এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • বুরা না মানো -- ফাগুন লেগেছে বনে বনে

    shrabani
    অন্যান্য | ১৭ মার্চ ২০১১ | ১২৯৫৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kumu | 59.178.55.32 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৫:২৮469266
  • ঢ্‌ঢা-আ-আ-ই
  • dd | 124.247.203.12 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৫:৩০469267
  • সাড়ে আড়াই.........
  • shrabani | 124.124.86.86 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৫:৫২469268
  • পুজো শেষে পুঁ উ উ উ উ শাঁখ বেজে উঠতেই কীর্তন দলের খোল করতালের তীব্রতা আরও বেড়ে ওঠে, আর তার সাথে ফর্সা ধুতি গেঞ্জী পরা তিলক কাটা মুখে, বাবরী চুলো মাথা ঝাঁকানোর ধুমও। কর্তাব্যক্তিদের দল এতক্ষন আটচালায় বসে ছিল এবার উঠে দাঁড়ায় দুই হাত জড়ো করে জয়ধ্বনি দিতে দিতে। আর একসঙ্গে সব আবীরের প্যাকেট খোলে, হাওয়ায় লাল সবুজ নীল হলুদ গোলাপী আবীরের ধুলো ওড়ে ঠিক একসাথে। পূর্ণিমার চাঁদের আলো আরো গাঢ় হয়েছে ততখনে, চরাচর ভেসে যাচ্ছে সাদা জোৎস্নায়। জোৎস্নার ক্যানভাসের ওপর নানা রঙের ছোঁয়ায় রাতের অন্ধকার কোথায় যেন মুখ লুকিয়েছে।

    তারপর শুরু হয় এ ওকে আবীর মাখানো। এই খেলায় বড়দের পায়ে আবীর দেওয়ার নিয়ম নেই কারণ সবার বড় মন্দিরের ঠাকুর সামনে, তার উপস্থিতিতে আর কারো পা ছোঁয়ার রীতি নেই। বড়রা এদিন দেখেও যেন না দেখার ভান করে, নিজেদের সমবয়সীদের কপালে, মাথায়, আবীর ছুঁইয়ে নিরাপদ দুরত্বে আটচালার ভেতরেই থাকে।
    আর মোরামের রাস্তায়, শিব মন্দিরের দুয়ারে, তেঁতুল গাছের নীচে, দোকানের চালায় চারধার কেমন যেন রঙীন হয়ে হাসতে থাকে। কে কাকে রঙ মাখালো, তারা কোন পাড়ার, কোন বাড়ির, জাতপাত, ধনী গরীব সবই সেদিন হিসেবের বার, লাগামছাড়া। কার আবীরের ছোঁয়ায় কে কত বেশী রঙীন হয়েছে, কার দিকে কে কিভাবে চেয়েছে, আগামী বহু দিনের আড্ডার প্রসঙ্গ হবে, বহু দীর্ঘশ্বাসের কারণ, গ্রীষ্মের অনেক তপ্ত কঠিন দুপুর অনিদ্রায় কাটবে এই এক দিনের কথা ভেবে।

    বেশ কিছুক্ষণ আবীর খেলার পর পুরুতদাদুই সিগন্যাল দেয় খেলা থামানোর। তখন বড়রাও উদ্যোগ নিয়ে উঠে পড়ে, রাত হচ্ছে, ঠাকুরের অনেক নিয়মরীতি তখনও বাকী। ঠাকুরেরা পাল্কীতে চড়েন আবার, পুরুত দাদু আগুন দেয় শেষ চাঁচরে, ঠাকুরের চাঁচরে। চাঁচর জ্বলে উঠতেই হুড়োহুড়ি, ঠাকুর প্রণামের ধুম, আবার শোভাযাত্রা শুরু, এবার ঘরে ফেরার পালা। বচ্ছরকার অপেক্ষার প্রহর গোণার শুরু, আবার হবে আসছে বছর।

    ফেরার সময় সবাই একটু বেশী চুপচাপ, কীর্তনের দলের সুর ও গলা দুইই নেমে এসেছে। যাবার সময় দুধার আলোকিত ছিল চাঁচরের আগুনে, এখন সেখানে কালো কালো বাঁশের কাঠামো গুলো দাঁড়িয়ে আছে শুধু।
    মন্দিরের সামনে এসে থামে সবাই। এবার হবে ঠাকুরের প্রাচিত্তির। মন্দিরের ঠাকুরের জন্য নিয়ম,সে আগের দিনের পুরনারীদের থেকেও কঠোর। ভিটের বাইরে পা দিলেই প্রায়শ্চিত্ত না করে ঠাকুর তার ঘরে অর্থাৎ মন্দিরে ঢুকতে পায়না। নানা বিধির সঙ্গে প্রাচিত্তির শেষ হলে ঠাকুরকে মন্দিরে ঢুকিয়ে সবাই ঘরে ফেরে, তার আগে আর এক প্রস্থ আবীর খেলা হয় বেঁচে যাওয়া আবীর দিয়ে, এবার বাড়ির গিন্নীরাও যোগ দেয়।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৫:৫৭469269
  • মাঝখানে সোয়া আড়াইটা বাদ পড়ে গেছে।
  • kumudini | 59.178.55.32 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৭:৩৪469270
  • শ্রাবণীর ছোটোবেলা বড়ো সুন্দর বর্ণ-গন্ধ-উৎসবময় ছিল।ঠাকুরের চাঁচর দর্শন,আবীর খেলা এবং সবশেষে প্রায়শ্চিত্ত-শ্রাবণীর অসাধারণ কলমে আঁকা ছবির পর ছবি। পড়ে মন ভরে গেল,কানায় কানায়।
    শ্রাবণীকে অনুরোধ করি,এই শৈশবস্মৃতির কাহিনীগুলো একত্র করে প্রকাশ করতে।
  • hu | 12.34.246.72 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৮:২১469271
  • ভারী মিষ্টি লেখা। সকালটা রঙীন হয়ে গেল।
  • quark | 202.141.148.99 | ১৭ মার্চ ২০১১ ১৯:১৭469272
  • মনে ক'রো স্বামী? মাইরি?

    এটা বোধ হয় "স্বামী" র সন্দেহজনিত গান...মনে কর আমি নেই ....
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৭ মার্চ ২০১১ ২০:৫৬469273
  • শ্রাবণী, লিখলেই আমার মনটা রঙীন হয়ে ওঠে---লেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরাও ভেসে চলি এক অচেনা আনন্দে---
  • Nina | 64.56.33.254 | ১৭ মার্চ ২০১১ ২৩:১৫469274
  • খুব ইচ্ছে করছে আমারও একটা "হোলির" স্মৃতি তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে---

    সম্ভ্রান্ত হোলি---ছোটবেলায়, আমার দেখা--

    ছোটবেলার সব কথাই আজ নতুন করে , আরও বেশি করে মনে পরে, ভাল লাগে। পাটনায় আমরা থাকতাম খুব সাদামাটা জনতা জনার্দন পাড়ায়---দামী পাড়ায় নয়। হবে কি করে, বাবা মা যখন সংসার পাতলেন, বাবা ফুলটাইম ট্রেডইউনিয়ন করেন আর মা স্কুলে চাকরী। স্বদেশী আমলের বাবার চেনা ডাক্তারদাদু জোর করে নিজের বাড়ীর কাছে খুব সস্তায় অনেকটা জমি কিনিয়ে দিয়েছিলন---" বিয়ে করেছ, সংসারি হয়েছ, এবার তোমাদের ভবিষ্যতের কথা, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে হবে " ইত্যাদি বলে। সেইটুকু কেনারও সঙ্গতি ছিলনা তখন, ট্রেডইউনিয়ন জীবনের বন্ধু বসন্ত গোষ (এই সব বন্ধুত্বের পরিভাষা বড় পবিত্র) টাকা ধার দিয়েছিলেন । তারপর যেমন যেমন ওকালতির পসার বেড়েছে তেমন তেমন হাতে টাকা এসেছে ---একটু একটু করে বাড়ী বেড়ে উঠেছে। সেই সময়কর টিপিক্যাল ধরণে, বড় বড় বারান্দা, বড় উঠান, বড় ছাদ, ঘর কম :-) আর বিরাট বাগান। ওপরে দুটো ফ্ল্যাটে দুই মাসতুতো দিদি-জামাইবাবু টেনান্ট। একতলায় আমরা। "একটি সন্তান" এই ডিসিশনের জন্য মা নিজের দিদির ছেলে ও মেয়েকে এনে একসঙ্গে মানুষ করছিলেন। পরে মাসীমা মেসোমশাই (রিটায়ার্ড) ও আমাদে সঙ্গে থাকতেন।

    এক কথায় জমজমাট বাড়ী , তিনটি হেঁসেল শয়ার করা, গল্প-গুজব, সবসময় বন্ধুবান্ধব আত্মীয়-স্বজন আসা যাওঅয়া, তাই আমি কোনওদিন "আমি একলা" বুঝতে পারিনি। একলষেঁড়ে হইনি :-))

    বিহারে "হোলি" সবচেয়ে বড় তেওহার - উৎসব। বাপরে সাজ সজ রব পড়ে যেত " ফাগুয়া আ গইল বা" । মা, দিদিরা খুব ব্যাস্ত হয়ে পড়ত সব্বার নতুন জামা কাপড় আর কাজের লোকেদের তাদের মনপসন্দ সব নতুন জামা কাপড় দেবার জন্য বাজার করতে। আমাদের ছোটদের, মেয়েদের হত সাদা অর্গ্যান্ডির ফ্রক--মা নিজেই সেলাই করত, পরে দিদি। আর মা একটা খুব নরম মলমলের লম্বা জোব্বা টাইপের জামা বানাত--ঐ ম্যাক্সির মতন আর কি! সেও একজনের জন্য--বলছি পরে কার। এ ছাড়া বাবার হাইকোর্টের মুন্সী নাত্থুজীর ( মুসলমান, কিন্তু নতুন জামা পরতেন) লোয়ার কোর্টের চাপরাসী জানকী প্রসাদ এরকমও কিছু লিস্টে ছিল---আর ছিল নাগিনা ডোম !!

    এই নাগিনা ছিল এক অদ্ভুত চরিত্র। রোগা ডিগডিগে বেখাপ্পা লম্বা, চোখদুটো সবসময় টকটক করছে লাল, পরনে নোংরা ধুতি আর ফতুয়া, নেশায় টলছে , সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতনা--আর ছিল পিলে চমকে দেয়া বাজখাঁই গলার আওয়াজ! সব ছোটরা, আমরা খুব ভয় পেতাম ওকে। নেশাখোর নাগিনা মাঝে মাঝেই উদয় হত , বাইরে দাঁড়িয়ে বিকট চেঁচাত " বাবুজি নাগিনা ডোম আইলবা" । বাবা বেরোলেই সাষ্টাঙ্গে প্রণাম আর " বাবুজি কাম দিউ, ভুখা বানি" টলতে টলতে দুটো নালাও পরিষ্কার করে উঠতে পারতনা, কিন্তু ভিখ নেবেনা, সেই জেদ ছিল। মাকে মাইজী ডাকত আর খুব ভয় পেত কারণ মা বলত--যা নহা কে আব" অত বড় মানুষটা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদত, কিছুতেই চান করবেনা---কত রকমের বাহানা বুখার হয়েছে, গায়ে খুব ব্যাথা ইত্যাদি। রুটি গুড় আর চা এ ছাড়া কিচ্ছু খেতনা, দিলেও না । কখনও কখনও নেশার ঘোরে নালা পরিষ্কার করতে গিয়ে নালার মধ্যেই পরে থাকত। যাইহোক, এই নাগিনা এলেই একটা হৈ হৈ রই রই পরে যেত বাড়ীতে---বাড়ীর চাকর বাকরদের একটা মস্ত খোরাক ছিল এই মানুষটা----ওরা পেছনে লাগত " কেকর জোরু, তোরা মেহেরারু" বল্লে ও ভীষণ ক্ষেপে যাতা গালাগালি করত, ঢিল ছুঁড়ে মারত।

    এই দেখ, হোলি থেকে কি আনহোলি কথায় চলে গিয়েছিলাম, সরি!

    হোলির দিন সক্কালবেলা পুরোনো জামা পরে, ফুলহাতা জামা যাতে গায়ে হাতে রঙ কম লাগে, আর সাদা জামা পরতাম , রঙ লেগে বেশ খোলতাই হয় যাতে। গায়ে মাথায় আচ্ছা কষে সর্ষের তেল মাখতাম ---পরে ঐ বাঁদুরে সবুজ রঙ রুপোলী পেন্ট সটাসট উঠে যাবে চানের সময়। তারপর কচিকাঁচা ছেলেমেয়ের দল বেরিয়ে পরতাম পাড়ায় ---বাড়ী বাড়ী ঘুরে খেলা--বাড়ীর সামনে গিয়ে হাঁক "বুরা না মানো , হোলি হ্যায়" সেই বাড়ীর লোকজন বেরিয়ে আসত রঙ খেলতে, আর যে বাড়ীর লোকজন বেরোতনা তাদের জানলা দিয়ে রঙভর্তী বেলুন ছুঁড়তাম ( ইস,কি দুষ্টুই ছিলাম তাই ভাবি) আমি একজন পালের গোদা কারণ হাতের টিপ ভাল ছিল, অব্যর্থ জানলা গলে বেলুন চলে যেত। এই করে সারা পাড়া হৈ হৈ করে সব্বাইকে রঙ দিয়ে , নিজেরা ভূত হয়ে বাড়ী ফিরতে ফিরতে সেই বেলা একটা । শুরু হত "স্নান প্রজেক্ট" অনেক ঘষেও সব রঙ একদিনে উঠতনা। চান করে হাল্কা ঝোলভাত খেয়ে ছোট্ট একটা ঘুম---কারণ বিকেল থেকে শুরু হবে হোলির নেওতার খানা, পুয়া পুরী পাকওয়ান ( হে হে পিনা ছিলনা, ধ্যুস!)
    মেনু হত ডালপুরি, না না ছোলার ডলের নয়--অড়হড়-দাল তাও আবার সর্ষের তেলে সেঁকা ভাজা ( বিহারী ডেলিকেসি, যে খেয়েছে সে জানে তার স্বাদ নয় "সোয়াদ") ঝাল ঝাল আলুরদম, মীঠা পোলাউ, গরগরে মাংস, ক্ষীর ( ঘন খোয়া-ক্ষীর) আর মালপো। সারা বাড়ীতে কি খুশবু সেসব রান্নার! আর একটা জিনিষ মা বানাত চাল-ডাল আর আলু দিয়ে সাদা খিচ্‌ড়ী, ঘী পরত কিন্তু নুন না। এই সাদা খিচুড়ী একজনের জন্য তৈরি হত।

    বিকেলে সব নতুন জামা পরে রেডি। বাড়ীতে আসতেন বাবার পার্টি অফিসের (R.S.P. ) লোকেরা, স্টেট ও সে¾ট্রাল ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের পুরোনো কিছু বাবার বন্ধুর----নিয়মিত ছিলেন দূর্গা বাগচী ( বর্মা থেকে পালিয়ে আসা এই মানুষটির ঝুলিতে থাকত সব রোমহর্ষক গল্প) সিয়াবাবু, খাস ছাপড়াইয়া , একখান ঝাঁটার মতন গোঁফ, গুরুবচন সিং (মোনা স্‌র্‌দার ) জয়কিষুণবাবু ( বাবার ডানহাত ফ্রম স্বদেশী আমল টু হাইকোর্টে প্রাকটিশ, সবেতে) প্রীতিরঞ্জন সেন ( লেবার কমিশনার) বাবামার আজীবন বন্ধু--ও দিল্লী কিম্বা কলকাতা থেকে ত্রিদিব চৌধুরী (ঢাকুকাকু) প্রতুল সেন পাটনায় এসেছেন তখন কোনও কাজে-- এঁরা সব্বাই কনফার্মড ব্যাচেলর, দেশই ছিল এনাদের সংসার। শুধু জয়কিষুণচাচাজী ছিলেন সংসারী , আমার মা ই তাঁর বিয়ে দিয়েছিলেন।

    বিকেলে ঠাকুরের পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম করে তারপর গুরুজনদের পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম করে শুরু হত বিকেলের আবীর খেলা--সুখা হোলি। সবাই সবাইকে নানা রঙের আবীরে রঙীন করত--শুরু হত খাওয়া-দাওয়া । সিয়াবাবু কি একটা শরবৎ বানিয়ে আনতেন, শুধু বড়দের জন্য, আমরা বাদ ( হে হে এখন বুঝি ভাঙ্গের) কত হাসি গল্প ঠাট্টা, মা দিদিরা গান গাইত, আমরা ছোটরা কবিতা বলতাম । গুরুবচনচাচাজী শায়রি বলতেন।

    ও হ্যাঁ আমাদের বাড়ীর পাশে গুরুদয়াল অর উত্তীমলালের খাটাল ছিল। এই দুই যাদবভাই হোলি সিজন মাতিয়ে রাখত। রাত নটা-দশটা থেকে শুরু হত তাদের যাদব-গোষ্ঠীর হোরি-ধুন চৈতি গান ( হা হা গান না gun) হেঁড়ে গলায় সুরের ভুষ্টিনাশ, তার সঙ্গে ঢোলক ডুম্‌ডুমাডুমডুম ধ্‌ম , ঠনঠনাঠন খঞ্জুনি --মাঝে মাঝে পাড়ার নেড়ি কুকুর গুলো ভয়ে উঁউউউউ করে কেঁদে উঠত ( না গানে যোগ দিত , কে জানে) আরও রাত করে শুরু হত নৌটঙ্কি নাচ --কি হুল্লোড়! ছোকরা মেয়ে সেজে নাচত যদিও--তা তাও আমাদের ছোটদের দেখা বারণ ছিল--কারণ ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি বেশ R রেটেড হয়ে উঠত। ঐ খুব চুরি করে জানলা দিয়ে একটু আধটু যা দেখেছি--খুব রাগ ধরত বড়দের ওপর--সবতাতে যে কেন এত না না ছিল, উফ!

    তো এই হোলির নেওতায় নিয়মিত ছিল নাগিনাও। আসত বিকেল পাঁচটা নাগাৎ। মা ওকে তেল, সাবান নতুন গামছ আর জামা কাপড় দিত। ঘষে ঘষে চান করত সে, ঝাঁকড়া চুল পরিপাটি করে ঝুঁটি বাঁধত। পরিষ্কার চেহারা, নতুন ধুতি-ফতুয়া পরে বেশ ভাল দেখাত। চেনাই যেতনা। আর সেদিন সে থাকত ১০০% সোবার, কোনও নেশার জিনিষের ধার দিয়ে যেতনা। আমাদের ছোটদের একটা করে তালপাতার সেপাই ( নিজেই বানাত) গিফ্‌ট দিত আর হেসে বলত " ডরো নহি খোখি, ই হই আচ্ছা আমদি নাগিনা । (পাটনায় আদমিকে আমদি বলে)

    নাগিনার একট ছোট্ট গল্প --
    বহুদিন আগে তখন নাগিনা জোয়ান মরদ, একবার হোলির সময়, আগজার দিন ( হোলির আগের দিন যেদিন রাত্রে হোলিকাকে পোড়ানো হয়) কয়েকটি উঁচা ঘরানার বড়লোকের ছেলেরা কোনও গ্রাম থেকে একটি গরীবের যুবতী মেয়ে কিম্বা বউ কে তুলে এনে, তার ওপর অকথ্য অত্যাচার করে। নাগিনা ডোমকেও টাকা, গাঁজা ভাঙ্গ মদ নিজেদের থেকে পরসাদি দেয় এবং ভোগ্যা মেয়েটেরও পরসাদি পায় নাগিনা। নেশার ঘোরে কারুরই জ্ঞান ছিলনা। এবং যাবার আগে মেয়েটিকে পুড়িয়ে দেবার ব্যাবস্থা করে যায় ঐ নাগিনা ডোমের সাহাজ্যে --নাগিনা যখন হুঁশ হয় , তখন বহু দেরী হয়ে গেছে। আর মেয়েটিও এতই দুর্ভাগা যে সে পোড়ে সাংঘাতিক ভাবে কিন্তু মরে না। সেই আধপোড়া মেয়েটিকে নাগিনা নিজের খোলিতে রাখে, সাধ্যমত সেবা করে বাঁচায়--কিন্তু সে চোখে ভাল করে দেখতেও পেতনা, কোনও কিছু চিবিয়ে খেতেও পারতনা আর শুধু গোঁ গোঁ শব্দ ছাড়া আর তার কোনও ভাষাও ছিলনা। সেই পঙ্গু দলা পাকানো মেয়েটির কেউ কোনওদিন খোঁজ করেনি---নাগিনার কাছেই সে থেকে গেছে।

    এরই জন্যে প্রতি হোলিতে ঐ সাদা খিচুড়ী, মলমলের আলখাল্লা -জামা , ক্ষীর মালপো বুকে করে নিয়ে -----সারা শহর যেদিন ঝুম বরাবর ঝুম শরাবি আনন্দে মেতে থাকে ---রোজকার নেশাখোর নাগিনা---১০০% সোবার , লম্বা লম্বা পা ফেলে আমাদের বাড়ীর গেট পেরিয়ে চলে যেত---- সম্ব্রান্ত নাগিনা --আর একটি অনুতপ্ত হোলি উদযাপনে!!

  • hu | 12.34.246.72 | ১৭ মার্চ ২০১১ ২৩:২৫469276
  • নীনাদি, কি লিখলে!
  • san | 14.99.14.204 | ১৭ মার্চ ২০১১ ২৩:৪৬469277
  • বা:। নীনাদি ছোটবেলার কথা আরো একটু বেশি লিখতে পারে তো !
  • Sibu | 66.102.14.4 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০১:৪১469278
  • না:, এবারে হোলি খেলতে যাবই। নীনাটা বড্ড ভাল লেখে।
  • Sibu | 66.102.14.4 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০১:৪২469279
  • শ্রাবনীও চমৎকার। তবে নীনা একটু বেশী সেন্টু দিয়েছে বলে ওকে আগে ভাল বলেছি।
  • Du | 216.110.92.7 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০৩:০৮469280
  • নীনাদির এই গল্পগুলো পড়ে আর কিছু লেখার থাকেনা
  • M | 59.93.247.174 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০৫:৫৯469281
  • দিদিয়া,
    এই লেখাটা সত্যি অসাধারন।তুমি যে এত কম লেখো কেন? ঝুলি ভর্তি গপ্প গুলো এট্টুস বেশী করে শেয়ার করতে .............
  • i | 137.157.8.253 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০৭:১৪469282
  • নীনা,
    আরো হোক। সকলের কলমের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন আপনি। নিজেরটিকে লুকিয়ে রাখেন কেন?

    শ্রাবণীকে আরো ডাকতে হবে?
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১৮ মার্চ ২০১১ ০৯:৪১469283
  • নীনা,
    নাগিনার গল্পটা আরো একটু বিশদে হোক!
    মন ভালো আর মন খারাপের হোলী, খুব ভালো।
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:০৩469284
  • দোল শুরু দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর থেকে। তাই বলে সকাল থেকে সারাদিন ব্যস্ততা কম থাকেনা। সকালবেলা চা টায়ের পাট চুকিয়ে গিন্নীরা স্নান সেরে মন্দিরে যান পুজো নিয়ে, এদিনের স্পেশাল পুজো, উপচারও অনেক বেশী বেশী, ক্ষীরটা সন্দেশটা। মন্দিরে পুজো দিয়েই কিন্তু তারা বাড়ি ফেরেনা, শুরু হয় পাড়া ঘুরোনি। আঁচলের এক খুঁটে চাবির গোছা থাকে তো আর এক খুঁটে থাকে একরাশ খুচরো পয়সা ( তখন সিকি আটানার যুগ)। কোনো অপেক্ষাকৃত ফ্যাশনেবল গিন্নীর হাতে থাকে কাপড়ের ছোট পার্স।
    প্রত্যেক বাড়ি গিয়ে গিয়ে ছোটদের হাতে হাতে তুলে দেয় চারানা আটানার উপহার রঙ কেনা বাবদ। ঐ টুকুই কিন্তু ওর জন্যে ছোটদের উত্তেজনার শেষ নেই, বারবার পয়সা গোণা, হিসেব করে দেখা কত হবার সম্ভাবনা আছে। তারপরে বাজেট করা, চিনির শুঁটিভাজায় কতটা খরচ করা হবে আর কতটা রঙে। র ঙের খরচ অবশ্য বেশী করার দরকার নেই। অনেক আগে থেকেই বড় দাদারা দোলের জন্য ফান্ড কালেকশন করতে থাকে। বাড়ির মেয়েরা শ্বশুরবাড়ী থেকে এলে তাদের দোলে না আসার অন্যায়ের জন্য ফাইন নেওয়া হয়, বাইরে চাকরী করা ছেলেদের কাছেও তাই। এরকম ছেলে বা মেয়েরা যারা আবার দোলে পৌঁছে যায় তাদের কাছে আর ফাইন না, চাঁদাই নেওয়া হয়। মোটামুটি এভাবেই প্রচুর পয়সা উঠে যায়।
    আর এই পয়সা দিয়ে কেনা হয় রঙ, ভিজে রঙ আর বোধহয় একটু বড় দাদাদের ও উৎসাহী কাকাদের সিদ্ধির শরবতের মালমশলা । এদিন আর আবীর বা অন্য শুকনো রঙের কোনো সীন নেই। কেউ কেউ নিজের থেকে মুখে দেবার পেন্ট, বাঁদুরে রঙ ইত্যাদি কেনে।

    পিচকারী টিচকারী ও শুধু কিছু দুধেভাতে বাচ্চাদের জন্য, বেলুনও তাই, কারণ এবাড়ীর দোলে রঙ ঢালা হয় বালতি বালতি। বালতির সাইজ অবশ্য ছেলেমেয়েদের সাইজ অনুযায়ী হয়। রঙ গোলাই হয় চৌবাচ্চাতে। বড়বাড়ীর কলতলার বড় চৌবাচ্চা খালি করে সেখানে সারা পাড়ার রঙ গোলা হয়। তবে রঙই, কাদা গোবর ইত্যাদি এ দোলে কড়াভাবে বারন।
    এক এক টার্গেট ঠিক হয় আর পুরো দল প্রায় সেই "আক্রমণ" স্টাইলে ঝাঁপিয়ে পড়ে বালতি উপুড় করে ঢেলে দেয়। রঙ বরষে তো সত্যিই এ রঙের বর্ষা। কোথাও কোনো শুকনো অবকাশ নেই,আপাদমস্তক রঙে চোবানো হয় এই ভিজে দোলে। বড়রা রঙ খেলেনা তবে রঙ মাখে খুশীমনে আর ছোটোদের নানান ফন্দী বাতলে দেয়। কোনো কোনো গিন্নী অল্প বিরক্তি দেখায়, সন্ধ্যেবেলা আবার চান করতে হবে, তবে সেসবে কেউ পাত্তা দেয় না।

    সবচেয়ে বড় টার্গেট থাকে বাড়ির নতুন বউ বা নতুন জামাইরা। এছাড়া থাকে অনিচ্ছুক কিছু লোক যারা প্রতিবছরই বিফল চেষ্টা করে যায় আক্রমনের হাত এড়াতে। এই তালিকায় মহিলাদের সংখ্যাই বেশী। তাদেরকে ধরার জন্য তাদের বাড়ীর লোকের সহায়তায় নতুন নতুন উপায় বার করতে হয়। নিয়মমাফিক প্রতি বাড়ীতে ঘুরে রঙ মাখানোর ফাঁকে এইসব চ্যালেঞ্জই দোলের আসল মজা এনে দেয়।
    ঘরে দরজা দিয়ে বসে থাকলে তেমন কিছু লাভ হয়না। মুশকিল হল দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পরে সঙ্গে সঙ্গে শোবার ঘরে দোর দেওয়া কী সম্ভব নাকি, বিশেষ করে একটু পুরনো হয়ে যাওয়া বউ বা গিন্নী যারা কাজের লোক তাদের পক্ষে। হাজারটা কাজ থাকেনা সংসারের? এবাড়ীর দোলের এই সময়টাই যত গন্ডগোলের, সিষ্টিছাড়া!
  • d | 14.96.35.68 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:০৯469285
  • নীনার শেষ গল্পটা বেশ। কিন্তু এই 'সম্ভ্রান্ত হোলি'টা কী কেস? মানে হঠাৎ এই 'সম্ভ্রান্ত' শব্দের তাৎপর্য্য কী?
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:১৫469287
  • খুব বুদ্ধি করে এক বউ হাতে বাসনের পাঁজা নিয়ে পুকুরের দিকে রওনা দিলেন।
    "এই আমার হাতে এঁটো বাসন, ছুঁবিনা এখন। রঙে বাসন নষ্ট হয়ে যাবে, ধুয়ে আসি কাপড় কেচে তখন রঙ দিস।"
    প্ল্যানটা হল সারা দুপুরই মোটামুটি পুকুরঘাটে কাটিয়ে এদের উৎসাহ একটু কমলে টুক করে ঘরে ঢুকে দোর দেবে। কিন্তু এরাও কম খিলাড়ী নয় কেউ, প্রথমে থমকালেও বুদ্ধিটা ধরতে পেরে যায় অবিলম্বেই। সঙ্গে সঙ্গে দুজন এগিয়ে এসে কাটান দেয়,
    "আমাদের তো ভিজে কাপড়, কোনো দোষ নেই। তুমিও তো রঙে ভিজে যাবে, দোষ হবেনা।"
    ব্যস আর কথা নেই, রে রে করে বাসনকোসন শুদ্ধুই রঙে ডোবানো হল। লাভের মধ্যে আবার ঘরে ঢুকে বেশী করে সাবান নিতে হয় কাঁসার বাসনের রঙ তুলতে আর শাশুড়ীর গঞ্জনা, "দোলের দিনে র ঙ মাখবেনা, ফ্যাশন সব। ন্যাকামো করে আমার কাঁসার বাসন গুলোকেও খারাপ করলে....." ইত্যাদি।

    বাড়ির নতুন বৌ রীনা বউদি। পাশের গ্রামের মেয়ে, দুদিন আগেও এপাড়ায় নিয়মিত ফ্রক পরে পড়তে আসত কাকার কোচিনে। এবাড়ীর বদমাশ ছেলেমেয়ে যারা কেউ কেউ আগে তার বন্ধু ছিল এখন দেওর ননদ, এদের কারনামা ভালোই জানা আছে তার।
    খাওয়াদাওয়া সেরে পড়িমড়ি করে ওপরে উঠে নিজের ঘরে দরজা জানালা এঁটে বসে থাকে। বর দুরে চাকরীর জায়গায়, বাড়িতে শাশুড়ী শ্বশুর আর এক দেওর খালি। সারা দুপুর ধরে পাড়ার সব দেওর ননদের দল ধমকি অনুরোধ ফন্দিফিকির কোনো কিছুতেই দরজা খোলাতে পারলনা। সবার মুখ চুন, এবছর বোধহয় একরত্তি এই বউটার কাছে হেরে যেতে হল, পাড়ার প্রেস্টিজ ডাউন। দু চারজন বড়রাও টিপ্পনী কাটতে শুরু করল। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, সবাই হাল ছেড়ে দিলেও পালের গোদা কয়েকজন তখনও আশায় আশায়, মায়েদের ধমকানিতেও চানে যায়না। বাইরে মাঠে লুকিয়ে অপেক্ষায়।
    শেষমেশ বউদির শাশুড়ী, জেঠিমার খুব মায়া হল, ডেকে নিলে সবাইকে বাড়ির ভেতর চুপিচুপি। দুজন সিঁড়িতে, দুজন বৌদির ঘরের দরজার দুপাশে। জেঠিমা গলা তুলে একটা শাশুড়ীমার্কা হুঙ্কার দিলেন,
    -"বউমা, বিকেল হয়ে গেল, চা বসাবে কখন? তোমার বাবার বেরনোর সময় হল, কাপড়জামা পরে অপেক্ষা করছেন। যাও চা বসাও।"
    নতুন বউ, শাশুড়ীর এহেন আদেশ উপেক্ষা করতে পারেনা, বিকেল হয়ে গেছে সত্যি। দরজা খুলে বেরোতেই চারখানা বালতির মাল উজাড় করে বৌদির ওপর!

    নতুন জামাই এসেছে, কলকাতার। তার সেই প্রথম দোল শ্বশুর বাড়ীতে, কোনো ধারণা নেই, বউও সেভাবে কিছু বলে রাখেনি। এই জামাইটীর আবার একটু পান গুণ ছিল। এমন দিনে নীরস শ্বশুরবাড়ীতে সব নাবালক শালাদের ভীড়ে সঙ্গীহীন, আসরের ঠিক যুত হচ্ছিল না। দ্বিপ্রাহরিক নিদ্রার শেষে একটু উদাস হয়ে পকেটে গ্লাস আর বোতল নিয়ে মাঠের ধারে পুকুরপাড়ে নিরিবিলি দেখে বসেছে।
    চারিদিকের শোভা অত্যন্ত মনোরম, বসন্ত বাতাসও মোলায়েম। গ্লাসে প্রথম চুমুকটা দিয়েছে কী দেয়নি সেই নির্জনে হঠাৎ চারিদিক থেকে হৈ হৈ করে বালতি আক্রমণ।
    এখনও এতদিনেও যখন তার নিজের ঘরেই জামাই এসে গেছে, তিনি সেই শোক ভুলতে পারেননি (পরদিনই ভোরে উঠে চলে যাবার ধমকিতে সবাই বেশ চিন্তায় পড়ে গেছিল, অনেক অনুনয়ে ঠেকানো হয়েছিল।) । সুযোগ পেলেই বাড়ীর প্রতিটি নতুন জামাইকে এবাড়ীর ডেঞ্জারাস শালাশালীদের থেকে সাবধান করে দেওয়া তিনি তার মহান কর্তব্যের মধ্যে ধরেন!
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:৪০469288
  • এদিকে এইরকম ঘোরতর সিরিয়াস বালতি ভরা রঙ নিয়ে দোল খেলার ভীড়ে ছোট্ট মেয়েটার কমলা পিচকারীর রঙ তো জায়গাই খুঁজে পায় না। পিচকিরী অবশ্য দাদা ভরে দিয়েছে কিন্তু সে কাকে রঙ দেবে!
    যার কাছেই যায় সেই তো পা থেকে মাথা অবধি রঙ মেখে ভুত। একটু কোথাও খালি সাদা জায়গাই নেই যেখানে রঙ দেয় ও।
    সঙ্গী আরেক দুধেভাতে, সে আবার প্রথমেই ডিক্লেয়ার করে দিয়েছে, "আমাকে রঙ দিবিনা, আমার যে ঠান্ডার ধাত, মা বকবে কিন্তু।" ব্যস হয়ে গেল, ধাত কী বোঝেনা কিন্তু ঐ যে বারণ করছে! কেননা এর মাও যে বলে দিয়েছে কেউ বারণ করলে তাকে রঙ না দিতে।
    শুকনো মুখে দাদা দিদিদের পেছন পেছন ঘুরতে থাকে। অনেকে রঙ দিয়েও চলে যায়, কিন্তু তার আর ঠিক সুযোগ করে কাউকে দেওয়া হয় না। রঙ পুরোটা পিচকারীতেই পড়ে থাকে।
    দু:খে শেষে বাড়ির দরজার সামনে ভুলো কুকুর শুয়েছিল, তার গায়েই কিছুটা খালি করে পিচকারী। আহারে, ভুলোটার সঙ্গে কেউ দোল খেলেনি! কিন্তু ভুলো এহেন দাক্ষিণ্যে বিন্দুমাত্র খুশী না হয়ে কাঁচা ঘুম ভাঙানোয় দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কেঁউ কেঁউ করতে করতে পালিয়ে গেল।
    সামনের মাঠে বাঁধা জেঠির বুধি গাই অবশ্য ভুলোর মত এত অভদ্র নয়। তাকে মনের খুশীতে এদিক ওদিক ভালো করে রঙ দেওয়ার পরেও সে টুঁ শব্দ টুকুও না করে চোখ বুজে আরামে জাবর কেটেই গেল।
    তবু সেভাবে মন ভরলনা, বেশ দাদাদের মত উপুড় করে সব রঙ কারুর ওপর ঢেলে দিয়ে ভুত না বানাতে পারলে ঠিক বড়দের দোল খেলা হল না যে।

    বাড়ি ঢুকল যখন, বিকেল হয়ে গেছে। মা চানটান সেরে চায়ের আয়োজনে ব্যস্ত, বাবা পরিস্কার ধুতি পাঞ্জাবীতে তৈরী মন্দিরের দোল স্পেশ্যাল আড্ডায় যোগ দিতে যাওয়ার জন্য। মেয়ের চুন মুখ, পিচকারীতে তখনও রঙ পড়ে, "কী হয়েছে? দিদি দাদা সঙ্গে নেয়নি? কেউ বদমাইশী করেছে, কিছু বলেছে? চোখে রঙ দিয়ে দিয়েছে?" অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পরে সমস্যাটা বোঝা গেলে বাবা আবার পোশাক পাল্টে উঠোনে এসে দাঁড়াল। মনের আনন্দে সব রঙ উজাড় করে দিল পিচকারীতে পিচ পিচ শব্দ তুলে।
    পরে মা চান করাতে গিয়ে নারকেল ছোবড়া ঘসতে ঘসতে গজগজ করতে থাকল, "ভালো গেঞ্জিটা নষ্ট করার কী দরকার ছিল, খালি গায়ে দাঁড়ালেই হত। আর এই মেয়েটা হয়েছে ছিঁচকাঁদুনে, আহ্লাদী। সব বাচ্চারা নিজেদের মধ্যে দোল খেলছে, তোকে সবাই মিলে রঙ মাখালো আর তুই শুধু ভুলো আর বুধিকে রঙ দিয়ে চলে এলি। মাথাটা তো এমন হয়েছে কাল নাপিত ডেকে ন্যাড়া করতে হবে মনে হচ্ছে....! ইত্যাদি। ন্যাড়া হতে হওয়ার ভয়ে কুঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকে আর বিনা প্রতিবাদে মায়ের সোডা শ্যাম্পুর আক্রমণ সয়ে যায়!
  • Jhiki | 183.91.64.162 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:৪৯469289
  • "খেলবো হোলি রং দেবোনা'-একান্ত আপন সিনেমার গান, মোহনার দিকে-র নয়।
  • I | 14.96.191.132 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১২:৫৬469290
  • শ্রাবণী ও নীনাদি-কে বধাই। যদিও আমি হোলি এক্কেরে পছন্দ কর না।
    নীনাদি, পাটনায় কোথায় থাকতেন?
  • M | 59.93.165.253 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৪:২৭469291
  • শ্রাবনী,ছোটবেলা মনে পড়লে মন ক্যামন করে না........ সেই জন্যই তো.......এত সুন্দর হয় তোমার লেখাগুলো যে ছুঁয়ে যায়।
  • kumudini | 59.178.49.254 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৪:৫৪469292
  • শ্রাবণী,নীনা,
    তোমাদের লেখা পড়ে এবারের দোল সার্থক হল।ভাগ্যিস তোমরা ছিলে,আর ছিল তোমাদের সুন্দর ছোটবেলা।
    শ্রাবণীর লেখার বিষয়ে আগে লিখেছি,এত ভাল লাগছে কি বলব।

    নীনার লেখা পড়ে আশ্চর্য হয়ে গেলাম,এত শক্তিশালী কলম,এত অভিজ্ঞতা- কিন্তু এত কম লেখ কেন? নাগিনাকে যেন চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে,আর তার একান্ত নিজস্ব তুলনাহীন হোলি-উদ্‌যাপন,যা সম্পূর্ণ হয়েছে নীনার মায়ের ভালবাসার উপহারে।
    ঝরা ফুলের এই খেলার কথা মনে থাকবে।
  • siki | 123.242.248.130 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৫:০০469293
  • দুগ্গাপুজো আর দোল ছাড়া চলে নাকি? আমি থাকতে পারুম না। জ্ঞান হয়ে ইস্তক আজ পর্যন্ত কোনও দোল / হোলি মিস করি নি। এই রোব্বারেও খেলব। গুছিয়ে খেলব।

    ছোট্টবেলার একটা ছবি। ১৯৮৪ সালের দোল। মুর্শিদাবাদে। সারাদিন দোল খেলে সদরঘাটের গঙ্গায় চান করতে যেতাম। ফিরে এসে উত্তাল খাওন দাওন।



    আমায় চেনা যাচ্ছে? :)
  • shrabani | 124.30.233.85 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৫:০৪469294
  • সন্ধ্যায় পোকা ময়রার মিষ্টির দোকান হিমশিম খায় খদ্দেরের চাহিদায়। সব বাড়ী থেকে মিষ্টির থালা বেরোয় এবাড়ী ওবাড়ী মিষ্টি বিলি করতে।
    বাড়ি বাড়ি সন্ধ্যে দেওয়া শেষ হলে শুরু হয় ঠাকুরের আরতি। অন্যদিনে সবাই মন্দিরে নিয়মিত না এলেও আজ এসে সবাই জড়ো হয়। আরতি তারপর শীতল দেখানো হয় আজ লুচি ক্ষীর, দোলের স্পেশ্যাল খাওয়া ঠাকুরের জন্য।
    সব শেষে ঠাকুর পাল্কী করে বেরোন পোড়া ঘর দেখতে। আজকে আর চাঁচরের মত অত ধুমধাম নেই, কীর্তনের দলও অনুপস্থিত। শুধু বাড়ির লোক, ব্রাহ্মনেরা আর কাঁসর ঘন্টা। যাত্রার পথ আজ সংক্ষিপ্ত, শুধু ঠাকুরের চাঁচর অবধি। যেতে যেতে পুরুতদাদু মন্ত্র পড়তে পড়তে পোড়া চাঁচরে জল ছিটোতে থাকেন। রাস্তায় কারুর চোখে পড়ে গেলে থেমে ঠাকুর প্রণাম করে, আজ আর কালকের ভীড় নেই কোথাও। সেই পোড়া কুঁড়েঘরের চাঁচরে এসে আবার একপ্রস্থ পুজো হয়। ফিরে এসে মন্দিরে ঢোকার আগে আবার প্রায়শ্চিত্তের পুজো, ঠাকুরের দোল শেষ।

    আর আমাদের? না, শেষ হয়েও হয়না, একটু বাকী থাকে। খাওয়াদাওয়ার শেষে নতুন আর কমবয়সী বউদের উৎসাহে পাড়ার মাঝখানের মাঠে মাদুর পড়ে জোৎস্নায়। কচিকাঁচাদের সাথে গিন্নীরাও এসে বসে পান গালে দিয়ে, কত্তারা অবশ্যই থাকেনা এ আসরে সব ছেলে ছোকরাদের ব্যাপার।
    অবশ্য সেই ছোকরা ছেলেদেরও এ আসরে দেখা যায়না, তারা তখন সিদ্ধিতে বুঁদ হয়ে অন্য খানে, অন্য আসরে। সেসব গল্প চট করে প্রকাশ হয়না, সারা বছর ধরে একটু একটু করে প্রকাশ্যে আসতে থাকে, কে কী বলেছে করেছে সিদ্ধিলাভ অন্তে, কে কীভাবে হেসেই গেছে রাতভোর!

    জোৎস্না আর বসন্তের হাওয়ায় সব কিছুই কেমন যেন অন্যরকম লাগে, বেশী ভালো, বেশী মধুর। তাই যখন নবৌদি গান ধরে (এই কালই জানলাম এ গান আসলে কার বা কোন সিনেমার, এতদিন, সেই ছোটো থেকে এ গান আমার কাছে নবৌদির দোলের গান হয়েই ছিল ....)

    "আজ হোলী খেলব শ্যাম তোমার সনে
    একলা পেয়েছি তোমায় নিধুবনে,
    .................
    কুঙ্কুম পরাব তোমার রাঙা চরণে।"

    নবৌদির ক্যারকেরে গলায়ও (সবাই বলে নবৌদির অমনই গলা, স্বপ্না চক্রবর্তীর মত)ঐ গান স্বপ্নের মত মনে হয়!

    এমনিভাবেই শেষ হয় আমাদের বাড়ীর দোলের আসর, দোল যা আসলে সবার দোলের একদিন পরে হয়!!!!!!
  • kumu | 59.178.49.254 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৫:১৪469295
  • বা:,শেষ নাহি যে,শেষ কথা কে বলবে!
  • pharida | 220.227.148.193 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৫:২০469296
  • শ্রাবণী, দারুণ। বড় ভালো লাগল।
  • shrabani | 124.124.86.86 | ১৮ মার্চ ২০১১ ১৫:২৬469298
  • কুমু,
    এ তো ছেলেবেলার দোল শেষ, বড়বেলার দোলগুলোও এক এক করে লিখব। ততক্ষন অন্যরাও লিখুক।
    সুমন, ভ্যালেন্টাইন্স এর মত দোলেও হয়ে যাক একখান, এই তো আসল বসন্ত উৎসব!:)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে প্রতিক্রিয়া দিন