![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
Muhammad Sadequzzaman Sharif
তোত্তো-চানের নামের অর্থ ছোট্ট খুকু। তোত্তো-চানের অত্যাচারে তাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। যদিও সেই সম্পর্কে তোত্তো-চানের বিন্দু মাত্র ধারনা নেই। মায়ের সঙ্গে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য সে চলছে। নানা বিষয়ে নানা প্রশ্ন, নানান আগ্রহ তার। স্টেশনের টিকেট চেকার থেকে শুরু করে আশেপাশের সব দিকেই তার সমান আগ্রহ। অন্যদিকে মায়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছে নতুন স্কুলে তোত্তো-চান টিকতে পারবে কিনা তা নিয়ে। স্কুল দেখেই তোত্তো-চানের সমস্ত মনোযোগ স্কুলের দিকে চলে গেল। ও বিশ্বাসই করতে পারছিল না এমনও কোন স্কুল হতে পারে। প্রথম দর্শনেই স্কুলকে ভালবেসে ফেলল তোত্তো-চান। ভাল না বেসে উপায়ও নেই আসলে "তমোই গাকুয়েন" নামক এই অদ্ভুত স্কুলকে । কারন পরিত্যক্ত রেলগাড়ির কামরায় হচ্ছে এর ক্লাস রুম! হেডমাস্টার কে ওর আরও পছন্দ হল। কারন তোত্তো - চানের এত এত কথা বলার থাকত যা কেউ কোন দিন শুনত না, কিন্তু হেডমাস্টার প্রথম দিনই ওর ইন্টার্ভিউ নিতে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাস করছেন, তোমার কথা বল, তোমার আমাকে যা জানাতে ইচ্ছা করে সব বল। এমন কথা তোত্তো - চানকে এর আগে কেউ বলিনি। মনের ভিতরে যা বলার ছিল সব সে এক নাগারে বলে গেল। তোত্ত-চানের সমস্ত কথা শেষ হতে মোটামুটি চার ঘণ্টা লেগেছিল। হেডমাস্টার তার পুরো বক্তব্যই খুব আগ্রহ নিয়ে শুনেছে তোত্ত- চান খেয়াল করেছে এর মধ্যে তিনি হাই তোলেননি, ঘড়ি দেখেননি, বিরক্তি প্রকাশ করেননি একবারের জন্যও। এমন শিক্ষককে পছন্দ না হয়ে উপায় আছে?
বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না আর তোত্তো-চান পরের দিন স্কুলে আসার জন্য সবার আগে থেকেই তৈরি। স্কুলে আসার পর স্কুলের পড়াশোনার ব্যবস্থা দেখে ওর অবস্থা আরও খারাপ। খুশিতে নাচার অবস্থা। স্কুলের নিয়ম হচ্ছে সারা দিন ছাত্রছাত্রীদের কি কি পড়তে হবে তা সকালেই জানিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা যার যখন যে বিষয় পড়তে ভাল লাগে সে সেই বিষয়ই পড়ে। দিন শেষে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেওয়াই হচ্ছে কথা। শুধু এমন অদ্ভুত পড়াশোনা না, সব কিছুই এখানে অন্য রকম। ছাত্ররা ক্লাস করতে হাঁটতে চলে যায়, মেঠো পথ দিয়ে, নদীর ধার দিয়ে।
এমন অদ্ভুত সুন্দর স্কুলের গল্প হচ্ছে তোত্তো-চান বইয়ের গল্প। তোত্তো-চান হচ্ছে লেখিকা তেৎসুকো কুররোয়ানাগি। ছোট বেলায় জাপানের এই অদ্ভুত স্কুলের পড়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেছেন অসম্ভব সুন্দর এই বই। এই বই প্রকাশের পর এক বছরে বিক্রি হয়েছে ৪৫ লক্ষ কপি। অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। এই বইয়ের বিভিন্ন চ্যাপ্টার জাপানের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লেখিকা নিজে জাপানের একজন টিভি ব্যক্তিত্ব।ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত।
