এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে : পেরু

    Shuchismita
    অন্যান্য | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ | ৫০৪৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ০৩:৩১467154
  • প্রথমে ছবিগুলোই দিচ্ছি। ঠিক কিভাবে ছড়ালাম জানি না, কিন্তু অধিকাংশ ছবিই বেশ বাজে এসেছে, কেমন আউট অফ ফোকাস! যাই হোক। ছবি বাছতেই গোটাদিন বেরিয়ে গেল। লিখব ধীরেসুস্থে...

    http://picasaweb.google.com/shuchismita.sarkar/Peru#
  • I | 14.96.129.120 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ০৫:৪৬467165
  • হুচিকে একপেট হিংসে :-P
  • Tim | 173.163.204.9 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ০৫:৪৯467176
  • হ্যাঁ আম্মো পোবোল হিংসে দিলুম। বেশ কটা ছবি ভালো লাগলো।
  • d | 14.96.148.136 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ০৮:২৪467187
  • আমিও শুচিস্মিতাকে পেটভরা, বুকভরা হিংসে দিলাম।
  • Bratin | 122.248.183.1 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ১১:৩৪467198
  • ফোটো খুব ভালো লাগলো। এবার গুছিয়ে ভ্রমন কাহিনী লিখে ফেলো
  • Shibanshu | 59.93.67.111 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ১১:৫৪467204
  • ছবি ভালো লাগলো । এবার লেখার পালা...
  • hu | 71.201.25.54 | ০৬ ডিসেম্বর ২০১০ ১৭:৫৭467205
  • :-))) হ্যাঁ, লিখব শিগগির। নইলে ভুলে যাব।
  • I | 14.96.140.63 | ০৮ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:২৯467206
  • হুচি,পেরু কি হল?
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১০ ০৬:১০467207
  • ভ্যানতারা

    দক্ষিণ গোলার্ধে টয়লেটে ফ্লাশ করলে জল নাকি অন্যদিকে ঘোরে। আকাশ নাকি সেখানে অন্যরকম। শীত-গ্রীষ্ম বিপরীত ছন্দে আসে। পৃথিবীর দক্ষিণভাগে পা রাখার সাধ আমার বহুদিনের।

    আমার কলিগ স্টেসি কোনদিন মিড-ওয়েস্টের বাইরে যায়নি। মে মাসে গ্‌র্‌যান্ড ক্যানিয়ন থেকে ঘুরে এসে ওকে ফটো দেখাতে দেখাতে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কখনো বেড়াতে যেতে ইচ্ছে হয় না? আমায় অবাক করে দিয়ে সে মেয়ে বলে, আমি মাচু-পিচু যেতে চাই। যেতে চায় স্টেসি, কিন্তু আমায় ধরল কাল রোগে। কাজে-অকাজে যখন তখন মাচু-পিচুর ছবি খুলে বসে থাকি। কুয়াশাঘেরা মায়াবী পাহাড়ে হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার টুকরো-টাকরা! প্রেমে পড়ে গেলাম অচিরেই।

    তবে সত্যিটা স্বীকার করে নিই আগেভাগেই। ইনকাদের নিয়ে আমার যে খুব একটা মাথাব্যাথা ছিল তা কিন্তু নয়। গ্রীক-রোমান মিথোলজি বা মিশরের রহস্যময়তার সাথে যেভাবে বেড়ে ওঠা ছেলেবেলা থেকেই, তেমনটা হয়নি এদের ক্ষেত্রে। কিন্তু সে তো সুমেরীয় সভ্যতার সাথেও সম্পর্ক বিশেষ নিবিড় ছিল না। তা’বলে তা নিয়ে কি কৌতুহল নেই! আসলে ইনকাদের আমি খুব একটা পাত্তা দিই নি। প্রথমত তাদের রাজত্বের বয়েস মোটে একশো বছর। তারপরেই স্প্যানিশরা এসে পড়ে এবং তাদের গোহারান হারিয়ে দেয়। তার আগে দক্ষিণ আমেরিকার ঐ অঞ্চলে কারা থাকত, কেমন উন্নত ছিল তাদের সভ্যতা তা নিয়ে আমার কোন ধারনা ছিল না। তার ওপরে, ঐ একশো বছরের হিসেবও খুব উৎসাহব্যাঞ্জক নয়। ফ্রান্সিসকো পিজারো যেদিন কাহামারকায় পা রাখলেন তার দুই দশকের মধ্যে ইউরোপে জোহানেস গুটেনবার্গ নামে এক ভদ্রলোক বাইবেল ছাপিয়ে ফেলেছেন। তার ন’শো বছর আগে কালিদাস মেঘদূত লিখে গেছেন। আর ইনকাদের কোন লিখিত বর্ণমালাই ছিল না! লেখালেখির কথা যদি ভুলেও যাই, এ বিস্ময় তো আমার কিছুতেই ঘোচে না যে যারা পাহাড়ের মাথায় অমন মন্দির বানাতে পারে, তারা চাকার প্রয়োজনকে কি করে অগ্রাহ্য করেছিল! উন্নাসিক আমি খেয়াল করি না দুই পাশে দুই মহাসাগর দিয়ে আমেরিকার ভুখণ্ড ছিল বাকি পৃথিবীর থেকে বিচ্ছিন্ন। অন্য সভ্যতাগুলো যেমন পারস্পরিক আদানপ্রদানে সমৃদ্ধ হয়েছে তেমনটা ঘটার সুযোগ হয় নি এখানে। অতএব আমি ভাবি, ভারি তো পেরু! কিই বা দেখার আছে ওখানে! কিন্তু ঐ পাহাড় যে আমায় ডাকে। ঘন সবুজ পাহাড়! তার বুকে জমাট বাঁধা মেঘ! উপেক্ষা করি সাধ্য কি!

    টিনা নামে এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত সহকর্মী আছে আমার। এই কদিন আগে মেক্সিকো থেকে ঘুরে এল। ওর সাথেই কথা হচ্ছিল পেরু নিয়ে। দেখলাম ওর খুব ইচ্ছে যাওয়ার। আর সঙ্গী যখন জুটেই গেল আমিই বা দেরী করি কেন! বেস্ট পেরু ট্যুরের সাথে কথাবার্তা হয়ে গেল। সাত দিনের ট্রিপ। মাথাপিছু একুশশো ডলার ইনক্লুডিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারফেয়ার। এর আগে মিশর গেছিলাম গেট ওয়ান ট্‌র্‌যাভেলসের সাথে। ইচ্ছে ছিল এবারেও ওদের সাথে যাই। কিন্তু ওদের খরচ আরো দু’শো ডলার মত বেশি।

  • I | 14.96.14.245 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১০ ০৬:১৬467155
  • বেশ বেশ!
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১০ ০৮:২৪467156
  • লিমা
    ----

    ||||

    লিমাতে যে লোকটি আমাদের নাম লেখা কাগজ নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তার নাম রবার্তো। প্রথমেই সে জানতে চায় – ইউ স্পিক স্প্যানিশ? ‘না’ বলা মাত্র মুখখানি চুপসে গেল। টিনা যদিও অল্পসল্প স্প্যানিশ বোঝে। এখানে আসার আগে বইপত্র ঘেঁটে একটু ঝালিয়েও নিয়েছে। আমি সে চেষ্টাও করি নি। পাঁচ বছর হিন্দীভাষী অঞ্চলে থেকেও আমার হিন্দী আশাপূর্ণাদেবীর গল্পের মাসিমাদের মত। কাজেই আমি যে সহজ স্প্যানিশ শিক্ষায় মেধার সাক্ষর রাখব না তা বলাই বাহুল্য।

    প্রশান্ত মহাসাগরকে পাশে রেখে অনেক পাকদন্ডী চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে যখন হোটেলে পৌঁছলাম তখন প্রায় রাত দশটা। পাঁচ তলায় ঘর মিলল। ব্যবস্থা মন্দ না, কিন্তু খাবো কি? হোটেলে একটি রেস্তোরাঁ আছে। তবে সেটি দশটাতে বন্ধ হয়ে যায়। আসার সময় দেখছিলাম একটা মস্ত বড় পার্ক। তাকে ঘিরে অনেক সুপারমল, ফুডজয়েন্ট – আলো ঝলমল করছে। রবার্তো জানিয়েছিল ওটা সে¾ট্রাল পার্ক। রাত দশটাতেও বহুলোক ঘুরে বেড়াচ্ছে পার্কে। হোটেল থেকে আড়াই-তিন ব্লক মাত্র। সেখানেই গেলাম ক্ষুন্নিবৃত্তির সন্ধানে। পেরুতে এসেও প্রথম খাবারটা ম্যাকডোনাল্ডেই খেতে হল এবং খাদ্যবস্তুর অখাদ্যতার মাপকাঠিতে এখানেও ম্যাকডি তার ঘরানা অক্ষুণ্ন রেখেছে। খাওয়া তো হল। এবার জল চাই। একটা ছ’শো মিলিলিটার জলের বোতলের দাম ২.৯০। এক্সচেঞ্জ রেট ২.৭ - অর্থাৎ এক ডলারের একটু বেশি। জলই জীবন – কিনতেই হবে। ম্যাকডি থেকেই চার বোতল কিনে ফিরছি, পথে একটা ফার্মাসি পড়ল। ভাবলাম যদি সস্তায় একটু বড় দেখে জলের বোতল পাওয়া যায়। বড় বোতল মিলল না। দোকানের অধিষ্ঠাত্রী জানালেন ছ’শো মিলি বোতল এক সোলেস। তাহলে আর কি লাভ হল! নিরাশ হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছি, হঠাৎ টিউবলাইট জ্বলল - হ্যাঁরে টিনা, কি বলল মহিলা? এক সোলেস? মানে এদেশের টাকা? তাহলে তো চল্লিশ সেন্ট দাম হয়! চল চল চল...

    এই সুযোগে টুক করে জানিয়ে রাখি – এখানে সবাই ডলার নেয়। ডলার দিলে ফেরত পাওয়া যাচ্ছে ইনকা ছাপ মারা এদেশী পয়সা। একটি মুদ্রাভরা থলি, সিঙ্কোনা গাছের পাতা আর জাতীয় পশু ভিকুনা, যাকে আমি ভুল করে লামা ভেবেছিলাম – এই তিনে মিলে পেরুর জাতীয় চিহ্ন। সোনালী-রূপোলী মোহরে ফুটানিকা বটুয়া ঝমঝমিয়ে দিব্যি ফুর্তিতে পথ হাঁটছি।

  • Manish | 59.90.135.107 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১০ ১০:০৮467157
  • বা: বেশ বেশ।

    তাপ্পর।
  • Bratin | 122.248.183.1 | ০৯ ডিসেম্বর ২০১০ ১০:৫৭467158
  • জমে গেছে.....
  • Nina | 68.84.239.41 | ১০ ডিসেম্বর ২০১০ ০১:২৪467159
  • কি হল হুচি?! পেরু এগোয় না ক্যান?
  • Shibanshu | 59.93.70.51 | ১০ ডিসেম্বর ২০১০ ১৭:০৮467160
  • ভালো লেখার এই একটা যন্ত্রনা। বড্ডো তাড়া দেয় লোকে।
  • arindam | 59.93.195.211 | ১১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৭:০৪467161
  • শুচিস্মিতা,
    এইভাবে জ্বালিয়ে আগুন পালিয়ে গেলেন, নিভিয়ে গেলেন না...
    কতবার খুলছি দেখি কিছু নেই...
  • tatin | 130.39.149.89 | ১১ ডিসেম্বর ২০১০ ০৭:২২467162
  • এই থ্রেডটা চোখে পড়লেই গুরুসম্পাদকমণ্ড৯-র ওপর একটা পুরোনো রাগ ফিরে আসে x-(

    মামু এবং পাই দুদলই পেরু যাওয়া নিয়ে গাছে তুলে মই টেনেছিল x-( x-( x-(
  • Pakhi | 72.94.182.10 | ১১ ডিসেম্বর ২০১০ ১০:৪২467163
  • Mistilekha
  • achintyarup | 121.241.214.34 | ১১ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:৫৯467164
  • অপেক্ষা করছি...
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১০ ০১:৩৩467166
  • ||||

    লিমার অবস্থান আন্দিজের প্রতিবাত ঢালে। বৃষ্টি পায় না বিশেষ। ওদিকে বিষুবরেখার কাছে দাঁড়িয়ে থাকা তেজি সূর্য আর প্রশান্ত মহাসাগরের ঠান্ডা স্রোত – দুইয়ে মিলে কুয়াশা জন্মায় এন্তার। লিমার মুখখানি তাই সারাদিন মেঘলাই থাকে। লোকজনে বলে, আকাশ তো নয় – যেন donkey’sbelly! তো সেই গাধার পেটের মত মুখচোরা আকাশ নিয়েই আমাদের পরের দিনের লিমা সফর শুরু হল। সারাদিনের বাসট্যুর। সোয়া ন’টা নাগাদ হোটেল থেকে ব্রেকফাস্ট খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম। লিমার রাস্তাগুলো বেশ সরু হলে কি হবে, ট্রাফিক মোটামুটি সুশৃঙ্খল। খুব বেশি যানজট নেই। নভেম্বরে লিমাতে বসন্ত আসে। পলাশের মত উঙ্কÄল কমলা ফুল ফুটে রয়েছে রাশিরাশি, ছড়িয়ে আছে রাস্তায়। গাছভরা জবা। গৃহস্থের বাড়ির গেটে লতানো বোগেনভোলিয়া। ঘুমভাঙা চোখে, আড়মোড়া ভেঙে শুরু হয়ে গেল দিন...

    আমাদের ট্যুরগ্রুপে ইংরিজিভাষী, স্প্যানিশভাষী – দুই দলই আছে। গাইড মেয়েদুটিরও স্প্যানিশ বলতেই বেশী আগ্রহ। আমাদের তাই সাবটাইটেলহীন সিনেমা দেখা ছাড়া গতি নেই। বাস চলছে ‘হুয়াকা পুকলানা’ নামে ২০০ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের এক পিরামিডের পাশ দিয়ে। আমি স্প্যানিশ গাইডের থিক অ্যাকসেন্টের ইংরিজি বোঝার চেষ্টা করছি আর ভাবছি বাস থামলে নেমে দেখতে হবে ব্যাপারটা কি। ভাবতে ভাবতেই বাস বেরিয়ে গেল অন্য রাস্তা দিয়ে। জানা গেল বাসের এখানে থামার কথা নয়। আমরা যাচ্ছি লিমার হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্ট দেখতে – পিজারো যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিলেন। ‘হুয়াকা পুকলানা’ রাস্তায় পড়ে বলে গাইড মহোদ দ করে দেখিয়ে দিলেন। বোঝো কান্ড!

    পেরু আসার আগে আমি গোটা পাঁচেক মোটাসোটা বই জোগাড় করেছিলাম জ্ঞানার্জন করব বলে। কিন্তু যতই সময় এগিয়ে আসে ততই দেখি, এক সমুদ্র পড়ব ভেবে একটি পাতাও শেষ করি নি। শেষ পর্যন্ত প্লেনে বসে যে বইটি পড়লাম সেটি ১৯৮৪ সালে লেখা একটি ট্রাভেলগ। রোনাল্ড রাইটের লেখা ‘কাট স্টোনস অ্যান্ড ক্রসরোডস’। আমার পড়াশোনার ব্যাপ্তি বেশি নয়, কিন্তু আমার স্বল্প অভিজ্ঞতায় সরসতা ও সহমর্মিতার এমন মেলবন্ধন আমি খুব বেশি দেখি নি। ’৮৪তে লেখা বই। তাই কিছু কিছু বিষয় রাইট সাহেব যেমনটি দেখেছেন তার থেকে কিছু অন্যরকম ঠেকল আমার কাছে। সেসব বাদ দিয়েও এই বই বেশ প্রাসঙ্গিক। আমার লেখায় মাঝে-মধ্যে আমি যা কিছু টীকা-টিপ্পনি কাটব তার ঋণ আগেভাগেই স্বীকার করে নিচ্ছি রোনাল্ডবাবুর কাছে। এছাড়াও দু-একটি গাইডবুকের সাহায্য নিয়েছি।

    লিমা শহরটা তৈরী হয়েছিল ১৫৩৫ এ। ফ্রান্সিসকো পিজারো পেরুতে আসেন তার তিন বছর আগে। ইনকা সাম্রাজ্যে তখন গৃহবিবাদ চলছে হুয়াসকার আর আতাহুয়ালপা – দুই বৈমাত্রেয় ভাইয়ের মধ্যে। দুজনেই একাদশ ইনকা হুয়ানা কাপাকের সন্তান। হুয়ানা কাপাক বেশ বড়সড় রাজা ছিলেন। উত্তরে কলম্বিয়া আর ইকুয়েডরের বর্ডার থেকে দক্ষিনে চিলি পর্যন্ত তখন ইনকা সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি। ইনকা সাম্রাজ্য অবশ্য প্রস্থে খুব একটা বড় ছিল না। পূর্বদিকে আন্দিজ পেরিয়ে আমাজনের জঙ্গলের ভেতরে তারা কখনও ঢোকে নি। প্রথমত আমাজনের জঙ্গল ছিল তাদের অচেনা। ঐ সাপ-খোপ পোকা-মাকড়ের মধ্যে যারা বাস করে তাদের নিয়মকানুনও ইনকাদের পরিচিত ‘সভ্য’ জগতের থেকে আলাদা। ওখানকার মানুষেরা ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বাস করে। তাদের ওপর প্ল্যান করে আক্রমণ করতে গেলে তারা স্রেফ ভ্যানিশ হয়ে যায়। জঙ্গলের আনাচে-কানাচে কোথায় লুকিয়ে পড়ে তা খুঁজে বার করে কার সাধ্য। তার ওপর ইনকাদের নিজেদের স্ট্যান্ডার্ডে আমাজনের লোকেরা অসভ্য, তাদের সমকক্ষই নয়। তাই আমাজনে রাজ্য বিস্তারে ইনকা রাজারা খুব একটা উৎসাহ দেখায় নি। তাদের কাছে যেটা সভ্য পরিচিত গন্ডী সেটাই তারা দখল করেছিল।

    ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’– এই কথাটা খুব শুনেছি – যখনই ইনকাদের নিয়ে কিছু পড়েছি। ‘সুয়ু’ মানে হল প্রদেশ। ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’ কথার অর্থ চার প্রদেশ। ইনকা সাম্রাজ্য উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পূর্ব, দক্ষিণ-পশ্চিম – এই চার প্রদেশে বিভক্ত। আর ইনকাদের বিশ্বাসে আইডিয়াল ওয়ার্ল্ড বলে যদি কিছু থাকে তাহলে সেটা হল এই ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’। সেটাকে ইনকা সাম্রাজ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হবে তার কোন মানে নেই। রাইট সাহেব তাঁর বইতে লিখেছেন ওয়ামান পুমা নামে এক ভদ্রলোকের কথা – যিনি জন্মেছেন ষোড়শ শতাব্দীতে, ইনকা সাম্রাজ্যের সূর্য যখন অস্ত গেছে, পেরু স্প্যানিশদের কবলে। ওয়ামান পুমা তাঁর য্‌ৎসামান্য স্প্যানিশে এক চিঠি লিখেছিলেন স্প্যানিশ সম্রাটকে। প্রায় বারোশ পাতার সেই দলিল। তাতে লেখা আছে তাঁর ভাবনায় আদর্শ পৃথিবী কেমন হওয়া উচিত। আমি উদ্ধৃত করার লোভ সামলাতে পারছি না।
    “YoushouldconsiderthatalltheworldisofGod, andthatthusCastileisoftheSpaniards, andtheIndies[America]oftheIndians, andGuinea[Africa]oftheNegroes–thatallthesepeoplesarethelawfulownersoftheirlands….SooneSpaniardoranothershouldnotintrudeonothernations, becausetheyareSpaniardsfromCastile, andbytherightandlawoftheIndianstheyarecalledmitmaqCastillamantasamuq[foreigners, thosewhocomefromCastile].TheIndiansarethenaturalownersofthiskingdom, andtheSpaniardsarethenaturalownersofSpain:eachisthelawfulproprietorinhisownrealm.”

    তারপর ওয়ামান পুমা লিখছেন এই নতুন পৃথিবী কিভাবে ভাগ হওয়া উচিত তার যোগ্য উত্তরাধিকারীদের মধ্যে এবং সেখানেও সেই ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’– চারটি প্রদেশ।
    “Ioffer, firstly, asonofmine, agreat-nephewofTupacInkaYupanki, aspriceofthiskingdom[Peru], and, secondly, ablackprinceinthekingdomofGuinea, thirdly, akingoftheChristiansofRome[Europe], andfourthly, akingoftheMoorsofGrandTurkey–thefourtobecrownedwiththeirsceptersandrobes;andinthemiddleofthesefourpartsshallstandtheMajestyandMonarchoftheWorld, KingPhilip.”[TheFirstNewChronicleandGoodGovernment, WamanPuma]

    শুধু লেখা না, ওয়ামান পুমা ছবি এঁকেও বুঝিয়েছেন ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’-কে কেমন হতে হবে। প্রায় সাড়ে চারশো স্কেচ আছে ওয়ামান পুমার প্রস্তাবনায়। ‘ফার্স্ট নিউ ক্রনিকল’ কোনদিন স্পেন সম্রাটের হাতে পড়েছিল কিনা জানা যায় না। ১৯০৮ সালে রল কোপেনহেগেন লাইব্রেরী থেকে এটি উদ্ধার হয়। তাহুয়ানতিনসুয়ু’– কুসকোর করিকাঞ্চা মন্দিরে আধুনিক শিল্পীর কল্পনায় - http://tinyurl.com/2e94nmh]

    যে কারনে ‘তাহুয়ানতিনসুয়ু’-র প্রসঙ্গ উঠল সেটা শেষ করে নিই। নবম ইনকা পাচাকুটির সময় থেকে ইনকাদের রাজধানী কুসকো। গোটা সাম্রাজ্য চারটি প্রদেশে বিভক্ত। কোন প্রদেশে কোন রকম বিক্ষোভের সম্ভাবনা দেখা দিলেই বিদ্রোহী রাজ কর্মচারীকে বদলি করে দাও অন্য প্রদেশে। সেখানে অচেনা পরিবেশে সে আপসে শুধরে যাবে। নতুন কোন দেশ জয় করলে সেই দেশের রাজপুত্রদের আদর করে নিয়ে এসে রাখা হত কুসকোতে। রাজকন্যে হলে তো কথাই নেই। বিয়ে করে ফেল। তারপর আর পরাজিত রাজার সাহস কি বিদ্রোহ করে! লিখতে পড়তে জানত না হয়তো, কিন্তু ইনকাদের বুদ্ধি ছিল খুব।

    একাদশ ইনকা – অর্থাৎ হুয়াসকার আর আতাহুয়ালপার বাবা হুয়ানা কাপাক মারা যান স্মল পক্সে। আন্দিজে এই অসুখটা ছিল না। ১৫২৩-এ স্প্যানিশরা অ্যামেরিকায় পৌঁছায় এবং সেই সঙ্গে এই রোগটি নিয়ে আসে। হুয়ানা কাপাক যাকে নিজের উত্তরাধিকারী বেছে গেছিলেন সেই নিনানচুকিও মারা যান একই রোগে একই বছরে। হুয়াসকার তখন রাজা হয়ে বসেন। বৈমাত্রেয় ভাই আতাহুয়ালপার সেটা পছন্দ হয় না। পেরুর উত্তর পশ্চিমে কাহামারকা নামে একটি শহর থেকে তিনি ভাইয়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিকল্পনা শুরু করেন। হুয়াসকারের রাজত্বের নবম বছরে ১৫৩২ সালে আতাহুয়ালপার বিদ্রোহ সফল হয়। হুয়াসকারকে সরিয়ে তিনি কুসকো দখল করেন। ওদিকে ফ্রান্সিসকো পিজারো ততক্ষণে কাহামারকা পৌঁছে গেছেন। আতাহুয়ালপার আশি হাজার সৈন্যের সামনে ঐ কজন বিদেশী কিছুই নয়। আতাহুয়ালপা তাদের পাত্তাই দিলেন না। আর সেটাই কাল হল। ১৬ই নভেম্বর, ১৫৩২ কাহামারকায় যুদ্ধ হল, ইনকারা হেরে গেল, আতাহুয়ালপা বন্দী হলেন। আতাহুয়ালপা যে ঘরে বন্দী ছিলেন, সেই ঘর সোনা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল ইনকারা তাদের রাজার মুক্তিপণ হিসেবে। বলাই বাহুল্য, আতাহুয়ালপা মুক্তি পান নি। হুয়াসকারের হত্যা ও পিজারোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে আতাহুয়ালপার মৃত্যুদণ্ড হয় ১৫৩৩ এ।

    পিজারো তার রাজধানী বানালেন লিমাকে। লিমার দখল নিয়ে প্রথম সেই কাজটাই করলেন যেটা যুগে যুগে দেশে দেশে বিজয়ীরা করে এসেছে। লিমার সবচেয়ে উঁচু পাহাড়টিতে বসিয়ে দিলেন খ্রীষ্টধর্মের প্রতীক একটি ক্রস (http://tinyurl.com/2fkwqq2)। শুধু লিমা নয়, পেরুর যে তিনটি শহরে আমি গেছি প্রতিটিতেই আমি এই একই জিনিস দেখেছি। আশেপাশে যত পাহাড়, যা কিছু চোখে পড়ে সর্বত্র হয় যীশুর মূর্তি নয়ত ক্রস। উত্তর আমেরিকায় আমি যেখানে থাকি সেখানে এটা এত বেশি দেখা যায় না। তাই হয়ত চোখে পড়ছিল বেশি। তাছাড়াও উত্তর আমেরিকায় ইউরোপ থেকে আসা বহিরাগতদের সাথে স্থানীয় আমেরিকানদের মিশ্রন খুব বেশি ঘটেনি। পেরুতে কিন্তু অন্য ছবি। সেখানে স্প্যানিশ ও আন্দিজের অধিবাসীদের এখন আর আলাদা করা যায় না। পিজারো নিজেই এক ইনকা রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। পিজারোর সাথে যারা এসেছিলেন তারাও স্থানীয় মানুষের সাথে মিশে গেছেন। তাই স্বভাবতই পেরুতে ধর্মপ্রচারের আঙ্গিকও আলাদা। একটা গোটা দেশের মানুষকে নতুন একটা ধর্মে দীক্ষিত করতে পুনরাবৃত্তির প্রয়োজন আছে বইকি!

    লিমাতে তাই আমাদের যা দেখানো হল তার সিংহভাগই ধর্মস্থান। আমাদের নিয়ে যাওয়া হল লিমার হিস্টোরিক ডিস্ট্রিক্টে (http://tinyurl.com/25tvvwp)। এখানে সবকটা বাড়ির রঙ হলুদ। গাইড মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম এই হলুদ রঙের কারন। সে বলতে পারল না। পরে ইন্টারনেটে কোথাও একটা পড়লাম আইমারা ভাষায় (আইমারা পেরুর তিনটি অফিসিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজের একটা) ‘লিমা লিমাক’ মানে হলুদ ফুল। হয়তো সেই সূত্রেই বাড়িগুলোর রঙ হলুদ। একটা গোল চঙ্কÄরকে ঘিরে হলুদ রঙের অনেক বাড়ি। বাড়িগুলোর কোনটি মিউসিয়াম, কোনটি ধর্মস্থান, গভর্নরের বাড়িও আছে এর মধ্যে। সবকটিই ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে তৈরী। আমি আর টিনা দশ সোলেস দিয়ে টিকিট কেটে ব্যাসিলিকা ক্যাথেড্রালের ভিতরে ঢুকলাম। এখানে পিজারোর সমাধি আছে। বেশ বর্নাঢ্য ক্যাথেড্রাল। ঐ সময়ের ক্যাথেড্রালে যেমন প্রচুর পেইন্টিং থাকে, সোনালী চাকচিক্য থাকে সেই রকমই। মাটির তলার একটা ঘরে দেখি কাঁচের শোকেসে সাজানো সারি সারি মানুষের মাথার খুলি (http://tinyurl.com/2byxujs)। এই ক্যাথেড্রালে যেসব সন্ন্যাসীরা সমাধিস্থ হয়েছেন, তাদের দেহাবশেষ। আমি এ জিনিস আগে দেখি নি। টিনা বলল এমন নাকি অনেক চার্চেই থাকে।

    ব্যাসিলিকা ক্যাথেড্রালের পাশেই আর্চ বিশপস প্যালেস। সেটার ভেতরে ঢুকিনি। খুব সুন্দর একটা কাঠের ব্যালকনি আছে বাড়িটায় (http://tinyurl.com/2f7xag9)। শুধু এখানে নয় লিমার অনেক পুরোন বাড়িতেই এমন ব্যালকনি দেখেছি। এটা নাকি লিমার স্প্যানিশ আর্কিটেকচারের বৈশিষ্ট। আমরা থাকতে থাকতেই এক মজার কাণ্ড ঘটল। প্রচুর তালবাদ্য সহকারে গভর্নরস প্যালেসের রক্ষী বদল হল। এ জিনিসও দেখি নি আগে। গভর্নরস প্যালেসের সামনের রাস্তা ফাঁকা করে দিয়ে নীল পোষাক পরা রক্ষীদের প্যারেড হল সেখানে। আমরা একটু দূর থেকে দেখলাম।

    এরপরে যেখানে গেলাম সেখানে ফটোগ্রাফি নট অ্যালাউড। আর সেখানে ছবি তুলতে না পারার জন্যই আমার আফসোস সব চেয়ে বেশি। সেই চার্চের নাম ব্যাসিলিকা অ্যান্ড কনভেন্ট অফ স্যানফ্রান্সিসকো (http://tinyurl.com/23hlcy3)। সেন্ট ফ্‌র্‌যান্সিসের অনুসারীদের জন্য এই চার্চ। ড্যান ব্রাউনের অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনসে পড়েছিলাম রোমের ক্যাটাকম্বের কথা। ক্যাটাকম্ব হল মাটির নিচে সমাধিক্ষেত্র। সাধারনত চার্চের তলায় থাকে। এই ব্যাসিলিকা স্যানফ্রান্সিসকোর নিচেও একটি ক্যাটাকম্ব আছে। অ্যাঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমনস পড়া ইস্তক আমার খুব শখ একখানি ক্যাটাকম্ব দেখার। রোম তো এখনও যাওয়া হল না। লিমাই সই। গাইডের সাথে ক্যাটাকম্বের ভিতরে ঢুকলাম। মাটির নিচে বলে একটু স্যাঁতসেঁতে। খুব সরু রাস্তা। বড়জোর দু’জন ঠেসাঠেসি করে দাঁড়াতে পারবে। যাদের ইহজীবনে পয়সাকড়ি ভালৈ ছিল তাদের জন্য স্পেশাল ব্যবস্থা। তারা শান্তিতে ঘুমোনোর জন্য নিজস্ব জায়গা পেয়েছে। বাকিদের জন্য মাস গ্রেভ। এক একটা চার-পাঁচ মিটার গভীর গর্ত। তার মধ্যে যতজন ধরবে। সেটা ভর্তি হয়ে গেলে আরেকটা। এই রকম অনেক আছে। গাইড যখন বলছিল লিখে নিই নি। তাই সংখ্যাটা ভুলে গেছি। মৃত মানুষকে কাপড়ে জড়িয়ে তার পরিবারের লোকজন চার্চের সন্ন্যাসীদের হাতে তুলে দিতেন। তারপর সন্ন্যাসীরা সেই মৃতদেহ নিয়ে যেতেন মাটির তলায়। অষ্টাদশ শতকের শেষ পর্যন্ত এই ক্যাটাকম্ব ব্যবহৃত হয়েছে। তারপর এখানে তালা পড়ে। ইদানিং এই ক্যাটাকম্বটি UNESCO-র ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ লিস্টে অন্তর্ভুক্ত। আর্কিওলজিস্টরা খুঁড়ে বার করছেন এখানে সমাধিস্থ মানুষদের দেহাবশেষ। মাস গ্রেভগুলো মানুষের হাড়ে ভর্তি। ক্যাটাকম্বের ভিতরে একটা কুয়ো। সেখানে মাথার খুলি সাজিয়ে রেখেছে। এই সব দেখেটেখে আমরা ওপরে উঠলাম। আর আমাদের বাসট্যুরও এখানেই শেষ হল।

  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৩ ডিসেম্বর ২০১০ ০৩:৪৭467167
  • ||||

    সকালে যে ২০০ খ্রীষ্টাব্দের পিরামিডটি দেখেছিলাম চলন্ত বাস থেকে সেটা মন থেকে সরছে না। খুব ইচ্ছে করছে একবার দেখে আসি কি আছে ওখানে। বাসট্যুর তো শেষ হয়ে গেল বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। এখনো গোটা দুপুরটা হাতে আছে। টিনাকে বললাম, যাবি ওখানে? সকালে হোটেল থেকে একটা ম্যাপ জোগাড় করেছিলাম। খুব একটা দূর বলে তো মনে হচ্ছে না। হেঁটেই মেরে দেওয়া যাবে। টিনা তো খুব রাজি। কিন্তু খেতে হবে সবার আগে। আমাদের খুব ইচ্ছে লোকাল খাবার খাওয়ার। কিন্তু ঢুকেছি একটা স্যান্ডুইচ জয়েন্টে। সেখানে খুঁজেপেতে খান দুই-তিন লোকাল ডিশ পাওয়া গেল। আমি নিলাম টার্টার টুনা, সাথে অ্যাভোকাডো, কর্ন আর ইয়েলো পোটাটো। টিনা নিল রোস্টেড চিকেন। খাবার আসতে কর্নের সাইজ দেখে আমরা তো হাঁ। এত বড় ভুট্টার দানা জীবনে দেখি নি। এই ভুট্টার রঙ সাদা। খেতে খুব মিষ্টি। পরে জানলাম এই দৈত্যাকার ভুট্টা শুধুমাত্র আন্দিজের এই অঞ্চলেই পাওয়া যায়।

    রেস্তোরাঁ থেকে হুয়াকা পুকলানা বেশ কাছেই। বোধহয় দশ সোলেস নিল টিকিটের দাম। ভিতরে ঢুকে তো ভারী বিপদ। সব কিছুই স্প্যানিশে লেখা। আমি তো তার একবর্ণ বুঝি না। টিনাও কেজি ক্লাসে পড়া বাচ্চার মত বানান করে করে পড়ে একটা একটা শব্দ অনুবাদ করার চেষ্টা করছে। আমি তো ভেবলু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় এক ভদ্রলোক এসে জানালেন দশ মিনিট পরে এক ইংরিজিভাষী গাইড এসে আমাদের পিরামিডটা ঘুরিয়ে দেখাবেন। গাইডের কথা হয়তো টিকিট কাউন্টারেই লেখা ছিল, আমরা খেয়াল করি নি। যাই হোক, গাইড পাওয়া যাবে যখন সে তো খুবই ভালো কথা এই ভেবে আমরা পেরুর মিঠে রোদে পিঠ পেতে আঠারোশো বছর আগের মানুষদের তৈরী পিরামিডের চঙ্কÄরে পায়চারী করতে লাগলাম (http://tinyurl.com/27adfqz)।

    পিরামিড বলতেই মনে আসে মিশর। পাথরের তৈরী আকাশছোঁয়া সমাধি-মন্দির যার মধ্যে মৃত ফারাওরা ঘুমোবেন। লিমার এই পিরামিডটি কিন্তু তেমন নয়। এটা মাটির তৈরী পাতলা ইঁট দিয়ে বানানো। আর এটা কোন সমাধি মন্দিরও নয়। লিমাতে রিমাক নদীর উপত্যকায় ২০০-৭০০ খ্রীষ্টাব্দে একটা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে মাছ ধরাই ছিল প্রধান জীবিকা। তাই এদের আরাধ্য দেবতা দেবতা হল সমুদ্র। হুয়াকা পুকলানা এই সমুদ্র নির্ভর গোষ্টীর ধর্মস্থান, যেখানে তারা তাদের ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। এই জায়গাটা প্রায় পুরোটাই ভেঙে পড়েছিল। আঠারোশো বছর আগে পিরামিডটি যেমন দেখতে ছিল বলে আর্কিওলজিস্টরা মনে করেন, সেই অনুসারে সাইটটি আবার বানানো হয়েছে। আমরা পিরামিডের ওপরে উঠতে উঠতে দেখলাম বেশ কিছু লোক কাজ করছেন। ইঁটের টালির গা থেকে ব্রাশ দিয়ে ঘসে ঘসে ধুলো ঝাড়ছেন।

    হুয়াকা থেকে আমাদের হোটেল ছ’সাত ব্লক হবে। হেঁটেই ফিরলাম। সকালে বাসে করে যাওয়ার সময়েই জানা হয়ে গেছিল হোটেল থেকে তিন-চার ব্লক দূরেই আছে ইনকা মার্কেট। সন্ধ্যেটা ফাঁকাই আছে। দুই শপিংপ্রেমী কি আর ঘরে বসে থাকে! প্রচুর প্রচুর মনপসন্দ জিনিসে ঠাসা ইনকা মার্কেট। পালকের মত নরম বেবি আলপাকার উলে বানানো স্কার্ফ, মিনে করা রূপোর গয়না, মাটির তৈরী ইনকা মুখোস – যা দেখি তাই কিনতে ইচ্ছে করে। এটা আগে জানা ছিল লিমাতে জিনিসপত্রের দাম বেশি। কুসকোতে একই জিনিস অনেক সস্তাতে পাওয়া যায়। তাই কোনমতে নিজেদের সামলাচ্ছিলাম আমরা। তাও আলপাকার উল দিয়ে বোনা একটা স্কার্ফ কিনেই ফেললাম পনেরো সোলেসে। তারপর ডিনার সেরে হোটেল।

  • i | 124.169.136.68 | ১৪ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:৪৪467168
  • তাপ্পর কি হইল? কথক গেলেন কই?
  • Sibu | 66.102.14.1 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ ০০:৩১467169
  • এটা খুব বাজে। এইভাবে গপ্পো ঝুলিয়ে রেখে ভাও নেওয়া।
  • Samik | 115.248.4.217 | ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ ১৭:৫৫467170
  • অপূর্ব। বহোৎ খুব।

    ইনকা বললেই দুটো গল্প মনে আসে। সেই ছোটোবেলায় শৈলেন ঘোষের লেখা, হুয়াসকার আর আতাহুয়ালপাকে নিয়ে লেখা, সোনাঝরা গল্পের ইনকা।

    আর দ্বিতীয়টা আরও বেশি আকর্ষক। প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা, সূর্য কাঁদলে সোনা।

    হুচি, চলুক।
  • Shibanshu | 59.96.97.153 | ১৬ ডিসেম্বর ২০১০ ১০:৫১467171
  • তস্য তস্য তস্য অথবা সূর্য কাঁদলে সোনা। পৃথিবীর নৃশংসতম ঔপনিবেশিক লুটেরা পিজারোর গল্পগাথা।
  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:৫৩467172
  • কুসকো
    -----

    ||||

    হিমালয়কে আকাশ থেকে দেখিনি কখনো। রকি দেখেছি কিছুটা। আন্দিজ অনেকটা রকির মত। আবার বেশ আলাদাও। রকির যে অংশ আমি দেখেছি সেখানে আন্দিজের মত বিস্তৃতি নেই। এখানে একের পর এক পাহাড়চুড়ো লেগে আছে গায়ে গায়ে – যতদূর দুচোখ যায় – বহুদূরে গিয়ে পাহাড়েরা হারিয়ে যায় মেঘের মধ্যে। আন্দিজের বুকে অঢেল সবুজ, থোকা থোকা মেঘ। আন্দিজ যেন কিছুটা বিষন্ন।

    লিমা থেকে সকালের প্লেনে কুসকো এসে পৌঁছলাম বেলা দশটা নাগাদ। আমাদের গাইড ল্যারিস অপেক্ষা করছিল এয়ারপোর্টে। সমুদ্রতল থেকে কুসকোর উচ্চতা তিন হাজার মিটারেরও বেশী। এয়ারপোর্টে নেমেই টিনা বলল ওর মাথা ঝিমঝিম করছে, শরীর খারাপ লাগছে। আমার অবশ্য সেরকম কোন অস্বস্তি হয়নি। তবে ল্যারিস নিজে থেকেই বলল কুসকোতে এসে অনেকেই উচ্চতাজনিত সমস্যায় ভোগে। সেই সাথে এটাও জানাল – চলো না আমার সাথে হোটেলে! এক কাপ কোকা-টি খেলেই চাঙ্গা হয়ে যাবে। সত্যিই তাই। হোটেলে আসা মাত্র আমাদের দেওয়া হল কোকাপাতা ভেজানো এক কাপ গরম জল। ইষ্‌ৎ ভেষজ গন্ধযুক্ত কোকা-টি আমার তো দারুন লাগল। টিনা অবশ্য এত সহজএ সুস্থ হল না। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেও তখন ওর কষ্ট হচ্ছে।

    হোটেল দেখে আমি ফিদা। একটা পুরোনো ইনকা বাড়িকে রি-মডেলিং করে হোটেল বানানো হয়েছে। বেনারসে যাইনি কখনও, তবে ছবিতে যেমন দেখেছি বেনারসের গলি, সেই রকমই এক সরু গলির মধ্যে আমাদের হোটেল। পাথরের সিঁড়ি উঠে গেছে দোতলার ঘরে। পুরোনো আমলের ছোট্ট ঘর। ঘরের ছাদে একটা ছোট্ট জানলা। সেখান থেকে রোদের ফালি এসে পড়েছে বিছানার ওপর। দরজার মত বড় বক্স জানলা দিয়ে নিচের গলিতে লোক চলাচল দেখা যাচ্ছে দিব্যি। এমন একখানা ঘরে ঢোকা মাত্র মন খুশি হয়ে যায়। (হোটেল: http://tinyurl.com/278udvx)

  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:৫৫467173
  • সবাই পড়ছেন দেখে উৎসাহ পাচ্ছি। আমি প্রথম আতাহুয়াল্পার গল্প পড়ি কোন এক শারদীয়া শুকতারায়। ’৯০-এর আগেই। মনে আছে কারোর?

