই নয়, নিজের ভালোর জন্যেও। "
    ওঝার মন্ত্রপড়া জল পড়লে সাপ যেমন ফণা নামিয়ে নেয়, অর্কও সেরকম মাথা নামিয়ে ফেলল। ভার্মা সুরটাকে একটু নরম করেও বেশ পুলিশী চালে বলল,
    -"আমরা আপনার কাছে এই কেসে কো-অপারেশন চাইছি মি: ব্যানার্জী। আপনি পুলিশকে তার কাজ তার মত করে করতে দিন। শুধু গয়না দিয়েই প্রমাণ করবনা আমরা এ লাশ আপনার স্ত্রীর। আরো অনেক উপায় আছে, সমস্ত দিক দিয়ে নি:সন্দেহ হলে তবেই আমরা পাকাপাকি ঘোষণা করব এ লাশ কার। তবে আপনি চিন্তা করুন যে এরপরে পোস্টমর্টেম করা হলে সেখানে কী রিপোর্ট আসবে। যদি এ মার্ডার হয় তবে তা কোনো চোর ডাকাতের কাজ নয়। তারা এত ভারী ভারী গয়না ছেড়ে যেতনা। খুনের মোটিভ কী হতে পারে, আপনার স্ত্রীর বা আপনাদের কারো সাথে কোনো শত্রুতা ছিল কিনা এসব নিয়ে ভাবুন বাড়ী গিয়ে। আমাদের কাজ আমরা করি, আপনিও আমাদের সাহায্য করার চেষ্টা করুন।
    অর্কর সব গোলমাল পাকিয়ে যাচ্ছে, মাথার মধ্যে কিচ্ছু ঢুকছেনা। আর কোনো কথা না বলে ও উঠে পড়ল। আস্তে আস্তে বেরিয়ে এল থানার দরজা দিয়ে। ভার্মা একবার অর্কর যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে ফাইলে চোখ রাখল। কিন্তু মন দিতে পারলনা, চোখের সামনে ভেসে উঠছে অর্কর অসহায় দৃষ্টি, ওর ধীরে ধীরে চলে যাওয়ার ছবিটা। ভার্মার কপালে চিন্তার রেখা, এ যদি অর্কর অভিনয় হয় তো ও বলিউডের বড় বড় অভিনেতাদের চ্যালেঞ্জ দিতে পারে। আর তা যদি না হয়, এ কেস জটিল হচ্ছে। কি ভেবে সে টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল, পোস্টমর্টেম জলদি করিয়ে রিপোর্টটা চাই, রাজপালের সঙ্গে কথা বলতে হবে!
  • shrabani | 124.124.86.86 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ১২:৩৭495961
  • ***************************************
    বসের চেম্বারে অনেকটা ফালতু সময় কেটে গেল। একটা ফাইল নিয়ে কথা বলতে গিয়েছিল রাই। ওনার রিটায়ারমেন্টের বেশী দেরী নেই। সেসব নিয়ে, ছেলেমেয়ের চাকরির কথা, বাড়ির কথা অনেকক্ষণ ধরে ভ্যাজালেন। রাই হাসিহাসি মুখ করে বসেছিল, কিন্তু ভেতরে ভেতরে অসম্ভব বিরক্তি। ভদ্রলোক কাজের নন একেবারেই, অথচ ওপরচালাকি আর চুকলিবাজিতে ভীষণ দড়। অল্পদিন হল ওদের ডিপার্টমেন্টের হেড হয়ে এসেছে রিকোয়েস্ট দিয়ে। এইটুকু সময়েই সবার যাকে এদেশীরা বলে জীনা হারাম করে দিয়েছে, নিত্য অশান্তি, অব্যবস্থা। আর মাস দুয়েকের মত থাকবে, তাও যেন ওরা আর পারছে নাআআ।
    সীটে এসে দেখল মোবাইলটা পড়ে আছে, খেয়াল করে হাতে নিয়ে ভেতরে ঢোকেনি। এতক্ষণের বকবকানি শুনে মাথা ধরে গেছিল, ফোন করে চা আনতে বলল। তারপরে মোবাইলটা তুলল বাড়িতে মেয়েটা ফিরল কিনা জানতে। একটা মিসড কল পড়ে আছে, নাম্বারটা অচেনা, ল্যান্ডলাইনের। বাড়িতে ফোন না করে আগে ঐ নাম্বারটাই টেপে। একটি অচেনা পুরুষ গলা রুক্ষভাবে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
    -" কী চাই, কী দরকার?"
    দমে যায় রাই, তবু একটু জোরে বলে,
    -" এই নাম্বার থেকে একটা ফোন এসেছে আমার ফোনে, এটা কোথাকার নাম্বার?"
    এবার লোকটি গলাটা একটু স্বাভাবিক করে বলে,
    -" এই ফোন থেকে? এটা তো থানার ফোন। আপনি কে, কোথা থেকে বলছেন?"
    রাইয়ের মাথায় সঙ্গে সঙ্গে ভার্মার নাম এল। থানা থেকে ভার্মা ফোন করেনি তো! সে আন্দাজেই বলল,
    -"থানা? ওখানে কি ভার্মা সাহেব আছেন? থাকলে তাকে বলুন আমি রাই ম্যাডাম কথা বলছি।"
    লোকটা এবার কী বলল শোনা গেলনা। একটু স্তব্ধতা, তারপরেই ভার্মার শান্ত ভদ্র গলা ভেসে এল,
    -"ম্যাডাম, আমিই আপনাকে ফোন করেছিলাম। অফিসে ব্যস্ত, ডিসটার্ব করেছি?"
    -"আরে না না। আসলে আমি একটু অন্য জায়গায় কাজ করছিলাম, মোবাইলটা আমার সীটে এখানে পড়ে ছিল। কিন্তু সেকথা থাক, কী ব্যাপার বলুন তো?"
    ভার্মা গলার স্বর নামিয়ে বলল,
    -"পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট এসে গেছে। গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মার্ডার বাই স্ট্র্যাঙ্গুলেশন, তবে একটা জিনিস, ফাঁস লাগানো হয়েছে পিছন থেকে, হয়ত বা অতর্কিতে এবং বেকায়দায়। এমন কোনো অবস্থায় যে ভদ্রমহিলা কোনো বাধা দিতে পারেননি, কোনো স্ট্রাগলের চিহ্ন অন্তত মহিলার শরীরে কোথাও নেই। আপনি কি রিপোর্ট দেখবেন? অবশ্য তাতে অনেক ডাক্তারি টার্মস থাকলেও সার আমি যা বললাম তাই।"
    রাই কথার মাঝখানেই অধৈর্য হয়ে পড়ল,
    -"রিপোর্ট যদি দেখান তো দেখব তো বটেই কিন্তু ঐ মহিলাটিই যে রাজেশ্বরী তা কিভাবে প্রমাণ হল?"
    ফোনের এদিকে ভার্মার গলা শুনেই ওর গম্ভীর হয়ে যাওয়া মুখটা কল্পনা করে নিতে পারল রাই।
    -"না ম্যাম, তা হলনা, বিশেষ করে ওর হাজব্যান্ড তো একেবারেই মানছেন না। সেদিন থানায় ডেকে বোঝালাম তবু আজও আমায় ফোন করেছিল, আমরা যেন ঐ লাশ পেয়ে ওনার স্ত্রী কে খোঁজা বন্ধ না করে দিই। দেখি আমি আজ যাচ্ছি রাজপালের থানায়, একটু কথা বলতে হবে এ ব্যাপারে। মি: ব্যানার্জী কেও নিয়ে যাব, ওদিকে ওর শ্বশুরও আসবে।
    মঙ্গলসূত্রটা মিসেস ব্যানার্জীর মা শনাক্ত করেছেন ওর মেয়ের বলে। বিয়ের সময় কেনা, গুরগাঁওর এক নামকরা দক্ষিণের দোকানের শাখা থেকে। সে দোকানেও দেখানো হয়েছে, চার বছর আগের রেকর্ড দেখে ওরা কনফার্ম করেছে এইরকম হার ওরা রাজেশ্বরীর বাবাকে বেচেছেন বলে।"
    -"তাহলে এখন কী করবেন?"
    -"দেখি, রাজপাল আর এই দুই পক্ষর সঙ্গে মোলাকাতটা হোক। আপনি আর কিছু জানতে পারলেন? মোটিভ কী হতে পারে সে সম্বন্ধে কোনো আইডিয়া?"
    রাই সেরকম কিছুই এখন ভাবতে পারছেনা। মিসেস গোয়েলকে ধরে রাজীর স্কুলে একটু আলাপ করবে ভেবেছিলো, কিন্তু উনি এখন এখানে নেই, বাইরে গেছেন। তবে ওর পাশের ফ্ল্যাটের মহিলা বললেন যে দুএকদিনের মধ্যেই এসে পড়বেন। নিরুদ্দেশের মোটিভ আর খুন হওয়ার মোটিভ দুটো একদম আলাদা দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে, ভার্মারও তাই মত!

    রাইয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলে ফোন রাখতেই ভার্মা দেখল অর্ক ঢুকছে। এই কদিনে অর্কর চেহারা বেশ খারাপ হয়ে গেছে, সেই ঝকঝকে স্মার্ট ভাব যেটা শুরুতে দেখেছিল ভার্মা সেটা আর নেই, একটু কেমন ঢিলেঢালা ভাব, খোঁচাখোঁচা অল্প দাড়ি, টী শার্ট আর জিনস ও কেমন মলিন। ভার্মা দুজনের কফি দিতে বলল। কফি খেয়েই ওরা বেরিয়ে পড়ল পুলিশের জীপে, অর্কর গাড়ি রইল থানার সামনে। রাজপালের ওখানে পৌঁছে গেল মিনিট কুড়ির মধ্যেই।
    অর্ক রাজপালের ঘরে ঢুকে দেখল রাজীর বাবা বসে আছে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে একেবারে রাজপালের পাশেই টেবিলের ওধারে, বিরোধী পক্ষের মত। ওকে দেখে একটু শীতল দৃষ্টি হেনে চোখ সরিয়ে নিল, রাজীর মা আসেনি।

    রাজপাল আজ আবার ভদ্রতা ও বিনয়ের একেবারে অবতার, উঠে দাঁড়িয়ে হাঁকডাক করে ভার্মা আর অর্ককে বসাল, "আসুন ভার্মাজী, ব্যানার্জীসাব, কী সৌভাগ্য", যেন ওর নিমন্ত্রিত অতিথি এসেছে সব!
    সঙ্গে সঙ্গে চা এসে গেল। ভার্মা অবশ্য এসবে অভিভুতও হয়না, অস্বস্তি বোধও করেনা। দিব্যি তারিয়ে তারিয়ে দুধ মালাই দেওয়া উৎকৃষ্ট চা শেষ করে তারপর কাজের কথায় আসে। রাজীর বাবার উদ্দেশ্যে বলে,
    -"তাহলে সাব আপনি ও আপনার মিসেস, আপনারা শিওর যে গয়নাগুলো আপনার মেয়েরই ও বডিটাও আপনার মেয়ের? এদিকে মি: ব্যানার্জী বলছেন বডিটা ওর স্ত্রীর নয়।"
    গিরীশকে কথা বলতে না দিয়ে রাজপাল হাঁ হাঁ করে ওঠে,
    -"কী যে বলেন ভার্মাজী, গয়নার দোকানে তো আপনার লোকও গেছিল। একজন অপরিচিত মহিলার কাছে ঐ গয়নাগুলো আসবে কীভাবে! তর্কের খাতিরে যদি মেনে নিই ঐ মহিলা গয়নাগুলো চুরি করেছে তাহলে একটু বেশি বেশি কাকতালীয় ব্যাপার হবেনা? পোস্টমর্টেম বলছে মৃত্যু মোটামুটি ভাবে রাজেশ্বরীর নিখোঁজ হওয়ার রাতে বা তার কাছাকাছি সময়ে হয়েছে, মহিলাটির বয়স ধরণ গড়ন সবই রাজেশ্বরীর মত, শুধু বডি এতদিন আগের হওয়া ও জলে থাকা জনিত বিকৃতি ছাড়া। আমার মনে হয় এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই, আর প্রমাণের আবশ্যকতাও দেখিনা। আমাদের দুই থানার উচিত একসাথে কাজ করে খুনীকে ধরা, যে গেছে তাকে তো আর ফেরানো যাবেনা।"
    ভার্মা রাজপালের বক্তৃতার ফাঁকে দুই পক্ষের দিকে লক্ষ্য করে, গিরীশের মুখ ভাবলেশহীন, অর্ককে বেশ উত্তেজিত ও আহত দেখাচ্ছে।
    রাজপাল থামতেই অর্ক প্রায় চেঁচিয়ে বলে ওঠে,
    -"তার মানে আপনারা আমার স্ত্রীকে খোঁজা বন্ধ করে এই মহিলার খুনীকে খুঁজতে আরম্ভ করবেন?"
    এবার সে রাজীর বাবাকে সরাসরি বলে,
    -"আপনার মেয়েকে এতদিন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা আর আপনি এই পুলিশ অফিসারের কথায় সায় দিয়ে চুপচাপ বসে থাকবেন? আপনি কী করে ভাবছেন ওটা রাজী? হতে পারে ও রাজীর বয়সী বা অন্যান্য মিল আছে কিন্তু আপনি ও জানেন ও রাজী নয়। রাজীকে কেউ এভাবে তুলে নিয়েই বা যাবে কেন আর খুনই বা কেন করবে, একবার কেউ এসব ভাববেন না আপনারা?"
    গিরীশকে একটু দিশেহারা দেখাল, সে কিছু বলতে যাবে উত্তরে কিন্তু রাজপাল থামিয়ে দিয়ে কড়া ভাবে অর্ককে বলে,
    -'আপনি একটু ঠান্ডা হন মি: ব্যানার্জী,আমরা পুলিশের লোক, অনেক কিছু করতে পারি আমরা। আপনার স্ত্রী যদি বেঁচে থাকে তাও খুঁজে বের করব, কিন্তু আপাতত আমরা কী করব সেটা আমার আর ভার্মাজীর ওপর ছেড়ে দিন। আপনি ঠিকই বলেছেন গিরীশ সাব মেয়ের বাবা, ওনার চেয়ে দু:খ আর কারুর বেশী নয়, আপনারও নয়। আপনি যদি আমাদের সঙ্গে একমত না হন তাহলে আপনার বক্তব্য মেনে নিয়ে আমরা আপনার স্ত্রীর খোঁজ চালু রাখব। আবার উনি যদি মনে করেন এই ওর মেয়ে, তাহলে ওনার হাতে বডি তুলে দেব এবং ওনার মেয়ের খুনের তদন্ত করব। ঘটনা যাই হোক, সত্যি সামনে আসবেই। এমনও তো হতে পারে আপনি দোষী বলেই খুনের ঘটনাটা চাপা দিতে চাইছেন, বডি চিনতে অস্বীকার করে।"

    এবার অর্ক একেবারে লাল হয়ে গেল রাগে কী দু:খে কে জানে, সে পাল্টা কিছু বলতে যাবে, ভার্মা হাত তুলে থামিয়ে দিল।
    ভার্মা এতক্ষণ কিছু বলেনি, রাজপালের মত কোনো এক পক্ষ অবলম্বন করে উকিল সাজার ইচ্ছে তার নেই, সে পুলিশী যুক্তি দিয়ে সব কিছু দেখে। এসব বাদানুবাদে সময় নষ্ট করার মত ইচ্ছে বা সময় তার নেই। রাজপালের দিকে তাকিয়ে বলল,
    -"এত কথার দরকার নেই রাজপাল জী, আমার সঙ্গে ফরেনসিকের বড় সাব মেহতা সাবের কথা হয়ে গেছে, ওরা ডিএনএ ম্যাচ করাবে। তার রিপোর্ট আসা অবধি আমরা অপেক্ষা করি, তারপরে বডি কার সেটাও কনফার্ম হয়ে যাবে। যদি মিসেস ব্যানার্জীরই হয় তখন কারা বডি নেবে সেটা এনারা ঠিক করে নেবেন আর আমাদের তদন্ত কোন দিকে যাবে সেটা আমরা। এতে আমার মনে হয় কোনো পক্ষেরই আপত্তি থাকার কথা নয়।"

    অর্ক আর কিছু বলল না, ঘাড় নেড়ে সায় দিল, কিন্তু রাজপাল বেশ একটু দমে গেল, বড় অফিসারের নাম শুনে। খুব অসন্তুষ্ট হয়ে বলল,
    -"আপনি তো সব নিজে নিজেই করছেন, আমাকে কিছু বলারও দরকার মনে করেননা। মেহতা সাব আমাকেও ফোন করতে পারতেন, কেন শুধু আপনার সঙ্গেই কথা বললেন। এরকম ভাবে তো দুই থানা মিলে কাজ করা অসম্ভব হয়ে যাবে।"
    ভার্মা রাজপালের চরিত্র টা এ কদিনে বুঝে নিয়েছিল, কিছু ঘটনাও ওর কানে এসেছে। উঠতে উঠতে একটু আলগোছেই বলে,
    -"আরে মেহতা সাব তো ট্রেনিং স্কুলে আমার স্যর ছিলেন, এমনিই ফোন করেছিলেন, একথা ওকথায় এই কেসের কথা উঠেছিল। তা আপনার আপত্তি থাকলে আমি ওনার সঙ্গে কথা বলে নেব, কিন্তু আর তো কোনো উপায় দেখিনা এই সমস্যার সমাধানের।"
    ফরেনসিকের বড় সায়েব চেনাজানা ভার্মার, আর কাকে কাকে চেনে কে জানে, রাজপাল সামলে নিয়ে একেবারে উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে এল।
    -"আরে না না, এতো খুবই ভালো হয়েছে, উত্তম সিদ্ধান্ত, তবে মানে....."
    ওর আমতা আমতার মাঝে এই প্রথম রাজীর বাবা কথা বলে উঠল, তার গলার পরিস্কার স্বর শুনে ভার্মা একটু অবাক হয়ে তাকালো,
    -"না, এটাই ঠিক, যদিও আমার ভুল হয়নি তবু আমি চাই এনিয়ে কোনো সন্দেহ কেউ কোনোদিন যেন না করতে পারে, বলতে পারে যে আমরা ভুল করেছি। এই টেস্টে যদি প্রমান হয় আমি ভুল তাহলে আমাদের চেয়ে খুশী পৃথিবীতে আর কেউ হবেনা।"
    অর্ক সবার আগে রাগ দেখিয়ে পা ঠুকে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে, কাউকে কিছু না বলেই, ভার্মা হাত মেলাতে গেলে রাজপাল আর অসন্তোষ ঢাকতে পারেনা, ফেটে পড়ে,
    -"একবার যদি প্রমাণ পাই এই লোকটার বিরুদ্ধে, এক মিনিটও দেরী করবনা, লক আপে পুরব, আপনি দেখে নেবেন ভার্মাজী, হাঁ।"
    ভার্মা হাসল, "আরে সে হলে তো আমিও আপনার সাথে হাত লাগাব, কোনো চিন্তা করবেন না। কিন্তু প্রমানটা তো চাই। ততক্ষণ ঠান্ডা থাকুন রাজপালজী, কুল, কুল।"
    বেরিয়ে আসতে আসতে চোখের কোণ দিয়ে যে দৃশ্য দেখল ভার্মা তা হল রাজপাল খুব উত্তেজিত হয়ে রাজীর বাবাকে কীসব বলছে, এবং গিরীশ তাকে আশ্বস্ত করছে।
    *****************************
  • PM | 86.96.228.84 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ১৭:৫০495962
  • বড় ভালো হচ্চে।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৪ অক্টোবর ২০১১ ১৯:২১495963
  • দুর্দ্দান্ত! একেবারে নিঁখুত----

    শুধু আবার অপেক্ষা :-(((
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ১৯:৩৪495964
  • তুলে দিয়ে গেলাম!
  • Du | 117.194.205.70 | ২৫ অক্টোবর ২০১১ ২০:০৩495965
  • খুব ভালো হচ্ছে
  • shrabani | 117.239.15.102 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ১০:৫৪495967
  • *********************************
    কয়েক দিনেই এই বাড়ীটা আর তার লোকেরা কেমন হয়ে গেছে, একটা ঘটনা কিভাবে সব কিছু বদলে দিয়েছে। আবার সব স্বাভাবিক হবে তো!
    অঞ্জনার খুব খারাপ লাগছে আজ এসে থেকে, মনে হচ্ছে না এলেই হত। অথচ এরকম একটা সময়ে মা ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়ানো তার কর্তব্য। অর্ক তো সেরকম কোনো কথাই বলছেনা, গম্ভীর। কালও ফোনে যখন কথা হল তখন রাজীর লাশ পাওয়া গেছে সেব্যাপারে কিছু বলেই নি দিদিকে। এখানে এসে মায়ের মুখে যখন শুনল তখন তো ও হতবাক। ভেবেছিল কলেজের বন্ধু একজন রিপোর্টার আছে, তাকে বলে একটা নিউজ করবে রাজী হারানোর ঘটনাকে নিয়ে পুলিশের গাফিলতির কথা লিখে, তারই জন্যে তড়িঘড়ি এল, বর ছেলেকে রেখে। অর্ক লাশের ব্যাপারটা জানিয়ে দিলে দুদিন পরে কুট্টুর পরীক্ষা শেষ হলে সবাইকে নিয়ে ধীরেসুস্থে আসতে পারত।

    অর্ককে ও বুঝতে পারছেনা। অর্ক ওদের সবারই খুব আদরের, বিশেষ করে ওর। ছোট থেকে ভাইকে আগলে আগলে চলত, কারুর ভাইকে কিছু বলার জো ছিলনা ওর সামনে। ভাইও দিদি বলতে অজ্ঞান। বড় হয়ে অবশ্য যে যার নিজের জগতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তবু কোনো সমস্যায় পড়লে অর্ক দিদির কাছেই আসত। আর কিছু না হোক অন্তত দিদিকে সব কথা বলে হালকা হতে চাইত।
    কিন্তু রাজীর সঙ্গে ওর কোনো মনান্তরের কথা ঘুনাক্ষরেও বলেনি কোনোদিন। বাবা চলে যাওয়ার পরে দুজনেরই মাকে নিয়ে সবসময় চিন্তা থাকে, কথা হয় অনবরতই, মা, কলকাতার বাড়ী এইসব নিয়ে। রাজীর এরকম পরিবর্তনের কথা নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। মার কাছে অল্পবিস্তর শুনে ওর মনে হয়েছে এটা চিরাচরিত শাশুড়ী বউ জনিত সমস্যা। মায়ের রাজীকে নিয়ে নালিশকে কোনোদিনই খুব একটা পাত্তা দেয়নি তাই। আজ মনে হচ্ছে সে কী তবে ঠিক করেনি? আর একটু মনোযোগ দেওয়া উচিৎ ছিল, ভাইয়ের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলা উচিৎ ছিল? তাই বা কী করে করত, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মধ্যে যেচে মাথা ঘামানো, এতো তাদের শিক্ষাদীক্ষা রুচি বহির্ভূত কাজ হত!

    কেমন অদ্ভুত আচরণ করছে ভাইটা ওর, ভুতে পাওয়া মানুষের মতন! বলছে ও লাশ নাকি রাজীর নয়, পুলিশ ভুল করছে। আজ দুপুরে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল, মা বলল ফিরে এসে থেকে কেমন ক্ষ্যাপার মতন করছে, প্রচন্ড উত্তেজিত। ও আসতে ওকে বলেছে, "দিদি কিছু কর,ঐ শান্তিবিহারের পুলিশ আর রাজীর বাবা মিলে কোনো একটা ষড়যন্ত্র করছে"। এখন আবার একদম চুপ মেরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে, পরিস্কার করে আর কোনো কথাই বলছে না। অঞ্জনা তো কিছুই বুঝতে পারছেনা, রাজীর বাবা কেন ষড়যন্ত্র করবে, কার বিরুদ্ধে করবে? ওনার একমাত্র মেয়ে হারিয়ে গেছে বা মারা গেছে, ওদের অবস্থাও তেমন কিছু ভালো নেই নিশ্চয়ই। অঞ্জনা একজন মা, ও অনুভব করতে পারে রাজীর মায়ের ব্যথা। এর মাঝে অর্কর এই পাগলামি!অর্ক তো খুব বুদ্ধিমান ছেলে, এরকম একটা ব্যবহার করে কী করে!

    খুব বিরক্ত লাগে, কী করবে ভেবে পায় না,বন্ধুকে ফোন করে। আগে ব্যাঙ্গালোর থেকে কথা বলে রেখেছিল, এখন তাকে পুরো ঘটনার এই নতুন মোড় সম্বন্ধে জানানো দরকার। বন্ধুটিও ওর মতেই মত দেয়,সত্যিকারের পুলিশ ঐ হিন্দি সিনেমার পুলিশের মত অত বোকা হয় না। তারা সবই করে, সবই করতে পারে তবে হয়ত সবকিছু প্রকাশ হয়না বা দোষীর সাজা হয়না, সে সেই নানা মহলের চাপ ইত্যাদিতে, পুলিশের অকর্মণ্যতায় নয়। আর এক্ষেত্রে তো সেরকম কোনো চাপের ব্যাপারই নেই, অর্ককে হ্যারাস করেছে ঠিক আছে, সেটা হয়ত কিছু পয়সাকড়ির জন্য। কিন্তু একটা লাশকে খামকা মিথ্যে মিথ্যে রাজীর লাশ প্রমান করে পুলিশের কী লাভ! তার চেয়ে নিরুদ্দেশের গল্পটা চালিয়ে গেলে তো ওরা অর্ককে বেশী বিরক্ত করতে পারত। এরকম নানা আলোচনা করে একটু ভালো লাগল অঞ্জনার। শেষে বন্ধুটি রাজীর একটা ফোটো চাইল,একটা ছোটো নিউজ বার করতে চেষ্টা করবে। হলে ভালোই হবে, পুলিশও জানুক তাদের মিডিয়ায় জানাশোনা!
  • shrabani | 117.239.15.102 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ১১:০০495968
  • অন্যান্য বারে ও বা ওরা এলে এখানে কত হইহই হয়, কারণ ওরা আসে বড় কম। বাবা মারা যাওয়ার পরে তো সেরকম সবাই মিলে আসাই হয় নি। এক আধ বার কাজে এসেছে বা মাকে আনতে, সে একদিন দুদিনের জন্য, তবু তাতেও মা ভাই কত খুশী হয়েছে বিশেষ করে ভাই। আর আজ দুজনেই যে যার ঘরে ঢুকে বসে আছে। মা অবশ্য তাকে ডেকেছিল, সেই যায়নি, গেলে তো সেই এক কথা রাজীকে নিয়ে আর তার সাথে মায়ের কান্না!
    খিদে পেয়ে গেছে, ও রান্নাঘরে গিয়ে দেখল কী খাবার আছে। সব খাবার টেবিলে সাজিয়ে ও দুজনকে ডাকল একটু কড়া হয়েই। এভাবে চলতে পারেনা, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অর্ককে স্বাভাবিক করতে হবে, ওর সামনে পুরো জীবন পড়ে আছে!

    অনেক বুঝিয়েও মাকে খাওয়ার টেবিলে বসানো গেলনা। শেষে একটু দুধ আর সঙ্গে একটা ঘুমের ওষুধ দিয়ে শুইয়ে দিল। অর্ক নামমাত্র খেয়ে উঠে চলে গেল নিজের ঘরে। অঞ্জনার ক্ষিদে পেয়েছিল, ভালো করে মাছের ঝোল মেখে ভাত খেল। অনেকদিন মায়ের রান্না খাওয়া হয়নি। ওদিকে সুজন আর কুট্টু টা কী করছে কী খাচ্ছে কে জানে! ওরা অবশ্য কদিন পরেই এসে পড়বে, কুট্টুর পরীক্ষা শেষ শনিবার। খেয়েদেয়ে রান্নাঘর গুছিয়ে আলোটালো নিভিয়ে বসার ঘরে এল। সারা ফ্ল্যাটটা নিস্তব্ধ, অন্ধকার। শুধু টেবল ল্যাম্প জ্বালিয়ে সেন্টার টেবল থেকে একটা ম্যাগাজিন তুলে নিল। এত তাড়াতাড়ি ওর ঘুম আসবেনা। একবার ভাবল সুজনকে ফোন করে কিছুক্ষণ গল্প করবে, তাহলে হয়ত একটু ভালো লাগবে। তারপরে খেয়াল হল কাল সকালে স্কুল, ভোরে ওঠা, থাক, ঘুমিয়ে পড়ুক তাড়াতাড়ি।

    বইয়ের পাতা খোলাই পড়ে রইল কোলের ওপর। বসে বসে রাজীর কথাই মনে হতে লাগল। ওর সঙ্গে রাজীর তেমন ঘনিষ্ঠতা ছিলনা, আবার কোনো বিদ্বেষও ছিলনা। একমাত্র আদরের ভাইয়ের বউ, সে হিসেবে সম্পর্কটা হয় খুব আদরের বা খুব বিরূপ হওয়া উচিৎ ছিল, কিন্তু সেরকম কিছুই হয়নি। অর্কর বিয়ের অনেক আগেই ওর বিয়ে হয়ে গেছে। ভাইয়ের বিয়ের ব্যাপারে ও কোনোদিন কোনো কথা বলেনি, এনিয়ে ভাবেইনি। মা বাবা যা করেছে তা নিয়ে আর কিছু ভাবার দরকার বলে মনে করেনি।
    কয়েক মাস আগে সুজন একদিন অফিস থেকে ফিরে বলল যে সে রাস্তায় রাজীকে দেখেছে। ওতো প্রথমে উড়িয়ে দিয়েছিল, রাজী ব্যাঙ্গালোরে অথচ ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি এ আবার সম্ভব নাকি! তার আগের রাতেই অর্কর সঙ্গে কথা হয়েছে, রাজী ওর মা বাবার কাছে কেরালায়। তবু সুজন বার বার বলল সে রাজীকেই দেখেছে পরিস্কার দিনের আলোয়, শপিং মলের মধ্যে ঢুকছিল। সুজনদের বাস সিগন্যালে দাঁড়িয়েছিল তখন। ওর কথায় শেষমেশ অর্ককে ফোনই করে ফেলেছিল কৌতূহলে। সুজন কী দেখেছে সে কথা না বলে রাজী এখন কোথায়, কবে ফিরবে এসব জিজ্ঞেস করেছিল। অর্ক কোনো সন্দেহ করেনি, সাদা মনেই জানিয়েছে রাজী তার বাবা মার কাছেই ত্রিশুরে, দুদিন আগে ফোনও করেছে। সোজাসুজি না জিজ্ঞেস করে ভাইকে বলেছে, বেশী দুরে তো নয় রাজীকে ফেরার পথে ওদের বাড়ি হয়ে যেতে বলতে। কুট্টু মামীকে খুব পছন্দ করে তাই। অর্কও কথা দিয়েছে রাজীকে বলে দেখবে।
    সুজন সব শুনে একেবারে ভোম্বোল, শপিং মলের মেয়েটাকে দেখতে অবিকল নাকি রাজীর মত। ও অনেকদিন থেকেই সুজনকে বলছে চশমা নিতে, কম্পিউটারে বসে বসে চোখদুটোর বারোটা বাজিয়েছে। শেষমেশ সুজনও হার মেনে পরদিন চোখের ডাক্তারের কাছে দৌড়েছে!
    এখন কেমন মনে হচ্ছে সুজন ঠিক দেখেনি তো! রাজীর জীবনে এমন কিছু কী ছিল যা এরা জানেনা। হয়ত অনেককিছু রাজী নিজে বা ওর মা বাবা সঠিক বলেনি। না হলে একটা সাধারণ মেয়ে এভাবে খুন হবে কেন?
    নানা চিন্তা নিয়ে কখন যে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছে জানেনা। ভোরবেলা কাজের মেয়ের কলিং বেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙল। উঠে দরজা খুলতে খুলতে মায়ের গলা পেল, রান্নাঘরে। মা চা বসিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে বলছে ওদের, একদম স্বাভাবিক, কিছুই হয়নি ভাব। স্বস্তি পাবে না চিন্তিত হবে ভাবতে ভাবতে বাথরুমে ঢুকল অঞ্জনা।

    ****************************
  • Netai | 121.241.98.225 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ১৪:৫৪495969
  • টেনশন টেনশন টেনশন ।
  • Nina | 12.149.39.84 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ২০:২৪495970
  • নেত্যকে ক্ক + + +
  • sayan | 115.184.108.57 | ২৭ অক্টোবর ২০১১ ২১:২২495971
  • লাশ রাজীরই। অর্কই খুনী, স্‌প্লিট পার্সোনালিটি।
  • i | 137.157.8.253 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ০৪:৪২495972
  • ব্যাপক।
    আমার নাকে শুধু মল্লিকামালা আর নারকেল তেলের গন্ধ। গন্ধটা খুব সন্দেহজনক।
  • debu | 72.130.151.116 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ১১:৩৩495973
  • সায়ন , খুব ই ভুল করেছো
    (অতো কাঁচা লেখক নয়)
  • ppn | 204.138.240.254 | ২৮ অক্টোবর ২০১১ ১১:৪০495974
  • হুঁ।
  • Du | 117.194.203.12 | ২৯ অক্টোবর ২০১১ ১০:০৮495975
  • উঠিয়ে রাখলাম।
  • a | 208.240.243.170 | ২৯ অক্টোবর ২০১১ ১২:১৭495976
  • গল্পের নামে ক্লু লুকিয়ে নেই তো? প্রতিচ্ছায়া....কার? অর্ক না রাজী?
  • Nina | 69.141.168.183 | ২৯ অক্টোবর ২০১১ ২৩:৩৫495978
  • শ্রাবণী গো দোহাই দোহাই
    (আর) দেরী কোরোনা
    আজ নিশীথে নামিয়ে রাখ
    চারপাতা গো ও ও ও
    না বোলোনা আ আ আ আ

    --গান গাইছি একলা বসে বসে
  • shrabani | 117.239.15.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১২:১৯495979
  • **************************
    ভার্মার ফোন এল যখন মোবাইলে, রাই বাড়িতেই ছিল।

    -"ম্যাডাম, ডি এন এ টেস্টের রিপোর্ট এসে গেছে। রাজপাল রাজেশ্বরীর বাবা মাকে খবর দিয়েছে। অর্কদের বাড়ি খবরটা দিতে আমি যাব। একটু শক্ত হয়ে কথা বলাও দরকার এবারে, কেসটা জটিল হয়ে গেল। আপনি যেতে পারবেন আমার সঙ্গে? তাহলে আমি যাওয়ার পথে এই সন্ধ্যে সাতটা নাগাদ আপনাকে তুলে নেব।"
    রাই অল্প ধাক্কা খেল। অর্কর সেদিনের মুখটা মনে পড়ে গেল। যদিও একদিনের পরিচয় তবু এসময় রমা, অর্ক এদের সামনে দাঁড়ানোর ইচ্ছে ছিলনা। আবার ভার্মা এরকম একটা অনুরোধ করছে, এই প্রথম, তাকে না করতেও খারাপ লাগবে। দুর্বলতাটা ঠেলে ফেলে সে ভার্মাকে হ্যাঁ করে দিল। তারপরে তাড়াতাড়ি কাজ গুছোতে লাগল, আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যাবে। অফিস ছুটির পরে এক দন্ডও দাঁড়াবেনা। আলোককে ফোন করে দেখল তার একটু দেরী হবে। ও ঠিক করল রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যাবে।

    ভার্মা এল কাঁটায় কাঁটায় সাতটায়। ওপরে এলনা, নীচে গেট থেকে ফোন করল। রাই তৈরী ছিল, আলোক সেইমাত্র ঘরে ঢুকেছিল। টুপাইয়ের কাল ম্যাথস টেস্ট, আলোককে বলল চা টা খেয়ে মেয়েকে নিয়ে বসতে।
    সোস্যাইটীর বাইরে এসে দেখল ভার্মা একটা ইন্ডিকাতে এসেছে, পুলিশের ভ্যানে নয়। ওদের ওখান থেকে গার্ডেন সিটীর গেটে পৌঁছতে গাড়ীতে ঠিক দুমিনিট লাগল। ভার্মা এর আগেও এসেছে দু তিনবার, সিকিউরিটীরা চিনে রেখেছিল। বড় করে সেলাম ঠুকে গেট খুলে গাড়ী ভেতরে ঢুকতে দিল। অর্কদের বিল্ডিংয়ের নীচে এসে থামল গাড়ী। একটা অস্বস্তি কেমন বুকের চারপাশে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছিল। ভার্মা বোধহয় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিল, লিফটে ঢুকে অল্প হেসে বলল,
    -"আপনি ম্যাডাম যতটা ভাবছেন ততটা অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি নাও হতে পারে। মুখে যাই বলুন ওরা মনে মনে কিছুটা তো তৈরীই ইতিমধ্যে। বডি পাওয়া গেছে একটা, অর্ক আইডেন্টিফাই করতে গেছে। এছাড়া এতদিন হয়ে গেছে, মহিলার কোনো খবর নেই। সব মিলিয়ে এই খবরটার জন্যে কিছুটা প্রস্তুতি তো নিয়েছেন ওরা। মি: ব্যানার্জী হয়ত একটু রিয়্যাক্ট করবে, অল্প চেঁচামেচি, এছাড়া কিছু হবেনা । আমি ওদের আসছি বলে ফোনও করেছি, আপনি রিল্যাক্স করুন।"

    রাই ধরা পড়ে একটু অপ্রস্তুতের হাসি হাসল। অর্কদের বাড়ির দরজা খুললে এক মহিলা, রাইয়ের থেকে কিছুটা ছোটই হবে, পরনে জীনস আর কুর্তি। মুখের মিল আছে অর্কর সঙ্গে, রাইয়ের মনে হল এই অর্কর দিদি হবে। ভার্মা নিজের পরিচয় দিতে যাচ্ছে এমন সময় অর্ক উঠে এল। ওদের নিয়ে বসার ঘরে বসাল। রাই যা ভেবেছে ঠিকই, মহিলা অর্কর দিদি, অঞ্জনা। ওদের মাও বসেছিলেন, তিনজনে বোধহয় কথাবার্তা হচ্ছিল, সেন্টার টেবিলের ওপর খালি চায়ের কাপ। রাই একটু হেসে অঞ্জনাকে বলল,
    -"আপনার নাম শুনেছি মাসিমার কাছে, কবে এলেন?"
    -"এই তো, দুদিন হোলো। আপনার কথাও শুনছিলাম আমি। আপনি নাকি ডিটেক্ট করেন, খুব ইন্টারেস্টিং তো?"
    রাই বলতে যাবে যে সে সেরকম কিছু করেনা তার পেশা অন্য, তার আগেই ভার্মা বলে উঠল,
    -"আমি খুব দু:খিত, আসলে এরকম একটা খবর দিতে কখনই ঠিক ভালো লাগেনা, যদিও পুলিশের কাজই এরকম। মি: ব্যানার্জী, যে বডিটা আপনি দেখেছেন সেটা আপনার স্ত্রীরই, প্রমান হয়ে গেছে। ডি এন এ টেস্টের রিপোর্ট তাই বলছে, সন্দেহের আর কোনো অবকাশ নেই।"
    সবাই যে যেমন ছিল বসে রইল, সারা ঘরে এক অদ্ভুত নীরবতা। অর্কও কোনো চিৎকার চেঁচামেচি ওরা যেমন ভেবেছিল কিছুই করল না। রাই সোফার হাতলের দিকে তাকিয়ে রইল, চোখ তুলে কারো দিকে তাকাতে পারছিল না।

    কয়েক সেকেন্ড এভাবে কেটে যাবার পরে ভার্মা একটু নড়েচড়ে বসল।
    -"আয়্যাম সরি। এসময় আপনাদের বেশীক্ষণ বিরক্ত করতে চাইনা। আমরা এখন উঠব।"
    অবস্থা দেখে ভার্মা বোধহয় কড়া ভাবে কথা বলার সিদ্ধান্ত আপাতত মুলতুবী রাখল।রাই তাকিয়ে দেখল অর্কর দুচোখে কেমন একটা অদ্ভুত দৃষ্টি, সেটা যে কী বা কেন রাই বুঝে উঠতে পারল না। রমা মুখ নীচু অবস্থাতেই অল্প ফুঁপিয়ে উঠলেন। অর্কর দিদি অঞ্জনা এবার হাল ধরল। মাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিতে থাকল। রাই আর ভার্মা উঠে দাঁড়াল বিদায় নিতে। অর্ক দেখেও দেখল না, কোনো কথা বলল না। ভার্মা অর্কর হাতদুটো ধরে একটু সান্ত্বনার ভঙ্গীতে ঝাঁকিয়ে দরজার বাইরে এল, পেছন পেছন রাই। দুজনে লিফটের সামনে বোতাম টিপে দাঁড়িয়েছে, অর্কদের দরজা খুলে অঞ্জনা বেরিয়ে এল। মুখটা অল্প দু:খী দু:খী। ওদের কাছে এসে বলল,
    -"সরি, বুঝতেই পারছেন কী অবস্থা এখন। আপনাদের সঙ্গে সেভাবে কথাই হলনা।" এবারে সে সোজা তাকায় ভার্মার দিকে,
    -"বডিটা রাজীর এটা কনফার্মড তো? ভাইয়ের কীরকম সন্দেহ আছে, ওতো লাশ দেখেছে।"
    ভার্মা বলে,
    -"আসলে সেটাই স্বাভাবিক। এতদিনকার লাশ তারওপর জলে ভাসা। মোটামুটি রিপোর্টে যা সময় দেওয়া আছে তাতে অনুমান, সেদিন রাতেই কোনো এক সময় মারা হয়েছে। রাজীর বাবার সঙ্গে ডি এন এ ম্যাচ করা হয়েছে, এছাড়া গয়নাগুলো রাজীর মা ও জুয়েলারীর দোকান শনাক্ত করেছে। এরপরে আর সন্দেহের কোনো অবকাশই থাকেনা।"
    অঞ্জনা একটু চুপ থাকে তারপর বলে,
    -"কিন্তু কেন? গয়নাগাঁটি পড়ে রইল, নিলনা, তারমানে এ সাধারণ চোরডাকাতের কাজ নয়। রাজীকে এভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলার পেছনে মোটিভ কী থাকতে পারে, আমি তো ভেবেও কূল পাচ্ছিনা। এমনি মানে কোনো দৈহিক অত্যাচার করেনি তো?"
    রাই চমকালো, ওর কখনো একথা মনে হয়নি, অবশ্য না জিজ্ঞেস করতেই ভার্মা ওকে সবই বলছে, তাই হয়ত খেয়াল করেনি।
    ভার্মা অঞ্জনা কে বলল,
    -"না,সেসব কিছু নয়। তাই এটা সাধারণ দুবৃত্তর কাজ মনে হয়না। যাক,আপনি এখন আছেন তো কিছুদিন? কেসের ব্যাপারে আমাদের আরো জানার দরকার হতে পারে, পরে কথা হবে। এখন তো এটা মার্ডার কেস হয়ে গেল, আমাদের এখন অন্যদিকে চিন্তাভাবনা করতে হবে, মোটিভ ইত্যাদি। আপনার মা, মি: ব্যানার্জী,ওনারা একটু সামলে নিন, আমরা আবার পরে আসব।"
    লিফট এসে গিয়েছিল, রাই কিছু না বলে অঞ্জনার হাতটা একটু ধরল।
    অঞ্জনা একটু বিহ্বল, ভার্মার কথা শুনেই বোধহয়, অন্যমনস্কভাবে ওদের বিদায় জানিয়ে বলল,
    -"হ্যাঁ, আমাকে এখন কিছুদিন থাকতেই হবে। আমার হাজব্যান্ড ছেলেকে নিয়ে আসছে দুদিন পরে। বডি কবে পাওয়া যাবে?"

    এর উত্তর দেওয়ার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল, ভার্মা রাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"আপাতত, উত্তরটা এড়ানো গেল। বডি নিয়ে দুবাড়ীর মধ্যে একটা গন্ডগোল হবে মনে হচ্ছে। বিশেষ করে মাঝখানে যখন রাজপাল আছে। একটা ভালো ব্যাপার, এই বোন মহিলা বেশ শক্ত মনে হয়। রাজপালকে কাউন্টার করতে এরকম একজনকে দরকার।"
    রাজী কোনো উত্তর করল না। ওর মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল। ভার্মাকেও বেশ চিন্তাবিষ্ট মনে হল।
    -' একবার বড় সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে হবে। মোটিভ কী হতে পারে! মহিলার বাবা মাকে ভালো করে প্রশ্ন করা দরকার, কিন্তু ওরা রাজপালের পরামর্শে কাজ করছে। রাজপাল মহা ধুরন্ধর আর বদমায়েশ, সে থাকতে ওরা আমাকে সব কথা ঠিকঠাক খুলে বলবেনা, সব শেখানো কথা বলবে। রাজপালকে বাদ দিয়ে ওদের সাথে কথা বলতে বড়সাহেবের সাহায্য চাই মনে হচ্ছে।"
    রাই শান্তিবিহারের থানা ইন চার্জ রাজপালকে চেনেনা, তবু ভার্মার কথায় কিছুটা আন্দাজ করতে পারছিল। সেও রাজীর বাবা মার সঙ্গে কথা বলতে চায়। রাজীর তরফের কারো কথাই এখনো শোনা হয়নি। বাড়ীর গেটে ভার্মার গাড়ী এসে থামল। রাই নামার আগে ভার্মাকে বলল,
    -"যতদূর জানা গেছে ওদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিশাল কিছু সমস্যা ছিলনা। অর্ক সেদিন কটায় বাড়ী ফিরেছিল?"
    ভার্মা একটু অবাক হল।
    -"আপনাকে বলিনি? অর্ক সেদিন রাত দশটার পরে ফিরেছিল। ওদের সিকিউরিটীকে জিজ্ঞেস করেছিল আমার লোক। তারা আন্দাজ বলেছিল, এর বেশী রাত হলে নাকি খেয়াল করত।"
    -"ঘটনাটা ঘটে কটার সময়?"
    -অর্কর কথা অনুযায়ী সেদিন ওদের যেতে একটু দেরীই হয়েছিল। ওর ছুটির দিন ছিল, বিকেলে ঘুম থেকে উঠে বেরোতে বেরোতে সাড়ে ছটা বেজে গিয়েছিল। ঐ এরিয়া টা তো একটু ঘিঞ্জি ধরণের, রাস্তায় ট্র্যাফিকও ছিল,তাই গাড়ী নিয়ে পৌঁছতেও বেশ সময় লেগেছিল যদিও দুরত্ব বেশী নয়। দোকান সেরে ও যখন গাড়িতে স্ত্রীর জন্যে অপেক্ষা করছিল তখন পৌনে আটটা বেজেছিল। মোবাইলের রেকর্ডও বলছে অর্কর ফোন আন্দাজ ঐ সময়ই এসেছিল।"
    -"পৌনে আটটা থেকে প্রায় দশটা অবধি ও রাজীকে খুঁজছিল? বাজারটা তো বিশেষ বড় এলাকা নয়।"
    ভার্মা হাসল রাইয়ের প্রশ্ন শুনে।
    -"আমিও এটা জানতে চেয়েছিলাম। অর্ক ফোন করেও কিছুটা সময় অপেক্ষা করে, তারপরে দোকানে যায় আবার। বাজারের দোকানগুলোতে দেখতে, লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে প্রায় ঘন্টা দেড়েক চলে যায়। বাড়ি ফেরে দশটার পরে। খোঁজাখুঁজি তে ঐ সময় লাগাটা অস্বাভাবিক নয় ম্যাডাম, তবে মিথ্যে হতেও পারে। বাজারের লোকেরা খোঁজ করতে দেখেছে তবে প্রত্যেক দোকানে গিয়ে খোঁজ করেছে বা অলিগলি কতটা সময় নিয়ে ঘুরেছে কে হলফ করে বলবে! "
    -"ভার্মাজী, আর একটা কথা। রাজীর ইমেল অ্যাকাউন্ট চেক করেছিলেন? আজকালকার মেয়ে, ওদের বাড়ীতে কম্পিউটার আছে, নিশ্চয়ই ইমেল ব্যবহার করত। অর্ক যা বলছে তাতে ওর বন্ধুবান্ধব বলতে স্কুলের টীচাররা। এর বাইরে অর্কর কিছু জানা ছিলনা। মেল টেল যদি দেখা যায়, অর্ককে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন?"
    ভার্মা এবার একটু ঘাবড়ালো। তবে সামলে নিয়ে বলল,
    -"না, ঠিক এদিকটা দেখা হয়নি। আসলে এতদিন তো কেসটা স্রিফ নিখোঁজের ছিল। সেটাও ভাবা হচ্ছিল, স্বামী স্ত্রীর গন্ডগোল। এবার এসব নানা দিক দেখতে হবে, খুনের তদন্তের মত করে। তবে ওর মোবাইলের কল রেকর্ড নেওয়া হয়েছে সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছে থেকে। তাতে অস্বাভাবিক কিছু নেই। শেষ কল অর্কর, যেরকম অর্ক বলেছে। পরে আর হ্যান্ডসেটটা ট্রেস হয়নি। হয়ত সিম খুলে ফেলে দিয়ে মেশিনটা কেউ নিয়ে নিয়েছে।"
    -"গয়না ফেলে গেল আর মোবাইল নিয়ে নিল?"
    -"নাও হতে পারে, মোবাইল খুনী নেয়নি হয়ত। সিম খুলে ফেলেটেলে দিয়েছে হবে, যাতে ট্রেস না হয়।"
    -"সিম খুললেও তো মেশিন ট্রেস করা যায়?"
    -"যায়, যদি কেউ ফোন টা ব্যবহার করে, এক্ষেত্রে সেটা হয়নি।"
    রাই একটু ভাবনার স্বরে বলল,
    -"স্বামী স্ত্রীর গন্ডগোল নিয়ে সঠিক জানতে হলেও তো বন্ধুদের খোঁজ জরুরী ছিল। শুধু রাজীর নয় অর্করও। রাজীর স্কুলের এক প্রাক্তন টীচার মিসেস গোয়েল আমার সোস্যাইটী তে থাকেন। তিনি ছুটিতে বাইরে গিয়েছিলেন, আজ ফেরার কথা। আমি কাল তার সাথে কথা বলব। এছাড়া যদি অসুবিধে না হয়, আমি একটু শান্তিবিহারের ঐ বাজার, মন্দির এলাকাগুলো ঘুরে দেখতে চাই। এছাড়া যদি কোনো ভাবে রাজীর মাবাবার সাথে যদি কথা বলা যায়।"

    ভার্মা সত্যিই ভদ্রলোক। উনি রাইয়ের কথায় কিছু মনে তো করলেনই না উল্টে কথা দিলেন রাজীর ইমেল সংক্রান্ত খবর বার করতে চেষ্টা করবেন। যাবার আগে এও বললেন যে রাইকে শান্তিবিহার ঘুরিয়ে দেখাবার ব্যবস্থাও করবেন শীগগিরই।
    -"আপনি কিছু মনে করছেন না তো আমি এভাবে আপনার কাজে ঢুকে পড়ছি বলে, বিরক্ত করছি না তো?"
    -"আরে না ম্যাডাম, আপনি গুপ্তা সাহেবের বন্ধু, ঐ কেসটাতে আপনি অনেক সাহায্য করেছিলেন আমার মনে আছে। এখানেও আপনার কাছে সেরকম সাহায্য পেলে তো আমাদেরই উপকার হবে। শুধু রাজপালের জন্যেই আমার চিন্তা। সে আপনি ভাববেন না, আমি দেখে নেব। এক কাজ করি,শান্তিবিহার থানার কনস্টেবল যতিন্দর আগে আমাদের এখানে ছিল। ও আমার খুব বাধ্য, শান্তিবিহারের লোক্যাল ছেলে, সব চেনে জানে ভালো। ওকে বলে দেব ওর অফ ডিউটিতে আপনাকে ঘুরে সব দেখিয়ে দেবে। আমার এখানের ছেলেদের সঙ্গে দিলে ওরা আপনাকে সব দেখাতে পারবেনা কারণ শান্তিবিহারে আমি একাই গিয়েছি ওখানকার থানার লোক নিয়ে।"
    রাইয়ের প্রস্তাবটা ভালো লাগল। ওতো এটাই চাইছিল, ঐ মন্দিরের মেয়েটির সঙ্গে কথা বলবে নিজের মত করে, পুলিশ থাকবে না। সেরকমই কথা রইল যে রাজী সামনের শনিবার শান্তিবিহারে যাবে।
    ************************************
  • shrabani | 117.239.15.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১২:৪২495980
  • ****************************
    দিল্লীর আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরের অ্যারাইভাল এই রাত দুপুরেও বেশ সরগরম, পরপর কয়েকটি ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইট এসে পৌঁছেছে। লাগেজের ওখানে ভীড় জমেছে, যুবকটি সেদিকে একবার তাকিয়ে নিজের হাতের ট্রলি স্যুটকেশ আর কাঁধের ব্যাগ নিয়ে একজিট গেটের দিকে এগিয়ে গেল। প্রায় ছ ফিটের ওপর হাইট,পরণে হলুদ টী শার্ট আর ব্লু ডেনিম। রঙটা একটু চাপা মানে প্রায় কালো বলা যায় এমন হলেও মুখচোখ বেশ আকর্ষণীয়, অবশ্য এখন একটু গম্ভীর, চিন্তাক্লিষ্ট দেখাচ্ছে।
    বেরিয়ে একটু ইতস্তত করল, নজর করলে বোঝা যাবে সে এখানে নতুন, এই এয়ারপোর্টে আগে আসেনি। একবার ব্যাগের সাইড পকেট থেকে একটা কাগজ বার করল, নেটে ক্যাব বুক করে রাখা ছিল, নাম্বারটা ওরা মেল এ পাঠিয়ে দিয়েছিল। সেটাই একবার চেক করে নিল। তারপরে দুরে দাঁড়ানো পাহারারত পুলিশটিকে জিজ্ঞেস করল, কোন দিক দিয়ে গেলে সে ক্যাবের কাছে পৌঁছবে। দিল্লী পুলিশের এমনি যতই বদনাম থাকুক, এয়ারপোর্টের পাহারাদার পুলিশ দেখা গেল যথেষ্ট হেল্পফুল। ভালো করে বুঝিয়ে দিল কোথা দিয়ে যেতে হবে, কোথায় বাঁকতে হবে ইত্যাদি।
    বাইরে যাওয়ার আগে সামনের মোবাইল ফোনের কাউন্টারে গিয়ে একটা এখানের সিম নিল, আগেই খোঁজখবর করে কাগজপত্র তার রেডি ছিল, অফিসের পাঠানো। অসুবিধে হলনা।

    ঘন্টাখানেক পরে ফোন চালু করিয়ে সে বাইরের রাস্তা ধরল। একটু যাওয়ার পরেই বেশ সোজা মনে হল, একদল লোক হাঁটছে, তাদের পেছন পেছন সেও চলল। মাঝে মাঝে শুধু খেয়াল করে নানা সাইন আর দিকনির্দেশক বোর্ডগুলো পড়ে নিচ্ছিল।
    এমনি করেই পৌঁছে গেল এয়ারপোর্টের বাইরের রাস্তায়। নতুন এয়ারপোর্টের চারিদিক ঝকঝক করছে,আলোয় ঝলমল, একদিক নানা ট্যাক্সি সার্ভিসের ক্যাবগুলো দাঁড়িয়ে আছে। নাম্বার খুঁজে গাড়ীর কাছে গিয়ে বুকিংয়ের প্রিন্ট আউট দেখাতেই ড্রাইভার সীট থেকে বেরিয়ে এসে প্যাসেঞ্জারের দিকের দরজা খুলে দিল। সে কোনো কথা না বলে লাগেজ নিয়েই ভেতরে বসল। ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট করার আগে একবার গন্তব্য সম্বন্ধে নি:সন্দেহ হওয়ার উদ্দেশ্যেই বোধহয় ঘাড় ঘোরাল,
    -"সাব,লীলা হোটেল হী যানা হ্যায় না?"
    যুবকটিও উত্তরে ঘাড় ঈষৎ হেলিয়ে সম্মতি জানাল। এর বেশী বার্তালাপে তার অসুবিধে ছিল, সে হিন্দীভাষী নয়। ঘড়ির সময় সে এয়ারপোর্টেই সেট করে নিয়েছিল। এখন ঘড়ি দেখল, এখানের হিসেবে মধ্যরাত্তির। মোবাইলটা বার করে অ্যাড্রেস বুক দেখে দেখে কয়েকটা এস এম এস করল, তারপর গাড়ীর সীটে গা এলিয়ে চোখ বুজে রইল।
    রাত হলেও লীলা হোটেলে ব্যস্ততার কমতি নেই, ইন্টারন্যাশনাল হোটেল। বেশ কিছু লোক লাউঞ্জে বসে, তাদের অনেকেই বিদেশী, বাইরে ভাড়াটে গাড়ীর লাইন, রিসেপশনে ব্যস্ত সুবেশ স্মার্ট একাধিক কর্মী। সে গিয়ে দাঁড়িয়ে তার নামধাম জানাতেই একটি ছেলে টুক করে কম্পিউটার দেখে বিশদ বার করে ফেলল। অফিস থেকে বুক করা হয়েছে। অল্প ফর্মালিটী শেষ করে ছেলেটিকে মালপত্র সহ ঘরে পৌঁছে দিয়ে এল পোর্টার।

    ছেলেটি যখন ঘুম থেকে উঠল তখন খোলা পর্দা দিয়ে সকালের রোদ্দুর এসে পড়ছে সারা ঘরময়। চোখ খুলেই কয়েক সেকেন্ড ভ্রু কুঁচকে চারিদিকে তাকালো শুয়ে শুয়েই, কোথায় আছে তা মনে করার চেষ্টা করল বোধহয়। সামনের দেওয়ালের ঘড়িতে সময় দেখে পাশে সাইড টেবিলে রাখা মোবাইলটা তুলে নিল, কতগুলো মেসেজ পড়ে আছে, একটা এখানের অফিসের হেডের। কালই ওনাকে ও এই নাম্বার জানিয়ে দিয়েছিল, বেলা নটায় মিটিং!

    আর দেরী না করে উঠে পড়ল, বাথরুমের দিকে যাবার আগে কী ভেবে, রুম সার্ভিসকে ফোন করে ব্রেকফাস্ট দিতে বলল, কাল রাত থেকে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি, খিদেটা জবর পেয়েছে।
    চান করে, শেভ করে সে যখন বেরিয়ে এল, তখন তার শরীরে ক্লান্তির আর লেশমাত্র নেই। বাইরে যাবার জন্য ড্রেস করার মধ্যেই গরম খাবার, ধোঁয়া ওঠা কফি আর সকালের কাগজ এসে গেল। জানালার পর্দা সরিয়ে দিল, বাইরে বাগান বড় বড় গাছ ঘেরা, অঞ্চলটা রাজধানীর ব্যস্ত এলাকা বলে মনেই হয়না। খাবার শেষ করে কফিতে চুমুক দিতে দিতে কাগজ খুলে ধরল, টাইমস। কয়েক পাতা আলস্যে উল্টোনোর সময় লোক্যাল নিউজের পেজে একদম নীচে কোণার দিকে একটা ছবিতে কেমন চোখ আটকে গেল, তারপরে খবরটা পড়ল, কয়েক লাইনের।
    ছবিটা ভালো করে অনেকবার দেখল, তারপর কী মনে করে ঘরের অন্যপ্রান্তে গিয়ে ব্যাগ খুলে ল্যাপটপ বার করল। হোটেলের ঘরে নেট কানেকশন আছে, দ্রুত হাতে কম্পিউটার চালু করে মেল বক্স খুলল। কিছুক্ষণ পরে আবার কাগজ দেখল, এবার ছবির সাথে খবরটাও খুঁটিয়ে পড়ল।তরপরে কী চিন্তা করে মোবাইল তুলে নিয়ে একটা নাম্বার ডায়াল করল।
    **********************************
  • Netai | 121.241.98.225 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৪:৫৫495981
  • এক্ষণে, একখানি এক্ষপার্ট মতামত দিব।
    অর্ক খুনি নহে।
  • a | 208.240.243.170 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:১০495982
  • আরে ডি এনএ টেস্টটা রাজপাল ডক্টর করেছে রাজীর বাবার সাথে (রাজী মারা গেলে খুব দু:খ পাব)

    রাজীতো লুরুতে, ঠিকানাটা বলুন না, গিয়ে দেখা করে আসি :)
  • shrabani | 117.239.15.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৩৮495983
  • **************************
    মিসেস সঙ্গীতা গোয়েলের সঙ্গে চেনা থাকলেও সেভাবে কোনোদিনই অন্তরঙ্গতা হয়নি রাইয়ের। ভদ্রমহিলার স্বামী নেই, মেয়েকে নিয়ে থাকেন, খুব একটা কারোর সাথে মেলামেশা নেই। উনি কেন কে জানে প্রায়ই স্কুল বদলান। শম্পা বলে আসলে এইসব স্কুলগুলোতে মাইনে খুব একটা ভালো দেয়না, তাই অপেক্ষাকৃত ভালো অফারের চক্করে উনি এদিক ওদিক করেন। অনেকের কাছে এটা শখের চাকরি হলেও মিসেস গোয়েলের কাছে হয়ত তা নয়। রাজীদের স্কুল "লিটল জয়ে" উনি কয়েক মাস আগেও পড়াতেন। রাই একদিন ওনাকে লিফট দিয়েছিল শপিং সেন্টার থেকে, সেদিনই উনি লিটল জয় ছেড়ে প্রয়াগ ইন্টারন্যাশনালে যোগ দিয়েছেন। প্লে স্কুল নয়, প্রাইমারী সেকশনে, বড় স্কুল, মাইনেও বেশী। খুশী ছিলেন তাই আনন্দে সব কথা বলে ফেলেছিলেন রাইকে। রাইও শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। ফোনে একবার দেখা করার কথা বলতেই উনি বেশ খুশী হয়েই রাইকে বাড়ী আসতে বললেন।

    এখন তাই রাই ওর সঙ্গে ওদের ব্যালকনিতে বসে আছে, সামনে টেবিলে চায়ের কাপ আর নমকীনের প্লেট। ভদ্রমহিলার সাথে দেখাসাক্ষাত করতে বোধহয় বিশেষ লোকজন আসেনা। উনি কী করবেন কীভাবে আপ্যায়ন করবেন তা নিয়ে খুব ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, রাই কোনোক্রমে ওকে থামিয়েছে। একথা সেকথা হতে থাকল দুজনেরই মেয়েদের ও তাদের পড়াশোনা নিয়ে। ওর মেয়ে এখন ইলেভেনে, টুপাইয়ের থেকে অনেক বড়। চা শেষ হতেই রাই আর দেরী না করে তার আসার কারণটা জানাল।
    মিসেস গোয়েল যা বললেন তাতে উনি রাজীকে মোটামুটি চিনতেন, ঘনিষ্ঠতা হয়নি। উনি একটু সিনিয়র তাছাড়া ওনার কাছে চাকরিটা দরকারী, অন্যদের মত শখের চাকরি নয়। তাই উনি খুব বেশী মেলামেশায় যেতেননা। অবশ্য প্লে স্কুলে স্টাফ আর কতজন থাকে, জনা পাঁচেক টীচার আর অ্যাকাউন্টের একজন, সুইপার মেড তিনজন। মিসেস প্রকাশ বেশ সিনিয়র, এসেছেন মিসেস গোয়েলের জায়গায়,রাজী আর দুটি মেয়ে মোটামুটি কাছাকাছি বয়সের, এছাড়া অবশ্য প্রিন্সিপ্যাল কাম মালকিন রাধা ম্যাডাম আছেন।
    -"রাজীর কার সঙ্গে বেশী বন্ধুত্ব?"
    -"ওরা তিনজন জুনিয়র গল্প গুজব সব একসাথেই করত, টিফিন খাওয়া। খুব বেশী কারো সাথে বন্ধুত্ব ছিল বলে জানিনা। রাজীর তো বেশীদিন হয়নি, আর আমিও ও আসার কিছুদিন পরেই ছেড়ে দিয়েছি। তবে রাজীকে দেখেছি অফ টাইমে কম্পিউটারে খুব কাটাত, ইন্টারনেটে।'
    -"ইন্টারনেটে? প্লে স্কুলে কম্পিউটারে ইন্টারনেট আছে?"
    -"হ্যাঁ আছে তো। একটা কম্পিউটার স্টাফ রুমে আর একটা রাধা ম্যাডামের ঘরে। এখন সব মডার্ন স্কুল, ছাত্রছাত্রীদের মাবাবার সঙ্গে মেলে যোগাযোগ করা হত। ঐ তিন টীচারের কারুকে দিয়েই এসব করাতেন প্রিন্সিপ্যাল। এছাড়া নানা জিনিস সব ডাউনলোড করতে, বাচ্চাদের জন্য খেলতে খেলতে পড়ানোর নানা আইডিয়া নেট খুঁজে দেখত, আমাদেরও দেখাত।"
    -"রাজীর কোনো ই মেল অ্যাড্রেস আপনার কাছে আছে?"
    -"না, আমার কাছে নেই। তবে আমার কাছে "লিটল জয়ে"র সবার মোবাইল নাম্বার আছে। আপনি বললে আমি ঐ দুজন জুনিয়র টীচার রীটা আর সোনাল কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি।"
    রাই সময় নষ্ট করল না, সম্মতি জানিয়ে সেই দন্ডেই মিসেসে গোয়েলকে অনুরোধ করল ঐ টীচারদের ফোন করতে ।
    ফোনে একতরফা কথোপকথন শুনেই রাই ধরতে পারছিল, ওরা কেউ রাজীর ইমেল অ্যাড্রেস জানেনা। একটু হতাশই হল। মিসেস গোয়েল ফোন রেখে বললেন,
    -"ওরা তো জানেনা বলছে। তবে রীটা একটা কথা বলল, রাজী মাঝে মাঝে কার সাথে চ্যাট না কীসব করত কম্পিউটারে, কোনো বন্ধুর সাথে। আমার মেয়েও এইসব চ্যাটট্যাট না কী বলে সেই করে বন্ধুর সাথে, সব এযুগের ছেলেমেয়েদের ব্যাপার, আমি বুঝিনা, আপনি জানেন?"
    রাই ঘাড় নাড়ল, সে জানে। রাজীর সেরকম কোনো বন্ধুর কথা অর্ক জানেনা। চ্যাট মানেই যে কোনো বন্ধু বা ঘনিষ্ঠ কারুর সঙ্গে করছে তা নাও হতে পারে, কোনো ভার্চুয়্যাল বন্ধুত্ব হতে পারে। তবে এতটা কম্পিউটার স্যাভি যখন তখন রাজীর ইমেল নিশ্চয়ই ছিল, অর্ক জানবে। রাজীর মোবাইলটাও পাওয়া যায়নি। তবে ভার্মা মোবাইলের কল ডিটেলস নিয়েছে সার্ভিস প্রোভাইডারের কাছ থেকে। তাতে সেরকম কারুর কল নেই, সবই স্বাভাবিক।
    -"এই রীটা কোথায় থাকে?"
    -"বোধহয় সত্তর সেক্টরে কোথাও থাকে, বিয়ে হয়নি, সোনালের বিয়ে হয়ে গেছে, ও রাজীর থেকে একটু বড় হবে। এখন তো ওরা স্কুলে, কালকে ফাংশন আছে তারই যোগাড়যন্ত্র করছে। আপনি স্কুলে চলে যান না, এই তো কাছেই।"
    কথাটা রাইয়ের মনে ধরল। লিটল জয় এখান থেকে কাছেই, হেঁটেই যাওয়া যাবে। সে মিসেস গোয়েলের কাছে বিদায় নিয়ে চলল স্কুলের দিকে।
  • pharida | 61.16.232.26 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৪০495984
  • আমি একটা মোক্ষম ক্লু পেয়েছি - কিন্তু বলব না - গল্পের মজাটা তা'লে কমে যাবে :))
  • shrabani | 117.239.15.102 | ৩১ অক্টোবর ২০১১ ১৬:৫৭495985
  • ছোট্ট একতলা বাড়ি, তবে খুব রঙচঙে, দেওয়ালে নানান কার্টুন চরিত্র পেন্ট করা। গেট দিয়ে ঢুকতেই এক চিলতে বাগানে ছোটদের জন্য দোলনা, স্লিপ ইত্যাদি নানা বিনোদনের সরঞ্জাম। স্কুলের সময় কচিকাঁচার শোরগোলে জায়গাটা ভরপুর থাকে, এখন একেবারে শান্ত। গেটের সিকিউরিটীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, দিদিমনিরা সব হলে আছে। হল কোথায় তাও দেখিয়ে দিল।
    হল বলতে একটি বড় ঘর, একপাশে একটু উঁচু করে স্টেজমত করা, ছোট বাচ্চাদেরই উপযোগী। কয়েকটি চেয়ার পাতা, একজন ভদ্রলোক বোধহয় গান শেখাচ্ছেন, হারমোনিয়াম নিয়ে, আর একজন তবলায়। তিনজন মহিলা কোরাস ধরেছেন। রাইকে দেখে সবাই থামল, রাই একটু অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলে,
    -"রীটা ম্যাডাম?'
    একটি রোগা মত বছর চব্বিশের জীনস আর টপ পরা মেয়ে এগিয়ে এল।
    -"হ্যাঁ আমি। আপনি?"
    রাই ওকে একটু বাইরে আসতে অনুরোধ করে। মেয়েটী সবাইকে রিহার্স্যাল চালিয়ে যেতে বলে বাইরে আসে। খুব একটা বিরক্তি নেই চোখেমুখে, উৎসাহও নেই। রাইকে হয়ত কোনো গার্জিয়ান ঠাউরেছে।
    -"আমি মিসেস রাজেশ্বরী ব্যানার্জীর মৃত্যুর কেসটা দেখছি। ওর সম্বন্ধে আমার আপনাকে কিছু জিজ্ঞাস্য ছিল।"
    এবার মেয়েটী একটু চঞ্চল হয়ে উঠল,
    -"তার মানে রাজেশ্বরী সত্যিই মারা গেছে? আপনি পুলিশের লোক?"
    -"সত্যি মানে? আপনি কী শুনেছেন এ ব্যাপারে?"
    মেয়েটী সামলে নিল,
    -"না, মানে বডি পাওয়া গেছে শুনেছিলাম যেন, তবে তা রাজেশ্বরীর কিনা তা নাকি কনফার্মড নয়।"
    রাই একটু অবাক হল। এত কথা এরা জানল কী করে, এই মেয়েটী তার মানে খোঁজখবর করেছে। মেয়েটীর পরের কথাতেই অবশ্য ব্যাপারটা পরিস্কার হল।
    -"আসলে প্রিন্সি ম্যাম থানায় ফোন করেছিলেন। ওনাকে তো কাউকে নিতে হবে রাজেশ্বরীর জায়গায়, তাই রাজীর খোঁজখবর পুলিশের কাছে নিচ্ছিলেন।"
    রাই এবার সরাসরি ইমেল ও চ্যাট সংক্রান্ত কথায় এল। রীটা কেন চ্যাটের কথা উল্লেখ করতে গেল মিসেস গোয়েলের কাছে। নিশ্চয়ই আলাদা করে নজর পড়ার মত কিছু ঘটেছিল।
    প্রথমটায় রীটা কিছু বলতে চাইছিল না, ক্যাজুয়াল অবজারভেশন বলে কাটিয়ে দিচ্ছিল। রাইও নাছোড়বান্দা। ক্রমাগত প্রশ্ন করে যেতে থাকল। "কার সঙ্গে চ্যাট করত? কতক্ষণ? রোজ না মাঝে মাঝে?"
    মেয়েটার বয়স বেশী নয়, বুদ্ধিও সেরকম পাকেনি। নাহলে হয়ত অসুবিধে হত ওর থেকে কথা বার করতে।
    -"প্রায়ই করত, ছুটির পরে বসে বসে। সেইসময় ওকে খুব খুশী খুশী দেখাত। আমি তো ভেবেছিলাম হ্যাজব্যান্ডের সঙ্গে চ্যাট করে বোধহয়। সোনাল ম্যামকে সেকথা বলতে ও বলল যে রাজেশ্বরী ম্যামের হাজব্যান্ডের অফিস তো কাছেই, উনি ঐসময় লাঞ্চে বাড়ী আসেন, ওর সঙ্গে চ্যাট করবে কেন!"
    -"তোমরা জিজ্ঞেস করনি এনিয়ে কিছু?"
    -"সোনাল ম্যাম করেছিল, এমনিই ক্যাজুয়ালি, নেট নিয়ে কীসব কথা বলতে বলতে। তাতে রাজেশ্বরী বলেছিল, ওর কাজিন বাইরে থাকে, তার সাথে চ্যাট করে ও।"

    রাই তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"সেটা তো খুব স্বাভাবিক। তুমি তো প্রথমেই এককথায় বলতে পারতে আমাকে সেকথা। বলনি কেন, তোমার কি কথাটা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল?"
    রীটা একটু ইতস্তত করতে থাকে।
    -"আসলে এমনি কিছু না। আমি রাজেশ্বরীর হাজব্যান্ডকে দেখেছি, ভালোই, খুব স্মার্ট। আমরা এ নিয়ে আলোচনাও করতাম। তাই আমার একটু অদ্ভুত লাগলেও তেমন কিছু মনে হয় নি, আমি এর আগে একথা কাউকে বলিনি। কম্পিউটার টেবলটা স্টাফরুমের এককোণে রাখা আছে। ওখানে বসে কে কী করছে কেউ সাধারণত দেখতে পায়না। একদিন আমি ভুল করে টেবিলে আমার চশমাটা ফেলে এসেছি। আমার পরে রাজেশ্বরী গিয়ে বসেছে সেখানে। আমার কতগুলো হিসেব করার ছিল। আমার পড়তে চশমা লাগে।খাতা খুলে চশমা নেই দেখে কম্পিউটার টেবিলের দিকে গেছি, রাজেশ্বরী টের পায়নি, এত মশগুল ছিল ও। আমি চশমায় যখন হাত দিয়েছি তখন ওর খেয়াল হয়েছে, ও তাড়াতাড়ি উইন্ডোটা মিনিমাইজ করে দেয়। কিন্তু তার আগেই ও কী টাইপ করছিল আমি দেখে নিয়েছি। সেখানে এমন কিছু কথা ছিল যা দেখে মনে হবেনা কেউ কাজিনকে লিখছে। ও বিবাহিত না হলে নি:সন্দেহে ওটা বয়ফ্রেন্ডের উদ্দেশ্যে লেখা মনে হত।
    এর পর থেকেই আমি ওকে নেটে বসলে ভালো করে লক্ষ্য করতাম। যেদিন অনেকক্ষণ কম্পিউটার খালি পেত, খুব খুশী হত, অন্য কেউ পিসি ঘিরে থাকলে অধৈর্য্য, বিরক্ত হত। অথচ ওর বাড়ীতেও কম্পিউটার আছে, নেট কানেকশন আছে। তাহলে এরকমটা কেন করত! "
    -"জিজ্ঞেস করনি সে কথা, ও কম্পিউটার খালি না পেয়ে বিরক্তি দেখালে? "
    রীটা একটু নার্ভাস হাসি হেসে বলল,
    -"হ্যাঁ, করেছিলাম এমনি। একদিন আমাদের অফিসের গুপ্তাজী সকাল থেকে কম্পিউটারে বসে স্কুলের হিসেবপত্র করছিলেন, সেদিন। ও আমার প্রশ্নতে একটু থতমত খেয়ে গেছিল। তারপরে বলল, কম্পিউটারে সবসময় ওর হাজব্যান্ডই বসে থাকেন,তাছাড়া ঘরে এত কাজকর্ম থাকে বলে ওর বসার সময় হয়না। এদিকে স্কুলের ঐ সময়টাই নাকি ওর কাজিন অফিসে ফ্রী থাকে।"
    এনিয়ে যখন আর বেশী কিছু জানা গেলনা রীটার কাছে তখন রাই অন্য প্রসঙ্গে এল,
    -"রাজেশ্বরী কেমন ছিল, তোমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তোমরা বলতে পারবে? ওর কী সম্প্রতি হাজব্যান্ডের সঙ্গে কোনো গোলমাল চলছিল?"
    রীটার মুখ দেখে বোঝা গেল ওর সেরকম কিছু জানা নেই। তবু রাই অপেক্ষা করল কিছু যদি বলে।কিন্তু মেয়েটার আর কিছুই মনে পড়ল না।

    এরপরে রাই সোনালকে ডেকে পাঠাল। সেও ভেতরে ছিল, গানের রিহার্সালে। সে এসে রীটার কথাতেই সায় দিল। যদিও সে নিজে কোনোদিন রাজী কম্পিউটারে কী করত লক্ষ্য করেনি। তবে ওদের কথোপকথনের সময় সে উপস্থিত ছিল, বা রীটাও তাকে এনিয়ে বলেছে। এমনি রাজীর ব্যবহার খুবই ভালো ছিল, হাসিখুশী মিষ্টি মেয়ে। যদিও ঘনিষ্ঠতা তেমন হয়নি তবু দু তিনবার ওরা একে অন্যের বাড়ি গেছে কাজে বা এমনিই।
    সোনাল রীটার থেকে একটু বড়, বিবাহিত, বুঝদারও বেশী সেটা বোঝা যাচ্ছিল। নানা কথার মধ্যে ও একটা কথা বলল যেটা রাই আগে শোনেনি।
    -"ম্যাম, এমনিতে হাজব্যান্ডের সঙ্গে ওর কোনো গন্ডগোল বুঝিনি কখনো, ও বাড়ি নিয়ে খুব একটা কথা বলত না। ওর বাড়ি আমরা গেছি,সুন্দর নতুন ফ্ল্যাট, সাজানো গোছানো। অল্পদিন বিয়ে হয়েছে, সে হিসেবে সব কিছুই ছিল ওদের কাছে, তবু রাজীর টেস্ট সবেতেই এক্সপেন্সিভ ছিল মনে হয়েছে আমার। এমনিতে এ নিয়ে কথা হয়নি, তবে দেখি ও শাড়ি বা ড্রেস সবসময় যাই পরত খুব দামী। ওর এক একটা সাউথ সিল্ক আমাদের স্কুলের এক মাসের মাইনের চেয়ে দামী হবে। গয়নাও তাই, তবে জাহির করত না। ওর শাশুড়ি বা ননদ নাকি খুব সাধারণ কমদামী জামাকাপড় উপহার দিত ওকে, ওর সেসব পছন্দ হতনা, লোককে দিয়ে দিত।একবার ওর ননদের দেওয়া একটা বেশ ভালো জুট সিল্কের শাড়ি ওর পছন্দ হয়নি, সাউথের সিল্কের মত উঙ্কÄল নয় বলে। আমি ওটা ওর কাছ থেকে নিয়েছিলাম দাম দিয়ে। ওদের গাড়িটাও ছোট বলে ও খুব বিরক্ত হত, অথচ এত অল্প বয়সেই ওর স্বামীর গাড়ি বাড়ি সবই আছে। আমার স্বামীর তো পারিবারিক ব্যবসা , অনেক সিনিয়রও, আমাদের বাড়ির বড় গাড়ি। ও একবার আমার বাড়ি গেছিল তখন আমাদের গাড়ি দেখে বলছিল। এমনিতে আর কিছু না তবে কম দামী জিনিস নিয়ে ওর একটু নাক উঁচু ভাব ছিল।"

    রাই শুনে অবাক হল, এরকম কথা অর্কর মাও বলেননি। উনি কী বোঝেননি কোনোদিন যে রাজী ওদের দেওয়া উপহার পেয়ে খুশী হতনা, দিয়ে দিত! এমনিতে রাজীর বাবাও খুব বিশাল কিছু বড়লোক ছিলনা, দু বাড়িই সমান মাপের মধ্যবিত্তই মনে হয়েছে এখনো পর্যন্ত। তবে এতদিনে বাড়িতে শাশুড়ী ননদের মত মহিলাদের কাছ থেকে চরিত্রের এ দিকটা লুকিয়ে রাখতে পেরেছে মানে মেয়েটির অভিনয় ক্ষমতাও ভালোই ছিল।
    এই কাজিনের ব্যাপারটাও বুঝতে পারছেনা। বন্ধু বলতে অসুবিধে কোথায়, চ্যাট করতেই পারে বন্ধুর সাথে, তাকে সম্পর্কের নাম দিতে হবে কেন? তবে কী সত্যিই কোনো কাজিনের সাথে আড্ডা মারত? ছুটির পরে বাড়ি ফিরেও তো বসতে পারত সে কম্পিউটারে, অর্ক তো সন্ধ্যে অবধি অফিসে থাকত, তা না করে ছুটির পর স্কুলে থাকত কেন! তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে স্বামীর লাঞ্চের সময় উপস্থিত থাকতে চেষ্টা করত না কেন, এত কাছে বাড়ি যখন?
    রাজীর এই কাজিনের কথা জানতে হবে, যে বাইরে থাকে। যার সঙ্গে রাজীর খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, প্রায় বয়ফ্রেন্ডের মত। এই কাজিনের ব্যাপারে রাজী হয়ত এদের সম্পর্কটা ঠিক বলেছে সম্বন্ধটা লুকিয়ে। রাইয়ের অনেক বন্ধুবান্ধব আছে কেরালার। ওদের দিকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেরকম কাজিনের সঙ্গে বিয়েটিয়ে চলে, সেরকমই কেউ হলে রোম্যান্টিক একটা সম্বন্ধ হতেই পারে। সেজন্যই কি রাজী ঘন ঘন মাবাবার কাছে যেত! এটা অর্কর সঙ্গে দুরত্ব বা রাজীর ইদানীংকার পরিবর্তনের কারণ হলেও হতে পারে। সেক্ষেত্রে অর্কর মোটিভটা জোরালো হবে। আজকেই ভার্মাকে বলতে হবে বিদেশী কাজিনটি সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে।
    ও সোনাল আর রীটা দুজনকেই এরপর জিজ্ঞেস করে ইদানীং রাজীর মধ্যে কোনো চেঞ্জ দেখা গেছিল কিনা! অবশ্য সে অর্কর মার কাছে শুনেছে রাজীর পরিবর্তন যখন থেকে দেখা গেছে তখনই ও এই চাকরিটা নিয়েছে। অতএব নতুন করে এরা হয়ত কিছু দেখেনি।
    রাইকে অবাক করে দিয়ে রীটা বলল,
    -"অন্য কিছু নয়, তবে রাজী হালে হেয়ার স্টাইল বদলেছিল। ওর চুল বেশ সুন্দর ছিল, কালো লম্বা স্ট্রেট রেশমের মতো, খোলা রাখত নাহলে বিনুনী। কিছুদিন আগে ও চুল অর্ধেক কেটে কার্ল করে, অবশ্য এতেও ওকে সুন্দর দেখাচ্ছিল তবে আমার খুব দু:খ হয়েছিল ওর লম্বা চুলের জন্য। বলল তো ওর হাজব্যান্ডের পছন্দের হেয়ার স্টাইল, সত্যি মিথ্যে জানিনা।"
    সোনাল বড় হওয়ার সুবাদে রীটাকে একটু মৃদু বকুনি দিল, "চুপ রহ, ফালতু কথা,ম্যাডাম ঐরকম বদলের কথা জিজ্ঞেস করেনি। না, ম্যাম, সেরকম কিছু দেখিনি আমরা।"
    রাই ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। তেমন সত্যিই কিছু নয় তবে রাজীর শুধু খাওয়াদাওয়া বা বাড়ির ব্যবহারেই যে পরিবর্তন এসেছিল তা নয়, বাইরেও লোকের নজরে পড়ার মত কিছু কিছু বদল হয়েছিল, সাজপোশাকে। কেন, সেকী তবে ঐ নতুন সম্পর্কের জন্যে! একসাথে বাস করে অর্কর নজরে পড়েনি, ও কিছু বুঝতে পারেনি, এও কী সম্ভব...... !
  • siki | 123.242.248.130 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ০৯:৪৮495986
  • আমি জানি না ফরিদা একই লাইনে ভাবছে কিনা, তবে একটা মোক্ষম কুলু আমারও মাথায় এসছে। এখনই আমিও বলছি না।

    জমে দই হয়ে গেছি। ... একটা ছোট্ট কারেকশন - কালকের ১২:১৯ পিএমের পোস্টে এক জায়গায় লেখা আছে "রাজী কোনও উত্তর করল না। ...' ওটা রাই হবে। রাজী তো নিখোঁজ।
  • Jhiki | 182.253.0.99 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১০:৩১495987
  • লাশটা কি রাজীর নয়, রাজীর বোন/দিদির? রাজীর বাবারও কি কোন পরকীয়া ছিল?
  • pharida | 61.16.232.26 | ০১ নভেম্বর ২০১১ ১০:৪৬495989
  • এদিকে অর্ককে ভালো করে বোঝানো গেলেই গল্পটা শেষ হয়ে যাবে সেটা কেউ ভাবছেন?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট প্রতিক্রিয়া দিন