এই অদ্ভুত স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন জাপানের বিখ্যাত শিশু শিক্ষাবিদ সোসাকু কোবায়াশি। তিনি শিশুর মেধা বিকাশের এক অনন্য উপায় খুঁজে বের করেছিলেন। তিনি জোরজবরদস্তি করে বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে, ইউরোপ থেকে দেখে এসে ১৯৩৭ সালে সম্পূর্ণ নিজের পকেটের টাকায় এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।যে অদ্ভুত হেডমাস্টার কে প্রথম দর্শনেই পছন্দ করে ফেলেছিল তোত্তো-চান সেই হেডমাস্টারই হচ্ছে সোসাকু কোবায়াশি। চমৎকার এক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার কাজটি তিনি করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি গুরুত্ব দিতেন, তাদের কে শেখানর জন্য উনার নিজের কিছু পদ্ধতি কাজে লাগান তিনি। ক্লাসের কোন রুটিন না থাকাটা দিয়ে কোন ছাত্র কোন বিষয়ে আগ্রহী তা সহজেই বুঝে ফেলতে পারতেন। ছাত্ররা যখন ক্লাস ওয়ান থেকে ওপরের ক্লাসে উঠতে থাকে তখন আস্তে আস্তে কোন ছাত্র প্রথমে কোন বিষয়ের পড়াশোনা আগে করতে চায় তা দেখে তার আগ্রহ জানা হয়ে যায় শিক্ষকদের। ছাত্রদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, হলরুমেই ক্যাম্পিং করা সহ নানা মজার মজার কাজ কর বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারটাকে লোভনীয় করে তুলছিলেন তিনি। আফসোস হচ্ছে ১৯৪৫ সালে আমেরিকার বিমান আক্রমণে এই চমৎকার স্কুলটি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আবার স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তা আর বাস্তব হয়নি। আজো তমোই স্কুলের ছাত্ররা প্রতি বছর নভেম্বরের তিন তারিখ এক সাথে মিলিত হয়।ভালবাসার স্কুলকে স্মরণ করেন তারা।
জাপানী ভাষায় লেখা এই বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ডরথি ব্রিটন।মজাটা হচ্ছে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সবার খুব প্রিয় শিল্পী মৌসুমি ভৌমিক। তিনি যে এই গুনেরও অধিকারী তা সত্যই অজানা ছিল। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন বাংলা একাডেমী থেকে নাকি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এত চমৎকার একটা বইয়ের আর কোন খোঁজ নাকি বাংলা একাডেমী দিতে পারেনি। আউট অফ প্রিন্ট বলে দায় সেরেছে। বাংলা একাডেমী তো? খুব সম্ভব, আশ্চর্য হই না আর।
চমৎকার বর্ণনা আর তারচেয়েও চমৎকার এক স্কুলের গল্প জানতে হলে পড়ার আমন্ত্রণ থাকল সবার প্রতি। ছোট্ট কিন্তু এক অদ্ভুত সফরের আমন্ত্রণ এটা। বই থেকে কয়েকটা লাইন দিয়ে শেষ করি -
“যুগ যুগ ধরে কত মানুষই তো নিশ্চয় কেটলির নল থেকে ধোঁয়া বেরোতে আর গাছ থেকে আপেল খসে পড়তে দেখেছে, একা ওয়াট বা নিউটন তো নন! অথচ এইযে চোখ থাকা কিন্তু কোন সৌন্দর্য দেখতে না পাওয়া, কান থাকা কিন্তু সুর শুনতে না পাওয়া, বুদ্ধি থাকা অথচ বোধ না থাকা, মন থাকা কিন্তু তাতে সুখ দুঃখের স্পর্শ না লাগা, মনের মধ্যে আগুন জ্বলে না উঠা - এগুলোকেই ভয় পেতে হয়, হেডমাস্টারমশাই বলতেন।”
বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না আর তোত্তো-চান পরের দিন স্কুলে আসার জন্য সবার আগে থেকেই তৈরি। স্কুলে আসার পর স্কুলের পড়াশোনার ব্যবস্থা দেখে ওর অবস্থা আরও খারাপ। খুশিতে নাচার অবস্থা। স্কুলের নিয়ম হচ্ছে সারা দিন ছাত্রছাত্রীদের কি কি পড়তে হবে তা সকালেই জানিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রছাত্রীরা যার যখন যে বিষয় পড়তে ভাল লাগে সে সেই বিষয়ই পড়ে। দিন শেষে যার যার কাজ বুঝিয়ে দেওয়াই হচ্ছে কথা। শুধু এমন অদ্ভুত পড়াশোনা না, সব কিছুই এখানে অন্য রকম। ছাত্ররা ক্লাস করতে হাঁটতে চলে যায়, মেঠো পথ দিয়ে, নদীর ধার দিয়ে।
এমন অদ্ভুত সুন্দর স্কুলের গল্প হচ্ছে তোত্তো-চান বইয়ের গল্প। তোত্তো-চান হচ্ছে লেখিকা তেৎসুকো কুররোয়ানাগি। ছোট বেলায় জাপানের এই অদ্ভুত স্কুলের পড়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে লিখেছেন অসম্ভব সুন্দর এই বই। এই বই প্রকাশের পর এক বছরে বিক্রি হয়েছে ৪৫ লক্ষ কপি। অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। এই বইয়ের বিভিন্ন চ্যাপ্টার জাপানের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। লেখিকা নিজে জাপানের একজন টিভি ব্যক্তিত্ব।ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত।
এই অদ্ভুত স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন জাপানের বিখ্যাত শিশু শিক্ষাবিদ সোসাকু কোবায়াশি। তিনি শিশুর মেধা বিকাশের এক অনন্য উপায় খুঁজে বের করেছিলেন। তিনি জোরজবরদস্তি করে বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে, ইউরোপ থেকে দেখে এসে ১৯৩৭ সালে সম্পূর্ণ নিজের পকেটের টাকায় এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।যে অদ্ভুত হেডমাস্টার কে প্রথম দর্শনেই পছন্দ করে ফেলেছিল তোত্তো-চান সেই হেডমাস্টারই হচ্ছে সোসাকু কোবায়াশি। চমৎকার এক পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়ার কাজটি তিনি করেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি গুরুত্ব দিতেন, তাদের কে শেখানর জন্য উনার নিজের কিছু পদ্ধতি কাজে লাগান তিনি। ক্লাসের কোন রুটিন না থাকাটা দিয়ে কোন ছাত্র কোন বিষয়ে আগ্রহী তা সহজেই বুঝে ফেলতে পারতেন। ছাত্ররা যখন ক্লাস ওয়ান থেকে ওপরের ক্লাসে উঠতে থাকে তখন আস্তে আস্তে কোন ছাত্র প্রথমে কোন বিষয়ের পড়াশোনা আগে করতে চায় তা দেখে তার আগ্রহ জানা হয়ে যায় শিক্ষকদের। ছাত্রদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়া, হলরুমেই ক্যাম্পিং করা সহ নানা মজার মজার কাজ কর বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারটাকে লোভনীয় করে তুলছিলেন তিনি। আফসোস হচ্ছে ১৯৪৫ সালে আমেরিকার বিমান আক্রমণে এই চমৎকার স্কুলটি ধ্বংস হয়ে যায়। তিনি বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আবার স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু তা আর বাস্তব হয়নি। আজো তমোই স্কুলের ছাত্ররা প্রতি বছর নভেম্বরের তিন তারিখ এক সাথে মিলিত হয়।ভালবাসার স্কুলকে স্মরণ করেন তারা।
