![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
The Irishman
Muhammad Sadequzzaman Sharif
দা আইরিশম্যান। সিনেমা প্রেমীদের জন্য মার্টিন স্করসিসের নতুন বিস্ময়। ট্যাক্সি ড্রাইভার, গুডফেলাস, ক্যাসিনো, গ্যাংস অব নিউইয়র্ক, দা অ্যাভিয়েটর, দ্য ডিপার্টেড, শাটার আইল্যান্ড, দ্য উল্ফ অব ওয়াল স্ট্রিট, সাইলেন্টের পরের জায়গা দা আইরিশম্যান। বর্তমান সময়ের সেরা পরিচালক কী স্করসিস? কিংবা সর্বকালের সেরা? তর্ক থাকতে পারে কিন্তু তিনি যে সেরাদের একজন তা নিয়ে নিশ্চয়ই কোন তর্ক নেই। সর্বকালের সেরাদের ছোট তালিকায়ও অনায়াসে তার জায়গা হয়ে যাবে। ( দা আইরিশম্যান নিয়ে বলতেে গিয়ে স্করসিস নিয়ে আলাপের কিছু নাই। স্করসিস কে আমার চেনানোরও কিছু নাই।) আইরিশম্যান অনবদ্য সিনেমা তা এক ব্যাককে বলে দেওয়া যায়। কিন্তু যখনই তুলনা আসবে গুডফেলাসের সাথে কিংবা ক্যাসিনোর সাথে বা ট্যাক্সিড্রাইভারের সাথে তখন একটু চিন্তা করতে হবে বই কী! আমি যদি আমার মতামত জানাই তাহলে বলতে হবে আইরিশম্যান ওই ধরনের সিনেমা না তবে ওই ক্লাসিকদের থেকে কোন অংশে কমও না। স্করসিস তার প্যাটার্ন অনেকটুকুই পরিবর্তন করেছেন। অন্য সিনেমা যেখানে শেষ হয় এই সিনেমা তারপরের গল্পও বলে গেছেন। এবং পরের গল্পটুকুই সম্ভবত এই সিনেমাকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
আইরিশম্যান এক কথায় একজন সাধারণ ট্রাক ড্রাইভারের হিটম্যান হয় উঠার গল্প। ফ্রাঙ্ক শিরান (রবার্ট ডি নিরো) মামুলি একজন ট্রাক ড্রাইভার, মাংস পরিবহন করে। পুরো মাংস একদিন দুই নাম্বারই করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়ে হাজির হয় খালি ট্রাক নিয়ে। মাংস কই? ফ্রাঙ্ক শিরান জানায় সে জানে না। সে শুধু ট্রাক চালিয়ে নিয়ে এসেছে, ট্রাকের ভিতরে কী আছে না আছে তা সে কিছুই জানে না। মামলা হয়, মামলার মাধ্যমেই পরিচয় হয় ফিলাডেলফিয়ার ইতালিয়ান মাফিয়া পরিবারের সাথে। ইউনিয়নের উকিল বিল বুফালিনো মামলা থেকে উদ্ধার করে পরিচয় করিয়ে দেয় মাফিয়া পরিবার প্রধান রাসেল বুফালিনোর( জো পেসি) সাথে। ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার আগে ফ্রাঙ্ক শিরান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করে এসেছে। খুব বেশিদিন লাগে না তরতর করে উপরে উঠে যেতে। রাসেলের মাধ্যমেই পরিচয় হয় জিমি হফার( আল পাচিনো) সাথে। হফা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অফ টিমস্টার্সের (International Brotherhood of Teamsters) প্রধান। এটা হচ্ছে আমেরিকার ট্রাক ড্রাইভারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। মূলত হফার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই সিনেমার গল্প শুরু। হফা বদমেজাজি, রগচটা ধরনের লোক। অন্যদিকে ধীর স্থির রাসেল আর মাঝে শিরান। তিন ধরনের তিন প্রধান চরিত্র নিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টার এই সিনেমা দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছে পুরো সময় জুড়ে।
সিনেমা মূলত তৈরি হয়েছে চার্লস ব্রান্ডটের(charles brandt) লেখা উপন্যাস I HEARD YOU PAINT HOUSE অবলম্বনে। চিত্রনাট্য লিখেছেন সিন্ডলার্স লিস্ট খ্যাত স্টিভেন জাইলিয়ান (Steven Zaillian), আই হায়ার্ড ইউ পেইন্ট হাউজ মূলত মাফিয়াদের কোড ওয়ার্ড, সোজা বাংলা অর্থ হচ্ছে খুন করার জন্য রাজি আছ কি না! হফা শিরানকে ঘর রঙ করার জন্যই প্রথমে ফোন করে। গল্পের গাঁথুনি এই সিনেমাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে নাহলে গল্প নিয়ে বিস্তর কথা বলার ছিল। তবু একটু বলি। সিনেমার শেষের দিকে ডি নিরো বৃদ্ধ হয়ে গেছে, নিজের জন্য কফিন বাছাই করছে, এক সময়ের দয়া মায়াহীন হিটম্যান, নিজের সকল পাপের বোঝা নিয়ে বয়সের ভারে নিমজ্জিত হয়ে নিজের জন্য কফিন বাছাই করছে, এই দৃশ্য সম্ভবত সকল দর্শককে তীব্র ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। সিনেমার শেষ ত্রিশ মিনিট এই সিনেমাকে ক্লাসিক বানিয়ে দিয়েছে। এই ত্রিশ মিনিট না হলে হয়ত পূর্ণতা পেত না সিনেমা। সাড়ে তিন ঘণ্টার সিনেমা বলেই শেষ ত্রিশ মিনিটের কথা আলাদা করে বললাম।
জো পেসি এতদিন পার্শ্ব চরিত্রে দুর্দান্ত ছিলেন। বহুদিন পর্দার বাহিরে তিনি, বলা চলে একরকম সিনেমা থেকে বিদায়ই নিয়ে ছিলেন তিনি। ডি নিরো আর স্করসিস অনেকটা জোর করেই রাজি করিয়েছে এই সিনেমার জন্য, রাসেল বুফালিনো চরিত্রের জন্য। বদ মেজাজি, মাথা গরম জো পেসিকে দেখে যারা অভ্যস্ত তাদের জন্য অন্য এক চরিত্রের বিস্ময় নিয়ে হাজির তিনি। পর্দার আড়ালের, কল কাঠি নাড়া নাটের গুরু তিনি। ঠাণ্ডা, ধীর স্থির চরিত্রে জো পেসি যা করে দেখিয়েছে তা বলে বুঝানো সম্ভব না। জো পেসির চরিত্র বুঝানর জন্য সিনেমায় নিরোর সাথে প্রথম দেখার দৃশ্যই যথেষ্ট। নিরোর ট্রাক নষ্ট হয়ে গেছে, জো পেসি দেখে এগিয়ে গেলেন, সমস্যা ধরে ট্রাক ঠিক করে দিলেন। ডি নিরো ধন্যবাদ জানালেন, জো পেসি ডি নিরোর নাম জিজ্ঞাস করলেন, ডি নিরো নাম বলার পর স্বাভাবিক ভাবেই উল্টা তার নাম জিজ্ঞাস করলেন। ডি নিরোর দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে নাম না বলে জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? এই একটা ডায়লগ চরিত্রটাকে ভিত্তি দিয়ে দিয়েছে। কোন এক ট্রাক ড্রাইভার তার নাম জিজ্ঞাস করল আর নাম বলে দিল এমন লোক সে না। তার শক্তি, ক্ষমতা সব যেন ফুটে উঠেছে জো পেসির ডায়লগ আর চেহারার অভিব্যক্তিতে।
দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। সমান তালে ছিলেন রবার্ট ডি নিরো এবং আল পাচিনো। বৃদ্ধ বয়সে এই ত্রয়ীর মিলন যে ঐতিহাসিক হবে অনুমান করা যাচ্ছিল কিন্তু তা যে এমন মধুর হবে, এত অবিশ্বাস্য হবে তা কে জানত? তিন জনই নিজেদের সেরা কাজ করেছে এই সিনেমায়। গল্প, শেষ ত্রিশ মিনিট আর এই তিন কালজয়ী অভিনেতাদের অভিনয় এই সিনেমার প্রাণ।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং সঙ্গীতের কথা আলাদা করে বলতে হবে। মনে রাখার মত কাজ ছিল। বিশেষ করে সঙ্গীত, জ্যাজ আর ব্লুজের ছড়াছড়ি সেই সাথে অসাধারণ আবহসঙ্গীত। অনেক গুলা গানই ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমায়। আমার কাছে দা ফাইভ সেইন্টের In the Still of the Night গানটা অসাধারণ লেগেছে। পাগল করে দেওয়ার মত লেগেছে আমার কাছে।
১২ বছর ধরে পরিকল্পনা করে ১৫৯ মিলিয়ন ডলারে তৈরি এই সিনেমা দেখা সিনেমাপ্রেমিদের জন্য আশীর্বাদ সরূপ। এমন সিনেমা কালে ভদ্রে তৈরি হয় না, দেখার সুযোগ হয় না। দুর্দান্ত একটা কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলে বসে পড়ুন আজকেই। In the Still of the Night গানের কয়েকটা লাইন দিয়ে শেষ করছি -
“So before the light
Hold me again
With all of your might
In the still of the night
In the still of the night”
আইরিশম্যান এক কথায় একজন সাধারণ ট্রাক ড্রাইভারের হিটম্যান হয় উঠার গল্প। ফ্রাঙ্ক শিরান (রবার্ট ডি নিরো) মামুলি একজন ট্রাক ড্রাইভার, মাংস পরিবহন করে। পুরো মাংস একদিন দুই নাম্বারই করে আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিয়ে হাজির হয় খালি ট্রাক নিয়ে। মাংস কই? ফ্রাঙ্ক শিরান জানায় সে জানে না। সে শুধু ট্রাক চালিয়ে নিয়ে এসেছে, ট্রাকের ভিতরে কী আছে না আছে তা সে কিছুই জানে না। মামলা হয়, মামলার মাধ্যমেই পরিচয় হয় ফিলাডেলফিয়ার ইতালিয়ান মাফিয়া পরিবারের সাথে। ইউনিয়নের উকিল বিল বুফালিনো মামলা থেকে উদ্ধার করে পরিচয় করিয়ে দেয় মাফিয়া পরিবার প্রধান রাসেল বুফালিনোর( জো পেসি) সাথে। ট্রাক ড্রাইভার হওয়ার আগে ফ্রাঙ্ক শিরান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ করে এসেছে। খুব বেশিদিন লাগে না তরতর করে উপরে উঠে যেতে। রাসেলের মাধ্যমেই পরিচয় হয় জিমি হফার( আল পাচিনো) সাথে। হফা হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল ব্রাদারহুড অফ টিমস্টার্সের (International Brotherhood of Teamsters) প্রধান। এটা হচ্ছে আমেরিকার ট্রাক ড্রাইভারদের সবচেয়ে বড় সংগঠন। মূলত হফার সাথে পরিচয়ের পর থেকেই সিনেমার গল্প শুরু। হফা বদমেজাজি, রগচটা ধরনের লোক। অন্যদিকে ধীর স্থির রাসেল আর মাঝে শিরান। তিন ধরনের তিন প্রধান চরিত্র নিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টার এই সিনেমা দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছে পুরো সময় জুড়ে।
সিনেমা মূলত তৈরি হয়েছে চার্লস ব্রান্ডটের(charles brandt) লেখা উপন্যাস I HEARD YOU PAINT HOUSE অবলম্বনে। চিত্রনাট্য লিখেছেন সিন্ডলার্স লিস্ট খ্যাত স্টিভেন জাইলিয়ান (Steven Zaillian), আই হায়ার্ড ইউ পেইন্ট হাউজ মূলত মাফিয়াদের কোড ওয়ার্ড, সোজা বাংলা অর্থ হচ্ছে খুন করার জন্য রাজি আছ কি না! হফা শিরানকে ঘর রঙ করার জন্যই প্রথমে ফোন করে। গল্পের গাঁথুনি এই সিনেমাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে নাহলে গল্প নিয়ে বিস্তর কথা বলার ছিল। তবু একটু বলি। সিনেমার শেষের দিকে ডি নিরো বৃদ্ধ হয়ে গেছে, নিজের জন্য কফিন বাছাই করছে, এক সময়ের দয়া মায়াহীন হিটম্যান, নিজের সকল পাপের বোঝা নিয়ে বয়সের ভারে নিমজ্জিত হয়ে নিজের জন্য কফিন বাছাই করছে, এই দৃশ্য সম্ভবত সকল দর্শককে তীব্র ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে। সিনেমার শেষ ত্রিশ মিনিট এই সিনেমাকে ক্লাসিক বানিয়ে দিয়েছে। এই ত্রিশ মিনিট না হলে হয়ত পূর্ণতা পেত না সিনেমা। সাড়ে তিন ঘণ্টার সিনেমা বলেই শেষ ত্রিশ মিনিটের কথা আলাদা করে বললাম।
জো পেসি এতদিন পার্শ্ব চরিত্রে দুর্দান্ত ছিলেন। বহুদিন পর্দার বাহিরে তিনি, বলা চলে একরকম সিনেমা থেকে বিদায়ই নিয়ে ছিলেন তিনি। ডি নিরো আর স্করসিস অনেকটা জোর করেই রাজি করিয়েছে এই সিনেমার জন্য, রাসেল বুফালিনো চরিত্রের জন্য। বদ মেজাজি, মাথা গরম জো পেসিকে দেখে যারা অভ্যস্ত তাদের জন্য অন্য এক চরিত্রের বিস্ময় নিয়ে হাজির তিনি। পর্দার আড়ালের, কল কাঠি নাড়া নাটের গুরু তিনি। ঠাণ্ডা, ধীর স্থির চরিত্রে জো পেসি যা করে দেখিয়েছে তা বলে বুঝানো সম্ভব না। জো পেসির চরিত্র বুঝানর জন্য সিনেমায় নিরোর সাথে প্রথম দেখার দৃশ্যই যথেষ্ট। নিরোর ট্রাক নষ্ট হয়ে গেছে, জো পেসি দেখে এগিয়ে গেলেন, সমস্যা ধরে ট্রাক ঠিক করে দিলেন। ডি নিরো ধন্যবাদ জানালেন, জো পেসি ডি নিরোর নাম জিজ্ঞাস করলেন, ডি নিরো নাম বলার পর স্বাভাবিক ভাবেই উল্টা তার নাম জিজ্ঞাস করলেন। ডি নিরোর দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে নাম না বলে জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কোথা থেকে আসছ? এই একটা ডায়লগ চরিত্রটাকে ভিত্তি দিয়ে দিয়েছে। কোন এক ট্রাক ড্রাইভার তার নাম জিজ্ঞাস করল আর নাম বলে দিল এমন লোক সে না। তার শক্তি, ক্ষমতা সব যেন ফুটে উঠেছে জো পেসির ডায়লগ আর চেহারার অভিব্যক্তিতে।
দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। সমান তালে ছিলেন রবার্ট ডি নিরো এবং আল পাচিনো। বৃদ্ধ বয়সে এই ত্রয়ীর মিলন যে ঐতিহাসিক হবে অনুমান করা যাচ্ছিল কিন্তু তা যে এমন মধুর হবে, এত অবিশ্বাস্য হবে তা কে জানত? তিন জনই নিজেদের সেরা কাজ করেছে এই সিনেমায়। গল্প, শেষ ত্রিশ মিনিট আর এই তিন কালজয়ী অভিনেতাদের অভিনয় এই সিনেমার প্রাণ।
সিনেমাটোগ্রাফি এবং সঙ্গীতের কথা আলাদা করে বলতে হবে। মনে রাখার মত কাজ ছিল। বিশেষ করে সঙ্গীত, জ্যাজ আর ব্লুজের ছড়াছড়ি সেই সাথে অসাধারণ আবহসঙ্গীত। অনেক গুলা গানই ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমায়। আমার কাছে দা ফাইভ সেইন্টের In the Still of the Night গানটা অসাধারণ লেগেছে। পাগল করে দেওয়ার মত লেগেছে আমার কাছে।
১২ বছর ধরে পরিকল্পনা করে ১৫৯ মিলিয়ন ডলারে তৈরি এই সিনেমা দেখা সিনেমাপ্রেমিদের জন্য আশীর্বাদ সরূপ। এমন সিনেমা কালে ভদ্রে তৈরি হয় না, দেখার সুযোগ হয় না। দুর্দান্ত একটা কিছু দেখার ইচ্ছা থাকলে বসে পড়ুন আজকেই। In the Still of the Night গানের কয়েকটা লাইন দিয়ে শেষ করছি -
“So before the light
Hold me again
With all of your might
In the still of the night
In the still of the night”
47
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন