এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • পায়ের তলায় সর্ষে

    Riju
    অন্যান্য | ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ | ৫২৫৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sayantan | 59.160.140.1 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ ০১:০০450588
  • দারুণ! ইন্দ্রাণীদি। এত জীবন্ত বর্ণনা যেন চোখের সামনে পুরো দ্বীপ আর আগুনপাহাড় দেখতে পেলাম।
  • Riju | 24.7.151.223 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ ২২:২০450565
  • বাঙালী মাত্রই ভ্রমণপিপাসু।এখানেও একটা বেড়ানোর আড্ডা থাকবে না তা হয়?
  • Tan | 131.95.121.251 | ২৫ জানুয়ারি ২০০৬ ২৩:৩৩450576
  • বাহ,বাহ,ঋজু, অতি সুন্দর।এই জিনিসটা খোলার জন্য ধন্যযোগ। এইবারে একে একে লিখতে থাকুন সবাই।
    দূরে কাছে,চেনায় অচেনায় অলিগলিতে পাহাড়ে সমুদ্দুরে যে যেখানে বেড়িয়েছেন বা বেড়াবার প্ল্যান করেছেন বা নাকানিচুবানি খেয়েছেন বা খুব মজা করেছেন ও তুমুল উচ্চন্ড নেচেছেন সবাই এখানে দুচারকলম দিন প্লীজ।
    এমনি এমনি ঘোরার গল্প দিন বা গুছিয়ে তথ্য সহকারে কিভাবে যেতে হবে,কোথায় থাকতে হবে কি খেতে হবে এসব নিয়ে দিন,যার যা ইচ্ছা দিন।
    ভিকিদা, রঙ্গনদা,অরিজিৎদা, তীর্থদা, দীপ্তায়নদা, অর্জুনদা,ইন্দ্রদা,কুন্তলদা, কোথায় গেলেন সব ভ্রমনপিপাসু বাঙালিরা?
  • Arijit | 82.39.108.148 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০২:৪০450587
  • দাঁড়াও লিখবো - গতবছরের ইওরোপ ট্যুর নিয়ে...একটু সময় লাগবে।
  • tanu | 198.74.20.78 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০৪:৩৮450598
  • আজই প্রথম পোস্ট করছি এখানে। মানে, বাঙালী তো, বক্তব্যের অভাব হয় না। ভ্রমণ নিয়ে কথা হচ্ছে, তই ভাবলাম আমিও কিছু লিখি। সেই ২০০১ সালে আলাস্কা বেড়াতে গেছিলাম - তার কথা লিখতে পারি। তবে, আগেই বলে রাখছি, ওটা কিন্তু লম্বা পোস্ট হবে!
  • tanu | 131.95.121.251 | ২৬ জানুয়ারি ২০০৬ ০৪:৫৫450609
  • বা: বা: বা:,স্বাগতম তনু।এতদিনে পাওয়া গেলো আইসোটোপ।খুব ভালো কথা।
    এইভাবে কথা কইতে বেশ ভালো লাগে,বেশ কেমন আর্শিনগরে চলে গেছি বলে মনে হয়।:-)))
    আপনার আলাস্কার পরেই আমি বেঁড়কুলগাছিয়া ভ্রমণের গপ্পো করবো,সেটাও জবর বড়ো পোস্ট হবে।:-))
    লিখুন লিখুন,অনেক বড়ো লিখুন।কুছ পরোয়া নেই তাতে।পড়ার জন্য আমরা রেডি।

  • tanu | 159.37.7.254 | ২৭ জানুয়ারি ২০০৬ ০১:৫৪450620
  • তা হলে লিখি।

    আমরা আলাস্কা গেছিলাম ২০০৩-এর জুলাই মাসে। (২০০১ টা টাইপো ছিল।) আমরা মানে, পতি-পুত্র সহ ইয়র্স ট্রুলি। ক্যালিফর্নিয়া থেকে উড়ে আঙ্করেজ, সেখান থেকে ফেয়ারব্যাঙ্কস। সেখান থেকে ডেনালি দেখে, আবার উড়ে ব্যারো। এই ব্যারো হল আমেরিকার নর্থমোস্ট শহর (যদি একে শহর বলা আয়!)
    একটু ধরতাই দিই এখানে - ব্যারো আলাস্কার নর্থ স্লোপ বরোর একমাত্র 'শহর', জনসংখ্যা ৫০০০, তার মধ্যে ৬০ শতাংশই হল ইনুপিয়াট এস্কিমো। আর্টিক সার্কেলের থেকে ৩০০ মাইল উত্তরে, সুমেরু থেকে ৯০০ মাইল দক্ষিণে। বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র উপায় হোলো প্লেন। অবশ্য বছরে একবার করে অগাস্ট মাসে জলপথে একটা করে বার্জ আসে, ভারী জিনিসপত্র নিয়ে।
    কন্ডাক্টেড ট্যুর বুক করা হয়েছিল। ফেয়ারব্যাঙ্কস থেকে প্লেনে চড়ে বসলাম। ছোট প্লেন, তার সামনের দিকটায় কার্গো, আর পেছনের দিকে যাত্রী। আমরাই উপমহাদেশের একমাত্র প্রতিনিধী। দিব্যি উড়ে চলেছি, এমন সময়ে একজন সহযাত্রী এসে জিগেস করলেন, 'আপনার কি রাজুর বাড়ীর লোক?' 'রাজু? সে কে?' একটু গোয়েন্দাগিরি করতে হোল, তারপর জানা গেল যে শ্রীমান রাজু হলেন একজন পাকিস্তানী ট্যাক্সিওয়ালা, যিনি নিউ ইয়র্ক সিটির বিলাস বিসর্জন দিয়ে অপাতত ব্যারোতে আড্ডা গেড়েছেন, পেশা যদিও একই আছে। যেহেতু বাদামী চামড়ারা ইদিকপানে বিষেশ পদধুলি দেননা, অতয়েব এনারা দুই এ দুই এ চার করছিলেন। আমরা সানন্দে এদের ভুল ভাঙালাম।
    এরমধ্যে কখন যে আর্টিক সার্কেল পেরোলাম, বুঝেতেই পারিনি। পাইলটও বেশ আহাম্মক! আরে বাবা, বলবিতো একবার! মরুকগে, যখন বুঝলাম আমরা এখন ওপারে, বাইরে তাকিয়ে দেখি আজব দৃশ্য! বরফ টরফ কোথাও কিছু নেই, পৃথিবী জুড়ে কেবল ধুসর মাটি, টিলা আর জলা। আর সেটা দেখতে প্রচন্ড ব্যাগড়া দিচ্ছে গাদাগুচ্ছের মেঘ।
    একসময় শুনতে পেলাম, আমরা এসে গেছি, এবার নামা হবে। নিত্যযাত্রীরা দেখলাম বেশ খুশী হয়ে উঠল। জানলাম, এমন নাকি প্রায়ই হয়, যখন মেঘের জন্য প্লেন ল্যান্ড না করতে পেরে বার কয়েক চক্কর মেরে আবার ফেয়ারব্যাঙ্কস ফিরে যায়। এইসব শুনতে শুনতেই একসময়ে নেমে এলাম যেখানে, সেটাকে এয়ারপোর্ট কেন, লক আউট হয়ে যাওয়া কারখানা বললেও কেমন যেন অবিশ্বাস হয়!
  • tanu | 131.95.121.251 | ২৭ জানুয়ারি ২০০৬ ০২:৩৩450629
  • বা: বা:,তারপরে? কি হলো তারপর?
  • tanu2 | 159.37.7.254 | ২৭ জানুয়ারি ২০০৬ ০৩:১২450630
  • (বলছি কি, আইসোটোপ ব্যাপারটা বেশ গোলমেলে, তাই আমি তনু২ হলাম আজ থেকে)

    তা, ঠান্ডার মধ্যে নামলাম। ভেস্টিবিউল টিউল নেই কোনো, সিঁড়ি দিয়ে রানওয়ের ওপর নামিয়ে দিল। খুব একটা ঠান্ডা ছিলনা (৩০ ডিগ্রী ফ্যারেনহাইট আগেও অনেক জায়গায় পেয়েছি), কিন্তু উত্তেজনাতেই কাঁপুনি হচ্ছিল। টার্মিনাল বিল্ডিং বাইরে থেকে দেখে মোটেই ইম্প্রেসিভ কিছু লাগেনি, ভেতরে ঢুকে তো আরই না। একধারে গোটাকয়েক ডেস্ক পাতা, সেখানে হ্যান্ডলাগেজ চেকিং হচ্ছে, ওদিকে একটা মেটাল ডিটেক্টার দেওয়া দরজা, তার ওপারে অপেক্ষমান লোকজন। এরা রিটার্ন ফ্লাইট ধরবে। আমরা ব্যাগেজ এরিয়া না দেখে জিগেস করতেই ওরা হেসে বলল, সে সব নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না, তোমাদের লাগেজ তোমাদের হোটেলে পৌঁছে যাবে! আমরা চোখ গোলগোল করে তাকাতে ওরা বলল 'আলাস্কা এয়ারলাইন্সের ভ্যাকেশন তো? আমরা তোমাদের হোটেলে সব দিয়ে আসব, তোমরা ট্যুর এন্‌জয় কর।'

    আমরা মহানন্দে ঝাড়াহাতপা হয়ে বাইরে বেরোলাম। বাইরে নাকি দুটো বাস দাঁড়িয়ে আছে, তাতে করেই ট্যুর হবে। সেই প্রথম ব্যারোর দর্শণ! মেঘ আর কুয়াশায় মুখ লুকিয়ে ভিষণ ভীষণ নেড়া একটা সমতল ভুমি। কাঁচা রাস্তার ওপর কয়েকটা লজ্‌ঝরে গাড়ি (অধিকাংশই হামার) দাঁড়িয়ে আছে, দুরে দুটো রিকেটি বাস (অনেকটা আমাদের দেশের মিনিবাসের মত দেখতে)। ওগুলো ই আমাদের বাহন। দুরে কয়েকটা জরাজীর্ণ টিনের বাড়ি। সত্যি বলতে কি, মনটা একটু দমেই গেল।

    আমরা বাসে গিয়ে উঠলাম, আহ, কি আরাম! ভেতরটা গরম করে রখা হয়েছে, প্রতি সিটে একটা করে পার্কা রাখা। তবে আমাদের সঙ্গে গরম জামা থাকায় পরতে হয়নি। ট্যুর গাইড অমৌলিক আমাদের প্রথম ইনুপিয়াট শব্দ শেখাল, 'সুভাদ' মানে 'কি খবর'? আমরাও সুভাদ
    সুভাদ করতে করতে রওনা দিলাম।
  • tanu2 | 159.37.7.254 | ৩০ জানুয়ারি ২০০৬ ২২:৫৪450631
  • একি? আর কেউ লিখছেনা কেন? আমারটার পরের কিস্তি -

    ব্যারোতে কোনো পাকা রাস্তা নেই। মাত্র একটা ট্র্যফিক লাইট। জুলাই মাসে বরফ নেই একটুও, শুধু যেদিকে তাকাও প্যাঁচপেচে মাটি, সবুজের চিহ্ন নেই কোথাও। গাছপালার সঙ্গে
    পরিচয় হয়নি এদেশের মানুষের। অমৌলিক আমাদের ঘুরে ঘুরে শহর দেখাল। থানা, কলেজ, নেভিবেস, স্টুয়াকপাক (মানে মুদিদোকান, কিন্তু আসলে একটা সুপারমার্কেট)। ব্যারোতে একটাই স্কুল, কিন্তু সেটা বিশাল ব্যাপার। অমৌলিক বলল এই স্কুলটার দাম গোটা আলাস্কার থেকে
    বেশি (আমেরিকা রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনেছিল জলের দরে, ২ সেন্ট করে একর!)

    এস্কিমোদের খাবার মুলত মাংস। বরফের দেশের প্যাঁচা, তিমিমাছ, সীলমাছ, ক্যারিবু, মোটামুটি, যাহাই পাই, তাহাই খাই ব্যাপার। অমৌলিক দেখাল একটা বাড়ির চালের ওপর কয়েকটা ক্যারিবুর শিং রাখা আছে। পুরোনো, সাদা হয়ে গেছে। বাড়িটার সামনেই একটা পিক-আপ ট্রাক দাঁড়িয়ে, তাতে সদ্য কাটা দুটো ক্যারিবুর মাথা, বাড়ির মালিক নাকি আগের দিনই শিকার করেছে। দেখে গা টা গুলিয়ে উঠল!

    শহরের যে দিকে তাকাও, শুধু সাদা সাদা হাড়।। সিন্ধুঘোটক, সীলমাছ, তিমি - শহরটাকে মনে হল হাড় দিয়েই সাজাতে চায় ওরা! অমৌলিক দিব্যি স্বাভাবিক ভাবে তিমি শিকারের বিবরণ দিয়ে যাচ্ছিল। (এটা আর এক গল্প, অন্য কখনো লিখব)। তিমি মাছের নাকি সবই খায়, তার মধ্যে কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, এই হল ডেলিকেসি। আমাদেরও পরে তিমির মাংস খাইয়েছিল (শুঁটকি করা)।

    আমাদের বাসটা আর্টিক ওশনের পাড়ে এসে দাঁড়াল। সেটা যে কি অনুভুতি আমার দ্বারা বোঝানো সম্ভব নয়! বিশাল নিস্তরঙ্গ ধুসর জলরাশি, পাড়ে বালির বদলে ঝুরঝুরে মাটি। সমুদ্র মেঘের আড়ালে আকাশে মিশেছে, দিগন্ত দেখা যায় না। দিব্যি আরব সাগর বলে চালিয়ে দেওয়া যেত, যদি না পাড় থেকে কিছু দূরে কয়েকটা আইসবার্গ ভাসতে দেখতাম।
  • m | 24.166.170.155 | ৩১ জানুয়ারি ২০০৬ ০২:২০450566
  • বাহ তনু২ ,চমৎকার লাগছে।পরের কিস্তি টা একটু তাড়াতাড়ি এলে আরো ভালো লাগবে।বিশেষ করে তিমির শুঁটকি র জন্যে হা-পিত্যেশ করে বসে আছি:-))))))))
  • tanu2 | 198.74.20.118 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৫:২২450567
  • কাজের চাপে আজ আর হলনা বন্ধু। কাল পরের কিস্তি লিখব, promise!
  • Santanu | 59.37.32.122 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১০:২৪450568
  • তীর্থনকরের স্মোকি পাহাড়ের গপ্পোর ও বাকি টা তাড়াতাড়ি চাই।
  • tanu2 | 198.74.20.73 | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২৩:৩০450569
  • বেলা গড়িয়ে কখন যে প্রায় বারটা বাজে, খেয়ালই হয়নি! লাঞ্চ খেতে আমাদের নিয়ে গেল হোটেলে, এখানেই আমাদের থাকার ব্যাবস্থা হয়েছে। এটাই নাকি ব্যারোর সবচেয়ে ভালো হোটেল, নাম, Top Of the World! দেখলাম আমাদের মোটঘাট সব লবির একধারে রাখা হয়েছে। এই লবিতে ঢুকে কেমন আশ্চর্য্য লাগল। এর একধারে যেমন প্রাচীন ইনুপিয়াট সভ্যতার টুকিটাকি সাজানো আছে, তেমনই, অন্যধারে বিরাজ করছে বর্তমান প্রজন্মের নিত্যপ্রয়োজনীয় - TV, microwave oven, coffee maker, এমনকি satellite দ্বারা আন্তর্জ্বালে ছিপ ফেলা একটা আস্ত কম্পু!

    আমরা এই ফাঁকে check in করলাম। একতলায় ঘর পাওয়া গেল। জানলার পর্দা সরিয়ে দেখি, ওমা! জানলার ওপারে একটা dirt patch (basically, sea beach) পেরোলেই ধু ধু করছে মহাসগর। আর দেরী না করে ঘড়িতে alarm দিলাম রাত বারটার - মধ্যরাতের সূর্য্য দেখতে হবে না?

    মধ্যাহ্নভোজন শেষে, পকেটটা খানিক হাল্কা করে (এক প্লেট fish and chips cost $22), আমরা আবার অমৌলিকের শরণে। এবার গন্তব্য হেরিটেজ সেন্টার। এটি একটি মিউজিয়াম। এখানে লোকাল ইনুপিয়াট এস্কিমোদের একটি দল আমাদের জন্য একটা cultural programএর ব্যাবস্থা করেছিল। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করলেন ব্যারোর প্রাক্তন মেয়র, ভদ্রমহিলার বয়েস অন্তত আশি।

    এদের গানবাজনায় একটাই বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার দেখলাম। তিমিমাছের হাড় আর চামড়া দিয়ে তৈরী, অনেকটা বিয়েবাড়ির তঙ্কÄ পাঠায় যে ডালাগুলোয়, সেরকম দেখতে। তিমির হাড় দিয়ে যখন ওর ওপর মারে, দু ধরনের শব্দ হয়, একটা মৃদু, একটা বেশ জোরে। তার সঙ্গে গান। শিকারে যাবার গান, শিকারি স্বামীর জন্য প্রতীক্ষার গান, সিন্ধুঘোটক শিকারের গান। ভারি ভাল লাগল। সবদেশের মনের ভাষাই একসুরে গাঁথা।
  • tanu2 | 159.37.7.48 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৫:২০450570
  • হেরিটেজ সেন্টার থেকে যখন বেরোলাম, তখন পাঁচটা বেজে গেছে। সকাল থেকে মেঘলা ছিল, এতক্ষণে মেঘ সরে একটু আধটু সূয্যিঠাকুর উঁকি দিচ্ছেন। অমৌলিক আমাদের নিয়ে এলো যে জায়গাটায়, তার নাম Point Barrow। এটা হল আমেরিকার northmost point। মাটিতে পোঁতা বিশাল দুটো তিমির চোয়ালের হাড় আকাশের দিকে মাথা তুলে আমাদের স্বাগত জানাল। লোকজন পটাপট ছবি তুলল। বুঝলাম, আমর একটি কির্তি করলাম আরকি এখানে এসে।

    দিনের সর্বশেষ দ্রষ্টব্য দেখতে আমরা আবার পৌঁছোলাম সমুদ্রের তীরে। এখানে নাকি polar dip নেয় লোকে। তাতেকরে polar bear club এর সদস্য হওয়া যায়। Polar dip? এর মানে হল, পূর্ণ স্নান। বরফগলা সমুদ্রের জলে। মাথার প্রতিটি চুল ভিজিয়ে ডুব দিয়ে স্নান। লাভ? একটি certificate, একটি badge এবং unlimited bragging rights for life। ইল্লি আর কি!

    আমরা বাসের ভেতরে ভালকরে কানমাথা ঢেকে বসে দেখতে লাগলাম পৃথিবীতে আরো এক পাগল উপজাতি। এক সাহেব এবং তার মেমসাহেব bathing suit পরে জলে নামল। মেমসাহেব গেল হাঁটু পর্য্যন্ত, সাহেব কোমর ডুবিয়েছিল। আমরা তাতেই উহু উহু করতে লাগলাম। অমৌলিক নিস্পৃহভাবে বলল, 'there is no polar bear cub club. Sorry.'

    দিনের ট্যুর শেষ। আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেবার সময় নোনতা মুখ করাল অমৌলিক। ওর বাড়িতে বানানো তিমির শুঁটকি দিয়ে। আহা, যেন আমসঙ্কÄ হাতে দিল গো, ভাবখানা ঠিক তাই। ছোট ছোট টুকরো, মুখে দিয়ে দেখি অল্প সেদ্ধ সয়াবিনের মত কচকচ করছে। নোনতা। একটা flavour আছে, কেমন যেন। ফলসা খেয়েছ কখনো? খাওয়ার পর মুখে কেমন একটা flavour থেকে যায় না? অনেকটা তেমন।

    হোটেলে ফিরে মনে হল, যাহ, এর মধ্যেই দিন শেষ! আবার খানিক বেরোনো যায় না? এক ফরাসী দম্পতিকে পগিয়ে পাগিয়ে শেয়ারে একটা ত্যাক্সি নিয়ে বেরোলাম। Stuakpakটা ঘুরে দেখলাম। কি বিচিত্র জায়গা মাইরি! এক নম্বর আইলে হারপুণ বিকোচ্ছে, তো দুনম্বরে সোফাসেট। তিন নম্বরে সীলমাছের চামড়ার জামা তো চারে evening gown। দেখতে দেখতে টালিগন্‌জের yours truely ভির্মি খায় আরকি!

    (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
  • m | 24.166.170.155 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৮:৩১450571
  • তনু২,
    লেখা দিব্যি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে,পড়তে খুব ভালো লাগছে।কিন্তু শুঁটকির কথা শুনে বুক শুকিয়ে গেলো।আমাদের ছোটবেলায় বন -বাদাড়ে প্রচুর ফলসা গাছ ছিলো,কালচে লাল রংএর পাকা ফল দেখতে চমৎকার লাগতো,খেতেও টক মিষ্টি,কিন্তু ফলের ঐ আঁশটে গন্ধ টা সহ্য হত না বলে অন্যেরা খেতো আমি দেখতাম।
    তিমি র শুটকি আমি কোনো দেবভোগ্য খাবার ভেবেছিলাম:-(( ফলসার মত শুনে খুব বিমর্ষ হয়ে পড়লাম:-) তোমার লেখা য় এইটুকুই যা মনোমত হল না:-))))))))
  • tanu2 | 159.37.7.93 | ০২ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২৩:৫৬450572
  • Stuakpak থেকে রাতের খাবার কিনে ফিরে এলাম হোটেলে। এবার মধ্যরাতের প্রতীক্ষা। একদল দেখলাম তখন বেরোলো শ্বেতভল্লুকের খোঁজে। একটা হামার বুক করে চলল Point Barrowর দিকে, ওদিকে নাকি মাঝে মাঝে polar bear আসে। আমাদের যাবার উপায় ছিলনা, পুত্র তখন গভীর ঘুমে।

    ঘড়িতে alarm দেওয়াটা নিতান্তই বাহুল্য হয়েছিল, দুচোখের পাতা একমুহুর্তের জন্যেও এক করা গেলনা। ঠিক রাত বারোটায় জানলার পর্দা সরিয়ে দেখি আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার। মহাসাগর তখন সারা গায়ে কমলা আলো মেখে হাসছে। আর কি নিস্তব্ধ! কোথাও কোনো শব্দ নেই। মধ্যরাতে সমস্ত পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়েছে, শুধু সূর্য্যটাই কেন যেন আজ ডুবতে ভুলে গেছে। আমার কর্তা কথা বলেন কম, দেখে শুনে বললেন, 'বাংলাদেশের কবিগুলো কনে দেখা আলো নিয়েই আকুলি বিকুলি করে, এ জিনিস দেখলে তো পাগল হয়ে যেত!'

    Technically সকাল হল। আকাশের দেখলাম আবার মুখ ভার। কাল যারা polar bearএর খোঁজে গিয়েছিল, তাদেরও। বুঝলাম দর্শণ মেলেনি। হোটেলের লবিতে আমরা অপেক্ষমান, হাতে কফির কাপ, এমন সময় দেখলাম কয়েকজন স্থানীয় লোক ঢুকল। এরা রোজ এখানে আসে খবরের কাগজের জন্য। সকলে পয়সা দিয়ে কাগজ রাখেনা, হোটেলে এসে বিনি পয়সায় পড়ে যায়।

    তাদেরই একজন আমার পুত্রকে দেখে বেশ বিস্মিত হয়ে জিগেস করল, 'এর বয়েস কত?' আমি বললাম, 'দশ মাস, সেপ্টেম্বরে এক বছর হবে।' দেখলাম বেশ একটা হইচই পড়ে গেল এই নিয়ে। জানতে পারলাম যে দশমাস বয়সেই পুত্র আমার একটি কির্তি করেছেন। এখনো পর্য্যন্ত ব্যারোতে বেড়াতে আসা ভ্রমণপিপাসুদের মধ্যে উনি কনিষ্ঠতম! সবাই বলল, যাও, মেয়রের সঙ্গে একবার দেখা কর, একটা certificate দেবেন উনি। ইতিমধ্যে একজন বললেন, আমাদের দেশ দেখতে আসা সবচেয়ে ছোট্ট মানুষ, তোমাকে আমরা একটা ইনুপিআট নাম দিলাম, 'মিকুআক'। আমরা তো বেজায় খুশী, কিন্তু Captain Mikuaq নির্বিকারে, টলোমলো পায়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াতে লাগলেন, আর মাঝে মাঝে একটু মুচকি হাসি বিতরণ করতে লাগলেন।

    অমৌলিক এসে পড়ল। মেয়রের সঙ্গে আর দেখা করা হলনা। আমরা বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে বাসে উঠলাম। তারপর airport, আবার সেই লক-আউট হয়ে যাওয়া কারখানার মত দেখতে terminal building, তারপর প্লেনে ওঠা। সারা জীবনের মত স্মৃতি সঞ্চয় করে ফেরার পথ ধরা। প্লেন যখন টেক অফ করছে, তখন চোখ বুজতেই ইন্‌জিনের শব্দ ছাপিয়ে যেন শুনতে পেলাম আগের দিনের হেরিটেজ সেন্টারে শোনা সেই বাজনাটার দ্রিমিদ্রিমি, যেটাকে আলাস্কার হার্টবীট ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিনা।

    সমাপ্ত
  • tanu | 131.95.121.251 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০০:৩১450573
  • চমৎকার ভ্রমণকাহিনি! আগের তনুর পক্ষ থেকে অভিনন্দন আর একগোছা বন্য গোলাপ।
    আরো লিখুন,তরতর করে।
  • Riju | 192.55.52.3 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৫:১৮450574
  • অসাধারন নতুন তনু। :-) পাগলা হয়ে গেলুম।
    আলাস্কা যাবো ই যাবো।
  • mita | 24.163.123.37 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১৯:৩৪450575
  • তনু (২),
    দারুন লাগলো আপনার আলাস্কা ভ্রমন। যাবার ইচ্ছেটা চাগিয়ে উঠলো।
    আচ্ছ, Anchorage থেকে সব মিলিয়ে কত দিন লাগলো, পুরো tourটা করতে?
  • tanu2 | 159.37.7.93 | ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ২২:৩৭450577
  • মিতা,
    আমাদের গোটা ট্যুরটা ছিল দশদিনের, তারমধ্যে দুদিনের ব্যারো ট্রিপ। বাকি দিনগুলোর মধ্যে ছিল a night each in Fairbanks, Denali, Anchorage, Palmer plus a few nights in Seward. আমরা মোটামুটি যতটা পেরেছি driving avoid করেছিলাম (and flew wherever possible), তাই দশদিনে এতটা ঘুরতে পেরেছিলাম, নাহলে আরো দিন তিনেক যোগ করতে হোত।
    m,
    তোমার তিমিমাছের কল্পিত স্বাদ আমার experienceএর সঙ্গে মিললনা বলে দু:খিত। ওটা খেতে সত্যিই তেমন আহামরি কিছু ছিলনা :-)
    ঋজু,
    আমরাও আবার যাবার প্ল্যান করছি - এবার অরোরা বোরিয়ালিস দেখতে হবে :-)
    তনু,
    থ্যান্‌কু।

  • Ru | 24.148.171.115 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০১:০২450578
  • তনু ২ আপনার আলাস্কা ভ্রমন খুব সুন্দর লাগলো পড়ে।ব্যারো ছাড়া অন্য জায়গার কথাও লিখুন না।
  • bozo | 129.7.154.118 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০২:২৫450579
  • খুব-ই সুন্দর লাগলো। আলাস্কার গল্প।
  • damayantee | 202.54.214.198 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১২:৩৭450580
  • তনু২,

    ব্যপক লাগল, ইশ যদি একবার যেতে পারতাম! সেই যে অপু স্বপ্ন দেখত, অরোরা বোরিয়ালিস দেখবার---- সেই থেকেই বড় সাধ।

    তোমার সাবলীল ভঙ্গীটা বেশ আকর্ষক।
  • faltu | 203.171.240.52 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১৫:২৩450581
  • ধামাচাপা

    হাঁড়িভাঙা

    কানাঘুষো

    খুড়োর কল
  • indrani | 202.128.112.254 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৯:২৯450582
  • নবতনুর লেখাখানা ভারি চমৎকার-পড়লে মনটা ভালো হয়ে যায়-এই আমার হল এখন।

    লেকের মধ্যে আগ্নেয়গিরি ,তার ক্রেটারে আবার একটা লেক, সেই লেক-এ আবার একটা আগ্নেয়গিরি, তার মধ্যে আবার একটা...--এমত ধাঁধালো জায়গায় গেছ কেউ?
    আমি গেছিলাম।
    লিখব একদিন।
    শুরু করতে হবে চিংড়িমাছ দিয়ে....
  • indrani | 202.128.112.252 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৮:৫৪450583
  • যখন পায়ের তলায় সর্ষে পড়েছিল অর্থাৎ পা হড়কে গতিজাড্যে চলতে শুরু করেছিলাম , তখন সদ্য বে করেছি।সত্যি কথা বলতে কি, আমার প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতেই পায়ের তলায় প্রথম সর্ষে পড়ল।

    সে সময় কর্মসূত্রে আমরা ভিন্ন প্রদেশবাসী-ঠিক হোলো বিয়ের এক বছর পূর্তিতে আমি যাবো তাঁর শহরে-ছুটির মেয়াদ সাত দিন।
    ঠিক এক মাস আগে তাঁকে যেতে হ'ল ম্যানিলায়, ফেরার দিন অনিশ্চিত; কোম্পানীর লোকজন আর আত্মীয়স্বজনের সৌজন্যে আমার ভিসা যোগাড় হয়ে গেল-ঐ সাত দিন ম্যানিলায় কাটাবো।
    আগে যেমন ঠিক ছিল সেইমতো বিকেল বিকেল রাজধানীতে চড়ে বসলাম, পরদিন রাতে ফ্লাইট দিল্লি থেকে; জম্পেশ খেয়ে দেয়ে তো রাতে ঘুম দিয়েছি, যত বারই ঘুম ভাঙে , ট্রেনের নট নড়ন নট চড়ন নট কিচ্ছু...
    সকালে শুনি বিশাল লেট-কোথায় কোন মালগাড়ী উল্টে পড়েছিল সেজন্যই এই হাল-যত বেলা বাড়ে, গাড়ী তত লেট হয় আর আমার টেন্‌শন তত বাড়ে -খাবার দাবার, বাথরুমের জল একে একে ফুরিয়ে সন্ধ্যে ৭টায় দিল্লি স্টেশনে নামলাম-আমাকে তখন কোম্পানীর কর্তার সঙ্গে দেখা করতে হবে, তিনি যেন কি দেবেন সঙ্গে নিতে, টাকা বদলাতে হবে-রাত সাড়ে ১১টায় ফ্লাইট।নিজের স্নান, খাওয়া, পোষাক বদলানোর কথা সেই মুহূর্তে ভাবাটাই বিলাসিতা।
    গাড়ী খারাপ হওয়া ইত্যাদি আরো কিছু বিপর্যয় পেরিয়ে প্লেন ধরতে পেরেছিলাম, ভোররাতে হংকং নামতে হবে, সেখান থেকে ম্যানিলা-সেটাই আমার প্রথম বিদেশে পাড়ি।

    ভোররাতে হংকং পৌঁছলাম-খিদেয় চোখে অন্ধকার-আগের দিন প্রায় কিছু পেটে পড়ে নি, প্লেনে মধ্যরাতে যখন খেতে দিয়েছিল তখন আমি ঘুমিয়ে কাদা।লাউঞ্জে ঢুকেই সসেজ আর কোক কিনে দাম দিতে গিয়েই মাথা বোঁ করে ঘুরে গেল। প্রথম বিদেশ পাড়ি, ডলার খরচ করতে গেলেই তাকে পঁয়তাল্লিশ দিয়ে গুণ করে ফেলি-দুটি সসেজ আর কোকের ক্ষেত্রে সেই গুণফলে আমি হতবাক-আর কিছুটি দাঁতে কাটলাম না বাকি বারো ঘন্টা-বিকেল ৪টেয় ম্যানিলার প্লেন।
    সেই প্লেনে হাস্যময়ী বিমান সেবিকা খাবার দিয়ে গেলেন-নুডলস, সব্জী-খেতে গিয়ে দেখি নুডলসের মধ্যে চিংড়ি মাছ-কি সব্বনাশ-আমার যে চিংড়িতে অ্যালার্জি-এত ভয়ানক বোকা ছিলাম বা খিদের জ্বালায় এতটা বোকা হয়ে গিয়েছিলাম যে খাবার বদলে দিতে না বলে চিংড়ি ফেলে দিয়ে শুধু নুডলস খেয়ে নিলাম গবগবিয়ে। তারপর শুরু হল খেলা।

    মিনিট দশের মধ্যে প্রবল বমনেচ্ছা-পাশের চীনা /জাপানী সহযাত্রীর তখনও খাওয়া শেষ হয় নি, বেচারীকে ঠেলে মেলে আমি বাথরুমে দৌড়-পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে বেরোতেই বল্লো প্লেন ম্যানিলায় ল্যান্ড করছে।প্লেন ল্যান্ড করল, দরজা খুললো, যাত্রীরা লাইন দিয়ে নামছে-আমার আবার প্রবল বমনেচ্ছা-কি ভাবে যে ইমিগ্রেশন পেরিয়ে, লাগেজ কালেক্ট করে বাইরে বেরোলাম বিস্তারিত করব না-আমার গুজরাতি কাজকরা আনকোরা শখের চাদরটি ম্যানিলা এয়ারপোর্টের ট্র্যাশক্যানে বিসর্জন দিতে হয়েছিল এটুকু বলাই যথেষ্ট।
    বাইরে নবীন স্বামীটি কম্পিত বক্ষে দন্ডায়মান-এয়ারপোর্টের কাচ দরজা দিয়ে যিনি বেরোলেন তাঁকে দেখে তো স্বামী ভির্মি খান আর কি-বৌ না চিংড়ি? আমার ততক্ষণে চোখ মুখ ভয়াবহ ফুলে গেছে, যে নতুন শালোয়ার কামিজটি পরেছিলাম দুদিন আগে তার থেকে হলুদ রং বেরিয়ে সমস্ত মুখ গলা হলুদ...
    হোটেলে পৌঁছে, ডাক্তার বদ্যি, ইনজেকশন-

    ছুটির মেয়াদ তো সাত দিন, তার মধ্যে দু দিন চিংড়িতেই উৎসর্গীকৃত-হাতে রইল পাঁচ। শহর দেখা, নিমন্ত্রণ রক্ষা সেরে একটা সকাল পাওয়া গেল তাল ভল্ক্যানো দেখার।
    ম্যানিলা থেকে প্রায় ৭০/৮০ কিলোমিটার দূরে লেক, তার মধ্যে একটা ছোটো দ্বীপে তাল ভলক্যানো, মজার ব্যাপার হ'ল, এই আগ্নেয়গিরির ক্রেটারেও আরেকটি লেক, আমাদের অত্যুৎসাহী ফিলোপিনো ড্রাইভার বললেন ক্রেটারের লেকের মধ্যেও নাকি ...
    ক্রেটারের লেকে সাঁতার কাটা যায় অল্প সময়ের জন্য।
    আমাদের সময় খুব কম -চোখের দেখা দেখেই ফিরবো।
    পাহাড়ী পথ, গাড়ী এঁকে বেঁকে উঠছে-হঠাৎ কোথা থেকে মেঘ না কুয়াশায় চারিদিক একদম ঢেকে গেল-হেড্‌লাইট জ্বালিয়ে একধারে দাঁড়িয়ে থাকা -সমস্ত পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন যেন-কিছু দেখা যায় না কোন দিকে-অনেকক্ষণ পরে আস্তে আস্তে একটু পরিষ্কার হ'ল -গাড়ী আবার চলতে শুরু করল।
    লেক-এর কাছে পৌঁছে ডাক ছেড়ে কাঁদার যোগাড়-লেকের সামনে টুকু সামান্য দেখা যাচ্ছে-বাকি সব কুয়াশায় ঢাকা-কোথায় আগ্নেয়গিরি কোথায়ই বা তার মাথায় লেক...
    অনেকে বোটে তারপর ট্রেক করে ক্রেটার লেকে যায়, আমাদের তেমন কোন প্ল্যান ছিল না, লোকজনের কথা শুনে ভেবেছিলাম এভাবেই দেখা যাবে বেশ।
    অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে ফিরে চললাম।
    হাঠাৎ-ই আমাদের ড্রাইভার চেঁচিয়ে উঠলো-শিগ্গির পিছনে ঘুরে দেখে নিন, এক্ষুণি আবার ঢেকে যাবে-ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি-দূরে লেকের মাঝখানটিতে পাহাড়-চূড়াটি তার কেউ যেন কামড়ে খেয়ে গেছে-কেমন গা ছম ছম করে-আর সেই রহস্যময় মেঘ কুয়াশা দৌড়ে দৌড়ে আসছে তাকে ঢেকে দিতে ।সেখান থেকে গাড়ী ঘোরানোর কোনো উপায় নেই-যতক্ষণ না সম্পূর্ণ পাহাড়টি কুয়াশায় ঢেকে গেল আমরা তাকিয়েই রইলাম।
    শুনলাম তাল ভলক্যানোটি এখনও সক্রিয়-মাঝে মাঝে ছোটোখাটো উদ্‌গীরণ হয়-তখন এই পাহাড়ী পথসমূহ, আশে পাশের জনবস্তি অন্ধকারে ঢেকে যায়-হাতে লন্ঠন নিয়ে পথ চলতে হয়--

    দু বছর পরে, আবারও ফিরে গিয়েছিলাম রহস্যময় তাল-এ, একই অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছি।

    এই আধো দেখা, না-দেখার জন্যই মনে থেকে যায় এই হ্রদ, হ্রদের মাঝে আগুনেপাহাড়, সেই পাহাড় চূড়োয় হ্রদ,সেই হ্রদের মাঝে... জানি না ...
    হয়তো এ'জন্যই পায়ের তলার সর্ষেদানাটি এখনও ঝেড়ে ফেলতে পারি নি।
  • m | 24.166.170.155 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ০৯:১৪450584
  • বাহ,
    ইন্দ্রানী,ভারি চমৎকার লাগলো।
  • damayantee | 61.246.25.36 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১০:০৩450585
  • দারুণ তো--------
  • pharidaa | 210.211.168.114 | ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ ১১:৩২450586
  • solid lekhaa
    দারুণ লাগলো - এ তো পায়ের তলায় সর্ষে নয় যেন সর্ষে-ইলিশ:))
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ মতামত দিন