জাপানী ভাষায় লেখা এই বই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন ডরথি ব্রিটন।মজাটা হচ্ছে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন সবার খুব প্রিয় শিল্পী মৌসুমি ভৌমিক। তিনি যে এই গুনেরও অধিকারী তা সত্যই অজানা ছিল। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন বাংলা একাডেমী থেকে নাকি বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এত চমৎকার একটা বইয়ের আর কোন খোঁজ নাকি বাংলা একাডেমী দিতে পারেনি। আউট অফ প্রিন্ট বলে দায় সেরেছে। বাংলা একাডেমী তো? খুব সম্ভব, আশ্চর্য হই না আর।
চমৎকার বর্ণনা আর তারচেয়েও চমৎকার এক স্কুলের গল্প জানতে হলে পড়ার আমন্ত্রণ থাকল সবার প্রতি। ছোট্ট কিন্তু এক অদ্ভুত সফরের আমন্ত্রণ এটা। বই থেকে কয়েকটা লাইন দিয়ে শেষ করি -
“যুগ যুগ ধরে কত মানুষই তো নিশ্চয় কেটলির নল থেকে ধোঁয়া বেরোতে আর গাছ থেকে আপেল খসে পড়তে দেখেছে, একা ওয়াট বা নিউটন তো নন! অথচ এইযে চোখ থাকা কিন্তু কোন সৌন্দর্য দেখতে না পাওয়া, কান থাকা কিন্তু সুর শুনতে না পাওয়া, বুদ্ধি থাকা অথচ বোধ না থাকা, মন থাকা কিন্তু তাতে সুখ দুঃখের স্পর্শ না লাগা, মনের মধ্যে আগুন জ্বলে না উঠা - এগুলোকেই ভয় পেতে হয়, হেডমাস্টারমশাই বলতেন।”
1377
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)
শেয়ার করুন |

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
এটাই একটা ব্যাপার যে এই ধরণের স্কুল ফিকশনে বিখ্যাত হয়ে থেকে যায়। সত্যি সত্যি সমাজে আসে না তো কই? আমাদের দেশে তো ছেড়েই দিলাম, যে দেশের এই কাহিনি, সেই দেশেও তো নেই! সেই সব এক ধারসে ধরে তোতাপাখি সিস্টেম, আশ্চর্যভাবে সেটাই দুনিয়াতে চলছে। ব্যতিক্রম হিসেবে একটি দুটি হয়তো দেখা যায় কোথাও, কিন্তু মূলস্রোতে আসা তো বলে না তাকে!
আর হয়েও যদি তারপরে গিয়ে বারোলাখি টিউটরিং সিস্টেমে ট্যামটেমি বাজাতে হয়, তাহলে শেষ অবধি কী লাভ?
আর হয়েও যদি তারপরে গিয়ে বারোলাখি টিউটরিং সিস্টেমে ট্যামটেমি বাজাতে হয়, তাহলে শেষ অবধি কী লাভ?

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
b, হ্যাঁ শান্তিনিকেতনের কথা আমারও মনে এসেছিল। আসলে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বাঙালি তো আঁতালমো করা ছাড়া আর কিছু পারেনি, তাই রবীন্দ্রনাথের আসল আইডিয়াগুলোও কাজে লাগাতে পারেনি। স্রেফ ঠাকুরঘরে রেখে পুজো করে গেছে।
আমি তোত্ত-চানের কথা আগে জানতাম না, তাই এতো ভাল্লাগলো। কিন্তু Atoz ঠিকই বলেছেন, এ রকম স্কুল সব জায়গাতেই ব্যতিক্রম। অথচ সব জায়্গাতেই স্কুল কিন্তু এরকমই হওয়া উচিত ছিল।
আমি তোত্ত-চানের কথা আগে জানতাম না, তাই এতো ভাল্লাগলো। কিন্তু Atoz ঠিকই বলেছেন, এ রকম স্কুল সব জায়গাতেই ব্যতিক্রম। অথচ সব জায়্গাতেই স্কুল কিন্তু এরকমই হওয়া উচিত ছিল।

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
ভারতে এমন একটা স্কুল আছে তো! লাদাখে। আমির খানের থ্রি ইডিয়ট ছবিতে আমির যে চরিত্রটা করেছে ওইটা নাকি ওই স্কুল যে বানিয়েছে তার আদলে। স্কুলের তো অনেক গল্পও পড়লাম নেটে।
স্কুলের ওয়েব সাইট -
http://hial.co.in/
ফেসবুক লিংক -
https://www.facebook.com/himalayanuni/
আর সকল কে ধন্যবাদ। "আপনাকে বলছি স্যার" পড়ার জন্য উম্মুখ হয়ে আছি। হাতে পাই শুধু...
স্কুলের ওয়েব সাইট -
http://hial.co.in/
ফেসবুক লিংক -
https://www.facebook.com/himalayanuni/
আর সকল কে ধন্যবাদ। "আপনাকে বলছি স্যার" পড়ার জন্য উম্মুখ হয়ে আছি। হাতে পাই শুধু...

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
"ছাত্র প্রথমে কোন বিষয়ের পড়াশোনা আগে করতে চায় তা দেখে তার আগ্রহ জানা হয়ে যায় শিক্ষকদের" - এই ব্যাপারটা কিছুতেই বুঝতে পারি না। ছোটরা কি সত্যি জানে তাদের কিসে আগ্রহ? ছোটা ভীম না অ্যাষ্ট্রোবায়োলজি? নিজের বাচ্ছাকে মন্টেসেরি দিয়ে টিচার্দের কম্প্লেন শুনেছি, বাচ্ছা নাকি সব সময় সোজা সোজা কাজ করতে চায়! কিন্তু চাইবে না ই বা কেন? বেশির ভাগ বড় মানুষ ও তো তাই চায়!
কিছু একটা মিস করছি নিশ্চয়ই!
কিছু একটা মিস করছি নিশ্চয়ই!

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
" নিজের বাচ্ছাকে মন্টেসেরি দিয়ে টিচার্দের কম্প্লেন শুনেছি, বাচ্ছা নাকি সব সময় সোজা সোজা কাজ করতে চায়"
আমার মনে হচ্ছে টিচাররা বোধায় কোথাও একটু ভুল করছেন। বাচ্চারা সব সময়ে সোজা কাজ করতে চায়, এটা আমি যতোটুকু দেখেছি তাতে একেবারে ভুল ধারনা। ইন ফ্যাক্ট বাচ্চারা সব সময়ে ইন্টারেস্টিং কাজ করতে চয়। যেকোন কাজ যদি তাদেরকে এমনভাবে দেখানো হয় যে তাদের ইন্টারেস্ট জন্মাবে, তাহলে তারা আর সব ফেলে ঐ কাজটাই করবে।
আর "ছোটরা কি সত্যি জানে তাদের কিসে আগ্রহ?"
না, ছোটরা জানে না তাদের কিসে আগ্রহ কারন প্রায় সবকিছুতেই তাদের আগ্রহ। যেকোন নতুন কিছু শিখতে ওরা মজা পায়। বাবামা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হতে পারে ওদের ওপর কোন কিছু চাপিয়ে না দিয়ে ওদের মতো করে শিখতে দেওয়া, আর শেখার মতো মেটিরিয়াল হাতের কাছে যুগিয়ে দেওয়া। আর ছোট থেকে যতো বড়ো হবে ততো মাঝে মাঝে আলোচনা করা, কোনটা তোমার পড়তে বা শিখতে ভাল্লাগে? সেটা কি সাবজেক্ট? তুমি কিভাবে পড়তে চাও? ইত্যাদি।
আমার মনে হচ্ছে টিচাররা বোধায় কোথাও একটু ভুল করছেন। বাচ্চারা সব সময়ে সোজা কাজ করতে চায়, এটা আমি যতোটুকু দেখেছি তাতে একেবারে ভুল ধারনা। ইন ফ্যাক্ট বাচ্চারা সব সময়ে ইন্টারেস্টিং কাজ করতে চয়। যেকোন কাজ যদি তাদেরকে এমনভাবে দেখানো হয় যে তাদের ইন্টারেস্ট জন্মাবে, তাহলে তারা আর সব ফেলে ঐ কাজটাই করবে।
আর "ছোটরা কি সত্যি জানে তাদের কিসে আগ্রহ?"
না, ছোটরা জানে না তাদের কিসে আগ্রহ কারন প্রায় সবকিছুতেই তাদের আগ্রহ। যেকোন নতুন কিছু শিখতে ওরা মজা পায়। বাবামা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হতে পারে ওদের ওপর কোন কিছু চাপিয়ে না দিয়ে ওদের মতো করে শিখতে দেওয়া, আর শেখার মতো মেটিরিয়াল হাতের কাছে যুগিয়ে দেওয়া। আর ছোট থেকে যতো বড়ো হবে ততো মাঝে মাঝে আলোচনা করা, কোনটা তোমার পড়তে বা শিখতে ভাল্লাগে? সেটা কি সাবজেক্ট? তুমি কিভাবে পড়তে চাও? ইত্যাদি।

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
ডিসি,
ধরুন কোনো বাচ্চা ছোটো থেকেই খুব চমৎকার। স্কুলে প্রায় সব সাব্জেক্টেই তার অনায়াস দখল, খুব ভালো ছাত্র। বিজ্ঞানে অঙ্কে সে এতটাই ভালো, যে বাবামা শিক্ষক ইত্যাদিরা সকলেই একমত যে বড় হয়ে এ একজন গণিতজ্ঞ বা পদার্থবিদ বা রসায়নবিদ হবে। এইবারে বড়ো হয়ে মাধ্যমিক বা তার ইকুইভ্যালেন্ট পাশ টাশ করে যদি সে বলে সে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, শেক্সপিরিয়ান ড্রামা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, ওই বিষয়েই কেরিয়ার করতে চায়--- তাহলে বাবামা ইত্যাদিরা কী স্ট্যান্ড নেবেন? ধরে নেওয়া যাক বাবামা মধ্যবিত্ত।
ধরুন কোনো বাচ্চা ছোটো থেকেই খুব চমৎকার। স্কুলে প্রায় সব সাব্জেক্টেই তার অনায়াস দখল, খুব ভালো ছাত্র। বিজ্ঞানে অঙ্কে সে এতটাই ভালো, যে বাবামা শিক্ষক ইত্যাদিরা সকলেই একমত যে বড় হয়ে এ একজন গণিতজ্ঞ বা পদার্থবিদ বা রসায়নবিদ হবে। এইবারে বড়ো হয়ে মাধ্যমিক বা তার ইকুইভ্যালেন্ট পাশ টাশ করে যদি সে বলে সে নাটক নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, শেক্সপিরিয়ান ড্রামা নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, ওই বিষয়েই কেরিয়ার করতে চায়--- তাহলে বাবামা ইত্যাদিরা কী স্ট্যান্ড নেবেন? ধরে নেওয়া যাক বাবামা মধ্যবিত্ত।

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
এরকম বাচ্চা কিন্তু খুব রেয়ার হয়, আপাতত দুটো নাম মনে আসছে যারা ছোটেবলার থেকেই এরকম ছিল - গস আর ফাইনম্যান ঃ)
কেউ যদি ছোটর থেকেই অঙ্কে খুব ভালো হয় তাহলে তাকে অঙ্ক নিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়াই উচিত। আর সে নিজে যদি ড্রামা নিয়ে পড়তে চায় তো তাহলেও তাকে সেটা এক্সপ্লোর করতে দেওয়া উচিত, হয়তো কয়েক বছর পর সে অঙ্কেই ফিরে এলো, কে বলতে পারে।
তবে আর্থিক সামর্থ্যও একটা বড়ো জিনিস, বিশেষ করে আমাদের দেশে। আমার মনে হয় আমরা একটা এক্সট্রিমে পৌঁছে গেছি। ছেলেমেয়েকে কিছুটা পড়াশোনার চাপে রাখা, গাইড করা, নানারকম কেরিয়ার অপশান দেখানো, এগুলো তো করা যেতেই পারে। কিন্তু আমরা এগুলো না করে সারাক্ষন একটা প্রেশার কুকার সিচুয়েশান বানিয়ে রেখে দিচ্ছি, ইন্জিনিয়ারিং আর ডাক্তারির বাইরে আমরা ভাবতেই পারি না। স্কুলগুলোও একইরকম মেকানিকাল হয়ে গেছে।
কেউ যদি ছোটর থেকেই অঙ্কে খুব ভালো হয় তাহলে তাকে অঙ্ক নিয়ে পড়তে উৎসাহ দেওয়াই উচিত। আর সে নিজে যদি ড্রামা নিয়ে পড়তে চায় তো তাহলেও তাকে সেটা এক্সপ্লোর করতে দেওয়া উচিত, হয়তো কয়েক বছর পর সে অঙ্কেই ফিরে এলো, কে বলতে পারে।
তবে আর্থিক সামর্থ্যও একটা বড়ো জিনিস, বিশেষ করে আমাদের দেশে। আমার মনে হয় আমরা একটা এক্সট্রিমে পৌঁছে গেছি। ছেলেমেয়েকে কিছুটা পড়াশোনার চাপে রাখা, গাইড করা, নানারকম কেরিয়ার অপশান দেখানো, এগুলো তো করা যেতেই পারে। কিন্তু আমরা এগুলো না করে সারাক্ষন একটা প্রেশার কুকার সিচুয়েশান বানিয়ে রেখে দিচ্ছি, ইন্জিনিয়ারিং আর ডাক্তারির বাইরে আমরা ভাবতেই পারি না। স্কুলগুলোও একইরকম মেকানিকাল হয়ে গেছে।

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
স্কুল তো স্কুল, বারোলাখি কোচিং এর ডিপো খুলে খুলে বসে গ্যাছে শহরে শহরে। ভাবুন, এদের ব্যবসা চলছে কী করে? লক্ষ লক্ষ বাবামা ই তো কাস্টোমার, নাকি? তারাই তো ছেলেপিলে নিয়ে গিয়ে দুই তিন বছর বাস করছে জাস্ট এন্ট্রান্স টেস্টের কোচিং দেওয়ানোর জন্য! মহার্ঘ্য ব্যাপার। সঙ্গে দেখুন থাকা খাওয়া, ডাক্তার বদ্যি সবই তো আছে। বেশ একটা সমান্তরাল অর্থনীতিও চলছে। একদিকে ভালোই। সকলেই করে খাচ্ছে। ঃ-)

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
তবেই বুঝুন। যে দেশে কোচিং ই হয়ে গিয়েছে ফুল স্কেল ইন্ডাস্ট্রি, এবং কারুর কোনো অসম্মতি নেই, দাম ও খরিদ্দার দিন দিন বাড়ছে, সেই দেশে ব্যতিক্রমী স্কুল ইত্যাদির কথা বলাই তো জাস্ট টাইম পাস। কোচিং ইন্ডাস্ট্রির দেশে শিক্ষার জন্য শিক্ষার, জানার জন্য শিক্ষার কথা বলা কেবল খুব ধনীদের সাজে যাদের কাছে এই শিক্ষার উপরে জীবিকা জীবন কিছুই নির্ভর করে না, তাদের কাছে শখ মাত্র এটা, তাদের উপার্জনের অন্য উপায় মজুত।
কিন্তু মধ্যবিত্তের বাঁশ। এ ছাড়া অন্য উপায় নেই, বহু টাকা গচ্চা দিয়ে দিয়ে কোচিং কিনে ছেলেপিলের হিল্লে করতে হয়। প্রধানতঃ এদেরই মুর্গী করে ঐ ইন্ডাস্ট্রি চলছে।
কিন্তু মধ্যবিত্তের বাঁশ। এ ছাড়া অন্য উপায় নেই, বহু টাকা গচ্চা দিয়ে দিয়ে কোচিং কিনে ছেলেপিলের হিল্লে করতে হয়। প্রধানতঃ এদেরই মুর্গী করে ঐ ইন্ডাস্ট্রি চলছে।

Re: তোত্তো-চান - তেৎসুকো কুররোয়ানাগি
বইটি পড়ে অনেক ভাল লেগেছে। আরো ভালো লাগবে যদি আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় শিশুশিক্ষায় এই বিদ্যালয়ের মত করে শিক্ষাদান করানো যায়। এজন্য শিক্ষানুরাগী মানুষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আর সকল কেই এই বইটি পড়ার জন্যে অনুরোধ করছি। আর পরিশেষে, ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার সেই শিক্ষককে (হ্যাপি কুমার স্যার, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যাল) যিনি আমাদের এই বইটি পড়তে বলেছিলেন। আর তা না হলে হয়তো কোনদিন এমন বই পড়ার সুযোগই পেতাম না।।
ধন্যবাদ
ধন্যবাদ
আপনার মতামত দেবার জন্য নিচের যেকোনো একটি লিংকে ক্লিক করুন