  • Shuchismita | 71.201.25.54 | ১৮ ডিসেম্বর ২০১০ ২২:৫৬467174
  • ||||

    কুসকোতে দুটো অপশন ছিল। এক নম্বর, একটা হাফ ডে গাইডেড ট্যুর নেওয়া। তার খরচ ষাট ডলার। আর সেটা না করতে চাইলে নিজের মত করে ঘোরা। টিনার শরীরের অবস্থা মোটেই ভালো নয়। আমরা তাই এক নম্বরকে ছাঁটাই করলাম। কুসকোর যা প্রধান আকর্ষন সেই টেম্পল অফ সান বা করিকাঞ্চা আমাদের হোটেল থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে। ওটা যে দেখা হবেই তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর তারপর টিনা যদি ভালো থাকে বাকি জায়গাগুলো আমরা নিজেরাই ঘুরব।

    টিনা ঘুমোল খানিক। আমার তো কুসকোতে পা দেওয়া মাত্র ঘুম উড়ে গেছে। এমন একটা শহর আমি খালি কল্পনাতেই ভেবেছি। হোটেলের ঘরের জানলাটি একটা ছোট্ট ব্যালকনির মত। কাঠের রেলিং-এ হেলান দিয়ে আমি নিচের সরু গলি দিয়ে লোকের আনা-গোনা দেখি। কত রকমের মানুষ। কেউ হনহন করে হেঁটে যাচ্ছে – ভারী ব্যস্ত। কেউ আমারই মত ট্যুরিস্ট – লেন্স নিয়ে কসরত করছে। আলপাকার উলের সোয়েটার হাতে আন্দিজের পসারিনী ছুটছে শ্বেতাঙ্গিনীর পিছু পিছু – সেনোরিটা, থাট্টি সোলেস, চিপ সেনোরিটা, পিওর আলপাকা!!

    দেড়টা নাগাদ বেরোলাম। প্রথমে লাঞ্চ করতে হবে। হোটেল থেকে দুই মিনিট হাঁটলেই করিকাঞ্চা মন্দির। তার উলটো দিকে ফ্রেডিস গ্রিল অ্যান্ড বার। সেখানে ট্রাউট মাছ ভাজা আর কোকা টি দিয়ে লাঞ্চ সেরে করিকাঞ্চায় ঢুকলাম। টিকিটের দাম দশ সোলেস। আর কি ভাগ্য – টিকিট দেখিয়ে প্রথম যে ঘরে ঢুকলাম সেখানে স্প্যানিশের পাশাপাশি ইংরিজিতেও লেখা আছে এই মন্দিরের সম্পর্কে। কেচুয়া ভাষায় ‘করিকাঞ্চা’ কথার অর্থ ‘সোনার মন্দির’। ইনকাদের প্রধান আরাধ্য দেবতা সূর্য। সূর্যের আলোর রং সোনালী। এই মন্দির তাই মুড়ে দেওয়া হয়েছিল সোনা দিয়ে। তারপর ১৫৩২ এ পিজারো যখন আতাহুয়ালপাকে বন্দী করে এক কুঠুরিতে ভরে রাখলেন আর সেই কুঠুরি ভরা সোনা চাইলেন আতাহুয়ালপার মুক্তিপণ হিসেবে – তখন এই মন্দির থেকে সোনা খুলে নিয়ে গিয়ে দেওয়া হয়েছিল স্প্যানিশদের। সপ্তাদশ শতকে এই মন্দিরের ওপর একটা চার্চ বানানো হয় – চার্চ অফ সেন্ট ডমিনিক। বাইরে থেকে করিকাঞ্চার দিকে তাকালে সেই চার্চটাই চোখে পড়ে। আর চার্চের তলায় দেখা যায় ইনকা দেওয়াল। রবার্টসাহেবের বইতে পড়েছি ১৬৫১তে এক ভূমিকম্পে চার্চ ভেঙে পড়ে। চার্চের ধ্বংসস্তূপের নীচে আবার উঁকি মারে করিকাঞ্চা। এবং আবার হয় চার্চের পূনর্নিমান। একই ঘটনা আবার ঘটেছিল ১৯৫০এ। আর সেবারেও কলোনিয়াল স্থাপত্য ভেঙে গেছিল, কিন্তু করিকাঞ্চা ছিল অটূট। এর পেছনে কোন অলৌকিক কারন নেই। ভূমিকম্পপ্রবণ আন্দিজে ইনকা ইঞ্জিনিয়ারদের চম্‌ৎকারী ছিল দেখার মত। দেওয়াল বানানোর জন্য ওরা চুন-সুরকি ব্যবহার করত না। তার বদলে পাথরকে কাটত এমন ভাবে, যাতে দুটো পাথর একে অপরের গায়ে জুড়ে যেত ঠিক জিগ-স পাজলের মত। তারপর ভূমিকম্প হলেই বা কি! পাথরগুলোকে সামান্য নড়েচড়ে আবার খাপে খাপে ঐ একই জায়গায় বসতে হবে। ভেঙে পড়ার চান্সই নেই।

    ইনকাদের রমরমার দিনে করিকাঞ্চার দেওয়ালে সোনার পাতগুলো কেমন ছিল তার একটা রেপ্লিকা রাখা আছে একটা ঘরে। আমাদের সাথে যেহেতু কোন গাইড নেই, তাই আমরা ভান করছি যেন একা একাই ঘুরছি, অথচ কান খাড়া রাখছি অন্য কোন ট্যুর গ্রুপের কোন ইংরিজিভাষী গাইড যদি কিছু বলে। এমনিভাবেই একটা গোল্ড প্লেকের সামনে দাঁড়িয়ে পরস্মৈপদী গাইডের ভাষন শুনছি এমন সময় কাঁধে টোকা। পেছন ফিরে দেখি কি কান্ড! এ তো বাঁড়ুজ্যেমশাই! আমার কলেজ জীবনের সই ‘বি’। বাঁড়ুজ্যেমশাই হলেন তারই ‘উনি’। বি-এর সাথে দেখা হয় নি প্রায় দশবছর। অথচ আমরা একই দেশে থাকি। মাঝেমধ্যে প্ল্যানও হয়েছে দেখা করার। শেষে কিনা পেরুতে!

    বি-এরও টিনার মত প্রবলেম। কুসকোর উচ্চতা সহ্য হচ্ছে না। এদিকে হাফ ডে ট্যুর ওদের বুক করা আছে আগে থেকেই। বি তাই বসে আছে মন্দিরের সামনে। আর বাঁড়ুজ্যেমশাই ঘুরছেন গাইডের সাথে। ভাগ্যিস ঘুরছেন। নইলে দেখাই হত না! আমি বি-কে দেখার আশায় মন্দিরের সামনের দিকে এগোলাম। বাঁড়ুজ্যেমশাই ভিড়ে গেলেন গাইডের সাথে। আরেক গাইডের কৃপায় আমার ইনকা আর্কিটেকচারের দরজার বৈশিষ্ট্য জানা হয়ে গেল। দেখা হল আরো গোটা দুই পেইন্টিং – একটা তাহুয়ানতিনসুয়ু – বিশ শতকের ইনকা শিল্পীর কল্পনায়। আরেকটাও বিশ শতকের – আকাশগঙ্গা ছায়াপথ – ইনকারা যেমন দেখেছিল। আমাদের পূর্বপুরুষরা যেমন অন্ধকার আকাশের বুকে তারাদের মধ্যে মানুষের অস্তিত্ব খুঁজে বেড়াতেন, গল্প-কাহিনী বানাতেন তাদের নিয়ে – আন্দিজের মানুষেরাও তার ব্যাতিক্রম নন। তফাৎ শুধু এই – অন্ধকারের বুকে আলোর ঝলকের বদলে তাঁরা অবিশ্রাম আলোর বন্যার মাঝে দু’একটি অন্ধকার দাগ দেখতে পেতেন। আমি যে কদিন পেরুতে ছিলাম একটি বারের জন্যও মেঘমুক্ত আকাশ পাই নি। কিন্তু আন্দিজের আকাশ নাকি অমনই। রাতের আকাশও সেখানে তারার আলোয় ঝলমল। দুটি তারার মধ্যে যেটুকু ফাঁক, যেটুকু অন্ধকার – ইনকাদের কল্পনা সেখানেই দেখতে পেয়েছে তাদের মানুষকে, তাদের পশুপাখীকে – তাদের নিয়েই ইনকা মিথোলজি।

    বি-কে খুঁজে পেলাম না। মন্দির থেকে বেরোচ্ছি। আবার বাঁড়ুজ্যেমশাই-এর সাথে দেখা। বি-এর তখন অবস্থা সঙ্গীন। ফার্স্ট এড দেওয়া হচ্ছে। এদিকে গাইড ঘন ঘন তাড়া লাগায়। একজনের জন্য বাকি গ্রুপ কি মিস করবে এমন আলো-ছায়া খেলা আন্দিজের দিন! আমার হোটেল ছিল দু’মিনিটের দূরত্বে। আমি বাঁড়ুজ্যেমশাইকে বললাম, তুমি ঘুরে এস, টিকিট যখন কাটাই আছে, নষ্ট করার মানে হয় না। বি-কে নিয়ে আমি চললাম আমার হোটেলে। এমনিতেও আমার আর ঘোরা হত না। কারন টিনাও আর পারছে না। স্বভাবতই বাঁড়ুজ্যেমশাই চিন্তাগ্রস্ত। আমি জোর করেই পাঠিয়ে দিলাম তাকে। আর এদের দুজনকে নিয়ে ফিরলাম হোটেলে।

    কিছু কিছু জিনিস যখন আসে তখন তাকে আপদ বলেই মনে হয়। পরে ফিরে তাকালে খেয়াল হয়, ঐ আপদগুলৈ কেমন দ্যুতি ছড়াচ্ছে। কুসকোয় প্রথম দিনটা ছিল তেমনই। দু’জন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে কি করা উচিত কিছুই ভেবে পাচ্ছিলাম না। সবচেয়ে বড় সমস্যা ভাষার। জল কিনতে গেছি। জলের স্প্যানিশ তো অ্যাকোয়া। কিন্তু আমার চাই বড় বোতল – সেটা বোঝাই কি করে! আমার মোবাইল ডিকসনারী টিনা হোটেলের বিছানায় আচ্ছন্ন। তখনই একটু একটু করে বুঝছি কুসকোর মানুষ খুব অতিথি ব্‌ৎসল। লিমাতে স্প্যানিশ না বললে যে ঔদাসীন্য দেখেছি সেটা এদের মধ্যে নেই। হোটেলের ম্যানেজারের ছেলে কার্লোস বেশ ইংরিজি বলে। সেই ডাক্তার ডেকে দিল। ডাক্তারটি আবার স্প্যানিশ বলে শুধু। প্রথমদিকে কার্লোসই অনুবাদকের কাজ করে দিল। তারপর সে রিসেপশনে চলে গেলে টিনা হাল ধরল। ভাঙা স্প্যানিশে, ইশারায় চিকিৎসা হল দুইজনের। আমি ওষুধ আনা ছাড়া বিশেষ কোন কাজে লাগিনি। বি-এর সম্ভবত ইনফেকশন হয়েছে। আগের দিন ওরা লিমাতে শেভিচে খেয়েছে ডিনারে। শেভিচে হল লেবুর রসে ম্যারিনেট করা কাঁচা মাছ। আমি পরে খেয়ে দেখেছি – স্বাদ অপূর্ব – কিন্তু ইনফেকশনের ভয় থেকেই যায়। সন্ধ্যে নাগাদ বাঁড়ুজ্যেমশাই এসে গেলেন। সে বেচারা মোটেই বুঝতে পারেন নি বি-এর অবস্থা এমন গুরুতর। আমরাই কি আর প্রথমে বুঝেছিলাম! দিনের শেষে আবার ফ্রেডিস গ্রিল অ্যান্ড বার – যেখানে লাঞ্চ খেয়েছিলাম। ছোট্ট শহর তো – সবাই সবার খোঁজ রাখে। ওদের গিয়ে টিনার অসুস্থতার কথা বলতেই চিকেন নুডল স্যুপ বানিয়ে দিল। আমাদের দেশে হোম ডেলিভারীতে যেমন ডাব্বায় ভরে ভাত-তরকারী দেয় তেমন একটা টিফিনবক্সে স্যুপ ভরে আমার হাতে দিয়ে বলল খাওয়া হলে হোটেলের রিসেপশনে রেখে দিও। আমরা কাল সকালে নিয়ে আসব। আন্দিজের গায়ে ছোট ছোট গ্রামগুলো তখন সন্ধ্যাদীপ জ্বালিয়েছে। আমি এই অজানা দেশে অচেনা মানুষদের অপ্রত্যাশিত আতিথ্যে বিভোর হয়ে হোটেলের পথ ধরলাম।

  • r.h | 203.99.212.53 | ২২ ডিসেম্বর ২০১০ ১৬:২৮467175
  • পাচারুরাম পাচাকামাক
    বিরাকোচা কোহিনাপাক
    চুরাশঙ্কুই
  • Samik | 155.136.80.174 | ২২ ডিসেম্বর ২০১০ ১৬:৪১467177
  • অপূর্ব! এক্সেলেন্ট!!

    আচ্ছা, ঘনাদার গপ্পে পড়েছিলাম সেই যে তারা সুতোয় গিঁট মেরে মেরে সাংকেতিক কোড ল্যাঙ্গোয়েজ বানাত, সেটা কি সত্যি? নাকি জাস্ট ঘনাদার গল্প?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন